Religion & Belief (Alor Pothay) > Ramadan and Fasting

(রমজান) গুরুত্ব, তাৎপর্য ও ফজিলত

(1/4) > >>

najim:


রমজান কি?


রামাদ্বান/রমযান ...এটি ‘আরাবী’ বার মাসগুলোর একটি, আর এটি দ্বীন ইসলামে একটি সম্মানিত মাস।  এটি অন্যান্য মাস থেকে বেশ কয়েকটি বৈশিষ্ট্য ও ফাযিলাহ (ফযীলত) সমূহের কারণে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। যেমনঃ

১. আল্লাহ -‘আযযা ওয়া জাল্ল- সাওমকে (রোযাকে) ইসলামের আরকানের মধ্যে চতুর্থ রুকন হিসেবে স্থান দিয়েছেন, যেমনটি আল্লাহ তা’আলা বলেছেনঃ

“রামাদ্বান মাস যে মাসে তিনি আল কুরআন নাযিল  করেছেন, তা মানবজাতির জন্য হিদায়াতের উৎস, হিদায়াত ও সত্য মিথ্যার মাঝে পার্থক্যকারী সুস্পষ্ট নিদর্শন সুতরাং তোমাদের মাঝে যে এই মাস পায় সে যেন সাওম রাখে।“ [সূরা বাক্বারাহঃ ১৮৫]

আর  সাহীহুল বুখারী ইমান অধ্যায়  ও  সাহীহ মুসলিম এ ইবনু উমার এর হাদীস থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে নাবী (আল্লাহ তাঁর উপর সালাত ও সালাম বর্ষণ করুন) বলেছেনঃ

“ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত এই সাক্ষ্য দেওয়া যে আল্লাহ ছাড়া আর কোন সত্য উপাস্য নেই, এবং মুহাম্মাদ (সাঃ) আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল সালাত কায়েম (প্রতিষ্ঠা) করা, যাকাত প্রদান করা, রমযান মাসে সাওম পালন করা এবং বাইতুল্লাহ (কা’বাহ)এর উদ্দেশ্যে হজ্জ করা”।

২. আল্লাহ আযযা ওয়া জাল্ল এই মাসে আল কুরআন  নাযিল করেছেন, যেমনটি তিনি-তা‘আলা-পূর্বের আয়াতে উল্লেখ করেছেনঃ

"রামাদ্বান মাস যে মাসে তিনি আল কুরআন নাযিল করেছেন, তা মানবজাতির জন্য হিদায়াতের উৎস, হিদায়াত ও সত্য মিথ্যার মাঝে পার্থক্যকারী সুস্পষ্ট নিদর্শন; সুতরাং তোমাদের মাঝে যে এই মাস পায় সে যেন সাওম রাখে”। [সূরা বাক্বারাহঃ ১৮৫]

তিনি –সুবহানাহূ ওয়া তা‘আলা- আরো বলেছেনঃ

“নিশ্চয়ই আমি একে (আল কুরআন) লাইলাতুল ক্বাদরে নাযিল করেছি”। [সূরা ক্বাদরঃ১]

৩. আল্লাহ এ মাসে লাইলাতুল ক্বাদর রেখেছেন যে মাস হাজার মাস থেকে উত্তম যেমনটি তিনি-তা’আলা বলেছেনঃ

"নিশ্চয়ই আমি একে লাইলাতুল ক্বাদরে (আল কুরআন ) নাযিল করেছি। এবং আপনি কি জানেন লাইলাতুল ক্বাদর কি ? লাইলাতুল ক্বাদর হাজার মাস অপেক্ষা অধিক উত্তম। এতে ফেরেশতাগণ এবং রূহ (জিবরাইল আলাইহিস সালাম) তাদের রবের (প্রতিপালকের) অনুমতিক্রমে অবতরণ করেন সকল সিদ্ধান্ত নিয়ে। শান্তিময় (বা নিরাপত্তাপূর্ণ ) সেই রাত ফাজরের সূচনা পর্যন্ত”। [সূরা ক্বাদরঃ১-৫]

তিনি আরো বলেছেনঃ

“নিশ্চয়ই আমি একে (আল কুরআন) এক বারাকাতপূর্ণ (বরকতময়) রাতে নাযিল করেছি, নিশ্চয়ই আমি সর্তককারী”। [সূরা আদ দুখানঃ৩]

আল্লাহ তা’আলা রমযান মাসকে লাইলাতুল ক্বাদর  দিয়ে সম্মানিত করেছেন আর এই বারাকাতপূর্ণ (বরকতময়) রাতে মর্যাদার বর্ণনায় সূরাতুল ক্বাদর নাযিল করেছেন।

আর এ ব্যাপারে বর্ণিত হয়েছে অনেক আহাদীস (হাদীসসমূহ, হাদীসের বহুবচন)। আবূ হুরাইরাহ থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  বলেছেনঃ

