Show Posts

This section allows you to view all posts made by this member. Note that you can only see posts made in areas you currently have access to.


Messages - ashraful.diss

Pages: 1 [2] 3 4 ... 15
16

মৃত্যু ঘটলে এই দোয়াটি পড়ুনঃ

{إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ} নিঃসন্দেহে আমরা আল্লাহর জন্য এবং আমরা সবাই আল্লাহর কাছে ফিরে যাব।

اللهُمَّ أْجُرْنِي فِي مُصِيبَتِي ، وَأَخْلِفْ لِي خَيْرًا مِنْهَا

অনুবাদঃ হে আল্লাহ! তিনি আমার কষ্টে আমাকে পুরস্কৃত করেছেন এবং বিনিময়ে আমাকে উত্তম প্রতিদান দিয়েছেন। (তিরমিযী)

মাসআলাঃ যখন দম বাহির হয়ে যায়, তখন মৃত ব্যক্তির চিবুকের নিচ থেকে একটি প্রশস্ত কাপড় নিয়ে মাথার উপর বেঁধে আস্তে আস্তে চোখ বন্ধ করুন এবং সেই সময় এই দোয়াটি পাঠ করুনঃ بسم الله وعلى ملة رسول الله اللهم يسر عليه أمره وسهل عليه ما بعده وأسعده بلقائك واجعل ما خرج إليه خيرا مما خرج عنه.

অনুবাদঃ আমি আল্লাহর নাম দিয়ে শুরু করছি এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দ্বীন দিয়ে শুরু করছি, হে আল্লাহ! এই মৃত ব্যক্তির জন্য তার কাজ সহজ করে দাও এবং তার পরবর্তী অবস্থাগুলোকে তার জন্য সহজ করে দাও এবং তাকে তোমার বরকতময় দৃষ্টি দিয়ে সম্মানিত করো এবং সে যেখান থেকে গেছে (অর্থাৎ পরকালের) সে স্থান থেকে তাকে উত্তম কর (অর্থাৎ পৃথিবী থেকে)। (দুররে মুখতার)

মাসআলাঃ তারপর তার হাত-পা সোজা করে দিন এবং পায়ের আঙ্গুলগুলিকে এক টুকরো কাপড় ইত্যাদি দিয়ে বেঁধে দিন, তারপর তাকে একটি চাদর দিয়ে ঢেকে চার পায়ি বা একটি খাটের ওপর রাখবেন, তাকে মাটিতে ফেলে রাখবেন না, এবং পেটের উপর কোন লম্বা লোহা বা এমন ভারী জিনিস রাখুন যাতে পেট ফুলে না যায়, এমন ব্যক্তিকে যার গোসলের প্রয়োজন হয় এবং ঋতুমতী বা গর্ভাবস্থায় থাকা মহিলাকে তার কাছে আসতে দেবেন না। (মুসাফির আখিরাত, দুররে মুখতার, বেহেশতী জেওর) অতঃপর তার বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনদের জানান যাতে যতটা সম্ভব তার নামাজে অংশ নিতে পারে এবং তার জন্য দোয়া করতে পারে।

মাসআলাঃ যদি পাওয়া যায়, তাহলে সুগন্ধি (আগরবাতি ইত্যাদি) জ্বালিয়ে মৃত ব্যক্তির কাছে রাখুন। (মুসাফির আখিরাত)

মাসআলাঃ গোসলের আগে মৃত ব্যক্তির কাছে কুরআন তিলাওয়াত করা ঠিক নয়। (বেহেশতী জেওর)

মাসআলাঃ মৃত ব্যক্তির কাফন-দাফনের ব্যবস্থায় খুব তাড়াহুড়ো করুন, প্রথমে কবরের ব্যবস্থা করুন, এবং গোসল, কাফন, জানাজা এবং দাফনের সরঞ্জাম সরবরাহ করুন, যেমন আপনার নিজের অনুষ্ঠানে ব্যবহার করা হবে। (বেহেশতী জেওর)

মাসআলাঃ জুমার দিনে কেউ মারা গেলে জুমার নামাজের আগে কাফন দাফন করা সম্ভব হলে তা করতে হবে। শুধু জুমার পর বেশি লোক হবে বলে জানাজা বিলম্বিত করা মাকরূহ। (বেহেশতী গাওহার, ফতোয়ায়ে শামী)

চলবে………………………………………………………………


Source: Own Bengali translation (from Ahkam-E-Mayyyat Urdu Kitab)

17
Islam & Science / মৃত্যুর যন্ত্রণা
« on: July 06, 2024, 11:37:02 AM »

মৃত্যুর যন্ত্রণা

মাসআলাঃ যখন কারো উপর মৃত্যুর প্রভাব দেখা দেয়, তখন তাকে শুইয়ে দিন, এমনভাবে যে কিবলা তার ডান দিকে থাকে এবং মাথাকে সামান্য কিবলার দিকে ঘুরিয়ে দিন, অথবা তার পা কিবলার দিকে করে দিন এবং তার মাথার নিচে বালিশ ইত্যাদি রেখে সামান্য উঁচু করে দিন, এইভাবে কিবলা ফেরানো হবে। (মুসাফির আখিরাত)

কিন্তু যদি অসুস্থ ব্যক্তির কিবলামুখী হতে কষ্ট হয়, তাহলে তাকে তার অবস্থায় ছেড়ে দিন, তারপর তার পাশে বসে কালিমায়ে শাহাদাতের উচ্চারণ এমনভাবে করেন যে কেউ তার পাশে উচ্চ স্বরে বলে: أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَٰهَ إِلَّا ٱللَّٰهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ وأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ এবং তাকে কালিমাহ পড়ার আদেশ দিবেন না, কারণ সেই সময়টি খুব কঠিন, আপনি জানেন না তার মুখ থেকে কী বের হবে। (বেহেশতী জেওর) 

মাসআলাঃ যখন সে একবার কালিমা পড়ে নিবে, তখন চুপ করে থাকবেন, এ চেষ্টা করবেন না যে সর্বদা কালিমা জারি থাকে এবং কালিমা পড়তে পড়তে দম বাহির হয়। কেননা এর অর্থ কেবলমাত্র এতটুকু যে তার মুখ থেকে শেষ কথাটি কালিমা বের হওয়া উচিত। এটা জরুরী নয় যে দম বাহির হওয়া পর্যন্ত কালিমা চালিয়ে যেতে হবে, হ্যাঁ! যদি কালিমা পড়ার পর আবার কেউ দুনিয়ার কথা বলে, তাহলে পুনরায় কালিমা পড়া শুরু করবেন, যখন সে পাঠ করবে তখন আবার  চুপ করে থাকবেন। (বেহেশতী জেওর)

মাসআলাঃ যখন শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে এবং দ্রুত আটকে আটকে চলতে থাকে এবং পা এমনভাবে শিথিল হয়ে যায় যে সে দাঁড়াতে পারে না এবং নাক বাঁকা হয়ে যায় এবং কানপট্টি বসে যায়, তখন মনে করবেন যে, তার মৃত্যুর সময় এসে গেছে, তখন জোরে জোরে কালিমা পড়তে শুরু করবেন। (বেহেশতী জেওর)

মাসআলাঃ এইরকম অবস্থায় নিকটে বসে কেউ সুরা-ইয়াসীন তেলাওয়াত করলে মৃত্যুর কষ্ট কম হয়। অতএব, এইরকম অবস্থায় সুরা-ইয়াসীন নিজে তেলাওয়াত করবেন বা অন্যের দ্বারা তেলাওয়াত করাবেন। (বেহেশতী জেওর)

