Daffodil International University

Health Tips => Health Tips => Thyroid => Topic started by: taslima on February 22, 2016, 01:13:18 PM

Title: থাইরয়েড হরমোন বেড়ে গেলে কী হয়
Post by: taslima on February 22, 2016, 01:13:18 PM
শরীরের গুরুত্বপূর্ণ একটি গ্রন্থি থাইরয়েড। শরীরে থাইরয়েড হরমোন বেড়ে গেলে বিভিন্ন সমস্যা হয়। এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. নুরুন নাহার। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন অ্যান্ড অ্যালায়েড সাইন্সেন থাইরয়েড বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত আছেন। আজ ১১ ফেব্রুয়ারি এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিনের ২২৯৪তম পর্বে অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হয়। 

প্রশ্ন : থাইরয়েড গ্রন্থি কী? এর অবস্থান কোথায় এবং এটি এত গুরুত্বপূর্ণ কেন?

উত্তর : থাইরয়েড গ্রন্থি একটি এনড্রোক্রাইন গ্ল্যান্ড। এটা মানুষের গলার সামনে অবস্থিত। এখান থেকে থাইরয়েড হরোমন তৈরি হয়। এই হরমোন শরীরের সব রেচন প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে।

বাচ্চাদের ক্ষেত্রে শারীরিক ও মানসিক বিকাশে বিশেষ ভূমিকা রাখে। থাইরয়েড গ্রন্থি ঠিকমতো কাজ না করলে শারীরিক এবং মানসিক বৃদ্ধি ব্যহত হয়। একজন শিশু যদি ছোট বেলা থেকে এর অভাবে ভোগে তাহলে সে প্রতিবন্ধী হয়ে বড় হবে। যদি তাকে চিকিৎসা দেওয়া না হয়। সে বুদ্ধি ও শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়ে যাবে।

প্রশ্ন : থাইরয়েড গ্রন্থির সাধারণত কী ধরনের সমস্যা হতে পারে?

উত্তর : জন্মগতভাবেই যদি বাচ্চার থাইরয়েড গ্রন্থি তৈরি না হয়, অথবা ভুলভাবে তৈরি হয়, ঠিক মতো বৃদ্ধি না পায়, অথবা তৈরি হলেও ঠিকমতো কাজ না করে, তাহলে থাইরয়েড হরমোন তৈরি হবে না। সে ক্ষেত্রে বাচ্চার শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ব্যহত হবে।
 


আর বড়দের ক্ষেত্রে থাইরয়ড গ্রন্থির বিভিন্ন রকম রোগ হতে পারে। থাইরয়েড যে হরমোন তৈরি করছে এটি একটি স্বাভাবিক মাত্রার মধ্যে থাকবে। তবে যদি স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে কম তৈরি হয়, একে বলা হয় হাইপোথাইরয়েডিজম। এতে বিভিন্ন রকম অসুবিধা হয়। আবার যদি বেশি তৈরি হয়, বলা হয় হাইপার থাইরয়েডিজম। সেখানে আবার নানা রকম সমস্যা হবে। এটি হচ্ছে কাজঘটিত সমস্যা। 

এ ছাড়া যে সমস্যা হতে পারে, থাইরয়েড গ্রন্থি নিজেই বড় হয়ে যেতে পারে। যাকে আমরা বলি গলগণ্ড। এখানে থাইরয়েড গ্রন্থি বড় হয়ে যায়। এটি বিভিন্নভাবে বড় হতে পারে, বিভিন্ন কারণে বড় হতে পারে। আয়োডিনের অভাব আছে এমন এলাকায় যারা বাস করে তাদের হতে পারে বা যারা কম খায় তাদের হতে পারে। সে ক্ষেত্রে আয়োডিন ডেফিসিয়েন্সি গয়েটার বা এনডিমিক গয়েটার হয়। গ্রন্থিটি সমানভাবে বড় হয়ে যেতে পারে।

আয়োডিন যেহেতু হরমোন তৈরির বিশেষ একটি উপাদান। আয়োডিন যদি কম থাকে গ্রন্থি চেষ্টা করবে শরীরের হরমোনকে স্বাভাবিক রাখতে। সেই ক্ষেত্রে সে আস্তে আস্তে বড় হয়ে যাবে। যাকে হাইপারট্রোফি বলা হয়। গ্রন্থি বড় হয়ে যাবে। তবে হরমোন স্বাভাবিকভাবে বের করার চেষ্টা করবে। করতে করতে এক সময় আর স্বাভাবিকভাবে তৈরি করতে পারবে না। সেক্ষেত্রে হাইপোথাইরয়েডিজম হয়ে যাবে। যদি লবণের মাধ্যমে আয়োডিন থাকার কারণে আমাদের দেশে এই রোগ অনেকটা কমে গেছে।

 

প্রশ্ন : এ ছাড়া আর কী সমস্যা হতে পারে?