“তোমাদের কাছে উপস্থিত হয়েহে রামাদ্বান, এক বারাকাতপূর্ণ (বরকতময়) মাস। এ মাসে স্বাওম পালন করা আল্লাহ-‘আযযা ওয়া জাল্ল-তোমাদের উপর ফারদ্ব (ফরজ) করেছেন। এ মাসে আসমানের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়, এ মাসে জাহীমের দরজাসসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয়, এ মাসে অবাধ্য শাইত্বানদের শেকলবদ্ধ করা হয় আর এ মাসে রয়েছে আল্লাহর এক রাত যা হাজার মাস থেকে উত্তম, যে এ রাত থেকে বঞ্চিত হল, সে প্রকৃত পক্ষেই বঞ্চিত হল”। [বর্ণনা করেছেন আন-নাসা’ঈ (২১০৬), আহমাদ (৮৭৬৯) এবং আল-আলবানী একে সাহীহ হিসেবে বর্ণনা করেছেন ‘সাহীহুত তারঘীব’ (৯৯৯) - এ]

আর আবূ হুরাইরাহ-রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহ- থেকে বর্ণিত  যে তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ -সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- বলেছেনঃ

“যে ঈমান সহকারে প্রতিদানের আশায় লাইলাতুল ক্বাদর (ক্বাদরের রাত্রিতে) ‘ইবাদাত  করবে তার অতীতের সমস্ত গুনাহ  মাফ করে দেয়া হবে।” [বর্ণনা করেছেন আল-বুখারী (১৯০১) ও মুসলিম (৭৬০)]

৪. আল্লাহ -‘আযযা ওয়া জাল্ল - এই মাসে স্বাওম পালন ও ক্বিয়াম করাকে গুনাহ মাফের কারণ করেছেন, যেমনটি দুই সাহীহ গ্রন্থ বুখারী (২০১৪) ও মুসলিম (৭৬০) - এ বর্ণিত হয়েছে আবূ হুরাইরাহ-রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহ-এর হাদীস থেকে যে নাবী-সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-বলেছেনঃ

“যে রামাদ্বান মাসে ঈমান সহকারে ও সাওয়াবের আশায় স্বাওম পালন করবে তার অতীতের সমস্ত গুনাহ  মাফ করে দেয়া হবে।”

এবং বুখারী (২০০৮) ও মুসলিম (১৭৪)-এ তাঁর (আবূ হুরাইরাহ-রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহ-) থেকে আরো বর্ণিত হয়েছে যে তিনি বলেছেনঃ

“যে রামাদ্বান মাসে ঈমান সহকারে ও সাওয়াবের আশায় ক্বিয়াম করবে তার অতীতের সমস্ত গুনাহ  মাফ করে দেয়া হবে।”

মুসলিমদের মাঝে রামাদ্বানের রাতে ক্বিয়াম করা সুন্নাহ হওয়ার ব্যাপারে ইজমা‘ (ঐক্যমত) রয়েছে। ইমাম আন-নাওয়াউয়ী উল্লেখ করেছেনঃ

“রামাদ্বানে  ক্বিয়াম করার অর্থ হল তারাউয়ীহের (তারাবীহের) স্বালাত আদায় করা অর্থাৎ তারাউয়ীহের (তারাবীহের) স্বালাত আদায়ের মাধ্যমে যাতে ক্বিয়াম করার উদ্দেশ্য সাধিত হয়।”

৫. আল্লাহ-‘আযযা ওয়া জাল্ল- এই মাসে জান্নাতসমূহের দরজা সমূহ খুলে দেন, এ মাসে জাহান্নামের দরজা সমূহ বন্ধ করে দেন এবং শাইত্বানদের শেকলবদ্ধ করেন।

৬. এ মাসের প্রতি রাতে আল্লাহ জাহান্নাম থেকে (তাঁর বান্দাদের) মুক্ত করেন। ইমাম আহমাদ (৫/২৫৬) আবূ উমামাহ’র হাদীস থেকে বর্ণনা করেছেন যে নাবী-সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-বলেছেনঃ

“আল্লাহর রয়েছে প্রতি ফিত্বরে (ইফত্বারের সময় জাহান্নাম থেকে) মুক্তিপ্রাপ্ত বান্দা।”

আল-মুনযিরী বলেছেন এর ইসনাদে কোন সমস্যা নেই। আর আল-আলবানী এটিকে ‘সাহীহুত তারঘীব’ (৯৮৭) - এ সাহীহ বলে আখ্যায়িত করেছেন।

আল-বাযযার (কাশফ ৯৬২) আবূ সা‘ঈদের হাদীস থেকে বর্ণনা করেছেন যে তিনি বলেছেনঃ

“নিশ্চয়ই আল্লাহ – তাবারাকা ওয়া তা‘আলা - র রয়েছে (রামাদ্বান মাসে) প্রতি দিনে ও রাতে (জাহান্নাম থেকে) মুক্তিপ্রাপ্ত বান্দাগণ আর নিশ্চয়ই একজন মুসলিমের রয়েছে প্রতি দিনে ও রাতে কবুল হওয়া দু‘আ’।”

