Daffodil International University

Bangladesh => Heritage/Culture => Topic started by: Dr. Md. Harun-or Rashid on June 18, 2012, 12:58:50 PM

Title: মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য...
Post by: Dr. Md. Harun-or Rashid on June 18, 2012, 12:58:50 PM
‘মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য; একটু সহানুভুতি কী মানুষ পেতে পারেনা?’

আরাকানে নির্বিচারে যেভাবে গণহত্যা চলছে, তাতে বিশ্ব বিবেক নিশ্চুপ বসে থাকতে পারেনা। প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বাংলাদেশে এসব ভাগ্যাহত মানুষ আশ্রয় নিতে চাচ্ছে, তাও পাচ্ছেনা। ভিটেমাটি ছেড়ে এক কাপড়ে চলে আসা এসব হতভাগ্য মানুষ ছোট ছোট নৌকায় করে ভাসছে নাফ নদীতে। পেছনে বার্মার সেনাবাহিনীর মদদে মগ-বর্গীরা তাড়া করছে, সামনে বাংলাদেশের বিজিবি। কেউ আশ্রয় দিচ্ছেনা। পৃথিবীটাই তাদের জন্য সংকুচিত হয়ে পড়েছে।  এমন তো হবার কথা নয়। মানুষ এতটা স্বার্থপর আর আত্বকেন্দ্রীক হলে এই পৃথিবীটা টিকে থাকবে কীসের ওপর ভিত্তি করে?
আরাকান মিয়ানমারের একটি প্রদেশ হলেও সুদীর্ঘ ও দুর্গম ইয়োমা পর্বত দ্বারা মূল ভুখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন। মাত্র কয়েকটি দুর্গম গিরিপথে মিয়ানমারের সাথে আরাকানের স্থল যোগাযোগের পথ থাকলেও তা সর্ব সাধারণের জন্য সহজগম্য নয়। জলপথে মিয়ানমারের সাথে যোগাযোগ দীর্ঘ ও বিপদজনক। কিন্তু বাংলাদেশের সাথে আরাকানের যোগাযোগ অনেক সহজ। শুধু নাফ নদী, নদী পার হলেই চট্টগ্রাম। এই কারণে শত শত বছর ধরে চট্টগ্রাম তথা বাংলাদেশের সাথে আরাকানের সর্ম্পক ও যোগাযোগ ছিল। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বাংলাদেশে প্রবেশের কারণও এই সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা। আর জাতি হিসেবে তারা যেহেতু মুসলমান, এটা বাড়তি একটি টান। মায়ানমারের সৈন্যরাও তাই তাদের নিজ দেশে নিরাপত্তা দেয়ার পরিবর্তে ঠেলে দিচ্ছে বাংলাদেশে। ঠেলে দেয়া হচ্ছে তাদের ‘বাংলাদেশী’ বলে।
এটা ঠিক নয়। তারা বাংলা ভাষী, তবে আরাকানী। সেখানে ইসলামের প্রসারের ইতিহাসও অনেক পুরনো, প্রায় বাংলাদেশের সমান। সমুদ্র তীরবর্তী হবার কারণে চট্টগ্রামের মতই আরাকানেও আরব বণিকদের মাধ্যমে ইসলামের প্রসার ঘটেছিল অষ্টম শতাব্দীতে। তখন থেকেই সেখানে মুসলমানদের বসবাস করে আসছে।  সে কারণেই মুসলিম বিশ্বের সাথে আরাকানের সম্পর্ক ভালো ছিল। চট্টগ্রামও তখন আরাকানের অংশ ছিল।
১৪০৬ খ্রিস্টাব্দে আরাকানের রাজা ‘নর মিখলা’ রাজ্যহারা হয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন বাংলার তৎকালীন রাজধানী গৌড়ে। তিনি তাঁর দলবলসহ গৌড়ে থেকে গিয়েছিলেন দীর্ঘদিন। সুলতান জালাল উদ্দিন মোহাম্মদ ১৪৩০ খ্রিস্টাব্দে সৈন্য-সামন্ত, রসদ ইত্যাদি দিয়ে এক বাহিনী পাঠিয়ে তাকে ক্ষমতায় বসিয়েছিলেন। নর মিখলা ক্ষমতা ফিরে পেয়ে তাঁর রাজধানীর নাম রেখেছিলেন রোহং অথবা ম্রোহং। গৌড় থেকে যে বিশাল বাহিনী নর মিখলার সঙ্গে গিয়েছিল তারা থেকে গিয়েছিল সেই রোহং শহরে। এখানকার বাসিন্দাদের ডাকা হতে থাকে রোহিঙ্গা নামে। সিংহাসনে বসে নর মিখলা তাঁর মুসলমানি নাম রাখেন সু মন খান। আরাকান হয়ে যায় বাংলার একটি করদ রাজ্য। তখন থেকে শুরু করে পরবর্তী দুইশত বছর ধরে আরাকানী রাজারা তাদের বৌদ্ধ নামের পাশাপাশি মুসলমান নাম ধারণ করতে থাকেন এবং মুসলিম রীতিতে মুদ্রা প্রবর্তন করতে থাকেন। দিল্লী ও বাংলার শাসন ব্যবস্থার আদলে আরাকান শাসিত হতে থাকে। সেখানে বাঙালী ও মুসলিম সংস্কৃতির বিস্তার ঘটতে থাকে।

