Show Posts

This section allows you to view all posts made by this member. Note that you can only see posts made in areas you currently have access to.


Messages - akazad600

Pages: 1 [2] 3
16
Story, Article & Poetry / Dream
« on: November 26, 2015, 03:32:51 PM »
You are not of this planet
Of this distant space
Where you drift along the shore
Where you get lost in you the mirror
You are from a distant time
A distant kiss
Longing to pull me back
Again to your flame.

You are me, and I… you
We are like two shells
Floating under the sea
For eternity too…

I dream,
And when I do
I see you,
You a distant road of black pitch torn apart by invisible lights
You a tree
I see
In the night when every man is apart,
From the day that he lived through.
Then again I see you

Millions of times I slept and woke
With a strange smell of an oak.

And then,

I dream about a blue sea,
Coming closer towards me…
 
source....http://arts.bdnews24.com/?p=127#more-127

17
অনুবাদ: দিলওয়ার হাসান

সেই বিকেলে মেয়েটি তাকে জিজ্ঞেস করেছিল, “যে ভাবে তুমি নিজের সঙ্গে কথা বলো, তা কি পুরনো অভ্যাস?” টেবিলের ওপর থেকে চোখ তুলে সে এমনভাবে প্রশ্নটা করল যেন ওই ভাবনা তাকে এই মাত্র আঘাত করেছে। বলাই বাহুল্য আসলে তা করেনি।

রান্নাঘরের টেবিলে মুখোমুখি বসেছিল দুজন। পাশের রেলসড়ক দিয়ে কম্পিউটার ট্রেনের যাতায়াতের শব্দ ছাড়া ওই এলাকাটা বেশ নীরব। ট্রেনবিহীন রেলসড়কটা তাদের জন্য এক রহস্যময় নৈঃশব্দ তৈরি করে। কিচেনের পাতলা প্লাস্টিকের মেঝে ছেলেটার পা দুটোকে শীতল পরশ দান করে। মোজা খুলে পকেটে ঢুকিয়ে ফেলে সে। এপ্রিল মাসের বিকেল হলেও আজকের আবহাওয়ায় একটু বেশি গরমের ভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। মেয়েটা তার বিবর্ণ চেক সার্টের হাতা কনুই অবধি গুটিয়ে রেখেছে। তার পলকা ফরসা আঙুলগুলো খেলছে কফি চামচের হাতলের সাথে। ছেলেটা তার আঙুলগুলোর দিকে তাকায়, আর তার মনের ক্রিয়া অদ্ভুতরকমের নীরস হয়ে পড়ে।

ছেলেটা কেবল কুড়িতে পড়েছে, মেয়েটা তার চেয়ে সাত বছরের বড়, বিবাহিত ও এক সন্তানের জননী। ছেলেটির জন্য মেয়েটি হচ্ছে চাঁদের দূরের অংশ।

তার স্বামী এমন একটা ট্রাভেল এজেন্সিতে কাজ যারা বিদেশ ভ্রমণের ব্যবস্থা করতে পারদর্শী। ফলে তাকে মাসের অধিকটা সময় দেশের বাইরের কোনো শহর যেমন লন্ডন, রোম কিংবা সিঙ্গাপুরে থাকতে হয়। অপেরা ওই ভদ্রলোকের খুব প্রিয়। তার শেলভে তাই জায়গা করে আছে ভার্দি, পুসিনি, দোনিজেত্তি বা রিচার্ড স্ট্রাউসের রেকর্ড। যখন ফুরিয়ে যায় কিংবা করবার কিছু থাকে না ছেলেটা রেকর্ডের শেলভের এ পাশ থেকে ও পাশে চোখ বুলায় আর মনে-মনে অ্যালবামগুলোর নাম পড়ে — লা বোহ…মি, টোসকা, টুরানডট, নরমা, ফাইডেলিও… সে কখনো এসব মিউজিক শোনেনি বা শোনার সুযোগ তার হয়নি। তার পরিবার, বন্ধু-বান্ধব বা পরিচিতদের কেউই অপেরার ভক্ত নয়। শুধু জানে অপেরা-সঙ্গীতের অস্তিত্ব এই পৃথিবীতে আছে, কিছু লোক তা শোনে; তবে মেয়েটির স্বামীর এই রেকর্ডগুলো দেখে সে ওই জগৎ সম্পর্কে প্রথম জ্ঞান লাভ করেছে।

মেয়েটিও অবশ্য অপেরার ভক্ত নয়। “তবে ওগুলো আমি ঘেন্না টেন্না করি না। ওগুলোর একটাই দোষ, বড় দীর্ঘ।” বলে সে।

রেকর্ডেও শেলভের পাশেই চমৎকার একটা স্টিরিও সেট। এটার উপস্থিতি সত্যিকার অর্থেই ব্যতিক্রমধর্মী। তবে বাজানোর সময় ওটা সে দেখেনি কখনো। মেয়েটিও জানে না ওটার পাওয়ার সুইচ কোথায় আর ছেলেটি ওটি স্পর্শ করার কথাও ভাবেনি কখনো।

মেয়েটি ওকে বলেছে “ঘরে কোনো সমস্যা নেই আমার। স্বামী আমার কাছে খুবই ভাল। মেয়েকে আমি স্নেহ করি খুব। আমি মনে করি আমি সুখী।” তাকে বেশ শান্তশিষ্টই মনে হয়। তার কথা থেকে আঁচ করা যায় না যে, সে তার জীবনের ব্যাপারে অজুহাত দাঁড় করাচ্ছে। নিষ্ঠার সঙ্গে সে তার বিয়ের কথা বলে, যেন সে ট্রাফিক আইন কিংবা আন্তর্জাতিক ডেটলাইন নিয়ে আলোচনা করছে। “আমার ধারণা আমি সুখী, কোনো ঝামেলা নেই।” এই হচ্ছে তার বক্তব্য।

সে তখন অবাক হয়ে ভাবে, তাই যদি হয় তাহলে তুমি কেন আমার সঙ্গে বিছানায় যাচ্ছ ? এ নিয়ে অনেক ভেবেছে ছেলেটি; কিন্তু কোনো কূলকিনারা করতে পারেনি। কথাটা তাকে জিজ্ঞেস করার কথাও ভেবেছে সে। কীভাবে শুরু করবে বুঝে উঠতে পারেনি। বলেই বা কেমন করে ? “এতই যখন সুখে আছ তাহলে আমার সঙ্গে শুতে আস কেন” একথা কী করে জিজ্ঞেস করে। সে জানে এ প্রশ্নের মুখোমুখি হলে নির্ঘাৎ কেঁদে ফেলবে ও।

হামেশাই বিস্তর কাঁদে সে, অনেকক্ষণ ধরে, খুব কম শব্দ করে। ছেলেটি বলতে গেলে জানেই না কেন সে কাঁদে। এক বার শুরু করলে থামতেই চায় না। সে অবশ্য তাকে সান্ত¦না দেয়ার চেষ্টা করে; কিন্তু নির্দিষ্ট একটা সময় পার না-হওয়া পর্যন্ত কান্না থামায় না সে। কেন মানুষ একে অন্য থেকে এত আলাদা? অবাক হয়ে ছেলেটি ভাবে। অনেক মেয়ের সঙ্গে মিশেছে সে। সবাই কেঁদেছে অথবা রাগ করেছে, তবে সবারই একটা বিশেষ ভঙ্গিমা ছিল। মিলও ছিল বিস্তর, সেগুলো অমিলের তুলনায় অনেক কম। ওখানে অবশ্য বয়সের কোনো তারতম্য ছিল না। বয়স্ক কোনো নারীর সঙ্গে এই তার প্রথম; কিন্তু বয়সের পার্থক্য ধর্তব্যের মধ্যেই আনেনি সে। বয়সের পার্থক্যের চেয়ে বেশি অর্থবহ ছিল প্রতিটি রমণীর নানা ঝোঁক বা প্রবণতা। সে না ভেবে পারেনি। জীবনের রহস্য খোলার জন্য এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ চাবি।

কান্না শেষ হলে সাধারণত তারা রতিক্রিয়ায় লিপ্ত হয়। কান্নার পরে মেয়েটিই সব সময় উদ্যোগটা প্রথমে নেয়, অন্য সময় ছেলেটি এগিয়ে আসে। কখনো মেয়েটি কোনো কথা না বলে শুধু মাথা ঝাকিয়ে প্রত্যাক্ষান করে। তখন তার চোখ দুটো সকালের আকাশে ভাসমান সাদা চাঁদের মতো দেখায়। সে যখন ওই চোখের দিকে তাকায় তার মনে হয়, তাকে আর কিছু বলা মোটেও সম্ভব নয়। রাগ কিংবা অসন্তোষ কোনোটাই আসে না। এভাবে হয়ে যায় সবকিছু, ভাবে সে। কখনো-কখনো খুব স্বস্তি অনুভব করে। ধীরে ধীরে গল্প করতে করতে কফি পান করে। অধিকাংশ সময়ই তাদের কথাবার্তা থাকে অসম্পূর্ণ। দুজনের একজনও বাকপটু নয়, তবে কিছু কিছু ব্যাপারে তাদের অভিন্ন বক্তব্য থাকে।

তাদের যৌন মিলন ঘটে খুবই স্তব্ধতার ভেতর। একে কোনো ভাবেই শরীরী আনন্দ বলে অভিহিত করা যায় না। তবে একথা বললে ভুল হবে যে, ওই মিলনে যে-সুখানুভূতি সে সম্পর্কে অবহিত নয় তারা। দেহ-মিলনের মধ্যমে ছেলেটি যে-আনন্দ লাভ করে আগে সে তা পায়নি কখনো। ওটা তাকে ছোট্ট একটা সুন্দর পরিচ্ছন্ন ঘরের কথা স্মরণ করিয়ে দেয় যা একটা আরামদায়ক স্থান।… পরিস্থিতির এই অদ্ভুত অবস্থাটা তার জন্য একটু বেশিই। তার বিশ্বাস নিজের বিচার বিবেচনা দিয়েই জীবনের পথ চলছে সে। কিন্তু যখন সে এই ঘরে বসে আছে, ট্রেন চলে যাওয়ার শব্দ শুনছে আর নিজের বাহুতে আকড়ে ধরে আছে তারচেয়ে বেশি বয়সের এক মহিলাকে তখন সে বিভ্রান্তি অনুভব না করে পারে না। বার বার নিজেকে প্রশ্ন করে, আমি কি তার প্রেমে পড়েছি? কিন্তু পুরো দৃঢ়তা নিয়ে কোনো কোনো সদুত্তর খুঁজে পায় না।

শরীরের খেলা শেষ হলে মেয়েটি ঘড়ির দিকে তাকায়। ছেলেটির বাহুর ওপর শুয়ে মুখখানি একটু ওঠায় এবং ঘড়িঅলা রেডিওটার দিকে দৃষ্টি দেয়। তখন বাইরের রেলসড়ক দিয়ে একটা ট্রেন দ্রুত চলে যায়। কন্ডিশন্ড রিফ্লেক্সের মতো: সে তাকায়, একটা ট্রেন চলে যায়।

মেয়েটি বার বার ঘড়ি দেখে নিশ্চিত হয় তার মেয়ের স্কুল থেকে ফেরার সময় হয়নি। একবারই মাত্র ছেলেটি তার বাচ্চাটার দিকে তাকিয়েছিল। তার কাছে মনে হয়েছে মেয়েটি ফুটফুটে সুন্দর। সে ওর অপেরা-প্রেমী স্বামীকে কোনো দিন দেখেনি, ভাগ্যক্রমে যে একটা ট্রাভেল এজেন্সিতে কাজ করে।

মে মাসের এক বিকেলে সে প্রথম নিজের সঙ্গে কথা বলার ব্যাপারটি ছেলেটিকে জিজ্ঞেস করেছিল। সেদিনও কেঁদেছিল মেয়েটি তারপর সঙ্গমে রত হয়েছিল। কেন সে কেঁদেছিল মনে নেই ওর। তার মাঝে-মাঝে মনে হয় কারও বাহুবন্ধনে কাঁদতে পারবে বলেই সে ওর সঙ্গে নিজেকে জড়িয়েছে। হতে পারে সে একা কাঁদতে পারে না, সেজন্য ওকে বেছে নিয়েছে।

সেদিন সে দরজায় তালা লাগাল, পর্দা নামাল, টেলিফোন সেটটি বিছানার পাশে এনে রাখল তারপর মিলিত হলো; আগের মতোই ধীরেসুস্থে, নীরবে। তখন ডোরবেল বাজল। উপেক্ষা করল সে। চমকালো না, অবাকও হলো না। শুধু মাথা নাড়াল একটুখানি, যেন বলতে চাইল, “ও কিছু না ঘাবড়াবার কিছু নেই।” বেল বাজল আরও কয়েক বার। যে-ই বাজাচ্ছিল না কেন, ক্ষান্ত দিয়ে চলে গেল। কোনো সেলস্্ম্যানট্যান হতে পারে। কিন্তু সে কী করে এত নিশ্চিন্ত থাকছে? একটু আগে একটা ট্রেন চলে গেল গুড় গুড় করে। দূর থেকে ভেসে এলো পিয়ানোর সুর। খুব অস্পষ্টভাবে সুরটা আঁচ করতে পারল ছেলেটি। অনেক দিন আগে সঙ্গীতের ক্লাসে সুরটি শুনেছিল সে, কিন্তু ঠিক ঠিক মনে করতে পারল না। সবজি বোঝাই একটা ট্রাক ঠন ঠন শব্দ তুলছিল। চোখ বন্ধ করে মেয়েটি গভীর শ্বাস টানল, প্রশান্তি নেমে এলো ছেলেটির মধ্যে।

সে বাথরুমে ঢুকল গোসল করতে। ফিরে এসে টাওয়েলে মাথা মুছতে-মুছতে লক্ষ করল বিছানায় মুখ ডুবিয়ে শুয়ে আছে সে। তার পাশে বসে ওর পশ্চাৎ দেশ ডলাই মলাই করতে করতে অপেরা-রেকর্ডগুলোর নাম পড়তে লাগল।

মেয়েটি উঠে কাপড়-চোপর ঠিক করল, তারপর কফি বানাতে রান্নাঘরে ঢুকল। তার কিছুক্ষণ পরে সে জিজ্ঞেস করল, “নিজের সঙ্গে ও রকম কথা বলাটা কি তোমার পুরনো অভ্যাস?”