৭. রামাদ্বান মাসে স্বাওম পালন করা পূর্ববর্তী রামাদ্বান থেকে কৃত গুনাহসমূহের কাফফারাহ লাভের কারণ যদি বড় গুনাহ সমূহ (কাবীরাহ গুনাহ সমূহ) থেকে বিরত থাকা হয়, যেমনটি প্রমাণিত হয়েছে ‘সাহীহ মুসলিম (২৩৩)-এ যে নাবী-সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-বলেছেনঃ

“পাঁচ ওয়াক্বতের পাঁচবার স্বালাত, এক  জুমু‘আহ থেকে অপর  জুমু‘আহ, এক রামাদ্বান থেকে অপর রামাদ্বান এর মাঝে কৃত গুনাহসমূহের কাফফারাহ  করে যদি বড় গুনাহ সমূহ (কাবীরাহ গুনাহ সমূহ) থেকে বিরত থাকা হয়।”

৮. এই মাসে স্বাওম পালন করা দশ মাসে স্বিয়াম পালন করার সমতূল্য যা ‘সাহীহ মুসলিম’ (১১৬৪)-এ প্রমাণিত আবূ আইয়ূব আল-আনসারীর হাদীস থেকে নির্দেশনা পাওয়া যায় যে তিনি বলেছেনঃ

“যে রামাদ্বান মাসে স্বিয়াম পালন করল, এর পর শাউওয়ালের ছয়দিন স্বাওম পালন করল, তবে তা সারা জীবন স্বাওম রাখার সমতূল্য”।

আর ইমাম আহমাদ (২১৭/০৬)বর্ণনা করেছেন যে, নাবী-সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-বলেছেনঃ

“যে রামাদ্বান মাসে স্বাওম পালন করল, তা দশ মাসের (স্বাওম পালনের) সমতূল্য আর ‘ঈদুল ফিত্বরের পর (শাউওয়ালের মাসের) ছয় দিন স্বাওম পালন করা গোটা বছরের (স্বাওম পালনের) সমতূল্য।”


[বিঃদ্রঃ সূরা (৬) আল-আন‘আমের ১৬০ নং আয়াত অনুসারে কোন মু’মিন কোন ভাল কাজ করলে আল্লাহ-তা‘আলা-তাকে দশ গুণ সাওয়াব দেন। সুবহানাল্লাহ ! তাই রামাদ্বান মাসে ৩০ দিন স্বাওম পালনের অর্থ এই দাঁড়ায় (৩০×১০)=৩০০ দিন অর্থাৎ   দশ মাস স্বিয়াম পালন করা; আর (শাউওয়ালের মাসের) ছয় দিন স্বাওম পালন করার অর্থ দাঁড়ায় (৬×১০)=৬০ দিন অর্থাৎ  দুই মাস স্বিয়াম পালন করা। সুতরাং রামাদ্বান ও এর পরবর্তী শাউওয়ালের ছয় দিন স্বাওম পালন করা (১০ মাস+২ মাস) = ১২ মাস অর্থাৎ  গোটা বছরের সমতূল্য!]

“আর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বেহিসাব রিযক্ব দান করেন”। [সূরা আন-নূরঃ ৩৮]

৯. এই মাসে যে ইমামের সাথে তিনি (ইমাম)(স্বালাত) শেষ করে চলে যাওয়া পর্যন্ত ক্বিয়াম করে, সে সারা রাত ক্বিয়াম করেছে বলে হিসাব করা হবে যা ইমাম আবূ দাঊদ (১৩৭০) ও অন্য সূত্রে আবূ যার -রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহ- এর হাদীস থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে তিনি বলেছেন যে রাসূলুল্লাহ - সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- বলেছেনঃ

“যে ইমাম চলে যাওয়া পর্যন্ত তাঁর (ইমামের) সাথে ক্বিয়াম করল, সে সারা রাত ক্বিয়াম করেছে বলে ধরে নেয়া হবে।”

আল-আলবানী ‘স্বালাহ আত-তারাউয়ীহ’ বইতে (পৃঃ১৫) একে সাহীহ বলে চিহ্নিত করেছেন।

১০. এই মাসে ‘উমরাহ করা হাজ্জ করার সমতূল্য। ইমাম আল-বুখারী (১৭৮২) ও মুসলিম (১২৫৬) ইবনু ‘আব্বাস থেকে বর্ণনা করেছেন  যে তিনি বলেছেনঃ

রাসূলুল্লাহ -সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- আনসারদের এক মহিলাকে প্রশ্ন করলেনঃ

“কিসে আপনাকে আমাদের সাথে হাজ্জ করতে বাঁধা দিল?”

