Show Posts

This section allows you to view all posts made by this member. Note that you can only see posts made in areas you currently have access to.


Messages - ashraful.diss

Pages: 1 ... 5 6 [7] 8 9 ... 11
91
সুসন্তান গড়ে তোলার উপায়

শিশুরা আল্লাহপ্রদত্ত শ্রেষ্ঠ নিয়ামত। পবিত্র কোরআনে তাদের জীবনের ঐশ্বর্য বলা হয়েছে। তাদের সুশিক্ষা দিয়ে ছোটবেলা থেকে গড়ে তোলা গেলে মৃত্যুর পরও এর সুফল পাওয়া যায়।

রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যখন কোনো মানুষ মারা যায়, তখন তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তিন ধরনের আমল জারি থাকে।

এক. সদকায়ে জারিয়া (চলমান পুণ্য। দুই. ওই জ্ঞান, যার মাধ্যমে মানুষ উপকৃত হয়। তিন. সুসন্তান, যে তার জন্য দোয়া করে। ’ (নাসায়ি, হাদিস: ৩৬৫১)

শিশুদেরকে সৎ ও নিষ্ঠাবান শিশু  হিসেবে গড়ে তুলতে প্রথম থেকেই আমাদের যা যা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। নিম্নে এ ধরনের কিছু পদক্ষেপ তুলে ধলা হলো—

গুনাহ মুক্ত পরিবেশ

শিশুদের নেক সন্তান হিসেবে গড়ে তুলতে ছোটবেলা থেকেই তার প্রতি যত্নবান হতে হবে। তার মানসিক বিকাশে গুরুত্ব দিতে হবে। তার জন্য গুনাহমুক্ত পবিত্র পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। একটি শিশু যখন বড় হয়, তখন চারদিকের পরিবেশ তাকে অনেক বেশি প্রভাবিত করে এবং এর প্রতিফলন ঘটে তার বেড়ে উঠার ক্ষেত্রে। শিশুর সামগ্রিক বিকাশের সঙ্গে পরিবেশ ও পারিপার্শ্বিকতা নিবিড়ভাবে জড়িত। তাই তাদের সামনে কোনো ধরনের অসৌজন্যমূলক কথা ও কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

পরিচ্ছন্নতা শেখানো

ছোটবেলা থেকেই শিশুদের পরিচ্ছন্নতার প্রতি সচেতন করে তুলতে হবে। মানুষের মানসিক ও শারীরিক সুস্থতার জন্য পরিচ্ছন্নতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রাসুল (সা.) পরিচ্ছন্নতাকে ঈমানের অঙ্গ বলেছেন।

পাশাপাশি শিশুদের পরিপাটি রাখার চেষ্টা করতে হবে। ছোট মানুষ বলে তাদের যেনতেনভাবে লালন-পালন করা উচিত নয়। কারণ এটিও ব্যক্তিত্ব গঠনে জোরালো ভূমিকা পালন করে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুল (সা.) দিনের এক অংশে বের হন, তিনি আমার সঙ্গে কথা বলেননি এবং আমিও তাঁর সঙ্গে কথা বলিনি। অবশেষে তিনি বনু কাইনুকা বাজারে এলেন (সেখান থেকে ফিরে এসে) ফাতেমা (রা.)-এর ঘরের আঙিনায় বসলেন। অতঃপর বলেন, এখানে খোকা [হাসান (রা.)] আছে কি? এখানে খোকা আছে কি? ফাতেমা (রা.) তাঁকে কিছুক্ষণ সময় দিলেন। আমার ধারণা হলো, তিনি তাঁকে পুঁতির মালা, সোনা-রুপা ছাড়া যা বাচ্চাদের পরানো হতো, পরাচ্ছিলেন (সাজিয়ে দিচ্ছিলেন)। তারপর তিনি দৌড়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরলেন এবং চুমু খেলেন। তখন তিনি বলেন, ‘হে আল্লাহ! তুমি তাকে (হাসানকে) ভালোবাসো এবং তাকে যে ভালোবাসে তাকেও ভালোবাসো। ’ (বুখারি, হাদিস : ২১২২)

সৃজনশীল খেলনা

শিশুর খেলনা হতে হবে আবিষ্কারধর্মী ও সৃজনশীল। বয়সভেদে শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ উপযোগী খেলনা নির্বাচন করতে হবে গুরুত্বের সঙ্গে। ঘরে ও বাইরে দুই জায়গায়ই খেলা যায়, এমন খেলনা শিশুর মানসিক বিকাশে বেশি সহায়ক। শিশুকে এমন ধরনের খেলনা দিতে হবে, যা তার বুদ্ধি বাড়াতে সাহায্য করে। তবে ইসলামের দৃষ্টিতে নিষিদ্ধ খেলনা দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

ভিডিও গেম ও কার্টুন থেকে দূরে রাখা

বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিনিয়ত ভিডিও গেম খেললে শরীরে একধরনের হরমোন নিঃসরণ হয়। এতে শিশু সব কিছু নিয়েই উত্তেজিত হয়ে পড়ে। অভিভাবকের অবাধ্য হয়ে যায়। মেজাজ খিটমিটে হয়ে যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গেমিংয়ে আসক্ত ব্যক্তি মূলত অন্য সব কিছুর প্রতি আকর্ষণ হারিয়ে ফেলে। এ ছাড়া কারো সঙ্গে মিশতে না পারা, ঘুম, খাওয়া-দাওয়ায় অনিয়ম তো রয়েছেই। তাই আমাদের উচিত শিশুদের এ ধরনের খেলা থেকে যত দূর সম্ভব দূরে রাখা।

অনেক শিশু কার্টুন দেখা ছাড়া খাবার খেতে চায় না। অথচ এই কার্টুন তাদের মানসিক গঠনে বিরূপ প্রভাব ফেলে। তাই আমাদের উচিত তাদের আনন্দ দেওয়ার জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করা। যেমন—পোষা কবুতর, পাখি, মুরগি ইত্যাদি দেখিয়েও খাওয়ানোর চেষ্টা করা যেতে পারে।

দ্বীনি ইলম শিক্ষা দেওয়া

দ্বিনি ইলম শিক্ষা করা সব মুসলমানের ওপর ফরজ। তাই সন্তানকে তার দৈনন্দিন ইবাদতের জন্য যতটুকু ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করা দরকার, কমপক্ষে ততটুকু ইলম শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করতেই হবে। তাকে পবিত্রতা শিক্ষা দিতে হবে, কোরআন শিক্ষা দিতে হবে, প্রয়োজনীয় মাসআলা-মাসায়েল শিক্ষা দিতে হবে। পাশাপাশি তাকে আস্তে আস্তে বিভিন্ন গুনাহ সম্পর্কে সতর্ক করাও  অভিভাবকের দায়িত্ব।

নামাজে অভ্যস্ত করা

শৈশব থেকে সন্তানকে নামাজে অভ্যস্ত করে না তুললে ভবিষ্যতে সে নামাজের প্রতি যত্নবান হতে পারবে না। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, ‘তোমরা সন্তানদের নামাজের প্রতি যত্নবান হও এবং তাদের ভালো কাজে অভ্যস্ত করো। কেননা কল্যাণ লাভ অভ্যাসের ব্যাপার। ’ (সুনানে বায়হাকি, হাদিস : ৫০৯৪)

বই পড়ায় উৎসাহী করা

বই শিশু মনের সুপ্ত ভাবনার বিকাশ ঘটাতে সহায়তা করে। শিশুরা গল্প শুনতে বেশ পছন্দ করে। তাদের বিভিন্ন নবীর গল্প শোনানো যায়। শিশুদের জন্য অনেক সুন্দর সুন্দর ইসলামি বই পাওয়া যায়। গল্পের বই পড়ার মাধ্যমে শিশুর মানসিক বিকাশ সাধন হয় এবং মনের ভাব প্রকাশের ক্ষমতা বাড়ে। এর ফলে শিশুরা জটিল শব্দ ও বাক্য সহজে বুঝতে পারে। এতে তার পড়ার আগ্রহ বৃদ্ধি পায়, সেই সঙ্গে বৃদ্ধি পায় শিশুর বুদ্ধিমত্তা।

প্রতিটি শিশু সোনার মানুষে পরিণত হোক—এ প্রত্যাশাই আমাদের।


92
Common Forum/Request/Suggestions / কেইস স্টাডি ১
« on: December 18, 2021, 04:34:02 PM »
কেইস স্টাডি ১



নামঃ মোঃ আহাদ

বয়সঃ ১১

স্থানঃ গ্রাম উবাহাটা, উপজেলাঃ চুনারঘাট, জেলাঃ হবিগঞ্জ, সিলেট

পিতাঃ মোঃ আনোয়ার মিয়া (মৃত)

মাতার নামঃ মোছাঃ রুকিয়া বেগম (মৃত)





আহাদরা এক ভাই , দুইবোন। পড়াশোনা করতে মন চায়?? জিজ্ঞাসা করতেই সরল উত্তর, “মনে তো চায়ই স্যার কিন্তু, টাকার অভাবে পড়তে পারি না”। পরিবার বলতে আহাদের দুই বোন, এক বোনের বিয়ে হয়ে গেছে সে স্বামী সংসার নিয়ে ব্যস্ত। ভাইয়ের দায়িত্ব নেবার মত অবস্থা তার নেই। স্বামী গার্মেন্টস এ স্বল্প বেতন এ চাকরি করে। পুরো পরিবারের মুখে খাবার তুলে দিতেই সুমন মিয়ার খুব কষ্ট হয় তাই নিজের সংসারে স্ত্রীর ছোট ভাই এর জায়গা হয়না।



কথা বলে জানা গেল বাবা মা মারা যাবার পর পরিবারটিতে অভিভাবক বলে আর কেউ নেই। আহাদের আরেকটি ছোট বোন আছে। সে সারাদিন গার্মেন্টস এ কাজ করে যা পায় তাতে কোন মতে দুইবেলার খাবার যোগার করা যায়। খুপড়ি মতন ছোট ঘরটির ভাড়া দিতেই যেখানে হিমসিম খেতে হয়, সেখানে ভাইয়ের লেখাপড়া, একটু ভালো খাওয়া পরা তাদের কাছে ভীষণ রকম বিলাসিতা যা তারা কল্পনাও করতে পারে না। তাই ভাইকে পড়াশোনা করানোর মত অর্থের সংকুলান হয়ে উঠে না কিছুতেই। পড়া লেখা চালিয়ে নিতে হলে না খেয়ে দিনাতিপাত করতে হবে।



বাবা মারা গেছে প্রায় ৪ বছর আগে। আর ৯ মাস পরেই তাদের মা ও মারা গিয়েছে। বাবার শ্বাসকষ্ট ছিল। মায়ের লিভারের সমস্যার কারনে বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন। ভাইবোন গুলি এতিম হয়ে যায়। বড় বোন জেসমিন গার্মেন্টস এর সহকর্মী সুমন মিয়াকে বিয়ে করে নিজের মত থাকে। ভাইয়ের খবর নেবার যথেষ্ঠ ইচ্ছ থাকলেও সম্ভব নয়।



আর এ কারণেই দোকানদার সেলিম ভাইয়ের কাছ থেকে যখন ই ডিআইএসএস এর কথা শুনেছেন, আর এক মুহুর্ত দেরী করেননি। সৃষ্টিকর্তা মুখ তুলে চাইলে, ভাইটা যদি এখানে ভর্তির সুযোগ পায়, তাহলে হয়তো ভাই এর একটি নিরাপদ ভবিষ্যৎ এর জন্য আর ভাবতে হবে না।