“ও-রকম? তার মানে তুমি কি বলতে চাইছো ওটা করার সময়…?”

“না না, সে সময় না, যে-কোনো সময়। এই ধরো যখন গোছল করছ কিংবা আমি যখন কিচেনে, তুমি একা বসে খবরের কাগজ পড়ছ, ওই রকম আর কী…”

মাথা নাড়িয়ে সে বলল, “জানি না, কখনো খেয়াল করিনি। নিজের সঙ্গে কথা বলি আমি?”

ছেলেটির লাইটারটা নিয়ে খেলতে-খেলতে সে বলল, “সত্যি তুমি নিজের সঙ্গে কথা বল।”

“তোমার কথা অবিশ্বাস করছি না।” বলল সে। এ কথার অস্বস্তি তার কণ্ঠস্বরে ধরা পড়ল। তার হাত থেকে লাইটারটা নিয়ে একটা সিগারেট ধরাল সে। অল্প কিছু দিন আগে সেভেন স্টার ব্র্যান্ডের সিগারেট খেতে শুরু করেছে সে, ওর স্বামীর ব্র্যান্ড। আগে তার ব্র্যান্ড ছিল হোপ। তার কথায় সে ব্র্যান্ড বদলায়নি, সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে সে নিজেই সিদ্ধান্তটা নিয়েছে। এতে সহজ হবে সব কিছু, টিভির ওই মেলোড্রামার মতো…।

“শোন, আমিও নিজের সঙ্গে কথা বলতাম,” বলল সে, “তবে যখন ছোট ছিলাম।”

“ও, তাই নাকি?”

“মা আমার ওই অভ্যাসটা গাঢ় হতে দেননি। প্রায়ই তিনি বলতেন, বাচ্চা মেয়েদের নিজের সঙ্গে কথা বলতে নেই।” যখনই আমি কাজটা করতাম ভীষণ ক্ষেপে যেতেন তিনি। একবার তো একটা বড় বাক্সের ভেতর ঢুকিয়ে রেখেছিলেন আমাকে। জায়গাটা ছিল অন্ধকার, দুর্গন্ধে ভরা, এমন বাজে জায়গার কথা ভাবাই যায় না। মাঝে মাঝে রুলার দিয়ে আমার হাঁটুর ওপর বারিও মারতেন। কাজ হয়েছিল তাতে। নিজের সঙ্গে কথা বলার রোগটি সারতে বেশি সময় লাগেনি।”

কোনো কিছু বলার কথা ভাবতে পারেনি সে, বলেও নি। মেয়েটি শুধু ঠোঁট কামড়িয়েছিল।

“এখনও যদি কোনো কিছু একটা বলতে চাই আপন মনে, বাক্যটা বেরুনোর আগেই গ্রাস করে ফেলি। কিন্তু নিজের সঙ্গে কথা বলা এত খারাপ কেন, বুঝি না আমি। মুখ থেকে বেরুনো স্বাভাবিক বচন বই তো নয়! মা জীবিত থাকলে জিজ্ঞেস করতাম তাকে।”

একটা কফির চামচ নাড়ানাড়া করছিল মেয়েটি। হঠাৎ ঘড়ির দিকে তাকাল। ঠিক সেই সময় একটা ট্রেন চলে গেল। তারপর সে বলল, “কখনো-কখনো আমার মনে হয় মানুষের হৃদয় গভীর কূপের মতো, তলায় কী আছে কেউ জানে না। কখনো ক্ষণিকের জন্য তার একটুখানি ওপরে ভেসে উঠলে খানিকটা আঁচ-অনুমান করা যায় সে সম্পর্কে।”

দুজনেই কিছুক্ষণের জন্য সেই কূপের কথা ভাবল।

“নিজের সঙ্গে যখন কথা বলি তখন কী বলি? একটা উদাহরণ দেবে?” ছেলেটি জিজ্ঞেস করল।

কয়েক মিনিট মাথাটা নাড়াল সে, যেন বিচক্ষণতার সাথে ঘাড়ের নড়াচড়া পরীক্ষা করছে। “বেশ শোন তাহলে, ওখানে উড়ো জাহাজের ব্যাপার আছে…”

“উড়োজাহাজ?”

“হ্যাঁ দেখোনি, আকাশে ওড়ে।”

হাসল সে। “এতো কিছু থাকতে উড়োজাহাজ নিয়ে কথা বলতে যাব কেন আমি?”

সে-ও হাসল। তর্জনী ব্যবহার করে আকাশে কল্পিত একটা বস্তু মাপল। এটা তার একটা অভ্যাস।

“তোমার উচ্চারণ কিন্তু খুব স্পষ্ট। তুমি কি নিশ্চিত যে, নিজের সঙ্গে কথা বলার ব্যাপারটা একেবারেই মনে পড়ে না তোমার?”

“একটুও না।”

একটা বলপেন তুলে নিয়ে কয়েক সেকেন্ড খেলল সে, তারপর আবার ঘড়ির দিকে তাকাল। ঘড়ি তার নিজের কাজ করে যাচ্ছে। পাঁচ মিনিট আগে যখন সে তার দিকে তাকিয়েছিল এখন তার চেয়ে পাঁচ মিনিট এগিয়ে গেছে।

“নিজের সঙ্গে কথা বলার সময় মনে হয় তুমি কবিতা আবৃত্তি করছ।”

একথা বলার সময় মেয়েটির মুখে লালের আভাস ছড়িয়ে পড়ল। তখন এই অস্বাভাবিক ব্যাপারটির সন্ধান পেল সে: আমার নিজের সঙ্গে নিজের কথা বলার ব্যাপারটিতে সে কেন রক্তিম হচ্ছে?

ছন্দ দিয়ে বাক্যগুলো প্রকাশ করতে চাইলে: “নিজের সঙ্গে কথা বলি আমি/ প্রায় যেন/ করছিলাম আবৃত্তি /একটা কবিতা।”

বলপেনটা আবার তুলে নিল মেয়েটি। হলুদ রঙ্গের প্লাস্টিকে তৈরি। কোনো একটা ব্যাংকের দশম বর্ষ পূর্তি উপলক্ষে বের করা হয়েছে।

কলমটার প্রতি নির্দেশ করে সে বলল, “এর পরে যখন আমি নিজের সঙ্গে কথা বলি, আমি কী বলি তা শুনে-শুনে তুমি লিখে রাখবে। লিখবে তো ?”

সে সরাসরি তার চোখের দিকে তাকাল। “সত্যিই তুমি তা জানতে চাও?”

ছেলেটি সম্মতি জানিয়ে মাথা নাড়ল।

মেয়েটি এক টুকরো কাগজ তুলে নিয়ে তাতে কী যেন লিখতে লাগল। ধীরে ধীরে লিখলেও কোনো বিরতি নিল না। ছেলেটি চিবুকে হাত রেখে সারাক্ষণ তাকিয়ে রইল ওর চোখের পাতার লোমের দিকে। আর মেয়েটি কয়েক সেকেন্ড পর পর চোখ পিট পিট করতে লাগল। সে যত বেশি ওই চোখের পাতার দিকে তাকিয়ে রইল (কিছুক্ষণ আগেও যা ছিল অশ্রুজলে ভেজা) সে ততবেশি বুঝতে পারল না ওর সাথে বিছানায় যাওয়ার সত্যিকার অর্থ কী। তখন সবকিছু হারানোর একটা অনুভূতি তাকে গ্রাস করে ফেলল। তার মনে হলো সে হয়ত কোনো দিন আর কোথাও যেতে পারবে না। এই ভাবনা তার মধ্যে এমন অতঙ্কের সৃষ্টি করল যে, তা সহ্য করা কঠিন হয়ে দাঁড়াল তার জন্য। তার অস্তিত্ব আর নিজস্বতা গলে পড়তে যাচ্ছে। হ্যাঁ একথা তো সত্যি: নতুন কাদামাটির মতোন সে তরতাজা আর সে নিজের সঙ্গে কথা বলে, যেন কবিতা আবৃত্তি করে চলেছে…।

লেখা শেষ করে মেয়েটি কাগজটি তার দিকে বাড়িয়ে দিল। ছেলেটি তুলে নিল কাগজখানা।

মেয়েটি বলল, “এর সবটা আমি হৃদয় দিয়ে জেনেছি — যা তুমি বলেছিলে।”

সে জোরে-জোরে পড়ল শব্দগুলো:

উড়োজাহাজ, উড়োজাহাজ, উড়ছি আমি উড়োজাহাজে। উড়োজাহাজ উড়ছে বটে, তবে স্থির, যদিও ওড়ে উড়োজাহাজটাই আকাশ?

সে অবাক। “এই সব আমি বলেছি?”

“হ্যাঁ, একেবারে পুরোটা।”

“অবিশ্বাস্য। নিজেকে আমি এইসব বলেছি আর এর এক বর্ণও মনে নেই আমার?”

ছোট্ট একটা হাসি দিয়ে মেয়েটি বলল, “তুমি বলোনি তো কে বলেছে আবার। যেমনটা বললাম ওই রকমই ছিল তোমার কথা।”

একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল ছেলেটি। “রহস্যজনক একটা ব্যাপার। জীবনে কোনো দিনও উড়োজাহাজের কথা ভাবিনি। এর কোনো স্মৃতিও নেই আমার জীবনে। তাহলে হঠাৎ কেন উড়োজাহাজ চলে আসছে।”

“জানি না। তবে একেবারে ঠিক ঠিক ওই কথা বলছিলে তুমি, ওই যে স্নান করার আগে। তুমি হয়ত উড়োজাহাজের কথা ভাবছিলে না; কিন্তু গহিন কোনো বনের ভেতর অনেক দূরে তোমার মন ভাবছিল তাদের কথা।”

“কে জানে? হতে পারে গভীর কোনো জঙ্গলের ভেতর বসে আমি নিজেই একটা উড়োজাহাজ বানাচ্ছিলাম।”

বলপয়েন্টটা টেবিলে রেখে মেয়েটি তার চোখ তুলল আর ওর দিকে তাকাল।

কিছুক্ষণের জন্য তারা কোনো কথা বলল না। তাদের কাপের কফি মেঘের রঙ ধারণ করে ঠাণ্ডা হয়ে গেল। পৃথিবী তার অক্ষের দিকে ফিরল; সেই সময় চাঁদের ভর ক্রমশ সময় বদলালো। সময় এগিয়ে চলল নীরবে, আর রেললাইন ধরে দ্রুত চলে গেল ট্রেন।

ছেলেটি আর মেয়েটি একই জিনিস নিয়ে ভাবছিল, জিনিসটি আর কিছুই নয়: উড়োজাহাজ, যা ছেলেটির হৃদয় গভীর অরণ্যে বসে তৈরি করছে। কত বড় ওটা, এর আকারই বা কী, কী তার রঙ, কোথায় চলেছে ওই উড়োজাহাজ, তাতে চড়বেই বা কারা?

