Show Posts

This section allows you to view all posts made by this member. Note that you can only see posts made in areas you currently have access to.


Topics - habib

Pages: 1 2 3 [4] 5 6 ... 8
46
Cricket / General Musfiqur Rahim is extraordinary !!!
« on: December 07, 2015, 11:47:35 AM »
সাধারণ মুশফিকই অসাধারণ !!!


এ নিয়ে তিনবার হলো! আগের দুইবার হারিয়েছিলেন, সবশেষ গতকাল তিনি অধিনায়কত্ব নিজে থেকে ছেড়েছেন বলেই সরকারি ভাষ্য। এটি অবশ্য বিশ্বাসযোগ্য, কারণ অধিনায়কত্ব থেকে এর আগেও একবার পদত্যাগ করার ঘোষণা দিয়েছিলেন মুশফিকুর রহিম। তাই প্রশ্নটা জোরেশোরেই উঠছে, অধিনায়কত্ব কী প্রতিক্রিয়া ঘটায় মুশফিকুর রহিমের মনে?

টেকনিক্যালি তিনি দলের সবচেয়ে সুগঠিত ব্যাটসম্যান। ক্রিকেটটা বোঝেন ভালো। আর অধিনায়কদের

বেলায় প্রযোজ্য ‘স্টেটসম্যানশিপ’ আছে তাঁর। সততার কথা বলবেন? মুশফিক সামনের সারিতেই বসেন। এ যুগের ‘অর্জুন’ মাশরাফি বিন মর্তুজার বয়ানেই শুনুন, ‘ড্রেসিংরুম সংস্কৃতির পরিবর্তন নিয়ে অনেকে

অনেক প্রশংসা করেন। এ পরিবর্তনটা এনেছে কিন্তু মুশফিক।’ জেমি সিডন্সের রেখে যাওয়া ‘অসম’ ড্রেসিংরুমে সমতা আনার কাজটা শুরু করেছিলেন মুশফিকুর রহিমই। নিজের ‘ওয়ার্কএথিক’ সামনে রেখে দলের সবার কাছ থেকে সেটা আদায় করে নিতেন তিনি। তা ছাড়া দলের বাকিদের কথা ভুলে নিজে বাড়তি কোনো সুবিধা নিয়েছেন মুশফিক—এমন অভিযোগ তাঁর শত্রুও করেন না।

সেই তিনি কেন বারবার অধিনায়কত্ব ছাড়েন কিংবা হারান? প্রথমবার মুশফিকের অধিনায়কত্ব কেড়ে নিয়েছিল ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ ক্লাব শেখ জামাল ধানমণ্ডি। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক পদ থেকে তাঁকে সরিয়েছে বিসিবি। গতকাল বরিশাল বুলসের বিপক্ষে ম্যাচের আগে নাকি নিজে থেকেই অধিনায়কত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন মুশফিক। টসের সময় দলটির নতুন অধিনায়ক শহীদ আফ্রিদি জানিয়েছেন, ‘স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছিল না দেখে মুশফিক নিজেই অধিনায়কত্ব করতে চায়নি।’ ম্যাচের পর সুপারস্টারস কোচ সরোয়ার ইমরানের ব্যাখ্যাও একই, ‘মুশফিক নিজে থেকেই সরে দাঁড়িয়েছে। আমি এমনটাই শুনেছি।’ হতে পারে টানা হারতে হারতে অবসাদে আক্রান্ত মুশফিক দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে নিজেকে কিছুটা ভারমুক্ত করতে চেয়েছেন। তা ছাড়া অভিজ্ঞ আফ্রিদি যেহেতু পাকিস্তানের টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক, সেহেতু শ্রেয়তর বিকল্প পেয়ে মুশফিককে ‘অব্যাহতি’ দিতে দেরি করেনি ফ্র্যাঞ্চাইজিও। সবচেয়ে বড় কথা, ক্লাব বা ফ্র্যাঞ্চাইজি কাকে অধিনায়ক রাখবে কী রাখবে না, সেটি পুরোপুরি তাদের এখতিয়ার। জাতীয় দলের অধিনায়ক নিয়োগ কিংবা বরখাস্ত করাটা যেমন বিসিবির অধিকার।

কিন্তু মুশফিকের ক্যারিয়ারে বারবার একই পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়াতে সিলেট সুপারস্টারসের নেতৃত্ব পরিবর্তনটায় বিশেষত্ব রয়েছে। ২০১৩ সালে শেখ জামালের অধিনায়কত্ব তিনি হারিয়েছিলেন ক্লাব কর্তৃপক্ষের কর্তৃত্ব স্বীকার করেননি—এ অভিযোগে। একই বছর জিম্বাবুয়ে সফরের শেষভাগে নিজে থেকেই আকস্মিক জাতীয় দলের অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা দেন মুশফিক। সঠিক কারণটি কোনো পক্ষই স্বীকার করেনি। তবে গুঞ্জন আছে, দলের ‘হেভিওয়েট’দের আচরণে রুষ্ট হয়েই নাকি অধিনায়কত্ব আর করবেন না বলে জানিয়েছিলেন তিনি। সিলেট সুপারস্টারসের সঙ্গে সেরকম কোনো ঝামেলার ইঙ্গিত অন্তত দল গঠনের দিন ছিল না। উল্টো, ‘মুশফিকই আমাদের প্রথম পছন্দ’ বলে সুসম্পর্কের আবহ ছড়িয়েছিলেন ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিক আজিমুল ইসলাম। কিন্তু দলের ব্যর্থতা এবং সবশেষ দেনা-পাওনা নিয়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি বনাম অধিনায়কের টানাপড়েনে সম্পর্কের ব্যারোমিটার আর স্থির নেই বলেই খবর।

কাকতালীয়ভাবে মুশফিকুর রহিমের অধিনায়কত্ব যাওয়া কিংবা ছেড়ে দেওয়ার সবগুলো কারণই প্রায় এক সুতোয় গাঁথা। কখনো ম্যানেজমেন্টের কখনো-বা টিমমেটদের আচরণ প্রচণ্ড পীড়া দেয় তাঁকে। এটা বোঝা যায় যে, সমস্যার সঙ্গে সমঝোতা না করে সমাধান খোঁজেন মুশফিক। কিন্তু ব্যর্থ হন সিংহভাগ সময়, অধিনায়কত্বের মুকুট ফেলে সাধারণে মিশে যান তিনি। কখনো নিয়োগকর্তার ইচ্ছায়, কখনো-বা স্বেচ্ছায়।

এই আসা-যাওয়ায় দল কিংবা খেলোয়াড় মুশফিক লাভবান হয়েছেন বটে, তবে অধিনায়ক মুশফিককে ঘিরে সংশয় ঘনীভূত হয়েছে ক্রমাগত। এমনিতেই মাঠে তাঁর কৌশলগত ভূমিকা নিয়ে জোরালো পক্ষ-বিপক্ষ রয়েছে। ম্যাচ পরিস্থিতির সঙ্গে নিজের চিন্তার গতিপথ বদলান না মুশফিক—এ যুক্তিকে পুঁজি করে সোচ্চার সমালোচকরা। গত বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের পর মুশফিকের কাছ থেকে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়কত্ব নিয়ে নেওয়ার সময় এ বিষয়টি উঠেছিল বিসিবির আলোচনার টেবিলে। একই সঙ্গে আরো দুটি বিষয় ভূমিকা রেখেছিল ওই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে। প্রথমত, জিম্বাবুয়ে সফরে তাঁর আচমকা অধিনায়কত্ব থেকে পদত্যাগের ঘোষণা ভালোভাবে নেয়নি বোর্ড। দ্বিতীয়ত, অধিনায়কত্বের চাপ নিতে পারেন না মুশফিক। বরং অধিনায়কত্বের ভারমুক্ত মুশফিকুর রহিমের কাছ থেকেই সেরাটা পায় দল, বিশ্বাস করে বিসিবি। গত এক বছরে ওয়ানডেতে জাতীয় দলের নৈপুণ্য এ মতবাদকে আরো দৃঢ় ভিত্তি দিয়েছে। কাল সিলেট সুপারস্টারসের জয়ের মুখ দেখার দিনটি কি সে মতবাদেরই সবশেষ সাক্ষ্য-প্রমাণ হয়ে থাকল?

সেটা সময়ই বলবে। তবে কার্যকারণে ‘সাধারণ’ মুশফিকই দলের জন্য ‘অসাধারণ’। শচীন টেন্ডুলকারও কখনোই ‘গ্রেট ক্যাপ্টেন’ হতে পারেননি। তবু তিনি আরাধ্য। মুশফিক অনুরক্তদের তাই হতাশ হওয়ার কিছু নেই; অমরত্বের দরজা খোলা রয়েছে তাদের প্রিয় তারকার সামনেও।

- See more at: http://www.kalerkantho.com/print-edition/sports/2015/12/07/298903#sthash.Bvt6JfeS.dpuf

47
Cricket / They told stories toss
« on: December 07, 2015, 11:30:10 AM »
টসের গল্প শোনালেন তাঁরাও

দুই বাঙালি অধিনায়ক প্রথমবারের মতো টেস্টে করছেন টস। বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টে। ফাইল ছবি‘

আমার টসভাগ্য খুব খারাপ!’ টস অভিজ্ঞতার কথা শোনাতে গিয়ে শুরুতেই মাশরাফি বিন মুর্তজার সহজ স্বীকারোক্তি।

টস ভাগ্য কতটা খারাপ, জানাতে ফিরে গেলেন ইনচনের বৃষ্টিভেজা সেই পড়ন্ত বিকেলে। বৃষ্টির কারণে গত বছর এশিয়ান গেমসের দ্বিতীয় সেমিফাইনালের ফল নির্ধারণ হয়েছিল টসে। বৃষ্টির জল আর টসে হার মিলিয়েই ভেসে গিয়েছিল বাংলাদেশের সোনা ধরে রাখার স্বপ্ন। সে স্মৃতি আজও তাড়া করে মাশরাফিকে, ‌‘টসের অভিজ্ঞতা আমার সবচেয়ে বাজে। ইনচনে সমীকরণ ছিল, টস জিতলে ম্যাচ জিতব। এমন তো সাধারণত হয় না। একমাত্র আমার ক্ষেত্রে হয়েছিল। তবে টস হেরেও ম্যাচ জিতেছি, এমন ঘটনাই বেশি।’

মাশরাফির অধিনায়কত্বে ২৮ ওয়ানডেতে বাংলাদেশ জিতেছে ২০টিতে। এর মধ্যে টসে জিতেছেন মাত্র ৭ বার। বাকি ১৩টি জয় এসেছে টসে হেরেই। টি-টোয়েন্টিতে অবশ্য ৭ ম্যাচে টসে জিতেছেন ৪ বার। এর মধ্যে ম্যাচ জিতেছেন দুটিতে।

টস ভাগ্য যতই খারাপ হোক, মাশরাফির অধিনায়কত্বের শুরুটা কিন্তু হয়েছিল টসে জয় দিয়ে। ২০০৯ এর ৯ জুলাই-তারিখটা মাশরাফির স্মৃতির পাতায় জ্বলজ্বলই করবে সব সময়। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওই দিনই বাংলাদেশের অধিনায়ক হিসেবে অভিষেক। সেন্ট ভিনসেন্ট টেস্টে টসে জিতে নিয়েছিলেন ব্যাটিং। পরের গল্পটা অবশ্য বুকে মোচড় দেওয়ার। ওই টেস্টেই হাঁটুর চোটে সতীর্থের কাঁধে ভর দিয়ে মাঠ ছাড়লেন। সেই যে ছাড়লেন, আর বাংলাদেশ দলের হয়ে আর সাদা পোশাকে মাঠে নামা হলো না মাশরাফির।

টস পুরোপুরিই ভাগ্যের ব্যাপার হলেও এখানে কুসংস্কারও কাজ করে। মুদ্রা ছুড়ে মারার সময় ওপরে যে দিকটা থাকে সেটিই নাকি ওঠে! টস করার সময় অনেকেই তাই মুদ্রা ঢেকে বা খাঁড়া করে ছুড়ে মারেন। মাশরাফি অবশ্য এসব সংস্কার মানেন না, ‘এটা তো খারাপ। টস হেরে গেলেন তো ম্যাচ হারলেন, এ ভাবনা থাকা ঠিক নয়। এভাবে খেলাও যায় না। ক্রিকেট তো পুরোটাই মনস্তাত্ত্বিক খেলা। এসব চিন্তা করলে ম্যাচে প্রভাব পড়ে। তবে গেম প্ল্যানে টসের ব্যাপারটা থাকে। তাই বলে টসে হারলে ম্যাচ হারব, এমন নয়।’

বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি অধিনায়কত্ব করেছেন হাবিবুল বাশার। টেস্ট-ওয়ানডে মিলে ৮৭ বার টস করে জিতেছেন ৪০বার। অবশ্য পরিসংখ্যান-টরিসংখ্যান খুব একটা মনে থাকে না বলেই তাঁর দাবি। তবে ২০০৪-এর ১৯ ফেব্রুয়ারি হারারেতে যে প্রথম টস করলেন, দিব্যি মনে আছে সেটি, ‘খুব টেনশনে ছিলাম সেদিন। বৃষ্টির কারণে টস হতে দেরি হচ্ছিল। জানতাম না কখন খেলা শুরু হবে। বৃষ্টি থামলে হঠাৎ জানানো হলো, শুরু হচ্ছে ম্যাচ। দলের সবাই ওয়ার্ম-আপে নেমে গেল, আর আমি ছুটলাম টসে। কোনো রকম ওয়ার্ম-আপ ছাড়াই সেদিন নামতে হলো মাঠে।’

মাশরাফির মতো হাবিবুলেরও টস নিয়ে কোনো সংস্কার কাজ করেনি কখনো। তবে কোন কল দেবেন, এ নিয়ে দ্বিধা কাজ করত মনে, ‘খুব দ্বিধাগ্রস্ত থাকতাম। তবে হেড-টেল নিয়ে ব্যক্তিগত কোনো পছন্দ ছিল না। অনেক অধিনায়কেরই থাকে, আমার ছিল না। তবে টেনশন হতো খুব।’

টসভাগ্যে বাংলাদেশের সবচেয়ে এগিয়ে মুশফিকুর রহিম। ক্রিকেটের তিন সংস্করণে মুশফিক নেতৃত্ব দিয়েছেন ৮৪ ম্যাচ। এর মধ্যে টসে জিতেছেন ৪৩বার। ওয়ানডেতে ২০, টেস্টে ১১ ও টি-টোয়েন্টিতে ১২ বার।
বাংলাদেশ অধিনায়কদের টস নিয়ে আলোচনায় যার নাম বলতেই হবে, তিনি গাজী আশরাফ হোসেন লিপু। ১৯৮৬-এর ৩১ মার্চ এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পথচলার শুরু হয়েছিল বাংলাদেশের। শ্রীলঙ্কার মাটিতে অনুষ্ঠিত সেই টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের নেতৃত্বে ছিলেন তিনি। ফলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম টসও করেছিলেন তিনি।

বাংলাদেশকে হালকাভাবে নিয়ে ওই ম্যাচের টস ইমরান খান নাকি বাউন্ডারির বাইরে সেরে ফেলেছিলেন, এমন গল্প বেশ চালু। তবে এ গল্পকে অতিরঞ্জিত বলেই জানিয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রথম ওয়ানডে অধিনায়ক, ‘টসের গল্পটা মোটামুটি সত্যি। ইমরান খান আমাকে বাউন্ডারির বাইরেই টস করতে প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তবে এতে তাঁর বাংলাদেশকে ছোট করার কোনো উদ্দেশ্য ছিল কিনা, বলতে পারব না। এটা ঠিক, ইমরানের প্রস্তাবে বেশ অবাকই হয়েছিলাম।’

টস নিয়ে কত গল্প, কত ঘটনা। অথচ ক্রিকেটে টসই উঠে দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন কেউ কেউ। স্বাগতিক দেশের সুবিধা নিতে গিয়ে কোনো দল যেন বাড়াবাড়ি না করে, আহ্বানটা সে কারণেই। মাশরাফি অবশ্য যুগ যুগ ধরে চলে আসা ক্রিকেটীয় সংস্কৃতি ধরে রাখার পক্ষেই, ‘ক্রিকেটে এত নতুন নতুন বিষয় আসে, খেলোয়াড়দের মানিয়ে নিতেও সময় লাগে। ক্রিকেটকে একভাবে দেখে আসছি। রীতি থেকে বেরিয়ে আসতেই বরং খারাপ লাগে। যুগ যুগ ধরে ক্রিকেট যেভাবে চলে আসছে, সেই সংস্কৃতি বজায় থাকুক না। এ থেকে বেরিয়ে আসলে বরং ধাক্কা লাগবে।’

48
Cricket / "The company is a big thing in life"
« on: December 06, 2015, 01:06:58 PM »
‘জীবনে সঙ্গ অনেক বড় ব্যাপার’

     
এখনো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরা হয়নি। তবে ক্রিকেটের অন্ধকার জগৎ থেকে ফিরে এসেছেন আলোর দেশে। বয়স মাত্র ২৩ বছর বলে সামনে এখনো অসীম সম্ভাবনা। কাল সকালে চট্টগ্রামের হোটেল র্যাডিসন ব্লুর লবিতে বসে তারেক মাহমুদকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে বিপিএলের দল চিটাগং ভাইকিংসের পেসার মোহাম্মদ আমির জানালেন তাঁর নতুন করে ফেরার স্বপ্ন আর গত পাঁচ বছরের সংগ্রামের কথা। ২০১০ সালের স্পট ফিক্সিং নিয়ে কোনো কথা বলবেন না—এমন শর্তেই সাক্ষাৎকার দিতে বসেছিলেন পাকিস্তানের এই পেসার।

মোহাম্মদ আমির* বিপিএল কেমন উপভোগ করছেন?
মোহাম্মদ আমির: ভালোই। পাঁচ বছর পর ক্রিকেট খেলছি, উপভোগ করার এটাই হয়তো মূল কারণ। বহিষ্কারাদেশ উঠে যাওয়ার পর ঘরোয়া ক্রিকেট খেললেও আন্তর্জাতিক মানের টুর্নামেন্ট বা আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়দের সঙ্গে খেলছি এই প্রথম। আর ক্যারিয়ারে এই প্রথম বিদেশের মাটিতে কোনো লিগ খেলছি। শীর্ষ পর্যায়ের ক্রিকেটে ফেরার জন্য উপযুক্ত একটা প্ল্যাটফর্ম পেয়েছি।

