Show Posts

This section allows you to view all posts made by this member. Note that you can only see posts made in areas you currently have access to.


Messages - Lazminur Alam

Pages: 1 ... 17 18 [19] 20 21 22
271
কয়েকজন জেলে পদ্মা নদীতে মাছ ধরছে। একজন আরেকজনকে জিজ্ঞেস করছে, ‘কত বড় পুল (সেতু), পুরোটাই নোয়া (লোহা) দিয়া বানাইছে। কত টাকার নোয়া লাগছে?’ অপর জেলের উত্তর ‘তা তো কমপক্ষে পাঁচ শ টাকার নাগছেই!’ কুষ্টিয়া-পাবনার সংযোগ স্থাপনকারী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ নিয়ে স্থানীয় লোকজনের কাছে এই কৌতুক বেশ প্রচলিত।
এমন কৌতুক আর নানা স্মৃতি নিয়ে আজ ৪ মার্চ পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ শতবর্ষ পূরণ করল। ১৯১৫ সালের এই দিনে পদ্মায় পাবনার ঈশ্বরদীর পাকশীতে রেলওয়ে ব্রিজটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। সেই থেকে এই ব্রিজ দিয়ে ট্রেন চলাচল করছে। দিনটি উদ্যাপন উপলক্ষে পাকশীতে আজ নানা আয়োজন রয়েছে।
5পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে সেতু কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, অবিভক্ত ভারত সরকার আসাম, ত্রিপুরা, নাগাল্যান্ড ও উত্তরবঙ্গের সঙ্গে কলকাতার যোগাযোগ সহজ করতে এই ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। ১৯১০-১১ সালে ব্রিজ নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ১৯১৫ সালের ৪ মার্চ অবিভক্ত ভারতের ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ ব্রিজটি উদ্বোধন করেন। তাঁর নামেই ব্রিজটির নামকরণ করা হয় ‘হার্ডিঞ্জ ব্রিজ’। ব্রিজটি নির্মাণে ব্যয় হয় ৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা (৩ কোটি ৫১ লাখ ৩২ হাজার ১৬৪ রুপি)। ১৫টি স্প্যানের এই ব্রিজের দৈর্ঘ্য ৫ হাজার ৯৪০ ফুট। ব্রিজ দিয়ে শুধু ট্রেন চলাচলের জন্য পাশাপাশি দুটি ব্রডগেজ রেললাইন রয়েছে। তবে রাখা হয়েছে পায়ে হাঁটার পথ। বাংলাদেশ রেলওয়ে ব্রিজ রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্রিজটিতে বোমা মারা হয়। এতে ১২ নম্বর স্প্যানটির ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে তা মেরামত করা হয়।
এই ব্রিজ ঘিরেই দেশের অন্যতম দর্শনীয় স্থান হিসেবে পরিচিত পায় পাকশী। গড়ে উঠে রেলশহর পাকশী। ব্রিজের শতবর্ষ উপলক্ষে আজ বেলা দুইটায় ‘হার্ডিঞ্জ সেতু, ঈশ্বরদী ও পাকশী শহর শতবর্ষ উদ্যাপন পরিষদ’ সেতু চত্বরে কেক কাটবে। এর মধ্য দিয়ে শতবর্ষ উদ্যাপনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে। অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ক্রোড়পত্র প্রকাশ। উদ্যাপন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘দেশের ঐতিহ্য ও সৌন্দর্যমণ্ডিত হার্ডিঞ্জ ব্রিজ আমাদের অতিগুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ সেতুটি দেখার জন্য আসছেন। একে ঘিরে একটি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা দরকার।’

272
History / ‘প্রথম মানুষের’ চিহ্ন?
« on: March 06, 2015, 12:11:24 PM »
দাঁতগুলোর আকার মানুষের পূর্বসূরি অন্যান্য প্রজাতির তুলনায় ছোট l ছবি: এএফপিচোয়ালের নিচের অংশের এক টুকরো হাড়। তাতে যুক্ত রয়েছে পাঁচটি দাঁত। ইথিওপিয়ার আফার অঞ্চলের লেডি–গেরারু এলাকার মাটি খুঁড়ে জীবাশ্মটি (ফসিল) উদ্ধার করা হয়েছে। এটিই হোমো গণভুক্ত প্রাণীর সবচেয়ে পুরোনো ফসিল বলে একদল গবেষক গত বুধবার দাবি করেছেন। মানুষও (বৈজ্ঞানিক নাম: হোমো স্যাপিয়েন্স) একই গণ–এর অন্তর্ভুক্ত।
গবেষণা প্রতিবেদনটি নেচার সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে। এই আবিষ্কারের ফলে ইঙ্গিত পাওয়া যায়, মানুষের পূর্বসূরিরা লেডি–গেরারুর উন্মুক্ত তৃণভূমি, হ্রদ, নদী ও সক্রিয় আগ্নেয়গিরির কাছাকাছি প্রায় ২৮ লাখ বছর আগে বসবাস করত। সময়টা বিজ্ঞানীদের আগের ধারণার চেয়েও চার লাখ বছর আগের।
ওই গবেষক দলের প্রধান এবং যুক্তরাষ্ট্রের নেভাদা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ব্রায়ান ভিলমোয়ার বলেন, এটা হচ্ছে মানুষের পূর্বসূরি শাখাভুক্ত প্রজাতির প্রথম ফসিল। চোয়ালের ওই হাড়টির নাম দেওয়া হয়েছে এলডি থ্রিফিফটি–ওয়ান। ইথিওপিয়ার ওই গবেষণাস্থল থেকে ২০১৩ সালে এটি উদ্ধার করা হয়। ফসিলটি কোন প্রজাতির, তা এখনো সুনির্দিষ্ট করা হয়নি।
ফসিলটি আধুনিক মানুষ প্রজাতির আদি কোনো প্রতিনিধির চিহ্ন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে এটি সরাসরি হোমো স্যাপিয়েন্স–এর পূর্বসূরি প্রজাতির নয়। কিন্তু তাঁরা ধাঁধায় পড়েছেন এ জন্য যে, ফসিলটি এমন এক সময়ের, যখন মানুষের পূর্বসূরি হোমিনিড প্রজাতিগুলো হারিয়ে যেতে শুরু করেছিল। ভিলমোয়ার বলেন, পূর্ব আফ্রিকা এলাকায় ২০ থেকে ৩০ লাখ বছর আগে যেসব ফসিল পাওয়া যায়, সেগুলো খুবই পাতলা। এমন ফসিল খুব কমই আছে যেগুলো হোমো গণভুক্ত প্রাণীর উৎস সম্পর্কে তথ্য দিতে পারে। তবে সময়টা ছিল মানুষের ক্রমবিকাশের কয়েকটি পর্যায়ের মধ্যে অত্যন্ত আকর্ষণীয় একটি।
এ পর্যন্ত হোমো গণভুক্ত সবচেয়ে প্রাচীন ফসিলটির বয়স প্রায় ২৩ লাখ থেকে ৩২ লাখ বছর। ইথিওপিয়ায় নতুন ফসিলটি দেখে গবেষকেরা মনে করছেন, প্রাণীটি তুলনামূলক দ্রুত রূপান্তরিত হয়েছে। ভিলমোয়ার আরও বলেন, ফসিলের নমুনাটি অবশ্যই উত্তরের চেয়ে বেশি প্রশ্নের উদ্রেক করেছে। অধিকতর গবেষণার মাধ্যমে এসব প্রশ্নের জবাব মিলতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষক কায় রিড বলেন, নতুন ফসিলটি যে সময়ের, তখন গাছপালার সংখ্যা কম ছিল। জলবায়ু ছিল সম্ভবত তুলনামূলক উষ্ণ ও শুষ্ক। সেখানে টিকে থাকার জন্য প্রাণীটিকে পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয়েছিল।
বিজ্ঞান সাময়িকী সায়েন্স–এর উপসম্পাদক অ্যান্ড্রু সাগডেন বলেন, নতুন আবিষ্কারটি আফ্রিকায় মানুষের ক্রমবিকাশ সম্পর্কে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করেছে। এতে করে শুধু যে মানুষের উৎস সম্পর্কে বিস্তারিত জানার সুযোগ হয়েছে, তা নয়। পূর্বসূরিদের বিচরণকালের পরিবেশ সম্পর্কেও নতুন নতুন বিষয়ের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
নেচার সাময়িকীতে প্রকাশিত আরেকটি গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, গবেষকেরা কম্পিউটার টোমোগ্রাফি (সিটি) ও ত্রিমাত্রিক (থ্রিডি) প্রযুক্তি ব্যবহার করে চোয়ালের হাড়ের জীবাশ্মটি বিশ্লেষণ করেছেন। এ প্রক্রিয়ায় হাড়টির বিভিন্ন অংশের ডিজিটাল প্রতিরূপ কম্পিউটারের পর্দায় পুনরায় সংযোজন করা হয়। এতে দেখা যায়, চোয়ালের নিচের অংশটি সরু এবং অস্ট্রালোপিথেকাস আফারেনসিস–এর মতো তুলনামূলক পুরোনো প্রজাতির সঙ্গে অনেকটা মেলে। ২১ লাখ থেকে ১৬ লাখ বছর আগে বসবাসকারী হোমো গণভুক্ত আদি তিনটি প্রজাতির চোয়ালের গঠনে বিস্তর পার্থক্য ছিল।
যুক্তরাজ্যের লন্ডনে অবস্থিত জাদুঘর ন্যাশনাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের অধ্যাপক ক্রিস স্ট্রিংগার বলেন, নতুন এসব গবেষণায় আদি মানুষ সম্পর্কে আরও জটিল একটি চিত্র উঠে এসেছে। এতে মানুষের সংজ্ঞা আসলে কী হওয়া উচিত, সে ব্যাপারেও নতুন করে ভাবার ব্যাপারটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দেখা দিয়েছে। ছোট ছোট দাঁত ও চোয়াল, বড় আকারের মস্তিষ্ক, দীর্ঘ পা, যন্ত্রপাতি তৈরির দক্ষতা অথবা এসবের সমন্বয়ে মানুষকে সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে।
সূত্র: এএফপি ও বিবিসি

