Show Posts

This section allows you to view all posts made by this member. Note that you can only see posts made in areas you currently have access to.


Messages - myforum2015

Pages: 1 [2] 3 4 ... 15
18
Story, Article & Poetry / রেলওয়ের ইতিহাস
« on: March 30, 2016, 10:12:59 AM »
রেলওয়ে উনিশ শতকে প্রবর্তিত হয়ে যোগাযোগের ক্ষেত্রে ব্যাপক বিপ্লবের সূচনা করে। জর্জ স্টিফেনসনের যুগান্তকারী প্রচেষ্টায় ১৮২৫ খ্রিস্টাব্দের ২৭ সেপ্টেম্বর বিশ্বের প্রথম রেলওয়ে ইংল্যান্ডের স্টকটন থেকে ২৬ কিমি দূরবর্তী ডার্লিংটন পর্যন্ত জনসাধারণের জন্য উদ্বোধন করা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রেলওয়ের প্রথম উদ্বোধন হয় মোহাওয়াক থেকে হাডসন পর্যন্ত ১৮৩৩ সালে। জার্মানিতে এর প্রথম উদ্বোধন হয় ১৮৩৫ সালে নুরেমবার্গ থেকে ফুর্থ পর্যন্ত, ইতালিতে হয় ১৮৩৯ সালে, ফ্রান্সে ১৮৪৪ সালে, স্পেনে ১৮৪৮ সালে এবং সুইডেনে ১৮৫৬ সালে। রেলওয়ের প্রবর্তনে ইউরোপ ও আমেরিকার তুলনায় ব্রিটিশ শাসনাধীন বাংলাও পিছিয়ে ছিল না।
রেলপথ বিকাশের ইতিহাস উনিশ শতকের মাঝামাঝি ব্রিটিশ সরকারের সহযোগিতায় উপনিবেশিক বাংলায় রেলওয়ে স্থাপনের জন্য প্রাথমিকভাবে ইংল্যান্ডে চিন্তা-ভাবনা ও পরিকল্পনা হতে থাকে। এরূপ পরিকল্পনার মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল রাজনৈতিক, ভৌগোলিক ও কৌশলগত সুবিধাদিসহ বাণিজ্যিক স্বার্থ বিবেচনা।
ভারতের ভাইসরয় লর্ড ডালহৌসি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পরিচালক পর্ষদের কাছে ভারতবর্ষে রেলওয়ে স্থাপন কাজ শুরু করার জন্য অনেকগুলি প্রস্তাব পাঠান। ১৮৪৪ সালে আর.এম স্টিফেনসন কলকাতার সন্নিকটে হাওড়া থেকে পশ্চিম বাংলার কয়লাখনি সমৃদ্ধ রানীগঞ্জ শহর পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণের জন্য ইস্ট ইন্ডিয়া রেলওয়ে কোম্পানি গঠন করেন।
তবে প্রয়োজনীয় অনুমোদন পেতে ও সরকারের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদনে বেশ কয়েক বছর লেগে যায়। ইতোমধ্যে, ১৮৫০ সালে গ্রেট ইন্ডিয়ান পেনিনসুলার রেলওয়ে নামক কোম্পানি মুম্বাই থেকে থানা পর্যন্ত ৩৩ কিমি দীর্ঘ রেললাইন স্থাপন করতে থাকে। লাইনটি উদ্বোধন করা হয় ১৬ এপ্রিল ১৮৫৩ সালে। এটিই ছিল ব্রিটিশ ভারতে রেলওয়ের প্রথম যাত্রা। ইস্ট ইন্ডিয়া রেলওয়ে কোম্পানি কর্তৃক নির্মিত হাওড়া থেকে হুগলি পর্যন্ত ৩৮ কিমি রেললাইনের উদ্বোধন হয় ১৮৫৪ সালে এবং এর মাধ্যমে চালু হয় বাংলার প্রথম রেললাইন।
বর্তমান বাংলাদেশের ভৌগোলিক সীমারেখার মধ্যে রেললাইন স্থাপনের কাজ শুরু করার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে ব্রিটিশ আমলেই বিবেচনা করা হয়েছিল। ১৮৫২ সালে কর্নেল জে.পি কেনেডি গঙ্গা নদীর পূর্বতীর ধরে সুন্দরবন হয়ে ঢাকা পর্যন্ত রেললাইন বসানোর প্রস্তাব দেন। কিন্তু এর মধ্যেই ১৮৫৪ সালে ব্রিটিশ সরকার বার্মা (বর্তমান মিয়ানমার) দখল করে। বার্মাকে সরাসরি ভারতের সঙ্গে সংযুক্ত করার রাজনৈতিক এবং কৌশলগত কারণেই কলকাতা ও বার্মার রাজধানী রেঙ্গুনের মধ্যে দ্রুত যোগাযোগের প্রশ্নটি প্রকট হয়। ১৮৫৫ সালে বাংলায় ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর প্রকৌশল কোরের মেজর অ্যাবার ক্রমবি মাঠ পর্যায়ে জরিপ করে একটি রিপোর্ট পেশ করেন। এতে
ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ে নামে একটি কোম্পানি গঠনের সম্ভাব্যতা উলেখ করা হয়। পরবর্তী দুই বছরে প্রবীণ রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ার পুর্ডন-এর তত্ত্বাবধানে প্রকল্পটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার রূপ নেয়।
১৮৬২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ে
কলকাতা থেকে রাণাঘাট পর্যন্ত রেলপথ উদ্বোধন করে। এই লাইনকেই বর্ধিত করে ১৫ নভেম্বর ১৮৬২ সালে দর্শনা থেকে জগতী পর্যন্ত ৫৩.১১ কিমি ব্রডগেজ (১,৬৭৬ মিমি) রেললাইন শাখা উন্মোচন করা হয়। সে সময় কুষ্টিয়া ছিল প্রান্তিক স্টেশন, কিন্তু ১৮৬৭ সালে পদ্মা ভাঙনের কারণে তা স্থানান্তরিত হয় গড়াই নদীর পাড়ে এবং পরবর্তী বছরে আদি কুষ্টিয়া স্টেশন পরিত্যক্ত হয়। কুষ্টিয়া থেকে পদ্মার পাড়ে (পদ্মা ও যমুনার সংযোগস্থলের নিচে) অবস্থিত অভ্যন্তরীণ নদীবন্দর গোয়ালন্দ পর্যন্ত ৭৫ কিমি দীর্ঘ রেললাইন উদ্বোধন করা হয় ১ জানুয়ারি ১৮৭১ সালে।
১৮৭৪ সাল থেকে ১৮৭৯ সালের মধ্যে নর্থ বেঙ্গল স্টেট রেলওয়ে নামে ব্রিটিশ সরকার একটি নতুন ২৫০ কিমি দীর্ঘ মিটারগেজ (১,০০০ মিমি) রেললাইন স্থাপন করে। লাইনটি পদ্মার বামতীর ঘেঁষে সারা থেকে চিলাহাটি হয়ে হিমালয়ের পাদদেশস্থ ভারতের শিলিগুড়ি পর্যন্ত বিস্তৃত। এই লাইন পূর্বে পার্বতীপুর থেকে কাউনিয়া এবং পশ্চিমে পার্বতীপুর থেকে দিনাজপুর পর্যন্ত দীর্ঘ। একই সময়ে ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ে সারা-র উল্টোদিকে পদ্মার ডান পাশে অবস্থিত দামুকদিয়া থেকে পোড়াদহ পর্যন্ত ব্রডগেজ রেললাইন সংযোজন করে। এতে রেলওয়ে নিয়ন্ত্রিত স্টিমারের পক্ষে ফেরিতে পদ্মা নদী পারাপারে সুবিধা হয়। মাঝপথে একমাত্র পদ্মা নদীর এই প্রতিবন্ধকতা ছাড়া কলকাতা থেকে শিলিগুড়ি পর্যন্ত যাত্রা ছিল সরাসরি। ১৮৮৪ সালে ১ জুলাই ব্রিটিশ সরকার, কোম্পানি নিয়ন্ত্রিত ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়েকে সরকারি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং এর নতুন নামকরণ করে ইস্টার্ন বেঙ্গল স্টেট রেলওয়ে।
বিশ্বজুড়ে পাটের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণের জন্য প্রধান পাট উৎপাদনকারী এলাকা ঢাকা এবং ময়মনসিংহ থেকে কলকাতা বন্দরে পাট সরবরাহ করার জন্য উন্নতমানের যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রয়োজন দেখা দেয়। ১৮৮৫ সালে মূলত কাঁচা পাট নদীপথে কলকাতায় আনার জন্য ঢাকা স্টেট রেলওয়ে নামে খ্যাত ময়মনসিংহ থেকে ঢাকা হয়ে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত ১৪৪ কিমি দীর্ঘ মিটারগেজ রেললাইন স্থাপন করা হয়। ক্রমান্বয়ে এটিকে ময়মনসিংহ থেকে জামালপুর হয়ে জগন্নাথগঞ্জ ঘাট এবং পরবর্তীকালে বাহাদুরাবাদ ঘাট পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। ১৮৮৭ সালে আরও ভাল ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে নর্দান বেঙ্গল রেলওয়ে এবং ঢাকা স্টেট রেলওয়েসহ কাউনিয়া থেকে কুড়িগ্রাম (ধরলা) পর্যন্ত ন্যারোগেজের (৭৬২ মিমি) রেললাইনকে ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ের সঙ্গে একীভূত করা হয়। একই কারণে ১৮৮২-৮৪ সালের মধ্যে সেন্ট্রাল রেলওয়ে নামে পরিচিত বনগাঁ-যশোর-খুলনা ব্রডগেজ রেললাইন এবং ১৮৯৯ থেকে ১৯৯০-এর মধ্যে শান্তাহার থেকে ফুলছড়ি (তিস্তামুখ ঘাট) পর্যন্ত ৯৪ কিমি মিটারগেজ লাইন চালু করা হয়েছিল। এ দুটি লাইনকে যথাক্রমে ১৯০৪ সালে ১ এপ্রিল এবং একই বছর ১ জুলাই ইস্টার্ন বেঙ্গল স্টেট রেলওয়ের সঙ্গে আত্মীকরণ করা হয়। ১৯০৫ সালে কাউনিয়া ও বোনারপাড়ার মধ্যে ৪৪ কিমি মিটারগেজ রেল লাইন চালু হয়। এভাবে ঢাকা এবং রাজশাহী বিভাগের ব্যাপক এলাকায় রেলপথ বিস্তার লাভ করে।
