Show Posts

This section allows you to view all posts made by this member. Note that you can only see posts made in areas you currently have access to.


Messages - Md.Towhiduzzaman

Pages: 1 [2] 3 4 5
16
স্বাধীনতা ও মানবাধিকার একটি অন্যটির পরিপূরক। মানুষের চিন্তার স্বাধীনতা ও কর্মের স্বাধীনতা জন্মগত অধিকার। স্বাধীনতা সীমাহীন নয়; স্বাধীনতা নির্দিষ্ট সীমারেখার বৃত্তে সংরক্ষিত। যা বিদায় হজের ভাষণে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) তিনটি শব্দে ঘোষণা দিয়েছেন—সব মানুষের জীবন, সম্পদ, সম্মান সংরক্ষিত। যেমন আরাফাতের দিন, আরাফাতের প্রান্তর, মক্কা ভূমি ও কাবা শরিফ সম্মানিত ও সুসংরক্ষিত। (মুসনাদে ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল রহ.)।

ইসলামের অনুশাসন অনুসরণের জন্য চাই স্বাধীনতা। স্বাধীনতার মাধ্যমেই সুরক্ষিত হয় মানবাধিকার। অর্থাৎ স্বাভাবিক জীবন ও স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা।

আল্লাহ মানুষকে জ্ঞান দিয়েছেন ভালো–মন্দ, সত্য–মিথ্যা ও ন্যায়–অন্যায় অনুধাবনের জন্য। চিন্তা ও কাজের স্বাধীনতা দিয়েছেন কর্ম অনুযায়ী পরকালে বিচার ও ফলাফল প্রদানের নিমিত্তে। কর্মফল অনুসারে জান্নাত বা জাহান্নামের অধিকারী হবে। তাই আল্লাহ এই জগতে মানুষকে কোনো কাজে বাধ্য করেন না। এমনকি ধর্ম–কর্ম বিষয়েও জোর করা হয় না। এ বিষয়ে কোরআন মজিদে রয়েছে, ‘ধর্মে কোনো জবরদস্তি নেই, সত্যাসত্য সুস্পষ্ট পার্থক্য হয়ে গেছে। যারা অশুভ শক্তিকে অস্বীকার করে মহান আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করল; তারা মজবুত হাতল শক্তভাবে ধারণ করল, যা কখনো ভাঙার নয়; আল্লাহ সর্বশ্রোতা মহাজ্ঞানী।’ (সুরা-২ বাকারা, রুকু: ৩৪, আয়াত: ২৫৬)।

সব মানুষের পিতা হজরত আদম (আ.) এবং মাতা মা হাওয়া (আ.)। জগতের সব মানুষ একই পিতা–মাতার সন্তান। সব মানুষ ভাই ভাই, মানুষে মানুষে কোনো ভেদাভেদ নেই। শ্রেণিবিভেদ, জাতি–গোত্র ও গোষ্ঠীভেদ, বর্ণবৈষম্য, ভাষাবৈচিত্র্য এবং ভৌগোলিক ও নৃতাত্ত্বিক পার্থক্য মানুষে মানুষে কোনো প্রভেদ সৃষ্টি করে না। বিদায় হজের ভাষণে নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘কালোর ওপর সাদার প্রাধান্য নেই, অনারবের ওপর আরবের শ্রেষ্ঠত্ব নেই।’ (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ইবনে কাসির রহ.)।

Eprothom Alo
মানুষের কর্মের প্রকৃত বিচার ও পূর্ণ ফলাফল দুনিয়াতে নয়, পরকালেই মানুষ তার কৃতকর্মের ফল সম্পূর্ণ লাভ করবে ও ভোগ করবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘কিতাবধারীদের মধ্যে যারা কুফরি করে এবং মুশরিকরা জাহান্নামের অগ্নিতে স্থায়ীভাবে বসবাস করবে; তারাই সৃষ্টির অধম। নিশ্চয় যারা ইমান আনবে ও সত্কর্ম করবে, তারাই সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ। তাদের প্রতিপালকের কাছে তাদের জন্য পুরস্কার হিসেবে রয়েছে স্থায়ী জান্নাত; যার নিম্নদেশ দিয়ে নদী প্রবাহিত হয়, সেথায় তারা চিরস্থায়ী হবে। আল্লাহ তাদের প্রতি প্রসন্ন এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট। এটি তার জন্য যে তার প্রতিপালককে সমীহ করে।’ (সুরা-৯৮ বায়্যিনাহ, রুকু: ১, আয়াত: ৬-৮)।

ইসলামের মহত্ত্ব ও সৌন্দর্য হলো উদার চিন্তা, যুক্তিনির্ভরতা, পরমতসহিষ্ণুতা, ভিন্ন ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা ও সহাবস্থান। সর্বোপরি বিশ্বভ্রাতৃত্ব ও সর্বজনীন মানবতাবোধ। ধৈর্য-সহ্য, ক্ষমা, দয়া—এসব মহৎ গুণ ইসলামকে অনন্য করেছে। স্রষ্টায় বিশ্বাস করে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হজরত মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা.)–এর অনুপম আদর্শকে ধারণ করাই হলো ইসলাম। ইসলাম জন্মগত ধর্ম নয়। পৃথিবীর যেসব মানুষ ওই বিশ্বাস ও আদর্শ গ্রহণ করবে, তারাই মুমিন ও মুসলিম।

বিশ্বমানবতার মুক্তি, স্বাধীনতা ও মানবাধিকার সুরক্ষার জন্য সব মানুষকে মানবিক গুণাবলিসম্পন্ন হতে হবে। বিশেষত মুমিন মুসলমানদের জন্য এসব গুণে গুণান্বিত হওয়ায় ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা রয়েছে। বিশ্বশান্তি স্থাপন, স্বাধীনতা সুরক্ষা ও মানবাধিকার নিশ্চিত করা মুসলমানের প্রধান দায়িত্ব। আল্লাহ সহায় রয়েছেন, এ মর্মে কোরআন কারিমে বলেছেন, ‘হে বিশ্বাসীরা! তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো, নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গেই আছেন। যারা আল্লাহর পথে নিহত হয় তোমরা তাদের মৃত বলো না, বরং তারা জীবিত কিন্তু তোমরা উপলব্ধি করতে পারো না। আমি তোমাদের ভয়, ক্ষুধা এবং ধনসম্পদ ও জীবনহানি এবং ফল-ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দ্বারা পরীক্ষা করব। তুমি সুসংবাদ দাও ধৈর্যশীলদের। যারা তাদের ওপর বিপদ আপতিত হলে বলে—আমরা তো আল্লাহরই এবং নিশ্চিতভাবে তারই নিকট প্রত্যাবর্তনকারী। এরাই তারা, যাদের প্রতি তাদের প্রতিপালকের কাছ থেকে বিশেষ অনুগ্রহ ও রহমত বর্ষিত হয়, আর এরাই সত্পথে পরিচালিত।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৫৩-১৫৭)।

প্রিয় নবী (সা.)–এর দাওয়াতি কার্যক্রমে তায়েফের হৃদয়বিদারক ঘটনায় মহানুভবতা ও মক্কা বিজয়ের ক্ষমা ও উদারতা তাঁকে সর্বোচ্চ শিখরে আসীন করেছে, যা সর্বকালের সব মানুষের জন্য অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে অনন্তকাল। মহানবী (সা.)–এর উম্মত হিসেবে সে আদর্শ আমাদেরও অনুসরণ করতে হবে।

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী: বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতির যুগ্ম মহাসচিব ও আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজমের সহকারী অধ্যাপক

17
কথা বলছে রোবট, নাচছে। করছে চলাফেরা। শারীরিক প্রশিক্ষণেও (পিটি) রোবট। সঙ্গে তাল মিলিয়েছে ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা। রোবটের কমান্ডে তারা প্রাণোচ্ছ্বল। এ দৃশ্য রাজধানীর ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের (ডিআইএস)।

বিশ্বে অনেক দেশে স্কুলে রোবটের ব্যবহার হয়ে আসছে। কিন্তু বাংলাদেশে কোনো স্কুলে রোবটের ব্যবহার এই প্রথম দেখা গেল।

rubot-2

স্কুল কর্তৃপক্ষ জানায়, সম্প্রতি চীন থেকে তিনটি রোবট আনা হয় স্কুলটির সাইন্স, টেকনোলজি ও ম্যাথমেটিক্স ল্যাবের (এসটিইএম) জন্য। প্রত্যেক রোবটের দাম পড়েছে এক লাখ টাকা।

মাঝে মাঝেই শিক্ষার্থীদের সকালের পিটিতে এই রোবটের ব্যবহার করছেন ডিআইএস’র আইটি (তথ্যপ্রযুক্তি) কো-অর্ডিনেটর মাহমুদুল হক বাশার।

rubot-3

তিনি জানান, এতে করে শিক্ষার্থীরা অধিক আনন্দ পায়। তারা অনেক স্বতঃস্ফূর্তভাবে পিটিতে অংশ নেয়। অনেক প্রফুল্ল হয়।

rubot-4

এ বিষয়ে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ভাইস প্রিন্সিপাল ড. মো. মাসুদুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের ল্যাবে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি তিনটি রোবট সংযোজন করা হয়। শিক্ষার্থীদের আমরা বিজ্ঞান বিষয়ে আগ্রহী করতে চাই। রোবট ও রোবটিক্সের ওপর শিক্ষার্থীরা আকৃষ্ট হচ্ছে, যা তাদের বিজ্ঞানমনস্ক করে তুলবে বলে আমি মনে করি। সেইসঙ্গে এ নগরজীবনে ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা কিছুটা আনন্দও পাচ্ছে।

18


বই নিয়ে গ্রামের পথে পলান সরকার। প্রথম আলো ফাইল ছবিবই নিয়ে গ্রামের পথে পলান সরকার। প্রথম আলো ফাইল ছবিপলান সরকারের মৃত্যুর খবর শুনে মলি রানী কুণ্ডু খুব কেঁদেছেন। তাঁর বাড়ি নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার গালিমপুর গ্রামে। ২০১৭ সালে মলি রানী ও তাঁর ছেলে পিয়াল কুণ্ডু একসঙ্গে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছিলেন। মা ও ছেলের একসঙ্গে পরীক্ষা দিয়ে পাসের খবর শুনে পলান সরকার গিয়ে হাজির হন মলি রানীর বাড়িতে। মা ও ছেলের জন্য তিনি উপহার হিসেবে দুইখানা বই নিয়ে গিয়েছিলেন। তাঁদের হাতে বই দুইখানা তুলে দিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘আজ আমার বই পড়ার আন্দোলন সার্থক হলো।’

লেখাপড়ার অদম্য ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও মলি রানী সুযোগ পাননি। তাঁকে অসময়ে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়েছিল। বাবার সংসারে লেখাপড়ার সুযোগ না পেলেও নিজের সংসারে এসে তিনি তাঁর অপূর্ণ ইচ্ছা পূরণ করেছেন। তাঁর পুরস্কার হিসেবে স্বয়ং পলান সরকারের হাত থেকে বই উপহার পেয়ে সেদিন তিনি আনন্দে কেঁদেছিলেন। তাই পলান সরকারের মৃত্যু তাঁকে দ্বিতীয়বার কাঁদিয়েছে। মলি রানী এবার এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ করেছেন। আগামী ১ এপ্রিল তিনি এইচএসসি পরীক্ষা দেবেন। মুঠোফোনে মলি রানী বলেন, ‘পলান সরকার সেদিন আমাকে বলেছিলেন, “মা, তোমার আর পেছন ফিরে তাকানোর সময় নেই। তোমাকে এগিয়ে যেতে হবে।” সেই দিনই আমি ভেবে নিয়েছি, যেভাবেই হোক আমি পড়াশোনা শেষ করব। আমার বাড়িতে কোনো ছেলেমানুষ না থাকার কারণে আমি পলান সরকারকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে যেতে পারিনি। কান্নাকাটি করেছি। সারা দিন খুব মন খারাপ ছিল।’

পলান সরকার হেঁটে হেঁটে মানুষের বাড়িতে যেতেন। খুঁজে বের করতেন এ রকম মায়েদের। তাঁদের হাতে বই তুলে দিতেন। মাইনর (চতুর্থ শ্রেণি) পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময় পলান সরকারের নিজের জুতা ছিল না। প্রতিবেশীর একটি রাবারের জুতা ধার নিয়ে পরীক্ষা দিতে গিয়েছিলেন। অভিভাবক না থাকার কারণে মাইনর পাস করলেও পরে আর লেখাপড়া করা সম্ভব হয়নি। অদম্য ইচ্ছা থাকার পরও পড়া ছেড়ে দেওয়ার কী জ্বালা, শিশু বয়সেই তিনি খুব ভালো করে বুঝেছিলেন। তাই যে মায়েরা ছোটবেলায় পড়তে শিখেছিলেন, কিন্তু শিক্ষাজীবন শেষ করতে পারেননি, তিনি আগে সেই মায়েদের খুঁজে বের করতেন। আর মাঝেমধ্যেই নেপোলিয়নের প্রসঙ্গ টেনে মায়েদের শিক্ষিত হওয়ার কথা বলতেন।

