Show Posts

This section allows you to view all posts made by this member. Note that you can only see posts made in areas you currently have access to.


Messages - ashraful.diss

Pages: 1 ... 13 14 [15]
211
ইতেকাফের গুরুত্ব ও ফজিলত
           
লাইলাতুল কদরপ্রাপ্তি, গুনাহ থেকে পমাহে রমজানে যেসব আমল দ্বারা বান্দা আল্লাহর নৈকট্যলাভে ধন্য হয়, তার মধ্যে এর শেষ দশকের ইতেকাফ অন্যতম। রমজানের শেষ দশক আগমন করলে রাসুল (সা.) খুব বেশি   ইবাদত-বন্দেগিতে লিপ্ত হয়ে পড়তেন। হজরত    আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, ‘যখন রমজানের শেষ দশক আগমন করত রসুল   (সা.) তাঁর কোমর বেঁধে নিতেন, রাত জাগতেন আর তাঁর পরিবারের সদস্যদেরও জাগাতেন।’ ইবনে খুজাইমা।লাইলাতুল কদরপ্রাপ্তি, গুনাহ থেকে পরিত্রাণ,একাকী সংগোপনে মহান প্রভুর ইবাদত, আত্মিক উন্নতি সাধন, বাকি এগারো মাসের ইবাদতের অনুশীলনসহ অসংখ্য বরকতসমৃদ্ধ আমলের সমন্বয় হলো ইতেকাফ।

ইতেকাফের পরিচয়:

ইতেকাফ শব্দের অর্থ স্থির থাকা, আবদ্ধ থাকা, অবস্থান করা। শরিয়তের পরিভাষায় মাহে রমজানের শেষ ১০ দিন বা যে কোনো দিন দুনিয়াবি সব কাজকর্ম তথা পরিবার-পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে মসজিদে বা ঘরের পবিত্র স্থানে ইবাদতের নিয়তে অবস্থান করাকে ইতেকাফ বলে। আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘তোমরা মসজিদে ইতেকাফরত অবস্থায় স্ত্রীদের সঙ্গে মিলিত হবে না।’ সূরা বাকারা : ১৮৭।

ইতেকাফের শর্তসমূহ:

তেকাফের জন্য কিছু শর্ত রয়েছে। তা হলো— ১. পুরুষ লোক জামে মসজিদে ইতেকাফ করবে আর মহিলারা ঘরের নিভৃত স্থানে ইতেকাফ করবে ২. ইতেকাফের নিয়ত করতে হবে ৩. সর্বদা পাক-পবিত্র থাকতে হবে ৪. রমজানের ইতেকাফকারী রোজাদার হবেন।

ইতেকাফের প্রকারসমূহ :

ইতেকাফ তিন প্রকার— ১. সুন্নত ইতেকাফ : রমজানুল মোবারকের শেষ ১০ দিনের ইতেকাফই সুন্নত। ২১ তারিখের রাত থেকে ঈদুল ফিতরের চাঁদ দেখা পর্যন্ত এই ইতেকাফের সময়। কারণ রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি বছর এ দিনগুলোতেই ইতেকাফ করতেন। এ কারণে একে সুন্নত ইতেকাফ বলা হয়। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই রসুল (সা.) আমৃত্যু রমজানের শেষ দশকে ইতেকাফ করেছেন। এরপর তাঁর স্ত্রীগণ ইতেকাফ করেছেন।’ বুখারি।

২. ওয়াজিব ইতেকাফ : মানতের ইতেকাফ ওয়াজিব। ইবনে উমর (রা.) জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রসুলুল্লাহ! আমি জাহেলী যুগে হারাম শরীফে ইতেকাফের মান্নত করেছিলাম, এখন কী করব? তিনি জবাব দিলেন, তুমি তোমার মানত পূরণ কর। বুখারী। তা ছাড়া সুন্নত ইতেকাফ ভঙ্গ হয়ে গেলে তা কাজা করা ওয়াজিব।

৩. নফল ইতেকাফ : এ ইতেকাফ মানুষ যে কোনো সময় করতে পারে। অর্থাৎ কিছু সময়ের জন্য ইতেকাফের নিয়তে মসজিদে অবস্থান করা। এর জন্য নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই। যতক্ষণ মন চায় করতে পারে। রোজারও প্রয়োজন নেই। এমনকি যখনই মসজিদে প্রবেশ করবে নফল ইতেকাফের নিয়ত করা সুন্নত। এ তিন ধরনের ইতেকাফের ভিন্ন ভিন্ন বিধান আছে। আজ আমরা শুধু সুন্নত ইতেকাফের কিছু বিধান আলোচনা করব।

রমজানের ইতেকাফের হুকুম :

রমজানের সুন্নত ইতেকাফকারীদের ২০ রমজানের সূর্যাস্তের আগে মসজিদের সীমানায় প্রবেশ করতে হবে এবং ২৯ বা ৩০ রমজান পরবর্তী মাস তথা শাওয়ালের চাঁদ দেখে মসজিদ থেকে বের হতে হবে। রমজানের শেষ ১০ দিনের ইতেকাফ সুন্নতে মুয়াক্কাদা আলাল কিফায়া। অর্থাৎ মহল্লার যে কোনো একজন ইতেকাফ করলে পুরো মহল্লাবাসীর পক্ষ থেকে ইতেকাফ আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু মহল্লার একজন ব্যক্তিও যদি ইতেকাফ না করে তবে মহল্লার সবার সুন্নত পরিত্যাগের গুনাহ হবে। ফোতওয়ায়ী শামি।

ইতেকাফের গুরুত্ব ও ফজিলত :

রমজানের শেষ দশকে এ সুন্নত ইতেকাফের অধিক গুরুত্বের কারণ হলো লাইলাতুল কদরের নেকি লাভ করতে হলে ইতেকাফের মাধ্যমেই সহজে করা যায়। কারণ ইতেকাফকারী রমজানের শেষ দশকের সব রজনীতেই আমলে মগ্ন থাকেন। কোনো এক রজনী তো কদর হবেই। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আমি লাইলাতুল কদরের সৌভাগ্য ও এই মহিমা অনুসন্ধানে প্রথম ১০ দিন ও মাঝের ১০ দিন ইতেকাফ করেছি, অবশেষে আমার কাছে একজন ফেরেশতা এসে বলেছে যে, তা শেষ দশকে। কাজেই তোমাদের মধ্যে যারা ইতেকাফ করতে চায় তারা যেন শেষ দশকে ইতেকাফ করে।’ অতঃপর সাহাবায়ে কিরাম তাঁর সঙ্গে শেষ দশকে ইতেকাফ করলেন। মুসলিম।

শবেকদরকে পাওয়া এবং এই পবিত্র রাতের ঘোষিত ফজিলত থেকে উপকৃত হওয়ার জন্য ইতেকাফ থেকে উত্তম আর কোনো উপায় নেই। কারণ আল্লাহতায়ালা কদরের রাতকে নির্দিষ্ট করে দেননি; বরং এর তারিখ গোপন রেখেছেন; যাতে মুসলমানরা রমজানের শেষ ১০ দিনের সব বেজোড় রাতে আমল করতে থাকে। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতসমূহে লাইলাতুল কদর খোঁজ কর।’ বুখারি।

স্বাভাবিকভাবে মানুষের পক্ষে রাতের প্রতিটি মুহূর্ত ইবাদতে নিয়োজিত থাকা সম্ভব হয়ে ওঠে না। কিন্তু ইতেকাফ অবস্থায় যদি রাতে ঘুমিয়েও থাকে, তবু তাকে ইবাদতকারীদের মধ্যে শামিল করা হবে। তখন শবেকদরের প্রতিটি মুহূর্ত ইবাদতে ব্যয় করার ফজিলত অর্জন করবেন। লাইলাতুল কদর তালাশের পাশাপাশি ইতেকাফকারীর জন্য তার আত্মশুদ্ধি হাসিল, আল্লাহর সঙ্গে গভীর সম্পর্ক স্থাপন, পৃথিবীর সবকিছুর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে মাবুদের একচ্ছত্র ইবাদত করার উদ্দেশ্য থাকতে হবে।

হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘ইতেকাফকারী গুনাহ থেকে মুক্ত থাকে। তার সব নেক আমল এমনভাবে লিপিবদ্ধ হতে থাকে, যেভাবে সে নিজে করত।’ ইবনে মাজাহ।

ইতিকাফে বর্জনীয়:

ইতিকাফ অবস্থায় যেসব কাজ বর্জনীয়- ১. ইতিকাফ অবস্থায় বিনা ওজরে মসজিদের বাইরে যাওয়া, ২. দুনিয়াবি আলোচনায় মগ্ন হওয়া, ৩. কোনো জিনিস বেচাকেনা করা, ৪. ব্যবসা-বাণিজ্যের হিসাব-নিকাশ করা, ৫. ওজরবশত বাইরে গিয়ে প্রয়োজনাতিরিক্ত বিলম্ব করা ও ৬. স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করা। এসব কাজ করলে ইতিকাফ ভঙ্গ হয়ে যায়। ইতিকাফ দীর্ঘ সময় ধরে করা উত্তম,বিশেষত মাহে রমজানের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ অবস্থায় থাকায় ‘লাইলাতুল কদর’ বা হাজার মাসের শ্রেষ্ঠতম ভাগ্যের রজনী লাভের সৌভাগ্য হতে পারে। আল্লাহ তাআলা আমাদের পবিত্র মাহে রমজানে মসজিদে ইতিকাফ করার মাধ্যমে গুনাহের পাপরাশি থেকে বেঁচে থেকে অশেষ নেকি লাভের মোক্ষম সুযোগ দান করুন ।


212
সুন্দর ব্যবহার ও আচরণের বিনিময় জান্নাত

মানুষের একটি ভালো কথা যেমন একজনের মন জয় করে নিতে পারে, তেমনি একটু খারাপ বা অশোভন আচরণ মানুষের মনে কষ্ট আসে। সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ হিসেবে আমাদের উচিৎ সর্বদা মানুষের সঙ্গে ভালো ও সুন্দরভাবে কথা বলা। সুন্দর ব্যবহার ও আচার-আচরণ বলতে আমরা বুঝি কারও সঙ্গে ভালোভাবে কথা বলা, দেখা হলে সালাম দেওয়া, কুশলাদি জিজ্ঞেস করা, কর্কশ ভাষায় কথা না বলা, ঝগড়া-ফ্যাসাদে লিপ্ত না হওয়া, ধমক বা রাগের সুরে কথা না বলা, পরনিন্দা না করা, অপমান-অপদস্ত না করা, উচ্চ আওয়াজে কথা না বলা, গম্ভীর মুখে কথা না বলা, সর্বদা হাসিমুখে কথা বলা, অন্যের সুখে সুখী হওয়া এবং অন্যের দুঃখে দুঃখী হওয়া। এছাড়া কারও বিপদে দেখা করে সহানুভূতি ও সহমর্মিতা প্রকাশ করাও সুন্দর আচরণের অন্তর্ভুক্ত। সুন্দর আচরণ আমরা সবাই প্রত্যাশা করি। কিন্তু আমরা প্রায়ই অন্যের সঙ্গে সুন্দর ব্যবহার করতে ভুলে যাই। সামান্য একটু অসতর্কতার কারণে আমাদের আচরণে একজন মানুষ অনেক কষ্ট পেতে পারে।

তাই আমাদের সবসময় সচেতন থাকা উচিত; যাতে আমাদের আচরণে কেউ বিন্দুমাত্র কষ্ট না পায়। যার আচরণ যত বেশি সুন্দর সবাই তাকে তত বেশি ভালোবাসে, সম্মান ও শ্রদ্ধা করে। যার আচরণ ভালো নয় সবাই তাকে ঘৃণা করে ও এড়িয়ে চলে। সুন্দর ব্যবহার সুন্দরভাবে কথা বলা সুন্দর মনের পরিচয় বহন করে। মানুষের একটি ভালো কথা যেমন একজনের মন জয় করে নিতে পারে, তেমনি একটু খারাপ বা অশোভন আচরণ মানুষের মনে কষ্ট আসে। সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ হিসেবে আমাদের উচিৎ সর্বদা মানুষের সঙ্গে ভালো ও সুন্দরভাবে কথা বলা। সুন্দর ব্যবহারের কারণে যে মুখটি প্রিয় হয়, বিপরীতভাবে অসুন্দর ব্যবহার করায় একই মুখটি অপ্রিয় হয়ে যায়। তাই সবার সঙ্গে সুন্দর আচরণ ও সুন্দর ব্যবহার করতে হবে। সুন্দর আচরণের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জিত হয়, পরকালে বিনিময় হিসেবে মেলে অনন্ত সুখের জান্নাত। 

এ প্রসঙ্গে হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন মুমিনের আমলনামায় সুন্দর আচরণের চেয়ে অধিক ভারী আমল আর কিছুই হবে না। যে ব্যক্তি অশ্লীল ও কটু কথা বলে বা অশোভন আচরণ করে, তাকে আল্লাহতায়ালা ঘৃণা করেন। আর যার ব্যবহার সুন্দর, সে তার ব্যবহারের কারণে নফল রোজা ও তাহাজ্জুদের সওয়াব লাভ করবে।-সুনানে তিরমিজি

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, ‘সবচেয়ে বেশি যা মানুষকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে তা হলো- আল্লাহতায়ালার ভয় ও সুন্দর আচরণ। আর সবচেয়ে বেশি যা মানুষকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবে তা হলো- (মানুষের) মুখ এবং লজ্জাস্থান।-সুনানে তিরমিজি

হজরত রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘সুন্দর আচরণই নেক আমল। ’ –সহিহ মুসলিম

হাদিসে রাসূল (সা.) আরও বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে যার আচার-ব্যবহার সুন্দর, সে আমার সবচেয়ে বেশি প্রিয় এবং কিয়ামতের দিন সে আমার সবচেয়ে কাছে থাকবে। সুনানে তিরমিজি

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) আরও ইরশাদ করেন, ‘অশোভন-অশ্লীল কথা ও আচরণের সঙ্গে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই। আর যার আচরণ যত সুন্দর তার ইসলাম তত সুন্দর। মুসনাদে আহমদ

আরেক হাদিসে আছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যার আচার-ব্যবহার সুন্দর, আমি তার জন্য সর্বোচ্চ জান্নাতে একটি বাড়ির নিশ্চয়তা প্রদান করছি। -সুনারে আবু দাউদ

হজরত রাসূল (সা.) আরও বলেছেন, ‘যদি কেউ বিনম্রতা ও নম্র আচরণ লাভ করে, তাহলে সে দুনিয়া ও আখেরাতের পাওনা সব কল্যাণই লাভ করল। আর রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা এবং সুন্দর আচরণ বাড়িঘর ও জনপদে বরকত দেয় এবং আয়ু বৃদ্ধি করে। ’ –আহমদ


