Daffodil International University
Faculty of Engineering => Textile Engineering => Topic started by: Mashud on November 06, 2019, 03:28:58 PM
-
স্বাধীন বাংলাদেশে ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির আনুষ্ঠানিক সূত্রপাত ১৯৭৩ সালে। কারণ, এ বছরেই জন্ম ফ্যাশন হাউস নিপুণের। সেই হিসাবে এই ইন্ডাস্ট্রি পেরিয়েছে সাড়ে চার দশক।
এরপর এই ইন্ডাস্ট্রির উল্লেখযোগ্য —১৯৭৮ সালে মেনোনাইট সেন্ট্রাল কমিটির (এমসিসি) একটি প্রকল্প হিসেবে আড়ংয়ের জন্ম। ১৯৮০ সালে এসে ব্র্যাকের তত্ত্বাবধানে আড়ংয়ের একক পথচলা শুরু। এই দশকেই লাইফস্টাইল ব্র্যান্ড হিসেবে সাড়া জাগায় আড়ং। আশির মাঝামাঝি পুরুষদের পশ্চিমা পোশাকের এদেশীয় ব্র্যান্ড হিসেবে বিপ্লব ঘটায় ক্যাটস আই। তবে আরও একটা ব্র্যান্ড দপ করে জ্বলে উঠে নিভে যায়—পিয়ারসন্স। আশির দশকে ঢাকার ফ্যাশন স্ট্রিট বলতে ছিল নিউমার্কেট ও সায়েন্স ল্যাবরেটরি থেকে এলিফ্যান্ট রোড আর শাহবাগ। আর টেইলারিংয়ের জন্য ছিল বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ। গ্রিন রোড, পল্টন, ফকিরাপুল, মিরপুর রোডেও কিছু টেইলারিং শপ ছিল ছেলেদের জন্য। এই সময়ে বিশেষ প্রসিদ্ধি ছিল ফ্যাব্রিক হাউস এবং বিজয়নগরের গ্যাঞ্জেসের। এ ছাড়া কারিকা ও ভূষণেরও ছিল সুনাম।
আশির দশকের শেষ দিকে টাঙ্গাইল শাড়ী কুটির আর তারই অনুসরণে কণিষ্ক দেশীয় শাড়ির হারানো গৌরব পুনরুদ্ধারে বিশেষ ভূমিকা রাখে। ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিকে আরও বেগবান করে নব্বইয়ের দশকে প্রতিষ্ঠিত হয় কে ক্র্যাফট, অঞ্জন’স, ওজি, রঙ (বর্তমানে দ্বিধাবিভক্ত)।
বাংলাদেশে তৈরি পোশাকশিল্প খাত থেকে দেশীয় ইন্ডাস্ট্রিতে প্রথম পা রাখে অধুনালুপ্ত সোলডান্স। এরপর অনেক হাউস এসেছে এই ধারাবাহিকতায়।
আশা জাগাচ্ছে িডজাইনার কালেকশন।
তবে বাংলাদেশের ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি যে খুব একটা পরিকল্পনা করে শুরু হয়েছে, তা নয়। কিংবা শুরুর দিকে যারা এসেছিল, তারাও পরিকল্পনা করে আসেনি; বরং পরিকল্পনা করে আসা পিয়ারসন্স হালে পানি পায়নি। সেই হিসেবে বাংলাদেশের ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। এক. একেবারেই শখের বশে আসা। তবে সময়ের সঙ্গে পেশাদারত্বকে গ্রহণ করা। দুই. পূর্বসূরিদের অনুসরণ করা। এঁদের মধ্যে হুজুগে মেতেছেন অনেকে। আবার অনেকে এসেছেন পরিকল্পনা করেও। এবং তিন. তৈরি পোশাক খাতের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে, সঠিক পরিকল্পনা করে সম্ভাবনাময় বাজারে পা রাখা ব্র্যান্ড।
দেশীয় কাপড়কে দেশের মানুষের কাছে জনপ্রিয় করতে এই ইন্ডাস্ট্রি বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে। বিশ্বের ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির বিপরীত বৈশিষ্ট্য নিয়ে গড়ে ওঠে বাংলাদেশের ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি। কারণ, বিশ্বের সর্বত্রই পোশাক সংগ্রহ মৌসুমকেন্দ্রিক, আর আমাদের এখানে উৎসবভিত্তিক। আর বিশ্বব্যাপী ফ্যাশন করে বিত্তশালীরা । কিন্তু আমাদের দেশে এই ইন্ডাস্ট্রি প্রথম থেকেই মধ্যবিত্তকে ফ্যাশনেবল করে তোলার দায়িত্ব নিয়েছে।
এদিকে ২০০০ সাল থেকে ক্রমেই বদলাতে থাকে বিশ্ব; বিশেষত ইন্টারনেট আমূল পাল্টে দেয়। ভুবনায়নের এই নতুন জোয়ারের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার প্রয়াস থাকলেও আমাদের ইন্ডাস্ট্রি এখনো পুরোপুরি অভিযোজিত হয়ে উঠতে পারেনি।