মনে আছে, প্রথম যেদিন পলান সরকারের সঙ্গে কথা বলতে যাই, তিনি আমাকে বলেছিলেন, ‘অত নামের দরকার কী।’ পরে আমি তাঁকে বোঝাতে সক্ষম হই, আপনার বই পড়ার এই গল্প অন্যরা জানলে তারাও এটা অনুসরণ করতে পারে। সারা দেশে তা ছড়িয়ে পড়তে পারে। এ কথা শুনে তিনি রাজি হন। তাঁকে রাজি করানোর জন্য সেদিন কথাটা বলেছিলাম। অতটা ভেবেও বলিনি। পরে সেই কথাটিই এভাবে ফলে যাবে—ভাবতেও পারিনি। পলান সরকারের গল্প যখন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে, তখন দেশের আনাচকানাচে বইপড়ার আন্দোলন গড়ে ওঠার অনেক খবর পেয়েছি। খবর পেয়েছিলাম নওগাঁর নিয়ামতপুরে সবুজ সরকার নামের এক কলেজশিক্ষার্থী এই কাজ শুরু করেন। রাজশাহীর চারঘাটের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘ওরা ১১ জন’ বাড়ি বাড়ি গিয়ে বই দেওয়ার কর্মসূচি চালু করে। পলান সরকারকে দেখে বাঘার জুবায়ের আল মাহমুদ স্কুলভিত্তিক বই পড়ার আন্দোলন গড়ে তোলেন। বইমেলা করেন। আরও অনেক জায়গা থেকে এ রকম খবর পেয়েছিলাম। রাজশাহী নগরের তেরখাদিয়া উত্তরপাড়ার সোহাগ আলী নামের এক যুবক ২০১৫ সাল থেকে ‘পলান সরকার বইপড়া আন্দোলন’ নামে একটি কর্মসূচি চালু করেছেন। কেউ ফোন করলে তিনি তাঁর বাড়িতে পছন্দমতো বই পৌঁছে দিয়ে আসেন। পড়া শেষ হলে পুরোনো বই ফেরত নিয়ে আবার নতুন বই দিয়ে আসেন। শহরের ৫০-৬০ জন পাঠক তাঁর কাছ থেকে নিয়মিত বই নিয়ে থাকেন। সোহাগ সম্প্রতি শহরের সেলুনে সেলুনে বই রাখছেন, যাতে সেলুনে আসা অপেক্ষমাণ লোকজন বই পড়ে সময়টা পার করতে পারেন।

Eprothom Alo
১ মার্চ সকালে মৃত্যুর সংবাদ শুনেই ঢাকা থেকে ফোনে মুক্তিযোদ্ধা আজিজুল আলম আহা করে উঠলেন। বললেন ১৯৬৩ সালের কথা। অমিয় চক্রবর্তীর লেখা তমালতলার ঘাট ও উজানতলীর হাট বই দুটি কোথাও না পেয়ে পলান সরকারের কাছে গিয়ে পেয়েছিলেন। এই মানুষ আর কোথায় মিলবে! নাট্যকার মলয় ভৌমিকের নেওয়া পলান সরকারের একটি দীর্ঘ সাক্ষাৎকার প্রথম আলোয় ছাপা হয়েছিল। শ্রদ্ধাঞ্জলি হিসেবে তিনি সেই সাক্ষাৎকারটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছেড়ে দেন।

জানাজায় গিয়েছিলেন রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বিড়ালদহ গ্রামের জুলফিকার রহমান। তাঁর একটি গৃহপাঠাগার রয়েছে। তিনি বললেন, ‘বইয়ের টানে বহুবার আমি পলান সরকারের কাছে এসেছি। তাঁর মৃত্যুর খবর শুনে আমি না এসে থাকতে পারিনি।’ রাজশাহী শহর থেকে তাঁর ভক্ত আরাফাত রুবেল এসেছিলেন। পলান সরকারের দাফন সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত তিনি তাঁর কবরের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন।

খুবই অবাক লাগে, একুশে পদকের একটি টাকাও পলান সরকার খরচ করেননি। সন্তানদের দেননি। সব টাকা ডাক বিভাগে জমা রেখেছেন। প্রতি মাসে সেখান থেকে যে মুনাফা আসে, তা তাঁর পাঠাগার পরিচালনার জন্য বরাদ্দ করে গেছেন।

হেঁটে তিনি বহুদূর চলে গেছেন। আর কেউ পলান সরকার হতে পারবেন না। তবু রবীন্দ্রনাথের সেই কথাটি আমরা আপাতত ভাবতে পারি—

‘কে লইবে মোর কার্য, কহে সন্ধ্যারবি—

শুনিয়া জগৎ রহে নিরুত্তর ছবি।

মাটির প্রদীপ ছিল; সে কহিল, স্বামী,

আমার যেটুকু সাধ্য করিব তা আমি।।’

19
উন্নয়ন, বিনিয়োগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আয়ুষ্কাল, মরণব্যাধি ইত্যাকার তাবৎ বিষয় নিয়ে বিশ্বব্যাংকের চিন্তাভাবনা বিশ্বকে সর্বদাই তাড়িত করে। সাম্প্রতিক সময়ে তাদের প্রকাশিত আমাদের শিক্ষা ও শিক্ষার মান নিয়ে প্রতিবেদনটি কয়েকটি প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। প্রশ্ন করার তাগিদটা বেশি অনুভব করেছি রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের দায়িত্ব পালনের সীমাবদ্ধতা নিয়ে করা আল-জাজিরার একটি প্রশ্নের উত্তর থেকে।

দর্শকদের উপস্থিতিতে আল–জাজিরা থেকে প্রশ্নটি করা হয় যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাদিয়া মুনা তাসনিমকে। জবাবে হাইকমিশনার পুরো বিশ্বকে, বিশেষ করে যুক্তরাজ্যকে পাল্টা প্রশ্নবাণে ফেলে দেন। তিনি স্পষ্টতই বলেছেন, বাংলাদেশের রোহিঙ্গা ইস্যুতে সাহায্য–সহযোগিতার সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন করার আগে পুরো বিশ্বকে প্রশ্ন করা উচিত, কী করেছে পুরো বিশ্ব? অথবা যুক্তরাজ্য কি আগত রোহিঙ্গাদের কোনো একটি অংশ পুনর্বাসন করবে তাদের দেশে?

সম্মানিত হাইকমিশনার এভাবে বলতে পেরেছেন, কারণ তিনি বিষয়টি সম্পর্কে জানেন এবং ভেবেছেন, একই সঙ্গে তিনি বৈশ্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টি তুলনা করার মতো তথ্য রাখেন। কোনো মানুষ, দেশ বা জাতিকে প্রশ্ন করে বিব্রত করা যায়, আবার সহযোগিতাও করা যায়—নির্ভর করে কোথায় কী কারণে প্রশ্নের পাল্টাপাল্টি চলছে, তার ওপর।

অনেক কিছুই আমরা প্রশ্নহীন রেখে দিই, হয়তো নিজেদের অজ্ঞতায় বা সজ্ঞানে। সব প্রশ্নের উত্তর কিন্তু উত্তর দিয়ে দেওয়া যায় না বরং পাল্টা প্রশ্নই যথার্থ উত্তর এনে দেয়। মনে পড়ে, একটি দূতাবাসে ভিসা ইন্টারভিউয়ের পর আমাকে বলা হয়েছিল ‘দুঃখিত, আপনার দেশে ফিরে আসার মতো যথেষ্ট কারণ না থাকায় ভিসা দেওয়া যাচ্ছে না।’ আমি বোকার মতো বলেছিলাম, কীভাবে বুঝলেন আমি ফিরব না? সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বললেন ‘এ রকম অনেকেই গিয়ে ফিরে আসেননি।’ আমি বললাম, আপনারা ভিসা অফিসার হিসেবে অদক্ষ বলেই এমন হয়। কর্মকর্তা বললেন, ‘কীভাবে এবং কেন?’ আমার উত্তর ছিল, আমি তো ভিসা দেওয়ার কেউ নই, আপনাদের ভুল মূল্যায়নে আপনারাই ভুল ব্যক্তিকে ভিসা দিয়ে, নিজেদের অদক্ষতা প্রমাণ করে আমাকে অহেতুক অসত্যবাদী বলছেন, অথচ আমার ফিরে আসার তারিখ এবং টিকিট আবেদনে যুক্ত আছে। এই জবাবে ওই কর্মকর্তা হাসলেন, বসতে বললেন এবং কয়েক মিনিট পরে নিজে ভিসাসহ পাসপোর্ট দিয়ে হ্যান্ডশেক করে ধন্যবাদ দিলেন।

ওপরের এ ঘটনাটি একটা আন্তর্জাতিক যুব সম্মেলনে যাওয়ার সময়—তখন সবেমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করে বের হয়েছি। এ রকম অনেক প্রশ্নের উত্তর প্রশ্ন দিয়ে দেওয়ার শিক্ষাটা পাওয়া যায় সক্রেটিসকে অধ্যায়ন করে। আজও তাই লেখাটা হয়ে যাক প্রশ্নে প্রশ্নে। প্রথম আলোর ৭৬ লাখ পাঠকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অগণিত পাঠকের কাছে একটা প্রশ্ন, দয়া করে হৃদয়ের চোখ দিয়ে দেখবেন:

‘১১ বছরের স্কুল জীবনের সাড়ে ৪ বছরই নষ্ট’  শিরোনামে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলোতে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তাতে কয়েকটি বিষয় থাকলেও শিরোনামের বিষয়টি নিয়েই আমার প্রশ্ন:

প্রশ্ন-১: তাহলে কি আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের পিএইচডিসহ অন্য যেকোনো উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ইচ্ছা হলে এ দেশে সম্পন্ন করা শিক্ষাজীবনকে কমিয়ে ধরা হবে? যখন পুনরায় অনার্স মাস্টার্স না করলে বিদেশে পিএইচডি করা যাবে না?
প্রশ্ন-২: তাহলে কি নিকট ভবিষ্যতে বিশ্ববাজারে আমাদের দেশে পাস করা গ্র্যাজুয়েটদের হাইস্কুল পাস গণ্য করে চাকরিতে ডাকা হবে?
প্রশ্ন-৩: সাম্প্রতিক সময়ে অথবা চলমান উচ্চশিক্ষিতরা আমাদের প্রয়োজন মেটাতে না পারলে বিদেশ থেকে উচ্চশিক্ষিত আমদানি করতে হবে? কারণ, আমরা জানি আশপাশের অনেক দেশে উচ্চশিক্ষিতরা কর্মের অভাবে পথে পথে ঘুরছে অথবা ঝাড়ুদার পদে নিয়োগের আশায় আবেদন করছে!
প্রশ্ন-৪: আমাদের এ রকম একটা জাতীয় বিপর্যয় দু–এক বছর পিছিয়ে যাওয়ার সময় না জানিয়ে এতগুলো বছর পিছিয়ে একেবারে গর্তে পড়ে যাওয়ার পর জানলাম বা জানানো হলো কেন? বিশেষ করে পদে পদে এতগুলো পরীক্ষা এবং অসাধারণ কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হওয়ার পরও! তাহলে কি পরীক্ষাই আমাদের শিক্ষাকে পিছিয়ে দিল? জাতিকে অন্ধকারে ফেলে দেওয়ার আর দ্বিতীয় কোনো কারণ লাগে কী?

Eprothom Alo
একটা বিষয় আমাদের বিশেষভাবে মনে রাখা দরকার, মানুষ ছাড়া আমাদের তেমন কোনো সম্পদই নেই। সারা বিশ্বের কাছে আমাদের জনসম্পদের শিক্ষাদীক্ষা, দক্ষতার ওপর নির্ভর করবে আমাদের অর্থনীতি, আমাদের ভবিষ্যৎ।

ইংরেজি ও গণিতের জ্ঞান নিয়ে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা বরাবরের মতো প্রশ্নবিদ্ধ হলেও মাতৃভাষায় আমাদের শিশুদের মূল্যায়ন যখন লিখতে হয় এ দেশের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ভালোভাবে বাংলা পড়ার দক্ষতা পরীক্ষায় দেখা গেছে, ৩৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর স্কোর খুবই কম। এর মানে, তারা ভালোভাবে বাংলা পড়তে পারে না। তাদের ৪৩ শতাংশ বাংলায় কোনো প্রশ্নের পুরো উত্তরও দিতে পারে না। তখন নিশ্চয়ই বিষয়টি দেশের কাছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে, শিক্ষাবিদদের কাছে এমনকি মিডিয়ার কাছে আরও গুরুত্ব পাওয়ার দাবি রাখে, যেখানে আমরা হরহামেশাই দেখি নানা কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অতিমাত্রায় সচেতনতার ছড়াছড়ি!

যেকোনো মূল্যায়ন বোঝার, বুঝে নেওয়ার এবং বুঝিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন সর্বাগ্রে। মনে রাখতে হবে, এটি কোনো ব্যক্তিক বা প্রাতিষ্ঠানিক বিষয় নয় বরং জাতীয় তথা আন্তর্জাতিক। কেননা, বাংলাদেশিরা সমগ্র পৃথিবীজুড়ে রয়েছে নানাভাবে। আমি মনে করি, এ রিপোর্টটি নিয়ে আরও গভীর আলোচনা-সমালোচনা প্রয়োজন, প্রয়োজন গভীর উপলব্ধি। সমস্যা যেখানে রয়েছে সেগুলো সমাধানের জোর চেষ্টা শুরু করতে হবে সবার জাতীয় স্বার্থে। কেননা, এভাবে নিম্নগামিতার শিকার হলে অথবা প্রতিবেদন আসতে থাকলে এ দেশের শিক্ষিত মানুষেরা শুধু অশিক্ষিত নয়, কুশিক্ষিত হিসেবে পরিচিতি পাবে। এভাবে ডুবে যাওয়ার অগ্রিম তথ্য পেয়েও ন্যূনতম শিক্ষার শক্তিতে শিক্ষাব্যবস্থাকে রক্ষা করতে না পারলে এ দুঃখ কোথায় রাখা যায়?