213
পবিত্র লাইলাতুল ক্বদর-এর ফযীলত

আর মহান আল্লাহর বাণীঃ ‘‘নিশ্চয়ই আমি নাযিল করেছি এ কুরআন মহিমান্বিত রাত্রিতে। আর আপনি কি জানেন মহিমান্বিত রাত্রি কী? মহিমান্বিত রাত্রি হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। সেই রাত্রে প্রত্যেক কাজের জন্য ফেরেশতাগণ এবং রূহ তাদের প্রতিপালকের আদেশত্রুমে অবতীর্ণ হয়। সেই রাত্রি শান্তিই শান্তি, ফজর হওয়া পর্যন্ত।’’ (আল-কদর [ক্বদর]ঃ ১-৫)

ইবনু ‘উয়ায়না (রহ.) বলেন, কুরআন মাজীদে যে স্থলে (مَا أَدْرَاكَ) উল্লেখ করা হয়েছে আল্লাহ তা‘আলা সে সম্পর্কে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে অবহিত করেছেন। আর যে স্থলে (وَمَا يُدْرِيكَ)  উল্লেখ করা হয়েছে তা তাঁকে অবহিত করাননি। আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি রমাযানে ঈমানের সাথে ও সওয়াব লাভের আশায় সওম পালন করে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ মাফ করে দেয়া হয় এবং যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে, সওয়াব লাভের আশায় লাইলাতুল কদরে রাত জেগে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ মাফ করে দেয়া হয়। সুলায়মান ইবনু কাসীর (রহ.) যুহরী (রহ.) হতে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
 
ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কতিপয় সাহাবীকে স্বপ্নের মাধ্যমে রমাযানের শেষের সাত রাত্রে লাইলাতুল ক্বদর দেখানো হয়।এ শুনে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমাকেও তোমাদের স্বপ্নের অনুরূপ দেখানো হয়েছে। (তোমাদের দেখা ও আমার দেখা) শেষ সাত দিনের ক্ষেত্রে মিলে গেছে। অতএব যে ব্যক্তি এর সন্ধান প্রত্যাশী, সে যেন শেষ সাত রাতে সন্ধান করে।

আবূ সা‘ঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে রমাযানের মধ্যম দশকে ই‘তিকাফ করি। তিনি বিশ তারিখের সকালে বের হয়ে আমাদেরকে সম্বোধন করে বললেনঃ আমাকে লাইলাতুল ক্বদর (-এর সঠিক তারিখ) দেখানো হয়েছিল পরে আমাকে তা ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। তোমরা শেষ দশকের বেজোড় রাতে তার সন্ধান কর। আমি দেখতে পেয়েছি যে, আমি (ঐ রাতে) কাদা-পানিতে সিজদা করছি। অতএব যে ব্যক্তি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে ই‘তিকাফ করেছে সে যেন ফিরে আসে (মসজিদ হতে বের হয়ে না যায়)। আমরা সকলে ফিরে আসলাম (থেকে গেলাম)। আমরা আকাশে হাল্কা মেঘ খন্ডও দেখতে পাইনি। পরে মেঘ দেখা দিল ও এমন জোরে বৃষ্টি হলো যে, খেজুরের শাখায় তৈরি মসজিদের ছাদ দিয়ে পানি ঝরতে লাগল। সালাত শুরু করা হলে আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে কাদা-পানিতে সিজদা করতে দেখলাম। পরে তাঁর কপালে আমি কাদার চিহ্ন দেখতে পাই।
 
আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমাযান মাসের মাঝের দশকে ই‘তিকাফ করেন। বিশ তারিখ অতীত হওয়ার সন্ধ্যায় এবং একুশ তারিখের শুরুতে তিনি এবং তাঁর সংগে যাঁরা ই‘তিকাফ করেছিলেন সকলেই নিজ নিজ বাড়িতে প্রস্থান করেন এবং তিনি যে মাসে ই‘তিকাফ করেন ঐ মাসের যে রাতে ফিরে যান সে রাতে লোকদের সামনে ভাষণ দেন। আর তাতে মাশাআল্লাহ, তাদেরকে বহু নির্দেশ দান করেন, অতঃপর বলেন যে, আমি এই দশকে ই‘তিকাফ করেছিলাম। এরপর আমি সিদ্ধান্ত করেছি যে, শেষ দশকে ই‘তিকাফ করব। যে আমার সংগে ই‘তিকাফ করেছিল সে যেন তার ই‘তিকাফস্থলে থেকে যায়। আমাকে সে রাত দেখানো হয়েছিল, পরে তা ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। (আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন)ঃ শেষ দশকে ঐ রাতের তালাশ কর এবং প্রত্যেক বেজোড় রাতে তা তালাশ কর। আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, ঐ রাতে আমি কাদা-পানিতে সিজদা করছি। ঐ রাতে আকাশে প্রচুর মেঘের সঞ্চার হয় এবং বৃষ্টি হয়। মসজিদে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সালাতের স্থানেও বৃষ্টির পানি পড়তে থাকে। এটা ছিল একুশ তারিখের রাত। যখন তিনি ফজরের সালাত শেষে ফিরে বসেন তখন আমি তাঁর দিকে তাকিয়ে দেখতে পাই যে, তাঁর মুখমন্ডল কাদা-পানি মাখা।

আয়িশাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমাযানের শেষ দশকে ই‘তিকাফ করতেন এবং বলতেনঃ তোমরা রমাযানের শেষ দশকে লাইলাতুল কদর [ক্বদর] অনুসন্ধান কর। আল্লাহ তা‘আলা কুরআনুল কারীমের সূরা ক্বদরে ঘোষণা করেছেন- লাইলাতুল ক্বদর হাজার মাসের (ইবাদাতের) চেয়েও উত্তম। সহীহ শুদ্ধ হাদীস থেকে জানা যায় যে, লাইলাতুল ক্বদর রমাযানের শেষ দশ দিনের যে কোন বিজোড় রাত্রিতে হয়ে থাকে। বিভিন্ন সহীহ হাদীসে ২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯ তারিখে লাইলাতুল ক্বদর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা উল্লেখিত আছে। হাদীসে এ কথাও উল্লেখিত আছে, যে কোন একটি নির্দিষ্ট বিজোড় রাত্রিতেই তা হয় না। (অর্থাৎ কোন বছর ২৫ তারিখে হল, আবার কোন বছর ২১ তারিখে হল এভাবে। আমাদের দেশে সরকারী আর বেসরকারীভাবে জাঁকজমকের সঙ্গে ২৭ তারিখের রাত্রিকে লাইলাতুল ক্বদরের রাত হিসেবে পালন করা হয়। এভাবে মাত্র একটি রাত্রিকে লাইলাতুল ক্বদর সাব্যস্ত করার কোনই হাদীস নাই। লাইলাতুল ক্বদরের সওয়াব পেতে চাইলে ৫টি বিজোড় রাত্রেই তালাশ করতে হবে।
 
বর্তমানে রাত্রি জাগরণের জন্য মসজিদে সকলে সমবেত হয়ে বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলের যে ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে সেটিও নবাবিষ্কৃত কাজ। কারণ আল্লাহর নাবী (সাঃ) তাঁর সময়ে সাহাবীদের নিয়ে মসজিদে জাগরিত হয়ে বর্তমানে প্রচলিত পদ্ধতিতে ইবাদাত না করে নিজ নিজ পরিবারকে জাগিয়ে কিয়ামুল লাইল পালন করতেন

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা তা (লাইলাতুল কদর [ক্বদর]) রমাযানের শেষ দশকে অনুসন্ধান কর। লাইলাতুল কদর [ক্বদর] (শেষ দিক হতে গণনায়) নবম, সপ্তম বা পঞ্চম রাত অবশিষ্ট থাকে।
     
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তা শেষ দশকে, তা অতিবাহিত নবম রাতে অথবা অবশিষ্ট সপ্তম রাতে অর্থাৎ লাইলাতুল কদর [ক্বদর]। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে অন্য সূত্রে বর্ণিত যে, তোমরা ২৪তম রাতে তালাশ কর।

উবাদা ইবনুস সামিত (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে লাইলাতুল কদরের (নির্দিষ্ট তারিখ) অবহিত করার জন্য বের হয়েছিলেন। তখন দু’জন মুসলিম ঝগড়া করছিল। তা দেখে তিনি বললেনঃ আমি তোমাদেরকে লাইলাতুল কদরের সংবাদ দিবার জন্য বের হয়েছিলাম, তখন অমুক অমুক ঝগড়া করছিল, ফলে তার (নির্দিষ্ট তারিখের) পরিচয় হারিয়ে যায়। সম্ভবতঃ এর মধ্যে তোমাদের জন্য কল্যাণ নিহিত রয়েছে। তোমরা নবম, সপ্তম ও পঞ্চম রাতে তা তালাশ কর।

আয়িশাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন রমাযানের শেষ দশক আসত তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর লুঙ্গি কষে নিতেন (বেশি বেশি ইবাদতের প্রস্তুতি নিতেন) এবং রাত্র জেগে থাকতেন ও পরিবার-পরিজনকে জাগিয়ে দিতেন।

214
চোগলখোরের পরিচয় ও পরিণাম

অন্যের কাছে নিজেকে আপন করে তুলতে বা নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করতে বা দুনিয়াবী সুযোগ-সুবিধা লাভে কিংবা ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থ করতে যে মানুষ একজনের কথা অন্যজনের কাছে বলে বেড়ায়; সে হচ্ছে চোগলখোর। ফেতনা-ফাসাদ ও অসন্তষ্টি সৃষ্টির লক্ষে একজনের কথা অন্যজনের কাছে বলে বেড়ানোই হচ্ছে চোগলখুরি। ইসলামে চোগলখুরিকে গোনাহের কাজ এবং হারাম হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। চোগলখুরীর কারণে মানুষের মাঝে ফেতনা সৃষ্টি হয়। পরস্পরের ভালো সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়। পারস্পরিক দুশমনি বৃদ্ধি পায়। হিংসা-বিদ্বেষ ও শত্রুতা সৃষ্টি হয়। এ কারণেই চোগলখোর বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন স্বয়ং প্রিয় নবী।

চোগলখুরির পরিচয়

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, সাবধান! আমি তোমাদেরকে জানাচ্ছি চোগলখুরি কী? এ হচ্ছে কুৎসা রটনা করা; যাতে মানুষের মাঝে বৈরিতার সৃষ্টি হয়। তিনি আরো বলেছেন, কোনো ব্যক্তি সত্য কথা বলতে বলতে সত্যবাদী হিসেবে লিপিবদ্ধ হয়; আবার কেউ মিথ্যা বলতে বলতে মিথ্যাবাদী হিসেবে লিপিবদ্ধ হয়।’

কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা চোগলখোরদের নিন্দা জানিয়েছেন। কুরআনের এ আয়াত থেকেও চোগলখোরের পরিচয় প্রকাশ পায়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এবং অনুসরণ কর না তার; যে কথায় কথায় শপথ করে, যে লাঞ্ছিত। পশ্চাতে নিন্দাকারী; যে একের কথা অপরের কাছে লাগিয়ে বেড়ায়।’ (সুরা ক্বালাম : আয়াত ১০-১১)

হাদিসের অন্য জায়গায় এসেছে, ‘কিয়ামতের দিন সবচেয়ে খারাপ লোকদের দলভুক্ত হিসেবে ঐ ব্যক্তিকে দেখতে পাবে; যে ছিল দু’মুখো- যে এক জনের কাছে এক কথা আরেক জনের কাছে আরেক কথা নিয়ে হাজির হত।’ (মুসলিম)

চোগলখোরের পরিণামচোগলখোরের পরিনাম ভয়াবহ। আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেছেন, ‘চোগলখোর ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (বুখারি, মুসলিম ও মিশকাত)

হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদিন মদিনার একটি খেজুর বাগান দিয়ে যাচ্ছিলেন, সেখানে তিনি দুই ব্যক্তির আহাজারি শুনতে পেলেন। তখন তাদেরকে কবরে শাস্তি দেয়া হচ্ছিল। প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘এ (ব্যক্তি) দু’জনকে বড় কোনো কারণে আযাব দেয়া হচ্ছে না; অবশ্য এগুলো কবিরা গোনাহ। তাদের একজন পেশাব থেকে পবিত্রতা অর্জন করত না; আর অন্যজন চোগলখুরি করে বেড়াত।’ (বুখারি, মুসলিম ও মিশকাত)

বর্তমান সময়ে চোগরখুরির মতো নিকৃষ্ট প্রক্রিয়ার কারণে পারিবারিক জীবনে স্বামী-স্ত্রীতে অশান্তি ও কলহ বিরাজ করছে। কর্মস্থলে কিংবা অফিসে কর্মী এবং দায়িত্বশীলদের মাঝে বিরূপ মনোভাবও তৈরি হচ্ছে এ চোগলখুরির কারণে। যদিও চোগলখোর স্বামী/স্ত্রী, পরিবার বা অফিস-আদালতে সাময়িকভাবে তার কর্মকাণ্ডে কর্তাব্যক্তি বা দায়িত্বশীলদের কাছে আস্থা অর্জন করে থাকে মূলত তা ওই ব্যক্তির জন্য দুনিয়া এবং পরকালে মহাক্ষতির কারণ। দুনিয়াতে সে চোগলখোর হিসেবে হয় লাঞ্ছিত বা ধিকৃত আর পরকালে তার জন্য জান্নাত হারাম হয়ে যায়।

পরিশেষে, চোগলখুরি করা হারাম এবং বড় গোনাহের কাজ। হাদিসের পরিভাষায়ও চোগলখুরি কবিরা গোনাহ এবং জান্নাতের অন্তরায়। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনের সব পর্যায়ে চোগলখুরি পরিহার করা প্রত্যেক মুসলমানের একান্ত কর্তব্য।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে চোগলখুরির মতো ভয়াবহ অপরাধ থেকে হেফাজত করুন। ফেতনা-ফাসাদ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে একজনের কথা অন্যজনের কাছে লাগানোর অভ্যাস থেকে মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন। কুরআন-সুন্নাহর বিধান মোতাবেক জীবন পরিচালনা করার তাওফিক দান করুন। আমিন!