তিনি (আনসারী মহিলা)বললেনঃ

“আমাদের শুধু পানি বহনকারী দুটি উটই ছিল।”

তাঁর স্বামী ও পুত্র একটি পানি বহনকারী উটে করে হাজ্জে গিয়েছিলেন।

তিনি বললেনঃ

“আর আমাদের পানি বহনের জন্য  একটি পানি বহনকারী উট রেখে গেছেন।”

তিনি (রাসূলুল্লাহ) বললেনঃ

“তাহলে রামাদ্বান এলে  আপনি ‘উমরাহ করেন কারণ, এ মাসে ‘উমরাহ করা হাজ্জ করার সমতূল্য।”

মুসলিমের রিওয়াইয়াতে আছেঃ

“......কারণ এ মাসে ‘উমরাহ করা আমার সাথে হাজ্জ করার সমতূল্য।”

১১. এ মাসে ই‘তিকাফ করা সুন্নাহ কারণ নাবী-সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-তা নিয়মিতভাবে করতেন যেমনটি বর্ণিত হয়েছে ‘আ’ইশাহ-রাদ্বিয়াল্লাহু‘আনহা-থেকে –

“আল্লাহ তাঁকে (রাসূলুল্লাহকে) ক্বাবদ্ব (কবজ, মৃত্যু দান) না দেওয়া পর্যন্ত রামাদ্বানের শেষ দশ দিনে ই‘তিকাফ করতেন। তাঁর পরে তাঁর স্ত্রীগণও ই‘তিকাফ করেছেন।”

[বর্ণনা করেছেন আল বুখারী (১৯২২) ও মুসলিম (১১৭২)]

১২. রামাদ্বান মাসে ক্বুর’আন অধ্যয়ন ও তা বেশি বেশি তিলাওয়াত করা খুবই তা’কীদের (তাগিদের)  সাথে করণীয় এক মুস্তাহাব্ব (পছন্দনীয়) কাজ। আর ক্বুর’আন অধ্যয়ন হল একজন অপরজনকে ক্বুর’আন পড়ে শুনাবে এবং অপরজনও তাকে তা পড়ে শুনাবে। আর তা মুস্তাহাব্ব  হওয়ার দালীলঃ

“যে জিবরীল রামাদ্বান মাসে প্রতি রাতে নাবী-সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে সাক্ষাৎ করতেন এবং ক্বুর’আন অধ্যয়ন করতেন।”

[বর্ণনা করেছেন আল বুখারী (৬) ও মুসলিম (২৩০৮)]

কুরআন ক্বিরা‘আত সাধারণভাবে মুস্তাহাব্ব, তবে রামাদ্বানে বেশি তা’কীদ যোগ্য।

১৩. রামাদ্বানে স্বাওম পালনকারীকে ইফত্বার করানো মুস্তাহাব্ব যার দালীল যাইদ ইবনু খালিদ আল-জুহানী হতে বর্ণিত হাদীস যাতে তিনি বলেছেন যে, রাসূলুল্লাহ -সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- বলেছেনঃ

“যে কোন স্বা’ইমকে (স্বাওম পালনকারীকে) ইফত্বার করায়, তার (যে ইফত্বার করালো) তাঁর (স্বাওম পালনকারীর) সমান সাওয়াব হবে, অথচ সেই স্বাওম পালনকারীর সাওয়াব কোন অংশে কমে না”।

hassan:
Thanks for sharing

najim:

যেভাবে আমরা স্বাগত জানাব মাহে রমজানকে



লেখক : আব্দুররহমান বিন আব্দুল আযীয আস সুদাইস

অনুবাদক : আবু শুআইব মুহাম্মাদ সিদ্দীক


সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তাআলার যিনি আমাদেরকে নিয়ামত হিসেবে দিয়েছেন সৎকাজ করার বিভিন্ন মৌসুম। যিনি রমজানকে করেছেন মহিমান্বিত, বরকতময়। যিনি উৎসাহ দিয়েছেন মাহে রমজানে ইবাদত-বন্দেগী যথার্থরূপে পালন করতে। পুণ্যময় কাজসমূহে অধিকমাত্রায় রত হতে। আমি আল্লাহর প্রশংসা করছি তার অফুরান নেয়ামতের জন্য।  শুকরিয়া করছি তাঁর অঢেল করুণার জন্য। দরুদ ও সালাম তাঁর প্রতি যিনি নামাজ ও রোজা আদায়কারীদের মধ্যে ছিলেন সর্বোত্তম। যিনি তাহাজ্জুদ ও কিয়ামুল লাইল সম্পাদনকারীদের মধ্যে ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ। আল্লাহ তার প্রতি রহমত ও বরকত নাযিল করুন। তাঁর সাহাবাদের প্রতিও রহমত বর্ষণ করুন। তাবেয়ীন ও ঐকান্তিকতার সাথে, পৃথিবীতে আলো অন্ধকার যতদিন থাকবে, ততদিন যারাই তাদের অনুসরণ করবে তাদের সবার প্রতি বর্ষিত হোক আল্লাহর অফুরান রহতম ।

