Show Posts

This section allows you to view all posts made by this member. Note that you can only see posts made in areas you currently have access to.


Messages - Md. Siddiqul Alam (Reza)

Pages: 1 ... 4 5 [6] 7 8 ... 17
76
যদি কেউ নোভেল করোনাভাইরাস সংক্রমিত কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত না হন এবং ভাইরাসটিতে আক্রান্ত কোনো রোগীর সেবা ও পরিচর্যা না করে থাকেন, তাহলে সেসব মানুষকে মাস্ক না পরার সুপারিশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। জাতিসংঘের এই অঙ্গসংগঠনটির এক সিনিয়র কর্মকর্তা সোমবার(৩০ মার্চ) এক সংবাদ সম্মেলনে এমনটাই জানিয়েছেন।

সংস্থাটির জরুরি স্বাস্থ্য কর্মসূচির নির্বাহী পরিচালক ডা. মাইক রায়ান সোমবার জেনেভায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, গণহারে মাস্ক পরার কারণে সম্ভাব্য কোনো সুবিধা রয়েছে বলে নির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি। প্রকৃতপক্ষে, মাস্কটি সঠিকভাবে পরা বা সঠিকভাবে ফিট করার অপব্যবহারের কারণে বিপরীতে কিছু হওয়ারই প্রমাণ পাওয়া গেছে।
মাস্ক ও অন্যান্য চিকিৎসা সরঞ্জাম নিয়ে মাইক রায়ান আরও বলেন, এছাড়া আরও একটি বিষয় হলো, বৈশ্বিকভাবে এসব সরঞ্জামের ব্যাপক এক সংকট দেখা দিয়েছে। যেসব স্বাস্থ্যকর্মী সামনে থেকে রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার কাজটি করছেন, বর্তমানে তারাই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন। কেননা তারা প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্তে ভাইরাসটির সংস্পর্শে আসছেন। তাদের মাস্ক না থাকার বিষয়টি ভয়াবহ।
এছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সংক্রামক রোগ বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. মারিয়া ভ্যান কারকোভ আজকের সংবাদ সম্মেলনে বলেন, যাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন আমরা তাদের ক্ষেত্রে মাস্ক ব্যবহারের বিষয়টিতেই সবচেয়ে গুরুত্ব দিচ্ছি। তারা হলেন, সামনে থেকে রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া স্বাস্থ্যকর্মী।’ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম গেব্রেয়সেসও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
ডা. মারিয়া ভ্যান আরও বলেন, কমিউনিটির মানুষজনকে আমরা মাস্ক পরার সুপারিশ আমরা ততক্ষণ পর্যন্ত করবো না, যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি অসুস্থ না হন। কেননা শুধু অসুস্থ হলেই আপনার মাধ্যমে ভাইরাসটি বিস্তার লাভ করবে। আমরা তাদেরকেই মাস্ক পরার সুপারিশ করবো যারা অসুস্থ এবং যারা অসুস্থদের সেবা দিচ্ছেন।

https://www.dailyinqilab.com/article

77
বিশে^ এখন আতঙ্কের নাম কোভিড-১৯ ভাইরাস। চীন থেকে শুরু। তারপর একে একে করোনাভাইরাস এখন প্রায় দুইশো দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশ^জুড়ে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা তৈরি হওয়ায় সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করেছে বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা। এটি এখন মহামারী রূপ নিয়েছে। বাংলাদেশেও করোনা আক্রান্ত রোগী বাড়ছে। মৃত্যুও হয়েছে। ইতোমধ্যেই করোনা রাজনীতি, অর্থনীতিসহ সব অঙ্গনেই স্থবিরতা সৃষ্টি করেছে। কোথায় গিয়ে এর শেষ হবে, তা বলা যাচ্ছে না। এক দেশে এর প্রভাব কমলে অন্যদেশে বাড়ছে। সবচেয়ে বড় শঙ্কা তৈরি হয়েছে অর্থনীতিতে। বলা যায়, এটি প্রায় থমকে গেছে। বৈশি^ক প্রবৃদ্ধির অন্যতম নিয়ামক চীন, আমেরিকা ও ইউরোপজুড়ে বিভিন্ন দেশে এই ভাইরাস অর্থনীতিতে ধ্বস নামিয়েছে। দোকানপাঠ, বিমান চলাচল সব বন্ধ থাকায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। যেখানে নিরাপত্তাই মুখ্য সেখানে এর থেকে ভালো উপায় হয় না। এর ফলে আর্থিক বিশ^মন্দা বাস্তবে রূপ নিতে শুরু করেছে বলে সতর্ক করেছেন অর্থনীতিবিদরা। এর মধ্যে চীনের তথ্য বেশি দুশ্চিন্তার কারণ। ১৯৮৯ সাল জিডিপির প্রান্তিক তথ্য প্রকাশ শুরুর পর প্রথম ধসের মধ্যে পড়লো বিশে^র দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ বোর্ডের গবেষণা ও পরিসংখ্যান বিভাগের সাবেক প্রধান ডেভিড উইলকক্স সিএনএন বিজনেসকে বলেন, ১০ দিন আগেও বিশ^ অর্থনীতি মন্দার দিকে মোড় নিচ্ছে কিনা তা নিয়ে বাস্তব অনিশ্চয়তা ছিল, কিন্তু এখন এটি নিয়ে আর কোনো প্রশ্ন নেই। অর্থনীতির আর একটি দিক চাকরির বাজার। করোনার কারণে এই দিকেও টালমাটাল অবস্থার তৈরি হয়েছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলও’র মতে, মহামারী রূপে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকটে প্রায় আড়াই কোটি মানুষ চাকরি হারাতে পারে। আইএলও’র মতে, নতুন করোনাভাইরাসটির প্রভব যদি খুব স্বল্পমাত্রায় হয় তাহলে অন্তত ৮০ লাখ মানুষ চাকরি হারাতে পারে। আর এর মাত্রা যদি খুব বেশি হয় তাহলে বেকার হওয়া মানুষের সংখ্যা দাঁড়াবে ২ কোটি ৪৭ লাখ। এখানে উল্লেখ্য যে, ২০০৮-০৯ কালীন সময়ে বৈশি^ক আর্থিক সংকটের সময়ে বেকার হয়েছিল ২ কোটি ২০ লাখ মানুষ। তবে এর সাথে আইএলও আরও বলছে, ২০০৮ সালের বৈশি^ক মন্দার সময়কার মতো বিশ^জুড়ে সমন্বিত উদ্যোগ নেয়া হলে সম্ভাব্য বেকারত্বের হার অনেক কম হতে পারে।

একটি বিষয় হলো অর্থনীতি এবং শ্রমবাজার একে অপরের সাথে অত্যন্ত নিবিড়ভাবে সম্পর্কযুক্ত। এই ভবিষ্যত একটি দিকে ইঙ্গিত করে। তাহলো যদি এর প্রভাব আরও তীব্র হয় তাহলে বৈশি^ক মন্দার ভেতর পড়তে হবে। আর তা যদি আমরা সামাল দিতে চাই তাহলে সবাইকে একত্রিত হয়ে কাজ করতে হবে। এক্ষেত্রে গুরুত্বপূণ হলো অভ্যন্তরীণ শ্রমবাজার নিয়ন্ত্রণ করা। এদিকে এই ভাইরাসে আক্রান্তের হার এখন ইতালি, ইরান, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, স্পেন, ফ্রান্স ইত্যাদি দেশে বেশি। এন্টার্টিকা বাদে পৃথিবীর বাকি সব মহাদেশেই ছড়িয়ে পড়েছে এই ভাইরাস। প্রতিদিন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মানুষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে। চীনের অবস্থা সবচেয়ে বেশি সংকটজনক ছিল। এখন তা স্থিতিশীল। উহানের সেই ডাক্তার যারা বীরের মতো পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে তারা আজ আদর্শ। পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য চীনসহ সারাবিশ^ই আপ্রাণ চেষ্টা করেছে। তারা এখন এগিয়ে আসছে অন্যদের সাহায্য করতে। তাদের সাহায্য আমাদের কাজে লাগবে। কারণ তারা ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গেছে। প্রতিদিন মৃত্যুর মিছিলে সংখ্যা বাড়ছে। সেই সাথে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যাও বাড়ছে। বলা যায়, প্রাণাহানি এবং অর্থনীতি দুই দিকেই ক্ষতি করে চলেছে এই ভাইরাসের প্রকোপ। বিশ^ব্যাপী ক্রমেই ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে করোনাভাইরাস। আশা করা হচ্ছিল, এর প্রভাব ক্রমেই কমতে থাকবে এবং একসময় নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আসবে। তবে সেটি না হয়ে আরও বহু দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। কেবল আমাদের দেশের অর্থনীতি নয়, বরং বিশে^র অর্থনীতির গতিকে ¯øথ করে দিয়েছে করোনা। পরিস্থিতি যদি দ্রæত স্বাভাবিক না হয় তাহলে তা অর্থনীতিকে আরো ব্যাপক ক্ষতির মুখে ফেলবে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য প্রকৃতপক্ষে এমন একটি বিষয় যেখানে এক দেশ অন্য দেশের ওপর নির্ভরশীল। তা যদি চীনের মতো শক্তিশালী বাণিজ্য সক্ষমতাসম্পন্ন দেশ হয় তাহলে তা আরও বেশি প্রভাব ফেলবে এটাই স্বাভাবিক। নিত্য নতুন প্রযুক্তিপণ্যে খুব দ্রæত বিশে^ নিজের অবস্থান সুসংহত করে নেয়া দেশ হলো চীন, যার প্রযুক্তিপণ্য বিশে^ অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং মানুষের দৈনন্দিন ব্যবহারের একটি বড় অংশ পূরণ করছে। তা সে বিভিন্ন ধরনের পণ্যের ক্ষেত্রেই। করোনাভাইরাসের প্রভাব কতদিন চলবে বা তার প্রভাব কতটা তীব্র হবে তা এই মুহূর্তে বলা সম্ভব হচ্ছে না। ধীরে হলে বিভিন্ন দেশে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে। বর্তমান সময়ে চীন বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিশে^ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বিশে^র বিভিন্ন দেশের বাজারে চীনা পণ্য অত্যন্ত জনপ্রিয়। কিছু পণ্য প্রায় এককভাবে রয়েছে চীনের দখলে। ব্যবসা বাণিজ্যে চীনকে সর্বাধিক গুরুত্বের তালিকায় রাখে অনেক দেশ। এজন্য চীনকে ‘সব দেশের কারখানা’ বলেও অভিহিত করা হয়। বিশ^ থেকে চীনের যোগাযাগ অনেকটাই সীমিত হয়ে গেছে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। বাংলাদেশেও আমদানি করা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও দ্রব্যের শতকরা ৮০ ভাগেরও যোগানদাতা চীন। আমদানি ও রপ্তানির বিভিন্ন বিষয় রয়েছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, চীন থেকে পণ্য আনা ব্যাহত হওয়ায় ইতোমধ্যে প্রধান রপ্তানি পণ্য গার্মেন্টের এক্সেসরিজের দাম ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে বলে জানিয়েছে এ খাতের শিল্পমালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। কিছু পণ্যে বেশি আবার কিছু পণ্যে কম প্রভাব পড়বে। আবার সময়ের সাথে সাথে কিছু পণ্যের চাহিদা তীব্র হবে। সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে। এই পরিস্থিতি সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করছে সমস্যাটি কত দীর্ঘ হয় তার ওপর। যদি দ্রæতই এর সমাধান হয় তাহলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে। কিন্তু তা না হলে অর্থনীতিতে মন্দা অবশ্যম্ভাবী।

আমাদের অর্থনীতির একটি বড় শক্তি হলো গার্মেন্টস খাত। গার্মেন্ট শিল্পের ওপর নির্ভর কর্মসংস্থানের একটি বিশাল অংশ। সম্ভাবনাময় এবং অর্থনীতিকে শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে যাওয়া এই খাতে রপ্তানি করে আমাদের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হচ্ছে। কারণ বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের মধ্যে বেশির ভাগই পোশাক। চীনে করোনার প্রভাবের কারণে রপ্তানিতে প্রভাব পড়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় বাজার স্থিতিশীল রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। অসাধু ব্যবসায়ীরা যেন কোনোভাবেই এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাজার অস্থিতিশীল না করতে পারে তার ব্যবস্থা নিতে হবে। সামনে পবিত্র রমজান। এই মাসকে সামনে রেখে বিষয়টি নিয়ে গুরুত্ব সহকারে ভাবতে হবে। বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি একটি শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। এই অবস্থা বজায় রাখতে হলে অর্থনীতির এই গতি বজায় রাখতে হবে। করোনার প্রভাবে অর্থনীতির গতি ধীর হওয়ার অবস্থা রুখতে রপ্তানি পণ্যের বৈচিত্র্যতার ওপরও জোর দিতে হবে। তবে এ ধাক্কা কেবল একদিক থেকে আসবে না। প্রযুক্তিপণ্য, গার্মেন্টস পণ্য, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, এমনকি যোগাযোগ ক্ষেত্রেও এর প্রভাব পড়বে। তাই সমন্বিত উদ্যোগ নেয়ার কোনো বিকল্প নেই।
লেখক: শিক্ষক ও কলামিস্ট