215
বাকপটু মুনাফিক কারা? এদের সম্পর্কে ইসলাম যা বলে

আজকাল ‘ম্যানেজ’ করে চলতে পারা, ‘ভাঁজ’ দিয়ে থাকতে পারা, ন্যায়নীতি ও আদর্শ বিসর্জন দিয়ে কর্তা ও বসের মনোভাব উদ্ধার করে চলা, নিজের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য অপরকে কৌশলে প্রতারণায় ফেলা ইত্যাদিকে ‘বুদ্ধিমত্তা’, ‘দূরদর্শিতা’ ও ‘বিচক্ষণতা’ ভাবা হয়। অথচ এই অতি চালাক মানুষগুলোকে হাদিসের ভাষায় বাকপটু মুনাফিক বলা হয়েছে। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ‘উম্মতের ব্যাপারে আমার যে বিষয়গুলোকে ভয় হয়, তন্মধ্যে ভয়ংকর হচ্ছে বাকপটু মুনাফিক। কোনো মানুষ সৃষ্টিগতভাবে চালাক-চতুর হতেই পারে; কিন্তু তা যদি ব্যবহৃত হয় অন্যকে অন্যায়ভাবে বিপদে ফেলে দেওয়ার জন্য, তা ওই মানুষের জন্য অভিশাপ হয়ে ওঠে।

রাসুলুল্লাহ (সা.) এমন মানুষদের অভিশাপ দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘অভিশপ্ত সে, যে কোনো মুমিনের ক্ষতি করে অথবা তার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে।’ (তিরমিজি, হাদিস :
১৯৪০)

কারণ এ ধরনের লোকজন খুবই ভয়ংকর হয়। তারা হাসিমুখে যেকোনো সময় যে কারো বাঁশি বাজিয়ে দেয়। তাই পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ এসব মুনাফিকের সঙ্গে নয়, বরং সত্যবাদীদের সঙ্গে থাকতে বলেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সঙ্গে থাকো।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ১১৯)

পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ মুনাফিকের পরিচয় এভাবে দিয়েছেন, ‘তারা মুখে তোমাদের সন্তুষ্ট রাখে; কিন্তু তাদের হৃদয় তা অস্বীকার করে।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ৮)

অর্থাৎ মুনাফিকের সব সময় মুখে এক, অন্তরে আরেক থাকবে। পবিত্র হাদিস শরিফে মুনাফিকের পরিচয় দিতে রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, মুনাফিকের চিহ্ন তিনটি। (১) যখন কথা বলে, মিথ্যা বলে। (২) যখন অঙ্গীকার করে, ভঙ্গ করে। (৩) আর যখন তার কাছে কোনো আমানত রাখা হয়, সে তার খিয়ানত করে। (বুখারি, হাদিস : ৩৩)

অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, চারটি স্বভাব যার মধ্যে পাওয়া যাবে, সে খাঁটি মুনাফিক এবং যার মধ্যে তার একটি দেখা যাবে তার মধ্যে মুনাফিকের একটি স্বভাব থাকবে,যে পর্যন্ত না সে তা পরিহার করবে—(১) যখন তার কাছে কোনো আমানত রাখা হয়, সে তা খিয়ানত করে; (২) যখন কথা বলে, মিথ্যা বলে; (৩) যখন অঙ্গীকার করে, ভঙ্গ করে এবং (৪) যখন কারো সঙ্গে ঝগড়া-বিবাদ করে তখন সে অশ্লীলভাষী হয় (অশ্লীল গালমন্দ করে)। (মিশকাত, হাদিস : ৫৬)

তাই নিজের অবস্থানকে পাকাপোক্ত করার জন্য কিংবা সামান্য কিছু অর্থের জন্য এ ধরনের কাজে লিপ্ত হওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ বাহ্যিকভাবে যদিও মনে হবে যে এসব কাজ করলেই নিজের ক্ষমতা বেড়ে যাচ্ছে; কিন্তু বাস্তবে মহান আল্লাহর কাছে এ ধরনের লোক নিকৃষ্ট থেকে নিকৃষ্ট অবস্থানে চলে যাচ্ছে। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, সবচেয়ে নিকৃষ্ট মানুষ হলো দুমুখো মানুষ। এর কাছে আসে এক চেহারায়, ওর কাছে যায় আরেক চেহারায়। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৮০৬৯)

216
পবিত্র মাহে রমযানের রোযার ফযিলত

মহাগ্রন্থ আল কুরআনুল কারীমে মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন-

يٰآاَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا كُتِبَ عَلَيْکُمُ الصِّيَامُ کَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِکُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَۙ.

হে মু'মিনগণ! তোমাদের জন্য রোযার বিধান দেওয়া হল, যেমন বিধান দেওয়া হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীগণকে, যাতে তোমরা মুত্তাকী হতে পার- (সূরা বাকারা ১৮৩ আয়াত৷)

আল্লাহ তায়ালা অন্য আয়াতে ইরশাদ করেন-

فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ ؕ

সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এই মাস পাবে তারা যেন অবশ্যয়ই এই মাসে রোযা পালন করে। (সূরা বাকারা ১৮৫ আয়াত৷)

হাদীস শরীফে বর্নিত হয়েছে-

عَنِ ابْنِ عُمَرَ ـ رضى الله عنهما ـ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ بُنِيَ الإِسْلاَمُ عَلَى خَمْسٍ شَهَادَةِ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ، وَإِقَامِ الصَّلاَةِ، وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ، وَالْحَجِّ، وَصَوْمِ رَمَضَانَ ‏

হযরত ইবনে উমার রাযিঃ থেকে বর্ণিত৷ তিনি বলেন, হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ ইসলাম ধর্ম পাঁচটি ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত৷ ১৷ এই সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নেই এবং নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও তাঁর প্রেরিত রসূল। ২৷ সালাত কায়িম করা। ৩৷ যাকাত আদায় করা। ৪৷ হাজ্জ সম্পাদন করা৷ ৫৷ রমযানের রোযা পালন করা। সনদ সহীহ৷ (সহীহুল বুখারী ৮, ৪৫১৪ হাদীস৷ সহীহু মুসলিম ১৬ হাদীস৷ সুনানে তিরমিযী ২৬০৯, ৫০০১ হাদীস৷ সুনানে আবূ দাউদ ৪৭৮৩, ৫৬৩৯, ৫৯৭৯, ৬২৬৫ হাদীস৷ মুসনাদে আহমাদ ৬০২২, ৬৩০৯ হাদীস৷ রিয়াদুস সলিহীন ১২১৪ হাদীস৷)

হাদীস শরীফে আরও বর্নিত হয়েছে-

وَعَنْ سَلْمَانَ الْفَارِسِىِّ ، قَالَ : خَطَبَنَا رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ فِى اٰخِرِ يَوْمٍ مِنْ شَعْبَانَ فَقَالَ : يَا أَيُّهَا النَّاسُ! قَدْ أَظَلَّكُمْ شَهْرٌ عَظِيمٌ، شَهْرٌ مُبَارَكٌ، شَهْرٌ فِيهِ لَيْلَةٌ خَيْرٌ مِنْ أَلْفِ شَهْرٍ، جَعَلَ اللهُ تَعَالٰى صِيَامَه فَرِيضَةً، وَقِيَامَ لَيْلِه تَطَوُّعًا، مَنْ تَقَرَّبَ فِيهِ بِخَصْلَةٍ مِنَ الْخَيْرِ كَانَ كَمَنْ أَدّٰى فَرِيضَةً فِيمَا سِوَاهُ، وَمَنْ أَدّٰى فَرِيضَةً فِيهِ كَانَ كَمَنْ أَدّٰى سَبْعِينَ فَرِيضَةً فِيمَا سِوَاهُ. وَهُوَ شَهْرُ الصَّبْرِ، وَالصَّبْر ثَوَابُهُ الْجَنَّةُ، وَشَهْرُ الْمُوَاسَاةِ، وَشَهْرٌ يُزْدَادُ فِيهِ رِزْقُ الْمُؤْمِنِ، مَنْ فَطَّرَ فِيهِ صَائِمًا كَانَ لَه مَغْفِرَةً لِذُنُوْبِه، وَعِتْقَ رَقَبَتِه مِنَ النَّارِ، وَكَانَ لَه مِثْلُ أَجْرِه مِنْ غَيْرِ أَنْ يَنْقُصَ مِنْ أَجْرِه شَىْءٌ» قُلْنَا : يَا رَسُوْلَ اللّٰهِ! لَيْسَ كُلُّنَا نَ جِدُ مَا نُفَطِّرُ بِهِ الصَّائِمَ. فَقَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ : «يُعْطِى اللّٰهُ هٰذَا الثَّوَابَ مَنْ فَطَّرَ صَائِمًا عَلٰى مَذْقَةِ لَبَنٍ، أَوْ تَمْرَةٍ أَوْ شَرْبَةٍ مِنْ مَاءٍ، وَمَنْ أَشْبَعَ صَائِمًا؛ سَقَاهُ اللّٰهُ مِنْ حَوْضِىْ شَرْبَةً لَا يَظْمَأُ حَتّٰى يَدْخُلَ الْجَنَّةَ. وَهُوَ شَهْرٌ أَوَّلُه رَحْمَةٌ، وَأَوْسَطُه مَغْفِرَةٌ، وَاٰخِرُه عِتْقٌ مِنَ النَّارِ. وَمَنْ خَفَّفَ عَنْ
مَمْلُوكِه فِيهِ؛ غَفَرَ الله لَه وَأعْتَقَه مِنَ النَّارِ

হযরত সালমান ফারসী রাযিঃ থেকে বর্ণিত:

তিনি বলেন, শা‘বান মাসের শেষ দিনে হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে উদ্দেশ্য করে ভাষণ দিলেন। হে লোক সকল! তোমাদের সামনে একটি বরকতময় ও মহিমান্বিত মাস ছায়া স্বরুপ আগমন করতেছে। যে মাসের মধ্যে শবে কদর নামে একটি রাত রয়েছে, যা হাজার মাস হতেও উত্তম। আল্লাহ তায়ালা এ মাসের রোযা তোমাদের উপর ফরয করেছেন আর কিয়ামুল লাইল তথা তারাবীহ আদায়কে পুন্যের কাজ হিসেবে নির্ধারণ করেছেন৷ যে ব্যক্তি এ মাসে একটি নফল কাজ করবে, সে যেন অন্য মাসের একটি ফরয আদায় করল। আর যে ব্যক্তি এ মাসে একটি ফরয আদায় করেন, সে যেন অন্য মাসের সত্তরটি ফরয আদায় করল। এ মাস সবরের মাস, আর সবরের প্রতিদান হলো জান্নাত। এ মাস সহমর্মিতার। এ মাসে মু’মিনদের রিযিক বৃদ্ধি করা হয়। যে ব্যক্তি এ মাসে কোন রোযাদারকে ইফতার করাবে, এ ইফতার তার গুনাহ মাফের কারণ হবে এবং জাহান্নামের অগ্নি থেকে মুক্তির উপায় হবে এবং রোযাদারের সমতূল্য সাওয়াব পাবে৷ অথচ রোযাদারের সাওয়াব বিন্দুমাত্রও কমানো হবেনা। আমরা বললামঃ হে আল্লাহর রসূল! আমাদের সকলের তো এ সামর্থ নেই যে, রোযাদারকে পেটভরে ইফতার করাবে! তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ সাওয়াব আল্লাহ তায়ালা ঐ ইফতার পরিবেশনকারীকেও প্রদান করবেন, যে একজন রোযাদারকে এক চুমুক দুধ, এক ঢোক পানি অথবা একটি খেজুর দিয়ে ইফতার করায়। আর যে ব্যক্তি কোন রোযাদারকে পেট ভরে খাওয়ায়ে পরিতৃপ্ত করবে, আল্লাহ তায়ালা তাকে আমার হাওযে কাওসার থেকে এভাবে পানিপান করায়ে পরিতৃপ্ত করবেন, যার পর সে জান্নাতে প্রবেশ করার পূর্বে আর পিপাসার্ত হবেনা। এমনকি সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। এটা এমন এক মাস যার প্রথম অংশে রহমত ও মধ্য অংশে মাগফিরাত এবং শেষাংশে জাহান্নাম থেকে নাজাত। যে ব্যক্তি এ মাসে তার অধিনস্তদের কাজের বোঝা হালকা করে দেবে, আল্লাহ তায়ালা তাকে ক্ষমা করে দিবেন এবং তাকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দেবেন। সনদ যঈফ৷ তবে হাদীসের প্রতিটি বিষয় বিভিন্ন সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত৷ (সহীহ ইবনে খুযায়মাহ ১৮৮৭ হাদীস৷ সুনানে কুবরা বায়হাকী ৩৩৩৬ হাদীস৷ মিশকাতুল মাসাবীহ ১৯৬৫ হাদীস৷ সহীহ আত তারগীব ৫৮৯ হাদীস৷ আহকামুস সিয়াম ১৪ পৃষ্ঠা৷)

হাদীস শরীফে আরও বর্নিত হয়েছে-

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ ‏ "‏ كُلُّ عَمَلِ ابْنِ آدَمَ يُضَاعَفُ لَهُ الْحَسَنَةُ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا إِلَى سَبْعِمِائَةِ ضِعْفٍ ‏.‏ قَالَ اللَّهُ سُبْحَانَهُ إِلاَّ الصَّوْمَ فَإِنَّهُ لِي وَأَنَا أَجْزِي بِهِ ‏"‏ ‏.‏

হযরত আবূ হুরায়রাহ রাযিঃ থেকে বর্ণিত৷ তিনি বলেন, হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ আদম-সন্তানের প্রতিটি কাজের সওয়াব দশ থেকে সাতশত গুন পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ তবে রোযা ব্যতীত। কেননা রোযা শুধু আমার জন্যই এবং আমিই তার প্রতিদান প্রদান করবো৷ সনদ সহীহ৷ (সুনানে ইবনে মাজাহ ৩৮২৩,১৬৩৮ হাদীস৷ সহীহুল বুখারী ১৮৯৪, ১৯০৪, ৫৯২৭,৭৪৯২, ৭৫৩৮, হাদীস৷ সহীহু মুসলিম ১১৫১ হাদীস৷ সুনানে তিরমিযী ৭৬৪ হাদীস৷ সুনানে নাসায়ী ২২১৫, ২২১৬, ২২১৭, ২২১৮, ২২১৯ হাদীস৷ মুসনাদে আহমাদ ৭৪৪২, ৭৬৩৬, ২৭৩৪৫, ২৭২৪৮ হাদীস৷)

হাদীস শরীফে আরও বর্নিত হয়েছে-

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنْ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ إِذَا كَانَتْ أَوَّلُ لَيْلَةٍ مِنْ رَمَضَانَ صُفِّدَتْ الشَّيَاطِينُ وَمَرَدَةُ الْجِنِّ وَغُلِّقَتْ أَبْوَابُ النَّارِ فَلَمْ يُفْتَحْ مِنْهَا بَابٌ وَفُتِحَتْ أَبْوَابُ الْجَنَّةِ فَلَمْ يُغْلَقْ مِنْهَا بَابٌ وَنَادَى مُنَادٍ يَا بَاغِيَ الْخَيْرِ أَقْبِلْ وَيَا بَاغِيَ الشَّرِّ أَقْصِرْ وَلِلهِ عُتَقَاءُ مِنْ النَّارِ وَذَلِكَ فِي كُلِّ لَيْلَةٍ

হযরত আবূ হুরায়রা রাযিঃ থেকে বর্ণিত৷ হযরত রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ যখন রমজান মাসের প্রথম রাত আসে, তখন শয়তান ও অভিশপ্ত জিনদের শৃংখলিত করা হয় এবং জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়, তার একটি দরজাও খোলা হয়না৷ অনুরুপভাবে জান্নাতের দরজাসমূহ খোলে দেয়া হয়, এর একটি দরজাও বন্ধ হয়না এবং একজন ঘোষক ডেকে বলেনঃ হে সৎকর্মপরায়ণ ব্যক্তি! অগ্রসর হও!! হে অসৎকর্মপরায়ণ ব্যক্তি! থেমে যাও!! আর আল্লাহ তায়ালা রমযানের প্রতিটি রাতে অসংখ্য লোককে জাহান্নাম থেকে নাজাত দান করেন। সনদ সহীহ৷ (সুনানে ইবনে মাজাহ ১৬৪২ হাদীস৷ সহীহুল বুখারী ১৮৯৮, ১৮৯৯, ৩২৭৭ হাদীস৷ সহীহু মুসলিম ১০৭৯ হাদীস৷ সুনানে তিরমিযী ৬৮২ হাদীস৷ সুনানে নাসায়ী ২০৯৭ হাদীস৷ সুনানে দারেমী ১৭৭৫ হাদীস৷ মুসনাদে আহমাদ ৭১০৮, ৭৭২৩ হাদীস৷)

হাদীস শরীফে আরও বর্নিত হয়েছে-

وَعَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ : مَنْ صَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهٗ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِه. وَمَنْ قَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَه مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِه. وَمَنْ قَامَ لَيْلَةَ الْقَدْرِ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهٗ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِه.

