Show Posts

This section allows you to view all posts made by this member. Note that you can only see posts made in areas you currently have access to.


Topics - Md. Sohel Rana

Pages: [1] 2 3 ... 5
1
Education is nothing but the Extension and refinement of common sense

2
 
স্টুয়ার্ট বার্টারফিল্ড
স্টুয়ার্ট বার্টারফিল্ডনিজের শ্রম, মেধা আর অধ্যবসায়ের কারণে অনেকেই জীবনে সফল হয়েছেন। অনেক না পাওয়ার যন্ত্রণা ভুলে সামান্য সুযোগটুকু কাজে লাগিয়ে উঠে এসেছেন সেরাদের কাতারে। বর্তমানে প্রযুক্তি বিশ্বের পরিচিত মুখ ক্লাউডভিত্তিক সফটওয়্যার স্ল্যাকের প্রধান নির্বাহী স্টুয়ার্ট বাটারফিল্ড তেমনই একজন।

পাঁচ হাজার কোটি টাকা মূল্যের স্ল্যাক ছাড়াও বিশ্বের জনপ্রিয় ফটো শেয়ারিং ওয়েবসাইট ফ্লিকার এসেছিল স্টুয়ার্ট বাটারফিল্ডের হাত ধরেই। বিবিসি অনলাইনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্টুয়ার্টের শৈশব কেটেছে আর দশটা সাধারণ শিশুর মতোই। সেখানে ছিল না বিদ্যুতের উজ্জ্বল আলোর রোশনাই, স্বাভাবিক পানির নিশ্চয়তা। জন্মের পরপরই তাঁর বাবা ভিয়েতনামের যুদ্ধে যেতে চাননি বলে যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে যান। এ সময় কানাডার প্রত্যন্ত অঞ্চলে এক গোষ্ঠীর সঙ্গে কাটে স্টুয়ার্টের জীবন। ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার একটি বনের মধ্যে কাঠের কেবিনে শৈশব কেটেছে তাঁর। সেখানে দীর্ঘ তিন বছর পানি ও বিদ্যুতের কোনো ব্যবস্থা ছিল না।

এ প্রসঙ্গে বিবিসিকে স্টুয়ার্ট বলেন, তাঁর মা-বাবা হিপ্পি ছিলেন। জন্মের পর নাম রেখেছিলেন ‘ধর্মা’। সে সময় দেশ ছাড়তে চাইছিলেন তাঁরা। তবে দেশ ছাড়তে হলে তাঁদের অনেক কাঠখড় পোহাতে হতো। তাই তাঁরা শহরের দিকে চলে আসেন।

ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার রাজধানী ভিক্টোরিয়ায় বসবাস শুরু করেন তাঁরা। সেখানে সাত বছর বয়সে কম্পিউটার প্রথম দেখেন স্টুয়ার্ট। ছোটবেলা থেকে কম্পিউটার প্রোগ্রামের কাজ শিখে ফেলেন। অ্যাপলের তৈরি প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটার দিয়েই হাতেখড়ি হয়েছিল তাঁর।

ব্যবসার কাজের উপযোগী মেসেজিং অ্যাপ্লিকেশন স্ল্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্টুয়ার্ট বাটারফিল্ডের বর্তমান ব্যক্তিগত সম্পদের পরিমাণ ৬৫ কোটি মার্কিন ডলার বা প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা। এত টাকার মালিক হয়েও খুব মিতব্যয়ী জীবনযাপন করেন স্টুয়ার্ট।

স্টুয়ার্ট বলেন, ‘সত্যি বলতে কি, বেশি খরচ করতে গেলে আমার কাছে অপরাধী মনে হয়। কানাডীয় হয়ে বাড়তি জাঁকজমকপূর্ণ জীবন আমার কাছে অদ্ভুত ও অপরিচিত মনে হয়।’