একটু পরেই মেয়েটি আবার কাঁদতে লাগল। এই প্রথম বারের মতো সে একই দিনে দুবার কাঁদল। এটা একই সাথে শেষবার। এটা ছিল তার জন্য বিশেষ একটা জিনিস। টেবিল উজিয়ে ছেলেটি মেয়েটির কেশ স্পর্শ করল। আশ্চর্যজনক ভাবে ওগুলো তার কাছে একই সঙ্গে শক্ত ও পেলব মনে হলো। আর মনে হলো ওগুলো অনেক দূরে…।
source....http://arts.bdnews24.com/?p=2752#more-2752

18
প্যারিস ট্রাজেডি

সারি সারি মৃতদেহ খোলা আকাশের নিচে
মোনালিসা তুমি কি মৃদু হাসছো?
পায়ে যখন রক্তের স্রোত
তখনও কি ঝাঁকে ঝাঁকে কাকাতুয়া উড়ছে—
জানি না স্ট্রবেরির স্বাদ কখন বদলে গেছে
গ্লাসে ভরা লাল রঙ সব কি ডালিমের মতো উষ্ণ?
তোমার টি শার্টের এক পাশটা ছেঁড়া
বহুদিন সেলাই করা হয় নি—
ভিটে মাটি সব ছেড়ে আজ উজানের দেশে
যারা তোমাকে বাড়িছাড়া করল
তুমিও কি তাদের তাই চাও?
এ কোন যজ্ঞ?
নাকি এটাই নিয়ম পাঠ্যের?
তোমাকে যেমন শেখানো হয় পুস্তকে
তুমিও তেমনি জবাব দাও
পারো না কি নতুন কোনো স্বরে
নতুন প্রেমের কথা বলতে?
পারো নাকি সুর তুলতে
অশান্ত ভূ-মধ্য সাগরে?
 source ........http://www.banglanews24.com/fullnews/bn/441319.html

19
আজকাল বেশ ঠাণ্ডা পড়ছে। অনেকেই শুনছি ঠাণ্ডা লেগে অসুস্থ হচ্ছেন, কারও জ্বর হচ্ছে, গলাব্যথা, খাবারে অরুচি, মাথাব্যাথা, নাক বন্ধ থাকায় নিশ্বাস নিতে কষ্ট, বার বার হাঁচি দেওয়া, আর কাশির সমস্যায় স্বাভাবিক জীবন যাপনে বেশ প্রতিবন্ধকতাই দেখা দিচ্ছে।

তবে আবহাওয়া পরিবর্তনের এসময়ে হালকা ঠাণ্ডা জ্বর হতেই পারে। এনিয়ে খুব বেশি চিন্তার কিছু নেই। একটু সচেতন হলেই আমরা ঘরেই প্রাকৃতিক ভাবে এসব সমস্যা মোকাবেলা করতে পারি।

জ্বর, ঠাণ্ডালাগা থেকে উপসম দিতে আমাদের সাহায্য করতে পারে এমন কিছু পরামর্শ:

তরল পানীয়
ঠাণ্ডায় আমাদের নাক বন্ধ হয়ে থাকে। নিশ্বাস নিতে ও ঘুমাতে কষ্ট হয়। অনেক সময় গলাব্যথা থাকায় খাবার খেতেও কষ্ট হয়। শরীর আদ্র রাখতে এসময় গরম তরল পানীয় পান করতে হবে।

স্যুপ, হারবাল চা, কফি, মধু দিয়ে গরম পানি বারবার পান করুন।

জ্বর হলে
শরীরের অতিরিক্ত তাপ হলেই আমরা জ্বর বলি। সিজনাল জ্বর হলেও থার্মোমিটার দিয়ে নিয়মিত জ্বর মেপে একটি ছক করে লিখে রাখুন।

শরীর মুছে নিন
হালকা গরম পানিতে তোয়ালে ভিজিয়ে বারবার শরীর মুছে নিন। এতে জ্বরের তাপ কমবে।

নাকে ক্রিম ব্যবহার করুন
ঠাণ্ডা সর্দিতে আমাদের নাক চুলকায়, নাক দিয়ে পানি পড়ে, টিস্যু দিয়ে বারবার নাক মোছার ফলে অনেক সময় নাকের চামড়া ছিলে যায়। এজন্য নাক বেশি ঘষা যাবে না। নাকে ক্রিম ব্যবহার করুন। আর নাক বেশি আটকে থাকলে গরম পানিতে লেবু কেটে দিয়ে সেই ভাপ নিশ্বাসের সঙ্গে টেনে নিন। তারপরও নিশ্বাস নিতে কষ্ট হলে ডাক্তারের পরামর্শে মেন্থল ব্যবহার করুন।

একটি অতিরিক্ত বালিশ নিয়ে ঘুমান
ঠাণ্ডা লাগলে নিশ্বাস নিতে সমস্যা হওয়ায় ঘুম ঠিকমতো হয় না। দ্রুত সুস্থ হতে পর্যাপ্ত ঘুম অপরিহার্য্। এজন্য একটি অতিরিক্ত বালিশ মাথায় দিয়ে ঘুমান।

খাদ্য
এসময় একবারে না খেয়ে বারে বারে অল্প অল্প খাবার খেতে হবে। ভিটামিন সি জাতীয় খাদ্য বেশি রাখুন প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায়। লেবু, কমলা, পেঁপে, পেঁয়ারা, আমলকি বেশি বেশি খান। ঠাণ্ডা কমবে আর খাবার খেতেও রুচি হবে।

এছাড়াও জ্বর কমে আসে ব্লুবেরি খেলে, বেটা ক্যারোটিন সমৃদ্ধ গাজর, মরিচ, পেঁয়াজ, ‍আদা শরীর পরিষ্কার করে ব্রংকাইটিস ও অন্যান্য সংক্রমণ থেকে রক্ষায় সাহায্য করে, সরিষা, গ্রিন টি প্রাকৃতিক এন্টিবায়োটিকের কাজ করে তাই নিয়মিত এগুলো খেতে হবে।

এন্টিসেপটিক দিয়ে হাত সব সময় পরিষ্কার করতে হবে।
দাঁত মাজার ব্রাশ, চিরুনি, তোয়ালে এগুলো আলাদা রাখতে হবে।
কাশি ও হাচিঁ দেওয়া সময় রুমাল ব্যবহার করুন।
কুসুম গরম পানি পান করতে হবে।
ঘরের ধুলা পরিষ্কার করে রাখতে হবে।
গোসল করতে অবশ্যই হালকা গরম পানি ব্যবহার করুন।
আঙ্গুল দিয়ে ঘন ঘন নাক অথবা চোখ চুলাকানো যাবে না।
নিয়মিত হালকা ব্যায়াম করতে হবে।

পরিবারের কেউ ঠণ্ডা জ্বরে আক্রান্ত হলে অন্যদের সাবধানে রাখুন। ভাইরাল ফেভারের সময় আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে খুব ঘনিষ্টভাবে মেলামেশা না করাই ভালো। আর ছোটরা এবং বৃদ্ধদের শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। এদের জন্য নিতে হবে বাড়তি সতর্কতা। যেমন, সন্ধ্যায় বাইরের বাতাসে না যাওয়া, গরম কাপড় ব্যবহার, ঠাণ্ডায় হালকা গরম পানি দিয়ে গোসল করা।

মনে রাখবেন সাধারণ ঠাণ্ডা দীর্ঘদিন না সারলে তা থেকে  কোনো জটিল রোগ দেখা দিতে পারে। তাই উপসর্গগুলো দ্রুত সমাধান না হলে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

source.....http://www.banglanews24.com/fullnews/bn/442957.html

20
Story, Article & Poetry / ইতিহাস
« on: November 22, 2015, 01:34:34 PM »
ইতিহাস নিরেট দুঃস্বপ্ন। এক-একটি মৃত্যুর সমান। আমি জেগে উঠি, ক্ষণে ক্ষণে ক্ষণান্তরে;

জানি, মৃত্যু নয় জীবনের মান,
দেখি, ঝুরঝুর ঝরে পড়ে কবরের ইটসুরকি;

অনন্ত মৃত্যুর অন্তরাল ভেঙে
আমি পাখা মেলি। সাক্ষী ইতিহাস।
কবে উবে গেছে ডাইনির পাহাড়,
সূর্যরশ্মি ছড়িয়ে পড়েছে গোরস্তানে।

দূই ভাই ঢুকল এসে প্রস্তর মারিয়ে
হাবিল, কাবিল। এরপর..

ভাইয়ের দুহাত উপচে ভাইয়ের উতল রক্তস্রোত;
ভোর হলো। মানুষের কন্ঠস্বরে জেগে উঠি।
Source...http://arts.bdnews24.com/?p=7119#more-7119

21


অনেকটা হঠাৎ করেই প্রত্যাশিত সময়ের বেশ আগেই মাইকেল অবির স্বপ্নটা যেন পূরণ হয়ে গেল। ১৯৪৯ সালের জানুয়ারিতেই সে নিযুক্ত হল নদুম সেন্ট্রাল স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে। এটা সবসময় ছিল অন্যান্য স্কুল থেকে অনেকটাই পিছিয়ে পড়া, ঠিক এ কারণেই মিশন কর্তৃপক্ষ মাইকেল অবির মত প্রাণবান টগবগে তরুণ এবং সক্রিয় একজনকে সেখানে দায়িত্ব দিয়ে পাঠানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। অবি বেশ উৎফুল্লতার সাথেই তার উপর অর্পিত দায়িত্ব লুফে নেয়। স্কুলকেন্দ্রিক অনেক সুন্দর সুন্দর পরিকল্পনা তার ঘটে জমা ছিল এবং এতে করে এগুলোকে বাস্তবে রূপায়িত করার একটা বড় ধরণের সুযোগ তার হাতের নাগালে এসে যায়। তার ছিল পূর্ণাঙ্গ উচ্চতর শিক্ষা যা তাকে একজন গুণী শিক্ষকের মর্যাদা এনে দিয়েছিল এবং তার স্থানটি ছিল মিশন ফিল্ডের অন্যান্য শিক্ষকের থেকে বেশ উপরে। অন্যান্য বয়স্ক এবং কম শিক্ষায় শিক্ষিতদের সংকীর্ণ মন-মানসিকতার সমালোচনায় সে ছিল অনেক বেশী খোলামেলা।

পদোন্নতির খবর পাওয়ার আনন্দঘন মুহূর্তে সে তার তরুণী ভার্যাকে জিজ্ঞেস করে, “তুমি কি বল, আমরা এই সুযোগটাকে খুব ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারবো না?”

“আমরা আমাদের সর্বোচ্চটা করে দেখাবো”, উত্তরে তার বউ জানায়। “আমাদের অনেক সুন্দর বাগান থাকবে এবং সবকিছু হবে আধুনিক এবং আনন্দময়—-”

তাদের দুই বছরের বৈবাহিক জীবনে বউটি স্বামীর “আধুনিক চিন্তা পদ্ধতি” এবং “এখনও শিক্ষকতার পেশায় নিয়োজিত বৃদ্ধ ও সেকেলে লোকজন যারা হয়তো অনিস্তা বাজারে ব্যবসা করলেই ভালো করত” তাদের প্রতি বাজে মনোভাবের আবেগ দ্বারা পুরোপুরিভাবে প্রভাবিত হয়েছিল। সে ইতিমধ্যেই তরুণ প্রধান শিক্ষকের গুণগ্রাহী স্ত্রী হিসেবে নিজেকে দেখতে শুরু করে, যেন সে ঐ স্কুলের রাণীর আসন লাভ করেছে।

অন্যান্য শিক্ষকের বউরা নিশ্চয় এখন তার অবস্থানকে হিংসা করতে শুরু করবে। সে এখন থেকে সকল বিষয়ে জাঁক দেখিয়ে চলা শুরু করবে। তারপর হঠাৎ করে সে আবিষ্কার করে যে, সে ছাড়া অন্য কোন বউ সেখানে থাকবে না। আশা এবং ভয়ের দোলাচলে তার স্বামীর দিকে উদ্বিগ্ন দৃষ্টিতে তাকিয়ে সে বিষয়টা সম্পর্কে জানতে চায়।

“আমাদের সকল সহকর্মী হবে তরুণ এবং অবিবাহিত,” স্বামীটি হাসিমুখে জানায়। “যা আমাদের জন্য ভালোই হবে, কি বল?” সে বলে চলে।

“কেন?”

“আরে কেন বলছ কি! এতে করে তারা প্রত্যকে তাদের সবটুকু সময় এবং শক্তি-সামর্থ্য স্কুলের কাজে নিয়োজিত করতে পারবে।”

এ কথা শুনে ন্যান্সি, তার বউ হতাশায় চোখদুটি নিচের দিকে নামিয়ে ফেলে। কিছুক্ষণের জন্য সে নতুন স্কুলের ব্যাপারে উদাসীন হয়ে পড়ে; কিন্তু তা কয়েক মিনিট মাত্র। তার সামান্য ব্যক্তিগত আকাঙ্ষার পরিপূরণ না হওয়া স্বামীর সুখী সুন্দর সম্ভাবনার ব্যাপারে তাকে অন্ধ করে দিতে পারেনি। স্বামীটি যখন আরাম করে চেয়ারে বসেছিল তখন বউটি তার দিকে এক নজর তাকায়। স্বামীটি সামনের দিকে একটু ঝুঁকে বসে ছিল এবং তাকে দুর্বল ও নমনীয় দেখাচ্ছিল। কিন্তু সে মাঝে মাঝেই হঠাৎ উত্থিত হওয়া শারীরিক শক্তি দেখিয়ে লোকজনকে হতবাক করে দিতে সক্ষম। যাহোক বর্তমান বসার ভঙ্গীতে তার সকল শারীরিক শক্তিকে মনে হচ্ছিল যেন গভীরতাব্যঞ্জক চোখ দুটির পেছনে গিয়ে আশ্রয় লাভ করে তাদেরকে অনেক বেশী পরিমাণে তীক্ষ্ণ করে তুলেছে। যদিও তার বয়স মাত্র ছাব্বিশ বছর, তাকে ত্রিশ বা তার চেয়েও অধিক বয়সের দেখাচ্ছিল। অবশ্য সব মিলিয়ে তাকে সুদর্শনই লাগছিল।

কিছুক্ষণ পর নারী বিষয়ক ম্যাগাজিনটি চোখের সামনে মেলে ধরে ন্যান্সি বিড়বিড় করে বলে, “তোমার চিন্তাকে বাহবা জানাই, মাইক”। “আমি ভাবছি, কিভাবে একটা স্কুল পরিচালনা করা উচিত তা ঐ সমস্ত দুর্মুখ লোকজনকে দেখানোর একটা মহৎ সুযোগ অবশেষে আমাদের হাতে এসে পড়েছে।”

