রামাদানে আমাদের করনীয়

Author Topic: রামাদানে আমাদের করনীয়  (Read 3136 times)

Offline najim

  • Full Member
  • ***
  • Posts: 154
    • View Profile
রামাদানে আমাদের করনীয় (গুরুত্বপূর্ণ)

আমরা যখন এ মাসের গুরুত্ব অনুভব করলাম তখন আমাদের কর্তব্য হয়ে দাঁড়াল কীভাবে এ মাসের প্রতিটি মুহূর্তকে কাজে লাগানো যায় সে প্রচেষ্টা চালানো। এ মাসে হেদায়াতের আলোকবর্তিকা আল-কোরআন নাজিল হয়েছে। এ মাসে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়। এ মাসে জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। শয়তানকে শৃঙ্খলে আবদ্ধ করা হয়। একজন ঘোষণাকারী ভাল কাজের আহ্বান জানাতে থাকে ও খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে বলে। সাথে সাথে এটা হল মাগফিরাতের মাস, জাহান্নাম থেকে মুক্তির মাস। এ মাসে রয়েছে লাইলাতুল কদর যা হাজার মাস থেকে শ্রেষ্ঠ। আমাদের অনেকের ধারণা রমজান মাস সিয়াম পালন ও তারাবীহ আদায়ের মাস। ব্যাস ! আর কীসের আমল ? দিনের বেলা পানাহার থেকে বিরত থাকছি এটা কম কি? না, ব্যাপারটা শুধু এ টুকুতে সীমিত নয়। রমজান একটি বিশাল বিদ্যাপীঠ।
এ রমজানে আমরা কি কি নেক আমল করতে পারি তা নিম্নে আলোচনা করা হল :—
(১) কিয়ামুল লাইল
কিয়ামুল লাইল শব্দের অর্থ রাতের সালাত। অর্থাৎ সালাতে তারাবীহ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :—
من قام رمضان إيمانا واحتسابا غفر له ما تقدم من ذنبه. رواه مسلم
যে রমজান মাসে ঈমান ও ইহতিসাবের সাথে রাতে সালাত আদায় করবে তার অতীতের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। বর্ণনায় : মুসলিম
সালাতে তারাবীহ যেমন কিয়ামুল লাইলের মধ্যে পড়ে তেমনি শেষ রাতে তাহাজ্জুদও সালাতুল লাইল এর অন্তর্ভুক্ত। ইমাম সাহেবের সাথে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত জামাতে সালাত আদায় করলে রমজানের পূর্ণ রাত সালাত আদায়ের সওয়াব অর্জিত হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :—
من قام مع الإمام حتى ينصرف كتب له قيام ليلة (رواه أبو داود)
ইমাম সাহেব সালাত শেষ করা পর্যন্ত তার সাথে যে সালাত আদায় করবে সে পূর্ণ এক রাত সালাত আদায়ের সওয়াব পাবে। বর্ণনায় : আবু দাউদ
যে সামর্থ্য রাখে সে ইমামের সাথে সালাত শেষ করে একা একা যত ইচ্ছা তত সালাত আদায় করবে। এ ক্ষেত্রে অনেকের মধ্যে যে অমনোযোগিতা দেখা যায় তা হল রমজানের প্রথম রাতে তারা সালাতে অংশ নিতে পারে না। আবার অনেককে রমজানের শেষ দিকে অলসতায় পেয়ে বসে। ফলে তারা পূর্ণ রমজানের কিয়ামুল লাইলের সওয়াব থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকেন।
(২) আল-কোরআন খতম ও তিলাওয়াত :
নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :—
الصيام والقرآن يشفعان للعبد يوم القيامة . . .
সিয়াম ও কোরআন কেয়ামতের দিন মানুষের জন্য সুপারিশ করবে...।
হাদিসে এসেছে, রমজানে জিবরাইল রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে কোরআন পাঠ করে শোনাতেন। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পূর্ণ কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে জিবরাইলের কাছে তুলে ধরতেন। আল-কোরআন তিলাওয়াত হল সর্বশ্রেষ্ঠ জিকির। সিয়াম পালনকারী এ জিকির থেকে বঞ্চিত থাকতে পারেন না। আল-কোরআন তিলাওয়াতের একটি সঠিক দিক-নির্দেশনামুলক প্রবন্ধ এ বইয়ের শেষ দিকে যুক্ত করে দেয়া হয়েছে। পাঠক এ থেকে উপকৃত হতে পারবেন। যদি কেউ কোরআন তিলাওয়াত করতে অপারগ হন তাহলে বিভিন্ন তাসবীহ, তাহলীল, তাহমীদ আদায়ের মাধ্যমে মুখে আল্লাহর জিকির অব্যাহত রাখবেন।
(৩) সদকা বা দান :
প্রখ্যাত সাহাবি আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস বলেন :—
كان رسول الله صلى الله عليه وسلم أجود الناس بالخير، وكان أجود ما يكون في شهر رمضان. رواه مسلم
নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দানশীল। আর রমজানে তার বদান্যতা আরো বেড়ে যেত। বর্ণনায় : মুসলিম
ইমাম শাফেয়ি (র.) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অনুসরণ করে তার উম্মতের জন্য উত্তম কাজ হল রমজান মাসে তারা বেশি করে দান-সদকা করবে। কারণ এ মাসে মানুষের প্রয়োজন বেশি থাকে। অপরদিকে রমজান হল জিহাদের মাস। তাই প্রত্যেকের উচিত অর্থ-সম্পদ দান করার মাধ্যমে জিহাদে অংশ নেয়া।
(৪) এতেকাফ :—
ইবনে উমার রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন :—
كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يعتكف العشر الأواخر من رمضان . رواه مسلم
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজানের শেষ দশকে এতেকাফ করতেন। বর্ণনায় ; মুসলিম। এতেকাফ প্রসঙ্গে ইমাম যুহরি বলেন, আশ্চর্যজনক হল মুসলমানরা এতেকাফ পরিত্যাগ করে অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনায় আসার পর থেকে ইন্তেকাল পর্যন্ত কখনো এতেকাফ পরিত্যাগ করেননি।
(৫) ওমরাহ আদায় :—
যেমনটি হাদিসে এসেছে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :—
عمرة في رمضان كحجة معي
রমজান মাসে ওমরাহ আদায় আমার সাথে হজ আদায়ের সমতুল্য।
(৬) রোজাদারদের ইফতার করানো :
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :—
من فطر صائما كان له مثل أجره ، غير أنه لا ينقص من أجر الصائم شيئا. رواه أحمد
 