মাসআলাঃ ঐ সময় এমন কোন কথা বলবেন না, যাতে তার দিল দুনিয়ার দিকে আকৃষ্ট হয়ে যায়, কেননা এখন দুনিয়া থেকে পৃথক হওয়ার এবং আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হওয়ার সময়। এমন কাজ করবেন, এমন কথা বলবেন যাতে দুনিয়া থেকে দিল উঠে আল্লার দিকে ঝুঁকে যায়, মরণোন্মুখ ব্যক্তির কল্যাণ ইহাতেই নিহত। এসময় ছেলেমেয়েকে সম্মুখে আনা কিংবা তার অন্য কোন মুহাব্বতের বস্তুকে কাছে আনা ও এমন কথা বলা যাতে তার মন এদিকে আকৃষ্ট হয়ে যায় এবং তার মুহাব্বত অন্তরে বসে যায়, ইহা বড়ই অন্যায় কথা যে দুনিয়ার মুহাব্বত নিয়ে বিদায় হলে (নাউযুবিল্লাহ) তার অপমৃত্যু হলো। (বেহেশতী জেওর)

মাসআলাঃ প্রাণ বাহির হওয়ার সময় যদি তার মুখ দিয়ে কুফরী বা খারাপ কথা বাহির হয়, সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করবেন না, তা আলোচনাও করবেন না; বরং এটা মনে করবেন হয়ত বেহুঁশীর কারণে বলেছে। মৃত্যু যন্ত্রণার কারণে বেহুশ হয়েছে এবং জ্ঞানহারা অবস্থায় যা কিছু ঘটবে সব মাফ। আল্লাহর দরবারে তার মাগফিরাতের জন্য দোয়া করতে থাকেন। (বেহেশতী জেওর)

চলবে………………………………………………………………


Source: Own Bengali translation (from Ahkam-E-Mayyyat Urdu Kitab)

18

সাকারাতুল মাউত (মৃত্যুর যন্ত্রণা)
   

মৃত ব্যক্তির মুখ, মৃত্যুর সময় কিবলার দিকে ঘুরিয়ে দিন এবং তিনি নিজেই (মৃত্যুর নিকটে) এই দুআ করবেন: اللهم اغفر لي وارحمني وألحقني بالرفيق الأعلى এবং لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ পড়বেন এবং اَللهم أَعِنِّي علٰى غمرَاتِ الموْتِ وَسَكَراتِ المَوْتِ পড়বেন।

অনুবাদঃ “হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমার প্রতি দয়া করুন এবং আমাকে উপরের সাথীদের অন্তর্ভুক্ত করুন। আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই। হে আল্লাহ! মৃত্যুর (এই উপলক্ষের) কষ্টে আমাকে সাহায্য করুন।" (তিরমিযী)

চলবে………………………………………………………………


Source: Own Bengali translation (from Ahkam-E-Mayyyat Urdu Kitab)

19
Ethics / রুপচর্চায় অপচয়
« on: July 03, 2024, 12:25:26 PM »

রুপচর্চায় অপচয়

সাজ-সজ্জা করার ব্যাপারে ইসলামের কোন নিষেধাজ্ঞা নেই কিন্তু এর মধ্যে শরয়ী সীমা অতিক্রম করা এবং নিজের সামর্থের প্রতি লক্ষ্য না রাখা ঠিক নয়। পিতা বা স্বামীর মাথার ঘাম পায়ে ফেলা কষ্টার্জিত পয়সাকে এমন নির্দয়তার সাথে অপচয় করা এবং নতুন নতুন ফ্যাশনের কাপড় ও দামী দামী অলংকার জমানোর পিছনে খরচ করা উচিত নয়। অন্ততঃ এ গুলোর ব্যবহার সে সময় না করা যখন পাশাপাশি অন্যান্য মুসলিম বোনেরা এক মুঠো ভাতের জন্য অধীর আগ্রহে প্রহর গুনতে থাকে।

বর্তমানে মহিলারা বিশেষ করে তরুণীরা বিজাতী সংস্কৃতির অনুঃকরণে এমন সব অযথা খরচ বাড়িয়েছে যা জরুরী নয়। আর জীবন যাপন করাও এর উপর নির্ভরশীল নয়। ফ্যাশনের বাহ্যিক চাকচিক্য এত বৃদ্ধি পেয়েছে যে আয়-উপার্জন যত বেশিই হোক না কেন তাতে প্রয়োজন আর মিটছেনা। তা চরিথার্ত করতে গিয়ে কখনো ঋণের বোঝা বইতে হচ্ছে, ঘৃণিত এই ফ্যাশন ইউরোপিয়ানদের মস্তিস্ক প্রসূত। মুসলিম মহিলাদের কোন মতেই এদের খপ্পরে পড়া ঠিক নয়। এদের অন্ধ অনুসারীদের বাহ্যিক অবস্থা দেখে মনে হবে সুখের বন্যায় ভেসে বেড়াচ্ছে। কিন্তু প্রকৃত ব্যাপার তা নয়। এক দুঃখের সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে, শান্তি ও স্নেহের নাম গন্ধও নেই। অনেকে স্নেহ-মমতার আতিশয্যে মেয়েদেরকে ছোটবেলা থেকেই অতিরিক্ত খরচে অভ্যস্ত করে তোলে। ফলে একটু বড় হয়ে তারা হয়ে যায় ফ্যাশন বিলাসী। বিয়ের পর স্বামীর জন্য হয়ে দাঁড়ায় মস্ত বড় বোঝা। স্বামীর সমস্ত আয়-ইনকাম ফ্যাশন বাজেটে পরিণত হয়। পরিণামে পরস্পারিক মতানৈক্য, অসন্তুষ্টি ও ঝগড়া-বিবাদের সূচনা হয়।

আজকাল মহিলারা সারা দিন-ক্ষণ সাজ-সজ্জার পিছনে লেগে থাকায় তাদের কোরআন তেলাওয়াত করার সুযোগ থাকে না। সময় নেই যিকির-আযকার, দুরুদ ও ইস্তেগফারের। দ্বীনি জ্ঞান চর্চার অবকাশ থাকেনা। ফলে যা হবার তাই হচ্ছে। যেখানে আলো নেই সেখানে অন্ধকার স্থান করে নেয়। অনাবাদী জমি আগাছায় ছেয়ে যায়। তদ্রুপ ধর্মীয় জ্ঞান না থাকায় মন-মস্তিস্ক বিদআত ও কুসংস্কারে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। তাই ভালমন্দ কিছুই দেখা যাচ্ছে না, দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না মানবিক দোষ-ত্রুটি, মনে হচ্ছে সবই বরাবর। এ কারণে প্রকৃত সৌন্দর্য্য কোনটি তাও নির্ধারণ করা যাচ্ছে না। মানুষের প্রকৃত সৌন্দর্য্য অন্তকরণের সুচিন্তা ও পবিত্রতা। যাদের মন ও আত্মার সৌন্দর্য্য ব্যাতিরেকে শুধু পোষাক-আশাক, বেশ-ভূষায় সুসজ্জিত হয় তাদের এ চেষ্টা বৃথা, অর্থহীন।