https://www.dailyinqilab.com/article

78
মি’রাজ শব্দের অর্থ উর্ধ্বগমন,সিড়ি বেয়ে উপড়ে আরোহন ইত্যাদি । মুলত মি’রাজ হচ্ছে রাসুল সা: এর জীবনের বিস্ময়কর ঘটনা যা দ্বারা রাসুলের রিসালাতের সত্যতা, মহান আল্লাহর অসিম ক্ষমতার নমুনা প্রদর্শন,এবং বিশ্ব মানবতার মহান শিক্ষক,সকল বিজ্ঞানীদের বিজ্ঞানী সর্ব যুগের সর্ব কালের শ্রেষ্ঠ মানব মহানবী সা: কে স্বচক্ষে আসমান জমীন-জান্নাত জাহান্নাম এর পরিধি সুখ শান্তি কি আমলে কি পুরস্কার,গোটা পৃথিবী কে শান্তিময় করার কলা কৌশল,অতিত নবী রাসুলদের সাক্ষাৎকার মতবিনিময় ইত্যাদি বহুবিধ বিষয়ের বাস্তব চিত্র যেন রাসুল সা: সরেজমিনে দেখে তাঁর উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে শতভাগ সফল হতে পারেন সেই জন্যই মি’রাজ ।
বর্তমানে বিশ্বব্যাপী যে দাঙ্গা হাঙ্গামা, মারামারি কাটাকাটি, জুলুম নির্যাতন অন্যায় অবিচার ইত্যাদি অপকর্ম চলছে, তা হতে সমাজকে রক্ষা করতে হলে মিরাজের শিক্ষা গুলো পুরোপুরি বাস্তবায়ন অপরিহার্য্য। তবেই সমাজে,দেশ-বিদেশে সর্বত্র বয়ে আসবে অবিরাম অনাবিল শান্তি শৃঙ্খলা। আসুন আমরা মিরাজের শিক্ষাগুলো যথাযত ভাবে জেনে বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করি।
নিম্নে মিরাজের শিক্ষাগুলো সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরা হলো।
১ নং শিক্ষা: “তোমার প্রভূ হুকুম করেছেন - তোমরা এক আল্লাহ তা’য়ালা ব্যতীত আর কারো ইবাদত করবে না”। অর্থাৎ ইবাদত হবে একমাত্র আল্লাহর। “আল্লাহ তা’য়ালার আদেশ ও নিষেধের ভিত্তিতে জীবন কাটানোর নামই হলো ইবাদত”। আর যিনি আল্লাহ তা’য়ালার আদেশ ও নিষেধের আলোকে জীবন পরিচালনার চেষ্টা করেন তাকে আবদ বা আবেদ বলা হয়। শুধু নামায, রোযা, হজ্জ ও যাকাত ইত্যাদি আনুষ্ঠানিক আ’মালকে ইবাদত বলাহয় না। ইবাদত হলো জীবনের সকল ক্ষেত্রে আল্লাহ তা’য়ালার কথা মেনে চলার নাম। যার কারণে সূর্যোদয়ের সময় নামায পড়লে সাওয়াবের পরিবর্তে গুনাহ হয়। ঈদের দিন রোযা রাখলে সাওয়াব হয় না বরং গুনাহ হয়। কেননা ঐ সময় নামায ও রোযার ব্যাপারে আল্লাহ তা’য়ালার নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তাহলে বুঝা গেল নামায রোযা ইত্যাদিকে তখনই ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত বলা হবে যখন এগুলো আল্লাহর কথার আলোকে আদায় করা হয়। এর দ্বারা পরিষ্কার বুঝা যাচ্ছে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারোও নিকট মাথানত করা, প্রনাম করা, কবর পুজা করা, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো কাছে কোন কিছু চাওয়া এবং তার উপর তাওয়াক্কুল করা ইবাদতের সম্পূর্ণ বিপরীত।
নামায মি’রাজের অন্যতম উপটৌকন। নামায একমাত্র ইবাদত যা তিঁনি মি’রাজের রাত্রিতে সরাসরি কথোপকথনের মাধ্যমে এ উম্মতের উপর ফরজ করেছেন। নামায হলো মুমিন ব্যক্তির মি’রাজ স্বরূপ। অর্থাৎ রাসুললুল্লাহ (সাঃ) মি’রাজের মাধ্যমে যেভাবে আল্লাহর দিদার লাভ করেছেন, মুমিন ব্যক্তিও নামাযে সেরূপ আল্লাহর দিদার লাভে সক্ষম হবে। নামাযই হলো কাফের ও মুমিন ব্যক্তির মাঝে একমাত্র পার্থক্যকারী। দ্বীনের মধ্যে নামায হলো দেহের মধ্যে মাথার মতো। অর্থাৎ মাথা বিহীন দেহ যেমন চিনা যায় না তেমনি নামায বিহীন মুসলমানকেও রাসুলুল্লাহ (সাঃ) উম্মত বলে চিনবেন না। অথবা মাথা বিহীন দেহ যেমন জীবিত থাকে না, অনুরূপ নামায বিহীন ঈমানও টিকে থাকে না। নামায হলো বেহেস্তের চাবি। সুতরাং নামাযের ব্যাপারে অত্যাধিক সতর্কতা অবলম্বন করা মুমিন ব্যক্তির ঈমানী দায়িত্ব।
২ নং শিক্ষা: “আর পিতা মাতার সাথে সদাচারণ কর” আল্লাহ তা’য়ালার পরেই পিতা মাতার হক। পবিত্র কুরআনের অসংখ্য জায়গায় আল্লাহ তা’য়ালা তাঁর ইবাদতের পরেই পিতা মাতার সাথে সদাচারণ করতে আদেশ করেছেন। আল্লাহ তা’য়ালার ইবাদত ও পিতা মাতার সাথে সদাচারণ উৎপ্রত ভাবে জড়িত। মাতা পিতার খেদমত না করে শুধু নামায রোযা ইত্যাদি পালনের মাধ্যমে জান্নাতে যাওয়া অসম্ভব। যে ব্যাক্তি পিতা মাতাকে জীবিত পেয়েছে কিন্তু তাদেরকে খুশি করে জান্নাত লাভ করতে পারেনি রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তাকে তিরস্কার করেছেন। আবার পিতা-মাতার অসন্তোষ সন্তানের ধ্বংসের জন্য যথেষ্ট। যদি কোন সন্তানের উপর পিতা-মাতা অসন্তুষ্ট থাকেন- সে সন্তান কখনো কামিয়াব হতে পারে না। “ দু’টি বিষয়ের শাস্তি দুনিয়াতেই পেতে হয়। জুলুম এবং পিতার মাতার অবাধ্যতা”। তাই আমাদের উচিত যে কোন মূল্যে পিতা-মাতার সাথে উত্তম আচরণ করা। পিতা-মাতার ও উচিত সন্তানদের কে সে ভাবে গড়ে তোলা। পিতা-মাতা তাদের দায়িত্বের অবহেলার কারণে সন্তান সন্ততি পাপ কাজে জড়িয়ে পড়লে এ অপকমের্র দায়ভার তাঁরা কখনো এড়াতে পারবে না ।
৩ নং শিক্ষা: পরস্পর পরস্পরের হক অতিব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্রে যত মারামারি তা কারো অধিকার নষ্ট করার দরুণ অথবা অন্যায় অবিচারের দরুণ তাই প্রত্যেকেই প্রত্যেকের হক বা অধিকার যথযথভাবে আদায় করলে সর্বত্র শান্তিময় পরিবেশ বিরাজ করবে।সামাজিক অনেক অনুষ্ঠানাদি দেখা যায় যেখানে সাজ সজ্জা করে লক্ষ কোটি টাকা ব্যয় করা হয় অথচ প্রতিবেশী,গরীব আত্মীয় স্বজন কে ঐ অনুষ্ঠানে দাওয়াত দেওয়া হয় না । “আত্মীয় স্বজন, মিসকিন এবং পথিকদের হক তাদেরকে বুঝিয়ে দিন”। ইসলামে সকল মানুষের জীবনের সার্বিক শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। আত্মীয় স্বজনের হক বলতে বুঝায়, তাদের মিরাসী সম্পদ এবং আতিথেয়তার অধিকার। যদি কোন আত্মীয় উত্তরাধিকার সূত্রে কোন সম্পদের মালিক হয়, তা তাকে প্রদান করা বাধ্যতামূলক। যদি ছল চাতুরী করে তার অধিকার থেকে তাকে বঞ্চিত করা হয় তাহলে সে বড় গুনাহগার হবে। যে ব্যাক্তি তার ওয়ারিশের মিরাস কর্তন করবে আল্লাহ তার জান্নাতের অধিকার কর্তন করবেন।
৪ নং শিক্ষা: কেহ গাছতলায় কেহ বা বিশতলায়,কেহ হাজার টাকার কার্পেট এর উপর জুতো দিয়ে হাটে কেহ মারা যাওয়ার পর দাফনের কাপড়ের জন্য রাস্তায় লাশ রেখে পয়সা সংগ্রহ করা লাগে ইহা মানবতা মনুষ্যত্ব নয় এর মূল কারণ অবৈধ ইনকাম যা অপচয় অপব্যয়ের সুযোগ তৈরী করে তাই সরকার ও প্রশাসনের দায়িত্ব হলো অবৈধ ইনকামের পথ বন্ধ করে বৈধ পথে আয় রোজগারের পথ সুগম করে দেওয়া । “অপব্যয়-অপচয় করিও না, নিশ্চয় যারা বেহুদা খরচ করে তারা শয়তানের ভাই। আর শয়তান তার প্রভূর সঙ্গে বিদ্রোহকারী”। “বনী আদম পাঁচটি প্রশ্নের জবাব দেয়ার আগে কিয়ামতের দিন পা নাড়াতে পারবে না। তার জীবনকাল সম্পর্কে তা কোথায় ব্যয় করেছে, তার যৌবনকাল- তা কোন কাজে লাগিয়েছে, তার মাল সম্পর্কে সে এগুলো কোথা হতে আয় করেছে, কোথায় ব্যয় করেছে এবং তার জ্ঞাত বিষয়ের কতটুকু আমল করেছে। অপ্রয়োজনীয় কাজে অর্থ ব্যয় ও সম্পদ বিনষ্ট করা হলো অপচয়। এক কথায় আয়-ব্যয়, সঞ্চয় সবই হবে আল্লাহর ইচ্ছায়।


https://www.dailyinqilab.com/article

79
সামাজিক আচার-আচরণের ক্ষেত্রে প্রত্যেক জনগোষ্ঠিরই নিজস্ব কিছু আচার-আচরণ, প্রথা-পদ্ধতি, নিয়ম-কানুন বা রীতি-রেওয়াজ রয়েছে। রয়েছে প্রত্যেক সম্প্রদায়ের স্বতন্ত্রতা। এসবের মধ্যে ধর্মের সম্পৃক্ততাও অস্বীকার করা যায় না। তাই সকল ক্ষেত্রে স্ব-স্ব আদর্শ ও মূল্যবোধের বহিঃপ্রকাশ ঘটানো হয়ে থাকে। প্রত্যেক জনগোষ্ঠির রয়েছে চিত্তসত্তার নিজস্ব মূল্যবোধ ও তার প্রকাশভঙ্গী। নিজস্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে বাঁচাতে না পারলে, সেই জাতির আত্মবিলুপ্তি ঘটতে বাধ্য। তাই সকল জাতিই নিজস্ব ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে অতি সচেতন। রোগ-ব্যাধী, সাহিত্য, চিত্রকলা ও সঙ্গীত থেকে শুরু করে পোশাক-পরিচ্ছদ, দেহসজ্জা, গৃহসজ্জা, উৎসব সবকিছুতেই সচেতনভাবে নিজস্ব সংস্কৃতিক জীবনকে ধরে রাখতে সচেষ্ট থাকতে হয়। স্থানীয় ও লোকজ ঐতিহ্যের উপাদান মুসলিম সংস্কৃতিতেও আছে, কিন্তু এর অবস্থান ইসলামী ঐতিহ্যের সীমানা অতিক্রম করে নয়। আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য কারো কাছে মঙ্গল প্রার্থনা করা ইসলামে নিষিদ্ধ। সবকিছুতেই নিজস্ব প্রথা-পদ্ধতি, নিয়ম-নীতি বা রীতি-রেওয়াজের অনুশীলন কাম্য। তাই সর্বক্ষেত্রে নিজস্ব সংস্কৃতির অনুবর্তী হওয়া বাঞ্ছনীয়।

ইসলাম ধর্ম কেবল একটি বিশ্বাসের নাম নয়, বরং ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। ইসলাম একটি রাষ্ট্রিক চেতনা। ইসলামের আছে বিকল্প স্বপ্ন, বিকল্প রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রনৈতিক ভাবনা, যা অনায়াসে সেক্যুলার সভ্যতার বিকল্প মডেল। এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনতা ও এক বৈশিষ্ট্যপূর্ণ জাতি। মুসলিম জনগোষ্ঠির রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রথা-পদ্ধতি অন্যদের থেকে আলাদা বৈশিষ্টমন্ডিত, পরিচ্ছন্ন ও স্বতন্ত্র। বোধ-বিশ্বাস, আমল-আখলাক, আচার-ব্যবহার, জীবনধারণ, জীবন-মনন, শাসন পদ্ধতি, উৎসব-আনন্দ, জন্ম-মৃত্যু, রাজনীতি, অর্থনীতি, আইন-আদালত, ইত্যাদি সবকিছুর ক্ষেত্রেই মুসলিম জনগোষ্ঠির রয়েছে নিজস্ব প্রথা-পদ্ধতি ও আলাদা দৃষ্টিভঙ্গি।

কিন্তু জাতীয় জীবনের সর্বক্ষেত্রে আমরা একান্তই বিদেশমুখী, ইসলামকেন্দ্রিক নই। পাশ্চাত্য অন্ধ অনুগামিতারই প্রতিফলন ঘটছে আমাদের জীবনে। আমরা আমাদের স্বতন্ত্র জাতীয় আচার-আচরণ ও বিধিব্যবস্থার কথা ভাবতে পারি না। ইসলামী বিধি বিধানের প্রতি আমাদের বিরূপ মনোভাব লক্ষ করা যায়। আমাদের চিন্তা-চেতনায় কোনো স্বকীয়তা নেই। চিন্তা-ভাবনা একান্তভাবেই পশ্চিমা আধিপত্যবাদী সংস্কৃতির ওপর প্রভাবাধীন। পবিত্র কোরআনকে ভিত্তি করে সমাজ ও রাষ্ট্রীক জীবন গড়ার প্রয়াস নেই। এর মাধ্যমে বিদেশি সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে। এতে সংস্কৃতি সম্পর্কে ইসলাম এবং মুসলমানদের বোধ-বিশ্বাস ও সংস্কৃতি সম্পর্কে তাঁদের উদাসিনতারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। এতে মনে হয়, আমরা একান্তই পাশ্চাত্যমুখী।

আমরা সর্বক্ষেত্রে যেমন বিদেশি বিধি-বিধান অনুসরণের ওপর নির্ভরশীল, সকল সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রেও বিদেশি প্রক্রিয়া অবলম্বনের প্রয়াস চালাই। করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ এর ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম নয়। কেননা করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে রক্ষায় ঘনঘন দু‘হাত সাবান পানি দিয়ে কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড পরিষ্কার রাখার ওপর যেভাবে গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে, তা যে ইসলামী অনুশাসনের অন্যতম একটি বিশেষ অনুষঙ্গ, তা কিন্তু একবারও বলা হচ্ছে না। এতে রোগব্যাধী ও দুর্বিপাক থেকে উত্তরণে ইসলাম এবং মুসলমানদের বোধ-বিশ্বাস ও বিধি-বিধান সম্পর্কে অজ্ঞানতা ও উদাসিনতারই বহিঃপ্রকাশ ঘটছে বৈ আর কিছু নয়। যদি নামাজ পড়ার জন্যে সকলকে তাগিদ দেয়া হতো, তাহলে হাত ধোয়ার কর্মসূচি সফল হতো সর্বাত্মকভাবে। কেননা নামাজসহ এবাদাত-বন্দেগীর সকল ক্ষেত্রে অজু করা বাধ্যতামূলক। পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ ছাড়াও অনেকে ইশরাক ও চাশতের নামাজ পড়েন। তাছাড়া অনেকে আবার সর্বদা অজু অবস্থায় থাকেন। খাবার-দাবারের আগে পরে হাত ধোয়া অবশ্য করণীয় তো আছেই। যদি প্রচার করা হতো যে, অজুসহ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা ঈমানের অঙ্গ। তখন সকলেই বিশেষ করে সকল মুসলমান স্বতস্ফুর্তভাবে হাতধোয়াসহ পরিচ্ছন্ন থাকার প্রয়াস চালাতেন। অজুতে অবশ্য করণীয় হাত ধোয়ার কাজটি ইসলামে বিধিবদ্ধ। কেননা নামাজের জন্যে অজু করতে গেলে প্রথমেই হাত ধৌত করা ফরজ (অবশ্য করণীয়) অর্থাৎ অজুর জন্যে হাতধোয়া বাধ্যতামূলক। এই অজুর জন্যে হাত ধোয়ার অনুশীলন বহু আগে থেকে চলে আসছে। জাতিসংঘ বছরে একদিন হাত ধোয়া দিবস পালন করে থাকে। আর ইসলাম বহু পূর্বেই হাতধোয়ার অনুশীলন করার জন্যে নির্দেশ প্রদান করেছে।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে আরেকটি ব্যবস্থা কোয়ারেন্টিন। সেই ব্যবস্থার কথাও মহানবী(সা.) বহু আগেই বলে গেছেন, যেমন ‘আপনি যদি কোনো দেশে মহামারীর প্রাদুর্ভাবের কথা শুনে থাকেন, তবে সেখানে প্রবেশ করবেন না; তবে যদি আপনি সেখানে অবস্থানের সময় মহামারীটি ছড়িয়ে পড়ে, তবে সে স্থানটি ত্যাগ করবেন না।’ তিনি আরো বলেছিলেন: ‘সংক্রামক রোগকে স্বাস্থ্যকর ব্যক্তিদের কাছ থেকে দূরে রাখতে হবে।’ মহানবী (সা.) একই সাথে মানব জাতিকে সংক্রমণ থেকে রক্ষা করবে এমন স্বাস্থ্যকর অভ্যাসগুলো মেনে চলার জন্য বিশেষভাবে উৎসাহিত করে বলেছেন, ‘পরিচ্ছন্নতা হলো ঈমানের অঙ্গ।’ ‘ঘুম থেকে ওঠার পরে আপনার হাত ধুয়ে ফেলুন; ঘুমের সময় আপনার হাত কোথায় গেছে তা আপনি জানেন না।’ ‘খাওয়ার আগে এবং পরে হাত ধোয়ার মধ্যে কল্যাণ রয়েছে।’ তিনি লোকদের সর্বদা চিকিৎসা ও ওষুধপত্র ব্যবহারের ব্যাপারে উৎসাহিত করতেন। তিনি বলেছিলেন, ‘চিকিৎসা গ্রহণ করো’। মনে রাখতে হবে, আল্লাহ এমন কোনো রোগ দেননি যার প্রতিকারের কোনো ব্যবস্থাও তিনি দেননি। এর একমাত্র ব্যতিক্রম হলো বার্ধক্য।