ছেলেটার সাথেও কথা বলছিলাম, নির্লিপ্ত চেহারা। জিজ্ঞাসা করেছিলাম, কখনো একা লাগলে পালিয়ে যাবে? সহজ ভাবেই উত্তর দিয়েছে, যাবে না। এই শিশুগুলো যেহেতু পারিবারিক পরিবেশ এবং বাবা মায়ের আদর থেকে বঞ্চিত, তাই আমরা বিশ্বাস করি, ভাল পরিবেশ এবং স্নেহ পেলে এরা জীবনে বড় হবেই। এরা যেহেতু কষ্ট বঞ্চনাকে জীবনে খুব কাছে থেকে দেখেছে, তাই জীবনে মানুষ হবার সুযোগ পেলে তারা চেষ্ঠার কোন ত্রুটি করবে না।



লিখছিলাম, সিলেটের হবিগঞ্জ এর এক অসহায় শিশুর গল্প যে এই বয়সে বাবা মা দুজনকেই হারিয়েছে। অভাবের তারনায় কিছুদিন একটা চায়ের দোকানেও কাজ করেছে সে। অথচ এই বয়সে শিশুরা বাবা-মার আদর পেয়ে বেড়ে উঠে কিংবা স্কুলে যায় পড়ালেখা করার জন্য। এই শহরে কারো জন্য কারো একটু সমবেদনা নেই। কেউ ভুল করেও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেনা, সহমর্মিতার হাত ও কেউ বাড়ায় না। এখানে আছে শুধু কঠিন বাস্তবতা আর টিকে থাকার লড়াই। প্রতিনিয়ত লড়াই করে নিজেকে টিকিয়ে রাখতে হয়।


আহাদের এর জীবনে কোন আনন্দের ঈদ আসেনি। তাদের জানাই নেই ঈদের আনন্দ কি জিনিস । কখনো একটুকরো কাপড়ের ব্যবস্থা হলে হয়নি খাওয়া । আবার কখনো দু 'বেলা ভাতের ব্যবস্থা হলে জোটেনি ভাল একটু কাপড়। তাদের মনে অনেক কষ্ট। পাহাড়সম বললেও ভুল হবেনা। ছোট বোনের বিয়ের বয়স যাচ্ছে। কিন্তু অর্থের অভাবে তাও হচ্ছে না। মানুষ পরিবার খোঁজে, অবস্থা দেখে। তাদের তো সহায় সম্বল বলেই কিছু নেই। যা সামান্য ছিল, সেটা বাবা মায়ের চিকিতসাতেই শেষ। তবুও বাবা মা কেউ রইলেন না এই দুনিয়াতে।



অন্যান্য শিশুদের মতো আহাদেরও ভাল লাগে ক্রিকেট খেলা দেখতে। তার প্রিয় খেলোয়ার নাকি সাকিব আল হাসান। সর্বশেষ আহাদকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, “ধর যদি সেই রকম সুযোগ তোমাকে দেওয়া হয় যে তুমি তোমার স্বপ্নকে সত্যি করার জন্য সব রকম সুবিধা পাবে। শুধু এগিয়ে যাও। তুমি কি করবে?? উত্তরে বলেছিল, করব আমি অবশ্যই সব নিয়ম মানব, যা করতে হয় করবো”



স্বপ্ন ছাড়াও অসংখ্য মানুষ পৃথিবীতে বেঁচে আছে। বেঁচে থাকে কেবল শুধুই বেঁচে থাকার জন্য। যার প্রত্যক্ষ উদাহরণ সিলেটের হবিগঞ্জের আহাদ। 



93
Common Forum/Request/Suggestions / কেইস স্টাডি ৩
« on: December 15, 2021, 04:29:20 PM »
কেইস স্টাডি ৩



নামঃ  আব্দুস সাত্তার

বয়সঃ ৫-৬ বছর

পিতার নামঃ মোঃ ইয়াকুব আলী (মৃত)

মাতার নামঃ মোছাঃ তাসলিমা বেগম (প্যারালাইসড)

বর্তমান ঠিকানাঃ দত্তপাড়া, বিরুলিয়া, সাভার, ঢাকা।

 

তিন ভাই এর মধ্যে আব্দুস সাত্তার ছেলেটি সবার ছোট। সে আজ খুব আশা নিয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য ডিআই এসএসএ এসেছিলো। কতৃপক্ষ শিশুটির এবং তার বড় ভাইয়ের একটি সংক্ষিপ্ত সাক্ষাতকার গ্রহন করেছে। 

সাত্তারের বাবা মারা গেছে এ বছরের জানুয়ারীতে। অর্থাৎ ২০২১ সালের ১২ জানুয়ারিতে। মৃত্যু নিবন্ধন অনুযায়ী স্বাভাবিক অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে, লিখা থাকলেও আব্দুস সাত্তারের বড় ভাই সজীবের সাথেকথা বলে জানা গেলো ব্রেইন স্ট্রোক এর কারনেই তার বাবার মৃত্যু হয়েছে। ‘মা’ প্যারালাইজ, স্বামী মারা যাবার আগে থেকেই উনি অসুস্থ। সংসারে অনেক অভাব। ছোট ভাইটা একটু ভালো মন্দ খেতে চায়, ভাল কপড়  চায়, অসুস্থ হলে অনেক সময় ওকে ডাক্তার দেখাতে হয়। সেই সামর্থ এক কথায় সাত্তারের পরিবারের নেই। পরিবার বলতে তারা তিন ভাই আর মা। উনি চলাফেরা , কাজকর্ম কিছুই করতে পারেন না প্যারালাইসিস এর কারনে। বড় ভাই সজীব বাসের হেল্পার এর কাজ করে। সাত্তার কে ভর্তি করাবার জন্য সে’ই নিয়ে এসেছে সাথে করে।

এখানকার পরিবেশ বা ডিআইএসএস সম্পর্কে তারা কার মাধ্মে জেনেছে, একথা জানতে চাইলে সে উত্তর দিল, কাছের এক দোকানদারের কাছে থেকে। সব কিছু জানিয়ে আমরা যখন তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, সে কি ডিস এর সব নিয়ম মেনে স্ব-ইচ্ছায় তার ভাইকে এখানে ভর্তি করাতে চায়?, সে সরাসরি উত্তর দিল, চায়। কারন ডিস এ ভর্তি হতে পারলে তার ভাইটি একদিন মানুষের মত মানুষ হবে। তার একটি সুন্দর ভবিষ্যত হবে। অন্তত ভাইয়ের একটি নিরাপদ আশ্রয়, লেখাপড়া, এবং সর্বোপরি একটি সুন্দর আগামী নিয়ে কোন চিন্তা করতে হবে না। 

ডিস এর সমস্ত নিয়ম নীতির সাথে সাথে ভর্তির পর শিশুটির সমস্ত দায়িত্ব ড্যাফোডিলের উপর অর্পিত হবে। এই শর্ত মেনে নিতে তাদের আপত্তি আছে কিনা জানতে চাইলে, বড় ভাই হিসেবে সজীব জানিয়েছে তার বা তার মায়ের কোন রকম আপত্তি নেই। এমনিতেই ছোট ভাইটিকে দেখে রাখার মত কেউ নেই। দুই বেলা খাবার দেবার বা তার ব্যবস্থা করার সুযোগও হয়ে উঠেনা। সেখানে যদি, ভাইটি ভাল পরিবেশে থেকে মানুষের মত মানুষ হতে পারে তাহলে এর চেয়ে সৌভাগ্যের তাদের কাছে আর কিছু নেই।

আমরা শিশুটির সাথেও কথা বলেছি। তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, ভর্তি করা হলে বা সুযোগ দেওয়া হলে সে প্রতিষ্ঠানের নিয়ম কানুন মেনে থাকবে কিনা, সে বড় হয়ে কি হতে চায়? সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার হলো, সে উত্তর দিয়েছে বড় হয়ে সে মানুষ হতে চায়।

শিশুটি বুঝে কিংবা না বুঝে যে উওর দিয়েছে তাতে করে সৃষ্টিকর্তার কাছে আমাদের আর্জি থাকবে, অন্তর্নিহিত অর্থেই সে একজন সত্যিকারের মানুষের মত মানুষ হয়ে উঠুক।

আসলে বঞ্চিতদের সংজ্ঞা বড় বিচিত্র। একজন শিশু নানা কারনে, নানা অর্থেই বঞ্চিত বলে বিবেচিত হতে পারে। তবে আমাদের যেহেতু কিছুটা সীমাবদ্ধতা আছে, এবং আমরা অধিকতর সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে কাজ করছি, তাই অভিভাবকহীন এতিম এই শিশুটিকে আমরা প্রাথমিক ভাবে মনোনয়ন করেছি।


94
চরিত্রবান ব্যক্তির জন্য সাত পুরস্কার

জুন্দুব ইবনে জুনাদাহ ও মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহকে ভয় করবে তুমি যখন যেভাবেই থাকো না কেন। আর মন্দ কাজ হয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে নেক কাজ করবে। কেননা নেক কাজ মন্দকে মুছে ফেলে। আর মানুষের সঙ্গে ভাৃলা ব্যবহার করবে।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ১৯৮৭)

উল্লিখিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) মানুষকে উত্তম চরিত্র অর্জনের মৌলিক তিনটি দিক বর্ণনা করেছেন। এসব গুণের মাধ্যমে মানুষ উত্তম চরিত্রের দীক্ষা লাভ করে। আর উত্তম চরিত্র উত্তম জীবনের নিশ্চয়তা দেয়।
 
উত্তম চরিত্রের সাত পুরস্কার

কোরআন হাদিসে উত্তম চরিত্র অর্জন ও নৈতিক জীবনযাপনের বহু পুরস্কারের বিবরণ রয়েছে। এর কয়েকটি হলো—

১. উত্তম চরিত্র মানুষকে জান্নাতে পৌঁছে দেবে

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করা হলো, কোন আমল জান্নাতে প্রবেশের জন্য বেশি সহায়ক হবে? মহানবী (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর ভয় ও উত্তম চরিত্র।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২০০৪)

২. নেকের পাল্লায় সবচেয়ে ভারী হবে উত্তম চরিত্র

আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কিয়ামতের দিনে উত্তম চরিত্রের চেয়ে অন্য কিছু পাল্লায় বেশি ভারী হবে না।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২০০৩)

৩. ঈমানের পূর্ণতা আসে সচ্চরিত্রের মাধ্যমে

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘ঈমানের হিসাবে সর্বোত্তম মুমিন সেই যে চরিত্রের দিক দিয়ে সর্বোত্তম।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৭৪০২)

৪. উত্তম চরিত্র নবী (আ.)-এর অন্যতম মিশন

চারিত্রিক পূর্ণতা দানকে রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর অন্যতম নববী মিশন হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি চারিত্রিক গুণাবলি পরিপূর্ণ করার জন্য প্রেরিত হয়েছি।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৮৯৩৯)

৫. উত্তম চরিত্র উত্তম ইবাদতের সমতুল্য

উত্তম চরিত্রের দ্বারা মুমিন নিয়মিত রোজা রাখা ও তাহাজ্জুদ আদায় করার মর্যাদা অর্জন করবে। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই মুমিন উত্তম চরিত্রের দ্বারা স্থায়ী রোজাদার ও তাহাজ্জুদ আদায়কারীর মর্যাদা অর্জন করে।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৪৮০০)

 ৬. সর্বোত্তম জান্নাতে ঘর লাভ

আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুসংবাদ হলো—

‘যে তার চরিত্র সুন্দর করবে আমি সর্বোত্তম জান্নাতে তার জন্য ঘরের জামিনদার হব।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৪৮০২)

