Show Posts

This section allows you to view all posts made by this member. Note that you can only see posts made in areas you currently have access to.


Topics - abdussatter

Pages: 1 [2] 3 4 ... 9
16
প্রতিষ্ঠানের রীতিনীতির ক্ষেত্রে একেবারে নতুন ধারণা নিয়ে এসেছিলেন ল্যারি পেজ। তিনি গুগলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। বিশ্বের সবচেয়ে ধনী মানুষদের তালিকায় তাঁর অবস্থান দশম। বর্তমানে গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এই কম্পিউটার বিজ্ঞানী। তাঁর উক্তি নিশ্চয়ই নবীন উদ্যোক্তাদের পথ দেখাবে।

১. ভাবনার ডালপালা মেলতে ১০০ জন কর্মীর একটা বিশাল প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন নেই।
গুগল, অ্যাপল, ডিজনি, অ্যামাজন—স্বনামধন্য এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে মিল কোথায় জানেন? এই সব কটি প্রতিষ্ঠানেরই জন্ম হয়েছিল গ্যারেজে। তেমন পুঁজি ছিল না, একদল কর্মী ছিল না, বিশাল অফিস ছিল না, তবে স্বপ্ন ছিল। একটা সফল উদ্যোগ নিতে হলে ওই স্বপ্নই সবার আগে জরুরি। বিশ্বাস, দৃঢ়তা ও পরিশ্রম থাকলে স্বপ্নপূরণ হবেই। ভেবে দেখুন, পর্যাপ্ত জনবল নেই বলে ল্যারি পেজ, স্টিভ জবস, ওয়াল্ট ডিজনি কিংবা জেফ বেজোসরা যদি পিছিয়ে পড়তেন, তাহলে নিশ্চয়ই তাঁরা আজকের সফলতা পেতেন না। কোনো অজুহাতই যেন আপনাকে লক্ষ্যচ্যুত না করে। নিজের ওপর বিশ্বাস না রাখা পর্যন্ত কখনো জানবেন না, আপনি আসলে কী করতে পারেন।

২. আমাদের লক্ষ্য ছিল, যতটা সম্ভব তথ্য সংগ্রহ করা এবং তথ্যগুলোকে কাজে লাগানো।
গুগলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার সাফল্যের পেছনে অন্যতম কারণ হলো, তিনি জানতেন গন্তব্য কোথায়। আপনি যদি আপনার গন্তব্য জানেন, তাহলে পথচলাটা সহজ হয়। এক বাক্যে বলুন, আপনার লক্ষ্য কী? আপনি আসলে কী করতে চান? যদি এক বাক্যে বলতে না পারেন, তবে লক্ষ্য আপনার কাছে পরিষ্কার নয়।

৩. যখন আমরা শুরু করেছি, সবাই বলেছিল, “তোমরা ব্যর্থ হবে। কারণ ৫টা সার্চ ইঞ্জিন ইতিমধ্যে আছে।” আমরা বলেছিলাম, হ্যাঁ। আমরাও একটা সার্চ ইঞ্জিনই তৈরি করছি। কিন্তু আমরা হব অন্য রকম। নতুন একটা প্রতিষ্ঠানকে সফল করার মূলমন্ত্র এটাই। আপনার প্রতিযোগীদের তুলনায় আপনি ব্যতিক্রম কেন? এই প্রশ্নের একটা জুতসই জবাব খুঁজে বের করুন। মনে রাখবেন, প্রতিযোগিতায় থাকা জরুরি। কারণ, প্রতিযোগিতা না থাকলে আপনি এগোতে পারবেন না। প্রতিযোগীদের দিকে নজর রেখে আপনার লক্ষ্য ঠিক করুন, যেন আপনি সব সময় এক ধাপ এগিয়ে থাকতে পারেন। আপনার ‘ব্র্যান্ড’–এর চরিত্রের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সব সময় গ্রাহককে নতুন কিছু দিন, যা আপনার প্রতিযোগী দিচ্ছে না।

