Daffodil International University

Career Development Centre (CDC) => Health & Medication => Topic started by: Md. Siddiqul Alam (Reza) on April 19, 2020, 05:06:30 PM

Title: ও মানুষ, হাত ধোও মন ধোও না?
Post by: Md. Siddiqul Alam (Reza) on April 19, 2020, 05:06:30 PM
করোনাকে প্রথমে ভাবা হয়েছিল স্বাস্থ্যসমস্যা, পরে দেখা গেল হাজারো মানসিক জটিলতাকেও বাড়াচ্ছে। জীবনের সব ক্ষেত্রকেই সংক্রামিত করার ক্ষমতা রাখে করোনা। দুঃখ-কষ্ট বাড়ে, অভাব বাড়ে, অস্থিরতা ও নৈরাজ্য বাড়ে, অন্যায়ও বাড়ে। তাই শুধু হাত ধুলে আর মাস্ক পরলে এ থেকে রেহাই মিলছে না। লকডাউন যদি মানুষ না মানে, যদি ডাক্তারদের জন্য সরবরাহ করা মাস্ক নকল হয়, যদি ত্রাণের চাল চুরি করে কর্তারা, যদি রোগী ডাক্তারের কাছে তথ্য গোপন করে, সরকার যদি স্বচ্ছতার নীতি শিকেয় তোলে, ধর্মীয় নেতারা লাখো মানুষের জমায়েত আহ্বান করে, তাহলে হাত ধুয়ে কী লাভ?

ভুল দৃষ্টিভঙ্গী সকল ভাইরাসের চাইতে বড় ভাইরাস। মনের চোখ যদি সহি না দেখে, তাহলে কিছুতেই কোনো লাভ হয় না।

করোনার বিপদের প্রকৃতিটা হলো, শুধু আমি সুস্থ থাকলে হবে না, তোমাকেও সুস্থ থাকতে হবে। না হলে তোমার ভাইরাস দশজন ঘুরে আমার দুয়ারেও কোনো না কোনোভাবে আসবে। তাই একটা অংশ যদি নিয়ম না মানে, তাহলে সকলের সকল চেষ্টা বৃথা যেতে পারে। দেশের ভেতরেও এটা যেমন সত্য, দেশের বাইরের বেলাতেও। যদি দুনিয়ার সব দেশ এই ভাইরাসকে পরাস্ত করতে না পারে, কোনো কোনো দেশ পারে, তাহলেও সফল দেশগুলো নিরাপদ হবে না। ব্যর্থ দেশগুলো থেকে ভাইরাস আবার সেসব দেশে যেতে পারে।

শরীর সুস্থ রাখতে তাই মনের সুস্থ চিন্তাও জরুরি। মন যদি কথা না শোনে, মন যদি কেবল নিজের কথা ভাবে, অথবা মন যদি আপনাকে ঠেলে নিয়ে ফেলে সংক্রমণের বাজারে, তখন শুধু হাত ধুয়ে আর কাজ হবে না। হাত ধোয়ার পাশাপাশি মন ধুয়ে নেওয়ার জরুরত এখন সবচে বেশি। এ সময়ে যদি মানসিকভাবে সবল না থাকি, মনে যদি দুর্নীতি, মিথ্যা, লোভ থাকে, অপরের জন্য ভালোবাসা কাজ না করে, তাহলে করোনায় কাবু হতেই হবে। আমাদের সমাজ এসবে আগে থেকেই কাবু ছিল। করোনা সেই কাবু সমাজদেহটাকে পেয়েছে শিকার হিসেবে।

কেউই সুপারম্যান নয়। ক্ষুধা ও ভয় মানুষ নিজের ভেতর চেপে রাখতে পারে না। দেশের কোটি কোটি মানুষ ক্ষুধার্ত, বরাদ্দের সাহায্য সবার কাছে পৌঁছাচ্ছে না। মানুষ ভীত, সরকারি আয়োজনের অবস্থা তো সবাই দেখছে। ভয় থেকে তারা দৈবশক্তির কাছে আশ্রয় চাইবে, ধর্মীয় গুরুদের ভরসায় ঘর থেকে বের হবে। কারণ, রাষ্ট্র অভয় দিতে পারছে না। এ রকম অবস্থায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া বা লক্ষ্মীপুরে হাজারো মানুষের জমায়েত হলে ‘কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়’ বলে পার পাওয়া যাবে না। বেতন দেওয়ার মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে শত কিলোমিটার হাঁটিয়ে নিয়ে আসা শ্রমিকের মিছিলকে দায়ী করা যাবে না, দায়ী করতে হয় তাদের, যারা এই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে, উসকানি দিয়েছে, যারা মানুষকে ঘরে থাকার ভরসা দিতে পারছে না।

মন ধুতে হবে আরেক কারণেও। বড় শহরগুলোয় সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ঘর বলতে এক ঘরে পাঁচের ওপর মানুষের বসবাস। এসব মানুষের কাছে ঘরে থাকা মানে কারাভোগ। বহুকাল হলো পুরুষেরা বাইরের জন্য নিজেদের তৈরি করেছে। বাইরের কাজ, বেড়ানো, আড্ডা, মেলামেশা তাদের জীবনের জরুরি অংশ। এসব মানুষ হঠাৎ ঘরের ছোট্ট পরিসরে দমবন্ধ বোধ করবে। তা ছাড়া লকডাউনে ঘরের যাবতীয় কাজ অনেক বেড়ে গেছে: রান্না, কাপড় ধোয়া, পরিচ্ছন্নতা ইত্যাদি। ঘরে থাকা পুরুষ ও শিশুদের যাবতীয় সেবা কিন্তু নারীরা একটানা করে যেতে পারবেন না। তখনই পুরুষদের সঙ্গে তাঁদের বিবাদ লাগবে। তা ছাড়া আমাদের অধিকাংশ পুরুষ দীর্ঘ সময় নারীদের সঙ্গে সময় কাটানো, কথা বলা, কাজের অংশীদার হওয়া ইত্যাদিতে অভ্যস্তও না।

আমাদের সম্পর্কগুলো অনেক ক্ষেত্রে মাইনফিল্ড হয়ে থাকে। পরস্পরের মধ্যে অনেক রকম সংঘাতের জলবায়ু আগে থেকেই আছে। বাইরের চাপে সেসবের জ্বালামুখ খুলে যায়। চলে সামাজিক, পারিবারিক ও দাম্পত্য সহিংসতা। জাতিসংঘ মহাসচিবও করোনার সময়ে পারিবারিক সহিংসতার তুমুল বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

সব মিলিয়ে করোনা মনের পরীক্ষাও নিচ্ছে। দারিদ্র্য, সহিংসতা, বিশৃঙ্খলা, দুর্নীতি ও কুশিক্ষায় এই সমাজ নিজেই এক সোশ্যাল মাইনফিল্ড হয়ে আছে। ঘরে ও বাইরে তার বিস্ফোরণ ঘটছে। হাত ধোয়ার পাশাপাশি, মুখ ঢেকে রাখার সঙ্গে সঙ্গে তাই মনটাও ধুয়ে নেওয়া দরকার, মনের কুডাকের মুখ চাপা দেওয়া দরকার।

ফারুক ওয়াসিফ: লেখক ও সাংবাদিক।
faruk.wasif@prothomalo.com

https://www.prothomalo.com/opinion/article