Daffodil International University

Entertainment & Discussions => Sports Zone => Chess => Topic started by: Mohammed Abu Faysal on June 18, 2012, 01:07:04 PM

Title: বিশ্ব দাবায় এক দিন
Post by: Mohammed Abu Faysal on June 18, 2012, 01:07:04 PM
মস্কোতে বিশ্ব দাবা চ্যাম্পিয়নশিপে লড়ছেন বিশ্বনাথন আনন্দ ও বরিস গেলফান্ড। তাঁদের একটা গেম দেখার বিচিত্র অভিজ্ঞতার কথাই থাকল এখানে

কাচঘেরা একটি কক্ষ। মাঝে একটি টেবিল। টেবিলের এক পাশের চেয়ারে মাথায় হাত দিয়ে চুপচাপ বসে এক লোক। অপর চেয়ারটা এই মুহূর্তে শূন্য। কাচের দেয়ালের ওপাশে কয়েক শ উৎসুক দর্শকের ভিড়। তাদের সবার দৃষ্টি ভেতরের মানুষটির দিকে। লোকটির প্রতিটি অঙ্গভঙ্গি মনোযোগ দিয়ে দেখছে তারা।
লোকটি কি পরীক্ষানিরীক্ষার কোনো গিনিপিগ? এটি কি যন্ত্রণাক্লিষ্ট পরাবাস্তব কোনো দুঃস্বপ্ন? স্যামুয়েল বেকেটের নাটকের কোনো অঙ্ক? নাকি টেলিভিশনের অভিনব কোনো রিয়ালিটি শোর দৃশ্য?
না, এগুলোর কোনোটাই নয়। আসলে এটা ১২ গেমের বিশ্ব দাবা চ্যাম্পিয়নশিপ। মস্কোয় চলছে দীর্ঘ এই মহাকাব্যিক লড়াই। এটি এমন এক লড়াই, যেখানে জ্ঞান ও দক্ষতা যেমন অপরিহার্য তেমনি অপরিহার্য মানসিক দৃঢ়তা।
রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর ত্রেতিয়াকভ গ্যালারিতে বিশ্ব শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই করছেন বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ভারতের বিশ্বনাথন আনন্দ ও চ্যালেঞ্জার ইসরায়েলি বরিস গেলফান্ড। ত্রেতিয়াকভ গ্যালারিতেই সংরক্ষিত আছে রাশিয়ার শ্রেষ্ঠ সব শিল্পকর্ম। আর এখানেই চলছে বিশ্ব সেরা দুই দাবাড়ুর নিউরনে অনুরণন। ১০ মে থেকে শুরু হওয়া এই লড়াই চলবে ৩০ মে পর্যন্ত। এর পরই নির্ধারিত হবে কে রাজত্ব করবেন দাবা সাম্রাজ্যে।
প্রতিদিন টেবিলটাকে মাঝে রেখে দুপাশে বসেন দুই দাবাড়ু। চোখাচোখি দুজনের খুব কমই হয়। হলেও সেটাতে থাকে আড়ষ্টতা, যেটাকে চোরা চাহনি বলেই চালিয়ে দেওয়া যায়। একে অপরকে দেখুন আর না দেখুন, একটা কাজ তাঁরা ঠিকই করে যান। মাথার ভেতরটা সারাক্ষণই খুঁজে ফেরে প্রতিপক্ষের দুর্বলতা, সাজায় প্রতিদ্বন্দ্বীকে ঘায়েল করার রণকৌশল। তবে এখানে অস্ত্র একটাই—দাবার ঘুঁটি, সাদা না হয় কালো।
দাবার প্রতিটি চালকে করা হচ্ছে ক্যামেরাবন্দী। শুধু ঘুঁটির নড়নচড়নই না, দুই দাবাড়ুর প্রতিটি মুখভঙ্গি, প্রতিটি মুহূর্ত রেকর্ড হচ্ছে তিনটি ক্যামেরার সাহায্যে। আর সরাসরি সম্প্রচারিত হচ্ছে বিশ্বজুড়ে দাবাপ্রেমীদের জন্য।
দাবায় বিশেষ করে শীর্ষ পর্যায়ের বেশির ভাগ ম্যাচই শেষ পর্যন্ত ড্র হয়। তবুও বিশ্বসেরাদের লড়াই দেখাটা এতটুকু ক্লান্তিকর নয়। যারা সিসিলিয়ান ওপেনিং ও গ্রানফিল্ড ডিফেন্সের মধ্যে পার্থক্য বোঝে না, তাদের জন্যও নয়।
