Show Posts

This section allows you to view all posts made by this member. Note that you can only see posts made in areas you currently have access to.


Messages - ahsanpnd

Pages: [1]
1
বিভিন্ন সময় পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে ভূমিকম্প হয়। কোথাও তীব্রতা বেশি, কোথাও কম।
তবে যেমনই হোক, ভূমিকম্প হলো মানুষের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে সতর্কবার্তা। যেন মানুষ তাওবা করে মহান আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করে। নিজেদের আচার-আচরণ শুধরে নেয়। সার্বিক নিরাপত্তার জন্য দোয়া করে। আল্লাহকে অনেক বেশি স্মরণ করে এবং তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে।
শুক্রবার (২৬ নভেম্বর) ভোর ৫টা ৪৫ মিনিটে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূ-কম্পন অনুভূত হয়। এ ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল মিয়ানমারের চিন রাজ্যের রাজধানী হাখা শহরের ২০ কিলোমিটার উত্তর উত্তর-পশ্চিমে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনাইটেড স্টেটস জিওলজিক্যাল সার্ভে (ইউএসজিএস) ও আর্থকোয়াকট্র্যাকার ডটকম জানায়, বাংলাদেশের স্থানীয় সময় ৫টা ৪৫ মিনিটের এ ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫.৮।

বুয়েটের গবেষকদের প্রস্তুতকৃত ভূকম্পন-এলাকাভিত্তিক মানচিত্রে দেখা যায়, বাংলাদেশের ৪৩% এলাকা ভূমিকম্পের উচ্চমাত্রার ঝুঁকিতে (জোন-১), ৪১% এলাকা মধ্যম (জোন-২) এবং ১৬% এলাকা নিম্ন ঝুঁকিতে (জোন-৩) রয়েছে। অথচ ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দের ভূকম্পন মানচিত্রে ২৬% উচ্চ, ৩৮% মধ্যম এবং ৩৬% নিম্ন ঝুঁকিতে ছিল।

মানচিত্র অনুযায়ী মাত্রাভেদে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকার অবস্থান নিম্নরূপ
জোন-১ : পঞ্চগড়, রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, জামালপুর, শেরপুর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সম্পূর্ণ অংশ, ঠাকুরগাঁও, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও কক্সবাজারের অংশবিশেষ।
জোন-২ : রাজশাহী, নাটোর, মাগুরা, মেহেরপুর, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফেনী ও ঢাকা।
জোন-৩ : বরিশাল, পটুয়াখালী, এবং সব দ্বীপ ও চর। 

তবে দেখা যাচ্ছে, ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে ভূমিকম্পের হার বেড়ে গেছে। ঘন ঘন ভূমিকম্প হচ্ছে। কেবল তাই নয়, গবেষকরা জানিয়েছেন, যেকোনো সময় বাংলাদেশে রিখটার স্কেলে ৮ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানতে পারে বলেও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী ভূমিকম্প হওয়ার কারণ
প্রাকৃতিক নানা বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ মানুষের অপকর্ম। এগুলোর পথ ধরেই মানুষ কিয়ামতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে সতর্ক করে প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন, ‘যখন অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জিত হবে। কাউকে বিশ্বাস করে সম্পদ গচ্ছিত রাখা হবে, কিন্তু তা আত্মসাত করা হবে (অর্থাৎ যার সম্পদ সে আর ফেরত পাবে না)। জাকাতকে দেখা হবে জরিমানা হিসেবে। ধর্মীয় শিক্ষা ছাড়া বিদ্যা অর্জন করা হবে, একজন পুরুষ তার স্ত্রীর বাধ্যগত হয়ে মায়ের সঙ্গে বিরূপ আচরণ করবে। বন্ধুকে কাছে টেনে নেবে আর পিতাকে দূরে সরিয়ে দেবে। মসজিদে উচ্চস্বরে শোরগোল (কথাবার্ত) হবে। যখন সবচেয়ে দুর্বল ব্যক্তিটি সমাজের শাসক রূপে আবির্ভূত হবে। সে সময় তোমরা অপেক্ষা করো— রক্তিম বর্ণের ঝড়ের (এসিড বৃষ্টি), ভূকম্পনের, ভূমিধসের, রূপ বিকৃতির (লিঙ্গ পরিবর্তন), পাথর বৃষ্টির এবং সুতো ছেঁড়া (তাসবিহ) দানার ন্যায় একটির পর একটি নিদর্শনগুলোর জন্য। ’ (তিরমিজি, হাদিস নং : ১৪৪৭)

