Daffodil International University

Bangladesh => Positive Bangladesh => Topic started by: najnin on March 18, 2014, 02:56:36 PM

Title: দীপ্ত পদক্ষেপে এগিয়ে চলা বাংলার নারী
Post by: najnin on March 18, 2014, 02:56:36 PM
আমার এই লেখাটি ব্রেকিং নিউজ ডট কম-এ ছাপা হয়েছে, লেখাটি এখানেও শেয়ার করলাম,

http://bit.ly/1iW82Gw

জাতি হিসেবে অনেক অনেক অনুগত, পরিশ্রমী এবং দেশপ্রেমিক হলো কোরিয়ানরা। যদিও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর রাশিয়া আর আমেরিকার টানাহেঁচড়ায় দেশটি চিরে দুই ভাগ করা হয়েছে। একপক্ষ সমাজতন্ত্রের দিকে ঝুঁকে পড়ে রাশিয়ার প্রভাবে, অন্যপক্ষ আমেরিকার প্রভাবে পুঁজিবাদী গণতন্ত্রের। এখনো উত্তর কোরিয়া হুমকি-ধমকি দেয়, শাসায় দক্ষিণ কোরিয়াকে একীভূত হয়ে যেতে। জবাবে দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারপক্ষের বা বিরোধীপক্ষের বড় বড় মানুষেরা অত্যন্ত বিনয়ের সাথে বলেন, আমরা তোমাদের সমাজতন্ত্রের সাথে যাব না। কিন্তু আচরণে উত্তর কোরিয়া বড় ভাইস্বরূপ, দক্ষিণ কোরিয়া ছোট ভাই। তাদের কথার সুর নমনীয়, কিন্তু তারা সিদ্ধান্তে অটল। আমেরিকা তাদের গড়ে দিয়েছে বেশ কয়েক বছর ধরেই। সেই সাথে করেছে খ্রিস্টধর্মের বিস্তার। হাজার হাজার কোটি টাকা তারা খরচ করে দক্ষিণ কোরিয়ার উন্নয়নে এবং ধর্মপ্রচারে। সেদেশে পুরুষেরা কাজ করে কারখানার মতো ভারী শিল্পে বা অন্যান্য জটিল ও ব্যবসাসংক্রান্ত কাজে, নারীরা বেশির ভাগ কাজ করে মূলত অফিসে ডেস্কটপ জবে, দোকানে, শপিং মলে, স্কুলে, মিডিয়ায়।

মিডিয়ায় পাকিস্তানের পরিচয় হলো- সেখানে বোমা পড়ে বেশি, তালেবানরাই মিডিয়ার শিরোনামে। অনেকটা আমাদের দেশের পত্রিকার মতো, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বোমা ফুটলেই শিরোনাম হয়, লেখাপড়া-গবেষণার বিষয়গুলো শিরোনামে আসে না। আজকাল মাদ্রাসাগুলোও একই মিডিয়া আচরণের শিকার। মালালার মতো নারীরা মিডিয়ার ফোকাসে, অবশ্য হিনা রাব্বানীও। কিন্তু পাকিস্তানের নারীরা আমাদেরও আগে সংসদে স্পিকার হয়েছে, সেই ১৯৫৩ সালেই ফাতেমা জিন্নাহ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলেন। স্বৈরশাসক হিসেবে আইয়ুবকে ভোট দেয়ার চেয়ে নারীনেত্রীকে তখন ইসলামী দলগুলোও ইজতিহাদের সহায়তায় সমর্থন জানিয়েছিল। এই তালেবান যন্ত্রণায় অস্থির দেশে বেনজীরও অনেকদিনই প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, সরকারের উচ্চপদস্থ নারী কর্মকর্তারা শিরোনাম হন খুব কমই, শিরোনাম হয় ‘মালালা’।

২০১৩ সালে পরিসংখ্যান অনুযায়ী ভারতেই সবচেয়ে বেশি বোমা ফুটেছে। কিন্তু মিডিয়ার শিরোনামে সেটি নেই, আছে ভারতের প্রচন্ড দেশপ্রেম, আমেরিকার সাথে ইগোর লড়াই। আছে ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের সংবাদ, সাবমেরিনের খবর, কাশ্মীরের খবর আসে, কিন্তু সেখানে ভারতীয় সেনারাই বীর, কাশ্মীরী স্বাধীনতাকামীরা জঙ্গী। তাদের দেশেও নারী প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তাদের দেশেও অনেক নারী যৌতুকের বলি হয়, নারীভ্রূণ হত্যা হয় অনেক অনেক বেশি। আছে টাকার বিনিময়ে গর্ভধারণ করার (সারোগেট মাদার) মতো অমানবিক নারীর মানসিক কষ্টের মতো ঘটনা। কিন্তু সেখানে কোন জীবিত ‘মালালা’ শিরোনাম হয় না। হ্যাঁ, গণধর্ষণের শিকার মৃত মেডিকেল ছাত্রী শিরোনাম হয়। তার জন্যে সারাদেশ প্রতিবাদমুখর হয়, অপরাধীদের শাস্তিও হয়।

