Show Posts

This section allows you to view all posts made by this member. Note that you can only see posts made in areas you currently have access to.


Topics - ashraful.diss

Pages: 1 2 [3] 4 5 ... 11
31

সব কাজের প্রতিদান নিয়তের ওপর নির্ভরশীল


ইখলাস ও নিয়তের গুরুত্ব ইসলামে অপরিহার্য। নিয়ত ছাড়া কোনো আমলই মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।

বিশুদ্ধ নিয়ত ইখলাস সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের হাদীসে সতর্ক করা হয়েছে। হাদীসের পাতা থেকে ইখলাসের কতোগুলো হাদীস তুলে ধরা হলো।

সবকাজে ইখলাস ও নিয়তের পরিশুদ্ধতা

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,

عمر بن الخطاب رضي الله عنه على المنبر قال سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول : ( إنما الأعمال بالنيات وإنما لكل امرىء ما نوى فمن كانت هجرته إلى دنيا يصيبها أو إلى امرأة ينكحها فهجرته إلى ما هاجر إليه) رواه البخاري والمسلم
 
অর্থ : ‘নিশ্চয় সমস্ত আমলের ফলাফল নিয়তের ওপর নির্ভরশীল। সুতরাং প্রত্যেক মানুষ (পরকালে) তাই পাবে যা সে নিয়ত করবে। যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং তার রাসূলের উদ্দেশ্যে হিজরত করে, তার হিরজত আল্লাহ এবং তার রাসূলের উদ্দেশেই হবে। আর যে ব্যক্তি দুনিয়া হাসিলের কিংবা কোনো নারীকে বিয়ে করার উদ্দেশ্যে হিজরত করে, তার হিজরত সেই উদ্দেশ্যেই গণ্য হবে যে উদ্দেশ্যে সে হিজরত করেছে।’ (বুখারি হাদিস নং ৫২)

এই হাদিসের সঙ্গে একটি ঘটনাও উল্লেখ করা হয় যে, যখন মুসলমানরা মক্কার কাফের সম্প্রদায়ের দেওয়া জুলুম নির্যাতন আর কষ্ট সহ্য করতে পারছিলো না, তখন মহান আল্লাহ তায়ালার হুকুমে হিজরত করে। সবার উদ্দেশ্য ছিল মদীনায় সহজভাবে মহান আল্লাহ ও তার রাসূল (সা.) আনুগত্য করা যাবে তাই হিজরত করে মদীনায় গমন করেন। কিন্তু তাদের মাঝে একজন লোক এই কারণে হিজরত করে যে, হিজরতকারীদের মাঝে একজন মহিলা ছিল ওই মহিলাকে বিয়ে করার জন্য সকলের সঙ্গে হিজরত করে। এই কথা রাসূল (সা.) জানার পর তিনি বলেন- যে আল্লাহ ও তার রাসূলের উদ্দেশ্যে হিজরত করেছে তার হিজরত সেই হিসাবেই গন্য হবে, অর্থাৎ তার উত্তম বিনিময় পাবে। আর যে দুনিয়া লাভ বা কোনো নারীকে বিয়ে করা হিজরত করেছে, তার হিজরতও সেই ভাবেই গ্রহণ করা হবে; পরকালে তার কোনো উত্তম বিনিময় থাকবেনা।

ইখলাস ব্যতীত কোনো কিছুই কবুল হয় না

হজরত আবু উমামা রাযিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- 

عن أبي أمامة رضي الله عنه قال، قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : إن الله لا يقبل من العمل إلا ما كان له خالصا وابتغي به وجهه، رواه النسائي

অর্থ : ‘আল্লাহ তায়ালা সমস্ত আমলের মধ্যে শুধু সেই আমলটুকুই কবুল করেন, যা ইখলাসের সঙ্গে শুধুমাত্র তাঁর সন্তুষ্টির জন্য-ই করা হয়।’ (নাসাই শরীফ হাদীস নং ৩১৪২।)

এখানে আরবি ব্যাকরণিক যে পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে তা ওই সমস্ত স্থানে ব্যবহার করা হয়, সেখানে সীমাবদ্ধতার প্রয়োজন। একমাত্র তার আমলই কবুল হবে যে ‘ইখলাস’ এর সঙ্গে করেছে। আমল কবুল হওয়ার বিষয়টি ইখলাসের সঙ্গে সীমাবদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

মানুষ প্রচুর আমল করতে পারে, কিন্তু কবুলের প্রশ্ন আসবে ওই সমস্ত আমলে যেখানে ইখলাস আছে। যে আমলে ইখলাস নেই তাতে কবুলেই প্রশ্নই আসবে না। কারণ কবুল শুধুমাত্র ওই আমলের সঙ্গে খাস করে দেওয়া হয়েছে যেখানে ইখলাসের ভারি উপস্থিতি আছে।

বুখারির এক হাদিসে আছে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কাল কিয়ামতের ময়দানে একজন শহীদ দাতা ও আলেমকে তাদের আমল সম্পর্কে জিজ্ঞাস করবেন। তখন এদের সবাই নিজ নিজ আমল দান-সদকা আল্লাহর রাস্তায় কোরবানসহ যতপ্রকার আমল আছে সব উল্লেখ করবে, আর বলবে হে পরওয়াদেগার এই আমলগুলো করেছি। তখন মহান আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত বলবেন তোমরা মিথ্যা বলছো। তোমরা ওই সব আমল করেছিল দুনিয়ায় খ্যতি অর্জন করার জন্য, সুনাম আর প্রসিদ্ধির জন্য, লোক মুখে তোমাদের নাম প্রচার হওয়ার জন্য। তোমরা তা দুনিয়ায় পেয়েছো। এরপর আল্লাহ তাদেরকে জাহান্নামে নিক্ষিপ করার জন্য ফেরেস্তাদের ডাকবেন। ফেরেস্তারা তাদেরকে পায়ে শিকল পয়ে টেনে হেঁচড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে।

মহান আল্লাহ শুধু মানুষের অন্তর দেখেন অন্য কিছু নয়

একজন মানুষ জানে না অপর মানুষের আমলগুলোর কি উদ্দেশ্য। কারণ আমলগুলোর উদ্দেশ্য অন্তরে লুক্কায়িত থাকে। মহান আল্লাহ সেই অন্তরই দেখেন। সেই কথা রাসূল (সা.) তার এক হাদিসে বলছেন। হজরত আবু হুরায়রা রাযিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

عن أبي هريرة رضي الله عنه قال، قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : إن الله لا ينظر إلي صوركم وأموالكم ولكن ينظر إلى قلوبكم وأعمالكم رواه المسلم

 অর্থ : ‘আল্লাহ তোমাদের বাহ্যিক আকার আকৃতি এবং ধন-সম্পত্তির দিকে দৃষ্টিপাত করেন না, বরং তিনি দৃষ্টিপাত করেন শুধু তোমাদের অন্তর আমলের দিকে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৬৫৪৩)

এই হাদিস দ্বারা বুঝা গেল কোন হুজুর কোন আমল করলো, কোন ইমামসাব কোন আমল করলো, কোন রিক্সা চালক কোন আমল করলো কিভাবে করলো, তা ধর্তব্য নয়, ধর্তব্য হলো কার অন্তরের অবস্থা কি? কার আমলের নিয়ত রয়েছে মহান আল্লাহর জন্য, কার আমলের নিয়ত রয়েছে অন্য কারো জন্য।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকেই আরো একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

عن أبي هريرة رضي الله عنه قال، قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : إنما يبعث الناس على نياتهم، رواه ابن ماجة

অর্থ : ‘নিশ্চয়ই (কিয়ামত দিবসে) মানুষেদেরকে উঠানো হবে তাদের ইখলাসের ওপর।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস  নং ৪২২৯)

অন্যকে দেখানো উদ্দেশ্যে আমল করা শিরক

হজরত ওমর ইবনে খাত্তাব রাযিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- 

عن عمر بن الخطاب رضي الله عنه قال، قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : إن يسير الرياء شرك، رواه ابن ماجة

অর্থ : ‘রিয়া (লোক দেখানো উদ্দেশ্যে আমল করা)- এর সামান্য পরিমাণও ‘শিরক’। (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৪৫৫)

আমলের মাঝে যদি মহান আল্লাহ ব্যতীত কারো নিয়ত থাকে তাহলে তা হবে শিরক ও কুফরির নামান্তর। শিরক কাকে বলে? শিরক বলে আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক মনে করা, বা আল্লাহর গুণে কাউকে গুনান্বিত করা। যে অন্যকে দেখানোর জন্য আমল করলো সে শিরক করলো অর্থ সে আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করলো। কত বড় হুমকির কথা। আর শিরকের ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘শিরক আল্লাহ কখনো মাফ করেন না।’ (সূরা: নিসা)

শুধু আমল নয় লোক দেখানো উদ্দেশ্যে দান করাও শিরক। হজরত শাদ্দাদ ইবনে আউস রাযিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,

عن شداد بن أوس رضي الله عنه قال، قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : من تصدق يرائي فقد أشرك، رواه أحمد

অর্থ : ‘যে ব্যক্তি লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে দান খায়রাত করলো সে শিরক করলো।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং ৪৫৫)।

শুধু দান করাও নয়, লোক দেখানো উদ্দেশ্যে কাপড় পরিধান করাও শিরকের অন্তর্ভুক্ত, যার কারণে মহান আল্লাহ তাতে কিয়ামতের দিন আগুন ধরিয়ে দিবেন। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাযিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,

عن عمر بن الخطاب رضي الله عنه قال، قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : من لبس ثوب شهرة في الدنيا، ألبسه الله ثوب مذلة يوم القيامة ثم ألهب فيه نارا، رواه ابن ماجة 

অর্থ: ‘যে ব্যক্তি দুনিয়াতে রিয়া ও শাহওয়াতের পোশাক পরিধান করবে আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন তাকে অপমানের পোশাক পরিধান করাবেন, অতপর তাতে আগুন ধরিয়ে দিবেন।’ (সুনানে ইবনে মাযাহ, হাদিস নং ৩৬০৭)।