লেখক: ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্ট অ্যাফেয়ার্সের পরিচালক

20
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির চেয়ারম্যান মো. সবুর খান। ছবি: খালেদ সরকার
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির চেয়ারম্যান মো. সবুর খান। নিজে একজন সফল উদ্যোক্তা, নতুন উদ্যোক্তা তৈরি করতেও সব সময় আগ্রহী। ব্যবসায়ী হয়ে ওঠার গল্প, বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে ভাবনা, উদ্যোক্তাদের জন্য পরামর্শ—এমন নানা কিছু নিয়ে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মো. সাইফুল্লাহ

Eprothom Alo
যত দূর জানি, আপনি পাইলট হতে চেয়েছিলেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিসংখ্যান বিভাগে পড়েছেন। জীবনে নিশ্চয়ই এমন একটা মুহূর্ত এসেছে, যেটা আপনার ক্যারিয়ারের গতিপথ ঠিক করে দিয়েছে।

এটা ঠিক যে স্কুল-কলেজে আমার পাইলট হওয়ার ইচ্ছা ছিল। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় সেনাবাহিনীর লং কোর্সে টিকেও গিয়েছিলাম। আমি ও আমার এক বন্ধুর সকাল ১০টায় রিপোর্টিং করার কথা। অর্থাৎ সকাল ৮টায় জাহাঙ্গীরনগর থেকে রওনা হতে হবে। সকালে বন্ধু যখন আমার রুমের দরজায় টোকা দিল, কেন যেন বলে বসলাম, আমি যাব না। মনে হচ্ছিল, আর্মিতে চলে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়–জীবনটা মিস করব। সবাই খুব অবাক হয়েছিল। মা-বাবা অখুশি হয়েছিলেন। সেদিন যদি আর্মিতে যেতাম, হয়তো জীবনটা অন্য রকম হতো। কিন্তু এই সুযোগটা হারানোর কারণে আমার জেদ চেপে গিয়েছিল। এরপর আরও নানা কিছু করেছি। বিদেশে যাব ভেবে টোয়েফল দিয়েছি। স্নাতক শেষ হওয়ার পর দেখি বন্ধুরা সবাই বিসিএস দেয়, আমিও দিলাম। টিকে গেলাম। আমার পোস্টিং হয়েছিল ডাক বিভাগে। পররাষ্ট্র ক্যাডার পেলে হয়তো সরকারি চাকরিতেই যেতাম। আবার ব্যাংকে চাকরি পেয়েছি। কিন্তু ব্যবসা করার ইচ্ছে সব সময় ছিল, তাই মাস্টার্সের রেজাল্ট হওয়ার আগেই আমি ব্যবসা শুরু করেছিলাম। আমি মনে করি প্রতিটা ব্যর্থতাই একেকটা শিক্ষা। এই যে পররাষ্ট্র ক্যাডারে হলো না, এই ব্যর্থতা আমাকে আরও ভালো কিছু করার অনুপ্রেরণা দিয়েছে।

এখন যেমন সবকিছুই কম্পিউটারনির্ভর, প্রযুক্তিনির্ভর। নব্বইয়ের দশকে তো এমনটা ছিল না। কম্পিউটারের ব্যবসা কেন শুরু করলেন?
আমার সব সময় একটা মনোভাব ছিল, আমি সেই ব্যবসাই করব, যেটা সম্পর্কে আমি ভালো জানি। সে সময় কম্পিউটার হয়তো এত পরিচিত ছিল না, কিন্তু যে অল্প কয়েকটা প্রোগ্রাম ছিল, সেগুলোই খুব ভালো জানতাম। কম্পিউটার নিয়ে যেহেতু আমার আত্মবিশ্বাস ছিল, ভাবলাম এই খাতেই ব্যবসা করি। সে সময় কম্পিউটার সায়েন্স নামে কোনো বিষয় ছিল না। কিন্তু আমাদের সময়ই প্রথম কম্পিউটার সায়েন্স নামে ১০০ নম্বরের একটা কোর্স চালু হলো। আমি সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছিলাম। কারণ পরিসংখ্যানের কিছু বিষয় মজা লাগত না, কিন্তু কম্পিউটার সায়েন্স খুব ভালো লাগত।

ছাত্রজীবন থেকেই বোধ হয় ঝুঁকি নেওয়ার প্রবণতা আপনার মধ্যে ছিল। একজন উদ্যোক্তা হতে হলে যেই বৈশিষ্ট্যটা খুব প্রয়োজন।
হ্যাঁ। আমি কখনোই বেকার থাকতে পছন্দ করতাম না। তখনকার রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দীর্ঘ দিন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকত। এলাকায় গিয়ে তরুণদের ডেকে তখন উন্নয়নের অগ্রদূত নামে একটা সামাজিক সংগঠনের কাজ করতাম। স্কুলে পড়ার সময় খেলাঘর আসর করেছি, স্কাউটিং করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে রোটার​্যাক্ট ক্লাবে খুব সক্রিয় ছিলাম। সব সময় আগ্রহ ছিল নতুন কিছু করার। পারি বা না পারি, কবিতা আবৃত্তি, বিতর্ক, গান, সবকিছুতে নাম লেখাতাম। কখনো কখনো পুরস্কারও পেতাম। এখন বুঝি, এই আগ্রহই পরে কর্মজীবনে কাজে এসেছে।

২৪ জানুয়ারি ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ১৭ বছর পূর্ণ হলো। ২০০২ সালে যখন শুরু করেছিলেন, তখন বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আপনার ভাবনা কী ছিল?
আমাদের খুব সৌভাগ্য, শুরুতেই উপাচার্য হিসেবে অধ্যাপক আমিনুল ইসলামের মতো একজন মানুষকে পেয়েছিলাম। তিনি এত দৃঢ়তার সঙ্গে দায়িত্ব নিয়েছিলেন যে সত্যি বলতে, ২০০৭ সাল পর্যন্ত আমি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে খুব একটা ভাবিনি। ২০০৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটা মূল্যায়ন করল। দেখলাম সেরা ৯ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে আমাদের অবস্থান ৬ নম্বরে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়স তখন মাত্র ৪-৫ বছর, অনেক সময় শিক্ষকদের বেতন ঠিকমতো দিতে পারি না, নানা সমস্যা। আমি খুব অবাক হলাম, এত সীমাবদ্ধতার মধ্যেও কীভাবে আমরা এত ভালো করলাম। তখন বুঝলাম, এটা আসলে অধ্যাপক আমিনুল ইসলামের কঠিন নিয়মকানুন ও স্বচ্ছতার ফল। এই ঘটনাটা আমাকে খুব অনুপ্রাণিত করল। তখন মনে হলো, আমিনুল ইসলাম স্যার যদি বিশ্ববিদ্যালয়টাকে এত দূর নিয়ে আসতে পারেন, তাহলে আমি কেন আমার অভিজ্ঞতাটাও তাঁর সঙ্গে যোগ করি না? বিশ্ববিদ্যালয়ে সময় দিতে শুরু করলাম। ঠিক করলাম, প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে আমরা একটা করে ল্যাপটপ দেব, বিনা মূল্যে। তখন থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত আমরা প্রায় ৩৪ হাজার ছাত্রছাত্রীকে ল্যাপটপ দিয়েছি।

 ল্যাপটপ দেওয়ার কথা ভাবলেন কেন?
আমার ভাবনা ছিল, শিক্ষার্থীরা যদি ল্যাপটপ পায়, তারা কর্মজীবনে ভালো করবে। তাদের একটা বিরাট অংশ এটাকে কাজে লাগাবে। হয়েছেও তাই। আউটসোর্সিং, ফ্রিল্যান্সিংসহ তথ্যপ্রযুক্তির সব খাতে দেখবেন আমাদের ছেলেমেয়েরা ভালো করছে। কয়েক দিন আগে একটা ছেলে এসে বলল, স্যার, আমি নারায়ণগঞ্জে একটা ব্যবসা করছি। আপনাকে একটা প্রেজেন্টেশন দেখাতে চাই। সে যখন প্রেজেন্টেশন দিতে শুরু করল, দেখলাম সে ড্যাফোডিলের দেওয়া ল্যাপটপ নিয়ে এসেছে। সে যখন বলল, স্যার, এই ল্যাপটপ দিয়েই তো আমি জ্যামে বসে পরিকল্পনা করেছি, ছোটখাটো ব্যবসা শুরু করেছি; আমার মন ভরে গেল।

উদ্যোক্তা তৈরির জন্য আপনি অনেক দিন ধরেই কাজ করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন ইনোভেশন অ্যান্ড এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ নামে একটা বিভাগ আছে। শিক্ষার্থীদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার জন্য আরও নানা রকম কার্যক্রম আছে ড্যাফোডিলের।
প্রতি সপ্তাহে আমরা ছাত্রছাত্রীদের জন্য একটা স্টার্টআপ মার্কেটের সুযোগ করে দিই। এই মার্কেটে ছাত্রছাত্রীরা বিভিন্ন পণ্য সাজিয়ে বিক্রি করে। আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেস্তোরাঁ চালানো থেকে শুরু করে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের খাবার কিংবা টি–শার্ট সরবরাহ...সবকিছুই করে শিক্ষার্থীরা। একটা দল পাস করে বের হয়ে যাচ্ছে, নিজের ব্যবসা চালু করছে। আবার নতুন একটা ব্যাচ এসে হাল ধরছে। এ ছাড়া আমরা ক্যাম্পাসে প্রচুর প্রতিযোগিতার আয়োজন করি। হাল্ট প্রাইজ, গেট ইন দ্য রিং, আর ইউ নেক্সট স্টার্টআপ, স্টার্টআপ আইডিয়া ফর ফান্ড...এই সব প্রতিযোগিতার উদ্দেশ্যই হলো শিক্ষার্থীকে ব্যবসায় উদ্বুদ্ধ করা, চর্চা করার সুযোগ করে দেওয়া। সম্প্রতি একটা তহবিল চালু করেছি। আমি ছাত্রছাত্রীদের কিছু ক্লাস নিই। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী তার জন্য আমাকে বেতন দেওয়া হয়। আমি বললাম, আমি বেতন নিলে সেটা তো ভালো দেখা যায় না। এই টাকাটা দিয়ে বরং একটা তহবিল গঠন করা হোক। উদ্যোক্তা উন্নয়ন তহবিল। কোনো শিক্ষার্থী যদি ব্যবসা করতে চায়, তার যদি তহবিলের দরকার হয়, সে বিনা সুদে এই তহবিল থেকে ঋণ নিতে পারবে।

 তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য যদি সংক্ষেপে ৩টি পরামর্শ দিতে বলি...
প্রথম পরামর্শ হলো, শুরু করো। দ্বিতীয় পরামর্শ, ফান্ড নিয়ে ভেবো না। শুরু করতে পারলে ফান্ডের ব্যবস্থা হবে। তৃতীয় পরামর্শ হলো, সব লিখে রাখো। আমি অনেক বড় ব্যবসায়ীকে দেখেছি, যদি বলি আপনার ব্যবসার পরিকল্পনা আমাকে পাঠান, আমি একটু বিশ্লেষণ করে দেখি। দিতে পারে না। এটা খুব দুঃখজনক। মাথায় রাখলে হবে না। নোট রাখতে হবে। তাহলে পরিকল্পনাটা গোছানো হয়, ভুলগুলো জানা যায়।

আরও ৬ পরিচিতি

● পরিচালক, ওয়ার্ল্ড ইনফরমেশন টেকনোলজি সার্ভিসেস অ্যালায়েন্স (উইটসা)

● হাইকমিশনার, ওয়ার্ল্ড বিজনেস অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টমেন্ট ফোরাম বাংলাদেশ

● সহসভাপতি, অ্যাসোসিয়েশন অব ইউনিভার্সিটিজ অব এশিয়া অ্যান্ড দি প্যাসিফিক

● সাবেক সভাপতি, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ

● সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি

● প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি, বাংলাদেশ বিজনেস অ্যাঞ্জেল নেটওয়ার্ক (বিবিএএন)
মো. সবুর খান

১৯৬৫
জন্ম, বাবুরহাট, চাঁদপুর

১৯৮৯
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর

১৯৯০
ড্যাফোডিল কম্পিউটারস লিমিটেড প্রতিষ্ঠা

১৯৯৫
দেশের প্রথম কম্পিউটার সুপারস্টোর ধারণার প্রবর্তন

১৯৯৬
ড্যাফোডিল ইনস্টিটিউট অব আইটি প্রতিষ্ঠা

১৯৯৭
প্রথম দেশে ব্র্যান্ড কম্পিউটার ড্যাফোডিলপিসি বাজারজাত

২০০২
প্রথম তথ্য প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ও চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জে ‘পাবলিক লিস্টেড প্রতিষ্ঠান’ হিসেবে তালিকাভুক্ত হয় ড্যাফোডিল কম্পিউটারস লিমিটেড

২০১৮
ভারতের কলিঙ্গ ইনস্টিটিউট অব ইন্ডাস্ট্রিয়াল টেকনোলজি থেকে সম্মানসূচক ডি লিট ডিগ্রি অর্জন

৫ প্রতিষ্ঠান

● ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি

● বাংলাদেশ স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট (বিএসডিআই)

● ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল প্রফেশনাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট

● ড্যাফোডিল ইনস্টিটিউট অব আইটি (ডিআইআইটি)

● ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল একাডেমি (ডিআইএ)

৩ বই

● হ্যান্ডবুক অব এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ডেভেলপমেন্ট

● উদ্যোক্তা উন্নয়ন নির্দেশিকা

● আর্ট অব ইফেক্টিভ লিভিং এবং আ জার্নি টুওয়ার্ডস এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ

৫ পুরস্কার

● দ্য ডেইলি স্টার আইসিটি বিজনেস পারসন অব দ্য ইয়ার ২০১৮

● লাইট অব এশিয়া অ্যাওয়ার্ড

● ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস অব আইটি (ডব্লিউসিআইটি) ২০১৭ মেরিট অ্যাওয়ার্ড

● এশিয়া’স মোস্ট ইনস্পায়ারিং ন্যাশন বিল্ডার পুরস্কার

● উইটসা অ্যাওয়ার্ড ফর বেস্ট আইসিটি এন্ট্রাপ্রেনিউর

21
Common Forum / কেন চা চাই?
« on: January 03, 2019, 04:07:15 PM »

কেন চা চাই?

