শিক্ষাক্ষেত্রে নিরব একটা বিপ্লব ঘটে গেছে। খুব ধীরগতিতে অনেক বছর ধরে চললেও গত কয়েকবছরে বেশ একটা বড় পরিবর্তন আমার চোখে পড়লো। ২০১২তে দেশে আসার পর থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজিত বেশ কয়েকটি কনফারেন্সই আমার চোখে পড়লো। বাংলাদেশের জন্য এটা একটা নতুন ইতিবাচক সাংস্কৃতিক পরিবর্তন। টারশিয়ারী শিক্ষা, গ্রীন টেকনোলজি, নবায়নযোগ্য শক্তি, পরিবেশ উন্নয়নসহ তথ্য প্রযুক্তির নানা ক্ষেত্র যেমন কম্পিউওটার ভিশন, কমিউনিকেশান, অ্যান্টেনা প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর নানান গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে, উপস্থাপন করা হচ্ছে এসব কনফারেন্সে, যা বিদেশের মাটিতেই হরহামেশা দেখা যেত। আমাদের ছাত্রবেলায় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কেবল আইসিসিআইটি দেখেই আমরা সন্তুষ্ট ছিলাম। এরপর আমার ভার্সিটি থেকে একটা জাতীয় পর্যায়ের কনফারেন্স করতেই ম্যালা কসরত করতে হয়েছিল। কিন্তু গত দেড় বছরে পাঁচ সাতটা কনফারেন্স হয়ে যেতে দেখলাম, ঢাবিতে, রাবিতে, বুয়েটে, কুয়েটে, ডেফোডিল-এ রূপসী হোটেলেও কেউ কেউ আয়োজন করছেন। এসব কনফারেন্স বিভিন্ন ফলিত বিষয়ের উপরে হলেও পদার্থবিজ্ঞানের মতো মৌলিক বিষয়েরও কনফারেন্স হচ্ছে, হচ্ছে গণিতের উপর কনফারেন্স, হচ্ছে ফটোনিক্সের উপর কনফারেন্স। আর একেকটি কনফারেন্স মানেই অভিজ্ঞ বিশ্বসেরা বিজ্ঞানীদের সাথে, প্রফেসরদের সাথে ক্ষুদে অনভিজ্ঞ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রপর্যায়ের বিজ্ঞানীদের মিলনমেলা। এর পাশাপাশি থাকছে নানান প্রজেক্ট প্রদর্শনী, ওয়ার্কশপের আয়োজন। ছাত্রদের মাঝে বেশ উৎসাহ তৈরী হচ্ছে নতুন নতুন গবেষণা করে সেটিকে প্রকাশ করার। শিক্ষকেরাও নিজেদের গবেষণা ক্যারিয়ারকে উন্নত করতে চেষ্টা করেন নিজের সুপারভাইজড করা কোন থিসিসের কাজকে বা নিজের ব্যক্তিগত গবেষণা এসব কনফারেন্সে প্রকাশ করতে। একেকটি কনফারেন্সের আয়োজনে আয়োজক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এবং ছাত্রদের থাকে অক্লান্ত পরিশ্রম। যাদের গবেষণা প্রকাশিত হয় তাদেরও থাকে অক্লান্ত পরিশ্রম। সবমিলিয়েই একট চমৎকার কনফারেন্স মূর্ত হয়ে উঠে। সত্যিকার অর্থেই বাংলাদেশে সেরকম একটি বুদ্ধিবৃত্তিক নিরব বিপ্লব সাধিত হয়েছে। এ বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত তথ্যপ্রযুক্তির নানাবিষয়ের উপর বুয়েটের এবং ডেফোডিল-এর আয়োজিত আইসিইসিই ২০১৪ এবং আইসিসিআইটি ২০১৪, আছে পরিবেশবিষয়ক সবুজ টেকনোলজি অর্থাৎ নবায়নযোগ্য শক্তির উপর কনফারেন্সের। এসব কনফারেন্সে যে কেউই অংশ নিতে পারবেন, তবে প্রকাশিত হবে মৌলিক একাডেমিক গবেষণা আর রেজিস্ট্রেশন করলে পাবেন কনফারেন্স-এর প্রসিডিংসসহ কিছু উপহার এবং স্পেশাল কনফারেন্স ডিনার (বাংকুয়েট)সহ তিনবেলা খাবারে বাড়তি সুবিধা।

এধরণের কনফারেন্স যত বেশি বেশি হবে ততই গবেষনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। সেদিন আর খুব বেশি দূরে নয়, যেদিন নেচার পত্রিকায় বাংলাদেশী বিজ্ঞানীদের বেশি বেশি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হবে যার গবেষণা হবে কিনা বাংলাদেশের মাটিতেই, বাংলাদেশেরই কোন প্রসিদ্ধ গবেষণাগারে। কৃষিপ্রধান দেশ হিসেবে ধান, পাট, মৎস্য গবেষণাক্ষেত্রে এর সম্ভাবনা বেশি। উচ্চশিক্ষার্থে কোরিয়ায় অবস্থানকালীন দেখেছি তারা এতোদিন যাবত ব্যবহারিক গবেষণার দিকে বেশি জোর দিলেও অধুনা সেমিকন্ডাক্টর, ন্যানোইলেক্ট্রনিক্স, ফাইবার অপটিকস-এর উপর মৌলিক গবেষনা চালানোর চেষ্টা করছে নোবেল পাবার জন্যে। আর সেখানে একেকজন অধ্যাপককে ঈশ্বরের মতো পূজনীয় ভাবা হয়।