Show Posts

This section allows you to view all posts made by this member. Note that you can only see posts made in areas you currently have access to.


Messages - shaiful

Pages: 1 [2] 3 4 5
16
যাঁদের করোনা হয়েছে নিশ্চিত বা যাঁদের হয়েছে বলে সন্দেহ, ঘরে কীভাবে তাঁদের খেয়াল রাখবেন পরিচর্যাকারী বা কেয়ার গিভাররা, সে বিষয়ে কিছু পরামর্শ থাকছে এখানে।

● দেখতে হবে আক্রান্ত ব্যক্তি যাতে যথেষ্ট বিশ্রাম পান, পুষ্টিকর খাবার খান, প্রচুর পানি আর তরল পান করেন।

যাঁদের করোনা হয়েছে নিশ্চিত বা যাঁদের হয়েছে বলে সন্দেহ, ঘরে কীভাবে তাঁদের খেয়াল রাখবেন পরিচর্যাকারী বা কেয়ার গিভাররা, সে বিষয়ে কিছু পরামর্শ থাকছে এখানে।

● দেখতে হবে আক্রান্ত ব্যক্তি যাতে যথেষ্ট বিশ্রাম পান, পুষ্টিকর খাবার খান, প্রচুর পানি আর তরল পান করেন।


● একই ঘরে যখন সেবা কাজে, তখন মেডিকেল মাস্ক পরবেন দুজনে। হাত দিয়ে মাস্ক ধরবেন না। মুখে হাত দেবেন না। কাজ শেষে মাস্ক ফেলে দেবেন ময়লার ঝুড়িতে।

● বারবার হাত ধোবেন সাবান পানি দিয়ে বা স্যানিটাইজার দিয়ে: অসুস্থ ব্যক্তির সংস্পর্শে বা এর চারপাশের সংস্পর্শে এলে খাবার তৈরির আগে, খাবার খেতে বসার আগে ও টয়লেট ব্যবহারের পর।

● অসুস্থ মানুষের জন্য আলাদা বাসনপত্র, তোয়ালে, বিছানার চাদর—এসব জিনিস সাবান দিয়ে ধুতে হবে। অসুস্থ ব্যক্তি যা যা হাত দিয়ে স্পর্শ করবেন, সেগুলো বারবার জীবাণু শোধন করুন।

● অসুস্থ ব্যক্তির অবস্থা শোচনীয় হলে বা শ্বাসকষ্ট হলে স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্রে ফোন করুন।

সূত্র: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

17
বিশেষজ্ঞরা বরাবরই বলে আসছেন, করোনাভাইরাস প্রতিরোধের কোনো ভ্যাকসিন এখন পর্যন্ত উদ্ভাবন হয়নি। সে কারণে বিভিন্ন ধরনের উপসর্গ দেখে চিকিৎসকরা করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা দিয়ে আসছেন।

অন্যদিকে বিজ্ঞানিরা করোনা ঠেকাতে এবং আক্রান্তদের সারিয়ে তোলার জন্য আগে থেকেই উদ্ভাবিত ওষুধ পরীক্ষা করে দেখছেন। এবার কিউয়ী গবেষকরা করোনা ঠেকাতে ইনহেলারের কার্যকারিতা পরীক্ষা করে দেখছেন।  তারা বলছেন, করোনাভাইরাস যেহেতু ফুসফুসে পৌঁছানোর আগে অন্তত চারদিন গলায় আটকে থাকে, সে ক্ষেত্রে ইনহেলার ব্যবহার করে করোনাভাইরাসকে সংক্রমণ ঘটানোর পথে বিভ্রান্ত করে বাঁচা যায় কিনা, সে ব্যাপারে অনুসন্ধান করছেন।

অকল্যান্ড হসপিটালের চিকিৎসক রোহান আমেরাতুঙ্গা বলেছেন, আক্রান্ত হওয়ার আগে থেকেই ইনহেলার ব্যবহার করে স্বাস্থ্যসেবাকর্মীরা নিরাপদ থাকতে পারেন। করোনাভাইরাস যেহেতু গলা দিয়ে ফুসফুসে যাচ্ছে এবং এজন্য তার আদ্রতার প্রয়োজন। আমরা আশা করছি, ইনহেলার ব্যবহার করার মাধ্যমে ভাইরাসটি বিভ্রান্ত হয়ে শক্ত অবস্থান তৈরিতে ব্যর্থ হবে।

তিনি আরো বলেন, একবার যদি এই ভাইরাস বিভ্রান্ত হয়, সে অন্য কোনোখানেই আর চেপে বসতে পারবে না। এতে করে করোনা আক্রান্তের ঝুঁকি কমে যাবে। বিষয়টি একটি চাবির সঙ্গে তুলনা করে দেখুন। তালাটি খুলতে হলে চাবির ভাঁজগুলো তালার সঙ্গে সম্পূর্ণ মিলে যেতে হয়, এর কোথাও একটু গড়মিল হলে আর তালাটি খোলে না। করোনা ভাইরাসও একবার বিভ্রান্ত হলে জেঁকে বসতে পারবে না।

সূত্র: আলজাজিরা

18
করোনা ভাইরাস থেকে কীভাবে নিরাপদে থাকা যায়, তা নিয়ে অনেক ধরনের পরামর্শ ভেসে বেড়াচ্ছে অনলাইন দুনিয়ায়। এসব পরামর্শের পেছনে আসলে কোনো বাস্তবতা রয়েছে কি না, তা যাচাই করে দেখেছে বিবিসি ফিউচার বিভাগ। এক কাপ গরম পানীয়তে যে কেউ হয়তো কিছুটা আরামবোধ করতে পারেন, কিন্তু করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯-এর মতো কঠিন সময়ে কি এটি কোনো সহায়তা করতে পারে? অনেকেই দাবি করছেন, গরম পানি পান করলে করোনা ভাইরাস থেকে মুক্ত থাকা যেতে পারে। কিন্তু ইউনিসেফের পক্ষ থেকে এক বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, তারা এ রকম কোনো ঘোষণা দেয়নি।

যুক্তরাজ্যের কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ের বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ রন একেলিস বলেছেন, গরম পানীয় ভাইরাসের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে পারে, এমন কোনো প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি। ঠান্ডা ও ফ্লুতে ভোগার সময় ঠান্ডা পানি খেলে কী ঘটে, তা নিয়ে অতীতে গবেষণা করেছেন একেলিস। সেখানে তিনি দেখতে পেয়েছেন, ঠান্ডা লাগলে গরম পানীয় হয়তো খানিকটা স্বস্তি দিতে পারে। এর কারণ হয়তো গরম পানীয় মুখ ও নাকের লালা ও শ্লেষ্মার নিঃসরণ বাড়িয়ে দিতে পারে, যা প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।

সার্স-কোভ-২, যে করোনা ভাইরাস কোভিড-১৯ রোগের জন্ম দিয়েছে, সেটির ক্ষেত্রে বিবিসি ফিউচার পরীক্ষা করে দেখতে পেয়েছে যে নতুন ধরনের এই করোনা ভাইরাসের বিপক্ষে কোনো ধরনের প্রতিরক্ষাই দিতে পারে না গরম পানি।

গরম পানি খেলে বা গরম পানি দিয়ে গার্গল করলে এই ভাইরাস ধুয়ে যায় কি না, তা নিয়েও মানুষের মধ্যে রয়েছে প্রশ্ন। অন্য ব্যক্তিদের কাশি বা হাঁচির মাধ্যমে এসে ক্ষুদ্র আকারে এটি নাক বা মুখ দিয়ে শরীরে প্রবেশ করার পর মানুষকে সংক্রমিত করে থাকে। আসল ঘটনা হলো, এটি মানুষের ফুসফুসের কোষগুলোকে আক্রমণ করে। সেখানকার কোষগুলো এমন একটি এনজাইম ব্যবহার করে, যা ব্যবহার করে ভাইরাস ফুসফুসের ভেতরে প্রবেশ করে। শ্বাসের সঙ্গে সঙ্গে এসব ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ফোঁটা ফুসফুসের গভীরে পৌঁছে যায়, যেখানে মুখ থেকে যাওয়া যে কোনো তরল পৌঁছানো সম্ভব।

গরম পানির গার্গলে গলার ভেতরের ভাইরাস মেরে ফেলা যায় কি না? উত্তর হচ্ছে—যায় না। কারণ একবার শরীরে প্রবেশ করার পর ভাইরাস খুব দ্রুত মানব শরীরের কোষের ভেতরে চলে গিয়ে নিজের অনেকগুলো কপি তৈরি করে। প্রথম দিকের কিছু গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রথম কোষটি সংক্রমিত করার পরে অন্য কোষে ছড়িয়ে পড়তে ভাইরাসটির প্রায় ৩০ ঘণ্টা সময় লাগে। একইভাবে আমাদের শরীরের কোষে প্রবেশ করার পর বাইরের যেকোনো রকম তাপমাত্রা থেকে ভাইরাসটি নিজেকে রক্ষা করতে পারে।

মানবশরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা থাকে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস (৯৮.৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট), যা ভাইরাসের প্রতিলিপি তৈরি ও বিস্তারের জন্য আদর্শ। ফলে গলার মধ্যে গরম পানির গার্গল করে কোষের ভেতরে থাকা ভাইরাস হত্যা করা যায় না। এর জন্য ৫৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা অথবা তার বেশি তাপমাত্রা দরকার, যা সার্সের মতো করোনা ভাইরাস হত্যা করতে পারে। অবশ্য কিছু গবেষণায় বলা হয়েছে, এই ভাইরাস মারার জন্য অন্তত ৬০-৬৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা প্রয়োজন।

তবে যে ভাইরাসের কারণে কোভিড-১৯ সংক্রমণ হয়েছে, সেই ভাইরাস কত ডিগ্রি তাপমাত্রা পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে, তা নিয়ে কোনো গবেষণা প্রকাশিত হয়নি। ধারণা করা হয়, এটি অন্য করোনা ভাইরাসগুলোর মতোই হতে পারে। ভাইরাস হত্যা করতে ৭০ ডিগ্রি বা তার চেয়ে বেশি তাপমাত্রায় রান্না করা যেতে পারে।

অনেক পরামর্শে আবার গরম পানিতে গোসল করতে বলা হচ্ছে। কিন্তু এ ধরনের তাপে মানব ত্বক পুড়ে যাবে বা ক্ষতের সৃষ্টি করবে। আর কেউ যদি সে রকম পানিতে টিকে থাকতেও পারেন, সেটা তার শরীরের ভেতরে থাকা ভাইরাস ধ্বংস করতে পারে না। এর কারণ হলো, আপনি বাইরে যত তাপমাত্রায় থাকুন না কেন, আপনার শরীর তার তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসেই সীমাবদ্ধ রাখবে। শরীরের ভেতরের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়ানোর কারণে হতে পারে হার্ট অ্যাটাকও। কোভিড-১৯ থেকে নিজেকে রক্ষার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা, নিয়মিত সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধোয়া এবং স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সর্বশেষ নির্দেশাবলী অনুসরণ করা।

