Show Posts

This section allows you to view all posts made by this member. Note that you can only see posts made in areas you currently have access to.


Topics - Md. Abul Bashar

Pages: 1 [2] 3 4 ... 11
16
রোজার শুদ্ধতায় সদকাতুল ফিতর

সদকাতুল ফিতর বা ফিতরা রমজানের গুরুত্বপূর্ণ একটি আর্থিক ইবাদত। এটি জাকাতেরই একটি প্রকার। পবিত্র কোরআন মাজিদে আল্লাহ তাআলা এদিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘নিশ্চয়ই সাফল্য লাভ করবে সে, যে শুদ্ধ হয়। ’ (সুরা আলা, আয়াত : ১৪)

ইসলামী বিধানমতে, সদকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব।

সাহাবি ইবনে ওমর (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) সদকাতুল ফিতর অপরিহার্য করেছেন। এর পরিমাণ হলো, এক সা জব বা এক সা খেজুর। ছোট-বড়, স্বাধীন-পরাধীন সবার ওপরই এটি ওয়াজিব। (বুখারি, হাদিস : ১৫১২)
সদকাতুল ফিতরের দুটি তাৎপর্য বর্ণনা করা হয়েছে। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) সদকাতুল ফিতরকে অপরিহার্য করেছেন। অর্থহীন, অশালীন কথা ও কাজে রোজার যে ক্ষতি তা পূরণের জন্য এবং নিঃস্ব লোকের আহার জোগানোর জন্য। (আবু দাউদ, হাদিস : ১৬০৯)

যাদের ওপর ওয়াজিব

ঈদুল ফিতরের দিন সুবহে সাদিকের সময় কারো কাছে জাকাতের নিসাবের সমপরিমাণ অর্থাৎ সাড়ে সাত ভরি সোনা বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা অথবা তার সমমূল্যের নগদ অর্থ কিংবা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের অতিরিক্ত সম্পদ যদি বিদ্যমান থাকে তাহলে তার ওপর সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব হবে। যার ওপর সদকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব, তিনি নিজের পক্ষ থেকে যেমন আদায় করবেন, তেমনি নিজের অধীনদের পক্ষ থেকেও আদায় করবেন। তবে এতে জাকাতের মতো বর্ষ অতিক্রম হওয়া শর্ত নয়। (ফাতহুল কাদির : ২/২৮১)

সদকাতুল ফিতরের পরিমাণ
সদকাতুল ফিতরের পরিমাণ সম্পর্কে হাদিস শরিফে দুটি মাপকাঠি নির্ধারণ করা হয়েছে। ১. ‘এক সা’ ২.‘নিসফে সা’। খেজুর, পনির, জব ও কিশমিশ দ্বারা আদায়ের ক্ষেত্রে এক ‘সা’=৩২৭০.৬০ গ্রাম (প্রায়), অর্থাৎ তিন কেজি ২৭০ গ্রামের কিছু বেশি। এ ছাড়া গম দ্বারা আদায় করতে চাইলে ‘নিসফে সা’=১৬৩৫.৩১৫ গ্রাম, অর্থাৎ এক কেজি ৬৩৫ গ্রামের কিছু বেশি প্রযোজ্য হবে। (আওজানে শরইয়্যাহ, পৃষ্ঠা ১৮)

উল্লেখ্য, আমাদের দেশের ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গবেষণা মতে, ‘এক সা’-এর পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়, তিন কেজি ৩০০ গ্রাম। আর ‘আধা সা’-এর পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়, এক কেজি ৬৫০ গ্রাম।
আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) একজন ঘোষক প্রেরণ করলেন সে যেন মক্কার পথে পথে এ ঘোষণা করে যে জেনে রেখো, প্রত্যেক মুসলিম নর-নারী, গোলাম-স্বাধীন, ছোট-বড় প্রত্যেকের ওপর সদকাতুল ফিতর অপরিহার্য। দুই মুদ (আধা সা) গম কিংবা এক সা অন্য খাদ্যবস্তু। (তিরমিজি, হাদিস : ৬৭৪)

কখন আদায় করা উত্তম

ঈদগাহে যাওয়ার আগেই সদকাতুল ফিতর আদায় করা সর্বোত্তম। কারণ এর মাধ্যমে ধনী-গরিবের মাঝে আনন্দের ভাগাভাগি হয়। তা ছাড়া এটি গুরুত্বপূর্ণ একটি সুন্নতও। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, সুন্নত হলো ঈদের নামাজে যাওয়ার আগে সদকাতুল ফিতর আদায় করা। (আল-মুজামুল কাবির, হাদিস : ১১২৯৬)

ইবনে ওমর (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) আমাদের ঈদগাহে যাওয়ার আগে সদকাতুল ফিতর আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। (বুখারি, হাদিস : ১৫০৯)
তবে কারো যদি কোনো কারণবশত ঈদের নামাজে যাওয়ার আগে সদকাতুল ফিতর আদায় করা সম্ভব না হয়, তাহলে পরে আদায় করারও সুযোগ রয়েছে।

হাদিসে উল্লিখিত পাঁচটি দ্রব্যের যেকোনো একটি দ্রব্য বা এর মূল্য আদায়ের মাধ্যমে সদকাতুল ফিতর আদায়ের সুযোগ দিয়েছে ইসলামী শরিয়ত। এর কারণ হচ্ছে মুসলিমরা যেন নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী যেকোনো একটির মূল্য নির্ধারণের মাধ্যমে তা আদায় করতে পারে। কিন্তু আমাদের দেশে সামর্থ্যবানরাও ব্যাপকভাবে সর্বনিম্ন দ্রব্যের মূল্য ধরে তা আদায় করে থাকে, যা সত্যিই অপছন্দনীয়। কারণ হাদিস শরিফে এসেছে একবার রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে সর্বোত্তম দান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি ইরশাদ করেন, ‘দাতার নিকট যা সর্বোত্কৃষ্ট এবং যার মূল্যমান সবচেয়ে বেশি। ’ (বুখারি, হাদিস : ২৫১৮)

মহান আল্লাহ আমাদের সাধ্যানুযায়ী যথাযথভাবে সদকাতুল ফিতর আদায়ের তাওফিক দান করুন।



Source: BDP

17
শবেকদরের তাৎপর্য ও করণীয়

ফারসি ‘শব’ মানে রাত আর আরবি ‘কদর’ মানে মাহাত্ম্য ও সম্মান। তাই শবেকদর হলো ‘মহিমান্বিত রজনী’। কদরের আরেক অর্থ তকদির বা ভাগ্য। এ রাতে পরবর্তী এক বছরের অবধারিত ও বিধিলিপি ব্যবস্থাপক ও প্রয়োগকারী ফেরেশতাদের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করা হয়। সুরা আদ দুখানে আল্লাহ বলেন, ‘সে রাতে প্রত্যেক চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত স্থিরীকৃত হয়’। আয়াত ৪। অর্থাৎ এতে বোঝা গেল এখানে বরকতের রাত বলতে গেলে শবেকদরকেই বোঝানো হয়েছে। এ রাতকে ‘মুবারক’ বলার কারণ এ রাতে আল্লাহর পক্ষ থেকে অসংখ্য কল্যাণ ও বরকত নাজিল হয়।
রসুল (সা.) বলেছেন, ‘দুনিয়ার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আল্লাহ পয়গম্ব^রদের প্রতি যত কিতাব নাজিল করেছেন তা সবই রমজানের বিভিন্ন তারিখে নাজিল হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ইবরাহিম (আ.)-এর সহিফাসমুহ রমজানের প্রথম তারিখে, তাওরাত ৬ তারিখে, জবুর ১২ তারিখে, ইনজিল ১৮ তারিখে এবং কোরআন ২৫ রাতে অবতীর্ণ হয়েছে।’ (মুসনাদে আহমাদ)

সুরা বাকারায় আল্লাহ বলেন, ‘রমজানে কোরআন নাজিল করা হয়েছে।’ আয়াত ১৮৫। অর্থাৎ রসুল (সা.)-এর কাছে হেরা গুহায় যে রাতে জিবরাইল (আ.) ওহি নিয়ে এসেছিলেন সেটি রমজানের একটি রাত। আর সে রাতটি হলো শবেকদর। সমগ্র কোরআন লওহে মাহফুজ থেকে ধীরে ধীরে ২৩ বছর ধরে রসুল (সা.)-এর কাছে অবতীর্ণ হয়। লাইলাতুল কদর রমজানের শেষ ১০ দিনের যে কোনো বেজোড় রাতে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। রসুল (সা.) বলেন, ‘রমাদানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে লাইলাতুল কদর অন্বেষণ কর।’ (বুখারি)।

রসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে কেউ ইমান ও সওয়াবের আশায় লাইলাতুল কদরে সালাত আদায় করতে দাঁড়ায় তার পূর্ববর্তী সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’ (বুখারি, মুসলিম)। এর চেয়ে একজন মুমিনের জীবনে আর কী বড় পুরস্কার হতে পারে? ‘লাইলাতুল কদরে দুনিয়ার বুকে এত বেশি ফেরেশতা আগমন করেন যে তাদের সংখ্যা পাথরকুচির চেয়েও বেশি।’ (মুসনাদে আহমাদ)। লাইলাতুল কদর লাভ করার সর্বোত্তম উপায় হলো শেষ দশকে ইতিকাফ করা।

উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘আমি জিজ্ঞেস করলাম হে আল্লাহর রসুল! আমি যদি জানতে পারি কোন রাতটি লাইলাতুল কদর তাহলে তখন কোন দোয়াটি পাঠ করব? তিনি বললেন তুমি বল, “আল্লাহুমা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফাফু আন্নি” অর্থাৎ হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল, আপনি ক্ষমা করতে ভালোবাসেন, অতএব আমাকে ক্ষমা করে দিন।’ (তিরমিজি)।

শবেকদর সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘তুমি কি জান কদরের রাতটি কী? কদরের এ রাতটি হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম।’ সুরা কদর, আয়াত ২-৩। এর চেয়ে আর বড় নিয়ামত মুসলমানদের জন্য কী হতে পারে? রমজানের এ রাতে আমরা বেশি করে যেন নফল ইবাদত করে আল্লাহর প্রিয় বান্দা হতে পারি। লাইলাতুল কদর পাওয়ার জন্য প্রত্যেক মুসলমানের উচিত রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফে বসা এবং বিজোড় রাতগুলোয় শবেকদর তালাশ, বেশি বেশি নফল নামাজ আদায়, কোরআন তিলওয়াত, দরুদ পাঠ, ইসতিগফার ও তওবা, বেশি বেশি দান-সদকা করা।




Source: BDP

18
পাঁচ খাবারে চোখের স্বাস্থ্যের যত্ন
পুষ্টি ও চোখের স্বাস্থ্যের সম্পর্ক খুব গভীর। দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখার জন্য দরকার নিয়মিত স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া। ভিটামিন, খনিজ পদার্থ, নানা ধরনের অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট যুক্ত খাবার খাওয়া জরুরি। এত রকম উপাদান থাকে শাক-সবজি ও ফলে। তাই সব ধরনের শাক-সবজি মিলিয়েই তৈরি করতে হবে দিনের খাদ্য তালিকা।

নানা রঙের খাবার দিনের তালিকায় রাখা বেশ জরুরি। তাতে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও ফ্যাটি অ্যাসিড পায় শরীর। এসব অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট চোখের বিভিন্ন ক্রনিক সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করে। বাড়ায় দৃষ্টিশক্তিও।

কোন পাঁচটি খাবার সহজেই চোখের স্বাস্থ্যের যত্ন নেয়?
১) রুই, কাতলা, ইলিশ, মাগুড়ের মতো যেসব মাছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডের পরিমাণ বেশি, তা বেশি করে খাবেন। চোখের মণি ভালো থাকে। দৃষ্টিশক্তিও বাড়ে। ড্রাই আইজের সমস্যা কমে।

২) গাজর যে চোখের যত্ন নেয়, তা সকলেরই জানা। এতে উপস্থিত বিটা-ক্যারোটিন শরীরে ভিটামিন এ জোগান দেয়। নিয়মিত গাজর খেলে চোখে সংক্রমণের আশঙ্কা কমে।

৩) ডিম খাওয়া চোখের স্বাস্থ্যের জন্য জরুরি। ডিমের কুসুমে বিভিন্ন ধরনের খনিজ পদার্থ থাকে। সঙ্গে থাকে ভিটামিন এ এবং জিঙ্ক। সব ক’টি উপাদানই চোখের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

৪) দুধ এবং দইয়েও রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ এবং জিঙ্ক। দুটি উপাদানই চোখের নানা অংশের যত্ন নেয়। তা ছাড়াও দুধে এমন কিছু খনিজ পদার্থ থাকে, যা খেলে রাতের দৃষ্টিশক্তি উন্নত হয়।

৫) কমলালেবুও চোখের জন্য ভালো। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি। এই ভিটামিন রক্ত চলাচলের ক্ষেত্রে জরুরি। চোখে রক্ত চলাচল ভালো হলে সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা কমে। তার সঙ্গেই প্রদাহ কমে।




Source: BD

19
রমজানে দান-সদকার বিশেষ গুরুত্ব

পবিত্র রমজান মাস অগণিত নেকি অর্জনের মাস। তাই এ মাসে নেকি অর্জনের কোনো পন্থাই হাত ছাড়া করা উচিত নয়। সাধারণত বেশি সওয়াবের আশায় এ মাসে বিত্তবানরা জাকাত আদায় করে থাকে। যাদের ওপর জাকাত ফরজ নয়, তারাও এই মাসে বেশি বেশি সদকা করার মাধ্যমে অগণিত সওয়াব লাভ করতে পারে।

যাদের ওপর জাকাত ফরজ, তারাও জাকাত আদায়ের পর অতিরিক্ত সদকা করতে পারে। তা ছাড়া এ বছর দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে বহু মানুষ কষ্টে আছে। অভাব-অনটন ও ঋণের জাঁতাকলে পড়ে বহু মানুষ পিষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাদের নীরব কান্না হয়তো আমাদের কান পর্যন্ত পৌঁছায় না। কিন্তু আমরা যদি এই কঠিন মুহূর্তে তাদের প্রতি সহানুভূতির হাত বাড়াতে পারি, তবে মহান আল্লাহর কাছে এর প্রতিদান বহু গুণে পাওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ। নিম্নে সদকার কিছু উপকারিতা তুলে ধরা হলো;
রিজিকে বরকত আসে : সদকার মাধ্যমে মহান আল্লাহ রিজিকে বরকত এনে দেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ সুদকে মিটিয়ে দেন এবং সদকাকে বাড়িয়ে দেন। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৭৬)

অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা নিজেদের ধন-সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে তাদের উপমা একটি বীজের মতো, যা সাতটি শীষ উৎপাদন করে, প্রত্যেক শীষে এক শ শস্যদানা। আর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বহু গুণে বৃদ্ধি করে দেন। আর আল্লাহ সর্বব্যাপী প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৬১)
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি হালাল কামাই থেকে একটি খেজুর পরিমাণ সদকা করবে, (আল্লাহ তা কবুল করবেন) এবং আল্লাহ শুধু পবিত্র মাল কবুল করেন আর আল্লাহ তাঁর ডান হাত দিয়ে তা কবুল করেন। এরপর আল্লাহ দাতার কল্যাণার্থে তা প্রতিপালন করেন যেমন তোমাদের কেউ অশ্ব শাবক প্রতিপালন করে থাকে, অবশেষে সেই সদকা পাহাড় বরাবর হয়ে যায়।
(বুখারি, হাদিস : ১৪১০)

সদকা আল্লাহর সঙ্গে ব্যবসা : পবিত্র কোরআনে সদকাকে আল্লাহর সঙ্গে সংঘটিত লাভজনক ব্যবসার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই যারা আল্লাহর কিতাব অধ্যয়ন করে, সালাত কায়েম করে এবং আল্লাহ যে রিজিক দিয়েছেন তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারা এমন ব্যবসার আশা করতে পারে, যা কখনো ধ্বংস হবে না। যাতে আল্লাহ তাদের কাজের প্রতিফল পরিপূর্ণ দেন এবং তিনি নিজ অনুগ্রহে তাদের আরো বেশি দেন। নিশ্চয়ই তিনি পরম ক্ষমাশীল, অসীম গুণগ্রাহী। ’ (সুরা ফাতির, আয়াত : ২৯-৩০)

ফেরেশতাদের দোয়া পাওয়া যায় : যারা মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় দান করে, তাদের জন্য ফেরেশতারা দোয়া করেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘প্রতিদিন সকালে দুজন ফেরেশতা অবতরণ করেন। তাঁদের একজন বলেন, হে আল্লাহ, দাতাকে তার দানের উত্তম প্রতিদান দিন। আর অপরজন বলেন, হে আল্লাহ, কৃপণকে ধ্বংস করে দিন। ’ (বুখারি, হাদিস : ১৪৪২)

পাপ মোচন হয় : দান-সদকার মাধ্যমে পাপের বোঝা হালকা হয়। তাই পবিত্র রমজানে বেশি বেশি দান-সদকা করা উচিত। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘যদি তোমরা প্রকাশ্যে দান করো তবে তাও উত্তম, আর যদি তোমরা তা গোপনে করো এবং তা অভাবগ্রস্তদের দান করো, তবে তা তোমাদের জন্য আরো উত্তম, অধিকন্তু তিনি তোমাদের কিছু গুনাহ মোচন করে দেবেন, বস্তুত যা কিছু তোমরা করছ, আল্লাহ তার খবর রাখেন। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৭১)

সদকা মানুষকে পরিশুদ্ধ করে : পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে নবী, তাদের ধন-সম্পদ থেকে সদকা নিয়ে তাদের পাক-পবিত্র করুন, (নেকির পথে) তাদের এগিয়ে দিন এবং তাদের জন্য রহমতের দোয়া করুন। (সুরা তাওবা, আয়াত : ১০৩)

এখানে মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় বন্ধুকে উদ্দেশ্য করে বলছেন সদকার মাধ্যমে তাঁর উম্মতদের পরিশুদ্ধ করে নিতে। তাফসিরবিদরা এই আয়াতের ব্যাখ্যায় লেখেন, সদকা আখলাক-চরিত্র পরিশুদ্ধ করার একটি অন্যতম মাধ্যম। (ইবনে কাসির)

