Show Posts

This section allows you to view all posts made by this member. Note that you can only see posts made in areas you currently have access to.


Messages - Md. Monir Hossain

Pages: 1 [2]
16


কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলায় মোগল আমলের প্রায় সোয়া দুই শ’ বছরের পুরনো সেকান্দরনগর জামে মসজিদটি আজো দাঁড়িয়ে আছে। মসজিদটির মূল অবয়ব অত থাকলেও সঠিক পরিচর্যার অভাবে তা এখন ভঙ্গুর হতে চলেছে।


মসজিদটি বাইরে থেকে বিশাল আকার দেখা গেলেও ভেতরে খুব বেশি বড় নয়। মসজিদের ছাদের ওপরে রয়েছে মোট আটটি মিনার। মসজিদের উত্তর-দেিণর দেয়াল ভেদ করে রয়েছে একটি করে প্রবেশপথ। সম্মুখ দেয়ালে প্রবেশপথ বরাবর পশ্চিম দেয়ালে রয়েছে মেহরাব। মসজিদের ভেতরে ইমাম বাদে তিনটি কাতারে ১২ জন করে মোট ৩৬ জন মুসল্লি একত্রে নামাজ আদায় করতে পারেন।


তবে মসজিদের বাইরের অংশে অর্থাৎ বারান্দায় আরো প্রায় অর্ধশত মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। আয়তাকারে এই মসজিদের দৈর্ঘ্য ৪৪ ফুট ও প্রস্থ ২৫ ফুট। সম্মুখ দেয়াল ভেদ করে রয়েছে পত্রখিলানসমৃদ্ধ তিনটি প্রবেশপথ। মধ্যের প্রবেশপথটি কিছুটা বড়। এ মসজিদের সম্মুখের সাহনের পরিমাণ ৫৪ ফুট বাই ৩৬ ফুট। মসজিদের আকার বা পরিধি যাই হোক মসজিদে প্রবেশ করে নামাজ আদায়ের সময় মনে হয় যেন ২০০ বছর আগের মোগল আমলে চলে গেছি। নিজে উপস্থিত হয়ে নামাজ না পড়লে বিশ্বাস করা বা বোঝা সম্ভব নয়।


ঐতিহাসিক সেকান্দরনগর মসজিদটি কিশোরগঞ্জ জেলার তাড়াইল উপজেলা ধলা ইউনিয়নের সেকান্দরনগর গ্রামে অবস্থিত। কালের আবর্তে এ মসজিদ শাহ সেকান্দরনগর জামে মসজিদ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। কিশোরগঞ্জ জেলা সদর থেকে এর দূরত্ব ২৮ কিলোমিটার। মসজিদের গায়ে বর্তমানে যেসব নিদর্শন পাওয়া গেছে সে অনুসারে ধারণা করা হয় অষ্টাদশ শতকের শেষ দিকে মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল। কেননা ১৭৯৬ সালের পর সেকান্দরনগরে আগমন ঘটে বিখ্যাত ইসলাম প্রচারক হজরত সৈয়দ শাহ জামানের রহ:। তারই সমসাময়িক ও আত্মীয় হজরত শাহ সেকান্দর রহ:। ওই আমলে এ দেশে ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে ৩৬০ জন আউলিয়ার আগমন ঘটে। তাদেরই একজন শাহ সেকান্দর রহ:। শাহ সেকান্দর এখানে এসে বসতি স্থাপন করেন এবং পরে এ গ্রামটি তার নিজ নামেই নামকরণ হয় সেকান্দরনগর। হজরত শাহ সেকান্দরের অবস্থানকে কেন্দ্র করেই এ মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। মসজিদের পাশেই রয়েছে শাহ সেকান্দর রহ:-এর মাজার।


কথিত আছে, হজরত শাহ সেকান্দরের রহ: দুই ভ্রাতুষ্পুত্র ছিলেন। তারা হলেন হজরত শাহ জলিল রহ: ও হজরত শাহ খলিল রহ:। হজরত শাহ জলিল রহ:-এর একটিমাত্র মেয়ে ছিলেন। মেয়েটি বয়ঃপ্রাপ্ত হলে বিয়ে দেয়া হয় সিলেটের ঝরনার পাড়ের সৈয়দ পরিবারের অধস্তন এবং বিশিষ্ট আলেম সৈয়দ আবদুল হেকিম রহ:-এর সাথে। এই বিয়ে সূত্রেই তিনি সেকান্দরনগরে চলে আসেন। পরবর্তীকালে তারই অধীনস্থরা বর্তমানে মসজিদসংলগ্ন সাহেব বাড়িতে বাস করছেন বংশপরম্পরায়। তাদেরই একজন বর্তমান মসজিদের ইমাম মাওলানা সৈয়দ আবু সায়েম। তিনিই এখন এ মসজিদে জুমার নামাজসহ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ান।


সৈয়দ সায়েম এ প্রতিনিধিকে বলেন, ১৯ বছর আগে জাতীয় জাদুঘরের প্রতœতত্ত্ব বিভাগ মসজিদটির দায়িত্ব নেয়। ঢাকা বিভাগীয় জাতীয় জাদুঘর ও প্রতœতত্ত্ব বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক ড. আতাউর রহমান পাঁচ-ছয় মাস আগে মসজিদটি পরিদর্শন করে মসজিদের উন্নয়নের জন্য সব রকমের সাহায্য-সহযোগিতার আশ্বাস দেন। বর্তমানে ১৩ সদস্যবিশিষ্ট একটি পরিচালনা কমিটি রয়েছে, যার সভাপতি সৈয়দ বশির আহম্মেদ। মসজিদের গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় কাজ বা কোনো সিদ্ধান্ত তাদের মতামতের ভিত্তিতেই হয়ে থাকে।


স্থানীয়রা জানান, ২০০০ সালে ঢাকা জাতীয় জাদুঘরের প্রতœতত্ত্ব বিভাগের লোকজন এসে মসজিদের ধোয়ামোছা ও সংস্কারকাজ করে যান। বর্তমানে মসজিদটির মেঝে দেবে যাচ্ছে। দেয়ালে ফাটল ধরেছে। দ্রুত সংস্কার না করলে কালের এ নীরব সাী হয়তো নীরবেই হারিয়ে যাবে বলে আশঙ্কা স্থানীয়দের।

Source : http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/247503

17


প্রায় এক শতাব্দী পর সোমবার পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ। তবে এ বিরল দৃশ্য বাংলাদেশ থেকে দেখা না গেলেও যুক্তরাষ্ট্রের কেনটাকি, মিডওয়ে হ্যাটল দ্বীপ, হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ ও ব্রাজিল থেকে এই পূর্ণ বলয় গ্রাস সূর্যগ্রহণ দেখা যাবে।

জানা যায়, বাংলাদেশে যখন রাত তখন এই গ্রহণ হবে। বাংলাদেশ সময় রাত নয়টা ৪৭ মিনিটে গ্রহণ শুরু হয়ে রাত তিনটা ৪ মিনিট ১৮ সেকেন্ডে এটি শেষ হবে। তাই বাংলাদেশ থেকে এ দৃশ্য দেখা যাবে না।

১৯১৮ সালের পর এই প্রথম যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূল থেকে পশ্চিম উপকূল পর্যন্ত বিস্তৃত হবে পূর্ণ সূর্য গ্রহণ। পশ্চিম ইউরোপ, আফ্রিকার কয়েকটি এলাকা এবং এশিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকেও আংশিক সূর্য গ্রহণের দেখা মিলবে। সর্বশেষ ২০০৯ সালের ২২ আগস্ট বাংলাদেশের পঞ্চগড় থেকে পূর্ণ গ্রাস সূর্য গ্রহণ দেখা গিয়েছিল। 

