Show Posts

This section allows you to view all posts made by this member. Note that you can only see posts made in areas you currently have access to.


Topics - Shakil Ahmad

Pages: [1] 2 3 ... 12
1
এক দিনেই ২৭৯ পয়েন্ট হারাল দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টকএক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। আজ সোমবার লেনদেনের শুরু থেকেই সূচকের একটানা পতন লক্ষ করা যায়। প্রথম ৬ মিনিটের লেনদেনে ডিএসইর সূচক ডিএসইএক্স হারায় ১০০ পয়েন্ট। বেলা ১১টায় সূচকটি দেড় শ পয়েন্ট হারায়। বেলা ১১টা ১৬ মিনিটে উধাও হয় ২০০ পয়েন্ট। লেনদেন শেষে সূচকটি কমে ২৭৯ পয়েন্ট, অবস্থান করছে ৪ হাহার ৮ পয়েন্টে। মাত্র দুটি কোম্পানির শেয়ারের দর বেড়েছে আজ।

বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের আতঙ্কে গতকাল রোববার লেনদেন শেষে ডিএসইএক্স কমে ৯৭ পয়েন্ট। পরে বিকেলে বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত তিন ব্যক্তিকে চিহ্নিত করার খবর আসে। আর এর প্রভাবে আজ বিশাল ধস নামল ডিএসইতে।

বাজারের এ পরিস্থিতির কারণে জানতে চাইলে বিনিয়োগকারীরা বলছেন, এমনিতেই বাংলাদেশের পুঁজিবাজার সংবেদনশীল। এর মধ্যে করোনাভাইরাসের আতঙ্কে আজ দরপতনের গতি বেশি দেখা যাচ্ছে। আতঙ্কিত হয়ে শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি শাকিল রিজভী বলেন, মূলত করোনাভাইরাসের প্রভাবে আজকে শেয়ারবাজারে এই পতন। আতঙ্কিত হয়ে মানুষ শেয়ার বিক্রি করেছে। তবে এটা সাময়িক প্রভাব। কেটে যাবে। এ অবস্থা থাকবে না।

সকালে বাজার বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিনিয়োগকারী বলেন, ‘আজ দুই সপ্তাহ ধরেই সূচক কমছে। উন্নতির কোনো লক্ষণ দেখছি না। বাজারে কোনো স্থিতিশীলতা নেই। এর মধ্যে করোনাভাইরাসের প্রভাব পড়েছে। বাজারে আজকে বিক্রির চাপ অনেক। ক্রেতা নেই। এ অবস্থায় বিনিয়োগকারীরাও বুঝছেন না কী করবেন।’

এই বিনিয়োগকারী জানান, ২০১৫ সালে অবসরের পর ৭৫ লাখ টাকা নিয়ে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করা শুরু করেন তিনি। এখন তাঁর শেয়ারের দর কমে কমে ঠেকেছে ৭ লাখে। আজ ৭ লাখে সব শেয়ার বিক্রি করেছেন তিনি। এ পরিস্থিতি কাউকে বোঝানোর অবস্থাও নেই তাঁর।

সাইফুল ইসলাম নামের আরেক বিনিয়োগকারী প্রথম আলোকে বলেন, ‘টানা নবম দিনের মতো দর কমেছে। আজ বাজারে প্যানিক সেল হচ্ছে। গতকাল বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত তিন ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা হয়েছে, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বাজারে। দর যত কমছে, সেল প্রেশার বাড়ছে। সবাই মার্জিনে ব্যবসা করে, লোকসান চায় না। দাম কমতে থাকলেই বিক্রি করে দেয়।’

ডিএসইতে আজ দর কমেছে প্রায় সব শেয়ারেরই। হাতবদল হওয়া শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে মাত্র দুটির দর বেড়েছে। অপরিবর্তিত আছে একটির দর। লেনদেন হয়েছে মাত্র ৪৯৯ কোটি ৩৫ লাখ টাকার।

ডিএসইতে লেনদেনের শীর্ষে থাকা কোম্পানিগুলো হলো স্কয়ার ফার্মা, গ্রামীণফোন, লাফার্জ হোলসিম বাংলাদেশ লিমিটেড, সামিট পাওয়ার, সি পার্ল, ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড, ওরিয়ন ইনফিউশন, ব্যাংক এশিয়া, ভিএফএস থ্রেড ডায়িং লিমিটেড ও ওরিয়ন ফার্মা।

আজ ডিসইতে যে দুটি কোম্পানির শেয়ারের দর বেড়েছে, সেগুলো হলো এপিএসসিএল নন কনভারটেবল অ্যান্ড ফুললি রিডেমেবল কুপন বিয়ারিং বন্ড ও বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি লিমিটেড।

অন্যদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে সার্বিক সূচক সিএএসপিআই কমেছে ৭৫৮ পয়েন্ট। হাতবদল হওয়া শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর কমেছে ২৪৯টির, বেড়েছে ৩টির, অপরিবর্তিত আছে ৪টির দর। এ সময় পর্যন্ত লেনদেন হয়েছে ৭০ কোটি ৩১ লাখ টাকার শেয়ার।

2


দুপুর ১২টা নাগাদ ডিএসইএক্স হারায় ১৬৬ পয়েন্ট।দুপুর ১২টা নাগাদ ডিএসইএক্স হারায় ১৬৬ পয়েন্ট।করোনাভাইরাস-আতঙ্ক বিরাজ করছে দেশের শেয়ারবাজারে। গতকাল রোববার বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত তিন ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা হয়েছে-আর এ খবরে আজ সোমবার লেনদেনের শুরু থেকে এক টানা পতন লক্ষ করা যাচ্ছে শেয়ারবাজারের সূচকে। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স প্রথম ৬ মিনিটের লেনদেনে হারায় ১০০ পয়েন্ট। বেলা ১১টায় সূচকটি দেড় শ পয়েন্ট হারায়। ১১টা ১৬ মিনিটে উধাও হয় ২০০ পয়েন্ট। পরে পতন কিছুটা কমে আসে। দুপুর ১২টা নাগাদ সূচকটি দর হারিয়েছে ১৬৬ পয়েন্ট।

বাজারের এ পরিস্থিতির কারণে জানতে চাইলে বিনিয়োগকারীরা বলছেন, এমনিতেই বাংলাদেশের পুঁজিবাজার সংবেদনশীল। এর মধ্যে করোনাভাইরাস আতঙ্কে আজ দর পতনের গতি বেশি দেখা যাচ্ছে। আতঙ্কিত হয়ে শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিনিয়োগকারী বলেন, ‘আজ ২ সপ্তাহ ধরেই সূচক কমছে। উন্নতির কোনো লক্ষণ দেখছি না। বাজারে কোনো স্থিতিশীলতা নেই। এর মধ্যে করোনাভাইরাসের প্রভাব পড়েছে। বাজারে আজকে বিক্রির চাপ অনেক। ক্রেতা নেই। এ অবস্থায় বিনিয়োগকারীরাও বুঝছেন না কি করবেন।’

এই বিনিয়োগকারী আরও জানান, ২০১৫ সালে অবসরের পর ৭৫ লাখ টাকা নিয়ে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করা শুরু করেন তিনি। এখন তাঁর শেয়ারের দর কমে কমে ঠেকেছে ৭ লাখে। আজ ৭ লাখে সব শেয়ার বিক্রি করেছেন তিনি। এ পরিস্থিতি কাউকে বোঝানোর অবস্থাও নেই তাঁর।

সাইফুল ইসলাম নামে আরেক বিনিয়োগকারী প্রথম আলোকে বলেন, ‘টানা নবম দিনের মতো দর কমেছে। আজ বাজারে প্যানিক সেল হচ্ছে। গতকাল বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত তিন ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বাজারে। দর যত কমছে সেল প্রেশার বাড়ছে। সবাই মার্জিনে ব্যবসা করে, লোকসান চায় না। দাম কমতে থাকলেই বিক্রি করে দেয়।’

ডিএসইতে আজ প্রথম দেড় ঘণ্টায় দর কমেছে হাতবদল হওয়া শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ৩২৮ টির দর, বেড়েছে মাত্র ১৫ টির, অপরিবর্তিত আছে ৯ টির দর। লেনদেন হয়েছে ২৪২ কোটি ৮৭ লাখ টাকার।

অপরদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে সার্বিক সূচক সিএএসপিআই প্রথম দেড় ঘণ্টার লেনদেনে কমেছে ৩৯১ পয়েন্ট। বেলা ১২টা নাগাদ হাতবদল হওয়া শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ১৮২ টির দর কমেছে, বেড়েছে ৮ টির, অপরিবর্তিত আছে ১ টির দর। এ সময় পর্যন্ত লেনদেন হয়েছে ৮ কোটি ৭৮ লাখ টাকার শেয়ার।

3
করোনাভাইরাসের কারণে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফর বাতিল হয়েছে। দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারের নেওয়া এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো।

ভারতের সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের খবরে আজ সোমবার বলা হয়েছে, বাংলাদেশে তিনজন করোনাভাইরাসের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় ঢাকা সফর বাতিল করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ১৭ মার্চ ঢাকায় আয়োজিত মুজিব শতবর্ষের রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন নরেন্দ্র মোদি। গতকাল রোববার ঢাকায় তিনজনের করোনাভাইরাসে সংক্রমণের ঘটনা জানায় সরকার। প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাস ধরা পড়ল বাংলাদেশে। ওই তিনজনের দুজন ইতালি থেকে বাংলাদেশে এসেছেন। ওই দুজনের সংস্পর্শে আরও একজন আক্রান্ত হন। এই ব্যক্তি তাঁদের পরিবারের সদস্য।

এমন পরিস্থিতিতে গত রাতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্‌যাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী জানান, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠান কাটছাঁট করা হয়েছে। ১৭ মার্চ জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠেয় মূল অনুষ্ঠানটি ওই দিন হচ্ছে না। করোনাভাইরাসের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জনস্বার্থে ও জনকল্যাণে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। পরে এই সমাবেশের তারিখ চূড়ান্ত হবে।

১৭ মার্চের জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডের অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ বিদেশি অতিথিদের আসার কথা ছিল। এরপর আজ জানা গেল, মোদি বাংলাদেশ সফরে আসছেন না।

ইতিমধ্যে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনকে কেন্দ্র করে নয়াদিল্লিতে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনায় রাজধানী ঢাকায় মোদির বাংলাদেশ সফর নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে। মোদির বাংলাদেশ সফর বাতিলের দাবিও উঠেছে। তবে এর মধ্যে ঢাকায় করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে সেই সফর পিছিয়ে গেল।

4


আগামী এপ্রিল থেকে ক্রেডিট কার্ড ছাড়া সব ঋণের সুদহার সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ নির্ধারণ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ জন্য ব্যাংকগুলো ইতিমধ্যে আমানতের সুদহার ৬ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। ব্যাংক খাতে এর প্রভাব নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ইস্টার্ণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী রেজা ইফতেখার। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সানাউল্লাহ সাকিব।

প্রথম আলো: বাংলাদেশ ব্যাংক তো শেষ পর্যন্ত ঋণের সুদ নির্দিষ্ট করে দিল। এটা কি বাস্তবায়ন সম্ভব হবে?

