Daffodil International University

Faculties and Departments => Faculty Sections => Faculty Forum => Topic started by: Afsara Tasneem Misha on September 16, 2018, 03:40:54 PM

Title: আমরা চোখ থাকতেও অন্ধ হয়ে থাকি
Post by: Afsara Tasneem Misha on September 16, 2018, 03:40:54 PM
ঘটনাটি রাশেদ নামের এক ব্যক্তির। তিনি যেমনটি বলছিলেন…


আমার স্ত্রী যখন প্রথম সন্তানের মা হলো, তখন আমার বয়স তিরিশের বেশি হবে না। আজও আমার সেই রাতটার কথা মনে আছে।
প্রতিদিনের অভ্যাস মতো সেদিনও সারারাত বন্ধুদের সাথে বাড়ির বাইরে ছিলাম। সারাটা রাত কেটেছিল যতসব নিরর্থক আর অসার কথাবার্তা, পরনিন্দা, পরচর্চা এবং লোকজনকে নিয়ে ঠাট্টা তামাশা আর মজা করে। সবাইকে হাসানোর কাজটা মুলত আমিই করছিলাম। আমি অন্যদের নিয়ে ঠাট্টা মশকরা করছিলাম আর তাই শুনে বন্ধুরা সব হেসেই খোশ হচ্ছিল। মনে আছে, সেই রাতে আমি ওদের অনেক হাসিয়ে ছিলাম। মানুষের কণ্ঠস্বর, অঙ্গভঙ্গি ইত্যাদি খুব ভাল নকল করতে পারি আমি । যাকে নিয়ে ঠাট্টা মশকরা করি ওর মত কণ্ঠ করে কথা বলতে থাকি। ওর হেনস্তা না হওয়া পর্যন্ত আর ছাড়াছাড়ি নেই। আমার ঠাট্টা মশকরার ছোবল থেকে রেহাই পায় না কেউই, এমনকি আমার বন্ধুরাও না। এর থেকে বাঁচার জন্য কেউ কেউ আমাকে এড়িয়ে চলতে শুরু করেছিল। আমার মনে আছে, সেদিন রাতে বাজারে ভিক্ষা করতে দেখা এক অন্ধ ফকিরকে নিয়েও মশকরা করেছিলাম আমি। তারচেয়েও খারাপ কাজটি করেছিলাম আমার নিজের পা’টা ওনার সামনে বাড়িয়ে দিয়ে আর তাতে বেচারা হুমড়ি খেয়ে পড়ে গিয়েছিলেন। কী করবেন বুঝতে না পেরে অন্ধদৃষ্টি নিয়ে বেচারি চারপাশে শুধু মুখ ফেরাচ্ছিলেন।

আমি যথারীতি দেরি করে বাড়ি ফিরে দেখলাম আমার স্ত্রী আমার বাড়ি ফেরার প্রতীক্ষায় প্রহর গুনছে। ওর অবস্থা তখন ভয়ানক।
 
আমাকে কাঁপাকাঁপা গলায় বলল, “রাশেদ… কোথায় ছিলে তুমি?”
 
“চাঁদের দেশে গিয়েছিলাম বুঝি?” ব্যঙ্গোক্তি করে বললাম, “কোথায় থাকব আবার, বন্ধুদের সাথে ছিলাম।”

ওকে খুবই অবসন্ন দেখাচ্ছিল। চোখের দু’ফোটা অশ্রু গোপন করে ও বলল, “রাশেদ, আমি আর পারছিনা। মনে হয় খুব শীঘ্রই আমাদের সন্তান আসছে।” এবার দু’ফোটা অশ্রু ওর গণ্ডদেশ বেয়ে গড়িয়ে পড়ল নিঃশব্দে।