Source :http://www.bd-pratidin.com/tech-world/2017/08/21/257949

18


* হজ ইসলামের পঞ্চম রুকন।
* হজ ফরজ হয় ষষ্ঠ হিজরিতে।

* হজ অর্থ ইচ্ছা বা সঙ্কল্প করা।

* হজের ফরজ তিনটি।

* ওমরাহর ফরজ দু’টি।

* হজের ওয়াজিব পাঁচটি।

* হজের মিকাত পাঁচটি।

* মিকাত হলো- যে স্থান থেকে হজ ও ওমরাহর জন্য ইহরাম বাধা হয়।

* হজ তিন প্রকার (কিরান, তামাত্তু, ইফরাত)।

* সাফা ও মারওয়া- মক্কার দু’টি বিখ্যাত পাহাড় (হজের সময় সাফা ও মারওয়া পাহাড়দ্বয়ের মধ্যে দৌড়ানো ফরজ)।

* ধনী ব্যক্তির ওপর সারা জীবনে একবার হজ করা ফরজ।

* মহিলা হজযাত্রীদের পুরুষের মতো ইহরামের পৃথক সেলাইবিহীন কাপড় পরতে হয় না। তারা স্বাভাবিক কাপড়ের ওপর বোরখা পরবে এবং মুখমণ্ডল বোরখার পর্দা দিয়ে এমনভাবে আবরণ করবেন, যাতে এ পর্দার কাপড় মুখমণ্ডলে না লাগে। নতুবা ওজর হিসেবে মুখমণ্ডল উন্মুক্ত রাখতে হয়। একালে যেহেতু মহিলাদের প্রায়ই হজে ইসলাম ধর্মের কঠোর নির্দেশ পর্দা করার ব্যাপারে শৈথিল্য পরিলক্ষিত হচ্ছে, সেখানে ইহরামের সময় বিশেষ ব্যবস্থায় মুখমণ্ডলে আবরণ রাখতে হয়ত বা কদাচিৎ পরিলক্ষিত হবে। ইহরাম পরার নিয়ম- ইহরামের দুই রাকায়াত নামাজ, নিয়ত, লাব্বায়িক দোয়া, ইহরাম অবস্থায় করণীয়-বর্জনীয় দীর্ঘ বর্ণনা, তাওয়াফের নিয়ম, ছায়ীর নিয়ম ও পাঁচ দিনব্যাপী হজ কার্যক্রমের নিয়ম ইত্যাদি বিবরণ ও দোয়া পত্রপত্রিকায় অল্প পরিসরে দেয়া সম্ভব নয়। বাজারে বিভিন্ন লেখকের হজের বই ও কিতাব পাওয়া যায়। কাজেই এক বা একাধিক হজের বই ক্রয় করে অনায়াসে হজ, ওমরাহ ও জিয়ারতের বিস্তারিত বিবরণ ও দোয়া দরুদ জেনে ও শিখে নেয়া যায়।

হজ তিন প্রকার। কিরান, তামাত্তু, ইফরাদ। এর মধ্যে আফজল বা উত্তম হলো কিরান হজ। তারপরের স্থানে তামাত্তু হজ। এরপর হলো ইফরাদ হজ। তবে বাংলাদেশী সামান্যসংখ্যক হজযাত্রী বাদে বাকি সরকারি-বেসরকারি সব হজযাত্রী তামাত্তু হজই করে থাকেন। কারণ তামাত্তু হজ দুই প্রকারের হজ থেকে সহজতর। যারা কারো বদলি হজ করতে যান, তারা সাধারণত ইফরাদ হজই করেন। আর যারা আগে হজ করেছে বা বেশি নেক আমল প্রত্যাশী এমন কিছু লোক কিরান হজ করে থাকেন। কিরান হজের বেলায় মিকাতের স্থান থেকে একসাথে হজ ও ওমরাহর ইহরাম বেঁধে পবিত্র মক্কা পৌঁছে ওমরাহ করে তথা ওমরাহর আহকাম শেষ করে ইহরাম অবস্থায় হজের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। এরই মধ্যে সুন্নত তাওয়াফ তাওয়াফে কুদুম করে সাথে ছায়ী করে নিলে ১০ তারিখ ফরজ তাওয়াফের পর আর ছায়ী করতে হবে না। হজের আহকামে একবার ছায়ী করা ওয়াজিব। তেমনি ওমরাহর বেলায়ও তাওয়াফের পর একবার ছায়ী করা ওয়াজিব। কিরান হজযাত্রীরা ৮ তারিখ মিনা, ৯ তারিখ আরাফাত, ৯ তারিখ দিবাগত রাত মোজদালিফায় হজের আহকাম শেষ করে ১০ তারিখ মিনায় বড় শয়তানের প্রতি সাতটি কঙ্কর নিক্ষেপ করে হজের কোরবানি তথা দমে শুকরিয়ার পর মাথা মুণ্ডন করে ইহরাম খুলবেন। মহিলারা চুলের অগ্রভাগ সামান্য কাটবেন।

তারপর পবিত্র মক্কা গিয়ে ফরজ তাওয়াফ সেরে আবার মিনায় ফিরে আসবেন। ১১ তারিখ সূর্য পশ্চিম আকাশে প্রবেশের পর তিন শয়তানের প্রতি ২১টি এবং অনুরূপ ১২ তারিখ তিন শয়তানের প্রতি ২১টি কঙ্কর নিক্ষেপ করে মিনা থেকে পবিত্র মক্কা চলে আসবেন। কিরান হজে ওমরাহ ও হজ একই ইহরামে করতে হবে এবং সেই মতে, ওমরাহর ছায়ী ও হজের ছায়ী দুটি ছায়ী করতে হয়।

ইফরাদ হজ : ইফরাদ হজযাত্রী মিকাত স্থান থেকে শুধু হজের নিয়তে ইহরাম করবেন। তারপর ইহরাম অবস্থান পবিত্র মক্কা পৌঁছে হজের জন্য অপেক্ষা করতে থাকবেন এবং এরই মধ্যে একবার সুন্নত তাওয়াফ তাওয়াফে কুদুম করে ছায়ী করে নিলে ১০ তারিখ ফরজ তাওয়াফের পর আর ছায়ী করতে হবে না। তাওয়াফে কুদুমের পর ছায়ী না করলে ফরজ তাওয়াফের পর ছায়ী করতে হবে। ইফরাদ হজযাত্রীরা ৮ থেকে ১২ তারিখ কিরান হজযাত্রীর অনুরূপ হজের আহকাম শেষ করবেন। শুধু ১০ তারিখ রমির পর ইফরাদকারীর অন্য হজের কোরবানি ওয়াজিব নয়, মোস্তাহাব। ইফরাদ হজে ওমরাহ নেই, শুধু হজ।

তামাত্তু হজ : তামাত্তু হজযাত্রীরা মিকাত স্থান থেকে শুধু ওমরাহর নিয়তে ইহরাম করবেন। এরপর পবিত্র মক্কা পৌঁছে ওমরাহ সেরে মাথা মুণ্ডন করে ইহরাম খুলে স্বাভাবিক অবস্থায় পবিত্র মক্কায় হজের জন্য অপেক্ষা করতে থাকবেন। তারপর হজের সময় হজ উপলক্ষে ৮ তারিখ সকালে মিনা রওনা হওয়ার আগে পবিত্র মক্কা থেকে হজের নিয়তে ইহরাম করে নেবেন। তামাত্তু হজযাত্রীরা ৮ থেকে ১২ তারিখ পর্যন্ত কিরান ও ইফরাদ হাজীর মতো হজের আহকাম সারবেন। শুধু পার্থক্য হলো- ১০ তারিখ রমির পর তামাত্তু হজযাত্রীকে কেরানের মতো হজের ওয়াজিব অঙ্গ দমে শুকরিয়া দিতে হবে। আর কিরান ও ইফরাদ হজের সুন্নত তাওয়াফে কুদুম করতে হয়, যা তামাত্তু হজে নেই। পুরুষ হজযাত্রী ইহরাম খুলতে মাথা মুণ্ডানো আফজল। তবে চুলের অগ্রভাগ সামান্য পরিমাণ কাটাও জায়েজ আছে। মহিলাদের ক্ষেত্রে ইহরাম খুলতে কোনো ইহরামমুক্ত মাহরাম দ্বারা এক ইঞ্চি পরিমাণ চুলের অগ্রভাগ কেটে নেবেন।

