Show Posts

This section allows you to view all posts made by this member. Note that you can only see posts made in areas you currently have access to.


Messages - ashraful.diss

Pages: 1 ... 4 5 [6] 7 8 ... 11
76
সমস্ত মানুষের কান্নার চেয়েও আদম (আঃ)-এর কান্না বেশি

এভাবে আদম (আঃ) ও হাওয়াকে (আঃ) দুনিয়ায় পাঠিয়ে দিলেন। আদমকে পাঠালেন স্বরণদ্বীপে আর হাওয়াকে পাঠালেন জিদ্দায়। এভাবে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় তাঁরা আল্লাহর দরবারে কান্না-কাটি করতে লাগলেন। সুদীর্ঘ কাল অতিবাহিত হওয়ার পর উভয়ের মধ্যে পুনরায় সাক্ষাৎ হল আরাফাতের ময়দানে। শয়তান গাদ্দারি করে ক্ষমা চায়নি কিন্তু হযরত আদম (আঃ) নিজের ভুল স্বীকার করে কান্না-কাটি শুরু করলেন।

বিশ্ববিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ তাফসীরে মাযহারীর মধ্যে এসেছে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, আদম (আঃ) ও হাওয়া (আঃ) দুইশত বৎসর পর্যন্ত ক্রন্দন করেছেন এবং চল্লিশ দিন পর্যন্ত কোন খানা-পানি খাননি। হযরত আদম (আঃ) একশত বৎসর পর্যন্ত হাওয়া (আঃ)-এর নিকট আসেননি। ইউনুস ইবনে হাব্বান ও আলকমা ইবনে  মারছাদ (রাঃ) বলেন, যদি সমগ্র জগদ্বাসীদের চোখের পানি একত্রিত করা হয় তবুও হযরত দাউদ (আঃ)-এর চোখের পানি তার থেকে বেশি হয়ে যাবে। আর যদি হযরত দাউদ (আঃ) সহ সারা দুনিয়ার সমস্ত মানুষের চোখের পানি একত্রিত করা হয় তাহলে হযরত আদম (আঃ)-এর চোখের পানি তার থেকে অনেক বেশি হয়ে যাবে। শাহির ইবনে হাওশাব (রাঃ) বলেন যে, হযরত আদম (আঃ) নিষিদ্ধ গাছের ফল খাওয়ার অপরাধের জন্য আল্লাহর কাছে লজ্জিত হয়ে তিনশত বৎসর পর্যন্ত আকাশের দিকে মাথা উঁচু করেননি। তারা উভয়েই সর্বদা আল্লাহর কাছে এই বলে কান্না-কাটি করতেন

قَالَا رَبَّنَا ظَلَمۡنَاۤ اَنۡفُسَنَا ٜ وَاِنۡ لَّمۡ تَغۡفِرۡ لَنَا وَتَرۡحَمۡنَا لَنَکُوۡنَنَّ مِنَ الۡخٰسِرِیۡنَ

তারা উভয়ে বললঃ হে আমাদের পালনকর্তা আমরা নিজেদের প্রতি জুলম করেছি। যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং আমাদের প্রতি অনুগ্রহ না করেন, তবে আমরা অবশ্যই অবশ্যই ধ্বংস হয়ে যাব। (সুরা আল আরাফ -আয়াত ২৩)

এভাবে  সুদীর্ঘ কাল পর্যন্ত তারা কান্না-কাটি করতে  ছিল। কিন্তু তাদের দোয়া আল্লাহ কবুল করেন না। অবশেষে  তারা বললেন, রাব্বুল আলামীন! আপনি আমাদেরকে মুহাম্মদ (সাঃ)-এর অসিলায় মাফ করে দেন। তখন আল্লাহ পাক বললেন, হে আদম! তোমরা কোন মুহাম্মদ এর পরিচয় দিয়ে ক্ষমা চেয়েছ? তারা জবাব দিলেন, হে দয়াময় প্রভু! আমরা জান্নাতে অবস্থান কালে জান্নাতের দরজায় লেখা দেখেছিলাম কালেমা-লা’-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ! সুতরাং তোমার পবিত্র নামের সাথে যার নামকে সংযুক্ত করে রেখেছ তাঁর অসিলায় ক্ষমা করে দাও। তখন আল্লাহ বললেন, হে আদম! যখন তুমি আমার বন্ধুর নাম নিয়ে ক্ষমা চেয়েছ এখনো যদি আমি তোমাদেরকে ক্ষমা না করি তাহলে আমার বন্ধুর নামের সম্মান থাকে না। তাই আমার বন্ধুর সম্মানার্থে তোমাদেরকে আমি আর ক্ষমা না করে পারলাম না। আজ আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিলাম। তোমাদের দোয়া কবুল করে নিলাম।


77
Common Forum/Request/Suggestions / নিষিদ্ধ গাছ
« on: January 18, 2022, 04:05:52 PM »
নিষিদ্ধ গাছ

আদম (আঃ) এবং হাওয়া (রাঃ) কে জান্নাতে বসবাস করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, সেখানে তারা সকল মানব জাতির প্রত্যাশিত জায়গায় জীবন যাপন করছিলো। তবে, আল্লাহ তা’আলা তাদের দুজনকে সেখানের সবকিছু উপভোগ করার অনুমতি দিয়েছিল শুধুমাত্র একটি গাছ ব্যতীত। আল্লাহ সুবহানু ওয়া তা’আলা তাদেরকে সেই গাছটির নিকটবর্তী হতেও সতর্কসরুপ নিষেধ করেছিল।

وَلَا تَقۡرَبَا ہٰذِہِ الشَّجَرَۃَ فَتَکُوۡنَا مِنَ الظّٰلِمِیۡنَ

“কিন্তু এ গাছের নিকটবর্তী হয়ো না। অন্যথায় তোমরা যালিমদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে পড়বে।”  {সূরা আল-বাকারা: আয়াত ৩৫; সূরা আল-আরাফ: আয়াত ১৯}

আদম (আঃ) এবং হাওয়া দুর্বল হয়ে থাকে। একটি মানুষের মধ্যে কিছুটা ভুলে যাবার প্রবণতাও থাকে, হৃদয়ে পরিবর্তন আসে আর দৃঢ়তা বাড়ে ও কমে। ইবলিস প্রচণ্ড ঈর্ষার মধ্যে নিমজ্জিত থেকে আদম আ সা কে তার মানব দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তাকে বিভ্রান্ত করতে থাকে। সে প্রতিদিন তার মনে ফিসফিস করে প্ররোচণা দিতে থাকে, “আমি কি তোমাকে অমরত্বের পথনির্দশনা দিবো? যাতে তুমি চিরন্তন এই রাজ্যে বসবাস করে এর সবকিছু উপভোগ করতে পারো।আমি কি তোমাদের সেই গাছটার কাছে নিয়ে যাবো?”সে আরো বলে গেলো “তোমাদের পালনকর্তা তোমাদেরকে এই জন্যই এই ফল খেতে নিষেধ করেছে যেন তোমরা চিরস্থায়ী ফেরেশতা না হয়ে যাও। ইবলিস তাদেরকে ভরসা দিয়ে বলল যে আমি তোমাদের শুভাকাঙ্ক্ষী।

فَوَسۡوَسَ لَہُمَا الشَّیۡطٰنُ لِیُبۡدِیَ لَہُمَا مَا وٗرِیَ عَنۡہُمَا مِنۡ سَوۡاٰتِہِمَا وَقَالَ مَا نَہٰکُمَا رَبُّکُمَا عَنۡ ہٰذِہِ الشَّجَرَۃِ اِلَّاۤ اَنۡ تَکُوۡنَا مَلَکَیۡنِ اَوۡ تَکُوۡنَا مِنَ الۡخٰلِدِیۡنَ وَقَاسَمَہُمَاۤ اِنِّیۡ لَکُمَا لَمِنَ النّٰصِحِیۡنَ ۙ

সে বললঃ তোমাদের পালনকর্তা তোমাদেরকে এ বৃক্ষ থেকে নিষেধ করেননি; তবে তা এ কারণে যে, তোমরা না আবার ফেরেশতা হয়ে যাও-কিংবা হয়ে যাও চিরকাল বসবাসকারী। সে তাদের কাছে কসম খেয়ে বললঃ আমি অবশ্যই তোমাদের হিতাকাঙ্খী। {সূরা আল-আরাফ: আয়াত ২০-২১}

আদম (আঃ) নিজেই নিজেকে জিজ্ঞাসা করতো, “কি হবে যদি এই গাছের ফল খাই আমি? এমনও তো হতে পারে যে এইটাই অমরত্বের বৃক্ষ।” তার স্বপ্ন ছিল বেহেশতের নিখাদ পবিত্রতায় অনন্তকাল বেঁচে থাকার।

ইবলিস একটি লম্বা সময় ধরে তাদেরকে বোঝাতে থাকলো এবং শেষ পর্যন্ত, একদিন তারা সিদ্ধান্ত নিলো যে, সেই গাছের ফল খাবে। ইবলিস যে তাদের পরম শত্রু যে, তাদেরকে পথভ্রষ্ট করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করেছে, তারা দুজনেই তা ভুলে গিয়েছিল। আদম আঃ সাঃ হয়তো একথাও ভুলে গিয়েছিলো যে তিনি আল্লাহর কাছে শপথ নিয়েছিলেন যে সে গাছটি থেকে খাবেন না।

وَلَقَدۡ عَہِدۡنَاۤ اِلٰۤی اٰدَمَ مِنۡ قَبۡلُ فَنَسِیَ وَلَمۡ نَجِدۡ لَہٗ عَزۡمًا