কলকাতা থেকে উত্তরবঙ্গ এবং আসামের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগের জন্য পদ্মার উপরে সেতু নির্মাণ জরুরি হয়ে পড়ে। ১৯১৪ সালে পদ্মার উপরে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ প্রকল্প বাস্তবায়ন উপলক্ষে সারা থেকে শান্তাহার পর্যন্ত মিটারগেজ লাইনকে ব্রডগেজ লাইনে রূপান্তর করা হয়। কলকাতা থেকে দিলি, মাদ্রাজ ও মুম্বাই পর্যন্ত প্রধান রেলপথগুলি ছিল ব্রডগেজ মাপের। ১৯১৫ সালের ৪ মার্চ দুই লেনবিশিষ্ট হার্ডিঞ্জ ব্রিজ রেল চলাচলের জন্য উদ্বোধন করা হয়। ১৯২৪ সালের জুলাই মাসে শান্তাহার থেকে পার্বতীপুর পর্যন্ত ৯৫ কিমি এবং ১৯২৬ সালের সেপ্টেম্বর নাগাদ পার্বতীপুর থেকে চিলাহাটি পর্যন্ত ৬৭ কিমি রেলপথ মিটারগেজ থেকে ব্রডগেজে রূপান্তরিত হয়। এর ফলে উত্তরবঙ্গে শিলিগুড়ি থেকে চিলাহাটি হয়ে কলকাতা ও ভারতের অন্যান্য স্থানে মালামাল সরবরাহ ও যাত্রী চলাচল গাড়ি বদল ছাড়াই সম্ভব হয়ে ওঠে। ১৯১৫ সালে ইস্টার্ন বেঙ্গল স্টেট রেলওয়ে নাম থেকে সরকারিভাবে ‘স্টেট’ শব্দটি বাদ দেওয়া হয়।
ব্রিটিশ সরকার তিন প্রকার গেজের (প্রস্থের) রেলপথ প্রবর্তন করে, যথা: ব্রড (১,৭৬৭ মিমি), মিটার (১,০০০ মিমি) এবং ন্যারো (৭৬২ মিমি)। নিকটতম নদীবন্দর অথবা প্রধান প্রধান রেলপথের মাঝে সংযোগ স্থাপনের জন্য স্বল্প দূরত্বের রেললাইন স্থাপন করা হয়। অধিকতর সম্ভাবনাপূর্ণ এলাকার সঙ্গে যোগাযোগের জন্য রেলপথের পরিবর্ধনও করা হয়। প্রয়োজন অনুযায়ী গাড়িবদল ব্যতিরেকে রেলযোগাযোগ আরও সুসঙ্গত করার লক্ষ্যে রেলপথ রূপান্তরের কাজও অব্যাহত থাকে।
১৯২০ সালে রেলওয়ে ব্যবস্থাপনা আরও উন্নত করার লক্ষ্যে ময়মনসিংহ থেকে জগন্নাথগঞ্জ ঘাট পর্যন্ত ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ে দ্বারা পরিচালিত ৮৮ কিমি বেসরকারি রেললাইন রাষ্ট্রীয়করণ করা হয়। ১৯১৫-১৬ সালে স্থাপিত ঈশ্বরদী থেকে সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত ৮০ কিমি রেলপথটি ব্রিটিশ সরকার ১ অক্টোবর ১৯৪৪ সালে কিনে নেয়। ১৯১৬ সালে ভেড়ামারা থেকে রায়তা পর্যন্ত ব্রডগেজ লাইন খোলা হয়। ১৯১৮ সালে জুন নাগাদ ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ে রূপসা (খুলনা) থেকে বাগেরহাট ৩২ কিমি রেলপথটি নির্মাণ করে, কিন্তু ১৯৪৮ সালে তা সরকারি আওতায় আনা হয়। ১৯১৯ সাল নাগাদ সরকার ও কোম্পানি কর্তৃক সর্বমোট ১,৮০৬.১৬ কিমি রেলপথ নির্মিত হয়।
বেসরকারি রেলওয়ে কোম্পানিগুলি নির্দিষ্ট চুক্তি অনুযায়ী কাজ করত। চুক্তিপত্রের শর্তাদিতে ছিল জমি, সরকারি সাহায্য, মুনাফা বহন, ভাড়ার হার ছাড়াও বিশেষ দায়িত্ব পালন, যেমন চিঠিপত্র, সৈন্যসামন্ত, পুলিশ, সরকারি অফিসার-কর্মচারী বা সরকারি টাকা পয়সা ও বহন সরকারি মালামাল পরিবহণ ইত্যাদি প্রসঙ্গে।
বাহাদুরাবাদ থেকে জামালপুর (সিংহজানি) পর্যন্ত মিটারগেজ রেললাইন চালু হয় ১৯১২ সালে। ১৯২৮-২৯ সালে তিস্তা-কাউনিয়া ন্যারোগেজের রেললাইন মিটারগেজে রূপান্তর করা হয়। ১৯৩০ সালে আব্দুলপুর থেকে আমনুরা পর্যন্ত ব্রডগেজ লাইন নির্মিত হয়। এর একটি বিশেষ উদ্দেশ্য ছিল আম ও আখ পরিবহণ এবং সেন্ট্রাল বেঙ্গল থেকে রোহনপুর হয়ে উত্তর-পশ্চিম ভারতের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন। পরিবহণ ব্যবস্থার প্রবল চাহিদা বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে ১৮৯৭ সালে আগস্ট মাসে দর্শনা থেকে পোড়াদহ পর্যন্ত দুই লেনের রেলপথ (double line) স্থাপন করা হয়। এরপর দুই লেনের ব্রডগেজ লাইন স্থাপিত হয় পোড়াদহ-ভেড়ামারা (১৯০৯ সালে), ভেড়ামারা-ঈশ্বরদী (১৯১৫ সালে) এবং ঈশ্বরদী-আব্দুলপুরে (১৯৩২ সালে)।
ইংল্যান্ড এবং ইউরোপের অন্যান্য দেশে চায়ের চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্রিটিশ কোম্পানিগুলি চীন থেকে চা আমদানি শুরু করে। ১৮৩০ সালে বিভিন্ন কারণে চীন থেকে চা আমদানি বন্ধ হওয়ায় ব্রিটিশ কোম্পানিগুলি হিমালয়ের দক্ষিণাংশে আসাম (সিলেট) ও উত্তরবঙ্গে (দার্জিলিং ও কুচবিহার/আলীপুর দুয়ার) চা বাগান স্থাপনের কাজ শুরু করে। চা বাগানগুলির উৎপাদন বাজারজাত করার জন্য ১৯০২ সালে বেঙ্গল ডুয়ার্স ন্যারোগেজের রেলপথটি কাউনিয়ার উত্তরে নর্থ বেঙ্গলের কুচবিহার পর্যন্ত সম্প্রসারণ করে ১৯৪১ সালে প্রশাসনিক ভাবে ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়। এর দক্ষিণাংশ বর্তমানে বাংলাদেশ রেলওয়ের আওতায়। কেবল বাহাদুরাবাদ-ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লাইন ছাড়া ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ের পুরো অংশটাই ছিল ব্রহ্মপুত্র নদীর পশ্চিম পাশে। ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ে কলকাতার শিল্প, বাণিজ্য ও শহরতলি এলাকার চাহিদা পূরণের জন্য এমনভাবে বিস্তার লাভ করে যে পুরো রেলওয়ে ট্র্যাকের বিন্যাস কলকাতামুখী হয়ে ওঠে।
১৮৩০ সালের দিকে মূলত আসাম অঞ্চলের সিলেট এলাকায় চা কোম্পানিগুলির স্থাপনা শুরু হয়। যেসব চা উৎপাদনকারী কোম্পানি আসামের চা বাগানে প্রচুর বিনিয়োগ করেছিল তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ১৮৯১ সালে
আসাম-বেঙ্গল রেলওয়ে স্থাপন করা হয়েছিল। এর প্রধান দপ্তর ছিল চট্টগ্রামে। আসামসংলগ্ন সমৃদ্ধশালী জেলাগুলিতে চা এবং অন্যান্য ব্যবসা-বাণিজ্যের সুবিধা নিতে চট্টগ্রাম বন্দরের উন্নয়ন জরুরি হয়ে পড়ে। এই বন্দর থেকেই আবার ব্রিটিশ বাংলার ঢাকা, ময়মনসিংহ, নোয়াখালী, ত্রিপুরা (কুমিল্লা) এবং চট্টগ্রাম জেলার পাট, খাদ্যশস্য ও অন্যান্য কাঁচামাল বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হতো। ১৮৯২ সালে ইংল্যান্ডে গঠিত আসাম-বেঙ্গল রেলওয়ে কোম্পানি এদেশে রেলপথ নির্মাণের দায়িত্ব নেয়। ১৮৯৫ সালের ১ জুলাই চট্টগ্রাম থেকে কুমিলা ১৫০ কিমি মিটারগেজ লাইন এবং লাকসাম থেকে চাঁদপুর পর্যন্ত ৬৯ কিমি রেললাইন জনসাধারণের জন্য খোলা হয়। ১৮৯৬ সালে কুমিল্লা-আখাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথ স্থাপন করা হয়। কিন্তু কলকাতা বন্দর এবং আশপাশের নদীভিত্তিক এলাকার কিছু স্বার্থান্বেষী স্টিমার কোম্পানি চট্টগ্রামে সমুদ্র বন্দরের স্থাপনা ও উন্নতি সাধনে বাদ সাধে। শেষ পর্যন্ত ১৮৯৭ সালে প্রচন্ড প্রতিরোধের মুখেও, ব্রিটিশ সরকার চট্টগ্রাম বন্দরে জেটি নির্মাণ অনুমোদন করে। বন্দর প্রশাসন স্বয়ং ভিন্ন প্রশাসন হওয়া সত্ত্বেও, বন্দর নির্মাণ কজের ভার দেওয়া হয় আসাম-বেঙ্গল রেলওয়ের কোম্পানির ওপর।