টাইবিহীন স্যুট পরা গেলফান্ড খুব কমই নিজের বিশেষ ডিজাইনের চেয়ারটাতে স্থির হয়ে বসেন। দুহাত পেছনে বেঁধে ঘরময় পায়চারি করেই বেশির ভাগ সময় কাটে তাঁর। তিনি বোর্ডটাকে খুঁটিয়ে দেখেন, মাথার ওপরে ঘুঁটির অবস্থান ফুটিয়ে তোলা পর্দাটাও খুব ভালো করে দেখেন। এরপর মঞ্চে রাখা ভারত, রাশিয়া ও ইসরায়েলের পতাকা ঠিকঠাক আছে কি না সেটাও।
আনন্দ গেলফান্ডের ঠিক উল্টো। বেশির ভাগ সময় চেয়ারেই বসে থাকেন। তন্ময় হয়ে চেয়ে থাকেন বোর্ডের দিকে অথবা শূন্যে। আর গ্লাসের পর গ্লাস জল গলাধঃকরণ তো আছেই।
বোর্ডেও বেশি অস্থির গেলফান্ডই। সারাক্ষণই মাথায় হাত, মাঝে মাঝে চুলে আঙুল চালানো এমনকি টেবিলে কপাল ঠেকিয়ে বাচ্চাদের মতো ঘুমানোর চেষ্টাও করেন গেলফান্ড।
কাচের ওপাশে দাবাভক্তরা বসে আছে। তাদের কেউ আনন্দের সমর্থক, কেউবা গেলফান্ডের। তবে যত উত্তেজনাই হোক না কেন, কর্তৃপক্ষের কড়া হুকুম কোনো শব্দ করা যাবে না। শব্দ যে একেবারে হয় না তা নয়, মাঝে মাঝেই ফিসফিসানি শোনা যায়। যেমন একবার কাউকে বিড়বিড় করে বলতে শোনা গেল, ‘বোড়ে d4!’
কাচের দেয়ালটি দেওয়াই হয়েছে খেলোয়াড়েরা যাতে দর্শকের কথা শুনে মনোযোগ না হারান কিংবা বাইরের সাহায্য নিতে না পারেন। টুর্নামেন্টের আয়োজকেরা স্বীকার করছেন যে খেলোয়াড়েরা দর্শকদের একাংশ দেখতে পান। তবে দুই দাবাড়ুই খুব ভদ্রলোক বলে এতে কেউ কিছু মনে করছেন না।
আনন্দ যেমন বললেন, ‘আমি দর্শকদের দেখতে পাই। তবে বোর্ডের সামনে বসলেই অন্য সব ভুলে খেলাটিতে ডুবে যাই।’
সেদিনের (১৮ মে) খেলাটা ড্র হয়েছিল। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে চলা ম্যাচটিতে খেলা হয়েছিল ৩০ চাল। ম্যাচটা শেষ হয়ে যাওয়ার পরই যেন সব উত্তেজনা হাওয়ায় মিলিয়ে গেল। দুই দাবাড়ু এমনভাবে কথায় মগ্ন হলেন যেন কয়েক বছরের মধ্যে এই প্রথম কথা বলার সঙ্গী পেয়েছেন তাঁরা।
ম্যাচের পর নিয়ম মেনে সংবাদ সম্মেলন। ওটাই দিনের সবচেয়ে নীরস অংশ। দুজনই পণ করে আসেন, কিছুই বলা যাবে না। যেমন এক সাংবাদিক গেলফান্ডকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘বরিস, আজকের ম্যাচটাই কি সবচেয়ে সহজ ছিল না?’ গেলফান্ডের কাঠখোট্টা জবাব, ‘হুম, হতে পারে।’
আনন্দও কম যান না। তাঁর জবাবও এমন মাপা মাপা।
আর্ট গ্যালারির বাইরে চলছে আরেক খেলা। রাশিয়ার এক মহিলা গ্র্যান্ডমাস্টার একই সঙ্গে শৌখিন ১২ জন দাবাড়ুর বিপক্ষে দাবা খেলছেন। প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে পেনশনভোগী বুড়ো যেমন আছেন, তেমনি আছে স্যুট-টাই পরা পাঁচ বছরের ছোট্ট শিশুও।