আমি ইতিপূর্বে আদমকে নির্দেশ দিয়েছিলাম। অতঃপর সে ভুলে গিয়েছিল এবং আমি তার মধ্যে দৃঢ়তা পাইনি। {সূরা ত্বোহা: আয়াত ১১৫}

আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালার নিষেধাজ্ঞা সত্বেও আদম (আঃ) গাছটির নিকটবর্তী হলো এবং তারা দুজনেই সেই নিষিদ্ধ গাছের ফল খেল।

فَدَلّٰىہُمَا بِغُرُوۡرٍ ۚ فَلَمَّا ذَاقَا الشَّجَرَۃَ بَدَتۡ لَہُمَا سَوۡاٰتُہُمَا وَطَفِقَا یَخۡصِفٰنِ عَلَیۡہِمَا مِنۡ وَّرَقِ الۡجَنَّۃِ ؕ وَنَادٰىہُمَا رَبُّہُمَاۤ اَلَمۡ اَنۡہَکُمَا عَنۡ تِلۡکُمَا الشَّجَرَۃِ وَاَقُلۡ لَّکُمَاۤ اِنَّ الشَّیۡطٰنَ لَکُمَا عَدُوٌّ مُّبِیۡنٌ
 
অতঃপর প্রতারণাপূর্বক তাদেরকে সম্মত করে ফেলল। অনন্তর যখন তারা বৃক্ষ আস্বাদন করল, তখন তাদের লজ্জাস্থান তাদের সামনে খুলে গেল এবং তারা নিজের উপর বেহেশতের পাতা জড়াতে লাগল। তাদের প্রতিপালক তাদেরকে ডেকে বললেনঃ আমি কি তোমাদেরকে এ বৃক্ষ থেকে নিষেধ করিনি এবং বলিনি যে, শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। {সূরা আল-আরাফ: আয়াত ২২}

فَاَکَلَا مِنۡہَا فَبَدَتۡ لَہُمَا سَوۡاٰتُہُمَا وَطَفِقَا یَخۡصِفٰنِ عَلَیۡہِمَا مِنۡ وَّرَقِ الۡجَنَّۃِ ۫  وَعَصٰۤی اٰدَمُ رَبَّہٗ فَغَوٰی ۪ۖ

অতঃপর তারা উভয়েই এর ফল ভক্ষণ করল, তখন তাদের সামনে তাদের লজ্জাস্থান খুলে গেল এবং তারা জান্নাতের বৃক্ষ-পত্র দ্বারা নিজেদেরকে আবৃত করতে শুরু করল। আদম তার পালনকর্তার অবাধ্যতা করল, ফলে সে পথ ভ্রষ্ঠ হয়ে গেল। {সূরা ত্বোহা: আয়াত ১২১}

আদম (আঃ) এর খাওয়ার পর, তিনি আবিষ্কার করলেন যে, তিনি এবং তার স্ত্রী দুজনেই বিবস্ত্র। তাই, তারা লজ্জা নিবারণ করতে আশেপাশের গাছের পাতা দিয়ে নিজেদেরকে ঢাকতে শুরু করলো। সর্বশক্তিমান আল্লাহ আমাদেরকে কুরআনে এসব কথা জানিয়েছেন।

হে বনী-আদম শয়তান যেন তোমাদেরকে বিভ্রান্ত না করে; যেমন সে তোমাদের পিতামাতাকে জান্নাত থেকে বের করে দিয়েছে এমতাবস্থায় যে, তাদের পোশাক তাদের থেকে খুলিয়ে দিয়েছি-যাতে তাদেরকে লজ্জাস্থান দেখিয়ে দেয়। সে এবং তার দলবল তোমাদেরকে দেখে, যেখান থেকে তোমরা তাদেরকে দেখ না। আমি শয়তানদেরকে তাদের বন্ধু করে দিয়েছি, , যারা বিশ্বাস স্থাপন করে না। {সূরা আল-আরাফ: আয়াত ২৭}

মহান আল্লাহ তা’আলা আদম (আঃ) কে উদ্দেশ্য করে বলেন, “আমি কি তোমাদেরকে এ বৃক্ষ থেকে খেতে নিষেধ করিনি এবং বলিনি যে, শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। তারা উভয়ে বললঃ হে আমাদের পালনকর্তা আমরা নিজেদের প্রতি জুলম করেছি। যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন তবে আমরা অবশ্যই অবশ্যই ধ্বংস হয়ে যাব। আল্লাহ বললেনঃ তোমরা পৃথিবীতে নেমে গিয়ে সেখানে একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত বসোবাস করে মৃত্যুবরন করবে এবং সেখান থেকেই  পুনরুত্থিত হবে।

আমি কি তোমাদেরকে এ বৃক্ষ থেকে নিষেধ করিনি এবং বলিনি যে, শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। তারা উভয়ে বললঃ হে আমাদের পালনকর্তা আমরা নিজেদের প্রতি জুলম করেছি। যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং আমাদের প্রতি অনুগ্রহ না করেন, তবে আমরা অবশ্যই অবশ্যই ধ্বংস হয়ে যাব। আল্লাহ বললেনঃ তোমরা নেমে যাও। তোমরা এক অপরের শত্রু। তোমাদের জন্যে পৃথিবীতে বাসস্থান আছে এবং একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত ফল ভোগ আছে। বললেনঃ তোমরা সেখানেই জীবিত থাকবে, সেখানেই মৃত্যুবরন করবে এবং সেখান থেকেই  পুনরুত্থিত হবে। {সূরা আল-আরাফ: আয়াত ২২-২৫}

তারা জান্নাত ত্যাগ করলো এবং পৃথিবীতে অবতরণ করলো। তারা দুইজন অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইলেন। আল্লাহ তাদের তওবা কবুল করলেন।


78
আদম (আঃ) কে হাওয়া (রাঃ) এর সঙ্গে জান্নাতে বসবাস করার অনুমতি দেয়া হয়েছিল

মহান আল্লাহ তা’আলা আদম আঃ সাঃ থেকে হাওয়া রাঃ কে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ জানিয়েছেন যে তিঁনি হাওয়া রাঃ কে সৃষ্টি করেছেন যেন আদম আঃ তার সাথে থেকে সস্থি পায়।

ہُوَ الَّذِیۡ خَلَقَکُمۡ مِّنۡ نَّفۡسٍ وَّاحِدَۃٍ وَّجَعَلَ مِنۡہَا زَوۡجَہَا لِیَسۡکُنَ اِلَیۡہَا ۚ فَلَمَّا تَغَشّٰہَا حَمَلَتۡ حَمۡلًا خَفِیۡفًا فَمَرَّتۡ بِہٖ ۚ فَلَمَّاۤ اَثۡقَلَتۡ دَّعَوَا اللّٰہَ رَبَّہُمَا لَئِنۡ اٰتَیۡتَنَا صَالِحًا لَّنَکُوۡنَنَّ مِنَ الشّٰکِرِیۡنَ

তিনিই সে সত্তা যিনি তোমাদিগকে সৃষ্টি করেছেন একটি মাত্র সত্তা থেকে; আর তার থেকেই তৈরী করেছেন তার জোড়া, যাতে তার কাছে স্বস্তি পেতে পারে। অতঃপর পুরুষ যখন নারীকে আবৃত করল, তখন সে গর্ভবতী হল। অতি হালকা গর্ভ। সে তাই নিয়ে চলাফেরা করতে থাকল। তারপর যখন বোঝা হয়ে গেল, তখন উভয়েই আল্লাহকে ডাকল যিনি তাদের পালনকর্তা যে, তুমি যদি আমাদিগকে সুস্থ  ও ভাল দান কর  তবে আমরা তোমার শুকরিয়া আদায় করব। {সূরা আল-আরাফ: আয়াত ১৮৯}

আল্লাহ তাঁর শাহী দরবার বা জান্নাত থেকে ইবলিসকে বহিস্কার করে হযরত আদম (আঃ)-কে জান্নাতে বসবাসের স্থান দিলেন। কিছু দিন অতিবাহিত হওয়ার পর বিশাল জান্নাতে আদম (আঃ)-এর একা ভাল লাগে না। তাই একদিন তিনি ঘুমিয়ে ছিলেন তাঁর বাম পাড়জড়ের এক খানা বাকা হাড্ডি নিয়ে সমগ্র মানব জাতির আদি মাতা হযরত হাওয়া (আঃ)-কে আল্লাহ পাক সৃষ্টি করে তার পাশে বসায়ে রাখলেন।

মাদারেজুন নবুয়ত নামক কিতাবের মধ্যে আছে, নিদ্রা ভঙ্গের পর হযরত আদম (আঃ) মা হাওয়া (আঃ)-এর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তাঁর দিকে হাত বাড়াতে উদ্যত হয়েছিলেন। এমন সময় ফেরেশতারা বলল, হে আদম! যতক্ষণ পর্যন্ত তাকে বিবাহ না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত তাঁর দিকে হস্তক্ষেপ করা তোমার জন্য জায়েয হবে না। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, বিবাহ কিভাবে হবে? ফেরেশতারা জবাব দিল হে আদম! বিবাহ করলে হাওয়া (আঃ) তোমার স্ত্রী হবে আর তোমাদের ঔরসে সন্তানাদী হতে থাকবে। এভাবে আখেরী জামানায় তোমার এমন একজন সন্তানকে আল্লাহ পাক পাঠাবেন যাকে সৃষ্টি না করলে তোমাকেও সৃষ্টি করা হত না। সেই ভাগ্যবান সন্তানের উপর তিনবার দুরুদ শরীফ পাঠ না করলে হাওয়া (আঃ)-এর সাথে তোমার বিবাহ হবে না। আল্লাহ পাক আমাদের নবীকে (সাঃ) কত বড় সম্মানিত নবী করে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন যে তাঁর উপর দুরুদ না পড়লে আদম (আঃ)-এর বিবাহ হল না। অবশেষে আদম-হাওয়া (আঃ) জান্নাতে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে মহাসুখে বসবাস করতে ছিলেন।