সূত্র: বিবিসি

19
বিশ্ব ব্যবস্থার অনেক দুর্বলতাই আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে মহামারি করোনাভাইরাস অথবা কোভিড-১৯। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার সম্মিলিত অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও এই ভাইরাস আমাদেরকে ঘরবন্দি হতে বাধ্য করেছে। কাজেই প্রশ্ন হচ্ছে, এই ভাইরাস কি পৃথিবীর পরিবর্তনে নেতৃত্ব দেবে? আমরা কী এক নতুন বিশ্ব ব্যবস্থার সন্ধান পেতে যাচ্ছি কিংবা এমন এক যুগসন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছি যা মোড় ঘুরে দেবে ইতিহাসের? অথবা যে অতীতকে একদা পেছনে ফেলে এসেছি সেই অতীতের পৃথিবীতে আবার ফিরে যাব? নিশ্চয় সে রকম কিছু হবে না। তবে এটাও সত্য, কোনো কিছুই আর আগের মতো থাকবে না। সবকিছু বদলে যাবে।

আমি অর্থনীতির ধ্বসে পড়া কিংবা বৈশ্বিক মন্দা নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি না। এটা তো বোঝাই যাচ্ছে যে এই মহামারি ২০০৮ সালের মতো বহুজাতিক শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে আঘাত করবে। এর পরিবর্তে আমি যে বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাই সেটি হচ্ছে, আমরা সম্ভবত বিশ্ব ব্যবস্থার পুণর্গঠন প্রত্যক্ষ করতে যাচ্ছি।  সেই পুণর্গঠনের মধ্যে যে বিষয়গুলো থাকবে বলে আমার পূর্বানুমান, সেগুলো হচ্ছে:

১. বৈশ্বিক পরাশক্তির ভারসাম্য

বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলোর ক্ষমতার মধ্যে এক ধরনের ভারসাম্য আসবে এবং ক্ষতমার নিক্তি অনেকটাই চীনের দিকে ঝুঁকে পড়বে। অপরদিকে এশিয়ার দেশগুলোও নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি করবে।

২. স্বয়ংক্রিয় উৎপাদন ব্যবস্থা
পণ্য উৎপাদন অবকাঠামোতে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা চলে আসবে। এই ব্যবস্থা পৃথিবীর জ্বালানীকে সংরক্ষণ করবে। শুধু তাই নয়, উৎপাদন ব্যয় কমাবে এবং পণ্যের গুণগত মান বাড়বে। মানুষের কর্মঘণ্টা অনেক কমে আসবে, ফলে তারা নিজেদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদিতে মনোযোগ দিতে পারবে।

৩. প্রযুক্তি নির্ভরশীলতা

মানুষের প্রযুক্তি নির্ভরশীলতা বহুগুণে বেড়ে যাবে। আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে অনলাইন পেমেন্ট ব্যবস্থায় গ্রাহকরা অভ্যস্ত হয়ে যাবে এবং এতে তাদের দৈনন্দিন জীবনাচরণে বিরাট পরিবর্তন আসবে। তারা সেই আগের চিরাচরিত লেনদেন ব্যবস্থা প্রায় ভুলেই যাবে। আমরা ঘরে বসে কাজ করা শিখে যাব। সন্দেহ নেই, আমরা এমন এক ভবিষ্যতের দিকে অগ্রসর হচ্ছি যেখানে থাকবে না ইট-কাঠ-যন্ত্রপাতির বিশাল বিশাল অফিস।

৪. হ্রাস পাবে ব্যবসায়িক ভ্রমন
ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রয়োজনে যেসব ভ্রমন করতে হয় সেসব ভ্রমনের পরিমাণ ভীষণভাবে কমে যাবে। কারণ প্রয়োজনীয় ব্যবসায়িক আলাপ আলোচনা, মিটিং—সব কিছুই হবে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে। মানুষ উচ্চগতির ইন্টারনেট ব্যবহারে অভ্যস্থ হয়ে পড়বে।  যদি একান্তই বিদেশ ভ্রমনের প্রয়োজন হয়, তখন ব্যবসায়ীরা ফার্স্টক্লাস বিমানের পরিবর্তে ব্যক্তিগত উড়োজাহাজ ব্যবহারকেই প্রাধান্য দেবে।

৫. ই-সার্ভিস ব্যবস্থা

সরকারের যাবতীয় সেবা চলে আসবে ই-সার্ভিস ব্যবস্থার আওতায়। সকল ধরনের নাগরিকসেবা যেমন আইনি সুবিধা, অভিবাসন সংক্রান্ত সেবা, পাসপোর্ট সার্ভিস, মন্ত্রণালয়ের সুযোগ সুবিধা ইত্যাদি সবকিছুই ই-সার্ভিসের মাধ্যমে গ্রহণ করবে রাষ্ট্রের জনগণ। সরকার ই-সার্ভিসিং চালু করতে বাধ্য হবে।

৬. স্বাস্থ্যখাতে বিনিয়োগ বাড়বে
সরকার তো বটেই, বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীরা স্বাস্থ্যখাতে তাদের বাজেট ও বিনিয়োগ বাড়াবে। করোনা অন্তত পৃথিবীর নেতাদেরকে এই বার্তা ভালোভাবেই দিতে পেরেছে যে, স্বাস্থ্যখাতে বাজেট বাড়ানোর বিকল্প নেই। এই সময় প্রযুক্তির নানা ধরনের নতুন নতুন উদ্ভাবনও হবে স্বাস্থ্যখাতকে কেন্দ্র করে।

৭. মধ্যপ্রাচ্যের প্রতি বিশ্বস্ততা বাড়বে

শক্তহাতে করোনা মহামারি মোকাবেলা করার কারণে মধ্যপ্রাচ্যের প্রতি মানুষের বিশ্বস্ততা বাড়বে। বিশ্বস্ততা বাড়বে বৈশ্বিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোরও। তারা সহজেই সহযোগিতার হাত বাড়াবে। ইতিমধ্যেই বিশ্বব্যাংক বড় অংকের ছাড় দিয়ে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে বিপুল পরিমাণ অর্থঋণ দিয়েছে যা ইতিপূর্বে দেয়নি।

৮. সামাজিক পরিবর্তন

সমাজের বুকে এমন এক ধরনের পরিবর্তন আসবে যে পরিবর্তনকে স্বীকৃতি দিতে আমরা আগে খুবই ব্যতিব্যস্ত ছিলাম। পরিবর্তনটা হচ্ছে সহমর্মীতা। ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সহমর্মী হয়ে একে অপরের পাশে দাঁড়িয়েছে। কোটিপতিরা মানুষের জীবন বাঁচাতে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার অনুদান দিতে শুরু করেছে। তারা মানবিক সহায়তা দিতে বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছেন।

৯. পরিবেশের ইতিবাচক পরিবর্তন
এই মহামারি পরিবেশ ও প্রকৃতি জগতে ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছে। নাসা এবং ইএসএ লক্ষ্য করেছে যে মার্চ মাসে চীন ও ইতালীর বাতাসে নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ ছিল উল্লেখযোগ্য হারে কম। অপরদিকে, ওসোর বিশ্বব্যাপী জিডিপি পূর্বাভাস ব্যবহার করে ওসলোর আন্তর্জাতিক জলবায়ু গবেষণা কেন্দ্র এই বলে পূর্বাভাষ দিয়েছে যে, ২০২০ সালে সারা পৃথিবীতেই কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন ১.২% হ্রাস পাবে।

১০. বদলে যাবে শিক্ষা ব্যবস্থা
এই মহামারির পর শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটে যাবে। ইতিমধ্যে আনেকাংশেই বদলে গেছে। বিশ্বের ১৮৮ দেশের স্কুল এখন বন্ধ রয়েছে। ইউনেস্কো বলছে, এ অবস্থায় হোম-স্কুলিং প্রোগ্রাম (ঘরে বসেই পড়ালেখার পদ্ধতি) চালু করা ছাড়া উপায় নেই। এতে করে মা বাবারাও তাদের সন্তানের দক্ষতা ও মেধা বিকাশে সাহায্য করতে পারছেন। এই দূরশিক্ষণ পদ্ধতি শিক্ষার ক্ষেত্রে এক ধরনের সমতাও নিয়ে এসেছে।

এই মহামারি, এই মহা দুর্যোগের দিন একদিন শেষ হবে। সেদিন আমরা অবাক ‍বিস্ময়ে চেয়ে দেখব, সারা পৃথিবীর রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি বদলে গেছে। বদলে গেছে প্রযুক্তির আরও অনেক কিছু। সেই পরিবর্তনগুলো নিশ্চয় ইতিবাচক হবে।

সূত্র: ফোর্বস

ইংরেজি থেকে অনুবাদ: মারুফ ইসলাম

20
ব্যাংক নোট বা টাকায় নানা ধরণের জীবাণুর উপস্থিতি শনাক্ত হওয়া নতুন নয়।  বিভিন্ন সময় বিশেষজ্ঞরা টাকার মাধ্যমে সংক্রামক রোগ ছড়ানোর ঝুঁকির কথা বলেছেন।

বিভিন্ন দেশে এই নিয়ে গবেষণাও হয়েছে। ২০১৫ সালে দিল্লির ইন্সটিটিউট অব জিনোমিকস অ্যান্ড ইন্টিগ্রেটিভ বায়োলজির বিজ্ঞানীরা তাদের এক গবেষণা থেকে জানিয়েছেন, ভারতের বাজারে চালু নোটগুলোর ডিএনএ পরীক্ষা করে তাতে অন্তত ৭৮ রকম বিপজ্জনক মাইক্রোবের অস্তিত্বের প্রমাণ পেয়েছেন – যা থেকে মারাত্মক সব রোগ ছড়াতে পারে।

এদিকে বাংলাদেশের একদল গবেষকও গত বছরের এক গবেষণা থেকে জানিয়েছেন, বাংলাদেশি কাগুজে নোট ও ধাতব মুদ্রায় এমন সব ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি দেখা গেছে যা সাধারণত মলমূত্রের মধ্যে থাকে।

এ কারণে টাকার মাধ্যমে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা একবারে উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞরা জানান, ভাইরাস বাহকের শরীরে সক্রিয় হয়, অন্যত্র নিষ্ক্রিয় থাকে। টাকায় থাকলে এটি হয়তো নিষ্ক্রিয় থাকে, কিন্তু মানুষের সংস্পর্শে এলে সেটি করোনাভাইরাসের উপসর্গ বা রোগের সৃষ্টি করতে পারে।

বিশ্বজুড়ে এমন আশঙ্কার পর বিশেষজ্ঞরা, ব্যাংক নোট এড়িয়ে স্পর্শবিহীন মাধ্যম বা প্রযুক্তি ব্যবহার করে কেনাকাটা বা লেনদেন করার পরামর্শ দিয়েছেন।

স্পর্শবিহীন লেনদেন বা প্রযুক্তি বলতে, ব্যাংক নোট ছাড়া অন্য মাধ্যম যেমন কার্ড, বিভিন্ন ধরণের অ্যাপ যেমন বিকাশ বা নগদ অথবা অন্য কোন প্রযুক্তি ব্যবহার করে লেনদেনের কথা বোঝানো হয়েছে।

কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এ ধরণের পরামর্শ মেনে চলা কঠিন। কারণ এখানে শতভাগ লেনদেন হয় ব্যাংক নোটের মাধ্যমে।  এ কারণে বিশেষজ্ঞরা ব্যাংক নোট ব্যবহারের বিষয়ে বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। যেমন-