আল্লাহ তাআলা বড়-বড় উপলক্ষ্য রেখেছেন যা হৃদয়ে ইমানকে শানিত করে, অন্তরাত্মায় আন্দোলিত করে উচ্ছ্বসিত অনুভূতি। অতঃপর বাড়িয়ে দেয় ইবাদত আরাধনার অনুঘটনা, সঙ্কুচিত করে দেয় সমাজে পাপ ও অন্যায়ের ক্ষেত্রসমূহ । রমজান মুসলমানদেরকে দেয় ঐক্য, ভ্রাতৃত্ব, স্বচ্ছতা, সহমর্মিতা, আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা,পবিত্রতা, উত্তমতা, সবর ও শৌর্যবীর্যের দীক্ষা। ইহা একটি সুমিষ্ট পানিয়ের প্রস্রবণ। ইহা ইবাদতকারীদের জন্য একটি নিরাপদ ভূমি, আনুগত্যকারীদের জন্য দুর্পার দুর্গ। যারা পাপী তাদের জন্য ইহা একটি সুযোগ, যাতে তারা তাদের গুনাহ থেকে তাওবা করতে পারে। তাদের জীবন-ইতিহাসে  স্বচ্ছ কিছু অধ্যায় রচিত করতে পারে। তাদের জীবনকে ভরে দিতে পারে উত্তম আমলে, উৎকৃষ্ট চরিত্রে।

রমজানের ফজিলত
কালের বিবেচনায় এসব উপলক্ষ্যের  মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট, সম্মানের বিবেচনায় সর্বশ্রেষ্ঠ, প্রভাবের বিবেচনায় সুদূর বিস্তৃত উপলক্ষ্য হল সম্মানিত  মাহে রমজান যার টলটলে রস আস্বাদন করে আমরা হই পরিতৃপ্ত । চুমুকে চুমুকে তুলে নিই তার মধু। নাক ভরে শুঁকে নেই তার সুগন্ধি। মাহে রমজান ছাওয়াব-পুণ্য বহুগুণে বেড়ে যাওয়ার মাস। দরজা বুলন্দ হওয়ার মাস। পাপ-গুনাহ মোচন হওয়ার মাস। পদস্খলন থেকে সোজা হয়ে দাঁড়ানোর মাস। এ মাসে জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়। দোযখের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। শয়তানকে আবদ্ধ করে দেয়া হয়। যে ব্যক্তি এ মাসে রোজা রাখবে, তারাবিহ পড়বে ইমান ও ছাওয়াব লাভের আশায়, তার অতীত জীবনের সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। সহিহ হাদিসে এভাবেই এসেছে:

আবু হুরায়রা (রাযি) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি ইমান ও ইহতেসাব - আল্লাহর কাছ থেকে ছাওয়াব প্রাপ্তির আশায় সিয়াম পালন করবে, তার অতীতের সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।[ বুখারি ও মুসলিম] { যে ব্যক্তি ইমান ও ইহতেসাবসহ রমজানের রাত্রি যাপন করবে তার অতীতের সকল গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। [ বুখারি ও মুসলিম]

মুসলিম ভ্রাতৃবৃন্দ: রমজান মুসলমানদের জন্য বিশাল এক আনন্দের মাস। মহাকালের পরিক্রমায় ঘুরে ঘুরে আসে রমজান। আসে এই সম্মানিত মৌসুম। আসে এই মহান মাস। আসে প্রিয় মেহমান হয়ে, সম্মানিত অতিথি হয়ে। এই উম্মতের জন্য মাহে রমজান আল্লাহর এক নেয়ামত।  কেননা এ মাসের রয়েছে বহু গুণাবলি, বৈশিষ্ট্য। আবু হুরাইরা (রাযি) হতে বর্ণিত এক হাদিসে এসেছে:

যখন রমজান আসে বেহেশতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়। দোযখের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয়। শয়তানকে শিকল পড়িয়ে দেয়া হয়। [ বুখারি ও মুসলিম]

এটা নিঃসন্দেহে বড় সুযোগ। এটা এক সম্মানিত উপলক্ষ্য যেখানে স্বচ্ছতা পায় অন্তরাত্মা। ধাবিত হয় যার প্রতি হৃদয়। যাতে বেড়ে যায় ভাল কাজ করার উৎসাহ-উদ্যম। উন্মুক্ত হয়ে যায় জান্নাত, নাযিল হয় অফুরান রহমত। বুলন্দ হয় দরজা, মাফ করা হয় গুনাহ।

রমজান  তাহাজ্জুদ ও তারাবির মাস। যিকির ও তাসবিহর মাস। রমজান কুরআন তিলাওয়াত ও নামাজের মাস। দান সাদকার মাস। যিকির-আযকার ও দুআর মাস। আহাজারি ও কান্নার মাস।



