Daffodil International University

General Category => Common Forum => Topic started by: Md.Towhiduzzaman on March 14, 2019, 10:11:13 AM

Title: শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন, প্রয়োজন গভীর উপলব্ধি
Post by: Md.Towhiduzzaman on March 14, 2019, 10:11:13 AM
উন্নয়ন, বিনিয়োগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আয়ুষ্কাল, মরণব্যাধি ইত্যাকার তাবৎ বিষয় নিয়ে বিশ্বব্যাংকের চিন্তাভাবনা বিশ্বকে সর্বদাই তাড়িত করে। সাম্প্রতিক সময়ে তাদের প্রকাশিত আমাদের শিক্ষা ও শিক্ষার মান নিয়ে প্রতিবেদনটি কয়েকটি প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। প্রশ্ন করার তাগিদটা বেশি অনুভব করেছি রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের দায়িত্ব পালনের সীমাবদ্ধতা নিয়ে করা আল-জাজিরার একটি প্রশ্নের উত্তর থেকে।

দর্শকদের উপস্থিতিতে আল–জাজিরা থেকে প্রশ্নটি করা হয় যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাদিয়া মুনা তাসনিমকে। জবাবে হাইকমিশনার পুরো বিশ্বকে, বিশেষ করে যুক্তরাজ্যকে পাল্টা প্রশ্নবাণে ফেলে দেন। তিনি স্পষ্টতই বলেছেন, বাংলাদেশের রোহিঙ্গা ইস্যুতে সাহায্য–সহযোগিতার সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন করার আগে পুরো বিশ্বকে প্রশ্ন করা উচিত, কী করেছে পুরো বিশ্ব? অথবা যুক্তরাজ্য কি আগত রোহিঙ্গাদের কোনো একটি অংশ পুনর্বাসন করবে তাদের দেশে?

সম্মানিত হাইকমিশনার এভাবে বলতে পেরেছেন, কারণ তিনি বিষয়টি সম্পর্কে জানেন এবং ভেবেছেন, একই সঙ্গে তিনি বৈশ্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টি তুলনা করার মতো তথ্য রাখেন। কোনো মানুষ, দেশ বা জাতিকে প্রশ্ন করে বিব্রত করা যায়, আবার সহযোগিতাও করা যায়—নির্ভর করে কোথায় কী কারণে প্রশ্নের পাল্টাপাল্টি চলছে, তার ওপর।

অনেক কিছুই আমরা প্রশ্নহীন রেখে দিই, হয়তো নিজেদের অজ্ঞতায় বা সজ্ঞানে। সব প্রশ্নের উত্তর কিন্তু উত্তর দিয়ে দেওয়া যায় না বরং পাল্টা প্রশ্নই যথার্থ উত্তর এনে দেয়। মনে পড়ে, একটি দূতাবাসে ভিসা ইন্টারভিউয়ের পর আমাকে বলা হয়েছিল ‘দুঃখিত, আপনার দেশে ফিরে আসার মতো যথেষ্ট কারণ না থাকায় ভিসা দেওয়া যাচ্ছে না।’ আমি বোকার মতো বলেছিলাম, কীভাবে বুঝলেন আমি ফিরব না? সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বললেন ‘এ রকম অনেকেই গিয়ে ফিরে আসেননি।’ আমি বললাম, আপনারা ভিসা অফিসার হিসেবে অদক্ষ বলেই এমন হয়। কর্মকর্তা বললেন, ‘কীভাবে এবং কেন?’ আমার উত্তর ছিল, আমি তো ভিসা দেওয়ার কেউ নই, আপনাদের ভুল মূল্যায়নে আপনারাই ভুল ব্যক্তিকে ভিসা দিয়ে, নিজেদের অদক্ষতা প্রমাণ করে আমাকে অহেতুক অসত্যবাদী বলছেন, অথচ আমার ফিরে আসার তারিখ এবং টিকিট আবেদনে যুক্ত আছে। এই জবাবে ওই কর্মকর্তা হাসলেন, বসতে বললেন এবং কয়েক মিনিট পরে নিজে ভিসাসহ পাসপোর্ট দিয়ে হ্যান্ডশেক করে ধন্যবাদ দিলেন।

ওপরের এ ঘটনাটি একটা আন্তর্জাতিক যুব সম্মেলনে যাওয়ার সময়—তখন সবেমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করে বের হয়েছি। এ রকম অনেক প্রশ্নের উত্তর প্রশ্ন দিয়ে দেওয়ার শিক্ষাটা পাওয়া যায় সক্রেটিসকে অধ্যায়ন করে। আজও তাই লেখাটা হয়ে যাক প্রশ্নে প্রশ্নে। প্রথম আলোর ৭৬ লাখ পাঠকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অগণিত পাঠকের কাছে একটা প্রশ্ন, দয়া করে হৃদয়ের চোখ দিয়ে দেখবেন:

‘১১ বছরের স্কুল জীবনের সাড়ে ৪ বছরই নষ্ট’  শিরোনামে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলোতে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তাতে কয়েকটি বিষয় থাকলেও শিরোনামের বিষয়টি নিয়েই আমার প্রশ্ন:

প্রশ্ন-১: তাহলে কি আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের পিএইচডিসহ অন্য যেকোনো উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ইচ্ছা হলে এ দেশে সম্পন্ন করা শিক্ষাজীবনকে কমিয়ে ধরা হবে? যখন পুনরায় অনার্স মাস্টার্স না করলে বিদেশে পিএইচডি করা যাবে না?
প্রশ্ন-২: তাহলে কি নিকট ভবিষ্যতে বিশ্ববাজারে আমাদের দেশে পাস করা গ্র্যাজুয়েটদের হাইস্কুল পাস গণ্য করে চাকরিতে ডাকা হবে?
প্রশ্ন-৩: সাম্প্রতিক সময়ে অথবা চলমান উচ্চশিক্ষিতরা আমাদের প্রয়োজন মেটাতে না পারলে বিদেশ থেকে উচ্চশিক্ষিত আমদানি করতে হবে? কারণ, আমরা জানি আশপাশের অনেক দেশে উচ্চশিক্ষিতরা কর্মের অভাবে পথে পথে ঘুরছে অথবা ঝাড়ুদার পদে নিয়োগের আশায় আবেদন করছে!
প্রশ্ন-৪: আমাদের এ রকম একটা জাতীয় বিপর্যয় দু–এক বছর পিছিয়ে যাওয়ার সময় না জানিয়ে এতগুলো বছর পিছিয়ে একেবারে গর্তে পড়ে যাওয়ার পর জানলাম বা জানানো হলো কেন? বিশেষ করে পদে পদে এতগুলো পরীক্ষা এবং অসাধারণ কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হওয়ার পরও! তাহলে কি পরীক্ষাই আমাদের শিক্ষাকে পিছিয়ে দিল? জাতিকে অন্ধকারে ফেলে দেওয়ার আর দ্বিতীয় কোনো কারণ লাগে কী?

Eprothom Alo
একটা বিষয় আমাদের বিশেষভাবে মনে রাখা দরকার, মানুষ ছাড়া আমাদের তেমন কোনো সম্পদই নেই। সারা বিশ্বের কাছে আমাদের জনসম্পদের শিক্ষাদীক্ষা, দক্ষতার ওপর নির্ভর করবে আমাদের অর্থনীতি, আমাদের ভবিষ্যৎ।

ইংরেজি ও গণিতের জ্ঞান নিয়ে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা বরাবরের মতো প্রশ্নবিদ্ধ হলেও মাতৃভাষায় আমাদের শিশুদের মূল্যায়ন যখন লিখতে হয় এ দেশের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ভালোভাবে বাংলা পড়ার দক্ষতা পরীক্ষায় দেখা গেছে, ৩৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর স্কোর খুবই কম। এর মানে, তারা ভালোভাবে বাংলা পড়তে পারে না। তাদের ৪৩ শতাংশ বাংলায় কোনো প্রশ্নের পুরো উত্তরও দিতে পারে না। তখন নিশ্চয়ই বিষয়টি দেশের কাছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে, শিক্ষাবিদদের কাছে এমনকি মিডিয়ার কাছে আরও গুরুত্ব পাওয়ার দাবি রাখে, যেখানে আমরা হরহামেশাই দেখি নানা কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অতিমাত্রায় সচেতনতার ছড়াছড়ি!

যেকোনো মূল্যায়ন বোঝার, বুঝে নেওয়ার এবং বুঝিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন সর্বাগ্রে। মনে রাখতে হবে, এটি কোনো ব্যক্তিক বা প্রাতিষ্ঠানিক বিষয় নয় বরং জাতীয় তথা আন্তর্জাতিক। কেননা, বাংলাদেশিরা সমগ্র পৃথিবীজুড়ে রয়েছে নানাভাবে। আমি মনে করি, এ রিপোর্টটি নিয়ে আরও গভীর আলোচনা-সমালোচনা প্রয়োজন, প্রয়োজন গভীর উপলব্ধি। সমস্যা যেখানে রয়েছে সেগুলো সমাধানের জোর চেষ্টা শুরু করতে হবে সবার জাতীয় স্বার্থে। কেননা, এভাবে নিম্নগামিতার শিকার হলে অথবা প্রতিবেদন আসতে থাকলে এ দেশের শিক্ষিত মানুষেরা শুধু অশিক্ষিত নয়, কুশিক্ষিত হিসেবে পরিচিতি পাবে। এভাবে ডুবে যাওয়ার অগ্রিম তথ্য পেয়েও ন্যূনতম শিক্ষার শক্তিতে শিক্ষাব্যবস্থাকে রক্ষা করতে না পারলে এ দুঃখ কোথায় রাখা যায়?

লেখক: ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্ট অ্যাফেয়ার্সের পরিচালক
Title: Re: শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন, প্রয়োজন গভীর উপলব্ধি
Post by: azizur on March 25, 2019, 12:49:32 PM
informative... :)