বাংলা সাহিত্যের বিকাশের সময়কালে আরাকানের রাজ্য সরকারও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন। খোদ আরাকান রাজের রাজসভায় বাংলা সাহিত্যের চর্চা হতো। আরাকানের রাজ সভায় দু’জন বাঙালী কবি বড় বেশী খ্যাতি পেয়েছিলেন। একজন দৌলত কাজী আর অন্যজন সৈয়দ আলাওল। দৌলত কাজী তাঁর বিখ্যাত ‘সতী ময়না’ কাব্যপুঁথি রচনা করেছিলেন রোহং বা রোসাং লস্কর উজির আশরাফ খানের অনুপ্রেরণায়। আর আলাওলের লেখা ‘পদ্মাবতী’, সয়ফুল মুলক বদিউজ্জামান, সিকান্দারনামা ইত্যাদি বিখ্যাত সব কাব্যগ্রন্থ রোসাঙ্গে বসেই লেখেন। তিনি পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছিলেন আরাকানের প্রধানমন্ত্রী কোরেশী মাগন ঠাকুরের। আলাওল মধ্যযুগের সর্বাধিক পঠিত ও আলোচিত কবি। মধ্যযুগে বাংলা সাহিত্যের বিকাশের সময়কালে আরাকানের নাম জড়িয়ে আছে।

আরাকানের সাথে বাংলার সম্পর্কের অবনতি ঘটে ১৬৬০ সালে। তখন সম্রাট শাহজাহানের ছেলে শাহ সুজা রাজনৈতিক কলহে পরাজিত হয়ে বাংলা থেকে আরাকানে আশ্রয় নিয়েছিলেন। আরাকান রাজ শাহ সুজাকে মক্কা চলে যেতে সহায়তা করবেন বলে প্রতিশ্রÆ’তি দিয়ে থাকতে দিয়েছিলেন। কিন্তু রাজা কথা রাখতে পারেননি। শাহ সুজার কাছে রক্ষিত সম্পদ ও তাঁর সুন্দরী কন্যাদের দিকে রাজার নজর পড়েছিল। এই দুর্বিপাকে পড়ে শাহ সুজা সপরিবারে নিহত হয়েছিলেন। তবে সুজার সাথে আগত সৈন্যরা আরাকানে থেকে গিয়েছিলেন। এঁরাও রোহিঙ্গা মুসলমানদের পুর্বপুরুষ।

আজ যে বৌদ্ধদের হামলায় আরাকানের মুসলমানরা ভিটেছাড়া, এঁরাই সেই ইতিহাস-খ্যাত ‘মগ’দের পরবর্তী বংশধর, যাদের দস্যুতার কথা বাংলার মানুষ ভুলে যায়নি। বাংলায় এদেরকে বর্গি বলা হত। ছড়ায় আছে: ‘খোকা ঘুমালো পাড়া জুড়ালো বর্গি এলো দেশে’। এরা পর্তুগীজ জলদস্যুদের সাথে গাঁটছাড়া বেঁধে দস্যতায় নেমেছিল। পর্তৃগীজদের কাছে অস্ত্র ও ট্রেনিং নিয়ে এরা ভয়াবহ রকম দস্যুবৃত্তিতে লিপ্ত ছিল। সে সময়ও তাদের আক্রমনে অনেক আরাকানী চট্টগ্রামে আশ্রয় নিয়েছিল। ১৬৬৫ খ্রিস্টাব্দে শায়েস্তা খান মগ-ফিরিঙ্গি-বর্গীদের দমন করে চট্টগ্রাম দখল করেন। তিনি চট্টগ্রামের নাম রাখেন ইসলামাবাদ। নাফ নদীর ওপারে আরাকান আলাদা রাজ্য হিসেবে থেকে যায়।