* ভালো বোলিং করছেন এই টুর্নামেন্টে। পাঁচ বছর শীর্ষ পর্যায়ের ক্রিকেটে না খেলেও কীভাবে ধরে রাখলেন নিজেকে?
আমির: ফাস্ট বোলারদের জন্য কাজটা কঠিন। এক সপ্তাহ বোলিং না করলেও সব হারিয়ে যায়। আর এটা তো পাঁচ বছর! আমার প্রথম কাজ ছিল ফিটনেস ধরে রাখা। না খেললেও সব সময় অনুশীলনের মধ্যে ছিলাম, জিমে গেছি।

* বিশেষ কারও সাহায্য পেয়েছেন এই সময়ে?
আমির: এসব পরিস্থিতিতে পরিবারের সমর্থন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। গত বছর সেপ্টেম্বরে আমি বিয়ে করেছি, তবে এখনো অনুষ্ঠান হয়নি। আগামী বছর হবে। বিয়ের পর থেকেই স্ত্রী আমাকে অনেক সাহায্য করছে। কঠিন ওই সময়টাতে কিছু ভালো বন্ধুর সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছে, তারাও অনেক অনুপ্রেরণা দেয়। ক্রিকেটের বাইরে চলে গিয়েছিলাম...সময়টা খুব কঠিন ছিল আমার জন্য। বন্ধুদের কথা বিশেষভাবে বলব। পরিবার তো সব সময় আপনার পাশে থাকবেই। কিন্তু এ রকম খারাপ সময়ে কয়েকজন ভালো বন্ধুও পেয়ে গেলে আপনি পৃথিবীর সবচেয়ে সৌভাগ্যবান ব্যক্তি।

* মাইক আথারটন সব সময়ই আপনার পাশে ছিলেন। এ রকম আর কোন কোন ক্রিকেট-ব্যক্তিত্বকে কাছে পেয়েছেন সেই দুঃসময়ে?
আমির: আথারটন তো এখনো সাহায্য করছেন। মাইক হোল্ডিংও অনেক সাহায্য করেছেন। ক্রিকেটারদের মধ্যে কেউ যদি আমার হয়ে দুটি ভালো শব্দও বলেন, আমার জন্য তা অনেক বড় ব্যাপার। ইমরান খান, ওয়াসিম আকরাম, শোয়েব আখতার—সবাই আমার পাশে। সবার প্রতি কৃতজ্ঞ। যারা দুঃসময়ে পাশে থাকে, তারাই আসল শুভাকাঙ্ক্ষী।

* ওয়াসিম আকরাম একবার বলেছিলেন, ১৭-১৮ বছর বয়সে উনিও আপনার চেয়ে ভালো বল করতেন না। কীভাবে নিয়েছিলেন ওই প্রশংসা?
আমির: এটা আমার জন্য ছিল অনেক বড় পাওয়া। তিনি আমার আদর্শ। নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে করি যে, উনি আমার ব্যাপারে ওই কথা বলেছেন। ওয়াসিম আকরামের মতো বোলার পৃথিবীতে দ্বিতীয়বার আসবে না। তাঁর মতো কিংবদন্তির মুখ থেকে এ রকম কিছু শোনাটা আমার জন্য অনুপ্রেরণাদায়ক।

* কঠিন পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে নিজে কী করেছেন?
আমির: সব সময় সবকিছু ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে ভেবেছি। সবচেয়ে বড় ব্যাপার ছিল আত্মবিশ্বাস। আমি ভুল স্বীকার করেছি এবং ভুল থেকে শিখেছি। আবারও জাতীয় দলে খেলতে পারব—এই বিশ্বাসটাই আসলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল আমার জন্য। ইনশা আল্লাহ আমি আবার খেলবও।

* পাকিস্তানের মানুষ, ভক্ত-সমর্থক—এখন আপনাকে কীভাবে নিচ্ছেন?
আমির: আমার অসংখ্য ভক্ত পাকিস্তানে, তারা সব সময়ই আমাকে সমর্থন দেয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে সবখানে তাদের উৎসাহ পাচ্ছি। সমর্থকেরা আমার জন্য দোয়া করে, আমিও তাদের জন্য দোয়া করি। ভক্ত-সমর্থক ছাড়া আমরা কিছুই না। তাদের জন্যই আমরা তারকা।

* শপিং মল বা রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়ে কখনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হননি?
আমির: সবার কাছ থেকে তো আপনি ভালোবাসা পাবেন না! কিছু মানুষ আপনাকে পছন্দ করবে, কিছু মানুষ করবে না। তবে আমি যেটা জানি, পাকিস্তানে অনেক মানুষই আমাকে ভালোবাসে। আমার জন্য দোয়া করে।

* কিন্তু পাকিস্তানের অনেক ক্রিকেটার তো এখনো আপনার সঙ্গে খেলতে রাজি নন। মোহাম্মদ হাফিজ তো আপনি খেলছেন বলে চিটাগং ভাইকিংসে খেলতেই এলেন না!
আমির: এ নিয়ে মন্তব্য করতে পারব না।


* কিছুদিন তো জেলও খাটতে হয়েছে আপনাকে। কেমন ছিল সে সময়টা?
আমির: ভালো ছিল, সেটা তো বলার উপায় নেই। ওটা ছিল একটা সংশোধন কেন্দ্র। আমার প্রতি তাদের আচরণ খুব ভালো ছিল। আসলে সবকিছুতেই শেখার কিছু না-কিছু থাকে। ওখানে আমাদের একজন পার্সোনাল অফিসার ছিলেন। সংশোধন কেন্দ্র থেকে বের হয়ে আসার সময় উনি বলেছিলেন, ‘তুমি ভুল করেছ, সেটার সাজাও পেয়ে গেছ। এখন তুমি এখান থেকে বের হয়ে যাচ্ছ। তোমাকে নতুন জীবনের জন্য প্রস্তুত হতে হবে। নতুন চিন্তা, নতুন ভাবনা নিয়ে যাও। ভবিষ্যতের দিকে তাকাও।’ তার কথা আমার জীবনে অনেক কাজে লেগেছে।

* জাতীয় দলে নিশ্চয়ই ফিরতে চান আবার। কী পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছেন?
আমির: পরিকল্পনা খুব সাধারণ। আমি সব সময় ছোট ছোট লক্ষ্য নিয়ে এগোনোয় বিশ্বাসী। ছোট লক্ষ্যগুলো অর্জন করতে পারলে দিন শেষে সব লক্ষ্যই পূরণ হয়। ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলার সময় আমার দৃষ্টি শুধু ওই দিকে ছিল। এখন বিপিএলে খেলছি, সব চিন্তা এটা নিয়ে। টুর্নামেন্টের সেরা বোলার হতে চাই আমি।

* জাতীয় দলে প্রথম ডাক পাওয়ার অনুভূতি কি মনে আছে এখন?
আমির: এখনো ব্যাখ্যা করে বলতে পারব না সে অনুভূতি। পাকিস্তানের হয়ে খেলাটা ছিল আমার স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছিল। ওটাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন। আর জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জনটা যখন ধরা দেবে, আপনি সবকিছুর ঊর্ধ্বে উঠে যাবেন। নিজের দেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন মানে হলো আপনি বিশেষ কেউ। আমিও সে রকমই ছিলাম। আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ যে, ওই সম্মানটা পেয়েছিলাম।

* আর বহিষ্কার হওয়ার পর তাৎক্ষণিক অনুভূতি?
আমির: মনে হচ্ছিল আমার জীবনটাই শেষ হয়ে গেছে। আমি শেষ হয়ে গেছি। পরিস্থিতিটা খুব জটিল হয়ে পড়েছিল। মিডিয়ায় তোলপাড় চলছিল...পাকিস্তানি খেলোয়াড়েরা এই করেছে, ওই করেছে। আসলে আমি ঠিক বোঝাতে পারব না তখন কেমন লাগছিল। অতীত নিয়ে কথা বলতে চাই না, তবে এটাও ঠিক, আমি অনেক কিছু শিখেছি ওসব থেকে। ইনশা আল্লাহ ভবিষ্যতে আমার মধ্যে একজন ভালো মানুষকেই খুঁজে পাবেন আপনারা।

* কেন জড়িয়েছিলেন এসবে? ২০১০ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়স ছিল আপনার। বিষয়টা কি এমন যে বয়সটাই ছিল মোহে পড়ার, বিভ্রান্ত হওয়ার?
আমির: হতে পারে...আমি তখন একদম নতুন। দলে যখন আপনি নতুন আসবেন, আপনার কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকবে না, এ রকম হতে পারে। আমার জন্য জগৎটা ছিল বিশাল। বয়স অনেক কম ছিল। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বিশাল জগতে শুরুতেই সবকিছু সামলে ওঠা খুব কঠিন। ১৭ বছরের একটা ছেলের তো জানারই কথা নয় তাকে কত কিছু সামলাতে হতে পারে! ভালো খেলছিলাম, অনেক চুক্তির প্রস্তাব আসছিল...এ রকম সময়ে অনেক কিছুই বুঝে ওঠা যায় না। এখন আমি অনেক সতর্ক। বুঝি, একজন খেলোয়াড়ের একার পক্ষে সবকিছু সামলানো কঠিন। আমি তো মাঠে খেলব, কিন্তু ক্রিকেটের বাইরেও কিছু ব্যাপার থাকে। আমার যেমন এখন কয়েকজনের একটা দলই আছে, যারা মাঠের বাইরের জিনিসগুলো দেখে। এটা ওই সময়ই করা উচিত ছিল।

* এখন তো মনে হয় ‘নো’ বলের ব্যাপারেও অনেক সতর্ক আপনি...
আমির: এটা খেলার অংশ। আমি যদি মনে করি, আমার আর কোনো দিন ‘নো’ বল করা ঠিক হবে না, তাহলে আমার ক্রিকেটই খেলা উচিত না। ওয়াইড বল, নো বল—এসব ক্রিকেটেরই অংশ।

* ২০০৭ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সফরে প্রথম লর্ডসে গিয়েছিলেন। ওই সময় কি স্বপ্ন দেখেছিলেন?
আমির: বন্ধুদের বলেছিলাম, আমিও একদিন এখানে আসব। ৫ উইকেট নেব। সেটা করে দেখিয়েছি। আমি ছিলাম লর্ডসে ৫ উইকেট নেওয়া সবচেয়ে কম বয়সী পেস বোলার।

* আর এখন আপনার কাছে ‘লর্ডস’ মানে কী?
আমির: (হাসি)...লর্ডসে আমার ভালো স্মৃতিও আছে, বাজে স্মৃতিও আছে। পেশাদার হিসেবে আপনাকে সবকিছুরই মুখোমুখি হতে হবে। একটা অসম্ভবকে আপনি সম্ভব করবেন কি না, সেটা আপনার ওপর নির্ভর করে। ব্যাটিং ট্র্যাকে যখন একজন ফাস্ট বোলারের জন্য কিছুই থাকে না, সেখান থেকে উইকেট নেওয়ার মজাই আলাদা। খারাপ জিনিসকে কীভাবে আপনি ভালো জিনিসে বদলে দেবেন, সেটা আসলে আপনার ওপরই নির্ভর করে।

* ভবিষ্যৎ ক্রিকেটারদের জন্য কিছু বলবেন? বিশেষ করে ক্রিকেটের অন্ধকার জগৎ সম্পর্কে...
আমির: অবশ্যই। এই পাঁচ বছরে আমি শিখেছি, জীবনে সঙ্গ অনেক বড় ব্যাপার। যাদের সঙ্গে মিশবেন বা যে পরিবেশের সঙ্গে মিশবেন, সেটা ভালো হতে হবে। একজন খেলোয়াড় তার ঘরে অনেক কম সময় কাটায়। বন্ধু-খেলোয়াড়দের সঙ্গেই তাঁকে বেশি সময় কাটাতে হয়। যাদের সঙ্গে বেশি সময় কাটাবেন, সেই মানুষগুলো ভালো হতে হবে। কেউ যদি আপনাকে ছোট একটা ভুল কাজও করতে বলে, সে আপনার শুভাকাঙ্ক্ষী হতে পারে না। এমন পরিবেশে মিশুন, যেখান থেকে আপনার মধ্যে ইতিবাচক চিন্তা আসবে। যেখান থেকে ইতিবাচক চিন্তা আসে, সেখান থেকে ভালো কিছু শেখা যায়। কিন্তু যাদের সঙ্গে থাকলে বা যেখানে গেলে মনে বাজে চিন্তা আসে, দয়া করে সেখানে সময় নষ্ট করবেন না। সেটা করলে আপনি হয়তো আপনার জীবনটাই নষ্ট করে ফেলবেন।

49
ডালমিয়াকে ভুলবে না বাংলাদেশ

জগমোহন ডালমিয়া

বাংলাদেশকে ঠিকই চিনতে পেরেছিলেন জগমোহন ডালমিয়া। ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন উপমহাদেশের চতুর্থ ক্রিকেট-শক্তি হয়ে ওঠার সব উপাদানই বাংলাদেশের আছে।
১৯৯৭ সালে বিশ্ব ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থা আইসিসির সভাপতি পদে নির্বাচিত হলেন ডালমিয়া। ক্রিকেটকে নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে ছড়িয়ে দিতে হবে বিশ্বময়। তাঁর সেই মন্ত্রের জোরেই ক্রিকেট দুনিয়ায় নিজেদের অবস্থান করে নিল বাংলাদেশ। ২০০০ সালে আইসিসির সভাপতি পদে থাকা অবস্থায় তাঁরই প্রচ্ছন্ন মদদে বাংলাদেশ অধিষ্ঠিত হলো একটি টেস্ট খেলুড়ে দেশের মর্যাদায়।
 
ক্রিকেট শক্তি হিসেবে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পেছনে তাঁর মদদই কেবল ছিল না, ছিল এক ধরনের প্রশ্রয়ও। টেস্ট খেলুড়ে দেশ হিসেবে জায়গা করে নেওয়ার পর বাংলাদেশের মাঠের পারফরম্যান্স ছিল তথৈবচ। ব্যাপারটা নিয়ে সমালোচনাও কম হয়নি। ক্রিকেট উন্নাসিকেরা অনেকেই বলতেন, আইসিসিতে কেবল প্রভাব-বলয় প্রতিষ্ঠিত করার জন্যই, টেস্ট খেলুড়ে জাতি হিসেবে প্রস্তুতিহীন বাংলাদেশকে টেস্ট খেলার অধিকার দিয়ে দেওয়া হয়েছে। ডালমিয়া সেই অভিযোগ খণ্ডন করেছিলেন বাংলাদেশের মাথায় প্রশ্রয়ের হাত রেখে। বলেছিলেন, এই উপমহাদেশ থেকে তিনটি দেশ বিশ্বকাপ জিতেছে। চতুর্থ দেশ হিসেবে বিশ্বকাপ জিতবে বাংলাদেশও। দেশটিকে একটু সময় দিতে হবে।’

বাংলাদেশ ক্রিকেট তাঁর অঘোষিত অভিভাবককে বেঁচে থাকতে বিশ্বকাপ উপহার দিতে পারেনি। কিন্তু বাংলাদেশের প্রিয় ‘দাদা’ দেখে গেছেন তাঁর সমর্থনপুষ্ট দেশটি এখন বিশ্ব ক্রিকেটের সেরা শক্তিদের ওপর ছড়ি ঘোরাতে জানে। বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলা, দেশের মাটিতে ওয়ানডে সিরিজে পরপর পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে বধ করা বাংলাদেশকে ‘মদদ’ দেওয়া যে তাঁর ভুল সিদ্ধান্ত ছিল না, প্রয়াণের আগে সেটা অন্তত জেনে যেতে পেরেছেন তিনি।
 
১৯৯৮ সালের কথা কীভাবে ভুলে যাবে বাংলাদেশ? ডালমিয়া তখন আইসিসির সভাপতি। লর্ডসে (তখন আইসিসির সদর দপ্তর ছিল ওখানেই) সভাপতির চেয়ারে বসেই মাথায় হাত তাঁর। বিশ্ব ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থা হিসেবে নিজেদের দাবি করে আইসিসি, অথচ কোষাগার প্রায় শূন্য! সব জায়গায় স্থবিরতা, নতুন কোনো ভাবনা নেই। পৃষ্ঠপোষকেরা মুখ ঘুরিয়ে রেখেছে। মোদ্দাকথা, খেলাটিকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ার কোনো উদ্যোগ নেই। ঠিক এই সময়টাতেই ঝানু সংগঠক ও প্রশাসক ডালমিয়া বেছে নিলেন বাংলাদেশকে!
 