১. টাকা গোনার সময় অবশ্যই হাত দিয়ে মুখের লালা নেবেন না।

২.  ব্যাংক নোট বা টাকা নাড়াচাড়ার পরপর অবশ্যই সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলতে হবে। না পারলে স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হবে।

৩. যারা অত্যধিক মুদ্রা নাড়াচাড়া করেন, যেমন ব্যাংক কর্মী বা মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ীরা, তাদেরকে অবশ্যই অতিরিক্ত সতর্ক থাকতে হবে। তারা গ্লাভস পরে নিতে পারেন। সতর্কতা হিসেবে হ্যান্ড স্যানিটাইজারও ব্যবহার করতে পারেন।

৪. টাকা ধরা বা ব্যবহারের পর পরই চোখ, নাক বা মুখে হাত দেয়া যাবে না।

৫. এটিএম বুথের বাটন বা টাকা থেকেও সংক্রমণ ছড়াতে পারে। এ কারণে  টাকা তোলার পর সতর্কতা হিসেবে হাতে স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে পারেন।

সূত্র: বিবিসি

21
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সতর্ক করে বলেছে, সব বয়সীরাই করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকিতে রয়েছে। তবে প্রবীণ, যাঁদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম এবং যাঁদের দীর্ঘমেয়াদি রোগ রয়েছে, এমন ব্যক্তিরা বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন। ক্যানসার রোগ এবং ক্যানসার চিকিৎসা উভয়ই শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমিয়ে দেয়। তবে সব ক্যানসার রোগী সমান ঝুঁকিপূর্ণ নয়। অপেক্ষাকৃত বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে—

■ রক্তের ক্যানসারে (লিউকোমিয়া, লিম্ফোমা, মাল্টিপল মায়লোমা) আক্রান্ত রোগী।

■ কেমোথেরাপি নেওয়া যেকোনো রোগী।

■ রক্তে শ্বেতকণিকার সংখ্যা স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে কম থাকা রোগী।

এই অবরুদ্ধ সময়ের মধ্যেই হয়তো অনেকের কেমোথেরাপি বা চিকিৎসকের নিয়মিত ফলোআপের তারিখ পড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি সম্ভব হয় আপনার ক্যানসার বিশেষজ্ঞ চাইলে এ সময় কেমোথেরাপির শিডিউল পরিবর্তন করতে পারেন। আবার যাঁরা ইতিমধ্যে কেমো বা রেডিওথেরাপি নিচ্ছেন, তাঁদের জন্যও বিশেষ সতর্কতা দরকার। তার আগে জেনে নিন কী উপসর্গ দেখা দিলে সতর্ক হবেন। সাধারণ উপসর্গগুলো হলো—

■ জ্বর।

■ কাশি।

■ হাঁচি।

■ নাক দিয়ে পানি পড়া।

■ নাক বন্ধ।

■ গলাব্যথা।

■ খাবারের স্বাদ কমে যাওয়া।

■ পাতলা পায়খানা।

■ গা–হাত–পাব্যথা।

ফুসফুসের জটিলতার সঙ্গে যদি নিচের উপসর্গ দেখা দেয়, তাহলেও সতর্ক হতে হবে—

■ বুকে চাপ, ব্যথা।

■ শ্বাসকষ্ট।

■ ঠোঁট, মুখ নীল বর্ণ ধারণ।

■ চেতনা হারানো।

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সাধারণ কিছু বিষয় যেমন মাস্ক ব্যবহার করা, বাড়িতে থাকা, বারবার সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, চোখ-মুখ স্পর্শ না করা, সামাজিক দূরত্বের নিয়মকানুন মেনে চলা (কমপক্ষে তিন ফুট বা এক মিটার দূরত্ব বজায় রাখা, হাত মেলানো ও কোলাকুলি না করা) ইত্যাদি ক্যানসার রোগীদের ক্ষেত্রে কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে। এ ছাড়া রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে নিচের কাজগুলো করতে পারেন—

■ পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন। কমপক্ষে আট ঘণ্টা ঘুমান।

■ ব্যায়াম করুন।

■ ঘরে আলো-বাতাসের পর্যাপ্ত প্রবাহ নিশ্চিত করুন।

■ পুষ্টিকর ও সুষম খাবার (মাছ, মাংস, ডিম, শাকসবজি, ফলমূল, ভিটামিন–সিসমৃদ্ধ খাবার) খান।

■ পর্যাপ্ত পানি ও পুষ্টিসমৃদ্ধ পানীয় পান করুন।

■ ধূমপান ও জর্দা গ্রহণ থেকে পুরোপুরি বিরত থাকতে হবে।

■ রক্তচাপ, রক্তের সুগার ও কিডনির কার্যকারিতা স্বাভাবিক এবং ফুসফুসের প্রদাহজনিত রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করুন।

■ রাত জাগা ও মানসিক চাপ রোগ প্রতিরোধক্ষমতার ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। তাই যতটা সম্ভব নিরুদ্বেগ ও স্বচ্ছন্দ থাকুন।

অধ্যাপক পারভীন শাহিদা আখতার মেডিকেল অনকোলজিস্ট, শান্তি ক্যানসার ফাউন্ডেশন, সাবেক বিভাগীয় প্রধান, জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল

সূত্র: প্রথম আলো

22
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান সাইফ উল্লাহ মুন্সি বলেছেন, করোনাভাইরাস মানুষের ফুসফুসের বায়ুথলির কোষের ভেতর ঢুকে যায়। এরপর বায়ুথলির কার্যকারিতা নষ্ট করে ফেলে। তখন আক্রান্তের দেহে অক্সিজেনের স্বল্পতা হয়। দেখা দেয় তীব্র শ্বাসকষ্ট। এভাবে করোনাভাইরাস মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়।

প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সাইফ উল্লাহ এসব কথা বলেন।

মানবদেহে ঢুকে কীভাবে করোনাভাইরাস ফুসফুসের কার্যকারিতা নষ্ট করে ফেলে, সে ব্যাপারে সাইফ উল্লাহ মুন্সি বলেন, যখন এই ভাইরাস (করোনাভাইরাস) মানুষের ফুসফুসে আসে, তখন বায়ুথলির অ্যালভিউলা কোষের রিসেপ্টরের সঙ্গে ভাইরাসটা সংযুক্ত হয়। খুব সহজে করোনাভাইরাস বায়ুথলির কোষের ভেতর ঢুকে যায়। একপর্যায়ে বায়ুথলির কোষগুলো মরে যায়। বায়ুথলির যে কার্যকারিতা, যে ফাংশন, বায়ু সংবহন করার যে ক্ষমতা, সেই কাজটা সে করতে পারে না। ফলে আমাদের অক্সিজেনের অভাব হয়। একপর্যায়ে নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, জ্বর, ক্ষুধামান্দ্য, দুর্বলতা—এসব লক্ষণ প্রকাশ পায়। নিউমোনিয়ার যে কমপ্লিকেশন অর্থাৎ অক্সিজেনের অভাবে রোগী মারা যায়।


যেসব দেশে তাপমাত্রা বেশি, সেখানে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের হার কেমন, সে ব্যাপারে অধ্যাপক সাইফ উল্লাহ বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধের তাপমাত্রা কোনো ফ্যাক্টর কি না, সে ব্যাপারে যে স্টাডি হয়েছে, তা মূলত পরিসংখ্যানগত। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত কয়েকটা স্টাডি এসেছে। বলা হচ্ছে, ৩০ ডিগ্রি অক্ষাংশ থেকে ৫০ ডিগ্রি অক্ষাংশের যে বেল্ট, সেখানে এখন শীতকাল চলছে। ভাইরাস মূলত ঠান্ডাতে যেভাবে সংরক্ষিত হয়, উষ্ণ মণ্ডলে সেভাবে সংরক্ষিত হয় না। ফলে পরিসংখ্যানগত স্টাডিতে দেখানো হচ্ছে, যেসব দেশে উষ্ণতা অনেক কম, আর্দ্রতা অনেক কম, ফলে ভাইরাসের সার্ভাইবেলিটি অনেক বেশি। একজন থেকে আরেকজনে সংক্রমিত হচ্ছে বেশি। কিন্তু এর বিপরীত চিত্র দেখা গেছে, যেখানে ৩০ ডিগ্রির বেশি তাপমাত্রা অর্থাৎ সাড়ে ২৩ ডিগ্রি অক্ষাংশের দেশগুলোতে (যেমন বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর) অত বেশি সংক্রমিত হচ্ছে না। আসলে এই স্টাডি একটা হাইপোথিসিস। এই হাইপোথিসিস কতখানি সত্য, তা সময় বলে দেবে।

এই চিকিৎসক বলেন, এ নিয়ে আত্মতৃপ্তিতে ভোগার কোনো অবকাশ নেই; বরং আমাদের উচিত হবে, আমরা যে প্রক্রিয়ার মধ্যে আছি, সেই প্রক্রিয়া দৃঢ়ভাবে সফল করা। এটাতে আমরা যদি সফল না হতে পারি, তাহলে কিন্তু কমিউনিটি ট্রান্সমিশন বা লোকাল ট্রান্সমিশন হয়ে যাবে। বহু মানুষ আক্রান্ত হবেন এবং বাংলাদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর বিশাল চাপ প্রয়োগ করবে। সুতরাং আবহাওয়াজনিত উপাত্ত দিয়ে যে মডেলিং করা হচ্ছে, এটার ওপর আমরা মোটেও আস্থা রাখব না। আমরা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার মতো পরিবেশে ঘুরে বেড়াব না।

বিএসএমএমইউর ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান সাইফ উল্লাহ মুন্সি মনে করেন, এই ভাইরাসকে প্রতিরোধ করতে হবে। বর্তমানে যেভাবে করছি, সেটা একটা পদ্ধতি। মাস্ক পরা, গ্লাভস পরা কিংবা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। এটা কিন্তু ভাইরাস সংক্রমণ থেকে বাঁচাবে না। কেউ না কেউ আক্রান্ত হবেই। আমাদের ফোকাস করতে হবে ওষুধের দিকে। এই ভাইরাসকে আমরা যাতে ধ্বংস করতে পারি, এমন ওষুধ তৈরি করতে হবে আমাদের। আর দরকার ভ্যাকসিন, আমরা যাতে প্রতিকার করতে পারি। এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসের হাত থেকে বাঁচার জন্য বাজারে স্বীকৃত কোনো ওষুধ পাওয়া যায়নি। কিছু ওষুধের নাম বলা হচ্ছে। যেমন হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন, যেটা ম্যালেরিয়া রোগের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। এখন পর্যন্ত স্বীকৃত কোনো প্রতিষ্ঠান কিন্তু এই ওষুধের স্বীকৃতি দেয়নি। ফলে আমাদের হাতে কোনো ওষুধ নেই। অন্যদিকে ভ্যাকসিনের কথা যদি বলি, এখন পর্যন্ত কোনো ল্যাবরেটরিতে প্রমাণিত হয়নি, কোন ভ্যাকসিন আমাদের শরীরে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ করবে।