ইবনে কাসীর রহমতুল্লাহ বলেছেন, আদম (আঃ) স্বর্গেই থাকতেন, একাকীত্ব বোধ করতেন এবং তার এমন কোনো সঙ্গীও ছিল না যার কাছ থেকে তিনি খানিকটা প্রশান্তি পেতে পারেন। একদিন তিনি ঘুমিয়ে ছিলেন। ঘুম থেকে উঠে মাথার কাছে কাউকে বসে থাকতে দেখলেন তিনি। এক সুন্দরী রমণী; স্নিগ্ধ আর কোমল দৃষ্টি মেলে তার দিকেই তাকিয়ে আছে।

আদম (আঃ) তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি কে?”  উত্তরে সে বললো, “আমি একজন নারী।”  তিনি আবার জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমাকে কেন সৃষ্টি করা হয়েছে?” জবাবে, “যাতে আমার মধ্যে তুমি প্রশান্তি খুঁজে পাও।”

ফেরেশতারা আদম (আঃ) এর কাছে তার নাম জানতে চাইলে জবাবে তিনি বললেন, হাওয়া (ইংরেজিতে Eve) – যার মানে জীবিত কিছু। তারা পুনরায় জিজ্ঞেস করলো, “আপনি কেন তাকে হাওয়া নামে ডাকছেন?” জবাবে আদম (আঃ) বললেন, “কারণ সে আমার থেকে সৃষ্টি হয়েছে আর আমি একজন জীবিত সত্তা।”

وَقُلۡنَا یٰۤاٰدَمُ اسۡکُنۡ اَنۡتَ وَزَوۡجُکَ الۡجَنَّۃَ وَکُلَا مِنۡہَا رَغَدًا حَیۡثُ شِئۡتُمَا ۪ وَلَا تَقۡرَبَا ہٰذِہِ الشَّجَرَۃَ فَتَکُوۡنَا مِنَ الظّٰلِمِیۡنَ

এবং আমি আদমকে হুকুম করলাম যে, তুমি ও তোমার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস করতে থাক এবং ওখানে যা চাও, যেখান থেকে চাও, পরিতৃপ্তিসহ খেতে থাক, কিন্তু এ গাছের নিকটবর্তী হয়ো না। অন্যথায় তোমরা যালিমদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে পড়বে। {সূরা আল-বাকারা: আয়াত ৩৫}

আবু হুরায়রা হইতে বর্ণিত আছে যে, নবী মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,“তোমরা নারীদেরকে উত্তম নাসীহাত প্রদান করবে। কেননা নারী জাতিকে পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আর পাঁজরের হাড়গুলোর মধ্যে উপরের হাড়টি বেশী বাঁকা। তুমি যদি তা সোজা করতে যাও, তাহলে তা ভেঙ্গে যাবে আর যদি ছেড়ে দাও, তাহলে সব সময় তা বাঁকাই থাকবে। কাজেই নারীদেরকে নাসীহাত করতে থাক।” {সহীহ বুখারী বই ৬০, হাদিস ৬/ ৩৩৩১}


79
নবীদের অঙ্গীকার

সর্বশক্তিমান আল্লাহ প্রত্যেকটি নবীদের কাছ থেকেও ধর্ম বাস্তবায়ন ও প্রচার করার অঙ্গীকার নিয়েছিলেন বিশেষ করে মুহাম্মদ (সা:), নূহ, ইব্রাহিম, মুসা ও ঈসা (আঃ)-এর কাছে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা নিয়েছিলেন।

وَاِذۡ اَخَذۡنَا مِنَ النَّبِیّٖنَ مِیۡثَاقَہُمۡ وَمِنۡکَ وَمِنۡ نُّوۡحٍ وَّاِبۡرٰہِیۡمَ وَمُوۡسٰی وَعِیۡسَی ابۡنِ مَرۡیَمَ ۪  وَاَخَذۡنَا مِنۡہُمۡ مِّیۡثَاقًا غَلِیۡظًا ۙ

যখন আমি পয়গম্বরগণের কাছ থেকে, আপনার কাছ থেকে এবং নূহ, ইব্রাহীম, মূসা ও মরিয়ম তনয় ঈসার কাছ থেকে অঙ্গীকার নিলাম এবং অঙ্গীকার নিলাম তাদের কাছ থেকে দৃঢ় অঙ্গীকার। {সূরা আল-আহযাব: আয়াত ৭}

আদম (আঃ) এবং ঈসা (আঃ) এর মধ্যে মিল

সর্বশক্তিমান আল্লাহ কুরআনে ঘোষণা করেছেন যে ঈসা (আঃ সাঃ) আর আদম (আঃ সাঃ) দেখতে একই রকম ছিলেন।

اِنَّ مَثَلَ عِیۡسٰی عِنۡدَ اللّٰہِ کَمَثَلِ اٰدَمَ ؕ خَلَقَہٗ مِنۡ تُرَابٍ ثُمَّ قَالَ لَہٗ کُنۡ فَیَکُوۡنُ

নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিকট ঈসার দৃষ্টান্ত হচ্ছে আদমেরই মতো। তাকে মাটি দিয়ে তৈরী করেছিলেন এবং তারপর তাকে বলেছিলেন হয়ে যাও, সঙ্গে সঙ্গে হয়ে গেলেন। {সূরা আল-ইমরান: আয়াত ৫৯}


80
আল্লাহর সাথে মানবজাতির অঙ্গীকার

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তালা একবার আদম (আঃ) এর পেছন বুলিয়ে সেখান থেকে তার বংশধরদের রূহ/আত্মা বের করে জিজ্ঞেস করেছিলঃ “আমি কি তোমাদের রব নই?” তাদের মধ্যে আমরা সহ, এই পৃথিবীতে এই পর্যন্ত যত মানুষ এসেছে এবং আসবে সবার রূহ উপস্থিত ছিল।

তখন, আমরা আল্লাহকেই আমাদের রব/প্রভু বলে সাক্ষ্য দিয়ে বলেছিলামঃ “অবশ্যই, আমরা অঙ্গিকার করে বলছি যে আপনি আমাদের পালনকর্তা।”

আমাদের সাক্ষ্য দেয়ার পর আল্লাহ তা’আলা বলেছিলেন, “আশা করি পুনরুত্থানের দিনেও তোমরা এই একই সাক্ষ্য দিতে পারবে।” কিন্তু এই ঘটনাটি আমরা ভূলে গিয়েছি।

তারপর আল্লাহ সুবহানু ওয়াতালা বলেছিল যে, যদি আমরা সক্ষম না হই, তাহলে আমরা যেন নিজের অজ্ঞতা বা নিজেদের বাপ-দাদার প্রথা অনুসরণ করাকে অজুহাত হিসেবে  না পেশ করি – কারণ, আল্লাহ আমাদের কুরআনের সাহায্যে পথনির্দেশনা দিয়ে গিয়েছেন।

وَاِذۡ اَخَذَ رَبُّکَ مِنۡۢ بَنِیۡۤ اٰدَمَ مِنۡ ظُہُوۡرِہِمۡ ذُرِّیَّتَہُمۡ وَاَشۡہَدَہُمۡ عَلٰۤی اَنۡفُسِہِمۡ ۚ  اَلَسۡتُ بِرَبِّکُمۡ ؕ  قَالُوۡا بَلٰی ۚۛ  شَہِدۡنَا ۚۛ  اَنۡ تَقُوۡلُوۡا یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ اِنَّا کُنَّا عَنۡ ہٰذَا غٰفِلِیۡنَ ۙ  اَوۡ تَقُوۡلُوۡۤا اِنَّمَاۤ اَشۡرَکَ اٰبَآؤُنَا مِنۡ قَبۡلُ وَکُنَّا ذُرِّیَّۃً مِّنۡۢ بَعۡدِہِمۡ ۚ اَفَتُہۡلِکُنَا بِمَا فَعَلَ الۡمُبۡطِلُوۡنَ وَکَذٰلِکَ نُفَصِّلُ الۡاٰیٰتِ وَلَعَلَّہُمۡ یَرۡجِعُوۡنَ

আর যখন তোমার পালনকর্তা বনী আদমের পৃষ্টদেশ থেকে বের করলেন তাদের সন্তানদেরকে এবং নিজের উপর তাদেরকে প্রতিজ্ঞা করালেন, আমি কি তোমাদের পালনকর্তা নই? তারা বলল, অবশ্যই, আমরা অঙ্গীকার করছি। আবার না কেয়ামতের দিন বলতে শুরু কর যে, এ বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। অথবা বলতে শুরু কর যে, অংশীদারিত্বের প্রথা তো আমাদের বাপ-দাদারা উদ্ভাবন করেছিল আমাদের পূর্বেই। আর আমরা হলাম তাদের পশ্চাৎবর্তী সন্তান-সন্ততি। তাহলে কি সে কর্মের জন্য আমাদেরকে ধ্বংস করবেন, যা পথভ্রষ্টরা করেছে? বস্তুতঃ এভাবে আমি বিষয়সমূহ সবিস্তারে বর্ণনা করি, যাতে তারা ফিরে আসে। {সূরা আল-আরাফ: আয়াত ১৭২-১৭৪}