৪. মানুষকে শ্রদ্ধা করুন। তাহলে আপনিও শ্রদ্ধা পাবেন।
একটা প্রতিষ্ঠানে কর্মীরাই সবচেয়ে বড় সম্পদ, এটা কখনোই ভুলে গেলে চলবে না। আপনার প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকদের আপনি যতটা গুরুত্বসহকারে দেখেন, কর্মীদেরও যদি ততটা গুরুত্ব দেন, তাহলেই বিনিময়ে তাঁদের সেরা কাজটা পাবেন। ভালো কাজের জন্য কর্মীকে পুরস্কৃত করুন, যেন সবাই মেধার সর্বোচ্চ প্রয়োগ করতে উৎসাহিত হন।

৫. যদি পৃথিবী বদলাতে চান, গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে কাজ করুন।
ব্যবসায় সফল হতে হলে এমন কিছু নিয়ে কাজ করুন, যা মানুষের সমস্যার সমাধান দেবে, প্রয়োজন মেটাবে। যদি মানুষের উপকার করতে পারেন, তার মানে আপনি ঠিক পথে আছেন। মানুষের কাজে এলে আয় স্বাভাবিকভাবেই হবে।

৬. প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি পরিবার হয়ে ওঠা খুব গুরুত্বপূর্ণ। যেন কর্মীরা নিজেকে প্রতিষ্ঠানের একটা অংশ ভাবতে পারেন।
প্রত্যেক কর্মী যেন নিজের গুরুত্বটা বোঝেন। উদ্যোক্তা হিসেবে আপনাকে তাঁদের প্রয়োজন বুঝতে হবে, বুঝতে হবে কাজের ক্ষেত্রে তাঁরা কী কী সমস্যায় পড়ছেন। সবাই যদি শুধু নিজের কাজটা করে যায়, তাহলে হয়তো সফলতা আসবে, কিন্তু সেটা দীর্ঘস্থায়ী হবে না। একটা দল হয়ে উঠতে হবে, কাজে আনন্দ পেতে হবে। তবেই আপনি অনন্য সাধারণ হবেন।

৭. ব্যবসা করতে হলে ব্যবসায় শিক্ষায় পড়তে হবে, তা নয়, আমি শুধু এক শেলফভর্তি ব্যবসা–সংক্রান্ত বই পড়ে শেষ করেছি, এটাই যথেষ্ট ছিল।
ডিগ্রির পেছনে ছুটতে গিয়ে কত মানুষ যে তাঁদের স্বপ্ন বিসর্জন দিয়েছেন! সফল মানুষদের ক্ষেত্রে একটা ব্যাপারে মিল পাবেন সব সময়। তাঁরা কখনোই তাঁদের লক্ষ্য আর শিক্ষাকে আলাদা করে দেখেননি। বরং লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত শিখেছেন। সেই শিক্ষায় ডিগ্রি আসুক বা না আসুক, তাঁরা পরোয়া করেননি। যদি সফল উদ্যোক্তা হতে চান, তাহলে নিজের মধ্যে শেখার আগ্রহ তৈরি করুন। ল্যারি পেজ বলেন, ‘বাঁচো, শেখো, ভালোবাসো—এসবই তো জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’ প্রতিদিন কিছুটা সময় বই পড়ার পেছনে ব্যয় করুন।

৮.আমি জানি, একসময় আপনার মনে হতে পারে পুরো পৃথিবী এক দিকে আর আপনি এক দিকে, কিন্তু কখনো কখনো একটু পাগল হতে হয়। কৌতূহলকে অনুসরণ করুন, লক্ষ্যে অনড় থাকুন। স্বপ্ন হারাবেন না। পৃথিবীর আপনাকে প্রয়োজন।
স্বপ্নপূরণ কিংবা লক্ষ্যে পৌঁছানোর আনন্দের সঙ্গে আর কোনো আনন্দেরই তুলনা হয় না। অতএব নিজের ওপর বিশ্বাস রাখুন।

৯.মানুষের বিশ্বাস অর্জন করতে না পারলে টিকে থাকতে পারবেন না।
বিশ্বাস আদায় করে নিতে হয়। গ্রাহকের সঙ্গে মিশুন, কথা বলুন, তাঁরা কী চান বুঝুন। গ্রাহকের কাছাকাছি থেকে মানসম্পন্ন সেবা দিতে পারলেই লোকে আপনাকে বিশ্বাস করবে।

১০. আপনার কাজ যেন একই সঙ্গে কঠিন ও রোমাঞ্চকর হয়
ব্যবসার ক্ষেত্রে আরাম-আয়েশ হলো সবচেয়ে বাজে বন্ধু। যদি মনে হয় সবকিছু খুব সহজে হয়ে যাচ্ছে, তাহলে নিজের সামনে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিন। আরও একটু বেশি পরিশ্রম করুন। আপনার প্রতিটা দিন, প্রতিটা কাজ যদি রোমাঞ্চকর হয়, তাহলে কেউ আপনাকে আটকাতে পারবে না। একটা লক্ষ্য পূরণ হলেই আরেকটা লক্ষ্যের পেছনে ছুটুন।

ইংরেজি থেকে অনুবাদ: মো. সাইফুল্লাহ
সূত্র: পোস্টক্রন

17
নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির (এনওয়াইইউ) যে বিষয়টি আমার সবচেয়ে পছন্দ তা হলো, এখানকার ৫ শতাংশ শিক্ষার্থী ভিনদেশ থেকে এসেছে। পরিবারের প্রথম সদস্য হিসেবে কলেজের গণ্ডিতে পা রেখেছে, এমন শিক্ষার্থীর হারও নিশ্চয় একই রকম। একটা দলে যতটা বৈচিত্র্য থাকা সম্ভব, তার সবই এখানে আছে।

১৯৯০-এর দশকের গোড়ার দিকে আমি যখন স্নাতক হলাম, তখন চমৎকার একদল বন্ধুর সঙ্গে বিশ্বভ্রমণে বেরিয়েছিলাম। বিস্ময়করভাবে সেই বন্ধুরা এখনো আমার খুব আপনজন। এশিয়া, ইউরোপ, আফ্রিকার নানা প্রান্তে আমরা বেড়িয়েছি, পাহাড় চড়েছি। এটা আমার জীবনের অন্যতম সেরা অভিজ্ঞতা। সে এক দারুণ রোমাঞ্চ! আমার জ্ঞানে, শিক্ষায় এই ভ্রমণের একটা গুরুত্বপূর্ণ অবদান আছে। কারণ এই প্রথম আমাকে নানা ধরনের মানুষের সঙ্গে মিশতে হয়েছে, নতুন নতুন অভিজ্ঞতা, রীতিনীতি, ভাষা, মূল্যবোধের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয়েছে। কানাডার মন্ট্রিয়েলের এক তরুণের যখন মৌরিতানিয়ায় বসবাসরত একজন কোরীয় জেলের সঙ্গে দেখা হয়, আফগানিস্তানে যুদ্ধ করে আসা এক রাশিয়ান সৈনিক কিংবা ডানাংয়ের এক দোকানদারের সঙ্গে পরিচয় হয়, অবধারিতভাবেই আড্ডাটা জমে ওঠে। অনেক অজানাকে জানা হয়।

তোমাদের মধ্যে অনেকেও নিশ্চয়ই বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শেষে একটা ভ্রমণে বেরোনোর পরিকল্পনা করছ। জানি কেউ কেউ তোমাদের বলবে, ‘আজকালকার দিনে, এই বয়সে এমন একটা ভ্রমণে বেরোনো ঠিক হবে না। এটা নিরাপদ নয়!’ আমার প্রশ্ন হলো, আমাদের এই শুভাকাঙ্ক্ষীরা কি শুধু আমাদের শারীরিক নিরাপত্তা নিয়েই দুশ্চিন্তিত? নাকি তাঁরা ভাবেন, নিজের গণ্ডি থেকে বেরোলে আমরা হয়তো একটা নতুন পৃথিবী দেখব, নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে মিশে হয়তো আমার বিশ্বাস আর মূল্যবোধগুলো বদলে যাবে, আমি হয়তো একটা অন্য মানুষ হয়ে ফিরে আসব! হয়তো এই ভয়েই তাঁরা আমাদের আগলে রাখতে চান।