৭. মহানবী (সা.)-এর নৈকট্য লাভ

জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয় কিয়ামতের দিনে তোমাদের মধ্যে আমার বেশি প্রিয় এবং আমার মজলিসের বেশি নিকটবর্তী তারাই থাকবে যারা তোমাদের ভেতর সর্বোত্তম চরিত্রবান।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২০১৮)
 
উত্তম চরিত্রের কয়েকটি নিদর্শন

আলোচ্য হাদিসে বর্ণিত তিনটি বিষয় ছাড়াও কোরআন ও হাদিসে উত্তম চরিত্রের আরো কিছু দিক বর্ণিত হয়েছে। যেমন, আল্লাহ বলেছেন, ‘...যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে আল্লাহভীরুদের জন্য, যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল অবস্থায় ব্যয় করে; যারা রাগ সংবরণকারী এবং মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল; আল্লাহ সৎকর্মপরায়ণদের বাসেন।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৩৩-১৩৪)

হাসান (রা.) বলেন, ‘উত্তম চরিত্র হচ্ছে বদান্যতা, দানশীলতা ও সহনশীলতা।’ (জামিউল উলুম ওয়াল হিকাম, ১৯/৮১)। আবদুল্লাহ ইবনে মোবারক (রহ.) বলেন, ‘উত্তম চরিত্র হলো চেহারার প্রফুল্লতা, সৎপথে দান করা ও কষ্ট প্রদান থেকে বিরত থাকা।’ (জামিউল উলুম ওয়াল হিকাম, প্রাগুক্ত)


95
উত্তম চরিত্র ও গুণ লাভে যেসব দোয়া পড়বেন মুমিন

আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চারিত্রিক গুণাবলির ব্যাপারে ঘোষণা দিয়ে বলেন-

وَإِنَّكَ لَعَلى خُلُقٍ عَظِيمٍ

‘আর অবশ্যই আপনি মহান চরিত্রের অধিকারী।’ (সুরা কালাম : আয়াত ৪)

পারিবারিক ও সামাজিক পরিবেশ সুন্দর এবং মনোরম করে গড়ে তুলতে মানুষের উত্তম গুণের বিকল্প নেই। একজন উত্তম চরিত্রবান লোক চাইলে পুরো সমাজকে পরিবর্তন করে দিতে পারে। কেননা উত্তম আচরণ মানুষকে সত্য ও ন্যায়ের দিকে ধাবিত করে। যেভাবে উত্তম চারিত্রিক গুণ ও মাধুর্য দিয়েই বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অন্ধকার ও মূর্খ সমাজকে বিশ্ববাসীর জন্য অনুকরণীয় আদর্শ সমাজ বিনির্মাণে সক্ষম হয়েছিলেন। আর তা ছিল তাঁর চারিত্রিক সৌন্দর্য ও মাধুর্যতার বহিঃপ্রকাশ।

যুগের অন্যতম ইসলামিক স্কলার হাফিজ ইবনে হাজার আসকালানি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি উত্তম চারিত্রিক গুণের পরিচয় দিতে গিয়ে বলেন-

আপনি অপরের সঙ্গে এমন আচরণ করবেন, যাতে মনে হবে আপনি তার বন্ধু এবং নিজের শত্রু। সুতরাং নিজের কাছ থেকে জোরপূর্বক অন্যের অধিকার আদায় করে দিন এবং নিজের জন্য অধিকার আদায়ের দাবি থেকে বিরত থাকুন নিজের দাবি বা অধিকার যতই ন্য়ায়সঙ্গত হোক না কেন।

তাই প্রতিটি মানুষের জন্য উত্তম চরিত্রের অধিকারী হওয়ার জন্য মৌলিক কিছু গুণ নিজেদের মধ্যে বাস্তবায়ন ও আল্লাহর সাহায্য এবং বিজয় লাভে তাঁরই কাছে প্রার্থনা করার বিকল্প নেই। উত্তম চরিত্র গঠনের ৪টি মৌলিক গুণ রয়েছে। তাহলো-

- প্রজ্ঞা ও জ্ঞান।

- সাহসিকতা ও বীরত্ব।

- ন্যায় ও ইনসাফ।

- পবিত্রতা ও নিষ্কলুষতা।

এগুলোর মাঝে রয়েছে একে-অপরের প্রতি ক্ষমা, মার্জনা, উদারতা ও দানশীলতা, ধৈর্য ও সহ্য, দয়া ও মমতা, ভালোবাসা ও সৌহার্দ্য, বিনয় ও নম্রতা এবং অন্যের প্রয়োজন মেটানোর মনোবৃত্তি ইত্যাদি বিদ্যমান। এগুলোর বাস্তবায়নেই তৈরি হয় উত্তম চরিত্র।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তম চরিত্র লাভের জন্য মহান আল্লাহর অনুগ্রহ ও সাহায্য প্রার্থনা করতেন। উম্মতে মুহাম্মাদিকেও উত্তম চরিত্র লাভের তাওফিক কামনায় মহান আল্লাহর কাছে ধরনা ধরার দোয়া হাদিসে পাকে তুলে ধরেছেন-

- اللَّهُمَّ اهْدِنِي لأَحْسَنِ الأَعْمَالِ وَأَحْسَنِ الأَخْلاقِ ، فَإِنَّهُ لا يَهْدِي لأَحْسَنِهَا إِلا أَنْتَ ، وَقِنِي سَيِّءَ الأَعْمَالِ وَسَيِّءَ الأَخْلاقِ ، فَإِنَّهُ لا يَقِي سَيِّئَهَا إِلا أَنْتَ

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মাহদিনি লিআহসানিল আমালি ওয়া আহসানিল আখলাকি; ফাইন্নাহু লা ইয়াহুদি লিআহসানিহা ইল্লা আংতা; ওয়া ক্বিনিল আমালি ওয়াইয়্যিয়িল আখলাকি; ফাইন্নাহু লা ইয়াক্বি সাইয়্যিআহা ইল্লা আংতা।

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমাকে সর্বোত্তম কাজ ও উন্নত চরিত্রের পথ দেখাও। কেননা, তুমি ছাড়া এ পথের সন্ধান অন্য কেউ দিতে পারে না। আর অন্যায় কাজ ও খারাপ চরিত্র থেকে আমাকে রক্ষা কর। কেননা, তুমি ছাড়া অন্য কেউ এ থেকে রক্ষা করতে পারে না।’ (নাসাঈ)

- اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ مُنْكَرَاتِ الْأَخْلَاقِ، وَالْأَعْمَالِ، وَالْأَهْوَاءِ والْأَدْوَاءِ

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন মুনকারাতিল আখলাকি ওয়াল আমালি ওয়াল আহওয়ায়ি ওয়াল আদওয়ায়ি।
অর্থ : হে আল্লাহ! তোমার কাছে খারাপ চরিত্র, অন্যায় কাজ, কু-প্রবৃত্তি এবং দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে আশ্রয় চাই।(তিরমিজি)

- اللَّهُمَّ أَلِّفْ بَيْنَ قُلُوبِنَا، وَأَصْلِحْ ذَاتَ بَيْنِنَا

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা আল্লিফ বায়না কুলুবিনা ওয়া আসলিহ জাতা বাইনানা।’

অর্থ : হে আল্লাহ! আমাদের সব হৃদয়ের মাঝে বন্ধুত্বপূর্ণ সুসম্পর্ক তৈরি করে দাও আর আমাদের (বিবদমান বিষয়গুলো) সমাধান করে দাও।’ (বুখারি)

- اللَّهُمَّ إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ فَأَيُّ الْمُسْلِمِينَ لَعَنْتُهُ أَوْ سَبَبْتُهُ فَاجْعَلْهُ لَهُ زَكَاةً وَأَجْرًا

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নামা আনা বাশারুন ফাআইয়্যুল মুসলিমিনা লাআনতুহু আও সাবাবতুহু ফাঝআলহু লাহু জাকাতান ওয়া আঝরান।’

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি তো একজন মানুষ মাত্র। সুতরাং আমি কোনো মুসলিমকে গালি বা অভিশাপ দিয়ে থাকলে সেটাকে তুমি তার জন্য (গোনাহ থেকে) পবিত্র করার মাধ্যম বানিয়ে দাও এবং তাকে তার (উত্তম) বিনিময় দান কর (মুসলিম)

-  اللَّهُمَّ مَنْ وَلِىَ مِنْ أَمْرِ أُمَّتِى شَيْئًا فَشَقَّ عَلَيْهِمْ فَاشْقُقْ عَلَيْهِ وَمَنْ وَلِىَ مِنْ أَمْرِ أُمَّتِى شَيْئًا فَرَفَقَ بِهِمْ فَارْفُقْ بِهِ

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা মান ওয়ালিয়া মিন আমরি উম্মাতি শাইআন ফাশাক্কা আলাইহিম ফাশকুক আলাইহি ওয়া মান ওয়ালিয়া মিন আমরি উম্মাতি শায়আন ফারিফাকাবিহিম ফারফুকবিহি।

অর্থ :হে আল্লাহ! কেউ আমার উম্মতের কোনো বিষয়ে দায়িত্বশীল হয়ে যদি তাদের সঙ্গে কঠিন আচরণ করে তবেতুমিও তার সঙ্গে কঠিন আচরণ কর । আর কেউ কোনো বিষয়ে দায়িত্বশীল হয়ে যদি তাদের সঙ্গে নম্রতা সুলভ আচরণ করে তবে তার প্রতি তুমিও দয়াশীল হও।(মুসলিম)

- اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عِلْمٍ لاَ يَنْفَعُ، وَعَمَلٍ لاَ يُرْفَعُ، وَقَلَبٍ لاَ يَخْشَعُ، وَقَولٍ لاَ يُسْمَعُ

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন ইলমিন লা ইয়ানফাউ; ওয়া আমালিন লা ইয়ুরফাউ; ওয়া কালবিন লা ইয়াখশাউ; ওয়া ক্বাওলিন লা ইয়ুসমাউ।

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! তোমার কাছে আশ্রয় চাই, এমন জ্ঞান থেকে যা কোনো উপকারে আসবে না; এমন আমল থেকে যা উপরে উঠানো হয় না; এমন অন্তর থেকে যা ভীত হয় না আর এমন কথা থেকে যা শোনা হয় না।’ (মুসলিম)

- اللَّهُمَّ كَمَا حَسَّنْتَ خَلْقِي فَأَحْسِنْ خُلُقِي

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা কামা হাসসানতা খালকি ফা-আহসিন খুলুকি।

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার দেহের অবয়ব যেমন সুন্দর করেছ তেমনি আমার চরিত্রকেও সুন্দর করে দাও।’ (মুসনাদে আহমাদ)

মুমিন মুসলমানের উচিত, নিজেদে উত্তম চরিত্রের অধিকারী করতে- প্রজ্ঞাপূর্ণ জ্ঞান, সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ কাজ, ন্যায় ও ইনসাফভিত্তিক আচরণ এবং পবিত্রতা ও নিষ্কলুষতার দিকে বিশেষ মনোযোগ দেয়া। হাদিসে উল্লেখিত দোয়াগুলোর মাধ্যমে মহান আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা।

