(https://www.jugantor.com/assets/news_photos/2019/11/12/image-242850-1573502371.jpg)
মানুষের ব্যক্তিগত চরিত্র বা মানবিক গুনাবলি নির্ভর করে তার পারিপার্শ্বিক অবস্থান, সমাজ এবং ব্যক্তিটিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা নির্ধারিত কোন বিষয়কে ঘিরে।চাইলেই আমরা করে বা বলে ফেলি অনেক কিছুই যেটা নিজস্ব মানবিক গুনাবলির বিপরীতে অবস্থান নেয়। নৈতিকতা ও মূল্যবোধ এমন অদম্য গুণাবলী যা আমাদের একজন সুস্থ এবং স্বাভাবিক জীবন যাপনের জন্য অত্যাবশ্যকীয়। প্রয়োজন সেগুলো আত্মস্থ করা।তা করতে হয় প্রত্যেকের নিজের পরিবার এবং চারপাশের পরিবেশ থেকেই। আপনি চারপাশে যা হতে দেখবেন, সেগুলো পোজেটিভ বা নেগেটিভ যাই হউক না কেন সেটা খুব করে না হলেও কিছুটা হলেও আপনার চিন্তা চেতনাকে প্রভাবিত করবে।ভাল কিছু তাই খুঁজে নেবার দায়িত্বটাও নিজেদেরই।
কার্যত আমাদের সমস্ত মানবিকতা ও মূল্যবোধ নৈতিকভাবে এক অর্থে আপেক্ষিক ই বটে। যেটি হয়তো কোন একজন নির্দিষ্ট ব্যক্তির পক্ষে ভাল এবং উপকারী বলে মনে হতে পারে কিন্তু সত্যিকার অর্থে নয়। আবার ক্ষেত্রে বিশেষে একে অপরের পক্ষে কিছু বিষয় খারাপ যা অনিবার্য হতে পারে যেটা ব্যক্তির কাজ তথা প্রত্যাহিক জীবনকে ব্যহত করে। সুতরাং, মানবিকগুনাবলি হতে হবে নৈতিক যা ব্যক্তির নিজের উপরেই নির্ভর মানে ব্যক্তিনির্ভর। কোন বিক্তিগত সম্পর্ক কিংবা প্রাতিষ্ঠানিক সম্পর্কের উপর নয় এর ভিত্তি গড়ে উঠেনা।আমরা যা, আমরা আসলে তাই।সেটাই আমাদের স্বরুপ। জীবন যে খুব বড় তা নয়, কিংবা একেবারে সংক্ষিপ্তও নয়। তাই ছাত্রছাত্রীদেরকে এবং তাদের অভিভাবকদের এমনকি কর্মক্ষেত্রে প্রতিটি দক্ষ এবং দায়িত্ববোধসম্পন্ন কর্মীকেও নিজেদের মূল্যবোধ এবং দায়িত্ববোধ সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। চাইলেই কাওকে সাজা দেওয়া কিংবা ক্ষতি করে দেবার মানসিকতার পরিবর্তন করতেই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে আর্ট অফ লিভিং নামের বিশেষ গুরুত্বপূর্ন একটি ন বিষয় এ অধ্যায়নের সুযোগ রয়েছে।শিক্ষক কিংবা একজন অভিভাবক হিসেবে আমাদের অবশ্যই এটি মাথায় রাখতে হবে যে নৈতিকতা এবং মূল্যবোধ এর কোনটি ই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বিষয় নয় বরং এটি আত্মিক।নিজের ভেতরে থাকা মূল্যবোধ, যাকে যতটা আত্মস্থ করার জন্য অনুপ্রাণিত করে সে ঠিক ততখানিই নিজের ভেতরে আত্মস্থ করে নিতে পারে বা পারবে। গায়ের জোরে কিংবা মুখস্থ বিদ্যায় যদি আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের নৈতিকতা শিক্ষা দেবার চেষ্টা করি, সম্ভবত সেটা বিফলেই যাবে।