১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে আমি যখন বেরিয়েছিলাম, তখনকার পৃথিবীও কিন্তু কম জটিলতাপূর্ণ ছিল না। সমস্যা ছিল, আছে, ভবিষ্যতেও আসবে। যদি আমরা নিজস্ব গণ্ডির ভেতরে বন্দী হয়ে থাকি, তাহলে কখনোই পরস্পরকে সম্মান করতে শিখব না, সবাই মিলে একটা সমস্যার সমাধান করতে পারব না। নেতিবাচকতার প্রতি আমাদের একটা অদ্ভুত মোহ আছে। সিনেমা, টিভি, সব জায়গায় তুমি এই ব্যাপারটা দেখবে। অথচ সমস্যা আর সম্ভাবনা কিন্তু সব সময় ভারসাম্য রেখে চলে। চরম দারিদ্র্য আমরা পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলতে পারি, ম্যালেরিয়া বা টিবির নাম মুছে ফেলতে পারি, পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের জন্য সুশিক্ষা নিশ্চিত করতে পারি। এটা করতে হলে আমাদের সবাইকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলতে হবে। আমাদের সংকীর্ণ মানসিকতার সঙ্গে লড়াই করতে হবে মানবতা দিয়ে।

আমরা একই গির্জায় যাই? দারুণ, তুমি আমার গোষ্ঠীর। তুমি আমার ভাষায় কথা বলো? তাহলে তুমি আমার দলে। তুমি এনওয়াইইউতে পড়েছ? তুমি আমাদের একজন। তুমি পোকেমন গো খেলো? তাহলে তুমি আমার দলে। সব জায়গায় শুধু দল, জাতি, গোষ্ঠী। কাউকে দলভুক্ত করা সমস্যা নয়, সমস্যা হলো বাকিদের দলের বাইরে বের করে দেওয়া। তুমি আমাদের একজন, কিন্তু ও নয়!

বর্ণ, লিঙ্গ, ভাষা, ধর্ম, বিশ্বাস কিংবা মূল্যবোধের বৈচিত্র্য আমাদের দুর্বলতা হতে পারে না। বরং এটাই তো সবচেয়ে বড় শক্তি।

অতএব তোমাদের প্রতি আমার অনুরোধ, এখান থেকে বেরিয়ে তোমরা এমন একটা জায়গায় যাও, যেখানকার মানুষের বিশ্বাস বা মূল্যবোধ তোমার চেয়ে আলাদা। তাঁদের কথা মন দিয়ে শোনো, বুঝতে চেষ্টা করো। খুঁজে বের করো, তোমার সঙ্গে তাঁর মিলটা কোথায়। আঙুলের ছোঁয়ায় তুমি সারা পৃথিবী দেখতে পারো। কিন্তু তুমি যদি পৃথিবীর অন্য একটা প্রান্তে যাও, দেখবে একটা পুরো অন্য জগৎ তোমার জন্য অপেক্ষা করছে। প্রতি পদে পদে তোমার কোনো না কোনো ‘শিক্ষকের’ সঙ্গে দেখা হবে আর তুমি নতুন কিছু শিখবে। এই শিক্ষাকে সাদরে গ্রহণ করো। তুমি একজন ছাত্র। আজীবন ছাত্রই থাকবে। কিন্তু এখন তোমার নেতৃত্ব দেওয়ার সময়।

প্রতিটি প্রজন্মেই একজন নেতার জন্ম হয় কখন জানো? যখন একজন বুঝতে পারে, সমস্যা সমাধানের দায়িত্বটা অন্য কারও নয়, নিজের। এখন এই উপলব্ধির সময় তোমাদের।
অভিনন্দন ২০১৮-এর ক্লাস। যাও, পৃথিবী বদলে দাও! (সংক্ষেপিত)


জাস্টিন ট্রুডো
ইংরেজি থেকে অনুবাদ: মো. সাইফুল্লাহ
সূত্র: টাইম ডট কম

18
Extra-curricular Activities / Workshop on CCNA
« on: July 26, 2018, 08:29:29 PM »
Department of EEE in association with IT Department of DIU organized a workshop on CCNA.