মনে হলো আমি আমার স্ত্রীকে অবহেলা করেছি। আমার উচিৎ ছিল আমার স্ত্রীর সেবা-শশ্রুষা করা। রাতের পর রাত বাইরে কাটিয়ে দেওয়া আমার মোটেই উচিৎ হয়নি, বিশেষ করে যখন ওর গর্ভের নবম মাস চলছিল। আমি তাড়াতাড়ি করে ওকে হাসপাতালে নিয়ে গেলাম; ও ডেলিভারি রুমে চলে গেল। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যাথায় আর যন্ত্রণায় কাতর হয়ে থাকল। আমি ডাক্তারের কাছে গেলাম। তিনি মানব জীবনে দুনিয়াবি নানান পরীক্ষা আর পার্থিব দুঃখকষ্ট নিয়ে কথা বলতে লাগলেন। বললেন, আল্লাহ্‌ আমাদের জন্য যা কিছু নির্ধারণ করেছেন তা নিয়েই আমাদের সন্তুষ্ট এবং পরিতৃপ্ত থাকা উচিৎ।

এরপর বললেন, “আপনার ছেলের চোখে গুরুতর রকমের বিকলাঙ্গতা রয়েছে এবং মনে হচ্ছে ওর দৃষ্টিশক্তি নেই।”
 
অনেক চেষ্টায় অশ্রু সংবরণ করতে করতে মস্তকটা আমার অবনত হয়ে পড়ল… মনে পড়ল বাজারের ঐ অন্ধ ফকিরটার কথা যাকে হুমড়ি খেয়ে ফেলে দিয়ে অন্যদের ফুর্তির খোরাক যোগাচ্ছিলাম।
 
সুবহানআল্লাহ্‌ ! আপনি তা-ই পাবেন, যা আপনি অন্যকে দিয়েছেন! কিছুক্ষণ নির্বাক হয়ে ভাবতে থাকলাম… বুঝতে পারছিলাম না কী বলব। মনে পড়ল আমার স্ত্রী আর সন্তানের কথা। ডাক্তারকে তার সহানুভূতির জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে ছুটে গেলাম ওদের দেখবার জন্য। আমার স্ত্রী কিন্তু মোটেই দুঃখিত নয়। ও আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে নির্ধারিত সিদ্ধান্তে  বিশ্বাসী…  আর তাতেই সন্তুষ্ট। কতবার ও আমাকে বলত মানুষকে নিয়ে ঠাট্টা তামাশা না করার জন্য! সে বলতেই থাকত, “পরের নিন্দা করো না…” যাইহোক, আমরা হাসপাতাল থেকে চলে এলাম; সালেম’ও এলো আমাদের সাথে।

বাস্তবে, আমি আমার সন্তানের প্রতি খুব বেশি মনযোগ দিতাম না। এমন ভাব করতাম যেন, ও বাড়িতে নেই। যখন ও জোরে জোরে কাঁদত, তখন আমি ওখান থেকে চলে গিয়ে শোয়ার ঘরে ঘুমাতাম। আমার স্ত্রী ওর অনেক যত্ন করত, ওকে অনেক ভালোবাসতো। আর আমার ব্যাপারে বললে, আমি ওকে অপছন্দ করতাম না, তবে ভালোবাসতেও পারতাম না।
 
সালেম আস্তে আস্তে বড় হতে লাগল। ও হামাগুড়ি দিতে শিখল; তবে ওর হামাগুড়ি দেওয়াটা ছিল অদ্ভুত ধরনের। বয়স যখন প্রায় একবছর, তখন ও হাঁটতে চেষ্টা করতে লাগল; তখনই ওর পঙ্গুত্ব আমাদের কাছে ধরা পড়ল। এবার ওকে আমার কাছে আরো বড় ধরনের বোঝা মনে হতে লাগল।
 