ইখলাসের সঙ্গে আমল করার ফজিলত

হজরত আবু হুরায়রা রাযিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,

عن أبي هريرة رضي الله عنه قال، قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : ( مَا قَالَ عَبْدٌ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ قَطُّ مُخْلِصًا إِلاَّ فُتِحَتْ لَهُ أَبْوَابُ السَّمَاءِ 

অর্থ : ‘কোনো ব্যক্তি যদি ইখলাসের সঙ্গে কালিমা لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ পড়ে তবে তার জন্য আকাশের দরোজাসমূহ খুলে দেয়া হয়।’ (তিরমিযি, হাদিস: ৬৮)

হজরত সাওবান রাযিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, 

عن ثوبان رضي الله عنه قال سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم : طوبى للمخلصين اولئك مصابيح الدجى، تتجلى عنهم كل فتنة ظلماء

অর্থ : ‘তোমরা মুখলিসদেরকে (ইখলাসের সঙ্গে আমলকারীদেরকে) সুসংবাদ দাও। কেননা তারা অন্ধকারে প্রদীপস্বরূপ। তাদের দ্বারা সকল ফেৎনার অন্ধকার দূর হযে যায়।’ (বায়হাকী, হাদিস নং ৩৪৩)

মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ যেন আমাদেরকে আমাদের সব কাজ ইখলাসের সঙ্গে করার তৌফিক দান করেন। আল্লাহুম্মা আমিন।


32

শোকার্ত ব্যক্তিকে সান্ত্বনা দেবো

জাফর ইবনু আবী তালিব (রাঃ) মূতার যুদ্ধে গেলেন। যুদ্ধ শেষে সবাই বাড়ি ফিরে আসছিলেন। জাফরের স্বী আসমা ভাবলেন, তাঁর স্বামীও ফিরে আসবেন যুদ্ধ থেকে। তাই তিনি রুটি বানালেন। ছেলে-মেয়েদের গোসল করিয়ে নতুন জামা পরালেন। তাদের মাথায় তেল দিয়ে চুল আঁচড়ে দিলেন। আর অপেক্ষা করতে লাগলেন জাফরের জন্য।

এমন সময় নবি (সাঃ) এলেন জাফরের বাড়িতে। নবিজিকে দেখে জাফরের ছোট ছেলে-মেয়েগুলো দৌড়ে এল। নবিজি তাদের জড়িয়ে ধরে চুমু খেলেন। কিন্তু আসমা দেখলেন, নবিজির চোখ থেকে অশ্রু ঝরছে! এই দৃশ্য দেখে ভয় পেয়ে গেলেন আসমা। তিনি বললেন, ‘আপনি কাঁদছেন কেন? কোনো দুঃসংবাদ আছে?’ নবিজি বললেন, “হ্যা! জাফর শহীদ হয়েছে!” একথা শুনে আসমা কাঁদতে লাগলেন। মায়ের কান্না দেখে ছোট বাচ্চারা চুপ হয়ে গেল। প্রতিবেশী মহিলারা এসে আসমাকে সান্ত্বনা জানাতে লাগল। নবিজি বাড়ি ফিরে তাঁর স্ত্রীদের বললেন, “তোমরা জাফরের পরিবারের জন্য খাবার বানাও। আজ ওদের দুঃখের দিন।”

বন্ধুরা, মুমিনের দুঃখে সান্ত্বনা দেওয়া অনেক সাওয়াবের কাজ। তাই নবিজি সেদিন জাফর ইবনু আবী তালিবের বাড়িতে গিয়েছিলেন সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য। নবি (সাঃ) বলেন, “যে মুমিন অন্য মুমিনের দুঃখে সান্ত্বনা দেয়, আল্লাহ তায়ালা কিয়ামাতের দিন তাঁকে জান্নাতের পোশাক পরাবেন।”

কথা বলব সুন্নাহ মেনে

১। হাই বা হ্যালো নয়;
বলবে,
আস-সালামু আলাইকুম
২। ‘থ্যাংক ইউ’ বা ‘ধন্যবাদ’ নয়;
 বলবে,
জাযাকাল্লাহ খাইরান!
মানে, আল্লাহ তোমাকে উত্তম বিনিময় দিন!
৩। ‘বাই! ভালো থেকো!’ বলবে না।
 বলবে,
ফী আমানিল্লাহ
আল্লাহ হাফেজ
আল্লহর নিরাপত্তায় থাকো!
আল্লাহ তোমাকে হেফাজত করুন!
৪। ‘বাহ, বাহ! ওয়াও!’ বলে কী লাভ?
বরং সুন্দর ও আশ্চর্যজনক কিছু দেখলে বলবে, সুবহানাল্লাহ!
৫। ‘ওকে, ঠিক আছে’ না বলে
বলবে,
ইনশা আল্লাহ!
৬। বেশি বেশি আলহামদুলিল্লাহ বলবে,
তুমি কেমন আছ?
আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি!

রাস্তায় বসারও আদব আছে

একদিন নবি (সাঃ) দেখলেন কয়েকজন সাহাবি রাস্তায় বসে কথাবার্তা বলছেন। তিনি বললেন, “তোমরা রাস্তায় বসা ছেড়ে দাও।” সাহাবিরা বললেন, ‘আল্লাহর রাসূল, এখানে বসা ছাড়া আমাদের আর কোনো ঊপায় নেই। এটাই আমাদের বসার জায়গা। এখানেই আমরা কথাবার্তা বলি।’ নবিজি বললেন, “যদি রাস্তায় বসতেই হয়, তাহলে রাস্তার হক আদায় করবে।” তারা বললেন, ‘রাস্তার হক কী?’ তিনি বললেন,

১। কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে দেওয়া।
২। দৃষ্টি নামিয়ে রাখা।
৩। সালামের জবাব দেওয়া।
৪। ভালো কাজে আদেশ করা।
৫। মন্দ কাজে নিষেধ করা।

আরেকদিন নবি (সাঃ) বলেন, “আমি এক ব্যক্তিকে জান্নাতে ঘুরে বেড়াতে দেখেছি। লোকটি রাস্তা থেকে একটি কাঁটাওয়ালা ডাল সরিয়ে দিয়েছিল। এই কাজে খুশি হয়ে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন এবং জান্নাত দিয়েছেন।”

সফরের আদব

১। সফরে যাওয়ার আগে বলবে, سُبْحَانَ الَّذِيْ سَخَّرَ لَنَا هَذَا وَمَا كُنَّا لَه مُقْرِنِيْنَ
“আল্লাহ এই বাহনকে আমাদের জন্য অনুগত করে দিয়েছেন। তিনি মহাপবিত্র। (তিনি না চাইলে) আমরা একে অনুগত করার ক্ষমতা রাখি না।”
২। সফরে যাওয়ার আগে পরিবার ও বন্ধুদের থেকে বিদায় নেবে। ঋণ পরিশোধ করবে, আমানত ফিরিয়ে দেবে, কারও প্রতি জুলুম করলে মাফ চেয়ে নেবে। কারণ এ সফর থেকে তুমি নাও ফিরতে পারো!
৩। সফর থেকে ফেরার সময় বলবে, اٰيِبُوْنَ تَائِبُونَ عَابِدُونَ لِرَبِّنَا حَامِدُوْنَ
“ফিরে আসছি, তাওবা করছি, ইবাদাত করছি আল্লাহর, প্রশংসাও করছি তার।”
৪। বৃহস্পতিবার সফরে বের হওয়া পছন্দনীয়, ভোরে রওনা দেওয়া উত্তম। দু’আ ও যিকরের সাথে পথ চলবে।
৫। নিরুপায় না হলে জুমু’আর দিনে সফর করা উচিত নয়। কারণ এতে অনেক সময় জুমু’আর সালাত ছুটে যায়।
৬। একসাথে কয়েকজন সফরে গেলে একজনকে আমীর বানিয়ে নেবে। দূরের যাত্রায় একাকী সফর করবে না, কুকুর ও ঘণ্টা নিয়ে সফর করবে না।
৭। অচেনা স্থানে বিশ্রাম নিলে এবং রাতে ঘুমালে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইবে। যে পথে হিংস্র প্রাণী ও বিষাক্ত কীটপতঙ্গ চলে, সেখানে ঘুমাবে না।
৮। সফর শেষে দ্রুত বাড়ি ফিরবে। ফেরার আগে বাড়ির লোককে জানিয়ে আসবে।
৯। মেয়েদের একা সফরে যাওয়া নিষেধ। সাথে মাহরাম-পুরুষ থাকতে হবে।

পথ চলব আদবের সাথে

১। বিনয়ের সাথে পথ চলবে। অহংকার করবে না, জাঁকজমক দেখিয়ে চলবে না। আল্লাহ বলেছেন, “রহমানের বান্দারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে।” তুমিও তা-ই করবে।
২। দৃষ্টি নত করে রাখবে, বেপর্দা নারীদের দিকে তাকাবে না। মেয়েরাও পরপুরুষের দিকে তাকাবে না।
৩। পথে ময়লা-আবর্জনা ফেলবে না। পেশাব-পায়খানা করবে না। মানুষের কষ্ট হয় এমন কাজ করবে না।
৪। পথে কারও সাহায্য লাগলে সাহায্য করবে।যেমনঃ পথিককে পথ চিনিয়ে দেবে, অন্ধকে রাস্তা পার করে দেবে।
৫। মানুষকে সালাম দেবে, সালামের জবাব দেবে। সৎ কাজের আদেশ করবে, মন্দ কাজে বাধা দেবে, রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে দেবে।
৬। নারী-পুরুষ মিলেমিশে পথ চলবে না। মেয়েরা চলবে রাস্তার কিনারা দিয়ে আর পুরুষরা চলবে মাঝখান দিয়ে।
৭। পথ চলবে মধ্যম গতিতে। একেবারে ধীরেও নয় আবার অতি দ্রুতও নয়।
৮। মেয়েরা মাহরাম ছাড়া একাকী পথ চলবে না। পর্দা করে মাহরামের সাথে বের হবে; যেমনঃ তোমার বাবা, আপন ভাই, চাচা, মামা।
৯। মাঝে মাঝে খালি পায়ে হাঁটা সুন্নত।



33

সাক্ষাৎ করব সময়মতো

ইবনু আব্বাস (রাঃ) ছিলেন জ্ঞান পিপাসু। হাদীসের খোঁজে বিভিন্ন মানুষের কাছে যেতেন তিনি। যেন তাদের মুখে নবিজির হাদীস শুনতে পারেন।