সর্বোপরি ব্যক্তি পরিবার সমাজ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে একে-অপরের প্রতি ক্ষমা ও মার্জনা, উদারতা ও দানশীলতা, ধৈর্য ও সহ্য, দয়া ও মমতা, ভালোবাসা ও সৌহার্দ্য, বিনয় ও নম্রতা যথাযথভাবে অবলম্বন করা। আল্লাহর কাছে সুন্দর ও উত্তম চরিত্র লাভে বেশি বেশি ধরনা দেয়া এবং রোনাজারি করা। আর তাতেই আল্লাহ তাআলা বান্দাকে দান করবেন সুন্দর ও উত্তম চরিত্র। ভালো মানুষ হিসেবে কবুল করবেন।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে উল্লেখিত গুণগুলো নিজেদের মধ্যে বাস্তবায়ন করার পাশাপাশি হাদিসে নির্দেশিত দোয়ার মাধ্যমে উত্তম চরিত্র লাভের চেষ্টা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

96
হারাম উপার্জনের ফলে আল্লাহ সব ধরনের বরকত ছিনিয়ে নেন

হালাল উপার্জন ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে যেমন বিরাট নেয়ামত, ঠিক তেমনি হারাম উপার্জনের প্রভাব অত্যন্ত মারাত্মক।

হারাম উপার্জনের ফলে আল্লাহতায়ালা মানবজীবন থেকে সব ধরনের বরকত ছিনিয়ে নেন। রোগ-ব্যাধি ছড়িয়ে পড়ে।

প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে। আর্থিক অভাব অনটন ও সংকট নেমে আসে।

এ থেকে পরিত্রাণের জন্য সবাইকে চেষ্টা করতে হবে। ইসলাম মনে করে, আধ্যাত্মিকতার জন্য হালাল খাবার হচ্ছে সর্ব প্রথম ধাপ।

সুতরাং মানুষকে আধ্যাত্মিকতা অর্জন করতে হলে অবশ্যই হালাল রুজি-রোজগার করার পাশাপাশি তাকে অবশ্যই পবিত্র ও হালাল খাদ্য খেতে হবে।

পবিত্র কোরআন-হাদিস এবং নবী-রাসূল ও ইসলামি স্কলাররা সর্বদা হালাল উপার্জন ও হালাল খাদ্যের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন।

তাদের অভিমত হলো- সর্বদা হালাল রুজি অর্জন করার জন্য চেষ্টা করতে হবে। কেননা তা মানুষকে ধার্মিক হিসেবে বাঁচতে সাহায্য করে।
 
কোরআনে কারিমের সূরা মায়েদার ৮৭ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা ওই সব সুস্বাদু বস্তু হারাম করো না, যেগুলো আল্লাহ তোমাদের জন্যে হালাল করেছেন এবং সীমা অতিক্রম করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সীমা অতিক্রমকারীদেরকে পছন্দ করেন না।

এই আয়াত নাজিলের প্রেক্ষাপট প্রসঙ্গে এসেছে, একদিন হজরত মুহাম্মদ (সা.) সাহাবিদের উদ্দেশ্যে কিয়ামতের বর্ণনা প্রসঙ্গে বক্তব্য দিয়েছিলেন। সাহাবিরা রাসূলে খোদার বর্ণনা শুনে এতো বেশি আলোড়িত হলো এবং কান্নাকাটি করলো যে, সিদ্ধান্তই নিয়ে নিলো ভালো খাবার দাবার ছেড়ে দেবে। আরাম-আয়েশ,নিজের সুখ শান্তিকে হারাম করে ফেলবেরাতগুলো ইবাদত-বন্দেগিতে কাটিয়ে দেবে। দিনের বেলা রোজা রাখবে, দাম্পত্য জীবনে স্ত্রী সঙ্গ ত্যাগ করবে এমনকি এই সিদ্ধান্তের ওপর তারা স্থির অবিচল থাকবে বলে শপথও নিয়েছিল। 

নবী করিম (সা.) এই খবর শুনতে পেয়ে লোকজনকে মসজিদে সমবেত করে বললেন, আমাদের দ্বীন ইসলাম সংসারত্যাগী বৈরাগ্যদের দ্বীন নয়। আমি আল্লাহর রাসূল হওয়ার পরও ঘর এবং পরিবারের কাছ থেকে পৃথক হইনি। তাদের সঙ্গে খাবার খাই, আমার স্ত্রীদের সঙ্গে দাম্পত্য জীবনযাপন করি। জেনে রেখো, যে আমার পদ্ধতির বাইরে যাবে সে মুসলমান নয়। 

এ আয়াতে জীবনের ভারসাম্যের প্রতি ইঙ্গিত করে বলা হয়েছে। আল্লাহ তোমাদের ওপর যা কিছু হারাম করেছেন,সেগুলো করা জায়েজ নয়। আবার যেসব বিষয় তোমাদের ওপর হালাল করা হয়েছে সেগুলোকে হারাম করাও জায়েজ নয়। মুমিন ব্যক্তি আল্লাহর আদেশ নিষেধের প্রতি আত্মসমর্পিত এবং আল্লাহর বেঁধে দেওয়া সীমার মধ্যেই পদচারণা করে। না তার চেয়ে অগ্রবর্তী হবে না পশ্চাৎবর্তী। মানুষ যে হালালকে নিজেদের জন্যে হারাম করে নিচ্ছে,তা এক ধরনের আগ্রাসন এবং ঐশী সীমা লঙ্ঘনের শামিল। এ আচরণ ঈমানের আত্মার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
 
বস্তুত খাদ্য সামগ্রী, পানীয় সামগ্রী এবং হালাল ভোগ্যবস্তুগুলোকে আল্লাহ মুমিনদের জন্যে দিয়েছেন। তাই এগুলোকে পরিত্যাগ করা ঐশী রহমত ও দয়ার প্রতি ভ্রুক্ষেপহীনতার শামিল।
 
ইসলাম মানব স্বভাবসিদ্ধ একটি ধর্ম, তাই পবিত্র জিনিসগুলোকে ত্যাগ করা মানব স্বভাবের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
 
ইসলামে সবধরনের উগ্রতা নিষিদ্ধ, এ দু’টি আচরণই ঐশী সীমা লঙ্ঘনের পর্যায়ে পড়ে। হালালকে হারাম করা যেমন জায়েজ নয় তেমনি হারামকে হালাল করা জায়েজ নয়। এসব বিধান আল্লাহর হাতে, মানুষের হাতে নয়।
 
হালাল বস্তুগুলো থেকে নিজেকে বঞ্চিত করা ঠিক নয়। সেই সঙ্গে হালাল বস্তুগুলো থেকে উপকৃত হওয়ার ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি কিংবা অপচয় করাটাও উচিত নয়। 

যা সূরা মায়েদার ৮৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহতায়ালা যেসব বস্তু তোমাদেরকে দিয়েছেন, তন্মধ্য থেকে হালাল ও পবিত্র বস্তু খাও এবং আল্লাহকে ভয় করো, যার প্রতি তোমরা বিশ্বাসী।

বর্ণিত আয়াতদ্বয়ে পার্থিব জগতের হালাল ভোগ্যবস্তু থেকে নিজেকে বঞ্চিত করতে নিষেধ করার পাশাপাশি হালাল এবং পবিত্র বিষয়গুলো ব্যবহার করার আদেশ দিয়ে বলা হচ্ছে- ভেবো না পার্থিব জগতের কল্যাণগুলোকে কাজে লাগানো অপছন্দনীয় কিংবা নিন্দনীয় কোনো কাজ। বরং পার্থিব জগতের সব নিয়ামতই আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমাদের জন্যে দেওয়া রিজিক। তিনিই এগুলো তোমাদের জন্যে সৃষ্টি করেছেন। অতএব তোমরা এসব সুযোগ-সুবিধাকে নিজেদের কল্যাণে ব্যবহার করবে- এটাই সঙ্গত।
 
তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো- এসব কল্যাণময় নিয়ামতকে কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে ন্যায়, ভারসাম্য এবং তাকওয়ার মানদণ্ড মেনে চলতে হবে। কোরআনের অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেছেন খাও এবং পান করো। তবে অপচয় করো না। আরেক আয়াতে বলা হয়েছে, খাও এবং যথার্থ কাজ করো, খাও এবং অন্যদেরকেও খাওয়াও।

এ আয়াতের শিক্ষণীয় বিষয় হলো-

ক.পার্থিব সুযোগ-সুবিধাগুলো অর্থাৎ ঐশী নিয়ামতগুলো থেকে উপকৃত হওয়ার ক্ষেত্রে ঈমানদার এবং তাকওয়ার মানদণ্ড মেনে চলা জরুরি।

খ.তাকওয়া মানে পৃথিবী অর্থাৎ পার্থিব জগতকে উপেক্ষা করা নয় বরং পার্থিব জগতকে যথার্থভাবে ব্যবহার করাপরকালীন কল্যাণের জন্যে

97
লিখাটা পড়ি যদি আল্লাহর ভয় আসে।

এর চেয়ে কষ্টের আর কি হতে পারে? এর চেয়ে হতভাগা আর কে আছে....? আল্লাহুম্মাগফিরলী

জানা থাকা দরকার, অনেকেই জানেনা...জানলে হয়ত বা মানতেও পারতো। তাই নিজের জন্যেই পড়ুন প্লিজ!
________________________________
"কবরবাসীদের মধ্যে এমনকিছু লোক থাকবেন যাদের গুনাহের সংখ্যা নেকির সংখ্যার চেয়ে কম। অতএব, ওয়াদামতো এমন ব্যক্তির কবরকে প্রশস্ত করে দেয়া হবে, তার বিছানা হবে জান্নাতের বাগিচা, তার কবর হবে জান্নাতের একটা শাখার মতো। এভাবে বছরের পর বছর ধরে সেই ব্যক্তি পরম শান্তিতে দিনাতিপাত করতে থাকবে।
.
.
তারপর হঠাৎ!!
.
একদিন তার কবর থেকে ফুলের গন্ধ, সুন্দর বিছানা, আলোবাতাস ইত্যাদি নিয়ামতগুলো একে একে উঠিয়ে নেয়া হবে।

যে মালাইকা(ফেরেশতা)গণ তাকে খুব সম্মান করতেন,

তাদের মধ্যেও চলে আসবে ভাবলেশহীনতা।

লোকটি অবাক হয়ে জানতে চাইবে যে কেন তার সাথে হঠাৎ এমন আচরণ করা হচ্ছে। উত্তরে বলা হবে- " আপনি যে সকল সন্তান দুনিয়ায় রেখে এসেছেন, তাদেরকে ঠিকমতো মানুষ করেননি, তাদেরকে দ্বীন শিখাননি, যেটা আপনার জন্য ফরজ ছিলো।
.
এখন তারা প্রাপ্ত বয়স্ক হয়ে প্রতিদিন হাজার রকম গুনাহের কাজ করে চলেছে।

আর সেই পাপ থেকে একটা উল্লেখযোগ্য একটা অংশ আপনার একাউন্টেও জমা হচ্ছে ক্রমাগত। এভাবে তাদের কুকর্মের সংখ্যা আপনার নেকিকে ছাড়িয়ে গেছে।"
.
.
একথা শুনে সেই ব্যক্তি শুধু আফসোসই করতে থাকবেন। আর কিছুই করতে পারবেন না। কারণ তার ভাল আমলের একাউন্ট বন্ধ হয়ে গেছে, কিন্তু খারাপ আমলের একাউন্ট এখনো সচল। ফলে দিন দিন কবরে পাওয়া নিয়ামতগুলো চলে যাচ্ছে, আর আযাব আসতে শুরু করেছে। এই প্রক্রিয়া কেবলই একমুখী। কতকাল চলবে, কতটা ভয়াবহ আকার নেবে- কেউ আচ করতে পারিনা।।
____
_____
______
আরেক ধরণের মানুষ থাকবে যাদের নেক 'আমল খারাপ আমলের চেয়ে কম। তাই কবরে প্রবেশ করার পর তাতে সাপ-বিচ্ছু, আগুনের পোষাক, আগুনের বিছানা, মাটি সংকীর্ণতা, আযাব ইত্যাদি থাকবে। সাথে জাহান্নামের সাথে একটি দরজা ঐ লোকের কবরের সাথে কানেক্টেড থাকবে। জাহান্নামের হাওয়া সেখান দিয়ে আসতে থাকবে।
.
এভাবে শাস্তি ভোগ করতে করতে একদিন তিনি দেখবেন শাস্তিগুলো কেমন জানি একটা একটা করে কমে যাচ্ছে!!