বিভিন্ন রেলপথের মধ্যে প্রয়োজনীয় সংযোগপথের অংশগুলিতে রেল যোগাযোগের কাজ চলতে থাকে। ১৯০৩ সালে আসাম-বেঙ্গল রেলওয়ের পরিচালনায় বেসরকারি লাকসাম-নোয়াখালী রেল শাখা চালু হয়। ১৯০৫ সালে এই লাইনটি সরকার কিনে নেয়, এবং ১৯০৬ সালে ১ জানুয়ারি আসাম-বেঙ্গল রেলওয়ের সঙ্গে একীভূত করে দেয়। টঙ্গী এবং আখাউড়ার মধ্যে রেললাইন স্থাপিত হয় ১৯১০ থেকে ১৯১৪ সালের মধ্যে, সিলেট এবং কুলাউড়ার মধ্যে ১৯১২ থেকে ১৯১৫ সালে, শায়েস্তাগঞ্জ-হবিগঞ্জ লাইন ১৯২৮ সালে, শায়েস্তাগঞ্জ-ব
েল্লা এবং ফেনী-বেলুনিয়ার মধ্যে ১৯২৯ সালে, চট্টগ্রাম-ষোলশহর লাইন ১৯২৯ সালে, ষোলশহর-নাজিরহাট লাইন ১৯৩০ সালে, ষোলশহর এবং দোহাজারী লাইন ১৯৩১ সালে।
১৯১২-১৯১৮ সালের মধ্যে ময়মনসিংহ-ভৈরববাজার রেলওয়ে কোম্পানি ময়মনসিংহ-গৌরীপুর, গৌরীপুর-নেত্রকো
না-মোহনগঞ্জ, শ্যামগঞ্জ-জারিয়া-ঝঞ্চাইল, গৌরীপুর-ভৈরববাজার রেললাইন স্থাপন করে। এই শাখাগুলি ১৯৪৮-৪৯ সালের মধ্যে সরকার অধিগ্রহণ করে। ময়মনসিংহ-গৌরীপুর-ভৈরব রেললাইন ছিল আসাম-বেঙ্গল রেল কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাধীনে। ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রামের সরাসরি যোগাযোগের জন্য ১৯৩৭ সালে ৬ ডিসেম্বর মেঘনা নদীর উপর রেলসেতু উদ্বোধন করা হয়। ১৯৪২ সালের ১ জানুয়ারি ব্রিটিশ সরকার আসাম-বেঙ্গল রেলওয়ে অধিগ্রহণ করে ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ের সঙ্গে একীভূত করে এবং এর নতুন নামকরণ হয় বেঙ্গল-আসাম রেলওয়ে।
১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট ভারত বিভক্তির পর বেঙ্গল-আসাম রেলওয়ে পাকিস্তান এবং ভারতের মধ্যে বিভক্ত হয়ে যায়। পূর্ববাংলা তথা পূর্ব পাকিস্তান উত্তরাধিকারসূত্রে পায় ২,৬০৬.৫৯ কিমি রেললাইন এবং তা ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ে (ইবিআর) নামে পরিচিত হয়। ১৯৬১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি এর নতুন নামকরণ হয় পাকিস্তান ইস্টার্ন রেলওয়ে। ইবিআর পায় প্রায় ৫০০ কিমি ব্রডগেজ এবং ২,১০০ কিমি মিটারগেজ লাইন, কিন্তু ব্রডগেজ রেল ইঞ্জিন বা ব্রডগেজ রেললাইনের উপরে চলাচল করার উপযুক্ত রেলযানসমূহ মেরামত করার কোন কারখানা পূর্ব পাকিস্তানে ছিল না। তবে, পূর্ব পাকিস্তান রেলওয়ে সৈয়দপুরে একটি মিটারগেজ রেল কারখানা পেয়েছিল। ইবিআর রেল পরিচালনার ক্ষেত্রে কতগুলি মারাত্মক অসুবিধা ও সমস্যার সম্মুখীন হয়, যেমন, সংযোগবিহীন রেললাইন, যানান্তরকরণের অসুবিধা, যমুনা নদীর দুই ধারে নাব্যতা পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ফেরিঘাটসংলগ্ন রেললাইনের নিত্য স্থানান্তর সমস্যা ইত্যাদি। উপরন্তু, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় রেললাইনের উপর দিয়ে প্রবল ধকল যায়। দেশ বিভাগের আগে পর্যন্ত সেগুলি সঠিকভাবে মেরামত করা সম্ভব হয়নি।
দেশ বিভাগের পরপরই সঙ্গত কারণে সৈয়দপুর কারখানায় ব্রডগেজ রেল ইঞ্জিন ও যানবাহন মেরামতের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছিল। দর্শনা থেকে যশোর পর্যন্ত রেল যোগাযোগ বিহীন এলাকায় ৬৯.২৩ কিমি একটি অসংযুক্ত ব্রডগেজ লাইন দ্রুত নির্মাণ করে জনগণের জন্য উন্মুক্ত করা হয় ২১ এপ্রিল ১৯৫১ সালে। রেলওয়ের ট্র্যাকের প্রয়োজনীয় পাথর সরবরাহ করার জন্য সিলেট-ছাতক লাইনে ৩৩.৮ কিমি রেলপথ উন্মুক্ত করা হয় ১৯৫৪ সালের ১৫ অক্টোবর। ১৯৭০ সালের এপ্রিল মাস থেকে ভোলাগঞ্জের নদীবক্ষ থেকে ছাতক বাজার পর্যন্ত সংগৃহীত শিলা ও নুড়িপাথর সরবরাহের জন্য ১৮.৫১ কিমি মনোরেল রোপওয়ে স্থাপনা সক্রিয় করা হয়। এই ব্যবস্থায় ঘণ্টায় ৬০ টন পাথর বহন করা সম্ভব হয়। ১৯৭০ সাল নাগাদ রূপসা-বাগেরহাট ন্যারোগেজ রেললাইনকে ব্রডগেজে রূপান্তর করা হয়।
বাংলাদেশ রেলওয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ আত্মপ্রকাশের পর এদেশের রেলওয়ের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় বাংলাদেশ রেলওয়ে, যা উত্তরাধিকারসূত্রে পায় ২,৮৫৮.৭৩ কিমি রেলপথ ও ৪৬৬টি স্টেশন। স্বাধীনতা যুদ্ধে রেলওয়ে একেবারে বিধ্বস্ত হয়ে যায়। ফলে প্রচুর অর্থ ব্যয় করে অনেক বছরে সেগুলি মেরামত করতে হয়। উল্লেখ্য ১৯৫০-এর দশকে সরকার রেলপথের বিস্তার ও পরিবর্ধনের জন্য যে সমীক্ষা চালায়, সে অনুযায়ী ডাবল লাইন ও শাখা রেলপথ তৈরি করার উদ্যোগ গৃহীত হয়।
১৯৬০-এর দশকে ঢাকা-টঙ্গী ও চট্টগ্রাম-চিনকি আস্তানার মধ্যে ডাবল লাইন ট্র্যাকের কাজ শুরু হয় এবং ১৯৬০-এর দশকের মাঝামাঝি থেকে ১৯৭০-এর দশকের মধ্যে সেই সব ডবল লাইন পর্যায়ক্রমে খোলা হয়েছিল। পুনঃস্থাপন প্রকল্পের আওতায় ঘনবসতিপূর্ণ ও ঘিঞ্জি এলাকা ফুলবাড়িয়া থেকে কমলাপুরে ঢাকা রেলস্টেশন স্থানান্তরের কাজ শুরু হয়েছিল ১৯৫০ সালের শেষের দিকে এবং তা চালু হয়েছিল ১৯৬৮ সালের ১ মে তারিখে। ১৯৮৭ সালে ১১ এপ্রিল এই স্টেশনের সংলগ্ন এলাকায় দেশের প্রথম অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার ডিপো উদ্বোধন করা হয়। ১৯৬৭ সালে ২৩.৬ কিমি রুহিয়া-পঞ্চগড় ও ২৮.৫৫ কিমি কুড়িগ্রাম-চিলমারী ব্রডগেজ রেললাইন খোলা হয়েছিল। দুর্ভাগ্যক্রমে ১৯৭০-এর দশকের প্রথম দিকে বন্যায় চিলমারী স্টেশন যমুনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায় এবং বর্তমানে শুধু রমনা বাজার স্টেশন পর্যন্ত রেলগাড়ী চলাচল করে।
১৯৭০ সালের জানুয়ারি মাসে নরসিংদী-মদনগঞ্জ ৪৬.৬৯ কিমি লাইন খোলা হয়। ট্রাফিক চলাচলের স্বল্পতার দরুন এই লাইন চালু রাখা মোটেই লাভজনক হয়নি, তাই ১৯৭৭ সালে এটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। একই কারণে ১৯৯০ সালে ফরিদপুর-পুকুরিয
়া এবং ভেড়ামারা-রায়ত
া লাইন বন্ধ হয়েছে। অর্থনৈতিক ক্ষতির কারণে ১৯৯৬ সালে লালমনিরহাট-মোগলহাট এবং ১৯৯৭ এ রূপসা-বাগেরহাট, ফেনী-বেলুনিয়া ও কালুখালী-ভটিয়াপাড়া ঘাট শাখাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
১৯৯৪ সালে বঙ্গবন্ধু যমুনা বহুমুখী সেতুর কাজ শুরু হয়েছিল। চার লেন সড়কপথ ও এক লেন ডুয়ালগেজ (পাশাপাশি ব্রডগেজ ও মিটারগেজ) রেলপথবিশিষ্ট এই সেতুর উপরে আছে বৈদ্যুতিক সংযোগ, গ্যাস লাইন ও টেলিফোন লাইনের বন্দোবস্ত। ১৯৯৮ সালের ২৩ জুন সেতু উদ্বোধন করা হয়। রেলওয়ে গেজ পদ্ধতিকে সুসঙ্গত করার জন্য যমুনা সেতুর পূর্ব প্রান্ত থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত ১১৫ কিমি ডুয়ালগেজ লাইন নির্মিত হচ্ছে এবং জয়দেবপুর থেকে ঢাকা পর্যন্ত ৩৫ কিমি ব্রডগেজ লাইনকে ডুয়ালগেজ/ব্রডগেজে রূপান্তরের কাজ শুরু হয়েছে। ২৪৫ কিমি দৈর্ঘ্য পার্বতীপুর-ঈশ্ব
রদী-জামতৈল ব্রডগেজ রেলপথ যমুনা সেতুর পশ্চিম প্রান্তে মিলেছে। সেটিকে ডুয়ালগেজে রূপান্তর করা হচ্ছে।
[সংগৃহীত]

