Show Posts

This section allows you to view all posts made by this member. Note that you can only see posts made in areas you currently have access to.


Messages - Faruq Hushain

Pages: 1 2 [3] 4 5 6
31
 
চিম্বুক পাহাড়ের বাগান রাজা তোয়ো ম্রো
চিম্বুক পাহাড়ের বাগান রাজা তোয়ো ম্রো
লোকটির নাম তোয়ো ম্রো। তবে বান্দরবানে চিম্বুক পাহাড়, রুমা, থানচি থেকে ত্রিপুরা ও বম সম্প্রদায়ের মানুষেরা সবাই তাঁকে চেনে একনামে—তোয়ো মাস্টার। পাহাড়ের জুমচাষিদের যাযাবর চাষের জীবন থেকে বাগানের চাষে আসার পথপ্রদর্শক তিনি। নিজে তো বাগান করে ভাগ্য বদল করেছেনই, অন্যদেরও শিখিয়েছেন বাগান করার কৌশল।

বদলে গেছে পুরো জনপদটার চিত্র। একদিন এই জনপদে ছিল খাদ্যাভাব। ম্রোদের মতে, চিম্বুক পাহাড়ে ম্রোলংপাড়া থেকে ডিম পাহাড় ও রংরাং পাহাড় হয়ে মিয়ানমার সীমানা পর্যন্ত শুধু ম্রো জনগোষ্ঠী বসবাস করে। এখানে মারমাদের পরে দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ ম্রো সম্প্রদায়। কিন্তু শিক্ষায়-সংস্কৃতিতে অনগ্রসর হওয়ায় ১৫ থেকে ২০ বছর আগেও শতভাগ জুমচাষের ওপর নির্ভরশীল ছিল।

তোয়ো তখন ছোট। আবাসিক এক স্কুলে যেতেন। একদিন স্কুলের পাট সাঙ্গ করে তাঁকে নামতে হয় জুম চাষে। এক বছরের খোরপোশের জুম চাষ, প্রতিবছর জমি বদল। জনসংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় জুমের জমির ওপর চাপ পড়ছে। আগের মতো আর ফসল হয় না। পরিবারের আর্থিক অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছিল। এক বেলা খাবার জোটে তো আরেক বেলা জোটে না। সেই সময়ে একদিন ওয়ার্ল্ড ভিশনের কৃষক প্রশিক্ষণে জেলা শহরে এসেছিলেন। প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) উচ্চ ফলনশীল রেড লেডি পেঁপে চাষ দেখানোর জন্য তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয়। রেড লেডির উচ্চ ফলন দেখে তোয়ো ঠিক করেন, এ কাজটাতে ভাগ্য যাচাই করবেন তিনি।
২০০৫ সালে বিএডিসি থেকে রেড লেডির চারা নিয়ে বাগান শুরু করেন। শুরুতেই তিন লাখ টাকা আয় করে এলাকায় তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। তিনি নিজেও অবাক হয়েছেন বাগানে এত লাভ দেখে। ২০০৭ সালে আমবাগান শুরু করেন। আম্রপালি, মল্লিকাসহ বিভিন্ন জাতের আমের বাগান। লাভজনক হওয়ায় স্থানীয় জাতের রাংগোয়াই চাষ করেছেন বেশি। তিনি নিজে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বিএডিসি ও ওয়ার্ল্ড ভিশনে গিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এবং অন্যদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। চিম্বুক পাহাড়ে ছড়িয়ে পড়ে তাঁর নাম। তিনি নিজেও চিম্বুক ফলচাষি সমবায় সমিতি গঠন করে সড়কের আশপাশে বসবাসরত লোকজনকে বাগান চাষে উদ্বুদ্ধ করেছেন।

বান্দরবানের পাহাড়ের গল্প এখন অন্য কিছুই। চাষিরা এখানে ড্রাগন, আম, আপেল, কুল, সফেদা বাগান করেন। বাগানে সেচের জন্য স্তরে স্তরে উঁচু জায়গায় পানির ট্যাংক বসানো হয়েছে। দারুণ এ বাগান দেখতে দল বেঁধে মানুষ আসে।

সম্প্রতি সেরা কৃষি উদ্যোগ (ব্যক্তি) ক্যাটাগরিতে তীর-প্রথম আলো কৃষি পুরস্কার ২০১৮ পেয়েছেন তোয়ো মাস্টার।

32
 রাজধানী ঢাকায় অনঅনুমোদিত পার্কিংয়ের কারণে সৃষ্ট যানজট কমাতে ‘ইয়েস পার্কিং’ নামে নতুন একটি প্ল্যাটফর্ম চালু করেছে স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান বাংলা ট্র্যাক গ্রুপ। বাংলা ট্র্যাক গ্রুপ মূলত বাংলাদেশে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ এবং আইসিটি খাতের পণ্য ও সেবার জন্য খুবই পরিচিত। ইয়েস পার্কিং অ্যাপের মাধ্যমে বিভিন্ন কোম্পানি এবং ব্যক্তি ঘণ্টা ভিত্তিতে পার্কিং স্পেস ভাড়া নিতে পারবেন।

ইয়েস পার্কিং মূলত ডিজিটাল পার্কিং প্লেস হিসেবে সেবা দেবে, যার মাধ্যমে মানুষকে গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য উন্মুক্ত স্পেস খুঁজে পেতে সহায়তা করবে এবং মালিকরা তাদের পার্কিং স্পেস ভাড়া দিয়ে টাকা আয় করতে পারবেন। এই প্ল্যাটফর্মটি নগরবাসীর জন্য ডিজিটাল পদ্ধতিতে পার্কিং স্পেস শনাক্ত ও রিজার্ভ করতে সহায়তা করবে, যা রাজধানীতে পিক আওয়ারে গাড়ির যানজট কমাবে। এছাড়াও যদি কোনো পার্কিং স্পেস খালি বা অব্যবহৃত থাকে তাহলে এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে মালিকরা সেটা ভাড়া দিতে পারবেন।

বাংলা ট্র্যাক গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এম জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমরা মানুষের প্রয়োজন বিবেচনা করি এবং সচেতনতার সঙ্গে তাদের উদ্বেগের বিষয়গুলো (যেমন: নেভিগেশন ও পার্কিং স্পেস খুঁজে পেতে) সমাধান করতে পরিকল্পনা করি। আমরা স্বীকার করি যে, এসব বিষয়ে আরো অগ্রগতি হতে পারে এবং আমরা এর জন্য দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করছি। এখন পার্কিং স্পেস কোনো সমস্যাই না।’

‘ইয়েস পার্কিং অ্যাপটি প্লে স্টোর ও অ্যাপ স্টোর থেকে ডাউনলোড করা যাবে। এ ধরনের উদ্ভাবনী কাজের জন্য বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান ফরেস্টারের তালিকাভুক্ত হয়েছে বাংলা ট্র্যাক।

33
মূলত দ্বীপের নাম অনুসারে তাদের সেন্টিনেলিজ বলে ডাকা হয়। দ্বীপের বাসিন্দারা সভ্যতার দীপ্ত আলো এখনো দেখতে পারেননি৷ তাদের মধ্যে কৃষিকাজ করা বা আগুন ব্যবহারে প্রমাণ পাওয়া যায় নি। তারা খুবই রক্ষণশীল ও বাইরের জগতকে এড়িয়ে চলে।

আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে সেন্টিনেলিজসহ গ্রেট আন্দামানিজ, অনেজ, জারাওয়া চারটি উপজাতি গোত্র বাস করে। ১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহের পর ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসকরা বন্দীদের আটকে রাখার জন্য আন্দামানের স্ট্রেইট দ্বীপে কারা কলোনি স্থাপন করে। দুই বছর পর স্থানীয় গ্রেটার আন্দামালিজদের সাথে ব্রিটিশ সৈন্যবাহিনী বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়। তবে সেন্টিনেলিজরা বিচ্ছিন্ন দ্বীপের বাসিন্দা হওয়ায় বিট্রিশদের ঔপনিবেশিক শাসনের আওতার বাইরে থেকে যায়।

২০১১ সালের হিসাব অনুযায়ী সেন্টিনেলিজদের জনসংখ্যা প্রায় ৪০ জন। কাপড়বিহীন হওয়ায় বন্য লতাপাতা দিয়ে শরীর ঢেকে রাখে। তারা শিকার নির্ভর জাতি। সমুদ্র থেকে তীর দিয়ে মাছ শিকার করে। এছাড়াও বুনো শূকর, কলা আর মধু তাদের প্রধান খাবার।

বহিরাগতদের ওপর আক্রমণাত্মক মনোভাব ও বর্হিবিশ্বের সাথে সব ধরনের যোগাযোগ প্রতিরোধ করার জন্য তারা বিশেষভাবে পরিচিত।

১৯৭৪ সালে নৃতত্ববিদ ত্রিলোকনাথ পণ্ডিত দ্বীপে গিয়ে তাদের সাথে বন্ধুত্ব গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। এরই ধারাবাহিকতায় তাদের জন্য সমুদ্র সৈকতে খাবার ছড়িয়ে উপহার হিসাবে বেশ কিছু অভিযান পরিচালনা করেন।কিন্তু তাদের কাছ থেকে নতুন রোগের বিস্তারের আশঙ্কা দেখা দেওয়ায় অভিযানগুলো বন্ধ করে দেন।

১৯৮১ সালের হংকং এর জাহাজ প্রাইমরস সেন্টিনেল দ্বীপের কাছে নোংগর করলে সেন্টিনেলিজরা আক্রমণের প্রস্তুতি নেয়। এমন অবস্থায় এক সপ্তাহ পর ভারতীয় নৌবাহিনীর হেলিকপ্টার জাহাজে থাকা নাবিককে উদ্ধার করে। ২০০৪ সালের ভয়াবহ সুনামির পর ভারতীয় কর্মকর্তারা দ্বীপটির ওপর আকাশ থেকে জরিপের সময় দ্বীপের বাসিন্দারা হেলিকপ্টারটি তীর ছুড়ে বিধ্বস্ত করার চেষ্টা চালায়। ২০০৬ সালে দুই জন জেলে মাছ ধরতে দ্বীপের কাছাকাছি গেলে নির্মম ভাবে হত্যা করে।

সম্প্রতি এই বছরের নভেম্বরে এক মার্কিন পর্যটক তাদের সাথে দেখা করতে গেলে হত্যা করে তারা।

উত্তর সেন্টিনেল দ্বীপটি ভারতের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের একটি শাসিত অংশ। ভারত সরকার অনিয়মিত পর্যবেক্ষণ, ব্যতিক্রম কিছু ক্ষেত্রে দ্বীপটিতে পরিদর্শন অভিযান এবং সাধারণ জনগণকে দ্বীপটিতে যেতে নিরুৎসাহিত করে। বাস্তবে সেন্টিনেলিজরা সর্ব প্রকার নিজস্ব স্বাধীনতা ভোগ করে৷ আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে সেন্টিনেলিজ জাতি ছাড়া অন্য জাতিগোষ্ঠীর সাথে বাইরের মানুষের অনেক ভালো যোগাযোগ রয়েছে।

34
Jokes / বল্টুর মেয়ে
« on: March 30, 2019, 06:34:36 PM »
বল্টুর মেয়ে পড়ছে-

‘অ- তে অজগরটি আসছে তেড়ে। আ- তে আমটি আমি খাবো পেড়ে।’

তখন বল্টুর বউ বললো- ‘মেয়েটা একদম তার বাপের মতো হয়েছে। দেখছে অজগর আসছে। তারপরও আম খাওয়ার লোভ সামলাতে পারে না!’