সালেমের পর আমাদের উমার এবং খালেদ নামে আরও দুই সন্তানের জন্ম হয়েছে। কয়েক বছর চলে গেল, সালেম বড় হয়ে উঠল; ওর ভাইয়েরাও বড় হয়ে উঠল। আমার বাড়িতে থাকতে ভালো লাগত না, আমি সবসময় বাড়ির বাইরে বন্ধুদের সাথে থাকতাম… বাস্তবে, আমি ছিলাম তাদের (বন্ধুদের) হাতে একটা খেলনা [দরকার লাগলেই ওরা আমাকে ফুর্তির জন্য ব্যবহার করত]। আমার সংশোধনের ব্যাপারে আমার স্ত্রী কখনই হাল ছেড়ে দেয়নি। ও সবসময়ই আমার হেদায়াতের জন্য দো’আ করত। আমার লাগামহীন বেপরোয়া আচরণে ও কখনোই রাগ করত না। তবে সালেমের প্রতি আমার অবহেলা কিংবা ওর অন্য ভাইদের প্রতি আমার বেখেয়ালী ভাব দেখলে ও খুব মন খারাপ করত। সালেম বড় হয়ে উঠল। সাথে সাথে আমার দুঃশ্চিন্তাও বাড়লো। আমার স্ত্রী ওকে প্রতিবন্ধীদের বিশেষ কোনো স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিতে বলল; তবে কথাটি আমার কাছে খুব বেশি গুরুত্ব পেল না।
কীভাবে যে বছরগুলো কেটে গেল টেরই পেলাম না। আমার প্রতিটা দিনই কাটত একই ভাবে। খাওয়া, ঘুমানো, কাজ করা আর বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়া। একদিন শুক্রবারে ঘুম থেকে উঠলাম বেলা ১১ টায়। ওই দিন আগেই ওঠা হলো। একটা দাওয়াত ছিল; তাই কাপড়-চোপড় পড়ে, গায়ে খুশবু লাগিয়ে বের হচ্ছিলাম। কেবল শোবার ঘরটা পেরিয়েছি.. অমনি সালেমের অবস্থা দেখে থমকে দাঁড়ালাম — ও ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে!! শিশু অবস্থার পর এই প্রথম ওকে কাঁদতে দেখলাম। বিশটা বছর পেরিয়ে গেছে, আমি ওর দিকে নজর দিইনি। এবারও পাশ কাটিয়ে যেতে চাইলাম, পারলাম না…ঘর থেকে শুনতে পাচ্ছিলাম যখন ওর মাকে ও ডাকছিল। ওর দিকে ফিরে আরেকটু কাছে গেলাম।

 “সালেম! কাঁদছ কেন?” আমি জিজ্ঞাস করলাম।
 
আমার কণ্ঠ শুনে ওর কান্না থেমে গেল। আমি ওর খুব কাছাকাছি আছি টের পেয়ে ছোট্ট দু’খানা হাত দিয়ে চারপাশ হাতড়াতে লাগল। কী হয়েছে ওর? বুঝতে পারলাম ও আমার কাছ থেকে দূরে সরে যাওয়ার চেষ্টা করছে! যেন বলছে, “এতোদিনে তোমার সময় হয়েছে আমাকে খেয়াল করার? বিগত দশ বছর কোথায় ছিলে?” ও সরে যেতে থাকল। ওর পেছন পেছন আমি ওর ঘর পর্যন্ত গেলাম। প্রথমে বলতে চায়নি ও কেন কাঁদছিল। আমি একটু নরম হওয়ার চেষ্টা করলাম… সালেম বলতে লাগল কেন ও কাঁদছিল। আমি শুনছিলাম আর আমার ভেতর কাঁপছিল।
 
আপনারা কি জানেন, ও কেন কাঁদছিল?! ওর ভাই উমার — যে ওকে মসজিদে নিয়ে যায় — তখনও বাড়ি ফেরেনি। আজ জুম’আর দিন; সালেমর ভয়, ও প্রথম কাতারে হয়তো জায়গা পাবে না। ও উমার’কে ডেকেছে… ওর মাকেও ডেকেছে… কারও কোনো সাড়া নেই — এজন্যই সে কাঁদছে। ওর পাথর চোখ থেকে ঝরে পড়া অশ্রুর দিকে তাকিয়ে রইলাম। ওর পরের কথাগুলো আমার আর প্রাণে সইলো না।
 