সাইফ উল্লাহ বলেন, এ মুহূর্তে কোনো ভ্যাকসিন ল্যাবরেটরিতে যদি আবিষ্কৃতও হয়, তাহলেও তা বাজারে আসতে দেড় থেকে দুই বছর সময় লাগবে। কারণ, একটা ভ্যাকসিন তৈরি করতে হলে তার কতগুলো ফেইস ট্রায়ালের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। চারটি ট্রায়াল দিতে হয়। ফেইস-ওয়ান, ফেইস-টু, ফেইস-থ্রি, ফেইস-ফোর। ট্রায়ালটা শেষ করতে দেড় থেকে দুই বছর লেগে যায়। তারপর আমরা একটা ভ্যাকসিন পাব। অর্থাৎ এখন যদি ভ্যাকসিন তৈরি হয়, তবু তা বাজারে আসতে দেড় থেকে দুই বছর সময় লেগে যাবে। এর মধ্যে কিন্তু অনেক মানুষ মৃত্যুবরণ করবে। এ মুহূর্তে আমরা একটা অনিশ্চয়তার মধ্যে আছি এই ভাইরাসকে নিয়ে।

সাইফ উল্লাহ মুন্সি বলেন, মনে করছিলাম, আমরা সব সংক্রামক রোগকে দমন করে ফেলেছি। এইচআইভি আর হেপাটাইটিস ছাড়া আর কোনো অসুখ ওইভাবে সংক্রমিত হচ্ছিল না। আমাদের নজর চলে গিয়েছিল, নন–কমিউনিকেবল ডিজিজের দিকে। যেমন হার্ট ডিজিজ, ডায়াবেটিস ডিজিজের দিকে। কিন্তু করোনাভাইরাস রোগটা আসার ফলে আমাদের চিন্তা করতে হচ্ছে, ভাইরাস আমাদের জন্য বড় হুমকি, মানবসভ্যতার জন্য বড় হুমকি। নিকট অতীতে অনেক ভাইরাস এসেছে, আমরা সাফল্যজনকভাবে সেগুলো নির্মূল করতে পেরেছি বিধায় মানবজাতি এখনো টিকে আছে। অদূর ভবিষ্যতেও কিন্তু আমাদের জন্য আরও অনেক হুমকি আসবে।

ভাইরোলজিস্ট সাইফ উল্লাহ বলেন, বাংলাদেশে সংক্রামক ব্যাধি নিয়ে গবেষণার ক্ষেত্রটা একেবার স্বল্প। এটাকে অবশ্যই আমাদের দেশের স্বার্থে, জাতির স্বার্থে সংক্রামক ব্যাধি নিয়ে গবেষণার ক্ষেত্রটা বৃদ্ধি করা উচিত। কিছু প্রতিষ্ঠান তৈরি করা উচিত। যারা সংক্রামক ব্যাধি নিয়ে গবেষণা করবে। অবশ্যই আমাদের ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি থাকা উচিত। অনেকে দেশে এ ধরনের ইনস্টিটিউট রয়েছে। যারা শুধু সংক্রামক ব্যাধি নিয়ে গবেষণা করে। যখন ৮০ শতাংশ লোক এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যাবে, তখন কিন্তু আর এই ভাইরাস ট্রান্সমিটেড হবে না। এটা স্বাস্থ্যের অতীত ইতিহাস আমাদের বলে। যখন ৮০ শতাংশ লোক এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যাবে, তখন এই ভাইরাসটা দ্বিতীয়, তৃতীয় ব্যক্তিতে ছড়াতে পারবে না। কিন্তু এরপর যে আফটার ম্যাথ, তা হলো অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু হয়ে যাবে পুরো বিশ্ব।

Source: Prothom Alo

23
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বিশ্বজুড়ে নানা ওষুধ ও ভ্যাকসিন নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। এর মধ্যে মার্কিন গবেষকেরা একটি সুখবর দিচ্ছেন। তাঁরা দাবি করছেন, করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে পারে, মুখে খাওয়ার এমন ওষুধ বা বড়ি নিয়ে পরীক্ষাগারে সফল পরীক্ষা চালিয়েছেন তাঁরা।

এই বড়ি টেস্টটিউবে মানুষের ফুসফুসের কোষের প্রতিলিপিতে করোনাভাইরাস বিস্তারে বাধা দিতে সক্ষম হয়েছে। এ ছাড়া ইঁদুরের ওপরও এ ওষুধ নিয়ে তাঁরা গবেষণা করে দেখেছেন। এ ক্ষেত্রে ইঁদুরের ক্ষেত্রে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত করোনাভাইরাসকে পুনরুৎপাদনে বেশ কিছুদিন বাধা দেওয়ার এবং ফুসফুসের কার্যকারিতা উন্নত করার প্রমাণ পেয়েছেন তাঁরা।

ওষুধটিকে গবেষকেরা বলছেন, ‘ইআইডিডি-২৮০১’। এটি মূলত সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের উচ্চ সংখ্যায় পুনরুত্পাদন এবং সংক্রমণে বাধা সৃষ্টি করে। গবেষণা–সংক্রান্ত নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে ‘সায়েন্স ট্রান্সলেশনাল মেডিসিন’ সাময়িকীতে।

গবেষকেরা বলছেন, তাঁদের তৈরি ওষুধটি এখনো মানুষের ক্ষেত্রে পরীক্ষা করে দেখা হয়নি। তবে এর প্রভাব যদি মানুষের ক্ষেত্রেও একই রকম হয়, তবে কোভিড-১৯ মহামারির ক্ষেত্রে এটাই হবে প্রথম বড়ি।

যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির তথ্য অনুযায়ী, আজ বুধবার সকাল পর্যন্ত করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১৪ লাখ ২৯ হাজার ৪৩৭ ছাড়িয়েছে। বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ৮২ হাজার ৭৪ জন। এর মধ্য ইতালিতে ১৭ হাজার ১২৭ জন মারা গেছেন, যা এখন পর্যন্ত কোনো দেশের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মুখে খাওয়ার ওষুধ বা বড়ি হিসেবে করোনার ওষুধ পেলে তা আশীর্বাদ হবে। কারণ, শিরায় ইনজেকশন দেওয়ার চেয়ে বেশি লোককে ওষুধ দেওয়া সহজ হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের ইমোরি বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ ক্যারোলাইনা বিশ্ববিদ্যালয় ও ভ্যান্ডারবিল্ট ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টারের একদল গবেষক নতুন ওষুধ নিয়ে গবেষণা করেছেন। ইতিমধ্যে রিজব্যাক বায়োথেরাপিউটিক্স নামের একটি প্রতিষ্ঠান ওই ওষুধের লাইসেন্স নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) ওষুধ পরীক্ষার জন্য অনুমতিও দিয়েছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ১০ জন রোগীকে ভাইরাস প্রতিরোধী ওই ওষুধ দিয়ে পরীক্ষা করা হবে।

এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর যৌথ গবেষক দলটি খুঁজে দেখেছিল যে গিলিয়াড সায়েন্সের পরীক্ষামূলক রেমডেসিভির নামের ওষুধ করোনাভাইরাসের প্রতিলিপি তৈরি বন্ধ করতে কার্যকর ছিল। গিলিয়াড সায়েন্স নামে একটি আমেরিকান বায়োটেকনোলজি কোম্পানির একটি অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ এখন ছোট আকারে কিছু রোগীর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে। এটার নাম রেমডেসিভির এবং এদের বৈজ্ঞানিক ভাষায় বলা হয় নিওক্লিওটাইড অ্যানালগ। এটা ডিএনএ যে মূল যৌগ দিয়ে তৈরি, তার মতো একটি যৌগ। এই ধরনের কিছু ওষুধ বর্তমানে এইচআইভি ভাইরাসের প্রতিরোধে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। রেমডেসিভির তৈরি করা হয়েছিল আফ্রিকায় ইবোলা ভাইরাস প্রতিরোধ করার জন্য। এটা একটা ব্রড স্পেকট্রাম ভাইরাস প্রতিরোধক। তার মানে এটা বেশ কিছু ভাইরাস, যেমন: নিপা, মার্স, সার্স, ইবোলা এবং আরও কিছু ভাইরাসের প্রতিরোধে কাজ করে। এ বছরের জানুয়ারি মাসে এই ওষুধ ওয়াশিংটন স্টেটের একজন একজন রোগীর ক্ষেত্রে অনুমতি সাপেক্ষে প্রয়োগ করা হয়েছে।

বর্তমানে রেমডেসিভির আলোচনায় আসার কারণ এটি দিয়ে গত মার্চ মাসে সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের বিরুদ্ধে ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা শুরু করেছেন বিশেষজ্ঞরা। এপ্রিল মাসের শেষ নাগাদ এর ফল জানা যেতে পারে।

গবেষকেরা দাবি করছেন, গিলিয়াডের ওষুধের চেয়ে সফলভাবে করোনাভাইরাসের প্রতিলিপি তৈরি ঠেকাতে পারবে ইআইডিডি-২৮০১।

ইমোরি ইনস্টিটিউট ফর ড্রাগ ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক ও রসায়নের অধ্যাপক জর্জ পেইন্টার বলেন, বর্তমান কোভিড-১৯ সমস্যা বিবেচনায় গবেষণার ফলাফল জানানো গুরুত্বপূর্ণ।

২০১৮ সালে পেইন্টার ও তাঁর ল্যাবের গবেষকেরা ইনফ্লুয়েঞ্জার ওষুধ খোঁজ করার সময় ইআইডিডি-২৮০১ এর কার্যক্রম শনাক্ত করেন। গত অক্টোবরে করোনা মহামারি আসার আগে ইমোরি ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজের কাছ থেকে এক কোটি ৫৯ লাখ ডলার অর্থসাহায্য পায়। ফ্লু ভাইরাসের বিরুদ্ধে মানুষের ওপর ওষুধ পরীক্ষার জন্য ওই অর্থ পায় ইমোরি ইউনিভার্সিটি। তবে যখন করোনাভাইরাস আঘাত হানে তখন পেইন্টারের গবেষক দল তাদের লক্ষ্য বদলে ফেলে।

ইআইডিডি-২৮০১ করোনাভাইরাসের স্ব-অনুলিপি কার্যক্রমকে এমনভাবে বাধা দেয়, যা রেমডেসিভির থেকে পৃথক। রেমডেসিভির মূলত অনুলিপি তৈরির প্রক্রিয়া পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়। ইআইডিডি-২৮০১ ভাইরাসের আরএনএতে মিউটেশনের ক্ষতি করে, যাতে আরএনএ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং কোষের ক্ষতি করতে পারে না। এর বাইরে অন্যান্য আরএনএ ভাইরাসের বিরুদ্ধেও এটি কাজ করতে সক্ষম। তাই এটি একাধিক ভাইরাস রোধী ওষুধ হিসেবে কাজে লাগবে। কয়েকটি অ্যান্টিবায়োটিক যেমন একাধিক ব্যাকটেরিয়ার ক্ষেত্রে কাজ করে ইআইডিডি-২৮০১ তেমন কাজ করতে পারবেন।

যুক্তরাষ্ট্রের মায়ামিভিত্তিক প্রতিষ্ঠান রিজব্যাক বায়োথেরাপিউটিকসের সহপ্রতিষ্ঠাতা ওয়েন হোলম্যান বলেন, তাঁদের তৈরি যৌগটি প্রাথমিকভাবে প্রফিল্যাক্সিস বা সংক্রমণ এড়ানোর জন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের ক্ষেত্রে উপকারী হতে পারে। আরেকটি সম্ভাব্য ব্যবহার হচ্ছে নার্সিং হোমের বাসিন্দা ও কর্মীদের প্রাদুর্ভাব থেকে সুরক্ষা দেওয়া। তবে এর বিস্তৃত লক্ষ্য হচ্ছে, মুখে খাওয়ার বড়ি তৈরি, যা রোগ সংক্রমণের শুরুর দিকেই দিনে দুবার রোগীকে দেওয়া যাবে।

