Daffodil International University

Health Tips => Health Tips => Topic started by: Sahadat Hossain on October 27, 2020, 09:47:15 AM

Title: করোনাকালে শিশুর মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন
Post by: Sahadat Hossain on October 27, 2020, 09:47:15 AM
করোনা নামক একটি নতুন নামের সঙ্গে আমরা জাতিধর্মবর্ণ–নির্বিশেষে পরিচিত হয়েছি। আমরা সবাই হয়তো বুঝতে পারছি না, কীভাবে মোকাবিলা করব এই কঠিন পরিস্থিতির। শিশু থেকে বৃদ্ধ, সব বয়সী মানুষই এই পরিস্থিতির সঙ্গে মোকাবিলা করছি। যার প্রভাব পড়ছে আমাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর। পরিবর্তন ঘটছে আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায়। বড়রা নিজেদের পরিবর্তনগুলো বুঝতে পারলেও শিশুরা খাপ খাওয়াতে পারছে না।

ফলে সব বয়সী মানুষকেই আতঙ্ক বা ভয় কিছুটা হলেও কাবু করেছে। যারা আগে থেকেই মানসিক রোগে আক্রান্ত, তাদের ক্ষেত্রে এর মাত্রা অনেক গুণ বেড়ে গেছে।
 শিশুদের মধ্যে প্রধানত দুশ্চিন্তা, বিষণ্নতাসহ বিভিন্ন আচরণগত সমস্যা হয়। শিশুরা তাদের উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা, উৎকণ্ঠা বড়দের মতো করে প্রকাশ করতে পারে না। ফলে সহজেই অস্থিরতা, রাগ, বিরক্তি, ভয় পাওয়া, ঘুমের সমস্যা ইত্যাদি শিশুদের মধ্যে দেখা যায়।

শিশুরা বড়দের পাশাপাশি টিভি দেখছে, ইন্টারনেটে নানা কিছু দেখছে বটে, কিন্তু তারা অনেক তথ্য বুঝতে পারছে না। ফলে উদ্বেগ বেড়ে যাচ্ছে ওদের। তাই মা–বাবা অথবা পরিবারের অন্য বয়স্ক মানুষ বয়স উপযোগী এবং সহায়ক মনোভাব নিয়ে বিষয়গুলো আলোচনা করলে তাদের বুঝতে সহজ হবে এবং উদ্বেগের মাত্রা অনেক কমে যাবে।
 তা ছাড়া পরিবারের কেউ বা আশপাশে কেউ করোনায় আক্রান্ত হলে শিশুরা অনেক বেশি ভয় পেয়ে যাচ্ছে। শিশুদের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা ও অনিশ্চয়তা দেখা দিচ্ছে।

তারা তাদের প্রিয় মানুষদের নিয়ে আতঙ্ক অনুভব করছে এবং সঠিকভাবে তাদের অনুভূতিগুলো প্রকাশ করতে পারছে না। উদাহরণ হিসেবে আমার একটি কেস হিস্ট্রি উল্লেখ করতে পারি। একজন মা তাঁর সাত বছরের শিশুর উদ্বেগ, ঘুমের সমস্যা এবং প্রচণ্ড শ্বাসকষ্টের জন্য আমার শরণাপন্ন হন। হিস্ট্রি নিয়ে দেখা গেল, শিশুটির দাদি মারা গেছেন শ্বাসকষ্টে ভুগে। তাই শিশুটি ভয় পাচ্ছে সে–ও একই কারণে মারা যাবে।
শিশুটির অভিভাবক সঠিক সময়ে সাহায্যের জন্য নিয়ে আসায় ওর সময়মতো চিকিৎসা হয়।

এই রকম অনেক শিশু বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছে। মা–বাবা নিজেরা যেহেতু অনেক চাপের মধ্যে আছেন, তাঁরা হয়তো বাচ্চাকে যথেষ্ট মনোযোগ দিতে পারছেন না।
ইউনিসেফ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভাষ্যমতে, শিশুদের কোভিড–১৯–এর সংক্ষিপ্ত নির্দেশিকা পর্যালোচনা করে দেখা যায়:

১. শিশুকে খোলাখুলি প্রশ্ন করে জানুন সে কোভিড–১৯ সম্পর্কে কতটুকু জানে।

২. সৎ থাকুন। বিষয়টি শিশুবান্ধব উপায়ে ব্যাখ্যা করুন। তাদের প্রতিক্রিয়া খেয়াল করুন এবং উদ্বেগের মাত্রা বোঝার চেষ্টা করুন এবং তাদের প্রতি সংবেদনশীল হোন। কোনো কিছু বানিয়ে বলবেন না। তাদের জানান, মিডিয়ার সব তথ্য সঠিক নয়, বিশেষজ্ঞের মতামত জানা প্রয়োজন।