বাংলাদেশীদের মিকাত আগে সাগরপথে ইয়ালামলাম পাহাড় এলাকা, যা জেদ্দার আগে পড়ে। কিন্তু বর্তমান আকাশপথে কারনুল মানাজিল হবে। আর পবিত্র মদিনা হয়ে এলে মিকাত পবিত্র মদিনার কাছে জুলহোলায়ফা নামক স্থান বর্তমান নাম বীরে আলী। কাজেই যারা চট্টগ্রাম-ঢাকা থেকে জেদ্দা হয়ে প্রথমে মক্কা যাবেন, তারা দেশে থাকতেই ইহরাম বেঁধে নেবেন। যেহেতু এয়ারক্রাফটের (বিমানের) ভেতর ইহরাম করা ঝামেলা হতে পারে।

আর যারা দেশ থেকে জেদ্দা হয়ে আগে পবিত্র মদিনা যাবেন, তারা পবিত্র মদিনা থেকে পবিত্র মক্কার উদ্দেশে রওনা হয়ে জুলহোলায়ফা মিকাত মসজিদে ইহরাম করে নেবেন।

যারা কিরান বা ইফরাদ হজ করেন, তারা অনেকটা হজ সম্বন্ধে অভিজ্ঞ বলা চলে। কিন্তু যারা তামাত্তু হজ করেন, তাদের বেশির ভাগই হজ সম্বন্ধে অনভিজ্ঞ; অর্থাৎ প্রায়ই প্রথম হজযাত্রী।

সাধারণত সরকারি-বেসরকারি বেশির ভাগ তামাত্তু হজযাত্রী আগে পবিত্র মক্কা যান। তারপর সময় থাকলে পবিত্র মদিনা জিয়ারতে যান। অথবা হজের পরে। যদি আপনি সরকারি হজযাত্রী হন, তবে ঢাকা হাজীক্যাম্প থেকে বিমানবন্দরে আরোহণের আগ মুহূর্তে ওমরাহর উদ্দেশে ইহরাম পরবেন। সে জন্য পুরুষদের ইহরামের কাপড় বড় লাগেজে না রেখে সাথে থাকা ছোট ব্যাগে রাখা দরকার, যাতে ইহরাম পরিধানে ইহরামের কাপড়ের সমস্যা না হয়। আপনি ইহরামের কাপড় পরে শরীর থেকে ব্যবহারের সব কাপড় খুলে মাথায় টুপি রেখে দুই রাকাত সুন্নাতুল ইহরাম নামাজ পড়ে মাথা থেকে টুপি নামিয়ে ফেলে ওমরাহর নিয়ত করে তিনবার লাব্বায়িক দোয়া পড়লে ইহরাম হয়ে যায়। ইহরাম অবস্থায় পবিত্র মক্কা পৌঁছে কাবা শরিফ সাত চক্কর তাওয়াফ করে তাওয়াফের ওয়াজিব দুই রাকায়াত নামাজ পড়ে মোলতাজেমে দোয়া করে জমজম কূপের পানি পান করে যেতে হবে সাফা পাহাড়ে। ওখানে ছায়ীর নিয়ত করে সাফা থেকে মারওয়া এভাবে সাতবার ছায়ী করে মাথা মুণ্ডন করবেন, মহিলারা চুলের অগ্রভাগ সামান্য কাটলে ওমরাহ হয়ে যায়। এরপর পবিত্র মক্কায় স্বাভাবিক অবস্থান করে ৮ তারিখ সকালে মিনা রওনা হওয়ার আগ মুহূর্তে হজের উদ্দেশ্যে পুনঃ ইহরাম পরিধান করবেন। তামাত্তু হজযাত্রীর আগেরবারের ইহরাম করতে নিয়ত ছিল ওমরাহর। এখন ইহরাম করতে নিয়ত হবে হজের।

আগেই উল্লেখ করেছি, ৮ থেকে ১২ তারিখ হজ কার্যক্রমে কিরান, তামাত্তু, ইফরাদ কোনো ব্যবধান নেই। শুধু ১০ তারিখ কিরান ও তামাত্তু হাজীদের ক্ষেত্রে হজের কোরবানি তথা দমে শুকরিয়া ওয়াজিব, যা ইফরাদের ক্ষেত্রে মুস্তাহাব। আর কিরান ও ইফরাদ হজে সুন্নত তাওয়াফ তাওয়াফে কুদুম করতে হয়, যা তামাত্তু হজে করতে হয় না। ইহরাম অবস্থায় মাথা উন্মুক্ত থাকবে। এমন কি যেকোনো নামাজে এবং রাতে নিদ্রায়ও।

মহিলা হজযাত্রীদের পুরুষের মতো ইহরামের পৃথক সেলাইবিহীন কাপড় পরতে হয় না। তারা স্বাভাবিক কাপড়ের ওপর বোরখা পরবে এবং মুখমণ্ডল বোরখার পর্দা দিয়ে এমনভাবে আবরণ করবেন, যাতে এ পর্দার কাপড় মুখমণ্ডলে না লাগে। নতুবা ওজর হিসেবে মুখমণ্ডল উন্মুক্ত রাখতে হয়। একালে যেহেতু মহিলাদের প্রায়ই হজে ইসলাম ধর্মের কঠোর নির্দেশ পর্দা করার ব্যাপারে শৈথিল্য পরিলক্ষিত হচ্ছে, সেখানে ইহরামের সময় বিশেষ ব্যবস্থায় মুখমণ্ডলে আবরণ রাখতে হয়ত বা কদাচিৎ পরিলক্ষিত হবে। ইহরাম পরার নিয়ম- ইহরামের দুই রাকায়াত নামাজ, নিয়ত, লাব্বায়িক দোয়া, ইহরাম অবস্থায় করণীয়-বর্জনীয় দীর্ঘ বর্ণনা, তাওয়াফের নিয়ম, ছায়ীর নিয়ম ও পাঁচ দিনব্যাপী হজ কার্যক্রমের নিয়ম ইত্যাদি বিবরণ ও দোয়া পত্রপত্রিকায় অল্প পরিসরে দেয়া সম্ভব নয়। বাজারে বিভিন্ন লেখকের হজের বই ও কিতাব পাওয়া যায়। কাজেই এক বা একাধিক হজের বই ক্রয় করে অনায়াসে হজ, ওমরাহ ও জিয়ারতের বিস্তারিত বিবরণ ও দোয়া দরুদ জেনে ও শিখে নেয়া যায়।

Source: www.dailynayadiganta.com/detail/news/244836

19
Islam & Science / আল-আকসার কান্না
« on: August 09, 2017, 06:05:15 PM »


জেরুসালেম! অগণিত নবী-রাসূলের স্মৃতিধন্য পুণ্যভূমি। এই শহরেই রয়েছে মুসলমানদের প্রথম কিবলা মসজিদুল আল-আকসা। ১৬ মাস যাকে কিবলা ধরে নামাজ আদায় করা হয়েছিল। প্রিয় নবী সা:-এর পবিত্র মেরাজ বেহেশতি বাহন বোরাকে চড়ে শুরু হয়েছিল এখান থেকেই।

পবিত্র আল-কুরআনে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘পরম পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা তিনি, যিনি স্বীয় বান্দাকে রাতেরবেলা ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত- যার চারদিকে আমি পর্যাপ্ত বরকত দান করেছি, যাতে আমি তাঁকে কুদরতের কিছু নিদর্শন দেখিয়ে দেই। নিশ্চয়ই তিনি পরম শ্রবণকারী ও দর্শনশীল’ (সূরা আল ইসরা : ১)।

এখানে মসজিদে আকসার চারদিক বলতে জেরুসালেম শহরকেই বোঝানো হয়েছে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘আল কুদসের (জেরুসালেম) এমন কোনো জায়গা খালি নেই যেখানে একজন নবী সালাত আদায় করেননি বা কোনো ফেরেশতা দাঁড়াননি’ (তিরমিজি)। এর আগে নাম ছিল বায়তুল মোকাদ্দাস। রাসূল সা:-এর যুগ থেকেই এর নামকরণ করা হয় মসজিদুল আল-আকসা। মুসলমানদের কাছে জেরুসালেম শহরটি আল-কুদস নামেও পরিচিত।