যে ব্যক্তি কোন সিয়াম পালনকারীকে (রোজাদারকে) ইফতার করাবে সে সিয়াম পালনকারীর অনুরূপ সওয়াব লাভ করবে, তবে তাতে সিয়াম পালনকারীর সওয়াব বিন্দুমাত্র কমে যাবে না। বর্ণনায় : আহমদ
(৭) দোয়া-প্রার্থনা করা :
আল্লাহ রাব্বুল সিয়ামের বিধান বর্ণনা করার পর বলেছেন -
وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌ أُجِيبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ (البقرة : 186)
আমার বান্দাগণ যখন আমার সম্পর্কে তোমাকে প্রশ্ন করে, আমি তো নিকটেই। প্রার্থনাকারী যখন আমার কাছে প্রার্থনা করে আমি তার প্রার্থনায় সাড়া দেই। সূরা আল-বাকারা : ১৮৬। তাই সিয়াম পালনকারী আল্লাহর কাছে অধিক পরিমাণে দোয়া-প্রার্থনা করবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :—
ثلاث دعوات مستجابة : دعوة الصائم، دعوة المظلوم، دعوة المسافر. رواه البيهقي في شعب الإيمانوصححه الألباني في الجامع
তিনজনের দোয়া কবুল করা হয় ; সিয়াম পালনকারীর দোয়া, অত্যাচারিত ব্যক্তির দোয়া এবং মুসাফিরের দোয়া। সহি আল-জামে
(৮) তওবা করা :
সর্বদা তওবা করা ওয়াজিব। বিশেষ করে এ মাসে তো বটেই। এ মাসে তওবার অনুকূল অবস্থা বিরাজ করে। শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়, জাহান্নাম থেকে মানুষকে মুক্তি দেয়া হয়। এ ছাড়া রমজান মাসের সকল ইবাদত বন্দেগি তওবার অনুকুল পরিবেশ সৃষ্টি করে। এ কারণেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :—
رغم أنف رجل دخل عليه رمضان، ثم انسلخ قبل أن يغفر له (رواه الترمذي)
যে ব্যক্তি রমজান মাস পেয়েও তার পাপ ক্ষমা করাতে পারেনি তার নাক ধুলায় ধূসরিত হোক। বর্ণনায় : তিরমিজি
তাই রমজান মাসটাকে তওবা ও ক্ষমা পাওয়ার মাস হিসেবে গ্রহণ করে সে অনুযায়ী আমল করা উচিত।
(৯) নেক আমল করতে অধিক হারে চেষ্টা অব্যাহত রাখা:
বিশেষ করে রমজানের শেষ দশকে -
عن عائشة رضي الله عنها قالت : كان رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا دخل العشر أحيى الليل، وأيقظأهله، وجد وشد المئزر. رواه مسلم
আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : যখন রমজানের শেষ দশক এসে যেত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন রাত্রি জাগরণ করতেন, পরিবারবর্গকে নিদ্রা থেকে জাগিয়ে দিতেন, লুঙ্গি শক্ত ও ভাল করে বেঁধে (প্রস্তুতি গ্রহণ) নিতেন। বর্ণনায় : মুসলিম
তিনি আরো বলেন :—
كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يجتهد في العشر الأواخر ما لا يجتهده في غيره. رواه مسلم
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজানের শেষ দশকে ইবাদত-বন্দেগিতে যে পরিশ্রম করতেন অন্য সময় এ রকম করতেন না। বর্ণনায় : মুসলিম
(১০) ইসলামি শিক্ষা অর্জনের প্রতি গুরুত্ব প্রদান :
ইসলামি শিক্ষা হল সকল প্রকার শিক্ষার মূল। তা ছাড়া দুটি বিষয় লক্ষ্য করা খুব জরুরি
এক. ইসলামের সকল ইবাদত-বন্দেগি সঠিকভাবে আদায় করতে হলে ইসলামি শিক্ষা অর্জন করতে হয়। এ ব্যাপারে কোন ওজর-আপত্তি গ্রহণযোগ্য নয়। সালাতের নিয়মকানুন, সিয়ামের বিধান, জাকাতের নিয়ম-নীতি, হজের আহকাম না শিখে এগুলো আদায় করা যায় না।
দুই. আল-কুরআনের তফসির শেখা ও অধ্যয়ন অত্যন্ত জরুরি। বিশেষ করে আমরা যে সকল সূরা-কেরাত সালাতের মাঝে পড়ে থাকি সেগুলোর মর্ম অনুধাবন করে তিলাওয়াত করা দরকার। কাজেই রমজান মাসকে আমরা ইসলামি শিক্ষা অর্জন ও শিক্ষা প্রসারের একটি সুযোগ হিসেবে নিতে পারি। মূর্খতার অবসান ঘটানো সিয়ামের একটা গুরুত্বপূর্ণ দাবি।
যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :—
من لم يدع قول الزور والعمل به والجهل، فليس لله حاجة أن يدع طعامه وشرابه . رواه البخاري
যে মিথ্যা কথা ও কাজ এবং মূর্খতা পরিত্যাগ করতে পারল না তার পানাহার বর্জনে আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই। বর্ণনায় : বোখারি
হাদিসটি দ্বারা স্পষ্ট বুঝে আসে যদি মূর্খতা পরিহার না করা হয় তবে সিয়াম আল্লাহর কাছে গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে। আর মূর্খতা ত্যাগ করা যাবে শুধু শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে।
আল্লাহ আমাদের রামাদানের গুরুত্ত বুঝে আমল করার তওফিক দান করুন । আমীন
Najim U Sharker (Sharif)
Deputy Director (P&D)
Daffodil International University