স্কুলটি সব রকমভাবেই আগাগোড়া পিছিয়ে পড়া। মাইকেল অবি তার সকল শক্তি-সামর্থ্য নিয়ে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ল এবং সাথে সাথে তার বউটিও। তার মূল লক্ষ্য ছিল দুইটি। উচ্চতর মানের একটি শিক্ষাব্যবস্থা সেখানে চালু করা এবং স্কুল প্রাঙ্গণটিকে সৌন্দর্যময় একটি স্থানে পরিণত করে তোলা। ন্যান্সির স্বপ্নের বাগান এতদিনে বাস্তবের মুখ দেখতে পেল এবং বেশ বৃষ্টিপাতের ফলে কয়েকদিনের মধ্যে ফুলে ফুলে ভরে উঠল। গাঢ় লাল ও হলুদ রঙের উজ্জ্বল শোভায় সুন্দর হিবিস্কাস এবং আল্লামান্ডা তৃণলতার বেড়া স্কুল প্রাঙ্গণটিকে আশে পাশের ঝোপঝাড় থেকে আলাদা করে ফেলে।

একদিন সন্ধ্যাবেলায় অবি যখন মৌজের সাথে তার কাজ করে যাচ্ছিল তখন হবলি গ্রাম থেকে একজন বৃদ্ধাকে সরাসরি স্কুল প্রাঙ্গণের মাঝ বরাবর ম্যারিগোল্ড ফুলের সারি এবং তৃণলতার বেড়ার ভেতর দিয়ে আসতে দেখে সে যারপরনাই ব্যথিত হয়ে পড়ে। সেখানে গিয়ে, গ্রাম থেকে আসা স্কুল প্রাঙ্গণের মাঝ বরাবর অন্য পাশের বেড়ার ভেতর দিয়ে প্রায় অব্যবহৃত একটি রাস্তার কিছু হালকা নজির তার দৃষ্টিগোচর হয়।

তিন বছর ধরে তার স্কুলে কাজ করে আসছে এমন একজন শিক্ষককে সে বলে ওঠে, “আমি বিস্মিত না হয়ে পারিনা যে ঠিক তোমাদের মত লোকজন গ্রামবাসীদেরকে এই পায়ে চলার পথটিকে ব্যবহার করার সুযোগ করে দিয়েছে। না, না, এটা আমি কোনমতেই মেনে নিতে পারিনা”।

শিক্ষকটি তোতলাতে তোতলাতে বলে, এই পথটি গ্রামবাসীদের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ। যদিও ইদানিং এটা খুব কমই ব্যবহৃত হয়, এটা গ্রামের ধর্মালয় থেকে স্কুল প্রাঙ্গণের ভেতর দিয়ে সোজা তাদের কবরস্থান পর্যন্ত চলে গিয়েছে।

প্রধান শিক্ষক রাগান্বিত হয়ে জিজ্ঞেস করে, তাহলে আমাদের স্কুলের কি হবে একবার ভেবে দেখেছো?

অন্য শিক্ষকটি কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলে, “তা আমি বলতে পারব না, কিন্তু আমার মনে আছে বেশ আগে যখন আমরা এটাকে বন্ধ করে দেয়ার উদ্যোগ নেই তখন বেশ ভালোরকমেই রাস্তাটি বহাল ছিল।”

প্রধান শিক্ষক অবি চলে যেতে যেতে বলে, সেটা বেশ আগে ছিল কিন্তু আমার সাফ কথা এখন থেকে এটা আর ব্যবহৃত হবে না। সরকারী শিক্ষাকর্মকর্তা কি ভাববেন যখন তিনি পরবর্তী সপ্তাহে স্কুল পরিদর্শনে আসবেন। আমি যতটুকু জানি গ্রামবাসীরা সম্ভবত স্কুল কক্ষকে প্যাগান উৎসবের জন্য ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষাকর্মকর্তার পরিদর্শন করার সময়।

ঢোকার এবং স্কুল প্রাঙ্গণ থেকে বের হওয়ার দুই দিক বড় বড় লাঠি কাছাকাছি পুঁতে পথটিকে একেবারে বন্ধ করে দেওয়া হল। বেড়াটাকে আরো শক্তিশালী করার জন্য তাতে ভালো রকমে কাঁটা তার জড়িয়ে দেয়া হল, যাতে করে ওই পথ দিয়ে আর কেউ কোনভাবেই ঢুকতে না পারে।

তিনদিন পর গ্রামের যাজক এলো প্রধান শিক্ষকের সাথে দেখা করার জন্য। সে একজন বৃদ্ধ মানুষ এবং সামান্য কুঁজো হয়ে চলাফেরা করে। সে শক্তপোক্ত একটা হাঁটার-লাঠি হাতে নিয়ে চলাফেরা করে যা দিয়ে সে মাঝে মাঝে মেঝেতে মৃদু মৃদু চাপ দেয়, বিশেষ করে যখন তার যুক্তিমালায় নতুন কোন কথা সে যোগ করে। প্রাথমিক কিছু সম্ভাষণ বিনিময়ের পর বৃদ্ধ যাজক বলতে শুরু করে, “আমি শুনতে পেলাম আমাদের পূর্বপুরুষদের রাস্তাটিকে নাকি কিছুদিন যাবত পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।”

উত্তরে মাইকেল অবি বলে, “হ্যাঁ, আপনি ঠিকই শুনেছেন, আমরা নিশ্চয়ই স্কুল প্রাঙ্গণের ভেতর দিয়ে লোকজনের সদর রাস্তা বানানোর অনুমতি দিতে পারিনা।”

বৃদ্ধ যাজক হাঁটার লাঠি নিচের দিকে নামাতে নামাতে বলে, “শোন বাবাজী, এই পথটি তোমার এমনকি তোমার বাবার জন্মের পূর্বেও এখানে ছিল। এই গ্রামটি তার পুরো জীবৎকাল ধরেই এর উপর নির্ভর করে আসছে। আমাদের মৃত আত্মীয়-স্বজনরা এই পথ দিয়ে বের হয়ে যায় এবং আমাদের পূর্বপুরুষরা এই পথ ধরে আমাদের দেখতে আসে। কিন্তু এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, এটা হচ্ছে সেই পথ যেখান দিয়ে শিশুরা আসে জন্মগ্রহণ করতে।”

মাইকেল অবি মুখে স্মিত হাসি ঝুলিয়ে রেখে শুনে যায়।

অবশেষে সে বলে, “আমাদের স্কুলের প্রধান উদ্দেশ্যই হচ্ছে এসমস্ত কুসংস্কারপূর্ণ বিশ্বাসকে মানুষের মন থেকে পুরোপুরি মুছে ফেলা। মৃত মানুষদের কখনো দরকার পড়েনা পায়ে চলার পথ ব্যবহার করার। পুরো পরিকল্পনাটা বেশ মজাদার। আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে আপনাদের সন্তানদেরকে এমন শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলা যাতে করে এসব আজগুবী ধারণায় তাদের হাসি পায়।

মাথা ঝুঁকে বৃদ্ধ জানায়, “তুমি যা বললে তা হয়তো সত্য, কিন্তু আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের কার্যকলাপকে অনুসরণ করে চলি। তুমি যদি রাস্তাটিকে খুলে দাও তাহলে এটা নিয়ে আমাদের আর কথা বলার কিছু নেই। আমি যা সর্বদা বলি তা হলঃ একই ডালে পেঁচা এবং ঈগল দুটোকেই বসতে দাও।” বৃদ্ধ যাজক চলে যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ায়।

তরুণ প্রধান শিক্ষক উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলে, “আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত, আমাদের স্কুল প্রাঙ্গণের ভেতরে কোন সদর রাস্তা থাকতে পারবে না। এটা আমাদের স্কুলের নিয়ম-কানুনের বিরুদ্ধে যায়। আপনারা চাইলে অবশ্য আমাদের স্কুল প্রাঙ্গণের পাশ দিয়ে অন্য একটি পথ তৈরি করে নিতে পারেন। এতে আমাদের কোন আপত্তি তো থাকবেই না, বরং স্কুলের ছাত্ররা এই পথটি গড়ে তুলতে সহযোগিতা করবে। আমি মনে করিনা যে, কাছেই আরেকটি পথ খুঁজে নিতে আপনাদের পূর্বপুরুষদের নিশ্চয় তেমন কোন সমস্যা হবে।”

ইতিমধ্যে বাইরে বেরিয়ে আসা বৃদ্ধ যাজক ঘোষণা করেন, “এই বিষয়ে আমার আর কিছু বলার নেই।”

দুই দিন পর গ্রামের একজন যুবতী নারী সন্তান প্রসব করতে গিয়ে মারা যায়। অনতিবিলম্বে সকলে একজন ভবিষ্যৎবক্তার সাথে শলাপরামর্শ করতে বসে যায় এবং পূর্বপুরুষরা গ্রামে ঢুকতে বেড়ার দ্বারা বাঁধা প্রাপ্ত হয়ে মনে যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে তার প্রশমন করতে বড় কিছু উৎসর্গ করার জন্য গ্রামবাসীদেরকে নির্দেশ দান করে ।

পরদিন সকালে মাইকেল অবি যেন তার সকল কাজের ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যে জেগে ওঠে। তৃণলতা আচ্ছাদিত সুন্দর বেড়াগুলো রাস্তা থেকে অনেক দূরে স্কুল প্রাঙ্গণের একেবারে বাইরে ফেলে দেয়া হয়েছে, ফুলগাছগুলোকে মাড়িয়ে তছনছ করে ফেলা হয়েছে এবং একটা স্কুল দালানকে গুড়ো করে ফেলা হয়েছে। সেই দিনই ইউরোপীয়ান ব্যবস্থাপক স্কুল পরিদর্শন করতে এসে স্কুল প্রাঙ্গণের অবস্থা বর্নণা করে একটি জঘন্য রিপোর্ট পাঠায়। কিন্তু বেশী গুরুত্ব দেয় “স্কুল এবং গ্রামবাসীদের মধ্যে ঘনিয়ে ওঠা যুদ্ধাবস্থা বিষয়ে, যা নতুন প্রধান শিক্ষকের অতি কৌতুহলের কারণেই শুরু হয়েছে
source....http://arts.bdnews24.com/?p=4991#more-4991

22
Story, Article & Poetry / দুর্ঘটনার পর
« on: November 22, 2015, 01:16:57 PM »


সারা রাত যদি ঘুম না আসে, চোখ জ্বালা–জ্বালা করে৷ তখন বিষাদ–কালো চোখদুটো জুড়িয়ে নেওয়ার জন্যে রাত নিজে–নিজেই অনেক ভেতরের দিকে চলে যায় আর আকাশে–বাতাসে ছড়িয়ে এলিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে৷
একটু পরেই কচি সোনারঙা সূর্য পুব আকাশে ছটফট করে উঠবে৷ আকাশের কোন নরম জায়গাটা যে আজ পছন্দ, কোথা থেকে শুরু করবে, বুঝতে একটু সময় নেবে৷ তারপর স্থির হয়ে বসবে৷
বসবার কি ফুরসত আছে? ওদিকে, ওই জলট্যাঙ্কের ওপাশে একতলার সবাই ঘুমে কাদা৷ ওদের পুঁচকে বাচ্চাটা ততক্ষণে উঠে গড়িয়ে খাট থেকে নামে আর ভোরে খুলে–রাখা দরজা পেরিয়ে বারান্দায় চলে আসে৷ বাইরে রাস্তা৷ ফুটপাথে তেঁতুলগাছে শালিকের দল৷ ছোট্ট চড়ুইয়ের ফুড়ুৎ৷ সে ঘোরে৷ রেলিঙে মুখ ঠেকায়৷ তুলতুলে হাত বের করে কচি গলায় ডাকে— আকুম! আকুম! খা, খা৷
পাখি, কুকুর, কাঠবেড়ালি— সবাই আকুম৷
তাকে চোখে–চোখে রাখতে হয়৷ এই রেলিং বেয়ে উঠছে, এই রেলিঙের বাইরে পা গলিয়ে শরীর এগিয়ে দিচ্ছে, এই মাথা বের করার চেষ্টা করছে৷
প্রতিটি বিপজ্জনক মুহূর্তে ছটফটে রোদ এসে বাচ্চাটিকে ভেতরে ঢুকিয়ে দেয়৷ আর প্রতিবারই আকাশ হেসে ওঠে৷ যেন সে দর্শক৷ সমর্থকও৷ তার রক্ষণভাগ নিখুঁত খেলছে৷

কিন্তু একদিন সূর্য পারল না৷ বাচ্চাটি তিনফুট উঁচু বারান্দা থেকে রেলিং গলে নিচে পড়ে গেল৷
সে কিন্তু রেলিং গলে বেরিয়ে বাইরে যেতে চেয়েছিল৷ পড়ে যেতে চায়নি৷
দু’বছরের কচি হাড়৷ ককিয়ে উঠল৷ তার কান্না আর চিৎকার শুনে সবার ঘুম ভেঙে যায়৷ ছুটে আসে৷
সূর্য তখন লজ্জায় মুখ লুকোবার জন্যে একটুকরো মেঘ খুঁজছে৷ মার্চের মেঘ অভিমানে নিজেকে সরিয়ে নিল৷ আকাশের নীল ততক্ষণে ক্ষোভে ফ্যাকাশে হয়ে গেছে৷