আলী রেজা ইফতেখার: বাংলাদেশ ব্যাংক এরই মধ্যে নতুন সুদহারের প্রজ্ঞাপন জারি করেছে, তাই সেটি বাস্তবায়ন করতেই হবে। সুদহার কমবে—এটা আগে থেকেই আমাদের জানা ছিল, তাই আমরা সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি নিয়েছি। এ কারণে বলতে পারি, বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কোনো ব্যত্যয় হবে না। আগামী এপ্রিল থেকে সব ব্যাংকে ক্রেডিট কার্ড ছাড়া সব ঋণে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদ কার্যকর হবে। কম সুদে আমানত পাওয়া গেলে ৯ শতাংশ সুদে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে বড় কোনো সমস্যা হবে না।

প্রথম আলো: কিন্তু আমরা তো জানি, ব্যাংকগুলোর আয়ের ৭৫ শতাংশই আসে সুদ থেকে। সুদহার কমে গেলে আয় তো কমে যাবে ব্যাংকের। এ চাপ কী ব্যাংক নিতে পারবে?

আলী রেজা ইফতেখার: ব্যাংকের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে আমানতের সুদ কমানো। এটা না হলে ব্যাংকগুলোর মার্জিন (সুদহারের পার্থক্য) কমে যাবে। ঋণের সুদহার কমানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে উৎপাদন খাতে ঋণ বাড়ানোর পাশাপাশি উৎপাদন খরচ যাতে কমে আসে। আপাতত মনে হচ্ছে, এ সিদ্ধান্তের ফলে ব্যাংকগুলোর আয়ে প্রভাব পড়বে। তবে আমানতের সুদ কমিয়ে আনতে পারলে ব্যাংকের আয়ের ওপর প্রভাব কমে আসবে। আমি মনে করি, জুলাইয়ের পর পরিস্থিতির উন্নতি হবে। কারণ, আমাদের কিছু উচ্চ সুদের আমানত নেওয়া আছে। এসব আমানতের মেয়াদ না শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই হবে। এখনই বলা যাবে না যে বছর শেষে মুনাফা কমে যাবে। যদি কম সুদে আমানত পাওয়া যায়, তবে ব্যাংকগুলোর মুনাফা খুব বেশি কমবে না। তার চেয়েও বড় কথা, ব্যাংকের নিজস্ব স্বার্থের চেয়ে জাতীয় স্বার্থকে সবার আগে বিবেচনা করতে হবে।

প্রথম আলো: আমানতের সুদ ৬ শতাংশে নামলে মূল্যস্ফীতি তো সব খেয়ে ফেলবে। ফলে যাঁরা সুদের আয়ের ওপর নির্ভরশীল, তাঁরা কীভাবে চলবে?

আলী রেজা ইফতেখার: ব্যাংকগুলো ধাপে ধাপে আমানতের সুদ কমাবে। তবে এটা সত্যি, আমানতের সুদ কমে গেলে তা আমানতকারীদের জন্য কষ্টকর হবে। আগে যাঁরা ৯-১০ শতাংশ সুদ পেতেন, তাঁদের আয় অনেক কমে যাবে। যাঁরা ক্ষুদ্র আমানতকারী, ব্যাংকে সঞ্চয় রেখে সুদ দিয়ে জীবনধারণ করে থাকেন, তাঁদের জন্য পরিস্থিতিটা বড় চ্যালেঞ্জের। তবে আমানতের সুদ কমানোর জন্য এখনো বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে কোনো নির্দেশনা আসেনি। যদি কোনো নির্দেশনা না আসে, তাহলে কোনো ব্যাংক চাইলে বেশি সুদে আমানত নিতে পারবে। যদিও আমরা এবিবির পক্ষ থেকে একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমানতে ৬ শতাংশ সুদ দেওয়ার। যেহেতু এবিবি কোনো নিয়ন্ত্রক সংস্থা নয়, তাই এবিবির সিদ্ধান্ত মানার বাধ্যবাধকতা নেই।

প্রথম আলো: পুরোনো ঋণের সুদও কি ৯ শতাংশে নেমে আসবে? সুদ কমে যাওয়ার কারণে ব্যাংকের সেবা মাশুল বেড়ে যাওয়ার কোনো আশঙ্কা আছে কী?

 আলী রেজা ইফতেখার: নতুন-পুরোনো সব ঋণে ৯ শতাংশ সুদহার কার্যকর করতে হবে। এ জন্য ব্যাংকগুলোকে অনেক কাজ করতে হবে। কারণ, নতুন সুদহারের ভিত্তিতে পুরোনো ঋণের হিসাব কষে কিস্তি নির্ধারণ করতে হবে। এ জন্য কিছুটা সময় লাগবে। তারপরও আমি বলতে পারি, বাংলাদেশ ব্যাংক যে নির্দেশনা দিয়েছে, ব্যাংকগুলো তা হুবহু পালন করবে। আর ব্যাংকগুলো চাইলেই সেবা মাশুল বাড়াতে পারবে না। কারণ, সেবা মাশুলের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা রয়েছে, তাই বেশি মাশুল নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। নতুন পরিস্থিতিতে আয় বাড়াতে হলে ব্যাংকগুলোর দক্ষতা বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। ঋণ আদায় জোরদার করার পাশাপাশি খেলাপি ঋণ যাতে না বাড়ে, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। এ ছাড়া সেবার মানে আরও উন্নতি করতে হবে।

প্রথম আলো: সুদ কমানোর ফলে ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ কমিয়ে দিতে পারে—এমন আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ। আপনি কী মনে করেন?

আলী রেজা ইফতেখার: বাংলাদেশ ব্যাংক যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে, সেখানে বলা হয়েছে, উৎপাদন খাতে গত তিন বছরে ঋণের যে স্থিতি, নতুন ঋণ সেই গড়ের চেয়ে কম হতে পারবে না। ফলে কোনো ব্যাংক এসব খাতে ঋণ কমিয়ে দিতে পারবে না। ঋণ কমানোর সুযোগও নেই।

প্রথম আলো: মূলধন অনুপাতে সরকারি আমানত ভাগাভাগি করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল। সেটা কত দূর এগোল। আর সরকারি আমানত ৬ শতাংশে পাওয়া যাচ্ছে কি?

আলী রেজা ইফতেখার: আমার ব্যাংকে যত সরকারি আমানত আছে, তা ৬ শতাংশে পাওয়া যাচ্ছে। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা রয়েছে। কেউ বেশি সুদে আমানত নিলে তারা দেশের আইন লঙ্ঘন করবে। তবে আমি অন্য ব্যাংকের কথা বলতে পারব না। মূলধন পর্যাপ্ততার হার (সিআরএআর) অনুপাতে সরকারি আমানত পাওয়ার ব্যাপারে একটা আলোচনা আছে। তবে এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত আমরা পাইনি। এর সঙ্গে আরও নতুন কিছু সূচক যুক্ত করা যেতে পারে। এভাবে সরকারি আমানত ভাগ হলে ভালো ব্যাংকগুলো ভালো আমানত পাবে। ফলে ব্যাংকগুলোর মধ্যে উন্নতি করার চাপ তৈরি হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে এটাই প্রয়োজন।

5
এক দিন পরই দরপতনের ধারায় দেশের দুই শেয়ারবাজার। আজ সোমবার সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে লেনদেন শেষে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমে ৫৯ পয়েন্ট, অবস্থান করছে ৫ হাজার ২৭৬ পয়েন্টে। অপর দিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক সূচক (সিএএসপিআই) কমেছে ২০৫ পয়েন্ট।

গতকাল রোববার সূচকের বড় ধরনের উত্থানে লেনদেন শেষ হয় ডিএসইতে। এক দিনেই সূচক বাড়ে ১০৪ পয়েন্ট। অপর দিকে, সিএসইতে সূচক বাড়ে ৩০৬ পয়েন্ট। তবে এক দিন পরই আবার দর কমল দুই পুঁজিবাজারে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, আজ কিছুটা মুনাফা তুলে নেওয়ার প্রবণতা ছিল বিনিয়োগকারীদের মাঝে।

আজ ডিএসইতে গতকালের তুলনায় মোট লেনদেনের পরিমাণও কমেছে। লেনদেন হয়েছে ৩৮৭ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। গতকাল লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৪৪৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। হাতবদল হওয়া শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৫০টির, কমেছে ২৬২টির, অপরিবর্তিত আছে ৩০টির দর।

টানা চার কার্যদিবস দরপতনের পর গত বৃহস্পতিবার থেকে উত্থানে ফেরে ডিএসইএক্স সূচক। ওই দিন বাংলাদেশ ব্যাংক পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ সক্ষমতা বাড়াতে শিথিল করে নীতিমালা। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে শেয়ারবাজার-সংশ্লিষ্টদের জন্য স্বল্প সুদে ঋণপ্রাপ্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত নয়, এমন কোম্পানিতে ব্যাংকের মূলধন বিনিয়োগকে এখন থেকে আর ওই ব্যাংকের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ হিসেবে ধরা হবে না। পাশাপাশি বেমেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ড, অরূপান্তরযোগ্য বন্ড, প্রেফারেন্স শেয়ারে বিনিয়োগকেও ব্যাংকের বিনিয়োগ হিসেবে ধরা হবে না। এ ছাড়া ২০১০ সালের শেয়ারবাজার ধসে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সহায়তায় গঠিত তহবিল (বর্তমান আকার ৮৫৬ কোটি টাকা) থেকে বাজারসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। এ সিদ্ধান্তের পর গতকাল দুই পুঁজিবাজারেই ব্যাপক দর বৃদ্ধি পায়।

আজ লেনদেনের শীর্ষে ছিল যে কোম্পানিগুলো, সেগুলো হলো ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড, এসকে ট্রিমজ অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, ফরচুন সুজ, ব্যাংক এশিয়া, আইএফআইসি, ডরিন পাওয়ার, প্রিমিয়ার ব্যাংক, রূপালি লাইফ ইনস্যুরেন্স, মুন্নু সিরামিকস ও এসকোয়ার নিট কম্পোজিট লিমিটেড।

আজ দর বৃদ্ধির শীর্ষে ছিল যে কোম্পানিগুলো সেগুলো হলো এসকে ট্রিমজ অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, আইসিবি থার্ড এনআরবি, প্রিমিয়ার সিমেন্ট, গ্লোবাল হেভি কেমিক্যাল লিমিটেড, ড্যাফোডিল কম, পপুলার ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, বে লিজিং, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড, রংপুর ফাউন্ড্রি ও ন্যাশনাল টিউবস।

অপর দিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ২০৫ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১৬ হাজার ১০২ পয়েন্টে। এ সময়ে সিএসইতে লেনদেনে অংশ নিয়েছে ২৩৯টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ড। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৪৬টির, কমেছে ১৬৬টির, অপরিবর্তিত রয়েছে ২৭টির।

6
সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ২০১৮ সালে ৩৯২ কোটি টাকা মুনাফা করেছে, যা আগের বছরের ৪ ভাগের ১ ভাগ।


বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে মুনাফা কমে যাওয়ার এ চিত্র উঠে আসে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর সমঝোতা চুক্তি রয়েছে। সে অনুযায়ী তাদের চলতে হয়। গত সপ্তাহে এ নিয়ে ব্যাংক চারটির সঙ্গে সভাও করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

মুনাফা কমে যাওয়ার কারণ, ব্যাংকগুলোতে বড় গ্রাহকদের অনেকে খেলাপি ঋণ পুনঃ তফসিল করেও কিস্তি পরিশোধ করছেন না। ফলে খেলাপি ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলোকে আয় থেকে বিপুল অর্থ সঞ্চিতি বা প্রভিশন রাখতে হচ্ছে। এ ছাড়া এ চার ব্যাংক গ্রাহকদের যে ঋণপত্র, নিশ্চয়তা বা গ্যারান্টির মতো ‘নন ফান্ডেড’ (নগদ টাকার বাইরে দেওয়ার নিশ্চয়তা) সুবিধা দিয়েছিল, তার একাংশও খেলাপি হয়ে গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৭ সালে সোনালী ব্যাংকের নিট মুনাফা ছিল ৭০৯ কোটি টাকা, যা ২০১৮ সালে দাঁড়িয়েছে ২২৬ কোটি টাকায়। একইভাবে জনতা ব্যাংকের নিট মুনাফা ২৬৮ কোটি টাকা থেকে কমে হয়েছে ২৫ কোটি টাকা। অগ্রণী ব্যাংকের মুনাফায়ও বড় ধস নেমেছে। ২০১৭ সালের ৬৭৬ কোটি টাকার মুনাফা থেকে গত বছর তা কমে ১০৩ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। অবশ্য বাকি ব্যাংকগুলোর তুলনায় রূপালীর মুনাফা কম হারে কমেছে, ৫০ কোটি টাকা থেকে নেমেছে ৩৮ কোটি টাকায়। এ মুনাফা দেখাতেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে সঞ্চিতি রাখার ক্ষেত্রে ছাড় নিয়েছে ব্যাংকগুলো।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিবছর সরকারি ব্যাংকগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সমঝোতা চুক্তি হয়। চুক্তির যেসব শর্ত থাকে, সে অনুযায়ী সব ব্যাংক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে না। এবারও তাই হয়েছে।

আটকে গেছে টাকা

রাষ্ট্রমালিকানাধীন চার ব্যাংক বেশ কিছু বড় গ্রাহককে ঋণ দিয়ে আটকা পড়েছে। এসব ঋণ সহজে আদায় করা যাচ্ছে না। খেলাপি হয়ে যাওয়া ঋণ পুনঃ তফসিল করার পর কিস্তি না দেওয়ায় ওই সব গ্রাহকের বড় অংশের নাম খেলাপির তালিকায় উঠছে।

ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৮ সালে চার ব্যাংক মিলে ৪৩২ জন গ্রাহকের ঋণ পুনঃ তফসিল করেছিল। নিয়মিত কিস্তি পরিশোধ না করায় বছর শেষে আবার খেলাপি হয়ে পড়েন ২১৭ জন গ্রাহক। প্রতিবেদনে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ কিনে আটকে গেছে অগ্রণী ও জনতা ব্যাংক। এসব ঋণ খেলাপি হয়ে গেছে। টাকা আদায়ে তারা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে। এরপরও অন্য ব্যাংক থেকে কেনা ঋণের টাকা আদায় করতে পারছে না ব্যাংক দুটি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে সোনালী ব্যাংক ৭৩ জন গ্রাহকের ৩ হাজার ৮৬০ কোটি টাকার ঋণ পুনঃ তফসিল করে। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪৫১ কোটি টাকার কিস্তি পরিশোধ হয়নি। ফলে ৩৫ জন গ্রাহক আবার খেলাপি হয়ে গেছে। আলোচ্য সময়ে জনতা ব্যাংক ১২৬ জন গ্রাহকের ১০ হাজার ৩০০ কোটি টাকার ঋণ পুনঃ তফসিল করে। এর মধ্যে পুনঃ তফসিল সুবিধা পাওয়া গ্রাহকেরা ২ হাজার ২৬৩ কোটি টাকার কিস্তি পরিশোধ করেননি। আবারও খেলাপি হয়ে পড়েছেন ৭৩ জন গ্রাহক।

অগ্রণী ব্যাংক ১৬৬ গ্রাহকের ৫ হাজার ১৩৯ কোটি টাকার ঋণ পুনঃ তফসিল করেছিল। এর মধ্যে ৭৩৪ কোটি টাকার কিস্তি অপরিশোধিত রয়ে গেছে। ফলে আবারও খেলাপি হয়েছেন ৬৩ জন গ্রাহক। রূপালী ব্যাংক ৬৭ জন গ্রাহকের ৫ হাজার ১৩৯ কোটি টাকার ঋণ পুনঃ তফসিল করে। ৬৭৩ কোটি টাকার কিস্তি পরিশোধ না করায় ৪৬ জন গ্রাহক আবারও খেলাপি হয়ে পড়েছেন।

সোনালী ব্যাংকের পুনঃ তফসিল করা ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৪৮ কোটি টাকা, জনতার ১০ হাজার ৬৮৫ কোটি টাকা, অগ্রণীর ৫ হাজার ৬২৬ কোটি টাকা ও রূপালীর ২ হাজার ২৭৩ কোটি টাকা।

রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতাউর রহমান প্রধান বলেন, রূপালী ব্যাংক গত বছর ‘কোর ব্যাংকিং সিস্টেমের’ শর্তগুলো শতভাগ বাস্তবায়ন করেছে। ফলে ডিসেম্বর মাসে অনেক সূচক খারাপ দেখালেও জানুয়ারিতে আবার এসব সূচক ভালো হয়ে গেছে।

নিশ্চয়তাও খেলাপি

এদিকে ২০১৮ সাল শেষে সোনালী ব্যাংকের নন-ফান্ডেড ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৯ হাজার ৬৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৩ হাজার ৪৮৫ কোটি টাকা ফান্ডেড দায়ে পরিণত হয়েছে। আর এসব ঋণের মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে ৭৮৪ কোটি টাকা। জনতা ব্যাংকের নন-ফান্ডেড ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৯৪৯ কোটি টাকা। আর এসব দায় ফান্ডেড ঋণে পরিণত হয়ে দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে ২ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা।

অগ্রণী ব্যাংকের নন-ফান্ডেড ঋণের পরিমাণ ৩ হাজার ৪১৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে ফান্ডেড হয়ে পড়েছে ২৮৫ কোটি টাকা এবং খেলাপি হয়ে গেছে ১৭১ কোটি টাকা। রূপালী ব্যাংকের নন-ফান্ডেড দায়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ২৬৭ কোটি টাকা, এর মধ্যে ফান্ডেড হয়ে গেছে ৫৭৮ কোটি টাকা। আর খেলাপি হয়ে গেছে ২০৯ কোটি টাকা।

অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শামস-উল-ইসলাম বলেন, ‘আমার মেয়াদে একটি প্রতিষ্ঠানের ঋণ অধিগ্রহণ করা হয়। এটি খুব ভালো চলছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণ অধিগ্রহণের যে তথ্য তুলে ধরেছে, সেটা অনেক আগের।’ তিনি বলেন, ‘নন-ফান্ডেড ঋণ যাতে খেলাপিতে পরিণত না হয়, এ নিয়ে আমরা সতর্ক অবস্থান নিয়েছি।’

7
• বিশৃঙ্খল ব্যাংক খাত
• তারল্যসংকটে ভুগছে ব্যাংক খাত
• আবার কমছে না সুদহার
• এতে বাড়ছে না বিনিয়োগ

ব্যাংক খাতে এখন হাহাকার। কান পাতলেই শোনা যায় টাকা নেই। টান পড়েছে নগদ টাকার। কমছে আমানত। কমেছে ঋণ আদায়। সংকট ডলারেরও। অথচ দুই বছর আগেও ব্যাংক যেন নগদ টাকার ওপর ভাসছিল। এই দুই বছরে দেশের অর্থনীতির বড় কোনো পালাবদল হয়নি। প্রবৃদ্ধি বেড়েছে, মাথাপিছু আয়ও বেড়েছে। কিন্তু এরই মধ্যে প্রকট হয়েছে ব্যাংক খাতের তারল্যসংকট। কমেছে বিনিয়োগযোগ্য তহবিল। যে ব্যাংক দুই বছর আগেও সাধারণ মানুষের আমানত রাখতে আগ্রহী ছিল না, তারাই এখন হন্যে হয়ে আমানত খুঁজছে। এমনকি অর্থের পরিমাণ বেশি হলে সাড়ে ১০ শতাংশ সুদও দিতে রাজি কিছু ব্যাংক।

সরকার ও ব্যাংকমালিকদের সিদ্ধান্ত ছিল, ব্যাংক ঋণের সুদহার হবে ৯ শতাংশ আর আমানতের সুদ ৬ শতাংশ। সুদ কমলে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগের খরচ কমবে, এতে নতুন বিনিয়োগও বাড়বে। অথচ ঘটছে উল্টোটা। বাড়ছে সব ধরনের সুদহার।

অব্যবস্থাপনা, অদক্ষতা, ভুল নীতি, কেন্দ্রীয় ব্যাংককে পাশ কাটিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং সাধারণ মানুষের আস্থার অভাবের কারণেই ব্যাংক খাতের তারল্যসংকট তৈরি হয়েছে বলে ব্যাংকার ও গবেষকেরা মনে করেন।

তারল্য পরিস্থিতি
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, ২০১৮ সালের জুলাই থেকে গত জানুয়ারি পর্যন্ত ব্যাংকগুলোতে আমানত বেড়েছে ৪০ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা, আর ঋণ বেড়েছে ৬৭ হাজার ৯৭৪ কোটি টাকা।
ব্যাংকগুলোর গত মার্চভিত্তিক তারল্য পরিস্থিতি বিবেচনায় দেখা গেছে, সব মিলিয়ে ৯ থেকে ১০টি ব্যাংকের বিনিয়োগ করার মতো তহবিল আছে। বাকি ব্যাংকগুলো টাকা ধার করে ছোট আকারের বিনিয়োগ কার্যক্রম চালাচ্ছে।

দেশে এখন মোট আমানতের মাত্র ২৮ শতাংশ আছে সরকারি ছয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংকে। বাকি ৭২ শতাংশ বেসরকারি ব্যাংকে। আবার সরকারি ব্যাংকের ঋণের হার আমানতের ৬৭ শতাংশ, বেসরকারি ব্যাংকে তা ৮৭ শতাংশ। অথচ ঋণ দেওয়ার সীমা সাড়ে ৮৩ শতাংশ। এর মধ্যে বেসিক ও পদ্মা (সাবেক ফারমার্স) ব্যাংকের ঋণের হার যথাক্রমে ১১০ ও ১১৩ শতাংশ। এর বাইরে আরও ১০ ব্যাংক ঋণ দিয়েছে আমানতের ৯০ শতাংশের বেশি। ফলে বেসরকারি ব্যাংকের বড় অংশেরই ঋণ দেওয়ার ক্ষমতা কমে গেছে।