21
Teaching & Research Forum / Re: 10 tips for a good teacher
« on: March 29, 2016, 10:09:07 AM »
Thanks for sharing......

22
Travel / Visit / Tour / Re: A tour to PYRAMID
« on: March 28, 2016, 04:52:10 PM »
Thanks for sharing....

24
Nice post

25


এক অঙ্কের সমাধান করে পাঁচ কোটি টাকার পুরস্কার জিতেছেন ব্রিটিশ গণিতবিদ ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতের অধ্যাপক এন্ড্রু ওয়াইলস। সে অঙ্কটি আবার ৩৬১ বছরের পুরোনো। সমাধান করার ২০ বছর পর এই পুরস্কার পেয়েছেন এন্ড্রু।

১৬৩৫ সালে ইতালীয় গণিতবিদ পিয়েরে দ্যা ফের্মার শেষ উপপাদ্যটি ১৯৯৬ সালে সমাধান করেন এন্ড্রু। তাঁর এই সমাধানের জন্য ২০১৬ সালে গণিতের নোবেল পুরস্কার হিসেবে খ্যাত আবেল পুরস্কার পেয়েছেন এই গণিতবিদ। পুরস্কারের আর্থিক মূল্য সাত লাখ ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় পাঁচ কোটি।

মার্জিনে মন্তব্য
an + bn = cn

এই গাণিতিক সমীকরণটি ইতালির গণিতবিদ পিয়েরে দ্যা দ্য এরেথমেটিকা নামের একটি বইয়ের মার্জিনে ১৬৩৫ সালে লেখেন। সেই সঙ্গে তিনি লেখেন, এই সমীকরণে n এর মান যদি ২-এর চেয়ে বেশি হয়, তাহলে এর কোনো পূর্ণ সাংখ্যিক মান পাওয়া যাবে না। তারপরই তিনি যোগ করেন, ‘আমি এই উপপাদ্যের একটি চমৎকার প্রমাণ খুঁজে পেয়েছি, কিন্তু মার্জিনে যথেষ্ট জায়গা না থাকায় লিখতে পারলাম না!’ সেই থেকে গণিতবিদেরা প্রায় সাড়ে তিন শ বছর ধরে ফের্মার ‘চমৎকার প্রমাণটি’ খুঁজে বেড়িয়েছেন।

এই সমীকরণে n=২ হলে এর অসংখ্য সমাধান পাওয়া যায় এবং এই সমাধানগুলো পিথাগোরাসের সংখ্যা নামে পরিচিত। যেমন সবচেয়ে ছোট সমাধান হলো ৩ (৩২=৯), ৪(৪২=১৬), ৫(৫২=১৫)। এ রকম অসংখ্য সমাধান রয়েছে। কিন্তু সেই ১৬৩৫ সাল থেকে পরবর্তী ৩৬১ বছর ধরে এর কোনো সাধারণ সমাধান কেউ বের করতে পারেনি। এমনকি ফের্মার আর কোনো কাজকর্মেও এই গাণিতিক উপপাদ্যের ‘চমৎকার প্রমাণটি’ আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।

এন্ড্রুর আগের কাজ
ফের্মার মার্জিনের মন্তব্যটি খুঁজে পাওয়ার পর থেকে অনেকেই এই সমাধানের জন্য চেষ্টা করতে শুরু করেন। শুরুতে n=৪ এর একটি সমাধান পাওয়ার পর একটি ধারণা হয় যে, n এর মান মৌলিক সংখ্যা হলে উপপাদ্যটি সত্য হবে। কিন্তু পরবর্তী দুই বছরে কেবল ৩, ৫ ও ৭ মৌলিক সংখ্যার জন্য উপপাদ্যটি প্রমাণিত হয়। কিন্তু কোনো সাধারণ সমাধান পাওয়া যায়নি। সে সময় ফরাসি গণিতবিদ সোফি জারম্যান উপপাদ্যটি প্রমাণ করতে গিয়ে মৌলিক সংখ্যার নতুন একটি শ্রেণির খোঁজ পেয়ে যান। কিন্তু উপপাদ্যটি অধরাই থেকে যায়। উনিশ শতকে জার্মান গণিতবিদ আর্নস্ট কামার ‘নিয়মিত মৌলিক (Regular Prime)’ সংখ্যার জন্য উপপাদ্যটি প্রমাণ করেন। তাতে করে কেবল অনিয়মিত মৌলিক সংখ্যাগুলোকে নিয়ে কাজটা বাকি থাকে। আর্নস্ট কামারের কাজের ওপর ভিত্তি করে এবং কম্পিউটার ব্যবহার করে এর পর গণিতবিদেরা প্রথম ৪০ লাখ মৌলিক সংখ্যার জন্য উপপাদ্যটি প্রমাণ করেন কিন্তু সাধারণ সমাধানটি আর পাওয়া যায়নি।