ফুরফুরে দিনের সঙ্গে চায়ের যোগসূত্র কী, তা নিয়ে অনেক গবেষণা আছে। চায়ের কাপে তুমুল ঝড় তুলে সেই আলোচনাও চলতে পারে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। চায়ের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান শরীরকে চাঙা করে, তারুণ্যকে ধরে রাখে। পুষ্টিবিদেরা মনে করেন, দুধ, চিনি ছাড়া চা, বিশেষ করে গ্রিন টি শরীরের জন্য সবচেয়ে ভালো। শহুরে লোকের কাছে চা এতটাই প্রিয় যে নানা স্বাদের চা নিয়েই শুধু অলিগলি থেকে শুরু করে নানা জায়গায় রেস্তোরাঁ গড়ে উঠেছে। সেসব দোকানে চা–ই মুখ্য, সঙ্গে চায়ের সঙ্গে মিলিয়ে অন্য মুখরোচক খাবার।

শীতের সকালে এক কাপ চা হাতে নিয়ে পড়ে ফেলুন কেন এই চা পান করছেন।

 ওজন কমাতে

গ্রিন টি, ব্ল্যাক টির (দুধ, চিনি ছাড়া চা) অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ম্যাগনেশিয়াম চর্বি কমিয়ে ওজন কমাতে সাহায্য করে। বিশেষ করে পেশি মজবুত করে, মেটাবলিজম বাড়ায়। ওজন কমানোর জন্য দুধ–চিনি ছাড়া চা ও গ্রিন টি উপকারী। দিনে চারবার চা পান করতে পারেন। এর বেশি নয়। বেশি পান করলে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে।

 ক্যানসার প্রতিরোধে

 শুরুতেই বলে নেওয়া ভালো, চা কোনো জাদুকরি পানীয় নয়, যা খেলে ক্যানসার হবে না বা সেরে যাবে। তবে এটা সত্য, বিজ্ঞানীরা নানা গবেষণা করে বলেছেন, চায়ের গুণাগুণ স্তন, কোলন, ত্বক, ফুসফুস, পাকস্থলী ও জরায়ুর ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করে।

সুস্থ হৃদ্‌যন্ত্র

নিয়মিত চা পানে হৃদ্‌যন্ত্র সুস্থ থাকে। কফির থেকে চায়ে ক্যাফেইন কম থাকে, সে কারণে হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি কমায়।

 ত্বকে তারুণ্য

চোখের নিচে বলিরেখা, কালো দাগ, মুখে ক্লান্তি সব দূর করতে পারে চা। পান করে তো বটেই, ত্বক পরিচর্যায়ও চা ব্যবহার করতে পারেন। টি–ব্যাগ দিয়ে চা বানানোর পর তা ফ্রিজে রেখে দিন। বাইরে থেকে ফিরে টি–ব্যাগ চোখের ওপরে ১০–১৫ মিনিট রাখুন। নিমেষে ক্লান্তি দূর।

 মানসিক চাপ কমাতে

যখনই খুব কাজের চাপে বা চিন্তায় থাকেন, মনে হয় চায়ের চুমুকে মিলবে সমাধান। কথাটা পুরোপুরি মিথ্যা নয়। প্রিয় স্বাদের চায়ের সুবাস ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান খানিক সময়ের জন্য হলেও মস্তিষ্কে ভালো লাগা পৌঁছে দেবে। এতে আপনার অস্বস্তি, দুঃশ্চিন্তা কমে মনে হালকা ভাব আনবে।

 ঘুমের জন্যও চা

অনেক বিশেষজ্ঞ বলেন, চা ঘুমের জন্য ক্ষতিকর। তবে ক্যামোমাইল ও আদা চা ঘুমের ঘণ্টা দুয়েক আগে পান করলে চোখে দ্রুত ঘুম চলে আসবে। বিশেষ করে ক্যামোমাইল স্বাদের চা দুশ্চিন্তা দূর করে, ইনসোমনিয়া প্রতিরোধ করে।

 খুসখুসে কাশি ও মাথা ব্যথা সারাতে

যুগ যুগ ধরে খুসখুসে কাশি, নাক বন্ধ, গলাব্যথা ও মাথাব্যথা সারাতে আদা চা, তুলসী চা খুব কার্যকর।

অর্ণবের গানের মতো শেষে বলতে চাই, ‘ভালোবাসা তাই অন্য কোথাও চায়ের কাপে নিজের সাম্রাজ্য নিজেই গড়ুক’। চায়ের প্রতি ভালোবাসা থেমে না যাক, সঙ্গে যোগ হোক সুস্থতা ও হৃদয়ে উষ্ণতা।

পুষ্টিবিদ আখতারুন্নাহার আলোর সঙ্গে কথা বলে লিখেছেন তৌহিদা শিরোপা

22
পেনশনের ব্যবস্থা সাধারণত সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য হলেও এবার থেকে বেসরকারি চাকরিজীবীরাও পাবেন পেনশনের সুবিধা। নতুন বছর থেকে এই পেনশনের আওতায় আসবেন বেসরকারি চাকরিজীবীরা।  ‘কন্ট্রিবিউটারি পেনশন ফান্ড’ নামে একটি ফান্ড চালুর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এই ফান্ডে বেসরকারি খাতের চাকরিজীবীরা তাদের বেতনের একটি অংশ জমা রাখবেন। একই ফান্ডে চাকরিজীবীদের নিয়োগ কর্তৃপক্ষেরও অংশগ্রহণ থাকবে।

এ জন্য গঠন করা হবে একটি সার্বজনীন পেনশন কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে এই পেনশন ব্যবস্থার একটি রূপরেখা প্রণয়নের খসড়া প্রায় শেষ করে আনা হয়েছে বলে অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।

২০১৪ খ্রিস্টাব্দের ৬ এপ্রিল অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বেসরকারি খাতে পেনশন পদ্ধতি চালুর বিষয়ে এনজিও প্রতিনিধিদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক প্রাক-বাজেট আলোচনায় প্রথম কথা বলেছিলেন। এর প্রায় দুই মাস পরে ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেট বক্তব্যেও এ বিষয়ে তিনি কথা বলেন।

অর্থমন্ত্রী আবদুল মুহিত বলেন, নগরায়নের কারণে একক পরিবারের সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে ভবিষ্যতে আর্থিক ও সামাজিকভাবে নিরাপত্তাহীন হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। এ ঝুঁকি মোকাবিলা করা সরকারের একার পক্ষে দুরূহ। তাই দেশের শ্রমজীবী মানুষসহ প্রবীণদের জন্য একটি সর্বজনীন ও টেকসই পেনশন পদ্ধতি চালু এখন সময়ের দাবি।

এ বছরের ২ ফেব্রুয়ারি অর্থমন্ত্রী সচিবালয়ের এক অনুষ্ঠানে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা সম্পর্কে সাংবাদিকদের জানান, এখন থেকে কাউকে আর পেনশনের হিসাব করা ও তার পেনশন নেওয়া- নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করতে হবে না। ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে দেশে সর্বশেষ পেনশন ব্যবস্থার সংস্কার হয়েছিল। আজ যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা হবে যুগান্তকারী।

তিনি আরও বলেন, জাতীয় পেনশন পদ্ধতিতে সবাইকে ইনকরপোরেট করা হবে। দেশের প্রত্যেক নাগরিক এই সিস্টেমের বেনিফিট পাবে। এই সিস্টেমের রূপরেখা খুব দ্রুত ঘোষণা করা হবে। পেনশন উঠাতে কাউকে আর ছোটাছুটি করতে হবে না।


জানা গেছে, একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে এই ফান্ডের একটি রূপরেখা প্রণয়নের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এই রূপরেখা প্রণয়ন হলে তা অনুমোদনের জন্য অর্থমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। এরপরই এই ব্যবস্থা চালুর উদ্যোগে নেয়া হবে। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী বছর থেকে সীমিত পর্যায়ে হলেও বেসরকারিখাতের পেনশন ব্যবস্থা চালু করা হবে। এতে বেসরকারিখাতে কর্মরত একজন চাকরিজীবী তার বেতনের একটি অংশ পেনশন কন্টিবিউটারি ফান্ডে প্রদান করবেন। ফান্ডে সংশ্লিষ্ট চাকরিজীবীদের নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানও অবদান রাখবেন।

এই ফান্ডটির পুরোটি নিয়ন্ত্রণে থাকবে সরকারের হাতে। এখানে সরকারি চাকরিজীবীদের ভবিষ্যত পেনশন অর্থও জমা থাকবে। সরকারি-বেসকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য এটি একটি ‘সার্বজনীন ফান্ড’ হবে। সংশ্লিষ্ট চাকুরীজীবীরা এই ফান্ডে একটি ‘কোড’ নাম্বারের বিপরীতে অর্থ জমা রাখবেন। তারা চাকরি পরিবর্তন করলেও কোড নাম্বারের কোনো পরিবর্তন হবে না। অবসর নেয়ার পর রূপরেখা অনুযায়ী এই কোডের বিপরীতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি পেনশন পাবেন। এই ফান্ডের টাকা সরকার বিভিন্ন লাভজনকখাতে বিনিয়োগ করে মুনাফা করবে এবং এই মুনাফার অর্থ ফান্ডে অংশ নেয়া চাকরিজীবীরাও পাবেন। তবে কাউকে বাধ্য করা হবে না এই ফান্ডে অংশগ্রহণের জন্য

23
Common Forum / গবেষণাকর্ম বোঝা!
« on: November 25, 2018, 03:07:52 PM »
একটা সময় ছিল যখন মৌলিক গবেষণায় নেতৃত্ব দিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। গবেষণায় অবদানের জন্য কিছু বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও পেয়েছে। সেই ঐতিহ্য ভুলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এখন কার্যত ডিগ্রি উৎপাদনের কারখানায় পরিণত হয়েছে। অবস্থা এমন পর্যায়ে চলে এসেছে যে গবেষণাকে এখন বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা বোঝা ভাবতে শুরু করেছে। অথচ উন্নত বিশ্বে গবেষণা আনন্দের বিষয়। শিক্ষার্থী ও শিক্ষকেরা গবেষণার সুযোগ পেলে উৎসাহিত বোধ করেন।

বাংলাদেশে একাডেমিক গবেষণার ক্ষেত্রে এই হতাশাব্যঞ্জক পরিস্থিতি কীভাবে সৃষ্টি হলো, তা–ও একটা গবেষণার বিষয় হতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছেন, এর জন্য গবেষণায় সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা ও সহযোগিতার অভাব দায়ী। গত শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ মিলনায়তনে ‘লার্ন রিসার্চ উইথ ফান’ (আনন্দের সঙ্গে গবেষণা শেখা) শীর্ষক কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আবারও তার প্রতিধ্বনি শোনা গেল। সেখানে আলোচকেরা ক্ষোভের সঙ্গে বলেছেন, সরকার বই কেনার জন্যই পর্যাপ্ত টাকা দেয় না, গবেষণায় পর্যাপ্ত টাকা দেওয়া তো অনেক দূরের ব্যাপার। এখনো যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে লোকে শ্রদ্ধার আতিশয্যে ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’ বলে থাকে, সেই বিদ্যাপীঠের গবেষণা কার্যক্রম সম্পর্কে সরকারের এমন দৃষ্টিভঙ্গি হতাশাব্যঞ্জক।

ঐতিহাসিকভাবে ‘বিশ্ববিদ্যালয়’ নামের প্রতিষ্ঠানের ওপর গবেষণা করা ও গবেষণা শেখানোর দায়িত্ব বর্তায়। গবেষণা না করলে অতিসাম্প্রতিক কালে জ্ঞানের জগতে কী পরিবর্তন হলো, তা জানা সম্ভব নয়। সন্দেহ নেই, ভালো গবেষণার জন্য পৃষ্ঠপোষকতা দরকার। গবেষণাকে শিক্ষার্থীরা ‘বোঝা’ মনে করলে বুঝতে হবে গবেষণার উদ্দেশ্যের মধ্যেই গলদ আছে। নিতান্ত দায়সারা কায়দায় সনদ লাভের লক্ষ্যে গবেষণা হলে তা দিয়ে ভালো কিছু আশা করার সুযোগ থাকে না। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) ৪৩তম বার্ষিক প্রতিবেদনে স্পষ্ট বলা হয়েছে, ২০২১, ২০৩০ এবং ২০৪১ সালের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে শিক্ষা খাতে গবেষণায় বরাদ্দ বাড়ানোর বিকল্প নেই। কিন্তু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা করুণতর।