একদিন তিনি গেলেন এক ব্যক্তির বাড়িতে। কিন্তু ঘরের সামনে গিয়ে থেমে গেলেন। দরজায় কড়া নাড়লেন না। গায়ের চাদর বিছিয়ে সেখানেই শুয়ে পড়লেন তিনি! একসময় বাতাসের সাথে উড়ে আসা ধূলোবালি পড়তে লাগল ইবনু আব্বাসের মুখে। তবুও ইনবু আব্বাস সেখানেই শুয়ে রইলেন।

অনেকক্ষণ পর লোকটি বের হলো। দরজার সামনে ইবনু আব্বাসকে শুয়ে থাকতে দেখে সে খুব অবাক হলো। এরপর ইবনু আব্বাস তাকে জানালেন যে, তার কাছে তিনি হাদীস শুনতে এসেছেন।

বন্ধুরা, তখন ছিল দুপুরবেলা। বিশ্রামের সময়। তাই ইবনু আব্বাস দরজার কড়া নাড়েননি। অপেক্ষা করেছেন।

ফজরের আগে, দুপুরে এবং ইশার পর মানুষ বিশ্রাম নেয়। এই তিন-সময়ে কারও সাথে সাক্ষাৎ করতে যাবে না। এই  তিন-সময়ে অনুমতি ছাড়া বাবা-মা, ভাই-বোনের ঘরেও প্রবেশ করবে না। তুমি ছোট, তবুও অনুমতি নিতে হবে তোমাকে। এটাই যে আল্লাহর নির্দেশ!

অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাব

একটি ছেলে নবিজির সেবাযত্ন করত। ছেলেটি ছিল ইয়াহূদি। একবার সে অসুস্থ হয়ে গেল। নবি (সাঃ) তাকে দেখতে গেলেন। তিনি ছেলেটির মাথার কাছে বসে বললেন, “তুমি ইসলাম গ্রহণ করো” একথা শুনে ছেলেটি তার বাবার দিকে তাকাল। ছেলেটির বাবা তার কাছেই ছিল। বাবা বলল, ‘তুমি তাঁর কথা মেনে নাও।’ সাথে সাথে ছেলেটি ইসলাম গ্রহণ করল। তখন নবিজি খুশি হয়ে বললেন, “সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি তাকে জাহান্নাম থেকে বাঁচালেন।”

কেউ অসুস্থ হলে নবিজি তাকে দেখতে যেতেন। নবিজি বলেছেন, “যে ব্যক্তি সন্ধ্যাবেলায় রোগী দেখতে যায়, তার সাথে ৭০ হাজার ফেরেশতা বের হয়। তারা ওই ব্যক্তির জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে থাকে সকাল হওয়া পর্যন্ত। আর যে ব্যক্তি সকালে রোগী দেখতে যায়,তার সাথেও ৭০ হাজার ফেরেশতা বের হয়। তারাও ওই ব্যক্তির জন্য ক্ষমা চাইতে থাকে সন্ধ্যা হওয়া পর্যন্ত।”

নবি (সাঃ) আরোও বলেছেন, “যে ব্যক্তি কোনো রোগীকে দেখতে যায়, তার খোঁজ-খবর নেয় অথবা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কোনো মুসলিম ভাইয়ের সাথে সাক্ষাৎ করে, সেই ব্যক্তিকে ডাক দিয়ে বলা হয়, ‘তুমি খুশি হও! তোমার এই সাক্ষাৎ সুখময় হোক! আর তোমার ঠিকানা হোক জান্নাতের প্রাসাদ!’’’

রোগী দেখার আদব

১। রোগীর বিশ্রামের সময় তাকে দেখতে যাবে না। অবসর সময়ে যাবে।
২। রোগীর কাছে লম্বা সময় বসে থাকবে না। একটু দেখা করেই চলে আসবে। তবে রোগী চাইলে বেশি সময় থাকতে পারো।
৩। রোগী কষ্ট পায় এমন কথা বলবে না। রোগীকে কোনো দুঃসংবাদ দেবে না।
৪। রোগীর কষ্ট হলে তার সামনে হাসি-তামাশা করবে না, অযথা কথা বলবে না।
৫। রোগীর জন্য সুস্থতার দু’আ করবে। রোগী ও তার পরিবারকে সান্ত্বনা দেবে।
৬। রোগীকে আশা দেবে, সাহস জোগাবে। তাকে বলবে, ‘চিন্তা করো না, ভালো হয়ে যাবে, ইনশা আল্লাহ! আল্লাহ তোমাকে সুস্থ করে দেবেন।’
৭। রোগীর কাছে অসুখের বিস্তারিত বিবরণ জানতে চাইবে না। ডাক্তার বা চিকিৎসার সমালোচনা করবে না।
৮। নিজে ডাক্তার না হয়ে  রোগীকে এটা-ওটা খেতে বলবে না।
৯। রোগীর ব্যাপারে মন্দ ধারণা করবে না। আল্লাহর নবিরাও রোগে ভুগেছেন। রোগের কারণে মুমিনের গুনাহ মাফ হয়, মর্যাদা বেড়ে যায়।

34
Common Forum/Request/Suggestions / সাক্ষাতের আদব
« on: September 07, 2022, 05:00:42 PM »

সাক্ষাতের আদব

একবার এক সাহাবি প্রশ্ন করলেন, ‘আল্লাহর রাসূল, কারও ভাই বা বন্ধুর সাথে দেখা হলে, সে কি তার সামনে মাথা ঝুঁকাবে?’ নবি (সাঃ) বললেন, “না!” সাহাবি আবার প্রশ্ন করলেন, ‘তাহলে কি তাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খাবে?’ তিনি বললেন, “না।” সাহাবি আবার প্রশ্ন করলেন, ‘তাহলে কি তার হাত ধরে মুসাফাহা করবে?’ তিনি বললেন, “হ্যাঁ!”

দুজন মুসলিম একসাথে মুসাফাহা করলে আল্লাহ তাদের দুজনকেই ক্ষমা করে দেন। যদি এই মুসাফাহা করা হয় একমাত্র আল্লাহর জন্য। তাই মুসলিম ভাইয়ের সাথে দেখা হলে প্রথমে সালাম দেবো। এরপর হাত মেলাব। এটাই মুসাফাহা করা। মানে একজনের হাতের তালুর সাথে আরেকজনের হাতের তালু স্পর্শ করা।

মুসাফাহা মানে কিন্তু ‘হ্যান্ডশেইক’ করা নয় বা হাত ঝাঁকানো নয়! মুসাফাহা করা সুন্নাহ। আর ‘হ্যান্ডশেইক’ করা অমুসলিমদের রীতি। তাই মুসাফাহার সময় হাত ঝাঁকাবে না। হাতে হাত ধরে কুশলাদি জিজ্ঞেস করবে। আগে হাত ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবে না। যখন অন্যজন হাত ছেড়ে দেবে, তখন তুমিও ছেড়ে দেবে। নবিজিও তা-ই করতেন।

ওহ! আরেকটা কথা! মুসলিম ভাইয়ের সাথে দেখা করবে হাসিমুখে। নবিজি বলেছেন, “তোমার ভাইয়ের প্রতি মুচকি হাসাও সদাকা।”

দরজায় কড়া নাড়ার আদব

একদিন ইমাম আহমাদ বসে ছিলেন তাঁর ঘরে। হঠাৎ অনেক জোরে শব্দ হলো দরজায়। ইমাম আহমাদ দ্রুত বের হয়ে এলেন ঘর থেকে। আর বললেন, ‘বাড়িতে পুলিশ এসেছে নাকি!’

দেখা গেল পুলিশ নয়, এক মহিলা এসেছে তাঁর কাছে মাসআলা জানতে!

হঠাৎ প্রচণ্ড শব্দে মানুষ ভয় পেয়ে যায়। মনে হয় যেন বাড়িতে চোর-ডাকাত এসেছে অথবা পুলিশ এসেছে! তাই উচ্চ শব্দে কড়া নাড়া উচিত নয়।

সাহাবিরা কড়া নাড়তেন মৃদুশব্দে। নবিজির দরজায় টোকা দিতেন নখ দিয়ে। ঘরের বাইরে থেকে নাম ধরে ডাকাডাকি করতেন না।

তুমিও তা-ই করবে। কারও বাড়িতে গেলে প্রথমে টোকা দেবে দরজায়। কেউ কাছে থাকলে এটুকু শব্দই যথেষ্ট। আর যদি বুঝতে পারো দরজার কাছে কেউ নেই, তাহলে কড়া নাড়তে পারো। অথবা কলিং বেল চাপতে পারো। তবে হাতের তালু দিয়ে দরজায় ধাক্কা দেবে না। জেনে রেখো, “যে কাজে কোমলতা থাকে সেটি সুন্দর হয়।”, নবিজি বলেছেন। এভাবে তিনবার শব্দ করবে। প্রতিবার শব্দ করার পর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করবে। হয়তো ভেতরের লোক খাওয়া-দাওয়া করছে, ওজু-গোসল করছে কিংবা সালাত পড়ছে। তাই এতটুকু সময় অপেক্ষা করবে, যেন একজন ব্যক্তি চার রাকাআত সালাত শেষ করতে পারে!

তিনবার শব্দ করার পরেও সাড়া না পেলে আর দরজা ধাক্কাবে না। সেখান থেকে চলে আসবে।

নবি (সাঃ) বলেছেন, “তিনবার অনুমতি চাওয়ার পরেও অনুমতি না পেলে চলে আসবে।”

না জানিয়ে দেখতে আসা

একবার একলোক বিশ্রাম নিচ্ছিল তার ঘরে। এমন সময় দেখা করতে এল এক বন্ধু। ঘরে-থাকা লোকটি তার ছেলেকে বলল, ‘তুমি বলে দাও, আমি বাসায় নেই!’ছেলেটি বলল, ‘আব্বু বলেছে, আব্বু বাসায় নেই!’