Offline najim

  • Full Member
  • ***
  • Posts: 154
    • View Profile
Re: রামাদানে আমাদের করনীয়
« Reply #1 on: July 10, 2012, 01:44:23 PM »
আবূ হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, "প্রতিটি আদম সন্তানের নেক কাজের ফল দশগুণ হতে সাতশ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি হয়ে থাকে। আল্লাহ আয্যা ওয়া জাল্লা বলেন, তবে সিয়ামকে এর মধ্যে গণ্য করা হবে না। কারণ, সিয়াম কেবল আমারই জন্য। আর আমিই এর প্রতিদান দেবো। আমার জন্য সে আহার ও যৌনচাহিদা পরিহার করে। সওম পালনকারীর আনন্দ দু’টি : একটি আনন্দ তার ইফতারের সময়। আরেকটি আনন্দ আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের আনন্দ। সওম পালনকারীর মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট মিশকের সুগন্ধির চাইতেও সুগন্ধিময়।’
[মুসলিম : ১১৫১; তিরমিযী : ৬৫৯; নাসায়ী : ২১৮৫]
Najim U Sharker (Sharif)
Deputy Director (P&D)
Daffodil International University

Offline Noman_1450

  • Full Member
  • ***
  • Posts: 139
  • “Obey Allah and Allah will reward you.”
    • View Profile
Re: রামাদানে আমাদের করনীয়
« Reply #2 on: July 11, 2012, 06:41:55 AM »
Thank you, najim for sharing good information. We should obey this for return more thing.
Abdullah Al Noman
Id. 101-11-1450
25th batch, Department of BBA
Email: noman_1450@diu.edu.bd

Offline najim

  • Full Member
  • ***
  • Posts: 154
    • View Profile
Re: রামাদানে আমাদের করনীয়
« Reply #3 on: July 11, 2012, 10:55:45 AM »
 আমরা যখন এ মাসের গুরুত্ব অনুভব করলাম তখন আমাদের কর্তব্য হয়ে দাঁড়াল কীভাবে এ মাসের প্রতিটি মুহূর্তকে কাজে লাগানো যায় সে প্রচেষ্টা চালানো। এ মাসে হেদায়াতের আলোকবর্তিকা আল-কোরআন নাজিল হয়েছে। এ মাসে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়। এ মাসে জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। শয়তানকে শৃঙ্খলে আবদ্ধ করা হয়। একজন ঘোষণাকারী ভাল কাজের আহ্বান জানাতে থাকে ও খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে বলে। সাথে সাথে এটা হল মাগফিরাতের মাস, জাহান্নাম থেকে মুক্তির মাস। এ মাসে রয়েছে লাইলাতুল কদর যা হাজার মাস থেকে শ্রেষ্ঠ। আমাদের অনেকের ধারণা রমজান মাস সিয়াম পালন ও তারাবীহ আদায়ের মাস। ব্যাস ! আর কীসের আমল ? দিনের বেলা পানাহার থেকে বিরত থাকছি এটা কম কি? না, ব্যাপারটা শুধু এ টুকুতে সীমিত নয়। রমজান একটি বিশাল বিদ্যাপীঠ। এ রমজানে আমরা কি কি নেক আমল করতে পারি তা নিম্নে আলোচনা করা হল :—

(১) কিয়ামুল লাইল কিয়ামুল লাইল শব্দের অর্থ রাতের সালাত। অর্থাৎ সালাতে তারাবীহ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :—