যে কারণে রমজান আমাদের প্রয়োজন
মুসলিম ভাইয়েরা ! জাতির জীবনে এমন কিছু মুহূর্ত অতিবাহিত হওয়া জরুরি যখন আত্মার পরিশুদ্ধি ও তৃপ্তি সম্পন্ন হবে। যখন ইমানের মাইলফলকগুলো নবায়ন করা হবে। যা কিছু নষ্ট হয়েছে তা সংস্কার করা হবে। যেসব রোগব্যাধি বাসা বেঁধেছে তা সারিয়ে তোলা হবে। রমজান সেই আধ্যাত্মিক মুহূর্ত যেখানে মুসলিম উম্মাহ তাদের বিভিন্ন অবস্থা সংস্কার করার সুযোগ পায়, তাদের ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকানোর সুযোগ পায়। তাদের অতীতকে ফিরিয়ে আনার সুযোগ পায়। এটা আত্মিক ও চারিত্রিক বল ফিরিয়ে আনার একটি মাস। আর এ আধ্যাত্মিক ও চারিত্রিক শক্তি ফিরিয়ে আনা প্রতিটি জাতিরই কর্তব্য। মুসলমানরা এ মৌসুমের অপেক্ষায় থাকে অধীর আগ্রহে। এটা ইমান নবায়নের একটা বিদ্যাপীঠ। চরিত্র মাধুর্যমণ্ডিত করার সময়। আত্মাকে শানিত করার সময়। নাফসকে ইসলাহ করার সময়। প্রবৃত্তিকে কনট্রৌল করার সময়। কুপ্রবৃত্তিকে দমন করার সময়।

রমজানে অর্জন হয় তাকওয়া। রমজানে বাস্তবায়ন হয় আল্লাহর নির্দেশমালা। শাণিত হয় ইচ্ছা। রমজানে একজন মুসলিম প্রশিক্ষণ নেয় আত্মদানের। শাহাতদতবরণের। রমজানে অর্জিত হয় ঐক্য, মহব্বত, ভ্রাতৃত্ব, ও মিলমিলাপ। এ মাসে মুসলমানরা আল্লাহর মুখাপেক্ষী হওয়ার অনুভূতি অর্জন করে। অনুভব করে ক্ষুধার্তের ক্ষুধা। রোজা ত্যাগ, বদান্যতা ও আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষার সময়। এটা সত্যিই চরিত্রের জন্য সহায়ক। রহমতের প্রস্রবণ। যে ব্যক্তি সত্যি সত্যি রোজা রাখল তার রুহ পরিচ্ছন্ন হল। তার হৃদয় নরম হল। তার আত্মা পরিশুদ্ধ হল। তার অনুভূতিসমূহ ঠিকরে পড়ল ও শাণিত হল। তার আরচরণসমূহ বিনম্র হল।

মুসলমানদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনের মোক্ষম সময় হল রমজান। অতঃপর তাদের উচিত রমজান এলে আত্বসমালোচনায় মনোযোগী হওয়া। রমজানের হেকমতসমূহ খোঁজে নেওয়া তাদের জন্য কতোই না জরুরি। রমাজানের দানসমূহ থেকে উপকৃত হওয়া তাদের জন্য কতোই না প্রয়োজন। রমাজানের উত্তম ফলাফল আহরণ করা কতোই না প্রয়োজন।

আমরা কীভাবে রমজানকে স্বাগত জানাব?
প্রিয় ভাইয়েরা! আল্লাহর প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মাধ্যমে আমাদেরকে প্রথমে রমজানকে স্বাগত জানাতে হবে। সকল পাপ-গুনাহ থেকে তাওবার মাধ্যমে রমজানকে স্বাগত জানাতে হবে। সকল প্রকার জুলুম অন্যায় থেকে বের হয়ে রমজানকে স্বাগত জানাতে হবে। যাদের অধিকার ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে তাদের কাছে তাদের অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার মাধ্যমে রমজানকে স্বাগত জানাতে হবে। ভাল কাজের মাধ্যমে রমজানের দিবস-রজনী যাপনের মানসিকতা নিয়ে রমজানকে স্বাগত জানাতে হবে। এ ধরনের আবেগ অনুভূতির মাধ্যমেই আশাসমূহ পূর্ণ হয়। ব্যক্তি ও সমাজ তাদের সম্মান ফিরে পায়। এর বিপরীতে রমজান যদি কেবলই একটি অন্ধ অনুকরণের বিষয় হয়। কেবলই কিছু সীমিত প্রভাবের নিষ্প্রাণ আচার পালনের নাম হয় । যদি এমন হয় যে রমজানে, পুণ্যের বদলে, পাপ ও বক্রতা কারও কারও জীবনে বেড়ে যায়, তবে এটা নিশ্চয়ই একটি আত্মিক পরাজয়, এটা নিশ্চয় শয়তানের ক্রীড়া, যার বিরূপ প্রভাব ব্যক্তি ও সমাজের উপর পড়তে  বাধ্য।