ডালমিয়া জানতেন ক্রিকেট বাংলাদেশে কতটা জনপ্রিয়। তিনি জানতেন দেশটিতে ঘরোয়া ক্রিকেটেও স্টেডিয়াম পরিপূর্ণ থাকে (আশি-নব্বইয়ের দশকের কথা) দর্শকে। তাঁর ঠিক দশ বছর আগে, অর্থাৎ, ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশের মাটিতেই সফলভাবে আয়োজিত হয়েছিল এশিয়া কাপ ক্রিকেটের তৃতীয় আসরটি। পাঁড় ব্যবসায়ী ডালমিয়া বুঝে ফেলেছিলেন জনবহুল বাংলাদেশে আছে ক্রিকেটের দারুণ একটা বাজার। সেই ভাবনা থেকেই আইসিসির কোষাগার ভরাতে তিনি বাংলাদেশে আয়োজন করলেন ‘মিনি বিশ্বকাপ ক্রিকেটে’র আসর। ১৯৯৮’ র অক্টোবরে নক আউট পদ্ধতিতে আয়োজিত সেই জমজমাট প্রতিযোগিতাটিতে অংশ নিয়েছিল সে সময়কার সবগুলো টেস্ট খেলুড়ে দল (নয়টি)। উইলস ইন্টারন্যাশনাল কাপ নামে পরিচিত সেই প্রতিযোগিতাই পরবর্তীতে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি হিসেবে আইসিসির কোষাগার করেছে সমৃদ্ধ।
 
মিনি বিশ্বকাপ বাংলাদেশকে আয়োজন করতে দিয়ে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজও সমাধা করলেন এই ক্রিকেট প্রশাসক। ক্রিকেট দুনিয়াকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর বাইরেও এত বড় একটি প্রতিযোগিতা সাফল্যের সঙ্গে হতে পারে। সারা দুনিয়ার কাছে পরিচিত করে তুললেন বাংলাদেশের ক্রিকেট-সক্ষমতাকে, অন্তত প্রশাসনিক দিক দিয়ে। এই ব্যাপারটি যে বাংলাদেশকে মাত্র দেড় বছরের মাথায় (২০০০ সালের জুন) টেস্টের দশম সদস্য হতে সাহায্য করেনি, এমন ভাবনাটা বোধ হয় ভুলই।

২০০০ সালে আইসিসির সভাপতি হিসেবে পদত্যাগ করেছিলেন ডালমিয়া। নেপথ্য কারণ ছিল সংস্থার কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে তাঁর মতবিরোধ। ২০০১ সালে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন। ২০০৫ সালে ভারতীয় ক্রিকেটের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির শিকার হয়ে সেই পদও ছেড়ে দিতে হয় তাঁকে। মাঝখানে দীর্ঘ বিরতি, প্রায় আট বছর পর আবারও ভারতীয় ক্রিকেটের দৃশ্যপটে তিনি। ২০১৩ সালে ভারতীয় বোর্ডের সভাপতি পদে আবারও ফেরেন তিনি। তাঁর দেশ ভারত যখন ক্রিকেটের দুই পুরোনো অশ্বশক্তি ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে হাত মিলিয়ে ক্রিকেট দুনিয়ায় ‘তিন মোড়ল তত্ত্বের’ প্রয়োগ ঘটাতে ব্যস্ত, ঠিক তখনই ডালমিয়ার ভারতীয় বোর্ডের সভাপতি হওয়াটা ছিল অন্ধকারে এক বিন্দু আলোকরেখার মতোই।

নতুন করে ভারতের ক্রিকেট প্রধান হয়েও তিনি ভোলেননি বাংলাদেশকে। এ বছরের মার্চে বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনালের পর বাংলাদেশের মানুষ যখন শ্রীনিবাসনের ওপর বেজায় ক্ষুব্ধ, বিভিন্ন বিতর্কে দুই দেশের ক্রিকেটীয় সম্পর্ক যখন ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে, ঠিক তখনই তিনি বাড়িয়ে দেন তাঁর বন্ধুত্বের হাত। বাংলাদেশের ক্রিকেট প্রশাসকেরাও পরম নিশ্চিন্ত ছিলেন ভারতের সঙ্গে ক্রিকেট সম্পর্ক নিয়ে। ওখানে আর যেই থাকুন ‘দাদা’ তো আছেন।

হঠাৎ মৃত্যু তাঁকে শারীরিকভাবে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে বাংলাদেশের কাছ থেকে। কিন্তু বাংলাদেশের ক্রিকেটে তাঁর অবদান তাঁকে অমরত্বই দিচ্ছে এ দেশের ক্রিকেট ইতিহাসে।

Source: http://www.prothom-alo.com/sports/article/637921/
            সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৫

50
বন্ধু হারাল বাংলাদেশ ক্রিকেট


জগমোহন ডালমিয়া (১৯৪০–২০১৫)তৃতীয়বারের মতো ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের সভাপতি হয়েছিলেন তিনি। ছিলেন আইসিসির সভাপতিও। এ দেশের মানুষের কাছে অবশ্য তার চেয়েও বড় পরিচয়—বাংলাদেশ ক্রিকেটের অকৃত্রিম বন্ধু। সেই জগমোহন ডালমিয়া আর নেই। গতকাল কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে এই নশ্বর পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে অনন্তলোকে চলে গেছেন ডালমিয়া। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫।

গত বৃহস্পতিবার রাতে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। সেই রাতেই তাঁর এনজিওগ্রাম করা হয়। গত দুদিন তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল বলেই জানানো হয়েছিল হাসপাতাল সূত্রে। কিন্তু কাল রাত দশটার দিকে বিসিসিআইয়ের টুইট বয়ে আনে দুঃসংবাদ—ডালমিয়া আর নেই।

ম্যাচ পাতানো কেলেঙ্কারিতে জর্জরিত শ্রীনিবাসনের জায়গায় তৃতীয় দফায় ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি হয়েছিলেন গত মার্চে। তখনো ডালমিয়ার শারীরিক অবস্থা খুব ভালো ছিল না। নানা জটিলতায় আক্রান্ত হয়ে আগের সেই প্রাণশক্তি হারিয়ে ফেলেছিলেন। এ কারণে গত কিছুদিন ঠিকমতো দায়িত্বও পালন করতে পারছিলেন না।

ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডে প্রথম ঢুকেছিলেন ১৯৭৯ সালে। ১৯৮৩ সালে ভারতের বিশ্বকাপ জয়ের বছরে কোষাধ্যক্ষ হন। সেখান থেকে সচিব। ইন্দ্রজিৎ সিং বিন্দ্রার সঙ্গে ডালমিয়ার যুগলবন্দীর প্রথম ইংল্যান্ডের বাইরে বিশ্বকাপ আয়োজনে বড় ভূমিকা। ক্রিকেটের বাণিজ্যিকীকরণের পথিকৃৎ বলা যায় তাঁকে। ভারতীয় বোর্ডের সভাপতি পদে থাকা অবস্থায়ই ১৯৯৭ সালে আইসিসির সভাপতি নির্বাচিত হন। ক্রিকেটের বিশ্বায়নের মন্ত্রও ছড়িয়ে দেন সে সময়ই। ২০০০ সালে বাংলাদেশের টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়াতেও যেটির বড় ভূমিকা।

বিশ্ব ক্রিকেটে ডালমিয়ার সমালোচকেরও অভাব ছিল না। বিশেষ করে পশ্চিমা বিশ্ব সব সময়ই একটু তির্যক চোখে দেখে এসেছে তাঁকে। কিন্তু প্রশাসক হিসেবে নিজেকে এমন এক উচ্চতায় তুলে নিয়েছিলেন যে, ডালমিয়ার মৃত্যুতে আক্ষরিক অর্থেই শোকের ছায়া নেমে এসেছে ক্রিকেট বিশ্বে।

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড শোক প্রকাশ করেছে। শোক প্রকাশ করেছেন শচীন টেন্ডুলকারের মতো আরও অনেকেই। বিসিসিআইয়ের সচিব অনুরাগ ঠাকুরের টুইটটিই বলে দিয়েছেন আসল কথাটা, ‘ভারতীয় ক্রীড়াজগতের মহানতম প্রশাসক চলে গেলেন। একটি যুগের সমাপ্তি।’


Source: http://www.prothom-alo.com/sports/article/637756/
            সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৫

51
‘রেকর্ড নিয়ে মাতামাতির লোক আমি নই’
   
ক্রিকেটের ব্যাকরণ নতুন করে লিখছেন তিনি। বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে রেকর্ড গড়ে চলেছেন একের পর এক। সারা বিশ্বের বোলারদের কাছে যিনি মূর্তিমান আতঙ্ক, সেই এবি ডি ভিলিয়ার্স কেমন মানুষ? খেলোয়াড় কিংবা দক্ষিণ আফ্রিকার ওয়ানডে অধিনায়ক হিসেবে তাঁর দর্শনটাই বা কী? আইসিসির ওয়েবসাইটে দেওয়া সাক্ষাৎকারে খুঁজে পাওয়া গেল এক অন্য ‘এবি’কে


এবি ডি ভিলিয়ার্স

* এখন তো আপনি এবি ‘ড্যাডি’ ভিলিয়ার্স। বাবা হওয়ার পর কেমন লাগছে?

এবি ডি ভিলিয়ার্স: খুব বেশি দিন হয়নি বাবা হয়েছি। এটা আসলে অসাধারণ অনুভূতি। তবে বাবা হওয়ার সঙ্গেই সঙ্গেই যে অনেক কাজ বেড়ে যায়, এটা নিয়ে আমাকে আগে কেউ সতর্ক করেনি (হাসি)। খুবই শ্রমসাধ্য কাজ। তবে আমি আর ড্যানিয়েলে (এবির স্ত্রী) দুজনই গর্বিত। জুনিয়রকে ঘিরে আমাদের এই নতুন জীবনকে উপভোগ করছি। মাস খানেকের মতো হয়েছে। কিন্তু আমি ও আমার স্ত্রী দুজনই বাবা-মা হয়ে গর্বিত ও সম্মানিত।

* গ্রায়েম স্মিথের কাছ থেকে নেতৃত্ব পাওয়ার পর কেমন লেগেছিল?

ডি ভিলিয়ার্স: মাঝে আমরা একটা কঠিন সময় পার করেছি। যখন মার্ক (বাউচার), জ্যাক (ক্যালিস), গ্রায়েম (স্মিথ) অবসর নিল। যদি আরেকটু পেছনে যাই তাহলে পোলি (শন পোলক) ও মাখায়ার (এনটিনি) অবসরের সময়টাও ধরা যায়। বিশেষ করে সর্বশেষ গ্রায়েমের অবসরটা আমাদের জন্য বড় ধাক্কা ছিল। কারণ ও দলে এমন একটা সংস্কৃতি তৈরি করেছিল, যেটা আমরা গর্বভরে ধারণ করি। ও যখন অবসর নিল দলে একটা বিশাল পরিবর্তন এল। আমি, ফাফ (ডু প্লেসি), জেপি (ডুমিনি), আমরা যারা একটু সিনিয়র ছিলাম, ভাবতে শুরু করলাম, গ্রায়েমকে ছাড়া কী করে চলবে! একটা পর্যায়ে এসে আমরা বুঝতে পারলাম, যা হয়ে গেছে সেটি নিয়ে পড়ে থাকলে হবে না। এগিয়ে যেতে হবে। দলে অনেক তরুণ খেলোয়াড় এল। এখন আমরা যেভাবে খেলি, যেদিকে এগোচ্ছি, তা নিয়ে আমরা গর্বিত। গ্রায়েমের সময়কার সংস্কৃতিটা এখনো আছে, কিন্তু এই দলটা অন্য রকম।

* অধিনায়ক হিসেবে আপনার দর্শন কী?

ডি ভিলিয়ার্স: পরিশ্রম আর ত্যাগ। দেশকে নেতৃত্ব দিতে পারাটা দারুণ সম্মানের। কিন্তু সেই সম্মান আর গর্বের সঙ্গেই পরিশ্রম আর ত্যাগের ব্যাপারও চলে আসে। সেটা আপনার খারাপ লাগবে না। কারণ যখন খুব আন্তরিকতার সঙ্গে কিছু করবেন, তখন সব দায়িত্বই উপভোগ্য মনে হবে। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে খেলা, নেতৃত্ব দেওয়া আমি উপভোগ করি। তবে কিছু সময় আসে, যখন মাসের পর মাস পরিবার থেকে দূরে থাকতে হয়। এখন তো অনেক ক্রিকেট খেলা হয়। তারপর আইপিএল, যেটা মনে হয় শেষই হবে না কোনো দিন! এ রকম সূচির মাঝে বিশ্রাম দরকার হয়। সবাই হয়তো একরকম নয়। কিন্তু আমার মনে হয় যারা সিনিয়র খেলোয়াড়, তাদের কখনো কখনো বিশ্রাম দরকার হয়।

* সর্বশেষ বিশ্বকাপের কথা মনে হলে খারাপ লাগে? এত কাছে, তবু এত দূর!
 
ডি ভিলিয়ার্স: যে খারাপ লাগাটার কথা বলেছিলাম সেটা তাৎক্ষণিক। বিশ্বকাপ থেকে ফিরে যাওয়ার সময় খারাপ লেগেছিল। কিন্তু আমরা যেভাবে খেলেছি সেটা নিয়ে আমি গর্বিত। আমরা চোক করিনি, দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলেছি। সেমিফাইনালে আমাদের সুযোগ এসেছিল। সেই সুযোগ মর্মান্তিকভাবে হাতছাড়া হয়ে গেছে। আমরা নিতে পারিনি। আমি এখন ম্যাচের প্রতিটি বল ধরে ধরে বলতে পারব কোথায় আমাদের ভুল হয়েছে, কোথায় আমরা সুযোগ হারিয়েছি। কিন্তু এটাই ক্রিকেট। কখনো আপনি ছন্দ পাবেন, কখনো হারাবেন। আমরা ভুল সময়ে ছন্দ হারিয়েছি। নিউজিল্যান্ডের কৃতিত্ব প্রাপ্য, দিন শেষে ওরা জয়ী হিসেবে ফিরেছে।

* ২০১৫ সালে আপনি অনেক রেকর্ড গড়েছেন। ওয়ানডের দ্রুততম সেঞ্চুরি, দ্রুততম ১৫০...

ডি ভিলিয়ার্স: জোহানেসবার্গে সেদিন (ওয়ানডের দ্রুততম সেঞ্চুরির দিন) কী হয়েছিল, আমার আসলে অনেক কিছুই মনে নেই। একটা খ্যাপাটে দিন ছিল, এটুকু মনে আছে। কিন্তু কীভাবে খেলেছি তা মনে নেই। একই কথা সিডনির সেই ম্যাচটা (দ্রুততম ১৫০) নিয়েও। তবে অনেক ইনিংস আছে, যেখানে বড় রান তাড়া করতে গিয়ে হয়তো ৬০ বা ৭০ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেছি। সেগুলোও এ দুটির মতো সমান গুরুত্বপূর্ণ। এ দুটি ইনিংস বিশেষ, কারণ এর সঙ্গে রেকর্ড জড়িয়ে আছে। তবে রেকর্ড নিয়ে মাতামাতি করার লোক আমি নই। হয়তো যখন বুড়ো হব, নিজের ক্যারিয়ারের দিকে ফিরে তাকাব, তখন ভালো লাগবে। তবে এ মুহূর্তে যদি বলতে বলা হয়, আমি বলব আমার এগুলোর চেয়েও ভালো ইনিংস আছে।

* এই যে বিনয় এবং মাটিতে পা রেখে চলা, এটা নিয়ে কিছু বলবেন?

ডি ভিলিয়ার্স: মাটিতে পা রেখে চলাটাই আমার পছন্দ। নিজের খেলা নিয়ে সৎ থাকতে পছন্দ করি। আপনার উত্থান যেমন হতে পারে, আবার যেকোনো সময় পতনও হতে পারে। আমি কখনোই সামনে তাকিয়ে ভাবি না যে, আমি গ্রেট খেলোয়াড় হব। আমি শুধু আত্মবিশ্বাসী থাকি। আমি পরিশ্রম করি। আমার প্রতিটি ইনিংসে শ্রম জড়িয়ে আছে। অনেক সময় মনে হতে পারে যে খুব সহজেই অনেক কিছু করে ফেলেছি। আসলে তা নয়। আরও একটা কথা বলতে চাই। আমার মনে হয় না যে আমি ম্যাথু হেইডেন কিংবা অতীতের অন্য খেলোয়াড়দের মতো। ওরা আমার মতো এত সুযোগ পায়নি। আমরা এখন আইপিএল খেলতে পারছি, একে অন্যের সঙ্গে মিশে প্রতিপক্ষ সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে পারছি। ওরা যা করেছে, এ সুযোগটা না পেয়েই করেছে। সুতরাং আমার মনে হয় না, কোনো খেলোয়াড় আমাকে নিয়ে বলবে যে, আমি ক্রিকেটের সুপারম্যান কিংবা আমাকে দেখে কেউ ভয় পাবে। আর আমি এমনিতেও যথেষ্ট ভদ্রলোক (হাসি)।

52
Cricket / "I wanted to be right-handed Lara"
« on: August 22, 2015, 11:10:51 AM »
‘ডান হাতি লারা হতে চেয়েছিলাম’

মুশফিকুর রহিম

টেস্ট, ওয়ানডেতে রানের গড় ৩২.৩১ ও ৩১.১০। তবে স্বপ্ন দেখেন ক্যারিয়ার শেষে দুই সংস্করণের ক্রিকেটেই অঙ্কগুলো ৪০-এর ওপরে রেখে যাওয়ার। গত দুই-তিন বছরের ফর্মটা ধরে রাখতে পারলে সেটা অসম্ভবও মনে করেন না। তবে মুশফিকুর রহিমের সবচেয়ে বড় সম্পদ পরিশ্রম করার মানসিকতা, নিজেকে ফাঁকি না দেওয়ার সততা। ব্যাটিংয়ে ব্রায়ান লারাকে আদর্শ মানা বাংলাদেশ দলের টেস্ট অধিনায়ক কথা বলেছেন তাঁর উইকেটকিপিং আর অধিনায়কত্ব নিয়েও—

*  বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে পরিশ্রমী ক্রিকেটার বলা হয় আপনাকে। আপনি এর সঙ্গে কতটা একমত?
মুশফিকুর রহিম: পরিশ্রম অল্প-বেশি সবাই-ই করে। তবে আমি বিশ্বাস করি আমাকে যে প্রতিভা আল্লাহ দিয়েছেন, কষ্ট করেই সেটার সদ্ব্যবহার করতে হবে। আমি বসে থাকলাম, যতটুকু দরকার ঠিক ততটুকুই কাজ করলাম আর সফলতা পেয়ে গেলাম, এভাবে হবে না। অন্যরা যা কাজ করে তার চেয়ে বেশিই করতে হবে আমাকে। ছোটবেলা থেকে এটাই শিখেছি। তাতে নিজের কাছে নিজে পরিষ্কার থাকি, আমি অন্তত আমার কাজটুকু তো করলাম। নিজেকে ফাঁকি না দেওয়াটা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় দর্শন।

*  পরিশ্রম করার এই মানসিকতা আপনার মধ্যে কীভাবে এল?
মুশফিক: বলতে পারেন পরিবার থেকে। বিকেএসপির জীবনেরও বড় আশীর্বাদ আছে। সময়ের কাজ সময়ে করতে হবে এটা ওই সময়ই শিখেছিলাম। নিজের প্রতি সৎ থাকতে হবে। নিজের কাজগুলো ঠিকভাবে করার পর ১০ ইনিংস শূন্য রানে আউট হলেও কোনো দুঃখ থাকবে না।