আরশের ছায়াতলে আশ্রয় : যারা গোপনে দান করবেন মহান আল্লাহ কঠিন কিয়ামতের দিন তাদের আরশের ছায়াতলে স্থান দেবেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেন, যে দিন আল্লাহর (রহমতের) ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া থাকবে না, সেদিন সাত ব্যক্তিকে আল্লাহ তাআলা তাঁর নিজের (আরশের) ছায়ায় আশ্রয় দেবেন। ১. ন্যায়পরায়ণ শাসক, ২. সে যুবক, যার জীবন গড়ে উঠেছে তার প্রতিপালকের ইবাদতের মধ্যে, ৩. সে ব্যক্তি, যার অন্তর মসজিদের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে, ৪. সে দুই ব্যক্তি, যারা পরস্পরকে ভালোবাসে আল্লাহর জন্য, একত্র হয় আল্লাহর জন্য এবং পৃথকও হয় আল্লাহর জন্য, ৫. সে ব্যক্তি, যাকে কোনো উচ্চ বংশীয় রূপসী নারী আহ্বান জানায়, কিন্তু সে এ বলে প্রত্যাখ্যান করে যে ‘আমি আল্লাহকে ভয় করি’, ৬. সে ব্যক্তি, যে এমন গোপনে দান করে যে তার ডান হাত যা খরচ করে বাম হাত তা জানে না, ৭. সে ব্যক্তি, যে নির্জনে আল্লাহর জিকির করে, ফলে তার দুই চোখ দিয়ে অশ্রুধারা বইতে থাকে। ’ (বুখারি, হাদিস : ৬৬০)

জাহান্নাম থেকে মুক্তি : মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দান করলে, জাহান্নাম থেকে মুক্তির আশা করা যায়। কেননা নবীজি (সা.) জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য বেশি বেশি সদকা করার তাগিদ দিয়েছেন। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, একবার ঈদুল আজহা অথবা ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায়ের জন্য আল্লাহর রাসুল (সা.) ঈদগাহের দিকে যাচ্ছিলেন। তিনি মহিলাদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বললেন, হে মহিলাসমাজ, তোমরা সদকা করতে থাকো। কারণ আমি দেখেছি, জাহান্নামের অধিবাসীদের মধ্যে তোমরাই বেশি। তাঁরা জিজ্ঞেস করলেন, কী কারণে, হে আল্লাহর রাসুল? তিনি বলেন, তোমরা বেশি পরিমাণে অভিশাপ দিয়ে থাকো আর স্বামীর অকৃতজ্ঞ হও। (বুখারি, হাদিস : ৩০৪)


Source: BD.


20
রমজানে অধিক দোয়ার গুরুত্ব

দোয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল। এটি মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের অন্যতম মাধ্যম। যারা তাঁর কাছে দোয়ার মাধ্যমে সাহায্য চায়, তিনি তাদের ওপর খুশি হন, আর যারা চায় না, তিনি তাদের ওপর রাগান্বিত হন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের রব (আল্লাহ) বলেন, তোমরা আমার কাছে দোয়া করো, আমি তোমাদের দোয়া কবুল করব।

যারা অহংকারবশত আমার ইবাদত থেকে বিমুখ, তারা অবশ্যই লাঞ্ছিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। ’ (সুরা : মুমিন, আয়াত : ৬০)
রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, মহান আল্লাহর কাছে দোয়ার চেয়ে অধিক সম্মানিত কোনো জিনিস নেই। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৮২৯)

এ জন্য পবিত্র রমজান মাসে প্রতিটি মুমিনের উচিত বেশি বেশি মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করা। বিশেষ করে ইফতারের সময় অধিক পরিমাণে দোয়া করা উচিত। কারণ মহান আল্লাহ ইফতারের সময় রোজাদার বান্দার দোয়া কবুল করেন। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তিন ধরনের লোকের দোয়া কখনো ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। ১. রোজাদার যখন ইফতার করে, ২. ন্যায়পরায়ণ শাসকের  দোয়া, ৩. মজলুমের দোয়া। মজলুম ব্যক্তির দোয়া আল্লাহ মেঘমালার ওপর উঠিয়ে নেন এবং এ জন্য আসমানের সব দরজা খুলে দেওয়া হয়। আল্লাহ বলেন, আমার ইজ্জতের কসম! আমি তোমাকে অবশ্যই সাহায্য করব, যদিও তা কিছুকাল পরে হয়। ’  (তিরমিজি, হাদিস  : ৩৫৯৮)
এবং এই মাসের প্রতিটি রাতেও আল্লাহ তাআলা তাঁর নিজ অনুগ্রহে অসংখ্য বান্দাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন। রাসুল (সা.) বলেছেন, ...আর একজন ঘোষক ঘোষণা করতে থাকে, হে কল্যাণের প্রত্যাশী, অগ্রসর হও, হে অকল্যাণের প্রার্থী, থেমে যাও। আর আল্লাহ তাআলা এ মাসের প্রতি রাতে অসংখ্য জাহান্নামিকে মুক্তি দান করেন। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ১৮৭৯৪)

রমজানের একটি বিশেষ রাত আছে, যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। আর তা হলো, লাইলাতুল কদর। মুমিনের উচিত, রমজানের প্রতিটি রাতেই লাইলাতুল কদরের ফজিলত পাওয়ার আশায় দোয়া, জিকির, তিলাওয়াত ইত্যাদি করা। কারণ আমরা কেউ-ই নির্দিষ্ট করে জানি না, সে রাতটি কোন রাত। তাই সে রাতের কল্যাণ অর্জনের জন্য রমজানের প্রতিটি রাতকেই গুরুত্ব দেওয়া উচিত। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, রমজান এলেই আল্লাহর রাসুল (সা.) সাহাবাদের বলতেন, ‘তোমাদের কাছে এই মাস সমাগত হয়েছে, তাতে এমন একটি রাত রয়েছে, যা এক হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। যে ব্যক্তি এ রাতের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো, সে প্রকৃতপক্ষে সব কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত। একমাত্র দুর্ভাগাই এ রাতের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয়। ’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৬৪৪)

তা ছাড়া রমজানের প্রতিটি মুহূর্তই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রমজানের পরিপূর্ণ বরকত অর্জনের জন্য সুযোগ পেলেই ইবাদতে আত্মনিয়োগ করা উচিত। মহান আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া করা উচিত। কারণ আমার রোজা, সাহরি-ইফতার ও অন্যান্য ইবাদত আল্লাহর কাছে কবুল করানোর জন্য দোয়াও একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘দোয়া ইবাদতের মূল। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩৩৭১)

মহান আল্লাহ সবাইকে পবিত্র রমজান মাসে বেশি বেশি দোয়া মশগুল থাকার তাওফিক দান করুন।





Source: বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন

21
কোরআন-হাদিসে সাহরি ও ইফতারের সময়

রোজার জন্য সাহরি খাওয়া মুস্তাহাব। তবে যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত সাহরি খায় না সে গুনাহগার নয়। আর এ কারণেই যদি কেউ ফজরের পর জাগে এবং সাহরি খাওয়ার সময় না পায়, তাহলে তার জন্য রোজা রাখা জরুরি। এতে তার রোজার কোনো ক্ষতি হবে না।

রাসুলুল্লাহ (সা.) সাহরি খাওয়ার জন্য তাঁর উম্মতকে বিভিন্ন কথার মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ করেছেন। তিনি সাহরিকে বরকতময় খাদ্য বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, তোমরা সাহরি খাও। কেননা সাহরিতে বরকত আছে। (বুখারি, হাদিস : ১৮২৩)

অন্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আমাদের রোজা ও আহলে কিতাবের রোজার মধ্যে পার্থক্য হলো সাহরি খাওয়া। (মুসলিম, হাদিস : ১০৯৬)

সাহরি খাওয়ার সময় হলো অর্ধরাত্রির পর থেকে সুবহে সাদিক বা ফজরের আগে পর্যন্ত। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘...আর তোমরা পানাহার করো যতক্ষণ রাতের কৃষ্ণরেখা থেকে ঊষার শুভ্ররেখা স্পষ্টরূপে তোমাদের কাছে প্রতিভাত না হয়...। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৭)

আর মুস্তাহাব হলো শেষ সময়ে সাহরি খাওয়া। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, জায়দ বিন সাবেত (রা.) তাঁকে জানিয়েছেন, তাঁরা নবী (সা.)-এর সঙ্গে সাহরি খেয়ে (ফজরের) নামাজ পড়তে উঠে গেছেন। আনাস (রা.) বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, সাহরি খাওয়া ও আজান হওয়ার মধ্যে কতটুকু সময় ছিল? জবাবে জায়দ (রা.) বলেন, ৫০ অথবা ৬০ আয়াত পড়তে যতটুকু লাগে। (বুখারি, হাদিস : ৫৭৫, ১৯২১, মুসলিম ১০৯৭