35
ব্যস্ত এক ডাক্তার বিয়ে করলো এক নন-মেডিকেল মেয়েকে।
বিয়ের পর থেকেই বউ চাইত, তার স্বামী তাকে সময় দিক।
কিন্তু ব্যস্ততার জন্য স্বামী বেচারা স্ত্রীর সেই সাধ পুরন করতে প্রথম থেকেই ব্যর্থ হতো।
এ জন্য বিয়ের পরের দিন থেকেই বউ তার স্বামীর ওপরে অনেক বিরক্ত।
একদিন সকালে হাসপাতালে যাওয়ার আগে স্বামী আর স্ত্রীর মধ্যে কথা হচ্ছে............
স্ত্রীঃ এই দরজার লক টা না নষ্ট হয়ে গেছে। একটু ঠিক করে দেবে ?
স্বামীঃ কেন !! আমাকে কি তোমার তালা- চাবির মিস্ত্রি মনে হয় ?
এখন সময় নেই।
কদিন পর...
স্ত্রীঃ এই শোন না, টয়লেটের ফ্লাস টা ঠিক মতো কাজ করছে না। একটু ঠিক করে দেবে প্লিজ ??
স্বামীঃ কেন!! আমাকে কি তোমার প্লাম্বার মিস্ত্রি মনে হয়??
এখন সময় নাই।
আরও কদিন পর...
স্ত্রীঃ এই শোন না, বারান্দায় ২ টা ফুলের টব রাখতে চাচ্ছি। আমার আবার বাগান করার খুব সখ... এনে দিবে প্লিজ...
স্বামীঃ কেন ? আমাকে কি তোমার মালি মনে হয়? এখন সময় নাই।
-
এই সব বলে ডাক্তার স্বামী ডিউটি তে চলে গেল ভাব দেখিয়ে।
রাতের বেলায় বাসায় ফিরে দেখে বারান্দায় ফুলের টব, দরজায় নতুন লক আর টয়লেটের ফ্লাশটাও ঠিক হয়ে গেছে!!
এই দেখে স্বামী বলল, মিস্ত্রি ডাকছিলা নাকি??
স্ত্রীঃ না, বাড়িওয়ালা আশীষ ঠিক করে দিয়েছে !!
ও বলছে, বৌদি সব করে দিতে পারি। তবে আমার দুটো টা শর্ত আছে।
আমি বললাম কি শর্ত ?
আশীষ বলল, হয় আমাকে চিকেন ফ্রাই খাওয়াতে হবে, অথবা আমার সাথে ডেটিং এ যেতে হবে।
স্বামীঃ তুমি নিশ্চয়ই ওকে চিকেন ফ্রাই খাইয়েছ ...
স্ত্রীঃ কেন ! ! আমাকে কি তোমার কেএফসি র ওয়েটার মনে হয়???

36
ধনীর ধন চুরি করে গরিবের মাঝে বিলিয়ে দেয়া রবিন হুডের গল্পটি যে ইংল্যান্ডের উপকথার সবচেয়ে জনপ্রিয় অধ্যায়, সে বিষয়ে নেই কোনও সন্দেহ। এই গল্পের এতগুলো ভার্শন রয়েছে যে কোনটা যে সত্যিকারের মানুষটিকে ঠিকভাবে তুলে ধরে, বুঝে ওঠাই ভার। তার চেয়েও বড় কথা, রবিন হুড বলে সত্যি সত্যিই কি কেউ ছিলেন? ইতিহাসের কষ্টিপাথরে ঘষে আমরা কতটুকু জানতে পারি? আজকের লেখায় আমরা সেটাই খুঁজে বের করব, আর জানবো রবিন হুডের যত গল্প।
প্রথমেই জেনে রাখা দরকার, রবিন হুড কিন্তু রূপকথা বা মিথ নয়, বরং উপকথা বা লেজেন্ড! রূপকথা তখনই হয় যখন তার বাস্তবিক ভিত্তি থাকে না, কিন্তু উপকথা মূলত বাস্তবের কোনো কাহিনীর অতিরঞ্জিত ফুলে ফেঁপে ওঠা এক সংস্করণ। রবিন হুড সম্পর্কে ঠিক যতটুকু গল্পের মোটামুটি সকল ভার্শনই একমত সেটি হলো- রবিন আর তার দল মেরি মেন (Merry Men) বাস করতেন ইংল্যান্ডে, তাদের শত্রু ছিলেন নটিংহ্যামের শেরিফ, আর তুখোড় তীরন্দাজ ছিলেন রবিন, রুখে দাঁড়াতেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে।

রবিন হুডের ঘটনাকাল ত্রয়োদশ কি চতুর্দশ শতকের, তখনকার প্রাচীন ইংরেজিতে বানানটা কিন্তু ছিল Robyn Hode (Robin Hood নয়)। ইউরোপে তখন চলছে মধ্যযুগ। একদম গোড়ার দিককার গল্পে, রবিন একজন ছোটখাট জমিদার ছিলেন, তবে এত বড় কিছু নয় যে তাকে সবাই সম্মান করে চলবে। ১৩৭০ সালে ‘পায়ার্স প্লাওম্যান’ কাব্যে রবিনের কথা পাই আমরা প্রথমবারের মতো। কড়া খ্রিস্টান রবিনের আনুগত্য ছিল কিং রিচার্ডের প্রতি। তরবারি আর তীরধনুকে তার পারদর্শিতার কথা আছে সব গল্পেই। তার প্রেমিকা ছিলেন ম্যারিয়ান, কোনো কোনো ক্ষেত্রে ম্যারিয়ান কেবল প্রেমিকাই নন, বরং তার স্ত্রী। তার বন্ধুদের মাঝে আছে রবিনের ডান হাত লিটল জন, এক মিলারের ছেলে মাচ, উইল স্কারলেট। এরা মিলে তৈরি করে ‘মেরি মেন’। পরের গল্পগুলোতে যোগ দেন ম্যারিয়ান আর পাদ্রী ফ্রায়ার টাক।
তৃতীয় ক্রুসেড যুদ্ধের সময় রিচার্ড যখন যুদ্ধ করতে চলে গেছেন, তখন রিচার্ডের ভাই জন সিংহাসনে বসে চালাতে থাকে অত্যাচার। তার কবলে পড়েই সর্বস্বান্ত হন রবিন। এই রাজা জন আর নটিংহ্যামের শেরিফ (অর্থাৎ প্রধান পুলিশ আর কী) দুজনে ছিল রবিন হুডের প্রধান শত্রু। শেরউড ফরেস্ট বা শেরউড জঙ্গল থেকে রবিন হুডের মেরি মেন চালাতে থাকতো অন্যায়কারী রাজার বিরুদ্ধে অভিযান, আর যা যা সম্পদ কুক্ষিগত হতো সবই তারা বিলিয়ে দিত দরিদ্র প্রজাদের মাঝে। ফলাফলস্বরূপ, প্রজাদের মাঝে রবিনের জনপ্রিয়তা তখন তুঙ্গে, কিন্তু রাজা জনের দুর্নাম মুখে মুখে। এটা কী করে মেনে নিবেন জন? তাই রবিন রাজ্যের প্রধান পলাতক আসামী। গল্পের এই ভার্শনটি জনপ্রিয় হয় ষোড়শ শতকে।

অবশ্য প্রাথমিক কিছু গল্প যেমন অ্যা জেস্ট অফ রবিন হুড (A Gest of Robyn Hode), রাজার নাম এডওয়ার্ড বলা হয়েছে, সেখানে দেখা যায়, রবিনকে সেই রাজা ক্ষমা করে দেন। কিন্তু ক’দিন বাদেই রবিন আবার বনে ফিরে যান আর শুরু করেন দস্যিপনা। একদম প্রথমদিকের গল্পে অবশ্য রবিন সম্পদ বিলি করতেন না! কেবল একটি গল্পে তখন বলা হয়েছিল, এক দুর্ভাগা নাইটযোদ্ধাকে তিনি অনেক টাকা দিয়েছিলেন, আর বলেছিলেন, এ টাকা ফেরত দেয়া লাগবে না। ১৫৯২ সালে জন স্টো’র লেখা Annales of England এ আমরা প্রথমবারের মতো পাই, রবিন ডাকাতি করে ধনসম্পদ আনছেন আর বিলি করছেন।

রবিনের দলের সবাই তাকে এতই সম্মান করতো যে রাজাকে যেভাবে হাঁটু গেড়ে সম্মান দেয়া হতো সেকালে, সেভাবেই তার সামনে হাঁটু গাড়তো তারা। এমন কিন্তু নয় যে, আধুনিককালের মতো ’আমরা সবাই সমান’ মনোভাব ছিল রবিনের মাঝে। এমনও নয় যে, রবিন অতিরিক্ত কর আদায়ের বিরুদ্ধে ছিলেন। একমাত্র তিনি সর্বস্বান্ত হওয়াতেই বরং তার টনক নড়ে; তবে কি বলা যায় রবিনের কাজকর্ম নিজের স্বার্থ থেকে এসেছিল? হয়তো আসলে রবিন হুড মধ্যযুগীয় ইউরোপের হাতেম তাঈ নয়!
ইংল্যান্ডের পুরনো এক উৎসব ছিল মে ডে (May Day) এর উৎসব। ভেবে বসবেন না যেন, এটি শ্রমিক অধিকারের কোনো দিবস ছিল, বরং এটি ছিল উত্তর গোলার্ধে বসন্ত ঋতু সংক্রান্ত একটি জনপ্রিয় উৎসব। পঞ্চদশ শতকের গোড়ার সময় থেকেই এই মে ডে’তে রবিন হুড হিসেবে সেজে আসার চল ছিল, পুরো ইংল্যান্ডে না হলেও নটিংহ্যামের দিকে তো বটেই। এমনকি রানী এলিজাবেথ বা রাজা অষ্টম হেনরির সময়কাল পর্যন্তও এমনটা দেখা যেত!