মানুষের নীতি-নৈতিকতা সম্পন্ন মানসিকতা লোপ পাওয়ার পরিস্থিতি উদ্ভব হলে পৃথিবীতে যুগে যুগে মহামারী আকারে রোগ-ব্যাধী সংক্রমিত হয় বলে মুসলমানদের বিশ্বাস। এর বহু নজিরও আছে। প্রকৃতিবিরুদ্ধ অপকর্মে লিপ্ত হয়ে বহু জাতি ও জনপদ আজাব-গজবে ধ্বংস হয়ে গেছে। আজ বিশ্বের দিকে তাকালে দেখা যায়, উন্নত-অনুন্নত অনেক দেশেই নীতি-নৈতিকতার মানসিকতা ক্রমেই লোপ পাচ্ছে। শুরু হয়েছে বিশ্বের সর্বত্র নৈতিক অবক্ষয়। অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ছে এবং নগ্নাশ্রয়ী অপসংস্কৃতির পথ প্রশস্ত হচ্ছে। অপসংস্কৃতির দূষিত জোয়ারে শুধু সুস্থ সংস্কৃতিই ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে না, বরং ভেসে যাচ্ছে চিরায়ত মূল্যবোধ, ধ্যান-ধারণা, চরিত্র, ধর্ম ও আদর্শ। বিপন্ন হচ্ছে নৈতিক মেরুদন্ড। মানুষ পঙ্গুত্ব বরণ করছে মন-মননে, নীতি-নৈতিকতায় ও চিন্তা-চেতনায়।

ইতিহাস সাক্ষী, একটি জাতি ধ্বংস হয়েছিল সমকামিতার দোষে দুষ্ট হওয়ার কারণে। সেই ধ্বংসযজ্ঞ সংঘটিত হয়েছিল নবী হযরত লূত (আ.) এর আমলে। তিনি সমকামিতা থেকে বিরত থাকার জন্যে তাঁর জাতিকে নসিহত করেছিলেন। কিন্তু সেই জাতি তাঁর নসিহত-উপদেশে বিন্দুমাত্র কর্ণপাত করেনি। ফলে পরাক্রমশালী আল্লাহ কওমে লূতকে সমূলে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। তাছাড়া নিজ নিজ অপকর্মের শাস্তি স্বরূপ ফেরাউন, নমরুদ, আ‘দ, সামুদ প্রভৃতি জাতিসমূহকে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন পরাক্রমশালী আল্লাহ।

পরাক্রমশালী আল্লাহ যেই সমকামিতার অভিযোগে কওমে লূতকে সমূলে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন, দুঃখজনক হলেও সত্যি, সেই সমকামিতার পুনরার্ভিাব ঘটতে দেখা যাচ্ছে কোনো কোনো দেশে। প্রকৃতি বিরুদ্ধ এই গর্হিত কর্মকান্ডকে আইন করে বৈধতা দেয়া হয়েছে পাশ্চত্যের বিভিন্ন দেশে। তাছাড়া নগ্নতা এবং উলঙ্গতাসম্পন্ন সংস্কৃতি সেসব দেশের জীবনধারার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছ। বহু বড় বড় শহরে পূর্ণ নগ্ন দেহ ক্লাব গড়ে উঠেছে। মেয়ে-পুরুষ উলঙ্গ ও বিবস্ত্র হয়ে এসব ক্লাবে ঢুকে। এভাবে ঐসব দেশে নগ্নতা এবং উলঙ্গতা বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। নারী-পরুষের যৌন ভাবোদ্দীপক অপতৎপরতা, নগ্ন বীভৎসতা বিস্ময়াকরভাবে বেড়ে গেছে। যৌন আবেগপূর্ণ ছায়াচিত্র, নারীদের অতিমাত্রায় স্বল্প পোশাকে নৈতিকমানের অবনতি ঘটছে এবং পুরুষের সাথে তাদের অবাধ ও উচ্ছৃঙ্খল মেলামেশার উপসর্গগুলো উত্তরোত্তর বিস্তার লাভ করছে।

বিশে^র কোনো কোনো দেশে নারীদের এতোটাই স্বাধীনতা আছে যে, প্রাপ্ত বয়স্কা যুবতী তার পছন্দ অনুযায়ী যে কোনো পুরুষের সাথে অবাধে মেলামেশা ও রাত্রি যাপন করতে পারে। সেসব দেশে নারী সহজলভ্য হওয়ায় পারিবারিক বন্ধন ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। তাদের ইতিহাস কওমে লূত, ফেরাউন, আদ, সামুদ, রোম এবং অন্যান্য জাতির অনুরূপ হওয়ার উপক্রম হচ্ছে। নর-নারীর অবাধ মেলামেশা পুরুষরাও খুবই পছন্দ করে। আর এজন্যে নারীরা পুরুষদের দ্বারা প্রলুব্ধ হয়ে তাদের স্বভাববিরুদ্ধ এবং প্রকৃতিবিরুদ্ধ কাজে আগ্রহান্বিত হয়।

মানুষ্যলোকে দীনতম ও হীনতম মানুষের অন্য সকলের মতো বেঁচে থাকার সমান অধিকার আছে। এই পৃথিবীর আকাশ, আলো ও বাতাসের সঙ্গে একাত্মবোধের সমান অনুভূতি আছে তাদের। নগন্যতম মানুষের বাঁচার দাবিকে উপেক্ষা করার অধিকার কারোর নেই। কারো সামান্যতম হক উপেক্ষা করা মনুষ্যত্বের পরিচায়ক নয়। কোনো মানুষের মৌলিক অধিকার ক্ষু্ণ্ণ করা বা অপহরণ করা চলে না। কিন্তু জিনজিয়াং, কাশ্মীর, আরাকান, ফিলিস্তিন ও ভারতে কি রাষ্ট্র ও সামাজিক ক্ষেত্রে এই মর্ম অনুভব করা হচ্ছে? বরং এখন বিশ্ব সভ্যতার মুখ থুবড়ে পড়ছে। ধুমড়ে-মুচড়ে যাচ্ছে মানুষের বিশেষ করে মুসলমানদের সব ধরনের অধিকার। দেশে দেশে নির্মম উৎপীড়নের শিকার মুসলমানরা নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি হারাচ্ছে। অথচ মুসলমানদের পৃথক ভাষা ও সংস্কৃতি আছে। তাঁদের ইতিহাস, বীর্যবল, শিল্প, স্থাপত্য, সঙ্গীত, আইন-কানুন আছে। মুসলমানদের ভাষা ও সংস্কৃতির উৎস ইসলামী জীবন দর্শনভিত্তিক মূল্যবোধ। মুসলমানদের রয়েছে স্বতন্ত্র ভাষা ও সাংস্কৃতিক চেতনা, যা এখন অন্য সংস্কৃতিতে লীন হবার উপক্রম। নিজস্ব আদর্শ, ঐতিহ্য রীতি-নীতি ও স্বকীয়তা লালন, র্চ্চা ও অনুশীলনের ক্ষেত্রে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে মুসলমানরা দেশে দেশে।

সকল ক্ষেত্রে জাতীয় আদর্শ, ঐতিহ্য রীতি-নীতি ও সংস্কৃতি ধারণ, লালন, র্চ্চা ও অনুশীলন করা উচিত মুসলমান হিসেবে প্রত্যেকের। সার্বজনীনতা তত্তে¡র আড়ালে যেকোন বিধর্মীয় প্রথা-পদ্ধতি অনুশীলনের জন্যে এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ তৌহিদী জনতাকে আহবান জানানো গ্রহণযোগ্য নয়। আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য কারো কাছে মঙ্গল প্রার্থনা করা এবং ন্যায় বিচারের প্রতীক মনে করা ইসলামে নিষিদ্ধ। মঙ্গল শোভাযাত্রার মাধ্যমে কল্যাণ চাওয়া মুসলিম সংস্কৃতির অংশ নয়। উৎসব হোক বা স্মৃতি রক্ষা হোক, সবকিছুতেই নিজস্ব প্রথা-পদ্ধতি, নিয়ম-নীতি বা রীতি-রেওয়াজের অনুশীলন কাম্য। ইসলামী আইনের প্রতি ধর্মগত বিশ্বাস ও শ্রদ্ধাবোধের কারণে মানুষ স্বশাসিত হয়।

মানুষের জীবনে বহু সংকট আসে। কিন্তু তারা যদি স্বীয় আদর্শ প্রবহমান রাখে, তা হলে সাময়িক বিপর্যয় ঘটলেও তারা আবার মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে। তার অনেক নজির আছে। তবে জাতীয় আদর্শ, ঐতিহ্য রীতি-নীতি ও স্বকীয়তা বিরোধী পশ্চিমা নগ্নাশ্রয়ী নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা সম্বলিত অপসংস্কৃতির পথ রুদ্ধ করতে হবে। এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ধর্ম ইসলাম নির্দেশিত নৈতিকতা ও শালীনতার দ্বারা সদভ্যাস গড়ে তুলে নারী-পুরুষের ব্যষ্টিক ও সামষ্টিক কল্যাণ সাধনের পথ প্রশস্ত করতে হবে। অবাধ মেলামেশার বিজাতীয় সাংস্কৃতিক আগ্রাসন থেকে তরুণ-তরুণীদের বাঁচাতে নির্মল, পবিত্র, স্বচ্ছ, নির্দোষ এবং নিজস্ব আদর্শের আলোকে শক্তিশালী সাংস্কৃতিক বলয় গড়ে তুলতে হবে।

লেখক: ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি।


80
উম্মতে মুহাম্মাদের আবশ্যিক কর্তব্য হলো রাহমাতুল্লিল আলামীন সা.-এর প্রতি যথাযোগ্য সম্মান প্রদর্শন করা। একই সাথে প্রত্যেক নবীর প্রতি সম্মান প্রদর্শনও অপরিহার্য।

কোনো নবী সম্পর্কে সামান্যতম তাচ্ছিল্য ও অবমাননাসুলভ আচরণ প্রকাশ পাওয়া ইসলাম থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার জন্য যথেষ্ট। এ প্রসঙ্গে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, (ক) হে বিশ্বাসীগণ, তোমরা নবীর কণ্ঠস্বরের ওপর তোমাদের কণ্ঠস্বর উঁচু করো না এবং নিজেদের মধ্যে কথোপকথনের ন্যায় রাসূলের সাথে উচ্চস্বরে কথা বলো না। কারণ এতে তোমাদের অজ্ঞাতসারে তোমাদের নেক আমলসমূহ নিষ্ফল হয়ে যাবে। (সূরা হুজরাত : আয়াত ২)।
(খ) চার মাজহাবের ইমামগণ হতে বর্ণিত, সন্দেহাতীতভাবে ওই ব্যক্তি কাফির যে নবী করিম সা.-কে গালি দেয় অথবা তাকে হত্যা করা বৈধ মনে করে। (রাদ্দুল মোহতার : খ- ৩, পৃ. ৩১৭)। (গ) সাধারণ উলামাগণের এ কথার ওপর ইজমা হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ সা.-কে গালি দিলে তার শাস্তি মৃত্যুদ-। (আস সারিমুল মামলুল : পৃ. ৪)।

(ঙ) আল্লামা হাসকাফী রহ. বলেছেন, কোনো মুরতাদ মুসলমান তাওবা করলে তার তাওবা গ্রহণযোগ্য হবে, এমনকি বারবার মুরতাদ হলেও। অর্থাৎ তাওবার কারণে তার দ- মওকুফ হবে। আর কোনো নবীকে কেউ গালি দিয়ে কাফির হলে দ-বিধি অনুযায়ী তার মৃত্যুদ- কার্যকর করা হবে। তার তাওবা আদৌ কবুল করা হবে না। আর কোনো ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালাকে গালি দিয়ে তাওবা করলে তার তাওবা গ্রহণযোগ্য হবে। কেননা, আল্লাহকে গালি দেয়া হাক্কুল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহর হক, আর নবীকে গালি দেয়া হাক্কুল ইবাদ বা বান্দার হক। বান্দার হক শুধুমাত্র তাওবা দ্বারা মাফ হয় না। (রাদ্দুল মোহতার : খ- ৪, পৃ. ২৩১)।

বস্তুত সকল সৃষ্টি ও সকল নবী থেকে আল্লাহপাক রাসূল সা.-কে বেশি ইলম প্রদান করেছিলেন। সৃষ্টির আদি-অন্তের জ্ঞান তিনি প্রাপ্ত হয়েছিলেন আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জতের নিকট হতে, যা আর কারো ভাগ্যে জোটেনি। তাই বলে তিনি গায়েবের কুঞ্জির অধিকারী ছিলেন না। গায়েবের কুঞ্জির জ্ঞান ও অধিকার একমাত্র আল্লাহরই আছে।

এ প্রসঙ্গে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, (ক) অদৃশ্যের কুঞ্জি তারই নিকট রয়েছে, তিনি ছাড়া অন্য কেউ তা জানে না। জলে ও স্থলে যা কিছু আছে তা তিনিই অবগত; তার অজ্ঞাতসারে একটি পাতাও নড়ে না; মৃত্তিকার অন্ধকারে এমন কোনো শস্যকণাও অঙ্কুরিত হয় না অথবা রসযুক্ত কিংবা শুষ্ক এমন কোনো বস্তু নেই যা সুস্পষ্ট কিতাবে অর্থাৎ লাওহে মাহফুজে নেই। (সূরা আল আনয়াম : আয়াত ৫৯)

(খ) হযরত আনাস রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সা. বলেছেন, তোমরা কি জান কে সবচেয়ে বেশি দানশীল? সাহাবাগণ বললেন, আল্লাহপাক ও তদীয় রাসূল ভালো জানেন। তিনি বললেন, আল্লাহতায়ালা সবচেয়ে বড় দানশীল। আর আমার পরে আদম সন্তানের মধ্যে ওই ব্যক্তি বড় দাতা যে ইলম শিখেছে এবং তা বিস্তৃত করেছে। কিয়ামতের দিন সে ‘আমীর’ হিসেবে আগমন করবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ : খ- ১, পৃ. ৩৬-৩৭)।