আল্লামা ইবনু কাইয়িম (রহ.) বলেন, মহান আল্লাহ মাঝে মাঝে পৃথিবীকে জীবন্ত হয়ে ওঠার অনুমতি দেন। ফলে বড় ধরনের ভূমিকম্প অনুভূত হয়। তখন এই ভূমিকম্প মানুষকে ভীত করে। তারা মহান আল্লাহর নিকট তাওবা করে, পাপ কর্ম ছেড়ে দেয়, আল্লাহর প্রতি ধাবিত হয় এবং তাদের কৃত পাপ কর্মের জন্য অনুতপ্ত হয়ে মোনাজাত করে। আগেকার যুগে যখন ভূমিকম্প হতো, তখন সঠিক পথে পরিচালিত সৎকর্মশীল লোকেরা বলতো, ‘মহান আল্লাহ আমাদেরকে সতর্ক করেছেন। ’

ভূমিকম্প বিষয়ে পবিত্র কোরআনের ‘যিলযাল’ নামে স্বতন্ত্র একটি সুরা নাযিল করা হয়েছে। মানুষ শুধু কোনো ঘটনার কারণ সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হয় এবং ভূতত্ত্ববিজ্ঞানও এই কার্যকারণ সম্পর্কেই আলোচনা করে থাকে।

ভূতত্ত্ববিজ্ঞান বলে, ভূ-অভ্যন্তরে শিলায় পীড়নের জন্য যে শক্তির সঞ্চয় ঘটে, সেই শক্তির হঠাৎ মুক্তি ঘটলে ভূপৃষ্ঠ ক্ষণিকের জন্য কেঁপে ওঠে এবং ভূত্বকের কিছু অংশ আন্দোলিত হয়। এমন আকস্মিক ও ক্ষণস্থায়ী কম্পনকে ভূমিকম্প (Earthquake) বলে। সাধারণত তিনটি কারণে ভূমিকম্পের উত্পত্তি হয়ে থাকে—ভূপৃষ্ঠজনিত, আগ্নেয়গিরিজনিত ও শিলাচ্যুতিজনিত কারণে ভূমিকম্প হয়।

মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি ভয় দেখানোর জন্যই (তাদের কাছে আজাবের) নিদর্শনগুলো পাঠাই। ’ (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত নং : ৫৯)। আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন, “বলে দাও, ‘আল্লাহ তোমাদের ওপর থেকে অথবা তোমাদের পায়ের নিচ থেকে আজাব পাঠাতে সক্ষম। ’ (সুরা আনআম, আয়াত নং : ৬৫)

বুখারি শরিফে আছে, জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘যখন তোমাদের পায়ের নিচ থেকে আজাব পাঠাতে সক্ষম’ আয়াতটি নাজিল হলো, তখন রাসুল (সা.) বললেন, ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। ’ ”(বুখারি)
শায়খ ইস্পাহানি (রহ.) এই আয়াতের তাফসির করে বলেন, ‘এর ব্যাখ্যা হলো, ভূমিকম্প ও ভূমিধসের মাধ্যমে পৃথিবীর অভ্যন্তরে ঢুকে যাওয়া (পৃথিবীতে ভূমিকম্প হওয়া)। ’

ভূমিকম্প কেয়ামতের একটি আলামত
রাসুল (সা.) বলেছেন, যে পর্যন্ত না ইলম উঠিয়ে নেওয়া হবে, অধিক পরিমাণে ভূমিকম্প হবে, সময় সংকুচিত হয়ে আসবে, ফিতনা প্রকাশ পাবে এবং খুনখারাবি বাড়বে, তোমাদের সম্পদ এতো বাড়বে যে, উপচে পড়বে। (বোখারি, হাদিস নং : ৯৭৯)
বর্তমানে যেসব ভূমিকম্প ঘটছে, তা মহান আল্লাহর প্রেরিত সতর্ককারী নিদর্শনগুলোর একটি। এগুলো দিয়ে তিনি তার বান্দাদের সাবধান করে থাকেন। কার্যত এগুলো মানুষের পাপ ও অপরাধের ফল। আল্লাহ বলেন, ‘যে বিপদ-আপদই তোমাদের ওপর আসুক না কেন, তা হচ্ছে তোমাদের নিজেদের হাতের কামাই। আর আল্লাহ তোমাদের অনেক (অপরাধ) ক্ষমা করে দেন। ’ (সুরা শুরা : ৩০)