হযরত আবূ হুরায়রাহ রাযিঃ থেকে বর্ণিত৷ তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সাওয়াব লাভের আশায় রমাযান রমজানের রোযা পালন করবে, তার পুর্বের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। আর যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সাওয়াব লাভের আশায় রমযানে ‘ইবাদাতে রাত কাটাবে, তারও পুর্বের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। আর যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সাওয়াব লাভের আশায় লায়লাতুল কদরে ‘ইবাদাতে কাটাবে তারও পুর্বের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। সনদ সহীহ৷ (মিশকাতুল মাসাবীহ ১৯৫৮ হাদীস৷ সহীহুল বুখারী ৩৮, ১৮০২, ১৯১০, ২০১৪ হাদীস৷ সহীহু মুসলিম ৭৬০ হাদীস৷ সুনানে আবূ দাউদ ১৩৭২ হাদীস৷ সুনানে নাসায়ী ২২০৫ হাদীস৷ সুনানে ইবনে মাজাহ ১৬৪১ হাদীস৷ মুসনাদে আহমাদ ৭১৭০ হাদীস৷ সুনানুল কুবরা বায়হাক্বী ৮৫০৬ হাদীস৷)

হাদীস শরীফে আরও বর্নিত হয়েছে-

وَعَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ : فِى الْجَنَّةِ ثَمَانِيَةُ أَبْوَابٍ مِنْهَا : بَابٌ يُسَمَّى الرَّيَّانَ لَا يَدْخُلُه إِلَّا الصَّائِمُوْنَ.

হযরত সাহল ইবনে সা‘দ রাযিঃ থেকে বর্ণিত৷ তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জান্নাতের আটটি দরজা রয়েছে। এর মধ্যে ‘রইয়্যান’ নামে একটি দরজা রয়েছে। সিয়াম পালনকারীগণ ব্যতীত এ দরজা দিয়ে অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। সনদ সহীহ৷ (মিশকাতুল মাসাবীহ ১৯৫৭ হাদীস৷ সহীহুল বুখারী ৩২৫৭ হাদীস৷ সুনানুল কুবরা বায়হাক্বী ৮৫২২ হাদীস৷)

হাদীস শরীফে আরও বর্নিত হয়েছে-

عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَقَى الْمِنْبَرَ، فَلَمَّا رَقَى الدَّرَجَةَ الْأُولَى قَالَ: «آمِينَ» ، ثُمَّ رَقَى الثَّانِيَةَ فَقَالَ: «آمِينَ» ، ثُمَّ رَقَى الثَّالِثَةَ فَقَالَ: «آمِينَ» ، فَقَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ، سَمِعْنَاكَ تَقُولُ: «آمِينَ» ثَلَاثَ مَرَّاتٍ؟ قَالَ: " لَمَّا رَقِيتُ الدَّرَجَةَ الْأُولَى جَاءَنِي جِبْرِيلُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: شَقِيَ عَبْدٌ أَدْرَكَ رَمَضَانَ، فَانْسَلَخَ مِنْهُ وَلَمْ يُغْفَرْ لَهُ، فَقُلْتُ: آمِينَ. ثُمَّ قَالَ: شَقِيَ عَبْدٌ أَدْرَكَ وَالِدَيْهِ أَوْ أَحَدَهُمَا فَلَمْ يُدْخِلَاهُ الْجَنَّةَ، فَقُلْتُ: آمِينَ. ثُمَّ قَالَ: شَقِيَ عَبْدٌ ذُكِرْتَ عِنْدَهُ وَلَمْ يُصَلِّ عَلَيْكَ، فَقُلْتُ: آمِينَ "

হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ রাযিঃ থেকে বর্ণিতঃ একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাসজিদে নববীতে তাশরিফ আনলেন এবং মিম্বারে আরোহন করলেন। তিনি মিম্বরের প্রথম সিড়িতে পা মোবারক রেখে বললেনঃ আমীন! দ্বিতীয় সিড়িতে পা মোবারক রেখে বললেনঃ আমীন! এবং তৃতীয় সিড়িতে পা মোবারক রেখে বললেনঃ আমীন! অতঃপর তিনি মিম্বর থেকে নিচে অবতরন করলে হযরত সাহাবায়ে কিরাম রাযিঃ এর কারন জানতে চাইলে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর রহস্য ব্যক্ত করে বললেনঃ এইমাত্র আমার নিকট হযরত জিবরীল (আঃ) উপস্থিত হয়ে তিনটি বদদোয়া করে বললেনঃ হে মুহাম্মাদ! ঐ ব্যক্তি ধ্বংস হয়ে যাক, যে ব্যক্তি রমযানের মত মোবারক মাস পেল অথচ পাপমুক্ত হতে পারল না৷ তখন আমি (প্রথম সিড়িতে) বললাম-আমীন। তিনি আবার বললেনঃ ঐ ব্যক্তি ধ্বংস হয়ে যাক, যে ব্যক্তি তার পিতা-মাতাকে অথবা তাদের একজনকে জীবিতাবস্থায় পেল অথচ তাদের খেদমত করে জান্নাত অর্জন করতে পারলনা"৷

তখন আমি (দ্বিতীয় সিড়িতে) বললাম-আমীন৷ অতঃপর তিনি বললেনঃ ঐ ব্যক্তিও ধ্বংস হয়ে যাক, যার নিকট আপনার মোবারক নাম উল্লেখ করা হয় অথচ সে আপনার উপর দরূদ পাঠ করে না৷ তখন আমি (তৃতীয় সিড়িতে) বললাম-আমীন৷ সনদ সহীহ৷ (আল আদাবুল মুফরাদ ৬৪৮ হাদীস৷ সহীহ ইবনে হিব্বান ৯০৮ হাদীস৷ সহীহ আত তারগীব ৯৯৬ হাদীস৷)

হাদীস শরীফে আরও বর্নিত হয়েছে-

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ الصِّيَامُ وَالْقُرْآنُ يَشْفَعَانِ لِلْعَبْدِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يَقُولُ الصِّيَامُ أَيْ رَبِّ مَنَعْتُهُ الطَّعَامَ وَالشَّهَوَاتِ بِالنَّهَارِ فَشَفِّعْنِي فِيهِ وَيَقُولُ الْقُرْآنُ مَنَعْتُهُ النَّوْمَ بِاللَّيْلِ فَشَفِّعْنِي فِيهِ قَالَ فَيُشَفَّعَانِ

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাযিঃ থেকে বর্ণিত৷ হযরত রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন রোযা এবং কুরআন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোযা বলবেঃ হে আমার প্রতিপালক! আমি ওকে পানাহার ও যৌনকর্ম থেকে বিরত রেখেছিলাম। সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ কর। আর কুরআন বলবেঃ আমি ওকে রাত্রের নিদ্রা থেকে বিরত রেখেছিলাম। সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ কর। অতপর উভয়ের সুপারিশ গ্রহণ করা হবে। সনদ সহীহ৷ (মিশকাতুল মাসাবীহ ১৯৬৩ হাদীস৷ মুসনাদে আহমাদ ৬৬২৬ হাদীস৷ মুসতাদারাক লিল হাকিম ২০৩৬ হাদীস৷ শু‘আবূল ঈমান ১৮৩৯ হাদীস৷ সহীহ আল জামি‘ ৩৮৮২ হাদীস৷ সহীহ আত তারগীব ৯৭৩ হাদীস৷)

#রোযাদারের_৫টি_বৈশিষ্টঃ

রমযান উপলক্ষে উম্মতে মুহাম্মাদীকে এমন ৫টি বৈশিষ্ট দান করা হয় যা পুর্ববর্তী কোন উম্মতকে দেয়া হয় নাই৷ ১৷ রোযাদারের জন্য শয়তানকে শৃংখলিত করা হয়৷ ২৷ রোযাদারের জন্য প্রতিদিন ইফতার পর্যন্ত সমগ্র সৃষ্টি এমনকি মৎসকুল পর্যন্ত মাগফিরাত কামনা করে৷ ৩৷ রোযাদারের জন্য প্রতিদি জান্নাত সুসজ্জিত করা হয়৷ ৪৷ রোযাদারের মুখের গন্ধ রবের কাছে মেশক আম্বরের যেয়েও অধিক প্রিয়৷ ৫৷ রোযাদারের জন্য রমযানের শেষ রজনীতে ক্ষমা ঘোষনা করা হয়৷ (মুসনাদে আহমাদ ৭৯১৭ হাদীস৷ ফাযায়েলে রমযান ১৯ পৃষ্ঠা৷ আহকামুস সিয়াম ১৩-১৪ পৃষ্ঠা৷ মুকাশাফাতুল কুলুব ২/৩১৮ পৃষ্ঠা৷)

#রমযানুল_মোবারকের_এতো_ফযিলত_কেন?

এর কারন হলো রমযান মাসে কুরআনুল কারীম নযিল হয়েছে৷ যেমন কুরআনুল কারীমে ইরশাদ হচ্ছে-

شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِىْٓ اُنْزِلَ فِيْهِ الْقُرْاٰنُ هُدًى لِّلنَّاسِ وَ بَيِّنٰتٍ مِّنَ الْهُدٰى وَالْفُرْقَانِۚ

অর্থাৎ- রমযান এমন একটি মাস, যাতে কুরআনুল কারীম নাযিল হয়েছে মানবজাতীর হেদায়েতের জন্য৷ (সূরা বাকারাহ ১৮৫) তাছাড়া পুর্ববর্তী সকল আসমানী কিতাবও রমযান মাসেই নাযিল হয়েছে৷ সুতরাং কুরআনুল কারীমের সংস্পর্শের কারনেই রমযান মাস এতো সম্মানিত৷ তদ্রুপ কোন বান্দাও যখন কুরআনুল কারীমের সংস্পর্শে আসে তখন আল্লাহ তায়ালাও তাকে সকল মাখলুকাতের উপর সম্মানিত করেন৷ (তাফসীরে মাযহারী ১/৩৬৭ পৃষ্ঠা৷)

217
জুমা’র দিনের কিছু ফজিলত ও আমল

জুমা’র দিনের ফজিলত

আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, `হে মোমিনরা, জুমার দিনে যখন নামাজের আজান দেয়া হয়, তোমরা আল্লাহর স্মরণে তরা করো এবং বেচাকেনা বন্ধ করো। এটা তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা বোঝ।` (সূরা জুমআ`: আয়াত ৯)

রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘মহান আল্লাহর কাছে জুমার দিনটি ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দিনের মতো শ্রেষ্ঠ দিন। এ দিনটি আল্লাহর কাছে অতি মর্যাদাসম্পন্ন।’ [ইবনে মাজাহ; ১০৮৪]

জুমা’র দিন সাপ্তাহিক ঈদের দিন

জুমা প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, ‘মুমিনের জন্য জুমার দিন হলো সাপ্তাহিক ঈদের দিন।’ [ইবনে মাজাহ; ১০৯৮]

বিশ্বনবী রাসূলুল্লাহ (সা:) আরো বলেন, হে মুসলমানগণ, জুমার দিনকে আল্লাহ তায়ালা তোমাদের জন্য (সাপ্তাহিক) ঈদের দিন হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। তোমরা এ দিন মিসওয়াক করো, গোসল করো ও সুগন্ধি লাগাও।[মুওয়াত্তা, ইবনে মাজাহ, মিশকাত; হাদিস নম্বর- ১৩৯৮, ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, ‘পরিচ্ছন্নতা অর্জন ও সকাল সকাল মসজিদে গমন’ অনুচ্ছেদ-৪৪]

জুমার দিন জুমার নামাজের আগে বা পরে সূরা কাহাফ তিলাওয়াত করা

হযরত আবু দারদা (রা.) বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন সূরা কাহাফ তিলাওয়াত করবে তার জন্য এ জুমা থেকে আরেক জুমা পর্যন্ত একটা নূর চমকাতে থাকবে। (সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী- ৩/২৪৯, ৫৯৯৬)

অন্য হাদীসে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি জুমার দিন সূরা কাহাফ তিলাওয়াত করবে কিয়ামতের দিন তার জন্য আরশের নিচে আকাশ তুল্য একটি নূর প্রকাশ পাবে এবং বিগত জুমা থেকে এ জুমা পর্যন্ত তার সব ছগীরা গুনাহ মাফ হয়ে যাবে। (ইবনে কাসীর; ফাজায়েলে জুমা)

জুম’আর দিন গোসল করা

যাদের উপর জুম’আ ফরজ তাদেরজন্য এ দিনে গোসলকরাকে রাসুল(সাঃ) সুন্নত করেছেন (বুখারীঃ ৮৭৭, ৮৭৮, ৮৮০, ৮৯৭, ৮৯৮)। পরিচ্ছন্নতার অংশহিসাবে সেদিন নখ ও চুলকাটা একটি ভাল কাজ। জুম’আর সালাতের জন্যসুগন্ধি ব্যবহার করা। (বুখারীঃ ৮৮০) মিস্ওয়াক করা। (ইবনে মাজাহঃ ১০৯৮, বুখারীঃ৮৮৭, ইঃফাঃ ৮৪৩) গায়ে তেল ব্যবহার করা। (বুখারীঃ ৮৮৩) উত্তম পোশাক পরিধানকরে জুম’আ আদায় করা। (ইবনে মাজাহঃ১০৯৭) মুসুল্লীদের ইমামের দিকে মুখকরে বসা। (তিরমিযীঃ ৫০৯, ইবনে মাজাহঃ ১১৩৬) পায়ে হেঁটে মসজিদে গমন। (আবু দাউদঃ ৩৪৫) মুসুল্লীদের ফাঁককরে মসজিদে সামনেরদিকে এগিয়ে না যাওয়া (বুখারীঃ ৯১০, ৮৮৩) খুৎবা চলাকালীন সময়ে মসজিদে প্রবেশ করলে তখনও দু’রাকা’আত‘ তাহিয়্যাতুল মাসজিদ’ সালাত আদায় করা ছাড়া না বসা। (বুখারীঃ ৯৩০)