নিজের বড় সাফল্যগুলোকে ভাগ্য বলে মনে করেন স্টুয়ার্ট।

স্টুয়ার্ট বলেন, ‘১৯৮০ সালের দিকে আমার বয়স সাতের মতো ছিল। তখন অ্যাপল টু বা (আইআইই) নামের কম্পিউটার কেনেন আমার মা-বাবা। ওই সময় কম্পিউটার ম্যাগাজিন পড়ে আমি কোড করা শিখে ফেলি।’

১২ বছর বয়সে নাম পরিবর্তন হয় স্টুয়ার্টের। ১২ বছর বয়সেই বেসিক কম্পিউটার গেম তৈরি করা শিখে যান তিনি।

তবে হাইস্কুলে ভর্তি হওয়ার পরেই কম্পিউটারের প্রতি আকর্ষণ হারান স্টুয়ার্ট। ভিক্টোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর কম্পিউটার থেকে মনোযোগ সরিয়ে নেন। পরে দর্শন শাস্ত্রে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন তিনি। ১৯৯৭ সালের দিকে দর্শন শাস্ত্রে অধ্যাপক হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। ওই সময়ে ইন্টারনেট জনপ্রিয় হতে শুরু করে।

স্টুয়ার্ট জানান, ওই সময় যাঁরা ওয়েবসাইট তৈরি করতে জানতেন, সবাই সানফ্রান্সিসকোতে ছুটছিলেন। অধ্যাপকেরা যা আয় করেন, ওই সময় বন্ধুরা তার চেয়ে দ্বিগুণ-তিন গুণ আয় করছিলেন। এটা ছিল নতুন আর রোমাঞ্চকর।

তখন স্টুয়ার্ট নিজেও অধ্যাপনার আশা ছেড়ে সিলিকন ভ্যালিতে জায়গা করে নেওয়ার চিন্তা করেন।

কয়েক বছর সিলিকন ভ্যালিতে ওয়েব ডিজাইনার হিসেবে কাজ করেন এবং ২০০২ সালে স্ত্রী ক্যাটরিনা ফেইককে সঙ্গে নিয়ে একটি অনলাইন গেম উন্মুক্ত করেন। গেমটির নাম ছিল ‘গেম নেভারএন্ডিং’। তবে গেমটি জনপ্রিয় হয়নি। তখন তাঁদের দুজনের কাছে জমা করা টাকা শেষ হয়ে যায়। এরপর তাঁরা অন্য কিছু করার চিন্তা করেন। স্বামী-স্ত্রী দুজন মিলে মাত্র তিন মাসের মধ্যেই চালু করেন ছবি শেয়ার করার প্ল্যাটফর্ম ‘ফ্লিকার’।

স্টুয়ার্ট বাটারফিল্ড বলেন, সময়টা একেবারে সঠিক ছিল। প্রথম প্রথম ক্যামেরা ফোন বাজারে আসছিল। অনেক বাড়িতে ইন্টারনেট সংযোগ যুক্ত হচ্ছিল। তাঁদের তৈরি সেবাটি দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল।

২০০৪ সালে তাঁর তৈরি ফ্লিকার নামের অ্যাপ্লিকেশনটি ছিল প্রথম ওয়েবসাইট, যাতে মানুষকে ছবি আপলোড, শেয়ার, ট্যাগ ও মন্তব্য করার সুযোগ পায় মানুষ। মাত্র এক বছর পরেই ওই সময়ের ইন্টারনেট দুনিয়ায় রাজত্ব করা ইয়াহুর কাছে মাত্র আড়াই কোটি মার্কিন ডলারে ফ্লিকার বিক্রি করে দেন তাঁরা। পরে অবশ্য স্টুয়ার্ট বাটারফিল্ড আফসোস করে বলেন, তাঁদের সিদ্ধান্ত ভুল ছিল। আরও কিছুদিন দেরি করলে ফ্লিকারকে আরও বেশি দামে বিক্রি করতে পারতেন।

তবে স্টুয়ার্ট ফ্লিকার তৈরি করেই বসে থাকেননি। এরপর হাত দেন ফ্লিকারের থেকে বড় কিছু করার কাজে। তাঁর নতুন প্রচেষ্টার ফসল আজকের স্ল্যাক। গ্রুপ হিসেবে সহকর্মীদের মধ্যে সহজে যোগাযোগ করার সুবিধা দেয় এটি।