কিন্তু খুব ভাল করে লক্ষ্য করবেন, কোন যৌতুকের শিকার, কোন ভ্রূণহত্যার নির্যাতনের শিকার জীবিত নারী ‘মালালা’ সংবাদ শিরোনাম হয় না। একসময়ে ভারতে নারীদের জীবন্ত আগুনে পুড়তেও হতো। সেখানে নিরবে, মাথানিচু করে দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে সীতার মতো সম্ভ্রান্ত পরিবারের নারীকে পাতালে চলে গিয়ে সতীত্বের পরীক্ষা দিতে হয়। কিন্তু কোন জীবিত সীতা ওয়াশিংটনের হোয়াইট হাউজে দাওয়াত পান না। কেন বলুন তো? আর আমরা বাংলাদেশে? আমরা নারী কেমন আছি? কোথায় আছি? খুব কি হতাশার চিত্র? নাকি আশান্বিত হবারও কিছু আছে?

কোরিয়ানদের মতো জাতি হিসেবে আমরা অনুগত, বিনয়ী খুব বেশি না হলেও দ্বিধাবিভক্ত মননে। বিদেশি পরাশক্তির প্রভাবে আমরাও বিভক্ত হয়েছি, সেই ৭১ এ আমরাই আমাদের মেরেছি। আমাদের ভিন্নমতের ভাইদের বাড়ি ঘর জ্বালিয়ে, পুড়িয়ে ছাড়খাড় করেছি, হত্যা করেছি, ধর্ষণ করেছি, আজো আমরা বিদেশিদের প্ররোচনায় নিজেদের হত্যা করছি, ভিন্নমতের হলেই করছি। আগুনেও জ্বালাচ্ছি ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘর, গণধর্ষণের মতো ঘটনা আমাদের দেশেও ঘটছে। ক্ষমতার লোভ আমাদের দেখানো হচ্ছে, দেখানো হচ্ছে বিত্তের লোভ, আমরা লোভের ফাঁদে পড়ছি। হত্যা করছি আমাদের দেশের মহান নেতাদের। বীরাঙ্গনা মাতাদের আমরা এখনো মুক্তিযোদ্ধা ভাবতে শিখিনি। তারা এখনো পর্যন্ত মোটাদাগে আমাদের কাছে অচ্ছুৎ। ঘটছে এসিড নিক্ষেপের মতো ঘটনা, যৌতুকের যন্ত্রণা থেকেও এখনো সেভাবে মুক্তি মেলেনি।

তবুও আশার কথা আমরা সংসদের স্পিকার পর্যন্ত গিয়েছি, এমপি হচ্ছি, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান হচ্ছি, বৃটিশ পার্লামেন্টের এমপি পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে আমাদের ক্ষমতায়ন। গার্মেন্টস শিল্পের মাধ্যমে ঘটে গেছে নিরব বিপ্লব। কৃষিতেও নারীদের অংশগ্রহণ সেই আদিকাল থেকে অনবদ্য। আছেন প্রচুর নারী স্কুল শিক্ষিকা, সেখানেও মধ্যবিত্ত শিক্ষিত শ্রেণির নারীদের নিরব বিপ্লব ঘটেছে। উদ্যোক্তা হিসেবেও আত্মপ্রকাশ ঘটছে উচ্চবিত্ত নারীদের মাঝে, যদিও এখনো সেটি ততটা বিপ্লবের পর্যায়ে যায়নি। আমরা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার প্রধান পর্যন্ত পৌঁছেছি, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ক্রিকেট খেলছি, এভারেস্ট জয় করেছি, ধীরে ধীরে দীপ্ত পদক্ষেপে এগিয়ে চলেছে বাংলার নারী কাফেলা।

লেখক: প্রভাষক ও কলামিস্ট

ব্রেকিংনিউজ/এসইউএম