Daffodil International University

Entrepreneurship => Entrepreneurship Development => Different Type of Entrepreneurship => Topic started by: nafees_research on May 02, 2018, 12:35:19 PM

Title: ফেসবুক ছোট উদ্যোগগুলোকে আটকে দিচ্ছে
Post by: nafees_research on May 02, 2018, 12:35:19 PM
ফেসবুক ছোট উদ্যোগগুলোকে আটকে দিচ্ছে

আরেকটা ফেসবুক বা এর প্রতিদ্বন্দ্বী তৈরির কথা ভাবছেন? ফেসবুক কখনোই তা হতে দেবে না। ছলে-বলে-কৌশলে আপনাকে আটকে দেবেই। টাকার জোরে কিনে নেবে, না হয় নকল করবে। কী করতে পারবেন আপনি?

হোয়াটসঅ্যাপের কথাই ধরুন। হোয়াটসঅ্যাপ সবচেয়ে জনপ্রিয় মেসেজিং অ্যাপ্লিকেশন। ২০০৯ সালে জ্যান কউম ও ব্রায়ান অ্যাক্টনের হাত ধরে যাত্রা শুরু করেছিল হোয়াটসঅ্যাপ। বার্তা আদান–প্রদানের ক্ষেত্রে ফেসবুকের চেয়ে এগিয়ে যাওয়ার সব সুযোগ ছিল। কিন্তু ২০১৪ সালে ১ হাজার ৯০০ কোটি মার্কিন ডলারে হোয়াটসঅ্যাপকে অধিগ্রহণ করে নেয় ফেসবুক। মাত্র চার বছরের মধ্যেই হোয়াটসঅ্যাপের সঙ্গে ফেসবুকের ঝামেলার সুর শোনা যাচ্ছে। বিবিসি বলছে, নিজের প্রতিষ্ঠা করা হোয়াটসঅ্যাপ থেকে সরে যেতে হচ্ছে এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জ্যান কউমকে। তিনি ফেসবুকে সে ঘোষণা দিয়েছেন। ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ সেখানে এক মন্তব্যে কউমের প্রশংসা করেছেন। ব্যস, এখানেই একজন উদ্যোক্তার বিদায়! অবশ্য এর আগেই ফেসবুকের অধীনে থাকা হোয়াটসঅ্যাপ ছেড়েছেন আরেক সহপ্রতিষ্ঠাতা অ্যাক্টন। এখন তাঁরা ফেসবুকবিরোধী প্রচার চালাচ্ছেন।

এ তো গেল ফেসবুকের অধীনে যাওয়া কোম্পানির চিত্র; কিন্তু এর বাইরে থাকা উদ্যোগগুলোর হাল কী? মোবাইল লোকেশনভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট ফোরস্কয়ারের সহপ্রতিষ্ঠাতা নাভিন সালভাদুরি মনে করেন, ২০১০ সালে তাঁর কোম্পানিসহ সামাজিক যোগাযোগের কয়েকটি উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান, যেমন: টুইটার, টাম্বলার, পাথের পক্ষে ফেসবুকের সমকক্ষ হয়ে ওঠা সম্ভব ছিল। কিন্তু ফেসবুকের পরিকল্পনা ছিল ভিন্ন। ওই বছরেই ফেসবুক ‘চেক ইন’ নামের একটি ফিচার আনল, যাতে কোনো স্থানে গেলে তা চিহ্নিত করা যায়। এটি ছিল ফোরস্কয়ার অ্যাপের প্রধান ফিচার, যা সরাসরি নকল করে বসল ফেসবুক।

কী করার ছিল এই উদ্যোক্তাদের? এর জবাবে সালভাদুরি ফেসবুকবিরোধী একটি জোটে নাম লেখালেন। তিনি পাথ, ইনস্টাগ্রাম, টুইটারে থাকা বন্ধুদের সঙ্গে টিকে থাকার কৌশল নিয়ে আলোচনা করলেন। এই উদ্যোগগুলো সরাসরি ফেসবুকের হুমকির মুখে ছিল। এসব উদ্যোগের সব মূল ফিচারই নকল করে ফেসবুকে আসার হুমকি ছিল।