من قام رمضان إيمانا واحتسابا غفر له ما تقدم من ذنبه. رواه مسلم
যে রমজান মাসে ঈমান ও ইহতিসাবের সাথে রাতে সালাত আদায় করবে তার অতীতের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। বর্ণনায় : মুসলিম সালাতে তারাবীহ যেমন কিয়ামুল লাইলের মধ্যে পড়ে তেমনি শেষ রাতে তাহাজ্জুদও সালাতুল লাইল এর অন্তর্ভুক্ত। ইমাম সাহেবের সাথে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত জামাতে সালাত আদায় করলে রমজানের পূর্ণ রাত সালাত আদায়ের সওয়াব অর্জিত হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :—

من قام مع الإمام حتى ينصرف كتب له قيام ليلة (رواه أبو داود)
ইমাম সাহেব সালাত শেষ করা পর্যন্ত তার সাথে যে সালাত আদায় করবে সে পূর্ণ এক রাত সালাত আদায়ের সওয়াব পাবে। বর্ণনায় : আবু দাউদ যে সামর্থ্য রাখে সে ইমামের সাথে সালাত শেষ করে একা একা যত ইচ্ছা তত সালাত আদায় করবে। এ ক্ষেত্রে অনেকের মধ্যে যে অমনোযোগিতা দেখা যায় তা হল রমজানের প্রথম রাতে তারা সালাতে অংশ নিতে পারে না। আবার অনেককে রমজানের শেষ দিকে অলসতায় পেয়ে বসে। ফলে তারা পূর্ণ রমজানের কিয়ামুল লাইলের সওয়াব থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকেন।
Najim U Sharker (Sharif)
Deputy Director (P&D)
Daffodil International University

Offline rumman

  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 1020
  • DIU is the best
    • View Profile
Re: রামাদানে আমাদের করনীয়
« Reply #4 on: July 11, 2012, 04:08:17 PM »
Thanks Mr. Najim for your Islamic post.

Ramadan is a proper time to rectify of every Muslims by prayer, salat, zikir, fasting, recitation of holy Quran and many things.
Md. Abdur Rumman Khan
Senior Assistant Registrar

Offline najim

  • Full Member
  • ***
  • Posts: 154
    • View Profile
Re: রামাদানে আমাদের করনীয়
« Reply #5 on: July 12, 2012, 09:48:06 AM »

আমরা যখন এ মাসের গুরুত্ব অনুভব করলাম তখন আমাদের কর্তব্য হয়ে দাঁড়াল কীভাবে এ মাসের প্রতিটি মুহূর্তকে কাজে লাগানো যায় সে প্রচেষ্টা চালানো। এ মাসে হেদায়াতের আলোকবর্তিকা আল-কোরআন নাজিল হয়েছে। এ মাসে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়। এ মাসে জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। শয়তানকে শৃঙ্খলে আবদ্ধ করা হয়। একজন ঘোষণাকারী ভাল কাজের আহ্বান জানাতে থাকে ও খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে বলে। সাথে সাথে এটা হল মাগফিরাতের মাস, জাহান্নাম থেকে মুক্তির মাস। এ মাসে রয়েছে লাইলাতুল কদর যা হাজার মাস থেকে শ্রেষ্ঠ। আমাদের অনেকের ধারণা রমজান মাস সিয়াম পালন ও তারাবীহ আদায়ের মাস। ব্যাস ! আর কীসের আমল ? দিনের বেলা পানাহার থেকে বিরত থাকছি এটা কম কি? না, ব্যাপারটা শুধু এ টুকুতে সীমিত নয়। রমজান একটি বিশাল বিদ্যাপীঠ। এ রমজানে আমরা কি কি নেক আমল করতে পারি তা নিম্নে আলোচনা করা হল :—


(২) আল-কোরআন খতম ও তিলাওয়াত : নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :—

الصيام والقرآن يشفعان للعبد يوم القيامة . . .
সিয়াম ও কোরআন কেয়ামতের দিন মানুষের জন্য সুপারিশ করবে...। হাদিসে এসেছে, রমজানে জিবরাইল রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে কোরআন পাঠ করে শোনাতেন। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পূর্ণ কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে জিবরাইলের কাছে তুলে ধরতেন। আল-কোরআন তিলাওয়াত হল সর্বশ্রেষ্ঠ জিকির। সিয়াম পালনকারী এ জিকির থেকে বঞ্চিত থাকতে পারেন না। আল-কোরআন তিলাওয়াতের একটি সঠিক দিক-নির্দেশনামুলক প্রবন্ধ এ বইয়ের শেষ দিকে যুক্ত করে দেয়া হয়েছে। পাঠক এ থেকে উপকৃত হতে পারবেন। যদি কেউ কোরআন তিলাওয়াত করতে অপারগ হন তাহলে বিভিন্ন তাসবীহ, তাহলীল, তাহমীদ আদায়ের মাধ্যমে মুখে আল্লাহর জিকির অব্যাহত রাখবেন।

(৩) সদকা বা দান : প্রখ্যাত সাহাবি আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস বলেন :—