273
যাঁরাই বেশ কিছু বছর ধরে আমাদের উচ্চশিক্ষার গতি-প্রকৃতি লক্ষ করেছেন, তাঁরা সবাই স্বীকার করবেন যে ছাত্রছাত্রীরা এখন শিক্ষার বিষয় হিসেবে বিজ্ঞানকে ক্রমেই কম বেছে নিচ্ছে। আগে খুব মেধাবী ছাত্ররা যারা অবধারিতভাবে বিজ্ঞান ও গণিতকে বেছে নিত, তারাও এখন তা সেভাবে করছে না। যারা আদৌ বিজ্ঞান ধারায় থাকছে, তাদের মধ্যে অধিকাংশই বেছে নিচ্ছে বিজ্ঞানের ফলিত শাখাগুলোকে এবং বিভিন্ন প্রকৌশলবিদ্যাকে, মৌলিক বিজ্ঞানকে নয়। ব্যবসায় প্রশাসন এবং কিছু কিছু সমাজবিজ্ঞানই এখন সব ধরনের ছাত্রেরই পছন্দের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গত দশকগুলোতে বিজ্ঞান-বিমুখী এবং বিশেষ করে মৌলিক বিজ্ঞান-বিমুখী প্রবণতার প্যাটার্নগুলো দেখলে এর কারণ বুঝতে খুব কষ্ট হয় না। স্পষ্টত, ছাত্ররা এবং তাদের অভিভাবকেরা গোড়া থেকেই লেখাপড়ার ব্যাপারে একটি ‘কস্ট-বেনিফিট’ হিসাব কষে ফেলেন! তাতে তাঁদের কাছে বিজ্ঞান নিয়ে পড়ার ‘কস্ট’ তার ‘বেনিফিটের’ চেয়ে বেশি বলে মনে হচ্ছে, যা ব্যবসায় প্রশাসনের ক্ষেত্রে বা সমাজবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে সেভাবে নয়। এই বেনিফিটটি সরাসরি চাকরির ব্যাপার—চাকরির প্রাপ্যতা এবং তাতে বেশি বেতনের সম্ভাবনা। আমাদের দেশের বর্তমান অর্থনীতির প্রবণতাগুলো লক্ষ করলে ‘কস্ট-বেনেফিট’ হিসাবের উল্লিখিত বিবেচনাটিকে দোষ দেওয়া যায় না। প্রধানত ট্রেড ও সার্ভিসনির্ভর প্রাইভেট সেক্টরের ওপরই দেশের অর্থনীতির একটি বিশাল অংশ নির্ভর করছে; আর সেটিই উচ্চশিক্ষিতদের যথেষ্ট সংখ্যায় এবং বেশি বেতনে চাকরি দিতে সক্ষম। এ কাজে ব্যবসায় প্রশাসন, কিছু কিছু সমাজবিজ্ঞান, প্রচার ও গণযোগাযোগ ইত্যাদিতে ভালো শিক্ষিত ব্যক্তিরা তাঁদের কাছে বেশি দাম পায় এবং সেই সঙ্গে কিছু প্রকৌশলী এবং ফলিত বিজ্ঞানের মানুষ। এ রকম একটি দৃশ্যপটে বিজ্ঞানশিক্ষা নিরুৎসাহিত হওয়াটি অবাক হওয়ার মতো ঘটনা নয়।
আমার বক্তব্য হলো, কস্ট-বেনিফিটের ওই হিসাবের মধ্যে জরুরি সবকিছুর বিবেচনা আসেনি, আসা উচিত ছিল। মৌলিক বিজ্ঞান না পড়ারও একটি বড় কস্ট আছে, সেটি হলো একবিংশ শতাব্দীর বৈজ্ঞানিক সৃষ্টিশীলতার প্রতিযোগিতায় জাতিকে বন্ধ্যা করে ফেলার কস্ট। এর অর্থ হলো শুধু সোনার ডিম আমদানি করে ব্যবসা চালানোর চেষ্টা করা, আর অন্যদিকে যে হাঁস ওই ডিম দেয়, তার সঙ্গে ক্রমে সংস্রবহীন হয়ে পড়া। আরও একটি কস্ট আছে, তা হলো ছাত্রদের দিক থেকে। অসংখ্য ছাত্রের মধ্যে মৌলিক বিজ্ঞানের রহস্যের পেছনে ছোটার যে স্বাভাবিক উৎসাহ ও নেশা শৈশব থেকেই থাকে, সেটি কস্ট-বেনিফিটের পাল্লায় পড়ে তাকে অঙ্কুরে বিনষ্ট করে দেওয়া।
এসবের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার ক্ষেত্রে ও মানবসম্পদ ব্যবহারের প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে আমার কয়েকটি প্রস্তাব রয়েছে, যেগুলো আমাদের জন্য একেবারে নতুন নয়। এক. স্কুলে অন্য সবকিছুর সঙ্গে সবার মধ্যেই বিজ্ঞানের রহস্যের দিকটি উন্মোচিত করতে হবে, আনন্দময়ভাবে বিজ্ঞান ও গণিত সবাইকে শেখাতে হবে এবং অষ্টম শ্রেণির পরও তা সবার জন্য অব্যাহত রাখতে হবে। অর্থাৎ স্কুল পর্যায়ে আগের মতো সবার জন্য সব মৌলিক বিষয় রাখতে হবে বিজ্ঞানসহ। দুই. বিজ্ঞানে স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষায় মৌলিক বিজ্ঞানের একটি বিষয়কে ‘মেজর’ বিষয় করে এর সঙ্গে বিজ্ঞান ও ফলিত বিজ্ঞানের অন্য কিছু শাখা এবং বিজ্ঞানবহির্ভূত কিছু পছন্দের বিষয় (ব্যবসা, ভাষা, কলা, সমাজ) আবশ্যিক অথবা ঐচ্ছিক ‘মাইনর’ হিসেবে রাখতে হবে। এ পর্যায়ে মেজর বিষয়টিকে অতিমাত্রায় বিস্তৃত, বিশেষায়িত ও দুর্লঙ্ঘ্য করে না ফেললে এটি খুবই সম্ভব। একই কথা সমাজবিজ্ঞান, কলা বা ব্যবসায় প্রশাসনের স্নাতক শিক্ষার জন্যও প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার উদ্দেশ্য হবে একেবারে বিশেষজ্ঞ সৃষ্টি নয়, কর্মক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ হতে পারার শিক্ষা। তিন. সত্যিকার বিশেষায়িত ও দুর্লঙ্ঘ্য শিক্ষার কাজটি হবে পরে স্নাতকোত্তর পর্বে, দুই বছরে এবং সেটি করবে সীমিতসংখ্যক ছাত্র, যারা অলিম্পিক খেলোয়াড়দের মতো বিশেষায়িত শিক্ষার সত্যিকার দুর্গম, কঠিন পথ পাড়ি দেবে। তারা মৌলিক বিষয়গুলোতে বিশেষজ্ঞ হয়ে এগুলোর শিক্ষা, গবেষণা ও দিকনির্দেশনার নেতৃত্ব দেবে।
এখন দেখি, মূল সমস্যাটির সমাধান কীভাবে হবে। শৈশব থেকে কৈশোরের মধ্য দিয়ে বিজ্ঞানকে বা গণিতকে ভয়ের বিষয় হিসেবে উপস্থাপিত না করে আনন্দের বিষয় হিসেবে শেখালে কী ঘটতে পারে, তা সে-ই ভালো বুঝবে, যে হাওয়াই বাজিতে কখনো আগুন ধরিয়ে দিয়ে দেখেছে। আমার বিশ্বাস, ওই ছাত্রদের অনেকের কাছে এরপর ও কস্ট-বেনিফিট বিশ্লেষণ বেশি কাজ করবে না, হাওয়াই বাজির মতো তারা পছন্দের বিষয়ে কল্পনার ডানা মেলবে।
দুঃখের বিষয় হলো, বিগত বছরগুলোতে আমরা নিজেদের অজান্তে এর বিরুদ্ধেই কাজ করে এসেছি। ক্রমাগত বিজ্ঞানের পরিধি বাড়ছে, এটি কঠিন হচ্ছে—এ অজুহাত দেখিয়ে আমরা এইচএসসির অঙ্ককে বা সেখানকার বিজ্ঞানের কাঠিন্যকে নবম শ্রেণিতে নিয়ে এসেছি, একইভাবে স্নাতকের কাঠিন্যকে এইচএসসিতে নিয়ে এসেছি, স্নাতকোত্তরকে স্নাতকে এনেছি—শুধু এটি বোঝাবার জন্য যে ব্যাপারটি মোটেই ছেলেখেলা নয়, এর জন্য অনেক কঠিন সময়, অনেক কসরত (এবং কোচিং) দিতে হয়। ফলে অনেক ক্ষেত্রে এমন হয়েছে যে আমরা ওপরে ওপরে অনেক কঠিন কথা বলছি, অনেক জটিল অঙ্কের মহড়া দিচ্ছি, কিন্তু তলায় ভিত্তি ও সৃজনশীলতার খাতে ফাঁকা রেখে দিচ্ছি। ওটিকে যদি ভরাট রাখতে হতো, তাহলে স্কুলে, এইচএসসিতে কাঠিন্যের মাঝে মাঝে একটু বিরাম থাকা দরকার ছিল, যা হলো আনন্দময় শিক্ষার বিরাম, বিষয়ের পটভূমি (কনটেক্সট) দেখার বিরাম, বিষয়ের ধারণা (কনসেপ্ট) আত্তীকরণের ও তাকে নিজের নেশার মধ্যে নেওয়ার বিরাম। বিজ্ঞানশিক্ষায় এই যতি, এই বিরাম ফিরিয়ে দিলে তাকে আর সাংঘাতিক একটি কস্ট বলে মনে হবে না, বরং এটি শুধু আনন্দময় হবে না, হবে অনেক বেশি ফলপ্রসূ। অনেকের কাছেই তখন স্নাতক পর্যন্ত বিজ্ঞানশিক্ষা আগ্রহভরে কাম্য হয়ে উঠবে এবং তা কর্মজীবনের নানা ক্ষেত্রে প্রয়োগযোগ্য হবে, শুধু তথাকথিত বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্রে নয়।
বিজ্ঞানে স্নাতক শিক্ষায় একই সঙ্গে দুটি কাজ করতে হবে। পটভূমি, ধারণা ও প্রয়োগসমৃদ্ধ হয়ে খুব বেশি বিশেষায়িত না হয়েও এটি মৌলিক বিজ্ঞানে সাধারণভাবে ছাত্রকে পটু করবে; একই সঙ্গে ভাষা, যোগাযোগ, দুনিয়াদারির জরুরি ও ফলিত বিষয়গুলোতেও যথেষ্ট সক্ষম করে তুলবে। শেষোক্ত ওই রকম সক্ষমতার জন্যই চাকরিদাতারা আজকে বিবিএর ছাত্রদের এত পছন্দ করছে। কিন্তু আধুনিক ব্যবসা, আধুনিক কর্মকাণ্ড ক্রমেই সাধারণ বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ও সৃষ্টিশীলতা দাবি করছে, সামনে আরও করবে। সে ক্ষেত্রে উল্লিখিত রকমের বিজ্ঞান স্নাতক, বিবিএর চেয়ে অনেক বেশি উপযুক্ততা নিয়ে আসবে চাকরিদাতাদের জন্য।
বিজ্ঞানের স্নাতক শিক্ষায় দ্বিতীয় যে কাজটি করতে হবে, তা হলো যে অল্পসংখ্যক ছাত্র এরপর স্নাতকোত্তর পর্যায়ে যাবে, তাদের জন্যও উপযুক্ত একটি উৎক্ষেপণ কেন্দ্র তৈরি করা, অর্থাৎ সেই সীমিতসংখ্যক অলিম্পিক খেলোয়াড়ের জন্যও এটিই উপযুক্ত খেলার মাঠ হতে হবে। খুব বিশেষায়িত না করেও যদি আমরা এর সত্যিকার পটভূমি, ধারণা, ভিত্তিমূল ইত্যাদি যথেষ্ট নিগূঢ়ভাবে স্নাতকে দিতে পারি, তাহলে এরাও সেখানে বিশেষভাবে অবগাহনের সুযোগ নেবে, তাদের সক্ষমতা ও কল্পনাশক্তিকে তীক্ষ্ণ করবে এবং স্নাতকোত্তরের অলিম্পিকের জন্য তৈরি হবে, স্নাতক পর্যায়টিকে তুচ্ছ বা অতি সহজ মনে না করে। প্রয়োজনে তাদের জন্য শেষ বছর একটি পৃথক ঐচ্ছিক ‘অ্যাডভান্সড পেপার’ থাকবে, যেখানে তারা অলিম্পিকের মহড়া দেবে। সব ছাত্রকে স্নাতকোত্তরের এই অলিম্পিকে যেতে হবে, এমন চিন্তা মোটেই স্থান দেওয়া উচিত হবে না। বাকি সবাই বিজ্ঞান স্নাতক হিসেবে বিচিত্র কর্মক্ষেত্রে ছড়িয়ে পড়বে এবং সব ক্ষেত্রে অন্য স্নাতকদের টেক্কা দেওয়ার চেষ্টা করবে। সব কাজে ‘মাস্টার্স’ খোঁজার (অধিকাংশ ক্ষেত্রে নামে মাত্র) অভ্যাস আমাদের ছাড়তে হবে।
স্নাতকোত্তরের ওই অলিম্পিক খেলোয়াড়েরা অলিম্পিকে জিতে এলে তাদের নিয়ে আমরা কী করব? তারা মৌলিক বিজ্ঞানে ও বিজ্ঞানধর্মী সৃজনশীলতায় নেতৃত্ব দেবে কলেজে, বিশ্ববিদ্যালয়ে, গবেষণাকেন্দ্রে তো বটেই, এমনকি হাইস্কুলে এবং নানা রকম ভবিষ্যৎমুখী শিল্প ও ব্যবসার ক্ষেত্রেও। তাদের দিতে হবে সেই অলিম্পিকের মূল্য, সম্মান ও বেতন। রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায়ও এটি নিশ্চিত করতে হবে—সফল শিক্ষকদের ও গবেষকদের এবং সর্বোপরি তাদের সৃজনশীল কাজের বেতন ও সম্মান সর্বোচ্চ রাখতে হবে। স্নাতকোত্তর পড়াশোনাকে সত্যিই অলিম্পিকের মতোই খাঁটি ও দুর্লঙ্ঘ্য করতে হবে এবং এর মূল্যায়নকেও। এটি সব রকম স্নাতকোত্তরের জন্যই প্রযোজ্য হওয়া উচিত, শুধু বিজ্ঞানের জন্য নয়। এটি বাস্তবায়িত হলে ডাক্তাির, প্রকৌশল, আইন ইত্যাদি প্রফেশনাল শিক্ষা ছাড়া বাকি সব স্নাতকোত্তর শিক্ষা হবে মূলত দুই রকম—এক. মৌলিক ও খুবই বিশেষায়িত বিষয়ে স্নাতকোত্তর; দুই. সত্যিকার মানসম্মত এমবিএ। দ্বিতীয়টিতে বহুসংখ্যক বিজ্ঞান স্নাতকসহ বিভিন্ন রকমের মেধাবী স্নাতকেরাই এমবিএ পড়তে আসবে, এখনো আসছে। যাবতীয় ব্যবসা-বাণিজ্য ও কর্মকাণ্ডের নেতৃত্বে তাদের কাছ থেকে অনেক উচ্চ প্রত্যাশা থাকবে। আর প্রথমটিতে মৌলিক বিষয়ের স্নাতকোত্তরেরা ওপরে বর্ণিত শিক্ষা, গবেষণা, নতুন জ্ঞান সৃষ্টি, দিকনির্দেশনা ইত্যাদির অত্যন্ত মৌলিক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বগুলো গ্রহণ করবে। এই শেষোক্তদের ছাড়া আধুনিক কোনো জাতি চলতে পারে না। তাই যত তাড়াতাড়ি এটি বুঝতে পেরে এ ধরনের শিক্ষা-সংস্কারগুলো আনতে পারি, ততই মঙ্গল।