এখানে আয়াত বলতে মধ্যম ধরনের আয়াত গণ্য হবে। আর এই শ্রেণির ৫০-৬০টি আয়াত পড়তে মোটামুটি ১৫-২০ মিনিট সময় লাগে। অতএব সুন্নত হলো, আজানের ১৫-২০ মিনিট আগে সাহরি খাওয়া।

ইফতারের সময়

সূর্যের পুরো বৃত্ত অদৃশ্য হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইফতারের সময় হয়। আর সে সময় হলো মাগরিবের নামাজের আগে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘...অতঃপর নিশাগম (রাতের আগমন) পর্যন্ত তোমরা সিয়াম (রোজা) পূর্ণ করো...। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৭)

রোজার নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত হয়ে গেলে রোজা খোলা বা ইফতার করার জন্য প্রত্যেক রোজাদারের অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করা স্বাভাবিক। অতএব ইফতার করতে তাড়াতাড়ি করা স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু তা সত্ত্বে প্রিয় নবী (সা.) আমাদের দ্রুত ইফতার করার নির্দেশ দিয়েছেন। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, মানুষ ততক্ষণ মঙ্গলে থাকবে, যতক্ষণ তারা (সূর্য ডোবার পর নামাজের আগে) ইফতার করতে তাড়াতাড়ি করবে। (বুখারি, হাদিস : ১৯৫৭)

অতএব দেখার বিষয় হলো সূর্যাস্ত—আজান নয়। সুতরাং রোজাদার যদি স্বচক্ষে দেখে যে সূর্য ডুবে গেছে, কিন্তু মুয়াজ্জিন এখনো আজান দেয়নি, তাহলেও তার জন্য ইফতার করা বৈধ।

ইফতার করে নামাজ পড়ার পর প্রয়োজনীয় আহার ভক্ষণ করবে রোজাদার। অবশ্য যদি আহার প্রস্তুত থাকে, তাহলে প্রথমে আহার খেয়েই নামাজ পড়বে। যেহেতু আনাস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, রাতের খাবার উপস্থিত হলে মাগরিবের নামাজ পড়ার আগে তোমরা তা খেয়ে নাও। আর সে খাবার খেতে তাড়াহুড়া কোরো না। (বুখারি, হাদিস : ৬৭২)

22
রমজানকে স্বাগত জানিয়ে রসুল (সা.)-এর ভাষণ

মাহে রমজান রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতে পরিপূর্ণ। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘হে ইমানদারগণ!

তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে। যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর যাতে তোমরা আল্লাহভীরু হতে পার।’ (সুরা বাকারা, আয়াত ১৮৩)। সমাগত মাসের প্রস্তুতি সম্পর্কে মহানবী (সা.) বিশ্ববাসীর উদ্দেশে এক গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ভাষণে রমজান মাসের দিকনির্দেশনা প্রদান করেছেন। যা আমাদের সবার জানা একান্ত প্রয়োজন। হজরত সালমান ফারসি (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘একবার শাবান মাসের শেষ দিন রসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের উদ্দেশে ভাষণ প্রদান করলেন, তিনি বললেন, হে লোকসকল! তোমাদের ওপর এক মহান মাস, এক কল্যাণময় মাস ছায়া বিস্তার করেছে। এটা এমন মাস যাতে এমন একটি রাত রয়েছে, যা হাজার মাস অপেক্ষাও উত্তম। আল্লাহ (তোমাদের জন্য) এ মাসের রোজাকে ফরজ করেছেন এবং রাতে নামাজ পড়াকে নফল করেছেন। যে ব্যক্তি এ মাসে আল্লাহর নৈকট্য চেয়ে একটি নেক কাজ করবে সে ওই ব্যক্তির সমান হবে, যে অন্য মাসে ৭০টি ফরজ আদায় করেছে। এ মাস ধৈর্যের। আর ধৈর্য এমন একটি গুণ যার প্রতিদান হলো জান্নাত। এটা পারস্পরিক সহানুভূতির মাস। এটা ওই মাস যাতে মুমিন ব্যক্তির রিজিক বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এ মাসে যে ব্যক্তি একজন রোজাদারকে ইফতার করাবে এটা তার পক্ষে তার গুনাহগুলোর জন্য ক্ষমাস্বরূপ হবে এবং তার নিজেকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তির কারণ হবে। আর তাকে রোজাদারের সমান সওয়াব প্রদান করা হবে এতে তার সওয়াব থেকে কিছুই কমানো হবে না। [হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবি বলেন,] আমরা বললাম, ইয়া রসুলুল্লাহ! আমাদের প্রত্যেক ব্যক্তি এমন সামর্থ্য রাখে না যা দ্বারা রোজাদারকে ইফতার করাতে পারে। তখন রসুলুল্লাহ বললেন, আল্লাহ এ সওয়াব ওই ব্যক্তিকেও প্রদান করেন যে কোনো রোজাদারকে এক ঢোক দুধ দ্বারা, একটি খেজুর দ্বারা অথবা এক ঢোক পানি দ্বারা ইফতার করায়। যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে পরিতৃপ্তির সঙ্গে ভোজন করায় আল্লাহ তাকে আমার হাউসে কাউসার থেকে পানীয় পান করাবেন। ফলে জান্নাতে প্রবেশ করা পর্যন্ত সে কখনো তৃষ্ণার্ত হবে না। এটা এমন একটি মাস যার প্রথম অংশ রহমত, মধ্য অংশ ক্ষমা এবং শেষ অংশ জাহান্নাম থেকে মুক্তি। যে ব্যক্তি এ মাসে নিজের দাস-দাসীদের কর্মভার হালকা করে দেবে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেবেন এবং তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করবেন।’ (বায়হাকি, মিশকাত, কিতাবুস সাওম)। মহান আল্লাহ প্রিয় নবীর উসিলায় আমাদের সবাইকে রমজানে সুস্থ শরীরে বেশি বেশি নেক আমল করে তাঁর প্রিয় বান্দাহ হিসেবে জান্নাতের মেহমান হওয়ার তৌফিক দান করুন।



Source: BD Protidin

23
যে কোম্পানিতে চার দিনে সপ্তাহ, তবু উৎপাদনে ৪০% প্রবৃদ্ধি

সাধারণত মালিকেরা কর্মীদের বেশি সময় কাজ করিয়ে পয়সা উশুল করে নেন। তবে আজকাল এমন মালিকও অনেক আছেন, যাঁরা মনে করেন, কর্মীদের প্রতি সদয় হয়ে একটু ছাড় দিলে বছর শেষে মোট কাজের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে যায়। তেমনটাই করে দেখিয়েছেন ফরাসি প্রযুক্তি কোম্পানি এলডিএলসির প্রতিষ্ঠাতা লরাঁ ভিলেমন্তে দে লা ক্লার্জারি

ফরাসি কোম্পানি লরাঁ দে লা ক্লার্জারির (এলডিএলসি) বস যখন তাঁর কর্মীদের আগের মতো একই বেতনে সপ্তাহে চার দিন কাজ করতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, তখন অনেকেই তাঁকে পাগলই ভেবেছিলেন। কিন্তু এক বছর পর দেখা গেল, তিনি বাজিমাত করে বসে আছেন। তাঁর কনজ্যুমার টেকনোলজি তথা ভোক্তাপ্রযুক্তি বিক্রির প্রতিষ্ঠান এলডিএলসির বার্ষিক লেনদেন ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই সময়ে তিনি কোম্পানিতে অতিরিক্ত কোনো কর্মীও নিয়োগ করেননি।

এমন সাফল্য বেশ উচ্ছ্বসিত এলডিএলসির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান লরাঁ ভিলেমন্তে দে লা ক্লার্জারি। তিনি বলেন, ‘তখন আমার মনে হয়েছিল, অভিনব এই সিদ্ধান্ত কাজ করবে। অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে আমি কেবল কোম্পানির ভালো ফলই যেন দেখতে পাচ্ছিলাম।’ তিনি বলেন, যেহেতু পৃথিবী একটি বৈশ্বিক স্বাস্থ্যসংকট থেকে বেরিয়ে আসছিল, সেহেতু অনেকের মনেই কর্মজীবনে ভারসাম্যের বিষয়টি পুনর্মূল্যায়নের প্রশ্ন জোরালো হয়ে উঠছিল। বিশ্বজুড়েই কোম্পানির মালিক থেকে শুরু করে শ্রমিক-কর্মচারী নির্বিশেষে সবার মনেই এমন আশঙ্কা দানা বেঁধে উঠছিল, তাঁরা কি কম কাজ করতে পারবেন? অফিসের কর্মদিবস কমানোর আগে দে লা ক্লার্জারিও সেই হিসাব-নিকাশ করে দেখেছেন বলে জানান।

এলডিএলসিতে কর্মিসংখ্যাও নেহাত কম নয়। বর্তমানে কোম্পানিটিতে আনুমানিক এক হাজার লোক কাজ করছেন। দে লা ক্লার্জারি জানান, তিনি হিসাব-নিকাশ করে দেখেছেন যে কর্মদিবসের সংখ্যা কমানোর সিদ্ধান্তের ফলে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিও যদি আসে, তাতে বছরে কোম্পানির ব্যয় সর্বোচ্চ ১৬ লাখ মার্কিন ডলার বাড়তে পারে। এই অর্থ বাংলাদেশের ১৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকার মতো (প্রতি ডলার ৯১ টাকা ধরে)।