সবাই বাচ্চাটিকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেল৷ অত সকালে ডাক্তারবাবু বসেন না৷ তবু পাড়ার কেস৷ জানলায় বাসি মুখ এনে তিনি হাসপাতালে যেতে বললেন৷ এক্স-রে দরকার৷ কোথাও ভেঙেছে কিনা জানতে হবে৷
হাসপাতালে গেলে সূর্য কি আর নিচের আকাশে চুপটি করে বসে থাকতে পারে! চড়চড় করে ওপরে উঠল৷ আর অপরাধীর মতো দেখতে লাগল চারদিক৷
আউটডোর, ডাক্তার, নার্স, ওয়ার্ডবয়, বেড— এত হইচইয়ে বাচ্চাটি কখন যেন থম মেরে মায়ের কোলে নেতিয়ে পড়েছে৷

একটা নার্স, মাথায় গম্ভীর–সাদা পায়রা, কাছে এল৷ ইঞ্জেকশন দেবে৷ ঝুঁকে দেখল বাচ্চাটিকে৷ ডানপায়ে আলতো হাত দিতেই ফের ককিয়ে উঠল বাচ্চাটি, যদিও আকাশ আগেই ওর পায়ে পুরু নীলের পুলটিস লাগিয়ে দিয়েছিল৷
বিকেলে তাকে নিয়ে যাওয়া হল চৌকো অন্ধকার একটা ঘরে৷ সে–ঘরে বিরাট এক যন্ত্র৷ লম্বা গলা৷ নড়েচড়ে৷ তার রশ্মির ক্ষমতা এত বেশি, সূর্যের অনেকটা রোদ একত্র করলেও ততটা নয়৷ হড়হড়িয়ে লম্বা গলা বের করল যন্ত্রটা৷ তার র‌শ্মি কেউ দেখতে পেল না৷ শুধু অলক্ষ্যে বাচ্চাটির ছোট্ট ডানপায়ের ভেতরে ডুবুরির মতো নেমে গেল আর খুঁজে পেল— ঊরুর হাড়ে চোট লেগেছে৷ মিহি একটা চিড়৷
যন্ত্রচালকই অনিচ্ছায় বাচ্চার বাবাকে কথাটা প্রথম জানায়, যেন চিড়িয়াখানায় কোনও বখাটে দর্শক তাদের খাঁচায় একটা ঢিল ছুঁড়ে মেরেছে৷ লোকটার চোখের সামনে ধরা তখন কালো রঙের একটা প্লেট৷

বাবা জানায় কাকাকে৷ কাকা একটু তফাতে বসে থাকা মাকে৷ মায়ের কোলে বাচ্চাটি কিছুই জানতে পারে না৷ তাকে ঘুমের ওষুধ দেওয়া হয়েছে৷
কয়েক দিন পর বাড়ি ফিরল বাচ্চাটি৷ পায়ে মোটা প্লাস্টার৷ সে জানে না— প্লাস্টারের ভেতর, আরও ভেতরে, একটা চিড় এইভাবে জোড়া লাগবে৷
এখন সে নড়াচড়াও বিশেষ করতে পারে না৷ প্লাস্টারের ভারে দিনরাত শুয়ে থাকে৷ বাবা আবার অফিস যেতে শুরু করেছে৷ মা–ও করবে আর কয়েক দিন পর৷ কাকার দিল্লি যাওয়ার সময় হয়ে এল৷ নতুন চাকরি৷
শুধু সে আর বারান্দায় যেতে পারে না৷ ভোর এসে ঘুম ভাঙিয়ে দিলে মশারির ভেতর থেকে ঘরের চারদিকে সে তাকায় আর চুপটি করে শুয়ে থাকে৷
এখন ছবির ফ্রেম থেকে দেওয়ালের হরিণগুলো নেমে এসে কাছটিতে বসে৷ জঙ্গলের গল্প শোনায়৷ তাদের ক্ষিপ্র গতির কথা বলে৷

এখন অনেক দিনের দেওয়ালে আটকানো সেই বেড়ালটা, নাদুসনুদুস, দেমাকি, সেও নামে ফ্রেম থেকে৷ তার নরম বাদামি–সাদা লোমে আদর করে৷ টেবিলের ওপর রাখা হারমোনিয়াম খুব আস্তে বেজে ওঠে৷ যেন হাওয়ায় ভাসা সুর৷
কিন্তু এসবে কৌতূহল নেই তার৷ বরং সে মায়ের বালিশের কাছে রাখা মোবাইল ফোনটা টেনে নেয়৷ আর সেই ফোন কানে চেপে ধরে৷ যখন সে ছুটে বেড়াত, কানের কাছে ধরে এঘর–ওঘর এমনি–এমনি ঘুরত আর কী–সব বকবক করত৷

এখন কানে ধরতেই মোবাইলে ফিসফিসিয়ে কেউ বলে— উঠে গেছি আমি৷ ছটফট করছি তোমার জন্যে৷ কত কাঁচা রোদ এনেছি৷ আকাশ রাঙিয়ে দিয়েছি পুরো৷ বেরিয়ে এসো, দেখে যাও!
আকাশ বলে— তোমার ওপরটা আমি নরম আর নীল করে রেখেছি৷ এসো, আমাকে ছোঁও৷ দেখ, তুমি যতই হাত বাড়াবে, ততই আমি নিজেকে ওপরে তুলে নেব৷ মজার খেলা না?
মোবাইলটা কানে আরও চেপে ধরে সে৷ আরও৷
মেঘ তখন বলছে— আমি তো তুলোর মতো৷ তুমিও৷ তোমায় নিয়ে উড়ে যেতে পারি অনেক দূরে৷ অ–নে–ক৷ আকাশের হুই পারে৷ তুমি ভাবতেও পারবে না, সে কত দূর৷

বারান্দার রেলিং ততক্ষণে মোবাইলে বাধো–বাধো মুখ এগিয়ে এনেছে৷ বলছে— আমি তো আলোর জন্যে, হাওয়ার জন্যে নিজেকে ফালা–ফালা করে রেখেছি৷ আগে ছিলাম গরাদ৷ এখন কত বাহারি নকশা আমার৷ সত্যি বলছি, তোমায় ফেলতে চাইনি আমি৷ তা ছাড়া, মনে করে দেখ, তুমি তো বেরিয়ে যেতেই চেয়েছিলে৷ নিচে পড়ে যেতে তো চাওনি!
বাচ্চাটি ফোন রেখে দেয়৷
একবার বাবাকে দেখে৷ একবার মাকে৷ ওরা তখনও ঘুমোচ্ছে৷
মশারির চারপাশে তাকায় সে৷ পায়ের ভেতরে একটা ছোট্ট যন্ত্রণা ঘুরে–ঘুরে বেড়াচ্ছে৷

হয়ত তার মনে পড়ে— সত্যিই তো, সে বাইরে যেতেই চেয়েছিল৷ নিচে পড়ে যেতে তো চায়নি!
ওই তো বাবা৷ ঘুমে কাদা৷ মা৷ সেও ঘুমোচ্ছে৷ তবে মায়ের একটা আলতো হাত তার বুকে৷
ভাবে— তাহলে বাইরে সে কোথায় যেতে চেয়েছিল?

source...

সারা রাত যদি ঘুম না আসে, চোখ জ্বালা–জ্বালা করে৷ তখন বিষাদ–কালো চোখদুটো জুড়িয়ে নেওয়ার জন্যে রাত নিজে–নিজেই অনেক ভেতরের দিকে চলে যায় আর আকাশে–বাতাসে ছড়িয়ে এলিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে৷
একটু পরেই কচি সোনারঙা সূর্য পুব আকাশে ছটফট করে উঠবে৷ আকাশের কোন নরম জায়গাটা যে আজ পছন্দ, কোথা থেকে শুরু করবে, বুঝতে একটু সময় নেবে৷ তারপর স্থির হয়ে বসবে৷
বসবার কি ফুরসত আছে? ওদিকে, ওই জলট্যাঙ্কের ওপাশে একতলার সবাই ঘুমে কাদা৷ ওদের পুঁচকে বাচ্চাটা ততক্ষণে উঠে গড়িয়ে খাট থেকে নামে আর ভোরে খুলে–রাখা দরজা পেরিয়ে বারান্দায় চলে আসে৷ বাইরে রাস্তা৷ ফুটপাথে তেঁতুলগাছে শালিকের দল৷ ছোট্ট চড়ুইয়ের ফুড়ুৎ৷ সে ঘোরে৷ রেলিঙে মুখ ঠেকায়৷ তুলতুলে হাত বের করে কচি গলায় ডাকে— আকুম! আকুম! খা, খা৷
পাখি, কুকুর, কাঠবেড়ালি— সবাই আকুম৷
তাকে চোখে–চোখে রাখতে হয়৷ এই রেলিং বেয়ে উঠছে, এই রেলিঙের বাইরে পা গলিয়ে শরীর এগিয়ে দিচ্ছে, এই মাথা বের করার চেষ্টা করছে৷
প্রতিটি বিপজ্জনক মুহূর্তে ছটফটে রোদ এসে বাচ্চাটিকে ভেতরে ঢুকিয়ে দেয়৷ আর প্রতিবারই আকাশ হেসে ওঠে৷ যেন সে দর্শক৷ সমর্থকও৷ তার রক্ষণভাগ নিখুঁত খেলছে৷

কিন্তু একদিন সূর্য পারল না৷ বাচ্চাটি তিনফুট উঁচু বারান্দা থেকে রেলিং গলে নিচে পড়ে গেল৷
সে কিন্তু রেলিং গলে বেরিয়ে বাইরে যেতে চেয়েছিল৷ পড়ে যেতে চায়নি৷
দু’বছরের কচি হাড়৷ ককিয়ে উঠল৷ তার কান্না আর চিৎকার শুনে সবার ঘুম ভেঙে যায়৷ ছুটে আসে৷
সূর্য তখন লজ্জায় মুখ লুকোবার জন্যে একটুকরো মেঘ খুঁজছে৷ মার্চের মেঘ অভিমানে নিজেকে সরিয়ে নিল৷ আকাশের নীল ততক্ষণে ক্ষোভে ফ্যাকাশে হয়ে গেছে৷

সবাই বাচ্চাটিকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেল৷ অত সকালে ডাক্তারবাবু বসেন না৷ তবু পাড়ার কেস৷ জানলায় বাসি মুখ এনে তিনি হাসপাতালে যেতে বললেন৷ এক্স-রে দরকার৷ কোথাও ভেঙেছে কিনা জানতে হবে৷
হাসপাতালে গেলে সূর্য কি আর নিচের আকাশে চুপটি করে বসে থাকতে পারে! চড়চড় করে ওপরে উঠল৷ আর অপরাধীর মতো দেখতে লাগল চারদিক৷
আউটডোর, ডাক্তার, নার্স, ওয়ার্ডবয়, বেড— এত হইচইয়ে বাচ্চাটি কখন যেন থম মেরে মায়ের কোলে নেতিয়ে পড়েছে৷

একটা নার্স, মাথায় গম্ভীর–সাদা পায়রা, কাছে এল৷ ইঞ্জেকশন দেবে৷ ঝুঁকে দেখল বাচ্চাটিকে৷ ডানপায়ে আলতো হাত দিতেই ফের ককিয়ে উঠল বাচ্চাটি, যদিও আকাশ আগেই ওর পায়ে পুরু নীলের পুলটিস লাগিয়ে দিয়েছিল৷
বিকেলে তাকে নিয়ে যাওয়া হল চৌকো অন্ধকার একটা ঘরে৷ সে–ঘরে বিরাট এক যন্ত্র৷ লম্বা গলা৷ নড়েচড়ে৷ তার রশ্মির ক্ষমতা এত বেশি, সূর্যের অনেকটা রোদ একত্র করলেও ততটা নয়৷ হড়হড়িয়ে লম্বা গলা বের করল যন্ত্রটা৷ তার র‌শ্মি কেউ দেখতে পেল না৷ শুধু অলক্ষ্যে বাচ্চাটির ছোট্ট ডানপায়ের ভেতরে ডুবুরির মতো নেমে গেল আর খুঁজে পেল— ঊরুর হাড়ে চোট লেগেছে৷ মিহি একটা চিড়৷
যন্ত্রচালকই অনিচ্ছায় বাচ্চার বাবাকে কথাটা প্রথম জানায়, যেন চিড়িয়াখানায় কোনও বখাটে দর্শক তাদের খাঁচায় একটা ঢিল ছুঁড়ে মেরেছে৷ লোকটার চোখের সামনে ধরা তখন কালো রঙের একটা প্লেট৷