মুখের উপর হাত রেখে ওকে থামালাম আর জিজ্ঞেস করলাম, “সালেম, তুমি কি এ জন্যই কাঁদছ?”
ও বলল, “হ্যাঁ।”
আমি বন্ধুদের কথা ভুলে গেলাম, পার্টির কথাও আর মনে থাকল না।
আমি ওকে বললাম, “দুঃখ পেয়ো না, সালেম। তুমি কি জানো, আজ তোমাকে কে মসজিদে নিয়ে যাবে?”
“নিশ্চয় উমার”, সে বলল, “…কিন্তু ও তো এখনও আসেনি।”
“না”, আমি বললাম, “আজ আমিই তোমাকে নিয়ে যাব।”
 
সালেম হতভম্ভ হয়ে গেল… ওর বিশ্বাস হচ্ছিল না। ও ভাবল, আমি ওর সাথে ঠাট্টা করছি। চোখে পানি এসে গেল; আবার কাঁদতে লাগল ও। নিজ হাত দিয়ে চোখের পানি ফোঁটা মুছে দিয়ে ওর হাত ধরলাম। চাইলাম গাড়িতে করেই ওকে মসজিদে নিয়ে যাব। কিন্তু ও রাজি হলো না। বলল, “মসজিদ তো কাছেই… আমি হেঁটে যেতে চাই।” হ্যাঁ, আল্লাহ্‌র কসম, ও আমাকে একথাই বলল।

মনে পড়ে না কবে শেষবারের মতো মসজিদে প্রবেশ করেছিলাম। তবে জীবন থেকে অবহেলায় হারিয়ে দেওয়া বিগত বছরগুলোর কথা পড়তেই মনের ভেতর ভয় আর অনুতাপের উদয় হলো। মসজিদ মুসল্লিতে ভরা। তারপরও আমি সালেমর জন্য প্রথম কাতারে একটু জায়গা খুঁজে নিলাম। একসাথেই জুম ‘আর খুৎবা শুনলাম; ও আমার পাশেই সালাত আদায় করল। সত্যি বলতে, আমিই ওর পাশে সালাত আদায় করলাম, ও আমার পাশে নয়।

সালাত সমাপ্ত হলে সালেম আমার কাছে একখানা কোরআন চাইল। আমি তো অবাক! ভাবলাম ও কী করে পড়বে, ও তো দেখতে পায় না। বলতে গেলে ওর কথায় কানই দিলাম না। কিন্তু কষ্ট পেতে পারে এই ভয়ে তাকে একখানা কুর’আন ধরিয়ে দিলাম। ও আমাকে সূরা আল-কাহ্ফ খুলে দিতে বলল। আমি পাতা উল্টাতে লাগলাম। খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত সূচীপত্র দেখতে থাকলাম। ও কুর’আন খানা আমার কাছ থেকে নিয়ে ওর সামনে রেখে চোখ বন্ধ করেই সূরাটি তেলাওয়াত করতে শুরু করল… সুবহানাল্লাহ! গোটা সূরা’টাই ওর মুখস্ত।

নিজের কথা ভেবে খুবই লজ্জিত হলাম। আমিও একখানা কুর’আন তুলে নিলাম…বুঝতে পারলাম সারা শরীর আমার কাঁপছে… পড়া শুরু করলাম… পড়তেই থাকলাম। আল্লাহ্‌র কাছে ক্ষমা ভিক্ষা চাইলাম। তাঁর কাছে প্রার্থনা করলাম, “ইয়া আল্লাহ্‌ ! আমাকে সহজ সরল পথ দেখাও।” আর সইতে পারলাম না… ছোট বাচ্চার মতো কেঁদে ফেললাম। মসজিদে তখনও অনেক লোক সুন্নাত আদায় করছেন। তাদের উপস্থিতি আমাকে একটু বিব্রত করল, আমি অশ্রু সংবরণ করলাম। আমার কান্না তখন চাপা দীর্ঘশ্বাসে রূপ নিয়েছে। শুধু টের পেলাম, একখানা কচি হাত আমার মুখখানা ছুঁতে চাইছে আর আমার ভেজা চোখ দু’টো মুছে দিচ্ছে। হ্যাঁ, ও আমার সালেম! আমি ওকে বুকে টেনে নিলাম… ওর দিকে তাকিয়ে নিজেকে বললাম… অন্ধ তো আমিই, অন্ধ তুমি না। আমি অন্ধ না হলে কি আর ওসব পথভ্রষ্টদের পেছনে ছুটে বেড়াই, যারা আমাকে জাহান্নামের আগুনের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে?
সালাত শেষ করে আমরা বাড়ি ফিরলাম। আমার স্ত্রী সালেমের জন্য অত্যন্ত চিন্তায় পড়ে গিয়েছিল। কিন্তু ওর দুঃশ্চিন্তা অশ্রু (আনন্দের) হয়ে ঝরল যখন দেখল আমিও সালেমের সাথে জুম’আর সালাত আদায় করেছি।
 