ব্যাংকঋণের একটি বড় অংশ যায় চট্টগ্রামে। চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ব্যাংকে আগের চেয়ে টাকা কমে গেছে, সুদহারও বেড়ে গেছে। এখন ১৩ শতাংশ পর্যন্ত সুদ দিতে হচ্ছে। ব্যবসার জন্য সুদহার আরও কমানো প্রয়োজন।

কেন ভালো নেই ব্যাংক
আশির দশক থেকেই নানা চড়াই-উতরাইয়ের মধ্য দিয়ে গেছে দেশের ব্যাংক খাত। দাতাদের পরামর্শ ও ঋণে একাধিক সংস্কার কর্মসূচি নেওয়া হয়। গঠন করা হয় একাধিক কমিশন ও কমিটি। অনুসরণ করা হয় ব্যাংক পরিচালনার আন্তর্জাতিক রীতিনীতি। এতে সামগ্রিকভাবে ব্যাংক খাতের অবস্থা কিছুটা ভালো হয়েছিল। কিন্তু এক দশক ধরে উল্টো পথে চলেছে ব্যাংক খাত। নজরদারি শিথিল হয়েছে। ঘটেছে বড় বড় আর্থিক কেলেঙ্কারি। বেড়েছে খেলাপি ঋণ। অনেক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে পাশ কাটিয়ে।

গত এক দশকের মধ্যে ব্যাংক খাতে প্রথম ধাক্কা ছিল হল-মার্ক কেলেঙ্কারি। ২০১১ সালের এই কেলেঙ্কারির পর দেশের সবচেয়ে বড় সোনালী ব্যাংক ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে রক্ষণশীল হয়ে পড়ে। এরপরই ঘটে বেসিক ব্যাংক ও জনতা ব্যাংকের একাধিক কেলেঙ্কারি। এরপরও নিয়মনীতি মানেনি অনেক ব্যাংক। তারা নিয়মের বাইরে ঋণ দেয়।

সবশেষ ঘটে ২০১৮ সালের ফারমার্স ব্যাংক কেলেঙ্কারি। আমানতের তুলনায় বেশি ঋণ দেয় তারা। একপর্যায়ে নগদ টাকা না থাকায় গ্রাহকের অর্থ ফেরত দিতে ব্যর্থ হয় ব্যাংকটি। এতে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান আমানত তুলে নেওয়া শুরু করলে এর প্রভাব পড়ে অন্য ব্যাংকের ওপর। আস্থার সংকটে তাদের আমানতও কমে যায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমানে ব্যাংক খাতে যে সমস্যাগুলো চলছে, তা একদিনে আসেনি। ব্যবসায়ী ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আইনকানুন ঠিক করে দিচ্ছেন। এ কারণেই এত সমস্যার উদ্ভব। সমস্যা সবারই জানা, প্রয়োজন দৃশ্যমান পদক্ষেপ। কিন্তু অনিয়মের সঙ্গে জড়িত কাউকে তো শাস্তি দিতে দেখা গেল না। অথচ ব্যাংক খাতে এমন পরিস্থিতি চললে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নও সম্ভব না।

তারল্যসংকটের আরও কারণ
অন্যান্য খাত থেকেও ব্যাংকের আয় কমে গেছে। যেমন, আমদানি ব্যয় যেভাবে বেড়েছে, রপ্তানি ও প্রবাসী-আয় সেভাবে বাড়েনি। চলতি অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে আমদানি ব্যয় ছিল ৩ হাজার ৭৮৩ কোটি ডলার। সেবা, ঋণ ও সুদ পরিশোধে খরচ হয়েছে আরও ৮৮৬ কোটি ডলার। অন্যদিকে এ সময়ে প্রবাসী আয় এসেছে ১ হাজার ১৮৬ কোটি ডলার, রপ্তানি আয় ৩ হাজার ৯০ কোটি ডলার। ফলে বাণিজ্য ঘাটতি ১ হাজার ৬৯ কোটি ডলার।

এর আগের অর্থবছরে ব্যয় ছিল আরও বেশি। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আমদানি ব্যয় বেড়েছিল ২৫ শতাংশ হারে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের যন্ত্রপাতি আমদানি করতে ওই সময়ে প্রায় দুই হাজার কোটি ডলারের ঋণপত্র খোলা হয়। এতে ডলারের সংকট দেখা দিলে এর দর বেড়ে যায়। ২০১৭ সালের জুলাই মাসে যে ডলার ছিল ৮০ টাকা, তা এখন ৮৪ টাকা ছাড়িয়ে গেছে।

চাহিদার তুলনায় ডলারের সরবরাহ এখনো কম। আমদানি দায় মেটাতে গত জুলাই-মার্চ সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ১৮৭ কোটি ডলার কিনেছে ব্যাংকগুলো। এর বিপরীতে ১৫ হাজার ৮৯৫ কোটি টাকা চলে গেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। যা তারল্যসংকট আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।


অব্যবস্থাপনা ও আস্থার অভাবে তারল্যসংকট

• বিশৃঙ্খল ব্যাংক খাত
• তারল্যসংকটে ভুগছে ব্যাংক খাত
• আবার কমছে না সুদহার
• এতে বাড়ছে না বিনিয়োগ

ব্যাংক খাতে এখন হাহাকার। কান পাতলেই শোনা যায় টাকা নেই। টান পড়েছে নগদ টাকার। কমছে আমানত। কমেছে ঋণ আদায়। সংকট ডলারেরও। অথচ দুই বছর আগেও ব্যাংক যেন নগদ টাকার ওপর ভাসছিল। এই দুই বছরে দেশের অর্থনীতির বড় কোনো পালাবদল হয়নি। প্রবৃদ্ধি বেড়েছে, মাথাপিছু আয়ও বেড়েছে। কিন্তু এরই মধ্যে প্রকট হয়েছে ব্যাংক খাতের তারল্যসংকট। কমেছে বিনিয়োগযোগ্য তহবিল। যে ব্যাংক দুই বছর আগেও সাধারণ মানুষের আমানত রাখতে আগ্রহী ছিল না, তারাই এখন হন্যে হয়ে আমানত খুঁজছে। এমনকি অর্থের পরিমাণ বেশি হলে সাড়ে ১০ শতাংশ সুদও দিতে রাজি কিছু ব্যাংক।

সরকার ও ব্যাংকমালিকদের সিদ্ধান্ত ছিল, ব্যাংক ঋণের সুদহার হবে ৯ শতাংশ আর আমানতের সুদ ৬ শতাংশ। সুদ কমলে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগের খরচ কমবে, এতে নতুন বিনিয়োগও বাড়বে। অথচ ঘটছে উল্টোটা। বাড়ছে সব ধরনের সুদহার।

অব্যবস্থাপনা, অদক্ষতা, ভুল নীতি, কেন্দ্রীয় ব্যাংককে পাশ কাটিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং সাধারণ মানুষের আস্থার অভাবের কারণেই ব্যাংক খাতের তারল্যসংকট তৈরি হয়েছে বলে ব্যাংকার ও গবেষকেরা মনে করেন।

তারল্য পরিস্থিতি
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, ২০১৮ সালের জুলাই থেকে গত জানুয়ারি পর্যন্ত ব্যাংকগুলোতে আমানত বেড়েছে ৪০ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা, আর ঋণ বেড়েছে ৬৭ হাজার ৯৭৪ কোটি টাকা।
ব্যাংকগুলোর গত মার্চভিত্তিক তারল্য পরিস্থিতি বিবেচনায় দেখা গেছে, সব মিলিয়ে ৯ থেকে ১০টি ব্যাংকের বিনিয়োগ করার মতো তহবিল আছে। বাকি ব্যাংকগুলো টাকা ধার করে ছোট আকারের বিনিয়োগ কার্যক্রম চালাচ্ছে।

দেশে এখন মোট আমানতের মাত্র ২৮ শতাংশ আছে সরকারি ছয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংকে। বাকি ৭২ শতাংশ বেসরকারি ব্যাংকে। আবার সরকারি ব্যাংকের ঋণের হার আমানতের ৬৭ শতাংশ, বেসরকারি ব্যাংকে তা ৮৭ শতাংশ। অথচ ঋণ দেওয়ার সীমা সাড়ে ৮৩ শতাংশ। এর মধ্যে বেসিক ও পদ্মা (সাবেক ফারমার্স) ব্যাংকের ঋণের হার যথাক্রমে ১১০ ও ১১৩ শতাংশ। এর বাইরে আরও ১০ ব্যাংক ঋণ দিয়েছে আমানতের ৯০ শতাংশের বেশি। ফলে বেসরকারি ব্যাংকের বড় অংশেরই ঋণ দেওয়ার ক্ষমতা কমে গেছে।

ব্যাংকঋণের একটি বড় অংশ যায় চট্টগ্রামে। চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ব্যাংকে আগের চেয়ে টাকা কমে গেছে, সুদহারও বেড়ে গেছে। এখন ১৩ শতাংশ পর্যন্ত সুদ দিতে হচ্ছে। ব্যবসার জন্য সুদহার আরও কমানো প্রয়োজন।

কেন ভালো নেই ব্যাংক
আশির দশক থেকেই নানা চড়াই-উতরাইয়ের মধ্য দিয়ে গেছে দেশের ব্যাংক খাত। দাতাদের পরামর্শ ও ঋণে একাধিক সংস্কার কর্মসূচি নেওয়া হয়। গঠন করা হয় একাধিক কমিশন ও কমিটি। অনুসরণ করা হয় ব্যাংক পরিচালনার আন্তর্জাতিক রীতিনীতি। এতে সামগ্রিকভাবে ব্যাংক খাতের অবস্থা কিছুটা ভালো হয়েছিল। কিন্তু এক দশক ধরে উল্টো পথে চলেছে ব্যাংক খাত। নজরদারি শিথিল হয়েছে। ঘটেছে বড় বড় আর্থিক কেলেঙ্কারি। বেড়েছে খেলাপি ঋণ। অনেক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে পাশ কাটিয়ে।

গত এক দশকের মধ্যে ব্যাংক খাতে প্রথম ধাক্কা ছিল হল-মার্ক কেলেঙ্কারি। ২০১১ সালের এই কেলেঙ্কারির পর দেশের সবচেয়ে বড় সোনালী ব্যাংক ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে রক্ষণশীল হয়ে পড়ে। এরপরই ঘটে বেসিক ব্যাংক ও জনতা ব্যাংকের একাধিক কেলেঙ্কারি। এরপরও নিয়মনীতি মানেনি অনেক ব্যাংক। তারা নিয়মের বাইরে ঋণ দেয়।

সবশেষ ঘটে ২০১৮ সালের ফারমার্স ব্যাংক কেলেঙ্কারি। আমানতের তুলনায় বেশি ঋণ দেয় তারা। একপর্যায়ে নগদ টাকা না থাকায় গ্রাহকের অর্থ ফেরত দিতে ব্যর্থ হয় ব্যাংকটি। এতে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান আমানত তুলে নেওয়া শুরু করলে এর প্রভাব পড়ে অন্য ব্যাংকের ওপর। আস্থার সংকটে তাদের আমানতও কমে যায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমানে ব্যাংক খাতে যে সমস্যাগুলো চলছে, তা একদিনে আসেনি। ব্যবসায়ী ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আইনকানুন ঠিক করে দিচ্ছেন। এ কারণেই এত সমস্যার উদ্ভব। সমস্যা সবারই জানা, প্রয়োজন দৃশ্যমান পদক্ষেপ। কিন্তু অনিয়মের সঙ্গে জড়িত কাউকে তো শাস্তি দিতে দেখা গেল না। অথচ ব্যাংক খাতে এমন পরিস্থিতি চললে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নও সম্ভব না।