274
‘সমৃদ্ধ অতীত সত্ত্বেও গুপ্তযুগের পর ভারতীয় উপমহাদেশে বিজ্ঞানচর্চার আর প্রসার ঘটেনি।’ বাঙালির বিজ্ঞানসাধনা সম্পর্কে এ কথা লিখেছেন অধ্যাপক দ্বিজেন শর্মা। তিনি আরও লিখেছেন, ‘শিল্পবিপ্লবোত্তর ইউরোপে যখন বিজ্ঞান বিকশিত, আমাদের দেশে তখন মধ্যযুগের অন্ধকার। ইউরোপে অন্ধকার যুগ অর্ধ-সহস্র বৎসর স্থায়ী হলেও আমাদের দেশে তার পরমায়ু ছিল প্রায় দ্বিগুণ।’ এ
দেশে আধুনিক বিজ্ঞানের চর্চা শুরু ব্রিটিশ শাসনকালে, উনিশ শতকে। সমুদ্রপার থেকে তা আমদানি করে যে জোড়কলম বাঁধা হয়েছিল,
তা যে আজও ঠিকমতো জোড়া লাগেনি তা বোঝা যায় বাংলাদেশে তরুণ শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানশিক্ষায় অনীহা দেখে। বিজ্ঞানশিক্ষার্থীর সংখ্যা হতাশাজনকভাবে কমছে। ২০১৩ সালে বিজ্ঞানের পরীক্ষার্থী ছিল মাধ্যমিকে ২২ দশমিক ৯২ শতাংশ আর উচ্চমাধ্যমিকে মাত্র ১৭ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। অন্যদিকে ভারতে প্রতিবছর উচ্চমাধ্যমিকে পরীক্ষার্থীদের ৪২ দশমিক ৮৫ শতাংশই হলো বিজ্ঞান শাখার, আধুনিক ভারত বিনির্মাণে যাদের ভূমিকা অপরিসীম।
ঔপনিবেশিক যুগে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, প্রেসিডেন্সি কলেজ ও ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর কাল্টিভেশন অব সায়েন্সকে কেন্দ্র করেই বাংলায় বিজ্ঞানশিক্ষা গবেষণার সূত্রপাত। এসব সংস্থার সামগ্রিক অবদান জগদীশচন্দ্র বসু, প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষ, অঘোরচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, মেঘনাদ সাহা, সত্যেন বসু, কুদরাত-ই-খুদা প্রমুখ বিজ্ঞানী। অঘোরচন্দ্র হলেন প্রথম বাঙালি বিজ্ঞানী, যিনি বিদেশ থেকে (এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়) রসায়নে ডিএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। কিন্তু কোনো বিজ্ঞান সংস্থায় কাজ করার সুযোগ পাননি তিনি, প্রশাসনে কেরানিগিরিতে তাঁর প্রতিভার অপচয় ঘটে, যেমনটি ঘটে সি ভি রমন বা কুদরাত-ই-খুদার ক্ষেত্রেও। গবেষণাস্থল নয়, শাসকশ্রেণি কুদরাত-ই-খুদার কর্মস্থল আবিষ্কার করে শিক্ষা প্রশাসনে!
পরাধীন যুগে যা-ই ঘটুক, স্বাধীন বাংলাদেশে বিজ্ঞানশিক্ষার এ দুরবস্থা কেন? ব্যানবেইসের পরিসংখ্যান দেখলে আঁতকে উঠতে হয়। ১৯৯০ সালে মোট পরীক্ষার্থীর মধ্যে বিজ্ঞানের পরীক্ষার্থী ছিল মাধ্যমিকে ৪২ দশমিক ৮১ শতাংশ আর উচ্চমাধ্যমিকে ২৮ দশমিক ১৩ শতাংশ। পরিসংখ্যান বলছে, এই সর্বোচ্চ শতকরা হার আর কখনোই স্পর্শ করা যায়নি। উচ্চমাধ্যমিকে ১৯৯৬ সালে সর্বনিম্ন পর্যায়ে, প্রায় অর্ধেকে, মাত্র ১৫ দশমিক ৩৩ শতাংশে নেমে যায়। এরপর ২০০২ সালে তা বেড়ে হয় ২৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ। তারপর আবার পতনের শুরু এবং ২০১৩ সালে তা নেমে আসে শতকরা ১৭ দশমিক শূন্য ১ শতাংশে! অভিন্ন চিত্র মাধ্যমিকেও। বিজ্ঞান পরীক্ষার্থীর শতকরা হার ১৯৯০ সালের ৪২ দশমিক ৮১ থেকে কমতে কমতে ২০১৩ সালে হয় মাত্র ২২ দশমিক ৯২ শতাংশ! বিজ্ঞানশিক্ষায় কী ভয়ংকর ভূমিধস!
অন্যদিকে শিক্ষার্থী বাড়ছে ব্যবসায় শিক্ষায়। ১৯৯০ সালের উচ্চমাধ্যমিকে ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় মোট পরীক্ষার্থীর হার ১৯ দশমিক ৪১ থেকে বেড়ে ২০১৩ সালে দাঁড়ায় ৩৪ দশমিক ১৯ শতাংশে। অর্থাৎ সেখানে বৃদ্ধি প্রায় দ্বিগুণ! আর মাধ্যমিকে ১৯৯৮ সালে ব্যবসায় শিক্ষা চালুর সময়ের ৭ দশমিক ৩ থেকে পাঁচ গুণ বেড়ে ২০১৩ সালে হয়েছে ৩৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ! মেধাবী শিক্ষার্থীরা ভিড় করছে বিজ্ঞানের বদলে ব্যবসায় শিক্ষায়। কী কী কারণে বিজ্ঞানে শিক্ষার্থী কমছে এবং ব্যবসায় শিক্ষায় তা বাড়ছে তা অনুসন্ধান করা যেমন জরুরি, তেমনি জরুরি এর সামাজিক ও রাষ্ট্রিক অভিঘাত অনুসন্ধান করা।
বিজ্ঞান পঠন-পাঠন অপেক্ষাকৃত কঠিন। সে জন্য দুনিয়াজুড়ে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী তুলনামূলকভাবে কম। প্রযুক্তির অতি দ্রুত বিকাশ, বাণিজ্যের প্রসার এবং করপোরেট পুঁজির দুর্দমনীয় বিশ্বায়ন শিক্ষা ক্ষেত্রে নতুন বিন্যাসের অন্যতর কারণ। সেই সঙ্গে সিলেবাসের মাত্রাতিরিক্ত চাপ, বিজ্ঞানশিক্ষার অত্যুচ্চ ব্যয়ভার, শিক্ষায়তনগুলোতে বিজ্ঞান পাঠের অনুপযোগী পরিবেশ, বিজ্ঞানকে উপেক্ষা করে প্রযুক্তির প্রতি মাত্রাতিরিক্ত পক্ষপাত, দক্ষ শিক্ষকের অভাব, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাব ও তা ব্যবহারে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সমান অনীহা, কোচিংনির্ভরতা, কর্মসংস্থানের অনিশ্চয়তা ইত্যাকার নানা সমস্যা আমাদের তরুণ প্রজন্মকে বিজ্ঞানবিমুখ করে তুলছে।
একটি আইনি বিধিনিষেধও আছে। বিজ্ঞান শাখায় মাধ্যমিক পাস না করে কেউ উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞান শাখায় ভর্তিই হতে পারে না; কিন্তু যেকোনো শাখার শিক্ষার্থী উচ্চমাধ্যমিকে ব্যবসায় শিক্ষায় ভর্তি হতে পারে। দেশে বহু স্কুলে মাধ্যমিক স্তরে বিজ্ঞান পাঠের সুযোগ নেই। ওসব স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য বিজ্ঞানের দরজা চিরদিনের তরে বন্ধ। চটকদার ডিগ্রি (বিবিএ/এমবিএ), করপোরেট জগতে মোহনীয় চাকরির প্রলোভন আর আইনি খোলা দরজা দিয়ে বেনোজলের মতো ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় ঢুকছে সম্ভাব্য বিজ্ঞান শিক্ষার্থীরা।
সিলেবাস আরেকটি বড় সমস্যা। বিশ্বাস করা কঠিন হলেও সত্য যে ব্যবসায় শিক্ষা বিষয়ের তুলনায় বিজ্ঞান বিষয়গুলোর সিলেবাস প্রায় তিন গুণ বড়! সিলেবাসপ্রণেতারা আমাদের তরুণ বিজ্ঞানশিক্ষার্থীদের বয়স ও সামর্থ্যের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ সিলেবাস প্রণয়ন করেননি। বিবেচনা করেননি আমাদের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট। মনে হয়, মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়েই একেকজন বিজ্ঞানশিক্ষার্থীকে তাঁরা আইনস্টাইন বানাতে চান। এমন অনেক বিষয় সেখানে অন্তর্ভুক্ত, যা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পাঠ্য হওয়া সমীচীন। বইগুলো আদৌ সুখপাঠ্য নয়, পড়ানোর মতো উপযুক্ত শিক্ষক খুবই স্বল্পসংখ্যক। বইগুলো রচিত হয়েছে আমলাদের অযাচিত হস্তক্ষেপে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (যেখানে কারিকুলাম স্পেশালিস্ট হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা কারিকুলাম কী তা-ই জানেন না!) বাস্তবতাবর্জিত সুপারিশে এবং কেবল ব্যবসায় মনোবৃত্তির প্রকাশকদের লাভালাভের নিরিখে। উপস্থাপনা, রচনাশৈলী ও প্রকাশনার মান এতই নিচু যে পাঠ্যবই হিসেবে তা কোনো মননশীল তরুণকে আকর্ষণ করে না।
জাতীয় শিক্ষানীতি, ২০১০-এ বিজ্ঞানশিক্ষার ‘উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য’ বর্ণনা করা হয়েছে এভাবে, ‘শিক্ষার্থীদের এমনভাবে প্রস্তুত করা যেন প্রতিভা বিকাশ, জ্ঞানসাধনা এবং সৃজনশীলতায় তারা আন্তর্জাতিক মান অর্জন করতে পারে এবং... একটা সমন্বিত শিক্ষার অংশ হিসেবে বিজ্ঞানশিক্ষাকে শিক্ষার্থীদের সামনে তুলে ধরা।’ কিন্তু বাস্তব চিত্র ও গৃহীত পদক্ষেপগুলোতে কি তা প্রতিফলিত? নবম ও দশম শ্রেণিতে একটি সমন্বিত পাঠক্রমের বদলে মানবিক, বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা ইত্যাদি ধারায় পৃথক্করণ শিক্ষাক্ষেত্রে সুফলদায়ী হয়েছে কি না, তা ভেবে দেখার সময় এসেছে। প্রতিবেশী ভারতসহ দুনিয়াজুড়ে মাধ্যমিক স্তরে পৃথক শিক্ষাধারার অবসান ঘটিয়ে একমুখী শিক্ষা চালু হয়েছে প্রায় দুই দশক আগে। কিন্তু আমাদের জাতীয় শিক্ষানীতিতে তার সমর্থন নেই।
উৎপাদনী শক্তির সার্বিক বিকাশের সঙ্গে শিক্ষা ও বিজ্ঞানের সংযোগ, যথোপযুক্ত সিলেবাস প্রণয়ন, মাতৃভাষায় বিজ্ঞানশিক্ষার প্রসার ও মানোন্নয়ন, আনন্দদায়ক বিজ্ঞানচর্চার পরিবেশ, মেধাবী শিক্ষক নিয়োগ ও তাঁদের দক্ষতা বৃদ্ধি, বাধ্যতামূলক ব্যবহারিক ক্লাস, তাত্ত্বিক ও ফলিত বিজ্ঞানের সমন্বয় সাধন, উপযুক্ত অবকাঠামো নির্মাণ, বিজ্ঞানানুগত্য প্রতিষ্ঠা, মেধা পাচার বন্ধ, যথোপযুক্ত কর্মসংস্থান সৃষ্টি ইত্যাদি ছাড়া বিজ্ঞান সাধনা এবং সৃজনশীলতায় আন্তর্জাতিক মান অর্জন অধরা স্বপ্নই থেকে যাবে I