উত্তর : থাইরয়েড গ্রন্থিতে টিউমার হতে পারে। যেটাকে নডিউল বলা হয়। সিঙ্গেল (একটি) নডিউল হতে পারে, মাল্টিপল (অনেক) নডিউল হতে পারে। সিঙ্গেল নডিউল হলে একটি কারণে হয়। যেমন ফলিকুলার এডিনোমা। এটি বেনাইন ধরনের। সিস্ট হতে পারে। কলোয়েড গয়েটার হতে পারে। এগুলো সবই ক্যানসার তৈরিকারী নয়। তবে অনেক সময় ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে। যাকে সাধারণত থাইরয়েড ক্যানসার বলা হয়।

প্রশ্ন : একজন মানুষের হাইপোথাইরয়েডিজম হলে কী ধরনের সমস্যা হতে পারে? আর হাইপার হলেই বা কী ধরনের সমস্যা হবে?

উত্তর : যেহেতু থাইরয়েড হরমোন আমাদের শরীরের বিপাকে সাহায্য করে এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে কাজকর্ম করতে সাহায্য করে, সেজন্য যখন থাইরয়েড হরমোন কম থাকবে বা হাইপোথাইরয়েডিজম হবে, সে ক্ষেত্রে সব কাজকর্ম ধীর গতির হয়ে যাবে। ধীর গতির হয়ে গেলে রোগী দুর্বল হবে। রোগীর ওজন বেড়ে যাবে। কোষ্টকাঠিন্য হবে। পালস রেট কমে যাবে। সহজেই তার শীত লাগবে। যদি হাইপো হয়, কাজ কমে যায় তাহলে এই ধরনের সমস্যা থাকবে।

আর যদি কাজ বেড়ে যায়, যেটা হাইপার থাইরয়েডিজম সেখানে থাইরয়েড গ্রন্থি বেশি বেশি কাজ করবে, সব পদ্ধতির কাজগুলো বেড়ে যাবে। রোগী তখন অস্থির হয়ে যাবে। তার পালস রেট বেড়ে যাবে। পালপিটেশন হবে, হাত কাঁপবে। তার বাউয়েল মুভমেন্ট বেড়ে যাবে। বারেবারে পায়খানা হবে। আর তার ওজন কমে যাবে তবে ক্ষুধা বেশি থাকবে। গরম লাগবে, অস্থির ও দুর্বল লাগবে।

প্রশ্ন : এই রোগ নির্ণয়ের জন্য নিউক্লিয়ার মেডিসিনের কাজ কী?

উত্তর : নিউক্লিয়ার মেডিসিনে থাইরয়েডের যেসব পরীক্ষা করে থাকি, তার মধ্যে প্রথম হলো থাইরয়েডের হরমোন। টিথ্রি, টিফোর, ফ্রি টিথ্রি, থ্রিটিফোর এবং থাইরয়েড হরমোন নিয়ন্ত্রণ করে টিএসএইচ- এই হরমোনগুলোর আমরা করে থাকি।

এ ছাড়া নির্দিষ্ট পরিমাণ তেজস্ক্রিয় আয়োডিন রোগীকে খাওয়ানোর পরে, নির্দিষ্ট সময় পরে কত শতাংশ আপটেক হচ্ছে থাইরয়েড গ্রন্থিতে এটি দেখি। দেখে আমরা বলতে পারি এর কার্যকারিতা কম, না কি বেশি। যেমন : হাইপার থাইরয়েডিজমে আপটেকটা বেড়ে যাবে। হাইপো থাইরয়েডিজমে কমে যাবে।

তারপর আমরা থাইরয়েডের স্ক্যান করি। এখানে নির্দিষ্ট পরিমাণ তেজস্ক্রিয় আয়োডিন আমরা রোগীকে দেই। মুখে দেই, কিছু ইনজেকশনের মাধ্যমে দেই। এটি দেওয়ার নির্দিষ্ট সময় পরে আমরা গামা ক্যামেরা দিয়ে স্ক্যান করি। গামা ক্যামেরা হলো এমন একটি ক্যামেরা যে গামা-রে নিতে পারে। যেহেতু আমরা তেজস্ক্রিয় আইসোটো রোগীকে রেডিয়েশন দিয়েছি, এখান থেকে গামা-রে নির্গত হচ্ছে।

এখন এই গামা ক্যামেরা গামা-রে-কে তুলে নেবে। করে পরবর্তীকালে ছবি হিসেবে আমাদের দেবে। এখন স্ক্যানের মাধ্যমে আমরা দেখব থাইরয়েড গ্রন্থিটা বড় কি না। তার অবস্থানটা ঠিক আছে কি না। তার কার্যক্রম ঠিক আছে কি না।

আর যদি কোনো নডিউল থাকে, এর কার্যকারিতা কেমন সেটি দেখব। অর্থাৎ নিডিউলটা কাজ করছে, নাকি কাজ করছে না। এই সব কিছুই আমরা এর মাধ্যমে দেখতে পারব।

প্রশ্ন : আপনারা যেসব পরীক্ষা করে থাকেন এগুলো তো প্যাথলোজিতেও করা হয়। তাহলে প্যাথলোজির সাথে নিউক্লিয়ার মেডিসিনের এই পরীক্ষাগুলোর পার্থক্য কী?