এখানে প্রয়োজন বা দরকারের দোহাই দেয়া হতে পারে কিন্তু এখানে প্রয়োজনের সংজ্ঞা কি? প্রয়োজন হলো “যার উপর জীবন যাপন নির্ভরশীল এবং যা ছাড়া জীবন চলা কষ্টসাধ্য” অযথা খরচকে প্রয়োজনের তালিকায় গণ্য করা বিচক্ষণতার পরিচয় নয়। সম্মানিতা মা ও বোনেরা! আপনারা যে প্রচলিত ফ্যাশনের পথে পা রেখেছেন এটা কিন্তু সম্ভ্রান্ত মুসলিম মহিলাদের পথ নয় বিজাতীয়দের ফ্যাশনের স্রোতে নিজেদের গা এলিয়ে দেয়া এবং তাদের তালে মত্ত হয়ে নৃত্য করা মুসলিম মহিলাদের আদর্শ হতে পারেনা। মুসলিম মা-বোনদের চাল-চলন আচার-আচরণ ও সাজ-সজ্জা হবে ইসলামী বিধানের অনুকূলে, আল্লাহ তায়ালা ও তার প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নির্দেশিত আওতার ভিতরে।

সুতরাং মহিলাদের জন্য জ্ঞাতব্য যে, কোন প্রকার সাজ-সজ্জা শরীয়ত পরিপন্থী আর কোনগুলো শরীয়ত অনুমোদিত, যেন শরীয়ত বহির্ভূত সাজ-সজ্জা পরিত্যাগ করে শরীয়ত সম্মত যাবতীয় সাজ-সজ্জায় সজ্জিত হয়ে নিজেদের স্বভাব সুলভ চাহিদা পূরণ করা যায়।

এ সকল পদ্ধতি সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা লাভের উদ্দেশ্য নিম্নে কিছুটা বিস্তারিত ভাবে আলোকপাত করা হয়েছে। আশা করি বিষয়গুলো অত্যন্ত মনযোগের সাথে অধ্যয়ন করবেন। এবং সে অনুযায়ী আমলে ব্রতী হবেন।

চলবে.................................................................................

20

যখন মৃত্যুর লক্ষণ দেখা দিতে থাকে

হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: মৃতকে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলে উপদেশ দাও। (সহীহ মুসলিম, মাআরিফুল হাদীস)

হজরত মুআকাল ইবনে ইয়াসার (রা.) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা তোমাদের মৃতদের (নিকটবর্তী রোগীদের) ওপর সূরা ইয়াসিন পাঠ কর।(মাআরিফুল হাদীস, মুসনাদে আহমাদ, সুনানে আবি দাউদ, সুনানে ইবনে মাজাহ)

চলবে………………………………………………………………


Source: Own Bengali translation (from Ahkam-E-Mayyyat Urdu Kitab)

21
Hadith / হাদীস নং ২৩
« on: June 29, 2024, 09:24:38 AM »
হাদীস নং ২৩

অনেক মানুষকে দেখবে, কারও কাছ থেকে কিছু ধার নিলে বা ঋণ নিলে তা পরিশোধ করতে গড়িমসি করে। এটা খুবই মন্দ স্বভাব। ধনী ব্যক্তি এমন করলে সেটা নির্ঘাত যুলুম। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

مَطْلُ الْغَنِيِّ ظُلْمٌ

অর্থঃ ধনী ব্যক্তির (ঋণ আদায়ে) গড়িমসি করা যুলুম। (বুখারী,২২৮৭)

বুঝেছ, বন্ধুরা? তোমরা কখনোই এমন করবে না। কারও কাছ থেকে ধার নিলে সময়মতো পরিশোধ করে দেবে।

চলবে...........................................................................


22
Hadith / হাদীস নং ২২
« on: June 27, 2024, 05:06:48 PM »
হাদীস নং ২২

আল্লাহ সুন্দর। তিনি সবকিছুতে সৌন্দর্য ভালোবাসেন। তিনি সুন্দর সুরে কুর’আন তিলাওয়াত শুনতে পছন্দ করেন। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

زَيِّنُوا الْقُرْآنَ بِأَصْوَاتِكُمْ

অর্থঃ কুরআনকে তোমাদের সুর দিয়ে সৌন্দর্যমণ্ডিত করো। (নাসায়ী,১০১৫;আবূ দাউদ,১৪৬৮)

তোমরাও যখন কুর’আন তিলাওয়াত করবে, তখন তারতীলসহ তিলাওয়াত করবে। এতে আল্লাহ খুশি হবেন।

চলবে.........................................................

23
Hadith / হাদীস নং ২১
« on: June 22, 2024, 12:19:14 PM »
হাদীস নং ২১

মাযলুমের বদ দু’আর ভয়াবহতা তো শুনলে। এবার যুলুমের ভয়াবহতা শুনো। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

 الظُّلْمُ ظُلُمَاتٌ يَوْمَ الْقِيَامَةِ

অর্থঃ যুলুম কিয়ামাতের দিন অন্ধকারের রুপ ধারণ করবে। (বুখারী,২৪৪৭;মুসলিম,২৫৭৯)

অন্ধকারে যেমন পথ খুঁজে পাওয়া যায় না, তেমনি কিয়ামাতের দিন জালিমরা (জাহান্নাম থেকে) বাঁচার কোনো পথ পাবে না। দুনিয়াতে মানুষের ওপর করা জুলুম কিয়ামাতের বিভীষিকাময় দিনে জালিমের জন্য গভীর কালো অন্ধকার হয়ে দেখা দেবে

তাই, আপনারা কখনো কারও সাথে জুলুম করবেন না। অকারণে কাউকে কষ্ট দেবেন না। ঠিক আছে?

চলবে......................................................

24
Hadith / হাদীস নং ২০
« on: June 15, 2024, 11:23:30 AM »
হাদীস নং ২০

আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন, বন্ধুরা? ঈদ মোবারক! আজকে আমরা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি হাদীস শিখব। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

اتَّقِ دَعْوَةَ الْمَظْلُومِ

অর্থঃ মাযলুমের বদ দু’আকে ভয় করো। (বুখারী,২৪৪৮)

মাযলুমের দু’আ আর আল্লাহর মাঝে কোনো পর্দা থাকে না। আল্লাহ মাযলুমের দু’আ কখনো ফিরিয়ে দেন না। তাই নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাযলুমের দু’আকে ভয় করতে বলেছেন,

চলবে............................................................

25
Hadith / হাদীস নং ১৯
« on: June 13, 2024, 12:23:50 PM »
হাদীস নং ১৯

যেকোনো ইবাদাত করার সময় খেয়াল রাখতে হবে, সেটি সুন্নাহ সম্মত কি না। সুন্নাহসম্মত না হলে তা যতই ভালো মনে হোক- ইবাদাত হিসেবে সেটি গ্রহণযোগ্য হবে না। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

كُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ

অর্থঃ প্রত্যেক বিদ’আত-ই ভ্রষ্টতা। (মুসলিম,৮৬৭;আবূ দাউদ,৪৬০৭;ইবনু মাজাহ;৪২)

বিদ’আত হচ্ছে ওইসব নতুন আবিস্কৃত আমল যা কুর’আন-সুন্নাহতে নেই। তাই, ইবাদাত মনে করে কোনো বিদআতে লিপ্ত হওয়া যাবে না। অন্যথায় সাওয়াবের বদলে গুনাহ হবে।

চলবে..................................................................