275
আপনার কতটুকু ঘুম প্রয়োজন?যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল স্লিপ ফাউন্ডেশনের বিশেষজ্ঞরা সব বয়সী মানুষের জন্য স্বাস্থ্যকর ঘুমের একটি তালিকা অনুসরণ করার পরামর্শ দিয়েছেন। তাঁদের মতে, ওই তালিকা অনুযায়ী শিশু-কিশোরদের ঘুমের বর্তমান অভ্যাস পাল্টে নেওয়া যেতে পারে। তবে তরুণ ও তুলনামূলক বেশি বয়সী বৃদ্ধদের জন্য ঘুমের নির্দিষ্ট সময় মেনে চলাটা তুলনামূলক কম জরুরি। আর কিছু মানুষ সহজাত কারণেই অন্যদের চেয়ে কম বা বেশি ঘুমিয়ে অভ্যস্ত। যেমন, কেউ রাতে ছয় ঘণ্টা ঘুমিয়েও পরদিন স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারেন। আবার কেউ ১০ ঘণ্টা পর্যন্ত ঘুমাতে সচ্ছন্দ বোধ করেন। খুব কম ঘুমালে নানা ধরনের স্বাস্থ্যসমস্যা দেখা দিতে পারে। এসবের মধ্যে রয়েছে স্থূলতা, উচ্চ রক্তচাপ, কর্মক্ষমতা ও সৃজনশীলতা হ্রাস ইত্যাদি। অতিরিক্ত ঘুমালে আবার হৃদ্রোগ ও অকালমৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ে।
তালিকাটি প্রণয়নের জন্য ওই বিশেষজ্ঞরা ঘুমের ওপর পরিচালিত অন্তত ৩০০টি গবেষণা প্রতিবেদন পর্যালোচনা করেন। ২০০৪ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে এসব প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ন্যাশনাল স্লিপ ফাউন্ডেশন একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। এটি ঘুমবিষয়ক গবেষণা ও শিক্ষা নিয়ে কাজ করে।
সূত্র: লাইভসায়েন্স
ঘুমের সময় নিয়ে পরামর্শ
.ঘুমানোর সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন সময় ঘড়ির ২৪ ঘণ্টার মাধ্যমে দেখানো হয়েছে
নবজাতক
০–৩ মাস
১৪–১৭ ঘণ্টা
ছোট্ট শিশু
৪–১১ মাস
১২–১৫ ঘণ্টা
হাঁটতে শেখার পর

১–২ বছর
১১–১৪ ঘণ্টা

স্কুলপূর্ব অবস্থা
৩–৫ বছর
১০–১৩ ঘণ্টা

স্কুলগামী শিশু
৬–১৩ বছর
৯–১১ ঘণ্টা

কৈশোর
১৪–১৭ বছর
৮–১০ ঘণ্টা

তরুণ
১৮–২৫ বছর
৭–৯ ঘণ্টা

প্রাপ্তবয়স্ক
২৬–৬৪ বছর
৭–৯ ঘণ্টা

বার্ধক্য
৬৫ বছর
৭–৮ ঘণ্টা
সূত্র: ন্যাশনাল স্লিপ ফাউন্ডেশন/ কার্ল টেইট/ লাইভসায়েন্স

276
অনেক সময় দেখা যায় কম্পিউটারে হার্ডডিস্ক ড্রাইভে পার্টিশন করা ড্রাইভগুলোতে দুই ক্লিক করলেও তা খুলছে না। উইন্ডোজ এক্সপি অপারেটিং সিস্টেমে এটি হরহামেশাই হয়ে থাকে। কোনো কাজে D:\/ ড্রাইভে দুই ক্লিক করে খুলতে গেলেন, কিন্তু সেটি না খুলে অটো রানের কিছু তালিকা দেখিয়ে সেটি খুলতে বলতে পারে। আবার This drive does not open কিংবা Restriction with administrator বার্তা দেখিয়ে থামিয়ে দিতে পারে।
কিছু ভাইরাস আপনাকে বিভ্রান্তিতে ফেলার জন্য এ কাজটা করে। ভাইরাস কিছু খারাপ রেজিস্ট্রি তৈরি করে, ফলে কাজে এমন বাধা আসে। এ জন্য স্টার্ট মেনু থেকে রান প্রোগ্রাম চালু করুন। এখানে regedit লিখে এন্টার করুন। রেজিস্ট্রি এডিটর খুললে বাঁ দিকের তালিকা থেকে HKEY_CURRENT_USER-এ ক্লিক করে Software-এ গিয়ে Microsoft-এ ক্লিক করুন। এখানে আবার Windows-এ ক্লিক করে Current Version-এ ক্লিক করুন। এরপর Explorer-এ ক্লিক করে MountPoints2 খুঁজে নিয়ে মুছে (ডিলিট) ফেলুন।
মনে রাখবেন ভাইরাসে আক্রান্ত হলেই শুধু এই রেজিস্ট্রি মুছতে হবে। অযথা মুছে ফেললে উইন্ডোজের সিস্টেম ফাইলে ঝামেলা হবে। তাই জেনে-বুঝে কাজটি করতে হবে।
যদি নির্দিষ্ট কোনো ড্রাইভ দুই ক্লিকে না খোলে তবে কি-বোর্ড থেকে Shift চেপে ধরে সেই ড্রাইভের ওপর মাউসের ডান বোতাম চাপুন। ধরুন আপনার কম্পিউটারের D:\/ ড্রাইভ দুই ক্লিক করলে সেটি খুলছে না। তাহলে কি-বোর্ড থেকে Shift কি চেপে ধরে ড্রাইভের ওপর মাউসের ডান বোতাম চাপুন। তালিকা থেকে Open command window here-এ ক্লিক করুন। তাহলে D:\/ ড্রাইভের ওপর কমান্ড প্রম্পটের কাজ করার জন্য নতুন উইন্ডো খুলে যাবে। এবার এখানে cd\/ লিখে এন্টার করুন। পরের লাইনে attrib -r -h -s autorun.inf হুবহু লিখে আবার এন্টার করুন। পরের লাইনে আবার del autorun.inf লিখে এন্টার চাপুন। অটোরান প্রোগ্রাম মুছে যাবে। এবার কম্পিউটার একবার রিস্টার্ট করে নিলেই দুই ক্লিকে ড্রাইভার খুলবে।

277
Use of PC / যে ক্লিকে সর্বনাশ
« on: February 23, 2015, 03:13:23 PM »
প্রতিদিনের প্রায় সব ধরনের কাজই এখন সহজে করা যাচ্ছে মাউসের ক্লিকে বা আঙুলের ছোঁয়াতেই। তবে অনেক সময় এই এক ক্লিকই ডেকে আনতে পারে সর্বনাশ! ভুল ও অসতর্ক ব্যবহারে যন্ত্রের ক্ষতিসহ নানা ধরনের ক্ষতির কবলে পড়তে হয় অনেককেই। ই-মেইল বা ফেসবুকে অনেক সময় আয় করার হাতছানি, লটারি জেতার সংবাদ বা জনপ্রিয় কোনো তারকার ভিডিও ও ছবির লিংক থাকে, যেটাতে ক্লিক করতে বলা হয়। এসবে ক্লিক করা মানেই সর্বনাশ!

ক্লিকে ক্লিকে আয়:
ইন্টারনেটে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে আয়ের সুযোগ রয়েছে। অনলাইনে বিভিন্ন ধরনের কাজ করে দেওয়ার জন্য ওয়েবসাইটে বিভাগ অনুযায়ী কাজগুলো তালিকা আকারে দেওয়া থাকে। সাময়িক সময়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়ে ফ্রিল্যান্সাররা কাজগুলো সম্পন্ন করেন। কিন্তু কিছুদিন আগে সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট এবং সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে জানানো হয় যে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে শুধু ক্লিক করেই টাকা উপার্জন করা যাচ্ছে। বিপুলসংখ্যক লোক সেসব সাইটে নিবন্ধন করেন এবং পরে প্রতারিত হন। ফ্রিল্যান্সার হিসেবে উপার্জন করা যায় ইন্টারনেটের মাধ্যমে, কিন্তু এর জন্য কাজ করতে হয়। শুধু মাউসের ক্লিক করলেই উপার্জন করা যায়, এমন ভাবার কোনো কারণ নেই। এ জন্য প্রথমে নির্দিষ্ট কাজের জন্য দক্ষতা অর্জন করতে হবে এবং এর পরেই কেবল উপার্জন করা যেতে পারে। কোনো দক্ষতা অর্জন ছাড়া শুধু বিভিন্ন সাইটে নিবন্ধন করে বা ক্লিক করে উপার্জন করা সম্ভব নয়।

ব্যক্তিগত তথ্য চুরি:
কিছুদিন আগে বিভিন্ন তারকার ব্যক্তিগত বিভিন্ন ছবি ও তথ্য ইন্টারনেটে সবার জন্য উন্মুক্ত হয়ে যায়। যাঁদের এ ক্ষতি হয়েছে, তাঁরা অসতর্কভাবে অ্যাপল আইক্লাউডের পাসওয়ার্ড অবিকল দেখতে অন্য একটি ফিশিং সাইটে লিখেছিলেন এবং এ সুযোগেই হ্যাকাররা তাঁদের অ্যাকাউন্টে ঢুকে সেখানে সংরক্ষিত ব্যক্তিগত তথ্য সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়। অনলাইনে ব্যক্তিগত তথ্য সংরক্ষণের জন্য নির্ভরযোগ্য কিছু ওয়েবসাইট রয়েছে। অনেক সময় এসব ওয়েবসাইটের মতো দেখতে নকল ওয়েবসাইট তৈরি করে ই-মেইল বা সামাজিক যোগাযোগের সাইটে তা ছড়িয়ে দেওয়া হয়। কোনো ব্যবহারকারী যদি সেসব সাইটে ঢোকার জন্য লগ–ইন করার চেষ্টা করেন, তবে অন্যরাও ব্যবহারকারীর পাসওয়ার্ড জেনে যান এবং তাঁদের তথ্য চুরি করে নিতে পারেন। তাই কোনো ওয়েবসাইটে লগ–ইন করার সময় সতর্ক থাকতে হবে যে মূল সাইটটি খোলা হয়েছে কি না।