সালভাদুরি বলেন, ‘এটা খুব সাধারণ জ্ঞান। ফেসবুক তখন কোনো প্রতিষ্ঠানকে বলত যে আমাদের সঙ্গে যোগ দাও, তা না হলে আমরা তোমার নকল করে ছেড়ে দেব।’

সালভাদুরির মতে, উন্মুক্ত ইন্টারনেটের বদলে দেয়ালঘেরা বাগান গড়ে তুলেছিল ফেসবুক। যাকে তারা পছন্দ করত না, তার ক্ষতি করত। যা লাখো মানুষের কাছে পৌঁছাতে সক্ষম—এমন বিষয়গুলোকে তারা নিজেদের করে নিত। এর বিপক্ষে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছিলেন সালভাদুরি ও ফেসবুকবিরোধী জোটের উদ্যোক্তারা।

সাম্প্রতিক কালে ফেসবুকের নকলের সবচেয়ে বেশি শিকার হয়েছে স্ন্যাপচ্যাট। স্ন্যাপচ্যাটের স্টোরিজ ফিচারটি এর উদাহরণ হতে পারে। অনেক দিন ধরেই স্ন্যাপচ্যাটকে বাগে আনার চেষ্টা করেছেন জাকারবার্গ। ২০১৩ সালে প্রায় ৩০০ কোটি ডলার দিয়ে স্ন্যাপচ্যাট কিনতে চেয়েছিল ফেসবুক। কিন্তু মার্ক জাকারবার্গের কাছে নিজেদের বিক্রি করতে রাজি হননি স্ন্যাপচ্যাটের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী ইভান স্পিগেল। বরং আকর্ষণীয় সব ফিচারে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফেলেন ফেসবুককে। এরপরই শুরু হয় স্ন্যাপচ্যাটের নানা বিষয় নকল করার কাজ।

উইয়ার্ড ম্যাগাজিনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ফেসবুকবিরোধী জোট গড়েও খুব বেশি দূর এগোনো যায়নি। ২০১২ সালেই মাত্র ১০০ কোটি মার্কিন ডলারে ইনস্টাগ্রামকে কিনে নেয় ফেসবুক। পরেই বছরেই ১১০ কোটি মার্কিন ডলারে টাম্বলারকে কিনে নেয় ইয়াহু। পাথের জনপ্রিয়তায় ধস নামে এবং পরে বিক্রি হয়ে যায়। ফোরস্কয়ার স্বাধীন থাকলেও এর অ্যাপটি দুভাগ করে নতুন পরিকল্পনা নিয়ে কোনোরকমভাবে এগিয়ে চলেছে।

২০১২ সালে সালভাদুরি ফোরস্কয়ার ছেড়ে দেন। তাঁর প্রতিষ্ঠানের খুঁড়িয়ে চলার পেছনে কতগুলো কারণের কথা বলেন তিনি। তাঁর মতে, আগে মানুষ নিজের অবস্থানের কথা জানাতে কুণ্ঠিত ছিল না। বিভিন্ন ইন্টারনেট পণ্য তৈরির বিষয়টি উপভোগ্য ছিল। কিন্তু এখন তা কঠিন হয়ে গেছে। কারণ, এখন বড় খেলোয়াড়েরা এখন আরও বড় হয়ে উঠেছে।