সেদিনের পর থেকে আমি আর কখনো মসজিদে জামা’আতের সাথে সালাত বাদ দিইনি। আমি আমার খারাপ বন্ধুদের ত্যাগ করেছি। বন্ধু করেছি মসজিদের ওই সৎনিষ্ঠ লোকগুলোকে। তাদের সাথে আমিও পেয়েছি ঈমানের অমৃত স্বাদ। কী আমাকে আমার জীবন সম্পর্কে ভুলিয়ে রেখেছিল তাও তাদের থেকে জেনেছি, শিখেছি। বিত্‌র সালাতের পরে যে দীনি আলোচনা হতো আমি তাও কখনো আর বাদ দিতাম না। মাসে পুরো কুর’আন কয়েকবার করে পড়ে শেষ করতে থাকলাম। মানুষের কুৎসা রটিয়ে আর ঠাট্টা তামাশা করে নিজের যে জিহ্বা টাকে কলুষিত করেছিলাম, তা এখন সদায় আল্লাহ্‌র স্মরণে সিক্ত রাখলাম যাতে আল্লাহ্‌ আমাকে মাফ করে দেন।

একদিন আমার কিছু দ্বীনি, ধার্মিক বন্ধুরা মিলে দূরে এক জায়গায় দা’ওয়াতের কাজে যাওয়ার মনস্থির করল। তাদের সাথে যাওয়ার ব্যাপারে আমার একটু অনাগ্রহ ছিল। আমি ইস্তেখারাহ সালাত আদায় করলাম, আমার স্ত্রীর সাথেও পরামর্শ করলাম। ভেবেছিলাম ও নিষেধ করবে যেতে… কিন্তু ঘটল তার উল্টোটা! কারন এতোদিন পাপের কারনে অনেক জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছি, অথচ ভুলেও ওকে একবার জিজ্ঞেস করিনি। আজ যখন ওকে জিজ্ঞেস করলাম, ও ভীষণ আনন্দিত হলো, এমনকি আমাকে উৎসাহিতও করল। আমি সালেমের কাছে গেলাম, বললাম আমি সফরে যাচ্ছি। শুনে ওর পাথর চোখদুটো ছলছল করে উঠল, আর কচি বাহুতে আমাকে জড়িয়ে নিলো…
 
বাড়ির বাইরে থাকলাম প্রায় সাড়ে তিন মাস। এই সময়টাতে যখনই সুযোগ পেয়েছি আমি আমার স্ত্রী আর সন্তানদের সাথে ফোনে কথা বলেছি। ওদের জন্য আমার খুব খারাপ লাগত… কি খারাপই না লাগত সালেমের জন্য!! ওর কণ্ঠটা শোনার ভীষণ ইচ্ছা জাগত… শুধু ওর সাথেই কথা হয়নি সফরের ঐ সময়টায়। ফোন করলেই শুনতাম হয় স্কুলে নয়তো মসজিদে আছে। যতবারই বলতাম ওর কথা আমার ভীষণ মনে পড়ে, ওর জন্য আমার মন খারাপ করে, ততবারই আমার স্ত্রী খুশিতে হাসত। কিন্তু শেষবার ও হাসেনি। ওর কণ্ঠস্বরটা কেমন যেন আলাদা ছিল শেষবার। ওকে বললাম, “সালেমকে আমার সালাম দিও”, ও শুধু বলল, “ইনশাআল্লাহ্‌,” তারপর চুপ হয়ে গেল।
 