প্রকৃতপক্ষে সকল নবী ও রাসূল সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত ছিলেন। তারা জান্নাতের শুভ সংবাদ ও জাহান্নামের ভীতি প্রদর্শন করেছেন। তারা ছিলেন উচ্চমানের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। তারা স্বীয় সম্প্রদায়ে পূর্ণ মর্যাদায় সকলের অগ্রণী ছিলেন। তারা ছিলেন সর্বপ্রকার বানোয়াট হতে পবিত্র। দীন প্রচার কার্যের পারিশ্রমিক গ্রহণ হতে বিরত। তারা উম্মাতকে আল্লাহর আয়াত পাঠ করে শোনাতেন এবং কিতাব ও হিকমাতের শিক্ষাদানে নিরত ছিলেন।

এ প্রসঙ্গে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, (ক) হযরত মুহাম্মাদ সা. ছিলেন অঙ্গীকারে সত্যাশ্রয়ী, তিনি ছিলেন রাসূল ও নবী। (সূরা মারিয়াম : আয়াত ৫৪)। (খ) ফিরিশতাগণ বললেন, আমরা তোমার নিকট সত্য সংবাদ নিয়ে এসেছি এবং অবশ্যই আমরা সত্যবাদী। (সূরা হিজর : আয়াত ৬৪) (গ) নিশ্চয়ই হে নবী, আপনি উত্তম চরিত্রের ওপর প্রতিষ্ঠিত। (সূরা আল কলম : আয়াত ৪)। (ঘ) অবশ্যই আমি তাদেরকে এমন কিতাব দিয়েছি যা নিশ্চিত জ্ঞানের দ্বারা বিশদ ব্যাখ্যা করেছি, তা বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য হেদায়াত ও করুণা। (সূরা আল আ’রাফ : আয়াত ৫২)।

আল্লাহ তায়ালা তাদের মধ্যে তাদেরই শ্রেণিভুক্ত একজন রাসূল প্রেরণ করেছেন, যিনি তাদের কাছে আল্লাহর আয়াত পাঠ করে শোনাবেন এবং তাদের পবিত্র করবেন এবং কিতাব ও হিকমাত শিক্ষা দেবেন।

https://www.dailyinqilab.com/article

81
লাল পতাকায় নীল কষ্ট প্রবাসীদের! ভাবছেন এ আবার কেমন কথা, তাই তো? সারা বিশ্বে করোনাভাইরাস সংক্রমিত কোভিড-১৯ রোগটি বিদ্যমান বাস্তবতায় এক আতঙ্কের নাম। চীনের উহান শহরে এর উৎপত্তি; কিন্তু ছড়িয়ে গেছে পৃথিবীর প্রায় সব দেশে। মালয়েশিয়াতেও ছড়িয়েছে করোনা। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো এই দেশটিতেও বসবাস করে লাখ লাখ প্রবাসী। দেশটির পতাকার রঙে আছে লালের মিশ্রণ। যেহেতু লাল অংশ বেশি, আর বেদনার রঙ নীল, প্রবাসীদের কষ্টগুলো তারই শামিল।

করোনাভাইরাস দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ায় বৈশ্বিক মহামারির রূপ নিয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটিকে মহামারি হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। ক্ষুদ্র এই ভাইরাস ছড়িয়ে পৃথিবীর অর্থনীতিকেই নাড়িয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশের রিজার্ভের সবচেয়ে বড় ভরসা রেমিট্যান্স। অর্থনীতির বড় এ মাধ্যমটি আসে সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, কুয়েত, কাতার, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আরব-আমিরাত, ইতালি, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে। অথচ আজ প্রতিটি দেশই করোনার থাবায় কুপোকাত!

আমি নিজেও একজন প্রবাসী। বহু বছর ধরে আছি মালয়েশিয়ায়। আজ যদি আমাকে জিজ্ঞেস করা হয় কেমন আছেন বা কেমন আছে রেমিট্যান্স যোদ্ধারা? আমি বলব, ভালো নেই। সত্যিই ভালো নেই প্রবাসীরা। আমরা কেউ ভালো নেই!

ভালো না থাকার অনেকগুলো কারণ আছে। করোনাভাইরাসের সঙ্গে সম্প্রতি প্রবাস থেকে অনেকে বাংলাদেশে গিয়েছেন। বিশেষ করে ইতালি থেকে যাওয়া এক বাংলাদেশির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। সে থেকেই শুরু হয় প্রবাসীদের বাঁকা চোখে দেখা। ওই ব্যক্তি যেটা করেছে আমি এটা সমর্থন করি না।

আমার দেশ ভালো থাকলে আমরা সবাই ভালো থাকি। আবার আপনি যদি দেখেন, তার কথার যুক্তি আছে। ডিসেম্বর মাস থেকেই এই ভাইরাসটি র সংক্রমণ শুরু হয়। লম্বা সময় পেয়েও কেন এয়ারপোর্টে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রাখা হলো না? কোয়ারেন্টিনে থাকার পরিবেশ ছিল কতটুকু? আপনি ভাবতে পারেন করোনা আক্রান্তে ইতালি মৃত্যুপুরিতে পরিণত হয়েছে। দেশটিতে প্রতিদিন বাড়ছে লাশের সারি। সেখান থেকে যখন একজন লোক দেশে আসে, তার মানসিক অবস্থা কেমন থাকে?

শুধু ইতালি নয় অন্যান্য দেশ থেকে যখন প্রবাসীরা আসে, তাদের অবস্থা মোটেও ভালো না। অনেকে ব্যবসা বা কর্মস্থল হারিয়ে বাধ্য হয়ে চলে আসেন। প্রত্যেকটা মানুষ নিজের প্রতি নিজের পরিবারের প্রতি মায়া আছে। কেউ চায়নি তার পরিবার আক্রান্ত হোক।

চলতি মাসের ১ তারিখে মালয়েশিয়া থেকে ফেরেন চাঁদপুরের জসিম শেখ। এয়ারপোর্টে করোনাভাইরাস পরীক্ষা করা হয়নি। জানানো হয়নি কোনো সতর্কতা। তখন করোনাভাইরাস আক্রান্তের তালিকায় ছিল মালয়েশিয়া। দেশটিতে আক্রান্ত সংখ্যা ছিল ২৯ জন। তিনি সরাসরি চলে যান গ্রামের বাড়িতে। স্বাভাবিকভাবেই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মেলামেশা করেন। হাট-বাজারে যান, ব্যাপারগুলো ছিল ভয়ংকর। যদি জসিম সেদিন আক্রান্ত হয়ে আসতেন, তিনি কী বাঁচাতে পারতেন তার পরিবারের সদস্যদের?

এ রকম হাজারো জসিম প্রতিদিন করোনার শিকার বিভিন্ন দেশ থেকে এসেছেন। হয়তো তাদের অজান্তেই আক্রান্ত হয়ে গেছে প্রিয় মানুষ, প্রিয় পরিবার ও দেশ। তাদের দেওয়া হয়নি কোনো ধরনের সতর্ক বার্তা। এই দায় কার রাষ্ট্রের না প্রবাসীদের? করোনাভাইরাসের আগে কোয়ারেন্টিন ও হোম কোয়ারেন্টিন- শব্দ দুটির সঙ্গে কতজন প্রবাসী পরিচিত ছিল? তারা কী এর আগে কখনো এই সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলেন?

করোনার শিকার দেশ থেকে যেসব ফ্লাইট আসত, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এ বিষয়ে ধারণা বা বিশেষ লিফলেট ফ্লাইটে মধ্যে দেওয়া যেত। যেমন করোনাভাইরাস কী? এর সংক্রমণ কীভাবে হয়? পরিবারকে কীভাবে বাঁচানো যায় বা কতদিন পরিবারের বাইরে থাকা লাগে? এয়ারপোর্টে নেমে আপনার কী কী কাজ সম্পন্ন করা বাধ্যতামূলক ইত্যাদি বিষয়ে।

বিমানে আমরা বিভিন্ন ম্যাগাজিন যেভাবে পাই। আমরা এর কিছুই করতে পারিনি, এই দোষ কী প্রবাসীদের? সম্প্রতি যারা করোনা আক্রান্ত দেশ থেকে এসেছে তাদের জন্য প্রত্যেক জেলায় বাধ্যতামূলক ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা করা যেতে পারত। বিশেষ করে স্টেডিয়াম বা অনেক ডাকবাংলো বা পরিত্যক্ত ভবনে ব্যবস্থা নেওয়া যেত। যেমন করোনা মোকাবিলায় পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের কলকাতায় করা হয়েছে।

এখন অবস্থা এমন, প্রবাসীরা তার পরিবারকে আক্রান্ত করার জন্যই দেশে এসেছে! সত্যিই কি তাই? একজন প্রবাসী যখন পাঁচ-সাত বছর বা তারও বেশি পরিবারের কাছ থেকে দূরে থাকে, অবশ্যই সে চাইবে তার পরিবারের কাছে যেতে। অবশ্যই সে চাইবে, তার পরিবার ভালো থাকুক। তাদের জন্যই তো প্রবাসে পড়ে থাকা বছরের-পর-বছর। দুই সপ্তাহ থাকতে পারবে না? সচেতনতা না দিয়ে, পর্যাপ্ত পরিমাণ ব্যবস্থা না করে ঢালাও ভাবে দোষ দেওয়া হচ্ছে প্রবাসীদের।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী সাম্প্রতিক সময়ে দেশের অর্থনীতির বেশিরভাগ সূচকই নিম্নমুখী৷ তার মধ্যে শুধু ব্যতিক্রম ছিল রেমিট্যান্স৷ চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে ১০৪২ কোটি ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১০ ভাগ বেশি৷ তাহলে কেন প্রবাসীদের বাঁকা চোখে দেখবে জনগণ? প্রবাসী ও তার পরিবারের সুরক্ষার দায়িত্ব কি রাষ্ট্রের নয়? মনে বড় কষ্ট নিয়ে দেখি, যখন প্রবাসীদের বাড়ির সামনে লাল পতাকা টানানো হয়। চায়ের দোকানে প্রবাসীদের যাওয়া নিষেধ করা হয়। চিকিৎসকরা প্রবাসী ও তাদের স্বজনদের চিকিৎসা দিতে অপারগতা জানান। হোম কোয়ারেন্টিনের নামে হয়রানি করা হয়।

বাংলাদেশ থেকে করোনার শিকার দেশ থেকে যেসব পর্যটক ঘুরে এসেছেন, তাদের মধ্যে কতজন কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে? আপনি কীভাবে নিশ্চিত হবেন, তাদের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ হচ্ছে না? তাদের বাড়ির সামনে কেন লাল পতাকা উড়ছে না? তারা শ্রমিক নয় বলে?

দেশকে ভালোবেসে দেশের কথা চিন্তা করে, লক্ষ লক্ষ প্রবাসী করোনাভাইরাস আক্রান্ত দেশে পড়ে আছে। একবার ভেবেছেন তাদের কথা? যেখানে মৃত্যু দরজার সামনে কড়া নাড়ছে। তারপরও দেশে যাওয়ার চিন্তা করেনি! যখন দেখি মাত্র কয়েকদিনের বন্ধে দলবেঁধে সবাই দেশের প্রায় সবাই নিজ নিজ গ্রামে ছুটে যাচ্ছেন। এই কয়টা দিন আপনারা ঘরে থাকতে পারলেন না? লাল পতাকা আপনাদের বাড়িতে কি টানানো হবে?

প্রবাসীরা দেখেছে করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা। আমরা দেখছি মৃত্যুর মিছিল। কী হবে বাংলাদেশের? সুরক্ষিত কী থাকবে আমাদের স্বজনরা? আপনারা আপনাদের দায়িত্ব পালন করছেন, এই ভেবে প্রবাসীরা নীরবে কাঁদছে। নিজেরা অনিশ্চয়তার মধ্যে থেকেও দেশকে সুরক্ষিত রাখতে চাই আমরা। তাই অনুরোধ রইলো, কারও উপর দোষ না চাপিয়ে নিজে সতর্ক হোন। দেশ ও পরিবারকে বাঁচান।

লেখক  : শাহাদাত হোসেন, প্রবাসী সাংবাদিক।


http://www.dainikamadershomoy.com/

82
অসুখ হলেই আমরা ছুটি সিঙ্গাপুর, লন্ডন, যুক্তরাষ্ট্রে। কেউবা আবার সামর্থ্য অনুযায়ী পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে। কিন্তু মহামারি আকার ধারণ করা করোনাভাইরাস সংক্রমিত কোভিড-১৯ এমন এক রোগ যার ভয়ে তটস্থ বিশ্বের তাবড় তাবড় দেশ। নিস্তার নাই কারো। করোনার সংক্রমণে প্রাণ গেছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের চিকিৎসক থেকে শুরু করে আইনপ্রণেতাদেরও। আক্রান্ত হয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীও। যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থা তো আরও নাজুক। এরইমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় সংক্রমণের সংখ্যা লাখ ছাড়িয়েছে। ইউরোপের দেশ ইতালিতেই প্রাণ গেছে ১০ হাজারের বেশি মানুষের। সারা বিশ্বে সংক্রমিত হয়েছে ৬ লাখ ৬২ হাজার ৯৬৭ জন।

কিন্তু বাংলাদেশ? যেখানে মানুষ যত্র-তত্র থুতু আর পানের পিক ফেলে, চায়ের দোকানের মামা সর্দি ঝেড়ে কাপড়ে হাত মুছে চা দেয়, মৌসুমী ইনফ্লুয়েঞ্জার এই সময়ে প্রতিদিন কাউকে না কাউকে রাস্তাঘাটে নাক আঙুল ঢুকিয়ে শুকনো সর্দি পরিষ্কার করতে দেখা যায়, লোকজন মানুষের মুখের সামনে খোলা হাঁচি দিয়ে বসে- সেই বাংলাদেশে আজ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ঘোষিত মহামারি করোনাভাইরাসের নতুন কোনো সংক্রমণ নেই! যে ভাইরাস কিনা করোনা সংক্রমিত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির জলীয় কণা থেকে ছড়ায়। আবার এমনও নয়, এই দেশে করোনা আক্রান্ত কোনো রোগী নেই কিংবা আক্রান্ত দেশ থেকে ভাইরাস নিয়ে এ দেশে কেউ আসেনি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মাত্র সপ্তাহখানেক আগে বিশ্বব্যাপী মহামারি করোনাভাইরাসের বিস্তার আরও দ্রুত ও বিস্তৃত হচ্ছে বলে সতর্ক করেছে।

তাহলে, কীভাবে এত দ্রুত সংক্রমণ ও মৃত্যু শূন্যে নামিয়ে আনা সম্ভব হলো বাংলাদেশে? প্রশ্ন আর সংশয় থেকেই যায়। সেইসঙ্গে ভীতিও। সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের অধীন জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) তাদের সর্বশেষ ব্রিফিংয়ে গতকাল শনিবার জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নতুন কোনো রোগী শনাক্ত হয়নি। সেইসঙ্গে সংক্রমিত ৪৮ জনের মধ্যে ১৫ জন এইমধ্যে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে গেছেন। মৃতের সংখ্যা আগের পাঁচই আছে।

এমন খবরে দেশবাসীর খুশি হওয়ার কথা। কিন্তু তার বদলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। দেশে নতুন সংক্রমণ নেই- এই খবরে মানুষ আতঙ্কিত। কেউ কেউ বলছেন, কবে দেশের মানুষ এত সভ্য হলো যে নিয়মমতো সরকারি নির্দেশনা মেনে চলে দেশ আজ সংক্রমণ মুক্ত! যেখানে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সবাইকে ঘরে থাকার কথা বলার পরও হাজার হাজার মানুষ গাদাগাদি করে বাসে-ট্রেনে-লঞ্চে করে গ্রামে ছুটে গেছে। প্রবাসীরা ভাইরাস নিয়ে দেশে এসে হোম কোয়ারেন্টিন না মেনে যেখানে সেখানে ঘুরে বেড়িয়েছেন।

আবার কেউ ক্ষোভ ঝাড়ছেন- করোনাভাইরাসের লক্ষণ নিয়ে বারবার আইইডিসিআরে ফোন করলেও তারা সাড়া দিচ্ছে না। পরীক্ষা তো পরের কথা।

এক ফেসুবক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘নো টেস্ট, নো রেজাল্ট, নো করোনা, সাবাশ বাংলাদেশ।’

আরেকজন বলছেন, ‘যাদের পরীক্ষা করা প্রয়োজন তাদেরকে কি পরীক্ষা করা হচ্ছে?’