তারল্যসংকটের আরও কারণ
অন্যান্য খাত থেকেও ব্যাংকের আয় কমে গেছে। যেমন, আমদানি ব্যয় যেভাবে বেড়েছে, রপ্তানি ও প্রবাসী-আয় সেভাবে বাড়েনি। চলতি অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে আমদানি ব্যয় ছিল ৩ হাজার ৭৮৩ কোটি ডলার। সেবা, ঋণ ও সুদ পরিশোধে খরচ হয়েছে আরও ৮৮৬ কোটি ডলার। অন্যদিকে এ সময়ে প্রবাসী আয় এসেছে ১ হাজার ১৮৬ কোটি ডলার, রপ্তানি আয় ৩ হাজার ৯০ কোটি ডলার। ফলে বাণিজ্য ঘাটতি ১ হাজার ৬৯ কোটি ডলার।

এর আগের অর্থবছরে ব্যয় ছিল আরও বেশি। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আমদানি ব্যয় বেড়েছিল ২৫ শতাংশ হারে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের যন্ত্রপাতি আমদানি করতে ওই সময়ে প্রায় দুই হাজার কোটি ডলারের ঋণপত্র খোলা হয়। এতে ডলারের সংকট দেখা দিলে এর দর বেড়ে যায়। ২০১৭ সালের জুলাই মাসে যে ডলার ছিল ৮০ টাকা, তা এখন ৮৪ টাকা ছাড়িয়ে গেছে।

চাহিদার তুলনায় ডলারের সরবরাহ এখনো কম। আমদানি দায় মেটাতে গত জুলাই-মার্চ সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ১৮৭ কোটি ডলার কিনেছে ব্যাংকগুলো। এর বিপরীতে ১৫ হাজার ৮৯৫ কোটি টাকা চলে গেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। যা তারল্যসংকট আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

শিল্পের কাঁচামাল ও সাধারণের ভোগ্যপণ্যের বড় অংশই আমদানি করতে হয়। ডলারের দাম বৃদ্ধি পেলে এসব পণ্যের দামও বেড়ে যায়। এর প্রভাব পড়ে জীবনযাত্রার ব্যয়ে। চলতি অর্থবছরের প্রথম থেকেই মূল্যস্ফীতির চাপ বাড়ছে।

এর মধ্যেই আবার সরকার ঋণখেলাপিদের নতুন করে ছাড় দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। খেলাপিরা ৯ শতাংশ সুদহারে ঋণ নিয়মিত করতে পারবে। এতেও ব্যাংকগুলোর ঋণ আদায় কার্যক্রমে বড় ধাক্কা লেগেছে।

একজন বড় উদ্যোক্তা এই প্রতিবেদককে জানালেন, চলতি মাসেই তাঁর শিল্পগ্রুপের নেওয়া ঋণের কয়েকটা কিস্তি পরিশোধের সময়সীমা ছিল। এখন তিনি একটু দেরি করছেন। কারণ, খেলাপি হলে সুবিধা বেশি, কম সুদে ঋণ পরিশোধ করা যাবে।

ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বড় অঙ্কের টাকা খেলাপিদের কাছে আটকে পড়েছে। চাহিদামতো আমানতও মিলছে না। আবার ৯ শতাংশ সুদে টাকা পরিশোধের সুযোগ আসবে—এমন ঘোষণায় অনেকেই টাকা শোধ বন্ধ করে দিয়েছেন। ফলে ব্যাংকগুলোতে তারল্যে বড় চাপ এসেছে।

আস্থার সংকট
ব্যাংক খাতের এবারের তারল্যসংকটের অন্যতম কারণ আস্থার অভাব। এ সংকট কাটাতে সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ নিলেও তা কাজে আসেনি। যেমন, ২০১৮ সালের ১ এপ্রিল সোনারগাঁও হোটেলে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে সরকার ব্যাংকগুলোর নগদ জমা সংরক্ষণের (সিআরআর) হার ১ শতাংশ কমিয়ে সাড়ে ৫ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত নেয়। পাশাপাশি সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত অর্থ বেসরকারি ব্যাংকে রাখার অনুমোদন দেওয়া হয়, যা আগে ছিল সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ।

এরপরও চাহিদামতো আমানত আসেনি ব্যাংক খাতে। গ্রাহকেরা এখন মূলত টাকা খাটাচ্ছে জাতীয় সঞ্চয়পত্রে। মুনাফার হার বেশি থাকায় নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে সঞ্চয়পত্রই এখন টাকা রাখার বড় ভরসার জায়গা হিসেবে তৈরি হয়েছে। যেমন, চলতি অর্থবছরের বাজেটে সরকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে ২৬ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা সংগ্রহের পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু অর্থবছরের আট মাসে মোট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৬১ হাজার ১২ কোটি টাকা।

গত ১০ বছরে জিডিপির অংশ হিসেবে বেসরকারি বিনিয়োগ বেড়েছে মাত্র ১ শতাংশ। বিনিয়োগ বাড়ছে না বলে কর্মসংস্থানের সুযোগও খুব বাড়েনি। এই উচ্চ প্রবৃদ্ধিকে অনেক গবেষক কর্মসংস্থানহীন প্রবৃদ্ধি বলে আখ্যা দিয়েছেন। এ অবস্থায় যখন বিনিয়োগ আরও বাড়ানো প্রয়োজন, সেই সময়ে দুর্বল ব্যাংক খাত, তারল্যসংকট ও উচ্চ সুদহার বিনিয়োগ সুযোগকে আরও কমিয়ে দিচ্ছে।

মীর নাসির হোসেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি। প্রথম আলোকে তিনি বললেন, একজন উদ্যোক্তা হিসেবে বিনিয়োগের জন্য জরুরি হচ্ছে জ্বালানির প্রাপ্যতা। বিশেষ করে গ্যাস। অনেক দিন ধরে এ নিয়ে কথা হলেও এখনো প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। তরলীকৃত বা এলএনজি গ্যাস আসতে বেশি সময় নিয়েছে। অন্যদিকে সংকট কমলেও মানসম্পন্ন ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ এখনো নিশ্চিত হয়নি। জ্বালানির এসব চাহিদা পূরণ হলে তবেই আসবে ব্যাংকঋণের প্রশ্ন। কিন্তু ব্যাংক খাত বিশৃঙ্খল, জবাবদিহিও কম। তার ওপর অনেক আর্থিক কেলেঙ্কারির কারণে খেলাপি ঋণ ও সুদহার দুটিই বেড়েছে। সরকার অর্থনৈতিক অঞ্চল করছে। ব্যবসা পরিচালনার ব্যয় কমাতে চাইছে। এসব উদ্যোগ ভালো। কিন্তু জ্বালানি ও ব্যাংক সমস্যার সমাধান না হলে বিনিয়োগ কাঙ্ক্ষিত হারে বাড়বে না।

8
আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে অর্থ মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে একক বাজেট পদ্ধতি চালু হচ্ছে। একক বাজেট পদ্ধতিতে দুই মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সংস্থার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সম্প্রতি একটি পরিপত্র জারি করে এ পদ্ধতি অনুসরণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। অর্থ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

পরিপত্রে বলা হয়েছে, আগামী বাজেট থেকে পরীক্ষামূলকভাবে সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও সংস্থার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে একক বাজেট পদ্ধতিতে। এতে নির্দিষ্ট সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যাবে এবং অর্থের অপচয় রোধ করা সম্ভব হবে। বাজেট প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় সমন্বয়হীনতা ও দ্বৈততাও দূর হবে এ পদ্ধতির মাধ্যমে।


একক বাজেট পদ্ধতিতে বাস্তবায়নের জন্য গৃহীত কর্মসূচির আওতায় প্রকল্প চিহ্নিতকরণ, প্রণয়ন, যাচাই, অনুমোদন, সংশোধন, বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন–সংক্রান্ত একটি বিধিমালাও প্রণয়ন করেছে অর্থ বিভাগ। বলা হয়েছে, কর্মসূচি বাস্তবায়নকারী দপ্তর বা সংস্থা আগে খসড়া প্রকল্প তৈরি করবে। এরপর তা পাঠাবে সমন্বয় ইউনিটে। খসড়া প্রকল্প পরীক্ষা করে চূড়ান্ত করবে ওই ইউনিট।

এ ছাড়া প্রকল্প যাচাইয়ে দুটি কমিটি রাখার কথা বলা হয়েছে। কোনো কর্মসূচির আওতায় ব্যয় ১০০ কোটি টাকার বেশি হলেই তা যাচাই করবে অর্থসচিবের নেতৃত্বাধীন একটি প্রকল্প যাচাই কমিটি। আর ব্যয়ের পরিমাণ ১০০ কোটি টাকার মধ্যে হলে তা যাচাই করবে অর্থ বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বাধীন অন্য একটি প্রকল্প যাচাই কমিটি। উভয় ক্ষেত্রেই এগুলোর চূড়ান্ত অনুমোদন দেবেন অর্থমন্ত্রী।

জানা গেছে, সাধারণভাবে প্রকল্পের সর্বোচ্চ ব্যয়সীমা থাকবে না। তবে প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়সীমা হবে সাধারণত পাঁচ বছর। আর প্রকল্প এমনভাবে তৈরি করতে হবে, যাতে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যেই এর বাস্তবায়ন শেষ করা যায়।

বলা হয়েছে, প্রকল্প ব্যয় ১০০ কোটি টাকার বেশি হলে প্রকল্প গ্রহণের আগে সম্ভাব্যতা যাচাই করতে হবে। যৌক্তিক ক্ষেত্রে প্রকল্পের আওতায় পরামর্শক নিয়োগ করা যাবে। আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমেও সেবা নেওয়া যাবে। তবে প্রকল্পের আওতায় যানবাহন কেনা যাবে না।

আরও বলা হয়েছে, প্রকল্প বাস্তবায়নকারী দপ্তর বা সংস্থার প্রধানের নেতৃত্বে প্রতিটি কর্মসূচিতে একটি ‘বাস্তবায়ন কমিটি’ গঠন করতে হবে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগের বাজেট ব্যবস্থাপনা অনুবিভাগ প্রকল্পের বাস্তবায়ন অগ্রগতি পরীক্ষা করবে। ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে প্রতিবেদন তৈরি করে তা ‘বাজেট ব্যবস্থাপনা কমিটির’ বৈঠকেও উপস্থাপন করবে ওই অনুবিভাগ। প্রকল্প বাস্তবায়ন শেষ হওয়ার পর প্রকল্প পরিচালক একটি সমাপ্তি প্রতিবেদন তৈরি করে তা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগে পাঠাবেন। ওই মন্ত্রণালয় বা বিভাগ তা চূড়ান্ত করে পাঠাবে অর্থ বিভাগ এবং বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগে।

অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন প্রকল্পের নেতিবাচক উদাহরণ সামনে রেখে পরীক্ষামূলকভাবে একক বাজেট পদ্ধতির দিকে যাওয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বৈশ্বিক চর্চা মাথায় রাখা হচ্ছে।

উদাহরণ দিয়ে একজন কর্মকর্তা জানান, দেখা গেল, একটি প্রকল্পের আওতায় একটি বিশেষায়িত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হলো। প্রকল্প শেষ, কিন্তু জনবল রাজস্ব খাতে গেল না। ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি পাঁচ বছরেও চালু করা গেল না। বিষয়টি সবদিক থেকেই ক্ষতিকর। নতুন পদ্ধতির ফলে যেটা হবে তা হলো, কর্মসূচির আওতায় প্রতিষ্ঠান দাঁড়িয়ে যাবে, আর বাকি খরচ অর্থাৎ মূলধনি খরচ যাবে রাজস্ব বাজেট থেকে এবং তা হবে প্রকল্প শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই।

পরীক্ষামূলক পদ্ধতি সফল হলে উন্নয়ন বাজেট আলাদা করার দরকার পড়বে না বলে মনে করা হচ্ছে। অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, বিশ্বে এখন অনুন্নয়ন ও উন্নয়ন নামে আলাদা বাজেটের রেওয়াজ নেই। দাতা বা উন্নয়ন সহযোগীদের পরামর্শে একসময় বাংলাদেশে অনুন্নয়ন (রাজস্ব) ও উন্নয়ন বাজেট আলাদা করার যে ধারা চলে আসছে, তা এখন বন্ধ করার সময় এসেছে। সেই চিন্তা থেকেই পরীক্ষামূলকভাবে দুটি মন্ত্রণালয় বেছে নেওয়া হয়েছে।

9
Finance / অপচয় কমাতে নতুন পদ্ধতি
« on: March 24, 2019, 02:59:47 PM »
আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে অর্থ মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে একক বাজেট পদ্ধতি চালু হচ্ছে। একক বাজেট পদ্ধতিতে দুই মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সংস্থার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সম্প্রতি একটি পরিপত্র জারি করে এ পদ্ধতি অনুসরণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। অর্থ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

পরিপত্রে বলা হয়েছে, আগামী বাজেট থেকে পরীক্ষামূলকভাবে সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও সংস্থার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে একক বাজেট পদ্ধতিতে। এতে নির্দিষ্ট সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যাবে এবং অর্থের অপচয় রোধ করা সম্ভব হবে। বাজেট প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় সমন্বয়হীনতা ও দ্বৈততাও দূর হবে এ পদ্ধতির মাধ্যমে।

Eprothom Alo
একক বাজেট পদ্ধতিতে বাস্তবায়নের জন্য গৃহীত কর্মসূচির আওতায় প্রকল্প চিহ্নিতকরণ, প্রণয়ন, যাচাই, অনুমোদন, সংশোধন, বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন–সংক্রান্ত একটি বিধিমালাও প্রণয়ন করেছে অর্থ বিভাগ। বলা হয়েছে, কর্মসূচি বাস্তবায়নকারী দপ্তর বা সংস্থা আগে খসড়া প্রকল্প তৈরি করবে। এরপর তা পাঠাবে সমন্বয় ইউনিটে। খসড়া প্রকল্প পরীক্ষা করে চূড়ান্ত করবে ওই ইউনিট।

এ ছাড়া প্রকল্প যাচাইয়ে দুটি কমিটি রাখার কথা বলা হয়েছে। কোনো কর্মসূচির আওতায় ব্যয় ১০০ কোটি টাকার বেশি হলেই তা যাচাই করবে অর্থসচিবের নেতৃত্বাধীন একটি প্রকল্প যাচাই কমিটি। আর ব্যয়ের পরিমাণ ১০০ কোটি টাকার মধ্যে হলে তা যাচাই করবে অর্থ বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বাধীন অন্য একটি প্রকল্প যাচাই কমিটি। উভয় ক্ষেত্রেই এগুলোর চূড়ান্ত অনুমোদন দেবেন অর্থমন্ত্রী।

জানা গেছে, সাধারণভাবে প্রকল্পের সর্বোচ্চ ব্যয়সীমা থাকবে না। তবে প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়সীমা হবে সাধারণত পাঁচ বছর। আর প্রকল্প এমনভাবে তৈরি করতে হবে, যাতে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যেই এর বাস্তবায়ন শেষ করা যায়।

বলা হয়েছে, প্রকল্প ব্যয় ১০০ কোটি টাকার বেশি হলে প্রকল্প গ্রহণের আগে সম্ভাব্যতা যাচাই করতে হবে। যৌক্তিক ক্ষেত্রে প্রকল্পের আওতায় পরামর্শক নিয়োগ করা যাবে। আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমেও সেবা নেওয়া যাবে। তবে প্রকল্পের আওতায় যানবাহন কেনা যাবে না।

আরও বলা হয়েছে, প্রকল্প বাস্তবায়নকারী দপ্তর বা সংস্থার প্রধানের নেতৃত্বে প্রতিটি কর্মসূচিতে একটি ‘বাস্তবায়ন কমিটি’ গঠন করতে হবে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগের বাজেট ব্যবস্থাপনা অনুবিভাগ প্রকল্পের বাস্তবায়ন অগ্রগতি পরীক্ষা করবে। ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে প্রতিবেদন তৈরি করে তা ‘বাজেট ব্যবস্থাপনা কমিটির’ বৈঠকেও উপস্থাপন করবে ওই অনুবিভাগ। প্রকল্প বাস্তবায়ন শেষ হওয়ার পর প্রকল্প পরিচালক একটি সমাপ্তি প্রতিবেদন তৈরি করে তা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগে পাঠাবেন। ওই মন্ত্রণালয় বা বিভাগ তা চূড়ান্ত করে পাঠাবে অর্থ বিভাগ এবং বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগে।

অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন প্রকল্পের নেতিবাচক উদাহরণ সামনে রেখে পরীক্ষামূলকভাবে একক বাজেট পদ্ধতির দিকে যাওয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বৈশ্বিক চর্চা মাথায় রাখা হচ্ছে।

উদাহরণ দিয়ে একজন কর্মকর্তা জানান, দেখা গেল, একটি প্রকল্পের আওতায় একটি বিশেষায়িত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হলো। প্রকল্প শেষ, কিন্তু জনবল রাজস্ব খাতে গেল না। ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি পাঁচ বছরেও চালু করা গেল না। বিষয়টি সবদিক থেকেই ক্ষতিকর। নতুন পদ্ধতির ফলে যেটা হবে তা হলো, কর্মসূচির আওতায় প্রতিষ্ঠান দাঁড়িয়ে যাবে, আর বাকি খরচ অর্থাৎ মূলধনি খরচ যাবে রাজস্ব বাজেট থেকে এবং তা হবে প্রকল্প শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই।

পরীক্ষামূলক পদ্ধতি সফল হলে উন্নয়ন বাজেট আলাদা করার দরকার পড়বে না বলে মনে করা হচ্ছে। অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, বিশ্বে এখন অনুন্নয়ন ও উন্নয়ন নামে আলাদা বাজেটের রেওয়াজ নেই। দাতা বা উন্নয়ন সহযোগীদের পরামর্শে একসময় বাংলাদেশে অনুন্নয়ন (রাজস্ব) ও উন্নয়ন বাজেট আলাদা করার যে ধারা চলে আসছে, তা এখন বন্ধ করার সময় এসেছে। সেই চিন্তা থেকেই পরীক্ষামূলকভাবে দুটি মন্ত্রণালয় বেছে নেওয়া হয়েছে।

10
সমুদ্রবন্দরে পণ্যের একটি চালান আসার পর তা খালাসের প্রক্রিয়া শেষ করতে দক্ষিণ কোরিয়ায় ৪ দশমিক ৪ দিন সময় লাগে। বাংলাদেশে এ প্রক্রিয়া শেষ করতে লাগে ১৫ দশমিক ৮ দিন। কোরিয়ায় একজন শ্রমিকের মাসিক মজুরি ২ হাজার ২০৮ ডলার। বাংলাদেশে ১০৯ ডলার।

এ চিত্র উঠে এসেছে বিভিন্ন দেশে কর্মরত জাপানি কোম্পানিগুলোর ব্যবসা পরিস্থিতি নিয়ে জাপান ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড অর্গানাইজেশনের (জেট্রো) এক জরিপে। জেট্রোর জরিপ ও অন্যান্য বৈশ্বিক সংস্থার প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশ ব্যবসার পরিবেশের প্রায় সব ক্ষেত্রেই পিছিয়ে আছে। এ দেশে শুধু শ্রমিক ও ব্যবস্থাপকদের পেছনে ব্যয় কম। ফলে উৎপাদন খরচ কম।

জেট্রোর জরিপে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ১৯টি দেশে উৎপাদনশীল খাতের শ্রমিক, প্রকৌশলী ও ব্যবস্থাপক এবং সেবা খাতের ব্যবস্থাপক ও কর্মীদের মাসিক ও বার্ষিক বেতনের চিত্র তুলে ধরা হয়। এটি শুধু জাপানি কোম্পানিগুলোর হিসাব।

জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, জরিপের আওতায় আসা ১৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশে শ্রমিকের মজুরি সবচেয়ে কম। এ দেশে তিন বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন শ্রমিক মাসে মজুরি হিসেবে পান ১০৮ ডলার (প্রায় ৯ হাজার টাকা)। বাংলাদেশের প্রতিবেশী মিয়ানমারের একজন শ্রমিক পান ১৬২ ডলার। এ মজুরি ভারতে ২৬৫ ডলার, পাকিস্তানে ১৮৭ ডলার এবং কম্বোডিয়ায় ২০১ ডলার।

শুধু শ্রমিকেরা নন, বেতন কম এ দেশের প্রকৌশলী ও ব্যবস্থাপকদেরও। ১৯টি দেশের মধ্যে উৎপাদনশীল খাতে প্রকৌশলীদের মাসিক বেতন ২৮৭ ডলার (প্রায় ২৪ হাজার টাকা), যা ভারতে ৫৯১, পাকিস্তানে ৪৯২ ও মিয়ানমারে ৩৪৯ ডলার। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কাছাকাছি আছে কেবল শ্রীলঙ্কা। দেশটিতে প্রকৌশলীদের বেতন মাসে ২৯১ ডলার। উৎপাদনশীল ও সেবা খাতের ব্যবস্থাপকদের বেতনের দিক দিয়েও বাংলাদেশ তলানিতে রয়েছে। শুধু একটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের চেয়ে খারাপ অবস্থানে আছে শ্রীলঙ্কা। সেটি হলো উৎপাদনশীল খাতের ব্যবস্থাপকদের বেতন। শ্রীলঙ্কায় ব্যবস্থাপকদের বেতন মাসে ৫২৬ ডলার, বাংলাদেশে তা ৭৯৩ ডলার।

