Daffodil International University

Health Tips => Protect your Health/ your Doctor => Children => Topic started by: Sahadat Hossain on December 23, 2020, 11:03:18 AM

Title: শৈশবে অবজ্ঞা ও মানসিক নির্যাতন
Post by: Sahadat Hossain on December 23, 2020, 11:03:18 AM
শৈশবে অবজ্ঞা ও মানসিক নির্যাতনের কারণ

শিশুর বিকাশকালে মানসিক অবজ্ঞা ও মানসিক নির্যাতন খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। এটা অন্যান্য শারীরিক নির্যাতন ও যৌন নির্যাতনের মতোই। সাধারণত ছোটবেলায় যারা অবহেলা ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়, পরবর্তী সময় তাদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক, মানসিক, সামাজিক ও জ্ঞানের বিকাশজনিত সমস্যা হয়ে থাকে। শিশুর জন্মের পর প্রথম পাঁচ বছর খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা সময়। কারণ, ছয়-সাত মাস বয়স থেকে পাঁচ বছর বয়সের মধ্যে আবেগীয় সম্পৃক্ততার (ইমোশনাল অ্যাটাচমেন্ট) বিকাশ হয়ে থাকে। এ জন্য এই সময়টা খুব সচেতনতার সঙ্গে শিশুকে লালন-পালন করতে হয়; যাতে সে কোনোভাবেই অবজ্ঞা ও মানসিক নির্যাতনের শিকার না হয়ে থাকে।

মানসিক অবজ্ঞা
শিশুর মৌলিক চাহিদাগুলোকে অনিচ্ছাকৃতভাবে পূরণ না করার নামই অবজ্ঞা, অর্থাৎ মৌলিক চাহিদাগুলোর প্রতি উদাসীন থাকা বা পাত্তা না দেওয়া। যেমন: প্রয়োজনীয় খাদ্য, বস্ত্র, নিরাপদ আশ্রয় ও আবেগীয় নিরাপত্তা না দেওয়া। এ ছাড়া শিশুর বুদ্ধিমত্তা বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্দীপক, পারস্পরিক সামাজিক সম্পর্ক, কথোপকথন ইত্যাদি থেকে বঞ্চিত করা, বয়স অনুযায়ী স্বাভাবিক আচরণ করতে বাধা দেওয়া এবং স্বনির্ভরশীল হতে সুযোগ না দেওয়াও মানসিক অবজ্ঞার মধ্যে পড়ে।

মানসিক অবজ্ঞার কারণ
সাধারণত বাবা-মায়েরা অনেক সময় অনিচ্ছাকৃতভাবে শিশুদের সঙ্গে অবজ্ঞামূলক আচরণ করে থাকেন। শিশুদের প্রয়োজন সম্পর্কে তাঁদের সচেতনতার অভাব, শিশুর বিকাশের জন্য আবেগীয় অনুভূতির গুরুত্ব সম্পর্কে অজ্ঞতা, শিশুর নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা সম্পর্কে অদক্ষতা ইত্যাদি কারণে তাঁরা সন্তানের প্রতি অবহেলা করে থাকেন। তাঁরা শিশুর বিকাশের ধাপ সম্পর্কে জানেন না বলেই হয়তো শিশুর অপরিপক্ব আচরণগুলোকে বুঝতে বা মানতে পারেন না।

মা–বাবার এ ধরনের অবজ্ঞাসূচক আচরণের পেছনে কতগুলো বিষয় কাজ করে। যেমন: তাঁদের নিজেদের শৈশবকালে পজিটিভ প্যারেন্টিংয়ের অভাব, তাঁরা নিজেরাও হয়তো মানসিক অবহেলার শিকার হয়েছেন। এ ছাড়া তাঁদের ব্যক্তিগত সমস্যা থেকেও শিশুদের প্রতি অবজ্ঞামূলক আচরণ করতে পারেন। যেমন: বিষণ্নতা, একাকিত্ব, অতি আবেগপ্রবণতা, জটিল ও দীর্ঘস্থায়ী শারীরিক বা মানসিক অসুস্থতা, অ্যালকোহল ও মাদক ব্যবহার, দারিদ্র্য, চাপ মোকাবিলা করতে না পারা, দাম্পত্য কলহ, এলোমেলো জীবনযাপন, অতিমাত্রার মানসিক চাপ ইত্যাদি।