যদিও এই পুরো ঘটনাটি আমরা ভুলে গিয়েছি – কিন্তু আমাদের ভিতর ফিতরা নামে একটি জিনিস আছে যে, জানে যে আল্লাহ আমাদের একমাত্র রব।

فَاَقِمۡ وَجۡہَکَ لِلدِّیۡنِ حَنِیۡفًا ؕ  فِطۡرَتَ اللّٰہِ الَّتِیۡ فَطَرَ النَّاسَ عَلَیۡہَا ؕ  لَا تَبۡدِیۡلَ لِخَلۡقِ اللّٰہِ ؕ  ذٰلِکَ الدِّیۡنُ الۡقَیِّمُ ٭ۙ  وَلٰکِنَّ اَکۡثَرَ النَّاسِ لَا یَعۡلَمُوۡنَ ٭ۙ

তুমি একনিষ্ঠ ভাবে নিজেকে ধর্মের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখ। এটাই আল্লাহর প্রকৃতি, যার উপর তিনি মানব সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই। এটাই সুপ্রতিষ্ঠিত দ্বীন, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না। {সূরা আর-রূম: আয়াত ৩০}

ইবনে কাসির রহমতুল্লাহ বলেছেন, আল্লাহ আদমকে উত্থাপন করে এবং সে সমগ্র মানব জাতীকে দেখতে পায়: তিনি তাদের মধ্যে ধনী-গরীব, সুগঠিত-দুর্বল, ভালো অবস্থা ও খারাপ অবস্থার মানুষ দেখতে পেলো। তারপর আদম (আঃ) বললেন: “হে আল্লাহ! আমি চাই আপনার সকল বান্দারা সমান হোক।” জবাবে আল্লাহ বললেন, “আমি প্রশংসা পছন্দ করি।”  আদম (আঃ) মানবজাতির মধ্যে নবীগণকে আলোকিত প্রদীপের মত দেখতে পেলেন।


81
তাই আল্লাহ তা’আলা এসব প্রতারণা এড়াতে আমাদেরকে বারংবার সতর্ক করেছেন

আমাদের চির-শত্রু, শয়তানের দ্বারা যেন আমরা প্রতারিত না হই সেইজন্য আল্লাহ আমাদেরকে কুরআনে বহুবার সতর্ক করে দিয়েছেন যেনো আমরা শয়তানের উপস্থিতি উপলব্ধি করে তাকে আমাদের সত্যিকারের শত্রু হিসেবে নেই:

یٰبَنِیۡۤ اٰدَمَ لَا یَفۡتِنَنَّکُمُ الشَّیۡطٰنُ کَمَاۤ اَخۡرَجَ اَبَوَیۡکُمۡ مِّنَ الۡجَنَّۃِ یَنۡزِعُ عَنۡہُمَا لِبَاسَہُمَا لِیُرِیَہُمَا سَوۡاٰتِہِمَا ؕ اِنَّہٗ یَرٰىکُمۡ ہُوَ وَقَبِیۡلُہٗ مِنۡ حَیۡثُ لَا تَرَوۡنَہُمۡ ؕ اِنَّا جَعَلۡنَا الشَّیٰطِیۡنَ اَوۡلِیَآءَ لِلَّذِیۡنَ لَا یُؤۡمِنُوۡنَ

হে বনী-আদম শয়তান যেন তোমাদেরকে বিভ্রান্ত না করে; যেমন সে তোমাদের পিতামাতাকে জান্নাত থেকে বের করে দিয়েছে এমতাবস্থায় যে, তাদের পোশাক তাদের থেকে খুলিয়ে দিয়েছি-যাতে তাদেরকে লজ্জাস্থান দেখিয়ে দেয়। সে এবং তার দলবল তোমাদেরকে দেখে, যেখান থেকে তোমরা তাদেরকে দেখ না। আমি শয়তানদেরকে তাদের বন্ধু করে দিয়েছি , যারা বিশ্বাস স্থাপন করে না।{সূরা আল-আরাফ: আয়াত ২৭}

 اِنَّ الشَّیۡطٰنَ لَکُمۡ عَدُوٌّ فَاتَّخِذُوۡہُ عَدُوًّا ؕ  اِنَّمَا یَدۡعُوۡا حِزۡبَہٗ لِیَکُوۡنُوۡا مِنۡ اَصۡحٰبِ السَّعِیۡرِ ؕ

শয়তান তোমাদের শত্রু; অতএব তাকে শত্রু রূপেই গ্রহণ কর। সে তার দলবলকে আহবান করে যেন তারা জাহান্নামী হয়।


82
যা ঘটেছিল তার জন্য ইবলিস আল্লাহকে দায়ী করেছিল

ইবলিসের যুক্তি ছিল যে আল্লাহ তাকে পথভ্রষ্ট করেছে। সে তার নিজের অবাধ্যতার দোষ স্বীকার না করে উল্টো আল্লাহ তা’আলা কেই দায়ী করে বললো যে, সে পৃথিবীর বিভিন্ন সৌন্দর্যে আকৃষ্ট করে মানব জাতীকে পথভ্রষ্ট করবে। সে প্রতিজ্ঞা করলো যে, মানবজাতিকে সে বিপথগামী করে তার সাথে জাহান্নামে নিয়ে যাবে।

قَالَ رَبِّ بِمَاۤ اَغۡوَیۡتَنِیۡ لَاُزَیِّنَنَّ لَہُمۡ فِی الۡاَرۡضِ وَلَاُغۡوِیَنَّہُمۡ اَجۡمَعِیۡنَ ۙ

সে বললঃ হে আমার পলনকর্তা, আপনি যেমন আমাকে পথ ভ্রষ্ট করেছেন, আমিও তাদের সবাইকে পৃথিবীতে নানা সৌন্দর্যে আকৃষ্ট করব এবং তাদের সবাইকে পথ ভ্রষ্ঠ করে দেব। {সূরা আল-হিজর: আয়াত ৩৯}

শয়তান মানুষদের এমন কুবুদ্ধি দেয়, যার জন্য আল্লাহর অবাধ্যতা তাদের কাছে আকর্ষণীয় লাগে। এবং সে যখন-তখন, সামনে-পিছনে, ডানে-বামে থেকে, যে কোনো ভাবেই আমাদেরকে আক্রমণ করতে পারে; শয়তান আমাদের অধিকাংশ মানুষকে প্রভাবিত করে আল্লাহর প্রতি যথাযথ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে বার্থ করে দেয়।

قَالَ فَبِمَاۤ اَغۡوَیۡتَنِیۡ لَاَقۡعُدَنَّ لَہُمۡ صِرَاطَکَ الۡمُسۡتَقِیۡمَ - ثُمَّ لَاٰتِیَنَّہُمۡ مِّنۡۢ بَیۡنِ اَیۡدِیۡہِمۡ وَمِنۡ خَلۡفِہِمۡ وَعَنۡ اَیۡمَانِہِمۡ وَعَنۡ شَمَآئِلِہِمۡ ؕ وَلَا تَجِدُ اَکۡثَرَہُمۡ شٰکِرِیۡنَ   

সে বললঃ আপনি আমাকে যেমন উদভ্রান্ত করেছেন, আমিও অবশ্য তাদের জন্যে আপনার সরল পথে বসে থাকবো। এরপর তাদের কাছে আসব তাদের সামনের দিক থেকে, পেছন দিক থেকে, ডান দিক থেকে এবং বাম দিক থেকে। আপনি তাদের অধিকাংশকে কৃতজ্ঞ পাবেন না। {সূরা আল-আরাফ: আয়াত ১৬-১৭}


83
ইবলিস বেঁচে থাকার এবং মানবজাতিকে বিপথগামী করার অনুমতি চেয়েছিল

আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন যখন ইবলিস শয়তানের উপর নারাজ হয়ে তাকে জান্নাত থেকে বহিস্কার করে দিলেন তখন তার উচিত ছিল নিজের অপরাধ স্বীকার করে আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করা কিন্তু শয়তান তা করল না। তাফসীরে জুমাল, তাফসীরে ছাবী ও যখীরায়ে মা’লুমাত নামক কিতাবের মধ্যে এসেছে, সে দাবি করল, হে আল্লাহ! আমি আশি হাজার বৎসর পর্যন্ত তোমার জান্নাত দেখা-শোনা করেছি। ত্রিশ হাজার বৎসর পর্যন্ত আরশে আজীম বহনকারী ফেরেশতাদের সরদারী করেছি। বিশ হাজার বৎসর পর্যন্ত ফেরেশতাদেরকে শিক্ষা দিয়েছি। চৌদ্দ হাজার বৎসর পর্যন্ত আরশে আজীম তাওয়াফ করেছি। এছাড়া আরো যত ইবাদত-বন্দেগী, নামায-রোযা, তাসবীহ-তাহলীল আদায় করেছি তার বিনিময়ে আমাকে কিয়ামত পর্যন্ত হায়াত দাও যাতে আমি আদম জাতির রক্তের সাথে চলে তাদেরকে ধোকা দিতে পারি। আল্লাহ বললেন, তুই যদি আখেরাত না চাস তাহলে তোর ইবাদত-বন্দেগীর বিনিময়ে তোকে কিয়ামত পর্যন্ত হায়াত দান করলাম। এ সুযোগ পেয়ে ইবলিস শয়তান বলল, হে মাবুদ! তোমার ইজ্জতের কসম করে বলছি, আমি মানব জাতিকে এমনভাবে ধোকা দিব যে, কিছু সংখ্যক মুখলিছ বান্দা ব্যতীত অন্যান্য সকল বান্দা-বান্দীকে একদিন তোমার অবাধ্য করে ফেলব ফলে তারা তোমার কথা আর শুনবে না। তখন আল্লাহ পাক বললেন------