মিস্টার কক্স নামে এক ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘আমার মনে হয় করোনা আক্রান্তের রেজাল্ট পরিকল্পিত। সঠিক রেজাল্ট প্রকাশ করছে না।’

কৌশিক নামে একজন লিখেছেন, ‘করোনা পরীক্ষা করার কিট নাই৷ করোনা পরীক্ষা না করলে আক্রান্ত লোক শূন্যই পাবেন।’

...এই হলো সাধারণ মানুষের মনের অবস্থা। ২৪ ঘণ্টায় ৪২ জনকে পরীক্ষা করে কী করে বলা সম্ভব বাংলাদেশে নতুন কোনো সংক্রমণ নেই! এ নিয়ে মানুষের মধ্যে অবিশ্বাসের সুর আছে। তাদের ধারণা আক্রান্ত অনেক, কিন্তু তথ্য গোপন করা হচ্ছে। এমনটাই হয়ে থাকলে মহাবিস্ফোরণ অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য।

আর যদি সরকার তথ্য গোপন না করে থাকে, এটিই যদি সত্য হয়- তবে বাংলাদেশ করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে উন্নত বিশ্বের কাছে রোল মডেল হতে পারে। গত ৮ মার্চ বাংলাদেশের করোনা সংক্রমণের প্রথম ঘোষণা দেওয়ার মাত্র ২১ দিনের মাথায় দেশে নতুন কোনো সংক্রমণের ঘটনা ঘটেনি। তাহলে বলতেই হয় সাবাশ বাংলাদেশ।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমিয়ে মৃত্যুর হার কমাতে বহুদিন লেগেছে, সেখানে বাংলাদেশের লেগেছে মাত্র এই কদিন। এই ২১ দিনের মাথায় গতকাল শনিবার বাংলাদেশের কোভিড-১৯ রোগে কারও মৃত্যু হয়নি, কেউ সংক্রমিতও নয়। বরং সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।

এক নজরে দেখে নেই বিশ্বের নামীদামি দেশের চিত্র-

যুক্তরাষ্ট্র : করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ে গত ২০ জানুয়ারি। এরইমধ্যে দেশটিতে সংক্রমণ লাখ ছাড়িয়েছে, মৃত্যু হয়েছে ১৭শ’র বেশি মানুষের। সংক্রমণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে এখন দেশটি।

ইতালি : সংক্রমণ শুরুর ২ মাসের মাথায় মৃত্যু হয়েছে ১০ হাজারের বেশি মানুষের। প্রতিদিন শত শত মানুষ মারা যাচ্ছেন ইউরোপের এই উন্নত দেশটিতে। আক্রান্তের সংখ্যায় ৯২ হাজারের বেশি।

চীন : গত বছরের ডিসেম্বরের শেষ দিকে করোনাভাইরাস প্রথম শনাক্ত হয় চীনের উহানে। প্রযুক্তির দিক থেকে এগিয়ে থাকা এই দেশে মৃত্যু হয়েছে ৩ হাজারের বেশি মানুষের। সংক্রমণও ছড়িয়েছে ৮১ হাজার ৪৩৯ জনের মধ্যে। তবে করোনা মোকাবিলায় চীনকে এখন সফল বলা চলে। তারা মৃত্যুর হার কমিয়ে এনেছে, সঙ্গে সংক্রমণও।

স্পেন : স্পেনে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা প্রতিদিন বেড়েই চলেছে। দেশটিতে এ পর্যন্ত ৫ হাজার ৯৮২ জনের মৃত্যু হয়েছে।এ ছাড়া লাগামহীনভাবে প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাড়িয়েছে ৭৩ হাজারের বেশি। স্পেনে ভাইরাসটির এত বিস্তার ঘটার সবচেয়ে বড় কারণ হিসেবে  ভাইরাসজনিত মহামারি মোকাবিলার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম না থাকার কথা বলা হচ্ছে। পাশাপাশি জনস্বাস্থ্য সেবার সরঞ্জামের অসম বণ্টনও একটা কারণ হিসেবে গণমাধ্যমের খবরে উল্লেখ করা হয়।

ভারত : ভারতে সংক্রমণের সংখ্যা হাজার ছুঁই ছুঁই। এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২৪ জনের। গতকালের খবর-দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ পাঞ্জাবের কর্তৃপক্ষ সেখানকার ২০টি গ্রামের অন্তত ৪০ হাজার বাসিন্দাকে কোয়ারেন্টিনে আটক রেখেছে। কারণ সন্দেহ করা হচ্ছে, তাদের সবার দেহে করোনা ভাইরাস সংক্রমিত হয়েছে মাত্র একজনের কাছ থেকে। ইতোমধ্যেই ৭০ বছর বয়সী বলদেব সিং নামে ওই ব্যক্তি সম্প্রতি করোনা ভাইরাসে মারা গেছেন। তিনি ইতালি ও জার্মানি সফর করে এসে কোয়ারেন্টিন না মেনে জনসমাবেশ করেছিলেন।

ইরান : ইরানের ৩১টি প্রদেশে করোনাভাইরাস ছড়াতে সময় নিয়েছে মাত্র ১৬ দিন। অন্যদিকে, ১৬টি দেশ দাবি করেছে ইরান থেকে তাদের দেশে এ ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটে।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খোমেনী ১৯ ফেব্রুয়ারি প্রথমবার ঘোষণা দেন করোনাভাইরাস নিয়ে চিন্তা করার কিছু নেই, এটা নিয়ে ইরানের শত্রুরা বাড়িয়ে বলছে। এক সপ্তাহ পরে ইরানে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়তে থাকে যখন, তখন দেশটির প্রধানমন্ত্রী হাসান রুহানি একই কথা আবারও বলেন।

বিবিসির পারস্য বিভাগের তদন্তে জানা গেছে, একটি নির্দিষ্ট দিনে যে পরিমাণ মানুষ মারা গছে বলে সরকার বলছে তার তুলনায় সংখ্যা ছয়গুণ বেশি। এ পর্যন্ত দেশটিতে আক্রান্ত হয়েছেন সাড়ে ৩৫ হাজার মানুষ। আর মৃত্যু হয়েছে আড়াইহাজার মানুষের।

সৌদি আরব : ব্যাপক সতর্কতা অবলম্বন করার পরও করোনাভাইরাসে এ পর্যন্ত ১২০৩ জন সংক্রমিত হয়েছে। এরই মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৪ জনের।

কসোভো : করোনাভাইরাস সংকটে প্রথমবারের মতো সরকার পতন হয়েছে ইউরোপের দেশ কসোভোয়। কসোভা স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের বরাত দিয়ে খবরে বলা হয়, দেশটিতে এ পর্যন্ত ৯১ জন করোনাভাইরাসে রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ ছাড়া ৭ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে।

রিজুয়ানা রিন্তী : সাংবাদিক

http://www.dainikamadershomoy.com/

83
করোনাভাইরাস আতঙ্কের মধ্যেই বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে অসংখ্য ভ্রান্ত ধারণা, যা ইতিমধ্যেই মানুষকে ফেলেছে বিপাকে। আবার এসব গুজবে কান দিয়ে প্রাণও দিয়েছে বেশ ক’জন। যেহেতু করোনাভাইরাস প্রতিরোধে কোনো প্রতিষেধক এখনো তৈরি হয়নি, তাই এটি নিয়ে গুজবের সংখ্যাও নেহাত কম না।

এই তো ক’দিন আগে, যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনার এক ব্যক্তি করোনার চিকিৎসায় নিজে থেকেই ক্লোরোকুইন ফসফেট খেয়ে মারা গেছেন। একই ওষধ সেবনে তার স্ত্রীও মৃত্যুশয্যায়। এছাড়াও গুজবের কারণে ইরানে অ্যালকোহল পান করে প্রায় ৩০০ জন মানুষ মারা গেছে। আর অসুস্থ হয়েছে প্রায় এক হাজার লোক।

অনেকের মধ্যে এখনো একটি ভ্রান্ত ধারণা লক্ষ্য করা যায়, সারা গায়ে অ্যালকোহল বা ক্লোরিন ছিটালে নাকি করোনাভাইরাস মরে যায়। আসলেই কি তাই!
জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআর’র পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস শরীরে প্রবেশ করলে সারা গায়ে অ্যালকোহল বা ক্লোরিন ছিটিয়ে এটি মেরে ফেলা সম্ভব না। অ্যালকোহল বা ক্লোরিন জীবণুনাশক হলেও যথোপযুক্ত নির্দেশনা ছাড়া এগুলো ব্যবহার করা উচিৎ নয়। এসব পদার্থ চোখ-মুখ ইত্যাদিসহ কাপড়ের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই এগুলো ব্যবহারে সবাইকে সতর্ক থাকার কথাও বলা হয়েছে।

http://www.dainikamadershomoy.com/

84
দিন দিন করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলছে। ভাইরাসটি নিয়ে ইতিমধ্যেই জনমনে তৈরি হয়েছে আতঙ্ক। মহামারিতে রূপ নেওয়া এই রোগে দ্রুত আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধদেরই বেশি। আর করোনায় আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি মারা গেছেন বয়স্করা।

চীন থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বিশেষ করে যারা দীর্ঘস্থায়ী চিকিৎসা নিচ্ছেন, তাদের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। আর বয়স্কদের মধ্যে দুর্বল প্রতিরোধক্ষমতা ও স্বাস্থ্যের অবনতির কারণে সহজেই তারা এই রোগটিতে আক্রান্ত হচ্ছেন। কেন বৃদ্ধরা এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন, এর সঠিক উত্তর এখনও কারও জানা নেই। হতে পারে, বয়সজনিত কারণে। আর এই সময় রোগ প্রতিরোধক্ষমতা অনেকটাই কমে যায়। যার কারণে বয়স্করা রোগ বা জীবাণুর সঙ্গে লড়তে পারেন না।

তাই বিশেষজ্ঞরা মনে করছে, ৬৫ বছর বা এর ঊর্ধ্বে যাদের বয়স তাদের বেলায় করোনার ঝুঁকি অনেক বেশি। তাই যাদের দৈহিক সমস্যা রয়েছে, তারা যেন জনসমাগম এলাকা এড়িয়ে চলেন এবং বাড়িতেই থাকেন। বয়স্কদের সাবধানে রাখার বেশ কয়েকটি পরামর্শও দেওয়া হয়েছে-

১. ওষুধসহ প্রয়োজনীয় জিনিস মজুত রাখা

প্রয়োজনীয় জিনিস ও ওষুধ আগে থেকে কিনে বাসায় রাখতে হবে। দুর্বল ও অসুস্থ বৃদ্ধদের আমেরিকার সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) সুপারিশ করেছে, বেশ কিছু সপ্তাহের ওষুধ ও অন্যান্য জিনিস বাড়িতে রাখতে। সিডিসিও তাদের নাগরিকদের বলেছে, প্রয়োজনীয় খাদ্য, ওষুধ এবং অন্যান্য চিকিৎসা পণ্যের সরবরাহগুলো আগে থেকে মজুত করে রাখতে। আর এই বিষয়ে পরিবারের খেয়াল রাখাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাসার বয়স্কদের দিকে একটু সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিন।

২. পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন

করোনাভাইরাস সচেতনতার জন্য সবাইকে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে, ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান-পানি দিয়ে ঘন ঘন হাত ধুতে আর জনসমাগম এড়িয়ে চলতে। বাড়ি ও কর্মক্ষেত্রের জায়গাও যেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে, তা নিশ্চিত থাকতে হবে। এমনকি ইলেকট্রনিকসের জিনিসগুলোও নিয়মিত পরিষ্কার করুন।

৩. কোনো জিনিস শেয়ার নয়

যৌথ পরিবারে একসঙ্গে সবাই থাকেন। তাদের এই সময়ে বা মাঝে-মধ্যে সর্দি-কাশি হয়। একেকজনের ঝুঁকি একেক ধরনের হতে পারে। তাই এই মুহূর্তে পরিবারের উচিত ব্যক্তিগত সব জিনিসপত্র আলাদা ব্যবহার করা। যেমন খাবার, পানির বোতল, বাসনকোসন ইত্যাদি। প্রয়োজন হলে বাড়ির একটি আলাদা ঘরে অসুস্থ সদস্যকে রেখে দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে আলাদা শৌচাগারের ব্যবস্থাও করলে আরও ভালো হয়।

আবার অনেক বৃদ্ধই আছেন,  যারা একা থাকেন। সে ক্ষেত্রে কীভাবে তারা নিজেদের যত্ন নেবেন, তা আগে থেকেই পরিকল্পনা করে নিতে হবে। ফোন, ই-মেইল কীভাবে ব্যবহার এবং জরুরি ফোন নম্বরগুলো হাতের কাছে রাখবেন।

৪. চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে চলুন

করোনা নিয়ে আতঙ্ক না বাড়িয়ে নিয়মিত চিকিৎসক-বিশেষজ্ঞদের নির্দেশ মেনে চলতে হবে। বাড়ির বাইরে না বেরিয়ে বাড়িতেই থাকুন। এই সময় বিভিন্ন ধরনের শরীরচর্চা করতে পারেন। এ সময় স্বাস্থ্যকর খাবার খুব প্রয়োজন। সর্দি-কাশি হলেও চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

৫. আতঙ্ক নয়, আলোচনা করুন

অযথা আতঙ্কিত না হয়ে করোনা সম্পর্কে পরিবার-স্বজনদের সঙ্গে আলোচনা করুন। কেউ আক্রান্ত হলে আগাম প্রস্তুতি কী হবে, তা নিয়েও পরিকল্পনা করে রাখুন। ভাইরাসটি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে হবে। বিশেষ করে, বয়স্কদের ক্ষেত্রে এটা খুবই জরুরি। বৃদ্ধদের মনোবল বাড়াতে হবে, তাদের আশ্বস্ত করুন- এ রোগে ভয়ের কিছু নেই।