তবে নানা চড়াই-উতরাই সত্ত্বেও এই ইন্ডাস্ট্রি একটা অবস্থান তৈরি করে নিতে পেরেছে। শিল্প খাতের মর্যাদা অর্জনেরও চেষ্টা করে যাচ্ছে। তবে এই ইন্ডাস্ট্রিকে আরও গতিশীল করার জন্য প্রয়োজন নিয়মিত হ্যাপেনিংয়ের; পাশাপাশি বিদেশি পোশাকের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পোশাক তৈরি করা। তাহলে বিদেশি পোশাকের আগ্রাসন বন্ধ হওয়া সম্ভব।
উৎসবে কেনাকাটা। ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন
উৎসবে কেনাকাটা। ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন
ফ্যাশন হাউসগুলো দেশের বড় শহরগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ায় কর্মসংস্থানের সুযোগ বেড়েছে। ফ্যাশন এন্ট্রাপ্রেনিউরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এফইএবি) তথ্য অনুযায়ী অন্তত এক কোটি মানুষ নানাভাবে এই ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে সম্পৃক্ত। সারা দেশে ছোট, বড়, মাঝারি মিলিয়ে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার ফ্যাশন হাউস রয়েছে। আর এই শিল্প খাতের বার্ষিক টার্নওভার ৮ হাজার থেকে সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা। এই খাত থেকে সরকার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে রাজস্বও পাচ্ছে।
বাংলাদেশের ফ্যাশন উৎসবকেন্দ্রিক হওয়ায় এর টার্নওভারের চিত্রটা বেশ আকর্ষক। রোজার ঈদে সবচেয়ে বেশি আয় হয়ে থাকে ফ্যাশন হাউসগুলোর। বার্ষিক টার্নওভারের ৪০ শতাংশ আসে এই সময়ে। এরপর ২০ শতাংশ আসে বৈশাখের সময়ে। বাকি ৪০ শতাংশ বিক্রি হয় বছরের বাকি সময়ে।
বৈশাখ উপলক্ষে পোশাক সংখ্যায় বেশি বিক্রি হলেও অর্থাগম হয়ে থাকে তুলনামূলক কম। বছর পাঁচেক আগেও কোরবানির ঈদে বিক্রি ছিল বেশ আশাব্যঞ্জক। তবে এই ট্রেন্ড বদলে গিয়ে শীতের বিক্রি এখন অনেক বেড়েছে। পাশাপাশি নতুন উপলক্ষ হয়েছে ফাল্গুন।
ফ্যাশন ক্যাটওয়াক। ছবি: হাসান রাজা
ফ্যাশন ক্যাটওয়াক। ছবি: হাসান রাজা
বাংলাদেশের ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির কল্যাণে দেশীয় তাঁতজাত পণ্যের উৎকর্ষ বেড়েছে। নিয়মিত পরা না হলেও শাড়ি বিক্রি বেড়েছে। নতুন নতুন নিরীক্ষা হচ্ছে বয়নে। উন্নতি হয়েছে জামদানি বয়নশিল্পে। বাংলাদেশের তাঁত কাপড়ের মান আরও উন্নত করার অবকাশ থেকে গেছে। তা করা সম্ভব হলে এই পোশাকের চাহিদা আরও বাড়বে।
বাংলাদেশে ডিজাইনারস কালেকশনও এখন অনেক হচ্ছে। তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন ব্র্যান্ড। সমাজের বিভিন্ন বৃত্তের আর বিত্তের মানুষ ফ্যাশনের চাহিদা মেটাতে সক্ষম হচ্ছে তারা। বাংলাদেশের জনসংখ্যার একটা বড় অংশ তরুণ। এঁরা প্রকৃতপক্ষেই বিশ্বনাগরিক। এঁরা সব সময়ই সময়ের সঙ্গে থাকেন। আন্তর্জাতিক বাজার আর ট্রেন্ড সম্পর্কে অধিক অবগত তৈরি পোশাকশিল্প খাত থেকে দেশীয় ফ্যাশনে আসা ব্র্যান্ডগুলোর দিকে তাই বেশি ঝুঁকছেন এই তরুণেরা।
১৭ কোটি জনসংখ্যার বাংলাদেশে মধ্যবিত্তের গণ্ডি ক্রমেই বাড়ছে। বাড়ছে উচ্চবিত্তের সংখ্যা। ফলে বাংলাদেশের ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির সম্ভাবনা দিন দিন উজ্জ্বল হচ্ছে। দেশীয় বাজারের চাহিদা পূরণের যথেষ্ট সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে অন্য কোনো বাজার ধরার প্রয়োজন হবে না। অবশ্য এ জন্য প্রয়োজন হবে সমসময়ের চাহিদা অনুসরণ করে সম্ভাবনাময় দেশীয় বাজারের সুফল তোলা। বিদেশি পোশাকের আগ্রাসন প্রতিরোধে এই সাফল্যই হবে ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির বর্ম।
-
very nice, sir...
-
NIce Sharing
-
Thanks for sharing
-
Very informative post