كان رسول الله صلى الله عليه وسلم أجود الناس بالخير، وكان أجود ما يكون في شهر رمضان. رواه مسلم
নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দানশীল। আর রমজানে তার বদান্যতা আরো বেড়ে যেত। বর্ণনায় : মুসলিম ইমাম শাফেয়ি (র.) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অনুসরণ করে তার উম্মতের জন্য উত্তম কাজ হল রমজান মাসে তারা বেশি করে দান-সদকা করবে। কারণ এ মাসে মানুষের প্রয়োজন বেশি থাকে। অপরদিকে রমজান হল জিহাদের মাস। তাই প্রত্যেকের উচিত অর্থ-সম্পদ দান করার মাধ্যমে জিহাদে অংশ নেয়া।

(৪) এতেকাফ :— ইবনে উমার রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন :—

كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يعتكف العشر الأواخر من رمضان . رواه مسلم
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজানের শেষ দশকে এতেকাফ করতেন। বর্ণনায় ; মুসলিম। এতেকাফ প্রসঙ্গে ইমাম যুহরি বলেন, আশ্চর্যজনক হল মুসলমানরা এতেকাফ পরিত্যাগ করে অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনায় আসার পর থেকে ইন্তেকাল পর্যন্ত কখনো এতেকাফ পরিত্যাগ করেননি।

(৫) ওমরাহ আদায় :— যেমনটি হাদিসে এসেছে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :—

عمرة في رمضان كحجة معي
রমজান মাসে ওমরাহ আদায় আমার সাথে হজ আদায়ের সমতুল্য।

(৬) রোজাদারদের ইফতার করানো : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :—

من فطر صائما كان له مثل أجره ، غير أنه لا ينقص من أجر الصائم شيئا. رواه أحمد
যে ব্যক্তি কোন সিয়াম পালনকারীকে (রোজাদারকে) ইফতার করাবে সে সিয়াম পালনকারীর অনুরূপ সওয়াব লাভ করবে, তবে তাতে সিয়াম পালনকারীর সওয়াব বিন্দুমাত্র কমে যাবে না। বর্ণনায় : আহমদ

(৭) দোয়া-প্রার্থনা করা : আল্লাহ রাব্বুল সিয়ামের বিধান বর্ণনা করার পর বলেছেন -

وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌ أُجِيبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ (البقرة : 186)
আমার বান্দাগণ যখন আমার সম্পর্কে তোমাকে প্রশ্ন করে, আমি তো নিকটেই। প্রার্থনাকারী যখন আমার কাছে প্রার্থনা করে আমি তার প্রার্থনায় সাড়া দেই। [সূরা আল-বাকারা : ১৮৬]

তাই সিয়াম পালনকারী আল্লাহর কাছে অধিক পরিমাণে দোয়া-প্রার্থনা করবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :—

ثلاث دعوات مستجابة : دعوة الصائم، دعوة المظلوم، دعوة المسافر. رواه البيهقي في شعب الإيمان وصححه الألباني في الجامع
তিনজনের দোয়া কবুল করা হয় ; সিয়াম পালনকারীর দোয়া, অত্যাচারিত ব্যক্তির দোয়া এবং মুসাফিরের দোয়া। সহি আল-জামে (৮)

তওবা করা : সর্বদা তওবা করা ওয়াজিব। বিশেষ করে এ মাসে তো বটেই। এ মাসে তওবার অনুকূল অবস্থা বিরাজ করে। শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়, জাহান্নাম থেকে মানুষকে মুক্তি দেয়া হয়। এ ছাড়া রমজান মাসের সকল ইবাদত বন্দেগি তওবার অনুকুল পরিবেশ সৃষ্টি করে। এ কারণেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :—

رغم أنف رجل دخل عليه رمضان، ثم انسلخ قبل أن يغفر له (رواه الترمذي)
যে ব্যক্তি রমজান মাস পেয়েও তার পাপ ক্ষমা করাতে পারেনি তার নাক ধুলায় ধূসরিত হোক। বর্ণনায় : তিরমিজি

তাই রমজান মাসটাকে তওবা ও ক্ষমা পাওয়ার মাস হিসেবে গ্রহণ করে সে অনুযায়ী আমল করা উচিত।

(৯) নেক আমল করতে অধিক হারে চেষ্টা অব্যাহত রাখা: বিশেষ করে রমজানের শেষ দশকে -

عن عائشة رضي الله عنها قالت : كان رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا دخل العشر أحيى الليل، وأيقظ أهله، وجد وشد المئزر. رواه مسلم
আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : যখন রমজানের শেষ দশক এসে যেত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন রাত্রি জাগরণ করতেন, পরিবারবর্গকে নিদ্রা থেকে জাগিয়ে দিতেন, লুঙ্গি শক্ত ও ভাল করে বেঁধে (প্রস্তুতি গ্রহণ) নিতেন। বর্ণনায় : মুসলিম

তিনি আরো বলেন :—

كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يجتهد في العشر الأواخر ما لا يجتهده في غيره. رواه مسلم
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজানের শেষ দশকে ইবাদত-বন্দেগিতে যে পরিশ্রম করতেন অন্য সময় এ রকম করতেন না। বর্ণনায় : মুসলিম