এরপরে একসময় শাস্তির পরিবর্তে শান্তির বাগান হয়ে উঠবে তার কবর। নিয়ামত দিয়ে ভরে উঠতে সেই কবরের জীবন। সুবহান আল্লাহ্‌!
.
.
তিনি অবাক হয়ে কারণ জানতে চাইবেন। তাকে বলা হবে- "দুনিয়াতে আপনি যেসকল সুসন্তান রেখে এসেছেন, তারা আজ বড় হয়েছে তাদের নেক 'আমল আর ইস্তেগফার আপনার বদ কর্মকে ছাড়িয়ে গেছে।"
.
একথা শুনে লোকটি খুব আনন্দিত হবে। লোকটির মৃত্যু হলে তার খারাপ কাজের একাউণ্ট বন্ধ হয়ে গেল, কিন্তু তিনি ভাল কাজের একাউন্ট যে রেখে এসেছিলেন, তা আজো সচল আর তার প্রতিদান পেয়েই চলেছেন।
____
এরকমভাবে মানুষদের সন্তানদের কর্মফলের বেশ কিছু অংশ মৃত্যুর পরেও প্রভাবিত করবে।

বাকিটা আপনার চয়েস---
..
..
সন্তানকে ঈমানদার করে গড়ে তুলবেন নাকি সেকুলার, সুশীল আর তথাকথিত মুক্তমনা করে গড়ে তুলবেন।

সন্তানকে নামায শিখাবেন নাকি দুনিয়ায় বিরাট 'স্ট্যাটাসওয়ালা' করে গড়ে তুলবেন।

সন্তানকে শুধু দুনিয়ার জন্য গড়ে তুলবেন নাকি দুনিয়া-আখিরাত দুটোই- সেটা অনেকাংশে আপনার হাতেই।
..
..
যেভাবে গড়ে তুলবেন, সেভাবেই বড় হবে।
...
তার কানে আর বুলিতে কুরআন এর আয়াত তুলে দিলে সে সেটাকেই ভালবাসতে শিখবে, আবার গান-বাজনা, বেহুদা জিনিষপত্র ইত্যাদির ভালোবাসা ঢুকিয়ে দিলে সেটাই তার জীবনের অংশ হয়ে যাবে।
..
..
এত কিছু জানার পরও যদি সন্তানকে 'আল্লাহু আকবার'' ,''লা~ ইলাহা ইল্লাল্লাহ" না শিখিয়ে হাবিজাবি গান-বাজনা-নাচ, মুভি-সিনেমা, উন্মত্ত দুনিয়ামুখীতা ইত্যাদির মধ্যে মানুষ করেন জেনেশুনে, তাহলে আপনি তো হক নষ্টকারী।
..
..
প্রত্যেক সন্তান ফিতরাতের উপর জন্ম নেয়। আপনি সেটা নষ্ট করে দিলেন। আর এর পরিণতি তো উপরের ঘটনায় পরিষ্কার।
..
তারপরও সজ্ঞানে যদি এমন করেন, জেনেশুনে নিজের পায়ে কুড়াল মারেন, তাহলে আপনার জন্য একরাশ করূণা।
..
সন্তানের হক মারবেন না, প্লিজ। সব বাবা মা এর কাছে অনুরোধ।





98
এই দুনিয়া আসল বাড়ি নয়


যে ব্যক্তির মনে এ কথা একবার ঢুকে যাবে, এ দুনিয়া তার বাড়ি নয়, জীবনটা তার এমনিতেই সাদাসিদে হয়ে যাবে। কোন কিছুর প্রতি খুব বেশি আকর্ষন থাকবে না, কিছু না পেলে তেমন কোন আফসোসও হবে না।

যে জানবে, কবরে তাকে একাই থাকতে হবে। জবাবদিহিতার মুখে সে একাই পড়বে। কেউ এসে তাকে সাহস দিয়ে যাবে না। অভয় দেয়ার মত থাকবে না কেউ - দুনিয়ার জীবনে কে দূরে সরে গেল, কেই বা কাছে এলো, এসব নিয়ে তার খুব একটা মাথা ব্যাথা হবে না। আপন পর হবে, পর আপন হবে, পৃথিবীর এ স্বাভাবিক নীতিতে সে অভ্যস্ত হয়ে যাবে সহজেই।

যে বিশ্বাস করবে, কিয়ামতের ভয়াবহ দিনে তাকে তার আমল নিয়ে প্রশ্ন করা হবে, কতটুকু নিখুঁত ছিল সেগুলো, দেখা হবে তা - অপরের দোষত্রুটি নিয়ে পড়ে থাকার সময় হবে না তার। নিজের উন্নতির ফিকির তার সবচেয়ে বেশি হবে, অপরের ভুলের তুলনায় নিজের দূর্বলতাগুলোই তার চোখে পড়বে বেশি।

বুদ্ধিমান হল ঐ ব্যক্তি যে নিজের হিসাব নিজে করে আর মৃত্যু পরবর্তী জীবনের জন্য কাজ করে। আর অক্ষম হল ঐ ব্যক্তি যে নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে ও আল্লাহর ব্যাপারে অনেক ধরনের আশা আকাংখা পোষণ করতে থাকে।" - সুনান তিরমিজী

(আল্লাহ্‌ উত্তম প্রতিদান দান করুন)


99
মুনাফিক! সাবধান

মুনাফিকের সংঘর্ষ হলো ঈমানের ছদ্মাবরণে কুফরী করা।  দাবী করে মুমিন, কিন্তু কাজ করে এর বিপরীত। হাদীস শরীফে এরশাদ হচ্ছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, চারটি দোষ যে ব্যক্তির মধ্যে রয়েছে সে খাঁটি মুনাফিক ।  যদিও সে রোজাদার হয়, নামাজ পড়ে এবং দাবি করেন যে সে মমিন ।

( ১ ) যখন কোন কথা বলে , তা মিথ্যা বলে ।

(  ২ ) যখন ওয়াদা করে ,  তা খেলাপ করে ।

(  ৩ ) যখন তার কাছে আমানত রাখা হয় , তার খেয়ানত করে ।

(  ৪ ) যখন ঝগড়া করে ,  অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করে ।

পরিপূর্ণ মুমিন হলো কাটিং অন্তরে আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিনের তাওহীদ ও একত্ববাদের উপর বিশ্বাস স্থাপন করা এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর এবং দ্বীনের যাবতীয় হুকুম আহকামের উপর পূর্ণ একীন ও তদানুযায়ী আমল করা ।

প্রিয় ভাই ও বোন !

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন ,  যে ব্যক্তি দুনিয়াতে মানুষের সাথে দ্বিমুখী আচরণ করে ,  কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা তাকে শাস্তি স্বরূপ দুই জিহ্বা বিশিষ্ট করে উঠাবেন ।

আরেক হাদীসে এরশাদ হচ্ছে ,  সবচেয়ে নিকৃষ্ট মানুষ হলো সেই ,  যে দ্বিমুখী আচরন করে ।  একজনের সাথে বলে এরকম , অপরজনের সাথে সেই কথাটিই অন্যরকম করে বলে । এ বিষয়টি অফিসে সবচেয়ে বেশি আমল হয়ে থাকে।

হযরত হুযাইফা ( রাযী. ) বলেন , রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যোগের চেয়ে বর্তমান যুগে মুনাফিকের সংখা অনেক বেশি । সে যুগে তারা নিজেদের মুনাফিকী গোপন করে রাখতো । কিন্তু আজকের যুগে নিজেদের নেফাক স্বগর্বে প্রকাশ করে বেড়ায় । বস্তুত , নেফাক জিনিসটি অতি সূক্ষ্ম । বিচক্ষণ মাত্রই তা থেকে সতর্ক থাকা  জরুরী । কারণ , নেফাক সত্যিকার অর্থে ঈমানের বিপরীত ? বিভিন্ন হাদীস সমূহের বর্ণনা দ্বারা বুঝা যায় যে , নেফাক বা ঈমানের ছদ্মাবরণে কুফর কত সূক্ষ এবং গোপনভাবে নিজেদের মধ্যে বিদ্যমান থাকতে পারে , সুতরাং এ ব্যাপারে অসতর্ক হওয়া মোটেই উচিত নয় । হযরত সাহাবায়ে কেরামগণ নিজেদের ব্যাপারে নেফাকের  আশংকা করতেন । তারা ভীত  থাকতেন , কোন কারণে তাদের নাম মুনাফিকের খাতায় উঠে যায় কি না ?

হযরত উমর ( রাযী.)  অনেক সময় হযরত হুযাইফা (রাযী.) কে জিগ্যেস করতেন ,মুনাফিকদের মধ্যে আমার নামতো উঠে যায়নি ? অর্থাৎ নিজের সম্পর্কে তিনি নেফাকের আশংকা করতেন এবং উদ্বিগ্ন হয়ে যেতেন ।

হযরত হুযাইফা (রাযী) বলেন , রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগে কেউ এমন কোন কথা বলে বসত । সে কথার কারণে সে মুনাফিক হয়ে যেত এবং এর উপর মৃত্যুবরণ করত ।  আর এ যুগে সে ধরনের কথা আমি তোমাদের মুখে দশ দশবার উচ্চারিত হতে শুনি ।  অথচ তোমাদের কোন উৎকণ্ঠা নেই ,  পরোয়া নেই ।

হযরত হুযাইফা (রাযী.) এর কাছে এক ব্যক্তি বললো ,আমার আশংকা হয় ,যেআমি মুনাফিক হয়ে গেলাম  কি না ? হযরত হুযাইফা(রাযী.) বলেন , তুমি যদি নিজ সম্পর্কে মুনাফিকীর আশংকা বোধ না করতে , তাহলে সত্যিই তুমি মুনাফিক হয়ে যেতে । তাবেয়ী হযরত ইবনে আবী মূলাইকা (রহ.) বলেন ,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর একশত ২৩ জন সাহাবীর সাথে আমার সাক্ষাত হয়েছে ,তাদের প্রত্যেকেই নিজের সম্পর্কে নেফাকের আশংকা করেছেন। ইবনে আবী মুলাইকা বলেন,এ ছিল হযরত সাহাবায়ে কিরামগণের আল্লাহ্ - ভীতি ও অতি উচ্চ পর্যায়ের ঈমানী চেতনা ।

প্রিয় ভাই ও বোনেরা আমার !মহান রাব্বুল আলামীন আমাদের সবাইকে পূর্ণ মুমিন হিসেবে কবুন করুন। নেফাক থেকে আমাদের অন্তরকে হেফাযত করুন। আমীন ছুম্মা আমীন