১৫৯৮ সালে অ্যান্থনি মানডে দুটো নাটক লিখেন, যাতে প্রথমবারের মতো রবিনের পরিচয় দেয়া হয় হান্টিংটনের একজন আর্ল। অর্থাৎ রবিন সেখানে নিজেই একজন অভিজাত ছিলেন, রাতের বেলা হুড পরে রাস্তায় বেরিয়ে পড়তেন আর ধনসম্পদ লুট করে গরিবদের দিতেন, আর দিনের বেলা ছিলেন একজন সম্ভ্রান্ত পরিবারের সদস্য, হয়তো রাজার কাছের লোকও। উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের অনেকগুলো নাটকেই আছে রবিন হুডের কথা, যেমন ধরুন, দ্য টু জেন্টেলমেন অফ ভেরোনা, অ্যাজ ইউ লাইক ইট, হেনরি দ্য ফোর্থ ইত্যাদি।

১৮২০ সালে এসে 'দ্য মেরি অ্যাডভেঞ্চার্স অফ রবিন হুড' শিরোনামে লেখা বই তুমুল জনপ্রিয় করে রবিন হুডের উপকথাকে, বিশেষ করে বাচ্চাদের মাঝে। আর বিংশ শতকে এসে রবিন হুড নিয়ে নির্মিত হয় সিনেমা যার মাঝে সবচেয়ে জনপ্রিয় ছিল ১৯৩৮ সালের ‘দ্য অ্যাডভেঞ্চার্স অফ রবিন হুড’। তবে মজার ব্যাপার, ১৯৫৩ সালে মার্কিন মুল্লুকের ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যে পাঠ্যবইতে রবিন হুডের গল্প নিষিদ্ধ করা হয়, কারণ এতে করে শিশুরা ‘কমিউনিজম’ শিখে যেতে পারে।
১৯৭৩ সালে ডিজনি নিয়ে আসে রবিন হুড কার্টুন। আশির দশক থেকে হওয়া রূপালি পর্দার রবিন হুড ছবিগুলোতে কোনো না কোনোভাবে একজন মুসলিম চরিত্র ঢুকিয়ে দেয়া হতো রবিন হুডের দলে। এর কারণ হিসেবে দেখানো হতো চলমান তৃতীয় ক্রুসেড যুদ্ধ, যা অনুষ্ঠিত হচ্ছিল খ্রিস্টান আর মুসলিমদের মাঝে। এমনকি ২০১৮ সালের ‘রবিন হুড’ ছবিতেও লিটল জন চরিত্রকে দেখানো হয়েছে একজন সারাসেন বা মুসলিম। এ ছবিতে অনেকগুলো গল্পের মাঝে সেই গল্পটিকে বাছাই করা হয়েছে, যেখানে রবিনের ডাক পড়ে ক্রুসেডে যোগদানের জন্য, স্ত্রী ম্যারিয়ানকে রেখে তার যুদ্ধে যেতে হয়, সেখানে গিয়েই তিনি শেখেন তীরধনুক আর তরবারি চালনা। ফিরে এসে দেখেন স্ত্রীও নেই, জমিদারিও নেই। এরপর হুড পরিহিত হয়ে লর্ড রবিন পরিণত হন রবিন হুডে। এ গল্পটা প্রচলিত অধিক জনপ্রিয় গল্পের সাথে না মেলায় স্বাভাবিকভাবেই রেটিংয়ে ধ্বস নামে। ২০১০ সালের রাসেল ক্রো অভিনীত রবিন হুড ছবিতেও ভিন্ন আঙ্গিকে উপস্থাপন করা হয়েছিল রবিনকে, ফলাফল সেই একই, নিচু রেটিং। তবে ১৯৯৭ সালে শুরু হওয়া চার সিজনের ‘দ্য নিউ অ্যাডভেঞ্চার্স অফ রবিন হুড’ ছিল সবচেয়ে জনপ্রিয় রবিন হুড, কারণ এতে মোটামুটি রবিন হুড উপকথার মূলভাব অনুসরণ করা হয়েছিল, অবশ্য যোগ করা হয় জাদুবিদ্যাও। ২০০৬ সালে বিবিসি’র রবিন হুড সিরিজও বেশ দর্শকপ্রিয়তা পায়।
অনেক তো হলো বই আর রূপালি পর্দার কথা। এবার আসা যাক আসল প্রশ্নে। আসলেই কি ছিলেন রবিন হুড? নাকি নিছকই গল্প?

ইতিহাসবিদগণ একমত যে, রবার্ট মধ্যযুগে খুবই সাধারণ আর প্রচলিত নাম ছিল ইংল্যান্ডে। রবার্টেরই সংক্ষিপ্ত ডাকনাম ছিল তখন ‘রবিন’, বিশেষ করে ত্রয়োদশ শতকে- অক্সফোর্ড ডিকশনারি তা-ই বলছে। ইতিহাসবিদরা অবশ্য হুড পড়বার কারণে রবিনের নামে হুড (Hood বা Hude বা Hode) যোগ হয়েছিল, এমনটা মানেন না। বরং, হুড তখন কমন একটি সারনেম (নামের পদবী) ছিল বলেই জানান তারা, তারা হুডের ব্যবসা করতেন। এমনকি মধ্যযুগে রবিন হুড নামেই অনেকের রেকর্ড পাওয়া যায়, আর তাদের কেউ কেউ বেআইনি কাজ করে কুখ্যাতও ছিলেন। এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা বলছে, সম্ভবত লোকটির নাম ছিল উড বা কাঠ, সেটি থেকেই উচ্চারণ বিকৃত হয়ে হুড হয়ে যায়।
তবে যা-ই হোক না কেন, ধনীর অন্যায় সম্পদে গরিবের হক ছিনিয়ে আনার ব্যাপারে রবিন হুড হয়ে যান কিংবদন্তীতুল্য। তা-ই তো সাতশো বছর বাদেও আপনি আজও তাকে নিয়ে লেখা পড়ছেন!

37
সম্রাট বা রাজার মতো পদগুলো আমাদের কাছে এমন ঠেকে যে, এই পদের অধিকারী যিনি হবেন, তিনি হবেন সাধারণত মধ্যবয়সী, তার চেহারার মাঝে বুদ্ধিদীপ্ততা ও পরিপক্বতার ছাপ থাকবে, কথাবার্তায় ফুটে উঠবে জ্ঞানের ছাপ, পোশাকে দেখা যাবে আভিজাত্যের ছোঁয়া ইত্যাদি। কিন্তু, ইতিহাস বলে, মানবজাতির ইতিহাসে এমনও অনেকে রাজা কিংবা সম্রাট হয়েছেন, যাদের দাঁতও তখনও গজায়নি, এমনকি মায়ের পেট থেকে বেরিয়ে কেবলমাত্র পৃথিবীর আলো দেখা মানুষের নামও রয়েছে এই তালিকায়। তেমনই কিছু বাচ্চা-রাজার সাথেই পরিচিত হবো আমরা আজ।

ওয়ো
রাজ্য: তোরো
বয়স: সাড়ে ৩ বছর

শিরোনামে রাজার নাম মাত্র এক অক্ষরের দেখালেও পুরো নাম উচ্চারণ করতে গেলে দাত ভেঙে যাবার দশা হবে। চতুর্থ রুকিরাবাসাইজা ওয়ো নয়িম্বা কাবাম্বা ইগুরু রুকিদি- এটার হলো তোরোর রাজা ওয়োর পুরো নাম! ১৯৯২ সালের ১৬ এপ্রিল রাজা তৃতীয় প্যাট্রিক ডেভিড ম্যাথিউ কাবোয়ো ওলিমি এবং রানী বেস্ট কেমিগিসা কাবোয়োর ঘর আলো করে জন্ম নেন ওয়ো।
১৯৯৫ সালে যখন তিনি তোরো রাজ্যের সিংহাসনে বসেন, তখন তার বয়স মাত্র সাড়ে ৩ বছর! রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠানের সময় বাচ্চা রাজা বারবার সিংহাসন থেকে পিছে নেমে যাচ্ছিলেন। এত মানুষ দেখে ভয়ে দৌড় দিয়ে মায়ের কোলে আশ্রয় খুঁজছিলেন!
সে যা-ই হোক, সেদিনের সেই বাচ্চা ওয়ো কিন্তু আজও আছেন ১৮০ বছরের পুরনো তোরোর রাজা হয়েই। রাজ্যটির দ্বাদশ এ রাজার আনুগত্য স্বীকার করে নিয়েছে এর ২০ লক্ষাধিক জনতা।

পুয়ি
দেশ: চীন
বয়স: ২ বছর

আজকের বিশ্বের অন্যতম পরাক্রমশালী রাষ্ট্র চীনের সর্বশেষ এ সম্রাট বয়সের দিক থেকেও ছিলেন অনেক ছোট। ১৯০৮ সালে যখন দেশটির শাসনভার তার হাতে ন্যস্ত হয়, তখন তার বয়স মাত্র ২ বছর! রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠানের সময় তার বাবাই কোলে করে তাকে সিংহাসনের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন। বাচ্চা সম্রাট ভয় পেয়ে এলোপাথাড়ি লাথি-ঘুষি আর কান্নাকাটি করেই কাটিয়ে দেয় পুরোটা সময়। তার বয়স যখন মাত্র ছ’বছর, তখনই বিদ্রোহের কবলে পড়ে দেশটি, অবসান ঘটে রাজতন্ত্রের, প্রতিষ্ঠিত হয় ‘রিপাবলিক অফ চায়না’। ফলে ক্ষমতার স্বাদ পাবার আগেই, সম্রাট হবার মাহাত্ম্য বোঝার আগেই তাকে সবকিছু ত্যাগ করতে হয়।

তৃতীয় পোমার
দেশ: তাহিতি
বয়স: ১৭ মাস

রাজা তৃতীয় তেরি’ইতারি’আ পোমার যখন তার বাবা রাজা দ্বিতীয় পোমারের মৃত্যুর পর তাহিতির সিংহাসনে বসেন, তখন তার বয়স মাত্র ১৭ মাস!