সম্ভাব্য বাড়তি খরচকে দে লা ক্লার্জারি পরিচালনযোগ্য, অর্থাৎ মেনে নেওয়ার মতো ঝুঁকি বলে চিহ্নিত করেন। তিনি বলেন, ‘কেউ হয়তো ভাবতে পারেন যে আমি সিসাকে সোনায় পরিণত করতে পেরেছি। আমি মনে করি না যে ব্যাপারটা সে রকম। বরং আমি বিশ্বাস করি, আপনি যখন কর্মক্ষেত্রে সুস্থতা বজায় রাখায় জোর দেন এবং আপনি আপনার দলের যত্ন নেন, তখন জোরের সঙ্গেই ভাবতে পারেন যে আপনি প্রকারান্তরে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির দিকেই মনোযোগ দিয়েছেন। বুঝতে হবে, উৎপাদনশীলতার সমীকরণটা শুধু কয়েক ঘণ্টা কাজ করার মধ্য দিয়ে মেলানো যায় না।’

দে লা ক্লার্জারি জানান, তিনি ওই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরই কোম্পানির দৈনন্দিন কার্যক্রমে কর্মীদের অনুপস্থিতি ও অসুস্থতার হার ব্যাপক হারে কমে গেছে।
মজার ব্যাপার হলো, কর্মদিবস বা কর্মঘণ্টা কমানোর পর কিন্তু এলডিএলসির কর্মিসংখ্যা বাড়াতে হয়নি। অর্থাৎ একজন নতুন কর্মীও নেওয়া হয়নি। তারপরও ফরাসি কোম্পানিটি ব্যাপক ব্যবসায়িক সফলতা পেয়েছে। এক বছরের ব্যবধানে এলডিএলসির বার্ষিক লেনদেনের পরিমাণ ৫৫ কোটি ডলার থেকে ২২ কোটি ডলার বেড়ে একলাফে প্রায় ৭৭ কোটি ডলারে উঠে গেছে।

এলডিএলসির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান লরাঁ ভিলেমন্তে দে লা ক্লার্জারি বলেন, ‘মতাদর্শগতভাবে আমরা পুঁজিবাদী কিংবা সমাজতান্ত্রিক হতে পারি। তাতে কিন্তু একজন আরেকজনকে বাতিল করে দিতে পারি না। আমি যখন দেখলাম, আমার সিদ্ধান্তটি আজ কাজে এসেছে, অর্থাৎ ফল দিয়েছে, তখন আমি আরও এগিয়ে যাওয়ার কথা ভাবতেই পারি। যদি আপনি সমাজতান্ত্রিক হন, তবে এই ধরনের কাজ আপনাকে পুঁজিবাদী হতে বাধা দেয় না। বিপরীতভাবে বলা যায়, আপনি যদি পুঁজিবাদী হন, তাহলে নতুন কাজের ধরন আপনাকে সমাজতান্ত্রিক হতেও বাধা দেবে না। মোদ্দাকথা, এটি আপনাকে আরও ভালো পারফর্ম করা মানে অধিকতর নৈপুণ্য দেখানোর সুযোগ করে দেবে, যা আমাদের ক্ষেত্রে ঘটেছে।’

ফ্রান্সের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় লিওঁ শহরের এক পাশে, অর্থাৎ শহরতলিতে অবস্থিত এলডিএলসির প্রধান কার্যালয়ের কাছের একটি স্টোরের কর্মি জোহান পিটার্স বলেন, ‘অতিরিক্ত সাপ্তাহিক ছুটি যেন ঈশ্বরই আমাদের জন্য পাঠিয়েছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘ব্যক্তিগত জীবনের জন্য, নিজের প্রয়োজনীয় কাজগুলো সম্পন্ন করার জন্য এবং সর্বোপরি, সন্তানদের যত্ন নেওয়ার জন্য আমার আরও বেশি সময়ের প্রয়োজন। আগে আমি কেবল প্রতি রোববার আমার মেয়েকে দেখতে পেতাম। এটি খুব কম সময় ছিল।’

শুধু এলডিএলসিই ফ্রান্সে এ ধরনের একমাত্র প্রতিষ্ঠান নয়। বরং বিশ্বের সবচেয়ে কর্মবান্ধব কাজের অনুশীলন রয়েছে, এমন আরও অনেক কোম্পানি আছে সেই দেশে। আইনগতভাবে এসব কোম্পানির কর্মীদের প্রতি সপ্তাহে ৩৫ ঘণ্টার বেশি কাজ করতে হয় না। তবে ওই সব কোম্পানির চেয়ে দে লা ক্লার্জারির কর্মপরিবেশে আরও বেশি ছাড় রয়েছে।

আজকাল বিশ্বের অনেক কোম্পানিই এ ধরনের সুবিধা আরও দেয়। যেমন যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফট ২০১৯ সাল থেকে তার জাপানভিত্তিক কর্মীদের শুক্রবার বাড়তি ছুটি দিচ্ছে। এর ফল হিসেবে সেখানে তাদের উৎপাদনশীলতা ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানায় বৈশ্বিক কোম্পানিটি।

কনজ্যুমার গ্রুপ ইউনিলিভার নিউজিল্যান্ডে স্থানীয় কর্মীদের জন্য চার দিনের সাপ্তাহিক ট্রায়াল চালু করেছে। অর্থাৎ পরীক্ষামূলকভাবে সেই দেশে ইউনিলিভারের কর্মীরা সপ্তাহে চার দিন কাজ করছেন। আবার স্প্যানিশ টেলিকম কোম্পানি টেলিফোনিকা তাদের গার্হস্থ্য কর্মশক্তির ১০ শতাংশের জন্য পরীক্ষামূলভাবে চার দিনের কর্মসপ্তাহ চালু করেছে। ইউনিলিভারের উদ্যোগ সফল হলে নিউজিল্যান্ডে তাদের কর্মীদের কর্মদিবসের সংখ্যা যে কমবে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। একই কথা প্রযোজ্য হবে টেলিফোনিকার বেলায়ও। রয়টার্স, ইয়াহু!নিউজ।

24
কিডনি সংক্রান্ত মারণরোগ এড়াতে মেনে চলুন সহজ কিছু নিয়ম

কিডনি মানব শরীরের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। আর বর্তমানে অধিকাংশ মানুষই কিডনি সংক্রান্ত অসুস্থতায় ভোগেন। কী ভাবে বোঝা যাবে কিডনিতে সমস্যা ঘটছে?

কিডনির সমস্যা হলে পেটে এবং পিঠে ব্যথা হয়, সমস্যা হয় মূত্র নিঃসরণেও। কিডনিতে পাথর জমলেও এগুলি হয়। 

কী কী কারণে কিডনির সমস্যা হয়?
বাজে খাদ্যভ্যাস, দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিস, অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধির জন্য হতে পারে ডায়াবেটিস। এছাড়াও কিছু কিছু রোগের ক্ষেত্রে যে ওষুধপত্র খেতে হয় তার জেরেও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া স্বরূপ অনেকের কিডনিতে সমস্যা হয়। তেমন সমস্যা প্রথমেই বোঝা গেলে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে। 

সাধারণ ভাবে কোন পথে রোখা যায় এই বিপদ?

মূলত খাওয়া-দাওয়ার উপরই সবকিছু নির্ভর করছে। নির্ভর করে লাইফস্টাইলের উপরও। কিডনির পাথর হল লবণ এবং খনিজের ডিপোজিশন। মোটামুটি নিম্নলিখিত বিষয়ে সচেতন থাকলে কিডনি-সংক্রান্ত এই ধরনের বিপদ এড়ানো সম্ভব হবে।

১) খাবারে কাঁচা লবণ এড়াতে হবে

২) নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে

৩) নিয়মিত যথেষ্ট পরিমাণ পানি খেতে হবে

৪) ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে

৫) তাজা সবজি ও ফলমূল খেতে হবে নিয়ম করে।



25
যেসব পাপে আসমানি আজাব এসেছে

পাপের কারণে আল্লাহ বান্দার ওপর ক্রোধান্বিত হন। আমাদের সমাজে এমন কিছু পাপ আছে, যেগুলোর কারণে পূর্ববর্তী উম্মতের ওপর আসমানি আজাব অবতীর্ণ হয়েছে। ঝড়-তুফান, বিকট আওয়াজ, দুর্ভিক্ষ, ভূমিধস, অন্তরে ভয়-ভীতি জাগিয়ে তোলা, চেহারা বিকৃতি করা ইত্যাদি। বর্তমানেও যদি কেউ সেসব পাপাচারে লিপ্ত হয় তাহলে সে পূর্ববর্তী সব উম্মতের উত্তরাধিকার হিসেবে বলা হবে।
এবং তার ব্যাপার সে সব হুমকি থাকবে। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক পূর্ববর্তী উম্মতের মধ্যে কার ওপর কী কারণে আজাব নাজিল হয়েছে।