অস্বীকার করার উপায় নেই, শিক্ষা ও গবেষণা খাতে সরকারের ব্যয় করার মানসিকতা ভালো নয়। এই খাতে মোট জাতীয় আয়ের দশমিক ১ শতাংশও বরাদ্দ থাকে না। বিশ্বের মানসম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গবেষণাকে প্রাধান্য দিলেও আমাদের দেশে গবেষণা খাত সবচেয়ে অবহেলিত। এ কারণেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দিনে দিনে অজ্ঞানতার ‘ভাগাড়ে’ পরিণত হচ্ছে। শিক্ষক নিয়োগ ও পদায়নের ক্ষেত্রে গবেষণা ও প্রকাশনা গুরুত্ব না পাওয়ার কারণে শিক্ষকেরা গবেষণায় উৎসাহিত হচ্ছেন না। একজন শিক্ষক যদি মানসম্মত গবেষণা ও প্রকাশনা ছাড়াই নামমাত্র প্রকাশনা ব্যবহার করে রাজনৈতিক বিবেচনায় অধ্যাপক হয়ে যান, তাহলে তিনি স্বাভাবিকভাবেই গবেষণা কার্যক্রমে মনোযোগী হবেন না। তাই একদিকে গবেষণায় বরাদ্দ বৃদ্ধি যেমন জরুরি, তেমনি এমন এক গবেষণাবান্ধব উচ্চশিক্ষা কাঠামো ও পরিবেশ গড়ে তোলা প্রয়োজন, যাতে শিক্ষকেরা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে গবেষণায় মনোযোগী হতে পারেন।

24
Common Forum / ডায়াবেটিস কী? কেন হয়?
« on: November 14, 2018, 12:41:52 PM »

 
 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, ডায়াবেটিস এখন একটি মহামারি রোগ। ছবি: এএফপিবিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, ডায়াবেটিস এখন একটি মহামারি রোগ। ছবি: এএফপিডায়াবেটিস শব্দটি আমাদের সবার কাছেই বেশ পরিচিত। এমন কোনো পরিবার খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে কোনো ডায়াবেটিসের রোগী নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, ডায়াবেটিস এখন একটি মহামারি রোগ। এই রোগের অত্যধিক বিস্তারের কারণেই সম্প্রতি এমন ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

প্রশ্ন আসতেই পারে, ডায়াবেটিস কী? আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশন বলছে, ডায়াবেটিস এমনই একটি রোগ, যা কখনো সারে না। কিন্তু এই রোগকে সহজেই নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।

আইরিশ ইনডিপেনডেন্টের খবরে বলা হয়েছে, যখন আমরা কার্বোহাইড্রেট বা সাধারণ শর্করাজাতীয় খাবার খাই, তখন তা ভেঙে গ্লুকোজে পরিণত হয়। ইনসুলিন হচ্ছে একধরনের হরমোন। এর কাজ হলো এই গ্লুকোজকে মানুষের দেহের কোষগুলোয় পৌঁছে দেওয়া। এরপর সেই গ্লুকোজ ব্যবহার করে শরীরের কোষগুলো শক্তি উৎপাদন করে। সেই শক্তি দিয়েই রোজকারের কাজকর্ম করে মানুষ। সুতরাং যখন এই গ্লুকোজ শরীরের কোষে পৌঁছাবে না, তখন স্বাভাবিকভাবেই মানুষের দৈনন্দিন কাজ ব্যাহত হবে।

যখন কারও ডায়াবেটিস হয়, তখন ওই মানুষের শরীরে ইনসুলিন হরমোনের নিঃসরণ কমে যায়। ফলে দেহের কোষে গ্লুকোজ পৌঁছাতে পারে না। এতে করে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যায়। সাধারণত প্রস্রাবের মাধ্যমে অতিরিক্ত গ্লুকোজ শরীর থেকে বের হয়ে যায়। এই কারণে ডায়াবেটিস রোগীর ঘন ঘন প্রস্রাব হয়। যখন প্রস্রাব বেশি হয়, তখন ডায়াবেটিসে ভোগা রোগী তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়েন।

অন্যদিকে, ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার রোগীর শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণ গ্লুকোজ বের হয়ে যায়। এতে করে প্রয়োজনীয় শক্তি উৎপাদন করতে পারে না দেহের কোষগুলো। ফলে রোগী দুর্বলতা অনুভব করেন। রোগী যদি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ না করেন, তবে তার রক্তনালি, স্নায়ু, কিডনি, চোখ ও হৃদ্‌যন্ত্রের সমস্যাসহ নানা ধরনের শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে।

ডায়াবেটিসের লক্ষণগুলো
ডায়াবেটিস রোগের সাধারণ কিছু লক্ষণ রয়েছে। আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখলে সহজেই চিহ্নিত করা যায় ডায়াবেটিস। আর যত আগে ডায়াবেটিস চিহ্নিত করা যাবে, তখনই নিতে হবে নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপ। ডায়াবেটিসের লক্ষণগুলো হলো:

১. ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া
২. তেষ্টা পাওয়া
৩. নিয়মিত খাওয়ার পরও ঘন ঘন খিদে
৪. প্রচণ্ড পরিশ্রান্ত অনুভব করা
৫. চোখে ঝাপসা দেখা
৬. শরীরের বিভিন্ন অংশের কাটাছেঁড়া সহজে সারে না
৭. খাওয়া সত্ত্বেও ওজন কমে যাওয়া
৮. হাতে-পায়ে ব্যথা বা মাঝে মাঝে অবশ হয়ে যাওয়া

25
বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষক নিয়োগ দিন

বিশ্বাস করা হচ্ছে এবং করানো হচ্ছে, বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ‘মানহানি’ হয়েছে; অর্থাৎ তাঁদের মানের অবনতি ঘটেছে। আমলা-কাজি-সিপাহসালার—রাষ্ট্রের আর কোনো পক্ষের মানহানি হয়নি, হয়েছে শুধু বিশ্ববিদ্যালয়–শিক্ষকদের। বিশ্ববিদ্যালয়–শিক্ষকদের মান নির্ধারণ এবং মানের অবনতি রোধ করার উদ্দেশ্যে সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে একটি খসড়া নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের কর্তাব্যক্তিরা এই নীতিমালার ব্যাপারে তাঁদের মতামত ব্যক্ত করেছেন। সিদ্ধান্ত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের তিনটি নিয়ামক থাকবে: ১. প্রাথমিক-উচ্চমাধ্যমিক-স্নাতক স্তরের চূড়ান্ত পরীক্ষার ফলাফল; ২. নিয়োগ-পরীক্ষা পাস এবং ৩. পাঠদানের ক্ষমতা।

শিক্ষার তৃতীয় স্তর কিংবা উচ্চশিক্ষার সঙ্গে প্রথম দুই স্তর, অর্থাৎ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক (উচ্চমাধ্যমিকও যার অন্তর্ভুক্ত) শিক্ষার মূল পার্থক্য হচ্ছে, উচ্চশিক্ষা যাঁরা দেবেন এবং নেবেন, তাঁদের যথাক্রমে গবেষণা করতে হবে এবং গবেষণা করা শিখতে হবে। ঐতিহাসিকভাবে ‘বিশ্ববিদ্যালয়’ নামের প্রতিষ্ঠানটির ওপর গবেষণা করা ও গবেষণা শেখানোর দায়িত্ব বর্তায়। গবেষণা যদি আপনি না করেন, তবে অতিসাম্প্রতিক কালে জ্ঞানের জগতে কী পরিবর্তন হলো, সেটা আপনি জানতে পারবেন না, শিক্ষার্থীদের জানাতে পারবেন না এবং এর ফলে সমাজেও জ্ঞানের অগ্রগতির সর্বশেষ সংবাদ অজানা থেকে যাবে। সুতরাং বিশ্ববিদ্যালয়–শিক্ষকের তিনটি কাজ: ১. নিজে গবেষণা করা; ২. অন্যকে গবেষণায় সহায়তা করা এবং ৩. পাঠদান করা।

প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষকদের শুধু পাঠদান করলেই চলে। একজন কলেজশিক্ষকের সঙ্গে একজন বিশ্ববিদ্যালয়–শিক্ষকের পার্থক্যটা এখানেই। আমি প্রথম দুই স্তরের শিক্ষকদের কোনোভাবেই ছোট করছি না। আমি শুধু বলতে চাই যে একজন বিশ্ববিদ্যালয়–শিক্ষকের দায়িত্ব শুধু পাঠদানে সীমাবদ্ধ থাকা উচিত নয়।

একটি বিশ্ববিদ্যালয় কী ধরনের প্রতিষ্ঠান হওয়া উচিত—সে সম্পর্কে বাংলাদেশের নীতিনির্ধারক কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়–শিক্ষকদের স্পষ্ট ধারণা আছে বলে মনে হয় না। এর কারণ, এখন যাঁরা নীতিনির্ধারক কিংবা প্রবীণ বিশ্ববিদ্যালয়–শিক্ষক, তাঁদের শিক্ষকেরাও খুব বেশি গবেষণামুখী ছিলেন না এবং এর ফলে শিক্ষার্থীদেরও তাঁরা গবেষণামুখী করে তুলতে ব্যর্থ হয়েছেন। আমাদের আগের প্রজন্মের বিশ্ববিদ্যালয়–শিক্ষকদের সিংহভাগ আচরণে-মানসিকতায় নেহাতই একেকজন কলেজশিক্ষক ছিলেন এবং তাঁদের শিক্ষার্থীরাও ছাত্রজীবনে কলেজশিক্ষার্থী এবং কর্মজীবনে কলেজশিক্ষকে পরিণত হয়েছেন।

শিক্ষকতা, কারিকুলাম, পাঠ্যক্রম, পাঠদান থেকে শুরু করে আমাদের প্রজন্মের বিশ্ববিদ্যালয়–শিক্ষকদের যাবতীয় আচরণ ও কর্মকালে কলেজশিক্ষকের মানসিকতা প্রতিফলিত হয়। মাস্টার্স পর্যায়েও তাঁরা সেমিনারের কথা ভাবতে পারেন না, কোর্স দিতে চান। পরীক্ষা ছাড়াও যে অর্জিত জ্ঞান যাচাইয়ের অন্য পন্থা থাকতে পারে—হাজার চেষ্টা করেও এ ব্যাপারটা বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়–শিক্ষকদের বোঝাতে পারবেন না। এর পেছনে অর্থনৈতিক কারণও আছে বৈকি। পরীক্ষা মানেই ইনভিজিলেশন, খাতা দেখা, নম্বর তোলা ইত্যাদি হাজার রকম আয়ের সুবর্ণ সুযোগ নাদান শিক্ষকেরা কেন হেলায় নষ্ট করতে যাবেন? বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখনো ছাত্রদের নাম ডেকে উপস্থিতির হিসাব নেওয়া হয়, অনেকটা জেলখানার কয়েদিদের মতো। একেকটি ক্লাসে শ খানেক ছাত্রের নাম ডাকতেই তো কুড়ি মিনিট চলে যাওয়ার কথা। ক্লাসের সময়সীমা যদি পঞ্চাশ মিনিট হয়, তবে শিক্ষক মহোদয় পড়াবেন কখন?

কোনো ব্যক্তির গবেষণা করার ক্ষমতা তাঁর মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতক পর্যায়ে অর্জিত ভালো ফলের ওপর নির্ভর করে না। ভালো ছাত্রমাত্রই ভালো গবেষক নন। কে ভালো গবেষক হবেন আর কে হবেন না, সেটা শুধু সময়ই বলতে পারে। নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে ভালো আমলা নির্বাচন করা যেতে পারে, কিন্তু ভালো গবেষক তথা ভালো বিশ্ববিদ্যালয়–শিক্ষক নির্বাচন করা কার্যত অসম্ভব।

পাশ্চাত্যে বিশ্ববিদ্যালয়–শিক্ষকদের কোনো নিয়োগ পরীক্ষায় পাস করতে হয় না। প্রাথমিক থেকে শুরু করে স্নাতক পর্যায়ের পরীক্ষায় কার, কী ফলাফল ছিল, সেটাও বিবেচনায় নেওয়া হয় না। এসব ফলাফল কলেজ কিংবা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের সময় বিবেচ্য হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে একমাত্র বিবেচ্য, মুখ্যত গবেষণার ক্ষমতা এবং গৌণত পাঠদানের ক্ষমতা। দীর্ঘদিন ধরে এই দুই ক্ষমতা প্রমাণ করার পর পাশ্চাত্যে একজন ব্যক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে পারেন।

পাশ্চাত্যে পিএইচডি করতে করতেই একজন ছাত্র নিজ বিষয়ের বিখ্যাত সব জার্নালে তাঁর গবেষণাকর্ম প্রকাশ করার চেষ্টা করেন। একই সঙ্গে তিনি স্নাতক পর্যায়ে খণ্ডকালীন ভিত্তিতে পড়াতেও শুরু করেন। পাঠ দিতে দিতে তিনি পড়াতে শেখেন এবং জেনে যান, পড়ানোর কাজটা আদৌ তিনি পারবেন কি না। শিক্ষার্থীরাও শিক্ষানবিশ শিক্ষককে মূল্যায়ন করেন এবং শিক্ষানবিশ যখন কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক পদের জন্য আবেদন করেন, তখন শিক্ষার্থীদের এই মূল্যায়ন বিবেচনায় নেওয়া হয়। পিএইচডি অভিসন্দর্ভ কিংবা প্রকাশিত গবেষণাকর্মের মান এবং পাঠদানের ক্ষমতা—এই দুটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে বিজ্ঞ নির্বাচকেরা সিদ্ধান্ত নেন, কোনো বিশেষ ব্যক্তিকে শিক্ষক হিসেবে অস্থায়ী নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে কি না। কয়েক বছর অস্থায়ী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত থাকার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের নিয়োগ স্থায়ী হয়। নিয়োগ স্থায়ী হওয়া এবং পদোন্নতি পাওয়া নির্ভর করে প্রধানত শিক্ষকের কয়টি প্রবন্ধ স্বীকৃত জার্নালে প্রকাশিত হলো, তার ওপর।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, মঞ্জুরি কমিশনের কর্তাব্যক্তিদের বক্তব্য এবং সাম্প্রতিক খসড়া নীতিমালা থেকে পরিষ্কার বোঝা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ ও কলেজেশিক্ষক নিয়োগের মধ্যে পার্থক্য করতে আমরা সক্ষম নই। নিয়োগ পরীক্ষা ও প্রথম দুই স্তরের ফলাফলের ওপর নির্ভর করে বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব শিক্ষক নিয়োগপ্রাপ্ত হবেন, তাঁদের যোগ্যতা কলেজ বা স্কুলশিক্ষকের চেয়ে বেশি হবে না। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগের ধরন যদি একই হয়, তবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কলেজ-মানের শিক্ষক নিয়োগ হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রকারান্তরে কলেজে পরিণত হবে।