ক্রেডিট কার্ডের তথ্য চুরি:
ইন্টারনেটের মাধ্যমে কেনাকাটা এখন ব্যাপক জনপ্রিয়, বাংলাদেশেও স্থানীয়ভাবে প্রচুর ই-কমার্স সাইট গড়ে উঠছে। ই-কমার্স সাইটে ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড ব্যবহার করে খুব সহজেই কেনাকাটা করা যায়। আবার অনলাইনে ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড ব্যবহারের সময় তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে প্রচুর।
অনলাইনে কেনাকাটার জন্য নির্ভরযোগ্য ওয়েবসাইটগুলো বেছে নেওয়া উচিত। পাশাপাশি সাইটটি অনলাইন লেনদেনের উপযোগী কি না, সেটিও যাচাই করা দরকার। খেয়াল রাখতে হবে, যে পাতায় ক্রেডিট বা ডেবিট কাডের্র তথ্য দেওয়া হচ্ছে, সেটি যেন https যুক্ত হয়। https দিয়ে শুরু হওয়া ওয়েবসাইটগুলো নিরাপদ ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহার করে, ফলে যোগাযোগের মধ্যে তথ্য চুরি করার আশঙ্কা থাকে না।

ফেসবুকে অশ্লীল তথ্য ছড়িয়ে পড়া:
ফেসবুক সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম, প্রতিনিয়ত আমরা আমাদের পছন্দের বিভিন্ন তথ্য ছড়িয়ে দিচ্ছি এই ফেসবুক থেকে। কিছুদিন পরপরই দেখা যায়, বন্ধু তালিকায় থাকা কেউ অশ্লীল ছবি ও আপত্তিকর তথ্যযুক্ত ওয়েব ঠিকানা অনেকের ওয়ালে শেয়ার করছেন। এগুলো মূলত এক ধরনের স্প্যাম। কেউ যদি ইচ্ছা করে বা ভুলে এগুলোয় ক্লিক করে বসেন, তবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাঁর তালিকায় থাকা সব বন্ধুর ওয়ালে সেই লিংকটি পোস্ট হতে থাকে। ফেসবুকে কোনো ওয়েব ঠিকানা বা লিংক খোলার আগে অবশ্যই সেটি পড়ে দেখা উচিত। যেকোনো অ্যাপ ইনস্টল করার সময় দেখে নেওয়া দরকার, সেটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিজের বা বন্ধুদের ওয়ালে পোস্ট করছে কি না। কোনো স্প্যাম লিংক দেখলে সঙ্গে সঙ্গে সেটি রিপোর্ট করা উচিত, যেন সেটি আর ছড়িয়ে না পড়ে।

278
হ্যাকিং করাটা বোধ হয় ইদানীং বেশ সোজাই হয়ে গেছে। আজকাল সবার অনলাইন অ্যাকাউন্টই তাই কমবেশি হ্যাকিংয়ের ঝুঁকির মধ্যে থাকে। আর সমস্যা হচ্ছে, হ্যাকারদের হাত থেকে বাঁচার উপায় ভালো বলতে পারেন কেবল তাঁরাই। সম্প্রতি হ্যাকিংয়ের হাত থেকে বাঁচার জন্য হ্যাকারদেরই দেওয়া সাতটি মূল্যবান পরামর্শ প্রকাশ করেছে সিএনএন। যেহেতু খোদ হ্যাকারদেরই দেওয়া এই পরামর্শ, তাই এটি মেনে চললে আপনি অনলাইনে সুরক্ষিত থাকবেন বলেই দাবি করেছে সংবাদমাধ্যমটি।

ফোনের ওয়াই-ফাই বন্ধ
সব সময় ফোনের ওয়াই-ফাই বা ব্লুটুথ চালু রাখবেন না। হ্যাকারদের ঝোঁকই হচ্ছে এ ধরনের সুযোগ খোঁজা। সব সময় ওয়াই-ফাই বা ব্লুটুথ চালু রাখলে অপরিচিত ব্যক্তিরাও ফোনের মধ্যে কী আছে, তা দেখার জন্য চেষ্টা চালায়।

সব সময় চালু রাখলে কী সমস্যা? সমস্যা হচ্ছে, আগে কোন কোন নেটওয়ার্কে আপনি সক্রিয় ছিলেন হ্যাকাররা তা জানতে পারেন। আগের সেই নেটওয়ার্কের সূত্র ধরে হ্যাকাররা প্রতারণার ফাঁদ পাতেন। হ্যাকাররা আগের নেটওয়ার্কের ছদ্মবেশে নতুন নেটওয়ার্ক তৈরি করে আপনার ফোনকে আগের কোনো ওয়াই-ফাই বা ব্লুটুথ নেটওয়ার্কে যুক্ত করার জন্য প্রলোভন দেখায়। একবার এই নেটওয়ার্কে ঢুকে পড়লে হ্যাকাররা ফোনে অসংখ্য ম্যালওয়্যার ঢুকিয়ে দেন এবং আপনার অজান্তেই ফোন থেকে তথ্য চুরি, নজরদারির মতো কাজগুলো চালিয়ে যান। তাই যখন প্রয়োজন থাকে না, তখনই ওয়াই-ফাই ও ব্লুটুথ বন্ধ রাখুন।

দুই স্তরের নিরাপত্তা ব্যবহার
এখন আর শুধু পাসওয়ার্ড দিয়ে নিজেকে নিরাপদ ভাবা ঠিক হবে না। প্রায় সময়ই পাসওয়ার্ড হ্যাক হতে দেখা যাচ্ছে।

টু-স্টেপ অথেনটিকেশন বা দুই স্তরের নিরাপত্তা ব্যবহার করুন। এখন অনেক ওয়েবসাইট বা সার্ভিস দুই স্তরের নিরাপত্তা দিচ্ছে। দুই স্তরের এই ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়ায় ব্যবহারকারীকে তাঁর অ্যাকাউন্টে নিয়মিত পাসওয়ার্ড ব্যবহারের পাশাপাশি লগ ইন করার সময় স্মার্টফোন ও ট্যাবে আরও একটি কোড ব্যবহার করতে হয়। এতে অতিরিক্ত একটি স্তরের নিরাপত্তা পাওয়া যায়। তাই যতক্ষণ হাতে মোবাইল ফোন থাকে, ততক্ষণ পর্যন্ত আর কেউ অ্যাকাউন্টে ঢুকতে পারছে না সেই বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়। অ্যাপল, গুগল, ফেসবুক, ড্রপবক্সের মতো অনেক সার্ভিসের ক্ষেত্রে দুই স্তরের এই ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া রয়েছে। নতুন কোনো যন্ত্রে যখনই লগ ইন করতে যাবেন, তখন পাসওয়ার্ড দেওয়ার পর একটি গোপন কোড চাওয়া হবে। এটি কেবল আপনার ফোনে তৎক্ষণাৎ পাবেন। যদি হ্যাকার আপনার পাসওয়ার্ড জানেন, তবে আপনার মোবাইলে আসা কোড না জানা পর্যন্ত অ্যাকাউন্ট হ্যাক করতে পারবে না।

স্মার্ট পাসওয়ার্ড
যেসব অ্যাকাউন্ট বা ওয়েবসাইটে আপনার স্পর্শকাতর তথ্য রয়েছে, সেগুলোতে দীর্ঘ ও জটিল পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন। অক্ষর, চিহ্ন, সংখ্যা প্রভৃতি মিলিয়ে পাসওয়ার্ড জটিল করে তুলুন। প্রতিটি ওয়েবসাইটের জন্য আলাদা পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন এবং পাসওয়ার্ড মনে রাখতে পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার করুন। এ ক্ষেত্রে ‘লাসপাস’ বা ‘পাসওয়ার্ড সেফ’ কাজে লাগতে পারে। প্রতিবছর অন্তত একবার পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুন।

এইচটিটিপিএস ব্যবহার
প্রতিটি ওয়েবসাইট ব্রাউজের সময় এইচটিটিপিএস ব্যবহার করুন। এইচটিটিপিএস ব্যবহার করতে ‘এইচটিটিপিএস এভরিহোয়্যার’ টুলটি ব্যবহার করতে পারেন। এই টুলটি আপনার ব্রাউজারের সব তথ্য এনক্রিপ্ট করে। আপনি যদি অ্যাড্রেস বারে শুধু এইচটিটিপি ব্যবহার করেন, তবে যে কেউ আপনার ইন্টারনেট ব্রাউজের বিষয়ে নজরদারি করতে পারে।

ওয়াই-ফাই সেটআপ
ওয়াই-ফাই সেটআপের ক্ষেত্রে পাসওয়ার্ড দিন। ডিফল্ট পাসওয়ার্ড ব্যবহার করবেন না। সিকিউরিটি এনক্রিপশন দেওয়ার বেলায় ডব্লিউপিএ-২ নির্বাচন করে দিন। বেশির ভাগ রাউটারে ওয়্যারড ইকুভ্যালেন্ট প্রাইভেসি (ডব্লিউইপি) বা ওয়্যারলেস প্রটেক্টেড অ্যাকসেস (ডব্লিউপিএ) ডিফল্ট আকারে দেওয়া থাকে। যেকোনো মূল্যে এ এনক্রিপশন বাদ দিন।

ওয়াই-ফাই আড়াল নয়
আপনার হোম রাউটার সেটিংসের সময় আপনাকে জিজ্ঞাসা করা হয়, ‘হাইড দ্য এসএসআইডি?’ আপনি যদি আপনার ওয়াই-ফাইকে আড়াল করার জন্য ‘ইয়েস’ নির্বাচন করে দেন, তখন আপনার মোবাইল ফোন বা ল্যাপটপ হোম নেটওয়ার্ক খুঁজে পেতে সক্রিয়ভাবে স্ক্যান করতে থাকে। সংযোগ পেলেও সব সময় নেটওয়ার্ক পাওয়ার জন্য আপনার যন্ত্র স্ক্যান চালিয়ে যায়। এ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি গোপন একটি প্রকল্পের ওয়াই-ফাই হ্যাকার বেন স্মিথ বলেন, ‘নিরাপত্তার কথা ভাবলে এসএসডি লুকানোর মাধ্যমে আপনি নিজেকে পাঁচ বছর পুরোনো প্রযুক্তির কাছে সমর্পণ করেন।’

ইন্টারনেট সুবিধার পণ্য কিনতে তড়িঘড়ি
বাজারে ইন্টারনেট সুবিধার নতুন পণ্য এলে অনেকেই তা কেনার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েন। প্রযুক্তিপণ্য নির্মাতাপ্রতিষ্ঠানগুলো ইন্টারনেট সুবিধার নতুন পণ্য বাজারে আনার জন্য যেভাবে তড়িঘড়ি চালায় প্রাইভেসি ও নিরাপত্তার বিষয়ে তত গুরুত্ব দেয় না। হ্যাকার স্ট্যানস্লাভ বলেন, ‘ইন্টারনেট সুবিধার এমন পণ্য নিরাপদ এ কথা বলার জন্য বলা হলেও আদতে তা নয়। তাই ইন্টারনেট সুবিধার নতুন পণ্যগুলো নিরাপদ কি না, তা দেখে কেনা উচিত।’

279
হ্যাকিংয়ের কবলে পড়ার আতঙ্কে রয়েছেন? সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান ট্রাস্টওয়েভ অনলাইনে নিরাপদ থাকার পাঁচটি উপায় মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছে। সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে টেলিগ্রাফ অনলাইন এ পরামর্শগুলো তুলে এনেছে।