قَالَ فَالۡحَقُّ ۫  وَالۡحَقَّ اَقُوۡلُ ۚ - لَاَمۡلَـَٔنَّ جَہَنَّمَ مِنۡکَ وَمِمَّنۡ تَبِعَکَ مِنۡہُمۡ اَجۡمَعِیۡنَ

আল্লাহ বললেনঃ তাই ঠিক, আর আমি সত্য বলছি, তোর দ্বারা আর তাদের মধ্যে যারা তোর অনুসরণ করবে তাদের দ্বারা আমি জাহান্নাম পূর্ণ করব। {সুরা ছোয়াদঃ আয়াত ৮৪ - ৮৫}

ইবলিস তখন কিয়ামত পর্যন্ত তাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য আল্লাহ তা’আলার কাছে অনুরোধ করে। তাকে কেয়ামতের আগ পর্যন্ত বেঁচে থাকার অনুমতি দেয়া হয়। তিনি তার অস্বীকারকে ন্যায্যতার বন্ধনে বাঁধার চেষ্টায় বলেছিল যে, কাদামাটি থেকে সৃষ্ট এই নতুন সৃষ্টি (যাকে ইবলিসের চাইতেও সম্মানিত করা হয়েছে) তার পক্ষে এই মানুষকে খুব সহজেই বিভ্রান্ত এবং বিপথগামী করা সম্ভব।

ইবলিসের এই চ্যালেঞ্জটিকে সর্বদা আমাদের মাথায় রাখতে হবে:

قَالَ اَرَءَیۡتَکَ ہٰذَا الَّذِیۡ کَرَّمۡتَ عَلَیَّ ۫ لَئِنۡ اَخَّرۡتَنِ اِلٰی یَوۡمِ الۡقِیٰمَۃِ لَاَحۡتَنِکَنَّ ذُرِّیَّتَہٗۤ اِلَّا قَلِیۡلً

সে বললঃ দেখুন তো, এনা সে ব্যক্তি, যাকে আপনি আমার চাইতেও উচ্চ মর্যাদা দিয়ে দিয়েছেন। যদি আপনি আমাকে কেয়ামত দিবস পর্যন্ত সময় দেন, তবে আমি সামান্য সংখ্যক ছাড়া তার বংশধরদেরকে সমূলে নষ্ট করে দেব। {সূরা আল-বনী ইসরাইল: আয়াত ৬২}

قَالَ رَبِّ فَاَنۡظِرۡنِیۡۤ اِلٰی یَوۡمِ یُبۡعَثُوۡنَ - قَالَ فَاِنَّکَ مِنَ الۡمُنۡظَرِیۡنَ

সে বললঃ হে আমার পালনকর্তা, আপনি আমাকে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত অবকাশ দিন। আল্লাহ বললেনঃ তোমাকে অবকাশ দেয়া হল। {সূরা আল-হিজর: আয়াত ৩৬-৩৭; সূরা আল-আরাফ: আয়াত ১৪-১৫; সূরা সাদ: ৭৯-৮০}


84
ইবলিস নিজেকে আদম (আঃ) এর সঙ্গে তুলনা করার চেষ্টা করেছিল


আল্লাহ তা’আলা যখন ইবলিসকে আদেশ অস্বীকার করার যথাযথ কারণ উল্লেখ করতে বললেন তখন ইবলিস নিজেকে আদম (আঃ) এর সঙ্গে তুলনা করে তার উপর শ্রেষ্ঠত্ব দাবী করে বলেছিল “আমি আদমের চাইতে শ্রেষ্ঠ। আপনি আমাকে আগুন দিয়ে সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে সৃষ্টি করেছেন মাটি দিয়ে।” ইবলিসের বিশ্বাস ছিল যে, সৃষ্টি জগতে সে আদম (আঃ) এর চাইতেও উন্নত এবং অধিক সম্মানের অধিকারী একটি সৃষ্টি। সেইজন্য, আল্লাহ আদেশ করা সত্ত্বেও ইবলীস সেজদায় যেতে অস্বীকার করেছিল। আসলে, তার মনের মধ্যে খারাপ প্রকৃতির হিংসা জন্মেছিল। ইবলিসের আদম (আঃ) এর প্রতি ঈর্ষা কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে উঠে এসেছে:

قَالَ مَا مَنَعَکَ اَلَّا تَسۡجُدَ اِذۡ اَمَرۡتُکَ ؕ قَالَ اَنَا خَیۡرٌ مِّنۡہُ ۚ خَلَقۡتَنِیۡ مِنۡ نَّارٍ وَّخَلَقۡتَہٗ مِنۡ طِیۡنٍ

আল্লাহ বললেনঃ আমি যখন নির্দেশ দিয়েছি, তখন তোকে কিসে সেজদা করতে বারণ করল? সে বললঃ আমি তার চাইতে শ্রেষ্ট। আপনি আমাকে আগুন দ্বারা সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে সৃষ্টি করেছেন মাটির দ্বারা।{সূরা আল-আরাফ: আয়াত ১২}

قَالَ اَنَا خَیۡرٌ مِّنۡہُ ۚ خَلَقۡتَنِیۡ مِنۡ نَّارٍ وَّخَلَقۡتَہٗ مِنۡ طِیۡنٍ

সে বললঃ আমি তার চেয়ে উত্তম আপনি আমাকে আগুনের দ্বারা সৃষ্টি করেছেন, আর তাকে সৃষ্টি করেছেন মাটির দ্বারা। { সূরা সাদ: আয়াত ৭৬}

قَالَ یٰۤـاِبۡلِیۡسُ مَا لَکَ اَلَّا تَکُوۡنَ مَعَ السّٰجِدِیۡنَ - قَالَ لَمۡ اَکُنۡ لِّاَسۡجُدَ لِبَشَرٍ خَلَقۡتَہٗ مِنۡ صَلۡصَالٍ مِّنۡ حَمَاٍ مَّسۡنُوۡنٍ

আল্লাহ বললেনঃ হে ইবলিস, তোমার কি হলো যে তুমি সেজদাকারীদের অন্তর্ভূক্ত হতে স্বীকৃত হলে না? বললঃ আমি এমন নই যে, একজন মানবকে সেজদা করব, যাকে আপনি পচা কর্দম থেকে তৈরী ঠনঠনে বিশুষ্ক মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছেন। {সূরা আল-হিজর: আয়াত ৩২-৩৩}

وَاِذۡ قُلۡنَا لِلۡمَلٰٓئِکَۃِ اسۡجُدُوۡا لِاٰدَمَ فَسَجَدُوۡۤا اِلَّاۤ اِبۡلِیۡسَ ؕ  قَالَ ءَاَسۡجُدُ لِمَنۡ خَلَقۡتَ طِیۡنًا ۚ

স্মরণ কর, যখন আমি ফেরেশতাদেরকে বললামঃ আদমকে সেজদা কর, তখন ইবলীস ব্যতীত সবাই সেজদায় পড়ে গেল। কিন্তু সে বললঃ আমি কি এমন ব্যক্তিকে সেজদা করব, যাকে আপনি মাটির দ্বারা সৃষ্টি করেছেন? {সূরা আল-বনী ইসরাইল: আয়াত ৬১}

আল্লাহ তায়ালা ইবলিসকে তার স্থান ত্যাগ করার নির্দেশ দিলেন

অস্বীকারের কারণে, ইবলিসকে বহিষ্কার করে দেয়া হয়েছিল:


قَالَ فَاہۡبِطۡ مِنۡہَا فَمَا یَکُوۡنُ لَکَ اَنۡ تَتَکَبَّرَ فِیۡہَا فَاخۡرُجۡ اِنَّکَ مِنَ الصّٰغِرِیۡنَ

বললেন তুই এখান থেকে যা। এখানে অহংকার করার কোন অধিকার তোর নাই। অতএব তুই বের হয়ে যা। তুই হীনতমদের অন্তর্ভুক্ত। {সূরা আল-আরাফ: আয়াত ১৩}

قَالَ فَاخۡرُجۡ مِنۡہَا فَاِنَّکَ رَجِیۡمٌ

আল্লাহ বললেনঃ বের হয়ে যা, এখান থেকে। কারণ, তুই অভিশপ্ত। {সূরা আল-হিজর: আয়াত ৩৪; সূরা সাদ: আয়াত ৭৭}

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার এই গর্হিতমূলক কথা শ্রবণ করে বললেন, হে শয়তান! আজ থেকে তোর স্থান জান্নাতে নেই তুই বহিস্কার হয়ে যা তুই আজ থেকে বিতাড়িত শয়তান। আর কেয়ামত পর্যন্ত তোর উপর আমার লানত বর্ষিত হতে থাকবে।

আল্লাহ পাকের এই অসন্তুষ্টজনক কথা শুনে তার উচিত ছিল ক্ষমা প্রার্থনা করা। তাতো দূরের কথা তাফসীরে জালালাইন শরীফের হাশিয়ার মধ্যে আছে, পরবর্তীতে আদম (আঃ)-এর কবর দেখাই দিয়ে আল্লাহ বলেছিলেন, তোর জন্য তো জাহান্নাম অবধারিত হয়েছে, এখনো তুই আদমের কবরে একটা সিজদা করলে আমি তোকে মাফ করে দিব। কিন্তু এত বড় সুযোগ পেয়েও ইবলিস আল্লাহর কথা মানল না বরং জবাব দিল যেই আদম (আঃ)-কে জীবিত অবস্থায় সিজদা করলাম না তাঁর কবরে এখন সিজদা করা অসম্ভব। এমনকি কিয়ামতের পর আদম (আঃ) জান্নাতে চলে যাবেন আর ইবলিস শয়তান জাহান্নামে গিয়ে কঠিন আজাব ভোগ করতে থাকবে। এভাবে এক লক্ষ বৎসর অতিবাহিত হওয়ার পর মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আদম (আঃ)-কে জান্নাত থেকে বাহির করে আনবেন আর ইবলিস শয়তানকেও জাহান্নাম থেকে বাহিরে এনে বলবেন, এখনো যদি আদম (আঃ)-কে সিজদা করিস আমি তোকে ক্ষমা করে দেব।