একথা শুনে বাইরে-থাকা-লোকটি বুঝে ফেলল, তার বন্ধু বাসাতেই আছে, কিন্তু সে মিথ্যা বলছে!
এতে সে রাগ করে চলে গেল। আর কিছুটা দুঃখও পেল। এভাবে দুজনের বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে গেল।

তাই সরাসরি  বলে দেওয়াই ভালো, ‘কিছু মনে করো না। আমি এখন ব্যস্ত! পরে তোমার সাথে দেখা করব, ইনশা আল্লাহ।’

কাউকে চলে যেতে বললে তারও উচিত খুশি মনে চলে যাওয়া। কারণ আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,

যদি তোমাদেরকে বলা হয়, ‘ফিরে যাও, তাহলে ফিরে যাবে, এটাই তোমাদের জন্য বেশি পবিত্র’। (সূরা নূর, ২৮ নং আয়াত)

কাউকে না জানিয়ে দেখা করতে আসা ঠিক নয়। কারণ সবারই ব্যস্ততা থাকে। হয়তো ভাবছো, কীসের এত ব্যস্ততা! না! ব্যস্ততার কথা জানতে চাওয়াও ঠিক নয়।

পরিচয় দেবো নাম বলে

একদিন জাবির (রাঃ) এসে কড়া নাড়লেন নবিজির দরজায়। নবিজি (সাঃ) বললেন, ‘আমি!’ এই জবাব শুনে নবিজি অখুশি হলেন। তিনি বললেন, “আমি! আমি কে?” তাই সাহাবিরা দরজায় শব্দ করার পর নিজেদের নাম বলতেন। যেন ভেতরের লোক বুঝতে পারে কে এসেছে।

দরজার ওপাশ থেকে পরিচয় জানতে চাইলে নিজের পুরো নাম বলবে। কারণ একজনের সাথে আরেকজনের কন্ঠের মিল থাকে। তা ছাড়া এক-দু কথায় চেনাও যায় না। তাই শুধু ‘আমি’ বললে পরিচয় বোঝা কঠিন।

ইমাম হব না অতিথি হলে

একদিন মালিক ইবনু হুয়াইরিস (রাঃ) গেলেন তাঁর বন্ধুর বাড়িতে। সালাতের সময় তারা মসজিদে গেলেন। সালাতের ইকামাত দেওয়া হলো। তখন মুসল্লিরা ইমামতি করতে বললেন মালিককে। তিনি এই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেন বিনয়ের সাথে। আর বললেন, ‘আপনারা কেউ ইমামতি করুন!’

মালিক বললেন, ‘নবি (সাঃ) বলেছেন, “তোমরা কারও সাক্ষাতে গিয়ে ইমামতি কোরো না। তাদের মধ্যেই কোনো ব্যক্তি যেন ইমামতি করে।” তাই কোথাও বেড়াতে গিয়ে নিজে থেকে ইমামতি করবে না।

জুতা খুলে সাজিয়ে রাখব

কারও বাড়িতে প্রবেশ করার সময় তাড়াহুড়া করবে না। বের হওয়ার সময়েও ধীরেসুস্থে বের হবে।

ময়লা জুতা নিয়ে ঘরে ঢুকবে না। জুতা খোলার আগে দেখবে, জুতায় কাদামাটি লেগে আছে কিনা। পাপোশ বা মাটিতে ঘষা দিয়ে জুতার তলা পরিস্কার করে নেবে। জুতা খোলার আদব খেয়াল রাখবে।

নবি (সাঃ) বলেছেন, “পরার সময় ডান পায়ের জুতা আগে পরবে, আর খোলার সময় বাম পায়ের জুতা আগে খুলবে।”

জুতা রাখার জায়গায় জুতা রাখবে। দরজার সামনে এলোমেলো করে ফেলে রাখবে না। অন্যের জুতার ওপর জুতা রাখবে না। নইলে তার জুতায় কাদামাটি ও ময়লা লেগে যাবে।

বসার আগে অনুমতি নেব

হাতিম তাঈ ছিলেন আরবের বিক্ষ্যাত দানশীন। তার ছেলের নাম আদি। আদি ইসলাম গ্রহণ করে মদীনায় এলেন। এরপর নবিজির সাথে দেখা করলেন। নবি (সাঃ) তাকে বসতে দিলেন গদিতে। আর নিজে বসলেন মাটিতে।

আদি বললেন, ‘আপনিই গদিতে বসুন!’ নবিজি বললেন, “না তুমি বসো!” আদি আবারও একই কথা বললেন। নবিজি বললেন, “না, তুমিই বসো।” শেষে গদির ওপরেই বসলেন আদি। গদিটি ছিল চামড়ার। ভেতরের ছিল খেজুর পাতা।

মেজবান যেখানে বসতে দেবে, মেহমানকে সেখানেই বসতে হবে। কারও বাসায় গিয়ে যেখানে-সেখানে বসবে না। ঘরের ভেতর চোখ পড়ে, এমন জায়গায়ও বসবে না।


35

সালাম দেবো আদব মেনে

করণীয়

মুখে হাসি রাখবে।
চেহারার দিকে তাকাবে।
সালামের পর হাতে হাত মিলিয়ে মুসাফাহা করবে।
স্পষ্ট আওয়াজে সালাম দেবে। কেউ শুনতে না পেলে সর্বোচ্চ তিনবার সালাম দেবে। এরপর থেমে যাবে।
অমুসলিমদের সালাম দেবে না, তবে কুশলাদি জিজ্ঞেস করবে।
আগে সালাম দেবে, এরপর অন্য কথা বলবে। যে আগে সালাম দেয়, তার অহংকার কম।
সাক্ষাতের শুরুতে ও শেষে সালাম দেবে।

বর্জনীয়

সালাম দেওয়া-নেওয়ার সময় মুখ ভার করে রাখবে না।
অন্যদিকে তাকিয়ে থাকবে না।
হাতের ইশারায় সালাম দেবে না। মাথা ঝুঁকাবে না। কুর্নিশ করবে না।
চিৎকার করে সালাম দেবে না। ‘আমি আপনাকে সালাম দিয়েছি’ এভাবে বলবে না!
পর্দা করতে হয় এমন নারী-পুরুষ একে অন্যকে সালাম দেবে না।
সালাম না দিয়ে কথা বলা শুরু করবে না।
সালাম না দিয়ে বিদায় নেবে না।

চলবে............

36
Common Forum/Request/Suggestions / সালামের আদব
« on: August 28, 2022, 01:25:10 PM »

সালামের আদব


নবি (সাঃ) বলেছেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট সেই ব্যক্তিই উত্তম, যে আগে সালাম দেয়।”

আগে-আগে সালাম দিই


বাহনে-থাকা-লোক সালাম দেবে পায়ে-হাঁটা-লোককে।
পায়ে-হাঁটা-লোক সালাম দেবে বসে-থাকা-লোককে।
অল্প সংখ্যক লোক সালাম দেবে বেশি সংখ্যক লোককে।
বাইরে থেকে-আসা-লোক সালাম দেবে ঘরে-থাকা-লোককে।
ছোটরা সালাম দেবে বড়দেরকে। তবে কিছু ক্ষেত্রে এর বিপরীত হলেও দোষের কিছু নেই। যেমনঃ নবিজি ছোটদের আগে সালাম দিতেন।
একসাথে অনেকে থাকলে, একজন জবাব দিলেই সবার সালামের জবাব হয়ে যায়।

যখন সালাম দেওয়া ঠিক নয় (মাকরুহ)

আযান-ইকামাতের সময়।
পেশাব-পায়খানা করার সময়।
মুখে খাবার থাকা অবস্থায়। যদি কথা বললে গলায় খাবার আটকে যাবার ভয় থাকে।
ইবাদাতরত অবস্থায়। যেমনঃ কেউ সালাত পড়ছে, কুরআন তিলাওয়াত করছে, যিকর করছে বা ওজু করছে।
খুতবা চলা অবস্থায় খতীবকে সালাম দেবে না। ক্লাস চলা অবস্থায় একে অন্যকে সালাম দেবে না। এতে সকলের মনোযোগ নষ্ট হয়।
দ্বীনি কাজে ব্যস্ত ব্যক্তিকে আগে সালাম দেবে না। যেমনঃ ইলমি গবেষণায় ব্যস্ত গবেষক (ফকীহ), বিচার কাজে ব্যস্ত বিচারক।
প্রকাশ্যে গুনাহে লিপ্ত ব্যক্তিকে আগে সালাম দেওয়া মাকরুহ। যেমনঃ যারা দাড়ি কামায়, বেপর্দায় চলাচল করে, নাচ-গান করে, নাটক-সিনেমা দেখে কিংবা সবার সামনে হারাম কাজ করে।

আলোচনাটি আবূ দাউদ-এর ৫১৯৭ এবং সহীহ বুখারী-এর ৬২৩৩ নং হাদীস অনুসারে সাজানো হয়েছে।


37

অমুসলিমের সালামের জবাব


একদিন এক ইয়াহূদি এল নবিজির কাছে। ইয়াহূদি বলল, ‘আস-সামু আলাইকুম!’ মানে তোমার মৃত্যু হোক! ‘আস-সামু’ অর্থ মৃত্যু। এই অদ্ভুত ‘সালাম’ শুনে খেপে গেলেন আয়িশা (রাঃ)। তিনি ইয়াহূদিকে বললেন, ’তোমারই মৃত্যু হোক! তোমাদের উপর আল্লাহর অভিশাপ!’

নবি (সাঃ)আয়িশাকে শান্ত হতে বললেন। আর ইয়াহূদিকে বললেন, “ওয়া আলাইকুম!” অর্থাৎ ‘তোমার কথা তোমাকেই ফিরিয়ে দিলাম!’ এভাবে ইয়াহূদির ধোঁকা ইয়াহূদিকেই ফিরিয়ে দিলেন নবিজি।

যারা ঠিকমতো সালাম দেয় না, তাদের সালাম তাদেরকেই ফিরিয়ে দিতে হবে। বলতে হবে, ‘ওয়া আলাইকুম!’