সফটওয়্যার হালনাগাদ রাখুন
হালনাগাদ সফটওয়্যার ব্যবহার করুন। যখনই কোনো সফটওয়্যারের আপডেট বা হালনাগাদ উন্মুক্ত করা হবে তা ইনস্টল করে নিন। এতে নানা ধরনের পরিচিত ম্যালওয়্যার থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন।

ভাইরাসযুক্ত ওয়েবসাইট ও অযাচিত মেইল এড়িয়ে যান
শুধু ভাইরাসপূর্ণ ওয়েবসাইটে যাওয়া বাদ দিলেই হবে না এর সঙ্গে প্রতারণাপূর্ণ মেইলের লিংকে ক্লিক করা থেকে বিরত থাকতে হবে। যেসব মেইলে লোভনীয় অফার বা নানা প্রলোভন দেখানো হয়, সেই সব অযাচিত মেইল পড়াও বাদ দিতে হবে। যদি ব্যাংকের নামে কোনো মেইলও হয়, তবে মেইলের লিংকে ক্লিক না করে ব্যাংকের ওয়েবসাইটে বা ওই লিংকটি ব্রাউজারে পেস্ট করে পরীক্ষা করে দেখতে হবে।

প্রাইভেসি সেটিংস ব্যবহার করুন
সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটগুলোতে আপনার যে অ্যাকাউন্ট রয়েছে তার প্রাইভেসি সেটিংস ভালো করে খেয়াল করুন। আপনার বিশ্বস্ত গ্রুপের বাইরে কারও কাছে তথ্য শেয়ার করা থেকে বিরত থাকুন। আগের বিভিন্ন সবার জন্য উন্মুক্ত করা পোস্টগুলোতে নজর দিন। প্রাইভেসি সেটিংস ঠিকঠাক থাকলে কারও প্রোফাইল লক্ষ্য করে আক্রমণ চালানো সাইবার দুর্বৃত্তদের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। আপনি যা পোস্ট করেন তা সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিলে সারা দুনিয়া দেখবে। তাই গুরুত্বপূর্ণ কিছু পোস্ট করার আগে প্রাইভেসির বিষয়টি নিয়ে ভালো করে ভাবুন।

পাসওয়ার্ডের বাইরেও ভাবুন
এখন আর শুধু পাসওয়ার্ড দিয়ে নিজেকে নিরাপদ ভাবা ঠিক হবে না। প্রায় সময়ই পাসওয়ার্ড হ্যাক হতে দেখা যাচ্ছে। টু-স্টেপ অথেনটিকেশন বা দুই স্তরের নিরাপত্তা ব্যবহার করুন। এখন অনেক ওয়েবসাইট বা সার্ভিস দুই স্তরের নিরাপত্তা দিচ্ছে। দুই স্তরের এই ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়ায় ব্যবহারকারীকে তাঁর অ্যাকাউন্টে নিয়মিত পাসওয়ার্ড ব্যবহারের পাশাপাশি লগ ইন করার সময় স্মার্টফোন ও ট্যাবে আরও একটি কোড ব্যবহার করতে হয়। এতে অতিরিক্ত একটি স্তরের নিরাপত্তা পাওয়া যায়। তাই যতক্ষণ হাতে মোবাইল থাকে, ততক্ষণ পর্যন্ত আর কেউ অ্যাকাউন্টে ঢুকতে পারছে না সেই বিষয়টি নিশ্চিত হয়। অ্যাপল, গুগল, ফেসবুক, ড্রপবক্সের মতো অনেক সার্ভিসের ক্ষেত্রে দুই স্তরের এই ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া রয়েছে। নতুন কোনো যন্ত্রে যখনই লগ ইন করতে যাবেন, তখন পাসওয়ার্ড দেওয়ার পর একটি গোপন কোড চাওয়া হবে। এটি কেবল আপনার ফোনে ততক্ষণাৎ পাবেন। যদি হ্যাকার আপনার পাসওয়ার্ড জানে, তবে আপনার মোবাইলে আসা কোড না জানা পর্যন্ত অ্যাকাউন্ট হ্যাক করতে পারবে না।

ই-মেইলের নিরাপত্তা সেটিংস উন্নত করুন
আপনি যাঁদের কাছ থেকে মেইল পান, তাঁদের মেইলের পাঠানো ছবি ​কি স্বয়ংক্রিয় ডাউনলোড হয়ে যায়? ওয়েব কিংবা ই-মেইল থেকে যদি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ছবি, ভিডিওসহ অন্যান্য উপকরণ ডাউনলোড হতে থাকে তা বন্ধ করে দিন। কিছু ই-মেইল ক্লায়েন্ট বাইডিফল্ট এ সুবিধা রাখে আবার কিছু ক্লায়েন্ট রাখে না। তাই মেইল ক্লায়েন্টের সব মেইল পরীক্ষা করে দেখা ভালো।

280
গাড়িচোর ধরতে কতই না প্রযুক্তি বাজারে। তার পরও চুরি হচ্ছে গাড়ি। তবে এবার আশা জাগাচ্ছে নতুন প্রযুক্তি ‘শাফি কার সিকিউরিটি’বিপণিবিতানের সামনে পার্কিংয়ে গাড়ি রেখে ভেতরে গেলেন। ছিলেন ঘণ্টা দুয়েক। বাইরে এসে দেখলেন গাড়ি হাওয়া। পড়ে গেলেন মহাবিপদে। গাড়িতে থাকা প্রযুক্তির মাধ্যমে দেখলেন গাড়ি কোথায়। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি। গাড়ি চলে গেছে অনেক দূরে। থানা-পুলিশ করেও লাভ হলো না। শখের গাড়ি এভাবে চলে যাবে? হাপিত্যেশ ছাড়া আর কিছুই করার নেই। এ রকম ঘটনা প্রায়ই ঘটছে।
এ তো গেল আস্ত গাড়ি চুরির ঘটনা। ছোটখাটো চুরি, গাড়ির পার্টস খুলে নিয়ে যাওয়া, তো নিত্য ব্যাপারে দাঁড়িয়েছে। এমনকি বাসার নিচে পার্কিংয়ে থাকা গাড়ি থেকেও পার্টস চুরি হচ্ছে।
এসব চোর ধরার উপায় কী? সেই সমাধান দিচ্ছেন তরুণ প্রকৌশলী আশরাফ শাফি। শুনে একটু নড়েচড়ে বসলেন তো? কিংবা মনে হচ্ছে, কত কিছুই না হলো, চোর তো প্রযুক্তি ভেদ করেই চলেছে। তবে এবার হয়তো আশার আলো দেখাচ্ছেন শাফি। কীভাবে সেই চোর ধরা?
.শুনুন শাফির মুখেই, ‘পুরো ব্যাপারটি নিয়ন্ত্রিত হবে ছোট একটি ডিভাইসের মাধ্যমে। যেটি গাড়ির ভেতরেই থাকবে। ডিভাইসের সঙ্গে সংযোগ স্থাপিত হবে মুঠোফোনের মাধ্যমে। যেমন পার্কিংয়ে গাড়ি রাখার পর মালিক চলে গেলেন তাঁর মতো। এর মধ্যে চুরির উদ্দেশ্যে গাড়ির দরজা খোলার চেষ্টা করছে কেউ। সে কাজ শুরু করার পাঁচ সেকেন্ডের মধ্যে গাড়ি থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে মালিকের মুঠোফোনে কল চলে যাবে। তিনি জানতে পারলেন গাড়িতে কিছু একটা হচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে পার্কিংয়ে এসেই হাতেনাতে চোর ধরতে পারবেন। কিংবা আসতে আসতেই হয়তো চোর গাড়ির দরজা খুলে স্টার্ট দিয়ে দিল। তাহলে গাড়ির যে মুঠোফোন নম্বরটি থেকে কল এল সেটাতে পুনরায় কল করে পাসওয়ার্ড দিয়ে ঢুকে মালিক বন্ধ করে দিতে পারবেন গাড়ির স্টার্ট। চোর সেখানেই প্রকৌশলী আশরাফ শাফি l ছবি: সৌরভ দাশআটকে যাবে। কারণ, হাজার চেষ্টা করেও চোর আর গাড়ি স্টার্ট করতে পারবে না। এভাবেই ধরা পড়ে যাবে চোর। এ ছাড়া কেউ চাইলে মুঠোফোনে খুদে বার্তার মাধ্যমেও গাড়ির অবস্থান জানতে পারবেন যখন দরকার হয়।’
একটানা বলে কিছুটা দম নিলেন শাফি। এবার আবার প্রশ্ন, চুরি ঠেকাতে বাজারে অনেক প্রযুক্তিই তো আছে, এর বিশেষত্ব কী? বললেন, ‘বাজারে যেসব প্রযুক্তি রয়েছে এসবের মাধ্যমেও চোর ধরা সম্ভব হয়, কিন্তু খুব কম। কারণ, প্রযুক্তিগুলো সঙ্গে সঙ্গে কোনো সংকেত পাঠাতে পারে না। পরে গাড়ির মালিক ট্র্যাকিং করতে পারেন। ট্র্যাকিং করা হলেও অনেক ক্ষেত্রে চোর ধরা সম্ভব হয় না। এই প্রযুক্তিতে চোর গাড়িতে হাত দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মালিক সংকেত পাবেন। তা ছাড়া অন্যান্য প্রযুক্তির চেয়ে এর খরচ কম। মাত্র ১১ হাজার টাকায় প্রযুক্তিটি স্থাপন করা যাবে। তা ছাড়া পরবর্তী সময়ে মাসিক কোনো চার্জ নেই। এটি মোটরসাইকেলেও স্থাপন করা যাবে।’
এবার শুরুর কাহিনি। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চট্টগ্রামের মদুনাঘাট উপকেন্দ্রের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী শাফি নিজের প্রয়োজনেই উদ্ভাবন করেন প্রযুক্তিটি। নিজের গাড়ি সুরক্ষিত রাখতেই কোনো কিছু করা থেকে এই উদ্ভাবন। তিনি জানান, প্রযুক্তিটি উদ্ভাবনের কথা জেনে অনেকে যোগাযোগ করছেন। বেশ ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। যা তাঁকে অনুপ্রাণিত করছে। তাঁর স্বপ্ন, এই প্রযুক্তি সবার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ুক।
শাফি বলেন, ‘আমি একজন চাকরিজীবী। আমার পক্ষে এটি পুরোপুরিভাবে বিপণন করা সম্ভব হবে না। সবার জন্য এই প্রযুক্তি সহজলভ্য করতে কোনো একটি কোম্পানির সহযোগিতা প্রয়োজন।’ শাফি চান শখের গাড়িটি যেন আর দুশ্চিন্তার কারণ না হয়। প্রযুক্তি নিশ্চিত করবে গাড়ির নিরাপত্তা। বিস্তারিত জানতে:
www.facebook.com/ashrafshafi.bd

281
টিভি দেখতে আমরা সবাই পছন্দ করি। আর কার্টুন ছাড়া বন্ধুদের নিশ্চয় দিন চলে না। স্কুলের ফাঁকে একটু অবসর পেলেই টিভির সামনে বসে পড়া। কিন্তু টিভি অন্ধকার ঘরে বসে দেখা উচিত নয়

মানুষের চোখ সব সময় সাদা ‍আলোতে ভালো কাজ করে। অর্থাৎ ভালো দেখা যায়। সাদা আলোয় আমাদের চোখ স্পষ্ট দেখে।

চিকিৎসাশাস্ত্র মতে, অন্ধকারে টিভি দেখার প্রধান অসুবিধা দুটি। প্রথমত, টেলিভিশনের তীব্র ঔজ্জ্বল্যের আলো চোখের জন্য ভালো নয়। চোখের ভিতর ওই আলোর অভ্যন্তরীণ প্রতিফলন হয়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় চোখের অক্ষিপট।

দ্বিতীয়ত, অন্ধকার ঘরে টেলিভিশনের পর্দার আলোর কম্পন এত প্রকট হয়ে চোখে পড়ে যে তাতে চোখ ক্লান্ত হয়।

সুতরাং, অন্ধকার ঘরে টেলিভিশন দেখা উচিত নয়। ক্ষতিকর প্রভাব থেকে চোখকে রক্ষা করতে হলে পর্দা থেকে অনন্ত ৩ থেকে ৪ মিটার দূরে বসে টিভি দেখা উচিত।