মাপে কম দেওয়া

শোয়াইব (আ.)-এর কওমের অভ্যাস ছিল, তারা যখন কারো থেকে কোনো জিনিস ক্রয় করত পূর্ণরূপে পরিমাপ করে নিত, আর যখন তারা তা বিক্রি করত তখন ওজনে কম দিত। আল্লাহর নবী তাঁদের এ ব্যাপারে সতর্ক করেন এবং ব্যবসা-বাণিজ্যে সততা ও স্বচ্ছতার কথা বলেন। কিন্তু তারা নবীর কথা শোনেনি, ফলে আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের প্রতি আজাব এসেছে। আল্লাহ বলেন, ‘[শোয়াইব (আ.) বলেন] হে আমার সম্প্রদায়, তোমরা ন্যায়সঙ্গতভাবে মাপো ও ওজন কোরো, লোকদের তাদের প্রাপ্য বস্তু কম দিয়ো না এবং জমিনে বিপর্যয় সৃষ্টি করে বেড়িয়ো না। ’ (সুরা হুদ, আয়াত : ৮৫)
আয়াতে তাদের ওপর আজাব নাজিল হওয়ার জন্য কুফরি ও মাপে কম দেওয়াকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বোঝা যায় যে মাপে কম দেওয়া আল্লাহ তাআলার কাছে মারাত্মক অপরাধ।

ফ্যাসাদ সৃষ্টি করা

সালেহ আলাইহিস সালামের জাতি, যারা জমিনে প্রভাব খাটিয়ে ফ্যাসাদ সৃষ্টি করত। তাদের আল্লাহ তাআলা বিশেষ শাস্তি দিয়েছেন। তাই যারা নিজের দাপট বিস্তারের জন্য পৃথিবীর বুকে নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে তারা হচ্ছে সেই জাতির উত্তরাধিকারী। আল্লাহ বলেন, ‘আর সে শহরে ছিল এমন ৯ জন ব্যক্তি, যারা দেশে বিপর্যয় সৃষ্টি করত এবং সংশোধন করত না। আর তারা এক চক্রান্ত করেছিল এবং আমরাও এক কৌশল অবলম্বন করলাম, অথচ তারা উপলব্ধিও করতে পারেনি। ’ (সুরা নামল, আয়াত : ৪৮, ৫০)

সমকামিতা

লুত (আ.)-এর জাতি এমন পাপাচারে লিপ্ত হয়েছে, যা আগের কোনো উম্মত করেনি। তারা তাদের যৌন চাহিদাকে অবৈধ পদ্ধতিতে নিবারণ করত। আল্লাহ তাআলা লুত (আ.)-এর মাধ্যমে তাদের সতর্ক করেছেন; এ ধরনের হীন ঘৃণিত কাজ থেকে যেন তারা ফিরে আসে। কিন্তু তারা তাদের অপকর্মে অনড় রইল। তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের ওপর শাস্তি আসে। আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাদের মাধ্যমে তাদের জনপদকে উল্টে দেন। তাদের ওপর পাথুরে বৃষ্টি বর্ষণ করেন। আল্লাহ বলেন, ‘অতঃপর সূর্যোদয়ের সময় প্রকাণ্ড চিৎকার তাদের পাকড়াও করল। তাতে আমরা জনপদকে উল্টিয়ে ওপর-নিচ করে দিলাম এবং তাদের ওপর পোড়ামাটির পাথর-কংকর বর্ষণ করলাম। ’ (সুরা হিজর, আয়াত : ৭৩, ৭৪)

অহংকার করা

শক্তিশালী এক সম্প্রদায় ছিল কওমে আদ। যারা স্থাপত্য ও শিল্পে অনন্য ছিল। তারা ছিল এক অহংকারী জাতি। তাদের ধ্বংসের কথা আল্লাহ তাআলা কোরআনে কারিমে বর্ণনা করেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘অতঃপর আদ সম্প্রদায়, তারা জমিনে অযথা অহংকার করেছিল এবং বলেছিল, আমাদের চেয়ে বেশি শক্তিশালী কে আছে? তবে কি তারা লক্ষ্য করেনি যে নিশ্চয়ই আল্লাহ, যিনি তাদের সৃষ্টি করেছেন, তিনি তাদের চেয়ে বেশি শক্তিশালী? আর তারা আমাদের নিদর্শনাবলিকে অস্বীকার করত। অতঃপর আমি তাদের পার্থিব জীবনে লাঞ্ছনার আজাব আস্বাদন করানোর জন্য তাদের ওপর প্রেরণ করলাম ঝঞ্ঝাবায়ু বেশ কতিপয় অশুভ দিনে। আর পরকালের আজাব তো আরো লাঞ্ছনাকর এ অবস্থায় যে তারা সাহায্যপ্রাপ্ত হবে না। ’ (সুরা ফুসসিলাত, আয়াত : ১৫, ১৬)


26
যেভাবে মাইগ্রেনের সমস্যা থেকে দূরে থাকা সম্ভব

মাইগ্রেন এক বিশেষ ধরনের মাথাব্যথা। মাথার যে কোনো এক পাশ থেকে শুরু হয়ে তা মারাত্মক কষ্টকর হয়ে ওঠে। মাইগ্রেনের যন্ত্রণা অত্যন্ত কষ্টদায়ক এবং দীর্ঘস্থায়ী। যাদের মাইগ্রেনের সমস্যা রয়েছে, তীব্র মাথা যন্ত্রণার পাশাপাশি তাদের বমি বমি ভাব, শরীরে এবং মুখে অস্বস্তিভাব দেখা দিতে পারে। এ ব্যথা টানা বেশ কয়েকদিন থাকে। তাই যাদের মাইগ্রেনের সমস্যা রয়েছে, তাদের এই ব্যথার জন্য দায়ী কিছু কাজ বা অভ্যাস এড়িয়ে চলাই ভালো। এতে মাইগ্রেনের সমস্যা থেকে দূরে থাকা সম্ভব হতে পারে।

১) পেট খালি রাখা:
পেট খালি থাকলে মাইগ্রেনের ব্যথা বা সমস্যা শুরু হতে পারে। এর কারণ হলো- খালি পেটে থাকলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দেয় যা মাইগ্রেনের সমস্যাকে বাড়িয়ে দিতে পারে।
২) আবহাওয়া:
অতিরিক্ত রোদে ঘোরাঘুরির কারণে মাইগ্রেনের ব্যথা শুরু হতে পারে। এছাড়াও অতিরিক্ত গরম, অতিরিক্ত আর্দ্রতার তারতম্যে ব্যথা হয়।

৩) মানসিক চাপ:

যারা অনেক বেশি চাপ নিয়ে একটানা কাজ করে চলেন এবং নিজের ঘুম ও খাওয়া-দাওয়ার কোনো নির্দিষ্ট সময় মেনে চলতে পারেন না, তাদের বেশি মাইগ্রেনে আক্রান্ত হতে দেখা যায়।

তাই মানসিক চাপ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন।
৪) অতিরিক্ত আওয়াজ: অতিরিক্ত আওয়াজ, খুব জোরে গান শোনা ইত্যাদির কারণেও মাইগ্রেনের সমস্যা শুরু হয়ে যেতে পারে। প্রচন্ড জোরে আওয়াজের কারণে প্রায় দুদিন টানা ব্যথার আশঙ্কা থাকে।

৫) অতিরিক্ত ঘুমানো:

মাত্র এক দিনের ঘুমের অনিয়মের কারণে শরীরের উপরে খারাপ প্রভাব পড়তে পাড়ে। যেমন- যারা নিয়মিত মোটামুটি ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা করে ঘুমান, তারা যদি হুট করে একদিন একটু বেশি ঘুমিয়ে ফেলেন, সেক্ষেত্রে ব্যথা শুরু হয়। তাই সচেতন হতে হবে।


27
যেসব কাজে নামাজ ভেঙে যায়

নামাজ বেহেশতের চাবি, ইসলামের স্তম্ভ, প্রতিটি জ্ঞানসম্পন্ন সাবালক মুসলমানের ওপর নামাজ ফরজ। তাই নামাজের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া উচিত। কিভাবে পড়লে নামাজ আল্লাহর কাছে অধিক গ্রহণযোগ্য হবে, তা যেমন জানা জরুরি, কী কী কারণে নামাজ ত্রুটিযুক্ত হয়ে যায় বা ভেঙে যায়, তা-ও অবশ্যই জানা উচিত। নিম্নে নামাজ ভঙ্গের কিছু কারণ তুলে ধরা হলো—

১.   নামাজে অশুদ্ধ কিরাত পড়া। যতটুকু অশুদ্ধ পড়লে কোরআনের অর্থ ও উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ পাল্টে যায়। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই নামাজ আবার পড়তে হবে। (ফাতাওয়ায়ে শামি : ১/৬৩৩-৬৩৪, হিন্দিয়া : ১/৮০, ফাতাওয়ায়ে ফকীহুল মিল্লাত : ৩/৩৪৪)
২.   নামাজের ভেতর কথা বলা। নামাজে এমন কোনো অর্থবোধক শব্দ করা, যা সাধারণ কথার অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়, তাহলে নামাজ ভেঙে যাবে। (ফাতাওয়ায়ে শামি : ১/৬১৩, আল বাহরুর রায়েক : ২/২)
৩.   নামাজরত অবস্থায় কোনো লোককে সালাম দেওয়া। (ফাতাওয়ায়ে শামি : ২/৯২, আল বাহরুর রায়েক : ২/১২০)