বাবা জানায় কাকাকে৷ কাকা একটু তফাতে বসে থাকা মাকে৷ মায়ের কোলে বাচ্চাটি কিছুই জানতে পারে না৷ তাকে ঘুমের ওষুধ দেওয়া হয়েছে৷
কয়েক দিন পর বাড়ি ফিরল বাচ্চাটি৷ পায়ে মোটা প্লাস্টার৷ সে জানে না— প্লাস্টারের ভেতর, আরও ভেতরে, একটা চিড় এইভাবে জোড়া লাগবে৷
এখন সে নড়াচড়াও বিশেষ করতে পারে না৷ প্লাস্টারের ভারে দিনরাত শুয়ে থাকে৷ বাবা আবার অফিস যেতে শুরু করেছে৷ মা–ও করবে আর কয়েক দিন পর৷ কাকার দিল্লি যাওয়ার সময় হয়ে এল৷ নতুন চাকরি৷
শুধু সে আর বারান্দায় যেতে পারে না৷ ভোর এসে ঘুম ভাঙিয়ে দিলে মশারির ভেতর থেকে ঘরের চারদিকে সে তাকায় আর চুপটি করে শুয়ে থাকে৷
এখন ছবির ফ্রেম থেকে দেওয়ালের হরিণগুলো নেমে এসে কাছটিতে বসে৷ জঙ্গলের গল্প শোনায়৷ তাদের ক্ষিপ্র গতির কথা বলে৷

এখন অনেক দিনের দেওয়ালে আটকানো সেই বেড়ালটা, নাদুসনুদুস, দেমাকি, সেও নামে ফ্রেম থেকে৷ তার নরম বাদামি–সাদা লোমে আদর করে৷ টেবিলের ওপর রাখা হারমোনিয়াম খুব আস্তে বেজে ওঠে৷ যেন হাওয়ায় ভাসা সুর৷
কিন্তু এসবে কৌতূহল নেই তার৷ বরং সে মায়ের বালিশের কাছে রাখা মোবাইল ফোনটা টেনে নেয়৷ আর সেই ফোন কানে চেপে ধরে৷ যখন সে ছুটে বেড়াত, কানের কাছে ধরে এঘর–ওঘর এমনি–এমনি ঘুরত আর কী–সব বকবক করত৷

এখন কানে ধরতেই মোবাইলে ফিসফিসিয়ে কেউ বলে— উঠে গেছি আমি৷ ছটফট করছি তোমার জন্যে৷ কত কাঁচা রোদ এনেছি৷ আকাশ রাঙিয়ে দিয়েছি পুরো৷ বেরিয়ে এসো, দেখে যাও!
আকাশ বলে— তোমার ওপরটা আমি নরম আর নীল করে রেখেছি৷ এসো, আমাকে ছোঁও৷ দেখ, তুমি যতই হাত বাড়াবে, ততই আমি নিজেকে ওপরে তুলে নেব৷ মজার খেলা না?
মোবাইলটা কানে আরও চেপে ধরে সে৷ আরও৷
মেঘ তখন বলছে— আমি তো তুলোর মতো৷ তুমিও৷ তোমায় নিয়ে উড়ে যেতে পারি অনেক দূরে৷ অ–নে–ক৷ আকাশের হুই পারে৷ তুমি ভাবতেও পারবে না, সে কত দূর৷

বারান্দার রেলিং ততক্ষণে মোবাইলে বাধো–বাধো মুখ এগিয়ে এনেছে৷ বলছে— আমি তো আলোর জন্যে, হাওয়ার জন্যে নিজেকে ফালা–ফালা করে রেখেছি৷ আগে ছিলাম গরাদ৷ এখন কত বাহারি নকশা আমার৷ সত্যি বলছি, তোমায় ফেলতে চাইনি আমি৷ তা ছাড়া, মনে করে দেখ, তুমি তো বেরিয়ে যেতেই চেয়েছিলে৷ নিচে পড়ে যেতে তো চাওনি!
বাচ্চাটি ফোন রেখে দেয়৷
একবার বাবাকে দেখে৷ একবার মাকে৷ ওরা তখনও ঘুমোচ্ছে৷
মশারির চারপাশে তাকায় সে৷ পায়ের ভেতরে একটা ছোট্ট যন্ত্রণা ঘুরে–ঘুরে বেড়াচ্ছে৷

হয়ত তার মনে পড়ে— সত্যিই তো, সে বাইরে যেতেই চেয়েছিল৷ নিচে পড়ে যেতে তো চায়নি!
ওই তো বাবা৷ ঘুমে কাদা৷ মা৷ সেও ঘুমোচ্ছে৷ তবে মায়ের একটা আলতো হাত তার বুকে৷
ভাবে— তাহলে বাইরে সে কোথায় যেতে চেয়েছিল?

source...http://arts.bdnews24.com/?p=7122#more-7122


23
নিমের স্বাস্থ্যগুণ সম্পর্কে জানিয়েছে স্বাস্থ্যবিষয়ক এক ওয়েবসাইট।

- নিমকে গাছকে বলা হয় ‘ওয়ান ট্রি ফার্মেসি’। বিভিন্ন ওষুধ তৈরিতে এবং চুল ও ত্বকের বিভিন্ন ঘরোয়া প্রতিকারের অংশ হিসেবে নিম ব্যবহার করা হয়।

- নিমপাতায় রয়েছে ফাঙ্গাস ও ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধকারী উপাদান। যা খুশকি দূর করতে কার্যকর।

- ত্বকের শুষ্কতা ও চুলকানি থেকে মুক্তি দেয় নিম। চুলের গোড়া শক্ত করতে এবং বৃদ্ধি বাড়াতেও নিম কার্যকর।

- চুল ও মাথার ত্বকে কন্ডিশনার হিসেবে নিম ব্যবহার করা যায়।

- ত্বকের প্রদাহ এবং চামড়া ওঠা প্রতিরোধ করে।

- নিমে বিষাক্ত উপাদান অপসারণকারী উপাদান থাকার কারণে ত্বকের বিভিন্ন রোগবালাইয়ের আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় এটি ব্যবহার করা হয়।

- ব্রণের জন্য দায়ি ব্যাকটেরিয়া যেমন, ‘প্রোপিয়োনিব্যাকটেরিয়াম একনেস’ ও ‘স্টাফিলোতোকাস এপিডারমিডিস’য়ের বৃদ্ধি রোধ করে নিম।

- ত্বকের যত্নে নিমের তেল এবং নিমের পাতা উৎকৃষ্ট উপকরণ। ত্বকের শুষ্কতা দূর করে এবং চুলকানি, লালচেভাব ও প্রদাহ নিরাময় করে।

ব্যাকটেরিয়াজনিত প্রদাহ যেমন: ব্রণ এবং আলসার দূরে রাখতেও উপকারী নিম।

নিমের অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল উপাদান ক্ষতস্থান সারিয়ে তোলে। ক্ষতস্থানকে প্রদাহ ও পঁচে যাওয়া থেকেও বাঁচায়।

ব্রণের ক্ষেত্রে, ব্যাকটেরিয়ার সঙ্গে সমূলে লড়াই করে নিম। পুনরায় ব্রণ হওয়া রোধ করে ও ব্রনের দাগও দুর করে।

- একজিমা ও অন্যান্য ত্বকের প্রদাহ নিরাময়ে নিম বিশেষ কার্যকর।

- নিমে থাকে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা পরিবেশগত দূষণ এবং বয়সজনিত প্রভাব থেকে ত্বক রক্ষা করে।

- নিমের তেলে থাকে ফ্যাটি অ্যাসিড ও ভিটামিন ই যা ত্বক দ্রুত শুষে নেয়। ত্বকের লাবণ্য ধরে রাখতে এবং স্থিতিস্থাপকতা রক্ষা করতেও এটি সহায়ক।

- ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে এবং ত্বকের বিভিন্ন অংশের রংয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য রাখতে সাহায্য করে।

- নিমের তেলে থাকা ফ্যাটি অ্যাসিড ব্রণের দাগ দূর করতে সাহায্য করে।

- ত্বক পরিষ্কার করতে কার্যকর নিমপাতা। এটি লোপকূপ দৃঢ় করে। মাস্ক হিসেবে নিমপাতা ব্যবহার করলে ত্বকের দূষিত পদার্থ দূর করে।

- ত্বকের ফাঙ্গাসজনিত প্রদাহ নিরাময়ে কার্যকরী নিম।
source....http://bangla.bdnews24.com/lifestyle/article1059006.bdnews

24
আমরা প্রতিনিয়ত যেসব খাবার গ্রহণ করি তার মধ্যে রয়েছে ভেজাল। খাদ্যে ভেজাল মেশানোর প্রক্রিয়াও এখন ব্যতিক্রমধর্মী। ভোক্তা সাধারণের চোখে ফাঁকি দিয়ে কীভাবে ভোজাল মেশানো যায় সেদিকে বেশি নজর রাখছেন এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীরা। জমি থেকে ফসল তোলা থেকে শুরু করে খাদ্য প্রক্রিয়াজাত করণের জন্য প্রস্তুত ফ্যাক্টরীগুলোতেও মেশানো হচ্ছে ভেজাল। ভেজালেরও ধরণ রয়েছে ভিন্ন। যে খাদ্যে যে ধরণের ভেজাল মেশালে সহজে চোখে ধরা পড়ার কোনো সুযোগ নেই সেদিকেই নজর রাখা হচ্ছে চক্রন্তিকারীরা। সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের চোখে ফাঁকি দিয়েই চলছে এসব কাজ। শুঁটকি আড়তে প্রকাশ্যেই কীটনাশক মেশানো হচ্ছে। মাছে ফরমালিনের খবর এখন সকলের জানা রয়েছে। অন্যন্য খাদ্যদ্রব্যে দেয়া হচ্ছে বিষাক্ত কেমিক্যাল। ভোজাল খাদ্য থেকে জাতিকে রক্ষার জন্য সরকারী উদ্যোগ থাকলেও তা কাঙ্খিত নয়। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ভোক্তা সাধারণ।
কোন কোন খাদ্যে ভেজাল মেশানো হচ্ছে : বেকারি পন্যে দুনিয়ার ভেজাল। ফলে, মাছে ফরমালিন। অপরিপক্ক টমেটো হরমোন দিয়ে পাকানো হচ্ছে। গরুকে নিষিদ্ধ ঔষধ খাইয়ে মোটা করা হচ্ছে। সেগুলো মানব স্বাস্থের জন্য ভয়ানক ক্ষতিকর! পচনরোধে বিষাক্ত ফরমালিন, তাজা দেখাতে মাছে রেড অক্সাইড, ফলমূল ও শাকসব্জিতে কার্বাইড মিশানো হয়ে থাকে। এসব রাসায়নিক পদার্থ মানব দেহের জন্য মারাত্বক ক্ষতিকর। মানুষের লিভার, কিডনি নষ্ট করে ফেলে। মানুষ তার স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। অসুস্থ হয়ে নিতে হয় হাসপাতালে। যে দেশে নুন আনতে পান্তা ফুরায়, সেখানে রোগ বালাই যেন গোদের ওপর বিষ ফোঁড়ার মতো। বিকল্পহীন এ সব ভেজাল খাদ্য গ্রহণ করে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে নানা রকম ক্রনিক রোগে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আর কত ভেজাল খাব? কথায় বলে, মাছে-ভাতে বাঙালি। সেই মাছ-ভাত এখন আর নিরাপদ নেই। খাদ্যে ভেজাল। এ এক নীরব ঘাতক। ভেজাল খাবারে দেশ সয়লাব। কী খাব? নিরাপদ কোনো খাবার আদৌ কী আছে? মাছে ও দুধে ফরমালিন, ফলমূলে কার্বাইডসহ নানা বিষাক্ত কেমিক্যাল, সবজিতে রাসায়নিক কীটনাশক, জিলাপি-চানাচুরে মবিল, বিস্কুট, আইসক্রিম, কোল্ডড্রিংক্স, জুস, সেমাই, আচার, নুডুলস এবং মিষ্টিতে টেক্সটাইল ও লেদার রং, মুড়িতে ইউরিয়া-হাইড্রোজ, পানিতে আর্সেনিক, ক্যাডমিয়াম, লেড, ইকোলাই। ভেজাল খাবার খেয়ে আমরা জাতিকে ক্রমাগত মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছি, নতুন প্রজন্মকে মেধাহীন পঙ্গু জীবনের মতো এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাচ্ছি। কোথায় নেই ভেজাল? হাত বাড়িয়ে যা কিছু খাচ্ছি সবকিছুতেই ভেজাল। নোংরা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি হচ্ছে ভেজাল ও নকল পণ্য। সেই পণ্য চলে আসছে বাজারে। আসল পণ্যের হুবহু নকল সিল-মনোগ্রাম, এমনকি অনেক ক্ষেত্রে বিএসটিআইয়ের অনুমোদন না নিয়ে নকল অনুমোদনপত্র ছাপা হয়ে যাচ্ছে প্যাকেটের গায়ে। নকলের দাপটে এখন আসল পণ্য চেনাই দায় হয়ে পড়েছে। বাজার সয়লাব হয়ে গেছে এসব নকল পণ্যে।