তথ্যসূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস, সিএনএন

85
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষে সবাইকে ঘরে দোয়া ও নামাজ আদায় করার আহ্বান জানিয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। আজ শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ আহ্বান জানান ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক আনিস মাহমুদ।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশে করোনাভাইরাসের বিস্তৃতি রোধকল্পে সরকার সকল সরকারি বেসরকারি অফিস ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। অত্যন্ত জরুরি প্রয়োজন ছাড়া জনসাধারণকে ঘরের বাইরে বের হতে নিষেধ করা হয়েছে। সব ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় জনসমাগমে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। সকলকে হোম কোয়ারেন্টিন পালন করতে কঠোরভাবে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকেও মসজিদে জুমা ও পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজে মুসল্লিদের অংশগ্রহণ সীমিত রাখার আহ্বান করা হয়েছে। অযু, নফল ও সুন্নত নামাজ বাসায় আদায় করার অনুরোধ করা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, এই সংকটকালীন পরিস্থিতিতে দেশের নাগরিকদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তার স্বার্থে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক প্রদত্ত করোনাভাইরাস সম্পর্কিত দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক ঘোষিত নির্দেশনা মান্য করে আগামী ৯ এপ্রিল দিবাগত রাতে নিজ নিজ বাসস্থানে বসে পবিত্র শবে বরাতের ইবাদত যথাযথ মর্যাদায় আদায় করার জন্য সকলকে বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হয়েছে। 

আরবি শাবান মাসের ১৫তম রাতে (১৪ শাবান দিবাগত রাত) শবে বরাত পালিত হয়। সেই হিসেবে আগামী ৯ এপ্রিল দিবাগত রাতই শবে বরাত। শবে বরাতের পরদিন বাংলাদেশে নির্বাহী আদেশে সরকারি ছুটি। এবার এ ছুটি পড়েছে ১০ এপ্রিল (শুক্রবার), অর্থাৎ সাপ্তাহিক ছুটির মধ্যেই।

শাবান মাস শেষেই মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতরের আনন্দ বারতা নিয়ে শুরু হয় সিয়াম সাধনার মাস রমজান।

‘ভাগ্য রজনী’ হিসেবে পরিচিত লাইলাতুল বরাতের পুণ্যময় রাতটি বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের মুসলমানরা নফল নামাজ, কোরআন তিলাওয়াতসহ ইবাদত বন্দেগির মাধ্যমে কাটিয়ে থাকেন।

http://www.dainikamadershomoy.com/

86

আসুন, আমরা প্রতিরোধ গড়ে তুলি। করোনাভাইরাসকে হারিয়ে দিই। ছবি: প্রথম আলো
আসুন, আমরা প্রতিরোধ গড়ে তুলি। করোনাভাইরাসকে হারিয়ে দিই। ছবি: প্রথম আলো
হোপ ফর দ্য বেস্ট, প্রিপেয়ার ফর দ্য ওয়ার্স্ট। আমরা ভালো কিছুই আশা করব, কিন্তু আমাদের প্রস্তুতি থাকতে হবে সবচেয়ে খারাপের জন্য। আশার কথাগুলো আগে বলে নিই।

আমরা চীনের কাছের দেশ। চীনের উহান থেকে করোনার উৎপত্তি। তা ইতালিকে বানাল মৃত্যুপুরী, স্পেন শয্যাশায়ী, নিউইয়র্কে ঘরে ঘরে কান্নার রোল। বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি এখনো ইউরোপ–আমেরিকার মতো খারাপ নয় কেন?


ভারতের হায়দরাবাদের এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব গ্যাস্ট্রোএনটেরোলজির (এআইজি) চেয়ারম্যান ও পদ্মভূষণপ্রাপ্ত জি পি নাগেশ্বর রেড্ডির একটা সাক্ষাৎকার প্রথম আলো অনলাইন প্রকাশ করেছে। তিনি বলেছেন, এ ভাইরাসকে জয় করা সম্ভব। তিনি মনে করেন, স্পেনে করোনাভাইরাসের যে প্রকারটা ছড়িয়েছে, ভারতে এসে তা খানিকটা চরিত্র বদলে ফেলেছে। সম্ভবত এই অঞ্চলের ভাইরাসটা একটু দুর্বল।

এর বাইরে আছে গরম ও আর্দ্র আবহাওয়ার তত্ত্ব। এমআইটির একটা গবেষণা আছে, সম্ভবত করোনাভাইরাস শীতের দেশে বেশি ভয়ংকর। তবে এরই মধ্যে আরবদেশে, আফ্রিকায় এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে শীত-গরমের তত্ত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে শুরু করেছে। আর নিউইয়র্ক আইটির এক গবেষণাপত্র বলছে, সম্ভবত সার্বজনীন বিসিজি বা যক্ষ্মার টিকা দেওয়া দেশগুলোতে করোনায় মৃত্যুর হার কম। বাংলাদেশে আমাদের সবারই এ টিকা দেওয়া আছে।

সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। জনগণকে ঘরে থাকতে বলেছে। মানুষ মানুষের পাশে এগিয়ে আসছে। বেসরকারি উদ্যোগে পিপিই বানানো হচ্ছে। বেসরকারি উদ্যোগে বড় হাসপাতাল নির্মাণের কথা শোনা যাচ্ছে।

খারাপের জন্য প্রস্তুত থাকুন

বলা হচ্ছে, একটা জনগোষ্ঠীর শতকরা ৭০ ভাগের যদি একবার করে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঘটে যায়, তারা ইমিউন হয়ে যাবে, এরপর আর ভাইরাস সুবিধা করতে পারবে না।

ধরা যাক, যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যা ৩২ কোটি। ৭০ ভাগ লোককে আক্রান্ত হতে হবে এই ভাইরাসকে কাবু করতে। কমবেশি সংখ্যাটি ২২ কোটি। ২২ কোটির মধ্য ২ ভাগ মারা যাবে (আল্লাহ না করুন)। তাহলে মারা যাবে ৪৪ লাখ। এই মোট সংখ্যাটা এক বছরে হতে পারে, দুই বছরে হতে পারে।

এখন বাংলাদেশের জন্য হিসাবটা আপনি করে নিন।

নিউইয়র্ক মৃত্যুপুরী হয়ে গেছে। নিউইয়র্কের পরিস্থিতির এই দ্রুত অবনতি ঘটেছে চার সপ্তাহের মধ্যে। মার্চের ১ তারিখে নিউইয়র্ক স্টেটে করোনাবাহী ছিলেন একজন, ৮ মার্চ ১০৮ জন, ১৬ মার্চ আক্রান্ত ৯৫০ জন (মৃত্যু ৭)। ১ এপ্রিলে এসে আক্রান্ত ৮৩ হাজার ৭১২, মৃত্যু ১ হাজার ৯৪১।

আমাদের দেশে করোনাবাহী মানুষ এখানে-ওখানে আছেন। আমরা যেভাবে বাসে লঞ্চে ফেরিতে ট্রেনে গাদাগাদি করে চলাচল করেছি, যেভাবে ত্রাণসামগ্রী নেওয়ার জন্য গায়ে গা লাগিয়ে ভিড় করে দাঁড়িয়েছি, অবশ্যই করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে। এর কুফলটা আমরা দেখতে পাব এক মাস পরে। এক মাসে নিউইয়র্কে বেড়েছে ৮০ হাজার গুণ। আমাদের দেশে যদি ৫০টাই পরীক্ষিত কেস হয়ে থাকে, এক মাস পর এটা হওয়ার শঙ্কা ৪০ হাজার। এটা জ্যামিতিক হারে বাড়লে পরের এক মাসে করোনাক্রান্ত লাখ লাখ ছাড়িয়ে যাবে। এক লাখ আক্রান্ত হওয়া মানে ৩৩ হাজার এটা টের পাবেন না, নীরবে বহন করবেন। ৮০ হাজার বাড়িতেই সেরে উঠবেন। বাকি কুড়ি হাজারের হাসপাতাল লাগবে। ৩ হাজারের ভেন্টিলেটর আইসিইউ লাগবে। এই হিসাব এক লাখ আক্রান্ত ধরে। সংখ্যাটি যদি দুই লাখ হয়, তিন লাখ হয়? আমাদের সরকারি আইসিইউ বেড আছে ৪৩২, বেসরকারি ৭৩৭ (মার্চের ২২ পর্যন্ত)। সেসব বেডে অন্য রোগী আছেন।

আমরা এই মহামারি রোধ করতে পারব না। এখান থেকে ওখান থেকে মৃত্যুর খবর আসবে। তখন আমরা কী করব? আবার সাধারণ ছুটি ঘোষণা নাকি পুরোপুরি লকডাউন করব? কী হবে আমাদের অতিদরিদ্রদের? অসুস্থতা, চিকিৎসাব্যবস্থা ভেঙে পড়া, অন্য রোগেরও চিকিৎসা না পাওয়া, প্রসূতি মায়েদের সেবা না পাওয়া, অর্থনৈতিক মন্দা, সামাজিক অস্থিরতা, রাজনৈতিক অস্থিরতা আমাদের ভবিতব্য?

তাহলে কী করব?

এক. কেউ ঘর থেকে বের হতে পারবে না, বের হলে একা বের হবে, তাকে বলতে পারতে হবে কোন জরুরি কাজে সে বের হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর হতেই হবে। করণীয়, ঘন ঘন সাবান–পানিতে হাত ধোয়া। বাইরে বেরুলে মাস্ক পরা।

দুই. ব্যাপকভাবে পরীক্ষা করা। পরীক্ষা, পরীক্ষা, পরীক্ষা। স্বচ্ছতা, স্বচ্ছতা, স্বচ্ছতা। যদি জানি আমি আক্রান্ত, তাহলে সাবধান হতে পারব। যদি জানি আক্রান্ত নই, তাহলেও সাবধান হয়ে চলব।

তিন. গরিব মানুষের বাড়িতে বাড়িতে খাবার পৌঁছে দিন। মোবাইলের মাধ্যমে তাদের ঘরে ঘরে টাকা পৌঁছে দিন (এতে দুর্নীতি কমবে)। তাদের ডেকে এনে দয়া করে জড়ো করবেন না। কেন্দ্রীয় ত্রাণ মনিটরিং এবং পরিচালনা সেল করুন। সব সাহায্য, অনুদান সেখানে জমা করুন। সমন্বয় করা দরকার। বস্তির সামনে সাহায্যের ট্রাক নিয়ে গেলে বস্তির মানুষ হাজারে হাজারে ছুটে আসবেই। লকডাউনের উদ্দেশ্যই ভেস্তে যাবে।

তিন. ডাক্তার ও সেবাদানকারীদের রক্ষা রসদ দিন। তাঁরা নিরাপদ থাকলে বাকিরা সেবা পাবেন। শুধু যে করোনার সেবা লাগবে তা তো নয়, অন্য রোগেরও সেবা লাগবে, চিকিৎসা লাগবে।

চার. করোনাবাহী মানুষকে ভয় পাওয়া, ঘৃণা করা বন্ধ করতে হবে। আজকে আমরা অন্যকে দেখে পালাচ্ছি, কালকে আমার হলে আমি কী করব? দশ হাত দূরের হাসপাতালের বাতাস থেকে আমার দেহে করোনাভাইরাস আসবে না। কাজেই হাসপাতাল বানাতে দিন। দাফন করতে দিন।

সরকারের আশু, মধ্যবর্তী, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা

সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে জনগণকে বের না হতে বলেছে। এখন তা যেমন শিথিলভাবে চলছে সেভাবেই চলবে, নাকি পুরো লকডাউন করতে হবে? তা কত দিন? ভারত ২১ দিন করছে।

ডাক্তার নাগেশ্বর রেড্ডি ভারতের প্রেক্ষাপটে বলেছেন, ‘করোনা নিয়ে যে ভীতি ছড়িয়েছিল, এর পরিপ্রেক্ষিতে লকডাউন খুবই দরকার ছিল। কিন্তু দীর্ঘ লকডাউন বড় সমস্যা তৈরি করতে পারে। এটি তিন সপ্তাহের বেশি হওয়া উচিত নয়।’

হাসপাতাল লাগবে। করোনা রোগীর জন্য জেলায় জেলায় আলাদা হাসাপাতাল, ওয়ার্ড, আইসিইউ লাগবে। আগামী এক বছর আমাদের এর সঙ্গেই বসবাস করতে হবে।

অর্থনীতির জন্য বিশেষজ্ঞ কমিটি করুন। স্বল্পমেয়াদি, দীর্ঘমেয়াদি, আপৎকালীন পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ নিন।

আসলে কী হবে, আমরা এক মাস পরে একটা ছবি পাব।

সবচেয়ে ভালো কী হতে পারে?

১. এই ভাইরাস আমাদের দেশে এসে নিজেকে বদলে কম ক্ষতিকর করেছে। গরমে আর্দ্রতায় সে আরও দুর্বল হবে। আমরা এ যাত্রা সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যাব।

২. আগামী ১০ দিন আমরা কঠোর লকডাউন, সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং করব। সারা দেশের সব আক্রান্ত মানুষের দেহ থেকে ভাইরাসটা মরে যাবে। (এটা অসম্ভব। কারণ, আমরা কথা শুনি না। কিন্তু বেশির ভাগও যদি কথা শুনি, মহাবিস্তারটা পিছিয়ে দেওয়া যাবে।)

নাগরিকদের বলি, ঘরে থাকুন। ঘরে থাকাই দেশপ্রেম। মোবাইলের মাধ্যমে গরিব আত্মীয়স্বজন, পাড়া প্রতিবেশীকে টাকা পাঠান।

আসুন, আমরা প্রতিরোধ গড়ে তুলি। করোনাভাইরাসকে হারিয়ে দিই। সরকারের অনেক কিছু করার আছে। কিন্তু আমার করণীয় মাত্র একটা, নিজেকে ঘরে রাখা।

আনিসুল হক: প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক ও সাহিত্যিক

https://www.prothomalo.com/opinion/artic

87
কয়েক দিন আগে বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের বিস্তার দেখে, পাশের দেশ ভারতের গৃহীত পদক্ষেপগুলো দেখে এবং সম্ভবত জনগণের স্পন্দন আর আতঙ্ক বুঝতে পেরে বাংলাদেশ সরকারও জাতীয় পর্যায়ে ‘বন্ধের’ ঘোষণা দিল! কিন্তু ঢাকার শাটডাউন বা জাতীয় ছুটি আর উহানের লকডাউন এক কথা না! ঢাকা শহর লকডাউন করে দেওয়ার কথা বলে কার্যত যা হলো, বাঁধ খুলে দেওয়া হলো। দুই সপ্তাহ ছুটি পেয়ে ঢাকার মানুষগুলো পাগলের মতো ঢাকা ছেড়ে সারা দেশের আনাচ-কানাচে গ্রামেগঞ্জে ছড়িয়ে পড়ল! এবং ঢাকা শহরের এই মানুষগুলো শহর ছাড়ল লঞ্চ, স্টিমার, বাস, ট্রেনে গাদাগাদি করে। এর ফলে যদি ঢাকা শহরের মানুষগুলো করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে থাকে, তবে ভাইরাসটা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ল। উহান নিয়ে চীন সরকার যা করল, আমরা ঠিক তার উল্টাটা করলাম।

ভেন্টিলেটর কাজে দেবে কি?
এখন একটু অন্য প্রসঙ্গে আসি। বিপদের সময় দেশের মানুষের যৌথ প্রতিরোধচেতনা আর শুভচেষ্টার প্রকাশ পাওয়া যায়। দেশ-বিদেশে দেশের জন্য মেকানিক্যাল ভেন্টিলেটর/কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্র সংগ্রহ অথবা নিজেরা লোকালি তৈরির চেষ্টা চলছে! অনেকে অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা চালাচ্ছে দেশের জন্য ভেন্টিলেটর কেনার জন্য! তবে মেকানিক্যাল ভেন্টিলেটরের অর্থ আর প্রচেষ্টা ব্যয় করার আগে আমাদের কিছু মৌলিক ধারণা থাকা দরকার! নিচে এ পূর্বশর্তগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করা হলো:

১. করোনাভাইরাসে আক্রান্ত লোকজনের মধ্যে ৮০ শতাংশের কম গুরুতর অসুখ হয়, সাধারণ ঠান্ডার মতো। এরা এমনি এমনি ভালো হয়ে যায়।


২. বাকি ২০ শতাংশ রোগীর নিউমোনিয়া হয়ে যায় এবং এদের অনেকের রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায়। এদের অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়।

৩. ওপরের ২০ শতাংশের মধ্যে ৫ ভাগের অবস্থা গুরুতর হয়ে যায় (ইতালির অভিজ্ঞতায় তা ১০ ভাগ পর্যন্ত হতে পারে) । এই পাঁচ ভাগ রোগীর জীবনসংহারী এআরডিএস ডেভেলপ করে, এদের কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্র এবং আইসিইউর প্রয়োজন হয়।

৪. এই যে শেষ ৫ শতাংশ রোগীর কথা বললাম, তাঁদের মধ্যে শতকরা ৫০ থেকে ৮০ ভাগকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি সর্বাধিক উন্নত আইসিইউর দেশ চীন, ইতালি বা যুক্তরাষ্ট্রে!