26
Hadith / হাদীস নং ১৮
« on: June 12, 2024, 02:19:01 PM »
হাদীস নং ১৮

আমরা যত বেশি কথা বলি, ভুল তত বেশি হয়। আর ভুল কথার কারণে গুনাহের সম্ভাবনা তৈরি হয়। কথা কম বললে ভুলও কম হয়। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

مَنْ صَمَتَ نَجَا

অর্থঃ যে চুপ থাকে, সে পরিত্রাণ পায়। (তিরমিযি,২৫০১;মুসনাদু আহমাদ,৬৪৮১)

তাই আপনারাও অপ্রয়োজনে কথা বলবেন না। ভালো কথা ব্যতীত কিছু বলবেন না। অন্যথায় চুপ থাকবেন।

চলবে.....................................................................


27
Hadith / হাদীস নং ১৭
« on: June 11, 2024, 10:40:16 AM »
হাদীস নং ১৭

অহেতুক রাগ করা একটি মন্দ স্বভাব। রাগ মানুষকে ধ্বংস করে দেয়। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

لاَ تَغْضَبْ

অর্থঃ রাগ কোরো না (বুখারী,৬১১৬;তিরমিযি,২০২০)

নবিজির এই অসিয়ত তোমরাও মেনে চলবে। অযথা কারও সাথে রাগ করবে না।

চলবে...............................................................

28

যিলহজ্ব ও যিলহজ্বের প্রথম দশক

আসমান-যমীনের সৃষ্টি অবধি আল্লাহ তাআলা বছরকে বার মাসে বিভক্ত করেছেন। এটি আল্লাহ কতৃর্ক নির্ধারিত। পৃথিবীর সৃষ্টি থেকে এটিই আল্লাহর নিয়ম। এর মধ্য থেকে আল্লাহ চারটি মাসকে করেছেন সম্মানিত ও মহিমান্বিত। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন—

اِنَّ عِدَّةَ الشُّهُوْرِ عِنْدَ اللهِ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا فِيْ كِتٰبِ اللهِ يَوْمَ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضَ مِنْهَاۤ اَرْبَعَةٌ حُرُمٌ

আল্লাহ যেদিন আসমান যমীন সৃষ্টি করেছেন সেদিন থেকেই মাসসমূহের গণনা আল্লাহ তাআলার নিকট তাঁর বিধান মতে বারটি। তন্মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত। (সূরা তাওবা (৯) : ৩৬)

হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে—

إِنّ الزّمَانَ قَدِ اسْتَدَارَ كَهَيْئَتِهِ يَوْمَ خَلَقَ اللهُ السّمَوَاتِ وَالأَرْضَ، السّنَةُ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا، مِنْهَا أَرْبَعَةٌ حُرُمٌ، ثَلاَثٌ مُتَوَالِيَاتٌ: ذُو القَعْدَةِ، وَذُو الحِجّةِ، وَالمُحَرّمُ، وَرَجَبُ مُضَرَ الّذِي بَيْنَ جُمَادَى، وَشَعْبَانَ

নিশ্চয় সময়ের হিসাব যথাস্থানে ফিরে এসেছে, আসমান-যমীনের সৃষ্টির সময় যেমন ছিল (কারণ, আরবরা মাস-বছরের হিসাব কম-বেশি ও আগপিছ করে ফেলেছিল); বার মাসে এক বছর। এর মধ্য থেকে চারটি মাস সম্মানিত। তিনটি মাস ধারাবাহিক— যিলক্বদ, যিলহজ্ব, মুহাররম। আরেকটি হল রজব, যা জুমাদাল আখিরাহ ও শাবানের মাঝের মাস। —সহীহ বুখারী, হাদীস ৪৬৬২

যিলহজ্ব : সম্মানিত চার মাসের শ্রেষ্ঠ মাস

এ চার মাসের মধ্যে যিলহজ্ব মাসের ফযীলত সবচেয়ে বেশি। কারণ, এ মাসেই আদায় করা হয় ইসলামের অন্যতম প্রধান রোকন ও নিদর্শন হজ্ব এবং অপর নিদর্শন ও মহান আমল কুরবানী। এ মাস আল্লাহর কাছে সম্মানিত। এতে রয়েছে এমন দশক, আল্লাহ তাআলা যার কসম করেছেন। বিদায় হজ্বের ভাষণে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যিলহজ্ব মাসকে শ্রেষ্ঠ মাস হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন—

أَلَا وَإِنّ أَحْرَمَ الشُّهُورِ شَهْرُكُمْ هَذَا

জেনে রাখো! সবচেয়ে সম্মানিত মাস হল, তোমাদের এ মাস (যিলহজ্ব)।—সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ৩৯৩১; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১১৭৬২

নেক আমলে অগ্রগামী হওয়ার মাস

আল্লাহ তাআলা নিজ অনুগ্রহে বান্দাদের দান করেছেন ফযীলতপূর্ণ বিভিন্ন দিবস—রজনী। বছরের কোনো কোনো মাস, দিন বা রাতকে করেছেন ফযীলতপূর্ণ ও বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। যাতে এগুলোকে কাজে লাগিয়ে বান্দা ক্ষমা লাভ করতে পারে, নেক আমলে সমৃদ্ধ হতে পারে এবং আল্লাহর প্রিয় হতে পারে। এর মধ্যে যিলহজ্ব মাস অন্যতম প্রধান ফযীলতপূর্ণ মাস। এ মাসের প্রথম দশককে আল্লাহ তাআলা করেছেন বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। এ দিনগুলোতেই হজ্বের মৌলিক আমল সম্পাদিত হয়। দশ যিলহজ্ব সারা বিশ্বের মুসলিমগণ কুরবানী করেন। এ দিনগুলোর নেক আমল আল্লাহ তাআলার নিকট অধিক প্রিয়। হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে—

مَا مِنْ أَيّامٍ الْعَمَلُ الصّالِحُ فِيهَا أَحَبّ إِلَى اللهِ مِنْ هَذِهِ الْأَيّامِ يَعْنِي أَيّامَ الْعَشْرِ، قَالُوا: يَا رَسُولَ اللهِ، وَلَا الْجِهَادُ فِي سَبِيلِ اللهِ؟ قَالَ: وَلَا الْجِهَادُ فِي سَبِيلِ اللهِ، إِلّا رَجُلٌ خَرَجَ بِنَفْسِهِ وَمَالِهِ، فَلَمْ يَرْجِعْ مِنْ ذَلِكَ بِشَيْءٍ

অর্থাৎ আল্লাহর নিকট যিলহজ্বের দশ দিনের নেক আমলের চেয়ে অধিক প্রিয় অন্য কোনো দিনের আমল নেই। সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহর রাস্তায় জিহাদও (এর চেয়ে উত্তম) নয়? তিনি বললেন, না, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদও নয়। তবে হাঁ, সেই ব্যক্তির জিহাদ এর চেয়ে উত্তম, যে নিজের জান-মাল নিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের জন্য বের হয়েছে। অতঃপর কোনো কিছু নিয়ে ঘরে ফিরে আসেনি। —সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ২৪৩৮; সহীহ বুখারী, হাদীস ৯৬৯

আশারায়ে যিলহজ্ব : আল্লাহ কসম করেছেন যে দশ রাতের

আমরা জেনেছি, যিলহজ্ব মাস আশহুরে হুরুম তথা সম্মানিত চার মাসের অন্যতম প্রধান মাস। আবার এ মাসের মধ্যে প্রথম দশক হল প্রধান। এ দশক এতটাই ফযীলতপূর্ণ ও মহিমান্বিত যে, আল্লাহ তাআলা এ দশ রাতের কসম করেছেন। ইরশাদ হয়েছে—