কয়েক বছর আগে নেপালে ভূমিকম্প হলে সেখানকার হিন্দু ধর্মীয় নেতৃবন্দ বলেছিলেন, বহু পূর্বেই আমরা অশ্লীলতা ও বেহায়াপনার আধিক্য দেখে সবাইকে সাবধান করেছিলাম। অন্যায় ও পাপাচার বৃদ্ধি পাওয়ায় ভগবান ক্ষুব্ধ হয়ে ভূমিকম্পরূপে শাস্তি পাঠিয়েছেন। ভারতের মন্দিরে আতশবাজি বিস্ফোরণে শতাধিক ভক্ত নিহত ও প্রায় তিনশ’ গুরুতর আহত হওয়ার পেছনেও পাপাচারে মানুষের সীমালঙ্ঘনকে দায়ী করেছেন ধর্মীয় নেতারা। বছর কয়েক আগে কেদারনাথে প্রবল বন্যায় বহু হতাহতের জন্যে মানুষের পাপ ও সীমালঙ্ঘনকেই দায়ী করা হয়। ইহুদি ও খ্রিষ্ট ধর্মেও এমন ধারণা প্রতিষ্ঠিত।

ভূমিকম্প হলে কী করণীয়?
প্রত্যেক মুসলমানের খুবই আন্তরিকভাবে মহান আল্লাহর কাছে তাওবা করা উচিত। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যদি জনপদের মানুষগুলো ঈমান আনতো এবং (আল্লাহকে) ভয় করতো, তাহলে আমি তাদের ওপর আসমান-জমিনের যাবতীয় বরকতের দুয়ার খুলে দিতাম, কিন্তু তারা (আমার নবীকেই) মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে। সুতরাং তাদের কৃতকর্মের জন্য আমি তাদের পাকড়াও করলাম। ’ (সুরা আরাফ : ৯৬)
তাই যখন কোথাও ভূমিকম্প হয় অথবা সূর্যগ্রহণ কিংবা ঝড়ো বাতাস বা বন্যা হয়, তখন সবার উচিত মহান আল্লাহর কাছে অতি দ্রুত তাওবা করা। তার কাছে নিরাপত্তার জন্য দোয়া করা। মহান আল্লাহকে বেশি পরিমাণে স্মরণ করা এবং ক্ষমা প্রার্থনা করা।

প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবল থেকে মুক্তির জন্য দরিদ্র ও মিসকিনদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করা এবং তাদের দান করাও উচিত। কেননা রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘দয়া প্রদর্শন করো, তোমার প্রতি দয়া প্রদর্শন করা হবে। ’ (মুসনাদে আহমদ)
ইতিহাসে আছে, ভূমিকম্প হলে উমর ইবনে আবদুল আজিজ (রহ.) তার গভর্নরদের দান-সদকা করার প্রতি জোর দিয়ে চিঠি লিখতেন। আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে, যা মানুষকে বিপর্যয় (আজাব) থেকে নিরাপদ রাখে। আর তা হলো, যথাসাধ্য সমাজে প্রচলিত জিনা-ব্যভিচার, অন্যায়-অবিচার রোধ করা। হাদিস শরিফে এসেছে, সমাজে ব্যভিচার বেড়ে গেলে ভূমিকম্প হয়।

বলা যায়, ধেয়ে আসছে আরও ভয়াবহ ভূমিকম্প। তাই কালক্ষেপন না করে নিজেদের শুধরে নেওয়া উচিত। আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাদের রক্ষা করুন এবং নিরাপদ রাখুন।

2
Common Forum/Request/Suggestions / Re: নিষিদ্ধ গাছ
« on: January 20, 2022, 10:36:30 AM »
খুব সুন্দর পোস্ট

3
এতে কোনো সন্দেহ নেই যে- কেউ যদি অর্থ না বুঝেও কুরআন তেলাওয়াত করে, তার বিনিময়ে আল্লাহতায়ালা তাকে সওয়াব দান করবেন। আল্লাহর রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি কুরআনের একটি হরফ পড়বে, সে একটি নেকি পাবে, আর প্রতিটি নেকি দশ গুণ করে বৃদ্ধি করে দেওয়া হবে। আমি বলি না যে, আলিফ-লাম-মিম মিলে একটি হরফ; বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ, এবং মিম আরেকটি হরফ।’ (তিরমিজি, হাদিস ২৯১০)