এই মহান মাসের আগমনে মুসলমানদের জীবনে আসুক সুখ ও সমৃদ্ধি। সারা পৃথিবীর মুসলমানদের জীবনে এ  মহান মৌসুমের আগমনে বয়ে যাক আনন্দের ফল্গুধারা। যারা আনুগত্যশীল, এ মাস তাদের নেক কাজ বাড়িয়ে দেওয়ার। যারা পাপী, তাদের জন্য এ মাস  পাপ থেকে ফিরে আসার। মুমিন বেহেশতের দরজাসমূহের উন্মুক্তিতে  খুশি না হয়ে পারে  না?  পাপী, দোযখের দরজাসমূহ এ মাসে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় খুশি হবে বই কি। এ এক বিশাল সুযোগ যা থেকে মাহরুম ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কেও বঞ্চিত হয় না। সিয়াম ও কিয়ামের মাস রমজানের আগমন মুসলমানদের জন্য বিরাট সুখের সংবাদ। অতঃপর হে আল্লাহর বান্দারা আপনারা সিরিয়াস হোন, ঐকান্তিক হোন, রোজাকে কখনো কঠিন ভাববেন না। রোজার দিবসকে দীর্ঘ মনে করবেন না। রোজা ভঙ্গকারী বিষয়সমূহ থেকে বিরত থাকুন। আত্মিক ও বস্তুকেন্দ্রিক সকল প্রকার রোজাভঙ্গকারী বিষয় থেকে বিরত থাকুন।

রোজার হাকীকত
অনেক এমন রয়েছে যারা রোজার হাকীকত সম্পর্কে বেখবর। তারা রোজাকে কেবলই খাবার ও পানীয় থেকে বিরত থাকার মধ্যে সীমিত করে দিয়েছে। তাদের রোজা মিথ্যাচারিতায় জবান দরাজ করতে  বারণ করে না। চোখের ও কানের লাগাম তারা উন্মুক্ত করে দেয়। তারা গুনাহ ও পাপে নিপতিত হতে সামান্যও উৎকণ্ঠিত হয় না। অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন: { যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা, সে অনুযায়ী কাজ এবং  মূর্খতা পরিত্যাগ করল  না, তার খাদ্য ও পানীয় থেকে বিরত থাকায় আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই।

কবি সত্যই বলেছেন:

রক্ষিত যদি না হয় কর্ণ

দৃষ্টিতে  না থাকে বাধা

তবে বুঝে নিও

আমার রোজা কেবলই তৃষ্ণা ও পিপাসা।

যদি বলি আমি আজ রোজা,

মনে করিও আমি আদৌ রোজাদার নই।

 

রমজান প্রজন্ম গড়ার শিক্ষালয়
রোজাদার ভাইয়েরা! মাহে রমজানে মুসলিম উম্মাহ ঐকান্তিকতার শিক্ষা নেয়, খেল-তামাশা থেকে বিমুক্ত হয়ে সিরিয়াসনেস অবলম্বনের শিক্ষা নেয়, জিহ্বায় লাগাম লাগানো, যা কিছু বললে পাপ হয় সেসব থেকে বেঁচে থাকার শিক্ষা নেয় এই মাহে রমজানে। হৃদয় পরিচ্ছন্ন রাখার, হিংসা, দ্বেষ, রেষারেষি থেকে মুক্তি লাভের শিক্ষা নেয় রমজানের এই পবিত্র মাসে বিশেষ করে উলামা ও দাওয়াতকর্মীগণ। ফলে বিচ্ছিন্ন হৃদয়গুলো অভিন্ন সুতোয় নিজেদেরকে বেঁধে নেওয়ার সুযোগ পায়। বিচ্ছিন্ন মেহনত-প্রচেষ্টা একীভূত হয় গঠনমূলক কাজ সম্পাদনের ক্ষেত্রে, কমন শত্রুকে মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে। এ মাসে আমরা সবাই  খুঁটিনাটী ভুল ধরা থেকে নিজেদেরকে বাঁচিয়ে নিতে পারি। কে কোথায় সামান্য হোঁচট খেল তা থেকে মুক্তি পাওয়ার পথ খোঁজে নিতে পারি। কে কোথায় ভুল করল তা ফুঁক দিয়ে ফুলিয়ে প্রচার করার প্রবণতা থেকে মুক্তি পেতে পারি। কার কি উদ্দেশ্য সে বিষয়ে বিরূপ মন্তব্য করা থেকে নিষ্কৃতি পেতে পারি।

রমজান মাসে আমাদের যুবকদের কাছে প্রত্যাশা, তারা তাদের ভূমিকা যথার্থরূপে পালন করবে। তারা তাদের মিশনকে ভালভাবে আয়ত্ত করবে। তারা তাদের রবের অধিকার বিষয়ে সচেতন হবে। তারা তাদের সরকার প্রধানদের অধিকার বিষয়ে সচেতন হবে। মাতা-পিতা ও সমাজের অধিকার বিষয়ে সচেতন হবে।