*  স্লগ সুইপ অনেক বেশি খেলেন। এটা কি অনুশীলন করে রপ্ত করেছেন, নাকি সহজাত?
মুশফিক: অনূর্ধ্ব-১৩, অনূর্ধ্ব-১৫ ক্রিকেটে থাকতেই এই শটটা খেলতে চেষ্টা করতাম। ইদানীং ক্রিকেট অনেক বদলে যাওয়ায় বেশি খেলছি। ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি এমনকি টেস্টেও বোলারদের চাপে রাখতে বা ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলতে বাড়তি শট থাকতে হয়। স্লগ সুইপ তেমনই একটা শট। আমি এটাকে প্রকৃতিপ্রদত্তই মনে করি। স্লগ সুইপ আমাকে শিখতে হয়নি। তবে বিকেএসপিতে প্রথম দিকে মতি স্যার বলেছিলেন, সুইপ শটগুলো একজন কিপার-ব্যাটসম্যানের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ কিপারদের রিফ্লেকশন ভালো থাকে। আর রিফ্লেকশন ভালো থাকলে সুইপ শটে অনেক সুবিধা হয়। অবশ্য স্লগ সুইপই আমার একমাত্র পছন্দের শট নয়, কাভার ড্রাইভও অনেক ভালো লাগে। এটা অনুশীলন করে রপ্ত করতে হয়েছে। ব্যাটিংয়ে আমার আদর্শ ব্রায়ান লারার কাভার ড্রাইভ দেখে এই শটটা ভালো করার প্রেরণা পেয়েছি। ক্রিকেটে একটা সুন্দর কাভার ড্রাইভের চেয়ে বড় শিল্প আর কিছু নেই।

*  আপনি নাকি লারার এতটাই ভক্ত যে একসময় তাঁর জন্মদিনে বাসায় কেকও কাটতেন?
মুশফিক: (হাসি) শুধু লারার কারণে ছোটবেলায় আমরা ভাইবোনেরা ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের জন্য পাগল ছিলাম। মে মাসে ওঁর জন্মদিন, আমারও। লারার জন্মদিনে ভাইবোনেরা মিলে বাসায় কেক কেটে অনুষ্ঠান করতাম। লারার কোনো খেলা মিস করতাম না। তবে ওঁর অনেক ইনিংসই আয়নায় দেখেছি। লারা বাঁহাতি আর আমি ডানহাতি। তাঁর ডানহাতি ব্যাটিংয়ের শ্যাডোটা দেখতে চাইতাম আমি।

*  লারার মতো ব্যাটসম্যান হওয়ারও ইচ্ছা ছিল তাহলে...
মুশফিক: অবশ্যই...ছোটবেলায় ডানহাতি লারা হতে চেয়েছিলাম। এমনকি বিকেএসপিতে ভর্তি হওয়ার পর ক্লাস সেভেনে থাকতেই টেকনিক খাটিয়ে চেষ্টা করেছিলাম ওঁর মতো ব্যাটিং করতে। কিন্তু কাজটা কঠিন ছিল। ভাগ্য ভালো যে স্যাররা শুরুতেই বলে দেন, ‘এটা এমন এক স্টান্স যেটা ফুটওয়ার্ক থেকে শুরু করে তোমার অনেক কিছুকেই আড়ষ্ট করে দেবে।’ পরে আমিও আর ওই চেষ্টা করিনি।

*  লারা কি জানেন আপনি তাঁর এত বড় ভক্ত?
মুশফিক: (হাসি) হ্যাঁ, জানেন। সর্বশেষ বিপিএলেও এগুলো নিয়ে টুকটাক কথা হয়েছে। এর আগে ২০০৭ বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজ যাওয়ার সময় ভাইবোনেরা বারবার বলে দিয়েছিল, ‘তুই লারার সঙ্গে অবশ্যই দেখা করে আসবি। বলবি আমরা বাসায় তোমার জন্মদিন পালন করি, কেক কাটি।’ কিন্তু এত বড় তারকা...লারার রুমে একা যেতে ভয় হচ্ছিল। পরে রফিক ভাইকে (মোহাম্মদ রফিক) নিয়ে গেলাম। ওনার সঙ্গে অনেক খাতির দেখতাম লারার। লারা আমার কাছে সব শুনে অবাকই হয়েছিলেন।

*  আবার একটু স্লগ সুইপ প্রসঙ্গ। শটটা অনুশীলন করে শেখেননি বললেন। কিন্তু এখন তো অনুশীলনেও এ নিয়ে প্রচুর কাজ করেন...
মুশফিক: যেটা আমার শক্তির জায়গা, প্রতিপক্ষ কিন্তু সেটা নিয়েই বেশি পরিকল্পনা করে। অন্যদিকে আমি চাই আমি আমার শক্তির জায়গা থেকে সর্বোচ্চ সুবিধা নিতে। অনেকেই নিজের দুর্বল জায়গা নিয়ে বেশি কাজ করে, আমিও করি। তবে গুরুত্ব দিই শক্তির জায়গাগুলোকে আরও শক্তিশালী করার ওপর। দুর্বল জায়গা নিয়ে খুব বেশি অনুশীলন করে লাভ নেই, কারণ আমি ওই সব শট কম খেলি।

*আপনার উইকেটকিপিং নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই আলোচনা হচ্ছে এবং এর আগে আপনিও এ ব্যাপারে অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। এ বিষয়ে নতুন কোনো চিন্তা কী আছে?
মুশফিক: না, নতুন কিছু নেই। তবে আলোচনা হতেই পারে। কিপিং আমার খেলার অংশ। এটা করে আমি দুই শ করেছি আবার শূন্য রানেও আউট হয়েছি। উইকেটকিপিং আমার ব্যাটিংয়ে সাহায্য করে। উইকেটটাকে অনেক কাছ থেকে দেখতে পারি তখন। অধিনায়কত্বেও এটা কাজে লাগে। এবার যেমন ফিল্ডার হিসেবে অধিনায়কত্ব করে অনেক ব্যাপারে সন্তুষ্ট ছিলাম না। বুঝতে পারছিলাম না বিপরীত অ্যাঙ্গেল থেকে কী হচ্ছে। স্লিপে দাঁড়ালেও হতো, আঙুলের চোটের জন্য সেটা পারিনি। বলছি না যে মাঠে তিনটি কাজ করা অনেক সহজ। তবে আমি তিনটি কাজই উপভোগ করি। এই বছর হয়তো টেস্টে আমার খুব বেশি রান হয়নি। এটা যে কারও ক্ষেত্রেই হতে পারে। তিন বছর ধরে সব ফরম্যাটে যেভাবে রান করেছি, বাংলাদেশের খুব কম খেলোয়াড়ই তা পেরেছে।

*  অস্ট্রেলিয়া সিরিজে আবার উইকেটের পেছনে দাঁড়ানোর ইচ্ছা আছে?
মুশফিক: আঙুলের চোটের কারণে টেস্টে লম্বা সময় ধরে কিপিং করলে ব্যাটিংয়ে গ্রিপ করতে সমস্যা হতে পারে। সে কারণে ঠিক করেছি পুরো ফিট না হওয়া পর্যন্ত দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেটে কিপিং করব না। চাইলে হয়তো করতে পারব, কিন্তু দলে যেহেতু একজন বিকল্প আছে, না করাই ভালো। তবে চেষ্টা করছি যত তাড়াতাড়ি ফিট হয়ে পুরোনো অবস্থায় ফিরে যেতে। যত দিন খেলব, উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতে চাই। এটাই আমার কাজ। সে জন্য অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্টে কিপিং না করলেও অনুশীলনে করব। অভ্যাস ধরে রাখাটা জরুরি।

*  আঙুলের চিকিৎসার জন্য তো অস্ট্রেলিয়া যাওয়ারও কথা ছিল...
মুশফিক: স্ক্যান রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে। তবে তাঁরা যদি অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেনও, তারপরও আমি এখনই তা করব না। অস্ত্রোপচার করলে আমাকে কমপক্ষে তিন মাস বাইরে থাকতে হবে। ক্রিকেটের ভরা মৌসুমে সেটা চাচ্ছি না। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর একটা বিরতি আছে। অস্ত্রোপচার লাগলে তখন করব।

*  আপনিই বলেছিলেন, ওয়ানডের অধিনায়কত্ব হাতছাড়া হয়ে যাওয়ায় শুরুতে খারাপ লেগেছিল। এখন কি মনে হয় এর কোনো ইতিবাচক প্রভাব আছে?
মুশফিক: দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হলে যে কারওই খারাপ লাগার কথা, আমারও লেগেছে। তবে এখন মনে হয় সিদ্ধান্তটা খুব ভালো ছিল। এটা আমাকে অনেক নির্ভার করেছে। ওয়ানডেতে আমি এখন দলকে আমার সর্বোচ্চটা দিতে পারছি।

*  কয়েক দিন আগে মুমিনুলকে করেছিলাম প্রশ্নটা। আপনাকেও করি...আপনার যে উচ্চতা, ক্রিকেট খেলায় কি এর কারণে কখনো সমস্যায় পড়েছেন?
মুশফিক: (হাসি) না। বরং উচ্চতায় খাটো হলে ব্যাটিংয়ে অনেক সুবিধা পাওয়া যায়। বাউন্সার বলগুলো খেলতে আমার অনেক সুবিধা হয়। বিশেষ করে বল ছাড়াটা। লম্বা ব্যাটসম্যানদের জিজ্ঞেস করলে জানতে পারবেন, ওসব বল ছাড়তে বা খেলতে তাদের কতটা সমস্যা হয়। স্পিন বল খেলার সময় দ্রুত সামনে এগোনো বা পেছনে যাওয়া, অর্থাৎ পায়ের প্রতিক্রিয়া, একটু খাটো হওয়াতে এই জিনিসগুলো আমার খুব ভালো হয়। তবে ইঞ্চি দুই লম্বা হলে হয়তো আমি আরও কিছু ক্যাচ নিতে পারতাম। ব্যাটিংয়ের তুলনায় কিপিংয়েই উচ্চতা বেশি সমস্যার সৃষ্টি করে।

*  উচ্চতা নিয়ে কখনো প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের টিপ্পনী শুনতে হয়নি?
মুশফিক: বয়সভিত্তিক পর্যায়ে বা ‘এ’ দলে খেলার সময়ও অনেকে হাসাহাসি করত। ভাবটা এ রকম ছিল, এই যে আসছে...এখনই আউট হয়ে যাবে। তখন নিজের মধ্যে একটা জেদ কাজ করত। মজার ব্যাপার হলো আমাকে উদ্দেশ করে মাঠে যত বেশি কথা হয়, তত আমার পারফরম্যান্স ভালো হয়।

*  মুমিনুল তো আপনার চেয়েও খাটো। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁর আগমন নিশ্চয়ই আপনার জন্য স্বস্তিদায়ক ছিল...
মুশফিক: একবার টাটেন্ডা টাইবুকে ড্রেসিংরুমে ডেকে এনে ওর সঙ্গে নিজের উচ্চতা মাপলাম। দেখি আমি ওর চেয়েও ছোট! মনটা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। তবে মুমিনুল যেদিন জাতীয় দলে সুযোগ পেল, আমিই সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছিলাম। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এখন উচ্চতায় আমার চেয়েও আধা ইঞ্চি খাটো একজন খেলোয়াড় আছে! মনে আছে, ২০০৭ বিশ্বকাপে বারবাডোজের হোটেলে এক ফটোসাংবাদিক আয়ারল্যান্ডের র‌্যাঙ্কিন আর আমাকে পাশাপাশি দাঁড় করিয়ে ছবি তুলেছিলেন। ও ছিল বিশ্বকাপের সবচেয়ে লম্বা ক্রিকেটার আর আমি সবচেয়ে খাটো। পরে যদিও ছবিটা কোথাও দেখিনি, কিন্তু ওই মুহূর্তটা এখনো মনে আছে।

Source:  http://www.prothom-alo.com/sports/article/608515/
             আগস্ট ২১, ২০১৫

53
Humanities & Social Science / Love for Suriya !!!
« on: August 22, 2015, 10:23:52 AM »
সুরাইয়ার জন্য ভালোবাসা

এবার যেন নিশ্চিন্ত সুরাইয়া। ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

২৩ জুলাই মাগুরায় মায়ের পেটে গুলিবিদ্ধ হয় শিশু সুরাইয়া। শুরুতে মাগুরা সদর হাসপাতালে এবং ২৬ জুলাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে তাকে বাঁচাতে কঠিন সংগ্রামে নামেন একদল চিকিৎসক। কীভাবে সংকটাপন্ন এক শিশুকে তাঁরা ফিরিয়ে দিলেন মায়ের কোলে? পড়ুন মানুষের চেষ্টা আর ভালোবাসার এক আবেগময় গল্প। লিখেছেন তানজিনা হোসেন
২৩ জুলাই তারিখটা সম্ভবত ডা. শফিউর রহমান জীবনে কখনো ভুলবেন না। কেননা, পেশাগত জীবনে এ রকম একটা অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হবেন, তিনি কখনো ভাবেননি। যদিও শল্যবিদ্যা বা সার্জারিতে উচ্চতর প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতা থাকার কারণে বুলেটবিদ্ধ বা আহত রোগীর চিকিত্সা জীবনে অনেক করেছেন, কিন্তু তাই বলে মাতৃজঠরে গুলিবিদ্ধ শিশু? যে শিশুর জন্মই হয়নি এখনো, গুটিসুটি মেরে আছে মায়ের পেটের ভেতর, মাসহ সে কিনা গুলিবিদ্ধ! এমন ঘটনা কে কবে দেখেছে?



যাঁরা ছিলেন ভরসা: ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাত​ালে তাঁর দলের সঙ্গে কানিজ হাসিনা (সামনে)। ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন


শফিউরের চ্যালেঞ্জ
মাগুরা সদর হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ শল্যচিকিত্সক শফিউর রহমান তখনো জানতেন না যে কেবল বাংলাদেশে কেন, গোটা পৃথিবীতেই চিকিত্সকদের এ ধরনের ঘটনার সম্মুখীন হওয়ার ঘটনা বিরল। বিশ্বের নামকরা চিকিত্সা সাময়িকীগুলো জানাচ্ছে, গর্ভাবস্থায় আঘাত বা দুর্ঘটনার হার কম নয়, কিন্তু মা ও শিশু একই সঙ্গে গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা আসলেই বিরল। গোটা বিশ্বে এ রকম গোটা কয়েক ঘটনা লিপিবদ্ধ হয়েছে, আর তা থেকে জানা যায় এ রকম ঘটনার পর সঠিক ত্বরিত চিকিত্সায় মায়ের প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হলেও শিশুর মৃত্যুঝুঁকি ৭০ শতাংশের বেশি। অবশ্য এত কিছু না জেনেই মাগুরা সদর হাসপাতালের চিকিত্সকেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন যে নাজমা নামের গুলিবিদ্ধ গর্ভবতী মাকে এখনই অস্ত্রোপচার করতে হবে, কেননা পেটের ভেতর রক্তক্ষরণ হওয়ায় তিনি ‘শক’ এ রয়েছেন। ততক্ষণে জরুরি আল্ট্রাসনোগ্রাম জানান দিচ্ছে গর্ভস্থ শিশুটির বয়স ৩২ সপ্তাহ ৫ দিন এবং এখনো তার হৃৎস্পন্দন আছে! ‘হতভাগ্য শিশুটির বাঁচা-মরা নিয়ে খুব বেশি চিন্তা করার অবকাশ ছিল না তখন,’ বলেন ডা. শফিউর। ‘কেননা, মায়ের জীবন বাঁচানোর জন্যই অস্ত্রোপচারটি জরুরি। তাই আমরা দেরি না করে অস্ত্রোপচার শুরু করে দিই।’

নাজমার পেটের ভেতরটা ছিল রক্তে পরিপূর্ণ, অ্যামনিওটিক ফ্লুইড বা জরায়ুর পানিতে মাখামাখি আর গুলিটা পেটের বাঁ দিক ভেদ করে আটকে ছিল শ্রেণিচক্রের পেশিতে, এতগুলো ক্ষত ঠিকঠাক করতে করতেই সন্ধ্যা ছয়টার দিকে জন্ম নেয় এক আশ্চর্য শিশু। যে শিশু তার জন্মের আগে থেকেই স্বজাতির নৃশংসতার শিকার হয়েও প্রবলভাবে বেঁচে থাকতে চাইল। আর তাই অপরিণত, নীলচে ছোট্ট শিশুটি সবাইকে অবাক করে দিয়ে পাঁচ মিনিট পর কেঁদে উঠল জোরে। মাগুরা সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু আর অবেদনবিদ (অ্যানেসথেসিস্ট) সৌমেন সাহা ব্যস্ত হয়ে পড়লেন তাকে নিয়ে। তখন তাঁরাও জানতেন না, এই শিশুটির জন্য একদিন সারা দেশের মানুষ নীরব প্রার্থনায় শামিল হবে একসঙ্গে।


শুরুর কান্ডারি: চিকিৎসক শফিউর রহমানের জন্য এটি ছিল কঠিন এক অভিজ্ঞতা।  ছবি: খালেদ সরকার