যে তিনটি মসজিদের উদ্দেশে ইবাদতের নিয়তে সফরের অনুমতি আছে, তার মধ্যে একটি হলো আল-আকসা মসজিদ। বাকি দু’টি হলো- মসজিদে হারাম (মক্কা) ও মসজিদে নববী (মদিনা), (বুখারি ১১৮৯; মুসলিম : ১৩৯৭)।

এর গুরুত্ব সম্পর্কে মহানবী সা: বলেছেন, ‘ঘরে নামাজ পড়লে এক গুণ, মসজিদে ২৫ গুণ, মসজিদে নববী ও আকসায় ৫০ হাজার গুণ, মসজিদে হারামে এক লাখ গুণ সওয়াব’ (ইবনে মাজাহ)। মহানবী সা: মদিনায় হিজরত করার পর প্রায় ১৬ মাস মসজিদুল আকসার দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করেন।

হিজরি দ্বিতীয় সনের শাবান মাসে মতান্তরে রজব মাসের মাঝামাঝি মহানবী সা: কিছু সাহাবায়ে কেরামসহ মদিনার অদূরে মসজিদে বনু সালামায় জোহর মতান্তরে আসর নামাজ আদায় করেন। দ্বিতীয় ও তৃতীয় রাকাতের মাঝামাঝি আল্লাহর নির্দেশে মহানবী সা: ও সাহাবায়ে কেরাম চাররাকাত বিশিষ্ট নামাজের দুই রাকাত কাবা শরিফের দিকে ফিরে আদায় করেছিলেন বলে ইসলামের ইতিহাসে মসজিদটি মসজিদে কিবলাতাইন বা দুই কিবলা হিসেবে সুপরিচিত ও সমাদৃত।

অনেকে মনে করেন, হজরত সোলাইমান আ: মসজিদে আকসা তৈরি করেছেন, অথচ এটি সম্পূর্ণ ভুুল। ইব্রাহিম আ:-ই প্রথম আল-আকসা তৈরি করেন। ইব্রাহিম আ: যেমন কাবার প্রতিষ্ঠাতা নন, ঠিক তেমনি সোলাইমান আ:ও মসজিদে আকসার প্রতিষ্ঠাতা নন, বরং উভয়েই পুনঃনির্মাণকারী। কাবার মূল প্রতিষ্ঠাতা হচ্ছেন হজরত আদম আ:। আর আল-আকসার মূল প্রতিষ্ঠাতা হলেন হজরত ইব্রাহিম আ:।

একটি হাদিস থেকে জানা যায়-
হজরত আবুজর গিফারি রা: থেকে বর্ণিত, ‘আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রশ্ন করি, জমিনে প্রথম কোন মসজিদ তৈরি হয়েছিল’? তিনি উত্তরে বলেন, ‘মসজিদে হারাম’। ‘আমি জিজ্ঞেস করি তারপর কোনটি’? তিনি বলেন, ‘মসজিদে আকসা’। আমি পুনরায় জিজ্ঞেস করি, এ দুটোর মধ্যে সময়ের ব্যবধান কত’? তিনি বলেন, ‘৪০ বছর’ (বুখারি, মুসলিম)। ইব্রাহিম আ: ও সুলাইমান আ:-এর সময়ের ব্যবধান হচ্ছে এক হাজার বছর এবং উপরের সহিহ হাদিসে বলাই হয়েছে- কাবার ৪০ বছর পর আল-আকসা তৈরি হয়েছে।

ইবনুল জাওজি রহ: বলেন, এই হাদিসে মসজিদে আকসার প্রথম ভিত্তির প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। ইব্রাহিম আ:-এর পর তার ছেলে ইসমাইল আ: ও ইসহাক আ:, তারপরে ইসহাক আ:-এর ছেলে ইয়াকুব আ:। যার উপাধি ছিল ইসরাইল। তার বংশধরদের বনু ইসরাইল বলা হয়। তারপর ইয়াকুব আ:-এর ছেলে ইউসুফ আ:, তারপর মূসা আ:, তারপর ইউশা বিন নূন আ:, তারপর দাউদ আ: এবং তারপর দাউদ আ:-এর ছেলে সোলাইমান আ: দুনিয়াতে আগমন করেন। তিনিই মসজিদে আকসা পুনঃনির্মাণ করেন। এই মসজিদ নির্মাণে ৩০ হাজার শ্রমিকের সাত বছর সময় লেগেছিল।

ইবনে তাইমিয়া রহ: বলেন, ‘হজরত ইব্রাহিম আ:-এর যুগেই মসজিদে আল-আকসা তৈরি হয়েছিল। হজরত সোলাইমান আ: তা বড় ও মজবুত করে তৈরি করেন’ (মাজমুউল ফাতাওয়া ১৭ খণ্ড, ৩৫১ পৃ.)।

মসজিদে আকসা থেকে ৫০০ মিটার দক্ষিণে অবস্থিত কুব্বাতুস সাখরা, যা ৬৯১ সালে উমাইয়া খলিফা আবদুুল মালিক কাবা শরিফের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মহানবী সা: যে জায়গা থেকে মেরাজে গমন করেছিলেন (বায়তুল মোকাদ্দাস সংলগ্ন), সে জায়গা তৈরি করেছেন এবং মুসলমাদেরকে আগামী বছর থেকে কাবার পরিবর্তে এখানে হজ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু ৬৯২ সালে খলিফা আবদুুল মালিকের প্রাদেশিক শাসক হাজ্জাজ বিন ইউসুফের কাছে আরাফাতের যুদ্ধে তৎকালীন মক্কা-মদিনার শাসক আবদুল্লাহ বিন জোবায়ের পরাজিত ও নিহত হওয়ায় মক্কা-মদিনা আবদুুল মালিকের অধীনে চলে যায়। তাই এখানে হজ করার আদেশটি বহাল রাখার প্রয়োজন হয়নি। কুব্বাতুস সাখরা চুনাপাথরে নির্মিত ইমারত। বাইরের দিক অষ্টভুজবিশিষ্ট।

কিন্তু অভ্যন্তরে চতুর্দিক বৃত্তাকার করে সাজানো স্তম্ভের সমষ্টি। এতে স্তম্ভের সংখ্যা ১৬টি। বাইরের অষ্টভুজের এক দেয়ালের দৈর্ঘ্য ৬৭.৫ ফুট, উচ্চতা ২৯.৫ ফুট, প্রত্যেক দেয়ালে সাতটি করে জানালা আছে মনে হয়, কিন্তু জানালা পাঁচটি; আর বাকি দু’টি বন্ধ প্যানেল। গম্বুজের পিপার নিম্নাশ থেকে একটি ঢালু ছাদ বাইরে অষ্টভুজ দেয়ালের ওপর মিলিত হয়েছে। কুব্বাতুস সাখরার চারদিকে চারটি তোরণ আছে। এর অলঙ্করণ অপরূপ, তবে একাদশ শতাব্দী থেকে ফাতেমিয়, মামলুক, উসমানিয় তুর্কি, ব্রিটিশ এবং আরব শাসকেরা বিভিন্ন সময়ে সংস্কারের কারণে প্রাচীন অলঙ্করণ খুব কমই আজ বিদ্যমান।

অনেকেই এই কুব্বাতুস সাখরাকেই আল-আকসা মসজিদ বলে ভুল করে থাকেন। বাস্তবে এ দুটির অবস্থান ও গুরুত্ব আলাদা। ৬৩৭ খ্রিষ্টাব্দে হজরত ওমর রা:-এর শাসনামলে আবু উবায়দা ইবনে জাররাহ রা:-এর নেতৃত্বে মুসলমানরা আল কুদস তথা জেরুসালেম জয় করেন।

১০৯৯ সালের ১৫ জুলাই খ্রিষ্টান ক্রুসেডাররা নামধারী মুসলিম শাসকদের সহায়তায় সিরিয়া ও ফিলিস্তিন দখল করে। এরপর তারা ১০৯৯ সালের ৭ জুন বাইতুল মোকাদ্দাস অবরোধ করে এবং ১৫ জুলাই মসজিদের ভেতর প্রবেশ করে ব্যাপক পরিবর্তন করে একে গির্জায় পরিণত করে। ক্রুসেডাররা চালায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ, মুসলমানের রক্তে প্লাবিত হয়েছিল পবিত্র আল-কুদস। এভাবেই কুদসে ৪৬২ বছরের মুসলিম শাসনের পতন ঘটে।