অবশেষে বাড়ি ফিরলাম। দরজায় করাঘাত করে দাঁড়িয়ে আছি সালেম এসে আমার দরজাটা খুলে দেবে এই আশায়। কিন্তু আশ্চর্য হলাম আমার প্রায় চার বছরের ছেলে খালেদকে দেখে। ওকে কোলে তুলে নিতেই ও নালিশের সুরে বলে উঠল, “বাবা! বাবা!”। বাড়িতে ঢুকতেই কেন জানি না, ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠল।
 
অভিশপ্ত শয়তান থেকে আল্লাহ্‌র কাছে আশ্রয় চাইলাম…আমার স্ত্রীর কাছে গেলাম… ওর চেহারাটা কেমন যেন লাগছে। যেন কিছুই হয়নি এমন একটা ভান করছে ও। ভালো করে তাকিয়ে বললাম, “কি হয়েছে তোমার?” ও বলল, “কিছু নাহ।” হঠাৎ সালেমের কথা জিজ্ঞেস করলাম। বললাম, “সালেম কোথায়?” ওর মাথাটা নিচু হয়ে গেল; কোন উত্তর দিলনা ও। ও কাঁদছে…

“সালেম! কোথায় আমার সালেম?” আমি চিৎকার করে উঠলাম।

ঠিক তখনই আমার ছোট ছেলে খালেদ ওর শিশু সুলভ ভাষায় বলে উঠল,
“বাবা… থালেম জান্নাতে তলে গেতে… আল্লাহ্‌র কাথে…” (সালেম জান্নাতে চলে গেছে… আল্লাহ্‌র কাছে…)
 
আমার স্ত্রী আর সইতে পারল না। ও কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ার আগেই ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। পরে জানলাম, আমি আসার দুই সপ্তাহ আগে সালেমের জ্বর হয়েছিল। আমার স্ত্রী ওকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল। জ্বর আস্তে আস্তে ভয়ানক রূপ ধারন করল…অবশেষে জ্বর ছেড়ে গেল… সাথে আমার সালেমের প্রাণ পাখিটাও…
আর তাই, যদি দুনিয়া সমান বিপদ আসে আপনার উপর, যদি তা বইবার সাধ্য না থাকে, তো আল্লাহ্‌কে ডাকুন, “ইয়া আল্লাহ্‌!” যদি পথ হারিয়ে ফেলেন কিংবা যদি পথ সংকীর্ণ হয়ে যায়, যদি পাল ছিঁড়ে যায়, যদি আশার প্রদীপ নিভে যায়, তো আল্লাহ্‌কে ডাকুন, “ইয়া আল্লাহ্‌!।”
 
আল্লাহ্‌ চেয়েছিলেন সন্তানের মৃত্যুর আগেই পিতাকে সন্তানের মাধ্যমে হেদায়াত দান করতে। আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীন কতই না দয়ালু!


“অনেক মহান কর্ম নিয়্যতের কারনে তুচ্ছ হয়ে যায়, আবার অনেক নগণ্য কর্ম নিয়্যত গুণে মহান হয়ে ওঠে…”