আরেক ‘মা’
জন্মের ৫৬ ঘণ্টা পর মাকে ছেড়ে চাচা ও ফুফুর সঙ্গে মাগুরা থেকে ঢাকার দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে ২৬ জুলাই ভোর চারটায় শিশুটি এসে পৌঁছায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে। শিশু সার্জারি বিভাগে সেদিন রাত্রিকালীন দায়িত্ব পালন করছেন ডা. সদরুদ্দিন আল মাসুদ। প্রথম ওকে দেখে একটু ঘাবড়ে গিয়েছিলেন কি? প্রশ্নটা শুনে ডা. মাসুদ একটু হাসেন, ‘না, ঠিক ঘাবড়াইনি। কেননা, এখানে আমরা নানা ধরনের বিচিত্র ও ক্রিটিক্যাল শিশু রোগী দেখে সব সময়ই অভ্যস্ত। কিন্তু এত ছোট্ট একটা শিশু, গুলির আঘাতে বিদীর্ণ, হ্যাঁ, একটু চমকে দিয়েছিল বটে।’ সকালবেলা শিশু সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কানিজ হাসিনা প্রথম দেখেন শিশুটিকে, শিশুটি তখন জানে না যে তারই তত্ত্বাবধানে এরপর আরও অনেকগুলো দিন কাটাতে হবে তাকে, গর্ভে ধারণ না করেও শিশুটিকে দ্বিতীয়বার ‘জন্ম’ দেবেন এই নারী। ওর বুকের ডান পাশ দিয়ে ঢুকে গেছে যে গুলিটা, তা মায়ের পেটের ভেতর গুটিসুটি হয়ে থাকার কারণে ভাঁজ করা হাত ও গলার পাশ ঘেঁষে চোখের কিছু ক্ষতি করে বেরিয়ে গেছে অন্য ধার দিয়ে। তারপরও এই ছোট্ট নাজুক শিশুটিকে তখনই অস্ত্রোপচার না করারই সিদ্ধান্ত নিলেন ডা. কানিজ। এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় আতঙ্কের নাম সংক্রমণ ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ। তাই সঙ্গে সঙ্গে ওয়ার্ডের আর সব শিশুর কাছ থেকে আলাদা করে ফেলা হলো তাকে। বিদেশি বন্ধুদের কাছ থেকে উপহার হিসেবে পাওয়া বেবি কটগুলোর একটিকে জীবাণুমুক্ত করে এক কোণে স্থাপন করা হলো, তাপমাত্রা যেন বেশি কমে না যায়, সে জন্য মাথার কাছে রাখা হলো একটা ফ্যান হিটার। লক্ষণরেখা টেনে দেওয়া হলো তার বিছানার চারপাশে, জীবাণুমুক্ত না হয়ে যে কারও প্রবেশ নিষেধ তার ভেতর। চিকিৎসকেরা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থান নিলেন সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য।
মাতৃজঠরে থাকাকালে একটি শিশু রক্তে অক্সিজেনের জন্য মায়ের রক্তকেই ব্যবহার করে, নিজের ফুসফুসকে নয়। আর এ কারণেই বুকের খাঁচার ভেতর ফুসফুসটা জন্মের আগ পর্যন্ত চুপসে থাকে। এই অসামান্য রক্ষাকবচের জন্য বুলেট বুক ভেদ করে গেলেও শিশুটির ফুসফুসে কোনো আঘাত করতে পারেনি, না হলে রক্তক্ষরণে অনেক আগেই মারা যেত সে। কথাগুলো বলছিলেন শিশু সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক আবদুল হানিফ। একইভাবে শিশু ধারণের কারণে ফুলে ওঠা জরায়ু মায়ের পেটের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে ঠেলে দিয়েছে ওপরে, আর বুলেটটা মায়ের পেট বিদীর্ণ করলেও পেটের ভেতরকার জরুরি অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে ছুঁতে পারেনি সেভাবে। তার ওপর জরায়ুর পানি আর পেশির সঙ্গে আস্ত একটা শিশুর উপস্থিতি বুলেটের গতিকে অনেকটাই ধীর করে দিয়েছে, না হলে মাও মারা যেতেন সেই আঘাতের কারণে। মা ও মেয়ে দুজনেই একে অপরকে বাঁচিয়েছেন নিজেদের অজান্তে! জানালেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক নীলুফার বেগম, নাজমাকে যিনি তত্ত্বাবধান কেরছেন। মাগুরার চিকিৎসকদের ত্বরিত অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত ও সঠিক পদক্ষেপের প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘পরবর্তী সময়ে নাজমা সংক্রমণ, শ্বাসকষ্ট, জ্বর ইত্যাদি সমস্যা নিয়েই ঢাকায় আসে এবং আমরা তার চিকিত্সা দিই। তার ত্বকেও বেশ সমস্যা ছিল। কিন্তু সঠিক সময়ে সঠিক চিকিত্সা না হলে সে নিজেও যে ঝুঁকিমুক্ত ছিল, তা-ও নয়।’

বিপদ অবশ্য তখনো পিছু ছাড়েনি সুরাইয়ার, তত দিনে নামকরণ হয়েছে ওর, আর সারা দেশের মানুষ সেই নাম জেনে গেছে সংবাদমাধ্যমের কল্যাণে। প্রতিদিন ভিড় জমছে হাসপাতালে। এর পরের গল্পটা শুনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের নবজাতক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক আবিদ হোসেন মোল্লার কাছ থেকে।


অবশেষে মায়ের কোলে সুরাইয়া

মায়ের কোলে ফেরা
সুরাইয়া অস্ত্রোপচারের উপযোগী হয়ে উঠল। ২১টি সেলাই পড়ল এইটুকুন শরীরে। সেই ধকলটাও সামলে উঠতে না উঠতে একের পর এক দুঃসংবাদ। তত দিনে সে চলে গেছে স্পেশাল কেয়ার বেবি ইউনিটে। এরই মধ্যে তার জন্ডিস দেখা দিল মারাত্মক আকারে, রক্তে অণুচক্রিকার হার গেল কমে, হৃদ্যন্ত্রে শোনা যাচ্ছে একটা অস্বাভাবিক শব্দ, তারপর যেদিন শরীরে পানি জমতে শুরু করল, সেদিন অধ্যাপক আবিদের মুখ থমথমে। ১০ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ মেডিকেল বোর্ড তৈরি হয়ে গেছে তত দিনে। সেখানে আছেন শিশু সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক আশরাফ উল হক, অধ্যাপক আবদুল হানিফ, সহযোগী অধ্যাপক কানিজ হাসিনা, শিশু বিভাগের প্রধান অধ্যাপক এখলাসুর রহমান, হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবদুল ওয়াদুদ চৌধুরী, কার্ডিও থোরাসিক সার্জন কামরুল, চর্ম বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী, চক্ষু বিভাগের ডা. ফরিদুল হাসান, অর্থোপেডিক বিভাগের ডা. গোলাম মোস্তফা, প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের ডা. নওয়াজেশ। নিয়মিত আলোচনায় বসছেন তাঁরা। দফায় দফায় পরামর্শ দিতে ছুটে এসেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নবজাতক বিভাগের অধ্যাপক মো. শহীদুল্লাহ এবং জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের চিকিৎসকেরা। ‘অনেকেই আমাদের যথেষ্ট সহায়তাই করেছেন’—বললেন অধ্যাপক আবিদ হোসেন। সাংবাদিেকরাও সহায়তা করেছেন। তাঁরা শিশুটির কাছে যাওয়ার জন্য জোর করেননি। বিধিনিষেধও মেনে চলেছেন। না মেনেই বা উপায় কী? স্ক্যাবু ইনচার্জ সিস্টার জয়ন্তী ঘাগড়া আর সুরাইয়ার সার্বক্ষণিক নার্স সুলতানা পারভীন নাকি বাঘিনীর মতোই আগলে রেখেছিলেন ওকে। সঠিক নিয়ম না মেনে এমনকি নিজেদের অধ্যাপককেও কাছে ঘেঁষতে দেননি তাঁরা! এই যে বুক দিয়ে আগলে রাখা সেবিকারা, ওই যে ওয়ার্ডবয় রাজু যে রক্ত দিয়েছেন অস্ত্রোপচারের সময়, শিশু সার্জন সিফাত ছুটে গিয়ে কিনে এনেছেন মশারি, লেপ, কাঁথা আর বালিশ। সিফাতের শাশুড়ি নাকি পরম যত্নে নিজে সেলাই করে দিয়েছেন জামাকাপড়। নাম না-জানা স্তন্যদাত্রী মায়েরা এসে ওকে দুধ খাওয়াতে চেয়েছেন। এ রকম বহু মানুষের ভালোবাসা আর শুভকামনায় শেষ পর্যন্ত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গিয়ে সুরাইয়া প্রমাণ করে দিল এখনো মানুষ তার মানবতা আর প্রেম দিয়েই জিততে পারে।

শেষ দৃশ্যে তাই দেখি মা নাজমা হাসিমুখে কোলে নিচ্ছেন সুরাইয়াকে ছবি তোলার জন্য, ‘আরে আরে ছবি তোলার জন্য তো আমি একটা মাথার ব্যান্ড কিনেছি’ বলে ছুটে আসছেন সিফাত। আর সুরাইয়ার বাবা বাচ্চু ভূঁইয়া লাজুক মুখে জিজ্ঞেস করছেন, ‘আমি কোন দিকে দাঁড়াব?’ আর একদল স্নেহময় চিকিত্সক-সেবিকা-হাসপাতালের কর্মী উচ্ছ্বসিত হাসি হাসছেন। এর চেয়ে সুন্দর দৃশ্য আর কী হতে পারে!

Source: http://www.prothom-alo.com/we-are/article/609046/
            আগস্ট ২২, ২০১৫

54
যে চৌদ্দটি আমলে রিজিক বাড়ে


মুসলিম মাত্রেই বিশ্বাস করেন যে তার আয় ও উপার্জন, জীবন ও মৃত্যু,  এবং সৌভাগ্য ও দুর্ভাগ্য ইত্যাদি র্নিধারণ হয়ে যায় যখন তিনি মায়ের উদরে থাকেন। আর এসব তিনি লাভ করেন তার জন্য বরাদ্দ উপায়-উপকরণগুলোর মাধ্যমে। তাই আমাদের কর্তব্য হলো হাত গুটিয়ে বসে না থেকে এর জন্য র্নিধারিত উপায়-উপকরণ সংগ্রহে চেষ্টা করা। যেমন চাষাবাদ, ব্যবসায়-বাণিজ্য, শিল্প-চারু, চাকরি-বাকরি বা অন্য কিছু। আল্লাহ তা‌‘আলা বলেন,
﴿هُوَ ٱلَّذِي جَعَلَ لَكُمُ ٱلۡأَرۡضَ ذَلُولٗا فَٱمۡشُواْ فِي مَنَاكِبِهَا وَكُلُواْ مِن رِّزۡقِهِۦۖ وَإِلَيۡهِ ٱلنُّشُورُ ١٥﴾ [الملك: ١٥]
‘তিনিই তো তোমাদের জন্য যমীনকে সুগম করে দিয়েছেন, কাজেই তোমরা এর পথে-প্রান্তরে বিচরণ কর এবং তাঁর রিযক থেকে তোমরা আহার কর। আর তাঁর নিকটই পুনরুত্থান।’ {সূরা আল-মুলক, আয়াত : ১৫}

• আজ আমরা রিজিক বৃদ্ধির উপায়সমূহের মধ্যে কুরআন ও হাদীস রোমন্থিত ১৪টি আমলের কথা আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।

প্রথম আমল : তাকওয়া ও তাওয়াক্কুল অবলম্বন করা
আল্লাহর ভয় তথা তাকওয়া অবলম্বন করা, তাঁর নির্দেশাবলি পালন ও নিষিদ্ধ বিষয়গুলো বর্জন করা। পাশাপাশি আল্লাহর ওপর অটল আস্থা রাখা, তাওয়াক্কুল করা এবং রিজিক তালাশে তাঁর সাহায্য প্রার্থনা করা। কারণ, যে আল্লাহর ওপর ভরসা করে তিনিই তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যান। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন, ‌
﴿ وَمَن يَتَّقِ ٱللَّهَ يَجۡعَل لَّهُۥ مَخۡرَجٗا ٢ وَيَرۡزُقۡهُ مِنۡ حَيۡثُ لَا يَحۡتَسِبُۚ وَمَن يَتَوَكَّلۡ عَلَى ٱللَّهِ فَهُوَ حَسۡبُهُۥٓۚ إِنَّ ٱللَّهَ بَٰلِغُ أَمۡرِهِۦۚ قَدۡ جَعَلَ ٱللَّهُ لِكُلِّ شَيۡءٖ قَدۡرٗا ٣ ﴾ [الطلاق : ٢،  ٣]   
‘আর যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য উত্তরণের পথ তৈরী করে দেন। এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিযক দিবেন যা সে কল্পনাও করতে পারবে না। আর যে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ তাঁর উদ্দেশ্য পূর্ণ করবেনই। নিশ্চয় আল্লাহ প্রত্যেক জিনিসের জন্য একটি সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন।’ {সূরা আত-তালাক, আয়াত : ২-৩}
অর্থাৎ যে আল্লাহকে ভয় করবে এবং আনুগত্য দেখাবে, আল্লাহ তার সকল সংকট দূর করে দেবেন এবং তার কল্পনাতীত স্থান থেকে রিজিকের সংস্থান করে দেবেন। আর যে কেউ তার উদ্দেশ্য হাসিলে একমাত্র আল্লাহর শরণাপন্ন হয় তিনিই তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যান। বলাবাহুল্য এই তাকওয়ার পরিচয় মেলে হালাল উপার্জনে চেষ্টা এবং সন্দেহযুক্ত কামাই বর্জনের মধ্য দিয়ে।

দ্বিতীয় আমল : তাওবা ও ইস্তেগফার করা
অধিক পরিমাণে ইস্তেগফার এবং বেশি বেশি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলেও রিজিক বাড়ে। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর অন্যতম নবী ও রাসূল নূহ আলাইহিস সালামের ঘটনা তুলে ধরে ইরশাদ করেন,
﴿ فَقُلۡتُ ٱسۡتَغۡفِرُواْ رَبَّكُمۡ إِنَّهُۥ كَانَ غَفَّارٗا ١٠ يُرۡسِلِ ٱلسَّمَآءَ عَلَيۡكُم مِّدۡرَارٗا ١١ وَيُمۡدِدۡكُم بِأَمۡوَٰلٖ وَبَنِينَ وَيَجۡعَل لَّكُمۡ جَنَّٰتٖ وَيَجۡعَل لَّكُمۡ أَنۡهَٰرٗا ١٢ ﴾ [نوح: ١٠،  ١٢]
‘আর বলেছি, ‘তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও; নিশ্চয় তিনি পরম ক্ষমাশীল’। (তাঁর কাছে ক্ষমা চাইলে) ‘তিনি তোমাদের উপর মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, ‘আর তোমাদেরকে ধন-সম্পদ ও সন্তান- সন্ততি দিয়ে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের জন্য বাগ-বাগিচা দেবেন আর দেবেন নদী-নালা’। {সূরা নূহ, আয়াত : ১০-১২}
হাদীসে বিষয়টি আরেকটু খোলাসা করে বলা হয়েছে, আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« مَنْ لَزِمَ الاِسْتِغْفَارَ جَعَلَ اللَّهُ لَهُ مِنْ كُلِّ ضِيقٍ مَخْرَجًا وَمِنْ كُلِّ هَمٍّ فَرَجًا وَرَزَقَهُ مِنْ حَيْثُ لاَ يَحْتَسِبُ ».
‘যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার করবে আল্লাহ তার সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের সংস্থান করে দেবেন।’ [আবূ দাঊদ : ১৫২০; ইবন মাজা : ৩৮১৯; তাবরানী : ৬২৯১][1] 
অন্য হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,   
« مَنْ أَكْثَرَ الِاسْتِغْفَارَ جَعَلَ اللَّهُ لَهُ مِنْ كُلِّ هَمٍّ فَرَجًا وَمِنْ كُلِّ ضِيقٍ مَخْرَجًا وَرَزَقَهُ مِنْ حَيْثُ لاَ يَحْتَسِبُ».
‘যে ব্যক্তি বেশি বেশি ইস্তেগফার করবে আল্লাহ তার সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন।’ [বাইহাকী : ৬৩৬; হাকেম, মুস্তাদরাক : ৭৬৭৭ সহীহ সূত্রে বর্ণিত।]

তৃতীয় আমল : আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা
আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা এবং তাদের হক আদায়ের মাধ্যমেও রিজিক বাড়ে। যেমন : আনাস ইবন মালেক রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি তিনি ইরশাদ করেন,
« مَنْ سَرَّهُ أَنْ يُبْسَطَ لَهُ فِي رِزْقِهِ أَوْ يُنْسَأَ لَهُ فِي أَثَرِهِ فَلْيَصِلْ رَحِمَهُ».
‘যে ব্যক্তি কামনা করে তার রিজিক প্রশস্ত করে দেওয়া হোক এবং তার আয়ু দীর্ঘ করা হোক সে যেন তার আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখে।’ [বুখারী : ৫৯৮৫; মুসলিম : ৪৬৩৯]

চতৃর্থ আমল : নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর দরূদ পড়া
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি দরূদ পাঠেও রিজিকে প্রশস্ততা আসে। যেমনটি অনুমিত হয় নিম্নোক্ত হাদীস থেকে। তোফায়েল ইবন উবাই ইবন কা‘ব রাদিআল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন,   
قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّى أُكْثِرُ الصَّلاَةَ عَلَيْكَ فَكَمْ أَجْعَلُ لَكَ مِنْ صَلاَتِى فَقَالَ « مَا شِئْتَ ». قَالَ قُلْتُ الرُّبُعَ. قَالَ « مَا شِئْتَ فَإِنْ زِدْتَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكَ ». قُلْتُ النِّصْفَ. قَالَ « مَا شِئْتَ فَإِنْ زِدْتَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكَ ». قَالَ قُلْتُ فَالثُّلُثَيْنِ. قَالَ « مَا شِئْتَ فَإِنْ زِدْتَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكَ ». قُلْتُ أَجْعَلُ لَكَ صَلاَتِى كُلَّهَا. قَالَ « إِذًا تُكْفَى هَمَّكَ وَيُغْفَرُ لَكَ ذَنْبُكَ ». قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ.
আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল, আমি আপনার প্রতি অধিকহারে দরূদ পড়তে চাই, অতএব আমার দু‘আর মধ্যে আপনার দরূদের জন্য কতটুকু অংশ রাখব? তিনি বললেন, তুমি যতটুকু চাও। কা‘ব বলেন, আমি বললাম, এক চতুর্থাংশ। তিনি বললেন, তুমি যতটুকু চাও। তবে যদি তুমি বেশি পড় তা তোমার জন্য উত্তম হবে। আমি বললাম, অর্ধেক? তিনি বললেন, তুমি যতটুকু চাও। তবে তুমি যদি বেশি পড় তা তোমার জন্য উত্তম হবে। কা‘ব বলেন, আমি বললাম, তাহলে দুই তৃতীয়াংশ? তিনি বললেন, তুমি যতটুকু চাও। তবে তুমি যদি বেশি পড় তা তোমার জন্য উত্তম হবে। আমি বললাম, আমার দু‘আর পুরোটা জুড়েই শুধু আপনার দরূদ রাখব। তিনি বললেন, তাহলে তা তোমার ঝামেলা ও প্রয়োজনের জন্য যথেষ্ট হবে এবং তোমার গুনাহ ক্ষমা করা হবে। [তিরমিযী : ২৬৪৫; হাকেম, মুস্তাদরাক : ৭৬৭৭ (আবূ ঈসা বলেন, হাদীসটি ‘হাসান’ সহীহ।)] 