এরপর দীর্ঘ প্রতীক্ষা, গোলামির জিঞ্জির ভেঙে, জিল্লতির জীবন ছেড়ে মাথা তুলে দাঁড়ানোর জন্য মুসলিম মিল্লাত অপেক্ষা করছিল একজন মুক্তিদূতের। ১১৬৯ সালের ২৩ মার্চ। ফাতেমি খিলাফতের কেন্দ্রীয় খলিফার নির্দেশে সালাহউদ্দিন আইয়ুবি রহ: গভর্নর ও সেনাপ্রধান হয়ে মিসরে আগমন করেন। এরপর ১১৮৭ সালের ২০ সেপ্টেম্বর হিত্তিনের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে মুসলিম বীর সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবি রহ: জেরুসালেম শহর মুসলমানদের অধিকারে নিয়ে আসেন। তারপর ১১৮৭ সালের ২ অক্টোবর শুক্রবার সালাহউদ্দিন আইয়ুবি রহ: বিজয়ীর বেশে বাইতুল মোকাদ্দাসে প্রবেশ করেন।

বাইতুল মোকাদ্দাস মুক্ত হওয়ায় সেখানকার মুসলিমরা প্রায় ৯০ বছর পর ক্রুসেডারদের অত্যাচার থেকে রেহাই পেয়েছিল। আল-আকসায় উড়ল কালেমাখচিত হিলালি নিশান।

১৯৪৮ সালে বিশ্ব মোড়লদের চক্রান্তে মধ্যপ্রাচ্যের বিষফোঁড়া অভিশপ্ত ইসরাইল নামক রাষ্ট্রের জন্ম হয়। ১৯৬৭ সালে জুন মাসে মাত্র ছয় দিনের যুদ্ধে মিসর, সিরিয়া, জর্ডান ও ইরাক এই চারটি আরব রাজ্যের প্রতিরোধ ব্যূহ ধ্বংস করে ইসরাইল পূর্ব আল-কুদস, পশ্চিমতীর, গাজা ও গোলান মালভূমি দখল করে নেয়। দীর্ঘ ৭৮০ বছর পর আবারো পবিত্র আল-আকসা থেকে হিলালি নিশান খসে পড়ে। সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবি রহ:-এর আমানত হাতছাড়া হয়।

তারপর থেকে বিগত অর্ধশতাব্দী ধরে আল-আকসা কাঁদছে আর বিলাপ করে বলছে, ‘আমি আল-আকসা! মুসলমানদের প্রথম কিবলা। মিল্লাতের পিতা ইব্রাহিমের সুনিপুণ হাতে বানানো ইবাদতগৃহ। জায়নবাদীদের হাতে বন্দী হয়ে একজন সালাহউদ্দিন আইয়ুবির জন্য বিগত ৫০ বছর ধরে প্রতীক্ষার প্রহর গুনছি, কিন্তু মুসলমানদের নেতৃত্ব আজ ঘুণেধরা। ক্ষমতালিপ্সা, অর্থের লোভ আর নারীর অন্ধ মোহে বুঁদ হয়ে আছে তার বড় একটি অংশ। মিল্লাতের পিতা ইব্রাহিম! তোমার সন্তানেরা সংখ্যায় বিপুল, ১৫০ কোটির উপরে। কিন্তু তারা আজ অথর্ব, মেরুদণ্ডহীন। কেননা তারা ভুলে গেছে দ্বীনের জন্য তোমার ত্যাগের শিক্ষা, শুধু আনুষ্ঠানিকতাকেই তারা ইবাদত মনে করে। কয়েক লাখ ইহুদির দখল থেকে মুক্ত করতে পারছে না পবিত্র আল-আকসা। এ জাতির উত্তরণে আবারো একজন গাজী সালাহউদ্দিন আইয়ুবির প্রয়োজন, যিনি চারিত্রিক মাধুর্য, অসীম সাহসীকতা, দূরদৃষ্টি ও বাঘের ক্ষিপ্রতা দিয়ে অভিশপ্ত ইহুদিদের কাছ থেকে ছিনিয়ে আনবেন পবিত্র আল-আকসা, সূচিত হবে ইসলামের বিজয়। কে হবে সেই মুক্তিদূত?’

Source : http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/241159

20


আরবের মক্কা নগরে অবস্থিত জমজম কূপ মহান স্রষ্টা আল্লাহর রহমতের উৎস ও অন্যতম অপূর্ব নিদর্শন। মুসলিম ইতিবৃত্তে এ কূপটির উৎপত্তি হজরত ইবরাহিম আ: এবং তার স্ত্রী হাজেরা ও পুত্র ইসমাঈল আ:-এর জীবন কাহিনীর সাথে সম্পৃক্ত। এটি পৃথিবীর প্রাচীনতম পবিত্রময় একটি কূপ। কাবাগৃহের ফজিলতের সাথে জমজম কূপের মাহাত্ম্য ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

নামকরণ
জমজম আরবি শব্দটির অর্থ হচ্ছে প্রাচুর্য, সঞ্চিত হয়ে জমা হওয়া। যেহেতু সূচনা থেকেই এতে পানির প্রাচুর্য লক্ষ করা গেছে এবং ব্যবহারের ফলে হ্রাসপ্রাপ্ত না হয়ে সঙ্গে সঙ্গে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে তাই এর এই নামকরণ।

অবস্থান
জমজম কূপটি হারাম শরিফে পবিত্র কাবার দক্ষিণ-পূর্ব কোণের যে স্থানে হাজরে আসওয়াদ অবস্থিত, তার বিপরীত দিকে ২০ মিটার (৬৬ ফুট) দূরে অবস্থিত। প্রায় ১৮ ফুট দীর্ঘ এবং ১৪ ফুট চওড়া একটি আয়তক্ষেত্রের মতো কূপটি। গভীরতা ১৪০ ফুট।

ইতিহাস
হজরত ইব্রাহিম আ: হজরত ইসমাঈল আ:-এর জন্মের কিছু দিন পর মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে ইসমাঈল আ:-কে তার মা বিবি হাজেরা আ:-সহ পবিত্র মক্কার অখ্যাত এক উপত্যকায় আবাসন দেয়ার আদেশপ্রাপ্ত হলেন। হজরত ইব্রাহিম আ: মহান আল্লাহর নির্দেশে বর্তমান কাবাগৃহের কাছে জনমানবহীন এক নির্জন প্রান্তরে কিছু খেজুর এবং একটি মশকে কিছু পানি দিয়ে ইসমাঈল আ: ও তার মা হাজেরা আ:-কে রেখে আসেন।

ভীতিপ্রদ এ অঞ্চলে বসবাস করা একজন নারীর জন্য অত্যন্ত কষ্টসাধ্য ও অসহনীয় ব্যাপার ছিল। কঠিন পরিস্থিতির কথা চিন্তা করে হজরত ইব্রাহিম আ: নিজেও চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন।

তিনি সওয়ারি পশুর লাগাম ধরে অশ্রুসজল নয়নে স্ত্রী ও পুত্রকে বিদায় জানানোর সময় হজরত হাজেরা আ:-কে বললেন, ‘হে হাজেরা! এ সব কিছু মহান আল্লাহর আদেশ অনুযায়ী করা হয়েছে। আর তাঁর আদেশ পালন করা থেকে পালিয়ে বেড়ানোর কোনো পথ নেই। মহান আল্লাহর দয়া ও কৃপার ওপর নির্ভর করো। আর নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করো যে, তিনি আমাদের লাঞ্ছিত ও অপদস্ত করবেন না।

এরপর তিনি মহান আল্লাহর কাছে একাগ্রতাসহকারে প্রার্থনা করে বললেন, ‘হে প্রভু! এ স্থানকে নিরাপদ শহর ও জনপদে পরিণত করো। এর অধিবাসীদের মধ্যে যারা মহান আল্লাহ ও শেষ বিচার দিবসের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে তাদের বিভিন্ন ধরনের ফল ও খাদ্য রিজিক হিসেবে প্রদান করো’। (সূরা বাকারা : ১২৬)।