وَ الْفَجْرِ،  وَ لَيَالٍ عَشْرٍ

শপথ ফযরের, শপথ দশ রাত্রির। —সূরা ফাজর (৮৯) : ১-২

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. ও মুজাহিদ রাহ.-সহ অনেক সাহাবী, তাবেঈ ও মুফাসসির বলেন, এখানে ‘দশ রাত্রি’ দ্বারা যিলহজ্বের প্রথম দশ রাতকেই বুঝানো হয়েছে। (তাফসীরে ইবনে কাসীর ৪/৫৩৫)

এ দশককে দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ দিন বলা হয়েছে। জাবির রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন—

أَفْضَلُ أَيّامِ الدّنْيَا أَيّامُ الْعَشْرِ، عَشْر ذِي الْحِجّةِ، قَالَ: وَلَا مِثْلُهُنّ فِي سَبِيلِ اللهِ؟ قَالَ: لَا مِثْلُهُنّ فِي سَبِيلِ اللهِ، إِلّا رَجُلٌ عَفّرَ وَجْهَهُ فِي التّرَابِ
(قال الهيثمي : إسناده حسن ورجاله ثقات)

দুনিয়ার সর্বোত্তম দিনগুলো হল, যিলহজ্বের দশ দিন। জিজ্ঞাসা করা হল, আল্লাহর রাস্তায়ও কি তার সমতুল্য নেই? তিনি বললেন, আল্লাহর রাস্তায়ও তার সমতুল্য নেই। তবে ঐ ব্যক্তি, যার চেহারা ধূলিযুক্ত হয়েছে। অর্থাৎ শাহাদাত লাভ করেছে। —মুসনাদে বাযযার, হাদীস ১১২৮; মুসনাদে আবু ইয়ালা, হাদীস ২০১০; মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৪/৮

সম্মানিত মাস সম্মানিত দশক (গুনাহের মাধ্যমে এর সম্মান বিনষ্ট না করি)

মুমিন তো আল্লাহর দেওয়া বিভিন্ন সুযোগকে গনীমত মনে করে কাজে লাগায়। এসকল ফযীলতপূর্ণ মওসুমে নেক আমলের মাধ্যমে সমৃদ্ধ করে তার আমলের খাতা। কিন্তু কখনো কখনো কারও দ্বারা এমন হয়ে যেতে পারে যে, নেক আমলের তো তাওফীক হল না; কিন্তু গুনাহে কলুষিত হল আমলনামা। এমনটি কখনোই কাম্য নয়। এক কবি বড় সুন্দর বলেছেন—

قوت نيکي نداري بد مکن

নেক আমল করতে যদি না-ও পার, গুনাহে লিপ্ত হয়ো না।

নেক আমল যতটুকু করতে পারি-না পারি;গুনাহের মাধ্যমে যেন এ সম্মানিত দিনগুলোর অসম্মান না করি। এর মাধ্যমে তো আমি নিজেকেই অসম্মানিত করছি। ইবনে রজব হাম্বলী রাহ. ‘লাতাইফুল মাআরিফ’-এ যিলহজ্বের আলোচনায় বলেন—

احذروا المعاصي، فإنها تحرم المغفرة في مواسم الرحمة

রহমতের মওসুমসমূহে গুনাহ থেকে বেঁচে থাকো। কেননা তা ক্ষমা থেকে বঞ্চিত করে। —লাতায়েফুল মাআরেফ, পৃ. ৩৭৯

আর যে আয়াতে আল্লাহ তাআলা চারটি মাসকে সম্মানিত ঘোষণা করেছেন সে আয়াতের শেষে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন—

فَلَا تَظْلِمُوْا فِيْهِنَّ اَنْفُسَكُمْ

(তন্মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত), সুতরাং এ মাসসমূহে তোমরা নিজেদের প্রতি জুলুম করো না। —সূরা তাওবা (৯) : ৩৬

আল্লাহর নাফরমানী নিজের উপর সবচেয়ে বড় জুলুম। কারণ, এর ক্ষতি তো নিজের উপরই আপতিত হবে। সুতরাং গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা এ মাসের প্রথম কাজ, সাথে সাথে নেক আমলেও যত্নবান হওয়া দরকার।

যিকির-তাসবীহে প্রাণবন্ত করি যিলহজ্বের প্রথম দশক

যিকির আল্লাহ তাআলার কাছে অনেক প্রিয় আমল। এ দশকের আমল হিসেবে বিশেষভাবে যিকিরের কথা এসেছে। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন—

مَا مِنْ أَيّامٍ أَعْظَمُ عِنْدَ اللهِ وَلَا أَحَبّ إِلَيْهِ الْعَمَلُ فِيهِنّ مِنْ هَذِهِ الْأَيّامِ الْعَشْرِ، فَأَكْثِرُوا فِيهِنّ مِنَ التّهْلِيلِ وَالتّكْبِيرِ وَالتّحْمِيدِ

আল্লাহ তাআলার নিকট আশারায়ে যিলহজ্বের আমলের চেয়ে অধিক মহৎ এবং অধিক প্রিয় অন্য কোনো দিনের আমল নেই। সুতরাং তোমরা এই দিনগুলোতে বেশি বেশি লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার এবং আলহামদু লিল্লাহ পড়। —মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৫৪৪৬; আদদাআওয়াতুল কাবীর, তবারানী, হাদীস ৫৩৪

এছাড়া যিলহজ্বের এ দশকের বিভিন্ন আমলও প্রাণবন্ত থাকে আল্লাহর যিকিরে। হাজ্বীগণ ইহরাম বাঁধার পর থেকে উঠতে-বসতে, চলতে-ফিরতে তালবিয়ার মাধ্যমে স্মরণ করতে থাকেন আল্লাহকে। জামরায় কংকর নিক্ষেপের সময়ও বলেন— আল্লাহু আকবার। সারা বিশ্বের মুসলিমগণ আইয়ামে তাশরীকে ফরয নামাযের পর তাকবীরে তাশরীকের মাধ্যমে আল্লাহর যিকির করেন। কুরবানীর দিন কুরবানী করার সময় বলেন— বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার। এমনকি হজ্বের আমলসমূহের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন—

إِنّمَا جُعِلَ الطّوَافُ بِالْبَيْتِ وَبَيْنَ الصّفَا وَالْمَرْوَةِ وَرَمْيُ الْجِمَارِ لِإِقَامَةِ ذِكْرِ اللهِ

নিশ্চয়ই বাইতুল্লাহর তাওয়াফ, সাফা-মারওয়ার সায়ী এবং জামারাতে কংকর নিক্ষেপের আমল বিধিবদ্ধ করাই হয়েছে আল্লাহর যিকিরের জন্য। —সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১৮৮৮; জামে তিরমিযী, হাদীস ৯০২

মোটকথা, যিলহজ্বের এ দিনগুলো যেন প্রাণবন্ত থাকে আল্লাহর যিকিরে।

যিলহজ্ব শুরু হলে নখ-চুল না কাটি (আমারও সাদৃশ্য হোক হাজ্বীদের সাথে)

ইহরাম করার পর হাজ্বী সাহেবদের জন্য নখ-চুল কাটাসহ আরও কিছু বিষয় নিষেধ। কিন্তু যারা হজ্বে যাননি তাদের জন্য এ নিষেধাজ্ঞা নেই। তবে যিলহজ্বের প্রথম দশকে নখ-চুল না কাটার মাধ্যমে অন্যরাও সাদৃশ্য অবলম্বন করতে পারে হাজ্বী সাহেবদের সাথে এবং লাভ করতে পারে বিশেষ ফযীলত। হাদীস শরীফে এ আমলের ফযীলত বর্ণিত হয়েছে—

عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ، أَنّ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ قَالَ: إِذَا رَأَيْتُمْ هِلَالَ ذِي الْحِجّةِ، وَأَرَادَ أَحَدُكُمْ أَنْ يُضَحِّيَ، فَلْيُمْسِكْ عَنْ شَعْرِهِ وَأَظْفَارِهِ

উম্মে সালামা রা. থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন যিলহজ্বের দশক শুরু হবে তখন তোমাদের মধ্যে যে কুরবানী করবে সে যেন তার চুল নখ না কাটে। —সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৯৭৭; জামে তিরমিযী, হাদীস ১৫২৩

এই হাদীসের উপর ভিত্তি করে ফকীহগণ কুরবানীকারীর জন্য নখ-চুল না কাটাকে মুস্তাহাব বলেছেন। তাই যিলকদ মাসেই চুল-নখ কেটে যিলহজে¦র জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা চাই। যাতে তা বেশি লম্বা হয়ে না যায়, যা সুন্নতের খেলাফ।

আর যে ব্যক্তি কুরবানী করবে না তার জন্য এ হুকুম প্রযোজ্য কি না— এ ব্যাপারে কেউ কেউ বলেছেন, এ হুকুম কেবলমাত্র কুরবানীকারীদের জন্য প্রযোজ্য। তাদের দলীল পূর্বোক্ত হাদীস। আর কেউ কেউ বলেন, কুরবানী যারা করবে না তাদের জন্যও এ আমল রয়েছে। আব্দুল্লাহ বিন আমর ইবনুল আস রা. থেকে বর্ণিত—

 أَنّ رَسُولَ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ قَالَ لِرَجُلٍ: أُمِرْتُ بِيَوْمِ الْأَضْحَى عِيدًا جَعَلَهُ اللهُ عَزَّ وَجَلّ لِهَذِهِ الْأُمّةِ، فَقَالَ الرّجُلُ: أَرَأَيْتَ إِنْ لَمْ أَجِدْ إِلّا مَنِيحَةً أُنْثَى أَفَأُضَحِّي بِهَا؟ قَالَ: لَا، وَلَكِنْ تَأْخُذُ مِنْ شَعْرِكَ، وَتُقَلِّمُ أَظْفَارَكَ، وَتَقُصّ شَارِبَكَ، وَتَحْلِقُ عَانَتَكَ، فَذَلِكَ تَمَامُ أُضْحِيَّتِكَ عِنْدَ اللهِ عَزّ وَجَلّ

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমাকে কুরবানীর দিবসে ঈদ (পালনের) আদেশ করা হয়েছে, যা আল্লাহ এ উম্মতের জন্য নির্ধারণ করেছেন। এক সাহাবী আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! যদি আমার কাছে শুধু একটি মানীহা থাকে (অর্থাৎ যা শুধু দুধপানের জন্য কাউকে দেওয়া হয়েছে) আমি কি তা কুরবানী করব? নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, না, তবে তুমি চুল, নখ ও মোঁচ কাটবে এবং নাভীর নিচের পশম পরিষ্কার করবে। এটাই আল্লাহর দরবারে তোমার পূর্ণ কুরবানী বলে গণ্য হবে। —সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ২৭৮৯; সুনানে নাসায়ী, হাদীস ৪৩৬৫

এই হাদীসে যেহেতু কুরবানীর দিন চুল-নখ কাটার কথা আছে তাহলে এর আগে না কাটার দিকে ইঙ্গিত বুঝা যায়।

ওলীদ বিন মুসলিম বলেন, আমি মুহাম্মাদ বিন আজলানকে যিলহজ্বের দশকে চুল কাটা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তখন তিনি বললেন, আমাকে নাফে রাহ. বলেছেন—

أَنّ ابْنَ عُمَرَ، مَرّ بِامْرَأَةٍ تَأْخُذُ مِنْ شَعْرِ ابْنِهَا فِي أَيّامِ الْعَشْرِ فَقَالَ: لَوْ أَخّرْتِيهِ إِلَى يَوْمِ النّحْرِ كَانَ أَحْسَنَ

আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. এক নারীর নিকট দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। মহিলাটি যিলহজ্বের দশকের ভেতর তার সন্তানের চুল কেটে দিচ্ছিল। তখন তিনি বললেন, যদি ঈদের দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে তবে বড় ভালো হত। —মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস ৭৫২০

এ সম্পর্কে আরেকটি বর্ণনা হল—

قال مسدد وحدثنا المعتمر بن سليمان التيمي سمعت أبي يقول: كان ابن سيرين يكره إذا دخل العشر أن يأخذ الرجل من شعره، حتى يكره أن يحلق الصبيان في العشر

মুতামির ইবনে সুলাইমান আততাইমী  বলেন, আমি আমার পিতাকে বলতে শুনেছি, ইবনে সীরীন রাহ. যিলহজ্বের দশকে চুল কাটা অপছন্দ করতেন। এমনকি এই দশকে ছোট বাচ্চাদের মাথা মুণ্ডন করাকেও অপছন্দ করতেন। —আলমুহাল্লা, ইবনে হাযম ৬/২৮

এসব দলীলের কারণে কারও কারও  মতে সকলের জন্যই যিলহজ্বে প্রথম দশকে নখ, গোঁফ ও চুল না-কাটা উত্তম। তবে এতে কোনো সন্দেহ নেই, এ বিধানটি কুরবানীদাতার জন্য তাকিদপূর্ণ।

যিলহজ্বের প্রথম নয় দিন রোযা রাখি

অধিকাংশ ফকীহগণ এই নয় দিন রোযা রাখা উত্তম বলেছেন। কারও পক্ষে সম্ভব হলে সে পুরো নয় দিনই রোযা রাখল। কারণ, যিলহজ্বের পুরো দশকের আমলই আল্লাহর কাছে প্রিয়। এ দশককে আমলে প্রাণবন্ত রাখার জন্য রোযার বিকল্প কোনো আমল নেই। কারণ, রোযা আল্লাহর কাছে অত্যধিক প্রিয় আমল। সুতরাং আমাদের যাদের পক্ষে সম্ভব যিলহজ্বের প্রথম দশক তথা নয় যিলহজ্ব পর্যন্ত রোযা রাখতে চেষ্টা করি। হাদীস শরীফে এসেছে—

كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ يَصُومُ تِسْعَ ذِي الْحِجّةِ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম যিলহজ্বের নয়টি দিবস রোযা রাখতেন। —সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ২৪৩৭; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২২৩৩৪; সুনানে কুবরা, বায়হাকী, হাদীস ৮৩৯৩

হাফসা রা. থেকে বর্ণিত আরেকটি বর্ণনায় এসেছে, তিনি বলেন—

أَرْبَعٌ لَمْ يَكُنْ يَدَعُهُنّ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ: صِيَامَ عَاشُورَاءَ، وَالْعَشْرَ، وَثَلَاثَةَ أَيّامٍ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ، وَرَكْعَتَيْنِ قَبْلَ الْغَدَاةِ

চারটি আমল নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো ছাড়তেন না। আশুরার রোযা, যিলহজ্বের প্রথম  দশকের রোযা, প্রত্যেক মাসের তিন দিনের রোযা, ফজরের আগে দুই রাকাত সুন্নত নামায। —সুনানে নাসায়ী, হাদীস ২৪১৫; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ৬৪২২; মুসনাদে আবু ইয়ালা, হাদীস ৭০৪২; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২৬৩৩৯