মুল : ILoveAllaah.com | অনুবাদ : আবদ্‌ আল-আহাদ  | প্রকাশনায় : কুরআনের আলো ওয়েবসাইট
Link: https://www.quraneralo.com/have-eyes-still-blind/
Title: Re: আমরা চোখ থাকতেও অন্ধ হয়ে থাকি
Post by: rakib.cse on September 17, 2018, 04:30:31 PM
Thanks for sharing  :)
Title: Re: আমরা চোখ থাকতেও অন্ধ হয়ে থাকি
Post by: murshida on September 17, 2018, 05:24:45 PM
 :D
Title: Re: আমরা চোখ থাকতেও অন্ধ হয়ে থাকি
Post by: murshida on September 19, 2018, 03:15:58 PM
 :)
Title: Re: আমরা চোখ থাকতেও অন্ধ হয়ে থাকি
Post by: Nusrat Jahan Bristy on September 24, 2018, 02:57:12 PM
 :)
Title: Re: আমরা চোখ থাকতেও অন্ধ হয়ে থাকি
Post by: Raisa on October 02, 2018, 03:41:44 PM
 :) :) :)
Title: Re: আমরা চোখ থাকতেও অন্ধ হয়ে থাকি
Post by: Mizanur Rahman (GED) on October 10, 2018, 05:51:34 PM
 :)
Title: Re: আমরা চোখ থাকতেও অন্ধ হয়ে থাকি
Post by: refath on November 04, 2018, 04:50:52 PM
Thank you for sharing.
Title: Re: আমরা চোখ থাকতেও অন্ধ হয়ে থাকি
Post by: murshida on November 12, 2018, 01:02:06 PM
 :)
Title: Re: আমরা চোখ থাকতেও অন্ধ হয়ে থাকি
Post by: nadimhaider on November 14, 2018, 10:59:09 AM
Yes, we do lots of mistake.
Title: Re: আমরা চোখ থাকতেও অন্ধ হয়ে থাকি
Post by: Mir Kaosar Ahamed on November 18, 2018, 01:39:37 PM
Thanks for sharing
Title: Re: আমরা চোখ থাকতেও অন্ধ হয়ে থাকি
Post by: murshida on December 01, 2018, 06:00:23 PM
 :)
Title: Re: আমরা চোখ থাকতেও অন্ধ হয়ে থাকি
Post by: murshida on December 20, 2018, 03:03:45 PM
 :)
Title: Re: আমরা চোখ থাকতেও অন্ধ হয়ে থাকি
Post by: murshida on January 15, 2019, 02:00:04 PM
 :)
Title: Re: আমরা চোখ থাকতেও অন্ধ হয়ে থাকি
Post by: Kazi Rezwan Hossain on February 19, 2019, 01:43:28 PM
Thanks for the post
Title: Re: আমরা চোখ থাকতেও অন্ধ হয়ে থাকি
Post by: rayhanul.bba on March 25, 2019, 04:17:17 AM
We should learn from mistakes. 
Title: Re: আমরা চোখ থাকতেও অন্ধ হয়ে থাকি
Post by: masudur on March 25, 2019, 12:54:53 PM
Yes.
Title: Re: আমরা চোখ থাকতেও অন্ধ হয়ে থাকি
Post by: Anhar Sharif on March 25, 2019, 02:11:51 PM
Good write up
Title: Re: আমরা চোখ থাকতেও অন্ধ হয়ে থাকি
Post by: nusrat.eee on July 14, 2019, 08:48:21 PM
Nice post.
Title: Re: আমরা চোখ থাকতেও অন্ধ হয়ে থাকি
Post by: Jasia.bba on July 15, 2019, 11:38:56 AM
Nice sharing.........
Thanks
Title: Re: আমরা চোখ থাকতেও অন্ধ হয়ে থাকি
Post by: Farhananoor on August 03, 2019, 12:33:39 PM
Thanks for sharing.
Title: Re: আমরা চোখ থাকতেও অন্ধ হয়ে থাকি
Post by: sayma on September 26, 2019, 09:41:38 AM
We should learn from the write-up. We should never make any fun or criticize any disable people.
Title: Re: আমরা চোখ থাকতেও অন্ধ হয়ে থাকি
Post by: Tapasy Rabeya on December 04, 2019, 11:21:28 AM
Informative :)
Title: Re: আমরা চোখ থাকতেও অন্ধ হয়ে থাকি
Post by: murshida on February 17, 2020, 03:34:18 PM
 :)
Title: Re: আমরা চোখ থাকতেও অন্ধ হয়ে থাকি
Post by: Md. Azizul Hakim on February 18, 2020, 03:04:05 PM
Nice story :)