তবে এই হাদিসের মর্ম এই নয়— অর্থ না বুঝে  কুরআন পড়ার ওপর স্থির হয়ে বসে থাকতে হবে অথবা অর্থ বোঝার চেষ্টাপ্রচেষ্টা করা লাগবে না। কুরআন যেহেতু আল্লাহর পয়গাম, প্রত্যেক বান্দার জন্য ফরজ হচ্ছে পয়গামকে বুঝে কার্যত বাস্তবায়ন করা।

কুরআন শিক্ষার প্রথম ধাপে অথবা যার জন্য অর্থ বুঝে পড়া সম্ভব নয়, তার জন্য হতে পারে অন্তত আল্লাহর কালামের নুরানিয়াত ও রুহানিয়াত উপলব্ধির জন্য হলেও না বুঝে পাঠ করা।

মানুষ যেন কোনো আপত্তিতে কুরআন থেকে দূরে না সরে যায়, এই জন্য প্রথম ধাপে না বুঝে হলেও তাকে কুরআন পড়তে হবে। কিন্তু কেবল কুরআন তেলাওয়াত শিখেই বসে থাকলে চলবে না, বরং তাকে আল্লাহর নির্দেশিত পন্থায় বুঝে কুরআন পাঠ করাও জরুরি। কেননা অর্থ বুঝে কুরআন পড়াই কোরআনের দাবি।

আল্লাহ পাক নিজেই তার কিতাবে বলেন: এটি একটি অত্যন্ত বরকতময় কিতাব, যা আমি তোমার ওপর নাজিল করেছি, যাতে এরা তার আয়াত সম্পর্কে চিন্তা-ফিকির করে এবং জ্ঞানী ও চিন্তাশীলরা তা থেকে শিক্ষা নেয়। (সুরা সোয়াদ : আয়াত ২৯)

তারা কি কুরআন সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করে না? (সুরা নিসা : আয়াত ৮২)

আমি এ কুরআনকে উপদেশ লাভের সহজ উৎস বানিয়ে দিয়েছি। তো উপদেশ গ্রহণকারী কেউ আছে কি? (সুরা কমার: আয়াত ১৭)

হে লোকসকল! আমি তোমাদের প্রতি এমন একটি কিতাব অবতীর্ণ করেছি যার মধ্যে তোমাদেরই কথা আছে, তোমরা কি তারপরও বুঝো না? (সুরা আম্বিয়া : আয়াত ১০)

এভাবে আমি বিশদভাবে আয়াতের বর্ণনা করে থাকি তাদের জন্য যারা চিন্তাভাবনা করে। (সুরা ইউনুস: আয়াত ২৪)

আর আমি মানুষদের বোঝানোর জন্যে এ কুরআনে সব ধরনের উদাহরণই পেশ করেছি।  (সুরা রূম: আয়াত ৫৮)

আর এ কুরআনকে আমি অল্প অল্প করে নাজিল করেছি, যাতে করে তুমি যথাসময়ে তা লোকদেরকে পড়ে শোনাও এবং (এই কারণেই) তাকে পর্যায়ক্রমে নাজিল করেছি। (সুরা বনি ইসরাইল : আয়াত ১০৬)

তুমি এ কাহিনি তাদেরকে শোনাতে থাকো, হয়তো তারা কিছু চিন্তা-ফিকির করবে। (সুরা আ’রাফ: আয়াত ১৭৬)

এসব আয়াত প্রমাণ করে কুরআন কেবল সওয়াব অর্জনের মাধ্যম নয়, বরং তা পাঠ করে বোঝে-সমঝে কার্যত বাস্তবায়ন করাই কুরআন পাঠের মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিৎ।

এই আয়াতগুলো উল্লেখ করে মাওলানা ওবায়দুল্লাহ সিন্ধি বলেন, আল্লাহর ভাষ্য থেকে আমরা কুরআন পাঠের তিনটি দিকনির্দেশনা পাই-