১৯৫৫ সালে জাপানি গণিতবিদ গোরো সিমুরা ও ইয়ুতাকা তানিয়ামা গণিতের সম্পূর্ণ দুইটি ভিন্ন শাখার মধ্যে যোগসূত্র আঁচ করেন। উপবৃত্তকার বক্ররেখা ও মড্যুলার ফরম নিয়ে তাঁদের কাজ নতুন আশা জাগায়।

এবং এন্ড্রু ওয়াইলস

এর আট বছর পর, ১০ বছর বয়সী এন্ড্রু প্রথম ফের্মার শেষ উপপাদ্য সম্পর্কে জানতে পারেন। সে সময় ইংল্যান্ডের কেমব্রিজে বেড়ে উঠছিলেন তিনি। স্থানীয় গ্রন্থাগারে একটি বইতে প্রথম ফের্মার উপপাদ্যটি দেখে তিনি অবাক হন এই ভেবে যে, কেন তিন শতাব্দী ধরে এর সমাধান হচ্ছে না? সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘সেই মুহূর্ত থেকে আমি জানি, আমাকে এর সমাধান করতেই হবে।’

১৯৮৪ সালে গর্হার্ড ফ্রে এবং ১৯৮৬ সালে কেন রিবেট মড্যুলার তত্ত্বের সঙ্গে ফের্মার উপপাদ্যের সম্পর্ক খুঁজে পান। এমনকি কেন এটিও প্রমাণ করেন যে, মড্যুলার উপপাদ্য যদি প্রমাণ করা যায় তাহলে ফের্মারকে প্রমাণ করা যাবে। সে সময় এন্ড্রু প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতের অধ্যাপক। কেন্টের কথা জানার পর তিনি মড্যুলার উপপাদ্য প্রমাণের চেষ্টা শুরু করেন এবং দীর্ঘ ছয় বছর ধরে অক্লান্ত পরিশ্রমের পর ১৯৯৩ সালে ফের্মার শেষ উপপাদ্যের একটি প্রমাণ হাজির করেন। ফের্মার মার্জিনের মন্তব্যের চেয়ে প্রমাণটি কয়েক শগুণ আকারে বড়। কিন্তু প্রকাশের আগেই প্রমাণের এক জায়গাতে ছোট্ট একটি ভুল পাওয়া যায়। এরপর নিজের ছাত্র রিচার্ড টেইলরকে নিয়ে এন্ড্রু সেটি সমাধান করেন এবং ১৯৯৫ সালে তাঁর প্রমাণটি প্রকাশিত ও গৃহীত হয়।

আর তার ২১ বছর পর ওই ছোট্ট অঙ্কের সমাধানের জন্য পাঁচ কোটি টাকার পুরস্কার পান এন্ড্রু ওয়াইলস। আগামী ২৪ মে নরওয়ের যুবরাজের হাত থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ২০১৬ সালের আবেল পুরস্কার গ্রহণ করবেন একুশ শতকের অন্যতম মেধাবী এই গণিতবিদ।

Show at: http://www.prothom-alo.com/international/article/812491/

26
"আমাদের চারপাশের সমাজটা ক্রমশ প্রতারকে ভরে যাচ্ছে। এই প্রতারণা থেকে ব্যবহারকারীদের বাঁচানোর ব্যবস্থা নিয়েছে জি-মেইল। এবার আনঅথিন্টিকেটেড মেল এলেই সেটাকে চিহ্নত করে দেবে জি-মেইল।"
Thanks for informative post.

29
পনেরো শতকের শেষ দিকে উত্তমাশা অন্তরীপ হয়ে ভারতে আসার পথ আবিষ্কার করেন ভাস্কো দা গামা। তার অনুগামী পর্তুগিজরা কালিকট থেকে অগ্রসর হয়ে বাংলা পর্যন্ত এসেছিল। পর্তুগিজরা সেদিনের চট্টগ্রাম বন্দরকে বলেছিল ‘পোর্তো গ্রান্দে’ অথবা বড় বন্দর। কলকাতাও তখন বন্দর ছিল, তবে পর্তুগিজদের চোখে সেটা ছিল ‘পোর্তো পিকুইনো’ বা ছোট বন্দর।

চারশ বছর পরের কথা। বাংলা প্রেসিডেন্সির প্রধান দুই বন্দর কলকাতা ও চট্টগ্রামের চেহারায়, ভূষায় যোজন যোজন তফাত। কলকাতা ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী হওয়ায় অন্যান্য স্থানের সঙ্গে এর যোগাযোগ ব্যবস্থা বেশ উন্নত হয়ে ওঠে। কলকাতা বন্দরও হয়ে ওঠে ভারতের ও উপমহাদেশের প্রধান বন্দর, যা দেশের বহির্বাণিজ্যের প্রায় পুরোটা একাই সামলাত। কিন্তু পূর্ব ভারতের অন্যতম সমৃদ্ধ এলাকা চট্টগ্রাম তখনো রেল যোগাযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। এ কারণে বিকশিত হচ্ছিল না পূর্ব বাংলা ও চট্টগ্রামের সম্ভাবনা। পিছিয়ে পড়েছিল চট্টগ্রাম বন্দরও।

ব্রিটিশ সরকারের আমলা ছিলেন কবি নবীন চন্দ্র সেন। আজকের চট্টগ্রাম শহরে জামাল খান রোড ও শহীদ সাইফুদ্দীন খালেদ সড়কের সংযোগস্থলে যেখানে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের ‘এরিনা হাউজ’, সেটাই নবীন বাবুর বাড়ি ছিল। ১৮৮৪ সালে তিনি ফেনী মহকুমার এসডিও হন। সে সময়ের যাতায়াত ব্যবস্থার বর্ণনা করতে গিয়ে নবীন বাবু লিখেছেন, ‘গো-যান এ অঞ্চলে একমাত্র চলার বাহন ছিল। তাও খুব কষ্টকরভাবে চলা হত। তাই নিজের জন্য কবি কল্পনা খাটাইয়া একখানি চাটাইয়ের পালকি প্রস্তুত করিয়াছি। চারিদিকে চাটাইয়ের বেড়া, তাহাতে গবাক্ষ ও দ্বার এবং গবাক্ষে নীলবর্ণের পর্দা।’

নবীন বাবু ছিলেন সরকারের পদস্থ কর্মকর্তা। তারই অবস্থা যদি এমন হয়, তাহলে অন্যদের কেমন ছিল? সেকালে তো লেখাজোখার রেওয়াজ খুব বেশি ছিল না। তাই আম মানুষের ব্যক্তিগত দিনলিপি বা বিবরণী পাওয়া সম্ভব নয়। তবে স্থল ও জলপথে বারবার বাহনবদলের পাশাপাশি পাহাড়, জঙ্গল ডিঙাতে যে লোকজন জেরবার হতো, তা বোঝার জন্য খুব বেশি কল্পনাশক্তির প্রয়োজন নেই। অনন্যোপায় না হলে কেউ দূরে কোথাও যেত না। মরিয়া হয়ে যারা যাতায়াত করত, পথে তাদের চোখ আটকে যেত নবীন বাবুর বাহনে। লোকমুখে তার পালকি নিয়ে চর্চা প্রসঙ্গে তিনি লিখেছেন, ‘আমার দুই বংশ নির্মিত কাব্যের দ্বারা আমি এ অঞ্চলে অমরতা লাভ করিয়াছিলাম।’ নবীন বাবু অমরতা লাভ করেছেন অন্যভাবেও। সে প্রসঙ্গে পরে আসছি। আগে বলি সেদিনের কথা, যখন বিশ্ব ত্বরিত ছোট হয়ে আসছিল এবং প্রসার ঘটছিল বাণিজ্যের ও বাণিজ্যিক প্রতিযোগিতার।

পরিবহন সংকটের কারণে মানুষ না হয় চলাফেরা না করল, কিন্তু বাণিজ্যনির্ভর বিশ্বে পণ্য কীভাবে স্থবির থাকে? সে সময় ভারতবর্ষের মোট চা উৎপাদনের ৬৫ শতাংশ হতো আসাম, সিলেট ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে। এই চা রফতানি করতে হতো কলকাতা বন্দর হয়ে। বাংলার দক্ষিণ-পূর্বকোণে অবস্থিত হওয়ায় অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের অভাবে চট্টগ্রাম বন্দর অনেকাংশে অবহেলিত থেকে যায়। অথচ কলকাতা হয়ে পণ্য পরিবহনে ঝক্কি ছিল অনেক। সিলেট থেকে কলকাতায় পণ্য পরিবহনে ১৩ দিন সময় লাগত, চট্টগ্রাম থেকে আরো বেশি। আসামের কথা না-ইবা বললাম। অথচ ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ের কল্যাণে পূর্ব বাংলার কুষ্টিয়া, ঢাকাসহ উত্তরবঙ্গ তত দিনে রেলসংযোগের আওতায় এসেছিল। সিলেট যদি রেলপথে সংযুক্ত হতো, তাহলে ২৪ ঘণ্টায় সিলেট থেকে কলকাতা যাওয়া যেত। পাশাপাশি চট্টগ্রাম যদি রেল নেটওয়ার্কের অন্তর্ভুক্ত হতো, তাহলে তো কলকাতায় না গিয়ে এ পথেই পূর্ববঙ্গ ও আসামের যাবতীয় খনিজ ও কৃষিজ পণ্য রফতানি করা যেত।