কার্যত বাংলাদেশে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নেই—প্রাইভেট-পাবলিকনির্বিশেষে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রকৃতপক্ষে এক একটি বড়সড় কলেজমাত্র। পরিতাপের বিষয় এই যে ভবিষ্যতেও যে বাংলাদেশে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠবে, তারও কোনো আলামত দেখা যাচ্ছে না ওই নীতিমালায়। বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে যাঁরা ভাবেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত যাঁরা নেন, তাঁরা হয়তো জানেনই না ‘বিশ্ববিদ্যালয়’ কাকে বলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস: আদিপর্ব শীর্ষক পুস্তকটি পড়ে তাঁরা নিঃসন্দেহে উপকৃত হতে পারেন। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন অন্ততপক্ষে শিক্ষকদের মধ্যে এই বই বিতরণের ব্যবস্থা নিলে শিক্ষা তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা সম্পর্কে সমাজের অজ্ঞানতা অনেকটাই দূর হবে বলে আমি মনে করি।

শিশির ভট্টাচার্য্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের পরিচালক

26
সময়টা ২০১৬ সালের অক্টোবর মাস। নীলফামারী সরকারি কলেজে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার আগে আগে এলেন তিন তরুণ। ক্লাস শেষে তিন তরুণের একজন শিক্ষার্থীদের উদ্দ্যেশে বললেন, তাঁরা একটি পরীক্ষা নেবেন। পরীক্ষায় প্রথম হলে তাঁকে বৃত্তি দেওয়া হবে। কোচিং করানো হবে। হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান উৎস চন্দ্র রায় লুফে নিলেন সেই চ্যালেঞ্জ। সবাইকে পেছনে ফেলে সেই পরীক্ষায় প্রথম হলেন তিনি। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পর সেই তরুণেরা উৎসকে ঢাকা নিয়ে এলেন। কোচিংয়ে ভর্তি করালেন। নিয়মিত খোঁজখবর করলেন।

উৎসের স্বপ্ন তখন মেডিকেলে ভর্তি হওয়া। পরীক্ষার আগে শরীর খারাপ করল উৎসের। তিন তরুণের একজন বললেন, ‘উৎস, তোমার চিন্তা নেই। কষ্ট করে পরীক্ষাটা দাও। এমনিতেই টিকে যাবে তুমি।’ উৎস জোর পেলেন সেই কথায়। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিলেন। ফলাফলের দিন উৎসের চোখ জলে ভরে গেল। এই জল কোনো কষ্টের নয়, আনন্দের। সারা দেশের মধ্যে মেধাতালিকায় ৯২তম হয়ে উৎস ভর্তির সুযোগ পেলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ। উৎসের কথায় তিন তরুণের পরিচয় জানতে উৎসাহ জাগে।

সেই তিন তরুণ কারা?: উৎস পরিচয় করিয়ে দিলেন সেই তিন তরুণের সঙ্গে। তাঁরা হলেন সাইফুর রহমান, এনায়েত হোসেন রাজিব আর নূর খান। তাঁরা একে অপরের বন্ধু।

সাইফুর চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞানে পড়ালেখা শেষ করে দেশি-বিদেশি সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছেন। নূর কানাডার মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে লেখাপড়া করেছেন। ঢাকায় তিনি রাইট ব্রেইন সলিউশন নামে একটি সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানের মালিক। রাজীব জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষে দ্য ওয়েব ল্যাব নামের একটি সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান দিয়েছেন। তিনজনই ঢাকায় থাকেন।

তিনজনই আলাদা আলাদাভাবে গরিব মেধাবী শিক্ষার্থীদের সহায়তা করার জন্য কাজ শুরুর কথা ভাবেন। এভাবে যখন তিনজনের ইচ্ছার বিষয়টি মিলে যায়, তখন তাঁরা একসঙ্গে কাজ শুরু করেন। বিভিন্ন পত্রপত্রিকা থেকে খোঁজ নেন গরিব মেধাবীদের। তাঁদের তালিকা করে পরীক্ষা নিয়ে মেধার পরীক্ষায় যাঁরা পাস করেন, তাঁদের বৃত্তি দেওয়া শুরু করেন তাঁরা। প্রথম প্রথম নিজেদের বেতনের টাকা বাঁচিয়ে বৃত্তি দিতেন এই তরুণেরা। বছর বছর বৃত্তিপ্রত্যাশী বেড়ে যাওয়ায় বন্ধু-আত্মীয়দের কাছে হাত পাতা শুরু করেন তাঁরা। এভাবে একসময় ঘুড্ডি ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করে গরিব মেধাবীদের বৃত্তি দেওয়ার বিষয়টি প্রাতিষ্ঠানিকতা পায়।

মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় ৯২তম হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজে পড়ছেন উৎস চন্দ্র রায়।মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় ৯২তম হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজে পড়ছেন উৎস চন্দ্র রায়।
জীবন বদলে যাওয়া কজনের গল্প: ফিরে আসি ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি হওয়া উৎস চন্দ্রের কথায়। তাঁর বাবা বাবু রায়ের নিজস্ব কোনো জমি নেই। কাজ করতেন অন্যের জমিতে। ছেলে কীভাবে পড়াশোনা করবেন, সে চিন্তা নয়, বাবু রায়কে চিন্তা করতে হতো প্রতিদিন কীভাবে সংসার চলবে তাঁর। এমনই সংসারের সন্তান বাবু এখন দেশসেরা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী। উৎস বলেন, ‘আমার জীবন বদলে দিয়েছেন সাইফুর, রাজীব ও নূর ভাই। দেশসেরা চিকিৎসক হয়ে আমার মতো সুবিধাবঞ্চিতদের পাশে দাঁড়াতে চাই।’

উৎসের গল্পের মতোই নিজের গল্প বলা শুরু করলেন হৃদয় কুমার সাহা। তাঁর বাবা গোবিন্দ চন্দ্র সাহা তেমন কিছুই করেন না। টানাটানির সংসার তাঁদের। বাড়ি কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে। অনেক কষ্টে এসএসসি পাস করার পর স্থানীয় এক সাংবাদিক তথ্য নেন হৃদয়ের। একদিন ঢাকা থেকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। সেই সূত্রে ঢাকায় এসে একটি পরীক্ষা দেন হৃদয়। পরীক্ষার পর জানতে পারেন, তিনি বৃত্তি পাবেন। হৃদয়ের যেন বিশ্বাসই হতে চাইছিল না। ভূরুঙ্গামারী থেকে উচ্চমাধ্যমিকে পড়াশোনার খরচ পান তিনি। ২০১৫ সালে পরীক্ষা শেষ করে কোচিং করতে আসেন ঢাকায়। তিন তরুণের তত্ত্বাবধানে কোচিং করে ২০১৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক ইউনিটে ১৩৭তম হন। ভর্তি হন ফার্মেসি বিভাগে। হৃদয় বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো দিন ভর্তি হতে পারব, ভাবতেই পারতাম না। সেই আমি তিন তরুণের সহায়তায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছি। পেছনে ফিরে তাকালে শুরু তিন ভাইয়ের সহায়তার কথাই বারবার মনে পড়ে।’

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে এ বছর পড়াশোনা শেষ করেছেন রকিবুল ইসলাম। চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার প্রত্যন্ত তালুক কররা গ্রামে বাড়ি তাঁর। এসএসসি পাস করার সময়ও বুয়েটের নাম জানতেন না তিনি। ২০১১ সালে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পান রকিবুল। কিন্তু খুশির বদলে হতাশাই চেপে ধরল। বাবা ইকলাস মালিথা অসুস্থ। মা আর ছোট বোনকে নিয়ে অভাবের সংসার। আচমকা একটি ফোন তাঁকে স্বপ্ন দেখায়। তারপর চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজে ভর্তি। বই কেনা, মাসের খরচ—সব ব্যবস্থা হয়। এইচএসসি পরীক্ষায়ও জিপিএ-৫ পান। এরপর সোজা ঢাকায় রকিবুল। তাঁকে এত দূর টেনে আনেন তিন তরুণ।

রকিবুল বললেন, ‘রাজীব, নূর ও সাইফুর ভাই মিলে আমাদের জন্য যা করেছেন, তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। আমার মতো অনেকের জীবন বদলে গেছে তাঁদের স্পর্শে।’

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাকরিমা আক্তার। পড়ছেন কৃষি বিষয়ে। তিনি ২০১৭ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। বলছিলেন, ‘আমি যখন এসএসসি পাস করি জিপিএ–৫ নিয়ে, তখন থেকেই মনে বড় ধরনের একটা ভয় কাজ করত এইচএসসির পর কী করব বা কোথায় যাব, কোথায় পড়ব? কারণ, আমি বিশ্ববিদ্যালয় বা মেডিকেল সম্পর্কে কিছুই জানতাম না। আমার এলাকার কেউ ও এসব বোঝে না। আমার পারিবারিক অবস্থাও ভালো নয়। এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে এলাম ঢাকায় কোচিং করতে এডুকেশন ফর অলের হয়ে বর্ণ কোচিংয়ে। তিন তরুণের সহায়তায় আমার জীবনের মোড় ঘুরে গেল। তাঁরা আমার পাশে না থাকলে হয়তো আজ লেখাপড়াই থেমে যেত। তাঁদের অবদান আমার জীবনে কতটুকু, তা আমি আসলেই ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। তাঁরা এতই মনপ্রাণ দিয়ে নিঃস্বার্থভাবে ঘুড্ডি ফাউন্ডেশনের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন, যা আমি চোখে না দেখলে কখনোই বিশ্বাস করতে পারতাম না। তাঁদের কথা মনে হলে বা তাঁদের কথা শুনলে মন থেকেই আপনা–আপনি তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা আসে। মনে হয়, এখনো এই রকম ভালো মানুষ পৃথিবীতে আছে কি আর কোথাও?’

তিন তরুণের ত্যাগের কথা শুনে গরিব মেধাবীদের পড়াতে এগিয়ে আসেন ২০১৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম মো. সাইয়েদ বিন আবদুল্লাহ। তিনি এখন আইন বিভাগে পড়ছেন। তিনি বলেন, ‘তিন তরুণের গল্প শুনে আমি মুগ্ধ হই। তাই মেধাবীদের কিছু ক্লাস নিয়েছি। আগামী দিনেও আমার এই চেষ্টা অব্যহত রাখব। পড়াশোনা বাণিজ্যিকীকরণের এই সমাজব্যবস্থার ভেতরেও তাঁরা যে ত্যাগ স্বীকার করেন, তা অভাবনীয়।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক ইউনিটে ১৩৭তম হয়ে ফার্মেসি বিভাগে পড়ছেন হৃদয় কুমার সাহা।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক ইউনিটে ১৩৭তম হয়ে ফার্মেসি বিভাগে পড়ছেন হৃদয় কুমার সাহা।
যেভাবে খুঁজে আনা হয় মেধাবীদের: ঘুড্ডির সদস্য সাইফুর রহমান বলেন, ‘মেধাবীদের খোঁজার ক্ষেত্রে দৈনিক পত্রিকাগুলোর সাংবাদিকেরাই আমাদের ভরসা। কারও খবর পেলে ওই এলাকার প্রথম আলোর সাংবাদিকদের কাছে আমরা তথ্য-সাহায্য চাই। সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীর স্কুলশিক্ষক ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মাধ্যমেও খোঁজ নিই। যারা কারও কাছ থেকে সাহায্য বা বৃত্তি পায় না, তাদেরই নিই আমরা। তবে একটা বাছাই পর্ব হয় ঢাকায়। সেখানে অভিভাবকেরাও আসেন। প্রাপ্ত ফলাফল ও সার্বিক দিক বিবেচনা করেই শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেওয়া হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাছাইয়ের কাজটি করার সময় আমাদের মন খারাপ হয়। সামর্থ্য না থাকার কারণে অনেককে বাদ দিতে হয়।’

শুধু বৃত্তি দিয়ে দায় শেষ করে না ঘুড্ডি; শিক্ষার্থীদের নিয়মিত খোঁজ রাখা হয়। শিক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ফলাফল জানা হয়। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সপ্তাহে দুই দিন ফোনে যোগাযোগ করা হয়। প্রতি মাসে চিঠি লিখে লেখাপড়ার অবস্থা জানানো বাধ্যতামূলক।

এ ছাড়া ভর্তি থেকে শুরু করে রেজিস্ট্রেশন ও ফরম পূরণ পর্যন্ত সরকারি সব ফি আলাদা দেওয়া হয়। তবে বছরের শুরুতে এককালীন দেওয়া হয় ভর্তি ও অন্যান্য খরচের জন্য।

বৃত্তি পাওয়া শিক্ষার্থীদের কে কোথায় পড়ছেন: বৃত্তি পাওয়া শিক্ষার্থীদের প্রায় ২০০ জন পড়ছেন বাংলাদেশের সেরা সেরা বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজে। বুয়েটে পড়ছেন পাঁচজন। অন্যান্য প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন ২৭ জান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে পড়ছেন ৪৬ জন। ঢাকা মেডিকেলসহ বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে পড়ছেন ১২ জন। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়ছেন ১৩ জন। এ ছাড়া অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন আরও ৭০ জনের বেশি শিক্ষার্থী। এ পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ের প্রায় ৪০০ শিক্ষার্থী তিন তরুণের শিক্ষা বৃত্তি পেয়েছেন। তাঁদের পেছনে এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে প্রায় আড়াই কোটি টাকা।