(এক) কুরআন মনোযোগ সহকারে ও ধীরেধীরে পড়তে হবে। এবং তা নিয়ে চিন্তা-ফিকির ও প্রায়োগিক গবেষণা করতে হবে।

(দুই) যা পড়বে, সেই অনুযায়ী কাজ করতে হবে। কেননা মানুষকে সৃষ্টিই করা হয়েছে উত্তম কাজের জন্যে।

(তিন) কুরআনি শিক্ষা ব্যক্তিজীবনে প্রয়োগের ক্ষেত্রে আল্লাহর রাসুলের (সা.) জীবন ও কর্ম অনুসরণ করতে হবে। কোনো শিক্ষা বাস্তবায়ন তখনই খুব সহজ হয় যখন তার কোনো বাস্তব নমুনা থাকে। এর ফলে বিভিন্ন লোকের মতের বিভিন্নতার কারণে অনৈক্য হয় না, এবং বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ি থেকে নিরাপদ থাকা যায়। কুরআনে আল্লাহ কুরআন শিক্ষার যে নিয়ম বর্ণনা করেছেন, আল্লাহর রাসুলও (সা.) সেই নিয়ম অনুসরণ করেছেন এবং কামিয়াব হয়েছেন।

আল্লাহর রাসুল (সা.) কুরআনের প্রত্যেকটি আয়াত নিয়ে চিন্তা-ফিকির করতেন। একই আয়াত বারবার বারবার পড়তেন। এমনও হয়েছে, একটি আয়াত পড়ছেন তো পড়ছেন, রাত পার হয়ে সকাল হয়ে গেছে।

ইমাম ইবন কাইয়িম তার ‘যাদুল মাআদ’ কিতাবে লিখেন— ‘আল্লাহর রাসুল (সা.) খুব থেমে থেমে সুরা পড়তেন। এমনকি একটি ছোট সুরা পড়তে দীর্ঘ সুরার চেয়ে বেশি সময় লাগাতেন। কখনো কখনো একটি আয়াত বারবার পড়তে পড়তে সকাল বানিয়ে ফেলতেন।’

হজরত ইবন মাসউদ (রা.) বলেন, ‘কুরআন আস্তে আস্তে ও চিন্তা-ফিকির করে পড়া, যদিও অল্প পড়া হয় তবু দ্রুত পড়ার চেয়ে উত্তম। কেননা কুরআন পড়ার উদ্দেশ্য তা বোঝা ও কার্যত বাস্তবায়নের চিন্তাভাবনা করা— ওই পড়া ও মুখস্তকরণ যেন অর্থোদ্ধার পর্যন্ত পৌঁছায়। এই জন্যই আমাদের কতক মুরুব্বি বলেন, কুরআন নাজিল হয়েছে কুরআন কার্যত বাস্তবায়নের জন্য, কিন্তু লোকজন কুরআন তেলাওয়াতকে আমল বানিয়ে নিয়েছে।

আমাদের অগ্রসূরীদের মধ্যে ‘কুরআনওয়ালা’ তাদের বলা হতো যারা কুরআন সম্পর্কে জ্ঞান রাখতেন, একই সঙ্গে তা কার্যত বাস্তবায়ন করতেন। যদিও তাদের কারো কারো কুরআন মুখস্ত ছিল না।

যে লোকের কুরআন মুখস্ত আছে কিন্তু সে তার অর্থ বুঝে না এবং কার্যত বাস্তবায়নের উপায়ও জানে না, সে ‘কুরআনওয়ালা’ নয়, যদিও প্রত্যেকটা হরফ সম্পর্কে তার জ্ঞান সোজা তীরের মতো ঠিকঠাক হয়।

সাধারণ তেলাওয়াত, যেখানে কুরআন বোঝা ও চিন্তা-ফিকির করার বিষয়টি অনুপস্থিত থাকে, এমন তেলাওয়াত তো ভালো খারাপ মুমিন মোনাফেক— যে কেউ করতে পারে। আল্লাহর রসুল (স) একারণেই বলেন, যে মোনাফেক কুরআন তেলাওয়াত করে তার উদাহরণ ‘রায়হান’ (নামক) সুগন্ধির মতো, তার ঘ্রাণ খুব সুন্দর কিন্তু স্বাদ তিতকুটে।’ (কুরআন পড়ার মূলনীতি, প্রথম অধ্যায়, পৃষ্ঠা ৩৩)