অবশ্য, ফেসবুককে এখন বেশ ঝড়ঝাপটা সামলাতে হচ্ছে। বিশেষ করে কেমব্রিজ অ্যানালাইটিকা কেলেঙ্কারির পর। সারা পৃথিবীতে ফেসবুকের যে বাড়বাড়ন্ত হয়েছে, সে ব্যাপারে সামাজিক মাধ্যমটির সহপ্রতিষ্ঠাতা ঠিক স্বস্তিতে নেই। কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা কর্তৃক ফেসবুকের তথ্য ব্যবহার নিয়ে যে কেলেঙ্কারি ঘটেছে, তার ব্যাপারে মার্ক জাকারবার্গ দুঃখ প্রকাশ করেছেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের শিবিরের পক্ষে কাজ করা কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা ফেসবুক ব্যবহারকারী ও তাঁদের বন্ধুদের তথ্যভান্ডারে ঢোকার সুযোগ পেয়েছিল। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বলছে, তাদের ভুল বুঝিয়ে গবেষণার নামে তারা এসব তথ্যের নাগাল পায়। তারা দাবি করেছিল, এসব তথ্য শুধু গবেষণার কাজে লাগানো হবে। এতে মানুষের নাম, অবস্থান, লিঙ্গ, তাদের পছন্দ-অপছন্দের তথ্য ছিল। এ ঘটনা কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা কেলেঙ্কারি হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছে।

এ ঘটনার পর প্রাইভেসি বিষয়ে ফেসবুকের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানগুলো মনে করছে, ফেসবুক অনেক বিশাল ও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে ‘আস্থার সংকট’ তৈরি হয়েছে ব্যবহারকারীদের মনে। বিভিন্ন মিডিয়া ফেসবুকে তাদের কনটেন্ট ঠিকমতো দেখানো হচ্ছে না বলে অভিযোগ তুলছেন। তবে সবচেয়ে বড় অভিযোগ করছেন সিলিকন ভ্যালির উদ্যোক্তারা। তাঁরা অভিযোগ করছেন, ফেসবুকের আগ্রাসী পরিকল্পনা উদ্ভাবনকে বাধাগ্রস্ত করছে।

২০১২ সাল থেকে যেসব সামাজিক যোগাযোগের অ্যাপ জনপ্রিয় হওয়া শুরু করছিল, তা থেকেই নকল করার অভিযোগ রয়েছে ফেসবুকের বিরুদ্ধে। এরপর তো ইনস্টাগ্রাম কিনে নেওয়া বা হোয়াটসঅ্যাপকে অধিগ্রহণ করার বিষয়টি সামনে এল। ৩০০ কোটি মার্কিন ডলারে স্ন্যাপকে কিনতে চাইলেও তা সম্ভব হয়নি। কিন্তু কমপক্ষে ১০ বার এর মূল ফিচারগুলো নকল করেছে ফেসবুক। এমনকি কিশোরদের উপযোগী অ্যাপ টিবিএইচকেও ছাড় দেয়নি।

ফেসবুক তার সম্ভাব্য শত্রুর খোঁজ ঠিকই রাখে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, কোন অ্যাপ ফেসবুকের প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারে বা কোন অ্যাপকে কিনে নিতে হবে, তা ঠিক করার একটি উপায় ফেসবুকের হাতেই আছে। ২০১৩ সালে ফেসবুক অনাভো নামের একটি ইসরায়েলের উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান কিনেছিল। ওই উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানটি এমন একটি অ্যাপ তৈরি করেছে, যা মোবাইল তথ্য ব্যবহার পরিমাপের সুযোগ দেয়। ফেসবুক অনাভোকে কেনার পর ওই লাখো ব্যবহারকারীর তথ্য বিশ্লেষণ করে কোন অ্যাপ জনপ্রিয় হচ্ছে, শুরুতেই তার একটি ধারণা পায় ফেসবুক। অনাভোর তথ্য-উপাত্ত দেখেই ফেসবুক কর্তৃপক্ষ হোয়াটসঅ্যাপসহ লাইভ ভিডিও স্ট্রিমিং সেবা পেরিস্কোপ ও মিরাক্যাট কেনার সিদ্ধান্ত নেয়।