পোমারের রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন ব্রিটিশ মিশনারি হেনরি নট। রাজাকে কোলে করে পাথরের ভিত্তিমূলের উপর গদিমোড়ানো চেয়ারে বসানো হয়। তার সামনে একটি টেবিলে রাজমুকুট, বাইবেল এবং তাহিতির আইন সম্বলিত একটি বই রাখা ছিলো। পোমারের পক্ষে শপথ নেন সিনিয়র মিশনারি ডেভিস।রাজা তৃতীয় পোমার একেবারেই অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তার রিজেন্ট তথা রাজপ্রতিভূ হিসেবে ছিলেন তার মা রানী তেরি’ইতো’ওতেয়ারি তেরে-মো-মো, খালা এবং সৎমা তেরি’ইতারি’আ আরি’ইপায়িআভাহিন।
অবশ্য খুব বেশিদিন রাজার আসনে থাকবার সৌভাগ্য জোটেনি পোমারের। মাত্র ছ’বছর বয়সে আমাশয়ে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

ষষ্ঠ হেনরি
দেশ: ইংল্যান্ড
বয়স: ৯ মাস

১৪২২ সালে হেনরি যখন ইংল্যান্ডের সিংহাসনে বসেন, তখন তার বয়স ছিলো মাত্র ন’মাস। যখন তিনি শাসনক্ষমতা নিজের হাতে তুলে নেন, ততদিনে দুটো ক্ষমতাধর পরিবারের মাঝে সিংহাসনের দখল নিয়ে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব শুরু হয়ে গিয়েছে: ল্যাঙ্কাস্টার (এটা ছিলো হেনরির পরিবার) এবং ইয়র্ক। এ যুদ্ধটি ওয়্যার অফ রোজেস নামে পরিচিতি লাভ করে। শেষপর্যন্ত ষষ্ঠ হেনরির পক্ষ অবশ্য পরাজয় বরণে বাধ্য হয়।
পরবর্তীতে তাকে বন্দী করা হয়। টাওয়ার অফ লন্ডনে ৫০ বছর বয়সে তাকে হত্যা করা হয়েছিল।

দ্বিতীয় সভুজা
দেশ: সোয়াজিল্যান্ড
বয়স: ৪ মাস

নিজের পায়ে দাঁড়াতে শেখার আগেই একটি রাজ্যের দায়িত্ব চেপে বসেছিলো রাজা দ্বিতীয় সভুজার কাঁধে। কারণ, মাত্র ৪ মাস বয়সেই সোয়াজিল্যান্ডের রাজা হয়েছিলেন তিনি। অবশ্য, চীনের শিশুরাজা পুয়ির মতো তাকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করা হয়নি। বরং পরবর্তী ৮২ বছর ধরে নিষ্ঠার সাথে নিজের উপর শৈশবে অর্পিত এ দায়িত্বটি পালন করে গেছেন তিনি।দ্বিতীয় সভুজার শাসনামলেই ১৯৬৮ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে সোয়াজিল্যান্ড। ঐ একই বছর তার তত্ত্বাবধানেই সোয়াজিল্যান্ডের জন্য একটি সংবিধান রচনা করা হয়।
দ্য গ্রেট মাউন্টেন, দ্য বুল, দ্য সান অফ দ্য শি-এলিফ্যান্ট, দ্য ইনএক্সপ্লিকেবল এবং দ্য লায়নের মতো নানাবিধ উপাধিতে ভূষিত এ মানুষটির মৃত্যুর সময় কতজন স্ত্রী ছিল অনুমান করতে পারবেন? প্রায় ১০০ জন!

শাং অফ হান
দেশ: চীন
বয়স: বড়জোর ১০০ দিন

চীনের মতো বিশাল বড় একটি দেশের ক্ষমতার সিংহাসনে আরোহণের সময় শাং অফ হানের বয়স ছিল খুব বেশি হলে ১০০ দিন! অর্থাৎ নিজের দাঁত ঠিকমতো গজাবার আগেই লাখ লাখ মানুষের অন্ন সংস্থানের দায়িত্ব এসে পড়েছিল এই বাচ্চা ছেলের কাঁধে!
সেই যা-ই হোক, শাং অফ হানের শাসনকাল কিন্তু খুব বেশিদিন স্থায়ী ছিলো না। মাত্র ১ বছর রাজত্ব করার পরই তার ১২ বছর বয়সী কাজিন তাকে ক্ষমতাচ্যুত করে সিংহাসনে বসে।

38
হজমের সমস্যা সমাধানে পেঁপে অত্যন্ত কার্যকরী।এটি ত্বকের জন্যও উপকারী।পেঁপেতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি আর ই থাকায় এটি কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করতে ভূমিকা রাখে।পেঁপের মতো এর বীজও খুবই উপকারী এবং পুষ্টিগুণে ভরপুর।পেঁপের বীজ খেলে যেসব উপকারিতা পাওয়া যায়-

১. শরীরের বিপাক প্রক্রিয়াকে স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে পেঁপের বীজ।

২. ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধে পেঁপে খুবই কার্যকরী।এই জ্বরে আক্রান্ত হলেই শরীরের প্লেটলেটের সংখ্যা কমতে শুরু করে। এই সময় নিয়মিত পেঁপে বীজ এবং পেঁপে পাতা খেতে পারলে প্লেটলেট আবারও স্বাভাবিক মাত্রায় ফিরে আসে।

৩. লিভারের সমস্যা দূর করতেও পেঁপের বীজ উপকারী। এটি খেতে পারলে দ্রুত উপকার পাওয়া যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, সামান্য পানি আর দইয়ের সঙ্গে পেঁপে বীজ মিশিয়ে নিয়মিত খেতে পারলে লিভার ভাল থাকে।

৪. নারীদের পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে তীব্র ব্যথা উপশমের জন্য পেঁপের বীজ অত্যন্ত কার্যকরী। এ সময় পেঁপে বীজের সঙ্গে ১ চামচ মধু মিশিয়ে খেতে পারলে ব্যথা অনেক কম বোধ হবে।

৫. পেঁপের বীজ আর পাতা বেটে ফেস প্যাক বানিয়ে মুখে লাগাতে পারেন। ঘনত্ব কমাতে এর সঙ্গে সামান্য পানিও মিশিয়ে নিতে পারেন। মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে ১০ মিনিট রেখে দিন। সপ্তাহে অন্তত ২ থেকে ৩ দিন এমন করতে পারলে তৈলাক্ত ত্বক আর ব্রণ-ফুসকুড়ির সমস্যা থেকে সহজে মুক্তি পাওয়া যায়।

৬. পেঁপে বীজে থাকা প্রোটিওলাইটিক নামের উৎসেচক শরীরের ক্ষতিকর নানা জীবাণু ধ্বংস করতে সাহায্য করে।

39
স্বাস্থ্যসচেতন মানুষ হয়তো শুনেছেন, ইদানীং ‘প্রোবায়োটিক’ ধরনের খাবার বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।  এসব খাবার পেটে ভালো ও খারাপ ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য বজায় রাখে। এর মাঝে আছে দই, কেফির, কিমচি, কম্বুচা ইত্যাদি। কিন্তু আপনি কি জানেন, বাসি ভাত দিয়েই তৈরি করা যায় দারুণ একটি প্রোবায়োটিক। হ্যাঁ, আমাদের চিরচেনা পান্তা ভাত খুবই উপকারী একটি ‘প্রোবায়োটিক’, পেটের জন্য তা বেশ ভালো।

ভারতীয় লাইফস্টাইল কোচ লুক কৌটিনহো এনডিটিভি অনলাইনকে জানিয়েছেন পান্তা ভাতের উপকারিতার কথা। ভাতে কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা বেশি থাকে বলে অনেকেই একে ভালো চোখে দেখেন না। কিন্তু এই শর্করাই বরং সহজে অন্ত্রে চলে গিয়ে প্রোবায়োটিক হিসেবে কাজ করতে পারে। আমাদের অন্ত্রে ভালো ব্যাকটেরিয়ার তুলনায় খারাপ ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ বেড়ে গেলে লিকি গাট, অটোইমিউন ডিজঅর্ডার, হজমে সমস্যা, পেট ফাঁপা ইত্যাদি সমস্যা দেখা যায়। প্রোবায়োটিক খেলে ভালো ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ বাড়ে ও খারাপ ব্যাকটেরিয়া কমে। এতে পেটের স্বাস্থ্য ভালো থাকে।

প্রোবায়োটিক হিসেবে দইয়ের পাশাপাশি খেতে পারেন পান্তা ভাত। তবে খেতে হবে সঠিক উপায়ে। ভাত রান্নার পর একে মাটির পাত্রে রাখুন পানিতে ভিজিয়ে। সারা রাত রাখার পর সকালে খালি পেটে এই পান্তা ভাত খেতে পারেন। এতে আপনার পেটের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে। পান্তা ভাতে থাকে বিউটাইরিক এসিড, যা প্রদাহ কমাতে পারে। তবে প্রোবায়োটিকের পাশাপাশি সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং ব্যায়ামের চর্চাটাও বজায় রাখতে হবে।

সূত্র: এনডিটিভি

40
Life Style / মুড সুইং ...
« on: March 28, 2019, 07:37:40 PM »
মৌসুমীর দুই বাচ্চা, মাত্র দেড় বছরের ব্যবধান দু’জনের। এদিকে সাহয্য করারও তেমন কেউ নেই। বাচ্চা-ঘরের কাজ সামলে তার মেজাজ যেন সব সময়ই খারাপ থাকে। কেউ ভালোভাবে কিছু জানতে চাইলেও ঠিকভাবে উত্তরও দিতে ইচ্ছে করে না মৌসুমীর।

এদিকে জয়ার সসস্যা ভিন্ন সব সময় দারুণ চটপটে হাসিখুশি মেয়েটি হঠাৎ কেমন মনমরা হয়ে যায়। তখন যেন তাকে চেনাই যায় না, মনে হয় অন্য কোথাও হারিয়ে গেছে মনে-মনে। এই সমস্যাগুলোই আসলে মুড সুইং। আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নারীদের মধ্যেই মুড সুইং দেখা যায়। তবে পুরুষদের যে একেবারেই হয় না তা কিন্তু নয়।

নারীদের মাসিকের সময়, গর্ভাবস্থা ও সন্তান জন্মের পরপরই এমন বেশি দেখা যায়। তবে মুড সুইং ঘটতে পারে যেকোনো সময়ে, যেকোনো কারণে।

মুড সুইং-এর সময় সাধারণত মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়, চট করেই বিরক্তি পেয়ে বসে এবং কখনো প্রবল দুঃখবোধ হতে থাকে। কোনো কারণ ছাড়াই হয়তো কান্না পাচ্ছে, কোথাও চলে যেতে ইচ্ছে করছে, এমন হাজারো উপসর্গ রয়েছে।

এমন হলে যা করতে হবে:
•    প্রথমেই লক্ষ্য করুন, ঠিক মতো ঘুম হচ্ছে তো!
•    পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে
•    হালকা ব্যায়াম করুন
•    খোলা জায়গায় প্রতিদিন কিছুক্ষণ হাঁটার অভ্যাস করতে পারেন
•    সময় মেনে সুস্থ জীবন যাপন করুন
•    মন খারাপ করা মুভি বা সংবাদ দেখার পরিবর্তে কমেডি বা রোমান্টিক মুভি দেখুন
•    পছন্দের খাবার খান
•    প্রকৃতির কাছে যান, দু’চোখ ও মন ভরে উপভোগ করুন প্রকৃতির রূপ
•    মন কেন বারবার খারাপ হচ্ছে যদি বুঝতে পারেন তবে বিশ্বস্ত কোনো বন্ধুর সঙ্গে শেয়ার করুন
•    পরিবার আর কাছের বন্ধুদের জানিয়ে দিন আপনার মুড সুইং করছে, তারা যেন কয়েকটা দিন আপনাকে মানসিক সাপোর্ট দেন।


সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মনোবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফারুক হোসাইন বলেন,  মুড সুইং এক ধরনের মানসিক অবস্থা বা সমস্যা। তবে প্রাথমিকভাবে একে সরাসরি মানসিক রোগ বলা যায় না। বেশির ভাগ সময়ই মুড সুইং খুব অল্প সময়ে ঠিক হয়ে যায়।
কিন্তু যদি ঠিক না হয় বা মনে করেন এটি সমস্যা করছে প্রতিদিনের জীবনে-কাজে-সম্পর্কে তাহলে দেরি না করে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