পঞ্চম আমল : আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করা
আল্লাহর রাস্তায় কেউ ব্যয় বা দান করলে তা বিফলে যায় না। সে সম্পদ ফুরায়ও না। বরং তা বাড়ে বৈ কি। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
﴿ قُلۡ إِنَّ رَبِّي يَبۡسُطُ ٱلرِّزۡقَ لِمَن يَشَآءُ مِنۡ عِبَادِهِۦ وَيَقۡدِرُ لَهُۥۚ وَمَآ أَنفَقۡتُم مِّن شَيۡءٖ فَهُوَ يُخۡلِفُهُۥۖ وَهُوَ خَيۡرُ ٱلرَّٰزِقِينَ ٣٩ ﴾ [سبا: ٣٩]   
‘বল, ‘নিশ্চয় আমার রব তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার জন্য ইচ্ছা রিযক প্রশস্ত করেন এবং সঙ্কুচিত করেন। আর তোমরা যা কিছু আল্লাহর জন্য ব্যয় কর তিনি তার বিনিময় দেবেন এবং তিনিই উত্তম রিযকদাতা।’ {সূরা আস-সাবা’, আয়াত : ৩৯}

ষষ্ঠ আমল : বারবার হজ-উমরা করা
হজ ও উমরা পাপ মোচনের পাশাপাশি হজকারী ও উমরাকারীর অভাব-অনটন দূর করে এবং তার সম্পদ বাড়িয়ে দেয়। আবদুল্লাহ ইব্ন মাসঊদ রাদিআল্লাহু আনহুমা কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« تَابِعُوا بَيْنَ الْحَجِّ وَالْعُمْرَةِ فَإِنَّهُمَا يَنْفِيَانِ الْفَقْرَ وَالذُّنُوبَ كَمَا يَنْفِى الْكِيرُ خَبَثَ الْحَدِيدِ وَالذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ وَلَيْسَ لِلْحَجَّةِ الْمَبْرُورَةِ ثَوَابٌ إِلاَّ الْجَنَّةُ ».
‘তোমরা হজ ও উমরা পরপর করতে থাক, কেননা তা অভাব ও গুনাহ দূর করে দেয়, যেমন দূর করে দেয় কামারের হাপর লোহা, সোনা ও রুপার ময়লাকে।’ [তিরমিযী : ৮১৫; নাসাঈ : ২৬৩১]

সপ্তম আমল : দুর্বলের প্রতি সদয় হওয়া বা সদাচার করা
মুস‘আব ইবন সা‘দ রাদিআল্লাহু আনহু যুদ্ধজয়ের পর মনে মনে কল্পনা করলেন, তিনি বোধ হয় তাঁর বীরত্ব ও শৌর্য-বীর্য হেতু অন্যদের চেয়ে নিজেকে বেশি মর্যাদাবান। সেই প্রেক্ষিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
« هَلْ تُنْصَرُونَ وَتُرْزَقُونَ إِلاَّ بِضُعَفَائِكُمْ » .
‘তোমাদের মধ্যে থাকা দুর্বলদের কারণে কেবল তোমাদের সাহায্য করা হয় এবং রিজিক প্রদান করা হয়।’ [বুখারী : ২৮৯৬]

অষ্টম আমল : ইবাদতের জন্য ঝঞ্ঝাটমুক্ত হওয়া
আল্লাহর ইবাদতের জন্য ঝামেলামুক্ত হলে এর মাধ্যমেও অভাব দূর হয় এবং প্রাচুর্য লাভ হয়। যেমনটি বর্ণিত হয়েছে আবূ হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু কর্তৃক। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« إِنَّ اللَّهَ تَعَالَى يَقُولُ يَا ابْنَ آدَمَ تَفَرَّغْ لِعِبَادَتِى أَمْلأْ صَدْرَكَ غِنًى وَأَسُدَّ فَقْرَكَ وَإِلاَّ تَفْعَلْ مَلأْتُ يَدَيْكَ شُغْلاً وَلَمْ أَسُدَّ فَقْرَكَ ».
‘আল্লাহ তা‘আলা বলেন, হে আদম সন্তান, আমার ইবাদতের জন্য তুমি ঝামেলামুক্ত হও, আমি তোমার অন্তরকে প্রাচুর্য দিয়ে ভরে দেব এবং তোমার দারিদ্র ঘুচিয়ে দেব। আর যদি তা না কর, তবে তোমার হাত ব্যস্ততায় ভরে দেব এবং তোমার অভাব দূর করব না।’ [তিরমিযী : ২৬৫৪; মুসনাদ আহমদ : ৮৬৮১; ইবন মাজা : ৪১০৭]

নবম আমল : আল্লাহর রাস্তায় হিজরত করা
আল্লাহর সন্তুষ্টির নিমিত্তে হিজরত তথা স্বদেশ ত্যাগ করলে এর মাধ্যমেও রিজিকে প্রশস্ততা ঘটে। যেমনটি অনুধাবিত হয় নিচের আয়াত থেকে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ ۞وَمَن يُهَاجِرۡ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ يَجِدۡ فِي ٱلۡأَرۡضِ مُرَٰغَمٗا كَثِيرٗا وَسَعَةٗۚ وَمَن يَخۡرُجۡ مِنۢ بَيۡتِهِۦ مُهَاجِرًا إِلَى ٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ ثُمَّ يُدۡرِكۡهُ ٱلۡمَوۡتُ فَقَدۡ وَقَعَ أَجۡرُهُۥ عَلَى ٱللَّهِۗ وَكَانَ ٱللَّهُ غَفُورٗا رَّحِيمٗا ١٠٠ ﴾ [النساء : ١٠٠]
‘আর যে আল্লাহর রাস্তায় হিজরত করবে, সে যমীনে বহু আশ্রয়ের জায়গা ও সচ্ছলতা পাবে। আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উদ্দেশ্যে মুহাজির হয়ে নিজ ঘর থেকে বের হয় তারপর তাকে মৃত্যু পেয়ে বসে, তাহলে তার প্রতিদান আল্লাহর উপর অবধারিত হয়। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ {সূরা আন-নিসা, আয়াত : ১০০}
আয়াতের ব্যাখ্যা আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস প্রমুখ সাহাবী রাদিআল্লাহু আনহুদ বলেন, স্বচ্ছলতা অর্থ রিজিকে প্রশস্ততা।

দশম আমল : আল্লাহর পথে জিহাদ
একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি হাসিলের জিহাদেও সম্পদের ব্যপ্তি ঘটে। গনীমত বা যুদ্ধলব্ধ সম্পদের মাধ্যমে সংসারে প্রাচুর্য আসে। যেমন ইবন উমর রাদিআল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« وَجُعِلَ رِزْقِي تَحْتَ ظِلِّ رُمْحِي  ».
‘আর আমার রিজিক রাখা হয়েছে আমার বর্শার ছায়াতলে।’ [মুসনাদ আহমদ : ৫৬৬৭; বাইহাকী : ১১৫৪; শু‘আবুল ঈমান : ১৯৭৮৩]

একাদশ আমল : আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা
সাধারণভাবে আল্লাহ যে রিজিক ও নিয়ামতরাজি দান করেছেন তার জন্য আল্লাহর শুকরিয়া করা এবং তাঁর স্তুতি গাওয়া। কারণ, শুকরিয়ার ফলে নেয়ামত বৃদ্ধি পায়। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,   
﴿ وَإِذۡ تَأَذَّنَ رَبُّكُمۡ لَئِن شَكَرۡتُمۡ لَأَزِيدَنَّكُمۡۖ وَلَئِن كَفَرۡتُمۡ إِنَّ عَذَابِي لَشَدِيدٞ ٧ ﴾ [ابراهيم: ٧]
‘আর যখন তোমাদের রব ঘোষণা দিলেন, ‘যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় কর, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের বাড়িয়ে দেব, আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, নিশ্চয় আমার আযাব বড় কঠিন।’ {সূরা ইবরাহীম, আয়াত : ০৭}
আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা শুকরিয়ার বদৌলতে নেয়ামত বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। আর বলাবাহুল্য আল্লাহর বাড়ানোর কোনো সীমা-পরিসীমা নাই।

দ্বাদশ আমল : বিয়ে করা
আজকাল মানুষের দুনিয়ার প্রাচুর্য ও বিলাসের প্রতি আসক্তি এত বেশি বেড়েছে, তারা প্রচুর অর্থ নেই এ যুক্তিতে প্রয়োজন সত্ত্বেও বিয়ে বিলম্বিত করার পক্ষে রায় দেন। তাদের কাছে আশ্চর্য লাগতে পারে এ কথা যে বিয়ের মাধ্যমেও মানুষের সংসারে প্রাচুর্য আসে। কারণ, সংসারে নতুন যে কেউ যুক্ত হয়, সে তো তার জন্য বরাদ্দ রিজিক নিয়েই আসে। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
   
﴿ وَأَنكِحُواْ ٱلۡأَيَٰمَىٰ مِنكُمۡ وَٱلصَّٰلِحِينَ مِنۡ عِبَادِكُمۡ وَإِمَآئِكُمۡۚ إِن يَكُونُواْ فُقَرَآءَ يُغۡنِهِمُ ٱللَّهُ مِن فَضۡلِهِۦۗ وَٱللَّهُ وَٰسِعٌ عَلِيمٞ ٣٢ ﴾ [النور : ٣٢]
‘আর তোমরা তোমাদের মধ্যকার অবিবাহিত নারী-পুরুষ ও সৎকর্মশীল দাস দাসীদের বিবাহ দাও। তারা অভাবী হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময় ও মহাজ্ঞানী।’ {সূরা আন-নূর, আয়াত : ৩২}

উমর ইবন খাত্তাব রাদিআল্লাহু আনহুমা বলতেন, ওই ব্যক্তির ব্যাপার বিস্ময়কর যে বিয়ের মধ্যে প্রাচুর্য খোঁজে না। কারণ স্বয়ং আল্লাহ বলেছেন, ‘তারা অভাবী হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন।’

ত্রয়োদশ আমল : অভাবের সময় আল্লাহমুখী হওয়া এবং তার কাছে দু‘আ করা
রিজিক অর্জনে এবং অভাব দূরীকরণে প্রয়োজন আল্লাহর কাছে দু‘আ করা। কারণ, তিনি প্রার্থনা কবুল করেন। আর আল্লাহ তা‘আলাই রিজিকদাতা এবং তিনি অসীম ক্ষমতাবান। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَقَالَ رَبُّكُمُ ٱدۡعُونِيٓ أَسۡتَجِبۡ لَكُمۡۚ ﴾ [غافر: ٦٠]
‘আর তোমাদের রব বলেছেন, ‘তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের জন্য সাড়া দেব।’ {সূরা আল-মু‘মিন, আয়াত : ৬০}

এ আয়াতে আল্লাহ দু‘আ করার নির্দেশ দিয়েছেন আর তিনি তা কবুলের জিম্মাদারি নিয়েছেন। যাবৎ না তা কবুলে পথে কোনো অন্তরায় না হয়। যেমন ওয়াজিব তরক করা, হারাম কাজে জড়ানো, হারাম আহার গ্রহণ বা হারাপ পরিচ্ছদ পরা ইত্যাদি এবং কবুলকে খানিক বিলম্বিতকরণ। আল্লাহর কাছে দু‘আয় বলা যেতে পারে,
‘হে রিজিকদাতা আমাকে রিজিক দান করুন, আপনি সর্বোত্তম রিজিকদাতা। হে আল্লাহ আমি আপনার কাছে পবিত্র সুপ্রশস্ত রিজিক চাই। হে ওই সত্তা, দানের ঢল সত্ত্বেও যার ভাণ্ডারে কমতি হয় না। হে আল্লাহ, আমাকে আপনি আপনার হালাল দিয়ে আপনার হারাম থেকে যথেষ্ট করে দিন আর আপনার দয়া দিয়ে আপনি ছাড়া অন্যদের থেকে যথেষ্ট হয়ে যান। হে আল্লাহ আপনি আমাকে যে রিজিক দিয়েছেন তা দিয়েই সন্তুষ্ট বানিয়ে দিন। আর যা আমাকে দিয়েছেন তাতে বরকত দিন।’

অভাবকালে মানুষের কাছে হাত না পেতে আল্লাহর শরণাপন্ন হলে এবং তাঁর কাছেই প্রাচুর্য চাইলে অবশ্যই তার অভাব মোচন হবে এবং রিজিক বাড়ানো হবে। আবদুল্লাহ ইবন মাসঊদ রাদিআল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« مَنْ نَزَلَتْ بِهِ فَاقَةٌ فَأَنْزَلَهَا بِالنَّاسِ لَمْ تُسَدَّ فَاقَتُهُ وَمَنْ نَزَلَتْ بِهِ فَاقَةٌ فَأَنْزَلَهَا بِاللَّهِ فَيُوشِكُ اللَّهُ لَهُ بِرِزْقٍ عَاجِلٍ أَوْ آجِلٍ ».
‘যে ব্যক্তি অভাবে পতিত হয়, অতপর তা সে মানুষের কাছে সোপর্দ করে (অভাব দূরিকরণে মানুষের ওপর নির্ভরশীল হয়), তার অভাব মোচন করা হয় না। পক্ষান্তরে যে অভাবে পতিত হয়ে এর প্রতিকারে আল্লাহর ওপর নির্ভরশীল হয় তবে অনিতবিলম্বে আল্লাহ তাকে তরিৎ বা ধীর রিজিক দেবেন। [তিরমিযী : ২৮৯৬; মুসনাদ আহমদ : ৪২১৮]

চতুর্দশ আমল : গুনাহ ত্যাগ করা, আল্লাহর দীনের ওপর সদা অটল থাকা এবং নেকীর কাজ করে যাওয়া।
গুনাহ ত্যাগ করা, আল্লাহর দীনের ওপর অটল থাকা এবং নেকীর কাজ করা- এসবের মাধ্যমেও রিজিকের রাস্তা প্রশস্ত হয় যেমন পূর্বোক্ত আয়াতগুলো থেকে অনুমান করা যায়।
তবে সর্বোপরি আমাদের মনে রাখতে হবে আমরা দুনিয়াতে চিরদিন থাকার জন্য আসি নি। তাই দুনিয়াকে প্রাধান্য না দিয়ে উচিত হবে আখিরাতকে অগ্রাধিকার ও প্রাধান্য দেয়া। আমাদের এদেন অবস্থা দেখে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ بَلۡ تُؤۡثِرُونَ ٱلۡحَيَوٰةَ ٱلدُّنۡيَا ١٦ وَٱلۡأٓخِرَةُ خَيۡرٞ وَأَبۡقَىٰٓ ١٧ ﴾ [الاعلى: ١٦،  ١٧]
‘বরং তোমরা দুনিয়ার জীবনকে প্রাধান্য দিচ্ছ। অথচ আখিরাত সর্বোত্তম ও স্থায়ী।’ {সূরা আল-আ‘লা, আয়াত : ১৬-১৭}

আর পরকালের মুক্তি ও চিরশান্তিই যার প্রধান লক্ষ্য তার উচিত হবে রিজিকের জন্য হাহাকার না করে অল্পে তুষ্ট হতে চেষ্টা করা। যেমন : হাদীসে এসেছে, আবদুল্লাহ ইবন আমর ইবন আ‘স রাদিআল্লাহু আনহুম থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« قَدْ أَفْلَحَ مَنْ أَسْلَمَ وَرُزِقَ كَفَافًا وَقَنَّعَهُ اللَّهُ بِمَا آتَاهُ ».
‘ওই ব্যক্তি প্রকৃত সফল যে ইসলাম গ্রহণ করেছে আর তাকে জীবন ধারণে (অভাবও নয়; বিলাসও নয়) পর্যাপ্ত পরিমাণ রিজিক দেয়া হয়েছে এবং আল্লাহ তাকে যা দিয়েছেন তাতে তুষ্টও করেছেন। [মুসলিম : ২৪৭৩; তিরমিযী : ২৩৪৮; আহমদ : ৬৫৭২]

পরিশেষে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা, তিনি যেন আমাদের এসব উপায়-উপকরণ যোগাড় করে রিজিক তথা হালাল উপার্জনে উদ্যোগী ও সফল হবার তাওফীক দান করেন। তিনি যেন আপনাদের রিজিক ও উপার্জনে প্রশস্ততা দান করেন। আমীন।


[1]. (শায়খ উসাইমীন বলেন, সনদগত দিক থেকে হাদীসটি দুর্বল কিন্তু এর মর্ম ও বক্তব্য সহীহ বা সঠিক। কুরআনের আয়াত ও হাদীসে এই বক্তব্যের সমর্থন বিদ্যমান। এই হাদীস সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনার পর শায়খ বিন বায বলেন, সর্বোপরি হাদীসটি তারগীব ও তারহীব তথা মানুষকে আখিরাতের আগ্রহ বা ভয় দেখানোর ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য। কারণ, এ ব্যাপারে কুরআন ও সুন্নাহে একাধিক বক্তব্য পাওয়া যায়। [ফাতাওয়া নূর আলাদ-দারবি (হাদীসের ব্যাখ্যা ও তার হুকুম।]   

সংকলন: আলী হাসান তৈয়ব
সম্পাদনা: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
সূত্র: ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব

55
খাবার পর একটি দুয়া আছে,
যেটি পড়লে অতীতের সমস্ত গুনাহগুলো মাফ করে দেওয়া হয় (সমস্ত গুনাহ মানে শুধু সগীরাহ বা ছোট গুনাহগুলো, কবীরাহ বা বড় গুনাহগুলো তোওবা ছাড়া মাফ হয়না। সেইজন্য এই আমলের পাশাপাশি নিয়মিত আন্তরিক তোওবা করতে হবে, যাতে করে প্রতিদিনের সগীরাহ ও কবীরাহ সমস্ত গুনাহর পাপ থেকে পবিত্র থাকা যায়)।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “কেউ যদি খাওয়ার পর এই দুআ’ পাঠ করে তাহলে তার পূর্বের সমস্ত গুনাহ্ মাফ করে দেওয়া হবে।”
দুআ’টি হচ্ছে
– ﺍﻟْﺤَﻤْﺪُ ﻟِﻠَّﻪِ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﺃَﻃْﻌَﻤَﻨِﻲ ﻫَﺬَﺍ، ﻭَﺭَﺯَﻗَﻨِﻴﻪِ، ﻣِﻦْ ﻏَﻴْﺮِ ﺣَﻮْﻝٍ
ﻣِﻨِّﻲ ﻭَﻻَ ﻗُﻮَّﺓٍ

উচ্চারণঃ আলহা’মদু লিল্লা-হিল্লাযী আত- আ’মানী হা-যা ওয়া রাযাক্বানিহি মিং গাইরি হা’উলিন-মিন্নী ওয়ালা ক্বুওয়্যাতিন।

অর্থঃ সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমাকে এই খাবার খাওয়ালেন এবং এ রিযিক দিলেন যাতে ছিল না আমার পক্ষ থেকে কোনো উপায়, না ছিল কোনো শক্তি- সামর্থ্য।

[আবু দাউদঃ ৪০২৫; তিরমিযীঃ ৩৪৫৮; ইবন মাজাহঃ ৩২৮৫, হাদীসটি সহীহ, শায়খ আল-আলবানী রাহিমাহুল্লাহ, সহীহুত তিরমিযীঃ ৩/১৫৯]

56
Politics / Russians love Putin Why?
« on: August 03, 2015, 11:07:47 AM »
রুশরা পুতিনকে কেন ভালোবাসে?


দেশের মানুষের কাছে এখনো বেশ জনপ্রিয় পুতিন। ছবি: এএফপিরাশিয়ায় ১৫ বছর আগে প্রথম ক্ষমতায় আসেন ভ্লাদিমির পুতিন। এর পর থেকে আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রে তিনি। বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁর সুনাম আছে। আছে দুর্নামও। কারও চোখে তিনি নায়ক, কারও চোখে খলনায়ক। কারও দৃষ্টিতে তিনি স্বৈরশাসক, ছলেবলে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখেছেন। কেউবা বলে, পুতিন ছাড়া রুশদের রক্ষা করার মতো নেতা নেই।

দোষ-গুণ যাই থাকুক, এই প্রেসিডেন্টকে দেশটির বেশির ভাগ মানুষ এখনো ভালোবাসে। কিন্তু কেন? যুক্তরাজ্যের নিউ স্টেটসম্যান সাময়িকী এই প্রশ্নের উত্তরে পাঁচটি কারণের কথা উল্লেখ করেছে।
গত প্রায় এক বছরে, বিশেষ করে ইউক্রেন-ইস্যুতে পুতিনের আগ্রাসী মনোভাবের কারণে পশ্চিমাদের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্কের ব্যাপক অবনতি হয়েছে। নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়েছে রাশিয়া। তবু অনমনীয়ভাবে ইউক্রেনে রুশপন্থী বিদ্রোহীদের সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন পুতিন।

পশ্চিমারা পুতিনের সমালোচনায় মুখর। তারা রুশ প্রেসিডেন্টকে খলনায়ক হিসেবে বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরছে। এতে পুতিনের কিছু যায়-আসে না বলেই মনে হচ্ছে। অন্তত জনমত জরিপের ফল এমন আভাস দিচ্ছে। দেশের মানুষের কাছে এখনো বেশ জনপ্রিয় পুতিন।

রাশিয়ার স্বাধীন জরিপ ও গবেষণা সংস্থা দ্য লেভাদা সেন্টারের সাম্প্রতিক এক জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, দেশটির ৮৭ শতাংশ মানুষ পুতিনকে সমর্থন করে। জুন মাসে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা ছিল ৮৯ শতাংশ। ২০১২ সালে ছিল ৬৪ শতাংশ।

পশ্চিমাদের চক্ষুশূল পুতিনকে রুশরা কেন এত ভালোবাসে?
রাশিয়ার তরুণ ও বয়স্কদের সঙ্গে কথা বলে এই প্রশ্নের উত্তর অনুসন্ধান করার চেষ্টা করেছে নিউ স্টেটসম্যান। রুশদের মধ্যে তাদের বর্তমান প্রেসিডেন্টের বিপুল গ্রহণযোগ্যতার অন্তত পাঁচটি কারণ খুঁজে পেয়েছে তারা।

পুতিনকে একজন দৃঢ়চেতা ও শক্তিশালী রাজনৈতিক নেতা মনে করে দেশটির অধিকাংশ জনগণ। রাশিয়ায় তিনি যতটা সম্মান ও শ্রদ্ধা পেয়েছেন, অন্যরা তা পাননি। তিনি কথায় মানুষকে মুগ্ধ করতে পারেন। প্রতিদ্বন্দ্বীরা তাঁর কাছে নস্যি।

পুতিন রাশিয়ায় মধ্যবিত্ত শ্রেণি গড়েছেন। দেশটির অনেকে এখন রুচিশীল গাড়ি চালায়। বিদেশ ভ্রমণ করে। ভালো পোশাক পরে। পুতিন ক্ষমতায় আসার পর দেশটির মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে। বেড়েছে ক্রয়ক্ষমতা। রাশিয়ার পথেঘাটে ঘুরলে পরিবর্তনটা চোখে পড়ে। আর পরিসংখ্যানও তেমনটাই সাক্ষ্য দেয়।

রুশদেরই ভাষ্য, নানা সংস্কারের মাধ্যমে দেশটির সামাজিক উন্নয়নে অবদান রেখেছেন পুতিন। তিনি অবসরভাতা বাড়িয়েছেন। বিনিয়োগ বাড়িয়েছেন শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে। অবকাঠামোর উন্নয়ন ঘটিয়েছেন। সামাজিক নিরাপত্তা জোরদার করেছেন। রাশিয়ায় হত্যাসহ অপরাধ কমে গেছে। এসব পদক্ষেপের কারণে গত ২০ বছরের মধ্যে ২০১৩ সালে প্রথমবার রাশিয়ায় মৃত্যুর চেয়ে জন্মহার বেড়েছে।

রুশরা মনে করে, রাশিয়ার প্রতিপত্তি পুনরুদ্ধার করেছেন পুতিন। তিনি রুশদের মূল্যবোধকে গুরুত্ব দিয়েছেন। দেশকে ঐক্যবদ্ধ করেছেন। আন্তর্জাতিক চাপের কাছে নতিস্বীকার করেননি। বরং রাশিয়া যে হারিয়ে যায়নি, বিশ্বকে তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রকে টক্কর দিয়েছেন। পুতিন ধীরে ধীরে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা খাতকে পুনর্গঠন করেছেন। কৌশলগতভাবে রাশিয়াকে বিশ্বের কাছে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছেন। পুতিনের বিপুল জনপ্রিয়তার পেছনে এই বিষয়গুলোই সম্ভবত সবচেয়ে বেশি কাজ করছে। এ প্রসঙ্গে দেশটির এক নারীর ভাষ্য, নব্বইয়ের দশকে বিশ্ব আমাদের তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশ হিসেবে বিবেচনা করত, এখন আমরা একটি শক্তি হিসেবে গণ্য।

সবশেষ কথা হলো, রাশিয়ায় এই মুহূর্তে পুতিনের বিকল্প নেই। নেতৃত্বের যোগ্যতায় বিরোধী রাজনীতিবিদেরা মোটেও তাঁর সমতুল্য নয়।

Source : http://www.prothom-alo.com/international/article/592348/

57
Namaj/Salat / An Exceptional Prayer…Salaatut Tasbeeh
« on: August 02, 2015, 04:51:26 PM »
An Exceptional Prayer...Salaatut Tasbeeh

In life there are occasions and opportunities where a person has a chance to increase in profits and rewards significantly. One such opportunity is the Blessed Month of Ramadaan, wherein rewards are multiplied enormously. This is a time where we can exert ourselves in prayers to gain nearness to Allah Ta'ala.

An exceptional prayer that can be performed in Ramadaan as well as throughout the year is Salaatut Tasbeeh, a special prayer taught to the Muslim Ummah by The Messenger of Allah (Peace be upon him).

Salatut Tasbeeh is a special Salaah that carries great rewards and blessings.  Hazrat Abdullah ibn Abbas (R.A) reports that Nabi (S.A.W) said to him: "O Abbas! O my uncle! Should I present to you a gift? Should I bestow something to you? Should I inform you of something greatly beneficial? Should I show you such an act which, if you render it, Allah will forgive all your sins – old and new, those committed in error and those committed deliberately, sins committed publicly or privately? The act is to perform four Rakaats (Salatut Tasbeeh) ... (after the Messenger of Allah (S.A.W) taught him the way of performing this Salaah, he said): If possible, perform this Salaah daily; if you are unable, then perform it once a week. If you are unable, then perform it once a month; if you are unable, then perform it once a year and if you are unable to do even this, then perform it at least once in a lifetime." (Hadith-Abu Dawood)

WHEN TO PRAY:

This Salaah (namaz) is offered in four rakat at any convenient time and can be read in any part of the day and night keeping in mind the forbidden times for performing Salaah (i.e. Zawal , Sunrise and Sunset times). It is an excellent practice during the Mubarak(blessed) nights of Ramadhaan or on any other auspicious night.

The Tasbeeh(words of praise)  to be recited in Salatut Tasbeeh:

"Subhan allahi wal hamdulillahi wa la ilaha illal laahu wallahu akbar" 

The words "La Hawla wala Quwwata illa billahil Aliyyil Azeem" may also be added at the end of the above Tasbeeh.

METHOD:

FIRST RAKA'AH

·         After Thana - 15 Times

·         After the Surah and before Ruku - 10 Times

·         In Ruku after the Tasbeeh - 10 Times

·         In Qaumah (standing position after Ruku) - 10 Times

·         In (first) Sajda after the Tasbeeh - 10 Times

·         In Jalsa (sitting position between the two Sajdas) - 10 Times

·         In (second) Sajda after the Tasbeeh - 10 Times

·         The second, third and fourth Rakaats will be read in the same manner.

Note:

1. In every Rakat, the Tasbeeh will be recited 75 times totalling 300 times in the entire Salah.

2. There are also other methods of praying Salatut Tasbeeh which is correct and acceptable.

POINTS TO REMEMBER:

1) Do not count loudly.

2) Do not count by holding a Bead Tasbeeh(prayer beads) or a counter in your hand.

3) You may count by pressing the fingers as a reminder. For example if you are in Ruku. You may press small finger of your right hand first for the first count, then the finger next to it for second count, then the middle finger for third count, following this method until you reach the small finger of left hand will give you an exact count of ten. Use the same method in Qiyaam, Sajdah and Jalsa.

May Allah Ta'ala accept our ibadah(worship) and grant us an elevated position in Jannah(paradise).

58
Namaj/Salat / 11 Benefits of Prayer incredible !!!
« on: August 02, 2015, 04:28:19 PM »
নামাজের অবিশ্বাস্য ১১ টি উপকারিতা !!!


একজন মুসলমান হিসেবে আমরা সবাই নামাজ পড়ে থাকি কেননা নামাজ বেহেস্তের চাবি কাঠি। তবে নামাজ কি শুধু পরকালেই উপকারে আসে নাকি দুনিয়াতেও রয়েছে এর ব্যাপক উপকারিতা আসুন জেনে নিয় নামাজের অবিশ্বাস্য ১১ টি উপকারিতা ।

১. নামাজে যখন সিজদা করা হয় তখন আমাদের মস্তিস্কে রক্ত দ্রুত প্রবাহিত হয় ফলে আমাদের স্মৃতি শক্তি অনেকবৃদ্ধি পায়।

২. নামাজের যখন আমরা দাড়াই তখন আমাদের চোখ জায়নামাজের সামনের ঠিক একটি কেন্দ্রে স্থির অবস্থানে থাকে ফলে মনোযোগ বৃদ্ধি পায়।

৩. নামাজের মাধ্যমের আমাদের শরীরের একটি ব্যায়াম সাধিত হয়এটি এমন একটি ব্যায়াম যা ছোট বড় সবাই করতে পারে।

৪. নামাজের মাধ্যমে আমাদের মনের অসাধারন পরিবর্তন আসে।

৫. নামাজ সকল মানুষের দেহের কাঠামো বজায় রাখেফলে শারীরিক বিকলঙ্গতা লোপ পায়।

৬. নামাজ মানুষের ত্বক পরিষ্কার রাখে যেমন ওজুর সময় আমাদের দেহের মূল্যবান অংশগুলো পরিষ্কার করা হয় এর ফলে বিভিন্ন প্রকার জীবানু হতে আমরা সুরক্ষিত থাকি।

৭. নামাজে ওজুর সময় মুখমন্ডল ৩ বার ধৌত করার ফল আমাদের মুখের ত্বক উজ্জল হয় এবং মুখের দাগ কম দেখা যায়।

৮. ওজুর সময় মুখমন্ডল যেভাবে পরিস্কার করা হয় তাতে আমাদের মুখে একপ্রকার মেসেস তৈরি হয় ফলে আমাদের মুখের রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি পায় এবং বলিরেখা কমে যায়।

৯. কিশোর বয়সে নামাজ আদায় করলে মন পবিত্র থাকে এর ফলে নানা প্রকার অসামাজিক কাজ সে বিরত থাকে।

১০. নামাজ আদায় করলে মানুষের জীবনী শক্তি বৃদ্ধি পায়।

১১. কেবল মাত্র নামাজের মাধ্যমেই চোখের নিয়ম মত যত্ন নেওয়া হয় ফলে অধিকাংশ নামাজ আদায় কারী মানুষের দৃষ্টি শক্তি বজায় থাকে।

59
ক্রিকেটের যে রেকর্ডগুলো ভাঙতে পারছে না কেউ !!!

শচীন টেন্ডুলকারের ১০০ আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরির রেকর্ডটি ভাঙার কেউ কি আছেন? ছবি: ফাইল ছবি

ক্রিকেট খেলা হচ্ছে সংখ্যাভিত্তিক খেলা। আর সংখ্যার খেলা ক্রিকেটে রেকর্ড ও নিত্য আলোচিত বিষয়। বিশ্ব ক্রিকেটে গত কিছুদিনের রেকর্ড ভাঙার খেলাও এখন একটা খেলায় রূপ নেয়েছে। বিশেষ করে বিগত বছরগুলোতে খেলার সংখ্যা এত বেড়েছে যে রেকর্ড বইয়ে নাম লেখাচ্ছেন অনেক ক্রিকেটার নিত্য নতুন করে। আর রেকর্ড গড়াই হয় ভাঙার জন্য। কিন্তু বিশ্ব ক্রিকেটে এমন অনেক রেকর্ড আছে যেগুলো সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এখনো টিকে রয়েছে । তার কয়েকটির বয়স তো একশও পার করেছে। তবে দেখে নেওয়া যাক এমন কিছু রেকর্ডের কথা-