জুমার নামাজের ফযীলত ও তা আদায়কারীদের জন্য ঘোষিত পুরষ্কার

(১) কুরবানী করার সমান সওয়াব অর্জিত হয়ঃ দিনে আগে ভাগে মসজিদে গেলে দান-খয়রাত বা পশু কুরবানী করার সমতুল্য সওয়াব পাওয়া যায়। আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণিত এক হাদীসে রাসুল (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যাক্তি জুমার দিন ফরজ গোসলের মত গোসল করে প্রথম দিকে মসজিদে হাজির হয়, সে যেন একটি উট কুরবানী করল, দ্বিতীয় সময়ে যে ব্যাক্তি মসজিদে প্রবেশ করে সে যেন একটি গরু কুরবানী করল, তৃতীয় সময়ে যে ব্যাক্তি মসজিদে প্রবেশ করল সে যেন একটি ছাগল কুরবানী করল। অতঃপর চতুর্থ সময়ে যে ব্যাক্তি মসজিদে গেল সে যেন একটি মুরগী কুরবানী করল। আর পঞ্চম সময়ে যে ব্যাক্তি মসজিদে প্রবেশ করল সে যেন একটি ডিম কুরবানী করল। অতঃপর ইমাম যখন বেরিয়ে এসে মিম্বরে বসে গেলেন খুৎবার জন্য, তখন ফেরেশতারা লেখা বন্ধ করে খুৎবা শুনতে বসে যায়।” (বুখারীঃ ৮৮১, ইফা ৮৩৭, আধুনিক ৮৩০)

(২) মসজিদের দরজায় দাঁড়িয়ে ফেরেশতারা অগ্রগামীদের নাম তালিকাভুক্ত করেনঃ জুমার সালাতে কারা অগ্রগামী, ফেরেশতারা এর তালিকা তৈরি করে থাকেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “জুমার দিন মসজিদের দরজায় ফেরেশতা এসে হাজির হয়। সেখানে দাঁড়িয়ে তারা সর্বাগ্রে আগমনকারীদের নাম লিখতে থাকে। প্রথম ভাগে যারা মসজিদে ঢুকেন তাদের জন্য উট, দ্বিতীয়বারে যারা আসেন তাদের জন্য গরু, তৃতীয়বারে যারা আসেন তাদের জন্য ছাগল, চতুর্থবারে যারা আসেন তাদের জন্য মুরগী, ও সর্বশেষ পঞ্চমবারে যারা আগমন করেন তাদের জন্য ডিম কুরবানী বা দান করার সমান সওাব্ব লিখে থাকেন। আর যখন ইমাম খুৎবা দেওয়ার জন্য মিম্বরে উঠে পড়েন ফেরেশতারা তাদের এ খাতা বন্ধ করে খুৎবা শুনতে বসে যান।” (বুখারী ৯২৯, ইফা ৮৮২, আধুনিক ৮৭৬)

(৩) দশ দিনের গুনাহ মাফ হয়ঃ জুমার দিনের আদব যারা রক্ষা করে তাদের দশ দিনের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যাক্তি ভালভাবে পবিত্র হল অতঃপর মসজিদে এলো, মনোযোগ দিয়ে খুৎবা শুনতে চুপচাপ বসে রইল, তার জন্য দুই জুমার মধ্যবর্তী এ সাত দিনের সাথে আরও তিনদিন যোগ করে মোট দশ দিনের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। পক্ষান্তরে খুৎবার সময় যে ব্যক্তি পাথর, নুড়িকণা বা অন্য কিছু নাড়াচাড়া করল সে যেন অনর্থক কাজ করল।’ (মুসলিমঃ ৮৫৭)

(৪) জুমার আদব রক্ষাকারীর দশ দিনের গুনাহ মুছে যায়ঃ রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, জুমার সালাতে তিন ধরনের লোক হাজির হয়। (ক) এক ধরনের লোক আছে যারা মসজিদে প্রবেশের পর তামাশা করে, তারা বিনিময়ে তামাশা ছাড়া কিছুই পাবে না। (খ) দ্বিতীয় আরেক ধরনের লোক আছে যারা জুমা’য় হাজির হয় সেখানে দু’আ মুনাজাত করে, ফলে আল্লাহ যাকে চান তাকে কিছু দেন আর যাকে ইচ্ছা দেন না। (গ) তৃতীয় প্রকার লোক হল যারা জুমা’য় হাজির হয়, চুপচাপ থাকে, মনোযোগ দিয়ে খুৎবা শোনে, কারও ঘাড় ডিঙ্গিয়ে সামনে আগায় না, কাউকে কষ্ট দেয় না, তার দুই জুমা’র মধ্যবর্তী ৭ দিন সহ আরও তিনদিন যোগ করে মোট দশ দিনের গুনাহ খাতা আল্লাহ তায়ালা মাফ করে দেন।” (আবু দাউদঃ ১১১৩)

(৫) প্রতি পদক্ষেপে এক বছরের নফল রোজা ও এক বছরের সারা রাত তাহাজ্জুদ পড়ার সওয়াব অর্জিত হয়ঃ যে ব্যাক্তি আদব রক্ষা করে জুমার সালাত আদায় করে তার প্রতিটি পদক্ষেপের বিনিময়ে তার জন্য পুরো এক বছরের রোজা পালন এবং রাত জেগে তাহাজ্জুদ পড়ার সওয়াব লিখা হয়। আউস বিন আউস আস সাকাফী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, জুমার দিন যে ব্যাক্তি গোসল করায় (অর্থাৎ সহবাস করে, ফলে স্ত্রী ফরজ গোসল করে এবং) নিজেও ফরজ গোসল করে, পূর্বাহ্ণে মসজিদে আগমন করে এবং নিজেও প্রথম ভাগে মসজিদে গমন করে, পায়ে হেঁটে মসজিদে যায় (অর্থাৎ কোন কিছুতে আরোহণ করে নয়), ইমামের কাছাকাছি গিয়ে বসে, মনোযোগ দিয়ে খুৎবা শোনে, কোন কিছু নিয়ে খেল তামাশা করে না; সে ব্যাক্তির প্রতিটি পদক্ষেপের জন্য রয়েছে বছরব্যাপী রোজা পালন ও সারা বছর রাত জেগে ইবাদত করার সমতুল্য সওয়াব।” (মুসনাদে আহমাদঃ ৬৯৫৪, ১৬২১৮)

(৬) দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহের কাফফারাঃ জুমার সালাত আদায়কারীদের জন্য দুই জুমার মধ্যবর্তী গুনাহের কাফফারা স্বরূপ। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “পাঁচ বেলা সালাত আদায়, এক জুমা থেকে পরবর্তী জুমা, এক রমজান থেকে পরবর্তী রমজানের মধ্যবর্তী সময়ে হয়ে যাওয়া সকল (সগীরা) গুনাহের কাফফারা স্বরূপ, এই শর্তে যে, বান্দা কবীরা গুনাহ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখবে।” (মুসলিমঃ ২৩৩)

জুমার দিনে দোয়া কবুল

জুমার ফজিলতের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিকটি হলো, এই দিনে এমন একটা সময় আছে, যখন মুমিন বান্দা কোনো দোয়া করলে মহান আল্লাহ তাঁর দোয়া কবুল করেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, জুমার দিনে একটা এমন সময় আছে, যে সময়ে কোনো মুমিন বান্দা আল্লাহর কাছে ভালো কোনো কিছু প্রার্থনা করলে, অবশ্যই আল্লাহ তাঁকে তা দান করবেন। (সহীহ মুসলিম : ৮৫২, মুসনাদে আহমাদ : ৭১৫১, আস্-সুনানুল কুবরা : ১০২৩৪)

জুমার দিনে দোয়া কবুল হওয়ার সে মহামূল্যবান সময় কোনটা? এ সম্পর্কে ৪৫টা মতামত পাওয়া যায়। তবে সর্বাধিক প্রসিদ্ধ মত হলো, আসরের নামাজের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত সময় দোয়া কবুলের সময়। হজরত আনাস (রা.) থেকে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, জুমার দিনের কাঙ্ক্ষিত সময়টা হলো আসরের পর থেকে সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত। (মুসনাদে ইবনে আবি শাইবা : ৫৪৬০, তিরমিজি : ৪৮৯)

জুমার দিন বেশী বেশী দরুদ শরীফ পড়া

হযরত আওস ইবনে আউস রা.থেকে বর্ণিত, একটি হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

ﺇﻥ ﻣﻦ ﺃﻓﻀﻞ ﺃﻳﺎﻣﻜﻢ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ … ﻓﺄﻛﺜﺮﻭﺍ ﻋﻠﻲ ﻣﻦ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻓﻴﻪ، ﻓﺈﻥ ﺻﻼﺗﻜﻢ ﻣﻌﺮﻭﺿﺔ ﻋﻠﻲ

নিশ্চয়ই জুমার দিন শ্রেষ্ঠতম দিন গুলোর অন্যতম। সুতরাং সেদিন তোমরা আমার উপর বেশি বেশি দরূদ পড়। নিশ্চয় তোমাদের দরূদ আমার কাছে পেশ করা হয়। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ১০৪৭; মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১৬১৬২; সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস : ৯১০, হাদীসটি সহীহ)

অন্য হাদীসে হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

ﺃﻛﺜﺮﻭﺍ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻋﻠﻲ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ ﻭﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ، ﻓﻤﻦ ﺻﻠﻰ ﻋﻠﻲ ﺻﻼﺓً ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻋﺸﺮﺍً

তোমরা জুমার রাত ও জুমার দিনে আমার উপর বেশি বেশি দরূদ পাঠ কর। যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরূদ পাঠ করে আল্লাহ তাআলা তার উপর দশবার রহমত নাযিল করেন। (আসসুনানুল কুবরা, বায়হাকী ৩/২৪৯; ফাযাইলুল আওকাত, বায়হাকী ২৭৭; আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলাহ, ইবনুস সুন্নী ৩৭৯, এর সনদ হাসান পর্যায়ের।)

অন্য হাদীসে আছে-

ﺃﻛﺜﺮﻭﺍ ﻋﻠﻲ ﻣﻦ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻓﻲ ﻛﻞ ﻳﻮﻡ ﺟﻤﻌﺔ، ﻓﺈﻥ ﺻﻼﺓ ﺃﻣﺘﻲ ﺗﻌﺮﺽ ﻋﻠﻲ ﻓﻲ ﻛﻞ ﻳﻮﻡ ﺟﻤﻌﺔ، ﻓﻤﻦ ﻛﺎﻥ ﺃﻛﺜﺮﻫﻢ ﻋﻠﻲ ﺻﻼﺓ ﻛﺎﻥ ﺃﻗﺮﺑﻬﻢ ﻣﻨﻲ ﻣﻨﺰﻟﺔ

প্রত্যেক জুমার দিনে তোমরা আমার উপর অধিক পরিমাণে দরূদ পাঠ কর। কারণ আমার উম্মতের দরূদ প্রতি জুমার দিন আমার কাছে পেশ করা হয়। আর তাদের মধ্য থেকে যে ব্যক্তি আমার উপর সবচেয়ে বেশি দরূদ পাঠ করে সে অন্যদের তুলায় আমার বেশি নিকটবর্তী। (সুনানে বায়হাকী ৩/২৪৯, এর সনদটি হাসান)

সাখাবী রাহ. বলেন-

ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﻴﻬﻘﻲ ﺑﺴﻨﺪ ﺣﺴﻦ ﻻ ﺑﺄﺱ ﺑﻪ، ﺇﻻ ﺃﻥ ﻣﻜﺤﻮﻻ ﻗﻴﻞ : ﻟﻢ ﻳﺴﻤﻊ ﻣﻦ ﺃﺑﻲ ﺃﻣﺎﻣﺔ ﻓﻲ ﻗﻮﻝ ﺍﻟﺠﻤﻬﻮﺭ

এখন লক্ষ্য করে দেখুন, দরূদ শরীফের গুরুত্ব, তার সাধারণ ফযীলত সমূহ এবং বিশেষ ভাবে জুমার দিন বেশি বেশি দরূদ পড়ার গুরুত্ব ও ফযীলত যা সহীহ সনদে প্রমাণিত এবং একটি স্বীকৃত বিষয়। নির্ভরযোগ্য সনদে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি তার এক শাগরিদ যায়েদ বিন ওয়াহাবকে নসীহত করেছেন-

ﻳﺎ ﺯﻳﺪ ﺑﻦ ﻭﻫﺐ ! ﻻ ﺗﺪﻉ ﺇﺫﺍ ﻛﺎﻥ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ ﺃﻥ ﺗﺼﻠﻲ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺃﻟﻒ ﻣﺮﺓ ﺗﻘﻮﻝ : ﺍﻟﻠﻬﻢ ﺻﻞ ﻋﻠﻰ ﻣﺤﻤﺪ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺍﻷﻣﻲ

হে যায়েদ বিন ওয়াহাব! জুমার দিন তুমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি এক হাজার বার দরূদ পড়তে ভুল করো না। এভাবে বলবে-

ﺍَﻟﻠّﻬُﻢَّ ﺻَﻞِّ ﻋَﻠﻰ ﻣُﺤَﻤَّﺪٍ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺍﻟْﺄُﻣِّﻲِّ

আল্লাহ পাক সকলকে বুঝার তৈফিক দান করুক, নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দিদার সকলের নছিব হোক, কাল কিয়ামতের দিন সকল আমল কবুলের সাথে সাথে যেনো নবীজীর (দ) শাফায়াত নছিব হয় এবং মৃত্যুর আগে যেনো পবিত্র কালিমা শরীফ যেনো সকলের নছিব হয়- আমিন।


218
শবে বরাত কি? পবিত্র শবে বরাতের আমল সমূহ

শবে বরাত হচ্ছে ইসলামের বিশেষ রাত্রিসমূহের মধ্যে একটি রাত্র। যা শা’বানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত্রিতে হয়ে থাকে। শবে বরাত-এর অর্থ হচ্ছে ‘মুক্তির রাত’ বা ‘নাজাতের রাত।

