15
« on: April 05, 2017, 05:46:29 PM »
মাইকে যখন জাতীয় সংগীত বাজছিল বাংলাদেশের, ক্যামেরা বারবার ধরছিল মাশরাফি বিন মুর্তজার মুখ। এমনিতে এতে কোনো অস্বাভাবিকত্ব নেই। ক্যামেরার তো অধিনায়কের দিকে একটু বাড়তি মনোযোগ থাকবেই। কিন্তু কেন বারবার? কারণ, একটু আগে টসের সময় বাংলাদেশের সীমিত ওভারের ক্রিকেটের অধিনায়ক আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিকে বিদায় জানানোর সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছেন। শ্রীলঙ্কায় চলমান দুই ম্যাচের সিরিজটাই টি-টোয়েন্টিতে তাঁর শেষ। আগামীকাল কলম্বোতেই মাশরাফি খেলবেন ক্যারিয়ারের শেষ আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিটি।
মাশরাফি বিষয়টি এতই গোপন রেখেছিলেন, ফেসবুকে নিজের ওয়ালে এই ঘোষণা দেওয়ার পরই সবাই জানতে পারলেন। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) ক্রিকেট পরিচালনা কমিটির প্রধান আকরাম খান পর্যন্ত একটু বিস্মিত, ‘আমি তো ক্রিকইনফোর ধারাভাষ্য থেকে এটি জানলাম।’ আকরাম হোটেল থেকে গাড়িতে মাঠে আসার পথে ইএসপিএনক্রিকইনফো থেকে এটি জানতে পারেন। এটি মাশরাফির শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ না শেষ সিরিজ, সে ব্যাপারেও নিশ্চিত ছিলেন না আকরাম। পরে অবশ্য স্পষ্ট হয়েছে সবকিছুই।
টস জিতে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে ঘোষণা দিলেন বিদায়ের। প্রতিপক্ষ অধিনায়ক উপুল থারাঙ্গাকে ধারাভাষ্যকার ডিন জোন্সের কাছে সঁপে দিয়েই ছুটলেন ড্রেসিংরুমের দিকে। কিন্তু সীমানাদড়ির কাছে তাঁকে থামতেই হলো। তাঁর অপেক্ষায় ছিলেন কোচিং স্টাফের সদস্যরা। বুকে বুক মিলিয়ে বিদায়ী অভ্যর্থনা জানালেন কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে, ব্যাটিং পরামর্শক থিলান সামারাবীরা, ম্যানেজার খালেদ মাহমুদসহ অন্যরা।
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে আর দেখা যাবে না মাশরাফিকে। ঘরোয়া টি-টোয়েন্টিতে খেলতেও পারেন আরও কিছুদিন। তবে এর মধ্য দিয়ে টি-টোয়েন্টিতে ‘মাশরাফি’ নামের এক গল্পের নটে গাছটা মুড়োল। খেলেছেন বাংলাদেশের প্রথম টি-টোয়েন্টিতেই। সেটি ছিল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে খুলনায়, ২৮ নভেম্বর ২০০৬। ক্রিকেটের পৃথিবীতে টি-টোয়েন্টিই তখন সদ্য ভূমিষ্ঠ এক শিশু। ওটা ছিল সব মিলিয়ে নবম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি।
তা প্রথম ম্যাচে খারাপ করেননি মাশরাফি। ব্যাটিংয়ে ২৬ বলে ৩৬ রান করার পর বোলিংয়ে ৪ ওভারে ২৯ রান খরচ করে নিয়েছিলেন ১ উইকেট। শাহরিয়ার নাফীসের অধিনায়কত্বে ম্যাচটি ৪৩ রানে জিতেছিল বাংলাদেশ। ম্যাচসেরা? মাশরাফি বিন মুর্তজা।
টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে ম্যাচসেরার স্বীকৃতি পেয়েছেন আর একবারই। ২০১২ সালে বেলফাস্টে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে। ওই ম্যাচে ১৯ রানে ৪ উইকেট তাঁর ক্যারিয়ার-সেরা বোলিং। ৪ উইকেট শিকার ওই একবারই। ব্যাটিংয়েও করেছিলেন ১৩ বলে ৩০ রান।
কেন টি-টোয়েন্টিকে আচমকা বিদায় বলে দিলেন মাশরাফি? এতে কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের একটা ভূমিকা দেখছেন অনেকেই। পেছনের ঘটনা যা-ই হোক, এটিকে ধরে নিতে হচ্ছে শেষের শুরু। ২০০৯ ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে বোলিং করার সময় পড়ে গিয়ে সেই যে চোট পান, এরপর থেকেই টেস্ট তাঁর কাছে অতীত অধ্যায়। খেলছিলেন টি-টোয়েন্টি ও এক দিনের আন্তর্জাতিক। টি-টোয়েন্টি গেল, রইল শুধু ওয়ানডে। সেটিকেও হয়তো বিদায় বলে দেবেন আচমকাই।
বিদায়ের সঙ্গে কখনো কখনো আগমনী সংগীত শোনা যায়। একজনের শেষ হয়, শুরু হয় আরেকজনের। টি-টোয়েন্টিকে মাশরাফির বিদায় বলার দিনে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক হয়েছে সাইফউদ্দিনের। গত বছর অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে খেলা পেস বোলিং অলরাউন্ডারের মধ্যে একজন ‘থিসারা পেরেরাকে’ খুঁজতে চাইছে বাংলাদেশ। যে ক্রিকেটার পেস বোলিংয়ে উইকেট তুলতে পারবেন, আবার প্রয়োজনে শেষ দিকে ব্যাটিংয়ে নেমে তুলতে পারবেন ঝড়। দেখা যাক, সাইফ সেই আশা পূরণ করতে পারেন কি না।
তবে এটা নিশ্চিত, মাঠে নামার আগে ফেনীর ২০ বছর বয়সী তরুণের সঙ্গী হয়েছে অনুপ্রেরণাদায়ী অধিনায়ক মাশরাফির আশীর্বাদ।