নবিজি বলেছেন, “ইয়াহূদি-খ্রিষ্টানদেরকে আগে আগে সালাম দিয়ো না। ওরা সালাম দিলে বলবে, ওয়া আলাইকুম।” কারণ সালাম মানে আল্লাহর কাছে শান্তি চেয়ে দু-আ করা। কাফিররা তো আল্লাহকেই বিশ্বাস করে না! তাই ওদেরকে সালাম দেওয়া নিষেধ।

আলোচনাটি সহীহ বুখারী-এর ৬৪০১ এবং সহীহ মুসলিম-এর ২১৬৭ নং হাদীস


38

ঘরে ঢুকব সালাম দিয়ে


একবার একলোক নবিজির ঘরে প্রবেশের অনুমতি চাইল। লোকটি বলল, ‘আমি কি ভেতরে আসব?’ নবিজি তাঁর খাদেমকে বললেন, “এই লোকটাকে অনুমতি চাওয়ার আদব শেখাও। তাকে বলতে বলো, ‘আস-সালামু আলাইকুম, আমি কি ভেতরে আসব? এরপর লোকটি নবিজির শেখানো নিয়মে অনুমতি চাইল। আগে সালাম দিলো। এরপর অনুমতি চাইল। এবার নবিজি তাকে ভেতরে আসার অনুমতি দিলেন।

ঘরে প্রবেশের আগে সালাম দেওয়া আল্লাহর আদেশ। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, “ হে মুমিনগণ, অনুমতি না নিয়ে তোমরা অন্যের ঘরে প্রবেশ কোরো না, আর ঘরের লোকদের সালাম দিয়ো।….”

يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ لَا تَدْخُلُوا۟ بُيُوتًا غَيْرَ بُيُوتِكُمْ حَتَّىٰ تَسْتَأْنِسُوا۟ وَتُسَلِّمُوا۟ عَلَىٰٓ أَهْلِهَا ۚ ذَٰلِكُمْ خَيْرٌۭ لَّكُمْ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُونَ ٢٧ فَإِن لَّمْ تَجِدُوا۟ فِيهَآ أَحَدًۭا فَلَا تَدْخُلُوهَا حَتَّىٰ يُؤْذَنَ لَكُمْ ۖ وَإِن قِيلَ لَكُمُ ٱرْجِعُوا۟ فَٱرْجِعُوا۟ ۖ هُوَ أَزْكَىٰ لَكُمْ ۚ وَٱللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ عَلِيمٌۭ ٢٨ لَّيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ أَن تَدْخُلُوا۟ بُيُوتًا غَيْرَ مَسْكُونَةٍۢ فِيهَا مَتَـٰعٌۭ لَّكُمْ ۚ وَٱللَّهُ يَعْلَمُ مَا تُبْدُونَ وَمَا تَكْتُمُونَ ٢٩

হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদের গৃহ ছাড়া অন্যের গৃহে প্রবেশ করো না, অনুমতি প্রার্থনা এবং গৃহবাসীদেরকে সালাম দেয়া ব্যতীত। এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর যাতে তোমরা উপদেশ লাভ কর। সেখানে যদি তোমরা কাউকে না পাও, তাহলে তাতে প্রবেশ করবে না, যতক্ষণ না তোমাদেরকে অনুমতি দেয়া হয়। আর যদি তোমাদেরকে বলা হয়, ‘ফিরে যাও, তাহলে ফিরে যাবে, এটাই তোমাদের জন্য বেশি পবিত্র’। তোমরা যা কর সে সম্পর্কে আল্লাহ সবচেয়ে বেশি অবগত। যে ঘরে কেউ বাস করে না, তোমাদের মালমাত্তা থাকে, সেখানে প্রবেশ করলে তোমাদের কোন পাপ হবে না, আল্লাহ জানেন তোমরা যা প্রকাশ কর আর যা তোমরা গোপন কর। (সূরা নূর, আয়াত নং ২৭,২৮,২৯)

এমনকি নিজের ঘরে কেউ না থাকলেও সালাম দিয়ে প্রবেশ করবে। তখন বলবে, السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِينَ আমাদের উপরে ও আল্লাহর নেক বান্দাদের উপরে সালাম!’

নবিজি আনাসকে বলেছিলেন, “প্রিয় ছেলে আমার, তুমি যখন তোমার পরিবারের লোকজনের কাছে যাও, তখন তাদের সালাম দিয়ো। এতে তোমার ও তোমার পরিবারের উপর বরকত হবে।”

ঘর বা মজলিস থেকে বিদায় নেওয়ার আগেও সালাম দেবে। নবিজি বলেছেন, “মজলিসে গেলে সালাম দেবে। বসতে ইচ্ছা হলে বসবে। যখন উঠে দাঁড়াবে তখনো সালাম দেবে। শেষের সালামের গুরুত্ব প্রথমটির চেয়ে কম নয়।”

আলোচনাটি আবূ দাউদ-এর ৫১৭৭ এবং তিরমিযি-এর ২৬৯৮ নং হাদীস


39

সালামের জবাব দিতেই হবে

তখন ছিল খলীফা উমরের শাসনকাল। সা’দ (রাঃ) খলীফার কাছে এসে বিচার দিলেন। তিনি বললেন, ‘উসমান আমার সালামের জবাব দেননি!’

উমর (রাঃ) বললেন, ‘উসমান, তোমার ভাইয়ের সালামের জবাব দিলে না কেন?’ উসমান বললেন, ‘আমি গভীর মনোযোগের সাথে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর একটি হাদীস নিয়ে ভাবছিলাম। তাই আশেপাশে কী ঘটেছে টের পাইনি।’ এই জবাব শুনে শান্ত হলেন সা’দ। দূর হলো তার দুঃখ। কারও সালামের জবাব না দিলে সে মনে দুঃখ পায়। তাই সালামের জবাব দিতে হবে স্পষ্ট আওয়াজে। যেন সালামদাতা সালামের জবাব শুনতে পায়।

যদি কেউ তোমার সালাম শুনতে না পায়, তাহলে তাকে তিনবার সালাম দেবে। তবে কেউ ঘুমিয়ে থাকলে এমনভাবে সালাম দেবে, যেন শুধু জেগে-থাকা লোকেরাই সালাম শুনতে পায়। আর ঘুমিয়ে-থাকা-লোকের ঘুম ভেঙে না যায়। যদি কেউ বলে, ‘অমুক তোমাকে সালাম জানিয়েছেন,’ তাহলে দুজনকেই সালামের জবাব দেবে। জবাবে বলবে, ‘আলাইকা ওয়া আলাইহিস সালাম।’

সালাম দেওয়া সুন্নত। আর সালামের জবাব দেওয়া ওয়াজিব। জবাব না দিলে গুনাহ হবে। ইশারা-ইঙ্গিতে সালামের জবাব দেওয়া যাবে না। নবিজি বলেছেন, “তোমরা ইয়াহূদি-খ্রিষ্টানদের মতো সালাম দিয়ো না। তাদের সালাম হলো হাত দিয়ে ইশারা করা।”

আলোচনাটি মুসনাদে আহমাদ-এর ১৪৬২ এবং আল-জামিউস সগীর-এর ১৩৮৩ নং হাদীস


চলবে............

40

রাষ্ট্র পরিচালনায় ন্যায়বিচারক বিশ্বনবী হযরত মোঃ (সাঃ)

নবী মুহাম্মদ (সাঃ), অন্যদের মত,  শুধুমাত্র একজন ধর্মপ্রচারক ছিলেন না। তিনি এই পৃথিবীতে এক ধরণের বিপ্লব নিয়ে এসেছিলেন।
 
এই কথাটি কেন বলেছি, সেই বিষয়ে কিছু তথ্য দেই, তারপর আমরা আবার মূল প্রশ্নে চলে আসবো।

আপনি কি জানেন, নবী হওয়ার পর এই মানুষটি, সর্বপ্রথম সমাজে কি পরিবর্তন চেয়েছিলেন ?

তিনি চেয়েছিলেন, নারীর অধিকার।

সমাজ পরিবর্তনের জন্য কোরআনের আয়াতগুলিকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সাজালে

প্রথম আয়াতটির মূল বিষয় ও আদেশ ছিল, "নারী শিশুদেরকে  জীবন্ত কবর দেয়া যাবে না"

এর পর কিছুদিন পরই তিনি বললেন, একজন নারী তার পিতার, স্বামীর ও সন্তানের সম্পদের অংশীদার হবে।

রাসূল (সাঃ) যখন এই ঘোষনা দিলেন, তখনই তিনি সমাজপতিদের রোষানলে পড়ে গেলেন।

এত দিনের মেনে চলা এই সংস্কৃতি ও আইনের বিরুদ্ধে, এই মত তারা মেনে নিতে পারেনি।

(নারী শিশুকে জীবন্ত কবর দেয়ার মত অপরাধ এই পৃথিবীতে এখনো আছে, আধুনিক ভারতে প্রতিদিন দুই হাজার নারী শিশুর এবরশন হয় কিন্তু কত জন নারীবাদী এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়ছেন ?)

তারপর আসলো ক্রীতদাসের কথা।

তিনি জানালেন, মানুষ আর মানুষের ক্রীতদাস হতে পারে না।

মৃত পিতার রেখে যাওয়া ইথিওপিয়ান ক্রীতদাসী উম্মে আইমানকে নিজের মা, আর উপহার হিসাবে পাওয়া জায়েদকে নিজের ছেলে, হিসাবে যখন সমাজে পরিচয় করিয়ে দিলেন, তখন সারা পৃথিবীতে আলোচনা শুরু হয়ে গেলো,

মুহাম্মদ (সাঃ)আসলে কি চায় ?