41
বাংলাদেশের ফুটবল এক বছরের মধ্যে দুটি ‘প্রথম’ দেখেছে। দুটিরই নেপথ্যে কোচ জেমি ডে। দুটিই অনূর্ধ্ব-২৩ দলের কল্যাণে। গত আগস্টে এশিয়ান গেমসে সবাইকে অবাক করে দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠে বাংলাদেশ। পরশু পাওয়া এএফসি অনূর্ধ্ব-২৩ ফুটবলে নিজেদের ১৩তম ম্যাচে এসে প্রথম জয়ের দেখা পেয়েছে। জয়টি যদিও প্রত্যাশিতই ছিল।

এশিয়ান গেমসে থাইল্যান্ডের সঙ্গে ড্রর পর কাতারের বিপক্ষে স্মরণীয় জয়। এএফসি অনূর্ধ্ব-২৩ টুর্নামেন্টে জয় এসেছে বাহরাইন ও ফিলিস্তিনের কাছে ৯ গোল খাওয়া শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। সেই জয় নিয়ে বাহরাইন থেকে কাল রাত দুইটায় বাংলাদেশ দলের ঢাকায় ফেরার কথা। ফেরার আগে দুপুরে টেলিফোনে বাংলাদেশ কোচ জেমি ডে প্রথম আলোকে বলেন, ‘একটা জয় নিয়ে ফিরতে পারাটা আমাদের জন্য দারুণ। আমি খুব খুশি। ছেলেরা ভালো ফুটবল খেলেছে।’

টুর্নামেন্টে তিন ম্যাচে ২ হার, ১ জয় বাংলাদেশের। দক্ষিণ এশিয়ার শুধু বাংলাদেশই জিতেছে এবার এই টুর্নামেন্টে। ভারত গ্রুপের দুটি ম্যাচেই হেরেছে। উজবেকিস্তানের কাছে ৩ ও তাজিকিস্তানের কাছে ২ গোলে। গ্রুপের তিনটি ম্যাচেই হার নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপের। ভুটান খেলেনি।

বাংলাদেশ ২ গোল খেয়ে ২ গোল করেছে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অবশ্য গোল হতে পারত আরও। যদিও কোচ বলেন, ‘গোলের সংখ্যার চেয়ে জয়টাই আমার কাছে বড়।’ বাহরাইনের বিপক্ষে ১ গোলে পিছিয়ে থেকে ৭০ মিনিটে মতিন মিয়া ফাঁকা পোস্টে গোল করতে পারেননি। জেমি ডে এর কারণটা জানেন, ‘বাংলাদেশ দলের গোল করার ব্যর্থতা চলতেই থাকবে, যদি লিগের অবস্থা না বদলায়।’ ক্লাবগুলো ঘরোয়া ফুটবলে আক্রমণে বিদেশি খেলোয়াড়ই বেশি রাখে। ঘরের ছেলেরা সুযোগ তেমন পায় না। এই ধারার বদল চান জেমি ডে।

তবে এএফসির এই টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের সাফল্য বেশি গোল আটকানোয়। শক্তিশালী বাহরাইন ও ফিলিস্তিনের সঙ্গে বাংলাদেশের রক্ষণ দুর্দান্ত লড়েছে। দুটি ম্যাচেই হার ১-০ গোলে। জেমি ডে বলেন, ‘এই টুর্নামেন্টে তিন ব্যাক খুবই ভালো খেলেছে (রহমত, ইয়াসিন, বাদশা)।’ তাঁর চোখে ধরা পড়ছে বড় পরিবর্তন, ‘১২ মাসে আমরা কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পেরেছি। এশিয়ান গেমসের দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠা, এএফসির টুর্নামেন্টে প্রথম জয়, দুটিকেই আমি ইতিহাস বলব। জাতীয় দল আটটি আন্তর্জাতিক ম্যাচের ৪টি জিতেছে। যথেষ্ট ভালো ফল।’


জেমি ডে বাংলাদেশ ফুটবল দলের কোচ। ফাইল ছবিজেমি ডে বাংলাদেশ ফুটবল দলের কোচ। ফাইল ছবি
বাংলাদেশের ফুটবল এক বছরের মধ্যে দুটি ‘প্রথম’ দেখেছে। দুটিরই নেপথ্যে কোচ জেমি ডে। দুটিই অনূর্ধ্ব-২৩ দলের কল্যাণে। গত আগস্টে এশিয়ান গেমসে সবাইকে অবাক করে দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠে বাংলাদেশ। পরশু পাওয়া এএফসি অনূর্ধ্ব-২৩ ফুটবলে নিজেদের ১৩তম ম্যাচে এসে প্রথম জয়ের দেখা পেয়েছে। জয়টি যদিও প্রত্যাশিতই ছিল।

এশিয়ান গেমসে থাইল্যান্ডের সঙ্গে ড্রর পর কাতারের বিপক্ষে স্মরণীয় জয়। এএফসি অনূর্ধ্ব-২৩ টুর্নামেন্টে জয় এসেছে বাহরাইন ও ফিলিস্তিনের কাছে ৯ গোল খাওয়া শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। সেই জয় নিয়ে বাহরাইন থেকে কাল রাত দুইটায় বাংলাদেশ দলের ঢাকায় ফেরার কথা। ফেরার আগে দুপুরে টেলিফোনে বাংলাদেশ কোচ জেমি ডে প্রথম আলোকে বলেন, ‘একটা জয় নিয়ে ফিরতে পারাটা আমাদের জন্য দারুণ। আমি খুব খুশি। ছেলেরা ভালো ফুটবল খেলেছে।’

টুর্নামেন্টে তিন ম্যাচে ২ হার, ১ জয় বাংলাদেশের। দক্ষিণ এশিয়ার শুধু বাংলাদেশই জিতেছে এবার এই টুর্নামেন্টে। ভারত গ্রুপের দুটি ম্যাচেই হেরেছে। উজবেকিস্তানের কাছে ৩ ও তাজিকিস্তানের কাছে ২ গোলে। গ্রুপের তিনটি ম্যাচেই হার নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপের। ভুটান খেলেনি।

বাংলাদেশ ২ গোল খেয়ে ২ গোল করেছে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অবশ্য গোল হতে পারত আরও। যদিও কোচ বলেন, ‘গোলের সংখ্যার চেয়ে জয়টাই আমার কাছে বড়।’ বাহরাইনের বিপক্ষে ১ গোলে পিছিয়ে থেকে ৭০ মিনিটে মতিন মিয়া ফাঁকা পোস্টে গোল করতে পারেননি। জেমি ডে এর কারণটা জানেন, ‘বাংলাদেশ দলের গোল করার ব্যর্থতা চলতেই থাকবে, যদি লিগের অবস্থা না বদলায়।’ ক্লাবগুলো ঘরোয়া ফুটবলে আক্রমণে বিদেশি খেলোয়াড়ই বেশি রাখে। ঘরের ছেলেরা সুযোগ তেমন পায় না। এই ধারার বদল চান জেমি ডে।

তবে এএফসির এই টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের সাফল্য বেশি গোল আটকানোয়। শক্তিশালী বাহরাইন ও ফিলিস্তিনের সঙ্গে বাংলাদেশের রক্ষণ দুর্দান্ত লড়েছে। দুটি ম্যাচেই হার ১-০ গোলে। জেমি ডে বলেন, ‘এই টুর্নামেন্টে তিন ব্যাক খুবই ভালো খেলেছে (রহমত, ইয়াসিন, বাদশা)।’ তাঁর চোখে ধরা পড়ছে বড় পরিবর্তন, ‘১২ মাসে আমরা কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পেরেছি। এশিয়ান গেমসের দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠা, এএফসির টুর্নামেন্টে প্রথম জয়, দুটিকেই আমি ইতিহাস বলব। জাতীয় দল আটটি আন্তর্জাতিক ম্যাচের ৪টি জিতেছে। যথেষ্ট ভালো ফল।’

বাহরাইনে দারুণ ফুটবল খেলেছেন যুবারা। সৌজন্য ছবিবাহরাইনে দারুণ ফুটবল খেলেছেন যুবারা। সৌজন্য ছবিকম্বোডিয়াকে জাতীয় দল তাদেরই মাঠে ফিফা প্রীতি ম্যাচে কদিন আগে হারিয়ে এসেছে ১-০ গোলে। তারপর বাহরাইনে অনূর্ধ্ব-২৩ দলের প্রশংসনীয় খেলা। জেমি ডের অধীনে ফুটবলারদের আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। বিপলু, রবিউল, সুফিলরা ওপরে গতি আর ফিটনেস কাজে লাগিয়েছেন। অন্যদের ফিটনেসও ভালো। তাই ৯০ মিনিট লড়াই করতে শিখেছেন। আরামবাগের কোচ মারুফুল হকের কাছে এটা ‘অতুলনীয়’। বাংলাদেশ দলের খেলাও ভালো লেগেছে তাঁর, ‘খেলোয়াড়দের সামর্থ্য অনুযায়ী কোচ পরিকল্পনা নিয়ে সেটা বাস্তবায়নও করেছেন। শক্তিশালী প্রতিপক্ষকে আটকাতে “ব্লক” তৈরি করে তারপর প্রতি আক্রমণে গেছেন, যেহেতু ওপরে গতিময় ফুটবলার আছে।’ মারুফ বলেন, ‘বাহরাইনে প্রথম দুটি ম্যাচ দেখে মনে হয়েছে বাংলাদেশের ফুটবলারদের গতি ও ফিটনেস ঠিক আছে। সমস্যা টেকনিক্যাল সামর্থ্যে।’

জেমি ডে এটিকেই ভবিষ্যতের জাতীয় দল বলেন। তাই আরও আন্তর্জাতিক ম্যাচ চান। তবে সামনের পরিকল্পনা কী তা জানেন না। দেশে এসে ফেডারেশনের সঙ্গে বসতে চান। সেই বসাটা অর্থপূর্ণ হলেই ভালো।

42
৩০শে মার্চ, ১৯৭১। ভোরবেলার হালকা আলোয় ঘুমন্ত কুষ্টিয়া শহর পরিষ্কার হয়ে ওঠছে। মাত্র ৫ দিন আগেই এখানে এসে হাজির হয়েছে হানাদার বাহিনী। কুষ্টিয়া জেলা স্কুল পাকিস্তানীদের প্রধান ঘাঁটি। ২৭তম বেলুচ রেজিমেন্টের একটি কোম্পানি পজিশন নিয়েছে। নিশ্চিত তারা। স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন পায়ে দলিয়ে ফেলতে পেরেছে। পিষে ফেলতে পেরেছে বাঙালিদের।