একইরকম বক্তব্য হিকমতে কোরআন ইনস্টিটিউটের প্রধান হজরত আবুল ফজল নুর আহমদ সিন্ধিও দেন। তিনি জোরালো কণ্ঠে বলেন, কুরআন না বোঝার ফলে এই বিশ্বজগত সৃষ্টির মূল উদ্দেশ্যের প্রতিফলন আমাদের চালচলনে পড়ে না।

কুরআনে বারবার বিশ্বজগত ও মানব জাতিকে সৃষ্টির উদ্দেশ্য সবিস্তারে বর্ণনা করা হয়েছে। কুরআন না বোঝার কারণে মানুষ যে আল্লাহর খলিফা, এই জমিনে যে তাকে খলিফার দায়িত্ব আঞ্জাম দেওয়ার জন্য পাঠানো হয়েছে, এসব ধারণা তার চিন্তাভাবনার কেন্দ্র হতে পারে না।

ফলে আমাদের এই ধর্ম একটি পরিপূর্ণ জীবনবিধান হওয়ার বদলে হিন্দুমত, খ্রিষ্টমত ও বুদ্ধমতের কেবল কিছু আধ্যাত্মিক নিয়মকানুনে পরিণত হয়েছে। আমরা ইসলামকে জীবনের সামগ্রিক ক্ষেত্রে না এনে অন্য ধর্মের মতো কেবল কিছু নিয়মসর্বস্ব ইবাদত মনে করি।
‘সকল ধর্মের ওপর শ্রেষ্ঠ’ হওয়ার জন্য পবিত্র কুরআন আমাদের যে পথ ও পদ্ধতি বাৎলিয়েছে, আমরা সেটা ভাবতেও ভীরুতার শিকার হই, কেননা সেই পথ বড় কঠিন ও কুরবানির দাবি রাখে। এরপর আমরা ‘কম খরচে ধর্ম’ পালন করে ‘ধার্মিক’ দাবি নিয়ে নিজের স্বার্থসিদ্ধি আদায়ে উঠেপড়ে লাগি।

ওই সময় আমরা ধর্মের মূলমন্ত্র ও হেকমতের তাগাদা কী— তা জানারও চেষ্টা করি না। আমরা দুর্বোধ্য মন্ত্রবাক্যের মতো কুরআনের শব্দের হাফেজ হয়ে, তারপর কিছু ইবাদত ও রুসুম-রেওয়াজ অনুসরণ করে নিজেদের কেবল দীনদার নই, দীনের ঠিকাদার ভেবে বসি। এবং উদ্দেশ্যহীন কিছু ইবাদত করেই আমরা আল্লাহর নির্দেশিত ইবাদত বা আল্লাহকে পাওয়ার জন্য ইবাদতের দাবিদার হয়ে যাই।

আমরা প্রত্যেকদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করি, দিনে পঞ্চাশ বারের বেশি সুরা ফাতিহা তেলাওয়াত করি। সুরা ফাতিহা যেমন আমাদের জন্য দোয়া, তেমনই আল্লাহর পক্ষ ওয়াদা পূরণের ঘোষণাও। আবার আমাদের কাজের পথ ও গতি বাছাইয়ের মাধ্যমও বটে। কিন্তু আমাদের কয়জনের মনে ‘আল হামদু লিল্লাহি রব্বিল আলামিন’ বলার সময় ‘রব কাকে বলে’ এই প্রশ্ন জাগে? অথবা রবের চিন্তা আমাদের মনোজগতে ভেসে ওঠে কী?

রবুবিইয়াত কাকে বলে অথবা রবুবিইয়াতকে ধারণ করতে দুনিয়ায় আমাদের কোন পথ ও পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে? ‘আলামিন’ অর্থ সমস্ত জগত, তো এই ‘আলামিন’ বলে কী উদ্দেশ্য?

রবুবিইয়াতের সম্পর্ক যেহেতু আলামিনের সাথে, মানে আল্লাহ তাআলা যেহেতু সমস্ত জগতের প্রভু, তো এই ‘সমস্ত জগত’ কতগুলো জগতের সমষ্টি? কতজন লোক ‘আর রহমানির রহিম’ বলার সময় আল্লাহর গুণাবলি কল্পলোকে উপলব্ধি করে এবং কার্যত বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে সেই গুণাবলিকে রাহবার মানে?