100
Common Forum/Request/Suggestions / চোরাবালি
« on: October 21, 2021, 01:36:59 PM »
চোরাবালি

জীবন সুখদুঃখের পালাবদলের গল্প। জীবনে কখনো কখনো আমাদের যেতে হয় কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে।কোন না কোন পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয় আমাদের সবার পরীক্ষা পার হয়ে যাবার পর হিসেবে মিলাতে গেলে দেখা এসব সময়ে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার হক্বগুলো আমরা আদায় করিনি। নাফরমানী করেছি। তখন আমাদের অনুশোচনা হয়। সত্যিকারের তাওবাহ এবং নেক আমলের জন্য বান্দাকে উদবুদ্ধ করার জন্য এই অনুশোচনার অনুভূতি থাকা জরুরী।
 
তবে অনুশোচনার এ অনুভুতি হতে হবে সাময়িক। যাতে আমরা ভুলগুলো শুধরে নিতে পারি। অনুশোচনার অনুভূতির পাশাপাশি অন্তরে এ আশাও থাকতে হবে যে আল্লাহ্‌ আমাদের তাওবাহ কবুল করে নেবেন, আমাদের ভুলগুলো ক্ষমা করে দেবেন এবং আমাদের পরিবর্তনের জন্য সুযোগ দেবেন। আমরা আল্লাহর ব্যাপারে সুধারণা রাখবো।
 
কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে ব্যাপারটা অন্য রকম হয়ে দাঁড়ায়। আল্লাহর ব্যাপার সুধারণা রাখা এবং আশাবাদী হবার বদলে অনেকে আটকা পড়ে যায় অনুশোচনা আর হতাশার এক চক্রে। বারবার ঘুরেফিরে রোমন্থন করে নিজের ভুলগুলো, দোষারোপ করে নিজেকে, ঘৃণা করে। অন্তর হয়ে পড়ে যন্ত্রনাগ্রস্থ, অসুস্থ, কলুষিত।
 
এক সময় সে বিশ্বাস করতে শুরু করে এই পরীক্ষা আল্লাহর পক্ষ থেকে এক নির্মম শাস্তি। এর উদ্দেশ্য হল তাকে ধ্বংস করে দেয়া। সে মনে করতে শুরু করে যে আল্লাহ্‌ আযযা ওয়া জাল তাকে ঘৃণা করেন এবং তার ওপর রাগ হয়ে এ শাস্তি চাপিয়ে দিয়েছেন। যেহেতু সে আগে অনেকবার সুযোগ পেয়ে, তাওবাহ করে আবার গুনাহে ফেরত গেছে, তাই আল্লাহ্‌ তাকে আর কোন সুযোগ দেবেন না।
 
তারপর, ধীরে ধীরে তার অন্তরে শেকড় গাড়ে আল্লাহর প্রতি বিদ্বেষের অনুভূতি। সে বিশ্বাস করতে শুরু করে যে তার জন্য তাওবাহর দরজা বন্ধ হয়ে গেছে। তার দুআর কোন উত্তর আর আসবে না। দুনিয়াতে যতোদিন আছে, এ হতভাগ্য, অভিশপ্ত অবস্থাতেই তাকে থাকতে হবে।
 
সাবধান! এটা শয়তানের চক্রান্ত। এটা তার সবচেয়ে ভয়ংকর চক্রান্তগুলোর একটি। সে প্রথমে মানুষকে বিশ্বাস করায় যে ক্রমাগত নিজেকে দোষারোপ করে যাওয়াই হল সংশোধনের উপায়। কিন্তু এর মাধ্যমে সে আসলে মানুষকে আটকে ফেলে হতাশা, অনুশোচনা আর আত্মঘৃণার চক্রে। সে মানুষকে দিয়ে সীমালঙ্ঘন করায় যা তাকে নিয়ে যায় বিপদজনক এক পথে। মানুষ বিশ্বাস করতে শুরু করে যে আল্লাহর ফায়সালা নিষ্ঠুর। আর ঠিক সেই মুহূর্তে তার অন্তরে তৈরি হয় প্রচন্ড ভয় আর হতাশা।
 
যখন কোন দরজা, কোন রাস্তা খোলা থাকে না, যখন যাবার কোন জায়গা থাকে না, তখনো আল্লাহ্‌ থাকেন। তাঁর দরজা সবসময় তার বান্দাদের জন্য খোলা। প্রশান্তি ও নিরাপত্তা পাওয়া যায় তাঁরই কাছে। তিনিই আশ্রয়হীনের আশ্রয়, দুর্বলের সহায়। যতোক্ষন আল্লাহর ব্যাপারে বান্দা এই বিশ্বাস রাখে, এই আশা রাখে ততোক্ষন সে তাওবাহর কথা চিন্তা করে।
 
কিন্তু শয়তান আল্লাহর রাহমাহর ব্যাপারে মানুষের মধ্যে সৃষ্টি করে হতাশা। সে মানুষকে বিভ্রান্ত করে। তাকে বোঝায় যে এ পরীক্ষা হল আল্লাহর পক্ষ থেকে শাস্তি। তাঁর ক্রোধ ও ঘৃণার ফল। শয়তান মানুষকে বোঝায় যে আল্লাহর রাহমাহর দরজা তার জন্য বন্ধ হয়ে গেছে। অনুভূতিটা একটু বোঝার চেষ্টা করুন দয়া করে। যদি আল্লাহর রাহমাহর দরজা আপনার জন্য বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে আপনি কোথায় যাবেন? কোথায় পালাবেন? কার কাছে যাবেন? কার কাছে আশ্রয় চাইবেন? কার কাছে সাহায্য চাইবেন?
 
নিঃসন্দেহে এক প্রচন্ড ভয় তখন গ্রাস করবে আপনাকে। আর শয়তান সেটাই চায়। সে নিজে ঠিক এ অবস্থাটাতেই আছে। আল্লাহর রাহমাহ থেকে সে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। অন্য কেউ আল্লাহর রাহমাহ পাক, সেটা সে সহ্য করে পারে না। তাই সে আপনাকেও নামিয়ে আনতে চায় তার কাতারে। কিন্তু শয়তানের ফাঁদে পা দেয়া যাবে না।তার চক্রান্তে বিভ্রান্ত হওয়া যাবে না।

মনে রাখবেন, শয়তান কিন্তু প্রথমেই আল্লাহর রাহমাহর ব্যাপারে আপনার মনে সন্দেহ তৈরি করবে না। সে বলবে না যে- আল্লাহ্‌ তো করুণাময় নন, ক্ষমাশীল নন। সে জানে, এভাবে বলে লাভ নেই। এভাবে আগালে সে নিশ্চিত ব্যর্থ হবে। সে আক্রমণ করবে অন্যদিক থেকে।
 
সে বলবে – 'হ্যা আল্লাহ্‌ পরম করুণাময়, ক্ষমাশীল। কিন্তু তুমি তাঁর করুণার উপযুক্ত না। তিনি বার বার তোমাকে সুযোগ দিয়েছেন কিন্তু বারবার তুমি নাফরমানী করেছো। আল্লাহ্‌ গাফুরুর রাহীম, কিন্তু তোমার এই ব্যর্থতা, তোমার এই পাপ এতোই জঘন্য যে তুমি আর তাঁর ক্ষমার যোগ্য না।'
 
এসব বলে শয়তান আসলে কী চায়? সে চায় আপনি হতাশার চোরাবালিতে আটকা পড়ুন। এমন হতাশা যা আপনাকে পঙ্গু করে দেবে। কেড়ে নেবে নিজেকে সংশোধন করে রবের অভিমুখী হবার সব ইচ্ছে,সব শক্তি।
 
জানেন ডিপ্রেশনের (বিষণ্ণতা) ডাক্তারি সংজ্ঞা কী? এর উপসর্গগুলো কী?

গভীর বিষাদ, নিজেকে মূল্যহীনভাবা, আত্মবিশ্বাসের অভাব, উৎসাহহীনতা, অপরাধবোধ, হতাশা, নেতিবাচক মনোভাব এবং নিজের কোন ভবিষ্যৎ নেই ভাবা।

অর্থাৎ ডিপ্রেশন এমন এক অপরাধবোধ তৈরি করে যা মানুষকে সংশোধনের দিকে চালিত করে না। বরং তাকে নিয়ে যায় আত্মঘৃণা, হতাশা আর নেতিবাচকতার চোরাবালিতে।
 
শয়তান মানুষকে অপরাধবোধের ধাপে আটকে ফেলে। সে মানুষকে বোঝায় যে তার অবস্থা সংশোধনের অযোগ্য। সে অন্তর আর ইচ্ছাশক্তিকে পঙ্গু করে ফেলে। যাতে করে মানুষ আল্লাহর আনুগত্য করার শক্তি না পায়, নিজেকে সংশোধনের চেষ্টাই না করে এবং আল্লাহর সাথে তার সম্পর্কে নষ্ট হয়ে যায়।
 
শয়তান মানুষের মনে আল্লাহর ব্যাপারে ভুল ধারণা তৈরি করে-

মালিক সবসময় তাঁর বান্দার গুনাহর অপেক্ষায় থাকে। বান্দা গুনাহ করা মাত্র তার ওপর শাস্তি চাপিয়ে দেন। আর বন্ধ করে দেন সংশোধনের সব পথ। ছিন্ন করে ফেলেন তার সাথে সব সম্পর্ক।'
 
শয়তান চায় রাব্বুল আলামীন এর ব্যাপারে আমরা এমন ধারণা করি।
 
আমাদের রব কী এমন?
 
না! কক্ষনো না। তিনি মহামান্বিত এবং এ মিথ্যাচার থেকে পবিত্র।
 
আমার আল্লাহ্‌র রাহমাহ, তাঁর ক্ষমাশীলতা এতোই ব্যাপক যে এর ব্যাপ্তি বুঝে ওঠাও আমাদের পক্ষে সম্ভব না। আর-রাহমানের দরজা সবসময় তাঁর বান্দাদের জন খোলা।
 
মনে রাখবেন, শাস্তি পাবার পরও সন্তান তার পিতাকে ভালোবাসবে যদি সে জানে যে পিতা তাকে ভালোবাসে। সে মনে করবে বাবা শাস্তি দিয়েছেন ভালোর জন্যই। সন্তান যখন কোন ভুল করে, বাবা তার কান টেনে ধরেন। আর সন্তান যখন টলটলো চোখে মাটির দিকে তাকায় বাবা তাকে বুকে জড়িয়ে ধরেন।  কিন্তু সন্তান যদি মনে করে বাবা তাকে ঘৃণা করে তাহলে তার মন বিষিয়ে যাবে। আর মহান আল্লাহর রাহমাহ, তাঁর পবিত্র বৈশিষ্ট্যসমূহ এবং বান্দার প্রতি তাঁর ভালোবাসার সাথে তো সৃষ্টির কোন তুলনাই হয় না।
 
কাজেই শয়তান যখন আপনাকে কুমন্ত্রনা দেবে, ‘তুমি আল্লাহর রাহমাহর যোগ্য না’,

তখন বলুন – হ্যা আমি আল্লাহর রাহমাহর উপযুক্ত না। কিন্তু তবুও তিনি আমার মতো বান্দাদের ওপর রহমত করবেন, আমাদের ক্ষমা করবেন। কারণ তিনি তাঁর বান্দাদের তাদের প্রাপ্য অনুযায়ী তাদের বিচার করেন না। তিনি আরো অনেক, অনেক বেশি উদার। তিনি বান্দাদের বিচার করেন তাঁর রাহমাহ অনুযায়ী।
 
যদি শয়তান বলে, ‘আল্লাহ্‌ তোমাকে পরীক্ষায় ফেলেছেন কারণ তিনি তোমাকে ঘৃণা করেন’, তখন বলুন,

‘না, বরং পরীক্ষার মাধ্যমে তিনি আমাকে বিশুদ্ধ করছেন’
 
যদি শয়তান বলে, তোমার মতো জঘন্য বান্দা কিভাবে আল্লাহর রাহমাহ পাবে?