হঠাৎই গগণবিদারী চিৎকার! “জয় বাংলা!” সাথে সাথেই ঝাঁক ঝাঁক বুলেট ছুটে আসছে পাক বাহিনীর অবস্থানের দিকে। হাজার খানেক কণ্ঠের জয় বাংলা ধ্বনিতে বিভ্রান্ত পাক সেনারা। শত্রু আসলে কত? তাহলে পেছনের গল্প শোনা যাক এর।

বাংলাদেশকে পদানত করতে পাকিস্তানের করা পরিকল্পনার বাস্তবায়ন শুরু হয়ে গেছে ২৫শে মার্চ রাত থেকেই। সেদিন রাতেই এক কোম্পানি সৈন্য হাজির হয় কুষ্টিয়ায়। আগে থেকেও ছিল অল্প কিছু সেনা। ওয়্যারলেস স্টেশন এবং কোতোয়ালি থানায় অবস্থান নিয়েছে তারা। তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছে মেজর শোয়েব। এই দলের কাজ যুদ্ধক্ষেত্রে সবার আগে পৌঁছানো এবং অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা। পরে ফিরে আসা এবং প্রয়োজন হলে মূল দলকে সহায়তা করা। এ ধরনের দলে অস্ত্র থাকে প্রচুর।

এদিকে ইপিআর-এর মেজর আবু ওসমান (পরে লেফটেন্যান্ট কর্নেল) ১ মাস আগেই বাংলাদেশে এসে দায়িত্ব নিয়েছেন। ২৫শে মার্চ তিনি তার অধীনস্ত বাংলাদেশি অফিসার ক্যাপ্টেন আযম চৌধুরীকে নিয়ে খুলনা থেকে পালিয়ে চুয়াডাঙ্গা আসেন। এলাকার গণ্যমান্য লোকদের নিয়ে আলোচনায় বসা হলো। পাক বাহিনীকে সর্বাত্মক বাঁধা দিতে হবে। সবমিলে ৬০০ জন সৈনিক, ব্রিটিশ আমলের থ্রি নট থ্রি রাইফেল, কয়েকটা মেশিনগান, গ্রেনেড আর ৬টা মর্টার- অস্ত্র বলতে এগুলোই।

স্থানীয় পুলিশ এবং কয়েকজন ছাত্র দলে ভিড়ল। স্থানীয় ২ জন চিকিৎসক নিলেন মেডিক্যাল টিমের দায়িত্ব। অস্ত্র কম তাতে কি? দেশপ্রেমের তো অভাব নেই। যে যেভাবে পেরেছে এগিয়ে এসেছে। স্থানীয় টেলিফোন বিভাগ পোড়াদহ মাঠে একটা টেলিফোন এক্সচেঞ্জ স্থাপন করে দিল। অন্যান্য যোদ্ধাদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করা হলো। আশেপাশের এলাকা থেকে আরো কিছু সেনা এসে যোগ দিল। মেহেরপুর মহকুমার প্রশাসক তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী সিপাহী জনতার সমন্বয়কারীর দায়িত্ব নেন।
মেজর আবু ওসমান এবার চূড়ান্ত পরিকল্পনা করতে বসেন। অস্ত্রের জোরে তার দলটি তেমন কিছুই না। নিমেষেই উড়ে যেতে পারে। তাই পাক বাহিনীকে হারাতে হবে অন্য কৌশলে।

আক্রমণ শুরুর সাথে সাথেই যশোরে সাহায্য চাইতে পারে পাক বাহিনী। হাইওয়েতে ১৫০ থেকে ২০০ জন সেনা সড়ক পাহারা দেবে। এ দিক থেকে নতুন করে যেন পাক সাহায্য আসতে না পারে সেটা নিশ্চিত করবে তারা।

কুষ্টিয়া থেকে মনযোগ সরাতে চুয়াডাঙ্গা সদর আক্রমণ করতে পারে পাক বাহিনী। বিশখালি, কালীগঞ্জ, কোঁটাচাঁদপুরে সবমিলে ৪ কোম্পানি সেনা প্রতিরক্ষায় নিয়োজিত করা হয়। উদ্দেশ্য যশোর বা অন্য কোনো দিক থেকে আক্রমণ আসলে যেন কুষ্টিয়া আক্রমণ না থামে।

ক্যাপ্টেন আযম তার দল নিয়ে যাবে সার্কিট হাউজের কাছাকাছি। সেখান থেকে জিলা স্কুলের মূল ঘাঁটিতে হামলা হবে। সুবেদার মুজাফফরের নেতৃত্বে এক দল পুলিশ লাইনে আক্রমণ করবে। সুবেদার নায়েক মনিরুজ্জামানের নেতৃত্বে ওয়্যারলেস স্টেশনে হানা দেবে আরেকটি দল।
পুরো সময়টাতেই 'Element of surprise' এর দিকে জোর দেন মেজর। সম্পূর্ণ গোপনীয়তা বজায় রেখে চমকে দিতে হবে পাক বাহিনীকে। কিন্তু এদিক ওদিকে প্রতিরক্ষার জন্য সেনা রেখে ফ্রন্ট লাইনে সেনা সংখ্যা হয়ে দাঁড়ায় খুবই কম। অস্ত্রও নগণ্য। এই সমস্যার কথা ভেবে আগেই মেজর ওসমান দুর্দান্ত এক পরিকল্পনা করেছিলেন। অগ্রগামী ৩ দলের পেছনে থাকবে কয়েক শত সাধারণ জনতা। যাদের কাজ একটাই, জয় বাংলা ধ্বনি তুলে শত্রুকে বিভ্রান্ত করা। অপারশনের নাম দেওয়া হয় 'অপারেশন ফার্স্ট লেগ'।

২৯শে মার্চ আক্রমণ করার কথা থাকলেও দুঃসংবাদ পাওয়া গেল। সুবেদার মুজাফফরের দল জায়গামতো পৌঁছাতে পারেনি। তার দলের একটি গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়েছে। আক্রমণ একদিন পিছিয়ে যায়।

৩০শে মার্চ সকাল বেলা। সারা রাত পাহারা দিয়ে তন্দ্রাচ্ছন্ন পাক গার্ডরা। হঠাৎ তাদের সবগুলো পজিশনে একসাথে হামলা শুরু। Element of surprise-এ মুক্তিবাহিনী আগেই এগিয়ে গেল যুদ্ধে। তারপর মেজর ওসমান তার মূল অস্ত্র ব্যাবহার করার নির্দেশ দিলেন। আকাশ কাঁপানো স্লোগান! জয় বাংলা! পাক সেনারা ধন্দে পড়ে যায় যে মুক্তিবাহিনীর সংখ্যা আসলে কত? যে সময়টায় তারা কোনো আক্রমণই আশা করেনি সে সময় এমন আক্রমণে চমকে যায় তারা।

এলিমেন্ট অব সারপ্রাইজের পর এবার মেজর ওসমান Deception-এর মারপ্যাঁচে জিতে যান। যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রুকে ধোঁকা দিতে পারা সাফল্যের নির্ণায়ক হয়ে দাঁড়ায়। পাক সেনারা জেলা স্কুলের মূল ঘাঁটিতে এক হতে চেষ্টা করে। কিন্তু প্রচেষ্টা বিফলে যায়। বিভ্রান্ত সেনারা দ্রুতই মুক্তিবাহিনীর শিকারে পরিণত হয়। পুলিশ লাইনের পাশের একটা তিন তলা বাড়ির ছাদে মেশিনগান স্থাপন করেছিল মুক্তিবাহিনী। এই পজিশন গুড়িয়ে দিতে পাক বাহিনী একটা রিকয়েললেস রাইফেল স্থাপন করার চেষ্টা করে। সেটা চোখে পড়তেই কয়েকটি মর্টার নিক্ষেপ করে রিকয়েললেস রাইফেলকে অকেজো করে ফেলে মুক্তিবাহিনী।
বিকেলের আগেই জিলা স্কুল ছাড়া সব পজিশন মুক্তিবাহিনী দখল করে নেয়। পর দিন রাত পর্যন্ত থেমে থেমে যুদ্ধ চলে। কিন্তু ওই ঘাঁটির বেশি কাছে যাওয়া যাচ্ছে না। প্রচুর অস্ত্রের জোরে মুক্তিবাহিনীকে ঠেকিয়ে রাখছে পাক বাহিনী। মেজর শোয়েবও সেখানে। এরই মধ্যে যশোরে আবার সাহায্য চায় তারা। কিন্তু যশোরে থাকা পাকবাহিনী জানত যে কুষ্টিয়া আসার সব রাস্তায় মুক্তিবাহিনী পাহারা দিচ্ছে। তাই তারা ঝুঁকি নিতে সাহস করেনি। এদিকে মেজর শোয়েবকে জানানো হয় নতুন করে সাহায্য পাঠানো সম্ভব নয়। মুক্তিবাহিনীর বেতারেও এই বার্তা ধরা পড়ে। উৎসাহ বেড়ে যায় সবার। অস্ত্রের জোরে ঘাঁটির কাছাকাছি ভিড়তে না পারলেও চারদিক থেকে ঘেরাও করে রাখা হয় মেজর শোয়েবের বাহিনীকে।

গভীর রাত, ঘাঁটি থেকে ৪টি গাড়ি বের হয়ে আসে। গুলি করতে করতে মুক্তিবাহিনীর ঘেরাও ভেঙ্গে ঝিনাইদহের দিকে পালিয়ে যায়। পিছু ধাওয়া করার প্রয়োজন মনে করে না কেউই।

কিছু দূরেই একটা ব্রিজ ভেঙ্গে রেখেছিল গেরিলারা। বাঁশের বেড়া বসিয়ে তার উপর রং করে পিচ ঢালা রাস্তার মতো বানিয়ে রাখা হয়েছিল। দুটো গাড়ি তীব্র গতিতে এসে ব্রিজের নিচে পড়ে যায়। লুকিয়ে থাকা একদল মুক্তিযোদ্ধা অ্যামবুশ করে। বেঁচে যাওয়া পাকসেনারা এদিক সেদিক পালিয়ে যায়। মেজর শোয়েব নিহত হয়।

সবমিলে পাক বাহিনীর একটা ব্যাটিলিয়ন প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। ধরা পড়ে এক অফিসার এবং কয়েকজন সেনা। প্রচুর অস্ত্র দখলে আসে। মুক্তিবাহিনীর ৪ জন শহীদ হন। ৫টি রিকয়েললেস রাইফেল, ৫০টির বেশি মেশিনগান, ৯০টি রাইফেল, ২৪টি গাড়ি ও পিক আপ এবং প্রচুর গোলা বারুদ মুক্তিবাহিনীর দখলে আসে।