অবশ্য, ফেসবুককে একাধারে দোষারোপ করা ঠিক নয়। সিলিকন ভ্যালির সব বড় প্রতিষ্ঠান ছোট ছোট উদ্যোগকে গেলার জন্য বসে আছে। আমাজন আর গুগলের কথা না বললেই নয়। তবে লক্ষ্য নির্ধারণের গতিতে ফেসবুকের ধারেকাছে নেই তারা। ফেসবুকের অর্থ খরচের ইচ্ছা ও প্রকাশ্যে নকলের ক্ষেত্রে অন্যরা পিছিয়েই বলা চলে।

প্রযুক্তি খাতের পর্যবেক্ষকেরা মনে করেন, প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো মনে করছে তাদের কেউ না কেউ কিনে নেবে। এ ছাড়া ব্যক্তিগত পর্যায়ে বিনিয়োগকারীরা আর সামাজিক যোগাযোগের খাতের কোনো উদ্যোগে বিনিয়োগ করতে উৎসাহী নন। কারণ, আর কোনো হোয়াটসঅ্যাপ তৈরির সম্ভাবনা কম। আর কেউ মাথা তুলে দাঁড়ালেই ফেসবুক হয় তাকে কিনে নেবে বা তাকে টিকতে দেবে না।

বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিবি ইনসাইটসের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকেই ধীরে ধীরে ইন্টারনেট ও মোবাইল খাতের সামাজিক যোগাযোগের উদ্যোগগুলোতে বিনিয়োগ কমছে। কিছু কিছু উদ্যোক্তা মনে করেন, ফেসবুকের কাছে বিক্রি হওয়া তাদের অবশ্যম্ভাবী।

ফেসবুকের সাবেক কর্মী জোশ লি এ বিষয়ে টুইটে কৌতুক করে বলেছেন, কারও দাতব্য তহবিল করা উচিত যাতে উদ্যোক্তারা ফেসবুকের অফার ফিরিয়ে দেন।

লির মতে, বিভিন্ন উদ্যোক্তা নতুন নতুন উদ্যোগ তৈরি করলে মানুষ বিভিন্ন ধরনের সেবা পাবে যা প্রযুক্তি খাতে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করবে। তা না হলে উদ্ভাবনের পথ রুদ্ধ হয়ে যাবে। এ ক্ষেত্রে স্ন্যাপ দারুণ উদাহরণ হতে পারে। এতে ভুয়া খবরের প্রাধান্য নেই কিংবা লাইক দিয়ে কনটেন্টের স্থান নির্ধারণ হয় না। নতুন চিন্তার মূল্য বোঝাতে পারে এটা।

ফেসবুকের বেড়ে চলার যে প্রত্যাশা তাতে এ ধরনের বৈচিত্র্য কি আশা করা যায়? ফেসবুক এখন খবর, ভিডিও, ভারচুয়াল রিয়্যালিটি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, পেমেন্ট, গ্রাহক সেবা, ই-কমার্স, ড্রোন, ইন্টারনেট সেবার মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে শাখা–প্রশাখা বাড়িয়ে চলেছে। ফেসবুক এসব খাতে আধিপত্য বিস্তার করতে একই কৌশল নিতে পারে বলেই অনুমান করা যায়। উদ্যোক্তাদের সাবধান হওয়ার সময় এসেছে। তা না হলে ফেসবুকের আড়ালেই হারিয়ে যাবে সবকিছু।

Source: http://www.prothomalo.com/technology/article/1480836/%E0%A6%AB%E0%A7%87%E0%A6%B8%E0%A6%AC%E0%A7%81%E0%A6%95-%E0%A6%9B%E0%A7%8B%E0%A6%9F-%E0%A6%89%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A7%8B%E0%A6%97%E0%A6%97%E0%A7%81%E0%A6%B2%E0%A7%8B%E0%A6%95%E0%A7%87-%E0%A6%86%E0%A6%9F%E0%A6%95%E0%A7%87-%E0%A6%A6%E0%A6%BF%E0%A6%9A%E0%A7%8D%E0%A6%9B%E0%A7%87