যেভাবে বৃত্তি দেওয়ার কাজ চলছে: তিন তরুণ এই উদ্যোগ শুরু করেছিলেন পকেটের পয়সায়। পরে তাঁরা বন্ধু, আত্মীয়স্বজন ও পরিচিতজনদের কাছে হাত পাতেন। চালু করেন ফেসবুক পেজ। অনেকেই এগিয়ে আসতে থাকেন। কেউ একজন, কেউ দুজন, কেউবা তিনজন শিক্ষার্থীকে লেখাপড়ার খরচ দেওয়ার দায়িত্ব নেন। অনেকই আছেন, মাসের বেতন পেয়ে তার একটি অংশ পাঠিয়ে দেন তিন তরুণের কাছে। তাঁদের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক দাতা নেই।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে এ বছর পড়াশোনা শেষ করেছেন রকিবুল ইসলাম ।বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে এ বছর পড়াশোনা শেষ করেছেন রকিবুল ইসলাম।
সাইফুর বলেন, দাতা যে শিক্ষার্থীকে সহায়তা করছেন, ওই শিক্ষার্থীর ফোন নম্বর তাঁকে দিয়ে দেওয়া হয়। তিনি নিজেই খোঁজখবর রাখতে পারেন। এভাবে চলার পর তাঁরা ঘুড্ডি ফাউন্ডেশন নামে একে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেন।

তিন তরুণ নিজেদের কার্যক্রমের হালনাগাদ তথ্য ফেসবুকে (www.facebook.com/EducationForAllBD) দিয়ে দেন। সাইফুর বললেন, ‘আমরা চাই না আমাদের কার্যক্রম নিয়ে কোনো প্রশ্ন উঠুক।’ আর্থের উৎস জোরদার করতে আড়াই বছর আগে তিন তরুণ ঢাকায় বর্ণ অ্যাডমিশন কেয়ার নামের একটি কোচিং সেন্টার খুলেছেন। সেখানে যাঁরা ভর্তি হন, তার লাভের একটা অংশ মেধাবীদের বৃত্তির পেছনে খরচ হয়। এই কোচিং সেন্টারের কাজ তত্ত্বাবধান করেন সাইফুর।

এবারও দেওয়া হবে বৃত্তি: সাইফুর জানান, ২০১৯ সালের জন্য আবেদনপত্র গ্রহণ চলছে। যাঁরা ২০১৯ সালে এইচএসসি পরীক্ষা দেবেন, তাঁদের জন্য এই বৃত্তি। ২০১৯ সালে যে এইএসসি পরীক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় কোচিং করবেন, তাঁরা এই বৃত্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন নিচের ফরম্যাটে এসএমএস করে। এসএমএস পাঠাতে হবে ০১৭০৬১০০৬৩৮ অথবা ০১৭০৬১০০৬৩৯ নম্বরে।

নাম স্পেস কলেজের নাম স্পেস জেলা স্পেস বিভাগ (বিজ্ঞান/ মানবিক) স্পেস এসএসসির রোল স্পেস এসএসসির ফলাফল স্পেস মোবাইল নম্বর স্পেস পরিবারের পেশা। বৃত্তি পাওয়ার পরীক্ষা হবে দেশব্যাপী। ২০১৯ সালে ২৫০ জনকে কোচিং বৃত্তি দেওয়া হবে।

27
বাড়ি চলে গিয়েছে। সঞ্চয় চলে গিয়েছে। অবশিষ্ট নেই গয়নাও!

ছেলে-বউমা সব নিয়ে তাঁকে একলা ফেলে চলে গিয়েছে বলে অভিযোগ। তাই অর্থাভাব এবং নানা কারণে বছরখানেক ধরে বারবার ঠাঁইহারা হচ্ছিলেন ভারতের হাওড়ার পানিয়াড়া উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত বাংলার শিক্ষিকা শেফালি মজুমদার। শেষ পর্যন্ত মহালয়ার সকালে বছর সত্তরের ওই বৃদ্ধার ঠাঁই হল আন্দুল স্টেশনের প্রতীক্ষালয়ের একপাশে। সঙ্গে প্লাস্টিকে মোড়া কিছু কাপড় আর এক বোতল জল। পেট ভরছে যাত্রীদের বাড়িয়ে দেওয়া খাবারে! চারদিকে যখন উৎসবের আবহ, বৃদ্ধার তখন চোখে জল! তবু ছেলে-বউমার বিরুদ্ধে থানায় যাননি। আদতে হাওড়ার শিবপুরের বাসিন্দা শেফালিদেবী এখনও বলছেন, ‘‘কেউ আমার ছেলে-বউমাকে খুঁজে দিক। আমি ওদের কাছেই ফিরতে চাই।’’ ঘটনার কথা জেনে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সঞ্জয় ঘোষ অবশ্য বলেন, ‘‘রেল পুলিশকে বলছি আপাতত বৃদ্ধার দেখভাল করতে। প্রয়োজনে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হবে। তারপরে কোথাও তাঁর থাকার ব্যবস্থা করা হবে।’’

শেফালিদেবীর স্বামী বিজয়রতন মজুমদার বছর কুড়ি আগে মারা যান। দুই ছেলেকে নিয়ে সংসার ছিল বৃদ্ধার। ২০০৩ খ্রিস্টাব্দে বড় ছেলে মারা যান। ৩৫ বছর শিক্ষকতার পরে ২০০১ খ্রিস্টাব্দে অবসর নেন শেফালিদেবী। এককালীন পেনশেনের টাকায় শিবপুরে নতুন বাড়ি করে ভাড়াবাড়ি ছেড়ে বসবাস শুরু করেন। ২০০৬ খ্রিস্টাব্দে বিয়ে দেন। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই সুবীরের বিবাহ-বিচ্ছেদ হয়। পরের বছর ফের ছেলের বিয়ে দেন শেফালিদেবী।প্রথম ধাক্কাটা আসে তার পরের বছর। শেফালিদেবীর অভিযোগ, ব্যবসার জন্য টাকা লাগবে বলে ছোট ছেলে বাড়ি বিক্রি করিয়েছিল। ব্যবসার উপার্জনে কলকাতায় ফ্ল্যাট কিনবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। সেইমতো বাড়ি বিক্রি করে তাঁরা মৌড়িগ্রামে ভাড়া চলে যান। কয়েক সপ্তাহ সেখানে কাটানোর পরে একদিন সকালে তাঁর গয়না-টাকা নিয়ে ছেলে-বউমা বেরিয়ে যায়। আর ফেরেনি।

বৃদ্ধার আক্ষেপ, ‘‘এলাকার এক বাড়িতে আয়ার কাজ নিয়েছিলাম। কিন্তু বার্ধক্যের কারণে বছরখানেক আগে ছেড়ে দিই। ভাড়া দিতে না-পারায় কয়েক মাস পরে বাড়ির মালিক বের করে দেয়। আত্মীয়দের কাছেও ঠাঁই পাইনি।’’ভাড়াবাড়ি থেকে ‘বিতাড়িত’ হওয়ার পরে শেফালিদেবী আশ্রয় পান প্রাক্তন সহকর্মী, আন্দুলের সন্ধ্যামণি বিশ্বাসের বাড়িতে। কিন্তু পুজোর ঠিক আগে সেই ঠাঁইও যায়। মহালয়ার সকালে টোটো করে আন্দুল স্টেশনে চলে আসেন শেফালিদেবী। পরের গন্তব্য তাঁর অজানা। সন্ধ্যাদেবী বলেন, ‘‘প্রাক্তন সহকর্মীর ওই অবস্থায় আমার মায়া পড়ে গিয়েছিল। কিন্তু আমাকেই দেখার কেউ নেই। তাই বলেছিলাম অন্যত্র কোথাও যেতে। শেফালিদেবী তো আত্মীয়ের বাড়ি যাবেন বলেছিলেন। যাননি, সেটা জানতাম না।’’

বউদির এঅবস্থার কথা জানা ছিল না শেফালিদেবীর দেওর, শিবপুরেরই বাসিন্দা অজয় মজুমদারের। সোমবার তিনি বলেন, ‘‘আমাদের অজান্তেই ছোট ছেলের কথায় বউদি বাড়ি বিক্রি করে। তার পর থেকে ওঁদের কোনও খবর পাইনি। বউদি একবার আমার কাছে এসেছিল। আমি অর্থ সাহায্য করেছিলাম। কিন্তু ছেলে যে ছেড়ে চলে গিয়েছে, আমাদের বলেনি। আমি নিজেই এখন ছেলেমেয়ের সংসারে থাকি। ঠিকমতো চলতেও পারি না।’’

আন্দুল স্টেশন হয়ে শ’য়ে শ’য়ে লোক চলেছে ঠাকুর দেখতে। তাঁদের কাছে শেফালিদেবীর একটাই আর্জি, ‘‘আমাকে ছেলের কাছে ফিরিয়ে দিন।’’

28
Common Forum / আদালতে যাওয়ার আগে
« on: October 17, 2018, 02:03:43 PM »
কোনো বিরোধ নিষ্পত্তি বা আইনের আশ্রয় নেওয়ার জন্য আদালতের দ্বারস্থ হতে হয়। কোনো কারণে, কোনো আইনি ঝামেলায় জড়ালে বা ঝামেলা থেকে মুক্তি পেতে আদালতে যেতে হয়। কিন্তু আদালতে যেতে হলে আগে থেকে কিছু প্রস্তুতি নেওয়া দরকার। আবার কোনো আদালতে, কীভাবে পদ্ধতি নিতে হবে—এ বিষয়েও প্রাথমিক ধারণা থাকা দরকার। এ ধারণা থাকলে অনেক ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এড়ানো যায় জটিলতাগুলোও।

আইনজীবীর সঙ্গে পূর্বপরামর্শ

কোনো আইনি ঝামেলা বা মামলা হলে এ সম্পর্কে প্রথমে যা করা করা দরকার তা হলো, কোনো দক্ষ আইনজীবীর সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা করা। এ জন্য যেটি খেয়াল রাখতে হবে, যে বিষয়ে প্রতিকার চাচ্ছেন বা যে বিষয় নিয়ে আদালতে যেতে হচ্ছে—এ বিষয়ে আইনজীবী অভিজ্ঞ কি না। অনেক আইনজীবী আছেন হয়তো শুধু জমিজমা নিয়ে কাজ করেন কিংবা এমন কেউ আছেন শুধু ফৌজদারি বিষয়-আশয় নিয়ে কাজ করেন, কেউবা কোম্পানি-ব্যাংকিং বিষয়ে। আবার অনেকেই আছেন, একাধিক বিষয় নিয়ে কাজ করেন। তাই আইনজীবী নির্ধারণ করাটা হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ। আইনজীবীর সঙ্গে সব বিষয়ে খোলাখুলি আলোচনা করা দরকার। কোনো বিষয়ে কোনো তথ্য গোপন রাখা উচিত নয়। মনে রাখতে হবে, আইনজীবী কিন্তু আপনি যে কাগজপত্র দেখাবেন এবং যা বলবেন তার ওপরই ভিত্তি করে মামলা লিখবেন। আর তিনি যে দলিলপত্র আনতে বলবেন, তা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দিতে হবে। আর মামলার ফি, অফিশিয়াল খরচ এবং আইনজীবীর ফি নিয়ে প্রথমেই ঠিকঠাক করে নেওয়া উচিত।

আদালতের তারিখ এবং করণীয় সম্পর্কে জানতে হবে

কোনো মামলায় বাদী বা বিবাদী হলে আদালতে হাজিরার তারিখ, নির্ধারিত তারিখে কয়টায় হাজির হতে হবে এবং সঙ্গে কী কী কাগজপত্র আনতে হবে—তা আইনজীবী কিংবা তাঁর জুনিয়রের কাছ থেকে জেনে নিতে হবে। এ ছাড়া আদালতে কিছু বলতে হবে কি না এবং বললে তা কী বলতে হবে—এ নিয়ে পূর্বপ্রস্তুতি নিয়ে আসা উচিত। যদিও আইনজীবীই আপনাকে এ বিষয়ে বলে রাখবেন। যেভাবে মামলা লেখা হয়, সেভাবে সঠিক তথ্য আদালতে উপস্থাপন করতে হবে। আদালতে সব দরখাস্ত বা হাজিরায় নিজের স্বাক্ষর যেন একরকম হয়, তা খেয়াল রাখতে হবে। কোনোভাবেই কোনো তথ্য গোপন করা যাবে না। কোনো জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়া যাবে না। নিজে আগ বাড়িয়ে আদালতের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কোনো বিষয়ে আলোচনা করা উচিত নয়। এতে বিভ্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। মামলার পরবর্তী তারিখ সব সময় জেনে নিতে হবে আইনজীবীর কাছ থেকে। যদি জামিন জিম্মার বিষয় থাকে, তাহলে খুব সতর্ক থাকতে হবে আদালতের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যেন হাজির থাকা যায়। প্রতি তারিখেই আদালতের কিছু খরচ থাকে এবং আইনজীবীর ফি—এসব বিষয়ে আগে থেকেই জেনে প্রস্তুতি নিয়ে আসা উচিত।