হজরত ইব্রাহিম আ: চলে যেতে থাকায় হজরত হাজেরা আ: হজরত ইব্রাহিম আ:-এর কাছে আবার জানতে চাইলেন, আল্লাহ কি আপনাকে এ কাজের নির্দেশ দিয়েছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তখন হজরত হাজেরা আ: বললেন, ‘তাহলে আল্লাহ আমাদেরকে ধ্বংস করবেন না’।

হজরত হাজেরা আ: যথাস্থানে ফিরে এলেন। আর ইব্রাহিম আ: সামনে চললেন। চলতে চলতে যখন তিনি গিরিপথের বাঁকে পৌঁছলেন, যেখান থেকে স্ত্রী-পুত্র তাঁকে দেখতে পাচ্ছে না, সে সময় তিনি কাবার দিকে মুখ করে দুই হাত তুলে এ দোয়া করলেন, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমি আমার বংশধরদের কতককে বসবাস করালাম অনুর্বর উপত্যকায় তোমার পবিত্র গৃহের কাছে, যাতে তারা সালাত কায়েম করতে পারে। তুমি কিছু লোকের অন্তরকে তাদের প্রতি আকৃষ্ট করে দাও এবং তাদেরকে ফলাদি দ্বারা রুজি দান করো, যাতে তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারে’ (সূরা ইব্রাহিম : ৩৭)।

এ দোয়া করে হজরত ইব্রাহিম আ: চলে গেলেন। কিছু দিন পর মশকের পানি ফুরিয়ে গেলে হাজেরা আ: এবং ইসমাঈল আ: তৃষ্ণায় ছটফট করতে লাগলেন। হজরত হাজেরা আ: পানির সন্ধানে ছুটলেন। নিকটস্থ সাফা পর্বতে আরোহণ করে তিনি চতুর্দিকে দৃষ্টিপাত করলেন- কোথাও পানি পাওয়ার সম্ভাবনা আছে কি না বা কোনো কাফেলা এদিকে আগমন করছে কি না। কিন্তু কোথাও কিছু দেখতে না পেয়ে তিনি নেমে এলেন। অতঃপর মারওয়া পর্বতে আরোহণ করে চতুর্দিকে তাকিয়ে কিছু না পেয়ে আবার নেমে এসে সাফা পর্বতে আরোহণ করলেন।

এভাবে সাফা এবং মারওয়া পর্বতে সাতবার আরোহণ ও অবরোহণ এবং দুই পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে উদ্বিগ্নভাবে ছোটাছুটি করলেন। অবশেষে তিনি যখন মারওয়া পাহাড়ের ওপর তখন নিচে একটি শব্দ শুনতে পেলেন এবং সেখান থেকে ইসমাঈল আ:-এর কাছে ফিরে এলেন। তিনি একজন ফেরেশতা দেখতে পেলেন, যিনি নিজের পায়ের গোড়ালি বা ডানা দ্বারা মাটিতে আঘাত করলেন, আর অমনি সেই স্থানে একটি পানির ধারা প্রবাহিত হলো। এটাই পরবর্তীকালে জমজম কূপ নামে খ্যাত হয়।

হজরত হাজেরা আ:-এর চতুর্দিকে প্রস্তর দ্বারা বাঁধ নির্মাণ করে একে হাউজের মতো করে দিলেন এবং সর্বপ্রথম পানি ধরে রাখেন। অতঃপর তিনি পানি পান করলেন এবং তার পুত্রকে দুধ পান করালেন।

পৌত্তলিক যুগে জুরহুমিরা শত্রুতাবশত কূপটি বন্ধ করে দিয়েছিল। পরে মহানবী সা:-এর পিতামহ আবদুল মুত্তালিব কূপটি পুনরায় আবিষ্কার করে খনন করে এর চতুর্দিকে পাকা প্রাচীর নির্মাণ করে দেন। সে থেকে আজ অবধি মহান স্রষ্টা আল্লাহর অপূর্ব নিদর্শন হিসেবে সেখান থেকে অনবরত প্রয়োজনীয় পানি বের হয়ে আসছে।

বৈশিষ্ট্য
জমজম কূপ কখনো শুকিয়ে যায়নি। বরং পানির চাহিদা যত বেড়েছে, কূপের পানির সরবরাহও সে অনুপাতে বেড়ে গেছে।

জমজম কূপের পানিতে লবণাক্ততা এবং স্বাদ সুদূর অতীতে যেমন ছিল বর্তমানেও তাই আছে।

লাখো কোটি লোক এর পানি পান করে কেউই এ কথা বলতে পারেনি যে, এর পানি পান করে আমার অসুবিধা হয়েছে। বরং এর পানি রোগ নিরাময়ক হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।

প্রত্যেক হাজী তৃপ্তিসহকারে জমজমের পানি পান যেমন করেন, তেমনি দেশে ফেরার সময় ক্যানভর্তি পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি নিয়ে আসেন।

জমজম কূপের পানি কখনো রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় পরিশোধনের প্রয়োজন হয়নি।

এ পানিতে ক্লোরিন মেশানো হয়নি বা ক্লোরিন দ্বারা জীবাণুমুক্ত করা হয়নি। যেমন বিভিন্ন নগর, জনবহুল এলাকায় সরবরাহকৃত পানি ক্লোরিনের সাহায্যে পরিশোধিত করা হয়।

পানিতে সাধারণত জলজ উদ্ভিদ, শৈবাল, শেওলা বা ক্ষুদ্র আলজি জন্মেÑ এগুলোতে প্রাণ থাকে এবং উষ্ণতায় বা বিষাক্ততায় তা মরে যায়। পানিতে জীবাণুর জন্ম হয়। এর ফলে পানির স্বাদ ও গন্ধ নষ্ট হয়। কিন্তু জমজমের পানিতে কখনো জলজ জীবাণু বা উদ্ভিদের জন্ম হয়নি।

ফুটন্ত বা পরিশোধিত জীবাণুমুক্ত পানি রেখে দিলেও কিছুকাল পর তাতে জলজ উদ্ভিদ বা জীবাণুর সৃষ্টি হয়। কিন্তু দীর্ঘ সময় টিন, ক্যান বা বোতলে জমজমের পানি রেখে দিলেও এতে কোনো জীবাণু সৃষ্টি হয় না।

জমজম কূপের পানিতে ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম সল্টের পরিমাণ মক্কার অন্যান্য কূপের চেয়ে বেশি বলে এর পানি খেয়ে ক্লান্ত হাজীদের ক্লান্তি দূর হয়ে যায়।

শিক্ষা
মহান আল্লাহর হুকুমকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। তাঁর সন্তুষ্টির জন্য প্রয়োজনে স্ত্রী-পুত্রসহ সব কিছু ত্যাগ করতে হবে।

সর্বাবস্থায় আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট থাকতে হবে ও তার ওপর ভরসা করতে হবে।

পরিবার ও সন্তানদের জন্য দোয়া করতে হবে।

একক কিংবা যৌথ উদ্যোগে সামাজিক কাজ সম্পাদন করতে হবে।

হজরত হাজেরা আ: এর মতো সুদৃঢ় ঈমানের অধিকারী হওয়ার জন্য সবাইকে সচেষ্ট হতে হবে।

আল্লাহর আনুগত্য ও ধৈর্যের পরিণাম সর্বদা কল্যাণকরই হয়।

জমজমের পানি পান করার নিয়ম
জমজমের পানি কিবলামুখী হয়ে বিসমিল্লাহ বলে তিন নিঃশ্বাসে দাঁড়িয়ে পান করা উত্তম। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা: বলেন, ‘আমি জমজমের পানি মহানবী সা:-এর কাছে পেশ করলাম। তিনি তা দাঁড়িয়ে পান করলেন’ (বুখারি)।

জমজমের পানি পান করার দোয়া : ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে পর্যাপ্ত জীবন-উপকরণ, উপকারী জ্ঞান এবং সব রোগ থেকে নিরাময় প্রার্থনা করি।’ এর পানির দ্বারা উপকার লাভ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নিয়তের ওপর নির্ভরশীল। খালেছ নিয়তে তা পান করলে উপকার লাভ অবশ্যম্ভাবী।