পর্যাপ্ত অস্ত্র না থাকলেও পরিকল্পনা এবং দেশপ্রেমের সমন্বয়ে যে লড়াই করা যায় এই যুদ্ধ তারই প্রমাণ। বাংলাদেশ সরকার গঠন হওয়ার পর মেজর আবু ওসমান ৮ নং সেক্টরের কম্যান্ডারের দায়িত্ব পান। কুষ্টিয়ার এই যুদ্ধ ছিল সামরিক শক্তি এবং জনতার মিলিত প্রতিরোধের এক অভাবনীয় উদাহারণ। মুক্তিবাহিনীর পেছনে যেভাবে লাঠি, দা ইত্যাদি নিয়ে মানুষ এগিয়ে এসেছিল তা বাঙ্গালির স্বাধীনতার স্পৃহাকে আরো একবার প্রমাণ করে দেয়।

https://roar.media/bangla/main/liberation-war/operation-first-leg-1971/

43
৩৪ বছর বয়সে বিশ্বকাপের এক বছর আগেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলে দিচ্ছেন এবি ডি ভিলিয়ার্স। আজ জাতীয় দল থেকে অবসর নিয়েছেন ওয়ানডে ক্রিকেটে দ্রুততম সেঞ্চুরির মালিক। নিউ ওয়ান্ডারার্স স্টেডিয়ামে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের শেষ টেস্টে ৬৯ ও ৬ রানের ইনিংস দুটিই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ডি ভিলিয়ার্সের সর্বশেষ অবদান হয়ে থাকল।

নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টে ৯৫ সেকেন্ডের একটি ভিডিও শেয়ার দিয়েছেন এবি। সেখানেই নিজের বিদায়ের কারণটা জানিয়েছে, ‘ক্লান্তি’। এ ছাড়া নিজের সিদ্ধান্তটা ব্যাখ্যা করেছেন সবার সুবিধার্থে। বিদায় বেলায় যা বলেছেন ডি ভিলিয়ার্স—

‘আমি সব আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এই মুহূর্ত থেকেই। ১১৪ টেস্ট, ২২৮ ওয়ানডে ও ৭৮টি টি-টোয়েন্টি খেলার পর অন্যদের সময় এসেছে দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার। আমি আমার কাজটা করেছি, সত্যি কথা বলতে আমি ক্লান্ত।

‘এটা খুব কঠিন সিদ্ধান্ত। আমি অনেক দীর্ঘ সময় নিয়ে এ নিয়ে ভেবেছি এবং ভালো ফর্মে থাকা অবস্থাতেই বিদায় নিতে চাচ্ছি। ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দারুণ দুটি সিরিজ জয়ের পর, আমার মনে হচ্ছে সরে দাঁড়ানোর এটাই সঠিক সময়।

‘দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে নির্দিষ্ট কোনো ফরম্যাট বেছে নেওয়া কিংবা বেছে বেছে নির্দিষ্ট কোনো সিরিজ খেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হতো না। যদি সবুজ-সোনালির হয়ে খেলতেই হয়, তবে সব খেলব, নয় তো একদম কিছু না। এত বছর ধরে আমাকে সমর্থন দেওয়ার জন্য দক্ষিণ আফ্রিকান বোর্ডের কোচ ও স্টাফদের কাছে কৃতজ্ঞ। ক্যারিয়ারজুড়ে যত সতীর্থ পেয়েছি, তাদের সবচেয়ে বেশি ধন্যবাদ। এতগুলো বছর যে সমর্থন পেয়েছি, সেটা না থাকলে আমি অর্ধেক (বর্তমান পর্যায়ের) ক্রিকেটারও হতে পারতাম না।

‘এটা অন্য কোথাও অর্থ উপার্জনের বিষয় নয়, এটা হলো ক্লান্তির ব্যাপার। এ ছাড়া আমার মনে হচ্ছে, এটাই সঠিক সময় সরে যাওয়ার। সবকিছুই একসময় না একসময় শেষ হয়। দক্ষিণ আফ্রিকা ও বিশ্বের সব ক্রিকেট ভক্তদের বলছি, আপনাদের দয়া ও ঔদার্যের জন্য ধন্যবাদ। আর আজ আমার ব্যাপারটা বোঝার জন্য ধন্যবাদ।

‘আমার দেশের বাইরে খেলার কোনো ইচ্ছা নেই। সত্য হলো, আমি ঘরোয়া ক্রিকেটে টাইটানসের হয়ে খেলা চালিয়ে যেতে চাই। ফাফ ডু প্লেসি ও প্রোটিয়াদের সবচেয়ে বড় সমর্থক হয়েই থাকব আমি।’

44
কালো পোশাক পরিহিত একঝাঁক নারী ঘুরে বেড়াত রাজস্থানময়। কোথাও কেউ মারা গেলে বা মারা যাবে এমন সম্ভাবনা থাকলে আগে থেকে ভাড়া করে রাখা হতো তাদের। তাদের প্রধান কাজ মরা বাড়িতে গিয়ে মাতম করা, বুক চাপড়ে কাঁদা, গাল বেয়ে অশ্রুধারা গড়িয়ে পড়তে দেয়া। ভুল করেও সে চোখের পানির একটি কণাও মুছত না তারা, এই প্রথম কারো মৃত্যুতে কাঁদছে না তারা, শেষ কান্নাও নয় এটি। গোটা বাড়িতে শোকাবহ পরিবেশ তৈরি করতেই তো তাদের ভাড়া করে আনা! এই প্রথা চলেছে শত শত বছর, এখনো চলছে রাজস্থানের বিভিন্ন অজপাড়াগাঁয়ে।

মৃত ব্যক্তির বাড়িতে গিয়ে শোকের মাতম করা এই নারীরা সাধারণভাবে পরিচিত ‘রুদালি’ নামে। তাদেরকে বলা হয় ‘প্রফেশনাল মৌনার’ বা পেশাদার বিলাপকারী। বিলাপ করেই জীবিকা নির্বাহ করে তারা। পরনে থাকে কালো পোশাক, যমের পছন্দের রঙ নাকি কালো। তাই মৃত্যুদূতকে খুশি করতে তার পছন্দের সাজেই নিজেদের সজ্জিত করে তারা। সমাজের একেবারে নিচু জাত থেকে তুলে আনা এই রুদালিদের বেশ কিছু সমাজে বিয়ে করারও নিয়ম নেই। নিজের পরিবারের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লে লোকের মৃত্যুতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাঁদবে কে? চেনা নেই, জানা নেই, রক্তের সম্পর্ক নেই; কেবল অর্থের বিনিময়ে মানুষের বাড়িতে গিয়ে আক্ষরিক অর্থে লোক দেখিয়ে কাঁদার জন্যই যেন জন্ম হয়েছে তাদের।

রুদালিদের এই পেশা আমাদের কাছে অর্থহীন মনে হতেই পারে, কিন্তু রাজস্থানের পশ্চাৎপদ কিছু জনগোষ্ঠীর কাছে এটিই স্বাভাবিক, নির্মম সত্য। তাদের ঐতিহ্যের সাথে মিশে আছে রুদালিদের অস্তিত্ব। সমাজের উচ্চশ্রেণীর নারীরা অর্থাৎ জমিদার বা ঠাকুর কন্যারা, বাড়ির বউরা বাইরের লোকের সামনে কাঁদবে বা নিজেদের আবেগ প্রকাশ করবে, সে আবার কেমন কথা? কাজেই তারা হাবেলির অন্দরমহলে বন্দী থেকে, লম্বা ঘোমটার আড়ালে দু’ফোঁটা চোখের পানি ফেলুক আর না ফেলুক তাতে মৃত ব্যক্তির কিছু আসে যায় না। কিন্তু সমাজের সামনে নিজের প্রভাব প্রতিপত্তি জাহির করতে গেলেও তো মরার সময় কান্নাকাটি করার জন্য কয়েকজন লোক লাগে। বড়লোকের সেই চাহিদা থেকে জন্ম নেয়া একটি সমাজের নাম ‘রুদালি’।

কলকাতার সাংবাদিক এবং লেখক নিধি দুগার কুন্দালিয়া তার ‘দ্য লস্ট জেনারেশন’ বইটিতে প্রায় বিলুপ্ত কিছু প্রথা বা পেশার কথা উল্লেখ করেছেন। অবধারিতভাবে সেখানে বাদ যায়নি রুদালিদের কথাও। রাজস্থানের এক তথাকথিত উঁচু শ্রেণীর পুরুষ নিধিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন-

    “আমাদের রাজ পরিবারের কেউ মারা গেলে তো কান্নার জন্য একজন লোক চাই, তা-ই না? নারীদের মস্তিষ্ক বিধাতা বানিয়েছেনই এমন করে, যাতে তারা দুঃখ-কষ্টের অনুভূতিগুলো ভালো করে বুঝতে পারে। তাদের মন খুবই নরম। অন্দরমহলের মেয়েদের তো আমরা বাড়ির বাইরে বের হতে দিতে পারি না। পরপুরুষের সামনে গিয়ে তারা কাঁদলে আমাদের পরিবারের মাথা নিচু হয়ে যাবে। স্বামী মরুক আর বাবা মরুক, আগে তাদেরকে নিজেদের মর্যাদাটা বুঝতে হবে। কাজেই তাদের হয়ে কান্নার কাজটা করে দেয় নিচু জাতের মহিলারা, রুদালিরা। রুদালিদের কান্নায় পুরো গ্রাম বুঝতে পারে তাদের কত বড় ক্ষতি হয়ে গেছে। সবার দুঃখের প্রতিনিধিত্ব করতেই ডেকে আনা হয় রুদালিদের।”

রুদালিদের কাজে নিয়োগ করার ক্ষেত্রে লিঙ্গ, জাত, শ্রেণী, অর্থনৈতিক অবস্থা ইত্যাদি আগে বিবেচনা করা হয়। যদি কেউ নিচু জাতের হয় আর তার অর্থের খুব বেশি দরকার আছে বলে জমিদার শ্রেণী মনে করে, তাহলে জোর করেও অনেককে রুদালি হিসেবে ধরে নিয়ে যাওয়ার নজির আছে। তাদের চোখের পানি এমনই একটি জিনিস, যা খুব সহজে টাকার বিনিময়ে কিনে নিতে পারে সামন্তপ্রভুরা। মাঝে মাঝে তাই কেউ মারা গেলে স্বস্তির নিঃশ্বাসই ফেলে হতদরিদ্র এই সম্প্রদায়।

নিজেদের ইচ্ছা-অনিচ্ছাকে বিসর্জন দিয়ে, আবেগ-অনুভূতিকে জলাঞ্জলি দিয়ে মানুষের চাহিদামতো চোখের পানি ঝরানো এই নারীদের সমাজে কিন্তু তেমন কোনো দাম নেই। অনেক সময়, অন্নদাতার জবরদস্তিতে অবৈধ সন্তানের জন্ম দিতে হয় তাদের। তাই হাবেলিতে প্রবেশ করা রুদালিদের দিকে বাঁকা চোখে তাকাতে কার্পণ্যবোধ করে না সে সমাজ। আর সেই সন্তান যদি হয় মেয়ে, তাহলে বন্ধ হয়ে যায় তাদের সামান্য আয়-রোজগারের পথটুকুও। কেননা রাজস্থানের মানুষের অন্ধবিশ্বাস অনুযায়ী, মেয়ে সন্তানের জন্ম দেয়া রুদালি পরিবার আর সমাজের জন্য অভিশাপ বয়ে আনে। তাই রুদালিদের মধ্যে বেশ বিখ্যাত একটি প্রবচন প্রচলিত আছে-