কিন্তু শয়তানের কপালে এমন ভাবে আগুন লেগেছে যে, এত বড় আজাবে গ্রেফতার থেকেও মুক্তি পাওয়ার জন্য আদমকে (আঃ) সিজদা করবে না। তখন আল্লাহ পাক ঘোষণা করে দিবেন ইবলিস! তুই পুনরায় জাহান্নামে চলে যা। সে জাহান্নামে জ্বলতে রাজি কিন্তু আদমকে সিজদা করতে রাজি হবে না। এর নামই হল ইবলিসের শয়তানী। {জালালাইন শরীফ-৮ পৃষ্ঠা}


85
সর্বশক্তিমান আল্লাহ ফেরেশতাগণ ও ইবলিসকে – আদম (আঃ) এর সামনে সেজদা দিতে আদেশ দিলেন

সেই সময়টাতে ইবলিস(জ্বিন)-কে তার ফেরেশতাদের সাথে অবস্থান করে আল্লাহ তা’আলার ইবাদত করার অনুমতি দেয়া হয়েছিল। এরপর সময় আসলো যখন আল্লাহ্‌ ফেরেশতাদের নির্দেশ দিলেন (তাদের মধ্যে ইবলিসও উপস্থিত ছিল) আমি যখন রূহ ফুঁকব তখন তোমরা আদম (আঃ) কে সম্মানজনক সেজদা করবে।

وَلَقَدۡ خَلَقۡنٰکُمۡ ثُمَّ صَوَّرۡنٰکُمۡ ثُمَّ قُلۡنَا لِلۡمَلٰٓئِکَۃِ اسۡجُدُوۡا لِاٰدَمَ ٭ۖ فَسَجَدُوۡۤا اِلَّاۤ اِبۡلِیۡسَ ؕ لَمۡ یَکُنۡ مِّنَ السّٰجِدِیۡنَ

আর আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি, এরপর আকার-অবয়ব, তৈরী করেছি। অতঃপর আমি ফেরেশতাদেরকে বলছি-“আদমকে সেজদা কর” তখন সবাই সেজদা করেছে, কিন্তু ইবলীস সে সেজদাকারীদের অন্তর্ভূক্ত ছিল না। {সূরা আল-আরাফ: আয়াত ১১}

ইবলিস সেজদা করতে অস্বীকার করে এবং শয়তান-এ রূপান্তরিত হয়

ইবলিস অহংকারের কারণে সর্বশক্তিমান আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করতে অস্বীকৃতি জানায় এবং একজন কাফের (শয়তান) হয়ে যায়:

وَاِذۡ قُلۡنَا لِلۡمَلٰٓئِکَۃِ اسۡجُدُوۡا لِاٰدَمَ فَسَجَدُوۡۤا اِلَّاۤ اِبۡلِیۡسَ ؕ اَبٰی وَاسۡتَکۡبَرَ ٭۫ وَکَانَ مِنَ الۡکٰفِرِیۡنَ

এবং যখন আমি হযরত আদম (আঃ)-কে সেজদা করার জন্য ফেরেশতাগণকে নির্দেশ দিলাম, তখনই ইবলীস ব্যতীত সবাই সিজদা করলো। সে (নির্দেশ) পালন করতে অস্বীকার করল এবং অহংকার প্রদর্শন করলো। ফলে সে কাফেরদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে গেল। {সূরা আল-বাকারা: আয়াত ৩৪}

فَسَجَدَ الۡمَلٰٓئِکَۃُ کُلُّہُمۡ اَجۡمَعُوۡنَ - اِ لَّاۤ اِبۡلِیۡسَ ؕ اِسۡتَکۡبَرَ وَکَانَ مِنَ الۡکٰفِرِیۡنَ     

অতঃপর সমস্ত ফেরেশতাই একযোগে সেজদায় নত হল,কিন্তু ইবলীস; সে অহংকার করল এবং অস্বীকারকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল। { সূরা সাদ: আয়াত ৭৩-৭৪}

فَسَجَدَ الۡمَلٰٓئِکَۃُ کُلُّہُمۡ اَجۡمَعُوۡنَ -اِلَّاۤ اِبۡلِیۡسَ ؕ اَبٰۤی اَنۡ یَّکُوۡنَ مَعَ السّٰجِدِیۡنَ

তখন ফেরেশতারা সবাই মিলে সেজদা করলো। কিন্তু ইবলীস-সে সেজদাকারীদের অন্তর্ভূক্ত হতে স্বীকৃত হলো না। {সূরা আল-হিজর: আয়াত ৩০-৩১}


86
আল্লাহ আদম (আঃ) কে সকল কিছুর নাম শেখালেন

আল্লাহ সুবহানাতায়ালা আদম আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সবকিছুর নাম শিখিয়ে দিলেন। সব মানুষ এবং সব বস্তুর নাম তার জানা আছে। তারপর আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতাদেরকে কিছু জিনিসের নাম জিজ্ঞেস করলেন, তারা উত্তরে বলল আল্লাহ আপনি সর্ব জ্ঞানী, আমরা তো শুধু ততটুকই জানি যা আপনি আমাদেরকে শিখিয়েছেন। তারপর, আল্লাহ আদম আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সেইসব জিনিসের নাম জিজ্ঞেস করলেন, সে ফেরেশতাদের সামনে সেগুলোর নাম বলে দিলেন। ফলে এলমের ফযীলতের কারণে সম্মানার্থে আদমকে সিজদা করতে আল্লাহ পাক নির্দেশ দিলে সমস্ত ফেরেশতারা সিজদায় পড়ে গেল। তাফসীরে জালালাইন শরীফের হাশিয়ায় লেখা আছে, ফেরেশতারা আদম (আঃ)-এর দিকে পাঁচশত বৎসর পর্যন্ত সিজদায় পড়ে রইল। কিন্তু ঐ মজলিসে ছিল ইবলিস। সে সিজদা করল না। এইভাবে, আল্লাহ ফেরেশতাদেরকে দেখিয়ে দিলেন যে তিনি আদম আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এমন জ্ঞান দিয়েছিলেন যা তিনি ফেরেশতাদেরকেও দেন নি। তারপর আল্লাহ তা’আলা বললেন, যে তিনি জানেন কে কি প্রকাশ করে, আর কি কি গোপন করে – কোনো কিছুই তার জ্ঞানের আওতাধীন নয়। এইখানে একটি আশ্চর্যজনক ব্যাপার হল যে, তখন সেখানে ফেরেশতা এবং আদম আলাইহিস সালাম উপস্থিত ছিলেন আর তাদের মধ্যে গোপন করার কিছুই ছিল না। একমাত্র ইবলিসই সেইখানে উপস্থিত ছিল, যে তার মনের মধ্যে প্রচন্ড পরিমানে হিংসা ও অহংকার গোপন করে রেখেছিল, যা ঠিক পরের আয়াতগুলিতে স্পষ্ট হয়ে উঠে।

وَعَلَّمَ اٰدَمَ الۡاَسۡمَآءَ کُلَّہَا ثُمَّ عَرَضَہُمۡ عَلَی الۡمَلٰٓئِکَۃِ ۙ فَقَالَ اَنۡۢبِـُٔوۡنِیۡ بِاَسۡمَآءِ ہٰۤؤُلَآءِ اِنۡ کُنۡتُمۡ صٰدِقِیۡنَ
       
আর আল্লাহ তা’আলা শিখালেন আদমকে সমস্ত বস্তু-সামগ্রীর নাম। তারপর সে সমস্ত বস্তু-সামগ্রীকে ফেরেশতাদের সামনে উপস্থাপন করলেন। অতঃপর বললেন, আমাকে তোমরা এগুলোর নাম বলে দাও, যদি তোমরা সত্য হয়ে থাক।{সুরা আল-বাকারাঃ আয়াত ৩১}

قَالُوۡا سُبۡحٰنَکَ لَا عِلۡمَ لَنَاۤ اِلَّا مَا عَلَّمۡتَنَا ؕ اِنَّکَ اَنۡتَ الۡعَلِیۡمُ الۡحَکِیۡمُ
               
তারা বলল, তুমি পবিত্র! আমরা কোন কিছুই জানি না, তবে তুমি যা আমাদিগকে শিখিয়েছ (সেগুলো ব্যতীত) নিশ্চয় তুমিই প্রকৃত জ্ঞানসম্পন্ন, হেকমতওয়ালা।  {সূরা আল-বাকারা: আয়াত ৩২}

قَالَ یٰۤاٰدَمُ اَنۡۢبِئۡہُمۡ بِاَسۡمَآئِہِمۡ ۚ فَلَمَّاۤ اَنۡۢبَاَہُمۡ بِاَسۡمَآئِہِمۡ ۙ قَالَ اَلَمۡ اَقُلۡ لَّکُمۡ اِنِّیۡۤ اَعۡلَمُ غَیۡبَ السَّمٰوٰتِ وَالۡاَرۡضِ ۙ وَاَعۡلَمُ مَا تُبۡدُوۡنَ وَمَا کُنۡتُمۡ تَکۡتُمُوۡنَ

