Daffodil International University

Bangladesh => Business => Economy => Topic started by: Sahadat Hossain on May 09, 2018, 01:23:29 PM

Title: চীনের অর্থনীতিতে বাড়ছে নারীর ভূমিকা
Post by: Sahadat Hossain on May 09, 2018, 01:23:29 PM
এক চীনা প্রবাদ রয়েছে—নারীরা ধরে রাখেন অর্ধেক আকাশ। তবে নারীরা এটা তখনই পারেন, যখন তাঁদের হয়রানি না করা হয়—এমনটাই বলতেন সমাজতান্ত্রিক চীনের প্রতিষ্ঠাতা মাও সে-তুং। অর্থাৎ নারীরা যদি কাজ করেন, তবে একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিপ্লব আনা সম্ভব। তবে মাও সে-তুং বিষয়টিকে বরং কিছুটা ভুল ব্যাখ্যা করেছেন বলে মনে করেন চীনা পণ্ডিতেরা। তেমনই একজন ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া অ্যাট রিভারসাইডের চীনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ পেরি লিংক। তিনি মনে করেন, নারীরা অর্ধেক আকাশ ধরে রাখার ক্ষমতা রাখেন।

সম্প্রতি আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ম্যাককিনসে গ্লোবাল ইনস্টিটিউট প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চীনে জিডিপির ৪১ শতাংশে অবদান রাখেন নারী। দ্য ইকোনমিস্টের এক প্রতিবেদনে ম্যাককিনসের প্রতিবেদনের বিষয়ে তুলে ধরা হয়েছে।

বর্তমানে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতির দেশ বলা হয় চীনকে। দেশটি ২০৩২ সাল নাগাদ যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে শীর্ষ অর্থনীতিতে পরিণত হতে পারে—এমন পূর্বাভাসও দিচ্ছে বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান। চীনের এই অগ্রগতিতে নারীর অবদান যে কতটুকু, তা ওপরের পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে। চীনের জিডিপিতে নারীর অবদান এখন যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে বেশি। মার্কিন সাময়িকী ফোর্বসের তথ্যে দেখা গেছে, বিশ্বের ১৪৭ জন নারী শত কোটিপতির (বিলিয়নিয়ার) ১১৪ জনই চীনা নারী। যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের এ সংখ্যা মাত্র ১৪। অর্থাৎ বলা যেতে পারে, বিশ্বের অন্য দেশগুলোর চেয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন চীনের নারীরা।

ম্যাককিনসে মনে করে, কেবল চীন নয়, অগ্রগতি এসেছে এশিয়ার অন্যান্য দেশেও। নারীরা এখন অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছেন, ভবিষ্যতে আরও বেশি পারবেন। অনেক দেশে এ বিষয়ে বেশ আশাব্যঞ্জক অগ্রগতি হয়েছে বলে মনে করেন প্রতিবেদনটি অন্যতম লেখক আনু মাদগাঁওকার।

প্রতিবেদনে বেশ কয়েকটি দেশের উদাহরণ তুলে ধরেছে ম্যাককিনসে। যেমন গত ১০ বছরে কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ বেড়েছে জাপানে। ফিলিপাইনে পেশাগত বা কারিগরি কাজের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের অনুপাত এখন ১৪২ : ১০০, অর্থাৎ নারীর সংখ্যা বেশি। এ ছাড়া দিন দিনই ভারতে শ্রম খাতে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে।

এ বিষয়ে ম্যাককিনসে একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। তালিকায় দেখা যায়, জিডিপিতে নারীর অবদান থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়ায় ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ। দক্ষিণ কোরিয়া, ফিলিপাইনস, জাপান, ইন্দোনেশিয়ায় এই হার ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ। তবে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে এই হার বেশ কম। জিডিপিতে নারীর অবদান বাংলাদেশে ১৯ শতাংশ, ভারতে ১৮ শতাংশ ও পাকিস্তানে ১০ শতাংশ।