ক্রীতদাস ছাড়া সমাজ ব্যবস্থা কেমন করে চলবে?  অর্থনীতি কি করে আগাবে? ক্রীতদাসের দল মুক্তির জন্য আন্দোলন শুরু করলে কি অবস্থা হবে ?
ব্যাস, তিনি হয়ে গেলেন সমাজের সবচেয়ে বড় শত্রু।

(আজকের আধুনিক ইউরোপীয়ানদের হাজার বছরের ক্রীতদাস প্রথা এখনো বহাল তবিয়তেই আছে। ব্ল্যাক লাইভস ষ্টীল ডাজ নট মেটার )

ম্যালকম এক্সের মত বিপ্লবীরা, মুহাম্মদ আলীর মত শক্তিমান পুরুষরা যখন নবী মুহাম্মদ (সাঃ) কে ভালোবাসতে শুরু করলো, তখনই তাদের মনে হলো, সব অপরাধ ঐ আরব লোকটিরই।

তিনি বললেন,

ধনীদের সম্পদের সুষম বন্টন হতে হবে। তাদের সম্পদের উপর গরিবের অধিকার আছে।


তিনি ঘোষণা দিলেন, সবাইকে জাকাত দিতে হবে।

সমাজের ধনী ব্যবসায়ী ও ক্ষমতাবানরা ভাবলো,
 
মুহাম্মদ একজন সমাজ বিপ্লবী, তাকে সমাজ থেকে তাড়িয়ে দিতে হবে।

শেক্সপিয়ারের শাইলকের মত লোভী সব ইহুদি মুদ্রা ব্যবসায়ীদেরকে সুদ বন্ধ করতে আদেশ দিলেন।

ধনী-গরিবের অর্থনৈতিক বৈষম্যকে স্থিতিশীল করার চেষ্টা করলেন।

সবাই ভাবলো, মুহাম্মদ (সাঃ) একজন সোসালিস্ট, তাকে মেরে ফেলতে হবে।

নিজের অনুসারীদেরকে বললেন,

তোমরা আর মদ পান করবে না। সমাজে অন্যায় অবিচার কমে গেলো। চুরি ডাকাতি কমে গেলো।

মাতাল স্বামীর সংখ্যা কমে যাওয়ায়, নারী নির্যাতন প্রায় বন্ধ হয়ে গেলো।

অসভ্য পুরুষের মনে হিংসা শুরু হলো, এ লোক পাগল নাকি? মদ খাবে না, নারীকে নিয়ে ফুর্তি করবে না

সে কোন ধরণের সমাজ চায়?
 
মাদক ব্যবসায়ীরা একজোট হয়ে মুহাম্মদকে (সাঃ) ঠেকানোর জন্য নতুন পরিকল্পনা শুরু করলো।

অসহায় মানুষের কষ্টার্জিত সম্পদ নিয়ে জুয়ার আসরের নিষেধাজ্ঞা আসলো।

মুহাম্মদের (সাঃ)আর কোন রক্ষা নেই। সে বড় বেশি বাড়া বাড়ি করছে।

জুয়ার ব্যবসা ছাড়া সমাজে বিনোদনের আর কি রইলো ?

মুহাম্মদকে (সাঃ) ঘর ছাড়া করতে হবে। তার সব আয়-রোজগার বন্ধ করতে হবে।

এখন কি বুঝতে পারছেন,


কেন মুহাম্মদের (সাঃ)এত অপরাধ ?

এই যে এখন, নবী মুহাম্মদকে (সাঃ) কে এত বছর পর অপমান করার চেষ্টা করা হয়েছে

তার কি কারন?

 শুধু "ফ্রীডম অফ স্পিচ" ?

নো।

যে মানুষটির অনুসারীরা শুধু ভালোবাসা দিয়ে একসময় আফ্রিকা বিজয় করেছিল

সেই আফ্রিকার ২৪ টি দেশের, শত বছরের কলোনিয়াল নির্যাতন নিপীড়ন ও শোষণ থেকে যখন আলজেরিয়া ও তিউনেশিয়ার মত দেশগুলি অর্থনৈতিক ও রাজনৌতিক মুক্তি চেয়েছে

তখনই নবী মুহাম্মদ (সাঃ) হয়ে গেলেন বড় অপরাধী।

লক্ষ-লক্ষ মানুষের প্রাণের বিনিময়ে, অসহায় ও নিরপরাধ মানুষকে নিজের ক্রীতদাস করে রেখে যে সম্পদের পাহাড় তারা একসময় গড়েছেন, সেটি যখন হুমকির মুখে তখনই সব রাগ ও ক্ষোভ এসে জমা হয়েছে।

এখন তাদের নবীকে অপমান করতে হবে, তাঁর ব্যঙ্গ চিত্র প্রদর্শন করতে হবে।

তারপর আফ্রিকাতে আবার জঙ্গি দমানোর জন্য ন্যাটো বাহিনীকে পাঠাতে হবে।

কিন্তু তারা পারবে না।

পিউ রিসার্চের গবেষণা অনুযায়ী, শুধু ইউরোপেই প্রতিবছর প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করছে।

আপনি দেখবেন কিছু দিন পর এই সংখ্যা হবে, দশ হাজার।

কারন হলো, এই ঘটনার পর, মানুষ জানতে চাইবে ,

কে এই মুহাম্মদ ? (সাঃ)

প্রথমেই সে জানবে।

মানুষটি শুধু আমাদেরকে মনে প্রাণে একজন মাত্র সৃষ্টিকর্তাকে ভালোবাসতে বলেছেন। যার কোন শরীক নেই। যিনি এক ও অদ্বিতীয়।

মানুষরূপী কোন খোদার কাছে মাথানত করতে নিষেধ করেছেন। শিরক করতে নিষেধ করেছেন।

একজন মানুষের জন্য শুধু এতটুকু জানাই যথেষ্ট।


এখন কেউ যদি চোখ বন্ধ করে সূর্যের আলোকে দেখতে না চায়, তাহলে কি সূর্য আলো দেয়া বন্ধ করে দিবে নাকি সূর্যের আলো হারিয়ে যাবে ?

নবী মুহাম্মদ (সাঃ) হলেন এই পৃথিবীতে সেই আলো।

এই আলোকে কেউ লুকিয়ে রাখতে পারবে না।


"Truth is Truth"
ইউ ডিনাই অর ইউ একসেপ্ট।
কলমে- Dr.Shamsul Alam

From the wall of Honorable Chairman, Board of trustees; DIU

41

সালাম দেবো পুরোপুরি

একবার একলোক এসে নবীজিকে বললেন, ‘আস-সালামু আলাইকুম।’ নবীজি তাকে তার সালামের জবাব দিলেন। এরপর সাহাবিদের বললেন, “এই সালামের নেকি ১০ টি।” এবার আরেকজন এসে বললেন, ‘আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।’ নবীজি তার সালামের জবাব দিলেন। এরপর বললেন, “এই সালামের নেকি ২০ টি।” এবার এলেন তৃতীয় ব্যক্তি। তিনি বললেন, ‘আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।’ এভাবে পুরো সালাম দিলেন। নবীজি সালামের জবাব দিলেন। আর সাহাবিদের বললেন, “এই লোক পেয়েছে ৩০ টি নেকি!”

আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,

কেউ সালাম দিলে তোমরা তার চেয়েও উত্তমভাবে সালামের জবাব দেবে অথবা তার মতো বলবে।

তাই তোমাকে কেউ সালাম দিলে, জবাবে তার মতো বলবে অথবা একটি-দুটি শব্দ বেশি বলবে। কম বলবে না।

‘আস-সালামু আলাইকুম’-এর জবাবে বলবে, ‘ ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ!’

আর ‘আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ’-এর জবাবে বলবে,’ ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া-বারাকাতুহু!’ মানে ‘তোমার ওপরেও আল্লাহর পক্ষ থেকে শান্তি, রহমত ও বরকত হোক!’

আলোচনাটি আবূ দাঊদ-এর ৫১৯৫ নং হাদীস এবং সূরা নিসা-এর ৮৬ নং আয়াত

চলবে...............

42

সালাম দিবো বেশি বেশি

একদিন নবী করীম (সাঃ) বললেন, “ একটি কাজ আছে, যা করলে তোমাদের মাঝে ভালোবাসা সৃষ্টি হবে। তোমরা কি তা জানতে চাও? সেটা হলো একজন আরেকজনকে বেশি বেশি সালাম দেওয়া”।

তাই সাহাবিরা একে অন্যের সাথে সালামের প্রতিযোগিতা করতেন। এমনই দুজন সাহাবি ছিলেন আব্দুল্লাহ ইবনু উমর ও তুফাইল ইবনু কা’ব (রাঃ)।

একদিন তুফাইল দেখলেন, আব্দুল্লাহ বাজারে গিয়ে সবাইকে সালাম দিচ্ছেন। অথচ কোনোকিছু কেনাবেচা করছেন না। সেদিন তুফাইলকেও সাথে নিতে চেয়েছিলেন তিনি। তুফাইল বললেন, ‘শুধু শুধু বাজারে গিয়ে কী করব?’ আব্দুল্লাহ বললেন, ‘আমরা কেবল সালাম দেওয়ার জন্যই বাজারে যাব। যার সাথেই দেখা হবে, তাকেই সালাম দেবো!’

নবীজি (সাঃ) বলেছেন, “যখন এক মুসলিম আরেক মুসলিমকে সালাম দেয়, তার সাথে হাত মেলায়, তখন গাছের পাতা ঝরে যাওয়ার মতো তাদের গুনাহগুলো ঝরে যায়”। তাই সাহাবিরা বারবার  সালাম দিতেন। একটি গাছ বা দেওয়ালের আড়ালে গেলেও আবার সালাম দিতেন।

আলোচনাটি সহীহ মুসলিম-এর ৫৪ এবং জামিউল উসূল-এর ৪৮৪৩ নং হাদীস।

চলবে..................

43

সালামের শুরু জান্নাতে

প্রথম মানুষ ছিলেন আদম (আঃ)। তাকে সৃষ্টির পর আল্লাহ বললেন, ‘’ হে আদম, ওখানে বসে-থাকা ফেরেশতাদের সালাম দাও। তারা কী জবাব দেয়, মনোযোগ দিয়ে শোনো। কারণ ওটাই হবে তোমার ও তোমার সন্তানদের অভিবাদন !’’

ফেরেশতাদের কাছে গিয়ে আদম (আঃ) বললেন, আস-সালামু আলাইকুম।’ (আপনাদের ওপর সালাম।)

ফেরেশতারা জবাব দিলেন, ‘ওয়া আলাইকুমুস সালাম  ওয়া রহমাতুল্লাহ।’ (আপনাদের ওপরেও সালাম ও আল্লাহর রহমত।)

সালাম মানে শান্তি ! এক মুসলিম আরেক মুসলিমের সাথে দেখা হলেই বলবে, ‘আস-সালামু আলাইকুম।’ মানে আল্লাহ তোমাকে শান্তিতে রাখুন !

যারা জান্নাতে যাবে, তারা একজন আরেকজনকে এভাবে সালাম দেবে। আল্লাহও  তাদেরকে সালাম দেবেন। তিনি বলবেন, ‘ আস-সালামু আলাইকুম। হে জান্নাতবাসী, তোমাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক !’

ভাবুন একবার, কত সুন্দর এই অভিবাদন !