৩. ছেলেমেয়েরা কীভাবে নিজেদের এবং তাদের বন্ধুদের রক্ষা করতে পারে, তা দেখিয়ে দিন। হাত ধোয়া, হাঁচি–কাশির সময় কীভাবে কনুই দিয়ে নাক–মুখ ঢাকতে হবে তা দেখিয়ে দিন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, যাদের উপসর্গ আছে তাদের কাছে না যাওয়া এবং জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট হলে সঙ্গে সঙ্গে জানাতে বলুন।

৪. আশ্বস্ত করুন। টিভি বা অনলাইনে মন খারাপ করা ছবি দেখে বাচ্চারা খুব ভয় পেতে পারে, তখন বাচ্চাকে নিয়ে খেলাধুলা করে শান্ত করার চেষ্টা করুন। বলুন, তাকে সুস্থ রাখার জন্য বড়রা কাজ করছে। শিশুকে বোঝান সে অসুস্থ হলে তাকে ঘরে বা হাসপাতালে থাকতে হবে নিজের এবং অন্যদের ভালোর জন্য, যদিও তা বোরিং।

৫. দেখুন শিশুরা কোনো স্টিগমার শিকার হচ্ছে কি না। শিশুকে জানান যে কোভিড–১৯ জাতিধর্মবর্ণ–নির্বিশেষে যে কারও হতে পারে। মশকরা অথবা কোনো হুমকির শিকার হলে সে যেন অভিভাবককে জানায়।

৬. সাহায্যকারীদের দিকে নজর দিন। সম্মুখযোদ্ধাদের কথা শিশুদের বলুন। সহৃদয় লোকজন পাশে আছেন জানলে ওরা স্বস্তি পাবে।

৭. নিজের প্রতি যত্নশীল হোন। বাচ্চারা বড়দের ব্যবহার খেয়াল করে। তাই নিজেদর মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিন। কোনো সংবাদে উৎকণ্ঠা হলে কারও সঙ্গে শেয়ার করুন, সময় নিন। বাচ্চাকে বুঝতে দিন আপনি ঠিক আছেন।

৮. সতর্কতার সঙ্গে আলোচনা শেষ করুন। আলোচনা শেষ করার সময় বাচ্চার উদ্বেগের মাত্রা বোঝার চেষ্টা করুন বাচ্চার শরীরী ভাষা, কথা বলার ধরন এবং শ্বাস–প্রশ্বাসের স্বাভাবিকতা দেখে।

শিশুর মানসিক চাপ কমাতে করণীয়
শিশুকে যথেষ্ট সময় দিন। শিশুর কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন এবং তার মনোভাব প্রকাশ করার সুযোগ দিন। শিশুর বয়স অনুযায়ী গল্প, ছবি আঁকা বা খেলার মাধ্যমে হতে পারে।
শিশুকে মা–বাবা এবং পরিবারের সদস্যদের কাছাকাছি রাখুন।

পরিবারের নিয়মিত রুটিন বজায় রাখুন; তবে বর্তমান সময়ে কিছুটা শিথিলতার সঙ্গে। পড়াশোনার রুটিন করা, বয়স উপযোগী বাসার কাজে সাহায্য করা, খেলাধুলা করা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করা।
উদ্বিগ্ন শিশুরা বাবা–মায়ের কাছে ঘেঁষে থাকতে চায় এবং বেশি আবদার করে। মা–বাবা যেন ধৈর্যসহকারে বাচ্চার কথা শোনেন এবং বাচ্চার জায়গা থেকে বিষয়টি চিন্তা করে তাকে বুঝিয়ে দেন।

শিশুর অভিভাবকদের প্রতি যে বিষয়গুলো নজর রাখতে বলছি তা হলো, তাঁরা যেন তাঁদের শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি আরও সতর্ক ও যত্নশীল হন এবং শিশুদের ব্যবহারের প্রতি যেন একটু নজর দেন। কারণ, শিশুরা তাদের ব্যবহারের মধ্য দিয়ে তাদের সমস্যাগুলো প্রকাশ করে থাকে।

সব শেষে বলা যায়, শিশু যদি মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে যায়, তাহলে দেরি না করে অনলাইনে বা সরাসরি চিকিৎসকের সাহায্য নিন।
আমরা মানসিকভাবে সুস্থ থাকলে সব শারীরিক প্রতিকূলতা মোকাবিলা করতে সক্ষম হই। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, মনের যত্ন নিন।

লেখক: চাইল্ড অ্যান্ড অ্যাডোলেসেন্ট সাইকিয়াট্রিস্ট, সিনিয়ার কনসাল্ট্যান্ট, সাইকিয়াট্রি, এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা