Show Posts

This section allows you to view all posts made by this member. Note that you can only see posts made in areas you currently have access to.


Messages - Rubaiya Hafiz

Pages: 1 2 [3] 4 5 ... 7
31
যাঁরা তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ক্যারিয়ার গঠনের চিন্তা করছেন, তাঁদের গতানুগতিক ধারার বাইরে যেতে হবে। একসময় শুধু কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি হলেই চাকরি পাওয়া যেত। এ ছাড়া কাজ করতে করতে অনেক বিষয় শিখে নেওয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু এখন ক্যারিয়ারে উন্নতি করতে হলে নতুন প্রযুক্তি দক্ষতাগুলো আগে থেকেই আয়ত্ত করতে হবে। বর্তমান দক্ষতার সঙ্গে সঙ্গে নতুন প্রযুক্তি দক্ষতাগুলো না আয়ত্তে আনতে পারলে প্রতিষ্ঠানে নতুন দায়িত্ব ও উন্নতি করা সম্ভব নয়। এ কারণে নতুন দক্ষতাগুলো শিখতে সময় বের করতে হবে। নিজের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য অবশ্য চাকরি ছেড়ে আবার ক্লাসরুমে ফেরত যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না এখন। চাইলে অনলাইনেই বিভিন্ন কোর্স করে নিজের দক্ষতাগুলোকে বাড়িয়ে নেওয়া যায়। সম্প্রতি বিশ্বজুড়ে অনলাইন লার্নিং প্ল্যাটফর্মগুলোয় কয়েকটি কোর্সের চাহিদা ব্যাপক বেড়েছে। কোরসেরাতে থাকা জনপ্রিয় ১০টি প্রযুক্তিবিষয়ক কোর্সের তালিকা দেখে নিন:

১. স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মেশিন লার্নিং
২. মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোগ্রামিং ফর এভরিবডি (গেটিং স্টার্টড উইথ পাইথন)
৩. ম্যাকমাস্টার ইউনিভার্সিটি ও ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, সান ডিয়েগোর লার্নিং হাউ টু লার্ন
৪. জন হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের আর প্রোগ্রামিং
৫. প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালগরিদমস, পার্ট–১
৬. ডিপলার্নিং ডটএইয়ের নিউরাল নেটওয়ার্কস অ্যান্ড ডিপ লার্নিং
৭. মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের পাইথন ডেটা স্ট্রাকচারস
৮. জন হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্য ডেটা সায়েন্টিস্ট টুলবক্স
৯. মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনট্রোডাকশান টু ডেটা সায়েন্স ইন পাইথন
১০. সেন্ট্রালসুপলেকের বিল্ড ইয়োর ফার্স্ট অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ (প্রজেক্ট-সেন্ট্রার্ড কোর্স)
কোনো নির্দিষ্ট কোর্সের জন্য আবেদন করার আগে অবশ্যই এর কনটেন্টগুলো দেখে নিতে হবে। এসব কনটেন্ট নিজের ক্যারিয়ারের জন্য উপযোগী কি না, তা বুঝে তবে কোর্সগুলো করলে সুফল পাওয়া যাবে।

32
তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সবার ছোট ছেলে রিফাত এম হক। বাবা খোন্দকার মোজাম্মেল হক ‘গেদুচাচার খোলা চিঠি’খ্যাত কলামিস্ট ও একটি সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদক। মা ফারজানা নূর গৃহিণী। ছোটবেলা থেকেই রিফাত একটু আলাদা রকমের। যেকোনো কিছু জানার জন্য লেগে থাকতেন।

রিফাত এম হক ফ্রিল্যান্সার হিসেবে আউটসোর্সিংয়ের কাজ করতে করতে হয়েছেন উদ্যোক্তা। দিনরাত খেটেখুটে তৈরি করেছেন শিখবে সবাই এবং ইন্সট্রাক্টরি নামের দুটি প্রতিষ্ঠান। রিফাত এখন একজন সফল শিক্ষক, উদ্যোক্তা, ইউআই-ইউএক্স ডিজাইনার এবং ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস ফাইভারে ‘ওয়েব এবং মোবাইল ডিজাইন’ ক্যাটাগরিতে একমাত্র বাংলাদেশি শীর্ষ ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করছেন।

শুরু যেভাব
তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশলের ছাত্র ছিলেন রিফাত। ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় তখন ভাবতেন স্নাতক হলেই বুঝি মোটা অঙ্কের চাকরি পাওয়া যাবে। ২০১২ সালে স্নাতক হওয়ার পর প্রায় ৩৬১টি চাকরির সাক্ষাৎকার দেন রিফাত। কোনো জায়গায় কাজের ওপর বেতন আবার কোনো জাগায় একদমই কম বেতন, কোথাও আবার প্রকৌশলবিদ্যা পড়ে বিক্রয়ের কাজ—অনেক জায়গায় তো চাকরিই হয়নি রিফাতের।
প্রায় এক বছর ধরে চাকরির বাজারটা বোঝার চেষ্টা করেন রিফাত। সবশেষে ৫ হাজার টাকা বেতনে রিফাতের কর্মজীবন শুরু হয়। সে সময় রিফাতের পাশে ছিলেন স্ত্রী জেসমিন। তাঁদের এখন একটি মেয়েও আছে, নাম ফালাক। যেহেতু রিফাতের পড়াশোনার সঙ্গে চাকরির ক্ষেত্রের কোনো মিল ছিল না, তাই দেড় বছরের মধ্যে একে একে তিনটা চাকরি ছেড়ে দেন।

চাকরি ছাড়ার পর ওয়েব ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট নিয়ে পড়াশোনা বেশি করে করেন রিফাত। এমনও সময় ছিল তখন, যখন বড় বড় দোকানে, রেস্তোরাঁয় বা করপোরেট অফিসে গিয়ে রিফাত বলতেন, কারও ওয়েবসাইট ডিজাইন করে দিতে হবে নাকি। অনেকে বলতেন লাগবে, আবার অনেকে বলতেন এসব ভুয়া জিনিস নিয়ে আসবেন না। কোম্পানির ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য ওয়েবসাইট কতটা জরুরি, তা বোঝানোর চেষ্টা করতেন রিফাত। কখনো বাসে, কখনো হেঁটে মহাখালী থেকে পল্টনের বাসার দিকে ক্লান্ত হয়ে ফিরতে হতো রিফাতকে। নিজের কাজগুলোকে কীভাবে সবার সঙ্গে শেয়ার করবেন, সেই সুযোগ খুঁজতেন সব সময়।
ফ্রিল্যান্সিংয়ে হাতেখড়ি

‘সুযোগটা আসে ২০১৫ সালে ডেনমার্কভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠানে মেন্টর হওয়ার মাধ্যমে। সেখানে থাকার সময় ৩ হাজারের বেশি ছাত্রছাত্রীকে ওয়েব এবং গ্রাফিক ডিজাইনের কাজ শিখাই।’ বললেন রিফাত। ২০১৭ সালে রিফাত নিজেও ফ্রিল্যান্সিং শুরু করেন।

প্রতিদিন রাত জেগে বিভিন্ন দেশের কাজদাতাদের সঙ্গে কাজ করতে হতো রিফাতকে। ৫ ডলার পারিশ্রমিক দিয়ে শুরু, এরপর সর্বোচ্চ ৩৫০০ ডলার পর্যন্ত পারিশ্রমিকে কাজ করেন রিফাত। বর্তমানে ফাইভারে টপরেটেড ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করছেন রিফাত।

শিখবে সবাই প্রতিষ্ঠানের যাত্রা

ফ্রিল্যান্সিং করে যে কেউ স্বাবলম্বী হতে পারেন, সেই লক্ষ্যে ঠিক তখন থেকেই বাংলাদেশের তরুণ-তরুণীদের জন্য ভালো কিছু করার স্বপ্ন দেখেন রিফাত। তাঁরা ১১ জন। একই দিনে ১১ জন মিলে চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে দক্ষ ফ্রিল্যান্সার তৈরির লক্ষ্যে ২০১৭ সালের মে মাসে যাত্রা শুরু করে তাঁদের প্রথম স্টার্টআপ ‘শিখবে সবাই’। রিফাত বলেন, ‘শিখবে সবাইয়ের মূল লক্ষ্য হচ্ছে, দেশে দক্ষ ফ্রিল্যান্সার তৈরি করা। দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে যে কেউ আমাদের কোর্স অনলাইনে এবং সরাসরি ক্লাসের মাধ্যমে করতে পারবেন।’

প্রথম দিকে রিফাতদের কোনো অফিস ছিল না। ১১ জন যে বেতন পেয়েছিলেন চাকরির শেষ মাসে, তার পুরোটাই বিনিয়োগ করেন নতুন উদ্যোগে সবাই। রিফাত বলেন, ‘প্রথম মাসেই অনলাইন ক্লাসে ভর্তি হন ১৬৯ জন শিক্ষার্থী। সেই সঙ্গে পেয়ে যাই এলআইসিটি ও এলইডিপির মতো সরকারি প্রকল্প। অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে বনানী ৭ নম্বর সড়কে ৪ হাজার বর্গফুটের অফিস নিই আমরা। মিরপুরে আরও একটি স্মার্ট ক্যাম্পাস রয়েছে।
শিখবে সবাইয়ের বয়স ২ বছর ৩ মাস। আর এরই মধ্যে ৪ হাজারের অধিক ছাত্রছাত্রী রয়েছে রিফাতের প্রতিষ্ঠানে। যাঁদের মধ্যে অনেকেই বিভিন্ন বিষয়ে কোর্স সম্পন্ন করে আজকে নিজ নিজ স্থানে প্রতিষ্ঠিত। শুরু করেছিলেন ১১ জন নিয়ে আর এখন শিখবে সবাই পরিবারে ৩০ জনের মতো সদস্য।

এরই মধ্যে বিগত মে মাসে রিফাত শুরু করেছেন শিক্ষকদের জন্য প্রথম ‘অনলাইন টিচিং মার্কেটপ্লেস’, যার নাম হচ্ছে ‘ইন্সট্রাক্টরি’। এটি এমন একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে শিক্ষকেরা খুব সহজেই তাঁদের কোর্স আদান-প্রদান করে আয় করতে পারবেন। শিক্ষার্থীরা তাঁদের পছন্দের কোর্সটি যেকোনো সময় যেকোনো জায়গা থেকে শিখতে পারবেন।

রিফাতের আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। শিখবে সবাই ও ইন্সট্রাক্টরির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। রিফাত মনে করেন, দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে চাইলে প্রতিনিয়ত শিখতে হবে, নিজের মেধাকে আরেকজনের কাছে ছড়িয়ে দিতে হবে।

33
অক্সফোর্ড ইন্টারনেট ইনস্টিটিউটের (ওআইআই) তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশ ইতিমধ্যে অনলাইন শ্রমের দ্বিতীয় বৃহত্তম সরবরাহকারী হয়ে উঠেছে। দেশের প্রায় সাড়ে ছয় লাখ নিবন্ধিত ফ্রিল্যান্সারের মধ্যে প্রায় পাঁচ লাখ সক্রিয় ফ্রিল্যান্সার নিয়মিত কাজ করছেন। জ্ঞানভিত্তিক আউটসোর্সিংয়ের কাজে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে সরকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগ ২০১৭ সাল থেকে ‘লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং প্রজেক্ট’ (এলইডিপি) নামে দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প বাস্তবায়ন করে আসছে। এই প্রকল্প থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে অনেক তরুণ নিজ উদ্যোগে ফ্রিল্যান্সার বা মুক্ত পেশাজীবী হিসেবে কাজ করছেন। এ ক্ষেত্রে সফল পাঁচজন তরুণের গল্প থাকছে।

অনেকে অনেক কথা বলেছে কিন্তু হাল ছাড়িনি
হাফসা আনোয়ার, ঢাকা
হাফসা আনোয়ার থাকেন উত্তরায়। ২০১৭ সালে ফেসবুক থেকে জেনে আবেদন করেছিলেন। পরীক্ষায় পাস করার পর সাক্ষাৎকার নিয়ে তাঁকে লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং প্রকল্পের প্রশিক্ষণের জন্য নির্বাচন করা হয় ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে। তখন ইডেন মহিলা কলেজে গণিত বিভাগে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ছাত্রী।
হাফসার প্রশিক্ষণটি ছিল ওয়েব ডেভেলপমেন্টের ওপর। ৫০টি ক্লাস করেছিলেন তিনি। প্রশিক্ষণের পর মেন্টরিং সেন্টারে আরও ১০টা ক্লাস হয়েছে হাফসা আনোয়ারের। এমসিসি লিমিটেডের দেওয়া প্রশিক্ষণ থেকে ওয়েবসাইট ডিজাইন, ডেভেলপমেন্ট বিষয়ে শেখেন।
অনলাইন আউটসোর্সিংয়ের কাজের জায়গা ফাইভারে অ্যাকাউন্ট খোলেন প্রশিক্ষণের পর। এর এক মাস পর যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২৫ ডলারের একটা কাজ পান তিনি। এখন প্রতি মাসেই ৬–৭টা কাজ করেন। কিছু নির্দিষ্ট কাজদাতা আছে অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রে। এ পর্যন্ত ১২ হাজার ডলার আয় করেছেন তিনি। হাফসা এখন কাজ করছেন ফাইভার ও আপওয়ার্কে।
হাফসা বলেন, ‘আমি পেওনিওরের মাধ্যমে স্থানীয় ব্যাংক থেকে টাকা তুলি। শুরুতে ইংরেজি নিয়ে অসুবিধা হয়েছিল। কিন্তু চর্চা করেছি, আমার ক্লাসের এক বন্ধু আমাকে অনেক সাহায্য করেছে। জীবনে কিছু পরিবর্তন এসেছে। পরিবর্তনটা আর্থিক থেকে মানসিক বেশি। এখন সবকিছু সহজ মনে হয়। আমার পরিবার, আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুরা বলেছিল এইগুলো হবে না, সময় নষ্ট—এখন তাঁদের ধারণা বদলেছে।’

পাঁচজনের একটি দল করে কাজ করছি
মিরাজুল ইসলাম, টাঙ্গাইল
টাঙ্গাইলের মিরাজুল ইসলাম যখন মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র, তখন লার্নিং অ্যান্ড আর্নিংয়ের প্রশিক্ষণের সুযোগ পান। এখন শেষ সেমিস্টারে পড়ছেন। আগে থেকে কম্পিউটারের প্রতি ভালোবাসা ছিল, চেষ্টাও করেছিলেন কিছু করার, কিন্তু পারেননি।
২০১৭ সালে প্রশিক্ষণ নেন। ওয়েব ডিজাইন, ডেভেলপমেন্ট শেখেন। প্রশিক্ষণ দেয় ডিজিকন টেকনোলজিস লিমিটেড। ফ্রিল্যান্সার ডটকমে ২৫–৩০টা কাজ বিড করার পর প্রথম কাজ পান মিরাজুল, সেটা ৩০ ডলারের। এরপর আমেরিকার একজন ক্লায়েন্ট ওই দেশের ওয়েবসাইটের একটা কাজ দেয়। শুরু হয় মিরাজুলের পথচলা। প্রশিক্ষণের পর থেকে এখন পর্যন্ত ১০ হাজার ডলার আয় করেছেন তিনি।
মিরাজুল বলেন, ‘আমার সরাসরি কাজদাতা বেশি। তবে এর বাইরে ফ্রিল্যান্সার ডটকমে কাজ করি। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ওয়েবসাইটের কাজ আমরা বাংলাদেশে বসে করে দিই। বর্তমানে আমি ৫ জনের একটা দল তৈরি করেছি। ছোট একটা অফিসের মতো নিয়েছি, ১০ হাজার টাকা ভাড়া দিচ্ছি প্রতি মাসে। এই ৫ জনের মধ্যে ২
জনকে আমরা প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করে নিচ্ছি।’
মিরাজুল নিজেই নিজের খরচ চালান। বাসার খরচও দেন। বললেন, ‘ভবিষ্যতে বড় একটা অফিস নেব, যেন অন্তত ২০০ মানুষের কর্মসংস্থান হয়।’

৩০০ জনকে শিখিয়েছি
সুবীর নকরেক, ময়মনসিংহ
ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ছেলে সুবীর নকরেক। ময়মনসিংহে একটি ফ্রিল্যান্সার ট্রেনিং ইনস্টিটিউট করেছেন। নাম নকরেক আইটি ইনস্টিটিউট। সুবীরের বড় ভাই ও এক কাকা এলইডিপির প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। তাঁদের কাছে শুনেই ঢাকাতে প্রশিক্ষণ নিতে আসেন। প্রথম থেকেই তিনি ঠিক করেছিলেন, ২০০ ঘণ্টার গ্রাফিক ডিজাইন কোর্স শেষ করবেন। ঢাকায় আসার পরপরই একটা ভালো চাকরির সুযোগ পেয়েছিলেন, কিন্তু সেটা করেননি সুবীর। তখন তিনি কিছুই করতেন না।
প্রশিক্ষণটা হয়েছিল মিরপুর বাঙলা স্কুল অ্যান্ড কলেজে, ২০১৭ সালে। এর আগেই ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে অনলাইনে জেনেছিলেন। সুবীর বলেন, ‘আমি করপোরেট ব্র্যান্ডিং, ডিজাইন, লোগো, ফ্লায়ার তৈরি, ব্রশিওর, আইডি কার্ড তৈরি ইত্যাদি শিখেছি।’
সুবীরের প্রথম কাজ ছিল একটা ফ্ল্যায়ারের নকশা। এর জন্য পেয়েছিলেন ৭৫ ডলার। তখন থেকে এখন পর্যন্ত দেড় বছরে তাঁর আয় প্রায় ১১ হাজার ডলার। এখন কাজ করেন আপওয়ার্কে।
সুবীর বলেন, ‘আমার প্রতিষ্ঠান নকরেক আইটি থেকে আমি প্রশিক্ষণ দিই। এখন পর্যন্ত ৩০০ জনকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। এর মধ্যে আমাদের গারো সম্প্রদায়ের প্রায় ১৫০ জন তরুণ রয়েছেন। আমি স্কাইপের মাধ্যমে প্রবাসীদেরকেও প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি।’
ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ শুরু করে সুবীর এখন একজন উদ্যোক্তা। এলইডিপির প্রশিক্ষণ মডিউল ধরেই ময়মনসিংহে খুলেছেন তাঁর প্রতিষ্ঠান।

মো. আশিক মিয়া
আমার পরিবার আমাকে নিয়ে গর্ব করে
নেত্রকোনায় নিজেদের বাড়িতেই থাকেন আশিক মিয়া। নিজের কলেজে একটি ব্যানারে দেখে জানতে পারেন প্রশিক্ষণের ব্যাপারে। সেখানে দেখে আগ্রহী হয়েছেন আশিক। নেত্রকোনার চন্দ্রনাথ কলেজে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ডিজিটাল বিপণন বিষয়ে।
আশিক বলেন, ‘শুরুর দিকে দুই মাস ধরে কাজদাতাদের রিকোয়েস্ট পাঠাতে হয়েছে। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের একজন প্রথম সাড়া দেন। তাঁর একটা এসইওয়ের (সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) কাজ ছিল। সেখান থেকেই শুরু।’
২০১৭ সালের শেষ থেকে কাজ শুরু করেন আশিক। এখন পর্যন্ত মোট আয় করেছেন ১২ হাজার ডলার। এ জন্য আশিককে ২০০–এর বেশি কাজ করতে হয়েছে।
বর্তমানে তিনি ফাইবারে কাজ করেন। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, নেদারল্যান্ডস, আইসল্যান্ড, সৌদি আরব ইত্যাদি দেশ থেকে কাজ পান। আশিক বলেন, ‘শুরুর দিকে কাজের জন্য ল্যাপটপ ছিল না। পরে নিজে উপার্জন করে তিনটা ল্যাপটপ কিনেছি। ছোট ভাইবোনদের কাজ শেখাচ্ছি। পরিবারের সবাই এখন আমাকে নিয়ে গর্ব করে।’
মো. আশিক মিয়া ভবিষ্যতে নিজের কাজের পরিসর আরও বাড়াতে চান।

স্টার্টআপ খুলতে চাই
সোমা সরকার, টাঙ্গাইল
সোমা সরকার, থাকেন টাঙ্গাইলের সাবালিয়ায়। বন্ধুর কাছ থেকে এই প্রশিক্ষণের ব্যাপারে জেনেছেন। টাঙ্গাইলের সরকারি সা’দত কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর পরীক্ষা দিয়েছিলেন, তখন টাঙ্গাইলে এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। গ্রাফিক ডিজাইন কোর্সে প্রশিক্ষণ নেন সোমা।
২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে আপওয়ার্কে অ্যাকাউন্ট খোলেন সোমা। তিনি বলেন, ‘যাঁরা প্রশিক্ষণ দিয়েছেন, তাঁরা আমাদের শিখিয়ে দিয়েছেন কীভাবে কাজ খুঁজতে হবে, আবেদন করতে হবে। এসব জানার পর আমি বিড করা শুরু করি। প্রায় এক মাস পরে আমি প্রথম কাজ পাই। সেটা ছিল একটা লোগো ডিজাইনের কাজ।’ এখন পর্যন্ত তাঁর আয় ১০ হাজার ডলারের বেশি। প্রায় ৩২৩টি অর্ডার সম্পন্ন করেছেন। প্রতি মাসে গড়ে ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকার মতো আয় হয় সোমার।
সোমা বললেন, ‘আমার যখন পরীক্ষা শেষ হলো, আমাকে সবাই বলছিল চাকরি নিয়ে ভাবার কথা। আমি কী করব ভাবছি। আমি কী চাকরি পাব। এ রকম সময়ে এই প্রশিক্ষণে যুক্ত হই, তারপর কাজ পাওয়া, আর এখন তো পুরো দমে কাজ করে যাচ্ছি। নিজের পায়ে দাঁড়াতে পেরেছি, এটা সবচেয়ে আনন্দের। ভবিষ্যতে ইচ্ছা আছে একটা স্টার্টআপ উদ্যোগ চালু
করার।’

34
জীবনের লক্ষ্য অর্জনে অনেক বড় স্বপ্ন দেখতে হবে—এমন পরামর্শ প্রায়ই শুনবেন। তবে এই বড় স্বপ্ন দেখার শুরুটা কিন্তু হতে পারে ছোটখাটো কোনো কাজ বা চাকরির মাধ্যমে। এখনকার যুগের অনেক কোটিপতির শুরুটাও কিন্তু এভাবেই হয়েছিল। অনেকেই শুরু করেছিলেন সামান্য বেতনের কাজ। কেউ কেউ বেতন ছাড়াই কাজ করে তা শিখেছেন ভালোমতো। কয়েকজন প্রযুক্তি উদ্যোক্তার প্রথম চাকরির তথ্যটি জেনে নিন:
জেফ বেজোস
বর্তমানে বিশ্বের শীর্ষ ধনী আমাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস প্রথমে ম্যাকডোনাল্ডে বার্গার তৈরির রান্নাঘরে কাজ করেছিলেন। তাঁর ওই সময় ঘণ্টাপ্রতি বেতন ছিল মাত্র ২.৬৯ মার্কিন ডলার। তরুণ বয়সে ম্যাকডোনাল্ডে কাজের ওই অভিজ্ঞতা তাঁকে সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে।
মাইকেল ডেল
বিশ্বের অন্যতম কম্পিউটার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ডেলের প্রতিষ্ঠাতা মাইকেল ডেল। ১২ বছর বয়সেই তিনি কাজ শুরু করেছিলেন এক চীনা রেস্তোরাঁয়। তিনি সেখানে থালাবাসন ধোয়ার কাজ করতেন।রিচার্ড ব্র্যানসন
ভার্জিন গ্রুপ অব কোম্পানিজের মালিক রিচার্ড ব্র্যানসন মাত্র ১৬ বছর বয়সেই একটি ম্যাগাজিন প্রকাশ করেন। ওই ম্যাগাজিনের নাম ছিল ‘স্টুডেন্ট ম্যাগাজিন’। মাত্র ১০০ পাউন্ড মূলধন নিয়ে ১৯৬৬ সালে তিনি উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ শুরু করে দেন।
ইভান স্পিগেল
স্ন্যাপচ্যাটের উদ্যোক্তা হিসেবে ইভান স্পিগেলকে চেনেন সবাই। তাঁকে বিনা বেতনেই বেভারেজ ব্র্যান্ড রেড বুলে কাজ করতে হয়। তিনি বিনা বেতনের ইন্টার্ন হিসেবে রেড বুলে কাজ শুরু করেছিলেন।
ট্রাভিস কালানিক
উবারের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাভিস কালানিকের শুরুটা ছিল আরও কষ্টের। উবার প্রতিষ্ঠার বহু আগে তিনি সেলসম্যান বা বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন। মানুষের দরজায় দরজায় গিয়ে পণ্য বিক্রি করতে হতো তাঁকে।
এলন মাস্ক
টেসলার প্রতিষ্ঠাতা এলন মাস্কের শুরুটাও কিন্তু ছোটোখাটো কাজ দিয়েই। তিনি ১২ বছর বয়স থেকেই ভিডিও গেমের কোড বিক্রি শুরু করেন। ওই ভিডিও গেমের নাম ছিল ব্লাসটার্ড।
জ্যাক ডরসি
টুইটারের প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক ডরসি হ্যাকার হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন। এক সাক্ষাৎকারে তিনি স্বীকার করেন, একটি ডিসপ্যাচ কোম্পানির সার্ভার হ্যাক করে তিনি পেশাদার সফটওয়্যার প্রকৌশলী হিসেবে কাজ শুরু করেন।
ল্যারি অ্যালিসন
ওরাকল সফটওয়্যারের প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি অ্যালিসন কম্পিউটার প্রোগ্রামার হিসেবে তাঁর প্রথম কাজ শুরু করেন। তিনি আমঢাল করপোরেশন ও অ্যামেক্স করপোরেশনের ডেটাবেইস তৈরির কাজ করেন।
কেভিন সিসট্রোম
ইনস্টাগ্রাম তৈরির আগে এবং প্রযুক্তি দুনিয়ায় কাজ শুরুর আগে তিনি একটি রেকর্ড স্টোরে ক্লার্কের পোস্টে চাকরি করেছেন। পরে তিনি নিজে প্রযুক্তি উদ্যোক্তা হয়ে ইনস্টাগ্রামের মতো জনপ্রিয় সেবা চালু করেন।
এরিক স্মিড
গুগলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে নিজের প্রতিষ্ঠিত করার আগে জিলগ নামের একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছিলেন এরিক স্মিড। নিনটেনডো ও সেগার কনসোলের জন্য চিপ তৈরি করতো জিলগ। সেখানেই চিপনির্মাতা হিসেবে চাকরি শুরু করেন স্মিড।


35

ফেসবুক মন পড়ার যন্ত্র তৈরি করতে পারে।
ফেসবুক মন পড়ার যন্ত্র তৈরি করতে পারে।
মনে মনে যা ভাবছেন, তা পড়ে ফেলছে যন্ত্র। এমন যন্ত্রের কথা হয়তো গল্পে পড়েছেন বা বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনির চলচ্চিত্রে দেখেছেন। কিন্তু বাস্তবেও এমন ধরনের যন্ত্র তৈরির খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছেন গবেষকেরা।

ফেসবুকের গবেষকেরা ভবিষ্যতে এমন যন্ত্র তৈরির কথা ভাবছেন, যা মস্তিষ্ক ব্যবহার করে কোনো শব্দ টাইপ করা এবং তা বার্তা আকারে পাঠাতে পারবে। গতকাল মঙ্গলবার নতুন এক গবেষণার আশানুরূপ ফলাফল পাওয়ার কথা জানিয়েছেন ফেসবুকের কর্মকর্তারা।
এ গবেষণা সফল হলে ফেসবুকের পক্ষ থেকে অগমেন্টেড রিয়্যালিটি (এআর) গ্লাসসহ নানা পরিধানযোগ্য প্রযুক্তিপণ্য তৈরি করা সম্ভব হবে। এতে স্মার্টফোন ব্যবহার না করেও পরস্পরের সঙ্গে বাস্তবে যোগাযোগ করা যাবে।

ফেসবুকের এক ব্লগ পোস্টে বলা হয়, পরস্পরের সঙ্গে সহজে যোগাযোগে ক্ষেত্রে এআরের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। এতে মানুষকে আর ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে না। এ ছাড়া ল্যাপটপের দিকেও ঝুঁকে থাকতে হবে না। মানুষের চোখে চোখ রেখে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আদান–প্রদান করতে পারবে।

ফেসবুকের পক্ষ থেকে ২০১৭ সালে তাদের গবেষণা ল্যাব বিল্ডিং ৮–এর ঘোষণা দেওয়া হয়। সেখানে কম্পিউটার ব্রেইন ইন্টারফেস নিয়ে কাজ চলছে। ওই সময়ে ফেসবুকের কম্পিউটার ব্রেইন ইন্টারফেস প্রকল্পপ্রধান রেজিনা ডুগান বলেছিলেন, ফেসবুক একধরনের ‘সাইলেন্ট স্পিস সিস্টেম’ তৈরি করতে যাচ্ছে, যা মস্তিষ্ক থেকে সরাসরি মিনিটে ১০০ শব্দ টাইপ করতে পারবে। এটি একজন ফোনে যত শব্দ টাইপ করতে পারেন, তার চেয়ে দ্রুত কাজ করতে সক্ষম হবে।

স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা পৃথক গবেষণায় প্যারালাইজড রোগীদের ক্ষেত্রে এ ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহারে সফল হয়েছেন। তবে তাঁদের গবেষণার ক্ষেত্রে রোগীর মস্তিষ্কে আলাদা করে ইলেকট্রোড বসানো লাগে। তবে ফেসবুকের গবেষকেরা বলছেন, তাঁদের গবেষণায় মাথায় যন্ত্র পরলেই যোগাযোগ করা যাবে।

ফেসবুকের পক্ষ থেকে এ ধরনের কাল্পনিক প্রকল্পগুলো নিয়ে সব সময় মুখ বন্ধ রাখা হয়। এরই মধ্যে ফেসবুক তাদের তথ্য সুরক্ষা নিয়ে নানা কেলেঙ্কারিতে জড়িয়েছে।

ফেসবুক তাদের গবেষণার ক্ষেত্রে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেদের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করবে।

তাদের গবেষণাসংক্রান্ত নিবন্ধ নেচার কমিউনিকেশনস সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে।

ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বলছে, তাদের গবেষণা আরও সামনে এগিয়ে নিতে হবে। এ ধরনের যন্ত্রের উন্নয়ন হতে এখনো অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে।

এলন মাস্কের কোম্পানি নিউরালিংক সম্প্রতি মস্তিষ্কের সঙ্গে কম্পিউটার যুক্ত করার একটি নতুন উদ্যোগের কথা জানিয়েছে।

36
হেপাটাইটিস নিয়ে জনমনে রয়েছে নানা রকম আতঙ্ক আর বিভ্রান্তি। অনেকে নিজের অজান্তেই রক্তে এ রোগের জীবাণু বহন করে চলেছেন। আবার অনেকে এ সম্পর্কে হয়তো জানতে পারেন লিভার সিরোসিস হওয়ার পর।

হেপাটাইটিস ভাইরাস পাঁচ রকমের। এর মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি সংক্রমণ ও জটিলতা তৈরি করে কেবল হেপাটাইটিস বি এবং সি ভাইরাস। বিশ্বে হেপাটাইটিস বি অথবা সি আক্রান্ত প্রায় ৯০ শতাংশ লোকই জানে না যে তারা এ ভাইরাস বহন করে চলেছে। ফলে না জেনেই তারা ভাইরাসটি ছড়াতে থাকে। বাংলাদেশেও প্রায় এক কোটি মানুষ বি অথবা সি ভাইরাসে আক্রান্ত।হেপাটাইটিসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ

রোগের বিস্তার না ঘটা পর্যন্ত বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কোনো নির্দিষ্ট লক্ষণ স্পষ্ট হয় না। হেপাটাইটিসে আক্রান্ত হলে শরীর দুর্বলতা, বমিবমিভাব, পেটব্যথা, শরীর হলুদ বর্ণ ধারণ করা এবং হলুদ প্রস্রাবের মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। তবে রোগের বিস্তার ঘটলে পেটে পানি আসা, রক্ত পায়খানা ও রক্তবমি হতে পারে। এমনকি রোগী চেতনাও হারাতে পারে।

যেভাবে ছড়ায়

হেপাটাইটিস এ এবং ই ভাইরাস খাদ্য ও পানির মাধ্যমে ছড়ায়। এগুলোর সংক্রমণে যে জন্ডিস হয়, তা সাধারণত সম্পূর্ণভাবে সেরে যায়। কিন্তু হেপাটাইটিস বি এবং সি ভাইরাস অনিরাপদ যৌনসংসর্গ, অনিরাপদ রক্ত গ্রহণ, ইনজেকশনের মাধ্যমে নেশাজাতীয় দ্রব্য গ্রহণ, একাধিক ব্যক্তির একই ব্লেড-কাঁচি ব্যবহার, অনিরাপদ দাঁতের চিকিৎসা বা বিভিন্ন অনিরাপদ অস্ত্রোপচার এবং সন্তান জন্মদানের সময় আক্রান্ত মা থেকে শিশুতে সংক্রমণ হতে পারে।

চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রক্তের নানা ধরনের অ্যান্টিজেন ও অ্যান্টিবডি পরীক্ষার মাধ্যমে এ রোগ শনাক্ত করা যায়।

চিকিৎসা

এ এবং ই ভাইরাস সংক্রমণজনিত হেপাটাইটিস বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আপনা–আপনি ভালো হয়ে যায়। অল্প কিছু ক্ষেত্রে শুধু বিশেষ চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে। বি ভাইরাস নির্মূল করা না গেলেও চিকিৎসার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। সি ভাইরাসও চিকিৎসার মাধ্যমে নির্মূল করা যায়। অনেকের ধারণা, হেপাটাইটিস বি বা সি সংক্রমণ হলে আর কোনো আশা নেই, লিভার বা যকৃত নষ্ট হয়ে যাবে। কিন্তু বর্তমানে এ দুটো ভাইরাস নির্মূলের জন্য আধুনিক অ্যান্টি–ভাইরাল থেরাপি রয়েছে, যা দীর্ঘ মেয়াদে চিকিৎসকের পরামর্শে, প্রয়োজনে জীবনব্যাপী গ্রহণ করে যেতে হবে।

এ ছাড়া হেপাটাইটিস এ ও বি–এর প্রতিষেধক টিকা আছে, যার মাধ্যমে এসব ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধ সম্ভব।

সঠিক সময়ে প্রতিরোধ এবং চিকিৎসা না করালে হেপাটাইটিস থেকে যকৃত অকার্যকর হয়ে পড়া বা লিভার ফেইলিউর, লিভার সিরোসিস বা ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে। কাজেই রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে জেনে নিন আপনি হেপাটাইটিসে আক্রান্ত কি না।

সহকারী অধ্যাপক (মেডিসিন) গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ, ঢাকা

প্রশ্ন: বয়স ১৬। হেলে কাজ করতে গেলে বুকের বাঁ পাশে ব্যথা অনুভব হয়। করণীয় কী?

উত্তর: এটি সম্ভবত পেশি বা মাসলের ব্যথা। এ নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই। তবে ব্যথা অতিরিক্ত মনে হলে মেডিসিন বিশেষজ্ঞর পরামর্শ নেওয়া দরকার।

37
Body Fitness / ওজন কমাতে কিটো ডায়েট
« on: July 31, 2019, 07:19:08 PM »
ওজন কমাতে আজকাল অনেকেই কিটোজেনিক ডায়েট করে থাকেন। এটি খাদ্য গ্রহণের বিশেষ একধরনের পরিকল্পনা, যেখানে শর্করা কম কিন্তু চর্বি বেশি থাকে। এই খাদ্যতালিকায় কার্বোহাইড্রেট বা শর্করার পরিমাণ একেবারে কমিয়ে পরিমাণমতো প্রোটিন ও চর্বি যোগ করা হয়। এতে খিদে কমে যায়। ফলে শরীরের সঞ্চিত চর্বি ক্ষয় হয়ে অতিরিক্ত ওজন কমে। দেহে শর্করার পরিমাণ কমায় বলে এই খাদ্য পরিকল্পনা ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য বিশেষ সহায়ক হতে পারে।

কিটোজেনিক ডায়েটের কয়েকটি ধরন • স্ট্যান্ডার্ড ডায়েট: খাদ্যে প্রায় ৭৫ শতাংশ চর্বি, ২০ শতাংশ প্রোটিন ও মাত্র ৫ শতাংশ কার্বোহাইড্রেট থাকে।

• সাইক্লিক্যাল ডায়েট: এতে সপ্তাহে খাবারে পাঁচ দিন কম শর্করা এবং বাকি দুদিন বেশি শর্করা যোগ করা হয়।

• টার্গেটেড ডায়েট: স্ট্যান্ডার্ড কিটোজেনিক ডায়েটের মতোই। তবে কায়িক পরিশ্রমের ধরন ও পরিমাণ অনুযায়ী খাদ্যতালিকায় শর্করা যোগ করা হয়।

• হাইপ্রোটিন ডায়েট: এ পদ্ধতিতে খাদ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ চর্বি, ৩৫ শতাংশ প্রোটিন ও ৫ শতাংশ শর্করা থাকে।

দেহে শর্করার পরিমাণ কমায় বলে এই খাদ্য পরিকল্পনা ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য বিশেষ সহায়ক হতে পারে

যেসব খাবার পরিহার করতে হয়

কিটোজেনিক ডায়েটে চিনি এবং চিনি দিয়ে তৈরি যেকোনো খাবার খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। উচ্চ শর্করাজাতীয় খাবার, যেমন ভাত, পাস্তা, নুডলস এবং শর্করাজাতীয় সবজি, যেমন আলু, মিষ্টিকুমড়া, গাজরও খাদ্যতালিকায় থাকা চলবে না।

যে খাবারগুলো খেতে হবে

প্রাণিজ আমিষ ও এই আমিষ থেকে তৈরি যেকোনো খাবার, ডিম, মাখন, ক্রিম, পনির, দই, মাছ, শর্করা কম এমন সবজি, যেমন লাউ, ফুলকপি, ব্রকলি, লাল-সবুজ শাক ইত্যাদি। বাদাম ও বিভিন্ন ফলের বীজ। তেল, যেমন অলিভ অয়েল, সূর্যমুখী তেল। ফলের মধ্যে জলপাই, আভোকাডো, স্ট্রবেরি, লেবু খেতে হবে।

সতর্কতা: কিটোজেনিক ডায়েট বেশি দিন টানা করা ঠিক নয়। সুষম খাদ্যাভ্যাসই সবচেয়ে সেরা উপায়। অন্য যেকোনো বিশেষ ধরনের খাদ্য পরিকল্পনা অনুসরণের আগে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।

38
ডেঙ্গুর ভাইরাসবাহী মশা কামড়ানোর চার থেকে সাত দিন পর ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গ স্পষ্টভাবে দেখা দেয়। এ রোগের কিছু সাধারণ উপসর্গ হলো জ্বরের তাপমাত্রা সাধারণ ভাইরাস জ্বরের তুলনায় অনেক বেশি, ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত উঠতে পারে। বিরামহীন মাথাব্যথা, হাড় ও হাড়ের জোড়–পেশিতে তীব্র ব্যথা, বমি ভাব, বমি হওয়া, গ্রন্থি ফুলে যাওয়া, সারা শরীরের ফুসকুড়ি, চোখের পেছনে ব্যথা ইত্যাদি। ডেঙ্গু যদি প্রথমবার আক্রান্ত করে এবং এটি যদি তরুণ বয়সে অথবা শিশুদের হয়, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কোনো উপসর্গ থাকে না। এমনকি তেমন জ্বরও থাকে না। টিপিক্যাল ডেঙ্গু/ ক্ল্যাসিক্যাল ডেঙ্গুতে জ্বরের সঙ্গে সর্দি-কাশি থাকতে পারে।

জ্বর ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইটের নিচে থাকলে ৬ ঘণ্টা পরপর প্যারাসিটামল খান, ১০২–এর ওপরে গেলে প্যারাসিটামল সাপোজিটরি দেন। বেশি বেশি ডাবের পানি, খাওয়ার স্যালাইন ও ফলের জুস খান। খাওয়ার রুচি অনেক কমে যাবে, তবু জোর করে হলেও খেতে থাকেন। প্যারাসিটামল ছাড়া অন্য কোনো ব্যথার ওষুধ খাবেন না। কারণ, ব্যথানাশক খেলে রক্তক্ষরণ হতে পারে, এমনকি মৃত্যু হতে পারে। প্যারাসিটামল জ্বর এবং শরীর ব্যথায় কার্যকর ওষুধ।

সাধারণত এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে ডেঙ্গু সেরে যায়। তবে কিছু রোগীর ক্ষেত্রে পরিস্থিতি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়তে পারে। এসব ক্ষেত্রে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এই জটিল পরিস্থিতিগুলো হলো ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার ও ডেঙ্গু শক সিনড্রোম। হেমোরেজিক ফিভারের মধ্যে একধরনের রোগী রক্তপাত নিয়ে আসতে পারে। আরেক ধরনের রোগী সরাসরি শকে চলে যেতে পারে। হেমোরেজিক ফিভারের মধ্যে যেগুলো শকে চলে যাচ্ছে পাশাপাশি এক্সটেনডেট ডেঙ্গু শক সিনড্রম, সেগুলো হলো অস্থিতিশীল বা ঝুঁকিপূর্ণ। তারা মারাও যেতে পারে।

ডেঙ্গু শক সিনড্রোমের উপসর্গ হলো শ্বাস-প্রশ্বাসে অসুবিধা হওয়া কিংবা শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি বেড়ে যাওয়া। ত্বক শীতল হয়ে যাওয়া। ত্বকের ভেতরের অংশে রক্তক্ষরণের কারণে ত্বকের ওপর লাল ছোপ সৃষ্টি হওয়া। বমি, মল কিংবা প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত যাওয়া, প্রচণ্ড পেটব্যথা ও অনবরত বমি হওয়া, নাক ও দাঁতের মাড়ি থেকে রক্তক্ষরণ ও অবসাদ। কখনো মস্তিষ্কের ভেতর রক্তক্ষরণ হতে পারে। এ রকম অবনতি দেখলে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।

আগামীকাল পড়ুন: কিটো ডায়েট

প্রশ্ন-উত্তর

প্রশ্ন: আমার বয়স ১৮। আমার অনিয়মিত মাসিক হয়। এ ছাড়া আমার গায়ে ছেলেদের মতো লোম। করণীয় কী?

উত্তর: সম্ভবত আপনার পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম আছে। ওজন কমাতে হবে ও হরমোন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা নিতে হবে।

39
শুরু হয়ে যাচ্ছে হজযাত্রার প্রস্তুতি। ডায়াবেটিসের রোগীরা অনেকেই নানা জটিলতায় ভোগেন। অনেকে ওষুধ ও ইনসুলিন গ্রহণ করেন। তাই হজের সময় তাঁদের একটু বেশি সচেতন থাকতে হয়।

ইনসুলিন, না বড়িহজের আগে অনেক রোগী অনুরোধ করেন, ডাক্তার সাহেব যদি এ কদিনের জন্য ইনসুলিন বন্ধ করে ডায়াবেটিসের বড়ি দিতেন, ভালো হতো। কেউ কেউ ইনসুলিন নেওয়া বন্ধ করে দেনও, যা একদমই ঠিক নয়। কারও যদি ইনসুলিনের প্রয়োজন থাকে, তার মানে তাঁর শরীরে ইনসুলিনের ঘাটতি আছে। ইনসুলিন বন্ধ করে দিলে শরীরে গুরুতর সমস্যা দেখা দিতে পারে। কেননা আমাদের বিপাকক্রিয়ার অন্যতম নিয়ন্ত্রক হলো এই ইনসুলিন। ফলে রোগী গুরুতর অসুস্থ হয়ে জ্ঞান হারাতে পারেন, তখন হজ পালন করাই মুশকিল হবে। ইনসুলিন রেফ্রিজারেটরে না রাখলে নষ্ট হয়ে যায়, কথাটা ঠিক নয়। এক মাস ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রেখে ব্যবহার করা যায়। রোদ না লাগলেই হবে। ইনসুলিন নিয়ে ভ্রমণেও কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়।

হাইপোগ্লাইসেমিয়া যেন না হয়

যাঁরা সালফোনিল ইউরিয়া ওষুধ ও ইনসুলিন ব্যবহার করেন, তাঁদের সময়মতো খাবার গ্রহণ না করলে শর্করা কমে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই সঠিক সময়ে খাওয়াটা খুব দরকার। সঙ্গে খেজুর আর পানি রাখা উচিত। এই গরমে ১২ থেকে ১৫ গ্লাস পানি খাওয়া উচিত ২৪ ঘণ্টায়। তাওয়াফের সময় অনেক হাঁটতে হয়, তাই সঙ্গে অতিরিক্ত খাবার রাখা ভালো। দরকার হলে ইনসুলিনের পরিমাণ একটু কমিয়ে নিন।

পায়ের যত্ন

কারও কারও পায়ে স্নায়ুগত জটিলতা থাকে। অনুভূতির সমস্যা থাকে। তাঁদের পায়ে ঘা হতে পারে। ডায়াবেটিসের রোগীর পায়ে ঘা, সংক্রমণ ইত্যাদি খুব খারাপ জিনিস। তাই হাঁটার সময় সাবধান। কোনো কিছুতে খোঁচা লেগে, তাপ লেগে, অন্যের পায়ের দ্বারা আঘাত লেগে সমস্যা হতে পারে। পায়ের ত্বকে যেকোনো পরিবর্তন হলে সাবধান হোন।

যদি হৃদ্‌রোগও থাকে সঙ্গে

হাঁটলে বুকে ব্যথা হয় কিংবা হৃদ্‌রোগ আছে এমন রোগীরা সাবধান থাকবেন। একবারে অতিরিক্ত পরিশ্রম করার প্রয়োজন নেই। উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ সময়মতো খেতে ভুলবেন না। হার্টের রোগীরা বুকে ব্যথা হলে সঙ্গে সঙ্গে জিহ্বার নিচে স্প্রে নিয়ে নেবেন। হাঁপানি রোগীরা ইনহেলার সঙ্গে রাখবেন।

সুগার যেন না বাড়ে

অনেকে আবার এত বেশি ফলের রস, লাবাং, জুস, খেজুর খেয়ে ফেলেন যে রক্তে শর্করা অনেক বেড়ে যায়। নিজের গ্লুকোমিটার অবশ্যই নেবেন। যখনই শরীর খারাপ লাগবে চেক করবেন। যাঁরা ইনসুলিন নিয়ে থাকেন, তাঁরা ফজরের নামাজের আগে কিছু খেয়ে মসজিদে যাবেন, এসে সকালের খাবারের আগে ইনসুলিন নেবেন।

বদহজম যেন না হয়

বেশি খাওয়াদাওয়া আর বাইরের হোটেলের খাবার খেয়ে বদহজম, ডায়রিয়া হতে পারে। তাই বুঝেশুনে খেতে হবে। বয়স্ক ডায়াবেটিসের রোগীদের একা চলাফেরা করা উচিত নয়। রোগের নাম ও প্রয়োজনীয় সব ওষুধ একটি কাগজে লিখে সব সময় সঙ্গে রাখা উচিত। কিছু ওষুধ সঙ্গে নেওয়া উচিত। যেমন ডায়রিয়া, জ্বর, পেটব্যথা, বমি, চুলকানি, ভ্রমণে মাথা ঘোরা, হাত–পা ছিঁড়ে বা কেটে গেলে ফার্স্ট এইড, কাশি, ফোড়া, পেট খারাপের ওষুধ ইত্যাদি। যেকোনো অসুস্থতায় মেডিকেল ক্যাম্পের সাহায্য নিতে দ্বিধা করবেন না।

40
হাঁপানি রোগীদের শ্বাসটান আকস্মিকভাবেই ওঠে। বিশেষ করে হঠাৎ ঠান্ডা আবহাওয়ায়, মৌসুম পরিবর্তনের সময়, ধুলাবালু লাগলে, ঘর ঝাড়মোছ করলে বা ফুলের পরাগরেণুর সংস্পর্শে রোগীর হাঁপানির টান ওঠে। ভাইরাস সংক্রমণ, সর্দি-কাশিও এই সমস্যার জন্য দায়ী। যাদের হাঁপানি আছে তাদের জেনে রাখা ভালো এমন হঠাৎ শ্বাসটান উঠলে, বিশেষ করে ছোটদের হলে, সঙ্গে সঙ্গে কী করা উচিত।

• রোগীকে সোজা হয়ে বসতে বলুন ও আশ্বস্ত করুন যে আতঙ্কের কিছু নেই।
উপশমকারী সালবিউটামল বা সালবিউটামল ও ইপরাট্রোপিয়ামযুক্ত ইনহেলার স্পেসারের সাহায্যে ধীরে ধীরে পাঁচটি চাপ নিন। স্পেসার না থাকলে কাগজের ঠোঙা ব্যবহার করতে পারেন।

• স্পেসারের মধ্যে প্রতিবার এক চাপ দিয়ে তা থেকে পাঁচবার শ্বাস নিতে হবে। এভাবে পাঁচবার চাপ দিন। বয়স্ক ও শিশুদের ক্ষেত্রে খেয়াল করুন, শ্বাস বড় করে ওষুধ ঠিকমতো টেনে নেওয়া হচ্ছে কি না, খেয়ে ফেললে কাজ হবে না।

• ৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। বিশ্রাম নিন। তারপরও শ্বাসকষ্ট না কমলে আবার পাঁচ চাপ নিন। এভাবে মোট পাঁচবার (মোট ২৫ চাপ) নেওয়া যেতে পারে।

• এরপরও শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানির টান না কমলে রোগীকে কাছাকাছি হাসপাতালে নিতে হবে বা নেবুলাইজার যন্ত্রের সাহায্য লাগবে। হাসপাতালে পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত পাঁচ চাপ করে ইনহেলার নিতে থাকবেন।

• শুরুতেই জিব, নখ বা আঙুল নীল হয়ে এলে, শ্বাসকষ্টের জন্য কথা পর্যন্ত না বলতে পারলে বা চেতনা হারিয়ে যেতে থাকলে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়াই ভালো। এ ক্ষেত্রে নেবুলাইজার ছাড়াও অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়।

প্রশ্ন-উত্তর

প্রশ্ন: আমার বয়স ২৬। আমি একজন মাদ্রাসাশিক্ষক। দিনের বেশির ভাগ সময়ই বসে থাকতে হয়। কোমর খুব ব্যথা করে আর মেরুদণ্ডের হাড়েও ব্যথা করে। ঘুম থেকে ওঠার পরই কোমর আর মেরুদণ্ডের হাড়ে বেশি টের পাই। করণীয় কী?

উত্তর: দীর্ঘ সময় বসে বা উবু হয়ে থাকার কারণে, ভুল দেহভঙ্গির কারণে এমন সমস্যা হতে পারে। কিন্তু মনে রাখা ভালো, আপনার বয়সী পুরুষদের অ্যাঙ্কাইলোজিং স্পন্ডাইলাইটিস নামের বাতরোগ হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। যদি ঘুম থেকে ওঠার পর বা বিশ্রাম নেওয়ার পর ব্যথা বেশি হয়, সন্ধি স্টিফ বা অকেজো মনে হয়, তবে মেডিসিন বা বাতরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

ডা. রাশেদুল হাসান, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ

 আগামীকাল পড়ুন: হাতের যত্ন নিন

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে রয়েছে নানা স্বাস্থ্য সমস্যা। অনেক সময় ঘরে বসে কিংবা জীবনধারা পরিবর্তনের মাধ্যমে এসব সমস্যার সমাধান সম্ভব। আপনার সমস্যা নিয়ে প্রশ্ন পাঠান। উত্তর দেবেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা। বয়স লিখতে ভুলবেন না।

41
রোগ হয়ে গেলে তার চিকিৎসা করার চেয়ে রোগ যেন না হয়, সে চেষ্টা করাই ভালো। অর্থাৎ রোগ নিরাময়ের চেয়ে রোগ প্রতিরোধই শ্রেয়। কিছু সাধারণ স্বাস্থ্যকর অভ্যাস অনেক রোগ প্রতিরোধ করতে পারে। শৈশব থেকেই এ অভ্যাসগুলোর চর্চা শেখাতে পারলে সমাজ অনেকটাই রোগমুক্ত হবে।

১. হাত ধোয়ার অভ্যাস, নখ ছোট রাখাকোনো কিছু খাওয়ার আগে অবশ্যই হাত সাবান–পানি দিয়ে ১৫–২০ সেকেন্ড সময় ধরে ভালো করে ধুয়ে নিন। এ ছাড়া টয়লেট ব্যবহারের পরে, যেকোনো ময়লা বস্তু স্পর্শ করার পর, না-ধোয়া ফলমূল, শাকসবজি ধরার পরে, হাত দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে হাঁচি দেওয়ার পরে বা হাত দিয়ে নাক পরিষ্কার করার পরে হাত ধুয়ে নিন। হাত না ধুয়ে কখনোই কোনো কিছু মুখে দেবেন না। এমনকি নাকে ও চোখেও লাগাবেন না। হাতের নখ ছোট রাখুন। হাতের নখ ছোট রাখা ও নিয়মিত হাত ধোয়ার অভ্যাস টাইফয়েড, আমাশয়, কলেরা, ডায়রিয়া, হেপাটাইটিস-এ, কৃমিরোগ, চোখ ওঠা ইত্যাদি রোগ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

২. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস

খাবার খান সময়মতো। কোনো বেলার খাবারই একেবারে বাদ দেবেন না। বিশেষ করে সকালের নাশতা। খাবার হতে হবে সুষম। খাবারে থাকতে হবে প্রয়োজনীয় পরিমাণ ক্যালরি, খাদ্য-আঁশ, ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ। শাকসবজি গ্রহণ করুন পর্যাপ্ত। তেলের পরিমাণ ও ধরন হতে হবে স্বাস্থ্যসম্মত। সুষম খাদ্যাভ্যাস ডায়াবেটিস, হৃদ্‌রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, কিছু কিছু ক্যানসার ও স্থূলতা প্রতিরোধে সহায়ক। মাছি বসা খাবার, বাসি খাবার, অনেকক্ষণ বাইরে রেখে দেওয়া খোলা খাবার বা অপরিষ্কার হাতে পরিবেশন করা খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। খাওয়ার পরে, বিশেষ করে রাতে, দাঁত ব্রাশ করার অভ্যাস করুন।

৩. নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম

হাঁটা, দৌড়ানো, জগিং করা, সাঁতার কাটা, সাইকেল চালানো ইত্যাদি শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়ামের উদাহরণ। প্রতিদিন ৩০ মিনিট করে সপ্তাহে অন্তত পাঁচ দিন যেকোনো ব্যায়াম করুন। নিয়মিত ব্যায়াম করলে তা ডায়াবেটিস, হৃদ্‌রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, স্থূলতা, কিছু কিছু ক্যানসার ইত্যাদি প্রতিরোধে সহায়ক হবে।

৪. পরিচ্ছন্নতা বোধ

নিয়মিত গোসল করুন। পরিচ্ছন্ন জামাকাপড় পরবেন। অন্যের ব্যবহার করা ব্যক্তিগত জিনিস যেমন রুমাল, তোয়ালে, চিরুনি, টুথব্রাশ, টুপি, জামাকাপড় ইত্যাদি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। যেখানে–সেখানে কফ–থুতু ফেলবেন না কখনো। রাস্তাঘাটে তো নয়ই। যেখানে–সেখানে ময়লা–আবর্জনাও ফেলবেন না। সাধারণত এসব নাগরিক অভ্যাস থেকেই বেশির ভাগ রোগ ছড়ায়।

অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগ, কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ, ময়মনসিংহ।

আগামীকাল পড়ুন: পায়ের রগে টান

প্রশ্ন-উত্তর

প্রশ্ন: আমার মেয়ের বয়স ১৫ বছর। সে অতিরিক্ত পরিমাণে লেবু ও টকজাতীয় খাবার খায়। এতে কি তার শরীরের কোনো অসুবিধা হতে পারে?

উত্তর: টকজাতীয় ফলমূলে প্রচুর ভিটামিন সি থাকে। তাই তা খাওয়া ভালো। তবে এগুলো অম্লজাতীয়, তাই অ্যাসিডিটি হতে পারে। খালি পেটে বেশি না খাওয়াই ভালো। অ্যাসিডিটির সমস্যা না হলে খেতে বাধা নেই।

42
বর্ষাকালে স্যাঁতসেঁতে ও ভেজা আবহাওয়ার কারণে ত্বক বা ত্বকের খোসপাঁচড়া, ছত্রাক সংক্রমণ, স্ক্যাবিস-জাতীয় ত্বকের নানা ধরনের অসুখ হয়ে থাকে। ভেজা শরীর ভালোভাবে না মুছলে, ভেজা কাপড় ভালোভাবে না শুকিয়ে গায়ে দিলে, ঘর স্যাঁতসেঁতে ইত্যাদি কারণে ত্বকের সমস্যা হয়।

এ সময়ে যেসব চর্মরোগ সবচেয়ে বেশি দেখা যায়, তার মধ্যে ঘামাচির পরই ছত্রাকজনিত চর্মরোগ অন্যতম। কারণ, ঘর্মাক্ত এবং ভেজা শরীরই হলো ছত্রাক জন্মানোর উর্বর ক্ষেত্র।
অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়ার মতো সুস্থ সুন্দর ত্বক পেতে কিছু নিয়ম মানতে হবে। ছবি: অধুনা
অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়ার মতো সুস্থ সুন্দর ত্বক পেতে কিছু নিয়ম মানতে হবে। ছবি: অধুনা
বর্ষাকালে স্যাঁতসেঁতে ও ভেজা আবহাওয়ার কারণে ত্বক বা ত্বকের খোসপাঁচড়া, ছত্রাক সংক্রমণ, স্ক্যাবিস-জাতীয় ত্বকের নানা ধরনের অসুখ হয়ে থাকে। ভেজা শরীর ভালোভাবে না মুছলে, ভেজা কাপড় ভালোভাবে না শুকিয়ে গায়ে দিলে, ঘর স্যাঁতসেঁতে ইত্যাদি কারণে ত্বকের সমস্যা হয়।

এ সময়ে যেসব চর্মরোগ সবচেয়ে বেশি দেখা যায়, তার মধ্যে ঘামাচির পরই ছত্রাকজনিত চর্মরোগ অন্যতম। কারণ, ঘর্মাক্ত এবং ভেজা শরীরই হলো ছত্রাক জন্মানোর উর্বর ক্ষেত্র।


এ প্রসঙ্গে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চর্ম ও যৌন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মাসুদা খাতুন বলেন, বর্ষাকালে লাগাতার বৃষ্টির কারণে প্রায়ই রাস্তাঘাট পানিতে ডুবে থাকে। রাস্তার এসব ময়লা পানি ত্বকে লাগলে মারাত্মক সংক্রমণ হতে পারে। এ সময় ত্বক বৃষ্টি বা ঘামে ভেজা থাকলে সহজেই ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করতে পারে। বৃষ্টির পানি লাগলে দ্রুত তা পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে ও শরীর ভালোভাবে মুছে দিতে হবে। আর যাঁরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে ততটা সচেতন নন, তাঁদেরই এই রোগগুলো বেশি হতে দেখা যায়।

ছত্রাকের আক্রমণ

শীতপ্রধান দেশের চেয়ে গ্রীষ্মপ্রধান দেশের বেশি লোক এই ছত্রাকজনিত রোগে আক্রান্ত হয়। রোগটির চিকিৎসা দেওয়া হলে খুব সহজেই ভালো হয়ে যায়। কিন্তু হতাশার দিক হচ্ছে যে কিছুদিন যেতে না-যেতেই পুনরায় দেখা দেয়। আবার বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই একটু ভালো হওয়া মাত্রই রোগী ওষুধটি বন্ধ করে দেন। আবার যাঁরা ঠিকমতো ওষুধ ব্যবহার করেন, তাঁরাও কিন্তু ঠিকমতো ব্যবহার্য কাপড়চোপড় পরিষ্কার করেন না বা রাখেন না, ফলে খুব সহজেই কাপড়চোপড় থেকে পুনরায় ছত্রাক দেহে প্রবেশ করে এবং সে কারণেই রোগটি কিছুদিনের মধ্যে পুনরায় দেখা দিতে পারে।

কী কী ধরনের ছত্রাক রোগ এ সময়ে হতে পারে?

মূলত তিনটি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। যেমন: ১. দাদ ২. ছুলি ও ৩. ক্যানডিডিয়াসিস। এই তিন ধরনের ছত্রাক-প্রজাতিই মূলত ত্বকের বাইরের অংশকে আক্রমণ করে এবং সেই আক্রমণ স্যাঁতসেঁতে, নোংরা, ঘর্মাক্ত দেহে সবচেয়ে বেশি হতে দেখা যায়।

দাদ শরীরের যেকোনো স্থানে দেখা দিতে পারে। তবে দেখা গেছে সাধারণত তলপেট, পেট, কোমর, পাছা, পিঠ, মাথা, কুঁচকি ইত্যাদি স্থানে বেশি আক্রান্ত হয়।

টিনিয়া ভারছিকলার বা ছুলিও একটি ছত্রাকজনিত রোগ। মানুষ গরমকালে এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়, শীতকালে আবার এমনিতেই যেন মিলিয়ে যায়। আবার গরম এলে ঘাড়ের চামড়া ভেজা থাকে। সেখানেই সাধারণত বেশি হয়ে থাকে, যা দেখতে হালকা বাদামি, সাদা গোলাকৃতির মতো দেখা যায়। বুকে, গলার দুই পাশে ঘাড়ে, পিঠে, বগলের নিচে, এমনকি সারা শরীরে হতে পারে। এতে ত্বক দেখতে সাদা হয়। তাই অনেকেই আবার একে শ্বেতি ভাবতেও শুরু করেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে শ্বেতির সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই।

ক্যানডিডিয়াসিসও একটি ছত্রাকজনিত চর্মরোগ। যাঁদের শরীরে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম, যেমন শিশু, বৃদ্ধ কিংবা রোগাক্রান্ত, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, দীর্ঘদিন ধরে যাঁরা স্টেরয়েডজাতীয় ওষুধ ব্যবহার করেছেন কিংবা যাঁদের ত্বকের ভাঁজ পানিতে অথবা ঘামে সব সময় ভেজা থাকে, তাঁদেরই রোগটি বেশি হয়; যাঁরা সব সময় পানি নড়াচড়া করেন, তাঁদের আঙুলের ফাঁকে, হাতের ভাঁজে, শিশুদের জিহ্বা, নারীদের যোনিপথে এবং গর্ভবতী নারীরা এতে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকেন। এতে ত্বকের আক্রান্ত স্থান একটু লালচে ধরনের দেখা যায় এবং সঙ্গে প্রচুর চুলকানি হয়ে থাকে।

ছত্রাক থেকে দূরে থাকা যায় কীভাবে?

বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ছত্রাক সংক্রমণ প্রায় ১০০ ভাগ নিরাময় করা সম্ভব। তবে সেটা আবারও হতে পারে। কারণ ত্বকে ফাঙ্গাস বেড়ে ওঠার পরিবেশ সৃষ্টি হলে সেখানে ফাঙ্গাস বেড়ে উঠতে চেষ্টা করবে। তাই ফাঙ্গাস প্রতিরোধে যেসব ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে, সেগুলো হচ্ছে পা, আঙুলের ফাঁক, নখের গোড়া ভালো করে সাবান দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। আর ত্বক পরিষ্কার বা ধোয়ার পর শুষ্ক টাওয়েল দিয়ে ভেজা স্থান মুছে শুষ্ক করে ফেলতে হবে। বিশেষ করে আঙুলের ফাঁক, ঊরুসন্ধির ভাঁজ, বগল, ঘাড়, মাথার চুল ইত্যাদি পুরোপুরি শুকনা না করলে সেখানে ফাঙ্গাস বেড়ে উঠতে পারে।

হতে পারে ত্বকের ছোঁয়াচে রোগ

স্ক্যাবিস বা খোসপাঁচড়া ত্বকের একটি ছোঁয়াচে রোগ। যে কেউ যেকোনো সময় এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তবে বর্ষাকালে এর প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যায়। চুলকানি হলো প্রধান উপসর্গ আর রাতে সেই চুলকানি কয়েক গুণ বেড়ে যায়। এমনকি ক্ষতের সৃষ্টি হয়ে ঘা হতে পারে।

কীভাবে ছড়ায়?

অপরিচ্ছন্ন জীবনযাপন, এই রোগে আক্রান্ত রোগীর সঙ্গে বিছানায় শুলে কিংবা ব্যবহৃত কাপড় অন্য কেউ ব্যবহার করলে খুব সহজেই এ রোগ ছড়াতে পারে। কারণ, জীবাণুটি ব্যবহৃত কাপড়ের মধ্য দুই দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। শিশু-কিশোরেরাই এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে।

অন্যান্য রোগও কমবেশি হয়ে থাকে। তবে কিছু সাধারণ নিয়মকানুন যেমন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, নিয়মিত গোসল ইত্যাদি মেনে চললে এসব রোগ থেকে রেহাই পাওয়া যেতে পারে।

এ সময়ের সচেতনতা

এ সময় ভারী জামা-কাপড় না পরে হালকা রঙের সুতি পাতলা জামা পরুন। ঘামে ভিজে গেলে দ্রুত পাল্টে নিন। ভেজা কাপড় পরে থাকলে ছত্রাক সংক্রমণের আশঙ্কা বেশি।

নিয়মিত প্রয়োজনে দিনে দুবার গোসল করুন। জীবাণুনাশক সাবান ব্যবহার করতে পারেন। ঘামে বা বৃষ্টিতে ভিজলে ত্বক ধুয়ে শুকিয়ে নিন।

এ সময় সারা দিন জুতা-মোজা না পরে বরং খোলা স্যান্ডেল পরা ভালো। তবে খালি পায়ে হাঁটবেন না। রাস্তায় এখন যত্রতত্র নোংরা পানি জমে থাকে। পায়ের ত্বককে এই নোংরা পানি থেকে বাঁচিয়ে রাখুন। কেননা, এই পানিতে রয়েছে হাজার রকমের জীবাণু।

ভেজা চুল ভালো করে শুকিয়ে নিয়ে তবে বাঁধবেন, নইলে মাথার ত্বকে সমস্যা হতে পারে।

বাড়িতে কারও ছত্রাক সংক্রমণ হয়ে থাকলে শিশুদের তাঁর কাছ থেকে দূরে রাখুন।

43
চুল নানা কারণে পড়ে। কিন্তু বর্ষাকালে বৃষ্টির পানি যা আমরা খালি চোখে দেখি পরিষ্কার কিন্তু তাতে একধরনের অ্যাসিড থাকে, যা চুলের ক্ষতি করে। তা ছাড়া এই সময়ে স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়া, মাথায় ঘাম, চুল ঠিকমতো না শুকানো ইত্যাদি কারণে ছত্রাকের বাসা বাঁধতে সুবিধা হয়। এগুলোই মাথার ত্বকে চুলের গোড়ায় ইনফেকশন, খুশকি, চুল পড়াসহ নানা ধরনের ছত্রাকের আক্রমণসংক্রান্ত সমস্যা হওয়ার প্রধান কারণ।

অনেকে মনে করেন, বর্ষাকালে ধুলাবালু কম, তাই চুলের সমস্যা কম হবে। কিন্তু তা নয়, অন্যান্য ঋতুতে যা চুল পড়ে, বর্ষাকালে তার দ্বিগুণ চুল পড়ে। যেমন খুশকি, চুলের উজ্জ্বলতা কমে যায় ও উকুনও বেড়ে যায়। এ সময় মাথার ত্বকের তৈলাক্ততা বেড়ে যায়, চুল সহজে শুকাতে পারে না। তাই চুলের গোড়া থাকে নরম। চুলের সঠিক যত্নের অভাবে এ সমস্যাগুলো আরও বেশি বেড়ে যায়। আর আগে থেকেই তৈলাক্ত ত্বকের অধিকারীরা এ ধরনের সমস্যায় তাঁরা আরও বেশি ভোগেন। আবার মাথার তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণও হতে পারে।

চুল ভালো রাখতে এ সময়ে বিশেষ যত্ন নিতে হবে। মডেল: অন্তরা, ছবি: অধুনা
চুল ভালো রাখতে এ সময়ে বিশেষ যত্ন নিতে হবে। মডেল: অন্তরা, ছবি: অধুনা
চুল নানা কারণে পড়ে। কিন্তু বর্ষাকালে বৃষ্টির পানি যা আমরা খালি চোখে দেখি পরিষ্কার কিন্তু তাতে একধরনের অ্যাসিড থাকে, যা চুলের ক্ষতি করে। তা ছাড়া এই সময়ে স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়া, মাথায় ঘাম, চুল ঠিকমতো না শুকানো ইত্যাদি কারণে ছত্রাকের বাসা বাঁধতে সুবিধা হয়। এগুলোই মাথার ত্বকে চুলের গোড়ায় ইনফেকশন, খুশকি, চুল পড়াসহ নানা ধরনের ছত্রাকের আক্রমণসংক্রান্ত সমস্যা হওয়ার প্রধান কারণ।

অনেকে মনে করেন, বর্ষাকালে ধুলাবালু কম, তাই চুলের সমস্যা কম হবে। কিন্তু তা নয়, অন্যান্য ঋতুতে যা চুল পড়ে, বর্ষাকালে তার দ্বিগুণ চুল পড়ে। যেমন খুশকি, চুলের উজ্জ্বলতা কমে যায় ও উকুনও বেড়ে যায়। এ সময় মাথার ত্বকের তৈলাক্ততা বেড়ে যায়, চুল সহজে শুকাতে পারে না। তাই চুলের গোড়া থাকে নরম। চুলের সঠিক যত্নের অভাবে এ সমস্যাগুলো আরও বেশি বেড়ে যায়। আর আগে থেকেই তৈলাক্ত ত্বকের অধিকারীরা এ ধরনের সমস্যায় তাঁরা আরও বেশি ভোগেন। আবার মাথার তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণও হতে পারে।