৪.   কারো সালামের উত্তর দেওয়া। (বুখারি, হাদিস : ১২১৭)

৫.   ব্যথা কিংবা দুঃখে উহ-আহ শব্দ করা। (আদ্দুররুল মুখতার : ১/৬১৯, আল বাহরুর রায়েক : ২/৪, মারাকিল ফালাহ : ১/১২১)

৬.   বিনা কারণে কাশি দেওয়া। (ফাতাওয়ায়ে শামি : ৩/৬১৮, মারাকিল ফালাহ : ১/১২১, আল বাহরুর রায়েক : ২/৫)
৭.   আমলে কাসির করা। ফিকাহবিদরা আমলে কাসিরের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বিভিন্ন মতামত ব্যক্ত করেছেন। এর মধ্যে বিশুদ্ধ ও নির্ভরযোগ্য অভিমত হলো, কোনো মুসল্লির এমন কাজে লিপ্ত হওয়া, যার কারণে দূর থেকে কেউ তাকে দেখলে তার মনে প্রবল ধারণা জন্মাবে যে ওই ব্যক্তি নামাজরত নয়। (ফাতাওয়ায়ে ফকীহুল মিল্লাত : ৩/৪৮৫, ফাতাওয়ায়ে শামি : ১/৬২৪-৬২৫, বায়েউস সানায়ে : ১/২৪১)

৮.   দুনিয়াবি কোনো বিপদে কিংবা বেদনায় শব্দ করে কাঁদা। (হাশিয়াতু তাহতাবি : ১/৩২৫, ফাতাওয়ায়ে শামি : ১/৬১৯, নুরুল ইজাহ, পৃষ্ঠা ৬৮)

৯.   তিন তাসবিহ পরিমাণ সতর খুলে থাকা। নামাজি ব্যক্তির নাভির নিচ থেকে হাঁটু পর্যন্ত শরীরের কোনো স্থান যদি তিন তাসবিহ পরিমাণ সময় অনাবৃত থাকে, তাহলে তার নামাজ ভেঙে যাবে। (ফাতওয়ায়ে শামি : ১/২৭৩, কাফি : ১/২৩৮, মাওয়াহিবুল জলিল : ১/৩৯৮, মুগনিল মুহতাজ : ১/১৮৮, হাশিয়াতুত তাহতাবি : ১/৩৩৭)
 উল্লেখ্য, নারীদের মাথাও সতর। কোনো কারণে মাথার ওড়না সরে গেলে নামাজ ভেঙে যাবে। (আবু দাউদ, হাদিস : ৬৪১, তিরমিজি, হাদিস : ৩৭৭, ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৬৫৫)

১০.  মুক্তাদি ছাড়া অন্য ব্যক্তির লোকমা (ভুল সংশোধন) লওয়া। যেমন—ইমাম সাহেব কিরাতে ভুল করছেন, সঙ্গে সঙ্গে নামাজের বাইরের কোনো লোক লোকমা দিলে তা গ্রহণ করা। (ফাতাওয়ায়ে শামি : ১/৬২২, হিন্দিয়া : ১/৯৮)

১১.  সুসংবাদ বা দুঃসংবাদের প্রত্যুত্তর করা। (ফাতাওয়ায়ে শামি : ১/৬১৩, আল বাহরুর রায়েক : ২/২)

১২.  অপবিত্র জায়গায় সিজদা করা। (বাদায়েউস সানায়ে : ১/১১৫, আল বাহরুর রায়েক : ২/৩৭, তাবয়িনুল হাকায়েক : ১/৯৫)

১৩.  কিবলার দিক থেকে সিনা (বুক) ঘুুরে যাওয়া। তবে অপারগতাবশত যানবাহনে নামাজের ক্ষেত্রে মাসআলা ভিন্ন। (মারাকিল ফালাহ : ১/১২১, নুরুল ইজাহ : ১/৬৮)
১৪.  নামাজে কোরআন শরিফ দেখে পড়া। (মারাকিল ফালাহ ১/১২৪, হাশিয়াতুত তাহতাবি ১/৩৩৬)। তবে সৌদি আরবের আলেমরা এই মাসআলার ক্ষেত্রে ভিন্নমত পোষণ করেন।

১৫.  নামাজে শব্দ করে হাসা। (কানযুদ্দাকায়েক : ১/১৪০)

১৬.  নামাজে সাংসারিক (দুনিয়াবি) কোনো বিষয় প্রার্থনা করা। (ফাতাওয়ায়ে শামি : ১/৬১৯, আল বাহরুর রায়েক : ২/৩)। তবে এই মাসআলার ক্ষেত্রে অন্য মাজহাবের ভিন্নমত আছে।

১৭.  হাঁচির জবাব দেওয়া। (ফাতাওয়ায়ে শামি : ২/১১৭)

১৮.  নামাজরত অবস্থায় খাওয়া ও পান করা। (মারাকিল ফালাহ : ১/১২১, নুরুল ইজাহ : ১/৬৮)
১৯.  ইমামের আগে মুক্তাদি দাঁড়ানো। মুক্তাদির পায়ের গোড়ালি ইমামের আগে চলে গেলে নামাজ ভেঙে যাবে। তবে যদি (দুজনের জামাতে নামাজের ক্ষেত্রে) মুক্তাদি ইমামের পায়ের গোড়ালির পেছনেই দাঁড়ায়, কিন্তু তিনি লম্বা হওয়ার কারণে তাঁর সিজদা ইমামকে অতিক্রম করে যায়, তাহলে তাঁর নামাজের কোনো ক্ষতি হবে না। (বাদায়েউস সানায়ে : ১/১৫৯, আল মাবসুত লিস সারাখসি : ১/৪৩)

এখানে নামাজ ভঙ্গের প্রসিদ্ধ ১৯টি কারণ তুলে ধরা হয়েছে। কিন্তু এর বাইরেও নামাজ ভঙ্গ হওয়ার আরো কারণ আছে। যেমন—কোনো প্রাপ্তবয়স্ক নারী পাশে এসে নামাজে দাঁড়িয়ে যাওয়া; ইমামের আগে কোনো রুকন আদায় করে ফেলা; ইচ্ছাকৃত অজু ভাঙার মতো কোনো কাজ করে ফেলা; পাগল, মাতাল কিংবা অচেতন হয়ে যাওয়া ইত্যাদি নামাজ ভঙ্গের কারণ।


28
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় শিম

শীত পড়তেই নানা ধরনের মৌসুমি সবজিতে ভরে যায় বাজার। এর মধ্যেই রয়েছে শিম। এই সময়ে প্রায় সব রান্নাতেই শিম দেওয়া হয়। কিন্তু কী হয় নিয়মিত শিম খেলে, তা কি জানা আছে?

শিমে রয়েছে নানা ধরনের খনিজ পদার্থ। তার সঙ্গেই রয়েছে ফাইবার, আয়রন এবং ক্যালশিয়াম। ফলে শিম নিয়মিত খাওয়া গেলে নানা দিক থেকে উপকার হয় শরীরের।

১. রোগের প্রতিকার এবং প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়ে।
২. প্রচুর পরিমাণ খনিজ পদার্থ থাকায় চুল পড়ার সমস্যা কমাতে সাহায্য করে শিম।

৩. অনেকটা ফাইবার থাকায় কোষ্ঠকাঠিন্য নিয়ন্ত্রণে থাকে।

৪. অনেকটা পানিও থাকে এই সবজিতে। ফলে ত্বকের আর্দ্রতা দূর করতেও সাহায্য করে শিম।

৫. রক্তে কোলেস্টেরল ও শর্করার মাত্রাও নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে শিম।

৬) হৃদরোগের ঝুঁকিও কমায় শিম।


29
অমিক্রনের পক্ষে টিকার সুরক্ষা ভেদ করা ‘প্রায় অসম্ভব’

করোনাভাইরাসের অন্য ধরনগুলোর তুলনায় নতুন ধরন অমিক্রন আরও গুরুতর অসুস্থতা তৈরি করবে—এমনটা মনে হচ্ছে না। এ ছাড়া কোভিড টিকার কারণে পাওয়া সুরক্ষা অমিক্রনের পক্ষে সম্পূর্ণরূপে ভেদ করা প্রায় অসম্ভব। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) শীর্ষস্থানীয় এক কর্মকর্তা গতকাল মঙ্গলবার এমনটাই বলেছেন।

বার্তা সংস্থা এএফপিকে ডব্লিউএইচওর এক কর্মকর্তা বলেন, ব্যাপকভাবে জিনগত রূপ পরিবর্তন করে আসা নতুন এ ধরন সম্পর্কে এখনো অনেক কিছুই অজানা থাকলেও প্রাথমিকভাবে হাতে আসা তথ্য-উপাত্ত ইঙ্গিত দিচ্ছে, ডেলটা কিংবা করোনার অন্য ধরনগুলোর চেয়ে অমিক্রন মানুষকে বেশি অসুস্থ করবে না।

সংস্থাটির জরুরি সেবাবিষয়ক পরিচালক মাইকেল রায়ান এএফপিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, প্রাথমিকভাবে আসা তথ্য-উপাত্ত করোনার নতুন এ ধরনে গুরুতর অসুস্থতার কোনো ইঙ্গিত দিচ্ছে না। গুরুতর অসুস্থতা বরং কম হওয়ারই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। অবশ্য এ নিয়ে তিনি আরও গবেষণার ওপর জোর দিয়েছেন।
মাইকেল রায়ান আরও বলেন, করোনার নতুন এ ধরন বেশি দিন শনাক্ত হয়নি। তাই এর যেকোনো ইঙ্গিত ব্যাখ্যার ব্যাপারে খুব সতর্ক থাকতে হবে। তিনি বলেন, একই সঙ্গে কোভিডের বিদ্যমান টিকাগুলো থেকে পাওয়া সুরক্ষা যে অমিক্রন একেবারে পাশ কাটিয়ে যাবে—এমন কোনো ইঙ্গিতও পাওয়া যায়নি।

৫৬ বছর বয়সী রায়ান আরও বলেন, ‘আমাদের হাতে আছে উচ্চমাত্রায় কার্যকর টিকা। গুরুতর অসুস্থতা কিংবা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার দিক বিবেচনায় এ পর্যন্ত আসা করোনার সব কটি ধরনের ক্ষেত্রে এসব টিকায় সুরক্ষার বিষয়টিও প্রমাণিত।’

ডব্লিউএইচওর এ কর্মকর্তা বলেন, এটা ভেবে বসে থাকার কোনো কারণ নেই যে অমিক্রনের ক্ষেত্রে এমনটা হবে না। দক্ষিণ আফ্রিকার বিজ্ঞানীদের করা প্রাথমিক একটি গবেষণায় পাওয়া তথ্য-উপাত্তের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সুরক্ষার দিকটি বিবেচনায় বিদ্যমান কোভিড টিকাগুলো অন্তত কাজ করবে।




Source: Prothom Alo

30

রাতে ঘুমানোর আগে সুরা আল–মুলক পড়ুন

আল–কোরআনে সুরা আল–মুলক নামের একটি স্বতন্ত্র সুরা আছে। এটি ৬৭ নম্বর সুরা। এ সুরা পাঠের সীমাহীন ফজিলত রয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কোরআনে এমন একটি সুরা আছে, যার মধ্যে ৩০টি আয়াত রয়েছে, যা তার পাঠকারী ব্যক্তির জন্য সুপারিশ করবে এবং তাঁকে ক্ষমা করে দেওয়া হবে। আর সেটি হলো “তাবারাকাল্লাজি বিয়াদিহিল মুলকু (সুরা মুলক)।’” (সুনানে আত-তিরমিজি ২৮৯১)।

প্রতি রাতে (রাতের যেকোনো সময়) সুরা মুলক তিলাওয়াত করা গুরুত্বপূর্ণ একটি সুন্নাত। আত-তিরমিজি শরিফের ২৮৯২ নম্বর হাদিস অনুযায়ী, রাসুলুল্লাহ (সা.) ‘আলিফ লাম মিম তানজিলুল কিতাব’ (সুরা আস-সাজদা) ও ‘তাবারাকাল্লাজি বিয়াদিহিল মুলকু’ (সুরা মুলক) তিলাওয়াত না করে কোনো দিন ঘুমাতেন না।

তবে এর মানে এই নয় যে সুরাটি দিনে পড়া যাবে না। এটি যেকোনো সময় পড়া যাবে, তবে রাতের বিশেষ জিকির হিসেবে এ সুরা পড়া উত্তম। সুরাটি নামাজের সঙ্গে পড়াও উত্তম। মুখস্থ না থাকলে দেখে দেখে অর্থ বুঝে পড়লে বিশেষ সওয়াব পাওয়া যায়।

সুরাটির নামকরণের মধ্যেই এর বিষয়বস্তু ও মর্মার্থ সুস্পষ্ট হয়েছে। আরবি ‘মুলক’ মানে ‘সার্বভৌমত্ব’। আসমান ও জমিনে সার্বভৌমত্বের একমাত্র মালিক যে আল্লাহ, তা এ সুরায় স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। এ সুরার শুরুতেই আল্লাহ সব ক্ষেত্রে তাঁর সার্বভৌম কর্তৃত্বের কথা ঘোষণা করেছেন।

দ্বিতীয় আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে আমল করার দিক থেকে কে উত্তম, তা পরীক্ষা করার জন্য যিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু ও জীবন। তিনি পরাক্রমশালী ও ক্ষমাশীল।’

খেয়াল করা দরকার, আল্লাহ বলছেন, ‘যিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু ও জীবন’। এতে বোঝা যায়, জীবনের মতো মৃত্যুও আলাদা একটি সৃষ্টি; অর্থাৎ শুধু জীবনের অবসান বা অনুপস্থিতিই মৃত্যু নয়। মৃত্যু স্বতন্ত্র একটি সৃষ্টি।
এ আয়াত থেকে স্পষ্ট হয়, যিনি মৃত্যু সৃষ্টি করেছেন, তিনি অবশ্যই মৃত্যু থেকে মুক্ত। অর্থাৎ মৃত্যু তাঁর ওপর কার্যকর হতে পারে না।

৩ ও ৪ নম্বর আয়াতে সাতটি আসমানে ও অন্যান্য ক্ষেত্রে আল্লাহর সৃষ্টির নৈপুণ্যের কথা বলা হয়েছে। এখানে আল্লাহ পাক তাঁর সৃষ্টিতে কোনো খুঁত বা অসংগতি আছে কি না, তা খুঁজে দেখতে বলেছেন। একবার নয়, বরং আরও একবার (বারবার) খুঁজে দেখতে বলা হয়েছে। কারণ, প্রথমবার মানুষ অবাক হয়ে কোনো কিছু দেখে। তখন কোনো ভুলত্রুটি–অসংগতি চোখে পড়ে না। দ্বিতীয়বার বা বারবার ভালো করে দেখলে ভুল ধরা পড়ে। তাই প্রথম অবাক দৃষ্টির পর দ্বিতীয় অনুসন্ধানী দৃষ্টি দিয়েও খুঁত বা অসংগতি খুঁজতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আল্লাহ সবার কাছে চ্যালেঞ্জ দিয়ে রেখেছেন, যতবারই দেখা হোক না কেন, কোনো অসংগতি ধরা পড়বে না। কোনো অসংগতি না পেয়ে মানুষের দৃষ্টি ক্লান্ত হয়ে লজ্জাবনতভাবে ফিরে আসবে।

এরপর পঞ্চম আয়াতে বলা হয়েছে, ‘আমি তোমাদের কাছের আসমানকে প্রদীপমালায় সজ্জিত করেছি। আর সেগুলোকে (প্রদীপ) শয়তানদের মেরে তাড়ানোর উপকরণ বানিয়ে দিয়েছি। এসব শয়তানের জন্য আমি প্রস্তুত করে রেখেছি জ্বলন্ত আগুনের শাস্তি।’
এই আসমানকে প্রদীপ দ্বারা (অর্থাৎ নক্ষত্ররাজি) যেমন সৌন্দর্যমণ্ডিত করা হয়েছে, তেমনি এগুলোকে আক্রমণের মাধ্যমও করা হয়েছে। অর্থাৎ আল্লাহর এই সৃষ্টির মধ্যে একই সঙ্গে সৌন্দর্যের কোমলতা যেমন রয়েছে, তেমনি আক্রমণের কঠোরতাও রয়েছে।

১৫ নম্বর আয়াতের প্রথম অংশে আল্লাহ বলেছেন, ‘তিনি তো সেই, যিনি ভূপৃষ্ঠকে তোমাদের জন্য সুগম বা অনুগত করে দিয়েছেন।’

এর পরের অংশে আল্লাহ বলছেন, ‘তোমরা এর (ভূপৃষ্ঠ) ওপর চলাফেরা করো এবং আল্লাহর দেওয়া রিজিক খাও। তোমাদের তাঁর কাছেই ফিরে যেতে হবে।’

সুরা আল–মুলককে ৬টি অংশে ভাগ করা যায়:

প্রথম অংশে (আয়াত ১-৪) আল্লাহর ক্ষমতা বর্ণনা করা হয়েছে এবং শেষ অংশে (আয়াত ২৮-৩০) আল্লাহর ক্ষমতার তুলনায় আমাদের দুর্বলতার কথা প্রকাশ করা হয়েছে।

দ্বিতীয় অংশে (আয়াত ৫-১৫) জাহান্নাম ও জান্নাতের কথা এসেছে। তৃতীয় অংশে (আয়াত ১৬-২২) বলা হয়েছে, বিপদ শিগগির আসন্ন। তার প্রস্তুতির জন্য কতটুকু সময় প্রয়োজন, সেটা বলা হয়েছে পরের অংশে, অর্থাৎ চতুর্থ অংশে (আয়াত ২৩-২৪)।

পঞ্চম অংশে (আয়াত ২৫-২৭) প্রকাশ করা হয়েছে যে মানুষ অবাধ্যবশত জানতে চায়, সে বিপদ কবে ঘটবে?

আল্লাহ আমাদের প্রতি জুমাবারে অসাধারণ এ সুরা পড়ার ও বোঝার তৌফিক দিন।




● ফেরদৌস ফয়সাল প্রথম আলোর হজ প্রতিবেদক। afef78@gmail.com

Pages: 1 [2] 3 4 ... 11