শবে বরাত সম্পর্কে কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এ বর্ণনা

শব’ ফার্সী শব্দ। যার অর্থ হচ্ছে, রাত। আর বরাত আরবী শব্দ যা উর্দূ, ফার্সী, বাংলা ইত্যাদি সব ভাষাতেই ব্যবহার হয়ে থাকে। যার অর্থ ‘মুক্তি’ ও ‘নাজাত’ ইত্যাদি। কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর ভাষা যেহেতু আরবী তাই ফার্সী ‘শব’ শব্দটি কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এ না থাকাটাই স্বাভাবিক। স্মর্তব্য যে, কুরআন শরীফ-এর ভাষায় ‘শবে বরাতকে’ ‘লাইলাতুম মুবারাকাহ বা বরকতময় রজনী’ এবং হাদীছ শরীফ-এর ভাষায় শবে বরাতকে ‘লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান’ বা শা’বানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন-

انا انزلنه فى ليلة مبركة انا كنا منذرين. فيها يفرق كل امر حكيم. امرا من عندنا انا كنا مرسلين

অর্থ: “নিশ্চয়ই আমি বরকতময় রজনীতে (শবে বরাতে) কুরআন শরীফ নাযিল করেছি অর্থাৎ নাযিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আর আমিই ভয় প্রদর্শনকারী। উক্ত রাত্রিতে আমার পক্ষ থেকে সমস্ত প্রজ্ঞাময় কাজ গুলো ফায়সালা করা হয়। আর নিশ্চয়ই আমিই প্রেরণকারী।” (সূরা দুখান-৩, ৪, ৫)

আর হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে-

عن ام المؤمنين حضرت عائشة عليها السلام قالت فقدت رسول الله صلى الله عليه وسلم ليلة فاذا هو بالبقيع فقال اكنت تخافين ان يحيف الله عليك ورسوله قلت يا رسول الله صلى الله عليه وسلم انى ظننت انك اتيت بعض نسائك فقال ان الله تعالى ينزل ليلة النصف من شعبان الى السماء الدنيا فيغفر لاكثر من عدد شعر غنم كلب

অর্থ: উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম-উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আল্লাহ পাক-উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সাথে কোন এক রাত্রিতে রাত্রিযাপন করছিলাম। এক সময় উনাকে বিছানা মুবারক-এ না পেয়ে আমি মনে করলাম যে, তিনি হয়তো অন্য কোন উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের হুজরা শরীফে তাশরীফ নিয়েছেন। অতঃপর আমি তালাশ করে উনাকে জান্নাতুল বাক্বীতে পেলাম। সেখানে তিনি উম্মতের জন্য আল্লাহ পাক-উনার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছেন। এ অবস্থা দেখে আমি স্বীয় হুজরা শরীফে ফিরে আসলে তিনিও ফিরে এসে আমাকে বললেন, আপনি কি মনে করেছেন, আল্লাহ পাক সুবহানাহূ ওয়া তায়ালা ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা আপনার সাথে আমানতের খিয়ানত করেছেন! আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি ধারণা করেছিলাম যে, আপনি হয়তো অপর কোন হুজরা শরীফে তাশরীফ নিয়েছেন। অতঃপর হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক তিনি শা’বানের ১৫ তারিখ রাত্রিতে পৃথিবীর আকাশে অবতরণ করেন অর্থাৎ রহমতে খাছ নাযিল করেন। অতঃপর তিনি বনী কালবের মেষের গায়ে যতো পশম রয়েছে তার চেয়ে অধিক সংখ্যক বান্দাকে ক্ষমা করে থাকেন।” (তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, রযীন, মিশকাত)

অতএব প্রমাণিত হলো যে, কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফেই শবে বরাতের কথা উল্লেখ আছে। তবে কুরআন শরীফে বরাতের রাতকে ‘লাইলাতুম মুবারকাহ’ আর হাদীছ শরীফে ‘লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান’ বলা হয়েছে। অনেকে বলে থাকে যে, সূরা দুখান-এর উক্ত আয়াত শরীফ দ্বারা শবে ক্বদরকে বুঝানো হয়েছে। কেননা উক্ত আয়াত শরীফে স্পষ্টই উল্লেখ আছে যে, “আমি কুরআন শরীফ নাযিল করেছি  আর কুরআন শরীফ যে ক্বদরের রাত্রিতে নাযিল হয়েছে তা ‘সূরায়ে ক্বদরেও’ উল্লেখ আছে। মূলতঃ যারা উপরোক্ত মন্তব্য করে থাকে তারা ‘সূরা দুখান-এর’ উক্ত আয়াত শরীফ-এর সঠিক ব্যাখ্যা না জানা ও না বুঝার কারণেই করে থাকে। মহান আল্লাহ পাক যে ‘সূরা দুখান’-এ বলেছেন, “আমি বরকতময় রজনীতে কুরআন শরীফ নাযিল করেছি।” এর ব্যাখ্যামূলক অর্থ হলো, “আমি বরকতময় রজনীতে কুরআন শরীফ নাযিলের ফায়সালা করেছি।”

আর ‘সূরা ক্বদরে’ যে বলেছেন, “আমি ক্বদরের রাত্রিতে কুরআন শরীফ নাযিল করেছি।” এর ব্যাখ্যামূলক অর্থ হলো, “আমি ক্বদরের রাত্রিতে কুরআন শরীফ নাযিল শুরু করি।” অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক “লাইলাতুম মুবারকাহ বা শবে বরাতে” কুরআন শরীফ নাযিলের সিদ্ধান্ত নেন আর শবে ক্বদরে তা নাযিল করা শুরু করেন। এজন্যে মুফাসসিরীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা শবে বরাতকে ليلة التجويز অর্থাৎ ‘ফায়সালার  রাত।’ আর শবে ক্বদরকে ليلة التنفيذ অর্থাৎ ‘জারী করার রাত’ বলে উল্লেখ করেছেন। কেননা শবে বরাতে যে সকল বিষয়ের ফায়সালা করা হয় তা ‘সূরা দুখান-এর’ উক্ত আয়াত শরীফেই উল্লেখ আছে। যেমন ইরশাদ হয়েছে-

فيها يفرق كل امر حكيم

অর্থাৎ- “উক্ত রজনীতে প্রজ্ঞাসম্পন্ন সকল বিষয়ের ফায়সালা করা হয়।

হাদীছ শরীফেও উক্ত আয়াতাংশের সমর্থন পাওয়া যায়। যেমন ইরশাদ হয়েছে-

فيها ان يكتب كل مولود  من بنى ادم فى هذه السنة وفيها ان يكتب كل هالك من بنى ادم فى هذه السنة وفيها ترفع اعمالهم وفيها تنزل ارزاقهم

অর্থাৎ- “বরাতের রাত্রিতে ফায়সালা করা হয় কতজন সন্তান আগামী এক বৎসর জন্ম গ্রহণ করবে এবং কতজন সন্তান মৃত্যু বরণ করবে। এ রাত্রিতে বান্দাদের আমলগুলো উপরে উঠানো হয় অর্থাৎ আল্লাহ পাক-উনার দরবারে পেশ করা হয় এবং এ রাত্রিতে বান্দাদের রিযিকের ফায়সালা করা হয়।” (বায়হাক্বী, মিশকাত)

কাজেই, আল্লাহ পাক তিনি যেহেতু বলেছেন যে, বরকতময় রজনীতে সকল কাজের ফায়সালা করা হয় আর উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিও যেহেতু বলেছেন যে, বরাতের রজনীতেই সকল বিষয় যেমন- হায়াত, মউত, রিযিক, আমল ইত্যাদি যা কিছু মানুষের প্রয়োজন হয়ে থাকে তার ফায়সালা করা হয় সেহেতু বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, “সূরা দুখান-এর” উক্ত আয়াত শরীফ দ্বারা শবে বরাতকেই বুঝানো হয়েছে। [দলীলসমূহ: (১) সূরা দুখান (২) তাফসীরে দুররে মনছূর, (৩) কুরতুবী, (৪) মাযহারী, (৫) তিরমিযী, (৬) ইবনে মাজাহ, (৭) বায়হাক্বী, (৮) মিশকাত, (৯) মিরকাত, (১০) আশয়াতুল লুময়াত, (১১) লুময়াত, (১২) ত্বীবী, (১৩) তালীক্ব, (১৪) মুযাহিরে হক্ব ইত্যাদি।]

শবে বরাতকে কেন্দ্র করে আতশবাজি ও আলোকসজ্জা করাঃ

শবে বরাতে আলোকসজ্জা ও আতশবাজি করা শরীয়ত সম্মত নয়। ইতিহাসে উল্লেখ করা হয়েছে যে, আলোকসজ্জা হচ্ছে গ্রীক ধর্মের একটি ধর্মীয় প্রথা। সেখান থেকে পর্যায়ক্রমে হিন্দু ধর্মের ধর্মীয় প্রথা হিসেবে রূপ লাভ করে, যা শেষ পর্যন্ত দেয়ালী পূজা নামে মশহূর হয়। আলোকসজ্জা সেখান থেকে পর্যায়ক্রমে মুসলমানদের মধ্যে প্রবেশ করে যা প্রকৃতপক্ষে দ্বীন ইসলামের শেয়ার বা তর্জ-তরীক্বার অন্তর্ভুক্ত নয়। আর আতশবাজিও দ্বীন ইসলামের কোন শেয়ারের অন্তর্ভুক্ত নয়। প্রকৃতপক্ষে আতশবাজিও হিন্দু ধর্মের একটি ধর্মীয় প্রথার অন্তর্ভুক্ত। তাই মুসলমানের জন্য এসব করা সম্পূর্ণরূপে হারাম ও নাজায়িয। কারণ হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে-

عن حضرت عبد الله بن عمر رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من تشبه بقوم فهو منهم

অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল বা সাদৃশ্য রাখবে তার হাশর-নশর তাদের সাথেই হবে।” (আহমদ, আবূ দাউদ)

এ প্রসঙ্গে একটি ওয়াক্বিয়া বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, তা হলো হিন্দুস্তানে একজন জবরদস্ত আল্লাহ পাক-উনার ওলী ছিলেন। যিনি ইনতিকালের পর অন্য একজন বুযুর্গ ব্যক্তি উনাকে স্বপ্নে দেখে জিজ্ঞেস করেন, “হে আল্লাহ পাক-উনার ওলী, আপনি কেমন আছেন?” আল্লাহ পাক-উনার ওলী জাওয়াবে বলেন, “আপাতত আমি ভালই আছি, কিন্তু আমার উপর দিয়ে এক কঠিন সময় অতিবাহিত হয়েছে, যা বলার অপেক্ষা রাখেনা। আমার ইনতিকালের পর আমাকে হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা সরাসরি আল্লাহ পাক উনার সম্মুখে পেশ করেন। আল্লাহ পাক তিনি হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের বলেন, “হে হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম! আপনারা উনাকে কেন এখানে নিয়ে এসেছেন”? হযরত ফেরেশ্তা আলাইহিমুস সালাম উনারা বলেন, “আয় আল্লাহ পাক! আমরা উনাকে খাছ বান্দা হিসেবে আপনার সাথে সাক্ষাৎ করানোর জন্য নিয়ে এসেছি।” এটা শুনে আল্লাহ পাক তিনি বললেন, “উনাকে এখান থেকে নিয়ে যান, উনার হাশর-নশর হিন্দুদের সাথে হওয়া উচিৎ। কেননা তিনি পুজা করেছেন।

আল্লাহ পাক উনার ওলী তিনি বলেন, এটা শুনে আমি ভয় পেয়ে গেলাম এবং আমার সমস্ত শরীর ভয়ে কাঁপতে লাগলো। তখন আমি আল্লাহ পাক-উনার নিকট আরজু পেশ করলাম, “আল্লাহ পাক! আমার হাশর-নশর হিন্দুদের সাথে হবে কেন? আমি তো সবসময় আপনার এবং আপনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার ফরমাবরদার ছিলাম। কখনো ইচ্ছাকৃত নাফরমানি করিনি এবং কখনো পূজা করিনি আর মন্দিরেও যাইনি।” আল্লাহ পাক তিনি বললেন, “আপনি সেই দিনের কথা স্মরণ করুন, যেদিন হিন্দুস্তানে হোলি পুজা হচ্ছিলো। আপনার সামনে-পিছনে, ডানে-বামে, উপরে-নীচে সমস্ত গাছ-পালা, তরু-লতা, পশু-পাখী, কীট-পতঙ্গ সবকিছুকে রঙ দেয়া হয়েছিলো। এমতাবস্থায় আপনার সামনে দিয়ে একটি গর্দভ (গাধা) হেঁটে যাচ্ছিলো যাকে রঙ দেয়া হয়নি। তখন আপনি পান চিবাচ্ছিলেন, আপনি সেই গর্দভের গায়ে এক চিপটি পানের রঙ্গীন রস নিক্ষেপ করে বলেছিলেন, “হে গর্দভ! তোমাকে তো কেউ রং দেয়নি এই হোলি পুজার দিনে, আমি তোমাকে রং দিয়ে দিলাম। এটা কি আপনার পুজা করা হয়নি? আপনি কি জানেন না?”