যুক্তরাষ্ট্রের পরীক্ষা শুরুর পাশাপাশি রিজব্যাক বায়োথেরাপিউটিকসের পক্ষ থেকে যুক্তরাজ্যেও এটি পরীক্ষা করার আবেদন করা হয়েছে। হোলম্যান বলেছেন, নতুন করোনা মহামারির ঠেকাতে আমরা তিন থেকে চার বছরের কাজ তিন থেকে চার সপ্তাহে করেছি। তথ্যসূত্র: ইসায়েন্স নিউজ, সায়েন্টিফিক আমেরিকান

24
এই সময়ে বাড়ির বাইরে যাওয়া অপরাধ বলে গণ্য হচ্ছে। তারপরও যদি জরুরি প্রয়োজনে যেতেই হয়, অবলম্বন করতে হবে কঠোর সতর্কতা যাতে বাইরে থেকে ভাইরাস নিয়ে আপনি বাড়িতে ঢুকে না পড়েন। এ রকম কিছু হয়ে গেলে এতোদিন ধরে বাড়িতে বন্দি থাকার সব কষ্টই পণ্ডশ্রমে পরিণত হবে। ১০টি নিয়ম মেনে চললে বাড়িতে ভাইরাস ঢুকে পড়ার আশঙ্কা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।

১. একান্ত প্রয়োজনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে বাইরে যান

খাবার কেনার জন্য, ওষুধ কেনার জন্য বা এ ধরনের একান্ত প্রয়োজনে বাইরে যেতে হলে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করে বাইরে যান। নিরাপত্তা বলতে সঠিক পদ্ধতিতে সঠিক মাস্ক পরুন, গ্লাভস পরুন। চোখ-মুখ নিরাপদ থাকে এমন ব্যবস্থা নিন। এই সব ক্ষেত্রে পিপিই’র মতো পেশাদার চিকিৎসকদের উপকরণ প্রয়োজন নেই। কিন্তু যথেষ্ট নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন।

২. সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন

বাইরে গিয়ে লোকজনের সাথে আড্ডাবাজিতে মোটেও বসবেন না। আপাতত বাংলাদেশে বাসার বাইরে যে কোনো ধরনের আড্ডাবাজি অপরাধ বলে গণ্য হচ্ছে। কারণ সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে চলাফেরা করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আড্ডাবাজিতে এ ধরনের নির্দেশনা মেনে চলা সম্ভব নয়। দোকানে লাইনে দাঁড়ালে সামনে ও পেছনের লোকের সাথে দূরত্ব রেখে দাঁড়ান। অন্যদেরও একই পরামর্শ দিন।

সুপারশপে বাজার করতে গেলে যে ট্রলি ব্যবহার করা হয়, আপাতত পরিহার করুন। প্রয়োজনে নিজস্ব প্লাস্টিকের ট্রলি ব্যবহার করুন। এই ধরনের ট্রলি ব্যবহার নিশ্চিত করতে না পারলে নিজস্ব বাজারের ব্যাগ ব্যবহার করুন। যা একবার ব্যবহার করে ফেলে দেওয়া সম্ভব।

৪. বাইরে থাকা অবস্থায় মুখমণ্ডলে হাত স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকুন

বিশেষজ্ঞরা বলছেন করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার প্রধান মাধ্যম হলো হাত। হাত দিয়ে আমরা যখন, নাক, চোখ স্পর্শ করি, হাতে জীবাণু থাকলে তখনই তা আমাদের শরীরে প্রবেশ করে। সুতরাং বাইরে থাকা অবস্থায় নাকে-মুখে হাত দেওয়া মারাত্মক বিপজ্জনক। নাক-মুখ-চোখ স্পর্শ করা বাদ দিন। চুলকালে জীবাণুমুক্ত টিস্যু ব্যবহার করুন।

৫. ফোন, ব্যাগ যেখানে সেখানে রাখা বাদ দিন

বাজার করতে করতে হাতের ব্যাগটা ভারী হয়ে গেলে আমরা যেখানে সেখানে রেখে দেই। কিন্তু এই পদক্ষেপটি অত্যন্ত বাজে পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। এ ছাড়া হাতের ফোনটাও যখন তখন যেখানে সেখানে রাখার অভ্যাস আছে অনেকের। এই ধরনের অভ্যাস ত্যাগ করা অত্যন্ত জরুরি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শক্ত ও সমতল ভূমির উপর অন্তত ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত করোনা ভাইরাসের জীবাণু টিকে থাকতে পারে। আমরা যেহেতু জানি না ভাইরাস কোথায় কোথায় আছে, সুতরাং নিরাপত্তার জন্য সতর্কতা অবলম্বনের বিকল্প নেই।

৬. বাসায় ফিরেই সব কিছু জীবাণুমুক্ত করে নিন

বাজারের ব্যাগ, জুতা, জামা-কাপড় যে কোনো কিছুতে ভাইরাসের জীবাণু লেগে থাকতে পারে এবং সেখান থেকে শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। সুতরাং ভুলেও বাইরে পরা জুতা নিয়ে বাসায় ঢুকবেন না। জুতা বাসার বাইরে রাখুন এবং অবশ্যই জুতায় জীবাণুনাশক স্প্রে করুন। বাজারের ব্যাগেও জীবাণুনাশক স্প্রে করে দিন। বাসায় প্রবেশ করা মাত্র গ্লাভস ফেলে দিন, হাত ধুয়ে ফেলুন এবং জামা-কাপড় গরম পানিতে ধুয়ে ফেলুন।

৭. দরজার হাতল, বেসিনের কল নিজে ধরা থেকে বিরত থাকুন

বাজার থেকে বাসায় এসে দরজার হাতলে সরাসরি হাত রাখা থেকে বিরত থাকুন। দরজা খুলতে হলে কনুই, হাতের পিঠের দিকট ব্যাবহার করুন। প্রয়োজনে বাসার ভেতরে থাকা লোকের সহায়তা নিন। বেসিনে হাত ধোয়ার সময়ও সম্ভব হলে কনুই ব্যবহার করুন। কল ছাড়ার জন্য কনুইয়ের ব্যবহার ঝুঁকি কমিয়ে দিবে। আর যদি কলটি ঘুরিয়ে খুলতে হয়, তাহলে সেটাই করুন। কিন্তু হাত ধোয়ার সময় কলটাও ধুয়ে ফেলার কথা ভুলেও ভুলবেন না।

৮. সঙ্গে করে অন্য কাউকে নিয়ে আসার কথা ভুলে যান

রাস্তা- ঘাটে বা বাসার নিচে বন্ধুদের সাথে দেখা হলেই আমরা তাদেরকে বাসায় নিয়ে আসি। স্বাভাবিক বাংলাদেশি সংস্কৃতিতে চেনা পরিচিতদের বাসায় দাওয়াত দেওয়ার অনুশীলন খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু এখন যেহেতু সময়টাই স্বাভাবিক নয়, সেহেতু স্বাভাবিকতার চর্চা করারও সুযোগ নেই।

৯. সম্ভব হলে দ্রুত গরম পানিতে গোসল করে নিন

কুসুম গরম পানি জীবাণু ধ্বংস করে দেয়। এ ছাড়া সাবানের ব্যবহার তো আছেই। বাইরে থেকে এসে সব সতর্কতা গ্রহণের পাশাপাশি গোসলটাও করে ফেলুন এবং ব্যবহার করুন কুসুম গরমপানি। মাথায় শ্যাপ্মু করুন। শরীরের কোনো অংশে জীবাণু লেগে থাকলে গোসল করার মাধ্যমে তা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।

১০. একজনের বেশি বাইরে যাবেন না

জরুরি কাজের জন্য একেকবার একেকজন বাইরে যাবেন না। বাসা থেকে একজনের বেশি লোক বাইরে যাওয়া মানেই ভাইরাস নিয়ে বাসায় ঢোকার শঙ্কা বেরে যাওয়া। একবার বাসায় ভাইরাস ঢুকে গেলে, তাতে আক্রান্ত হতে পারেন বাড়ির সকলেই। সুতরাং নিজের ভুলের কারণে যাতে পরিবারের সবাই ঝুঁকিতে না পড়ে, সে দিকে খেয়াল রাখাটা অবশ্য কর্তব্য।

25
বিশ্বজুড়েই করোনার সংক্রমণে রোগীর সংখ্যা ও মৃত্যু বাড়ছে। বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে, করোনার সংক্রমণের ঝুঁকিতে সবচেয়ে বেশি রয়েছে প্রবীণেরা। এ ছাড়া হৃদ্‌রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি জটিলতাসহ দীর্ঘমেয়াদি রোগ রয়েছে এবং শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা যাদের কম, তারাও করোনার ঝুঁকিতে রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও একই কথা বলছে। কাজেই এ সময় এ ধরনের রোগীদের বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

বাড়তি সতর্কতা
* বিশেষ জরুরি প্রয়োজন না পড়লে বাড়িতেই থাকা ভালো।
* সব ধরনের জনসমাগম এড়িয়ে চলতে হবে।
* ডায়াবেটিস, হৃদ্‌রোগ বা উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ নিয়মমতো চালিয়ে যাবেন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ বন্ধ করা যাবে না।
* যেকোনো সর্দি, কাশি, জ্বরে আক্রান্ত রোগী থেকে কমপক্ষে তিন ফুট বা এক মিটার দূরে থাকুন। বাড়িতে কারও জ্বর-কাশি হলে তার থেকে অবশ্যই আলাদা থাকবেন।

অন্য সতর্কতা
* সাবান দিয়ে কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড ধরে বারবার হাত ধোয়ার অভ্যাস করতে হবে।
* নাক, মুখ ও চোখ স্পর্শ করা যতটা সম্ভব এড়াতে হবে।
* হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার মেনে চলতে হবে। রুমাল বা টিস্যু ব্যবহার করতে হবে। রুমাল বা টিস্যু না থাকলে প্রয়োজনে কনুই দিয়ে নাক–মুখ ঢেকে নিন। হাত ব্যবহার করা থেকে
বিরত থাকুন।
* মাস্ক ব্যবহার করলে হাতের স্পর্শ নাক-মুখে লাগার সম্ভাবনা তুলনামূলকভাবে কম থাকে। সংক্রমণের ঝুঁকিও কমে। তাই প্রয়োজনে মাস্ক ব্যবহার করুন।
* হৃদ্‌রোগীরা যেকোনো ধরনের শ্বাসকষ্ট, কাশি, জ্বর দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন। নিয়মিত বাড়িতে রক্তচাপ ও রক্তের শর্করা মাপবেন। চিকিৎসকের সঙ্গে মুঠোফোনে বা অনলাইনে যোগাযোগ রাখবেন।

Source: Prothom Alo

26
কোভিড-১৯ বা করোনাভাইরাস নিয়ে আমরা ইতোমধ্যেই টিভি, সংবাদ মাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে বিভিন্নরকম তথ্য ও পরামর্শ জানতে পারছি। করোনাভাইরাস নিয়ে ব্র্যাকের সচেতনতামূলক কার্যক্রমের অংশ হিসাবে বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক প্রধানরা বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর, তথ্য ও পরামর্শ দিয়েছেন। কথা বলেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ব্যাক্তিগত চিকিৎসক ও ইউ জি সি অধ্যাপক এ বি এম আব্দুল্লাহ।

তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়, সবার কি করোনা পরীক্ষা করার দরকার আছে? অধ্যাপক এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, "সবার ঢালাওভাবে করোনা পরীক্ষা করানোর দরকার নেই। যার লক্ষণ নেই বা বিদেশ ফেরত নন বা বিদেশ থেকে এসেছে এমন কারো সংস্পর্শে আসেননি তাদের করোনা পরীক্ষা করানোর কোন দরকার নেই।" তিনি আরো বলেন, "করোনাভাইরাস পরীক্ষা করাতে হলে আগে লক্ষণ যেমন সর্দি, কাশি, জ্বর হতে হবে। পরীক্ষার জন্য মুখের লালা স্যাম্পল হিসাবে নিতে হয়। যার কাশিই হয়নি, তার তো স্যাম্পলই নেওয়া যাবে না, পরীক্ষা করলেও কিছু পাওয়া যাবেনা।" তাহলে পরীক্ষা কারা করাবেন? এর উত্তরে তিনি বলেন, "যারা বিদেশ থেকে এসেছেন বা বিদেশ ফেরত ব্যক্তির সংস্পর্শে এসেছেন। এসেই জ্বর, সর্দি, কাশিতে ভুগছেন, তখন তারা পরীক্ষা করিয়ে নিতে পারেন।" তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়, অন্য জ্বরের সাথে করোনার লক্ষণের পার্থক্য কোথায়? তিনি বলেন, "করোনার লক্ষণের মধ্যে পড়ে জ্বর, সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট বা একটু বেশি জটিল হলে নিউমোনিয়া ইত্যাদি। কিন্তু সাধারণ জ্বর সর্দি কাশির সাথে শুধুমাত্র লক্ষণ দেখে বলা যাবে না যে এটাই করোনাভাইরাস বা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নয়। পরীক্ষা না করিয়ে কোনভাবেই সেটা বলা যাবেনা।"

করোনাভাইরাস নিয়ে ডাক্তারদের করণীয় সম্পর্কেও তিনি পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, "করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী সন্দেহ হলে আইইডিসিআর এ যোগাযোগ করতে হবে, হটলাইন নাম্বার আছে সেখানেও যোগাযোগ করতে পারবেন। আর ডাক্তারদের অবশ্যই রোগীকে চিকিৎসা দিতে হবে। ব্যাক্তিগতভাবে সুরক্ষার ব্যবস্থা নিয়ে যেমন গাউন পরা, মাস্ক, মাথার টুপি, হাতের গ্লাভস পরে নিয়ে রোগীর চিকিৎসা করতে হবে, রোগীকে অবহেলা করা যাবে না। সাথে নিজের সুরক্ষার কথাও ভাবতে হবে।"

তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয় করোনাভাইরাসে শিশুরা কি কম আক্রান্ত হয়? তিনি বলেন, "এখন পর্যন্ত দেখা গেছে বিশ্বব্যাপী শিশুদের আক্রান্তের হার কম। করোনাভাইরাসে যারা মারা গেছেন তাদের বেশিরভাগেরই বয়স ৪০ বছরের উপরে। তবে শিশুরা যে একদম আক্রান্ত হবেই না সেটা বলা যায় না।" করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সাথে তাপমাত্রার কি কোন সম্পর্ক আছে? তিনি বলেন, "আগে ভাবা হতো শীতকালে ঠান্ডা-সর্দি বেশি লাগে। দক্ষিণ চীনে যখন করোনাভাইরাসের প্রকোপ হোল তখন সেখানে তাপমাত্রা কম ছিল। এরপর সিঙ্গাপুর, মিডল ইস্ট, সৌদি আরবেও করোনার প্রকোপ হোল যেসব দেশে তাপমাত্রা অনেক বেশি। তাই তাপমাত্রা বেশি থাকলে করোনাভাইরাস ছড়াবে না সেটা ভেবে বসে থাকলে হবে না। প্রতিরোধের জন্য নিয়ম মেনে চলতে হবে।"

করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হোন। নিজে সতর্ক থাকুন এবং অন্যকেও জানান।

Source: Prothom Alo

27
করোনাভাইরাস পরিস্থিতি দিন দিন ভয়াবহ হচ্ছে। কিন্তু এর মধ্যেই আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হতে হবে এবং নিয়ম মেনে চলতে হবে। করোনাভাইরাস নিয়ে ব্র্যাকের সচেতনতামূলক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে কথা বলেছেন ও পরামর্শ দিয়েছেন আইইডিসিআরের পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।

মীরজাদী সেব্রিনার কাছে প্রশ্ন ছিল, কারা আইইডিসিআরে যোগাযোগ করতে পারবে? তিনি বলেন, সবার আইইডিসিআরে যোগাযোগ করার দরকার নেই। যদি সদ্য বিদেশফেরত কেউ বা বিদেশফেরত ব্যক্তির সঙ্গে মিশেছেন এমন কারও জ্বর, সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট—এই উপসর্গগুলো দেখা যায় বা করোনাভাইরাস সন্দেহ হয়; তাহলেই আইইডিসিআরে যোগাযোগ করতে পারবে। আইইডিসিআরের সহযোগিতা পাওয়ার জন্য ফেসবুক পেইজ খোলা হয়েছে-IEDCR COVID-19 Control Room, ই-মেইল ঠিকানা: iedcrcovid 19 @gmail. com, আইইডিসিআরের হটলাইন নম্বর 333, স্বাস্থ্য বাতায়ন 16263.

মীরজাদী সেব্রিনা করোনা পরিস্থিতে মানুষের করণীয় নিয়ে বলেন, ‘এই মুহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে করোনাভাইরাস প্রতিরোধের জন্য ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। যদি বাড়িতে কারও জ্বর হয় তাহলে তাকে অবশ্যই পরিবারের সদস্যদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। পরীক্ষা করার পর হয়তো বলা যাবে সেটা করোনাভাইরাস কি না, কিন্তু সর্দি-কাশি হলে অবশ্যই অন্যদের থেকে দূরে থাকতে হবে। বারবার সাবান দিয়ে হাত ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘সবাইকে সাধারণ হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার মেনে চলতে হবে। আমরা যখন হাঁচি-কাশি দিই, তখন সেটার ড্রপলেট এক মিটার পর্যন্ত থাকে। তাই এই এক মিটার এর মধ্যে যাওয়া যাবে না বা তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।’

মীরজাদী সেব্রিনার কাছে জানতে চাওয়া হয়, হোম কোয়ারেন্টিন কী? কীভাবে করতে হবে? জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা হোম কোয়ারেন্টিইন বলতে বুঝিয়েছি ঘরের মধ্যে থাকা। যদি কোনো ব্যক্তি জ্বর, সর্দি, কাশিতে আক্রান্ত হন, তাহলে তাকে নিজের ঘরে এমনকি পরিবারের অন্য সদস্যদের থেকেও দূরত্ব বজায় রাখতে হবে, যত দিন না তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন।’

করোনাভাইরাস নিয়ে নিজে সচেতন হোন এবং অন্যকেও জানান। নিয়ম মেনে চলুন। সুস্থ থাকুন।

Source: Prothom Alo

28
দেশে একটি বিশাল বেকার জনগোষ্ঠী তৈরি হওয়ার পেছনে মূল কারণগুলোর একটি হলো উদ্যোক্তার অভাব। এই অভাবটি মূলত সৃষ্টি হয়েছে উদ্যোক্তা হিসেবে সফল হতে না পারার ভীতির কারণে। আমরা অনেকেই ভাবি যে একজন সফল উদ্যোক্তা হতে হলে হয়তোবা প্রচন্ড রকমের সৃজনশীল হতে হবে কিংবা যুগান্তকারী একটি আইডিয়া থাকতে হবে। কিন্তু ব্যাপারটি আসলে সম্পূর্ণরূপে ওরকম না। সফল উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনে কাজ করে আরো অনেকগুলো বিষয়। তার মধ্যে একটি হলো কর্মপরিকল্পনা গুলোর সঠিক বাস্তবায়ন।

তাহলে কি কি কাজ করলে একজন সাধারন মানুষ হতে পারবে একজন সফল উদ্যোক্তা? এই ব্যাপারগুলো পরিষ্কার ভাবে আপনাদের সামনে তুলে ধরতেই এই লেখাটি। চলুন জেনে নেই একজন সফল উদ্যোক্তা হতে হলে অবশ্যই করণীয় ১০ টি কাজ সম্পর্কে।

১) লক্ষ্য অর্জনে যথেষ্ট আগ্রহী হতে হবে

সাফল্য অর্জনের জন্য যদি তীব্র পরিমাণে উৎসাহ-উদ্দীপনা কাজ না করে, তবে সেই কাজ যথা সময়ে সঠিকভাবে সম্পন্ন হয় না। উদ্যোক্তা হিসাবে যদি আপনার মাঝেই উৎসাহ-উদ্দীপনার অভাব কাজ করে, তাহলে ভেবে দেখুন এর প্রভাবে আপনার স্টার্টাপের অন্যান্য সদস্য এবং কাস্টমারের অবস্থা কী হবে। আপনার উৎসাহ উদ্দীপনা দেখেই আপনার টিমের সদস্যরা অধিক কাজ করতে উৎসাহিত হবে। উৎসাহ উদ্দীপনার সাথে যখন আপনি এবং আপনার টিম কাস্টমারদের সেবা প্রদান করবেন, তখন কাস্টমারের ও আপনার প্রতিষ্ঠানের প্রতি আগ্রহ বাড়বে। কাস্টমারকে খুশী রাখাই একটি প্রতিষ্ঠান মূল উদ্দেশ্য। তাই কাস্টমার যখন আপনার প্রতিষ্ঠানের প্রতি খুশি হবে, তখন আপনি বুঝতে পারবেন যে আপনি উদ্যোক্তা হিসেবে সফলতার দিকে আরও একধাপ এগিয়ে গেলেন।

২) সুযোগ-সুবিধার দিকে নজর দিন

নিজের এবং প্রতিষ্ঠান এর সুযোগ সুবিধার দিকে নজর দিলে অযথা পরিশ্রমের অপচয় দূর করা সম্ভব। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানগুলো যে কাজটি করে থাকে সেটি হচ্ছে, যত কাজের সুযোগ পায় তত কাজই হাতে নিয়ে নেয়। এর ফলে যেটি হয়, অতিরিক্ত কাজের চাপের কারণে কোন কাজই সঠিকভাবে যথাসময়ে সম্পন্ন হয় না। এতে করে প্রতিষ্ঠানের দুর্নাম হয়। ফলে কমে যায় গ্রাহক সংখ্যা। কারণ গ্রাহক যে কাজের জন্য মূল্য দিচ্ছে সেই কাজ যদি সঠিক সময়ে সঠিকভাবে সম্পন্ন না হয়, তবে কেনই বা তারা পরবর্তীতে আবার একই প্রতিষ্ঠান ধার ধারবে?