এটি বার্মার অধীনে কোনদিনই ছিলনা। ইংরেজ আমলে আরাকান যুক্ত হয় বার্মার সাথে। ব্রিটিশরা প্রতিশ্র“তি দিয়েছিল আরাকানীদের জন্য স্বতন্ত্র শাসনতান্ত্রিক এলাকা তৈরী করে দেবে, কিন্তু তারা কথা রাখেনি। ইংরেজরা উপমহাদেশ থেকে চলে গেলে আরাকান বার্মার অধীনে একটি প্রদেশ হিসেবে গণ্য হয় বটে কিন্তু আরাকানী মুসলমানদেরকে বার্মার রাজারা মেনেই নিতে পারেনি। শুধু তাই নয়, ১৯৭৪ সালে বার্মা সরকার আরাকানী নামটা পর্যন্ত বদলে রাজ্যটির নাম রাখেন রাখাইন। এখাবেই মুসলমানরা অবহেলিত ও নিগৃহীত হতে থাকে। স্বভাবতই তারা স্বাধীকার আন্দোলনের দিকে ধাবিত হয়। দেশ ভাগের পর মায়ানমারের মুসলিম নেতারা পাকিস্তানের নেতা মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর কাছে সাহায্য আশা করেছিলেন, কিন্তু জিন্নাহও কিছু করতে পারেননি। নিজ জমিতেই তারা আজও ভাগ্যাহতভাবে বেঁচে আছে। বৌদ্ধরা সুযোগ পেলে তাদের তাড়িয়ে দেয়। তারা বার্মার দিকে যেতে পারেনা নাসাকা বাহিনীর আক্রমনের কারণে। চলে আসে বাংলাদেশে।

বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সংসদে কড়াভাবে বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, তাদের আশ্রয় দেয়া হবেনা। কিন্তু দেশের জনমত বোধহয় এতটা কড়া নয়। মানুষ তো মানুষেরই জন্যে, জীবন জীবনের জন্য। জীবন নিয়ে ছোট ডিঙ্গী নৌকায় সাগরে ভাসমান একদল নারী ও শিশুকে কূলে ভিড়তে দেবোনা, এতটা অমানবিক জাতি আমরা অবশ্যই নই। আমাদের প্রিয় মাতৃভাষা বাংলার বিকাশের পেছনে যারা সহযোগিতা করেছিল, তাদেরই বংশধরেরা আজ আশ্রয় চাইছে আমাদের বিজিবি ও কোস্টগার্ডের সদস্যদের কাছে। একটু মাটি চাই তাদের, একটু বসার যায়গা। এক গ্লাস মিঠা পানি, পারলে এক সানকি ভাত। মানুষ হিসেবে এতটুকুু  সহানুভুতি তারা অবশ্যই পেতে পারে।

Title: Re: মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য...
Post by: sadique on June 19, 2012, 12:36:39 AM
sir...thanks for sharing such important issue at this time...??
...
..we helped the Rohingyas during their influx in 1978 and 1991....many of them still live in our country as refugee.....We are already over populated,,,so, it a question that how we help them???
On humanitarian grounds...we all have the sympathy for the victims.....
Title: Re: মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য...
Post by: kazal on June 19, 2012, 04:42:16 PM
Dear Sir,
Thanks for your feelings.
Title: Re: মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য...
Post by: ishaquemijee on August 11, 2012, 01:52:16 PM
Thanks for such informative post.
Title: Re: মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য...
Post by: nature on November 27, 2012, 11:17:21 PM
Nice information and thanks sir for share your feelings.
Title: Re: মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য...
Post by: fahad.faisal on January 29, 2018, 06:30:58 PM
Thanks for raising the voice.