উত্তর : প্যাথলোজিতে যেটা হচ্ছে সেটাও ভালো। আমাদেরটা নিজস্বতা হলো এখানে আমরা রেডিওআইসোটোপ ব্যবহার করে পরীক্ষা করি।

প্রশ্ন : তাতে লাভ কী হচ্ছে?

উত্তর : এটি খুব স্পর্শকাতর। আমরা আয়োডিন ওয়ান টুয়েন্টিফাইভ ব্যবহার করি। অনেক পর্যায় আছে এই পরীক্ষায়। এরপর আমরা যেই ফলাফল পাই, সেটি অনেক স্পর্শকাতর ফলাফল এবং নির্ভল ফলাফল। নিউক্লিয়ার মেডিসিনের মাধ্যমে এর পরীক্ষা হলে এটি নির্ভুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
 

প্রশ্ন : এই ক্ষেত্রে আপনি বলছিলেন যে তেজস্ক্রিয় পদার্থ দেন। তেজস্ক্রিয় নাম শুনলেই তো আমাদের ভয় ভয় লাগে। এতে কোনো ক্ষতি হতে পারে কি?

উত্তর : আমরা যে পরিমাণ তেজস্ক্রিয় পদার্থ ব্যবহার করি, এটি পরিমাণে খুবই কম। যদি বলি যে, থাইরেড স্ক্যানে আমরা যেটুকু তেজস্ক্রিয় পদার্থ ব্যবহার করছি সেটি খুবই কম। এতে ক্ষতির কোনো আশঙ্কা নেই।

প্রশ্ন : হাইপোথাইরয়েডিজম বা হাইপার থাইরয়েডিজমের বেলায় কী চিকিৎসার ক্ষেত্রে নিউক্লিয়ার মেডিসিনের কোনো প্রভাব রয়েছে?

উত্তর : হাইপোথাইরয়েডিজমে চিকিৎসা হলো থাইরয়েড হরমোন। এবং এই চিকিৎসা যেকেউই করতে পারে। একজন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, একজন এন্ড্রোক্রাইনোলজিস্ট এবং একজন নিউক্লিয়ার মেডিসিন বিশেষজ্ঞ। এটা সবাই করতে পারে। এখানে নিউক্লিয়ার মেডিসিনের আলাদা করে কোনো ভূমিকা নেই। তবে যখন হাইপার থাইরয়েডিজমের বিষয়টি আসে, সেখানে নিউক্লিয়ার মেডিসিনের একটি বড় ভূমিকা রয়েছে।

হাইপার থাইরয়েডিজম বিভিন্ন রকমের হয়, হাইপার থাইরয়েডিজমের চিকিৎসা হচ্ছে অ্যান্টিথাইরয়েড ওষুধ। যেটি থাইরয়েড গ্রন্থির কার্যকারিতাকে কমিয়ে দেবে। ওষুধের পাশাপাশি সার্জারি করা যেতে পারে। যেহেতু গ্রন্থিটি বেশি কাজ করছে, তাই কিছু অংশ কেটে কার্যকারিতা কমিয়ে দেওয়া যেতে পারে এবং রেডিও আয়োডিন থেরাপি, আমরা নিউক্লিয়ার মেডিসিনে ব্যবহার করি। এর ভূমিকা খুবই ভালো। যখন অ্যান্টি থাইরয়েড ওষুধ ব্যবহার করা হয়, এটি বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেড় থেকে দুই বছর ব্যবহার করা হয়। তার পর এই ওষুধ তাকে বন্ধ করে দিতে হবে। রোগী যদি স্বাভাবিক থাকে, খুব ভালো কথা, তবে যদি আবারও হয় এই ওষুধ দিয়ে তাকে চিকিৎসা করার কোনো সুযোগ নেই। রেডিও অ্যাকটিভ আয়োডিন দিয়ে হাইপার থাইরয়েডিজমের ভালো চিকিৎসা হয়।   
http://www.ntvbd.com/health/38469/%E0%A6%A5%E0%A6%BE%E0%A6%87%E0%A6%B0%E0%A7%9F%E0%A7%87%E0%A6%A1-%E0%A6%B9%E0%A6%B0%E0%A6%AE%E0%A7%8B%E0%A6%A8-%E0%A6%AC%E0%A7%87%E0%A7%9C%E0%A7%87-%E0%A6%97%E0%A7%87%E0%A6%B2%E0%A7%87-%E0%A6%95%E0%A7%80-%E0%A6%B9%E0%A7%9F