তিনি বললেন, হে আদম (আঃ), ফেরেশতাদেরকে বলে দাও এসবের নাম। তারপর যখন তিনি বলে দিলেন সে সবের নাম, তখন তিনি বললেন, আমি কি তোমাদেরকে বলিনি যে, আমি আসমান ও যমীনের যাবতীয় গোপন বিষয় সম্পর্কে খুব ভাল করেই অবগত রয়েছি? এবং সেসব বিষয়ও জানি যা তোমরা প্রকাশ কর, আর যা তোমরা গোপন কর! {সূরা আল-বাকারা: আয়াত ৩৩}

সুতরাং, ফেরেশতাগণ বুঝতে পারলো যে, আদম (আঃ) এমন এক সৃষ্টি যে অনেককিছুই জানে যা তারা নিজেরাও জানে না।


87
মহান আল্লাহ আদম (আঃ) এর রূহ ফুঁকলেন

আল্লাহ সুবহানু ওয়াতালা আমাদেরকে কুরআনে জানিয়েছেন যে, তিনি আদম (আঃ) এর উপর তার রূহ ফুঁকেছেন। এইখানে আমাদেরকে একটি ব্যাপার অবশ্যই বুঝতে হবে যে, “আমার রূহ” এই শব্দটি দিয়ে আল্লাহ আক্ষরিক অর্থে এই কথা বুঝাননি যে তিঁনি তাঁর নিজের রূহ আদম (আঃ) এর উপর ফুঁকেছেন। তিঁনি এমন শব্দ ব্যবহার করে আসলে বুঝাতে চেয়েছেন যে তাঁর এই সৃষ্টিটি একটি সম্মান জনক সৃষ্টি। সুতরাং, এইখানে এমন কথা বুঝানো হয়নি যে আদম (আঃ) এর ভিতর আল্লাহর ঐশ্বরিক কোনো কিছু বিদ্যমান ছিল যা কিনা আমাদের সবার মধ্যেও আছে, কারণ সকল জীবিত মানুষের মধ্যেই তার রূহ থাকে।

فَاِذَا سَوَّیۡتُہٗ وَنَفَخۡتُ فِیۡہِ مِنۡ رُّوۡحِیۡ فَقَعُوۡا لَہٗ سٰجِدِیۡنَ

যখন আমি তাকে সুষম করব এবং তাতে আমার রূহ ফুঁকে দেব, তখন তোমরা তার সম্মুখে সেজদায় নত হয়ে যেয়ো। {সূরা সাদ: আয়াত ৭২; সূরা আল-হিজর: আয়াত ২৯}

আল্লাহ তা’আলা তাদের মতামত জিজ্ঞাসার্থে কিংবা তাদের থেকে পরামর্শ গ্রহণ করার জন্যে এমনটা করেননি; কেননা তিনি এসকল কিছুর উর্ধ্বে। তিনি কেবল তাদেরকে আদেশ করেছিলেন যেন তারা তা মান্য করে। উল্লেখ্য যে, ঐ সেজদা শ্রদ্ধা স্বরূপ করতে বলা হয়েছিল (ইবাদতের উপলক্ষ্যে নয়)। ইবাদতের সেজদা একমাত্র আল্লাহর জন্যই করা হয়ে থাকে।

ইবনে কাসির রহমতুল্লাহ বলেছেন, রুহটি শরীরের উপর মাথা থেকে নিচে পা পর্যন্ত যেতে প্রায় দুইশত বৎসর ঘোরার পর অবশেষে আদম (আঃ)-এর চোখের উপর পড়ল তখন তাঁর দৃষ্টিশক্তি এলে তিনি জান্নাত দেখতে পেলেন। অতপর যখন রূহ আদম (আঃ)-এর নাকে প্রবেশ করল তখন শ্বাস-প্রশ্বাস চালু হল। এতে নাকের মধ্যে কিছু সুড়সুড়ি পয়দা হয়ে তাঁর হাঁচি এল। তিনি হাঁচি দিলেন। আল্লাহ শিক্ষা দিলেন হে আদম! তুমি বল-আলহামদুলিল্লাহ। আদম (আঃ) তখন বললেন আলহামদুলিল্লাহ (সকল প্রশংসা ও ধন্যবাদ আল্লাহর জন্য) উত্তরে আল্লাহ্‌ বললেন, ইয়ারহামুকাল্লাহ (তোমার পালনকর্তার দয়া তোমার উপর বর্ষিত হোক) {জামে’ আত-তিরমিজি, হাদিস ৩৩৬৮}।

এটাই ছিল আল্লাহ ও মানব জাতির প্রথম কথোপকথন। তারপর, রূহ তার পেট পর্যন্ত পৌঁছলে তার  ক্ষুধা পেল আর সে জান্নাতের ফল দেখে সেগুলো খাবার জন্য আগ বাড়াতে চেয়েও পারলেন না কারন তার পা পর্যন্ত তখনও রূহ পৌঁছায়নি। অনেক উলামাদের মতে আল্লাহ এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কুরআনে বলেছেনঃ

خُلِقَ الۡاِنۡسَانُ مِنۡ عَجَلٍ ؕ سَاُورِیۡکُمۡ اٰیٰتِیۡ فَلَا تَسۡتَعۡجِلُوۡنِ

সৃষ্টিগত ভাবে মানুষ ত্বরাপ্রবণ, আমি সত্তরই তোমাদেরকে আমার নিদর্শনাবলী দেখাব। অতএব আমাকে শীঘ্র করতে বলো না। {সূরা আম্বিয়া আয়াত ৩৭}


88
আদম (আঃ) এর মধ্যে রুহ ফুঁকে দেবার আগে যা ঘটেছিল

ইবনে কাসির রহমতুল্লাহ বলেছেন, সুতরাং আদম (আঃ) কে মানুষের আকারে রূপ দিলেন আল্লাহ্‌ তা’আলা। কিন্তু তিনি তাঁকে অনেক সময় মাটির আকারেই রেখে দিলেন। ফেরেশতারা প্রতিনিয়ত তাঁকে পাশ কাটিয়ে চলাচল করতো। তার আকৃতি দেখতে ভয়ংকর ছিল। ইবলিস প্রায় সময়ই আদমের আকৃতিটাকে অতিক্রম করতো, আর ওটাতে টোকা মারতো; ফলে মাটির পাত্রে আঘাত করলে যেমন ফাঁপা আওয়াজ হয় তেমন শব্দ হতো।

خَلَقَ الۡاِنۡسَانَ مِنۡ صَلۡصَالٍ کَالۡفَخَّارِ

আল্লাহ্‌ আমাদের জানিয়েছেন: তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন পোড়া মাটির ন্যায় শুষ্ক মৃত্তিকা থেকে। (সূরা আর-রহমান: আয়াত ১৪)

আবু হুরাইরা হইতে বর্ণিত আছে যে, মহা নবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: অতঃপর আল্লাহ্‌ তাঁকে তেমন অবস্থাতেই রেখে দিলেন যতদিন ধরে সেটা কুমোরের চটচটে মাটিতে পরিণত হয়। ইবলিস প্রায়শই তাঁর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বলতো ‘তোমাকে একটি মহান উদ্দেশ্যের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে।’


89
জাহান্নামের আজাবের ভয়ে জমিনের ক্রন্দন

তাফসীরে জালালাইন শরীফের হাশিয়ার মধ্যে লেখা রয়েছে, রাব্বুল আলামীন একদিন জমিনকে ডেকে বললেন, হে জমিন! আমি তোর বুক থেকে মাটি নিয়ে আদম (আঃ) কে সৃষ্টি করব আর ঐ আদমের সন্তানের মধ্যে যারা আমার আনুগত্য করে চলবে তাদেরকে আমি জান্নাত দান করব। পক্ষান্তরে যারা আমার নাফরমানী করবে তাদেরকে জাহান্নামের আগুনে জ্বালাব। একথা শুনে জমিন আফসোস করে ক্রন্দন করতে লাগল যে, হে দয়াময় মাবুদ! আমার বুক থেকে মাটি নিয়ে আপনি মানবজাতিকে সৃষ্টি করবেন আর তারা জাহান্নাম-এর আগুনে জ্বলে পুড়ে ভষ্ম-ভষ্ম হবে তা আমি কি করে সহ্য করব? ঐ দিন হতে জমিন জাহান্নামের ভয়ে কান্না শুরু করল আর জমিনের চোখের পানি গিয়ে খাল-বিল, নদী-সমুদ্রের পানির সাথে মিলতে থাকল। অন্যথায় পৃথিবীর বুকে এতদিন পানি থাকত না। নদী-নালা, খাল-বিল শুকিয়ে যেত। (তাফসীরে জালালাইন ৮ পৃষ্ঠা)

সর্বশক্তিমান আল্লাহ্‌ ঘোষণা দিলেন যে, তিনি কাদামাটি থেকে মানুষ গড়বেন। সেই মাটিকে তিনি আকৃতি দিবেন এবং তার মধ্যে আত্মা ফুঁকে দিবেন।

মহান আল্লাহ্‌ তায়ালা ফেরেশতাদিগনকে মাটি নিয়ে আসার আদেশ দিলেন ইবনে মাস’উদ এবং অন্যান্য সাহাবীগণ হইতে বর্ণিত আছে যে, পরাক্রমশালী আল্লাহ্‌ তা’আলা ফেরেশতা জিবরাঈল (আঃ) কে পৃথিবী মাটি এনে দেয়ার জন্য প্রেরণ করলেন। তখন পৃথিবী বললো, “তোমার হাত থেকে আমার পরিমাণ হ্রাস হওয়া কিংবা বিকৃতি হওয়া থেকে আমি মহান আল্লাহ্‌ তা’আলার আশ্রয় প্রার্থণা করছি।” তাই জিবরাঈল (আঃ) সঙ্গে কিছু না নিয়েই ফিরে গিয়ে বললেন:“হে আমার পালনকর্তা, পৃথিবী আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থণা করেছে।”এবার আল্লাহ্‌ তা’আলা ফেরেশতা মিকাঈল (আঃ) কে একই উদ্দেশ্যে পুনরায় পৃথিবীতে পাঠালেন। এবং একইভাবে পৃথিবী আবারও আল্লাহ্‌র নিকট আশ্রয় প্রার্থণা করলো।
 