তবে স্ল্যাক তৈরির আগে আরও কিছু উদ্যোগ নেন স্টুয়ার্ট। ২০০৯ সালে কয়েকজন সহযোগীকে নিয়ে একটি অনলাইন গেম তৈরির চেষ্টা করেন। তবে সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়।

স্টুয়ার্ট বলেন, ‘গেম তৈরির সময়ে আমরা অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের জন্য একটি পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছিলাম। এটা আমাদের খুব পছন্দ ছিল। এটা যে কত কাজের, তা শুরুতে ভাবতে পারিনি। এটা নিজেদের মধ্যে কাজের জন্য তৈরি করা হয়েছিল। তবে কয়েক বছর পরেই আমরা ভাবতে শুরু করি, এটি অন্যদেরও ভালো লাগবে। এ ভাবনা থেকেই জন্ম হয় স্ল্যাকের।’

বর্তমানে দৈনিক ৮০ লাখ মানুষ স্ল্যাক ব্যবহার করছেন। এর মধ্যে ৩০ লাখ ব্যবহারকারী উন্নত ফিচারের জন্য অর্থ খরচ করে। স্ল্যাকের ৭০ হাজারের বেশি করপোরেট গ্রাহক রয়েছে। আইবিএম, স্যামসাং, টোয়েন্টিফার্স্ট সেঞ্চুরি ফক্স, মার্কস অ্যান্ড স্পেনসারের মতো প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা এটি ব্যবহার করেন। কয়েক রাউন্ডের বিনিয়োগ গ্রহণ করে স্ল্যাকের মূল্য দাঁড়িয়েছে ৫০ হাজার কোটি টাকার (৫.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) বেশি।

ব্রাইট লি নামের একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ক্রিস গ্রিন বলেন, ‘একজন উদ্যোক্তার ব্যর্থ প্রকল্পের মধ্যে থেকে সফল কোনো কিছু সৃষ্টি করার দৃষ্টান্ত বিরল। সেটা দুবার করার ঘটনা তো প্রায় শোনাই যায় না। কিন্তু স্টুয়ার্টের ক্যারিয়ার দেখলে বোঝা যাবে, এটা শুধু ভাগ্যের জেরেই হয়নি। তিনি পেছনে থেকে উদ্ভাবনের কাজ করছেন। বিশৃঙ্খলার ভেতর থেকে নানা উপায় খুঁজে বের করে যাচ্ছেন। এভাবেই স্ল্যাক ও ফ্লিকারকে সামনে এনেছেন তিনি।’

স্ল্যাকের অবশ্য এখন প্রতিদ্বন্দ্বী তৈরি হয়েছে। স্ল্যাকের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে এ ধরনের একটি সেবা অফিস ৩৬৫ প্যাকেজ বিনা মূল্যে দিচ্ছে মাইক্রোসফট। উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান জুম স্ল্যাকের মতো খরচেই অনেক উন্নত সেবার ঘোষণা দিয়েছে।

বিশ্লেষক গ্রিন বলেন, বড় বড় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে স্ল্যাকের প্রতিযোগিতা বাড়ছে। তাই স্ল্যাককে তাদের নতুনত্ব ধরে রাখতে হবে।

ফ্লিকারের মতো স্ল্যাককেও কি বিক্রি করে দেবেন স্টুয়ার্ট? তিনি বলেন, স্ল্যাক ছাড়ার কোনো ইচ্ছা নেই তাঁর। এ পর্যন্ত আসতে তাঁকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। ভাগ্য সহায় ছিল।

স্টুয়ার্ট বলেন, ‘আমি এতটা ভালো নই যে একই সফলতা আবার আনতে পারব। তাই স্ল্যাক নিয়ে কত দূর যেতে পারি, সেটাই দেখতে চাই। এখন এটাই দেখার সময়।’
 

Pages: [1] 2 3 ... 5