বরকতময়
হজরত আয়েশা রা: জমজমের পানি সাথে করে মদিনায় নিয়ে আসতেন, আর বলতেন, রাসূলুল্লাহ সা: তা বহন করে নিয়ে আসতেন (তিরমিজি)।

শেষ কথা
পৃথিবীর বুকে সর্বোত্তম পানি হলো জমজমের পানি। সুদূর অতীত থেকে আম্বিয়ায়ে কেরাম, আল্লাহর অনুগ্রহপ্রাপ্ত বান্দারা, সিদ্দিকিন, সালেহিন প্রমুখ এই কূপের পানি পান করেছেন এবং এখনো পান করছেন। এই বরকতময় কূপ আল্লাহর রহমতে কিয়ামত পর্যন্ত অটুট থাকবে।

Source :http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/241158

21



এডিস মশাবাহিত চিকুনগুনিয়া রোগ প্রতিরোধে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) পয়ঃনিস্কাশন ড্রেনে গাপ্পি মাছ ছাড়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন।

তিনি বলেন, গাপ্পি মাছ দৈনিক ৫০টি মশার লার্ভা খেতে সক্ষম। তাই সিটি কর্পোরেশন ৪৫০ কিলোমিটার ড্রেনে প্রাকৃতিক উপায়ে মশক নিধনের এই কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। এজন্য গাপ্পি মাছের ১৫ লাখ পোনা প্রয়োজন।

রাজধানীর স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির সিদ্ধেশ্বরী ক্যাম্পাস মিলনায়তনে ‘চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধ বিষয়ক সচেতনতামূলক’ এক সেমিনারে মেয়র প্রধান অতিথির বক্তৃতা করছিলেন।

ইউনিভার্সিটির সদ্য বিদায়ী ভিসি অধ্যাপক ড. এম ফিরোজ আহমেদের সভাপতিত্বে সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির নব নিযুক্ত ভিসি অধ্যাপক মুহাম্মদ আলী নকী, পরিবেশ অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কাজী সারওয়ার ইমতাজ হাশেমী, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. গুলশান আরা লতিফা ও অধ্যাপক ড. কে মউদুদ ইলাহী।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আধ্যাপক ড. কাবিরুল বাশার এবং জাতীয় রোগতত্ত্ব নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা তৌহিদ উদ্দিন আহম্মেদ সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

সাঈদ খোকন বলেন, চিকুনগুনিয়া নিয়ন্ত্রণে এলেও বসে থাকার কোন সুযোগ নেই। গাপ্পি মাছ প্রকল্পের কার্মসূচি অব্যাহত থাকবে।

তিনি বলেন, ‘চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধ করতে হলে গনসচেতনতা এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।
চিকুনগুনিয়া রোগে আক্রান্ত মানুষকে বাসায় গিয়ে সেবা দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি এক হাজার ৫৭৭ জন রোগীকে ফিজিওথেরাপি সেবা দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, সরকারিভাবে এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে ৫১৬ জন। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যসেবাকর্মী এবং ডিসিসির কর্মীরা চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে সম্প্রতি সামাজিক সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইনও শুরু করেছেন। রিডিও, টেলিভিশনসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় এ ব্যাপারে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো হয়।

রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে ৯২টি পয়েন্টে চিকিৎসক, নার্স, সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তাদের বিশেষ মেডিকেল ইউনিট চিকুনগুনিয়া সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

অনুষ্ঠান শেষে মেয়র ইউনিভার্সিটি ক্যাস্পাসে গাপ্পি মাছের পোনা অবমুক্ত করেন।

Source: এডিস মশাবাহিত চিকুনগুনিয়া রোগ প্রতিরোধে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) পয়ঃনিস্কাশন ড্রেনে গাপ্পি মাছ ছাড়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন।

তিনি বলেন, গাপ্পি মাছ দৈনিক ৫০টি মশার লার্ভা খেতে সক্ষম। তাই সিটি কর্পোরেশন ৪৫০ কিলোমিটার ড্রেনে প্রাকৃতিক উপায়ে মশক নিধনের এই কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। এজন্য গাপ্পি মাছের ১৫ লাখ পোনা প্রয়োজন।

রাজধানীর স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির সিদ্ধেশ্বরী ক্যাম্পাস মিলনায়তনে ‘চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধ বিষয়ক সচেতনতামূলক’ এক সেমিনারে মেয়র প্রধান অতিথির বক্তৃতা করছিলেন।

ইউনিভার্সিটির সদ্য বিদায়ী ভিসি অধ্যাপক ড. এম ফিরোজ আহমেদের সভাপতিত্বে সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির নব নিযুক্ত ভিসি অধ্যাপক মুহাম্মদ আলী নকী, পরিবেশ অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কাজী সারওয়ার ইমতাজ হাশেমী, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. গুলশান আরা লতিফা ও অধ্যাপক ড. কে মউদুদ ইলাহী।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আধ্যাপক ড. কাবিরুল বাশার এবং জাতীয় রোগতত্ত্ব নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা তৌহিদ উদ্দিন আহম্মেদ সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

সাঈদ খোকন বলেন, চিকুনগুনিয়া নিয়ন্ত্রণে এলেও বসে থাকার কোন সুযোগ নেই। গাপ্পি মাছ প্রকল্পের কার্মসূচি অব্যাহত থাকবে।

তিনি বলেন, ‘চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধ করতে হলে গনসচেতনতা এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।
চিকুনগুনিয়া রোগে আক্রান্ত মানুষকে বাসায় গিয়ে সেবা দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি এক হাজার ৫৭৭ জন রোগীকে ফিজিওথেরাপি সেবা দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, সরকারিভাবে এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে ৫১৬ জন। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যসেবাকর্মী এবং ডিসিসির কর্মীরা চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে সম্প্রতি সামাজিক সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইনও শুরু করেছেন। রিডিও, টেলিভিশনসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় এ ব্যাপারে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো হয়।

রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে ৯২টি পয়েন্টে চিকিৎসক, নার্স, সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তাদের বিশেষ মেডিকেল ইউনিট চিকুনগুনিয়া সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

অনুষ্ঠান শেষে মেয়র ইউনিভার্সিটি ক্যাস্পাসে গাপ্পি মাছের পোনা অবমুক্ত করেন।
Source: http://www.dailynayadiganta.com/





22
Travel / Visit / Tour / The new source point of Dhalai River
« on: August 08, 2017, 12:24:46 PM »


ধলাই নদ। সিলেটের সীমান্তবর্তী এক নদ। ভারতের মেঘালয় রাজ্য থেকে নেমে এসেছে। কোম্পানীগঞ্জ-ভোলাগঞ্জ দিয়ে প্রবাহিত। উৎসমুখ ভোলাগঞ্জ। ধলাই নামকরণ কেমন করে হলো? ধবল থেকে কি? ধবল মানে সাদা। সিলেটে আঞ্চলিক ভাষায় সাদাকে ‘ধলা’ বলা হয়ে থাকে। শব্দের অপভ্রংশে হয়তো সাদা থেকে ধলা, নির্দিষ্টকরণ করতে শেষে যুক্ত হয়েছে ‘ই’। সোজাসাপ্টা নাম—ধলাই!

এসবই হচ্ছে যাত্রাপথের আড্ডা-কথা। নৌযাত্রা, তাই কথাও চলছিল কথার কথা নিয়ে বিরামহীনভাবে। গন্তব্য ধলাই নদের উৎসমুখ। গেল পাহাড়ি ঢলে উৎসমুখে পাঁচ একর জায়গাজুড়ে পড়েছে পলির মতো করে পাথরের স্তূপ। সাদা সাদা পাথর। দেখতে অবিকল বিছনাকান্দির মতো। সাদা পাথরের আরেক বিছনাকান্দি!