গত এপ্রিলে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৫ সালের হিসাব অনুযায়ী সারা বিশ্বে জিডিপিতে নারীর অবদান ৩৭ শতাংশ। যার মধ্যে চীনে ৪১ শতাংশ, পূর্ব ইউরোপ ও সেন্ট্রাল এশিয়ায় ৪১ শতাংশ। অন্যদিকে, দক্ষিণ এশিয়ায় এই হার ২৪ শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশে গত দেড় বছরে (২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৫ সালের জুলাই পর্যন্ত) পুরুষদের তুলনায় নারীদের কর্মসংস্থান বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। এ সময়ে দেশে ১৪ লাখ লোকের কর্মসংস্থান বেড়েছে এবং তার মধ্যে নয় লাখই নারী।

এই অংশগ্রহণ আরও বাড়ানো সম্ভব। আর এতে অর্থনৈতিক অগ্রগতিও হবে লক্ষণীয়। ম্যাককিনসে গবেষণায় বলছে, চীন যদি নারীদের কর্মসংস্থান, ঘণ্টা ও উৎপাদনশীলতা বাড়ায়, তাহলে ২০২৫ সাল নাগাদ আরও ১৩ শতাংশ জিডিপি বাড়াতে পারবে। অর্থাৎ অর্থনীতিতে যোগ হবে বাড়তি ২ দশমিক ৬ ট্রিলিয়ন ডলার; যা প্রায় ফ্রান্সের অর্থনীতির সমান। ভারতে অর্থনৈতিক উন্নয়নে জন্য কর্মক্ষেত্রে অন্তত ৩৭ শতাংশ নারীর অংশগ্রহণ প্রয়োজন, বর্তমানে যা ২৭ শতাংশ।

তবে এ ধারণা ঠিক নয় যে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও নারীদের কর্মসংস্থান একতালে চলে। ভারতের মতো দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশে দেখা যায়, বাড়ির পুরুষ ব্যক্তিটি ভালো উপার্জন করলে নারী কর্মক্ষেত্র থেকে সরে আসে। অর্থাৎ পারিবারিক উপার্জন বাড়লে নারীর কাজের প্রয়োজনীয়তা কমে যায়। অবশ্য নেপাল ও মিয়ানমারের ক্ষেত্রে এমনটা দেখা যায় না। এখানে পুরুষের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ করতে হয় নারীদের। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এ দেশগুলোতে কৃষিকাজে নারীর অংশগ্রহণ আবশ্যক হয়ে পড়ে।

কিন্তু নানা ধরনের কাজে সম্পৃক্ত হলেও নারীদের এই কাজগুলোর সামাজিক স্বীকৃতি মিলছে কতটা?
ম্যাককিনসে বলছে, জিডিপিতে নারীর অনেক কাজই আসলে লিপিবদ্ধ হচ্ছে না। ম্যাককিনসে এখানে অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থার (ওইসিডি) পরিসংখ্যান তুলে ধরেছে। চীনে নারীরা যেসব কাজ করে, তার ৭৩ ভাগই বিনা পারিশ্রমিকের কাজ। দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ও চীনে এই হার যথাক্রমে ৮৩, ৮৪ ও ৮৫ শতাংশ। গৃহস্থালির নানা ধরনের কাজে হাড়ভাঙা পরিশ্রম, সন্তানের জন্ম দেওয়া ও তাদের নিবিড় প্রতিপালন ইত্যাদি ক্ষেত্রে নারীরা দিনের পর দিন ধরে সকাল-সন্ধ্যা যে কাজ করেন, তা মূলত বেতনহীন পারিবারিক শ্রম দান। জিডিপির পরিমাপ নির্ধারণের হিসাব-তালিকার এসব কাজ বাইরে রাখা হয়।

নারীরা যদি সবাই পারিশ্রমিক পাওয়া যায় এমন কাজ করেন, তাহলে বিনা পারিশ্রমিকের কাজগুলোর কী হবে? এমন একটি প্রশ্ন উঠতেই পারে বলছে ম্যাককিনসে। এ ক্ষেত্রে সমাধান হিসেবে বলা যায়, ঘরের কাজ পুরুষেরাও করবেন বা অর্থ দিয়ে কর্মী রাখবেন। আর্থিক মূল্য বিবেচনা হওয়ায় সেই কর্মীদের অবদানও জিডিপিতে যোগ হবে।

Ref: Daily Prothom Alo