বাজারে ফ্রুট জুস, চিপস, ছোটদের মন রক্ষাকারী বিভিন্ন ধরনের যে শরবত পাওয়া যায়, তার অধিকাংশই নকল। অসাধু ব্যবসায়ীরা আইন-কানুনের তোয়াক্কা না করে খাবারে অবাধে মিশিয়ে যাচ্ছে ফরমালিন। শুধু মাছ নয়, দুধ, মিষ্টি, সেমাই, জুস, শরবত, ফল, ভোজ্যতেল, মসলা, মুড়ি ও ইফতারের বিভিন্ন মুখরোচক উপাদান, জিলাপিসহ ফল ও শাক-সবজির মধ্যেও এখন মেশানো হচ্ছে বিষাক্ত এই কেমিক্যাল। ফরমালিন মেশানো খাবার ধরা পড়লে জেল-জরিমানাও করা হচ্ছে, তারপরও থেমে নেই তারা। জীবন রক্ষাকারী খাবার স্যালাইন নকল তৈরি হচ্ছে। এমনকি খেজুরেও ফরমালিন দেয়া হচ্ছে। অস্বাস্থ্যকর-নোংরা পরিবেশে কোনো ধরনের ল্যাবরেটরি ও রসায়নবিদ ছাড়াই স্যালাইনের মতো অতি জরুরি একটি ওষুধ তৈরি করে বাজারজাত করা হচ্ছে। মাছের পাশাপাশি দুধেও দেয়া হচ্ছে ফরমালিন। শাকসবজিতে মেশানো হচ্ছে ক্ষতিকর রাসায়নিক। ফলে মেশানো হচ্ছে বিষাক্ত কার্বাইড। কাউন ও কাঠের গুঁড়া মিশিয়ে মসলা তৈরি করা হয়। ঘাসের গুঁড়ার সঙ্গে রং মিশিয়ে নামি-দামী ব্র্যান্ডের মসলা তৈরি করে একটি চক্র। ছোলা ও মুড়ি সাদা করতে মেশানো হয় হাইড্রোজ। কৃত্রিম রং মিশিয়ে নকল ঘি বানানো হচ্ছে। এমনকি শিশুদের বিকল্প খাদ্যেও মেলামিন (ভেজাল) মেশানো হচ্ছে। আম, আনারস ও টমেটোতে কেমিক্যাল মিশিয়ে হলুদ করা হচ্ছে। এমনিভাবে দেশের প্রতিটি খাবারেই ভেজাল মেশানো হচ্ছে। খাদ্যে ভেজাল হিসেবে জুতার কালি ও কাপড়ের রংও উদ্ধার করেছে বিভিন্ন অভিযানের সময় মোবাইল কোর্ট। খাবারে ফরমালিন, বস্ত্রকলের বিষাক্ত রং এবং ইউরিয়া সার মেশানো হয় যা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। আম, পেঁপে, পেয়ারা, আনারস, জাম, জামরুল, তরমুজ, বাঙ্গি, আপেল, আঙ্‌গুর, নাশপাতিসহ দেশি-বিদেশি প্রায় সব ফলে মেশানো হচ্ছে বিষাক্ত কেমিক্যাল। সাধারণত ফলমূলের উজ্জ্বল রং বা নজরকাড়া রূপ মানুষকে আকৃষ্ট করে। এগুলো বেশি দামে বিক্রি হয়। ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে দোকানিরা এসব ক্ষতিকর কেমিক্যাল মেশাচ্ছেন।

সমপ্রতিকালে যেসব খাবারে ভেজাল পাওয়া যাচ্ছে তা হলো-হোটেল, রেস্তোরাঁ, হাসপাতালের ক্যান্টিনে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রান্নাকরা পচা ও বাসি খাবার, ফাস্টফুড, বিষাক্ত সাইক্লোমেট দিয়ে তৈরি টোস্ট বিস্কুট, বিষাক্ত ক্যালসিয়াম কার্বাইড দিয়ে পাকানো ফল (আম, কলা, পেঁপে, আনারস ও অন্যান্য ফল), বিষাক্ত উপকরণ দিয়ে তৈরি রুটি, বিস্কুট, সেমাই, নুডলস, ভেজাল গম যা পশুর খাবার যোগ্যও নয়, ক্ষতিকর রং দেয়া ডিম, মেয়াদোত্তীর্ণ আইসক্রিম, বিভিন্ন রকম মিষ্টান্ন দ্রব্য, ডিডিটি দেয়া শুটকি, ডিডিটি দেয়া চাল, ক্ষতিকর রং দেয়া সবজি, মবিল দিয়ে ভাজা চানাচুর, ফরমালিন দেয়া মাছ, ক্ষতিকর রং দেয়া ডাল, ভেজালমিশ্রিত সয়াবিন তেল, ভেজাল মিশ্রিত সরিষার তেল, রং ও ভেজাল মেশানো ঘি, পামওয়েল মিশ্রিুত কনডেন্সড মিল্ক, ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান দিয়ে তৈরি প্যাকেটজাত জুস, মিনারেল ওয়াটার, মরা মুরগির মাংসে।

ব্যবসায়ীরা খাবারে সাধারণত যেসব নিম্নানের কার্বাইড ব্যবহার করেন তা থেকে আর্সেনিক তৈরি হয়। আর্সেনিক হলো সেঁকো বিষ। সেই বিষই ফলের মধ্যে থেকে যায় এবং মানব শরীরে প্রবেশ করে। বাজারে বিস্কুট, মিষ্টি, আইসক্রিম, কোল্ডড্রিংক্স, জুস, সেমাই, আচার, নুডুলস, কেক এবং রেস্তোরাঁয় রান্নাকরা খাবারের অধিকাংশই থাকে স্বাদহীন। খেয়ে কোনো তৃপ্তি পাওয়া যায় না। এসব খাবার শরীরের জন্যও নিরাপদ নয়।
শাক-সবজি, মাছ ও মাংসে ভেজাল তো নিত্যদিন রয়েছেই। ফরমালিনমুক্ত মাছ পাওয়া দুষ্কর। তাছাড়া কৃত্রিমভাবে প্রজননের মাধ্যমে বাজারজাত মাছ, মাংস আমরা সব সময় খাই। মাছকে ইউরিয়া সার খাওয়ানো হয় এবং গরুর বর্জ্য, চামড়া আগুনে পুড়িয়ে এক প্রকার খাদ্য বানিয়েও মাছকে খাওয়ানো হয়, এমনকি ফার্মের বয়লার মুরগির বর্জ্য খাওয়ানো হয়। গরুকে বলিষ্ঠ করার জন্য আখের গুড়ের তৈরির বর্জ্য (রাব) যা এলকোহলসমৃদ্ধ এবং এমনকি ইউরিয়া মিশ্রিত ঘাস ও খড় খাওয়ানো হয়। এসব রাসায়নিক পদার্থ মিশ্রিত খাবার যে গরু খায় সে গরুর মাংস আমরা খাই।

ভোজাল খাদ্যে মানব দেহে যা ঘটছে : ভেজাল ও বিষ গ্রহণের ফলে মানবদেহে নানাবিধ দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। যেমন ক্যান্সার, লিভার রোগ, কিডনি রোগ এবং রক্ত শূন্যতা ইত্যাদি নানা রোগ-ব্যাধির প্রকোপ বেড়েই চলেছে। সাধারণত কাঁচা কলাকে ইথাইলিন গ্যাস দ্বারা পাকানো হয়। অধিক মুনাফালোভী কিছু সংখ্যক ব্যবসায়ী কাঁচা মৌসুমী ফল যেমন আম, কলা, পেঁপে, নাশপাতি, কুল ও আপেলকে ক্যালসিয়াম কার্বাইড নামক বিষাক্ত কেমিক্যাল দিয়ে পাকায়। এই ক্যালসিয়াম কার্বাইড একটি সহজলভ্য ও তুলনামূলকভাবে সস্তা কেমিক্যাল। কমপাউন্ড যা শিল্প-কলকারখানায় সাধারণত ব্যবহার হয়ে থাকে। দেখতে গাঢ় দূসর রং। অনেকটা রসুনের মতো গন্ধ ছড়ায়। এটা সাধারণত স্টিল জাতীয় পদার্থের ওয়েল্ডিং কাজে ব্যবহৃত হয়।

ব্যবসায়ীরা আম কিংবা অন্যান্য ফলকে সারিবদ্ধভাবে বসিয়ে ক্যালসিয়াম কার্বাইড ছোট ছোট খোলা পাত্রে মিশিয়ে সারি সারি করে বসিয়ে তারপর পলিথিন বিছিয়ে দেয়। এ বিষাক্ত কেমিক্যাল বাতাসে জলীয় বাষ্পের সংস্পর্শে এলে এসিটাইলিন গ্যাস তৈরি হয়। এই গ্যাস ফল পাকাতে সাহায্য করে। ক্যালসিয়াম কার্বাইডে আর্সেনিক ও ফসফরাস জাতীয় রাসায়নিক পদার্থ থাকে। এসিটাইলিন গ্যাস স্নায়ুতন্ত্র তথা ব্রেইনের অক্সিজেন সরবরাহ কমিয়ে দেয়। আর্সেনিক, চর্ম, লিভার, কিডনি, ফুসফুসসহ মানবদেহে মারাত্মক ক্ষতি করে। ক্যালসিয়াম কার্বাইড স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে।

স্বল্পমেয়াদি রোগের উপসর্গগুলো : ১. চোখ ও চামড়ার সংস্পর্শে এলে জ্বালাপোড়া এবং চোখের অন্ধত্ব এবং চামড়ায় ঘা হতে পারে। ২. শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করলে গলাব্যথা, কাশি ও শ্বাসকষ্ট হতে পারে। ৩. খাবারের মাধ্যমে গ্রহণ করলে মুখে ঘা হতে পারে। ৪. অতি মাত্রায় গ্রহণ করলে শ্বাসকষ্ট এমনকি ফুসফুসে পানি জমে যেতে পারে। ৫. এছাড়াও দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে ফুসফুসের ওপর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব যেমন কফ, কাশি ও এজমা।

কেমিক্যাল দিয়ে পাকানো ফল চেনার উপায় :
১. উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, আম কাটার পর চামড়ার ঠিক নিচে ফলের অংশ কাঁচা পাওয়া যাবে। যদিও চামড়াটি পাকা রংয়ের বর্ণ ধারণ করেছিল।

২. যদি ঝুঁড়িতে বা দোকানে সবগুলো ফল একই সময়ে একইরকম পাকা দেখা যায় এবং দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে ফলের চামড়ায় আঁচিল বা তিলের মতো রং দেখা যায়।

৩. প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় যে ফল পাকে তাতে মাছি বসবে কিন্তু কেমিক্যাল দ্বারা পাকানো হলে সে ফলে মাছি বসবে না।
৪. প্রাকৃতিকভাবে পাকা ফলের চামড়া উঠানোর পর এক ফোঁটা আয়োডিন দিলে তা গাঢ় নীল অথবা কালো বর্ণ ধারণ করে। কিন্তু কেমিক্যাল দ্বারা পাকানো ফলে এই আয়োডিনের রং অপরিবর্তিত থাকে।

আমাদের করণীয় : ফল খাওয়ার আগে কয়েক মিনিট পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। মৌসুমের আগে বাজারে যে পাকা ফলগুলো আসে সেগুলো ধরেই নিতে হবে এগুলো কেমিক্যাল দ্বারা পাকানো হয়েছে। যখন আম এবং আপেল জাতীয় ফল খাবেন তখন এগুলো টুকরো টুকরো করে খাবেন। পুরো ফল কামড়ে না খাওয়াই ভালো। আমাদের সবার দায়িত্ব জনগণকে সচেতন করে তোলা। ফল উৎপাদনকারী কৃষক, ব্যবসায়ী ও খুচরা বিক্রেতাদের ফল পাকানোর নিরাপদ প্রক্রিয়া শিক্ষা দেয়া। যেমন : আমের ক্ষেত্রে সারি সারি করে আম খড়ের গাদায় বসিয়ে রাখলে আম পেকে যাবে। তাছাড়া গাছ থেকে ফলগুলো পুরোপরিভাবে পাকার পর আম পাড়া ভালো। ফলের পেশায় যারা নিযুক্ত রয়েছে তাদের ক্যালসিয়াম কার্বাইড ব্যবহারের ক্ষতির দিকগুলো শিক্ষা দিতে হবে।

যারা মানুষের জীবন ও স্বাস্থ্য নিয়ে খেলা করে এবং মানুষের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয় তাদের আইনের মাধ্যমে শাস্তি ও অর্থদন্ডের বিধান করা একান্ত প্রয়োজন, যা অন্যান্য দেশে প্রচলিত রয়েছে। উপরে উল্লেখিত সবধরনের ভেজাল ও কেমিক্যাল মিশ্রিত খাবার খেয়ে আমরা বেঁচে আছি। তাই আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের স্বাস্থ্যহানি, মেধা ও মননশীলতা কতখানি বিঘ্নিত হবে এবং হচ্ছে এদিকে নজর দিতে হবে।