তখন বলুন – আমার রবের রাহমাহ বিস্তৃত, আমার মতো বান্দাকে বঞ্চিত করার মতো সংকীর্ণ তা নয়।
 
কখনো শয়তানের এসব কুমন্ত্রনাকে অন্তরে শেকড় গাড়ার সুযোগ দেবেন না। কখনো মনে করবেন না কষ্ট, পরীক্ষা এগুলো শুধুই শাস্তি।  আল্লাহর রাহমাহর ব্যাপারে হতাশ হবেন না। শয়তানকে সুযোগ দেবেন না আল্লাহর সাথে আপনার সম্পর্ক নষ্ট করার।
 
আল্লাহর করুণা থেকে নিরাশ হবেন না। হতাশ হবেন না। আমাদের রব আর-রাহমান, আর-রাহীম, আল-গাফফার। যখন সবাই আমাদের ছেড়ে যায় তখনো তিনি থাকেন। মাতৃগর্ভের অন্ধকার থেকে কবরের একাকীত্বে, সব অবস্থায় তিনি আমাদের কাছে। যখন সব  তাঁর দরজা বন্ধ, তখনো তাঁর দরজা খোলা। তিনিই আশ্রয়হীনের আশ্রয়, দুর্বলের সহায়। প্রশান্তি ও নিরাপত্তা পাওয়া যায় তাঁরই কাছে। তিনি আল্লাহ্‌, তিনিই আমাদের রব।


101
Common Forum/Request/Suggestions / একাকিত্ব
« on: October 19, 2021, 09:57:58 PM »
একাকিত্ব

একাকিত্ব", আমাদের অনেকের জীবনের একটি পরিচিত অংশ। জীবনের কিছুকিছু সময় নিজেকে খুব একা মনে হয়। জীবনে কারো শূন্যতা ভীষণভাবে  অনুভব হয়। তাই না?

তো একাকিত্বের এই সময়ে কোরআনের এই বাণীগুলো শুনুন। যেখানে আল্লাহ তা'আলা বলেছেন,

অতঃপর যখন বিকট আওয়াজ (কিয়ামত দিবসের আওয়ায) আসবে, সেদিন মানুষ পালিয়ে যাবে তার ভাই থেকে,তার মা ও তার বাবা থেকে, তার স্ত্রী ও তার সন্তান-সন্ততি থেকে। সেদিন তাদের প্রত্যেকেই নিজ নিজ চিন্তায় নিজেকে ব্যতিব্যস্ত রাখবে।"[সূরা আবাসা, ৩৩-৩৭]

অর্থাৎ, যখন কিয়ামত শুরু হবে, তখন আজকের কোনো বন্ধনই আর অবশিষ্ট থাকবে না। সবাই নিজেকে বাঁচাতে একে অন্যকে ভুলে যাবে। দুনিয়াতে যার যত ভালো পরিবার বা জীবনসঙ্গীই থাক না কেন, দিনশেষে তারাও সেইদিন একা হয়ে পড়বে। সবার প্রত্যাবর্তন হবে এক আল্লাহর কাছেই।

তাই, আপনার আজকের এই একাকিত্বের সময়ও আল্লাহকে আপনার সঙ্গী বানিয়ে নিন। তিনি তো এমন সঙ্গী, যার সাথে সম্পর্ক না এই দুনিয়ায় ভাঙ্গবে আর না কিয়ামতে।

আল্লাহকে পেয়েছেন তো জান্নাত পেয়েছেন। আর জান্নাত পেয়েছেন তো জীবনের সকল সুখ পেয়ে গেছেন। ইন শা আল্লাহ আজকের আপনার সকল শূন্যতা জান্নাতে পূর্ণতা পেয়ে যাবে।

একাকিত্বের সময়ে রবের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলুন।কেউ নেই তো কি হয়েছে? আমাদের রব তো আছেন। তিনিই আমাদের জন্য যথেষ্ট।


102
ভালবাসা আসে আল্লাহ তা‘আলার তরফ থেকে-

রসুল (সাঃ) বলেছেনঃ

যখন আল্লাহ তা‘আলা কোন বান্দাকে ভালবাসেন, তখন তিনি জিবরীল (আ.)-কে ডেকে বলেন, আল্লাহ তা‘আলা অমুক বান্দাকে ভালবাসেন, তুমিও তাকে ভালবাসবে। তখন জিবরীল (আ.) তাকে ভালবাসেন এবং তিনি আসমানবাসীদের ডেকে বলেন, আল্লাহ তা‘আলা অমুককে ভালবাসেন, অতএব তোমরাও তাকে ভালবাসবে।তখন আসমানবাসীরাও তাকে ভালবাসে। তারপর আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ হতে দুনিয়াবাসীদের মধ্যে তার জনপ্রিয়তা সৃষ্টি করা হয়।[সহীহ বুখারী৬০৪০]
 
রসুল (সাঃ) বলেছেনঃ

দয়াশীলদের উপর করুণাময় আল্লাহ দয়া করেন। তোমরা দুনিয়াবাসীকে দয়া করো, তাহলে যিনি আসমানে আছেন তিনি তোমাদেরকে দয়া করবেন।[সুনান আবূ দাউদ:৪৯৪১]
 
আল্লাহর জন্য ভালবাসার ফযীলত-
 
রসুল (সাঃ) বলেছেনঃ

এক ব্যক্তি তার ভাইয়ের সাক্ষাতের জন্য অন্য এক গ্রামে গেল। আল্লাহ তা’আলা তার জন্য পথিমধ্যে একজন ফেরেশতা নিযুক্ত করলেন। সে ব্যক্তি যখন ফেরেশতার কাছে পৌছল, তখন ফেরেশতা জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কোথায় যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেছো? সে বলল, আমি এ গ্রামে আমার এক ভাইয়ের সাথে দেখা করার জন্য যেতে চাই। ফেরেশতা বললেন, তার কাছে কি তোমার কোন অবদান আছে, যা তুমি আরো প্রবৃদ্ধি করতে চাও? সে বলল, না। আমি তো শুধু আল্লাহর জন্যই তাকে ভালবাসি। ফেরেশতা বললেন, আমি আল্লাহর পক্ষ থেকে (তার দূত হয়ে) তোমার কাছে অবহিত করার জন্য এসেছি যে, আল্লাহ তোমাকে ভালবাসেন, যেমন তুমি তোমার ভাইকে তারই সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য ভালবেসেছ।[সহীহ মুসলিম: ৬৪৪৩]
 
মুসলিমদের অনুপস্থিতিতে তাদের জন্য দু’আর ফযীলত-
 
রসুল (সাঃ) বলেছেনঃ

একজন মুসলিম বান্দা তার ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে তার জন্য দুআ করলে তা কবুল হয়। তার মাথার নিকটে একজন ফেরেশতা নিয়োজিত থাকেন, যখন সে তার ভাইয়ের জন্য প্রার্থনা করে তখন নিয়োজিত ফেরেশতা বলে থাকে "আমীন এবং তোমার জন্যও অনুরূপ তাই" (তোমার ভাইয়ের জন্য যা চাইলে আল্লাহ তোমাকেও তা দান করুন)।[সহীহ মুসলিম: ৬৮২২]


103
মনের পশুত্ব কিভাবে ধ্বংস করা যায়

মানুষের মধ্যে নানা ধরণের পশুত্বের স্বভাব বিদ্যমান রয়েছে। যেমন: হিংস্রতা, নির্মমতা, বদমেজাজি, অন্যের অধিকার হরণ, হালাল-হারামের তওয়াক্কা না করা, যৌন চাহিদা পূরণে নীতি-নৈতিকতার পরোয়া না করা, নির্লজ্জতা, অত্যাচার-নিপীড়ন করা ইত্যাদি। এগুলো হল পশুত্বের স্বভাব।

➧ নিম্নে নিকৃষ্ট পশু সুলভ চরিত্র ও আচার-আচরণ থেকে মুক্ত হওয়ার ১২টি করণীয় ও দিক নির্দেশনা তুলে ধরা হল:

❖ ১) অন্তরে তাকওয়া বা আল্লাহ ভীতি জাগ্রত করা এবং বিবেক দিয়ে ন্যায়-অন্যায় ও সঠিক-বেঠিক পার্থক্য করা। সত্যিকার অর্থে যার মধ্যে বিবেক ও মানবিক মূল্যবোধ আছে সে একটু চিন্তা করলেই ন্যায়-অন্যায় বুঝতে পারে। এটা আল্লাহ প্রদত্ত বৈশিষ্ট্য যা তিনি মানুষের মধ্যে দান করেছেন।

❖ ২) ইসলামের জ্ঞানার্জনের পাশাপাশি একনিষ্ঠ ভাবে আল্লাহর ইবাদত করা। দুআ, তাসবিহ ও আজকার সমূহ পাঠে অভ্যস্ত হওয়া। বিশেষ করে জামাআতে সালাত আদায়ে যত্নশীল হওয়া। আল্লাহর ইবাদত গুজার বান্দার মধ্যে মানবিক গুণাবলি বিকশিত হয়, সে অন্যের অধিকারের ব্যাপারে সচেতন থাকে এবং কখনো কারোও প্রতি অবিচার করতে পারে না।

❖ ৩) ইসলামের দৃষ্টিতে উন্নত স্বভাব-চরিত্র সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করা এবং সেগুলো বাস্তব জীবনে প্রয়োগ ঘটানো।

❖ ৪) শয়তানের পক্ষ থেকে মনের মধ্যে সৃষ্ট কুমন্ত্রণা বশত: পশুত্বের মনোভাব, পাপাচার ও অন্যায় অপকর্ম করার কু বাসনা জাগ্রত হলে সাথে সাথে ‘আউযুবিল্লাহি মিনাশ শয়তানির রাজীম’ (বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি) পাঠ করা এবং খারাপ চিন্তাভাবনা থেকে মনকে ফিরিয়ে আনা।

❖ ৫) নিয়মিত তরজমা-তাফসির সহ কুরআন পড়া ও হাদিস স্টাডি করা এবং ইসলাম সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞানার্জন করা। কারণ জ্ঞান হল আলো। যার কাছে জ্ঞানের আলো থাকে সে নিজের মধ্যে ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো দেখতে পায়, খারাপ বৈশিষ্ট্যগুলো সম্পর্কে সচেতন হতে পারে এবং উন্নত চরিত্র এবং মানবিক গুণাবলী বিকশিত করতে সক্ষম হয়।

❖ ৬) আল্লাহ ওয়ালা, তাকওয়া বান ও আমলদার আলেমদের উপদেশ মূলক বক্তব্য শোনা। কেননা উপদেশ দ্বারা মুমিন উপকৃত হয়।

❖ ৭) ভালো লোকদের সংস্রবে থাকা এবং খারাপ ও পশু সুলভ আচরণে অভ্যস্ত লোকদের সাথে বন্ধুত্ব না করা। কেননা কথায় আছে, “সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ।”

❖ ৮) আত্ম সমালোচনার মাধ্যমে নিজের মধ্যে পশু সুলভ আচরণ, খারাপ স্বভাব ও দোষ-ত্রুটিগুলো চিহ্নিত করা।

❖ ৯) মহান আল্লাহর কাছে খারাপ চরিত্র, পশু সুলভ আচরণ ইত্যাদি থেকে বাঁচার জন্য এবং উন্নত ও সুন্দর চরিত্রে চরিত্রবান হওয়ার জন্য দুআ করা।

❖ ১০) এতিমদের মাথায় হাত বুলানো এবং তাদের প্রতিপালনের দায়িত্ব নেয়া। এতিমদের মাথায় হাত বুলালে বা তাদের প্রতি যত্ন নিলে অন্তরে নম্রতা সৃষ্টি হয় এবং নিজের মধ্যে দয়া, মমতা, পরোপকার ইত্যাদি মানবিক গুণাবলী জাগ্রত হয়।

❖ ১১) বিপদগ্রস্ত ও কঠিন রোগাক্রান্ত ব্যক্তিদেরকে দেখতে যাওয়া। এটি মানুষের মধ্যে নিজের ব্যাপারে নতুন উপলব্ধি সৃষ্টিতে সহায়তা করে।

❖ ১২) জানাজায় অংশ গ্রহণ ও কবর জিয়ারত করা। এতে নিজের মৃত্যু, শেষ পরিণতি, কবরের শাস্তি, আখিরাতের ভয়াবহতা, জাহান্নামের আগুন ইত্যাদি স্মরণ হয় এবং হৃদয়ে নিজেকে সংশোধনের আত্মোপলব্ধি সৃষ্টি হয়। এ সব প্রচেষ্টার মাধ্যমে সর্ব প্রকার খারাপ ও পশু সুলভ চরিত্র বিদূরিত হবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহু তাওফিক দান করুন। আমিন!