ফেনী থেকে নবীন বাবু চট্টগ্রামে স্থানান্তরিত হন। নিজ জেলায় তিনি ডেপুটি কালেক্টর হয়ে আসেন। একই সময় চট্টগ্রাম বিভাগের কমিশনার হয়ে আসেন ডি আর লায়েল। দুজনে মিলে চট্টগ্রাম ও সংলগ্ন এলাকার মানুষের যাতায়াতের দুর্দশা লাঘবে সংকল্পবদ্ধ হন এবং এখানে রেলওয়ের প্রস্তাব করেন। লাভজনক হবে না ভেবে সরকার প্রথম দিকে এতে আগ্রহী হয়নি। চট্টগ্রামেরও কেউ কেউ এ রেলওয়ে অসম্ভব বলে হাসি-ঠাট্টা করে বলতে থাকেন, ‘লায়েল সাহেব ও নবীন বাবু রেলওয়ে এনে ফেলবেন।’ লায়েল ও নবীন বাবু একা ছিলেন না। ব্রিটিশ ব্যবসায়ীরাও চাইতেন চট্টগ্রাম বন্দর রেলপথে সংযুক্ত হোক, তাতে তাদের পণ্য পরিবহনের ব্যয় ও বিপত্তি দুটোই কমবে। এরই মধ্যে চট্টগ্রাম থেকে চাঁদপুর এবং দাউদকান্দি থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত রেললাইন স্থাপনের জন্য কয়েকটি নকশাও করা হয়েছিল। নবীন বাবু একটি নকশার রিপোর্ট লায়েলের অনুমোদনক্রমে বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি সরকারের কাছে পাঠান। বাংলা সরকার তা সমর্থন করে গভর্নমেন্ট অব ইন্ডিয়ার কাছে পাঠিয়ে দেয়। ভারত সরকারের পূর্তসচিব এ নকশার ওপর মন্তব্য করেন, ‘যত দূর দেখেছি এই লাইনটি অন্যান্য নকশার চাইতে শ্রেষ্ঠতর হবে।’ বাংলা সরকার এ রেলপথ হলে কোনো বিঘ্ন হবে কিনা তা জরিপ করতে ‘রেলওয়ে কার্যে অশেষ পারদর্শী’ মেজর স্টোরিকে নিয়োগ দেয়। মেজর স্টোরি নবীন বাবুর নকশা বুঝে নিয়ে সরজমিন পরিদর্শন করেন। তিনি সরকারকে রিপোর্ট করেন, ‘চট্টগ্রাম হইতে লাকসাম পর্যন্ত লাইন পূর্ব লাইন হইতে অধিকতর সুবিধাজনক ও অল্পতর ব্যয়সাধ্য বলিয়া মনে হইতেছে।’ নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিঠি চালাচালির পর ১৮৮৪ সালে ভারত সরকার এ অঞ্চলে আসাম-বেঙ্গল রেলওয়ে নামে রেললাইন প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দেয়। লন্ডনের একদল ব্যবসায়ী এ রেললাইনের দায়িত্ব নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে সেক্রেটারি অব স্টেটের কাছে চিঠি দেন। আসাম-বেঙ্গল রেলওয়ে কোম্পানি (এবিআর) নামে একটি কোম্পানি গঠন করে এ ব্যবসায়ীরাই ১৮৯২ সালে এ লাইনের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নেন। ১৮৯২ সালের ১৮ মার্চ এবিআর কোম্পানি ইংল্যান্ডে নিবন্ধিত হয়।

এবিআর কোম্পানির সদর দফতর স্থাপিত হয় চট্টগ্রামে। ইঞ্জিনিয়ার ব্রাউনজারের তত্ত্বাবধানে এ কোম্পানি ১৮৯৩ সালের জানুয়ারিতে চট্টগ্রাম থেকে ফেনী পর্যন্ত রেললাইন স্থাপনের কাজ শুরু করে। প্রথম লাইনটি চট্টগ্রাম থেকে কুমিল্লা পর্যন্ত নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। আর এর মধ্যবর্তী স্টেশন লাকসাম থেকে দুটি লাইন বের হয়ে একটি চাঁদপুর, অন্যটি নোয়াখালী পর্যন্ত বিস্তৃত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ইঞ্জিনিয়ার ব্রাউনজার ফেনীতে নবীন বাবুর নির্মিত বাঁশের ঘরের আকৃতি অনুকরণ করে পাহাড়তলীতে রেলওয়ে কর্মীদের কোয়ার্টারের নকশা করেন। ১৮৯৫ সালের ১ জুলাই চট্টগ্রাম থেকে কুমিল্লা পর্যন্ত ৯৩ দশমিক ১৪ মাইল দীর্ঘ লাইনটি উদ্বোধন করা হয়।

ঔপনিবেশিক ভূ-রাজনীতি, ভৌগোলিক রণনীতি ও রণকৌশলগত সুবিধাদিসহ বাণিজ্যিক স্বার্থকে মাথায় রেখে কালে কালে চট্টগ্রাম থেকে জেলার দক্ষিণেও রেললাইন বিস্তৃত হয়। চট্টগ্রামে আসাম বেঙ্গল কোম্পানির সদর দফতর প্রতিষ্ঠা, রেলপথ স্থাপন এবং সেই রেলপথের সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরের সংযোগের সুফল এখনো পাচ্ছে চট্টগ্রামবাসী তথা বাংলাদেশ। ব্রিটিশদের বাণিজ্য দূরদর্শিতার সুফলকে কাজে লাগিয়ে পাহাড়-নদী-সমুদ্রবেষ্টিত এ শহর এখনো বাংলাদেশ তথা দক্ষিণ এশিয়ায় বাণিজ্যের অন্যতম তীর্থভূমি হিসেবে পরিচিত।

এক অর্থে এবিআর কোম্পানিই আজকের চট্টগ্রাম বন্দরের নির্মাতা। তারাই সমুদ্রতীরবর্তী এই প্রাচীন পোতাশ্রয়কে বন্দরে রূপান্তর করে। বন্দরের উন্নয়নের জন্য একে রেলের সঙ্গে সংযুক্ত করতে তারা ১৮৯০ সাল থেকে সরকারের কাছে আবেদন করতে থাকে। বন্দরের সঙ্গে রেলসংযোগের গুরুত্ব উপলব্ধি করে পোর্ট কমিশনার্সও সরকারের কাছে জেটি এবং অন্যান্য সুবিধা নির্মাণের জন্য অনুদান চেয়েছিল। কিন্তু সরকার এবিআর কোম্পানিকেই অনুমোদন দেয়। কলকাতা বন্দর ও জয়েন্ট স্টিমার কোম্পানির তীব্র বিরোধিতার মুখে ১৮৯৯ সালে রেল কোম্পানির উদ্যোগে চট্টগ্রাম পোতাশ্রয়ে প্রথম জেটি নির্মাণকাজ শেষ হয়। ১৯০০-১৯১০ সালের মধ্যে এবিআর চট্টগ্রাম বন্দরে আরো তিনটি জেটি নির্মাণ করে। ১৮৯৯ সালের জুনে নির্মিত প্রথম জেটিতে এসএস স্যার রবার্ট ঢেরনিক নামের জাহাজ ভিড়ে মালপত্র খালাস করে। ওই জাহাজে ১ হাজার ৬৪৮ বেল পাট বোঝাই করে রফতানি করা হয়েছিল। ১৯৬০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দর রেলওয়ের অন্তর্ভুক্ত ছিল। রেলওয়ে চট্টগ্রাম বন্দরকে গুরুত্বপূর্ণ বন্দরে পরিণত করে ব্যবসা-বাণিজ্যকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সম্প্রসারণ করতে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

১৮৮৮ সালের পূর্ব পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দরকে পোতাশ্রয় হিসেবে গণ্য করা হলেও রেলপথ স্থাপনের মাধ্যমে এটি বিশ্বের অন্যতম বন্দরে পরিণত হয়। চট্টগ্রাম এখন বিশ্বের শীর্ষ ১০০ বন্দরের একটি হিসেবে পরীক্ষিত।

ইতিহাসের প্রাচীন এ নগরী চট্টগ্রাম বা চাটগাঁয় কৃষিকে ছাপিয়ে শিল্প-কলকারখানা স্থাপন ও বিকাশের পেছনেও রেলসংযোগের ভূমিকা কম নয়। চট্টগ্রাম শহরের একটি বড় অংশ এখনো রেলের মালিকানায় রয়েছে। এমনো বলা যায়, এ কারণেই অপরিকল্পিত নগরায়ণের এই কালে এখনো এ শহরে পাহাড় রয়েছে, সবুজ মহীরুহ এখনো পথ চলতি মানুষের মাথায় ছায়া দেয়। রেলওয়ের এসব ভূমি এখনো চট্টগ্রাম শহরের সৌন্দর্যের প্রাণ। নগরীর প্রায় সিংহভাগ পাহাড়, বন-বাদার, বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সড়ক রেলের মালিকানাধীন। আসাম বেঙ্গল রেলওয়ের সদর দফতর সেন্ট্রাল রেলওয়ে বিল্ডিং (সিআরবি) দেশের ঐতিহ্যবাহী ভবন হিসেবে পরিচিত।