গত ২৮ জুলাই সকালবেলা নৌপথে যাত্রা। সঙ্গী প্রথমআলোর আলোকচিত্রী আনিস মাহমুদসহ কয়েকজন সংবাদকর্মী বন্ধু। সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ-ভোলাগঞ্জ মহাসড়কে সংস্কারকাজ চলছিল। গাড়ি চললেও ভোগান্তি বেশি। সময়ও লাগে বেশি। বর্ষায় সচল নৌপথে স্বস্তি নিয়ে যাতায়াত।

সিলেট সদর উপজেলার উমাইরগাঁওয়ের নয়াবাজারে নৌকাঘাট। সরাসরি কোম্পানীগঞ্জ। জনপ্রতি ভাড়া ১০০ টাকা। কোম্পানীগঞ্জ গিয়ে আছে আরও দুটি ঘাট। টুকেরবাজার ও ভোলাগঞ্জ। এঘাট থেকে ওঘাটে গেলে ভাড়া বাড়ে ৫০ টাকা। আমরা দলবদ্ধ। তাই এঘাট-ওঘাটে যেতেও বাধা নেই। ভাদেশ্বরা নদী হয়ে পাথরচাউলি হাওর দিয়ে ধলাই নদে ঢুকল নৌকা। গল্প, আড্ডা ফুরানোর আগেই এক ঘণ্টা ১০ মিনিটে পৌঁছে গেলাম কোম্পানীগঞ্জ। ডাকবাংলোতে যাত্রাবিরতি দিয়ে এবার সোজা গন্তব্য সাদা পাথরের বিছানার খোঁজে।

ধলাই নদের বুকে আছে বিরাট সেতু। সিলেট বিভাগের দীর্ঘতম এ সেতুর নিচে পলি-বালুর স্তূপ পড়েছে। সেতুর রূপ ভরা বর্ষায়ও জলতরঙ্গহীন। যাওয়ার পথে বাঁ দিকে একগুচ্ছ গ্রাম। নাম গুচ্ছগ্রাম। সেখানে ধলাই প্রমত্তা। তীর ভাঙছে দেখার মধ্যেই। ঢেউ আর পাহাড়ি ঢলের ধকল গুচ্ছগ্রামকে সইতে হয় পুরো বর্ষাকাল। যেতে যেতে ডান দিকে ব্রিটিশ ঐতিহ্যের রজ্জুপথের (রোপওয়ে) সুবিশাল স্থাপনা। এ জায়গা পাড়ি দিতেই ধলাই নদের ঘোলা জল স্বচ্ছ হয়ে দেখা দিল। যেন কোনো নীল নদ। যত এগোয় নৌকা, তত স্বচ্ছ নীল পানি। এর মধ্যে আকাশে হেলান দিয়ে থাকা পাহাড় আসে দৃষ্টিসীমায়।

দেখতে সেই বিছনাকান্দির মতোই। ঘন সবুজ পাহাড়ের ভাঁজ থেকে নেমে এসছে সরু ঝরনা। ধলাই নদের জলপ্রবাহের উৎস এই ঝরনার পানি। নৌকা ভেড়ে তীরে। না তীর নয়, পাথরের স্তূপে। পাথরগুলো সব সাদা। ছোট, মাঝারি, বোল্ডার আকৃতির পাথর। সাদার মধ্যে নিকষ কালো পাথরও আছে। কোনোটি খয়েরিও। পাথর মাড়িয়ে ঝরনার আবাহন। কোথাও হাঁটুসমান আবার কোথাও কোমরপানি। পাথরের ওপর দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে গিয়ে তৃষ্ণার্ত ধলাইয়ের মুখে।

সমতল থেকে ওপরে তাকালেই পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে মেঘের আনাগোনা। সাদা মেঘের ভেলা। বাংলাদেশ সীমানার ওপারে লুংলংপুঞ্জি। তারপর বৃষ্টিবহুল চেরাপুঞ্জি। দূরত্ব প্রায় ১০ কিলোমিটার। পাহাড়ি ঝরনা হয়ে চেরাপুঞ্জির বৃষ্টির পানি এসে পড়ে এখানে। বরফ গলার মতো ঠান্ডা পানি। বেশিক্ষণ গা ভেজালে শরীরে শীতের কাঁপন লেগে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়।

পুরো এলাকা বাংলাদেশ ভূখণ্ডের। সীমান্তের শূন্যরেখা (জিরো লাইন) হওয়ায় আছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের বিশেষ ফাঁড়ি। তাহলে নতুন করে দেখা কেন? এ প্রশ্নের জবাবটা পেলাম কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ আবুল লাইছের কাছে। এবার দৃশ্যমান হয়ে ওঠার পেছনে গল্প হচ্ছে, গেল পাহাড়ি ঢলের সময় যত্রতত্রভাবে পাথর উত্তোলন করতে দেওয়া হয়নি। পুরো এলাকা অনেকটা সংরক্ষিত ছিল। বলতে গেলে প্রশাসন আগলে রাখতে সক্ষম হয়েছে। ঢলের পানি নামার পরপরই বিছনাকান্দির মতো দেখাচ্ছে।



মানুষের দেখতে আসা শুরু সর্বশেষ ১৭ জুলাই পাহাড়ি ঢলের পর থেকে। দিন দিন দেখতে আসা মানুষের ভিড় বাড়ছে। প্রশাসনও সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড সাঁটিয়েছে। পাথরসম্পদ সংরক্ষণ ও পর্যটন সম্ভাবনার কথা। পাঁচ একর জায়গা ধলাই নদের উৎসমুখ বলে চিহ্নিত। আলাদা করে কোনো নাম নেই।

কী নামে ডাকব? হাঁটুজলে গলা পর্যন্ত ডুবিয়ে গোসল করছিলেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) আবদুল করিম চৌধুরী। তিনিও নাম খুঁজে পাচ্ছিলেন না। বলছিলেন, বিছনাকান্দির চেয়ে বড় পরিসর, পাথরগুলোও পরিষ্কার, পানিও স্বচ্ছ। সব মিলিয়ে আরও সুন্দর আরেক বিছনাকান্দি। কিন্তু কী নামে ডাকি, এটা খোঁজার কসরত ঢেকে যাচ্ছে জল-প্রকৃতির মুগ্ধতায়।

বিছনাকান্দি যাননি, কিন্তু ধলাইয়ের উৎসমুখে আরেক বিছনাকান্দি দেখতে এসেছেন সিলেটের মুক্তচিন্তার সংগঠন ‘সমাজ অনুশীলন’-এর সদস্যসচিব মুক্তাদির আহমদ। তিনিও জানালেন নাম না জানার কথা। বড় পাথরে বসে পাহাড়ের পানে তাকিয়ে আছেন মারুফ আহমদ মান্না। ছুটির সুযোগে পর্যটক হয়ে আসা সুনামগঞ্জের চাকরিজীবী এই তরুণের কাছে জানতে চাইলে তাঁরও একই অভিব্যক্তি। এযাত্রায় নাম না জানা নিয়ে ফিরতে হচ্ছে।

ফেরার পথে আবার ধলা-কথন। সাদা সাদা পাথর, সবই তো ‘ধলা ধলা’।


যেভাবে যাবেন

সড়কপথ: সিলেট শহর থেকে সালুটিকর। সেখান থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে ভোলাগঞ্জ। ভাড়া জনপ্রতি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। ভোলাগঞ্জ থেকে নৌকা ভাড়া করতে হয়। সময়ভেদে ভাড়া ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা।

নৌপথ: সিলেট শহর থেকে বাদাঘাট হয়ে উমাইরগাঁও। সেখান থেকে সরাসরি ভোলাগঞ্জের নৌকা ভাড়া করা যায়। ভাড়া ২০০০ টাকা।
 

যাত্রা মৌসুম ও সতর্কতা

পাহাড়ি ঢলের সময় যাওয়া বিপজ্জনক। শরৎ ও হেমন্তকাল হচ্ছে এখানে বেড়ানোর সবচেয়ে ভালো সময়। সংরক্ষিত এলাকা হওয়ায় প্রবেশমুখে আছে পুলিশি পাহারা। ভেতরে আছে বিজিবির বিশেষ ক্যাম্প।

Source: http://www.prothom-alo.com/life-style/article/1280751/%E0%A6%A7%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%87-%E0%A6%A8%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%89%E0%A7%8E%E0%A6%B8-%E0%A6%AE%E0%A7%81%E0%A6%96%E0%A7%87

Pages: 1 [2]