282
গীবত শব্দটির আভিধানিক অর্থ দোষারোপ করা, কুৎসা রটনা, পেছনে সমালোচনা করা, পরচর্চা করা, পরনিন্দা করা, কারো অনুপস্থিতিতে তার দোষগুলো অন্যেও সামনে তুলে ধরা। ইসলামি শরিয়তে গীবত হারাম ও কবিরা গুনাহ। যারা অগ্র-পশ্চাতে অন্যের দোষ বলে বেড়ায় তাদের জন্য ইসলামে ধবংসের দুঃসংবাদ রয়েছে। (মুসলিম)

পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক এরশাদ করেছেন, আর তোমরা অন্যের দোষ খুঁজে বেড়াবে না’। (সূরা আল-হুজুরাত,আয়াত-১২)

গীবতের সবচেয়ে উত্তম সংজ্ঞা দিয়েছেন রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। সাহাবি আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিস থেকে জানা যায়, হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা কি জান গীবত কাকে বলে? সাহাবিরা বললেন, আল্লাহ ও তার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামই ভালো জানেন। তিনি বলেন, তোমার কোনো ভাই (দীনি) সম্পর্কে এমন কথা বলা, যা সে অপছন্দ করে, তাই গীবত। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল, আমি যে দোষের কথা বলি সেটা যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে থাকে তাহলেও কি গীবত হবে? উত্তরে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তুমি যে দোষের কথা বল, তা যদি তোমার ভাইয়ের মধ্যে থাকে তবে তুমি অবশ্যই গীবত করলে আর তুমি যা বলছো তা যদি তার মধ্যে না থাকে তবে তুমি তার ওপর মিথ্যা অপবাদ দিয়েছো। (মুসলিম)

অনেকে ভাবতে পারেন আমিতো গীবত করি না। অন্যে বলে আমি শুধু শুনি। না, তাদেরও রক্ষা নেই। কারণ তারা গীবতকারীকে সাহায্য করছে এই পাপ কাজ করতে। গীবতকারী গীবত করার জন্য যদি কাউকে না পায় তাহলে সে আর গীবত করতে পারবে না। আর তাই গীবত শ্রবণকারীদের জন্যও রয়েছে আল্লাহর হুকুম। ইসলামের দৃষ্টিতে গীবত করা যেমন নিষেধ, তেমনি গীবত শোনাও নিষেধ। যে গীবত শোনে সেও গীবতের পাপের অংশীদার হয়ে যায়। হাদিস শরিফে আছে, যখন কেউ আপনার সঙ্গে বসে অন্যের গীবত করে তখন তাকে থামতে বলুন, আল্লাহর হুকুমের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে সাবধান করুন। আর তাতেও যদি কাজ না হয় তবে সেখান থেকে সরে আসুন। কোনোভাবেই গীবত শোনা যাবে না।

গীবতকারীদের সম্পর্কে বলতে গিয়ে মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, পরনিন্দাকারী জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। (বুখারী ও মুসলিম)

হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যখন আমাকে মিরাজে নিয়ে যাওয়া হলো, তখন আমি তামার নখ বিশিষ্ট একদল লোকের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। তারা নখগুলো দিয়ে তাদের মুখমণ্ডল ও বক্ষদেশে আঘাত করে ক্ষত-বিক্ষত করছিলো। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে জিব্রাইল! এরা কারা? জিব্রাইল(আ.) বললেন, এরা দুনিয়াতে মানুষের গোশত ভক্ষণ করতো এবং তাদের মান-সম্মান নষ্ট করতো। অর্থাৎ তারা মানুষের গীবত ও চোগলখোরী করতো। (আবু দাউদ)

আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, দুনিয়াতে যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের গোশত ভক্ষণ করবে অর্থাৎ গীবত করবে, কিয়ামতের দিন গীবতকারীর সামনে গীবতকৃত ব্যক্তিকে মৃত অবস্থায় উপস্থিত করা হবে এবং বলা হবে তুমি মৃত অবস্থায় তার গোশত ভক্ষণ কর যেমনভাবে জীবতাবস্থায় তার গোশত ভক্ষণ করতে। অতঃপর সে অনিচ্ছা সত্ত্বেও চিৎকার করতে করতে তা ভক্ষণ করবে। (বুখারী)

সুতরাং অন্যের সমালোচনায় মত্ত না থেকে নিজের দোষগুলো খুঁজে বের করি আর আল্লাহর কাছে সাহায্য চাই যাতে করে নিজের দোষগুলো কাটিয়ে উঠতে পারি।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তার সাহাবিরা জিজ্ঞেস করেছিলেন, হে আল্লাহর রাসুল গীবত কি জেনার চেয়েও মারাত্মক? জবাবে তিনি বললেন, হ্যাঁ, কারণ কোনো ব্যক্তি জেনার পর (বিশুদ্ধ) তওবা করলে আল্লাহ ক্ষমা করেন। কিন্তু গীবতকারীকে যার গীবত করা হয়েছে, তিনি মাফ না করলে আল্লাহ মাফ করবেন না। (মুসলিম)
 
গীবতের কাফফারা হলো, যার সম্পর্কে গীবত করা হয়েছে তার জন্য আল্লাহর কাছে বেশি বেশি করে দোয়া করা। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, গীবতের কাফফারা হলো, তুমি যার গীবত করেছো, তার জন্য মাগফিরাতের দোয়া করবে। তুমি এভাবে করবে, হে আল্লাহ তুমি আমার ও তার গুনাহ মাফ করে দাও। (বায়হাকি)

283
পুরোনো কথাটাই নতুন করে বলি, সকালে পরিমিত পরিমাণ দেহে রোদ লাগানো স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। যারা সানস্ক্রিন ব্যবহার না করে বেশিক্ষণ রোদে থাকেন তাদের ক্যান্সারসহ নানা রোগ হতে পারে। কিন্তু নির্দিষ্ট পরিমাণ রোদ আপনার দেহঘড়ি, মন মেজাজ সর্বোপরি স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। নিচের ছয় কারণে আপনার সকালের রোদে থাকা উচিত:

ঘুমাতে ও ঘুম ভাঙাতে:  ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সায়েন্সের মতে, যদি কেউ সকালে একঘণ্টা রোদে থাকেন তবে ভালো ঘুম হওয়া নিশ্চিত। আবার খুব সকালের জানালার মধ্যে দিয়ে আসা মিষ্টি রোদ দেহের জন্য যেমন উপকারী তেমনি সকাল সকাল ঘুম ভাঙাতেও সাহায্য করে থাকে। 

সকালের রোদ ওজন কমাবে:  সকালের রোদ গায়ে মাখলে যে শুধু প্রয়োজনীয় ভিটামিন ডি পাওয়া যায় তা নয়, এতে আপনার ওজনও কমবে। যারা দিনের অন্য সময়ের তুলনায় সকালের উজ্জ্বল আলোর সংস্পর্শে বেশি সময় থাকেন, তাদের ওজন বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি কম থাকে।

বিষণ্নতা দূরীকরণে: মনোবিদদের মতে, যেসব মানুষ প্রাকৃতিক আলোতে বেশি সময় কাটান তাদের বিষণ্নতায় ভোগার সম্ভাবনা অপেক্ষাকৃত কম। এটাই নাকি হতাশা কাটানোর সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা।

হাড় গঠনে: সকালের রোদ দেহের সংস্পর্শে আসলে দেহে ভিটামিন ডি সৃষ্টি হয়। এই ‘সানসাইন ভিটামিন’ ক্যালসিয়াম শোষণে সাহায্য করে যা হাড়ের জন্য উপকারী। এছাড়া স্যালমনের মতো নানা সামুদ্রিক মাছেও ভিটামিন ডি পাওয়া যায়।

ক্যান্সার ও হৃদরোগ নিয়ন্ত্রণে: কোনো কোনো গবেষণায় দেখা গেছে, সানসাইন ভিটামিন ব্রেস্ট, প্রস্টেট ক্যান্সার এবং হৃদরোগসহ অন্যান্য রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।

ভিটামিন ডি: বোস্টন ইউনিভার্সিটির স্কুল অব মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক মাইকেল হলিক বলেন, অত্যাবশকীয় হওয়া সত্ত্বেও আমাদের দেহে উল্লেখযোগ্যহারে ভিটামিন ‘ডি’ এর ঘাটতি রয়েছে। তার মতে, সূর্যের আলোর ভিটামিন দ্বারা আমাদের দেহের ছয়ভাগের একভাগ জিনোমে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে।

হাভার্ড স্কুল অব পাবলিক হেলথের তথ্যমতে, বিশ্বব্যাপী প্রায় একশ কোটি লোক ভিটামিন ডি এর অভাবে ভুগছে। তাছাড়া ভালো ত্বকের জন্য দৈনিক ১৫ মিনিট রোদে পোড়া ভালো।

284
Food / ওজন কমাতে ১০ খাবার
« on: September 03, 2014, 03:59:34 PM »
ওজন কমাতে আমাদের চেষ্টার অন্ত নেই। কখনো না খেয়ে চরম ডায়েট আবার কখনোবা ব্যায়াম করতে করতে একশেষ। কিন্তু এমন যদি হয় খাবারও খেলেন ওজনও কমলো তাহলে নিশ্চয়ই মন্দ হয় না।  সেই সঙ্গে পুষ্টিগুণ তো রয়েছেই। সুস্বাস্থ্যের জন্য চেষ্টা করুন এগুলো প্রতিদিন বা সপ্তাহের খাবারের তারিকায় রাখতে। আর অবশ্যই প্রতিদিন ব্যয়াম করতে ভুলবেন না একেবারেই। ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এমন দশটি খাবার নিয়েই এ প্রতিবেদন।
জাম্বুরা/বাতাবি লেবু
জাম্বুরা বা বাতাবি লেবু আপনার অভ্যন্তরীণ বিপাকক্রিয়া ত্বরান্বিত করে প্রচুর পরিমাণে ক্যালোরি পোড়াতে সহায়তা করে থাকে। এই ফল অল্পতেই আপনার পেট ভরিয়ে দীর্ঘ সময় কম ক্যালোরির সঙ্গে মানিয়ে নিতে সাহায্য করে। উপরন্তু এ ফল আশযুক্ত হওয়ায় আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রিত থাকবে। তাই সালাদ অথবা জুস হিসেবে বাতাবি লেবু আপনার খাবারের তালিকায় রাখতে ভুলবেন না যেন। 

সেলারি
সেলারিকে  সাধারণত সবজি হিসেবেই ব্যবহার করা হয়। হঠাৎ করে দেখলে একে ধনেপাতা বলে ভুল হতে পারে। এটা খুবই কম ক্যালোরি সমৃদ্ধ খাবার। আপনি বেশি খেয়ে ফেললেও তবে বাড়তি ক্যালরি পোড়াতে সাহায্য করবে সবজিটি। সেলারিতে পানির ভাগ বেশি হওয়াতে এটা সুষম খাবারের উপকরণ হতে পারে সহজেই। কাজেই খাবারের সঙ্গে সঙ্গে   সেলারি খান।

গোটা শস্য
গবেষণায় দেখা গেছে, গোটা শস্য প্রক্রিয়াজাত  শস্য থেকে অধিক স্বাস্থ্যসম্মত এবং পুষ্টিকর। এ ধরণের শস্য খাওয়ার বড় সুবিধা হলো আপনার সহজে ক্ষুধার্ত হতে দেবে না। গোটা শস্য নানা ধরনের ভিটামিন, খনিজ এবং কার্বোহাইড্রেটের আধার।  এতে চর্বি বা ফ্যাটের পরিমাণ খুবই অল্প।

গ্রিন টি
 গ্রিন সবুজ অ্যান্টি অক্সিডেন্টে ভরপুর এবং বিপাকে সাহায্য করে। দেহের মেদ কমিয়ে আপনাকে আকর্ষণীয় স্বাস্থ্যের অধিকারী হিসেবে গড়ে তুলবে। কাজেই হালকা মেজাজের এক কাপ গ্রিন টি নিয়মিত খাওয়ার চেষ্টা করুন।