চট্টগ্রাম শহরের সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরের ৮ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের রেলযোগাযোগ প্রতিষ্ঠার আগে এবিআর কোম্পানি বন্দরের সন্নিকটে চট্টগ্রাম বন্দর ইয়ার্ড (সিজেপিওয়াই ইয়ার্ড নামে পরিচিত) স্থাপন করে। সেখান থেকে একাধারে কয়েকটি মালবাহী ট্রেন চলাচলের ট্র্যাক রয়েছে। কালের বিবর্তনে এসব ট্র্যাকের অধিকাংশ ক্ষয়িষ্ণু হলেও চট্টগ্রাম বন্দরের পণ্য খালাস হয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠানো এবং দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে রফতানিমুখী পণ্য চট্টগ্রাম বন্দরে নিয়ে আসার এক ব্যাপক কর্মযজ্ঞ চট্টগ্রামকে সারা দেশ থেকে বিশেষভাবে আলাদা করেছে।

এবিআর কোম্পানির উদ্যোগে পূর্ব বাংলায় রেললাইন স্থাপনের মাধ্যমে এ অঞ্চলের অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রসার শুরু হয়। এর মধ্যে রয়েছে কৃষির বাণিজ্যিকীকরণ, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বৃদ্ধি, নতুন ব্যবসা কেন্দ্র-শহর-বাজার সৃষ্টি, লিংক রোড বা জোগান সড়ক তৈরি, কলকারখানা তৈরি, নতুন কর্মসংস্থান, আধুনিক মুদ্রা ব্যবস্থার প্রচলন এবং নতুন নতুন পণ্যের ব্যবহার বৃদ্ধি। এতে এখানকার মানুষের মধ্যে একটি ব্যবসায়ী চিন্তা ও কর্মের উন্মেষ ঘটে। পরবর্তী সময়ে ভোগ্যপণ্য, ভারী শিল্প, ইস্পাত, জাহাজ নির্মাণ শিল্পসহ নানামুখী শিল্প-কারখানা স্থাপনের মাধ্যমে এখানকার মানুষ ব্যবসায়ী হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়। স্বাধীনতার পর চট্টগ্রামের বনেদি ব্যবসায়ীরাই দেশের প্রধান শিল্পোদ্যোক্তা হিসেবে আবির্ভূত হন।

শুরুতে এ অঞ্চলে রেলসেবা পণ্য পরিবহনের জন্য শুরু হলেও যাত্রীসেবাও সমান্তরালে চলতে থাকে। তবে চট্টগ্রাম ও সিলেট ছাড়াও ব্রিটিশ ভারতের বিভিন্ন এলাকা থেকে শিল্পের কাঁচামাল, পাট, চা, চিনি সরবরাহের জন্য এখানে একটি আধুনিক বন্দর ব্যবস্থাপনা সৃষ্টির প্রয়াস নিয়েছিলেন ব্রিটিশ শাসকরা। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে বছরে প্রায় ৪ কোটি টন পণ্য আমদানি হয়। যার ১০ শতাংশ বা ৪০ লাখ টন রেলপথে সারা দেশে পাঠানো হয়। দৈনিক প্রায় ১০০ টিইউএসের বেশি কনটেইনার পরিবহন করে এসব পণ্য। জ্বালানি তেলের সিংহভাগই রেল পরিবহন করে। একসময় রেলের আয়ের সিংহভাগই আসত পণ্য পরিবহন খাত থেকে। রেলের ইনফরমেশন বুক-২০১৩-এর তথ্যানুসারে দেখা গেছে, ১৯৮৫ সাল থেকে রেলের আন্তঃনগর ট্রেন সার্ভিস চালুর পর যাত্রী পরিবহন খাতে এর রাজস্ব আয় বাড়তে থাকে। শুরুতে রেলের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের পণ্য পরিবহন হলেও ১৯৮৬-৮৭ অর্থবছর থেকে রেলওয়ে কনটেইনার সার্ভিস শুরু করে। যা চট্টগ্রাম বন্দর ও ঢাকা আইসিডিতে কনটেইনার পরিবহনে ন্যস্ত থাকে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ঢাকা আইসিডি পর্যন্ত কনটেইনারে পণ্য পরিবহনে ২০১২-১৩ সালে রেলওয়ে ৬১ কোটি ৪৪ লাখ ৮৯ হাজার টাকা আয় করে। রেলের জ্বালানি ব্যবহারের চিত্র থেকে চট্টগ্রামে রেলের কর্মযজ্ঞের বিশেষ ধারণা পাওয়া যায়। রেলের তথ্যমতে, ২০১২-১৩ অর্থবছরে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল ১৮৪ টন কয়লা খরচ করে। এর বিপরীতে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের খরচ হয় মাত্র ৫২ টন কয়লা। অন্যদিকে এ সময়ে রেলওয়ে ৩৫ হাজার ৩৭ টন ডিজেল ব্যবহার করলেও এর মধ্যে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ে ব্যবহার করে ২১ হাজার ১০১ টন। বন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে রেলের ভূমিকা কী, তা প্রতি টন পণ্য পরিবহনে রেলপথে গড় খরচের চিত্র দেখলেই বোঝা যায়। ইনফরমেশন বুক-২০১৩ অনুসারে, ২০১২-১৩ অর্থবছরে রেলওয়ে প্রতি কিলোমিটার পণ্য পরিবহনে আয় করেছে মাত্র ২ দশমিক ৩ টাকা। এক্ষেত্রে টনপ্রতি পণ্য পরিবহন থেকে আয় করেছে ৫৪৩ দশমিক ৮৪ টাকা। খুব কম খরচে পণ্য পরিবহন সুবিধার কারণে বন্দরকে ব্যবহার করে রেলওয়ে চট্টগ্রামসহ সারা দেশের অর্থনীতিতে অবদান রেখে চলেছে।

রেলওয়ে চট্টগ্রামের হিসাবমতে, চট্টগ্রাম বিভাগে রেলের মোট জমির পরিমাণ ৭ হাজার ৭০১ একর। এর মধ্যে সংস্থার নিজস্ব প্রয়োজনে ব্যবহার হচ্ছে প্রায় ৩ হাজার একর। আর অব্যবহূত জমির পরিমাণ ১ হাজার ৭৩ দশমিক ৯৭ একর। বাকি জমি হয় বেদখল, না হয় ইজারা বা প্রতীকী মূল্যে বরাদ্দ দেয়া। অর্থাৎ ১৮৫ বর্গকিলোমিটারের এ শহরে বিপুল পরিমাণ রেলওয়ের জমি থাকায় চট্টগ্রামকে রেলের শহর বলেই মনে করেন রেলওয়ে-সংশ্লিষ্টরা।

চট্টগ্রামে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের অধীনে ৭১টি আন্তঃনগর ট্রেন, মেইল এক্সপ্রেস ৬৮টি, লোকাল ৫৭টি, কমিউটার ৩০টি, কনটেইনার ৬টি, পণ্যবাহী ট্রেন ৩টি এবং বেলাস্ট ট্রেন ২টি। প্রতিমানে রেলওয়ে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ৫-৬ হাজার টিইউএস পণ্য পরিবহন করে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে মোট ৬০ হাজার টিইউএস পণ্য পরিবহন করে। চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত) ৪০ হাজার ৪৫২ টিইউএস কনটেইনার পরিবহন করেছে। বিগত অর্থবছরের একই সময়ে কনটেইনার পরিবহন করেছিল ৩৮ হাজার ২৭৭ টিইউএস। অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১৯ হাজার ৫৭৫টি ওয়াগনে তেল, সার, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্য পরিবহন করেছে। বন্দরকেন্দ্রিক রেলপথে সারা দেশে পণ্য পরিবহন, চট্টগ্রামের সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ ও যাত্রী পরিবহন এখানকার প্রাত্যহিক কর্মকাণ্ডের প্রধানতম অনুষঙ্গ বলেই ধরে নেয়া যায়।