মানসিক নির্যাতন
মানসিক নির্যাতন হলো কোনো শিশুকে নেতিবাচক আবেগপ্রবণ আচরণের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা, যা ওই শিশুর মনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। যেমন: প্রতিনিয়ত সমালোচনা করা, লজ্জা দেওয়া, প্রত্যাহার করা, সন্দেহ করা, হুমকি দেওয়া, ভালো আচরণের জন্যও বারবার শাস্তি দেওয়া (যেমন-হাসাহাসি করা, খেলাধুলা করা, নিজে নিজে সমস্যার সমাধান করা ইত্যাদি)। এ ছাড়া শিশু লালন-পালনের ক্ষেত্রে সচরাচর কিছু নেতিবাচক বিষয় দেখা যায়, যেগুলোকে মানসিক নির্যাতন হিসেবে গণনা করা হয়।

যেমন: ক্রমাগত দোষারোপ করা, অন্যদের সঙ্গে তুলনা দিয়ে অপমান করা, শিশুর প্রতি বয়সানুযায়ী অনুপযুক্ত আচরণ প্রত্যাশা করা, আবেগীয় অনুভূতি প্রকাশ না করা ও আবেগীয় সম্পৃক্ততার জন্য অনুৎসাহিত করা, সমবয়সীদের সঙ্গে মিশতে বাধা দেওয়া, প্রয়োজনীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা, মা–বাবার নিজেদের আবেগীয় প্রত্যাশা পূরণ করার জন্য শিশুদের জোর করা ইত্যাদি। শিশুদের মাদক ব্যবহার, চুরি এবং অনৈতিক কাজের সঙ্গে জড়িত করা, পারিবারিক জীবন থেকে দূরে সরিয়ে রাখা এবং ভুল সামাজিকীকরণ করাও মানসিক নির্যাতন।

মানসিক নির্যাতনের কারণ
বাবা-মায়েরা অনেক ক্ষেত্রে বাচ্চাকে ভুলভাবে দোষারোপ করে তাদের সঙ্গে নেতিবাচক আচরণ করেন; যেমন বাচ্চা খাবার খেতে না চাইলে অথবা কান্নাকাটি করলে তাঁরা মনে করেন যে বাচ্চা ইচ্ছাকৃতভাবে তাঁদের কষ্ট দেওয়ার জন্য এমনটা করছে। যার জন্য তাঁরাও বাচ্চার সঙ্গে চিৎকার করে বা অন্যান্য শাস্তিসুলভ আচরণ করেন। বাচ্চার বিকাশ সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞানের অভাবে হয়তো তাঁরা এমন করে থাকেন।

কোনো কোনো ক্ষেত্রে মা–বাবা মনে করেন, সমালোচনা ও শাস্তি বাচ্চার চরিত্র গঠনে সহায়তা করে অথবা ছোট বাচ্চাদের উচিত অতিমাত্রার আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে শেখা। অনেক মা–বাবা তাঁদের আবেগীয় চাহিদা মেটানোর জন্য বাচ্চাদের ব্যবহার করে থাকেন এবং তাদের কাছে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী এবং পরিপক্ব আচরণ প্রত্যাশা করেন। মা–বাবা অনেক সময় তাঁদের বিষণ্নতা বা অন্যান্য মানসিক সমস্যার কারণে বাচ্চাদের প্রতি ইতিবাচক আবেগ প্রকাশ করতে পারেন না। পক্ষান্তরে, অতিমাত্রার নেতিবাচক আবেগের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে থাকে, যেমন অতিমাত্রায় রাগ ও বিরক্তি প্রকাশ করা।

লেখক: ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট, নাসিরুল্লাহ সাইকোথেরাপি ইউনিট, ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
Ref: https://www.prothomalo.com/life/health/%E0%A6%B6%E0%A7%88%E0%A6%B6%E0%A6%AC%E0%A7%87-%E0%A6%85%E0%A6%AC%E0%A6%9C%E0%A7%8D%E0%A6%9E%E0%A6%BE-%E0%A6%93-%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%B8%E0%A6%BF%E0%A6%95-%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%A4%E0%A6%A8