বিশ্বব্যাংকের সহজে ব্যবসা বা ইজ অব ডুয়িং বিজনেস সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৮৯টি দেশের মধ্যে ১৭৬তম। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে আফগানিস্তানও। বিশ্বব্যাংকের লজিস্টিকস পারফরম্যান্স ইনডেক্সে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬০টি দেশের মধ্যে ১০০তম।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, সচরাচর যে মানদণ্ডে একজন বিনিয়োগকারী একটি দেশে আসেন, তার অধিকাংশই বাংলাদেশে অনুপস্থিত। এখানে হয়তো কর্মী পাওয়া খুব সহজ। এর কারণ প্রচুর মানুষ শ্রমবাজারে রয়েছে। তিনি বলেন, জাপানি কোম্পানিগুলো যেহেতু মানসম্পন্ন ব্যবস্থাপক পাচ্ছে না, প্রচুর আধা দক্ষ বা অদক্ষ ব্যবস্থাপক চাকরির আবেদন করছে, তখন কম বেতনে নিয়োগের সুযোগ তৈরি হয়।

অনেক ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের ব্যবস্থাপকদের সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পড়াশোনা ও প্রশিক্ষণ থাকে না উল্লেখ করে গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বাংলাদেশি পোশাক খাতের ব্যবস্থাপকদের বক্তব্য অনুযায়ী তাঁদের কাজের মান বিদেশিদের সমান। তবে তাঁদের সার্বিক ধারণা, উপস্থাপনার দক্ষতা ও ইংরেজি জ্ঞান কম।

বন্দরে সময় বেশি লাগে বাংলাদেশে

জেট্রোর জরিপে জাপানি কোম্পানিগুলোকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ব্যবসা সম্প্রসারণের কারণ কী কী। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ শীর্ষ অবস্থানে আছে সহজে শ্রমিক প্রাপ্যতার দিক থেকে। এ ছাড়া উচ্চ প্রবৃদ্ধি, রপ্তানি বৃদ্ধি, সরবরাহ ও উৎপাদন ব্যবস্থা পুনর্বিবেচনা ও উদার নীতির ক্ষেত্রে জাপানিদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ। জাপানিদের চোখে বাংলাদেশে প্রধান পাঁচটি সমস্যা হলো পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ কঠিন, কর্মীর নিম্নমান, কাস্টমসে পণ্য খালাসে বিলম্ব, জটিলতা ও মজুরি বৃদ্ধি।

জেট্রোর জরিপ অনুযায়ী, ১৯টি দেশের মধ্যে সমুদ্রবন্দরে সময় বেশি লাগে পাকিস্তানে। আমদানি পণ্য খালাসের প্রক্রিয়া শেষ করতে পাকিস্তানে ১৬ দশমিক ৬, বাংলাদেশে ১৫ দশমিক ৮, মিয়ানমারে ১৩ দশমিক ৩ ও ভারতে ১২ দিন লাগে। একইভাবে বিমানবন্দরে সবচেয়ে বেশি সময় লাগে বাংলাদেশে।

উৎপাদন খরচ অর্ধেক

জাপানের সঙ্গে বিভিন্ন দেশের উৎপাদন খরচের একটি চিত্রও তুলে ধরা হয়েছে জেট্রোর জরিপে। এতে দেখা যায়, এ ক্ষেত্রেও এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। জাপানে যে পণ্যটি উৎপাদন করতে ১০০ টাকা খরচ হবে, সেটি বাংলাদেশে উৎপাদনে খরচ হবে ৫১ টাকা। লাওসে খরচ হবে ৫০ টাকার কিছু বেশি। একই পণ্য উৎপাদনে শ্রীলঙ্কায় ৬১, কম্বোডিয়ায় ৬৩, ভিয়েতনামে ৭৩, মিয়ানমানে ৭৬, ভারতে ৭৭ ও পাকিস্তানে ৮২ টাকার মতো খরচ হয়। জরিপ অনুযায়ী, এ দেশে কর্মরত ৭৩ শতাংশ জাপানি কোম্পানি বলেছে, বাংলাদেশে তারা ব্যবসা বাড়াবে। এ হার অন্যান্য দেশের চেয়ে বেশি।

জেট্রো ১৯৮৭ সাল থেকে এ ধরনের জরিপ করে। এবারেরটি তাদের ৩২তম জরিপ। জরিপের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে গত ৯ অক্টোবর থেকে ৯ নভেম্বর পর্যন্ত।

11
সূচকের ব্যাপক দরপতন লক্ষ করা যাচ্ছে দেশের দুই পুঁজিবাজারে। আজ রোববার সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস দুপুর ১২টা পর্যন্ত দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ৪২ পয়েন্ট। দুই ঘণ্টায় লেনদেনের পরিমাণ মাত্র ১৫৩ কোটি ৯৪ লাখ টাকা।

একই সময় পর্যন্ত চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই কমেছে ১১৯ পয়েন্ট। তা অবস্থান করছে ১৬ হাজার ৯৮৯ পয়েন্টে।

ডিএসই ওয়েবসাইট সূত্রে জানা যায়, দুপুর ১২টা পর্যন্ত হাতবদল হওয়া শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১০৫টির। কমেছে ১৬৬টির। অপরিবর্তিত ৫৪টির।

দুপুর ১২টা পর্যন্ত লেনদেনের শীর্ষে রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড, সুহৃদ, জেএমআই সিরিঞ্জেস, গ্রামীণফোন, ডাচ্‌–বাংলা ব্যাংক, বিএটিবিসি, মুন্নু সিরামিকস, ন্যাশনাল পলিমার, লিগ্যাসি ফুটওয়্যার ও ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি।

গত কার্যদিবসে লেনদেন শেষে ডিএসইএক্স সূচক ৩০ পয়েন্ট কমে অবস্থান করে ৫ হাজার ৫৭০ পয়েন্টে। মোট লেনদেন হয় ৩৯০ কোটি ৯৯ লাখ টাকা।

12
বাংলাদেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) কৌশলগত বিনিয়োগকারী হচ্ছে চীনের সেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জ ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের সমন্বয়ে গঠিত জোট। আজ বৃহস্পতিবার পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এই প্রস্তাব অনুমোদন করেছে।

এর আগে গত সোমবার চীনের জোটের কাছে শেয়ার বিক্রিতে সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদন দেন ডিএসইর বর্তমান শেয়ারধারীরা। এরপর আজ নিয়ন্ত্রক সংস্থার চূড়ান্ত অনুমোদন মেলে। এর আগে ডিএসইর মালিকানার অংশীদার হতে চীনের এই জোটের পাশাপাশি ভারতের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের নেতৃত্বে গঠিত একটি জোটও আগ্রহ প্রকাশ করে। তবে দর প্রস্তাবে এগিয়ে ছিল চীনের জোটটি। কিন্তু দর প্রস্তাবে পিছিয়ে থেকে ভারতের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের নেতৃত্বাধীন জোটটি ডিএসইর অংশীদার হতে নানামুখী তদবির ও চাপ তৈরি করে।

ডিএসই আজ জানিয়েছে, চীনের জোটটি ডিএসইর ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের প্রতিটি শেয়ার ২১ টাকা দামে কিনবে। তবে এ জন্য বেশ কয়েকটি শর্ত দিয়েছে বিএসইসি। অন্যতম শর্ত হলো এ-সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে সিকিউরিটিজ আইন ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য আইন পরিপালন করে।

13
বাজেটে শেয়ারবাজারের জন্য উল্লেখযোগ্য কোনো দাবিদাওয়া নেই। তবু বাজেট শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের জন্য এখন বড় ভাবনা। কারণ বাজেটকে কেন্দ্র করে টানা দরপতনে বাজারের সূচক তলানিতে এসে ঠেকেছে। বাজেট ছাড়া বছরটি নির্বাচনেরও। এ কারণে আগেভাগে শেয়ারবাজার ছাড়ছে বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও। আর নির্বাচনের বছর হওয়ায় বাজারে কারসাজির প্রবণতা বাড়তে পারে বলে মনে করছেন বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অনেকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাজারে নিয়ন্ত্রক সংস্থার তদারকি দুর্বলতা রয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে শুধু বাজেটের জুজুর ভয়ে সূচক কমতে কমতে ৫ হাজারের কাছাকাছি চলে এসেছে। অথচ এ সময়ে আর্থিক খাতে এমন কোনো অবস্থা তৈরি হয়নি, যাতে সূচকের টানা পতন ঘটতে পারে। শেয়ার-বাজারের টানা দরপতন নিয়ে গত কয়েক দিনে কথা হয় বাজারসংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে। তাঁদের কেউই এ দরপতনের যৌক্তিক কোনো কারণ জানাতে পারেননি।

দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) এক পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাজারের প্রধান সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেন সুশাসনের অভাবকে। তাঁর মতে, একদিকে ভালো কোম্পানির বড় ধরনের দরপতন ঘটছে, আরেক দিকে মানহীন কোম্পানির লাগামহীন দাম বাড়ছে। যৌক্তিক কারণে বাজারে পতন হলে খারাপ কোম্পানিরই বেশি দরপতন হওয়ার কথা। কিন্তু ঘটছে মূলত উল্টোটি। অথচ এসব দেখার যেন কেউ নেই।

সূচকের পতন
ডিএসইর তথ্য বলছে, গত ৫ মাসে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে মোট ৯৩৭ পয়েন্ট। এর মধ্যে টানা পতন শুরু হয় এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ থেকে। ২৬ এপ্রিল থেকে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত ডিএসইএক্স সূচকটি কমেছে প্রায় ৪৬৭ পয়েন্ট। ফলে গতকাল দিন শেষে সূচক নেমে আসে ৫ হাজার ৩৪৭ পয়েন্টে। চলতি বছরের শুরুর দিনে ডিএসইএক্স ছিল ৬ হাজার ২৫৪ পয়েন্টে।

বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গত এক মাসে প্রায় পৌনে ৫০০ পয়েন্ট সূচক কমাতে সবচেয়ে বেশি দরপতন ঘটানো হয়েছে ভালো মানের মৌলভিত্তির কোম্পানির শেয়ারের দামের। কারণ সূচকে এসব কোম্পানির শেয়ারের প্রভাব বেশি।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, গত ১৪ মে থেকে মাত্র ১৩ কার্যদিবসে গ্রামীণফোনের শেয়ারের দাম ৬০ টাকার বেশি কমেছে। আর এ পতন হয়েছে একটানা। একক কোম্পানি হিসেবে ঢাকার বাজারে সূচকের উত্থান-পতনে বড় ভূমিকা রয়েছে কোম্পানিটির। এ ছাড়া খাত হিসেবে সূচকের উত্থান-পতনে বড় প্রভাব রয়েছে ব্যাংক খাতের। যে কোম্পানির মূলধন যত বেশি সূচকে সেই কোম্পানির প্রভাবও তত বেশি। সাম্প্রতিক দরপতনে সেসব কোম্পানিরই বেশি দরপতন ঘটেছে, যেসব কোম্পানির মূলধন বেশি।
বাজারের সাম্প্রতিক এ দরপতনের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসইর সাবেক পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, সাম্প্রতিক দরপতনে মৌলভিত্তির কোম্পানির শেয়ারের দাম যেভাবে কমেছে, তা অযৌক্তিক। এ কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক আরও বেড়েছে।