এ অঞ্চলে চালু হওয়ার পর থেকে রেলওয়ে দেড় শতাধিক বছর পার করেছে। ব্রিটিশ শাসন, পাকিস্তানি শাসন ও স্বাধীন বাংলাদেশে অনেক পটপরিবর্তনের সাক্ষী হয়ে রেল তার আপন মহিমায় পরিবহন কাজ চালিয়ে যাচ্ছে অবিরত। পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তনকে সামনে নিয়ে এখনো দেশের অর্থনীতিতে অবদান রেখে চলেছে রেল। এখনো রেলপথই চট্টগ্রাম তথা সারা দেশের পণ্য আমদানি ও রফতানির প্রধানতম মাধ্যম। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে রেলওয়েকে কিছুটা বাণিজ্যিকীকরণের প্রচেষ্টা শুরু হলেও রাষ্ট্রীয় কাঠামোয় এটি গণমানুষের পরিবহন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। কম খরচ ও নিরাপদে পণ্য ও যাত্রী পরিবহনে রেলওয়ে অবিচল ভূমিকা রাখছে। ১৯৯৮ সালে বন্যায় সারা দেশের সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা বিনষ্ট হলেও রেলওয়ের মাধ্যমেই যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু ছিল। দেশীয় রাজনৈতিক অস্থিরতার সময়েও রেলপথে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন চালু থাকে।

চট্টগ্রাম বস্তুতই রেলের শহর। এ শহরের ইতিহাসে মিশে আছে রেলওয়ে। মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে স্বাধীনতাকামীরা ঔপনিবেশিক সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র লড়াইয়ের যে পরিকল্পনা করেছিলেন, তার বড় অংশজুড়ে ছিল রেলওয়ে। নগরীর পাহাড়তলীতে রেলওয়ে এলাকায় ছিল ইউরোপীয় ক্লাব। সেখানেই সফল অপারেশন শেষে আত্মাহুতি দিয়েছিলেন প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। রেলের মাধ্যমে সমৃদ্ধির পরিক্রমাকে ধরে রাখতে ২০০৩ সালের ১৫ নভেম্বর চট্টগ্রামের পাহাড়তলী ওয়ার্ডে রেলওয়ে ক্যারেজ অ্যান্ড ওয়াগন কারখানার বিপরীতে প্রায় ১২ একর জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ রেলওয়ে জাদুঘর। উঁচু টিলার ওপর অবস্থিত কাঠের বাংলোটি তার মধ্যে ধারণ করে আছে রেলের ১৫০ বছরের ইতিহাস। বাংলোটির আয়তন প্রায় ৪ হাজার ২০০ বর্গফুট এবং কাঠের তৈরি দোতলা। সামনে প্রবেশের জন্য নিচ থেকে উঠে এসেছে একটি পাকা সিঁড়ি, যার ওপর একপাশে খুব দুর্বল হাতের কাজের একটি বাঘের ভাস্কর্য। এ টিলার পাশে শাহজাহান মাঠের এক কোনায় অবস্থিত ইউরোপীয় ক্লাব। শুক্রবারসহ সপ্তাহের প্রতিদিন বেলা ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত জাদুঘরটি খোলা থাকে। জাদুঘরের সামনের কক্ষে রয়েছে একটি মডেল রেললাইন, যার মাধ্যমে একটি স্টেশন থেকে অন্য একটি স্টেশনে কীভাবে একটি ট্রেন যায়, তা বিস্তারিত দেখানো হয়েছে।

জাদুঘরটিতে প্রধানত টেলিযোগাযোগ ও সংকেত বিভাগ, ট্রাফিক বিভাগ (ব্যবসা ও যোগাযোগ), পথ ও পূর্ত বিভাগ এবং যন্ত্রকৌশল বিভাগ— চারটি বিভাগই প্রাধান্য পেয়েছে। এখানে চিত্রের মাধ্যমে দেখানো হয়েছে অবিভক্ত বাংলায় প্রথম রেললাইন স্থাপনের দৃশ্য। এখানে সংরক্ষিত আছে ১৯৪২ সালের ইস্টার্ন বেঙ্গল স্টেট রেলওয়ে ও বেঙ্গল আসাম রেলওয়ের মনোগ্রাম। আছে ১৯৭২ সালের স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম রেলওয়ে মনোগ্রাম। বিভিন্ন যন্ত্রপাতি এবং সরঞ্জামাদির মধ্যে রয়েছে সিগনাল ফ্ল্যাগ, প্লাটফর্ম ল্যাম্প, ট্রেইল ল্যাম্প, এডলার ল্যাম্প, রেললাইনের বিভিন্ন বিম এবং স্লিপার (ব্রডগেজ ও মিটারগেজ), সংকেত বিভাগের অতীতে ব্যবহূত বিভিন্ন সরঞ্জাম। রয়েছে ১৯৬০-৭০ পর্যন্ত ব্যবহার্য বিভিন্ন অ্যানালগ ফোন এবং টেলিযোগাযোগ বিভাগের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি। আরো রয়েছে ১৯৪৮ সালে ব্যবহার করা গার্ড কন্ট্রোল সুইচ, ফেলি লাইট, ইলেকট্রো হাইড্রলিক, ১৯৮০-এর পূর্বে ব্যবহার্য ঝাড়বাতি, রোলিং স্টকে ব্যবহূত বিভিন্ন কালার কোড। একটি জাতির ঐতিহ্য, কৃষ্টি, সংস্কৃতি, স্বকীয়তা এবং মূলকে ধারণ করে সে দেশের জাদুঘরগুলো। চট্টগ্রামে অবস্থিত রেলওয়ে মিউজিয়াম সে রকমই একটি আত্মপরিচয়ের স্থান। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সূতিকাগার চট্টগ্রামে ব্রিটিশ নির্মিত রেলের আত্মপরিচয় এখান থেকেই জানা যায়। চট্টগ্রাম তথা বাংলার সমৃদ্ধির সেসব স্মৃতিস্মারক নিয়ে জাদুঘরটি পাহাড়বেষ্টিত পাহাড়তলীর নির্জন পাহাড়ে ইতিহাস সন্ধানে ডাক দেয়।

রেল কর্মযজ্ঞে সৌন্দর্যমণ্ডিত চট্টগ্রাম

সিআরবি এলাকার অপার সৌন্দর্য ছাড়াও পাহাড়তলী এলাকার বিভিন্ন ভূমি সবই চট্টগ্রামের রেলকেন্দ্রিক কর্মকাণ্ডের নিদর্শন বহন করে। রেলের কোচ তৈরি ও ইঞ্জিন মেরামত কারখানা ছাড়াও বাংলাদেশে রেলওয়ের সব প্রিন্টিং কার্যক্রম চলে এ এলাকায়। শহরের অধিকাংশ এলাকায় রয়েছে রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কলোনি ও বাংলো। পাহাড়ে পাহাড়ে রেল কর্মকর্তাদের বাংলো এখানকার আদি ইতিহাসকে মনে করিয়ে দেয় নিশ্চয়। এদিকে রেল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পানির সমস্যা সমাধানে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ের তত্ত্বাবধানে ১৯২৪ সালে খনন করা হয় বর্তমানে ফয়’স লেক নামে পরিচিত কৃত্রিম লেক। শুরুতে পাহাড়তলী লেক নামে পরিচিত থাকলেও ইংরেজ রেল প্রকৌশলী ‘ফয়’-এর নামানুসারে এর নামকরণ হয়। পাহাড়ের এক শীর্ষ থেকে আরেক শীর্ষে আড়াআড়িভাবে বাঁধ নির্মাণ করে ৩৩৬ একর জমির ওপর স্থাপিত এ লেক কৃত্রিমতাকে ছাপিয়ে চট্টগ্রামের অকুণ্ঠ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ট্রেড মার্ক হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। ১৯২০ সালে পাহাড়তলী এলাকায় আরো একটি কৃত্রিম লেক স্থাপন করা হয়। এছাড়া শহরের মধ্যেই এখনো রেলের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বিশালাকৃতির বেশ কয়েকটি জলাধার। চট্টগ্রামের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা আগ্রাবাদের বিশালাকৃতির জলাধার ছাড়াও সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনা রেলের জমিতে নির্মিত। রেলের মালিকানাধীন সড়কে বাণিজ্যিক যানবাহন চলাচলে রেলওয়ে কিছুটা রক্ষণশীল হলেও এসব সড়ক চট্টগ্রামের যানজট থেকে পরিত্রাণ পেতে টনিকের কাজ করে চট্টগ্রামবাসীর। অন্যদিকে রেল কর্মযজ্ঞে প্রকৃতির কোলে মানবসৃষ্ট নিদর্শনগুলো চট্টগ্রামে পর্যটক আকর্ষণে ভূমিকা রাখে। সিআরবির শতবর্ষী রেইনট্রি কিংবা পাহাড়তলী এলাকার বনাঞ্চল শহরের বুকে এখনো প্রকৃতিকে লালন করে আছে পরম মমতায়। রেল ও চট্টগ্রাম এভাবেই এক সুতোয় একটি প্রাচীন শহরের নতুন অধ্যায় তৈরি করেছে। আগলে রেখেছে শহরের সৌন্দর্য, যা তার ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করে। অন্যদিকে রেলের এ ভূমিকা কয়েকশ বছরের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক পালাবদলের এ শহরকে এগিয়ে যাওয়ার পথে আরো বেশি প্রাণিত করে। চট্টগ্রাম যেমন সম্ভাবনা ও সমৃদ্ধির শহর, তেমনি রেলেরও বটে।

Pages: 1 [2] 3 4 ... 15