তাই একগাদা কাজ হাতে নিয়ে গোলমাল পাকিয়ে ফেলার চেয়ে যতটুকু কাজ ঠিকভাবে করার সুযোগ রয়েছে ঠিক ততটুকু কাজই হাতে নিতে হবে। এতে করে কর্মচারীদের উপর যেমন চাপ কমবে তেমনি সঠিক এবং সুন্দর কাজের জন্য বাড়বে গ্রাহক সন্তুষ্টি। তাই যে কোনো কাজ হাতে নেয়ার ক্ষেত্রে সেই কাজটি করার জন্য প্রতিষ্ঠান যথেষ্ট সুযোগ সুবিধা রয়েছে কি না সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

৩) কঠোর পরিশ্রম করুন

একটি জিনিস আমাদের সবার মাথায় ভালো করে গেঁথে নেয়া দরকার। আর সেটি হচ্ছে সফলতা কোন সময়ই রাতারাতি অর্জিত হয় না। আমরা অনেককে রাতারাতি সফল হতে দেখে এই ভুল ধারণাটি আমাদের মাঝে জন্মে যায়। কিন্তু সাফল্যের পিছনে যে কত রাতের পরিশ্রম রয়েছে সেটি আমরা জানার চেষ্টা করি না। ভাগ্যের ওপর নির্ভর করে বসে থাকলে সাফল্যের ছোঁয়া পাওয়া বড়ই মুশকিল।

কঠোর পরিশ্রম দ্বারা ভাগ্যের পরিবর্তন করতে পারলেই হাতে ধরা দেবে সাফল্য। একজন সফল উদ্যোক্তা সকল কাজে নিজের সর্বোচ্চটুকু দেয়। আপনি যদি লক্ষ্য অর্জনের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যান তবে আপনার হতাশ হওয়ার কোন কারণই নেই। সাফল্য কোন না কোন সময় আপনার কাছে ধরা দেবেই।

৪) উপভোগ করতে শিখুন

লক্ষ্যের পেছনে ছুটে যেতে আপনাকে সবাই বলবে, কিন্তু সফল মানুষ আপনার সেই ছুটে যাওয়ার পথকে উপভোগ করতে শেখাবে। তারা আপনাকে শেখাবে চূড়ান্ত সাফল্যের পথে প্রতিটি অর্জনকে উদযাপন করতে। জীবনের অধিকাংশ মূল্যবান সময় লক্ষ্যের পেছনে ছুটতে গিয়ে সেই সময়টা যদি উপভোগই করতে না পারেন তবে কী লাভ সেই লক্ষ্য অর্জন করে? লক্ষ্য অর্জনের পথটা যদি উপভোগ্য হয় তাহলে আপনি এবং আপনার টিম কাজ সম্পন্ন করতে পারবেন প্রচণ্ড উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে। এর ফলে লক্ষ্যে পৌঁছতে পারুন কিংবা না পারুন, কোন কাজ করা নিয়ে আপনার কিংবা আপনার টিমের মাঝে কোন ধরনের হতাশা কাজ করবে না।

৫) নিজের উপর বিশ্বাস স্থাপন করুন

বাস্তব জীবনের অনেক কিছুই কাগজে কলমের যুক্তিতে মিলে না। কাগজ কলম এর হিসাব অনেক সময় আমাদের ভুল নির্দেশনা দেয়। এই হিসাব গুলো যদি আমাদের কল্পনার সাথে মিলে যায় তাহলে আমাদের মনে হয় এটাই বুঝি একমাত্র সমাধান। কিন্তু আসলে তা নয়। সাফল্যের আ আরও অনেক রাস্তা রয়েছে। সেই রাস্তা গুলো খুঁজে পেতে হয় নিজের বিচার-বিবেচনা দ্বারা। তাই কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার পূর্বে নিজের বিবেককে প্রশ্ন করুন। যদি আপনি নিজেকে সম্পূর্ণরূপে বিশ্বাস করেন তাহলে আপনার বিবেক আপনাকে ভুল নির্দেশনা দিবে না। নিজেকে সম্পূর্ণ বিশ্বাস না করলে আপনারা সিদ্ধান্তগুলো যথার্থ হবে না।

৬) নমনীয় হন তবে লক্ষ্য অর্জনে অটল থাকুন

প্রত্যেক উদ্যোক্তা কেই সব সময় সব সময় চটপটে থাকতে হয়। নতুন তথ্যের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হয় এবং সে অনুযায়ী পরিবর্তন আনতে হয়। আবার সেই সাথে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনে থাকতে হয় সদা অটল। এখানেও বিবেক কাজে লাগে। প্রতিষ্ঠানিক কোন কোন পরিবর্তন আনলে তা লাভজনক হবে আবার কোন কোন পরিবর্তন আনলে প্রতিষ্ঠান ক্ষতির সম্মুখীন হবে তার জন্য বিবেকের কাছে প্রশ্ন করতে হবে।

যদি আপনি দৃঢ় চিত্তে বিশ্বাস করেন যে পরিবর্তন আনা উচিত তাহলে তা অবশ্যই করবেন। অন্যথায় আপনি এবং আপনার প্রতিষ্ঠান হতে পারেন ক্ষতির সম্মুখীন। অর্থাৎ যেই বিষয় গুলোতে নমনীয় হলে বাড়বে আপনার লক্ষ্য অর্জনের সম্ভাবনা, সেই বিষয়গুলোকে চিনতে পেরে নমনীয় হতে পারতে হবে।

৭) টিমের উপর নির্ভর করতে শিখুন

একজন মানুষ এর পক্ষে সকল বিষয়ে পারদর্শী হওয়া সম্ভব নয়। যে যেই কাজটি পারে না তার সে কাজটি করে দেয়ার জন্য সেই বিষয়ে দক্ষ অন্য একজন মানুষের সাহায্য প্রয়োজন হয়। উদ্যোক্তারা সাধারনত এতটাই আত্মবিশ্বাসী হয় যে তারা বিশ্বাসই করতে চায় না যে কোন কাজ তাদের দ্বারা সম্ভব না। এই ভুল ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে অনেক সময় লাগে। তবে উদ্যোক্তা হিসেবে সফল হতে হলে যত দ্রুত সম্ভব বেরিয়ে আসতে হবে এই ভুল ধারণা থেকে।

প্রথমে যেটি করতে হবে তা হচ্ছে নিজের দক্ষতা এবং সামর্থ্য সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা অর্জন করতে হবে। তারপর যেসব বিষয় আপনার অন্যান্য দক্ষ মানুষের সাহায্য লাগবে সেই বিষয়গুলো খুঁজে বের করতে হবে। তারপর খুঁজে বের করতে হবে সেই বিষয়গুলোতে দক্ষ কিছু মানুষ। নিজের মত মানুষ খুঁজে পাওয়া সহজ, কিন্তু নিজের চেয়ে ব্যতিক্রম মানুষ যারা কিনা ভিন্ন বিষয়ে দক্ষ, তাদের খুঁজে পাওয়া বেশ কঠিন একটি কাজ। এই কঠিন কাজটি যদি আপনি সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে পারেন তবে আপনি আরো এক ধাপ এগিয়ে যাবে উদ্যোক্তা হিসেবে সফল হওয়ার দিকে।

৮) বাস্তবায়ন নিশ্চিত করুন

আপনি যদি সাধারণ কেউ হয়ে থাকেন, তাহলে আপনি এখন যে কাজটি করার কথা ভাবছেন সেই কাজটির আইডিয়া স্বাভাবিকভাবেই আরো অনেকের মাথায় আসার কথা। সফলতা অর্জনের জন্য যে চমকপ্রদ কোন আইডিয়া প্রয়োজন তা কিন্তু সব সময় সত্য নয়। অতি সাধারণ একটি আইডিয়ার খুব চমৎকার একটি বাস্তবায়ন এনে দিতে পারে অসাধারণ সাফল্য। খেলাধুলার ক্ষেত্রে শুধুমাত্র পরিকল্পনা দ্বারাই কিন্তু খেলা জেতা যায় না। খেলা জেতার জন্য প্রয়োজন মাঠে নেমে যখন যা প্রয়োজন তা করতে প্রস্তুত থাকা।

ব্যবসার ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা প্রায় একই রকম। দেখা গেল যে আপনি আপনার স্টার্টআপের জন্য অনেক অনেক পরিকল্পনা করলেন, পাওয়ার পয়েন্ট স্লাইড বানিয়ে ভরিয়ে ফেললেন, কিন্তু এত এত পরিকল্পনার কোনো সুষ্ঠু বাস্তবায়ন নিশ্চিত করলেন না। তাহলে কি লাভ হল এত কিছুর? কি করবেন এতো পরিকল্পনা দিয়ে?

অথবা দেখা গেল পরিকল্পনা করতে গিয়ে অনেক বেশি সময় ব্যয় করে ফেললেন। ফলে তা বাস্তবায়নের জন্য পেলেন খুবই স্বল্প সময়। বাস্তবায়ন করার সময় দেখা গেল আপনি আপনার ব্যবসার পরিবেশ যে রকম ভেবেছিলেন এখন আর সেরকম নেই। ফলে পূর্বের পরিকল্পনা খুব একটা কাজে আসছে না। পরিবর্তন আনতে হচ্ছে পরিকল্পনায়। কিন্তু আপনি প্রথম পরিকল্পনাতেই এত সময় ব্যয় করে ফেললেন যে নতুন পরিকল্পনা করার জন্য আপনার হাতে যথেষ্ট সময় নেই। এতে করে আপনার পুরো ব্যবসাটি বিশাল ক্ষতির সম্মুখিন হবে।

তাই পরিকল্পনার পেছনে খুব বেশি সময় অপচয় না করে বাস্তবায়নে নেমে পড়ুন। কারণ ব্যবসা করতে মাঠে নামলে পারিপার্শ্বিক অবস্থা বুঝতে পারা যায় এবং সেই অনুযায়ী তাৎক্ষণিক পরিবর্তন আনা যায়। আর বাস্তবায়ন করতে গেলে অনেক নতুন জিনিস শিখতে পারা যায় যা পরবর্তীতে ব্যবসায়িক কাজে সহায়তা করবে। খেয়াল রাখবেন পারিপার্শ্বিক পরিবেশের পরিবর্তনের সাথে সাথে আপনার প্রতিষ্ঠান কর্মকাণ্ডের পরিবর্তন আনতেও যেন আপনি সদা প্রস্তুত থাকেন। এতে বাড়বে আপনার সফল হওয়ার সম্ভাবনা।

৯) সততা এবং ন্যায়পরায়ণতা প্রদর্শন করুন

ভন্ডামি করে হয়তোবা সাময়িক সাফল্য অর্জন করা যায়। কিন্তু এই সাফল্য বেশিদিন বিদ্যমান থাকে না। আপনি দেখবেন যেসব প্রতিষ্ঠান তার গ্রাহকদের সাথে প্রতারণা করেছে সে সব প্রতিষ্ঠান সাময়িক ভাবে বেশ লাভবান হলেও তাদের পতনও খুব দ্রুত ঘটেছে। দীর্ঘস্থায়ী সাফল্যের জন্য যে দুটি গুণ প্রয়োজন তা হচ্ছে সততা এবং ন্যায়পরায়ণতা।