104
একটু সময় নিয়ে পড়ার অনুরোধ রইলো

হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- মহানবী (সঃ) কে বলতে শুনেছি যে, কিয়ামতের দিন মানুষকে উলঙ্গ দেহে ও খাতনাহীন অবস্থায় কবর থেকে হাশরের ময়দানে জমায়েত করা হবে। একথা শুনে আমি জিজ্ঞেস করলাম, 'হে আল্লাহর রাসুল! নারী পুরুষ সকলেই কি উলঙ্গ হবে? তারা কি একে অপরের প্রতি তাকাবে? (এরূপ হলে তো খুবই লজ্জার বিষয়)। উত্তরে তিনি বললেন, 'হে আয়েশা! কিয়ামতের দিনটি এত কঠিন ও বিপদময় হবে যে, মানুষের মনে একে অপরের প্রতি তাকাবারও খেয়াল হবে না।’ (বুখারি-মুসলিম)

কিয়ামতের দিন রাসূল (স:) থাকবেন সবচেয়ে ব্যস্ত মানুষ।  পুলসিরাত, মিযানের পাল্লা,হাউসে কাউসার একসাথে ছুটাছুটি করতে থাকবেন 'ইয়া উম্মাতি'! 'ইয়া উম্মাতি'! বলে জিব্রাইল আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনাকে তুলবেন কবর থেকে। রাসূল (স:) জিজ্ঞেস করবেন,'কী ব্যাপার জিব্রাইল! আমার উম্মাত কী উঠেছে? ওইদিকে আবার মূসা কালিমুল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরশের খুটি ধরে আছেন আর বলছেন 'ইয়া নাফসি! ইয়া নাফসি! সেদিন ইমামুল আম্বিয়ার মুখে থাকবে 'উম্মাতি!উম্মাতি!' আর, সেদিন তাঁর পায়েথাকবে দৌড় আর মুখে থাকবে আওয়াজ! রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইসি ওয়াসাল্লাম খুব অশান্ত ছোটাছুটি করছেন।

হঠাৎ উনার মনে পড়ে, আমার উম্মাত ক্লান্ত, পিপাসার্ত নয়তো! ছুটে যান হাউজে কাউসারে। হ্যাঁ, এইতো পিপাসার্ত উম্মাত। নিজের হাতে হাউজে কাউসার থেকে পানি পান করাবেন আর বলবেন পান করো। আর কখনো তৃষ্ণার্থ হবে না। হঠাৎ মনে হবে মিযানের সামনে দাড়ানো উম্মাতের কথা। ছুটে যাবেন সেখানে। দেখবেন উম্মাতের বাম পাল্লা ভারি হয়ে যাচ্ছে। পেরেশান, তিনি হয়রান!!!

অতঃপর দৌড়ে যাবেন দুরূদের পিটারার সামনে। যেখানে তাঁর জন্য পড়া দুরূদ উম্মাতের নামসহ একটা বক্সের মধ্যে জমা আছে। সেখান থেকে দুরূদ নিয়ে ডান পাল্লায় দিতে থাকবেন যতক্ষণ না তা বাম পাল্লা থেকে ভারি হয়ে যায়। মাক্বামে মাহমুদের পাশে উনার জন্য আসন পাতা থাকবে৷

আল্লাহ বলবেন۔ 'হে নবী বসুন।'

তিনি উত্তরে বলবেন, 'না বসবো না।'

আল্লাহ্ বলবেন - 'জান্নাতে যান!'

নবী (স:) বলবেন- 'না, যাবো না!'

আল্লাহ্ বলবেন- 'জান্নাতের পোশাক পড়ুন!'

নবী (স:) বলবেন- 'না, পড়বো না!'

আল্লাহ্ বলবেন - 'বোরাকে উঠুন!'

নবী (স:) বলবেন- 'না, উঠবো না। আমি চলে গেলে উম্মাতের কী হবে?'

কিয়ামতের দিন মানুষ তার ভাই থেকে, সন্তান থেকে, পিতা-মাতা থেকে পালিয়ে বেড়াবে। কিয়ামতের দিন এক রাসূল (স:) ছাড়া কেউ কাউকে চিনবেনা। অতএব রাসূল এর সূন্নাত ও আদর্শ অনুসারে জীবন তৈরি করে তাঁর সুপারিশ পাওয়ার যোগ্য উম্মত হওয়ার চেষ্টা করা উচিত। এছাড়া কোন গত্যন্তর নেই। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন।আমিন!


105
একগুঁয়ে নীতি নয়, পরামর্শের ভিত্তিতে কাজ ইসলামের শিক্ষা

ইসলামে পরামর্শের গুরুত্ব অনেক। এমনকি আল্লাহতায়ালা মানুষকে পৃথিবীতে প্রেরণ করার আগে ফেরেশতাদের সঙ্গে পরামর্শ করে তাদের মতামত জানতে চেয়েছিলেন। এর মাধ্যমে মূলতঃ আল্লাহতায়ালা মানব জাতিকে পরামর্শের গুরুত্ব বুঝিয়েছেন। আত্মকেন্দ্রিক মনোভাব পরিহার করে অন্যদের সঙ্গে পরামর্শভিত্তিক কাজ করা ইসলামের শিক্ষা। অনেকে হয়তো ভাবতে পারেন, পরামর্শ না করেও তো উন্নতি-অগ্রগতি লাভ করা যায়, কিংবা উন্নতির পথে পরামর্শের খুব বেশি গুরুত্ব নেই। আপাত দৃষ্টিতে এটাকে পুরোপুরি অস্বীকার হয়তো করা যাবে না। তবে এটাও সত্য যে, জীবনযাপনের ক্ষেত্রে পরামর্শভিত্তিক পথ চলার যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে। পরামর্শ করে কাজ না করলে সে কাজের কোন বরকত থাকে না।

 
ইসলামের প্রথম যুগ থেকেই সব কাজ সম্পাদিত হতো পরামর্শের ভিত্তিতে। ইসলাম বরাবরই পরস্পরের পরামর্শকে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে দেখে আসছে।এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা পরামর্শের ভিত্তিতে সব কাজ সম্পাদন করো। শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে পরামর্শ করেছেন এবং পরামর্শের জন্য উদ্বুদ্ধ করেছেন। খেলাফত পরিচালনারও অন্যতম ভিত্তি ছিলো পরামর্শ। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পরামর্শ করলে অনেক সহজেই তা থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া সম্ভব।

হাদিস শরিফে আছে, যে পরামর্শ নিয়ে কাজ করে তাকে লজ্জিত হতে হয় না, যে পরামর্শের ভিত্তিতে কাজ করে সে নিরাপদ থাকে। আচ্ছা, পৃথিবীতে এমন কোনো মানুষ আছে কি; যে জীবনে কোনো সমস্যার সম্মুখীন হয়নি? মনে হয় নেই। প্রত্যেকেই কোনো না কোনো সমস্যায় পড়ে এবং সেই সমস্যা কাটিয়ে উঠার চেষ্টাও করে। কিন্তু সাধারণ মানুষের অভ্যাস হলো- সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা সময় দিতে চাই না। তাই সমস্যা সমাধানের বহু পথ ও উপায় থাকা সত্ত্বেও সেগুলো আমাদের চোখে পড়ে না। দ্রুত সমাধানের পথে অগ্রসর হই আমরা। অথচ তাড়াহুড়া করে নেওয়া কোনো সিদ্ধান্ত সমস্যা সমাধানে খুব বেশি কার্যকর নয়। কারণ, দ্রুততার সঙ্গে গৃহীত সিদ্ধান্তে সমস্যার গভীরে দৃষ্টি দেওয়ার সুযোগ থাকে না; তাই সমাধানও সুদূরপ্রসারী হয় না। মনে রাখতে হবে, জীবনযাপনের গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো- আত্মম্ভরিতা পরিহার করে অন্যদের সঙ্গে পরামর্শ করা।

ইসলাম সব মানুষের কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের অধিকার উদারভাবে প্রদান করেছে। ইসলাম কোনো সমাজের মানুষকে উঁচু ও নিচু বা শাসক এবং শাসিত হিসেবে বিভক্ত করার পক্ষপাতী নয়। ইসলাম নির্দেশিত এই পরামর্শ ব্যবস্থা নিজ পরিবার, সমাজ ও অফিসের ক্ষেত্রেও সমানভাবে প্রযোজ্য। তবে পরামর্শের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- পরামর্শ যথার্থ এবং বিবেক-বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের সঙ্গে করা। পরামর্শের কারণে অভিজ্ঞ ও চিন্তাশীলদের চিন্তাকে কাজে লাগানোর সুযোগ সৃষ্টি হয়। আর অভিজ্ঞদের চিন্তার প্রভাবে নিজের দৃষ্টিভঙ্গি ও চিন্তাও গভীর হয়, সমৃদ্ধ হয়। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, আমরা ধীরে ধীরে পরামর্শ ব্যবস্থা থেকে সরে আসছি। আমাদের মাঝে ঠাঁই করে নিয়েছে, একগুয়েমিপনা। নিজের কর্তৃত্ব বড় করে দেখার প্রবণতা। ফলে পরিবারে কলহ,সমাজে অশান্তি ও অফিস আদালতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা দেখা দিচ্ছে অহরহ। ইসলামে পরামর্শের প্রতি গুরুত্বারোপ করা হলেও তিন শ্রেণির লোকের সঙ্গে পরামর্শ করতে নিষেধ করা হয়েছে। ওই তিন শ্রেণির মানুষ হলো- ভীতু, লোভী ও কৃপণ।

অভিজ্ঞ ইসলামি স্কলারদের অভিমত হলো, ভীরু লোকের সঙ্গে পরামর্শ করতে নেই। কেননা সে বিপদে পড়লে গোপন তথ্য ফাঁস করে দিতে পারে। কৃপণ লোকের সঙ্গেও পরামর্শ করতে নেই। কেননা সে অন্যের উন্নতি সহ্য করতে পারে না। আর লোভীদের সঙ্গে পরামর্শ করতে নেই, কেননা সে লোভ-লালসাকে সবসময় বড় করে দেখে। সুতরাং এমন লোকদের সঙ্গে পরামর্শ করতে নেই।


Pages: 1 ... 5 6 [7] 8 9 ... 11