আলোচনাটি সহীহ বুখারী-এর ৬২২৭ নং হাদীস।

চলবে...............

44

ইসলামের দৃষ্টিতে একজন আদর্শ শিক্ষকের পরিচয়

শিক্ষক হচ্ছেন শিক্ষার্থীর জন্য একজন সংশোধনকারী ও পথপ্রর্দশক। কারো পক্ষে কোনো শিক্ষকের মাধ্যম ছাড়া বিদ্যা অর্জন করা সম্ভব নয়।

যে ব্যক্তি শিক্ষক ছাড়া শুধু বই পুস্তক পড়ে বিদ্যা অর্জন করে, সে কোনো দিন শিক্ষার পুর্ণতায় পৌঁছতে পারে না। বিজ্ঞ জনেরা বলেছেন, যার কোনো শিক্ষক নেই তার শিক্ষক শয়তান। মনীষীগণ আরো বলেছেন, শিক্ষকের দৃষ্টান্ত একজন মালীর মতো। একটা বাগানের সমৃদ্ধি যেমন মালীর পুর্ণ দৃষ্টির ওপর নির্ভর করে তেমনিভাবে একজন শিক্ষার্থীর জীবনের উন্নতি-অবনতি শিক্ষকদের দৃষ্টির ওপর নির্ভরশীল।

শিক্ষকের মর্যাদা : ইসলাম শিক্ষককে মহান ব্যক্তিত্ব ও শ্রদ্বার পাত্র হিসেবে স্বীকৃতি দান করেছে। যার বিবরণ কোরআন ও হাদিসে উল্লেখ রয়েছে। যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেন,  الرحمن علم القرأن  করুনাময় শিক্ষা দিয়েছেন কোরআন। অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা নিজেই সর্বপ্রথম শিক্ষক। সুতরাং যে কাজ আল্লাহ তায়ালা করেছেন উক্ত কাজে যে ব্যক্তি আত্মনিয়োগ করবে তার চেয়ে আর কেউ সম্মানের অধিকারী হতে পারে না।

উল্লেখ্য যে, বর্ণিত আয়াতে আল্লাহ তায়ালার  ‘রাহমান’ নামটি উল্লেখ করা হয়েছে। এতে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, একজন শিক্ষকের মধ্যে সর্বপ্রথম যে গুণটি থাকতে হবে তা হলো দয়া। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, انما بعثت معلما আমি শিক্ষক হিসেবে প্রেরিত হয়েছি। শুধু তাই নয় সব নবী রাসূলরা পৃথিবীতে শিক্ষক হিসেবেই প্রেরিত হয়েছিলেন। অন্য আরো একটি হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিক্ষকদের শ্রেষ্ঠত্বের বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন, خيركم من تعلم القرأن و علمه  তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ওই ব্যক্তি যে নিজে কোরআন মাজীদ শিক্ষা করে এবং শিক্ষা দেয়।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিক্ষকদের শ্রেষ্ঠত্বের বর্ণনাই করেছেন, শুধু এতটুকুই নয় বরং তিনি শিক্ষকদের জন্য দোয়াও করেছেন। যেমন তিনি বলেছেন, نضر الله عبدا سمع مقالتى فحفظها و وعاها و اداها  আল্লাহ তায়ালা সুখি স্বচ্ছল রাখুন ওই ব্যক্তিকে যে আমার কোনো বাণী শোনে তা যথাযথভাবে স্মরণ রাখে এবং সংরক্ষণ করে অন্যের নিকট পৌঁছে দেয়। উপরোল্লেখিত বর্ণনার ভিত্তিতেই হজরত ওমর (রা.) শিক্ষকদেরকে মর্যাদার সর্বোচ্চ আসনে আসীন করেছিলেন।

শিক্ষকতাই শ্রেষ্ঠ কর্ম : সব পেশা হতে শ্রেষ্ঠ ও সম্মান জনক পেশা হচ্ছে শিক্ষকতা। পৃথিবীতে মানুষ যত কর্মে নিয়োজিত আছে, তার মধ্যে শিক্ষকতার শ্রেষ্ঠত্বের সঙ্গে কেউ প্রতিদ্বন্ধিতা করতে পারবে না। তাই সাহাবাদের (রা.) একটা বৃহৎ সংখ্যা শিক্ষক হিসেবে সমাজে গভীর প্রভাব বিস্তার করেছিলেন। বড় বড় রাজনীতিবিদ, সমাজনীতিবিদ এবং ধর্মীয় দিক নির্দেশকের ভূমিকায় শিক্ষকরাই ছিলেন অন্যতম। এ জন্যেই ইসলাম শিক্ষককে রূহানী পিতা সাব্যস্ত করেছে।

শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে কয়েকটি পরামর্শ : শুধু শিক্ষা দিলেই মর্যাদার অধিকারী হওয়া যায় না। বরং প্রশংসার আসনে আসীন হতে হলে শিক্ষকের জন্যেও কিছু করণীয় বিষয় রয়েছে, যেগুলো অবলম্বনে শিক্ষকতার দায়িত্ব আঞ্জাম দিলে ইহকালে পদমর্যাদার অধিকারী ও আখেরাতে বিরাট পুরস্কারে পুরস্কৃত হওয়া সম্ভব।

আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির জন্যে শিক্ষা দেয়া এবং তদনুযায়ী আমল করা। ইমাম গায্যালী রহ.  বলেন, যে ব্যক্তি ইলম অর্জন করে এবং মানুষকে শিক্ষা দান করে, আকাশ ও পৃথিবীর রাজত্বে তাকেই মহান বলা হয়। সে সূর্যের মতো অপরকে আলো দান করে এবং নিজেও আলোকময়। সে মেশকের মতো অপরকে সুগন্ধিতে আমোদিত করে এবং নিজেও সুগন্ধি যুক্ত। আর যে ব্যক্তি অপরকে শিক্ষা দান করে কিন্তু নিজে আমল করে না সে শানের মতো লোহাকে ধারালো করে কিন্তু নিজে কাটে না, সে ব্যক্তি সুচের মত যে অন্যের জন্য পোশাক তৈরী করে কিন্তু নিজে উলঙ্গ থাকে।

পাঠ দানের পূর্বে পড়ানোর পদ্ধতি মুতালা‘আর মাধ্যমে অনুশীলন করে শ্রেণী কক্ষে যাওয়া। পড়ানো শেষ হলে শিক্ষার্থীদের চেহারার দিকে তাকানো। যদি তাদের চেহারায় আনন্দের আভা দেখা দেয় , তাহলে বুঝতে হবে যে তারা বিষয় বস্তু হৃদয়ঙ্গম করতে পেরেছে।  আর যদি তাদের চেহারায় নৈরাশ্যের ছাপ থাকে তাহলে বুঝে নিতে হবে তারা সন্তুষ্ট নয়। সুতরাং শিক্ষকের উচিৎ পরবর্তিতে উক্ত বিষয়টি বুঝিয়ে দেয়া।

বর্ণিত আছে, একদা গ্যালেন (হাকিম জালিনুস ) একটি জটিল বিষয়ের ক্লাস নিলেন। পাঠদান সমাপ্ত করে জিজ্ঞেস করলেন তোমরা কি বুঝেছ? শিক্ষার্থীরা হ্যাঁ বুঝেছি বলে উত্তর দিলেও তিনি মন্তব্য করলেন তোমরা বুঝনি। কারণ لو فهمتم لظهر السرورعلي وجوهكم  যদি তোমরা বুঝতে তাহলে তোমাদের চেহারায় আনন্দের আভা ফুটে উঠতো।

শিক্ষার্থীদেরকে সন্তানের মতো স্নেহ করা। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন انما انالكم مثل الوالد لولد সন্তানের জন্য পিতা যেমন, আমিও তোমাদের জন্য তেমন।  হজরত মুআবিয়া ইবনে হাকাম সুলামী (রা.) বর্ণনা করেন, ما رايت معلما قبله ولابعده احسن تعليما منه فوالله ما قهرني ولا ضربني ولاشتمني-   আমি  রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শ্রেষ্ঠ কোনো শিক্ষক পূর্বেও দেখিনি এবং তাঁর পরেও দেখিনি । তিনি আমাকে না ধমক দিলেন, না মারলেন, না কোনো গাল-মন্দ করলেন।

‘শিক্ষার্থীদের প্রতি অনুগ্রহ হচ্ছে’ মনে না করা। বরং তাদের প্রতি অনুগ্রহভাজন হওয়া। তাদের দ্বারাই আমি গৌরবের অধিকারী হয়েছি মনে করা। শিক্ষার্থীদেরকে আমলের জন্য উৎসাহিত করা। কখনো কখনো সৎ উপদেশ দান করা। যাতে করে তারা কুচরিত্র থেকে বেঁচে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারে। সংশোধনের জন্য গঠনমূলক শাস্তি দেয়া। রাগের বশে বেত্রাঘাত না করা। কারণ এর দ্বারা সংশোধনের ক্ষেত্রে বৈষম্য সৃষ্টি হতে পারে। শরীরে দাগ পড়ে যায়, হাড্ডিতে আঘাত লাগে, প্রতিষ্ঠানের বদনাম হয়, নিজের সম্মান নষ্ট হয়, এ ধরণের প্রহার থেকে অবশ্যই আত্মরক্ষা করতে হবে। মৌখিক শাসনের বেলায় কুকুর, বিড়াল, শুকর, গাধা, গরু, ছাগল, ইত্যাদি শব্দে কখনো না শাসানো।

শিক্ষকদের নিজের জন্য এ দোয়াটি বেশি বেশি পাঠ করা জরুরি رب اشرح لي صدري ويسرلي امري واحلل عقدة من لساني يفقهو ا قولي  ‘হে আমার পালন কর্তা আমার বক্ষ প্রশস্ত করে দিন। এবং আমার কাজ সহজ করে দিন। এবং আমার জিহ্বা থেকে জড়তা দূর করে দিন, যাতে করে তারা আমার কথা বুঝতে পারে।’ ছাত্রদের জন্যেও দোয়া করা এবং তাদেরকে ইলমও আমলের জন্য দোয়া করতে উৎসাহিত করা।


45

আত্মহত্যা সম্পর্কে ইসলাম কী বলে?