من تشبه بقوم فهو منهم

অর্থ: যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হবে অর্থাৎ তার হাশর-নশর তাদের সাথে হবে।” কাজেই, “আপনার হাশর-নশর হিন্দুদের সাথে হওয়া উচিৎ। যখন আল্লাহ পাক এ কথা বললেন তখন আমি লা-জাওয়াব হয়ে গেলাম এবং ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে বললাম, আয় আল্লাহ পাক! আমি এটা বুঝতে পারিনি, আমাকে কেউ বুঝিয়েও দেয়নি। দয়া করে আমাকে ক্ষমা করে দিন। কিছুক্ষণ পর আল্লাহ পাক বললেন, “হ্যাঁ আপনাকে অন্যান্য আমলের কারণে ক্ষমা করা হলো।” কাজেই, মুসলমানদের জন্য শুধু শবে বরাতকেই কেন্দ্র করে নয় বরং কোন অবস্থাতেই আতশবাজি ও আলোকসজ্জা ইত্যাদি বিধর্মী বিজাতীয়দের কোন  আমল করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। [দলীলসমূহ – (১) আহমদ, (২) আবূ দাউদ, (৩) বযলুল মাজহূদ, (৪) আউনুল মা’বূদ, (৫) মাছাবাতা বিসসুন্নাহ, (৬) গ্রীক জাতির ইতিহাস, (৭) হিন্দু ধর্মের ইতিহাস ইত্যাদি।]

শবে বরাতের আমল

শবে বরাত হচ্ছে মুক্তি বা ভাগ্য অথবা নাজাতের রাত। অর্থাৎ বরাতের রাত্রিতে ইবাদত-বন্দেগী করে ও পরবর্তী দিনে রোযা রেখে আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনাদের সন্তুষ্টি অর্জন করাই মূল উদ্দেশ্য। শবে বরাতে কোন্ কোন্ ইবাদত-বন্দেগী করতে হবে তা কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফে নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়নি। তবে ইবাদত-বন্দেগী করার জন্য নির্দেশ করা হয়েছে। যেমন হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে-

عن حضرت على رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا كانت ليلة النصف من شعبان فقوموا ليلها وصوموا يومها فان الله تعالى ينزل فيها لغروب الشمس الى السماء الدنيا فيقول الا من مستغفر فاغفرله الا مسترزق فارزقه الا مبتلى فاعافيه الا كذا الا كذا حتى يطلع الفجر

অর্থ: “হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ পাক-উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, যখন শা’বানের ১৫ তারিখ রাত্রি অর্থাৎ বরাতের রাত্রি উপস্থিত হবে তখন তোমরা উক্ত রাত্রিতে নামায আদায় করবে এবং দিনে রোযা রাখবে। কেননা নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক তিনি উক্ত রাত্রিতে সূর্যাস্তের সময় পৃথিবীর আকাশে আসেন অর্থাৎ রহমতে খাছ নাযিল করেন। অতঃপর ঘোষণা করেন, “কোন ক্ষমা প্র্রার্থনাকারী আছো কি? আমি তাকে ক্ষমা করে দিবো।” “কোন রিযিক প্রার্থনাকারী আছো কি? আমি তাকে রিযিক দান করবো।” “কোন মুছিবতগ্রস্ত ব্যক্তি আছো কি? আমি তার মুছিবত দূর করে দিবো।” এভাবে ফজর পর্যন্ত ঘোষণা করতে থাকেন।” (ইবনে মাজাহ, মিশকাত)

হাদীছ শরীফে আরো বর্ণিত আছে-

عن حضرت ابى موسى الاشعرى رضى الله تعالى عنه عن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال ان الله تعالى ليطلع فى ليلة النصف من شعبان فيغفر لجميع خلقه الا لمشرك او مشاحن

অর্থ: “হযরত আবু মূসা আশআরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আল্লাহ পাক-উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার থেকে বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক তিনি শা’বানের ১৫ তারিখ রাত্রিতে ঘোষণা করেন যে, উনার সমস্ত মাখলূকাতকে তিনি ক্ষমা করে দিবেন। শুধু মুশরিক ও হিংসা-বিদ্বেষকারী ব্যতীত। (ইবনে মাজাহ, আহমদ, মিশকাত)

উপরোক্ত হাদীছ শরীফসমূহের সংক্ষিপ্ত বিষয়বস্তু হলো, রাত্রিতে ইবাদত-বন্দেগী করতে হবে এবং দিনে রোযা রাখতে হবে। যার মাধ্যমে আল্লাহ পাক বান্দাহকে ক্ষমা করে স্বীয় সন্তুষ্টি দান করবেন। বরাতের রাত্রিতে যেসব ইবাদত করতে হবে তার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়া হলো- বরাতের নামায: শবে বরাতে ৪, ৬, ৮, ১০, ১২ রাকায়াত নফল নামায পড়া যেতে পারে। ছলাতুত তাসবীহ নামায: অতঃপর ছলাতুত তাসবীহ-এর নামায পড়বে, যার দ্বারা মানুষের সমস্ত গুণাহখতা ক্ষমা হয়। তাহাজ্জুদ নামায: অতঃপর তাহাজ্জুদের নামায পড়বে, যা দ্বারা আল্লাহ পাক-উনার নৈকট্য হাছিল হয়। কুরআন শরীফ তিলাওয়াত: কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করবে, যার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা-উনার সন্তুষ্টি অর্জিত হয়। কেননা নফল ইবাদতের মধ্যে কুরআন শরীফ তিলাওয়াত হচ্ছে সর্বোত্তম আমল। দুরূদ শরীফ পাঠ: দুরূদ শরীফ পাঠ করবে, যার দ্বারা আল্লাহ পাক-উনার রসূল,সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিইয়ীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সন্তুষ্টি অর্জিত হয়। যিকির-আযকার: যিকির-আযকার করবে, যার দ্বারা দিল ইছলাহ হয়।

কবর যিয়ারত: কবরস্থান যিয়ারত করবে, যার দ্বারা সুন্নত আদায় হয়। তবে কবর বা মাযার যিয়ারত করতে গিয়ে সারারাত্র ব্যয় করে দেয়া জায়িয হবেনা। সুন্নত আদায়ের লক্ষ্যে নিকটবর্তী কোন কবরস্থান যিয়ারত করে চলে আসবে। দান-ছদকা: গরীব-মিসকীনকে দান-ছদকা করবে ও লোকজনদের খাদ্য খাওয়াবে, যার দ্বারা হাবীবুল্লাহ হওয়া যায়। দোয়া-ইস্তিগফার: আল্লাহ পাক-উনার নিকট দোয়া করবে, যার কারণে আল্লাহ পাক খুশি হবেন ও উনার নিয়ামত লাভ হবে। আর সর্বশেষ খালিছ ইস্তিগফার ও তওবা করবে, যার মাধ্যমে বান্দাহর সমস্ত গুণাহ-খাতা মাফ হয়ে আল্লাহ পাক-উনার খালিছ সন্তুষ্টি অর্জিত হয়। অর্থাৎ শ’বে বরাতের বারাকাত,ফুয়ূজাত, নিয়ামত, রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত ইত্যাদি হাছিল করা যায়।

স্মরণীয় যে, অনেক স্থানে দেখা যায় যে, লোকজন ছুবহে ছাদিকের পর আখিরী মুনাজাত করে থাকে। মূলতঃ মুনাজাত যে কোন সময়েই করা যায়। তবে বরাতের রাতে দোয়া কবুল করার যে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে তা ছুবহ্ ছাদিকের পূর্ব পর্যন্ত। এরপর বরাতের রাত অবশিষ্ট থাকেনা। কেননা, হাদীছ শরীফে স্পষ্টই বলা হয়েছে যে-

حتى يطلع الفجر

অর্থ: “ফজর বা ছুবহেসীরে কুরতুবী, (২) মাযহারী, (৩) রুহুল বয়ান, (৪) রুহুল মায়ানী, (৫) খাযিন, (৬) বাগবী, (৭) তিরমিযী, (৮) ইবনে মাজাহ, (৯) আহমদ, (১০) রযীন, (১১) মিশকাত, (১২) মিরকাত, (১৩) আশয়াতুল লুময়াত, (১৪) লুময়াত, (১৫) ত্বীবী, (১৬) ত্বালীক,  (১৭) মুযাহিরে হক্ব ইত্যাদি।]

শবে বরাতে ইবাদতে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে সারারাত্র ওয়াজ মাহফিল করা

শবে বরাত হচ্ছে ইসলামের বিশেষ রাত্রিসমূহের মধ্যে একটি রাত্রি। যা শা’বানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত্রিতে হয়ে থাকে। শবে বরাত-এর অর্থ হচ্ছে মুক্তির রাত্র বা নাজাতের রাত্র। এ রাতে ওয়াজ-নছীহত করার আদেশও নেই। আবার নিষেধও করা হয়নি। তবে এ রাতে দোয়া কবুল করার ও ইবাদত বন্দেগী করার কথাই হাদীছ শরীফে ব্যক্ত হয়েছে। যেমন আখিরী রসূল, রহমতুল্লিল আলামীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন-

ان الدعاء يستجاب فى خمس ليال اول ليلة من رجب وليلة النصف من شعبان وليلة القدر المباركة وليلتى العيدين

অর্থ: “নিশ্চয়ই পাঁচ রাত্রিতে দোয়া নিশ্চিতভাবে কবুল হয়ে থাকে। (১) রজব মাসের প্রথম রাতে, (২) শবে বরাতের রাতে, (৩) ক্বদরের রাতে, (৪) ঈদুল ফিতরের রাতে, (৫) ঈদুল আযহার রাতে।” (মা ছাবাতা বিসসুন্নাহ, আমালুল ইয়াত্তমি ওয়াল লাইলাতি)

হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে-

عن حضرت على رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا كانت ليلة النصف من شعبان فقوموا ليلها وصوموا يومها فان الله تعالى ينزل فيها لغروب الشمس الى السماء الدنيا فيقول الا من مستغفر فاغفرله الا مسترزق فارزقه الا مبتلى فاعافيه الا كذا الا كذا حتى يطلع الفجر

অর্থ: “হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ পাক-উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, যখন শা’বানের ১৫ তারিখ রাত্রি অর্থাৎ বরাতের রাত্রি উপস্থিত হবে তখন তোমরা উক্ত রাত্রিতে নামায আদায় করবে এবং দিনে রোযা রাখবে। কেননা নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক তিনি উক্ত রাত্রিতে সূর্যাস্তের সময় পৃথিবীর আকাশে আসেন অর্থাৎ রহমতে খাছ নাযিল করেন। অতঃপর ঘোষণা করেন, “কোন ক্ষমা প্র্রার্থনাকারী আছো কি? আমি তাকে ক্ষমা করে দিবো।” “কোন রিযিক প্রার্থনাকারী আছো কি? আমি তাকে রিযিক দান করবো।” “কোন মুছিবতগ্রস্ত ব্যক্তি আছো কি? আমি তার মুছিবত দূর করে দিবো।” এভাবে ফজর পর্যন্ত ঘোষণা করতে থাকেন।” (ইবনে মাজাহ, মিশকাত)

উক্ত হাদীছ শরীফ-এর ব্যাখ্যায় ইমাম-মুজতাহিদগণ বলেন যে-

ليلة البراءة هى ليلة العفو والكرم، ليلة التوبة والندم، ليلة الذكر والصلوة، ليلة الصدقات والخيرات، ليلة الدعاء والزيارة، ليلة الصلاة على النبى صلى الله عليه وسلم، ليلة تلاواة القران الكريم

অর্থ: “বরাতের রাত্র হলো ক্ষমা ও দয়ার রাত্র, তওবা ও লজ্জিত হওয়ার রাত্র, যিকির ও নামাযের রাত্র, ছদক্বা ও খয়রাতের রাত্র, দোয়া ও যিয়ারতের রাত্র, দুরূদ শরীফ তথা ছলাত-সালাম পাঠ করার রাত্র এবং কুরআন শরীফ তিলাওয়াতের রাত্র। কাজেই, বরাতের রাতে যেহেতু ওয়াজ নছীহতের আদেশও করা হয়নি এবং নিষেধও করা হয়নি, তাই মুছল্লীদেরকে বরাতের রাতের ফযীলত ও ইবাদত-বন্দেগীর নিয়ম-কানুন, তর্জ-তরীক্বা বাতিয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে সংক্ষিপ্ত ওয়াজ-নছীহত করা অবশ্যই জায়িয ও প্রয়োজন। তাই বলে, সারা রাত্র ওয়াজ করে মুছল্লীদেরকে নামায, তিলাওয়াত, যিকির-আযকার, দোয়া মুনাজাত ইত্যাদি ইবাদত বন্দেগী হতে মাহরূম করা কখনোই শরীয়ত সম্মত নয়।

বরং হাদীছ শরীফের খিলাফ। শুধু তাই নয় এতে হক্কুল ইবাদ নষ্ট করা হয়। আর হক্কুল ইবাদ নষ্ট করা কবীরা গুণাহর অন্তর্ভুক্ত। কারণ ওয়াজ বৎসরের যে কোন দিনেই করা যায়। কিন্তু বরাতের রাত্র বৎসরে মাত্র একবারই পাওয়া যায়। যদি কেউ পরবর্তী বৎসর হায়াতে থাকে তবেই সে বরাতের রাত্র পাবে। কাজেই এই মহামূল্যবান রাত্রকে শুধুমাত্র ওয়াজ করে ও শুনে অতিবাহিত করে দেয়া সুন্নতের খিলাফ। আর সুন্নতের খিলাফ কাজ করে আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনাদের রেজামন্দী বা সন্তুষ্টি কস্মিনকালেও হাছিল করা সম্ভব নয়।

মূলকথা হলো, বরাতের রাত্র মূলতঃ ইবাদত-বন্দেগীর রাত্র, সারা রাত্র ওয়াজ করে ইবাদত বন্দেগীতে বিঘ্ন ঘটানো এবং মানুষদেরকে ইবাদত থেকে মাহরূম করা সম্পূর্ণরূপেই শরীয়তের খিলাফ। এ ধরণের কাজ থেকে বেঁচে থাকা সকলের জন্যেই দায়িত্ব ও কর্তব্য। [দলীলসমূহ- (১) আহকামুল কুরআন জাস্সাস, (২) কুরতুবী, (৩) রুহুল মাআনী, (৪) রুহুল বয়ান, (৫) ইহ্ইয়াউ উলূমিদ্দীন, (৬) কিমিয়ায়ে সা’য়াদাত, (৭) ইবনে মাজাহ, (৮) মিশকাত, (৯) মাছাবাতা বিসসুন্নাহ, (১০) মিরকাত, (১১) আশয়াতুল লুময়াত, (১২) লুময়াত, (১৩) শরহুত্ ত্বীবী, (১৪) তালিকুছ ছবীহ, (১৫) মুযাহিরে হক্ব, (১৬) আমালুল ইয়াউমি ওয়াল লাইলাতি ইত্যাদি]

শবে বরাতে হালুয়া-রুটি বা গোশত রুটি পাকানো

উল্লেখ্য, শবে বরাতে হালুয়া-রুটি অথবা অন্য কোন বিশেষ খাবার তৈরী করা শরীয়তে নাজায়িয নয়। শবে  বরাত উপলক্ষে বিশেষ করে আমাদের  দেশ ও তার আশ-পাশের দেশসমূহে যে রুটি-হালুয়ার ব্যাপক প্রচলন রয়েছে তার পিছনে ইতিহাস রয়েছে। ইতিহাসে উল্লেখ করা হয়েছে, পূর্ববর্তী যামানায় যখন বর্তমানের মতো বাজার, বন্দর, হোটেল-রেঁস্তরা ইত্যাদি সর্বত্র ছিলোনা তখন মানুষ সাধারণতঃ সরাইখানা, লঙ্গরখানা, মুসাফিরখানা ইত্যাদিতে ছফর অবস্থায় প্রয়োজনে রাত্রিযাপন করতেন। অর্থাৎ মুসাফিরগণ তাদের সফর অবস্থায় চলার পথে আত্মীয়-স্বজন বা পরিচিত জনের ঘর-বাড়ি না পেলে সাধারণতঃ সরাইখানা, মুসাফিরখানা ও লঙ্গরখানায় রাত্রিযাপন করতেন। আর এ সমস্ত মুসাফিরখানা, লঙ্গরখানা ও সরাইখানার দায়িত্বে যারা নিয়োজিত থাকতেন তারাই মুসাফিরদের খাবারের ব্যবস্থা করতেন।