গুজব আর কারসাজি
গুজবে যাঁরা কান পাতেন, তাঁরা গত এপ্রিল থেকেই শুনছিলেন যে বাজেটের আগে সূচক ৫ হাজারের কাছে নিয়ে যাওয়া হবে। বাজেটের পরে আবার বাড়বে। ঠিক তা-ই হয়েছে। এ সময় ভালো কয়েকটি কোম্পানির শেয়ারের দর পড়ে যায়। যাঁরা বাজারের কারসাজির ওপর আস্থা রাখেন, তাঁরা এই সুযোগ ঠিকই কাজে লাগাচ্ছেন। বড় বড় কিছু বিনিয়োগকারী আগেভাগে শেয়ার বিক্রি করে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন। তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল সূচক কমে একটি পর্যায়ে নামলে কম দামে আবারও শেয়ার কিনে বাজারে সক্রিয় হবেন তাঁরা। এমনকি অনেক প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীও তাদের বিনিয়োগ কমিয়ে দিয়েছে বাজারে।

মৌলভিত্তির ৩০ কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ তালিকার শীর্ষে রয়েছে এসিআই। গত ১১ কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ৩৯ টাকা কমেছে। গত এক মাসে ২৮ টাকা মূল্য হারিয়েছে ব্লু-চিপস কোম্পানির তালিকাভুক্ত স্কয়ার ফার্মা। অন্যদিকে দুর্বল ও মানহীন কোম্পানি হিসেবে জেড শ্রেণিভুক্ত মর্ডান ডায়িংয়ের শেয়ারের দাম গত ৫ কার্যদিবসেই বেড়েছে ৬২ টাকা। ২৯ মে কোম্পানিটির শেয়ারের বাজারমূল্য ছিল ১৯০ টাকা। গতকাল দিন শেষে তা বেড়ে হয়েছে ২৫২ টাকা। গত ৪ কার্যদিবসে ১৯ টাকা বেড়েছে জেড শ্রেণিভুক্ত নামসর্বস্ব আরেক কোম্পানি রহিমা ফুডের।

এ ছাড়া তালিকাভুক্ত নতুন বেশ কয়েকটি কোম্পানি কয়েক বছর না যেতেই নেমে এসেছে আইপিও মূল্যের নিচে। ২০১৫ সালে বাজারে আসে বস্ত্র খাতের কোম্পানি সিঅ্যান্ডএ। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে কোম্পানিটি প্রতিটি শেয়ার ১০ টাকা অভিহিত মূল্যে বিক্রি করে। গতকাল দিন শেষে এ কোম্পানির শেয়ারের বাজারমূল্য ছিল ৬ টাকা ৪০ পয়সা। একই বছর আইপিওতে ২৬ টাকায় শেয়ার বিক্রি করে বাজারে তালিকাভুক্ত হয় তশরিফা ইন্ডাস্ট্রিজ। গতকাল দিন শেষে সেই দাম কমে নেমে এসেছে ১৮ টাকায়।

দরপতনের কারণ জানতে বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে গত মাসে বৈঠক করেন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সাইফুর রহমান। সেখানে বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা পতনের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তিশ্রেণির বড় বিনিয়োগকারীদের নিষ্ক্রিয়তা, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রির চাপসহ বাজেটকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন।

মন্দা বিদেশি বিনিয়োগে
বাজেট ইস্যুর পাশাপাশি বছরটি নির্বাচনেরও। এ কারণে বাজারে বিদেশি বিনিয়োগেও কিছুটা মন্দাভাব চলছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অনেকে শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন। ডিএসই সূত্রে প্রাপ্ত সর্বশেষ বিদেশি বিনিয়োগের তথ্য অনুযায়ী, মে মাসে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা যে পরিমাণ শেয়ার কিনেছেন, তার দ্বিগুণ বিক্রি করেছেন। এ মাসে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রির পরিমাণ ছিল ৬২৪ কোটি টাকার। তার বিপরীতে কেনার পরিমাণ ছিল ৩৪২ কোটি টাকা।

এদিকে শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির সঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নাম জড়িয়ে আছে। কারণ বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে ১৯৯৬ ও ২০১০ সালের দুই দফায় কেলেঙ্কারির যে ঘটনা ঘটেছে, দুবারই রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার। তাই নির্বাচনের আগে বাজারের টানা দরপতনে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক বেড়েছে।

জানতে চাইলে বেসরকারি ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদের শিক্ষক মোহাম্মদ মুসা বলেন, নির্বাচনের বছরে দেশ থেকে অর্থ পাচার বেড়ে যায়। যে টাকাটা বিদেশে পাচার করা হয়, তা দেশের ভেতরে বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করা থাকে। এখন হয়তো শেয়ারবাজার থেকে কেউ কেউ টাকা তুলে বিদেশে নিয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া নির্বাচন সামনে রেখে কারসাজিকারকেরাও বাজারে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। কৌশলে তাঁরা তখন দরপতন ঘটিয়ে কম দামে শেয়ার কিনে নেওয়ার চেষ্টা করেন। পাশাপাশি বাজেটকেও দরপতনের হাতিয়ার হিসেবে কাজে লাগানো হচ্ছে। সব মিলিয়ে বাজারের সাম্প্রতিক এ দরপতন।

দরপতনের বাজারে নিয়ন্ত্রক সংস্থার ভূমিকা সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএসইসির মুখপাত্র সাইফুর রহমান বলেন, ‘দরপতন ঠেকাতে আমরা আমাদের নীতি-সহায়তা অব্যাহত রেখেছি। পাশাপাশি নিয়মিত তদারকিও অব্যাহত রয়েছে। বেশ কিছু বিষয়ে তদন্ত চলছে।’


14
বাংলাদেশ ব্যাংক অফিসার (জেনারেল) পদে ২৫০ জন লোক নেওয়ার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। তবে পদের সংখ্যা বাড়তে বা কমতে পারে। এ পদে আবেদন করা যাবে ১২ জুলাই পর্যন্ত। প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিটি পাওয়া যাবে https://erecruitment.bb.org.bd/onlineapp/joblist.php লিংকে।

এ পদে আবেদন করতে হলে প্রার্থীকে কোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অথবা চার বছর মেয়াদি স্নাতক ডিগ্রি পাস হতে হবে। মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট এবং তদূর্ধ্ব পর্যায়ের পরীক্ষায় সনাতন পদ্ধতিতে প্রকাশিত ফলাফলের ক্ষেত্রে ন্যূনতম একটিতে প্রথম বিভাগ বা শ্রেণি থাকতে হবে। কোনো পর্যায়েই তৃতীয় বিভাগ বা শ্রেণি গ্রহণযোগ্য হবে না।

এসএসসি ও এইচএসসিতে ফলাফলের ক্ষেত্রে জিপিএ–৩ বা তদূর্ধ্ব প্রথম শ্রেণি, ২ থেকে ৩–এর কম দ্বিতীয় বিভাগ, জিপিএ–১ থেকে ২–এর কম তৃতীয় বিভাগ বলে গণ্য হবে। অনার্সে বা মাস্টার্সে ৫ পয়েন্ট স্কেলে ৩.৭৫ বা তদূর্ধ্ব প্রথম শ্রেণি, ২.৮১৩ বা তদূর্ধ্ব কিন্তু ৩.৭৫–এর কম দ্বিতীয় শ্রেণি, ২.০৬৩ বা তদূর্ধ্ব কিন্তু ২.৮১৩–এর কম তৃতীয় বিভাগ বলে গণ্য হবে। এ ছাড়া অনার্সে বা মাস্টার্সে ৪ পয়েন্ট স্কেলে সিজিপিএ–৩ বা তদূর্ধ্ব প্রথম শ্রেণি, ২.২৫ বা তদূর্ধ্ব কিন্তু ৩–এর কম দ্বিতীয় শ্রেণি, ১.৬৫ বা তদূর্ধ্ব কিন্তু ২.২৫–এর কম তৃতীয় শ্রেণি বলে গণ্য হবে।

আবেদনকারী প্রার্থীদের ১১-০৬-২০১৭ তারিখে বয়স সর্বোচ্চ ৩০ বছর হতে পারবে। আর মুক্তিযোদ্ধা-শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান এবং প্রতিবন্ধী প্রার্থীদের ক্ষেত্রে বয়স সর্বোচ্চ ৩২ বছর।

আগ্রহী প্রার্থীদের বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়োগসংক্রান্ত ওয়েবসাইট erecruitment.bb.org.bd-এ অনলাইন ফরম পূরণের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। দরখাস্ত করার সময় ফরম পূরণ করার নিয়ম ও অন্য শর্তাবলি ওয়েবসাইটেই পাওয়া যাবে। অনলাইনে আবেদন করার পর সিভি আইডেন্টিফিকেশন নম্বর, প্রাপ্ত ট্র্যাকিং ও পাসওয়ার্ড যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে হবে।

বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, প্রার্থীদের এমসিকিউ, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। প্রার্থীদের প্রাথমিকভাবে কোনো কাগজপত্র পাঠাতে হবে না। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের কাছ থেকে আবেদনে উল্লিখিত তথ্যাদির সমর্থনে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আহ্বান করা হবে। দাখিল করা কাগজপত্রের যথার্থতা যাচাই সাপেক্ষে প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাকা হবে। এ পদে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত প্রার্থীরা জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ অনুযায়ী ১৬ হাজার টাকা স্কেলে বেতন পাবেন।

15
ফুটবলাররা যে চোখ কপালে তুলে দেওয়ার মতো অঙ্কের আয় করেন, সেটা আর নতুন করে বলার কিছু নেই। কিছুদিন আগেও বাস্কেটবল কিংবা বেসবল তারকাদের পেছনে থাকতে হলেও মেসি-রোনালদোরা এখন এঁদেরও টপকে যাচ্ছেন। স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যমের দাবি, নতুন চুক্তিতে লিওনেল মেসির সাপ্তাহিক বেতন হবে ৫ লাখ পাউন্ড! বাংলাদেশি টাকায় ৫ কোটি ২৩ লাখের বেশি! সঙ্গে বোনাস তো আছেই। সে তুলনায় রোনালদো এবার একটু পিছিয়ে গেছেন, তাঁর আয় সপ্তাহে ৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা।

তবে স্পনসরদের দেওয়া অর্থ মিলিয়ে এগিয়ে আছেন রিয়াল ফরোয়ার্ড। ফোর্বস ম্যাগাজিন অনুযায়ী, গত এক বছরে ৯৩ মিলিয়ন ডলার আয় করে খেলোয়াড়দের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আয় করেছেন রোনালদো। বাস্কেটবলের লেব্রন জেমসের আয়ও তাঁর চেয়ে ৭ মিলিয়ন ডলার কম। আর মেসির আয় ছিল ৮০ মিলিয়ন। তো এই বিপুল অঙ্কের অর্থ নিয়ে কী করেন তারকারা? বিজনেস ইনসাইডার চেষ্টা করেছে সমর্থকদের সে কৌতূহল মেটানোর।

Pages: [1] 2 3 ... 12