রমজানে মুসলমানদের শাসক ও শাসিতের মাঝে যোগাযোগের একটি উপলক্ষ্য সৃষ্টি হয়। উলামা ও সাধারণ মানুষের মাঝে, ছোট ও বড়র মাঝে সেতুবন্ধনের লক্ষণসমূহ দৃশ্যমান হয়। সবাই একহাত হয়ে, একশরীর হয়ে কাজ করার সুযোগ আসে, ফেতনা ফাসাদ দূর করার স্বার্থে, নির্যাতনে নিপতিত হওয়ার উপলক্ষ্যসমূহ দূরে ঠেলে দেওয়ার স্বার্থে, নৌকা যাতে ফুটো করা না হয়, বিল্ডিং যাতে ভেঙ্গে না পড়ে, সামাজিক ও চিন্তাগত অস্থিরতা যেন জায়গা করে নিতে না পারে সে উদ্দেশ্যে কাজ করে যাওয়ার স্বার্থে।

রমজানে ভাল কাজের প্রতি মানুষের আগ্রহ বেড়ে যায়, হৃদয়ে ঝোঁক সৃষ্টি হয়। এটা দাওয়াতকর্মী ও সংস্কারকদের জন্য একটা বিরাট সুযোগ। সৎকাজের নির্দেশদাতা ও অসৎ কাজ থেকে বারণকারীদের জন্য বিরাট সুযোগ, যারা অন্যদেরকে দীক্ষিত করে তুলতে নিজেদেরকে নিয়োজিত করেছে তাদের জন্য বিরাট সুযোগ যে তারা তাদের কল্যাণকর্মসমূহ এ মাসে উত্তমরূপে পালন করতে পারবে। কেননা সুযোগ দ্বারপ্রান্তে, মানুষের হৃদয়েও রয়েছে প্রস্তুতি।

অত:পর আল্লাহকে ভয় করুন হে আল্লাহর বান্দারা! রমজানের হাকীকতকে জানুন। রমজানের আদব ও আহকামকে জানুন। রমজানের দিবস রজনীকে সৎ কাজ দিয়ে ভরে দিন। রমজানের রোজাসমূহকে ত্রুটি থেকে  বাঁচান। তাওবা নবায়ন করুন। তাওবার শর্তসমূহ পূরণ করুন। আশা করা যায় আল্লাহ আপনার পাপসমূহ মার্জনা করে দেবেন। যাদেরকে তিনি তাঁর রহমত ও করুণায় ভূষিত করবেন, দোযখ থেকে মুক্তি দেবেন আপনাকে তাদের মধ্যে শামিল করে নেবেন।

মাহে রমজানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমধিক বদান্য ব্যক্তি ছিলেন। মাহে রমজানে তাঁর দানশীলতার মাত্রা আরো বেড়ে যেত বহুগুণে। ইবনুল কাইয়েম রাহ. বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ ছিল পূর্ণাঙ্গতম আদর্শ, উদ্দেশ্য সাধনে সর্বোত্তম আদর্শ। মানুষের পক্ষে পালনযোগ্য সহজতর আদর্শ। আর রমজান মাসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সে আদর্শ ছিল: সকল প্রকার ইবাদত বাড়িয়ে দেয়া। এ মাসে জিব্রিল ফেরেশতা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে  নিয়ে কুরআন পঠন প্রক্রিয়ায় নির্দিষ্ট সময় ব্যয় করতেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ মাসে দান-খয়রাত বাড়িয়ে দিতেন। কুরআন তিলাওয়াত বাড়িয়ে দিতেন। নামাজ ও যিকির বাড়িয়ে দিতেন। এ মাসে তিনি ইতিকাফ করতেন এবং এমন ইবাদতে এ মাসকে বিশেষিত করতেন যা অন্য কোনো মাসে করতেন না।

সালাফে সালেহীনগণও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ আদর্শ অনুসরণে সচেষ্ট হয়েছেন। তারা উত্তমরূপে রোজা পালনের ক্ষেত্রে সুন্দরতম আদর্শ স্থাপন করেছেন। তারা রোজার উদ্দেশ্য হাকীকতকে ভালভাবে আয়ত্তে এনেছেন এবং মাহে রমজানের দিবস-রজনীকে আমলে সালেহ দিয়ে ভরে রেখেছেন।

প্রিয় মুসলিম ভাইয়েরা!

আপনারা যেভাবে এ মাসটিকে স্বাগত জানিয়েছেন একইরূপে আপনারা তাকে অচিরেই বিদায় দেবেন। আমরা এ মাসকে স্বাগত জানিয়েছি তবে জানি না পুরো মাস রো&#

raiyan:
Thank You Najim Bhai for your valuable post and sharing

najim:
আগত পবিত্র রামাদান মাস -
আমাদের জন্য রহমত এবং বরকত নিয়ে আসুক
আ্মাদের পূর্বের সমস্ত গুনাহ মিটিয়ে দিক
আমাদের ঈমান বৃদ্ধিতে সহায়ক হোক
আমাদের অন্তর বিশুদ্ধ করে তুলুক !!
আমীন !!!

Navigation

[0] Message Index

[#] Next page

Go to full version