নয় যিলহজ্বে রোযা রাখি

কারো পক্ষে যদি পুরো নয় দিনই রোযা রাখা সম্ভব হয় তাহলে তো সোনায় সোহাগা। কিন্তু পুরো নয় দিন যদি সম্ভব না হয়, নয় যিলহজ্বের রোযার ফযীলত থেকে যেন কেউ বঞ্চিত না হয়। কারণ, এ দিনের রোযার ফযীলত সম্পর্কে আবু কাতাদা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন—

صِيَامُ يَوْمِ عَرَفَةَ، أَحْتَسِبُ عَلَى اللهِ أَنْ يُكَفِّرَ السّنَةَ الّتِي قَبْلَهُ، وَالسّنَةَ الّتِي بَعْدَهُ

আরাফার দিনের (নয় যিলহজ্বের) রোযার বিষয়ে আমি আল্লাহর কাছে প্রত্যাশা করি যে, (এর দ্বারা) আগের এক বছরের এবং পরের এক বছরের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। —সহীহ মুসলিম, হাদীস ১১৬২

প্রকাশ থাকে যে, উক্ত হাদীসে বর্ণিত ইয়াওমে আরাফা দ্বারা যিলহজ্বের নয় তারিখ উদ্দেশ্য। এই তারিখের পারিভাষিক  নাম হচ্ছে ‘ইয়াওমে আরাফা’। কেননা এই রোযা আরাফার ময়দানের আমল নয়; বরং আরাফার দিন তো হাজ্বীদের জন্য রোযা না রাখাই মুস্তাহাব। হাদীস শরীফে এসেছে—

عَنْ أُمِّ الْفَضْلِ بِنْتِ الْحَارِثِ،أَنّ نَاسًا تَمَارَوْا عِنْدَهَا يَوْمَ عَرَفَةَ، فِي صِيَامِ رَسُولِ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ، فَقَالَ بَعْضُهُمْ: هُوَ صَائِمٌ، وَقَالَ بَعْضُهُمْ: لَيْسَ بِصَائِمٍ، فَأَرْسَلْتُ إِلَيْهِ بِقَدَحِ لَبَنٍ، وَهُوَ وَاقِفٌ عَلَى بَعِيرِهِ بِعَرَفَةَ، فَشَرِبَهُ

উম্মুল ফযল বিনতে হারেছ বলেন, তার নিকট কতক লোক ইয়াওমে আরাফায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রোযার ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করছিল। কেউ কেউ বলছিল, তিনি রোযা আছেন। আর কেউ কেউ বলছিল, তিনি রোযা নেই। উম্মুল ফযল একটি পেয়ালাতে দুধ পাঠালেন। নবীজী তখন উটের উপর ছিলেন। তিনি দুধ পান করলেন। —সহীহ মুসলিম, হাদীস ১১২৩

আরাফার দিন আল্লাহর রাসূল রোযা রাখেননি। একারণে ফকীহগণ হাজ্বীদের জন্য আরাফার দিন রোযা না রাখা উত্তম বলেছেন। আবু কাতাদা রা.-এর হাদীস দ্বারা ইয়াওমে আরাফায় রোযা রাখা মুস্তাহাব প্রমাণিত হয়। সুতরাং বুঝা গেল, আবু কাতাদাহ রা.-এর হাদীসে ‘ইয়াওমে আরাফা’ দ্বারা ৯ যিলহজ্ব অর্থাৎ ঈদের আগের দিনই উদ্দেশ্য। সুতরাং আমাদের দেশের চাঁদের হিসেবে যেদিন নয় তারিখ হয় সেদিনই রোযা রাখা হবে; সৌদির হিসাবে আরাফার দিন অনুযায়ী নয়। উল্লেখ্য, তাকবীরে তাশরীক সংক্রান্ত হাদীসেও ইয়াওমে আরাফা দ্বারা ৯ যিলহজ্বই উদ্দেশ্য। কেননা এ আমলও আরাফার সাথে নির্দিষ্ট কোনো আমল নয়। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন, মাসিক আলকাউসার, জানুয়ারি ২০১৩ ঈ. (দুটি প্রশ্ন ও তার উত্তর : ইয়াওমে আরাফার রোযা ও কুরবানীর সাথে আকীকা)

ইয়াওমে আরাফা : গুরুত্ব ও ফযীলত

এ দিন আল্লাহর কাছে অনেক মহিমান্বিত। এদিনেই আল্লাহ তাআলা আমাদের দ্বীনকে পূর্ণতাদানের ঘোষণা দিয়েছেন এবং বান্দাদের প্রতি তাঁর নিআমতকে পূর্ণ করেছেন। এদিনেই হজ্বের মূল আমল উকূফে আরাফা। কুরআনে কারীমে আল্লাহ এ দিনের কসম করেছেন। এ দিনের দুআ আল্লাহর কাছে শ্রেষ্ঠ দুআ। এ দিনের রোযার মাধ্যমে আল্লাহ বান্দার দুই বছরের গুনাহ মাফ করেন। এদিন আল্লাহ সবচেয়ে বেশি পরিমাণ বান্দাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন।

ইয়াওমে আরাফায় বান্দাকে মুক্তি দেওয়া হয় জাহান্নাম থেকে

আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন—

مَا مِنْ يَوْمٍ أَكْثَرَ مِنْ أَنْ يُعْتِقَ اللهُ فِيهِ عَبْدًا مِنَ النّارِ، مِنْ يَوْمِ عَرَفَةَ، وَإِنّهُ لَيَدْنُو، ثُمّ يُبَاهِي بِهِمِ الْمَلَائِكَةَ، فَيَقُولُ: مَا أَرَادَ هَؤُلَاءِ؟

আরাফার দিনের মত আর কোনো দিন এত অধিক পরিমাণে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হয় না। আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার নিকটবর্তী হন এবং বান্দাদের নিয়ে ফিরিশতাদের সাথে গর্ব করেন। আল্লাহ বলেন, কী চায় তারা? —সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৩৪৮

জাবের রা. থেকে বর্ণিত আরেক বর্ণনায় রয়েছে—

يَنْزِلُ اللهُ إِلَى السّمَاءِ الدُّنْيَا فَيُبَاهِي بِأَهْلِ الْأَرْضِ أَهْلَ السّمَاءِ، فَيَقُولُ: انْظُرُوا إِلَى عِبَادِيْ شُعْثًا غُبْرًا ضَاحِيْن، جَاؤُوا مِنْ كُلِّ فَجٍّ عَمِيقٍ يَرْجُونَ رَحْمَتِي، وَلَمْ يَرَوْا عَذَابِي، فَلَمْ يُرَ يَوْمٌ أَكْثَرُ عِتْقًا مِنَ النَّارِ مِنْ يَوْمِ عَرَفَةَ

আল্লাহ তাআলা নিকটতম আসমানে আসেন এবং পৃথিবীবাসীকে নিয়ে আসমানের অধিবাসী অর্থাৎ ফিরিশতাদের সাথে গর্ব করেন। বলেন, দেখ তোমরা— আমার বান্দারা উস্কোখুস্কো চুলে, ধুলোয় মলিন বদনে, রোদে পুড়ে দূর-দূরান্ত থেকে এখানে সমবেত হয়েছে। তারা আমার রহমতের প্রত্যাশী। অথচ তারা আমার আযাব দেখেনি। ফলে আরাফার দিনের মত আর কোনো দিন এত অধিক পরিমাণে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হয় না। —সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ৩৮৫৩