ঘরোয়া যত্নই হতে পারে চুলের সমস্যা সমাধানের উত্তম উপায়। শ্যাম্পু ব্যবহার করার পাশাপাশি বেশি তেলের খাবার এড়িয়ে যেতে হবে। এক দিন পরপরই শ্যাম্পু করা উচিত। আর সপ্তাহে অন্তত এক দিন কিটোকোনাজল শ্যাম্পু করা উচিত। প্রচুর পানি পান করতে হবে। গোসলের পরই চুল শুকিয়ে ফেলতে হবে। ফ্যানের বাতাসে শুকানোই সবচেয়ে ভালো হবে। তবে সমস্যা বেড়ে গেলে চর্ম ও যৌনরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

সোজা করা চুলে বা রঙিন চুলে যেমন রাসায়নিক থাকে এবং তেমনি চুল শুষ্কও থাকে। তাই শ্যাম্পু ব্যবহার করার পাশাপাশি ভালো কন্ডিশনার ব্যবহার করতে হবে। অথবা শ্যাম্পু করার আগে তেল ব্যবহার করা যেতে পারে।

সবশেষে চুল পড়া রোধ বা কমাতে হলে চুলকে নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে, নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে, দুশ্চিন্তামুক্ত জীবন যাপন করতে হবে, যেকোনো ওষুধ গ্রহণের আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

44
অনেককিছুই আমাদের হাতে নেই৷ যেকোনও মুহূর্তে যা খুশি ঘটতে পারে৷ ওলটপালট হয়ে যেতে পারে সব৷ মনকে সে ভাবে তৈরি রাখুন

 
অফিসের কাজের চাপ কিংবা সাংসারিক ঝুট-ঝামেলা, ব্যক্তিগত জীবনে দুশ্চিন্তা বা টেনশনের রয়েছে হাজারো কারণ। আর এই টেনশনের হাত ধরেই উচ্চ রক্তচাপ, ডায়বেটিস, হৃদরোগ ধেয়ে আসে। তবে, নিজের মনের জোর তো চাই-ই, সেইসঙ্গে একটু সচেতন হলে দুশ্চিন্তা থেকে বেরুনো খুব কঠিন কিছু নয়৷

#)মনোবিদদের মতে, অতিরিক্ত চাহিদাই যত অশান্তির কারণ৷ তাই নিজের কাজ করে যান৷ ফলাফল সব সময় আশানুরূপ নাও হতে পারে৷ তাই তা নিয়ে ভেঙে না পড়াই ভাল।

#)অনেককিছুই আমাদের হাতে নেই৷ যেকোনও মুহূর্তে যা খুশি ঘটতে পারে৷ ওলটপালট হয়ে যেতে পারে সব৷ মনকে সে ভাবে তৈরি রাখুন৷

#)সবার সঙ্গে ভাল ব্যবহার করুন৷ অন্যের দুঃখে দুঃখী হওয়া, অন্যকে সম্মান করা ইত্যাদি অভ্যাস রপ্ত করতে পারলে, নিজের চেয়ে অন্যকে বেশি সময় দিলে ব্যক্তিগত টেনশন কম থাকবে৷

#)জীবনে কী পাননি তার হিসেব না করে কী পেয়েছেন তার হিসেব করুন৷

#)আদর্শ হিসেবে সামনে কাউকে পান কি না দেখুন৷ যার জীবনযাপন, লড়াই করার ক্ষমতা, বিপদে অবিচল থাকার শক্তি সাহস জোগাবে৷ সেক্ষেত্রেও টেনশন কমানোর দাওয়াই হতে পারে তার সঙ্গ।

#)কেউ কিছু বলেছে শুনলেই ব্যাকুল হবেন না৷ ভেবে দেখুন, তিনি কি আপনার শুভাকাঙক্ষী? গুরুত্বপূর্ণ কেউ? তেমন কেউ হলে ভেবে দেখুন কেন এমন হল৷ নিজের দোষ খুঁজে তা শোধরানোর মতো হলে শুধরে নিন৷

#)কিছুটা দূরত্ব রেখে মানুষের সাথে মিশলে অশান্তি কম হয়৷ সম্ভব না হলে যে সম্পর্ক থেকে বা যে কারণে অশান্তি হচ্ছে সেই বিষয় এড়িয়ে চলুন৷

#)ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে টেনশন তৈরি হলে তাকে পুরনো হতে দেবেন না৷ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সমাধানের চেষ্টা করুন৷

#)ঈর্ষা জাগলে সাবধান৷ টেনশনের এটি একটি বড় কারণ৷ ভেবে দেখুন ঈর্ষার কারণ কিন্তু সেই চাহিদা৷ আর একজন কিছু পেয়েছে যা আপনি পাননি৷ কাজেই কী পাননি সেই হিসেবে না গিয়ে কী পেয়েছেন তার তালিকা বানান এবং আরও কী কী পেতে চলেছেন তার ছবি সামনে রেখে এগিয়ে চলুন৷

#)কোনও ভাবনা কষ্ট দিলে তাকে কাটাছেঁড়া করুন৷ কষ্টের ব্যাপার হলে কষ্ট হবে৷ তা মেনেও নিতে হবে। যা মানতেই হবে, তার জন্য আগে থেকে ভুল ভেবে কষ্ট পেয়ে কী লাভ?

#) রাগ পুষে রাখার অভ্যাস ছাড়তে হবে৷ কারণ এ ক্ষেত্রেও ক্ষতিটা শেষ পর্যন্ত আপনারই৷পৃথিবীতে মজার জিনিস প্রচুর আছে৷ জীবনকে একটু সহজ ভাবে নিতে শিখলে রাগের বদলে মজা পাওয়ারই কথা৷

#)দুশ্চিন্তামুক্ত হতে হলে নিজের ওপর বিশ্বাস হারাবেন না কোনভাবেই৷ কোনও মন্দ পরিস্থিতিকে বদলে দিয়ে ভাল করা যায় কিনা ভাবুন। তবে তা সম্ভব না হলে অকারণে সেই মন্দ পরিস্থিতির পরিণতি নিয়ে ভাববেন না। জীবন জীবনের নিয়মেই এগোবে তাই অযথা দুশ্চিন্তা করবেন না।

45
ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন (ডব্লিউএইচও)’র হিসেবমতে, প্রতি ১০জন পুরুষের মধ্যে ৪জনই নাক ডাকেন৷ অবশ্য, এব্যাপারে মেয়েরাও পিছিয়ে নেই

 
অধিকাংশ নাক ডাকাই নিরীহ৷ ফলে বেড পার্টনার চূড়ান্ত অশান্তি শুরু না করলে সমাধানের কথা ভাবেন না কেউ৷ তবে অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া সিনড্রোম থাকলে, নিজের এতরকম সমস্যা হতে থাকে যে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে দেরি করা উচিৎ না৷  অন্যান্যক্ষেত্রে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়৷

নাক ডাকে কেন

বয়স বাড়লে কমবেশি অনেকেরই নাক ডাকে৷ ওজন বাড়লে সমস্যা বাড়ে। এছাড়া, অ্যালার্জি, নাকবন্ধের ধাত, নাকে পলিপ, নাকের মাঝের পর্দা বাঁকা ইত্যাদি থাকলে কম বয়সেও নাক ডাকতে পারে৷ এইসব সমস্যার কারণে শিশুরাও নাক ডাকে অনেকসময়৷

ঘুমানোর আগে বেশি মদ্যপান করলে বা ঘুমের ওষুধ খেলে নাক ডাকার পরিমাণ বাড়ে। ধূমপায়ীদের দ্বিগুণ আশঙ্কা থাকে নাক ডাকার৷

অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া সিনড্রোম থাকলে ঘুমের সময় শরীরে কম অক্সিজেন যায়, শ্বাসকষ্টে ঘুম ভেঙে যায় বারবার৷ চিকিৎসা না করলে সারাদিন ক্লান্তি, কাজের মাঝে ঘুমিয়ে পড়া থেকে শুরু করে ভবিষ্যতে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ও স্ট্রোকের আশঙ্কা থাকে৷

নিয়ম

#) ওজন ও ভুঁড়ি বেশি হলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মতো ডায়েটিং ও ব্যায়াম করে তা কমানোর চেষ্টা করুন৷ কয়েক কেজি কমাতে পারলে নাক ডাকা অনেক কমে যাবে৷ ছিপছিপে হয়ে যেতে পারলে বা ভুঁড়ি কমাতে পারলে তো কথাই নেই৷

#) রাতের দিকে খুব বেশি মদ খেলে নাক ডাকা বেড়ে যেতে পারে৷ কাজেই মদ খাওয়া কমান, ছেড়ে দিতে পারলে খুবই ভাল৷ প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন৷ এতে শরীর–স্বাস্থ্যও ভাল থাকবে৷

#) ধূমপান কমানোর চেষ্টা করুন৷ এটিও ছেড়ে দিতে সক্ষম হলে এক কাজে অনেক উপকার পাবেন।

#) ঘুমের ওষুধের অভ্যাস আস্তে আস্তে ছাড়ার চেষ্টা করুন৷ স্বাভাবিক ঘুম ঘুমনোর পন্থা শিখে নিন বিশেষজ্ঞের কাছে৷

চিত বা উপুড় হয়ে না শুয়ে পাশ ফিরে ঘুমোন৷

#) খাটের মাথার দিকের পায়ার নীচে কাঠের ব্লক বা ইট দিয়ে একটু উঁচু করে দিতে পারেন৷ ঘুমের সময় মাথা থেকে পিঠ পর্যন্ত শরীরের বাকি অংশের চেয়ে একটু উঁচুতে থাকলে নাক কম ডাকে৷

#) নাকের ভেতরটা যাতে শুকিয়ে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখুন৷ শোওয়ার আগে স্টিম নিলে বা নাক ভেজা রাখতে নির্দিষ্ট ড্রপ দিলে সমস্যা কম হয়৷

#) বালিশে দু’ফোঁটা ইউক্যালিপ্টাস অয়েল দিয়ে দেখতে পারেন উপকার হয় কি না৷

#) নাক বন্ধ থাকলে ন্যাজাল স্ট্রিপের সাহায্য নেওয়া যায়৷ এজন্য বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলুন৷

#) কোনভাবেই কোনও কাজ না হলে নাক–গান–গলা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। প্রয়োজনে অস্ত্রোপচার করতে হতে পারে।

Pages: 1 2 [3] 4 5 ... 7