সেক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি জরুরি যে বিষয়, সেটা হচ্ছে সাইকো সোশ্যাল কাউন্সেলিং।চাইল্ড সাইকলজি কিংবা ইয়াং সাইকলজি দুটি বিষয় ই বিশেষ গুরুত্বপূর্ন। কোন সুস্থ মানুষই একেবারে অপরাধী হয়ে উঠেনা, সেজন্য তার পারিবারিক পরিবেশ চারপাশের প্রতিকূলতা অনেকাংশেই দায়ী।তাই পরিবারে প্রতিটি শিশু থেকে শুরু করে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সকল শিক্ষার্থীদের জন্য সাইকো সোশ্যাল কাউন্সেলিং জরুরি। উপদেশ গ্রহন করার ক্ষেত্রে সকলেরই অবঅজারভেশনাল ওয়ে একই নাও হতে পারে। কিংবা সকল ব্যক্তিই যে কোন শিক্ষা একই ভাবে গ্রহন করবেনা সেটাই স্বাভাবিক। শিক্ষক কিংবা অভিভাবকদের ক্ষেত্রে এটি মাথায় রেখে পরিবারের যে সদস্যের কথায় শিশুটি প্রভাবিত হয় বা যে শিক্ষকের পাঠদানে সেি শিক্ষার্থী আগ্রহী হয়ে সেই বিষয়ে জ্ঞানার্জনে অনুপ্রানিত হয় তার মাধ্যমেই নৈতিকতা এবং মূল্যবোধ বিষয়ক শিক্ষাটি গ্রহন করা প্রয়োজন। সম্মোহনী ভুমিকাই আর্ট অফ লিভিং বিষয়টিকে যথাযথ ভাবে আত্মস্থ করতে সহায়তা করবে ছাত্রছাত্রীদেরকে।
কারন আমরা জানি প্রকৃতির নিয়মেই সবার সব সিচুয়েশন বা অবস্থা গ্রহন করার মানুষিকতা সমান নয়। সবার পটেনশিয়ালিটি কিংবা শেখার আগ্রহও সমান নয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমরা আমাদের সমাজের বিশেষ শিশুদের আচরন তাদের সর্বোপরি জীবন যাপনকে প্রত্যক্ষ করলেই বুঝতে পারবো যে, তারা কেউ কেউ শারিরীক বা বুদ্ধিবৃত্তিক দিক থেকে সম্পূর্ন পরিপূর্ণ না হলেও অনেক স্বাভাবকি শিশুদের চেয়ে সৃজনশীল বা অন্যান্য কাজে বেশি দক্ষ। এটি সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত। তাই বিস্বাস এবং একই সাথে সমাজের এবং ভবিষ্যতের কর্ণধারদের এভাবেই অনুপ্রানিত করতে হবে যে প্রত্যেকেই আলাদা কিছু, বিশেষ দক্ষতা নিয়েই জন্মায়। আমাদের কেবল তা নার্চার করতে হবে, যেন শিক্ষার্থীদের প্রতিভা কোন মূল্যেই যেন হারিয়ে না যায়। অভিবভাবক বা শিক্ষাগুরুর কোন রকম উদাসীনতায় যেন সত্যিকারের কোন প্রতিভা হারিয়ে না যায়। পরিবার এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এই দুইটি জায়গা থেকে আজ যদি কোন শিশু বা শিক্ষার্থী ভাল কোন শিক্ষা পায়, যদি সে একবার এ বিষয়টি আত্মস্থ করে নেয় যে, কাউকে না খাইয়ে খেতে নেই। ভোগে নয়, ত্যাগেই প্রকৃত সুখ এবং জন্ম হউক যথা তথা কর্ম হউক ভালো। সব কাজই সমান গুরুত্বপূর্ণ,,, সর্বোপরি সবার উপর মানুষ সত্য তার উপর নাই"" তবেই অপরাধ প্রবনতা কমে যাবে, এবং সুন্দর সমাজ গড়ে উঠবেই। তাই নৈতিকতা ও মূল্য প্রথম ক্ষেত্রটি আমাদের ঘর, পরিবার থেকেই শুরু হউক। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তা বিকশিত হয়ে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ুক। আমরা স্বপ্ন দেখি বিশাল, কারন আমরা জানি,,মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় হয়।
লেখকঃ ফারহানা হক
২৯/১০/২০২০