এ বিপুল জনগোষ্ঠিকে রোগ বালাই থেকে মুক্ত রাখতে সরকারকে বিশুদ্ধ খাদ্য আইন বাস্তবায়নে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এ আইন শতভাগ বাস্তবায়ন করলে সরকার বাহবা পাবে বাড়বে জনপ্রিয়তা। ভেজাল খাদ্য প্রতিরোধে সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে মাঝেমধ্যে তৎপর দেখা যায়। তবে এ বিষয়ে সামাজিক সচেতনতা গড়ে তুলতে প্রচারমাধ্যমকে বেশি করে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। প্রশাসনের উয়িং গুলোকে নিয়মিত অভিযান চালিয়ে দোষিদের আইনের আওতায় আনতে হবে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০০৯ সালের ১ জুন আদালতের এক আদেশে হাইকোর্ট সরকারকে প্রতিটি জেলা ও মহানগরে খাদ্য আদালত স্থাপন এবং খাদ্য বিশ্লেষক ও খাদ্য পরিদর্শক নিয়োগের নির্দেশ দেয়। এ রায় কার্যকর করার জন্য দুই বছরের সময়সীমাও বেঁধে দেয়া হয়। অথচ চার বছর অতিক্রম হলেও এখনো প্রতিটি জেলায় খাদ্য আদালত গঠিত হয়নি। ফলে ভোক্তারা খাদ্যে ভেজাল রোধে আইনের আশ্রয় নিতে ব্যর্থ হচ্ছে। এতে ভোক্তা অধিকার আইন লঙ্গিত হচ্ছে। বিশুদ্ধ খাদ্য অধ্যাদেশ ১৯৫৯ অনুসারে খাদ্য আদালতকে খাদ্য উৎপাদন ও বিপণন সংশ্লিষ্ট যে সব অপরাধ করার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে সেগুলো হলো ভেজাল খাদ্যদ্রব্য প্রস্তুত, বিক্রি, সঠিক মান বা বিশুদ্ধ নয় এমন খাদ্য প্রস্তুত বা বিক্রি, খাদ্য প্রস্তুত বা বিক্রির স্থানে ভেজাল দ্রব্য রাখা বা রাখার অনুমতি প্রদান, নির্ধারিত লাইসেন্স ছাড়া সাদা তেল রাখা, রোগগ্রস্থ পশু বা অস্বাস্থ্যকর খাবার খাদ্য বিক্রি, ভুয়া লেভেল ব্যবহার, ভুয়া প্রচারণা, ভুয়া ওয়ারেন্ট প্রদান, খাদ্যবস্তু ঢেকে রাখতে ব্যর্থতা, কুষ্ঠ, যক্ষ্মা বা ঘোষিত অন্য কোন রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি কর্তৃক খাদ্যবস্তু প্রস্তুত, বিক্রি বা স্পর্শ করা, খাদ্যবস্তু বিশ্লেষণ বা পরীক্ষার জন্য নমুনা প্রদানে অস্বীকৃতি, ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে বা খাদ্য পরিদর্শককে পরিদর্শন বা প্রবেশে বাধা প্রদান বা প্রতিরোধকরণ, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র উপস্থাপনে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন, ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে বা খাদ্য পরিদর্শককে জব্দকৃত খাদ্য, উপাদান, বস্তু ও পাত্র অপসারনে বাধা প্রদান । আইন অমান্যকারির বিরুদ্ধে জরিমানা, মালামাল জব্দ ও কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। আইন রয়েছে ঠিকই, আইনের সঠিক বাস্তবায়ন নেই। জনগণের সেবক হিসেবে সরকারের উচিত খাদ্য দ্রব্য ভেজালকারিদের কঠোর হাতে দমন করা। তবেই দেশের নাগরিক সুস্বাস্থ্য নিয়ে জীবন নির্বাহের নিশ্চয়তা পাবে। জনগণের নিরাপদ জীবন নিশ্চিত করাই একমাত্র দাবি।

ভেজাল ও বিষাক্ত খাবার থেকে নিরাপদ থাকতে ভেজালবিরোধী আইনের কঠোর প্রয়োগের পাশাপাশি প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করে নিরাপদ খাদ্য সরবরাহ করতে হবে। আমাদের বাজার থেকে ভেজাল পণ্য একেবারে তুলে দিতে হবে। বিএসটিআইকে এ ব্যাপারে নিতে হবে সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা। বাজারে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান জোরদার করতে হবে। ভেজালকারীদের সামান্য জেল-জরিমানায় কাজ হবে না। যারা জনস্বাস্থ্যকে ঠেলে দিতে পারে হুমকির দিকে, তাদের জন্য কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। নকল বা ভেজাল ওষুধ ও খাদ্যপণ্যের কারখানা একেবারে গুঁড়িয়ে দিতে হবে।

১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে খাদ্যে ভেজাল দেয়া ও ভেজাল খাদ্য বিক্রি করার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড রাখা হয়েছে। এ ছাড়াও ১৪ বছর কারাদন্ডের বিধান থাকলেও এ পর্যন্ত তা প্রয়োগের কোনো নজির নেই। খাদ্যে ভেজাল রোধে অনেক আইন রয়েছে, কিন্তু এর যথাযথ প্রয়োগ নেই। ভেজালবিরোধী আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ হলে নিরাপদ খাদ্য সরবরাহ যেমন আশা করা যাবে; তেমনি ভেজালের হোতারাও নিয়ন্ত্রণে থাকতে বাধ্য হবে। খাদ্য ভেজাল প্রতিরোধে সরকার, বিরোধী দল, ব্যবসায়ী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, মসজিদের ইমাম, শিক্ষক, গণমাধ্যম কর্মী সবাইকে দলমত নির্বিশেষে কাজ করতে হবে।

গ্র
- See more at: http://blog.bdnews24.com/minhazyork/177418#sthash.zmupbZzN.dpuf

25
মো. সিদ্দিকুল আলম রেজা। তিনি ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ে সিনিয়র আ্যসিস্টান্ট ডিরেক্টর (কাউন্সিলিং) হিসেবে কর্মরত আছেন। তথ্যসেবা বা পরামর্শদাতা হিসেবে এই পেশায় তিনি অভিজ্ঞ একজন ব্যক্তি।

এই পেশাটি দিন দিন বাংলাদেশে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ব্যাংক, বীমা, কর্পোরেট হাউস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কিংবা ছোট ও মাঝারি ধরনের যে কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সুযোগ থাকে এই পেশায় জীবিকা নির্বাহ করার।

তাই আজ আমরা মো. সিদ্দিকুল আলম রেজা’র কাছে থেকে জানব এই পেশা সম্পর্কে আরো কিছু তথ্য।

ব্রেকিংনিউজ: প্রথমেই জানতে চাই আপনি এই পেশায় কতদিন আছেন?
রেজা: আমি এই পেশায় আছি প্রায় ১ যুগের বেশী সময় ধরে।



ব্রেকিংনিউজ: পেশা হিসেবে তথ্যসেবা বা পরামর্শদাতা (কাউন্সিলর) পেশাটি কিরকম?
রেজা: এটি নি:সন্দেহে ভালো এবং উপভোগ করার মত পেশা। তবে এই পেশায় কিছুটা মানসিক চাপও আছে। আর একই সাথে আছে একঘেয়েমী লাগার ব্যাপারও। তবে সব মিলিয়ে ভালো।

ব্রেকিংনিউজ: এই পেশার মুল চ্যালেঞ্জ কি?
রেজা: এই পেশার মুল চ্যালেঞ্চ হল আগত ব্যক্তির মনের চাহিদা সঠিক ভাবে নিরুপন করে, সেই অনুযায়ী সঠিক নির্দেশনা দেয়া। আর সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন ধৈর্য্য রাখা। কারন এমন হতে পারে, আগত ব্যক্তি অনাহুতই এমন সব প্রশ্ন করতে পারে যা আসলে একেবারেই অপ্রয়োজনীয়। সে সব ক্ষেত্রে মাথা ঠান্ডা রেখে সঠিক পরামর্শটি দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, মানুষ যখন কোন কিছু জানতে আসে তখন সে অবচেতনভাবেই অনেক অবান্তর প্রশ্নও করে থাকে।

ব্রেকিংনিউজ: আমরা এই পেশাটিতে বেশীর ভাগ সময় মেয়েদেরকেই বেশী দেখি, এর পিছনে কি কোন কারন আছে?
রেজা: যেহেতু এটি একটি ডেস্ক জব, তাই মেয়েরা এই পেশাকে বেশী পছন্দ করে। অনেক ক্ষেত্রে আবার প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের ইচ্ছে থাকে এই পদে মেয়েদেরকে নিয়োগ করার। আসলে অধিকাংশ মেয়েরাই শান্ত স্বভাবের এবং ধৈর্য্যশীল হয়ে থাকে। তাই এই পেশাতে তাদের চাহিদা বেশী।

ব্রেকিংনিউজ: যারা তথ্যসেবাকে পেশা হিসেবে নিতে চায় তাদের জন্য আপনার কি পরামর্শ?
রেজা: যারা তথ্য সেবাকে পেশা হিসাবে নিতে চান, তাদেরকে আমার অভিনন্দন। তাদের অনেক বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকতে হবে। তারা আসলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের একটি তথ্য ভান্ডার। প্রচুর ধৈর্য্য থাকতে হবে। সহ্য করার ক্ষমতা থাকতে হবে। এবং আন্তরিকতার সাথে যদি সে তথ্য সেবা প্রদান করে তাহলে সে এই পেশায় শতভাগ সফল হবে।

ব্রেকিংনিউজ: আপনাকে ধন্যবাদ
রেজা: ব্রেকিংনিউজকেও ধন্যবাদ

ব্রেকিংনিউজ/এমএএস
http://www.breakingnews.com.bd/articles/interview/breakingnews.73474.details



27
সাপের কথাটা শুনলেই অর্ধেক মানুষের হার্টবিট বন্ধ হয়ে যায়। আর সেখানে ছোবল মারলে তো আতঙ্কের চোটেই মরে যাবে। কিন্তু সেই সময় ঠিক কী কী করা উচিত সে সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। তাই এবার দেখে নেয়া যাক সাপ ছোবল মারলে ঠিক কী করা উচিত আর কী উচিত নয়।

উচিত :

১. অ্যাম্বুলেন্স ডাকতে হবে সবার আগে।

২. ছোবলের শিকার যিনি হয়েছেন তাকে শান্ত করিয়ে একটা জায়গাতে বসাবেন। বেশি নড়াচড়া করলে বিষ সারা শরীরে ছড়িয়ে যেতে পারে।

৩. ক্ষতটি পানি দিয়ে পরিস্কার করবেন। কিন্তু সেখানে জোরে পানি ঢালবেন না।

৪. ক্ষত স্থানটিকে পরিস্কার কাপড় দিয়ে মুড়ে দেবেন।

অনুচিত :

১. ক্ষতস্থানে বরফ ঘষবেন না।

২. ক্ষতস্থানটিকে কাটবেন না, তাতে শিরা কেটে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

৩. ক্ষতস্থান থেকে মুখে করে রক্ত বের করবেন না।

৪. আহত ব্যাক্তিকে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ খাওয়াবেন না।

৫. ছোবল মারার পর মদ খাবেন না, তাতে শরীরে বিষ ছড়িয়ে যেতে পারে।

সূত্র : জি নিউজ http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/62802

28
Useful information to know

29
'স্বপ্ন সেটা নয় যেটা তুমি ঘুমিয়ে দেখো। স্বপ্ন সেটা যেটা তোমায় ঘুমোতে দেয় না।'

'সূর্যের মতো দীপ্তিমান হতে হলে প্রথমে তোমাকে সূর্যের মতোই পুড়তে হবে।'

'যদি তুমি তোমার কাজকে স্যালুট কর, দেখো তোমায় আর কাউকে স্যালুট করতে হবে না। কিন্তু তুমি যদি তোমার কাজকে অসম্মান কর, অমর্যাদা কর, ফাঁকি দাও, তাহলে তোমায় সবাইকে স্যালুট করতে হবে।'

'যারা হৃদয় দিয়ে কাজ করতে পারে না; তাদের অর্জন অন্তঃসারশূন্য, উৎসাহহীন সাফল্য চারদিকে তিক্ততার উদ্ভব ঘটায়।'
 
প্রতিদিন সকালে এই পাঁচটা লাইন বলো :
১) আমি সেরা।
২) আমি করতে পারি
৩) সৃষ্টিকর্তা সব সময় আমার সঙ্গে আছে
৪) আমি জয়ী
৫) আজ দিনটা আমার


'ভিন্নভাবে চিন্তা করার ও উদ্ভাবনের সাহস থাকতে হবে, অপরিচিত পথে চলার ও অসম্ভব জিনিস আবিষ্কারের সাহস থাকতে হবে এবং সমস্যাকে জয় করে সফল হতে হবে। এ সকল মহানগুণের দ্বারা তরুণদের চালিত হতে হবে। তরুণ প্রজন্মের প্রতি এই আমার বার্তা।'

'জীবন একটি কঠিন খেলা। ব্যক্তি হিসেবে মৌলিক অধিকার ধরে রাখার মাধ্যমেই শুধুমাত্র তুমি সেখানে জয়ী হতে পারবে।'

'আকাশের দিকে তাকাও। আমরা একা নই। পুরো মহাবিশ্ব আমাদের প্রতি বন্ধুত্বসুলভ। যারা স্বপ্ন দেখে এবং কাজ করে শুধুমাত্র তাদেরকেই শ্রেষ্ঠটা দেওয়ার জন্য চক্রান্তে লিপ্ত এই বিশ্ব।'

'উৎকর্ষতা একটি চলমান প্রক্রিয়া এবং এটি কোনো আকস্মিক ঘটনা নয়।'

'যদি একটি দেশকে দুর্নীতিমুক্ত এবং সুন্দর মনের মানুষের জাতি হতে হয়, তাহলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এ ক্ষেত্রে তিনজন সামাজিক সদস্য পার্থক্য এনে দিতে পারে। তারা হলেন বাবা, মা এবং শিক্ষক।'

 
- See more at: http://www.kalerkantho.com/online/lifestyle/2015/07/28/249537#sthash.D7s1p1OQ.dpuf

Pages: 1 [2] 3