৫. বাংলাদেশে বর্তমানে আইসিইউ বেডের সংখ্যা অত্যন্ত অপ্রতুল। সরকারি হাসপাতালে বিছানা খালি পাওয়া চাঁদ হাতে পাওয়ার মতো। বেসরকারি করপোরেট হাসপাতালগুলোতে যে পরিমাণ আইসিইউ বেড আছে তার সংখ্যা নগণ্য এবং সেগুলোর ব্যয় বহন করা সাধারণ মানুষের জন্য অসম্ভব।

৬. দেশের আইসিইউগুলো ওপেন ওয়ার্ডের মতো। কোনো আইসোলেশন বেড নেই, নেগেটিভ প্রেশারের ব্যবস্থা নেই। ওখানে যেসব রোগী ভর্তি হচ্ছে, তার একটা বড় অংশ অতিদ্রুত প্রচণ্ড রেজিস্ট্যান্ট ব্যাকটেরিয়া দিয়ে সংক্রমিত হয়ে যাচ্ছে আর ওই ইনফেকশন থেকেই মারা যাচ্ছে। এখন একজন করোনাভাইরাসের রোগীকে হাসপাতালের আইসিইউয়ে ভর্তি করলে সেই রোগী আইসিইউর সব রোগীকে সংক্রমিত করে দেবে এবং নিজে রেজিস্ট্যান্ট ব্যাকটেরিয়া দিয়ে সংক্রমিত হয়ে যাবে।

আমাদের ফোকাস করতে হবে সেই ৯৫ শতাংশ রোগী, যাদের আইসিইউতে যাওয়ার প্রয়োজন পড়বে না। আইসিইউর এই ৫ শতাংশ রোগীকে চিকিৎসা দেওয়ার অবকাঠামো ও যথেষ্ট প্রশিক্ষিত জনবল এই মুহূর্তে আমাদের নেই। এই অবকাঠামো ও মানবসম্পদ তৈরির সময়ও আমাদের হাতে নেই। আর ওদের ভালো করতে গিয়ে আইসিইউতে বাকি সব রোগীকে সংক্রমিত করার কোনো যুক্তি নেই। তাই এই মুহূর্তে আইসিইউ রোগীর কথা আমাদের ভুলে যেতে হবে।

মেকানিক্যাল ভেন্টিলেশন বা কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্র কিনে বা বানিয়ে আমরা কি রাতারাতি দেশের আইসিইউর ক্যাপাসিটি বাড়িয়ে দিতে পারব? আমাদের মনে রাখতে হবে, ভেন্টিলেটর একটা জটিল ধাঁধার একটা খণ্ড মাত্র। এই ধাঁধার বাকি খণ্ডগুলো কী? ওগুলো কি আমাদের হাতে আছে?

ভেন্টিলেটর ফিট করার জন্য ঘরের দেয়ালে হাই প্রেশার অক্সিজেন সেটআপ লাগবে, দেয়ালে অটোক্লেভ করা পানির সোর্স থাকতে হবে। কয়টা হাসপাতালের কয়টা কক্ষে এই ব্যবস্থা আছে?

এসব করে, ভেন্টিলেটর কিনে বা বানিয়ে হয়তো রোগীকে ভেন্টিলেটরে রাখলাম। কিন্তু এই রোগীকে তো যেকোনো কক্ষে বা গণ আইসিইউ ওয়ার্ডে রাখা যাবে না। কোভিড আক্রান্ত রোগীকে রাখার জন্য নেগেটিভ প্রেশার আইসোলেশন রুম লাগবে।

রোগীকে ভেন্টিলেটরে দিলে ঘুম পাড়িয়ে রাখার জন্য প্রোপোফল, ফেন্টানিল টাইপের সিডেটিভ ওষুধ লাগবে। আমেরিকার বিভিন্ন শহরে এত রোগী ভেন্টিলেটরে আছে যে ওই ওষুধগুলোর চরম ঘাটতি হয়ে গেছে। এই ওষুধের সরবরাহের কী অবস্থা বাংলাদেশে? আমাদের স্বাস্থ্যমন্ত্রী কি ওষুধ ব্যবসায়ী সমিতির সঙ্গে বৈঠক করে এর সরবরাহ নিশ্চিত করেছেন?

একটা আইসিইউর মূল জীবনীশক্তি হচ্ছে এর প্রশিক্ষিত নার্স। আমাদের বড় বড় আইসিইউতে তাই প্রশিক্ষিত নার্সের মারাত্মক সংকট।এতগুলো নতুন ভেন্টিলেটর বানিয়ে আইসিইউ বেড যে বাড়াব, তত নার্স কোথায় পাব? ভেন্টিলেটরের মতো নার্স তো কেনা যাবে না। আর দুদিনে তো একটা আইসিইউ নার্স বানানো যাবে না!

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যারা ভেন্টিলেটরে আছে, তারা অবধারিতভাবে করোনাভাইরাস সংক্রমণের দুটো জটিলতায় ভুগছে। এআরডিএস আর সাইটোকাইন স্টর্ম। এগুলো খুব কমপ্লিকেটেড এবং ডেলিকেট ক্রিটিক্যাল ইলনেস, যা চিকিৎসা করার জন্য বিশেষভাবে ট্রেইনড সুপারস্পেশিয়ালাইজড ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিনে ট্রেইনড চিকিৎসক লাগবে। অ্যানেসথেসিয়া বিশেষজ্ঞরা হয়তো কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্র সংযোজন করে দিয়ে গেলেন, কিন্তু এই এআরডিএস রোগীর ডেলিকেট লাইফ সাপোর্ট ভেন্টিলেটর মেনটেইন করার অভিজ্ঞতা অ্যানেসথেসিয়া বিশেষজ্ঞদের নেই।

একটা রোগীকে ভেন্টিলেটরে নেওয়ার সময় যাঁরা তাকে ইনটিউবেট করবেন, তাঁরা ভাইরাস অ্যারোসল দিয়েও সংক্রমিত হওয়ার জন্য খুব উচ্চ ঝুঁকিতে থাকবেন। এবং ভেন্টিলেটরে কোনো রোগী থাকলে রোগীকে নড়াচড়া করার সময় ক্ষণিকের জন্য হলেও ভেন্টিলেটর বিচ্ছিন্ন হয়ে শুধু নার্স-চিকিৎসক-ওয়ার্ডবয় না, অন্য রোগীরাও এই ভাইরাস দিয়ে সংক্রমিত হয়ে যেতে পারে।

চীন তাদের সব কেন্দ্রীয় সরকারি ক্ষমতা/ভেন্টিলেটর/বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক/আইসিইউ নার্স উহানে পাঠিয়েছে আইসিইউ সাপোর্টের জন্য। এত করেও ওরা এমনকি ৫০ ভাগ আইসিইউ রোগীকেও বাঁচাতে পারেনি। ইতালি আর যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম দিকের সংখ্যা তো আরও খারাপ। অনেক ক্ষেত্রে মৃত্যুর হার আরও অনেক বেশি। এই পর্যায়ের আরডিএস রোগীদের সিংহভাগ ইতালি, ব্রিটেন, আমেরিকা, স্পেন বাঁচাতে পারছে না—বাংলাদেশের আইসিইউতেও এরা বাঁচবে না। এরা নিজেরা তো মারা যাবেই, সঙ্গে আরও কিছু নার্স-চিকিৎসক ও রোগীকে ইনফেক্ট করে দিয়ে যাবে। আসুন আমরা বাকি ৯৫ শতাংশের কথা বলি, যাদের বাঁচানো যাবে কিন্তু যাদের জন্য ভেন্টিলেটর লাগবে না। ওদের খালি লাগবে যথেষ্ট পরিমাণ অক্সিজেন সরবরাহ এবং সরবরাহটা খুব সহজেই নিশ্চিত করা যায়।

টেস্ট কিট বেসরকারি খাতে ছেড়ে দিন
কমিউনিস্ট চীনের সিডিসি বলুন বা যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসি বলুন, কোরিয়া বলুন আর সিঙ্গাপুর বলুন—সবাই কিন্তু প্রাইভেট সেক্টরের ওপর নির্ভর করেছে টেস্ট কিটের সরবরাহ স্থিতিশীল রাখার জন্য। কোথাও সরকার এটা নিজের হাতে ধরে রাখেনি। এই আরটিপিসি ডেভেলপ করা রকেট সায়েন্স না, বাংলাদেশের প্রাইভেট ল্যাবগুলো এসব করতে পারবে। সরকারকে শুধু উদ্যোগী হয়ে প্রধান প্রাইভেট ল্যাবগুলোর সঙ্গে বসতে হবে, একটা বিধিবিধানের আওতায় আনতে হবে আর একটা মূল্য নির্ধারণ করে দিতে হবে। এমনকি সরকারি হাসপাতালগুলো স্যাম্পল কালেক্ট করে বেসরকারি ল্যাব থেকে টেস্ট করিয়ে আনতে পারে।

জাতীয় অভিভাবকের গুরুত্ব
বাংলাদেশ সরকারের অনতিবিলম্বে একজন ন্যাশনাল করোনাভাইরাস সমন্বয়ক নিয়োগ দেওয়া দরকার! এ ধরনের মহামারি ধরনের বিপর্যয়ের সময় ন্যাশনাল মুখপাত্র হিসেবে একজন জ্যেষ্ঠ শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিত্ব লাগে, যাঁর পেছনে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং দেশের মানুষজন ঐক্যবদ্ধ হতে পারবেন এবং যাঁর কথার ওপর চিকিৎসক/সাধারণ মানুষ সবাই আস্থা রাখতে পারবেন!

বর্তমানে যিনি এই দায়িত্ব পালন করছেন তিনি হয়তো করিতকর্মা এপিডেমিওলোজিস্ট। উনি ওনার দায়িত্ব পালন করতে থাকুন! কিন্তু মুখপাত্র ও রাষ্ট্রীয় সব পদক্ষেপের সার্বিক নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য এবং সরকারকে পরামর্শ দেওয়ার জন্য এখন দরকার একজন চিকিৎসক মহিরুহকে, যিনি বিতর্কের ঊর্ধ্ব থাকবেন এবং জাতির ক্রান্তিকালে অভিভাবকের ভূমিকা পালন করবেন!

এই টাস্কফোর্সের প্রথম জরুরি কাজ হবে সরকারের করোনাভাইরাস ডায়াগনোসিস ও চিকিৎসা করার পদক্ষেপগুলো মানুষকে জানানো এবং টেস্ট করার পদ্ধতি ও তার প্রাপ্যতা বিষয়টা পরিষ্কার করা। এই টাস্কফোর্সের দ্বিতীয় কাজ হবে অতি দ্রুত দেশের চিকিৎসক সমাজের জন্য করোনাভাইরাস ম্যানেজেমেন্টের একটা অন্তর্বর্তীকালীন পেশাদারি গাইডলাইন প্রণয়ন করা। একটা সন্দেহভাজন রোগী এলে কী করতে হবে, ডায়াগনোসিস কীভাবে করবে, ডায়াগনোসিস হলে কী করতে হবে ইত্যাদি।

এই টাস্কফোর্স যেসব ওষুধ লাগবে, তার সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসবে, জরুরি পাবলিক হেলথ সংক্রান্ত মেসেজ জনগণকে পৌঁছে দেওয়ার জন্য সেলিব্রিটিদের সঙ্গে বসবে ইত্যাদি।

ভবিষ্যতের মহামারির প্রস্তুতি
আমরা জানি না এই দফায় বাংলাদেশ এই মহামারির হাত থেকে রেহাই পাবে কি না; কিন্তু মনে রাখতে হবে, যুদ্ধ-বিগ্রহ, মহামারি মানব ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। আজ না হোক কাল আমাদের মহামারির মুখোমুখি হতেই হবে। সেটা করোনাভাইরাসই হোক বা বার্ড ফ্লুই হোক অথবা নতুন কিছু ভাইরাসের সংক্রমণই হোক। আমাদের ভাবতে হবে আমরা প্রস্তুত কি না, সেই অনিবার্য ভবিষ্যতের জন্য। এবার করোনাভাইরাস আসুক আর না আসুক, তবে এবারের প্রস্তুতি, অবকাঠামো তৈরি আর অনুশীলন আমাদের ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করবে।

রুমী আহমেদ খান: বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার অরল্যান্ডো রিজিওনাল মেডিকেল সেন্টারে কর্মরত এবং ট্রেনিং প্রোগ্রামের পরিচালক। মেডিসিনের (রেসপিরেটরি ও আইসিইউ) সহযোগী অধ্যাপক।

https://www.prothomalo.com/opinion/article/

88
সারা বিশ্বে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের সঙ্গে সঙ্গে বদল নিয়ে এসেছে চিন্তায়ও। উন্মোচন করে দিয়েছে এত দিনকার রাষ্ট্রব্যবস্থা ও কাঠামোয় বিদ্যমান গলদগুলো। বিশ্বজুড়েই মানুষ এক নতুন উপলব্ধির সামনে দাঁড়িয়ে। এ কারণে মহামারি–পরবর্তী বিশ্ব যে অনেক দিক থেকেই এখনকার চেয়ে আলাদা হবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

ভালো বা মন্দ—যেমনই হোক, এই সংকট অভাবনীয়ভাবে বদলে দেবে সামাজিক বিন্যাস। মার্কিন পত্রিকা পলিটিকো সম্প্রতি বৈশ্বিকভাবে করোনাভাইরাস মহামারির প্রেক্ষাপটে ৩০ জনের বেশি বুদ্ধিজীবীর মত নিয়েছে। তাঁদের দেওয়া মতের সারসংক্ষেপ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো—


১. স্পর্শ না করাটা রেওয়াজে পরিণত হতে পারে, যা সমাজ ও সংস্কৃতিতে বড় প্রভাব ফেলবে। অনলাইন যোগাযোগের সঙ্গে বাড়বে মানুষে মানুষে দূরত্বও।

Lifebuoy Soap
২. বর্তমানে চিকিৎসক, নার্স থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য খাতের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা কোনো আগ্নেয়াস্ত্র না উঁচিয়েই মানুষের জীবন রক্ষায় সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ কাজটি করছেন, যার মধ্য দিয়ে দেশপ্রেম ধারণার বেসামরিকীকরণ ঘটতে পারে।