নামাজে কি কেউ আল্লাহর দরবারে সৃষ্টির প্রতি তার অনুগ্রহ ও দয়ার রিপোর্ট পেশ করে? ‘মালিকি ইয়াওমিদ্দিন’ তেলাওয়াতের সময় কয়জন নিজের আমলের হিসাব করে বিচার দিবসের মালিকের সামনে উপস্থাপন করে?

কেবল আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগির দাবিদার তার দাবির ভিত্তিতে সেই পবিত্র সত্তার কাছে কী কী সাহায্য চায় এবং কোন কোন মহান উদ্দেশ্য পূরণের মদদ প্রার্থনা করে? যখন তার কাছে ‘সরল সঠিক পূণ্যপন্থা’ বলে দেওয়ার আবদার করে, তখন কাকে সে আদর্শ মানে, ‘আইডিয়াল’ কে থাকে?

যদি হজরত আবু বকর বা ওমর (রা.) তার আইডিয়াল হয়, তাহলে সেই মহামানবদের জীবনাদর্শের কতটুকু তারা নিজ জীবনে প্রতিফলিত করে— এই প্রশ্ন আসে।

‘গইরিল মাগদুবি আলাইহিম ওলাদ দ-ল্লিন’ বলার সময় কয়জন লোক এই জমানার ‘অভিশপ্ত’ ও ‘পথভ্রষ্ট’ দল থেকে নিজেকে বাঁচানোর কাজ করে? পবিত্র কোরআন যখন হক ও বাতিলকে আলাদা করার পর হকের বিজয় ও বাতিলের বিনাশের ঘোষণা দিয়েছে, তখন এই কিতাবের অনুসরণকারী প্রত্যেককে এই নির্দেশনা দেয় যে, তার যুগের ‘অভিশপ্ত’ ও ‘পথভ্রষ্টদের’ চিহ্নিত করে তাদের বিপরীতে সরল সঠিক পূণ্যপন্থায় একনিষ্ঠভাবে চলতে হবে।

যদি কুরআন পড়ার সময় পাঠকারীর মনে এসব আমল কার্যত বাস্তবায়নের স্পৃহা না জাগে, তাহলে একথাই প্রমাণিত হয় যে তার কোরআন পাঠ যথাযথভাবে হচ্ছে না, সে একদিকে কোরআন তেলাওয়াত করে অন্যদিকে কুরআনবিরোধী কাজ অনায়াসে করার যোগ্যতা রাখে। (নাউজু বিল্লাহ)

মোদ্দাকথা হলো কুরআন বুঝে পড়া জরুরি। কোরআন না বুঝে পড়লেও সওয়াব হবে— এই বক্তব্য একথা প্রমাণ করে না যে সারা জীবন না বুঝে পড়তে হবে। বরং কুরআন বুঝে পড়া ও কুরআনের ওপর চিন্তাভাবনা করা স্বয়ং আল্লাহ পাকের নির্দেশ, এই নির্দেশ বিশেষ কারও জন্য নয়, প্রত্যেক বান্দার জন্য।

সুরা জুমুআর ২ নং আয়াতে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন: তিনিই মহান সত্তা যিনি নিরক্ষরদের মধ্যে তাদেরই একজনকে রাসুল করে পাঠিয়েছেন, যিনি তাদেরকে তার আয়াত পাঠ করে শোনান, তাদের জীবনকে সজ্জিত ও সুন্দর করে এবং তাদেরকে কিতাব ও হেকমত শিক্ষা দেন। অথচ ইতোপূর্বে তারা স্পষ্ট গোমরাহিতে নিমজ্জিত ছিল।

এই আয়াত থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে নিরক্ষরতা ও গোমরাহিতে নিমজ্জিত জাতিকেও কুরআনের শিক্ষা দেওয়া ও তাদের জীবন সজ্জিত করা নবীওয়ালা কাজ।

আর এই নবীওয়ালা কাজের দায়িত্ব যেহেতু উম্মতের প্রত্যেক সদস্যের ওপর, তাই আমাদের প্রত্যেকেরই কুরআন বুঝে পড়া উচিৎ। এবং যতক্ষণ না কুরআন বুঝে পড়ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত কুরআন অন্তরে প্রভাব ফেলবে না।

আল্লাহ আমাদের কুরআন বুঝে পড়ার দান তাওফিক করুন।

আমিন।

Pages: [1]