Daffodil International University

Entertainment & Discussions => Story, Article & Poetry => Topic started by: kekbabu on March 30, 2021, 04:28:00 PM

Title: ভেজাল খাদ্য কমিয়ে দিচ্ছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা (ইত্তেফাক, ২৮ মার্চ, ২০২১)
Post by: kekbabu on March 30, 2021, 04:28:00 PM
ভেজাল খাদ্য কমিয়ে দিচ্ছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা

ড. কুদরাত-ই-খুদা বাবু ২৮ মার্চ, ২০২১

মানুষের জীবন ধারণের জন্য যতগুলো চাহিদা রয়েছে, তার মধ্যে খাদ্য হচ্ছে প্রধান মৌলিক চাহিদা। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এ দেশের জনগণ প্রতিদিন যেসব খাবার খাচ্ছে, তা কি সম্পূর্ণরূপে ভেজালমুক্ত? নিশ্চই না। অর্থাত্, জনগণ প্রতিনিয়তই ভেজাল খাবার খাচ্ছে। ভেজালযুক্ত খাদ্য থেকে জনগণ মুক্তি চাইলেও যেন পাচ্ছে না। তবে এক দিনে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের গাফিলতি, অসাধু ও অতিমুনাফালোভী ব্যক্তিদের কারণে মূলত এই আবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ভেজালমুক্ত খাদ্য যেমন দেহের ক্ষয় পূরণ, বৃদ্ধি সাধান এবং রোগ প্রতিরোধ করে; তেমনি ভেজালযুক্ত খাদ্য গ্রহণের কারণে নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে জীবন বিপন্ন পর্যন্ত হতে পারে। তাই ‘সকল সুখের মূল’ নামক স্বাস্থ্যকে ভালো রাখতে ভেজালমুক্ত খাবার গ্রহণের বিকল্প নেই। কিন্তু আমাদের দেশে শাক-সবজি, ফলমূল, মাছ-মাংস, দুধ, গুড়, মসলা থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সব খাদ্যই যেন ভেজালে পরিপূর্ণ। এমনকি এ দেশে শিশুখাদ্যসহ জীবন রক্ষাকারী ওষুধেও ভেজাল মেশানো হয়েছে এবং ভেজালযুক্ত ওষুধ খেয়ে অনেক শিশুর মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছে। আবার শেষ পর্যন্ত এসব অপরাধের সাথে জড়িত ব্যক্তিরা ছাড়ও পেয়েছেন, যে লজ্জা গোটা জাতির। অথচ নিরাপদ খাদ্যের বিষয়টি জনস্বাস্থ্য-সংক্রান্ত এমনই এক বিষয় যে, এ ক্ষেত্রে কাউকে ন্যূনতম ছাড় পর্যন্ত দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। অথচ এ দেশে ঘটে উলটো ঘটনা। বর্তমানে দেশে চলছে মহামারি করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের দ্বিতীয় পর্যায়, যা প্রথম পর্যায়ের চেয়ে অপেক্ষাকৃত ভয়াবহ। একটু ভালোভাবে খোঁজ নিলে দেখা যাবে, করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের এই কঠিন সময়েও এ দেশে থেমে নেই খাদ্যে ভেজাল দেওয়ার প্রবণতা। করোনার হাত থেকে যখন মানুষ নিজেদের রক্ষা করতে হিমশিম খাচ্ছে; কোয়ারেন্টাইন ও সোশ্যাল ডিসটেন্সিংসহ নানা রকম প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে; সরকার জনগণকে নানাভাবে সতর্ক করছে, চিকিত্সকেরাও শরীরের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা (ইমিউনিটি) কীভাবে বাড়ানো যায়, সে বিষয়ে বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছেন, ঠিক সেই সময়ে দেশে চলছে বিভিন্ন খাদ্রদ্রব্যে ভেজাল মেশানোর সেই চিরপরিচিত খেলা। চিকিত্সাবিজ্ঞানীদের মতে, শরীরে ইমিউনিটি ভালো থাকলে এবং স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে চললে করোনা সহজে কাউকে সংক্রমিত করতে পারবে না। প্রাকৃতিকভাবে পরিপক্ব বা পাকানো ফল ও শাকসবজির মধ্যে ইমিউনিটি বাড়ানোর অসীম ক্ষমতা থাকে। তাই করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করতে গেলে অবশ্যই প্রত্যেকের শরীরে ইমিউনিটি বাড়ানো জরুরি। কিন্তু ফরমালিন মেশানো বিভিন্ন ফল, শাকসবজি ও ভেজাল মেশানো খাদ্যদ্রব্য খেয়ে সেই ইমিউনিটি বাড়ার বদলে নিজের অজান্তেই কমে যাচ্ছে, যা সবার জন্যই চিন্তার বিষয়।

খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল (যেমন : ফরমালিন, ক্যালসিয়াম কার্বাইড, প্রোফাইল প্যারা টিটিনিয়াম পাউডার, ইথেফেন ইত্যাদি) মেশানোর বিষয়টি দেশে দীর্ঘদিন ধরেই নিন্দিত হয়ে আসছে। অথচ জনগণ যেন এ থেকে পরিত্রাণ পাচ্ছে না। গণমাধ্যম থেকে জানা যায়, দেশে শিল্প খাতে ফরমালিনের প্রয়োজন ৪০-৫০ টন। কিন্তু প্রতি বছর ফরমালিন আমদানি করা হয় প্রায় ২০৫ টন। অর্থাত্, বাড়তি ১৫০ টনের বেশি ফরমালিন বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্যের সঙ্গে দেশবাসীর পেটে গেছে। অনেক সময় বিভিন্ন বাজারকে আনুষ্ঠানিকভাবে ফরমালিনমুক্ত ঘোষণা করতে দেখা যায়। অথচ খোঁজ নিলে দেখা যাবে, ঐ বাজার আগে যা ছিল, কয়েক দিন পরে আবার তা-ই হয়েছে। ভেজালযুক্ত খাবার গ্রহণের কারণে জনগণ স্বাভাবিকভাবেই দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ভুগছে, বিশেষ করে করোনার এই সময়ে। তবে সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে অগণিত শিশু, যাদের বলা হচ্ছে আগামীর ভবিষ্যত্। এ ধরনের পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। আমাদের পুরো খাদ্যচক্রের মধ্যে প্রতিনিয়ত যেভাবে বিষ ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে, তাতে মনে হয় জাতি হিসেবে আমারা দ্রুতগতিতে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, প্রতি বছর ভেজাল খাদ্য খেয়ে ৩ লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে মরণব্যাধি ক্যানসারে, প্রায় দেড় লাখ আক্রান্ত হচ্ছে ডায়াবেটিসে এবং প্রায় ২ লাখ আক্রান্ত হচ্ছে কিডনি রোগে। তবে ভেজাল খাদ্য গ্রহণের কারণে শিশু ও গর্ভবতী নারীরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। ভেজাল খাদ্যের কারণে গর্ভবতী মায়ের শারীরিক বিভিন্ন জটিলতা দেখা দেয় এবং গর্ভজাত অনেক শিশু বিলাঙ্গ হয়ে পড়ে।

ভেজাল খাদ্যের কারণে শিশু বিকলাঙ্গ হওয়া এবং শিশুখাদ্যে ভেজাল মেশানো আগামী প্রজন্মের জন্য নিশ্চয় কোনো শুভ বিষয় নয়। নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীতে বিষাক্ত কেমিক্যাল ব্যবহারে সরকার কর্তৃক নিষেধাজ্ঞা থাকলেও এ দেশের একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী জনস্বাস্থ্যের কথা চিন্তা না করে অধিক মুনাফার লোভে খাদ্যদ্রব্যে বিষাক্ত কেমিক্যাল মেশাচ্ছে। অনেক সময় কাউকে আটক করা হলেও পরে তারা ঘুষ, পেশিশক্তিসহ রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় পার পেয়ে যায়, যা দুঃখজনক। খাদ্যে ভেজাল রোধে নিরাপদ খাদ্য আইনের সঠিক প্রয়োগ হওয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতা, উদাসীনতা ও ঘুষ গ্রহণের প্রবণতা পরিহার করাও আবশ্যক। সেই সঙ্গে প্রয়োজন জনগণ কর্তৃক সচেতন ও সোচ্চার হওয়া। তাছাড়া খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল ও ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ মেশানো রোধে সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, বিভিন্ন গণমাধ্যমসহ সবার সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আশা প্রয়োজন। তবে এ ক্ষেত্রে সর্বাগ্রে প্রয়োজন নিজের নৈতিকতাবোধ জাগ্রত করা, নিজের বিবেক জাগ্রত করা।
লেখক : বিভাগীয় প্রধান, আইন বিভাগ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি

Link: https://www.ittefaq.com.bd/print-edition/opinion/232520/%E0%A6%AD%E0%A7%87%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%B2-%E0%A6%96%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%AF-%E0%A6%95%E0%A6%AE%E0%A6%BF%E0%A7%9F%E0%A7%87-%E0%A6%A6%E0%A6%BF%E0%A6%9A%E0%A7%8D%E0%A6%9B%E0%A7%87-%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%97-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%A7-%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B7%E0%A6%AE%E0%A6%A4%E0%A6%BE