অতঃপর আল্লাহ্‌ মৃত্যুর ফেরেশতা বা মৃত্যুদূতকে পাঠালে পুনরায় পৃথিবী একইভাবে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থণা করলো। কিন্তু তখন সেই ফেরেশতা বললো: “আমিও তাঁর আদেশ মান্য না করে ফিরে যাবার জন্য আল্লাহ্‌র কাছে আশ্রয় প্রার্থণা করছি।” তাই তিনি পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের উপরিভাগ থেকে মাটি নিয়ে, সেগুলো মিশিয়ে তা সঙ্গে নিয়ে আরোহণ করলেন আর আল্লাহ্‌ তা’আলা মাটিগুলোকে ভিজিয়ে আঠালো করলেন। তারপর আল্লাহ্‌ তা’আলা ফেরেশতাগণকে বললো যে তিনি শুষ্ক ঠনঠনে মাটির কাদা থেকে মানুষ সৃষ্টি করতে যাচ্ছে , আল্লাহ পাক বলেন,

اِذۡ قَالَ رَبُّکَ لِلۡمَلٰٓئِکَۃِ اِنِّیۡ خَالِقٌۢ بَشَرًا مِّنۡ طِیۡنٍ
 
”আমি মাটির মানুষ সৃষ্টি করব।”{সূরা সাদ: আয়াত ৭১}

وَاِذۡ قَالَ رَبُّکَ لِلۡمَلٰٓئِکَۃِ اِنِّیۡ خَالِقٌۢ بَشَرًا مِّنۡ صَلۡصَالٍ مِّنۡ حَمَاٍ مَّسۡنُوۡنٍ

”আমি পচা কর্দম থেকে তৈরী বিশুষ্ক ঠনঠনে মাটি দ্বারা সৃষ্ট একটি মানব জাতির পত্তন করব।”{সূরা আল-হিজর: আয়াত ২৮}

প্রতিটি মানুষ কেন ভিন্ন (একই পিতার সন্তান হওয়া সত্ত্বেও)

আবু মুসা আল-আশয়ারি হইতে বর্ণিত আছে যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “আল্লাহ্‌ আদম (আঃ) কে পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গার এক মুঠো ধুলোমাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন। সেইজন্যই মানবজাতির মধ্যে বিভিন্ন রং; ভালো এবং মন্দ, নরম ও কঠিন, এবং এর মধ্যবর্তীতে যা আসে তার সবকিছুই আছে।”(তাফসীরে ইবনে কাসির)


90
আদম (আঃ) - এর জীবনী – মানবজাতির সূচনা

পরাক্রমশালী আল্লাহ়্ তার নতুন সৃষ্টি – মানব সম্পর্কে ফেরেশতাদের অবহিত করেন

মহান আল্লাহ্‌ তা’আলা জানালেন যে, তিনি পৃথিবীতে এমন এক প্রতিনিধি প্রেরণ করতে চলেছেন, যার সন্তান-সন্ততি হয়ে বংশবিস্তার করবে। তখন ফেরেশতাগণ সর্বশক্তিমান আল্লাহ্‌কে কৌতূহল বশত জিজ্ঞেস করলেন, “আপনি কি সেখানে এমন সম্প্রদায় সৃষ্টি করতে চান যারা পৃথিবীতে ফিৎনা ফ্যাসাদ করবে এবং রক্তপাত ঘটাবে? অথচ আমরা সর্বদা আপনার প্রশংসা এবং উপাসনায় মগ্ন থাকি।” আল্লাহ্‌ জবাবে বললেন, “নিশ্চয়ই আমি যা জানি, তা তোমরা জান না।”

وَاِذۡ قَالَ رَبُّکَ لِلۡمَلٰٓئِکَۃِ اِنِّیۡ جَاعِلٌ فِی الۡاَرۡضِ خَلِیۡفَۃً ؕ قَالُوۡۤا اَتَجۡعَلُ فِیۡہَا مَنۡ یُّفۡسِدُ فِیۡہَا وَیَسۡفِکُ الدِّمَآءَ ۚ وَنَحۡنُ نُسَبِّحُ بِحَمۡدِکَ وَنُقَدِّسُ لَکَ ؕ قَالَ اِنِّیۡۤ اَعۡلَمُ مَا لَا تَعۡلَمُوۡنَ

অর্থঃ আর তোমার পালনকর্তা যখন ফেরেশতাদিগকে বললেনঃ আমি পৃথিবীতে একজন প্রতিনিধি বানাতে যাচ্ছি, তখন ফেরেশতাগণ বলল, তুমি কি পৃথিবীতে এমন কাউকে সৃষ্টি করবে যে দাঙ্গা-হাঙ্গামার সৃষ্টি করবে এবং রক্তপাত ঘটাবে? অথচ আমরা নিয়ত তোমার গুণকীর্তন করছি এবং তোমার পবিত্র সত্তাকে স্মরণ করছি। তিনি বললেন, নিঃসন্দেহে আমি জানি, যা তোমরা জান না। {সূরা আল-বাকারাহ: আয়াত ৩০}

পৃথিবীর বুকে মানব জাতিকে সৃষ্টি করার ব্যাপারে আল্লাহ পাক ফেরেশতাদেরকে ডেকে বললেন, তোমরা কি বল? এতে মানব হৃদয়ে একটা প্রশ্ন দেখা দেয় যে, তাহলে কি আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন পরামর্শ সাপেক্ষে বিশ্বজগৎ পরিচালনা করে থাকেন?

জবাবঃ তা নয়। বিশ্বজগতে বিদ্যমান কোন ব্যক্তি বা বস্তুকে সৃষ্টি ও পরিচালনা করতে মহান মুনিবের কোন পরামর্শের প্রয়োজন নেই। কারণ তিনি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। অতীতে কি হয়েছে, বর্তমানে কি হইতেছে ও ভবিষ্যতে কি হবে তা সবই তিনি জানেন। তদুপরি জিজ্ঞাসা করে তাদের কে সাক্ষী বানিয়ে রাখলেন। আল্লাহ পাক জানেন যে, আমি পৃথিবীর বুকে মানব জাতিকে প্রেরণ করব এবং তাদের মধ্যে আখেরী জামানার রাসূল হিসেবে আমার হাবীব (সাঃ) কে পাঠাব। কিয়ামতের দিন যখন আমার হাবীব (সাঃ) তাঁর উম্মতদেরকে নিয়ে জান্নাতে চলে যাবেন তখন হে ফেরেশতারা! তোমরাই আমার হাবীব (সাঃ) ও তাঁর উম্মতদের খাদেম হয়ে খেদমত করবে কিন্তু তোমাদের তা জানা নেই। এজন্য আল্লাহ বললেন, আমি যা জানি তোমরা তার কিছুই জান না।

এই নশ্বরধরায় মানুষ জাতিকে সৃষ্টি করার পূর্বে আল্লাহ পাক জ্বিন জাতিকে  সৃষ্টি করেছিলেন। কিছু দিন পর্যন্ত আল্লাহর দাসত্ব আদায় করে অবশেষে তারা মারা-মারি,কাটা-কাটি দাঙ্গা-হাঙ্গামা, লুট-তরাজ, অন্যায়-অত্যাচার, যেনা-ব্যাভিচার তথা সর্বপ্রকার খোদাদ্রোহী কর্মকান্ডের সাগরে নিমজ্জিত হয়েছিল। তাফসীরে উসমানীর মধ্যে এসেছে, এভাবে জ্বিন জাতি পৃথিবীর বুকে হাজার হাজার বৎসর ধরে বসবাস করতে ছিল।

অবশেষে তাদের প্রতি নারাজ হয়ে রাব্বুল আলামীন ফেরেশতাদেরকে নির্দেশ দিলেন, জমিনের বুকে যত অবাধ্য জ্বিন রয়েছে তাদেরকে ধ্বংস করে দাও। ফেরেশতারা এই নির্দেশ পেয়ে জমিনের বুকে যত অবাধ্য জ্বিন পেয়েছিল তাদেরকে কতল করে দিল। কিছু কিছু জ্বিন পাহাড়ে-পর্বতে গিয়ে পালাল। কিন্তু জ্বিন সম্প্রদায়ের মধ্যে ছিল এক বিখ্যাত আলেম ও নিতান্ত পরহেজগার জ্বিন। তার নাম ছিল ইবলিস। এই ইবলিস জ্বিন জাতির এই গর্হিত কার্যক্রম খুবই ঘৃণা করত। তার প্রতি ফেরেশতাদের মহব্বত লেগে গেল। অবশেষে আল্লাহর শাহী দরবারে ফেরেশতারা ফরিয়াদ করল, হে দয়াময় খোদা নির্দেশ দিলে আমরা ইবলিস নামক জ্বিনকে কতল করব না। রাব্বুল আলামীন বললেন, ঠিক আছে ইবলিসকে তোমাদের মাঝে রেখে দাও। এভাবে ইবলিস মুক্তি পেয়ে ফেরেশতাদের সাথে জান্নাতে বসবাস করতে লাগল।


Pages: 1 ... 4 5 [6] 7 8 ... 11