১. নিঃসঙ্গ শেরপা
এ রেকর্ডের বয়স টেস্ট ইতিহাসের সমান। ইতিহাসের প্রথম টেস্ট খেলতে নেমেই অনেক গুলো রেকর্ড করে ফেলেছিলেন চার্লস ব্যানারম্যান । টেস্ট ইতিহাসের প্রথম বলের মুখোমুখি হয়েছেন তিনি। প্রথম রান নিয়েছেন তিনি। প্রথম শতক ও তাঁর! এসব রেকর্ড তো কারও পক্ষেই ভাঙা সম্ভব নয়। কিন্তু আরেকটি রেকর্ড করেছিলেন চার্লস, ১৩৮ বছর পরও যেটি অধরা রইল সবার জন্য। অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংসের সংগ্রহ ছিল ২৪৫ , যার ১৬৫ রান এসেছিল চার্লসের ব্যাট থেকে। দলের ৬৭ শতাংশ রান কেবল একজন ব্যাটসম্যানের ব্যাট থেকে এসেছে! দলীয় ২৪০ রানের মাথায় ইনজুরির কারণে মাঠ না ছাড়লে রেকর্ডটি আরও বড় হতেই পারত। তবে ততক্ষণে তিনি দলের হয়ে দুই তৃতীয়াংশ রান সংগ্রাহক হয়ে গেছেন। এই রেকর্ড ভাঙতে পারেননি এখনো কেউ।
২. অচেনা ঘাতক
টেস্ট অভিষেকে চমক দেখিয়েছেন অসংখ্য ক্রিকেটার। বিশেষ করে বোলারদের টেস্ট অভিষেকের পারফরম্যান্স তো অধিকাংশ সময় হয় চমক জাগানিয়া। বারবার অচেনা ঘাতকে কাঁটা পড়েছেন অসংখ্য ব্যাটসম্যান । তারপরও অভিষেকে সেরা বোলিংয়ের রেকর্ডের বয়স ১২০ বছর হয়ে গেল। অ্যাডিলেডে ইংল্যান্ড দলের দ্বিতীয় ইনিংসে অ্যালবার্ট এডউইন ট্রট যখন বোলিং করতে এলেন তখনো বোঝা যাইনি কি হতে যাচ্ছে কিছুক্ষণের মধ্যেই। প্রথম ইনিংসে উইকেট শূন্য থাকা এই ডানহাতি দ্বিতীয় ইনিংসে ২৭ ওভার বল করে ৪৩ রানের বিনিময়ে ৮ উইকেট তুলে নেন। অস্ট্রেলিয়ান এই বোলারের রেকর্ড ১২০ বছর পরেও অক্ষুণ্ন রয়েছে । এই রেকর্ড ভাঙার কাছাকাছি কেবল তাঁর স্বদেশি বব মেসি যেতে পেরেছিলেন। তাও সেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে, ৭৭ বছর পর অভিষিক্ত বব ৮ উইকেট নিয়েছিলেন ৫৩ রানের বিনিময়ে।
৩. অচেনা ঘাতক- ব্যাটিং
অভিষেকে ব্যাট করতে নেমে অনেক ব্যাটসম্যান স্নায়ুচাপে ভোগেন বলে শোনা যায়। ইংলিশ ব্যাটসম্যান রেজিন্যাল্ড ফস্টার অবশ্য এই সব স্নায়ুচাপ চাপ-টাপের ধার ধারতেন না। ১৯০৩ সালে সিডনি টেস্টে ব্যাট ৩ উইকেট পরার পর ব্যাট করতে নেমেছিলেন। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে যখন মাঠ ছেড়ে যাচ্ছেন তখন তাঁর নামের পাশে ২৮৭ রান! মাত্র ১৩ রানের জন্য ইতিহাসের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ত্রিশতক হাঁকানোর রেকর্ড হাত ফসকে যায়। সেই সঙ্গে অভিষেকে ত্রিশতক হাঁকানোর অবিস্মরণীয় এক রেকর্ডও হাত ছাড়া করেন তিনি। কিন্তু অভিষেকে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড ১১১ বছর পরেও তাঁর বগলদাবা। অভিষেকে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় দ্বিতীয় স্থান দক্ষিণ আফ্রিকান জ্যাক রুডলফের । বাংলাদেশের সঙ্গে চট্টগ্রামে টেস্ট অভিষেকে ২২২ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি।
৪. রানের পাহাড়
ছোট মাঠ, ভারী ব্যাট আর বোলিংয়ে হাজারো শৃঙ্খল মিলিয়ে ক্রিকেটে এখন ব্যাটসম্যানদের জয়জয়কার। ক্রিকেট মানেই এখন রান আর রান। কিন্তু রানের হিসেবে সবচেয়ে বড় জয়ের রেকর্ডের বয়স কিন্তু প্রায় শতবর্ষ হতে চলেছে। ১৯২৮ সালের ব্রিসবেন টেস্টে ইংল্যান্ড ৬৭৫ রানে অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর পর ৮৭ বছর পার হয়ে গেছে । কিন্তু এই রেকর্ড এখনো ভাঙা যায়নি।
ইনিংসে জেতার রেকর্ডের বয়স অবশ্য একটু কম। আজ থেকে ৭৭ বছর আগে ওভালে ইংল্যান্ড তাঁদের চিরশত্রু অস্ট্রেলিয়াকেই ইনিংস এবং ৫৭৯ রানে হারিয়েছিল। সে রেকর্ডও এখনো অক্ষুণ্ন।
৫. ধারাবাহিকতা
টেস্ট ক্রিকেটের রানের রেকর্ড নিয়ে কথা হবে আর স্যার ডন ব্র্যাডম্যান সেখানে আসবেন না এটি অসম্ভব। ১৯৪৮ সালে ওভাল টেস্টে শেষবারের মতো ব্যাট করতে নামার সময় খুব সহজ একটি সমীকরণ ছিল ব্র্যাডম্যানের সামনে। মাত্র ৪ রান করলেই ক্যারিয়ার শেষ করবেন ১০০ গড় নিয়ে। কিন্তু উইলিয়াম হোলিসের বলে শূন্য রানে ফিরে যান তিনি। তারপরও তাঁর ব্যাটিং গড় দাঁড়ায় ৯৯.৯৪! এরপর ৬৭ বছর হতে চলল, ব্যাটিং গড়ে ব্র্যাডম্যানের ধারে কাছেও কেউ যেতে পারেননি।
ডন ব্র্যাডম্যানের আরেকটি রেকর্ডও এখনো অক্ষুণ্ন। নিজের ক্যারিয়ারে ৮০ ইনিংসে ব্যাট করেছেন , তাঁর ২৯ ইনিংসেই শতক হাঁকিয়েছেন। প্রতি ২.৭৬ ইনিংসে একটি শতরান! এই রেকর্ড ও অক্ষুণ্ন আছে গত ৬৭ বছর ধরে।
৬. অল্প স্বল্প গল্প
টেস্টে সর্বনিম্ন রানে গুটিয়ে যাওয়ার রেকর্ড কোন দলের জানেন? না, বিশ্ব ক্রিকেটে যাদের সামর্থ্য নিয়ে সর্বদা আলোচনা হয়— সেই জিম্বাবুয়ে বা বাংলাদেশ নয়। এই রেকর্ডের মালিক নিউজিল্যান্ড। ৬০ বছর আগে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নিজেদের মাটিতে ২৭ ওভার ব্যাটিং করে ২৬ করতে পেরেছিল। দলীয় সর্বনিম্ন রানের এই রেকর্ড গত ছয় দশক ধরে নিউজিল্যান্ড বহন করছে। গত ষাট বছরে অন্য কোনো দলের ইনিংস ৪০ রানের নিচে গুটিয়ে যায়নি।
এবং শচীন টেন্ডুলকার
ওয়ানডে ও টেস্ট ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। ওয়ানডে ও টেস্ট দুই ক্ষেত্রেই সর্বোচ্চ শতকের মালিক। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৩৪৩৫৭ এবং ঠিক ১০০ টি শতক নিয়ে যে রেকর্ড গড়েছেন ভারতের ‘লিটল মাস্টার’, সেটিও হয়তো এমনই এক রেকর্ডে রূপান্তরিত হচ্ছে। ব্র্যাডম্যানের টেস্ট গড়ের মতো যে রেকর্ড ভাঙার স্বপ্ন দেখা যায় কিন্তু বাস্তবে করে দেখানো প্রায় অসম্ভব। নিকট ভবিষ্যতে এই রেকর্ড ভাঙার কোনো সম্ভাবনা নেই। কে জানে হয়তো ১০০ বছর পরেও যখন ‘যে রেকর্ড অটুট এখনো’ এর তালিকা তৈরি হবে, সেখানে শচীনের নাম জ্বলজ্বল করবে ।

Source : http://www.prothom-alo.com/sports/article/590488/
              আগস্ট ০১, ২০১৫

60
সাকিব–মুশফিকদের প্রেরণা হয়ে আছেন একজন শহীদুর !!

সব প্রথমের আলাদা একটা আবেদন থাকে। আলাদা আবেগ থাকে। স্মৃতির ডানায় ভর করে সেই প্রথমে ফিরে গেলে অপার্থিব আবেশ ভর করে মনে। বাংলাদেশের ক্রিকেটে দারুণ এক প্রথমের সঙ্গে জড়িয়ে তিনি। যে প্রথম চিরদিনই অনুপ্রেরণা হয়ে থেকে যাবে বাংলাদেশের ক্রিকেটে। আজ মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ-সাকিব-সৌম্যরা যত কীর্তি গড়েন, সেগুলোর পথপ্রদর্শক হয়ে থাকেন একজন শহীদুর রহমান। হ্যাঁ, দেশের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচের সর্বোচ্চ স্কোরার তিনি।


শহীদুর রহমান এখন। ছবি: রানা আব্বাস

শহীদুর রহমান নামটি খুব পরিচিত হয়তো নয় এই প্রজন্মের কাছে। আজ থেকে ২৯ বছর আগে ১৯৮৬ সালের ৩১ মার্চ এশিয়া কাপের ম্যাচে ইমরান খান, আবদুল কাদির, ওয়াসিম আকরামদের পাকিস্তানের বিপক্ষে শহীদুরের ব্যাট থেকে এসেছিল সর্বোচ্চ ৩৭ রান। সে সময়কার প্রেক্ষাপট বিচার করুন। দেশের প্রথম ওয়ানডে, প্রতিপক্ষে ইমরান, কাদির, আকরামদের মতো বোলার। দলের ইনিংসই শেষ হয়ে গেছে ৯৪ রানে, সে বিচারে ৩৭ রান কিন্তু অনেক কিছুই। সেদিন সেই বড় ব্যাপারটিই করে দেখিয়েছিলেন এই শহীদুর। বিশ্ব সেরা বোলারদের বিপক্ষে বুক চিতিয়ে লড়ে পথ দেখিয়েছিলেন বাকিদের। পথ দেখিয়েছিলেন আগামী প্রজন্মকেও। দুনিয়াকে জানিয়ে এসেছিলেন এদেশের ক্রিকেটের আগমনী বার্তা। আজ অনেকটুকু পথ এগিয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশের ক্রিকেট শ্রদ্ধাবনত চিত্তে পেছনে ফিরে তাকায় তার শুরুর নায়কদের দিকে।

শুরুর অন্যতম নায়ক শহীদুর রহমানের আবাস চট্টগ্রামে। তাঁর কাছে প্রথম ওয়ানডের স্মৃতিগাথা শুনতে চাইলে বেশ খুশিই হলেন। আমন্ত্রণ জানালেন এমএ আজিজ স্টেডিয়াম-সংলগ্ন নিজের মালিকানাধীন রেস্তোরাঁ রয়েল হাটে। আড্ডার জন্য অসাধারণ সেই রেস্তোরাঁয় বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যায় স্মৃতির ঝাঁপি মেলে দিলেন তিনি। বললেন, শামীম কবির ভাই, রকিবুল ভাই, আশরাফুল ভাইদের হাত ধরেই বাংলাদেশের ক্রিকেটের পথচলার শুরু। এরপর মশালটা এল আমাদের হাতে। পরে আকরাম-আমিনুলদের হাত ঘুরে বর্তমান প্রজন্মের কাছে এটি পেয়েছে পরিপূর্ণতা। আজকের ক্রিকেটের উন্নতি নাকি এক অদ্ভুত ভালো লাগার অনুভূতি ছড়িয়ে দেয় তাঁর নিজের মনে।

২৩ বছর বয়সে ডাক পেয়েছিলেন জাতীয় দলে। তাও আবার ঐতিহাসিক এক মুহূর্তের সঙ্গী হয়ে। শ্রীলঙ্কার মোরাতুয়ায় এশিয়া কাপের ওই ম্যাচটির অংশ হতে পারার গৌরব ছিল অন্যরকমই, দেশের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচ। এর অংশ মানেই ইতিহাসের অংশ হয়ে যাওয়া। রোমাঞ্চও কম ছিল না। নিজেই বললেন, ইমরান খান, জাভেদ মিয়াঁদাদ, আবদুল কাদির, মহসিন খান, মুদাস্‌সর নজররা তখন বিশ্ব ক্রিকেটের প্রতিষ্ঠিত তারকা। সেই দলে ওয়াসিম আকরাম উঠতি তারকা। আমরা খুবই রোমাঞ্চিত ছিলাম এই ম্যাচটা নিয়ে।

সে ম্যাচে ইমরান খান-ওয়াসিম আকরামদের মতো বোলারদের খেলতে এতটুকু বুক কাঁপেনি? কীভাবে ডাকাবুকো সব বোলারদের সামলে সর্বোচ্চ ৩৭ রান করলেন? শহীদের চোখে-মুখে তারুণ্যের অজেয় ভাবটা ফুটে উঠল ভালোভাবেই, ‘ভয় পাব কেন? যদিও ইমরান খানের নেতৃত্বে পাকিস্তান তখন এশিয়ার জায়ান্ট। আমরা পুঁচকে একটা দল। এখন একজন বোলার-ব্যাটসম্যানকে নিয়ে কতভাবে বিশ্লেষণ হয় ম্যাচের আগে। অথচ কোনো ধারণা ছাড়াই সরাসরি ইমরান-ওয়াসিমের মতো বোলারদের সামলাতে হলো। তবে ভেতরে কোনো স্নায়ুচাপ বা ভয় কাজ করেনি। বয়সও কম ছিল। লক্ষ্য ছিল বল আসবে, খেলব। হলে হবে, না হলে নেই। হারানোর যেহেতু কিছুই ছিল না, ভয় পাওয়ারও প্রশ্ন ওঠে না।’ সেদিন ব্যাটিংয়ের সময়ে শহীদকে নাকি কিছুটা স্লেজিং করেছিলেন জাভেদ মিয়াদাঁদ, ‘যখন ব্যাটিং করছিলাম স্লিপ থেকে জাভেদ মিয়াঁদাদ উর্দুতে কিছু বলছিল। তবে ভাষাটা ঠিক বুঝিনি।’

বর্তমান সময়ে একজন উঠতি ক্রিকেটারদের সামনে যেমন আদর্শ হিসেবে থাকেন মাশরাফি-সাকিব-তামিম-মুশফিকরা; তখন শহীদুর রহমানদের সামনে ছিলেন না কেউ। ছিল না তেমন অবকাঠামোগত সুবিধা, অ্যাকাডেমির ব্যবস্থা। ছিল না টিভিতেও অন্য দলের খেলা দেখারও খুব একটা সুযোগ।


বাংলাদেশের প্রথম ওয়ানডে স্কোয়াডে শহীদুর রহমান (দাঁড়ানো বাম দিক থেকে প্রথম)। ছবি: ফাইল ছবি

কঠিন সেই দিনগুলোর কথা যেন জীবন্ত হয়ে উঠল শহীদুর রহমানের চোখে, ‘আশির দশকে ম্যাটিং উইকেটে খেলতাম। আন্তর্জাতিক ম্যাচ তো ম্যাটিং উইকেটে হয় না। আসলে ক্রিকেট খেলতাম শখের বশেই। পড়াশোনার পাশাপাশি সময় কাটাতেই ক্রিকেট চালিয়ে নেওয়া। ফুলটাইম কাজ হিসেবে ক্রিকেটকে বেছে নেওয়া কঠিনই ছিল। সিরিয়াস ক্রিকেটে খেলেছি অনেক পরে এসে।’

খেলোয়াড়ি জীবনে নিয়মিত নামতেন চারে। আক্রমণাত্মক খেলতে ভালোবাসতেন। পাকিস্তানের বিপক্ষে সে ম্যাচে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ স্ট্রাইকরেট ছিল তাঁরই। তবে ইনিংসটি নিয়ে খানিকটা আক্ষেপ শহীদের কণ্ঠে, ‘রক্ষণাত্মক খেলা আমার ধাঁচে ছিল না। ইনিংসটা ফিফটি ছাড়িয়ে যেতে পারত। আগের দিন প্রচণ্ড বৃষ্টি হয়েছিল। সে সময় এখনকার মতো স্টেডিয়ামে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নত ছিল না। আউটফিল্ড ছিল কিছুটা ভেজা, কর্দমাক্ত। আমার ছয়-ছয়টা পুল শট ডিপ মিডউইকেটে পড়ে আটকে গিয়েছিল। ওই পজিশনে কোনো ফিল্ডারও ছিল না। আউটফিল্ড শক্ত থাকলে নিশ্চিত চার। চার গুলো হলে আমার ব্যক্তিগত সংগ্রহটা ৬০-৬৫ রান হয়ে যেতো। হয়তো সেদিনই দেশের হয়ে প্রথম ফিফটিটা হয়ে যায় আমারই।’

স্মৃতিচারণা করতে করতেই শহীদুর জানিয়ে দিলেন অন্যরকম একটি তথ্যও। দেশের হয়ে প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে কোনো ম্যাচ ফি পাননি বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। আইসিসির দেওয়া অ্যাপিয়ারেন্স মানি ৫০ হাজার ডলারের প্রায় পুরোটাই নিজেদের কোষাগারে জমা করেছিল সে সমকার বোর্ড। এটা ছাড়া তাদের কোনো উপায়ও ছিল না। সরকারি অনুদানের দয়ায় চলত সে সময়কার বোর্ড। এশিয়া কাপের ঠিক দুমাস পরই ইংল্যান্ডে আইসিসি ট্রফি খেলতে যাওয়ার কথা ছিল। বোর্ড সেই ৫০ হাজার ডলারের পুরোটাই কাজে লাগিয়েছিল ইংল্যান্ড যাওয়ার খরচ সামলাতে।

শহীদুর রহমান অবশ্য একদিক দিয়ে বেশ ভাগ্যবানই। তিনি নিজেই জানালেন সেই সৌভাগ্যের কথা, ‘দলের অন্য খেলোয়াড়দের কেউই কোনো ম্যাচ ফি পায়নি। তবে সর্বোচ্চ ৩৭ রানের ইনিংসটি খেলায় তৎকালীন বোর্ড সভাপতি কে, জেড ইসলাম আমাকে ৩০০ ডলার দিয়েছিলেন। আমি সেই টাকাটা সবার মধ্যে ভাগ করে দিয়েছিলাম।’

পরের ওয়ানডেতেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে করেছিলেন দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৫ রান। ওই দুটো ওয়ানডের পর আর কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা হয়নি শহীদের। ক্যারিয়ারের ইতি টানতে হয়েছে একটু আগেভাগেই। স্বপ্নের সীমা কেন এতটুকু সীমাবদ্ধ থাকল? দুই সন্তানের জনক, বর্তমানে সফল এ ব্যবসায়ী বললেন, ‘স্বপ্ন বড় হবে কী; দেখার আগেই তো শেষ! আসলে সামনে কোনো লক্ষ্য ছিল না। এখন একজন খেলোয়াড় লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারে। ভাবে, দুই তিন বছর নিয়মিত জাতীয় দলে খেলতে পারলেই কোটি টাকা আয় করা যাবে। আমাদের সময় তা ছিল না। নিজের চলার টাকাটা জোগাড় হলেই খুশি। ক্রিকেট খেলেছি কেবল ভালোবাসা থেকেই। তবে একটা সময় মনে হলো ক্রিকেটে ভবিষ্যৎ গড়া কঠিন। এ কারণে খেলা ছেড়ে ব্যবসায় যুক্ত হলাম। এখন ক্রিকেটকে পৃষ্ঠপোষকতা করি। ক্রিকেটের সঙ্গে নানাভাবেই আছি।’

আলাপ জমে ওঠে দারুণভাবে। বৃষ্টিমুখর বিকেলটা কীভাবে দ্রুত যেন কেটে যায়। সোনালি অতীতের নানা গল্প শেষে শহীদুর রহমানকে উঠতে হয়। ছুটতে হয় সামনের দিকে।

বাংলাদেশের ক্রিকেটও এখন ছুটছে সামনের দিকে। তবে ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা শহীদুর রহমানরা বিস্মৃত হন না কখনোই, তাঁদের বিস্মৃত হওয়া মানে যে নিজেদের শিকড়কেই অস্বীকার করা।

Source: http://www.prothom-alo.com/sports/article/586210/
             জুলাই ২৭, ২০১৫

Pages: 1 2 3 [4] 5 6 ... 8