আত্মহত্যা বর্তমান সমাজে সংঘটিত জঘন্যতম পাপকাজগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি। এ কারণেই ইসলামে আত্মহত্যা করা কবিরা গোনাহ। নিজেই নিজের জীবনকে চিরতরে ধ্বংস করে দেওয়ার নাম আত্মহত্যা। Suicide হচ্ছে আত্মহত্যার ইংরেজি প্রতিশব্দ। লাতিন ভাষা Sui Sediur থেকে মূলত Suicide শব্দের উৎপত্তি। ইসলামে আত্মহত্যা যেমন মারাত্মক অপরাধ তেমনি এর শাস্তিও ভয়াবহ। এ সম্পর্কে ইসলামের বিধানই বা কী?

মানুষের জীবনের মালিক আল্লাহ; তিনি মানুষকে মৃত্যু দান করেন। কুরআনুল কারিমে মহান আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন-

‘জীবমাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণকারী; অতঃপর তোমরা আমারই কাছে ফিরে আসবে।’ (সুরা আনকাবুত : আয়াত ৫৭)

এক্ষেত্রে আত্মহত্যা হচ্ছে এমন মৃত্যু; যা বান্দা কর্তৃক আল্লাহর পক্ষ থেকে স্বাভাবিক মৃত্যু উপেক্ষা করে নিজেই নিজের জীবনকে শেষ করে দেওয়া, যা ইসলামে মারাত্মক অপরাধ ও হারাম কাজ। আর পরকালে এর পরিণামও ভয়াবহ।

ইসলাম কখনও আত্মহত্যার মতো কোনো অপরাধকেই সমর্থন করে না। এহেন কর্ম থেকে বিরত থাকার গুরুত্ব প্রদান করে আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনুল কারিমের একাধিক আয়াতে ঘোষণা করেন-


১. ‘তোমরা নিজেদের হত্যা করোনা; নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি ক্ষমাশীল।’ (সুরা নিসা : আয়াত ২৯)

২. ‘তোমরা নিজ হাতে নিজেকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিও না।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৯৬)

যেসব কাজে বাড়ে আত্মহত্যার প্রবণতা

বর্তমান সময়ে সমাজে নানা শ্রেণির নানা পেশার মানুষের মাঝে আত্মহত্যার ব্যাপক প্রবণতা লক্ষণীয়। সম্প্রতি গবেষকরা আত্মহত্যার পেছনে কিছু মুখ্য কারণ উদ্ঘাটন করেছেন। তাহলো-

১. পারিবারিক কলহ

২. জীবন সংগ্রামে বিভিন্ন কাজে ব্যর্থতা ও হতাশা

৩. স্বামী ও স্ত্রীর মাঝে মনোমালিন্য

৪. মানসিক অবসাদ ও যন্ত্রণা উল্লেখযোগ্য।

বিশেষ করে

আত্মহত্যার এ প্রবণতা খুব বেশি পরিলক্ষিত হয় উঠতি বয়সী তরুণ ও তরুণীদের মাঝে। এদের অনেকেই যেসব কারণে এ অপরাধে জড়িত হয়; তাহলো-

১. পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া কিংবা ভালো ফলাফল অর্জনে ব্যর্থতা হওয়া।

২. প্রেম-ভালোবাসায় ব্যর্থতা বা প্রেমিক-প্রেমিকার মাঝে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি থেকে অনেকেই নিজেদের প্রতি আত্মঘাতী হয়ে আত্মহত্যা করছে। অথচ ইসলামি শরিয়তে একজন তরুণ ও তরুণীর মাঝে বিবাহপূর্বক প্রেম কিংবা ভালোবাসা স্থাপন সম্পূর্ণরূপে হারাম তথা নিষিদ্ধ।

কিন্তু বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় যথাযথভাবে ইসলামি শিক্ষা পদ্ধতি চালু না থাকায় অসংখ্য ব্যক্তি ইসলামের এই সত্য বিধানকে অন্তর দিয়ে উপলদ্ধি করতে পারে না। ফলে দিন দিন আত্মহত্যার মাধ্যমে সমাজে মেধা শূন্যের সংখ্যা বেড়েই চলছে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রতিনিয়ত দেশের বিভিন্ন স্কুল বা কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া অসংখ্য মেধাবী শিক্ষর্থীরা আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে।

আত্মহত্যার মতো মারাত্মক অপরাধ প্রবণতা থেকে সন্তানদের মুক্ত রাখতে প্রতিটি বাবা ও মায়ের উচিত নিজ সন্তানের প্রতি আরো যত্নবান হওয়া। কুরআন ও হাদিসের আলোকে নিজ সন্তানকে প্রেমের বিধান সম্পর্কে অবহিত করা। সন্তানের সঙ্গে এমন সুসম্পর্ক গড়ে তোলা- যাতে অনায়াসেই সন্তান জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত তার বাবা ও মাকে নির্ভয়ে জানাতে পারে।

ভূলে গেলে চলবে না, আত্মহত্যার মাধ্যমে শুধুই একটি জীবন প্রদীপ নিভে যায় না; বরং অন্তরে লুকিয়ে থাকা হাজারো স্বপ্ন মাটির সঙ্গে মিশে ধুলোয় পরিণত হয়।

পাশাপাশি কোনো কাজে ব্যর্থ হাওয়া মাত্রই আল্লাহর উপর ভরসা না করে অনেকেই হতাশায় ভুগে আত্মহত্যা করেন। অথচ আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে বিভিন্ন বিপদ-আপদের সম্মুখীন হলে কর্তব্য কী হবে, সে সম্পর্কেও রয়েছে কুরআনের ঘোষণা। আল্লাহ তাআলা বলেন-

‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর; নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলগণের সঙ্গে আছেন।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৫৩)

সকলের স্মরণে থাকা উচিত, আত্মহত্যার মারাত্মক অপরাধ প্রবণতা থেকে বাঁচতে জীবন পথে চলতে গিয়ে বহু বিপদের সম্মুখীন হতে হবে এবং অর্জিত হবে নানান অভিজ্ঞতা। শত বিপদের মাঝেও সর্বদা হাসিমুখে থাকার চেষ্টা করতে হবে। নিজের মাঝে পরিবর্তনের চেষ্টা ও জীবনকে নতুন করে সাজানোর প্রচেষ্টা করতে হবে।

এই জীবন যুদ্ধে যিনি প্রতিটি মুহূর্ত ধৈর্যের সঙ্গে মোকাবেলা করবেন, দিন শেষে তিনিই সফলতার মুখ দেখতে পাবেন। বাংলা ভাষাযর সেই প্রবাদ বাক্যই তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত যে- ‘সবুরে মেওয়া ফলে’। আর এ সবর বা ধৈর্যশীলতাই মহান আল্লাহর কাছে একান্ত পছন্দনীয়। তিনি ধৈর্যশীলদের ভালোবাসেন। আল্লাহ বলেন-

‘আর আল্লাহ ধৈর্যশীলদের ভালোবাসেন।

আত্মহত্যার ভয়াবহ পরিণতি

আত্মহত্যার পরিণতি মারাত্মক। হাদিসে পাকে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একাধিক বর্ণনা পেশ করেছেন। আত্মহত্যাকারীর শাস্তি জাহান্নামে কিভাবে দেওয়া হবে ও এর পরিণাম সম্পর্কে যদি কেউ যথাযথভাবে অবহিত থাকে, তবে আল্লাহর কাছে আত্মহত্যা থেকে অবশ্যই সে পানাহ চাইবে এবং এহেন কর্মের প্রতি নিজের অন্তরে ঘৃণা জন্মাবে। আত্মহত্যার শাস্তির ধরণ সম্পর্কে হাদিসের একাধিক বর্ণনায় এসেছে-

১. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামে (অনুরূপভাবে) নিজেকে ফাঁস লাগাতে থাকবে আর যে ব্যক্তি বর্শার আঘাতে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামে (অনুরূপভাবে) বর্শা বিদ্ধ হতে থাকবে।’ (বুখারি)

২. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে লোক পাহাড়ের উপর থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করে সে জাহান্নামের আগুনে পুড়বে; চিরকাল সে জাহান্নামের ভেতরেৎ এভাবে লাফিয়ে পড়তে থাকবে। যে লোক বিষপানে আত্মহত্যা করবে, তার বিষ জাহান্নামের আগুনের মধ্যে তার হাতে থাকবে, চিরকাল সে জাহান্নামের মধ্যে তা পান করতে থাকবে। যে লোক লোহার আঘাতে আত্মহত্যা করবে, জাহান্নামের আগুনের ভিতর সে লোহা তার হাতে থাকবে, চিরকাল সে তা দিয়ে নিজের পেটে আঘাত করতে থাকবে।

৩. এমনকি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে আত্মহত্যাকারীর জানাজাও পড়েননি। হাদিসে এসেছে-

হজরত জাবের ইবনে সামুরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এক ব্যক্তির লাশ উপস্থিত করা হল। সে চেপ্টা তীরের আঘাতে আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার জানাজা আদায় করেননি।’ (মুসলিম)

কুরআন সুন্নাহর আলোকে এটি প্রমাণিত যে, আত্মহত্যা মারাত্মক অপরাধ ও হারাম কাজ। আর এর পরিণতিও খুবই ভয়াবহ। আত্মহত্যাকারীকে জাহান্নামের আগুনে কঠোর শাস্তি ভোগ করতে হবে।

সুতরাং কুরআন সুন্নাহর দিকনির্দেশনা অনুযায়ী হতাশা কিংবা যে কোনো কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হয়ে নিমিষেই আত্মহত্যার পথ বেছে নেওয়া যাবে না। বরং এক আল্লাহর প্রতি নির্ভরশীলতার মাধ্যমে জীবনের প্রতিটি কঠিন মুহূর্তে ধৈর্য ও নিজের মেধা খাঁটিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করাই বুদ্ধিমানের কাজ। কেননা আত্মহত্যা কোনো সমাধান নয়; বরং আবেগতাড়িত হয়ে নিজের ভূলে নিজের জীবনকে চিরতরে নিঃশেষ করে দেওয়া মারাত্মক ভুল ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

আল্লাহ তাআলা সবাইকে দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করুক। আত্মহত্যার মতো মারাত্মক অপরাধ ও হারাম কাজ থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন!

Pages: 1 2 [3] 4 5 ... 11