    ‘পান্দো ভালো না কসকো, বেটি ভালি নায়েক’

কথাটির বাংলা করলে দাঁড়াবে- খালি পায়ে মাইলের পর মাইল হেঁটে যেতে বললেও কষ্ট পাব না, কিন্তু একটি মেয়েসন্তানও যেন ঘরে না আসে। পুত্র সন্তানের জন্ম দিলেও সেই সন্তান কখনো বাবার নাম ব্যবহার করতে পারে না। কাজেই সমাজের কাছে তারা অচ্ছুত বলেই পরিচিতি লাভ করে।
ব্যক্তিগতভাবে কাউকে না চিনেও তার জন্য অঝোরে অশ্রু ঝরাচ্ছে- এই কঠিন কাজের বিনিময়ে তাদের যে অর্থ প্রদান করা হয়, তাকে নামমাত্র মূল্য বললেও কম বলা হবে। আজ থেকে ৩০ বছর পূর্বেও মরা বাড়িতে গিয়ে কাঁদার জন্য ৫-৬ রূপী করে পেত তারা। কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে গড়াগড়ি দেয়া, বুক চাপড়ানো, শ্মশান ঘাটে গিয়ে আছড়ে পড়া- এমনি যত কলাকৌশল সেই কান্নার সাথে যুক্ত হতো, ততই তাদের অর্থের পরিমাণ বেড়ে যেত। টাকার সাথে পুরনো কাপড়, ভাত, রুটিও দিত কোনো কোনো দিলদার অন্নদাতা। তবে খাবারের মধ্যে কাঁচা পেঁয়াজ আর বাসী রুটিই বেশি দেয়া হতো তাদের।

কখনো কখনো রুদালিদের টানা বারোদিনও কাঁদতে হয়। যত দীর্ঘদিনব্যাপী শোকের মাতম চলবে, ততই লোকজন ঐ পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা নিয়ে কানাঘুষা করবে। পারফরম্যান্স ভালো করতে তাই পেশাদার রুদালিরা নিজেদের জীবনের দুঃখ-কষ্টের কথা মনে করার চেষ্টা করে। সবসময় কিন্তু চাইলেই চোখের পানি পড়ে না, তখন শুধু মুখের বিলাপই ভরসা। তবে যারা পুরোপুরি পেশাদার, তাদের নিজস্ব কিছু কৌশল আছে চোখে পানি আনার। কেউ কেউ থুতু লাগিয়ে মুখে পানির রেখা তৈরি করেন, কেউবা এক ধরনের গাছের শেকড় ব্যবহার করেন যা অনেকটা গ্লিসারিনের মতো কাজ করে। কাজলের মতো এক ধরনের কালিও পাওয়া যায়, যা চোখে লাগানোর সাথে সাথে তীব্র জ্বলুনি শুরু হয় আর চোখের পানি পড়তে থাকে।

45
     কালের বিবর্তনে বাংলার ঐতিহ্যবাহী পালকি আজ বিলুপ্তির পথে। পালকি মানুষ বহনের একটি ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন বাহন। এই বাহনে ১ বা ২ জন যাত্রী নিয়ে ২, ৪ বা ৮ জন বাহক এটিকে কাঁধে তুলে একস্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যায়। পালকি শব্দটি বাংলার সংস্কৃত ‘পল্যঙ্ক’ বা ‘পর্যঙ্ক’ থেকে উদ্ভূত। পালি ভাষায এই যানের নাম ‘পালাঙ্কো’। হিন্দি ও বাংলায় এটি পালকি নামে পরিচিত ছিল। বিখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতা এবং চতুর্দশ শতকের পর্যটক জন ম্যাগনোলি ভ্রমণের সময় পালকি ব্যবহার করতেন বলে জানা যায়। সম্রাট আকবরের রাজত্বকালে এবং পরবর্তী সময়ে সেনাধ্যক্ষদের যাতাযাতের অন্যতম বাহন ছিল পালকি। আধুনিক যানবাহন আবিষ্কৃত হওয়ার আগে অভিজাত শ্রেণীর লোকেরা পালকিতে চড়েই যাতায়াত করতেন। বাংলার প্রত্যান্ত অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে বিয়েতে ও অন্যান্য শুভ অনুষ্ঠানে বর-কনের জন্য পালকি ব্যবহারের প্রথা চালু ছিল।

৭০ বছরের বয়সের বৃদ্ধা জানান, ২০ বছর বয়সে পালকিতে চড়ে বাপের বাড়ি ছেড়ে স্বামীর বাড়িতে এসেছি। বয়স হয়ে গেছে এখন মনে পরে সেই দিনের কথা। গ্রামে বিয়ে হলেই বর কনে কে পালকিতে করে গান গাইতে গাইতে নিয়ে আসতো দেখে খুব আনন্দ পেতাম এখন আর পালকি দেখা যায় না। কালের বিবর্তনে বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য সব হারিয়ে যাচ্ছে।,

আরেক বৃদ্ধ জানান, আমাদের বাপ দাদারা প্রাচীন কাল থেকে পালকি দিয়ে বিবাহের সময় বর-কনেকে বহন করতেন। আমরা এক কালের কলকাতার লোক ছিলাম কাজের তাগিদে বংশের ধারাবাহিকতা রক্ষার্থে আমরাও পালকি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করার জন্য বাংলাদেশে চলে আসি। এখন আর আগের মতো বিবাহ অনুষ্টানে আমাদেরকে ডাকা হয়না। অনেক কষ্ট করে সংসার চালাতে হয় আমাদের। মাসে দু’একটা বিবাহে আমাদের ডাক পরে। যা পাই তা দিয়ে কোনমতে সংসার চলে । পালকি বিভিন্ন আকৃতি ও ডিজাইনের হয়ে থাকে। সবচেয়ে ছোট ও সাধারণ পালকি (ডুলি) দুজনে বহন করে। সবচেয়ে বড় পালকি বহন করে চার থেকে আটজন পালকি বাহক। পালকি বাহকদের বলা হয় বেহারা বা কাহার। হাডি, মাল, দুলে, বাগদি, বাউডি প্রভৃতি সম্প্রদায়ের লোক পালকি বহন করে। পালকি বহনের সময তারা বিশেষ ছন্দে গান গায়। তাদের চলার গতির সঙ্গে তাল মিলিযে গানের তাল-লয় পরিবর্তিত হয়।

কাঠমিস্ত্রীরা সেগুন কাঠ, শিমুল কাঠ, প্রবৃত্তি কাঠ দিয়েও পালকি তৈরি করে। বটগাছের বড ঝুরি দিয়ে তৈরি হয় পালকির বাঁট বা বহন করার দণ্ড। পালকি সচরাচর তিন ধরনের হযে থাকে যেমন, সাধারণ পালকি, আয়না পালকি এবং ময়ূরপঙ্খি পালকি। সাধারণ পালকি আয়তাকার। চারদিক কাঠ দিয়ে আবৃত এবং ছাদ ঢালু। এর দুদিকে দুটি দরজা থাকে। কোন কোনটিতে জানালাও থাকে। পালকির বাইরের দিকে আলপনা আঁকা থাকে। ভেতরে চেয়ারের মতো দুটি আসন ও একটি টেবিল থাকে। ময়ূরপঙ্খি পালকির আয়তন সবচেয়ে বড়। এই পালকি ময়ূরের আকৃতিতে তৈরি করা হয় ভিতরে দুটি চেয়ার, একটি টেবিল ও তাক থাকে। এ পালকির বাঁটটি বাঁকানো এবং এর বাইরের দিকে কাঠের তৈরি পাখি, পুতুল ও লতাপাতার নকশা থাকে। সে যুগের পালকি ছিল এ যুগের মোটরগাড়ি অনুরূপ।

স্টিমার ও রেলগাড়ি আবির্ভাবের পূর্বে ভারতের গভর্নর জেনারেলও পালকিতে চড়ে যাতায়াত করতেন। উনিশ শতকের প্রথমদিকে ডাক ও যাত্রী বহনের জন্য ডাকবিভাগ ‘স্টেজ পালকি’ চালু করে। এই প্রথা উনিশ শতকের শেষ নাগাদ প্রচলিত ছিল। দূরের যাত্রীরা ডাকঘর থেকে স্টেজ পালকির টিকেট ক্রয় করত। উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে ইংরেজরা পালকিতে চড়া প্রায় বন্ধ করে দেয়। তবে উনিশ শতকের শেষাবধি স্থানীয় বাবু এবং অভিজাত শ্রেণীর ব্যক্তিবর্গ যাতায়াতের জন্য পালকিই ব্যবহার করতেন। অবস্থানকালে তাঁর জমিদারি কাচারি পরিদর্শনের সময যে পালকি ব্যবহার করতেন, তা এখন আর জমিদার বাড়ি ধংস করে সেখানে পুলিশ ‌ব্যারাক হয়েছে । সে যুগে স্বছল পরিবারের নিজস্ব পালকি থাকত এবং তাদের ভৃত্যরাই তা বহন করত। সাধারণ মানুষ পালকি ভাড়া করত। উনিশ শতকের চতুর্থ দশকে দাসপ্রথা বিলোপের পর বিহার, উড়িষ্যা, ছোটনাগপুর এবং মধ্যপ্রদেশ থেকে পালকি বাহকরা বাংলায় আসতে থাকে।

বহু সাঁওতাল পালকি বাহকের কাজ নেয়। শুষ্ক মৌসুমে তারা নিজেদের এলাকা থেকে এদেশে আসত এবং বর্ষা মৌসুমে আবার চলে যেত। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমের শেষে তারা কয়েকটি এলাকায় যেত এবং কোথাও কোথাও অস্থায়ী কুঁড়েঘর বানিয়ে সাময়িক আবাসের ব্যবস্থা করে নিত।উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে যাতায়াতের মাধ্যম হিসেবে স্টিমার ও ‌নৌকা চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পালকির ব্যবহার কমতে থাকে। ক্রমশ সড়ক ব্যবস্থার উন্নতি এবং পশুচালিত যান চালু হলে যাতায়াতের বাহন হিসেবে পালকির ব্যবহার প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্রমাগত প্রসার, সড়ক ও নদীপথে মোটর ও অন্যান্য যানের চলাচল এবং প্যাডেল চালিত রিকশা জনপ্রিয় হওয়ার ফলে পালকির ব্যবহার বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে পালকি বাংলাদেশের অতীত ঐতিহ্যের নিদর্শন হিসেবেই পরিচিত। এখন পালকির বদলে মটর গাড়ি দিয়ে বিবাহের বর কনেকে বহন করতে দেখা যায়।

Pages: 1 2 [3] 4 5 6