(১০) ইসলামি শিক্ষা অর্জনের প্রতি গুরুত্ব প্রদান : ইসলামি শিক্ষা হল সকল প্রকার শিক্ষার মূল। তা ছাড়া দুটি বিষয় লক্ষ্য করা খুব জরুরি এক. ইসলামের সকল ইবাদত-বন্দেগি সঠিকভাবে আদায় করতে হলে ইসলামি শিক্ষা অর্জন করতে হয়। এ ব্যাপারে কোন ওজর-আপত্তি গ্রহণযোগ্য নয়। সালাতের নিয়মকানুন, সিয়ামের বিধান, জাকাতের নিয়ম-নীতি, হজের আহকাম না শিখে এগুলো আদায় করা যায় না। দুই. আল-কুরআনের তফসির শেখা ও অধ্যয়ন অত্যন্ত জরুরি। বিশেষ করে আমরা যে সকল সূরা-কেরাত সালাতের মাঝে পড়ে থাকি সেগুলোর মর্ম অনুধাবন করে তিলাওয়াত করা দরকার। কাজেই রমজান মাসকে আমরা ইসলামি শিক্ষা অর্জন ও শিক্ষা প্রসারের একটি সুযোগ হিসেবে নিতে পারি। মূর্খতার অবসান ঘটানো সিয়ামের একটা গুরুত্বপূর্ণ দাবি। যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :—

من لم يدع قول الزور والعمل به والجهل، فليس لله حاجة أن يدع طعامه وشرابه . رواه البخاري
যে মিথ্যা কথা ও কাজ এবং মূর্খতা পরিত্যাগ করতে পারল না তার পানাহার বর্জনে আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই। বর্ণনায় : বোখারি

হাদিসটি দ্বারা স্পষ্ট বুঝে আসে যদি মূর্খতা পরিহার না করা হয় তবে সিয়াম আল্লাহর কাছে গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে। আর মূর্খতা ত্যাগ করা যাবে শুধু শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে।
Najim U Sharker (Sharif)
Deputy Director (P&D)
Daffodil International University

Offline hassan

  • Faculty
  • Hero Member
  • *
  • Posts: 501
    • View Profile
    • Google site
Re: রামাদানে আমাদের করনীয়
« Reply #6 on: July 12, 2012, 11:58:00 AM »
Thanks for the post.
Md. Arif Hassan
Assistant Professor
Department of Business Administration
Faculty of Business and Economics
Daffodil International University

Offline najim

  • Full Member
  • ***
  • Posts: 154
    • View Profile
Re: রামাদানে আমাদের করনীয়
« Reply #7 on: July 26, 2012, 05:53:06 PM »

রোযা বিষয়ক সংক্ষিপ্ত প্রবন্ধ



লেখক: মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল-উসাইমীন
অনুবাদক: আব্দুররব আফফান



সকল প্রশংসা জগৎ সমূহের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য এবং আমাদের নবী মুহাম্মাদ এবং তাঁর বংশধর ও সকল সাহাবীদের প্রতি দরুদ ও সালাম।

রোযা বিষয়ে সংক্ষিপ্ত এই প্রবন্ধটিতে রোযার বিধান, রোযায় মানুষের শ্রেণিভেদ, রোযা ভঙ্গের কারণ ও অন্যান্য কতিপয় প্রয়োজনীয় মাসয়ালা সংক্ষেপে আলোচনা করা হয়েছে।

১- সিয়াম বা রোযা : ফজরের শুরু হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোযা ভঙ্গের কারণ থেকে বিরত হয়ে আল্লাহর উদ্দেশ্যে ইবাদত পালন করা।

২- রমযানের সিয়াম : রমাযানের সিয়াম ইসলামের পাঁচটি রুকনের অন্যতম একটি রুকন বা ভিত।

যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের উপর স্থাপিতঃ (১) সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন মাবুদ নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর রাসূল (২) রীতি মত নামায আদায় করা (৩) যাকাত দেয়া (৪) রমযানের রোযা পালন করা (৫) বায়তুল্লাহ্র হজ্জ করা। (বুখারী ও মুসলিম)

সিয়াম পালনের ক্ষেত্রে মানুষের শ্রেণিভেদ
সিয়াম প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স, বিবেক সম্পন্ন, সামর্থ্যবান ও নিজ বাসস্থানে অবস্থানকারী মুসলিম ব্যক্তির উপর ফরয।

যে সব লোকের প্রতি সিয়াম ফরয নয়:

১- কাফের : ইসলাম গ্রহণের পূর্বে কাফেরের উপর সিয়াম ফরয নয় এবং তার জন্য ইসলাম গ্রহণের পর কাযা করাও জরুরি নয়।

২- অপ্রাপ্ত বয়স : অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে-মেয়ের উপর সিয়াম ফরজ নয় কিন্তু অভ্যাস গড়ার জন্য রোযা পালনের আদেশ করা যাবে।

৩- পাগল : প্রাপ্ত বয়স্ক পাগলের উপর সিয়াম ফরয নয় এবং তার জন্য রোযা করিয়ে নেয়ারও প্রয়োজন নেই, অনুরূপ বিধান যার জ্ঞান লোপ পেয়েছে এবং যার অতি মাত্রায় মতিভ্রম হওয়ার কারণে ভাল-মন্দ তারতম্য করতে পারে না।

৪- অপারগ : স্থায়ী সামর্থ্যহীন যেমন অতিশয় বৃদ্ধ বা এমন রোগে আক্রান্ত যার আরোগ্য লাভের আর আশা নেই, এরূপ ব্যক্তির প্রতি সিয়াম ফরয নয়। তবে রমযানের প্রত্যেক দিনের জন্য একজন মিসকিনকে খাবার দিতে হবে।

৫- অসুস্থ : অস্থায়ী ভাবে রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির পক্ষে রোযা রাখা কঠিন হলে সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত রোযা রাখবে না, কিন্তু সুস্থ হওয়ার পর কাযা করবে।

৬- গর্ভবতী বা দুধ পান করায় এমন মহিলা : গর্ভ-ধারণ বা দুধপান করানোর কারণে যদি তাদের প্রতি রোযা রাখা কঠিন হয়, বা স্বীয় সন্তানের অনিষ্টের আশঙ্কা করে তবে রোযা না রেখে যখন আশঙ্কা মুক্ত হবে তখন সুবিধা মত সময়ে কাযা করে নিবে।

৭- মাসিক ঋতু স্রাব অথবা সন্তান প্রসব জনিত স্রাব হলে উক্ত অবস্থায় রোযা না রেখে, তা দূর হলে পরে কাযা করে নেবে।

৮- নিরুপায় : এমন ব্যক্তি যে রোযা ছেড়ে দিতে বাধ্য, যেমন কোন ছোট বাচ্চা পানিতে ডুবে গেছে অথবা আগুনে পুড়ে যাচ্ছে তাকে মুক্ত করার জন্য রোযা ছেড়ে দিতে হলে দেবে কিন্তু পরবর্তীতে কাযা করে নেবে।

৯- মুসাফির : মুসাফিরের জন্য সফরে রোযা রাখা, না রাখার স্বাধীনতা রয়েছে, তবে যদি না রাখে পরে কাযা করে নেবে। উল্লেখ্য, মুসাফির ইচ্ছা করলে যতদিন সফরে থাকবে, (উক্ত সফর স্বল্পস্থায়ী হোক বা স্থায়ী) ততদিন রোযা ছাড়তে পারবে।

রোযা ভঙ্গের কারণ
রোযাদার যদি ভুলক্রমে বা নাজেনে বা বাধ্য হয়ে কিছু খেয়ে পেলে, তবে রোযা নষ্ট হবে না, আল্লাহ বলেন:

رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذْنَا إِنْ نَسِينَا أَوْ أَخْطَأْنَا

হে আমাদের প্রতিপালক! যদি আমরা ভুল করে অথবা অজ্ঞাতসারে দোষে লিপ্ত হই তবে আমাদেরকে পাকড়াও কর না। (সূরা আল-বাকারা : ২৮৬)

আল্লাহ তাআলা বলেন :

إِلَّا مَنْ أُكْرِهَ وَقَلْبُهُ مُطْمَئِنٌّ بِالْإِيمَانِ

তবে তার জন্য মহা শাস্তি নয় যাকে কুফরী করতে বাধ্য করা হয়েছে কিন্তু তার অন্তর ঈমানে অবিচল।সূরা আন - নাহাল : ১০৬

আল্লাহ তাআলা বলেন:

وَلَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ فِيمَا أَخْطَأْتُمْ بِهِ وَلَكِنْ مَا تَعَمَّدَتْ قُلُوبُكُمْ

‘যা তোমরা অজ্ঞাতসারে ভুল করেছ তাতে তোমাদের কোন অপরাধ নেই কিন্তু তা তোমাদের সংকল্প থাকলে অপরাধ হবে।’ সূরা আল-আহ্যাব : ৫

অতএব, রোযাদার যদি ভুলবশত: পানাহার করে তবে ভুলের কারণে তার রোযা নষ্ট হবে না।
আর কেউ যদি সূর্য ডুবে গেছে অথবা ফজর এখনও হয়নি এরূপ মনে করে পানাহার করে তবে তার অজ্ঞতার কারণে রোযা নষ্ট হবে না।
যদি কুলি করা অবস্থায় অনিচ্ছা সত্ত্বেও গলায় পানি চলে যায় তবে রোযা নষ্ট হবে না।
স্বপ্নদোষ হলেও এতে তার কোন ইচ্ছা না থাকায় রোযা ভঙ্গ হবে না।
রোযা ভঙ্গের কারণ ৮ টি
১- স্ত্রী সহবাস : রোযাদার যদি রমাযানের দিনে স্ত্রী সহবাসে লিপ্ত হয় তবে উক্ত রোযা কাযা আদায়সহ জটিল কাফ্ফারা আদায় করতে হবে। আর তা হলো :

একটি গোলাম আজাদ করা, যদি সামর্থ্য না থাকে তবে ধারাবাহিক দুই মাস (মাঝে বিরতি ছাড়া) রোযা রাখতে হবে আর যদি তার সামর্থ্য না থাকে তবে ৬০ জন মিসকীনকে খাওয়াতে হবে।

২- বীর্যপাত : জাগ্রতাবস্থায় হস্ত মৈথুন, স্ত্রীর সাথে মেলাÑ মেশা করা, চুমো দেয়া, স্পর্শ করা অথবা অন্য কোন কারণে বীর্যপাত হলে রোযা বিনষ্ট হয়ে যাবে।

৩- পানাহার : উপকারী বা ক্ষতি কারক (যেমন ধূমপান) কোন কিছু পানাহারে রোযা ভেঙে যায়।