জেনে রাখতে হবে কার্যপদ্ধতি

কোন আদালতে কেমন করে প্রতিকার নিতে হয়ে, এ সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা নিয়ে রাখা দরকার। তবে আপনার বিষয় নিষ্পত্তির জন্য আইনজীবী নিয়োগ করেছেন, তাই তিনিই বিষয়টি নির্ধারিত পদ্ধতি মেনে তা আদালতের চূড়ান্ত নিষ্পত্তির দিকে নিয়ে যাওয়া। তবে কিছু বিষয়ে প্রাথমিক কিছু ধারণা থাকলে সুবিধা হয়। আইনজীবীর কাছ থেকে কিছু বিষয়ে জেনে নিতে পারেন। নিম্ন ও উচ্চ আদালতের কার্যপদ্ধতি ভিন্ন। নিম্ন আদালতে যেমন নির্ধারিত তারিখে হাজিরার বিষয় থাকে উচ্চ আদালতে তা নাও লাগতে পারে। তাই এ বিষয়গুলো আইনজীবীর কাছ থেকে ধারণা নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, একটি বিষয় বা মামলা-মোকদ্দমা নিয়ে আইনজীবীর যেমন দায়িত্ব আছে, তেমনি আপনারও দায়িত্ব আছে তাঁর কাছ থেকে সব বিষয়ে অবগত থাকা। কোনো কারণে আইনজীবী বদল করতে চাইলেও সে সুযোগ আপনার রয়েছে।

29
দেশে সরকারি ও বেসরকারি চাকরির মধ্যে বড় ধরনের পার্থক্য তৈরি হয়েছে। পার্থক্য আগেও ছিল, তবে উল্টো রকমের। সরকারি চাকরির প্রতি সাধারণ মানুষের আকর্ষণ চিরকালই ছিল, কিন্তু একসময় মেধাবী তরুণেরা বেসরকারি চাকরির প্রতি আকৃষ্ট হতে শুরু করেছিলেন। ভালো বেতন, চ্যালেঞ্জ, আত্মবিকাশের সুযোগ—এসব কারণে মেধাবী তরুণেরা বেসরকারি চাকরির প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছিলেন। কিন্তু অষ্টম বেতনকাঠামো বাস্তবায়নের পর অনেক ক্ষেত্রে সরকারি চাকরির বেতন বেসরকারি চাকরির চেয়ে বেশি হয়ে গেছে। তার সঙ্গে সরকার গাড়ি ও বাড়ির ঋণসহ যেভাবে নানা সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে, তাতে সরকারি চাকরির প্রতি তরুণদের আকর্ষণ আরও বাড়ছে।

সরকারি চাকরিতে ভালো বেতন দেওয়া হবে—এটা সমস্যা নয়, বরং সরকার যদি তা দিয়ে কুলাতে পারে, তাহলে এ নিয়ে মাথাব্যথার কারণ নেই। এতে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজেদের কাজটা ঠিকমতো করার প্রেরণা পাবেন, ঘুষ-দুর্নীতির প্রবণতা কমে আসবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, বেতন–ভাতা ও সুযোগ–সুবিধা বাড়ানোর পরও ঘুষ-দুর্নীতি কমেনি, বরং বেড়েছে।

বিআইডিএসের গবেষক মো. শহিদুল ইসলাম দেখিয়েছেন, সরকারি চাকরিতে শ্রমশক্তির মাত্র ২ শতাংশের সংস্থান হয়। আর বাকি মানুষেরা কাজ করছেন বেসরকারি খাতে, তাঁদের একটি বড় অংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে বা আত্মকর্মসংস্থানে নিয়োজিত। ব্যাপারটা হলো, সরকারি চাকরির প্রতি মানুষের বেশি আগ্রহ দেখা যায় উন্নয়নশীল দেশগুলোতে। যেসব দেশ যত উন্নতি করে, সেসব দেশে সরকারি চাকরিতে প্রতিযোগিতা তত কমে যায়। এর পেছনে উন্নয়নের ইতিহাস-সম্পর্কিত কিছু কারণ আছে। দেশ যত অনুন্নত হয়, চাকরির বাজারে প্রাতিষ্ঠানিক খাতের পরিধি তত ছোট হয় এবং তাতে সরকারি খাতের হিস্যা তত বেশি হয়। বিবিএসের শ্রমশক্তি জরিপের উপাত্তে দেখা যায়, গত ১৫ বছরে শ্রমবাজারে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের অবদান ছিল ৮০ শতাংশের ওপরে এবং স্ব-কর্মসংস্থানের অবদান ৪০ শতাংশের ওপরে। অর্থাৎ সরকারি চাকরির জন্য তুমুল প্রতিযোগিতার পেছনের একটি কারণ চাকরির নিরাপত্তা, অন্য কারণ সামাজিক মর্যাদা।

সমস্যাটা ঠিক এখানেই। যেখানে দেশজ উৎপাদনের সিংহভাগই বেসরকারি খাত জোগান দিচ্ছে, সেখানে তরুণদের এভাবে সরকারি চাকরিমুখী হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়। এতে উৎপাদনশীলতা হ্রাস পায়। এখন সরকারের উচিত, কোন খাতে কত জনবল ও কী ধরনের দক্ষতা লাগবে, তা নিরূপণ করে সেসব খাতকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলা। অথচ বাস্তবতা হলো, তরুণেরা সরকারি চাকরি খুঁজতে গিয়ে জীবনের সোনালি সময়ের চার–পাঁচ বছর নষ্ট করে ফেলেন। কর্মবাজারের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতাও তাঁরা রপ্ত করতে পারেন না।

বেসরকারি খাতের উচ্চ স্তরের কর্মকর্তারা মোটা মাইনে ও ভালো সুযোগ-সুবিধা পান, কিন্তু ব্যাংক বা বহুজাতিক কোম্পানি বাদে সাধারণভাবে বেসরকারি খাতের মাঝারি বা নিচু পদের কর্মীরা আকর্ষণীয় বেতন পান না। অথচ এই কর্মীরাই দেশের অর্থনীতি এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। এই মানুষদের বঞ্চিত হওয়া কাম্য নয়। আরেকটি ব্যাপার হলো, বেসরকারি খাতে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কার বেতন কত হবে, তার নির্দিষ্ট মানদণ্ড নেই। যদিও বলা হয়, এটা বাজারের ব্যাপার, যাঁর দক্ষতা বেশি, তাঁর বেতনই বেশি হবে। কথা সত্য, বাজার অর্থনীতিতে যাঁরা বেশি অবদান রাখবেন, তাঁদের বেতনই বেশি হওয়া উচিত। তবে বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে প্রতিটি খাতের ন্যূনতম বেতন ও মজুরি থাকা উচিত। প্রতিবছর মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি হওয়া দরকার। তা না হলে বৈষম্য মাত্রাছাড়া হয়ে যাবে।

সরকারি কর্মকর্তারা অবসরের পর পেনশনও পান। বেসরকারি খাতের জন্য সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা এ দেশে নেই, যদিও এ নিয়ে অর্থমন্ত্রী অনেক দিন ধরেই কথা বলে আসছেন। এ বছরের বাজেট ঘোষণার সময়ও তিনি সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালুর ওপর জোর দিয়েছেন। কিন্তু এ বিষয়ে তেমন একটা অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। তাই এখন বেসরকারি খাতগুলোরই এগিয়ে আসা উচিত। তারা সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালুর জন্য সরকারকে চাপ দিতে পারে। কিন্তু সমস্যা হলো, বেসরকারি খাতে কারখানা ছাড়া ইউনিয়ন নেই বললেই চলে; কর্মীদের কথা বলার সুযোগ খুব কম। সেই সুযোগে মালিকেরা যা খুশি তা-ই করতে পারেন। এই পরিস্থিতির দ্রুত অবসান হওয়া উচিত।

বৈষম্য সারা পৃথিবীতেই মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৫০ বছর ধরে মধ্যম সারির কর্মীদের প্রকৃত আয় (মূল্যস্ফীতি সমন্বয়সহ) স্থবির হয়ে আছে। মাঝারি আয় ও শীর্ষ আয়ের ব্যবধানের দুই ধরনের ব্যাখ্যা আছে। দুটো ব্যাখ্যার মধ্যে কোনটা সঠিক, তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রথম ব্যাখ্যা হচ্ছে, বিশ্বায়ন ও প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের মতো নৈর্ব্যক্তিক ও অপ্রতিরোধ্য প্রক্রিয়াগুলোর ফলে নিম্ন দক্ষতার শ্রমিকের মজুরি কমে যায় আর উচ্চশিক্ষিতদের আয় বাড়ে। দ্বিতীয় ব্যাখ্যা হলো, মাঝারি আয়ের স্থবিরতা মূলত ধনীদের আয় বৃদ্ধির প্রত্যক্ষ ফল—এই মতের লোকেরা মনে করেন, ধনীরা অন্যদের শোষণ করে আরও ধনী হচ্ছে।

বাজারের নিয়মে সরকার হস্তক্ষেপ করতে পারে না, তা ঠিক। কিন্তু এটাও মনে রাখা দরকার যে বাজারের অদৃশ্য হাত নেই। বাজার নিজের মতো করে সবকিছু ঠিক করে নিতে পারে না। এটি অত্যন্ত রাজনৈতিক ব্যাপার। সে জন্যই এতে সরকারের হস্তক্ষেপ দরকার হয়। সরকারের উচিত, বেসরকারি খাতের নিম্ন ও মাঝারি দক্ষতার মানুষদের বেতন বা মজুরির ন্যূনতম মানদণ্ড নির্ধারণ করে দেওয়া। তা না হলে এই মানুষদের যাপিত জীবন দিন দিন কঠিন হয়ে যাবে। তবে উচ্চ দক্ষতার মানুষেরা নিজেদের চাহিদামতো বেতন ঠিক করে নিতে পারেন।

আজকের বাজার অর্থনীতির যুগে বেসরকারি খাতই অর্থনীতির প্রাণ। কিন্তু সেই খাতের সিংহভাগ মানুষের মধ্যে বঞ্চনার বোধ থাকা অর্থনীতির জন্য ভালো কথা নয়। তাই বেসরকারি খাতের জন্য খাতওয়ারি পৃথক নিয়ন্ত্রক সংস্থা থাকা দরকার। আর অর্থনীতিতে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতকে ক্রমেই সংকুচিত করে প্রাতিষ্ঠানিক খাতকে বড় করতে হবে। তাহলে মানুষ সরকারি চাকরির জন্য এত হন্যে হয়ে ছুটবে না। অর্থনীতিও গতিশীল হবে।

30
বয়স্ক ব্যক্তিদের চলাফেরার অন্যতম অন্তরায় হলো হাঁটুব্যথা। হাঁটুব্যথার প্রধান কারণ অস্টিওআর্থ্রাইটিস বা বয়সজনিত সন্ধিক্ষয়। এতে নারীরা বেশি ভোগেন। ৬৫ বছরের ওপর ৪৫ শতাংশ নারী হাঁটুব্যথায় ভুগে থাকেন। বয়স বৃদ্ধি এই হাঁটুব্যথার প্রধানতম কারণ। তবে কিছু বিষয় এমন সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়। যেমন ওজনাধিক্য, বংশগতি, জীবনাচরণ, পেশা, হাঁটুতে কোনো আঘাতের ইতিহাস, অন্যান্য বাতরোগের উপস্থিতি ইত্যাদি। আবার হাঁটুব্যথা মানেই যে অস্টিওআর্থ্রাইটিস তা–ও নয়, আরও নানা কারণেও হাঁটুব্যথা থাকতে পারে। যেমন সংক্রমণ, আঘাত, বাতরোগ বা টিউমার।


কীভাবে বুঝবেন অস্টিওআর্থ্রাইটিস?

■ ব্যথা ধীরে ধীরে বাড়ে, মাস–বছরজুড়ে বয়সের সঙ্গে বাড়তে থাকে।

■ প্রথম দিকে কিছুদিন ভালো, কিছুদিন খারাপ—এভাবে চলতে থাকে।

■ হাঁটাচলায় ব্যথা বাড়ে, বিশ্রাম নিলে কমে।

■ হাঁটু লাল বা বেশি ফোলা হয় না।

 

চিকিৎসা কী?

রোগ সম্পর্কে সঠিক ধারণা নেওয়া জরুরি। এটি যে নিরাময়–অযোগ্য, তা মেনে নিন। কিন্তু চিকিৎসার মাধ্যমে ব্যথা কমানো ও জীবনযাত্রার মান বাড়ানো সম্ভব। শুধু ওষুধের মাধ্যমে তা সম্ভব নয়।

■ ওজন নিয়ন্ত্রণ করুন।

■ হাঁটু ভাঁজ করে বসা বা বসে কাজ করা, সিঁড়ি ভাঙা এড়িয়ে চলুন।

■ হাঁটুর চারপাশের পেশির কার্যকারিতা বাড়ানোর জন্য নির্দিষ্ট ব্যায়ামগুলো করুন।

■ ব্যথার তীব্রতার ওপর নির্ভর করে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খান। অল্প ব্যথায় প্যারাসিটামল, ক্যাপসেসিন ক্রিম যথেষ্ট। না কমলে ব্যথানাশক বড়ি লাগতে পারে। তার আগে রোগীর কিডনি, যকৃৎ, হার্টের অবস্থা দেখে নিতে হবে।

■ ঠান্ডা গরম সেঁক সাময়িক আরাম দিলেও এর উপকার দীর্ঘমেয়াদি নয়।

■ সবকিছুর পর শল্যচিকিৎসা বা হাঁটু প্রতিস্থাপনের বিষয়টি বিবেচনা করা যায়।

■ বাজার চলতি কিছু নতুন চিকিৎসা, যেমন স্টেমসেল থেরাপি, লেজার, পিআরপি ইত্যাদির দীর্ঘমেয়াদি উপকারিতা সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য তথ্য–উপাত্ত এখনো পাওয়া যায়নি।

Pages: 1 [2] 3 4 5