আরাফার দুআ শ্রেষ্ঠ দুআ (ইয়াওমে আরাফায় যে দুআ-যিকির করেছেন নবীগণ)

যিলহজ্বের দশকের মধ্যে ইয়াওমে আরাফা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এ দিনে দুআ-যিকিরের গুরুত্ব আরও বেশি। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও নবীগণ এ দিনে যে দুআ-যিকির করেছেন তা হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন—

خَيْرُ الدُّعَاءِ دُعَاءُ يَوْمِ عَرَفَةَ، وَخَيْرُ مَا قُلْتُ أَنَا وَالنَّبِيُّونَ مِنْ قَبْلِي: لَا إِلَهَ إِلّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ المُلْكُ وَلَهُ الحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ

শ্রেষ্ঠ দুআ (-যিকির) আরাফার দুআ। এ দিনের দুআ (-যিকির) হিসেবে সর্বোত্তম হল ঐ দুআ, যা আমি এবং আমার পূর্ববর্তী নবীগণ করেছেন। তা হল—

لَا إِلَهَ إِلّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ المُلْكُ وَلَهُ الحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ

(জামে তিরমিযী, হাদীস ৩৫৮৫; শুআবুল ঈমান, বায়হাকী, হাদীস ৩৭৭৮)

আইয়ামে তাশরীক : এ দিনগুলো  পানাহার ও তাকবীর-যিকিরের জন্য

যিলহজ্ব মাসের ১১, ১২ ও ১৩ তারিখকে পরিভাষায় আইয়ামে তাশরীক বলে। আইয়ামে তাশরীক—এর অন্যতম প্রধান আমল হল, আল্লাহর যিকির-তাকবীর। হাজ্বীগণ জামারাতে কংকর নিক্ষেপের সময় বলেন— আল্লাহু আকবার। কুরবানীদাতাগণ কুরবানী করার সময় বলেন— বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার। প্রতি ফরয নামাযের পর হাজ্বীগণসহ সারা বিশ্বের মুসলিম তাকবীরে তাশরীক বলে। এভাবে যিকির—তাকবীরে জীবন্ত থাকে আইয়ামে তাশরীক। কুরআনে কারীমে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন—

وَ اذْكُرُوا اللهَ فِيْۤ اَيَّامٍ مَّعْدُوْدٰتٍ

তোমরা নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহকে স্মরণ কর। —সূরা বাকারা (২) : ২০৩

ইবনে আব্বাস রা. বলেন, এখানে اَيَّامٍ مَّعْدُوْدٰتٍ দ্বারা উদ্দেশ্য— আইয়ামে তাশরীক। (দ্র. সহীহ বুখারী, বাবু ফাদলিল আমাল ফী আইয়ামিত তাশরীক; মারিফাতুস সুনানি ওয়াল আছার, হাদীস ১০৮৭২)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন—

أَيّامُ التّشْرِيقِ أَيّامُ أَكْلٍ، وَشُرْبٍ، وَذِكْرِ اللهِ

আইয়ামে তাশরীক পানাহার ও আল্লাহর যিকিরের জন্য। —মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২০৭২২

তাকবীরে তাশরীক : যে যিকির গুঞ্জরিত হয় পৃথিবীর প্রতিটি জনপদে

তালবিয়া উচ্চারিত হচ্ছে হাজ্বীগণের মুখে, শুধু মক্কায়। কুরবানীদাতার মুখে— বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার। কিন্তু তাকবীরে তাশরীক এমন এক যিকির, যা দ্বারা গুঞ্জরিত হয় মক্কাসহ  পৃথিবীর প্রতিটি জনপদ। এ যিকির উচ্চারিত হয়, প্রতিটি মসজিদে, প্রতিটি মুসলিমের ঘরে; প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের পর, নারী-পুরুষ সকলের মুখে। তাকবীরে তাশরীকের পুরো বাক্যজুড়ে রয়েছে তাওহীদ, আল্লাহর বড়ত্ব ও প্রশংসা—

اللهُ أَكْبَرُ اللهُ أَكْبَرُ لَا إِلَهَ إِلّا اللهُ، وَاللهُ أَكْبَرُ اللهُ أَكْبَرُ وَلِلهِ الْحَمْدُ

৯ যিলহজ্ব ফজর হতে ১৩ যিলহজ্ব আসর পর্যন্ত মোট তেইশ ওয়াক্তের নামাযের পর একবার করে তাকবীরে তাশরীক বলা ওয়াজিব। জামাতে নামায পড়া হোক বা একাকী, পুরুষ বা নারী, মুকীম বা মুসাফির সকলের উপর ওয়াজিব। এমনকি ৯ তারিখ থেকে ১৩ তারিখ আসর পর্যন্ত কোনো নামায কাযা হয়ে গেলে এবং ঐ কাযা এই দিনগুলোর ভেতরেই আদায় করলে সে কাযা নামাযের পরও তাকবীরে তাশরীক পড়বে। পুরুষগণ তাকবীর বলবে উচ্চ আওয়াজে আর নারীগণ নিম্নস্বরে।

আসুন, গোনাহ থেকে বেঁচে থেকে এ মাসের সম্মান রক্ষা করি। নেক আমলের মাধ্যমে এ মাসের যথাযথ কদর করি। তাকবীর-তাসবীহ-যিকিরে প্রাণবন্ত করি এ মাসকে। তাওবা-ইস্তিগফারের মাধ্যমে ধন্য হই ক্ষমা লাভে। একমাত্র আল্লাহকে রাজি-খুশি করার জন্য হজ্ব-কুরবানীসহ অন্যান্য আমল করি। যিলহজ্বের রোযার মাধ্যমে সমৃদ্ধ করি নেক আমলের ভাণ্ডার। আল্লাহ আমাদের তাওফীক দান করুন— আমীন।

29
Hadith / হাদীস নং ১৬
« on: June 10, 2024, 01:43:08 PM »
হাদীস নং ১৬

মুত্তাকী বা পরহেযগার ব্যক্তিরা সর্বাবস্থায় আল্লাহকে ভয় করে। এটাই তাকওয়ার দাবি। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

اتَّقِ اللَّهَ حَيْثُمَا كُنْتَ

অর্থঃ যেখানেই থাকো, আল্লাহকে ভয় করো। (তিরমিযি, ১৯৮৭;মুসনাদু আহমাদ,২১৩৫৪)

বন্ধুরা, আপনারাও সবসময় আল্লাহকে ভয় করবেন। তবেই আপনারা আল্লাহর প্রিয় বান্দা হতে পারবেন।

চলবে.....................................................................


30

পুরুষ কর্তৃক সাজ-সজ্জা গ্রহণ

বিউটি পার্লারে সাজানোর কাজে নিয়োজিত কর্মচারী যদি পুরুষ হয় অথবা সেখানে যদি পুরুষদের অবাধে আনা-গোনা থাকে তাহলে সেখানে মহিলাদের সাজ গ্রহণ সম্পূর্ণ হারাম। তাই বিউটি পার্লারে গিয়ে অন্ততঃ মুসলিম মহিলারা এরুপ নির্লজ্জ ভাবে নামাহরাম (যাদের সাথে পর্দা করা ফরজ) পুরুষ কর্তৃক সুসজ্জিত হতে পারেনা। বরং ঘরের মধ্যেই যথাসাধ্য নিজেকে অলংকৃত ও সুসজ্জিত করা চাই। আর এতেই তাদের জন্য দুনিয়া-আখিরাতের কল্যাণ রয়েছে।

চলবে...................................................

Pages: 1 [2] 3 4 ... 15