ওমেগা-৩
ওমেগা-৩ হলো শরীরের জন্য একটি অত্যাবশ্যকীয় ফ্যাটি ‍এসিড। শিশুর বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশে এর জুড়ি নেই। এই ফ্যাটি এসিড দ্রুত শরীরের চর্বি পুড়িয়ে রক্তে লিপিডের ভারসাম্য বজায় রাখে। বিভিন্ন ধরনের বাদাম, সামুদ্রিক মাছে প্রচুর পরিমাণ ওমেগা-৩ পাওয়া যায়।   

কফি
আমরা সবাই জানি, কফিতে থাকা ক্যাফেইন আমাদের দেহ সজাগ ও সজীব রাখে। এই ক্যাফেইন রক্তের মাধ্যমে আমাদের ফুসফুসে গিয়ে হার্টবিট বাড়িয়ে দেয়। রক্তে অধিক পরিমাণে অক্রিজেন গ্রহণ করে অতিরিক্ত ক্যালোরি ধ্বংস করে।
তবে কফির সঙ্গে ক্রিম, দুধ বা চিনির ব্যবহার কফির গুণাগুণকে নষ্ট করে দেয়। তাই এর পরিবর্তে দারুচিনি বা এ জাতীয় অন্য কিছু ব্যবহার করতে পারেন।

অ্যাভাকাডো
মেক্সিকো এবং মধ্য আমেরিকার একটি ফল অ্যাভাকাডো। অ্যাভাকাডো তিনভাবে চর্বি কমায়। এর উপাদান ক্ষতিকর চর্বি পুড়িয়ে শরীরের কোষ নষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা করে।
এছাড়া এট শরীরের কোলেস্ট্ররেলের পরিমাণ কম‍ায়, হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়। সেই সঙ্গে চোখ এবং চুল ভালো রাখতেও অ্যাভাকাডোর জুড়ি নেই। আপনি চাইলে সকালে অর্ধেক অ্যাভাকাডো, টমেটো এবং সিমের সঙ্গে সালাদ হিসেবে খেতে পারেন। অথবা দারুচিনি, অ্যাভাকাডো আর নারকেল দুধ মিশিয়ে একটা মজাদার মিশ্রণ তৈরি করেও খেতে পারে।

মশলাযুক্ত খাবার
যে কোনো মশলাদার খাবার চর্বি কমাতে ভূমিকা রাখে। এতে অতিরিক্ত চর্বি থাকে না। উপরন্তু এটা আপনাকে খাদ্যে বাড়তি স্বাদও দেবে। মশলা হিসেবে আপনি সালাদে মরিচ বা বিভিন্ন ধরনের সসেজও ব্যবহার করতে পারেন।

তকমা
প্রোটিন, ফাইবার ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডের আধার বলা যেতে পারে তকমা দানাকে। ক্ষুধা কমিয়ে দেহে এক ধরনের হরমোনের নিঃসরণ ঘটায় যা চর্বি কাটানোর একটি বড় উপায়। মাত্র ১৫ মিনিট কিছু তকমা দানা পানিতে ভিজিয়ে রাখুন, দেখবেন প্রকৃত আকারের চেয়ে প্রায় ১০ গুন বড় হয়ে যাবে।
তকমা অনেক্ষণ পেট ভরিয়ে রাখবে এবং অতিরিক্তি খাওয়া থেকে বিরত রাখবে। আপনি শরবত, দই, সালাদ কিংবা মিস্টি জাতীয় আরো খাবারের সঙ্গে তকমা যুক্ত করতে পারেন।

ব্রাজিলিয়ান নাট
মজাদার সুস্বাদু খাবের মধ্যে ব্রাজিলিয়ান নাট বা বাদাম অন্যতম। তবে অন্য খাবারের চেয়ে ব্রাজিলিয়ান নাট অধিকহারে চর্বি কমায়। এ বাদাম দ্রুত হজমে সাহায্য করে। থাইরয়েড হরমোনকে টি-৩ হরমোনে রূপান্তর করে কর্মক্ষমতা বাড়ায়। বিভিন্নভাবে বাদাম খেতে পারেন। ব্লেন্ড করে দুধের সঙ্গে অ্যালাচ ও ভ্যানিলা মিশিয়ে খেতে পারেন আবার পেঁপে কিংবা আমা মিশিয়েও খেতে পারেন। চাইলে এটাকে আপনি সালাদের উপকরণ হিসেবেও ব্যবহার করতে পারেন। 

285
Hadith / জুলুম অমার্জনীয় অপরাধ
« on: September 03, 2014, 03:38:02 PM »
সৃষ্টির শুরু থেকে আল্লাহ পাক কিছু নীতিমালা নির্ধারণ করে রেখেছেন। পৃথিবীর রঙ্গমঞ্চে অনেক উত্থান-পতনের ঘটনা ঘটেছে কিন্তু এসব নীতিমালায় কোনো পরিবর্তন হয়নি তার। যুগে যুগে তার এমন অমোঘ বিধি-বিধান এবং নির্দেশনাসমূহের বাস্তবায়ন লিপিবদ্ধ হয়ে আছে পৃথিবীর ইতিহাসে।
যে কয়েকটি বিষয় আল্লাহ পাক নিজের জন্যও নিষিদ্ধ করে রেখেছেন- সেসবের মধ্যে সর্বপ্রথম বিষয়টি হচ্ছে জুলম বা অন্যায়। মুসলিম শরীফে বর্ণিত হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ পাক আমাদের লক্ষ্য করে বলছেন, হে আমার বান্দারা! আমি নিজেই আমার ক্ষেত্রে জুলম হারাম করে নিয়েছি ও এ বিষয়টিকে তোমাদের পরস্পরের জন্যও নিষিদ্ধ করে দিলাম। তোমরা একে অন্যের ওপর জুলম করো না।
আজকের সমাজজীবনে একেবারে সাধারণ বিষয়ে একে অন্যের ওপর বিরাজমান জুলম করা কিংবা শাসকের পক্ষ থেকে দেশের জনগোষ্ঠীর ওপর অবৈধভাবে শাসনক্ষমতা প্রয়োগের ভয়াবহতা আল্লাহ পাকের কাছে অমার্জনীয় অপরাধ। এর কঠিন শাস্তি ও পরিণতির প্রতি সতর্ক করে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা জুলম বা অন্যায় করা থেকে বিরত থাকো। এই জুলম কিয়ামতের দিন ঘোর অন্ধকার হয়ে দেখা দিবে। (মুসলিম)
 তিনি অন্যায় থেকে এভাবে বিরত থাকার পাশাপাশি মজলুম ব্যক্তির প্রার্থনার শক্তি সম্পর্কেও সজাগ করেছেন আমাদের। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, মজলুমের বদদুআ থেকে বেঁচে থাকো। যদিও সে কাফের হয়। কারণ তার দুআ সরাসরি আল্লাহর কাছে পৌঁছে যায়।

পৃথিবীতে আজ প্রতিনিয়ত কতো কতো জালেমের অন্যায়-অত্যাচার আর অবৈধ শক্তির ভয়ে মানুষ আতঙ্কিত ও ভীত। কতো অসহায় মানুষ দু’হাত তুলে জালেমের ধ্বংস প্রার্থনা করেন অথচ এর প্রতিফলন তাৎক্ষণিক ঘটছে না। অশ্রু শুকিয়ে আশার প্রদীপ নিভে যায় অথচ জালেমের জুলম অব্যাহত থেকে যায়। এর রহস্য কী? কেন মহান স্রষ্টার এমন নিরবতা?
উম্মতের এমন ব্যথাতুর কৌতূহলের জবাব দিয়েই আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলে গেছেন, আল্লাহ পাক জালিমকে ছাড় দিতে থাকেন- তারপর যখন ধরেন তখন আর তাকে কোনো সুযোগ দেন না। (বুখারী)

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর এ হাদীসের স্বপক্ষে পবিত্র কুরআনে বেশ কিছু আয়াতও রয়েছে। আল্লাহ পাক বলেন, জালেমরা যা করছে সে সম্পর্কে তোমরা আল্লাহকে উদাসীন ভেবো না, তিনি তাদের ছাড় দিয়ে যাচ্ছেন ওই দিন পর্যন্ত যেদিন চোখগুলো সব আতঙ্কে বড় বড় হয়ে যাবে। (সূরা ইবরাহীম-৪৩) অন্য আয়াতে তিনি স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন, এমনই ছিল তোমার রবের ধরপাকড়-যখন তিনি ধরেছিলেন ওই জালেম বসতিগুলোকে- নিশ্চয়ই তার ধরা অনেক কঠিন যন্ত্রণাময়। (সূরা হুদ-১০২) পবিত্র কুরআনে জালেম বা অন্যায়কারীর ওপর আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে অভিশাপ ও কঠিন শাস্তির বর্ণনা সম্বলিত অনেক আয়াত রয়েছে।

কারো ওপর যে কোনো ধরনের অন্যায়- এর পেছনে যে ধরনের স্বার্থই থাকুক- চাই তা সামাজিক, রাজনৈতিক বা ইসলামের নামে হলেও তা মহান শক্তিমান আল্লাহ পাকের কাছে অন্যায় এবং অমার্জনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য। অন্যের ওপর অন্যায় কিংবা জুলম এতোই নিন্দনীয় যে স্বয়ং জালেমও তার জন্য বিষয়টিকে মেনে নিতে পারে না। একজন ঘোরতর জালেমও অন্যের কাছে নিজের ক্ষেত্রে ন্যায়ের কামনা করে থাকে।

আল্লাহ পাকের কিছু অলঙ্ঘনীয় বিধানসমূহের একটি অন্যতম বিধান হলো-তিনি জালেম মুসলমানের বিপক্ষে মজলুম কাফেরকেও সাহায্য করেন। তবুও তিনি জালেমকে কোনো ছাড় দেন না। জুলুমের শাস্তি এতো ভয়াবহ ও দ্রুত যে দুনিয়া থেকেই এর সূচনা হয়। আখেরাতে এর পরিণতি কতো মারাত্মক ও ভয়াবহ তা স্বয়ং এক আল্লাহ পাকই জানেন।

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (সা.) এক হাদীসে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, কোন জালেম শাসক রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুপারিশ পাবে না রোজ হাশরের মাঠে।
 
তাই ক্ষমতার মসনদে সমাসীন ব্যক্তিবর্গ অস্ত্র কিংবা শক্তিবলে প্রজা অথবা জনসাধারণের ওপর যে কোনো অন্যায় বা অবৈধ কার্যকলাপ চাপিয়ে দিয়ে সমর্থকদের ক্ষণিকের হাততালি পেতে পারেন, কিন্তু চিরস্থায়ী পরকালের সূচনায় কাল কিয়ামতের মাঠে তারা বঞ্চিত হবেন সব ধরনের দয়া ও করুণা থেকে। একটি ছাগলও যদি অন্যায়ভাবে আরেকটি ছাগলকে শিং দিয়ে সামান্য আঘাত করে থাকে- পরম শক্তিমান সেদিন দু’টি ছাগলকেই জীবিত করে জুলুমের শিকার নির্বাক প্রাণীকেও সুযোগ করে দেবেন শিংধারী ছাগলকে আঘাত করে তার প্রতিশোধ নিতে। অবলা প্রাণীর বেলায় যদি এই হয় দেনা-পাওনার হিসাব, তাহলে সৃষ্টির সেরা জীব মানুষের ক্ষেত্রে জালেম-মজলুমের হিসাব নিকাশ কতোটা নিখুঁত ও ভয়াবহ হবে তা সহজেই অনুমেয়।

আল্লাহ পাকের সাহায্য মজলুমের সঙ্গে, তাঁর মদদ অতি সন্নিকটে। যুগ যুগান্তরে অসহায় নির্যাতিত নিপীড়িত মানুষগুলোর জন্য এ অভয় বাণীই সবচেয়ে বড় সান্তনা ও বেঁচে থাকার প্রেরণা।

Pages: 1 ... 17 18 [19] 20 21 22