আপনার কর্মকাণ্ডে এই দু’টি কোন প্রকাশ পাচ্ছে কিনা তা যাচাই করুন আপনার বিবেককে প্রশ্ন করার মাধ্যমে। এ দুটি গুণ কোন যদি আপনার মাঝে থাকে এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক কর্মকাণ্ড গুলো যদি আপনি সঠিকভাবে সম্পাদন করতে পারেন তবে সফলতা আপনার থেকে খুব বেশি দূরে নেই।

১০) প্রতিদান দিতে শিখুন

এই অংশটি ভুলে গেলে চলবে না। যখন আপনার কর্মকাণ্ডে এই ব্যাপারটি ফুটে উঠবে তখনই কেবল মাত্র আপনি নিজেকে সফল হিসেবে বিবেচনা করতে পারবেন। আপনি যখন সফলতার দ্বারপ্রান্তে থাকবেন তখন খেয়াল করে দেখবেন অনেক মানুষ আপনার এই সফলতার পিছনে অবদান রেখেছে। আমরা অনেক সময়ই আমাদের সফলতার পিছনে যাদের অবদান রয়েছে তাদের সবাইকে এর প্রতিদান দিতে পারি না। কারণ অধিকাংশ সময় তাদের সবাইকে আমরা চিনতেই পারি না।

তাদের অনেকেই নীরবে সংগোপনে আমাদের সাহায্য করে গিয়েছেন। তাই তাদের এই অবদানের প্রতিদান হিসেবে যখন যাকে পারবেন তাকেই সাহায্য করবেন। যখন আপনি সফল হবেন তখন সমাজের প্রতি আপনার একটি দায়বদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এই দায়বদ্ধতা থেকে আপনি আপনার সাধ্যের মধ্যে মানুষকে যতোটুকু সাহায্য করতে পারবেন তার মাধ্যমেই আপনার প্রকৃত সফলতা বিচার করা যাবে।

এই ১০ টি কাজ ঠিকভাবে করতে পারলে আপনি হতে পারবেন উদ্যোক্তা হিসেবে সফল। কিন্তু সফলতা আসলে কি? এর উত্তর একেকজনের কাছে একেক রকম। এর কোন সার্বজনীন পরিমাপ নেই। বিল গেটস যেমন তার চোখে সফল, তেমনি মাদার তেরেসাও নিজের চোখে সফল। তাই আগে নিজেকে প্রশ্ন করুন আপনার কাছে সফলতা মানে কি।

আমার মতে সফলতার মাপকাঠি কখনোই আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হওয়া উচিত নয়। এই মাপকাঠি হওয়া উচিত কতগুলো মানুষের জীবনে আপনি পরিবর্তন আনতে পেরেছেন তার সংখ্যা। আমাদের সফলতার অভিযানে এই মাপকাঠি প্রয়োগ করলে যেমন আমরা প্রকৃত সাফল্য অর্জন করতে পারবো তেমনি আমাদের পারিপার্শ্বিক পরিবেশটাকে করতে পারবো আরও সুন্দর।

সূত্র: টেন মিনিটি স্কুল

29
করোনায় একবার আক্রান্ত হলে কি দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে? ভাইরাসটি মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ার পর অনেকের মনেই এই প্রশ্নটি ঘুরপাক খাচ্ছে। তবে এ নিয়ে বিজ্ঞানীরা স্পষ্টভাবে এখনো তেমন কিছু বলতে পারেননি।

জাপানের ওসাকাতে ৪০ বছরের বয়সী এক নারী একাধিকবার করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তবে করোনায় দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হওয়া যায় কি না এটি জানার জন্য আমাদের বুঝতে হবে কিভাবে আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কাজ করে। ধারণা করা হচ্ছে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ওপরে নির্ভর করে কত দ্রুত করোনা থেকে সুস্থ হয়ে উঠা যায় বা আবার করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে কি না।

যখন কোন ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া আমাদের শরীরে প্রবেশ করে তখন আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এটিকে এলিয়েনের মত করে চিহ্নিত করে। শরীরে কিছু নির্দিষ্ট রক্ত কণিকা রয়েছে যেগুলো পুরো শরীরে পাহাড়া দেয় এবং নতুন কোন ভাইরাস পেলে সতর্ক করে দেয়। এই সতর্কবার্তার পরেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আমাদের শরীরে অ্যান্টিবডির তৈরি করে। আর এ জন্য কিছু সময় প্রয়োজন হয়। আর এ সময়ের মধ্যেই আমরা ভাইরাস বা ব্যাক্টেরিয়ার কারণে অসুস্থতাবোধ করি। তবে শরীরে পর্যাপ্ত অ্যান্টিবডি তৈরি হলে আমরা সুস্থ হই। কারণ ততক্ষণে সেই ভাইরাস বা ব্যাক্টেরিয়া আমাদের শরীর থেকে নিঃশেষ হয়ে যায়। তবে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আরো একটি কাজ করে। সেটি হলো এটি মেমোরি সেল তৈরি করে। যদি একই ধরণের ভাইরাস আবার আক্রমণ করতে আসে তাহলে এই মেমোরি সেলই ওই ভাইরাসকে ঠেকিয়ে দেয়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার মাধ্যমে তৈরি এই মেমোরি সেলগুলো এত দ্রুত কাজ করে যে আবারো যদি ভাইরাস শরীরে আবারো আক্রমণ করে তখন আর তেমন বেশি অসুস্থবোধ হয় না।

তাহলে করোনা ভাইরাসেও কি দ্বিতীয়বার হবে না? এমন প্রশ্নের উত্তর এখনই স্পষ্টভাবে দেয়া যাচ্ছে না। কারণ এ পর্যন্ত করোনায় দ্বিতীয়বার আক্রান্ত খুব কম রোগই পাওয়া গেছে। আর এ ভাইরাসটি যেহেতু নতুন তাই এ নিয়ে আগে থেকেই কিছু অনুমান করা যাচ্ছে না।

চীনে করোনায় আক্রান্ত কিছু বানরের ওপর গবেষণা করে দেখা গেছে যে ভাইরাস থেকে সুস্থ হওয়ার পর দ্বিতীয়বার তারা আর আক্রান্ত হয়নি। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ জন্য আরো গবেষণার প্রয়োজন। অন্যান্য করোনা ভাইরাসে দেখা গেছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তিনমাসের মত কাজ করে। তবে কোভিড-১৯ নিয়ে এখনো এমন কিছু নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তাই বলা যাচ্ছে না যে এটি আবারো সেরে ওঠা রোগীকে আক্রমণ করতে পারে কি না।

যদিও এ নিয়ে আশাবাদী বেশ কিছু বিশেষজ্ঞ। এ নিয়ে যুক্তরাজ্যের লিডস ইউনিভার্সিটির ভাইরোলজি বিশেষজ্ঞ মার্ক হ্যারিস বলেন, জাপানের ওই ঘটনার ক্ষেত্রে পুনরায় রোগ সংক্রমণের ঘটনাটির মতো ঘটনা খুবই কম ঘটে। এছাড়া ব্রাইটন এবং সাসেক্স মেডিকেল স্কুলের সংক্রামক রোগের ইমেরিটাস অধ্যাপক জন কোহেন বলেছেন, করোনাভাইরাস দুবার হওয়ার আশঙ্কা থাকে কি না, এ প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে, আমরা এখন পর্যন্ত জানি না। কারণ, আমরা এখন পর্যন্ত সংক্রমণের বিরুদ্ধে কোনো অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করে দেখিনি। তবে আমরা শিগগিরই তা পরীক্ষা করে দেখবো।

Source: https://the-prominent.com/others-article-6380/

30
ব্যাংক নোট বা টাকায় নানা ধরণের জীবাণুর উপস্থিতি শনাক্ত হওয়া নতুন নয়।  বিভিন্ন সময় বিশেষজ্ঞরা টাকার মাধ্যমে সংক্রামক রোগ ছড়ানোর ঝুঁকির কথা বলেছেন।

বিভিন্ন দেশে এই নিয়ে গবেষণাও হয়েছে। ২০১৫ সালে দিল্লির ইন্সটিটিউট অব জিনোমিকস অ্যান্ড ইন্টিগ্রেটিভ বায়োলজির বিজ্ঞানীরা তাদের এক গবেষণা থেকে জানিয়েছেন, ভারতের বাজারে চালু নোটগুলোর ডিএনএ পরীক্ষা করে তাতে অন্তত ৭৮ রকম বিপজ্জনক মাইক্রোবের অস্তিত্বের প্রমাণ পেয়েছেন – যা থেকে মারাত্মক সব রোগ ছড়াতে পারে।

এদিকে বাংলাদেশের একদল গবেষকও গত বছরের এক গবেষণা থেকে জানিয়েছেন, বাংলাদেশি কাগুজে নোট ও ধাতব মুদ্রায় এমন সব ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি দেখা গেছে যা সাধারণত মলমূত্রের মধ্যে থাকে।

এ কারণে টাকার মাধ্যমে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা একবারে উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিশেষজ্ঞরা।

বিশেষজ্ঞরা জানান, ভাইরাস বাহকের শরীরে সক্রিয় হয়, অন্যত্র নিষ্ক্রিয় থাকে। টাকায় থাকলে এটি হয়তো নিষ্ক্রিয় থাকে, কিন্তু মানুষের সংস্পর্শে এলে সেটি করোনাভাইরাসের উপসর্গ বা রোগের সৃষ্টি করতে পারে।

বিশ্বজুড়ে এমন আশঙ্কার পর বিশেষজ্ঞরা, ব্যাংক নোট এড়িয়ে স্পর্শবিহীন মাধ্যম বা প্রযুক্তি ব্যবহার করে কেনাকাটা বা লেনদেন করার পরামর্শ দিয়েছেন।

স্পর্শবিহীন লেনদেন বা প্রযুক্তি বলতে, ব্যাংক নোট ছাড়া অন্য মাধ্যম যেমন কার্ড, বিভিন্ন ধরণের অ্যাপ যেমন বিকাশ বা নগদ অথবা অন্য কোন প্রযুক্তি ব্যবহার করে লেনদেনের কথা বোঝানো হয়েছে।

কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এ ধরণের পরামর্শ মেনে চলা কঠিন। কারণ এখানে শতভাগ লেনদেন হয় ব্যাংক নোটের মাধ্যমে।  এ কারণে বিশেষজ্ঞরা ব্যাংক নোট ব্যবহারের বিষয়ে বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। যেমন-

১. টাকা গোনার সময় অবশ্যই হাত দিয়ে মুখের লালা নেবেন না।

২.  ব্যাংক নোট বা টাকা নাড়াচাড়ার পরপর অবশ্যই সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলতে হবে। না পারলে স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হবে।

৩. যারা অত্যধিক মুদ্রা নাড়াচাড়া করেন, যেমন ব্যাংক কর্মী বা মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ীরা, তাদেরকে অবশ্যই অতিরিক্ত সতর্ক থাকতে হবে। তারা গ্লাভস পরে নিতে পারেন। সতর্কতা হিসেবে হ্যান্ড স্যানিটাইজারও ব্যবহার করতে পারেন।

৪. টাকা ধরা বা ব্যবহারের পর পরই চোখ, নাক বা মুখে হাত দেয়া যাবে না।

৫. এটিএম বুথের বাটন বা টাকা থেকেও সংক্রমণ ছড়াতে পারে। এ কারণে  টাকা তোলার পর সতর্কতা হিসেবে হাতে স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে পারেন।

সূত্র: বিবিসি

Pages: 1 [2] 3 4 5