৪- ইনজেকশন যোগে খাদ্যের সম্পূরক খাদ্য জাতীয় কোন কিছু প্রয়োগ করলে। কিন্তু তা যদি খাদ্যের সম্পূরক না হয় তবে শরীরের যেখানেই প্রয়োগ করা হোক যদিও তার স্বাদ গলায় অনুভূত হয় রোযা নষ্ট হবে না।

৫- ইনজেকশন যোগে রক্ত প্রয়োগ : যেমন রোযাদারের যদি রক্ত শূন্যতা দেখা দেয় আর তার ফলে ইন্জেকশন প্রয়োগে রক্ত প্রবেশ করান হয় তবে রোযা নষ্ট হয়ে যাবে।

৬- মাসিক ঋতু স্রাব ও সন্তান প্রসব জনিত স্রাব।

৭- শিংগা বা এ জাতীয় কিছু লাগিয়ে রক্ত বের করা, তবে যদি রক্ত স্বাভাবিকভাবে যেমন নাক থেকে রক্তক্ষরণ বা দাঁত উঠানোর ফলে বা এ ধরনের অন্য কারণে বের হয় তবে রোযা বিনষ্ট হবে না।

৮- বমি করলে : ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করলে রোযা নষ্ট হবে কিন্তু অনিচ্ছায় বমি করলে রোযা নষ্ট হবে না।

রোযার কতিপয় প্রয়োজনীয় মাসয়ালা
১- অপবিত্র অবস্থায় রোযার নিয়ত করা জায়েয তবে ফজর হলে গোসল করবে।

২- কোন মহিলা যদি রমাযানে ফজরের পূর্বে মাসিক ঋতু-স্রাব বা সন্তান প্রসব জনিত স্রাব হতে পবিত্র হয় তবে সে ফজরের পূর্বে গোসল না করলেও তার প্রতি রোযা রাখা ফরয তারপর ফজরে গোসল করে নিবে।

৩- রোযা অবস্থায় দাঁত উঠানো, জখমে ঔষধ লাগানো চোখে বা কানে ঔষধের ফোটা নিক্ষেপ জায়েয, যদিও চোখে বা কানে ফোঁটা প্রয়োগের ফলে গলায় ঔষধের স্বাদ অনুভূত হয়।

৪- রোযা অবস্থায় দিনের প্রথমভাগে ও শেষ ভাগে মিসওয়াক করা জায়েয বরং অন্যের মত তার জন্যেও এ অবস্থায় সুন্নাত।

৫- রোযাদার গরম ও পিপাসার তীব্রতা কমানোর জন্য পানি, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ বা অন্য কিছুর মাধ্যমে ঠান্ডা গ্রহণ করা বৈধ।

৬- প্রেশার বা অন্য কোন কারণে শ্বাস কষ্ট হলে রোযা অবস্থায় মুখে স্প্রে করা জায়েয।

৭- রোযাদারের ঠোঁট শুকিয়ে গেলে পানি দ্বারা ভিজান এবং মুখ শুকিয়ে গেলে গড় গড়া করা ছাড়া কুলি করা বৈধ।

৮- ফজরের সামান্য পূর্বে অর্থাৎ দেরী করে সেহরী খাওয়া এবং সূর্যাস্তের পর তাড়াতাড়ি ইফ্তার করা সুন্নাত।

রোযাদার ইফ্তারের জন্য খেজুর, শুকনা খেজুর, পানি, যে কোন হালাল খাবার যথাক্রমে প্রথম থেকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্রহণ করবে। আর যদি ইফ্তারের জন্য কিছুই না পাওয়া যায়, তবে কোন খাবার পাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত মনে মনে ইফ্তারের নিয়ত করে নিবে।

৯- রোযাদারের উচিত সৎকর্ম বেশি বেশি করা এবং সকল নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থাকা।

১০- রোযাদারের ফরয কাজ সমূহ নিয়মিত আঞ্জাম দেয়া এবং সকল হারাম থেকে দুরে থাকা একান্ত কর্তব্য; অতএব, পাঁচ ওয়াক্ত নামায সময় মত এবং যদি সে জামায়াতে উক্ত নামায আদায়ের ওযর বিহীন লোক হয় তবে জামায়াতের সাথে আদায় করবে এবং মিথ্যা কথা, পরনিন্দা, ধোঁকাবাজি, সুদী লেন-দেন করা ও সকল হারাম কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকবে।

‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন : ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা, অনুরূপ আচরণ ও জাহেলিয়াত বর্জন না করে, তবে তার পানাহার বর্জনের আল্লাহ্র কোনই প্রয়োজন নেই।’ (বুখারী)

সকল প্রশংসা জগৎ সমুহের প্রতিপালক আল্লাহ্র জন্য এবং আমাদের নবী মুহাম্মাদ, তাঁর বংশধর ও তাঁর সকল সাহাবীর প্রতি সালাম বর্ষিত হোক। আমীন !

সমাপ্ত
Najim U Sharker (Sharif)
Deputy Director (P&D)
Daffodil International University

Offline monirulenam

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 295
  • Test
    • View Profile
Re: রামাদানে আমাদের করনীয়
« Reply #8 on: March 02, 2016, 01:12:02 PM »
Thanks for the post