1
Common Forum/Request/Suggestions / অনুকরণ ও অনুসরণ কাকে করছি
« on: July 05, 2023, 05:16:38 PM »
অনুকরণ ও অনুসরণ কাকে করছি
المَرْءُ مَعَ مَنْ أَحَبَّ
অর্থঃ দুনিয়াতে যার সাথে যার সম্পর্ক ঠিক যেমন হবে, তার সাথে তার হাশর হবে।
যে দল-মত-পথকে আমি অন্তর দিয়ে ভালোবাসব সে দল-মত-পথের অনুসারী হিসেবেই আমি বিবেচিত হব। আমার নাম যমিনে যে খাতায় লেখাব আসমানে সে খাতায় উঠবে।
এমনকি যদি কেউ নামাযী, হাজীও হয়, কিন্তু তার মেলামেশা কোনো বিশেষ গোষ্ঠির সাথে হয় যারা দ্বীনদারীর বিপক্ষে আপোষ করে , বিচিত্র নয় যে, ক্রমেই সে ঐ গোষ্ঠির অনুসারী হতে থাকে এবং নিজের অজান্তেই তার দ্বীনও বিকৃত হয়ে যায়। শুধু অসৎ সঙ্গের কারণেই যেখানে ঈমান, আমল ও কাজের ব্যাপক ক্ষতি হয়ে থাকে, সেখানে কোনো পথভ্রষ্ট কওম, জাতি বা দলের অনুসরণ যে কত মারাত্মক ক্ষতিকর সেতো সহজেই অনুমেয়।
কিন্তু এ বিষয়ে ব্যাপক উদাসীনতা পরিলক্ষিত হয়। এর অন্যতম একটি কারণ “হুব্বে জাহ”-পদবি, ক্ষমতা ও সম্মানের মোহ। এটি অন্তরের একটি মারাত্মক রোগ। নিজেরটা সাধারণত নিজে বোঝা যায় না। বিভিন্ন সুন্দর মোড়কে এ রোগ ঢাকা থাকে। কেউ সমাজসেবী সাজে। কেউ সাজে প্রাতিষ্ঠানিক প্রেমিক। কেউ বা একদম দ্বীন অর্থাৎ ইসলামের খাটি খাদেমবেশে আবির্ভূত হয়। কিন্তু বাস্তবে সে হুব্বে জাহ-এর জটিল একজন রোগী!
সাধারণভাবে কোনো মানুষই কি এমন হয় যে “ ভালো কাজের প্রতিদান দিতে জানে না”?! এটাতো বরং তাদের গুণ যারা এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ অজ্ঞ, বেপরোয়া , বেখবর অথবা নিজেকে এ থেকে রক্ষায় সচেষ্ট।
যারা আল্লাহকে রাজিখুশি করার নিয়তে আল্লাহর ভয়ে ও প্রতিষ্ঠানের ক্ষতির ভয়ে প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রকৃত নিবেদিত হতে চায় তারা এর ক্ষতির আশংকায় এ থেকে বাঁচার জন্য অনেক সতর্কতার সাথে চলে থাকে। কারণ সূক্ষ্মভাবে এ আহবান সবার কাছে আসে। শয়তানরুপে মানুষগুলো ভালো মানুষের ছোট ছোট লোলুপ দৃষ্টির অপেক্ষায় থাকে; এক-দুইটা লোভাতুর দৃষ্টি দিলেই ভয়ংকর ছোবল দেয়। তখন মানুষ হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। জেনে-শুনেও তারপর বাঁচা মুশকিল হয়। কারণ পার্থিব পদবি, ক্ষমতা ও সম্মান দানের ভৃত্যরা মুখে হাসি আর হাতে উপঢৌকন নিয়ে সংবর্ধনা জানায়। প্রতিষ্ঠানের ক্রান্তিকালে তিনিই যে মহৎ কাজ সিদ্ধির প্রকৃত নায়ক ও বীর-বাহাদুর-এ কথা ভক্তিভরে সবাইকে জানানো ও বোঝানো হয়। এ কথাও বোঝানো হয় যে, এই যে প্রতিষ্ঠানের জন্য এতো কিছু করা সবই আমার করা। যাচাই বাছাই না করে তার কথা ও আহবানে সাড়া দেয়। সেগুলি যদি আল্লাহ ও তার রাসূলের বিরুদ্ধেও হয় সেটা সে ভক্তবৃন্দের মনরক্ষায় বলতে লজ্জা পায়! তার কাছে সম্মান হারানোটাও বড় ঝুঁকি বলে মনে হয়। এগুলো তার কাছে জীবন-সাফল্যের পুজি বলে মনে হয়।
এ হুব্বে জাহ থেকে বাঁচার উপায় কি? কবরের মাটিতে দেহ মেশার আগেই নিজে মাটি হয়ে যাওয়া। পার্থিব সব মোহ থেকে নিজেকে পৃথক করে ফেলা। অর্থাৎ, শুধু আল্লাহর জন্য খালেস নিয়তে প্রতিষ্ঠানে নিজেকে বিলীনের সাধনায় লেগে যাওয়া। কোনোভাবেই নিজ স্বীকৃতির চিন্তা মাথায় না আনা। এই পথ-এ সুযোগ সামনে এলেই এড়িয়ে যাওয়া। মানুষের মিষ্টি কথাকে দোযখের আগুনের প্রতি আহবান আশংকা করে সেগুলি থেকে বেঁচে চলা। যেখানেই সন্দেহ ও দ্বিধা, সেখানেই উচু শ্রেণীর দ্বীনদারদের পরামর্শ নিয়ে পথ চলা।
যুগে যুগে যারা বেঁচেছেন তারা শয়তানরুপে মানুষের অনুসরণ করেনি। তারা কোনো দল-মত-পথ অবলম্বনে আল্লাহ পাকের নিয়ম-নীতির বিরুদ্ধে কোনো আপোষ করেননি। যারা আপোষে কিছু শিথিলতা করেছেন, আল্লাহর পানাহ, তারাও পর্যন্ত বাঁচতে পারেননি।
আল্লাহ তায়ালা মানুষকে ইচ্ছাশক্তি প্রয়োগের ক্ষমতা দিয়েছেন। এটাকে যেদিকে প্রয়োগ করা হবে সেদিকে মানুষ ধাবিত হবে। আমাদের চিন্তা-চেতনা আর কাজ-কর্ম (তথা আমল) বলে দেবে আমি কোন পথে আছি, কার সাথে আছি। চিন্তাগত ও কর্মগত প্রচেষ্টার প্রাধান্য আমাকে একদিকে নিবেই, মাঝামাঝি থাকতে দেবে না। এক্ষেত্রে মাঝামাঝি থাকার অর্থ দু-মুখো থাকা। যেটা ভ্রষ্টতা বৈ কিছু নয়। তাই দু'কূল রক্ষা হবে না।
হে আল্লাহ! তুমি আমাদের অন্তরকে তোমার দ্বীনের দিকে ঘুরিয়ে দাও। আমীন।