বিশেষ করে মুসাফিরগণ শবে বরাতে যখন উল্লিখিত স্থানসমূহে রাত্রি যাপন করতেন তখন তাদের মধ্যে অনেকেই রাত্রিতে ইবাদত-বন্দেগী করতেন ও দিনে রোযা রাখতেন। যার কারণে উল্লিখিত স্থানসমূহের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিগণ খাবারের ব্যাবস্থা করতেন যাতে মুসাফিরদের রাত্রে ইবাদত-বন্দেগী করতে ও দিনে রোযা রাখতে অসুবিধা না হয়। আর যেহেতু হালুয়া-রুটি ও গোশ্ত-রুটি খাওয়া সুন্নত সেহেতু তারা হালুয়া-রুটি বা গোশ্ত-রুটির ব্যবস্থা করতেন। এছাড়াও আরবীয় এলাকার লোকদের প্রধান খাদ্য রুটি-হালুয়া বা রুটি-গোশ্ত। তারা ভাত, মাছ, ইত্যাদি খেতে অভ্যস্ত নয়। সেখান থেকে পর্যায়ক্রমে শবে বরাত উপলক্ষে হালুয়া-রুটির প্রচলন আমাদের দেশে ছড়িয়ে পড়ে। উল্লেখ্য, কোন আমলের ক্ষেত্রেই বদ রছম বা বদ প্রথার অনুসরণ করা জায়িয নেই।

এখন মাসয়ালা হচ্ছে- কেউ যদি শবে বরাত উপলক্ষে রছম-রেওয়াজ না করে বা নিজের ইবাদত-বন্দেগীর ব্যাঘাত না ঘটিয়ে উক্ত হালুয়া-রুটির ব্যবস্থা করে তাহলে তা অবশ্যই জায়িয। শুধু জায়িয নয় বরং কেউ যদি তার নিজের ইবাদত-বন্দেগী ঠিক রেখে অন্যান্যদের জন্য যারা রাত্রিতে ইবাদত-বন্দেগী করবে ও দিনে রোযা রাখবে তাদের ইবাদত-বন্দেগী ও রোযা পালনের সুবিধার্থে হালুয়া-রুটি বা গোশ্ত-রুটি অথবা আমাদের দেশে প্রচলিত খাদ্যসমূহের কোন প্রকারের খাদ্যের ব্যবস্থা করে তা অবশ্যই অশেষ ফযীলত ও নেকীর কারণ হবে।

হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে-

عن حضرت عبد الله بن سلام رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم يا ايها الناس افشوا السلام واطعموا الطعام وصلوا الارحام وصلوا بالليل والناس نيام تدخلوا الجنة بسلام

অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ পাক-উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, হে লোক সকল! তোমরা সালামের প্রচলন করো, মানুষকে খাদ্য খাওয়াও, আত্মীয়তার সর্ম্পক রক্ষা করো এবং মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন নামায পড়ো তাহলে শান্তির সাথে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে।” (তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, দারিমী) তবে সতর্ক থাকতে হবে যে, এই কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে যাতে এমন পরিশ্রম তথা এমন সময় ব্যয় না হয় যাতে করে কারো শবে বরাতের ইবাদতে ঘাটতি হয়। আরো সতর্ক থাকতে হবে যে, খাদ্য বিতরণ যেনো আত্মীয়-স্বজন বা প্রতিবেশীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে বরং এক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে যেনো অভাবগ্রস্তদের প্রাধান্য দেয়া হয়।

219
নৈতিক শিক্ষা মূল্যবোধের কারিগর

শিক্ষা মানুষকে বিকাশিত করে। গাছ যেমন ডালপালা ছড়িয়ে বড় আকার ধারণ করে নিজের অস্তিত্ব জানান দেয়। তেমনি শিক্ষা মানুষের অস্তিত্বকে জাগিয়ে তোলে। প্রতিটি স্তরে সেই মানুষের চিহ্ন থাকে যার ভেতর শিক্ষা রয়েছে। আর নৈতিকতা এই শিক্ষাকে উঁচু স্তরে নিয়ে যায়। সৃষ্টির শ্রেষ্ঠত্বের আসনে অধিষ্ঠিত করে। সততা, ন্যায়পরায়ণতা, দৃঢ়তা, আদর্শবাদী মনোভাবে নৈতিকতার স্বরুপ প্রকাশিত হয়।

মানুষের বড় সম্পদ হলো মূল্যবোধ। নৈতিক শিক্ষা মূল্যবোধের কারিগর। সৎ ও সুন্দর জীবন যাপনের জন্য নৈতিক শিক্ষা অপরিহার্য। যার ভেতর নৈতিক শিক্ষার গুণগুলো রয়েছে সে দৃঢ়তার সঙ্গে আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠেন।

নৈতিকতার ইংরেজি Morality. ল্যাটিন শব্দ মোরালিটাস থেকে আগত। যার অর্থ ভদ্রতা, সঠিক আচরণ, ভাল বা সঠিক এবং খারাপ বা ভুল বিষয়সমূহের মধ্যে পৃথকীকরণ। নৈতিকতাকে একটি আদর্শিক মানদণ্ড বলা যেতে পারে যা বিভিন্ন অঞ্চলের সামাজিকতা, ঐতিহ্য, সংষ্কৃতি, ধর্ম প্রভৃতির মানদণ্ডের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। আবার অনেক ক্ষেত্রে সামগ্রিকভাবে পৃথিবীর জন্য কল্যাণকর বিষয়সমূহকেও নৈতিকতা হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়।

নৈতিকতা-মূল্যবোধ মানুষের জীবনের এমনই একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার যে, এটা ক্ষতিগ্রস্ত হলে দেখা দেয় নানামুখী প্রতিক্রিয়া। যার পরিণতি হতে পারে পাপবোধ, অস্থিরতা, দুশ্চিন্তা, অশান্তি। যদিও অধিকাংশ মানুষই স্বীকার করতে চান না- এসব ভোগান্তির কারণ হচ্ছে তাদেরই অনৈতিক, অবিবেচনাপ্রসূত, দুর্নীতিপরায়ণ ও প্রতারণাপূর্ণ আচরণের ফলাফল।

কোনো একটি কাজ শুরু করতে গিয়ে এর প্রয়োজনীয়তা কিংবা এর ভালো-মন্দ পরিণতি চিন্তার আগে আমরা হয়তো ভাবি, কাজটি করে আমাকে কী কী সুবিধা পাব বা আমি এতে কতটুকু লাভবান হবো? কিন্তু নৈতিক শিক্ষার মানুষ কখনো এ রকম ভাববে না।  কাজটি কাউকে কষ্ট দিবে কি না বা ক্ষতিকর কিনা, সামগ্রিকভাবে কল্যাণকর কিনা এসব চিন্তা করেই সে কাজ করবে।

নৈতিকহীনতা শারীরিক অসুস্থতার পাশাপাশি মানসিক অশান্তি ও অসুস্থতা সৃষ্টি করে। সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, একজন মানুষের সার্বিক সুস্থতার জন্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো তার চারিত্রিক দৃঢ়তা, সততা এবং সমুন্নত নৈতিক চেতনা। বর্তমানে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ও মনের শক্তির সমন্বয় ঘটিয়ে যথাযথ নৈতিক শিক্ষাকেই গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে সবচেয়ে বেশি।

দৈনন্দিন জীবনে আমরা যা করি, সোজা কথায়, আমাদের অন্তর্গত সত্তার প্রকৃত ধরনটিই আসলে আমাদের চরিত্র। আর ভালো ও উন্নত চরিত্রের অন্যতম প্রধান শর্তটাই হলো ভালো কাজ। তা যত কঠিন আর ঝুঁকিপূর্ণই হোক না কেন। আর আপনি নিজে যে আচরণ অন্যের কাছে প্রত্যাশা করেন না, তা অন্যের সঙ্গে করাটা কখনোই সৎ-চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ নয়।

মনোবিদরাও বলছেন, যদি অন্যের কাছ থেকে ভালো আচরণ প্রত্যাশা করেন তবে আপনিও তাই করুন। এতে আপনার একটা অনুপম চারিত্রিক দৃঢ়তা গড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে পারিপার্শ্বিক পরিমণ্ডলেও আপনি পরিচিত হয়ে উঠবেন একজন সত্যিকারের ভালো মানুষ হিসেবে। ফলে চারপাশের পরিবেশও আপনার জন্যে ক্রমশ হতে থাকবে সুখকর, আনন্দময় এবং নিশ্চিতভাবেই কর্মোপযোগী।

সামাজিক প্রভাব বা প্রতিপত্তি যাই হোক না কেন, শুধু সদাচরণের পথ ধরেই সবার দৃষ্টিতে হয়ে উঠতে পারেন একজন ব্যতিক্রমী মানুষ। আপনার এই নৈতিকতাসম্পন্ন মূল্যবোধ অন্যদেরও প্রভাবিত করবে নিঃসন্দেহে।

গবেষকরা বলছেন, চরিত্র-শিক্ষার শুরু হওয়া উচিত শৈশব থেকেই। আর এ দায়িত্ব মা-বাবার একার নয়। আত্মীয়-পরিজন, শিক্ষক এমনকি সমাজের প্রতিটি মানুষের। অর্থাৎ শিশু যাদেরই সংস্পর্শে আসবে সকলের কিছু না কিছু ভূমিকা রয়েছে শিশুর চরিত্র গঠনে।

এর জন্য শিশুর উপর কিছু চাপিয়ে দিয়ে নয়, ভীতিকর পন্থায়ও নয়, বইয়ের ভাষায়ও নয়। সহজভাবে নিজে করে শিশুকে দেখানো, যাতে শিশুটি অতি সহজে বুঝতে পারে। যেমন ভাল বাক্য বিনিময়, সহযোগিতা করা, সত্যের ওপর দৃঢ় থাকা, সম্মান প্রদর্শন, আত্মনির্ভরশীল হওয়া ইত্যাদি।

আপনার অজান্তেই শিশু তার ক্ষুদে চোখ, কান, মনস্তত্ত্ব দিয়ে সে নীরবে প্রত্যক্ষ করছে আপনার সমস্ত আচরণ ও কথাবার্তা। এগুলো কিন্তু শিশু অনুকরণ করে থাকে। সন্তানের দৃষ্টিতে যদি অনুকরণীয় হতে চান, তবে তাকে যা করতে বলছেন নিজেও তাই করুন। তাকে হৃদয় দিয়ে অনুভব করতে শেখান ক্ষমা আর সমমর্মিতার মতো মহৎ গুণগুলো। এতে তার অন্তর্গত সত্তা ক্রমশ বিকশিত ও আলোকিত হয়ে উঠবে।

এছাড়াও গল্প বলার ছলে শিশুকে কোনো কিছু শেখানোটা বেশ কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে শিশু-মনোবিজ্ঞানীদের অনুসন্ধানে। প্রতিদিন না হোক, সপ্তাহে অন্তত যে-কদিন যখনই সময় পান আপনার শিশু সন্তানটিকে সময় দিন। আমাদের নৈতিক সংস্কৃতির আবহে রচিত চিরন্তন গল্প, ঘটনা, উপাখ্যানগুলো তাকে শোনান। এর মর্মকথা তাকে বুঝিয়ে বলুন।

গল্পগুলোর অন্তর্নিহিত নৈতিক শিক্ষা তাকে পরিশ্রমী, বাস্তববাদী ও চরিত্রবান হতে অনুপ্রাণিত করবে। আর এভাবেই তার সঙ্গে গড়ে উঠবে আপনার এক চমৎকার বোঝাপড়ার সম্পর্ক। গল্পের শেষে তার কাছ থেকে এ বিষয়ে মতামত জানতে চান। জিজ্ঞেস করুন, সে কী বুঝল কিংবা গল্পের কোন অংশটি তার সবচেয়ে ভালো লেগেছে এবং কেন? এতে আপনিও তাকে সহজেই বুঝতে পারবেন।

প্রযুক্তির আগ্রাসন আর শত কাজের ব্যস্ততায় শিশুর চরিত্র গঠনে বর্তমানে আমরা প্রায় নিষ্ক্রিয় ভূমিকাই পালন করেছি। কিন্তু যেসব মা-বাবা সচেতনভাবে এ লক্ষ্যে সন্তানদের সময় দিচ্ছেন তারা নিঃসন্দেহে বুদ্ধিমান ও সফল। এ উদ্যোগ একদিকে যেমন তাদের সন্তানদের মাঝে সমমর্মিতা, সহানুভূতি ও সামাজিক দায়িত্ববোধের জন্ম দিচ্ছে তেমনি এর ফলে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সুস্থ, সৎ ও আত্মনির্ভরশীল নাগরিক সৃষ্টির মাধ্যমে উপকৃত হবে দেশ ও সমাজ।

220
Common Forum/Request/Suggestions / উপদেশ বাণী
« on: February 18, 2021, 04:07:09 PM »
'যে ব্যক্তি কাউকে গোপনে উপদেশ                         
দিল সে তাকে খুশি করল ও সুশোভিত
করল আর যে ব্যক্তি প্রকাশ্যে
কাউকে উপদেশ দিল সে যেন তাকে
লাঞ্চিত ও কলংকিত করল

-শেখ সাদী



223
👉👉👉তুমি ভাবছো কাল থেকে নামাজ পড়বে কিন্তু এটাও হতে পারে আজ লোকে তোমার জানাযার নামাজ পড়বে। তোমার মতো এমন অনেক লোক ঠিক এমনটাই ভেবেছিল যে, কাল থেকে নামাজ আদায় করবো। কিন্তু তাদের আর নামাজ পড়া হয়নি, আজ তারা কবরে শুয়ে আছে। 😢😢😥

🔹🔹আল্লাহর দেয়া ইবাদতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ইবাদত হল নামাজঃ

রাসূল (সঃ) বলেছেন, কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম যে কাজের হিসাব নেয়া হবে তা হল নামাজ।___________( তিরমিযী, - ৪১৩, ৪৬৫ )

তাই নামাজ নিয়ে কোনো অযুহাত নয় ইচ্ছা থাকলে আল্লাহ্ ভয় থাকলে যেকোন অবস্থায়, যেকোন জায়গায় নামাজ আদায় করা যায়।

🔹🔹মহান আল্লাহ্ তার কালামে পাকে বলেনঃ

নিশ্চয়ই নামাজ তোমাদেরকে নির্লজ্জ ও অশোভনীয় কাজ হইতে বাধা প্রধান করিবে, আর অবশ্যই আল্লাহ পাকের জিকির অতি মহান।___________ [ সূরা আনকাবুতঃ ৪৫ ]

হে যুবক ভাই একটু ভেবে দেখ, বেঁচে আছ সবাই তোমার পাশে আছে কিন্তু একদিন তো মরতেই হবে । সেদিন কি হবে উপায়..? আল্লাহর কাছে কি জবাব দিবে? যে যাই করনা কেন, নামাজ পড়। টেনশন দূর করে দেবেন আল্লাহ। আল্লাহ তুমি আমাদের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ সময়মত আদায় করার তৌফিক দান করো। আল্লাহ তুমি নামাজের ফজিলত আমাদের বোঝার তৌফিক দাও। 🤲🤲🤲আমিন।

Pages: 1 ... 13 14 [15]