৩. রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মেরুকরণ কমে আসবে।

৪. নতুন করোনাভাইরাসের মতো ‘অভিন্ন শত্রুর’ বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিসরে দলীয় ও মতাদর্শিক বিভাজনের বদলে মানুষ ঐক্য ও সংহতির গুরুত্ব অনুধাবন করবে।

৫. বিশেষায়িত জ্ঞানের প্রতি মানুষকে উদাসীন করে তোলা বর্তমান বিশ্বব্যবস্থা বদলে এমন ব্যবস্থা গড়ে উঠবে যেখানে বিশেষায়িত জ্ঞানের প্রতি জন-আস্থা বাড়বে।

৬. করোনাভাইরাস মহামারি বাজার-সংস্কৃতি ও অতিমাত্রায় ব্যক্তিস্বাতন্ত্রবাদের সঙ্গে আমাদের প্রণয়ের অবসান ঘটাতে পারে।

৭. কর্তৃত্ববাদী ও চরম নিপীড়নমূলক রাষ্ট্রের বিষয়টি এখন বাস্তব; নাগরিকের ব্যক্তিগত জীবনে রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বাড়বে।

৮. ধনী-গরিবনির্বিশেষে সারা বিশ্বের মানুষের অস্তিত্ব একসূত্রে গাঁথা—এমন উপলব্ধি মানুষকে যূথবদ্ধতার শক্তি অনুধাবনে সহায়তা করবে।

৯. কোয়ারিন্টিনের এই সময় ধর্মের উপাসনার রীতি ও উপাস্য দুই ধারণাকেই চ্যালেঞ্জ করবে।

১০. ধ্যানচর্চা বা মেডিটেশনের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সবার মঙ্গল চান—এমন ব্যক্তিদের সামাজিক মর্যাদা বাড়বে।

১১. বিদ্যমান স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় থাকা ত্রুটিগুলো প্রকাশ হয়ে যাওয়ায় বিশ্বব্যাপী এক নতুন সংস্কার আন্দোলনের জন্ম হতে পারে, যা এমনকি বিভিন্ন দেশে সরকার পরিবর্তনের আন্দোলনেও রূপ নিতে পারে।

১২. শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন জরুরি বিষয়কে অনলাইনভিত্তিক করার চাপ বাড়বে প্রশাসনগুলোর ওপর।

১৩. ঘরে বসে কাজ করার যে রেওয়াজ এই সময়ে তৈরি হচ্ছে, তা অক্ষুণ্ন রাখার চাপ তৈরি হবে প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর।

১৪. স্বাস্থ্যকর ডিজিটাল জীবনযাপনের বিষয়ে মানুষের সচেতনতা বাড়বে।

১৫. বেশ কয়েক বছর ধরে ব্যয় সংকোচন এবং তাৎক্ষণিক ও উচ্চ মাত্রার সেবার প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বিবেচিত হওয়া টেলিমেডিসিনের গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে।

১৬. শ্রেণি-পেশানির্বিশেষে নাগরিকদের জন্য কার্যকর সুরক্ষা বলয় তৈরির চাপ বাড়বে রাষ্ট্রের ওপর।

১৭. মুনাফাকেন্দ্রিক ওষুধনীতির বদলে স্বাস্থ্যসেবা এবং ওষুধের উন্নয়ন ও উৎপাদনে আরও সরাসরি ও কার্যকর ভূমিকা রাখার জন্য সরকারগুলোর ওপর চাপ বাড়বে।

১৮. জনস্বাস্থ্য ও মহামারির মতো বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের দক্ষতা ও বিজ্ঞানের প্রতি জন-আস্থা বাড়বে।

১৯. ভার্চ্যুয়াল আইন প্রণয়নের কাজ শুরু হতে পারে, যা তদবিরের সংস্কৃতি রোধে কার্যকর হয়ে উঠবে।

২০. বর্তমান পরিস্থিতি কেটে যাওয়ার পর দরকার হবে আরও বৃহৎ ও বিজ্ঞ সরকার ব্যবস্থা।

২১. জলবায়ু পরিবর্তন ও ঐতিহাসিক বৈষম্যের এ যুগকে অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তির যুগে রূপান্তরের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।

প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো অলিম্পিক গেমস পেছাল। রয়টার্স
প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো অলিম্পিক গেমস পেছাল। রয়টার্স
২২. বিদ্যমান বহু আইন ও নীতি অকার্যকর প্রমাণিত হওয়ায় নতুন সামাজিক চুক্তির আলোকে সার্বিক পরিবর্তনের দাবি জোরদার হবে।

২৩. বহুপক্ষীয় কূটনীতি শুধু নয়, বৈশ্বিক সমস্যা মোকাবিলায় শত্রু-মিত্র সবার সঙ্গে সহযোগিতার গুরুত্ব নতুন করে উপলব্ধি করবেন বিশ্বনেতারা।

২৪. তথ্য গোপন বা বিকৃত না করে জনগণকে আস্থায় নেওয়ার গুরুত্ব অনুধাবন করবে রাষ্ট্র।

২৫. মূলধারায় আসবে ইলেকট্রনিক ভোটিং ব্যবস্থা।

২৬. ঝুঁকি কমাতে চিঠির মাধ্যমে ভোট দেওয়া বিকল্প হয়ে উঠতে পারে।

২৭. বৈশ্বিক মহামারির আতঙ্ক সমাজকে বাধ্য করবে ভোগের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার বিষয়টিকে মেনে নিতে।

২৮. গণহারে বিচ্ছিন্ন থাকার অবধারিত ফল হিসেবে সামনে চলে আসবে মানুষে মানুষে সংসর্গের উচ্চ চাহিদা এবং ছোট পরিসরে হলেও উচ্চ জন্মহারের মতো বিষয়।

২৯. অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ও সরবরাহব্যবস্থা শক্তিশালী হবে।

৩০. ভোক্তা ও করপোরেশন উভয়েরই ব্যয় বাড়বে।

৩১. সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন শ্রেণির মধ্যে ব্যবধান বৃদ্ধিই শুধু নয়, মধ্যবর্তী শ্রেণিগুলোর মধ্যেও বৈষম্য বাড়বে।

৩২. এই মহামারি শেষে মানুষ নানা দিক থেকে মুক্তি চাইবে; বাড়িয়ে দেবে পারস্পরিক যোগাযোগ।

৩৩. বাইরে খাওয়া ও পার্টি করার প্রবণতা কমে ঘরে রান্নার ঝোঁক বাড়বে।

৩৪. মহামারি শেষে শপিংমলকেন্দ্রিক সংস্কৃতির বদলে উদ্যানসহ বিভিন্ন উন্মুক্ত জনপরিসরের প্রতি মানুষের আকর্ষণ বাড়বে।

৩৫. রক্ষণশীল ও উদারনৈতিক ধারণার পাল্টাপাল্টি বিন্যাসে আটকে থাকা ‘পরিবর্তন’ ধারণায় বদল আসবে মূলগত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে।

৩৬. দীর্ঘদিন ধরে মানুষকে সু-অভ্যাস শেখানো প্ল্যাটফর্মগুলো অকেজো প্রমাণিত হওয়ায় মানুষ আবার তার সৃজনশীলতা ও কল্পনাশক্তির ওপর আস্থা রাখতে শিখবে।

৩৭. কাজ, কাজ এবং কাজ—সাফল্যের চাবিকাঠি হিসেবে স্বীকৃত এই প্রচার থেকে মুখ ফিরিয়ে মানুষ নিজের ও নিজ পরিবারের দিকে আরও বেশি মনোযোগী হবে।

https://www.prothomalo.com/international/article

89
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস নিয়ে মানুষের আতঙ্কের শেষ নেই। এই আতঙ্কের মধ্যে ভুয়া অনেক পোস্ট ও ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হচ্ছে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া একটি ভুয়া সংবাদে বলা হয়েছে, লবণ বা ভিনিগার মিশ্রিত পানি বা গরম পানি পান করলে কিংবা গলা ভেজালে অথবা রসুন মুখে রাখলে করোনা গলা থেকে ফুসফুসে যায় না। এই ভুয়া তথ্য এখনও ঘুরছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এই তথ্যের কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।

করোনা ঠেকাতে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। তবে এই ভাইরাস নিয়ে আমরা সঠিক তথ্য অনেকে জানি না।

রোগের লক্ষণ নিয়ে ধোঁয়াশা

জ্বর দিয়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়। এর পর শুকনো কাশি দেখা দিতে পারে। প্রায় এক সপ্তাহ পর শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যায়। আর সঙ্গে গলাব্যথা, মাথাব্যথা ও ডায়রিয়া হতে পারে।

এমন উপসর্গ দেখে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা শুরু করতে হয়। তবে অনেকের মধ্যে হালকা ঠাণ্ডা সমস্যা, সর্দি, নাক দিয়ে পানি পড়া ও হাঁচি দেয়ার সমস্যা হতে পারে।

গবেষকরা বলছেন, যদি এমন রোগী থাকে, তা হলে একটি সম্ভাবনা থাকে; এদের মধ্যে হয়তো কেউ এই ভাইরাসটি বহন করছেন। তবে এই রোগীর শরীরে অ্যান্টিবডি থাকায় হয়তো ওই ব্যক্তি নিজে আক্রান্ত না হলেও অন্যকে সংক্রমিত করছেন।

শিশুরা কি আক্রান্ত হয়?

শিশুরাও করোনভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে। শিশুদের মধ্যেও এই লক্ষণ হালকা দেখা দিতে পারে। অন্যান্য বয়সের তুলনায় শিশুদের এই রোগে তুলনামূলকভাবে মৃত্যুর হার কম।

অনেকের ক্ষেত্রে করোনা মারাত্মক হতে পারে

করোনা বেশিরভাগের জন্য একটি হালকা সংক্রমণ। তবে প্রায় ২০ শতাংশ মানুষের কাছে ভাইরাসটি মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। যদি কোনো ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে এবং জিনগত কোনো পরিবর্তনের ফলে ভাইরাসটি অনেকসময় মারাত্মক হয়ে যায়।

সংক্রমণ বুঝতে কতদিন সময় লাগে

বিজ্ঞানীর খুঁজে চলেছেন কত জনের মৃদু উপসর্গ হয় বা একেবারেই হয় না, অথচ তারা রোগ ছড়াতে পারেন। এক হিসাবে দেখা গেছে, ৫০ শতাংশ মানুষ সংক্রমণ ছড়াতে পারেন। সংক্রমণ হওয়ার পর উপসর্গ দেখা দিতে মোটামুটি ২-১৪ দিন সময় লাগে। একে বলা হয় ভাইরাসের ইনকিউবেশন পিরিয়ড।

আর একটি সমীক্ষা জানাচ্ছে, গড়ে পাঁচ দিনের মধ্যেই উপসর্গ প্রকাশ পায়।

তথ্যসূত্র: এই সময়


http://www.allbanglanewspapersbd.com/jugantor

90

বিলম্বে হলেও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের পরীক্ষা ও চিকিৎসার বিষয়ে তৎপরতা কিছুটা বেড়েছে। তবে করোনা চিকিৎসার প্রাথমিক স্তর পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় কিট, আইসিইউর যন্ত্রপাতি এবং সামগ্রিকভাবে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের দরকারি পার্সোনাল প্রোটেকশন ইকুইপমেন্ট বা পিপিই সরবরাহের ক্ষেত্রে এখনো যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে।

এ কারণে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা কাজ করছে। তঁাদের এই নিরাপত্তাহীনতা এতটাই প্রকট যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নন, এমন রোগীরাও হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসাসেবা না পেয়ে ফিরে আসতে বাধ্য হচ্ছেন।


করোনাভাইরাসের যেসব লক্ষণের কথা বলা হচ্ছে অর্থাৎ সর্দি-কাশি, হাঁপানি, জ্বর, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ইত্যাদি বাংলাদেশে সব সময়ই ছিল। আমাদের চিকিৎসাসেবাপ্রার্থীদের একটা বড় অংশই এসব রোগের সেবা নিয়ে থাকেন। এসব উপসর্গ করোনাভাইরাসের কারণে হয়েছে নাকি সাধারণ জ্বর, সর্দি-কাশি বা শ্বাসকষ্ট, তা নিশ্চিত করতে পরীক্ষা জরুরি। কিন্তু অধিকাংশ হাসপাতালে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য পিপিই ব্যবস্থা না থাকায় তারা এ ধরনের রোগীদের গ্রহণই করছে না। ফলে স্বাস্থ্যসেবাপ্রার্থীরা এক মহা সংকটে পড়েছেন।

 মো. আলমাছ উদ্দিন নামের এক মুক্তিযোদ্ধার চিকিৎসাসেবা না পেয়ে মৃত্যু হওয়ার যে করুণ কাহিনি প্রথম আলোতে ছাপা হয়েছে, তা অত্যন্ত হৃদয়বিদারক। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হওয়ার পর স্বজনেরা তাঁকে একে একে ছয়টি হাসপাতালে নিয়ে গেছেন। কিন্তু নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ার লক্ষণ থাকায় কোনো হাসপাতাল আলমাছ উদ্দিনকে ভর্তি করতে রাজি হয়নি। আবার কোনো হাসপাতাল ভর্তি করলেও চিকিৎসকেরা সেবা দিতে অপারগতা জানান। ফলে তিনি বিনা চিকিৎসায় মারা যান। করোনা–আতঙ্কে বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে এ রকম অসংখ্য রোগীকে চিকিৎসাসেবা না দিয়ে ফিরিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

করোনা–সংকট একটা বিশেষ পরিস্থিতি। সেটা সামাল দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে, কিন্তু দেখা যাচ্ছে এই পরিস্থিতিতে সাধারণ স্বাস্থ্যসেবাব্যবস্থা ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। করোনা সংক্রমণ ছাড়াও লোকজন নানা রোগে আক্রান্ত হবে এবং তার জন্য জরুরি স্বাস্থ্যসেবার প্রয়োজন পড়বে। বিষয়টি আগেভাগে বিবেচনায় না নেওয়ায় এবং এ–সংক্রান্ত কোনো গাইডলাইন ঠিক না করায় পরিস্থিতি শোচনীয় হয়ে পড়েছে।

করোনাভাইরাস মোকাবিলার এই জরুরি পরিস্থিতিতে প্রতিদিন যে হাজার হাজার সাধারণ রোগী স্বাস্থ্যসেবা নিতে বিভিন্ন হাসপাতালে যাচ্ছে, তাদের চিকিৎসার বিষয়টিকে কোনোভাবেই হেলাফেলার সুযোগ নেই। কিন্তু এটি চরমভাবে উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তরফে প্রয়োজনীয় নজরদারি ও নির্দেশনার অভাব দেখা যাচ্ছে। হাসপাতাল ফিরিয়ে দিলে রোগীরা যাবে কোথায়—এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজা বা এর সমাধানের দায় কি কারও নেই?

আমরা মনে করি, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরকে এই বাস্তব সমস্যা দূর করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোর জন্য এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন তৈরি করে দিতে হবে। এই গাইডলাইন ও নির্দেশনা সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোকে মানতে বাধ্য করতে হবে। কেউ নির্দেশনা না মানলে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। একই সঙ্গে হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোর চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় পিপিই সরবরাহ নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ, তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা না গেলে ও তারা অসুস্থ হয়ে পড়লে পুরো ব্যবস্থাই ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাবে। সবাইকে এটা বুঝতে হবে যে আমরা এক বিশেষ ও ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। সবার সম্মিলিত উদ্যোগ ও চেষ্টা ছাড়া এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব নয়।

https://www.prothomalo.com/opinion/article

Pages: 1 ... 4 5 [6] 7 8 ... 17