19
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগ আয়োজিত ‘লেকচার অন মিডিয়া ল’স ইন বাংলাদেশ: স্পেশাল ফোকাস অন আইসিটি ল’ শীর্ষক আইনবিষয়ক অনুষ্ঠান হয়েছে। ২৩ জুলাই ইউনিভার্সিটির স্থায়ী ক্যাম্পাস আশুলিয়ায় এই অনুষ্ঠান হয়।

অনুষ্ঠানে মূল বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান খান। উপস্থিত ছিলেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির স্থায়ী ক্যাম্পাসের ডিন অধ্যাপক মোস্তফা কামাল, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সহযোগী ডিন অধ্যাপক ফারহানা হেলাল মেহতাব, আইন বিভাগের সহযোগী প্রধান মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান। আরও ছিলেন আইন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

আলোচনায় তথ্যপ্রযুক্তি আইনের নানা দিক, তথ্যপ্রযুক্তি ও নিরাপত্তা আইনের সঙ্গে সংবিধানের আন্তসম্পর্কসহ বিভিন্ন বিষয় উঠে আসে।

শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্ন ও উত্তরের মধ্য দিয়ে শেষ হয় আইনবিষয়ক এই অনুষ্ঠান।

20
অঙ্ক আমার মাথায় কোনো দিনই ঢোকে না। অঙ্কে আমি সব সময় কাঁচা। এটা প্রথম ধরা পড়ল ক্লাস সিক্সে উঠে। আমাদের ক্লাস টিচার প্রাণকৃষ্ণ সাহা সবার কাছ থেকে বেতন নিয়েছেন। অনেক টাকা, অনেক সিকি, অনেক আধুলি—সব একসঙ্গে আছে। এত কষ্ট করে সেটা তিনি গুনতে আর আগ্রহী নন। আমি প্রিন্সিপালের ছেলে। সেকালে প্রিন্সিপাল রাস্তাঘাটে পাওয়া যেত না। সচ্ছল পরিবারের ছেলে, সুতরাং স্যার ভাবলেন, একে বিশ্বাস করা যায়। বললেন, আয় একটু গুনে দে। আমি গোনা শুরু করলাম এবং বেশ সাফল্যের সঙ্গে গোনা শেষ করলাম। স্যার বললেন, ‘এখন একটা কাজ কর। আবার গোন।’ আমি গুনে দেখি নতুন ফল হয়েছে। এরপর যতবারই গুনলাম, ততবারই নতুন ফল এল। স্যার আমাকে বললেন, ‘অপদার্থ!’ আমি পড়ি ক্লাস সিক্সে, অপদার্থ শব্দটার মানে তখনো বুঝি না। আমি বুঝলাম, উটজাতীয় কোনো একটা প্রাণী বলে তিনি হয়তো আমাকে সম্বোধন করলেন। এভাবে আমার অঙ্ক শুরু। যখন আরও দুচার ক্লাস ওপরে উঠলাম, তখন অবস্থা আরও শোচনীয় হয়ে উঠল। দেখা গেল অঙ্কে নিয়মিত ফেল করতে শুরু করেছি। এখন কী করে ম্যাট্রিক পাস করি? টেস্ট পরীক্ষাতেও অঙ্কে ফেল করলাম।

তো আমি কী করলাম, জাদবের পাটিগণিত, কে পি বোসের অ্যালজেব্রা, আর কার যেন একটা জিওম্যাট্রি ছিল...আমি আগা থেকে গোড়া মুখস্থ করে ফেললাম। তখন আমাদের পরীক্ষকদের বিদ্যা ওই তিনজনের বাইরে যেত না।

সুতরাং কোনো না কোনোভাবে প্রশ্ন এল, আর আমি পরীক্ষা দিয়ে ৭৫ নম্বর পেয়ে গেলাম। বুড়ো বয়সে এসে আবার টের পেলাম যে আমার অঙ্ক বিদ্যা কিছুতেই হচ্ছে না। তার কারণ আমি আমার জন্মদিন মেলাতে পারি না। আমার যে কততম জন্মদিন, এটা কিছুতেই মেলে না। একবার এক মেয়ে ফোন করে বলল, ‘স্যার কেমন আছেন?’ আমি বললাম, ‘ভালো। তবে বুড়ো টুড়ো হয়ে গেলাম আরকি...।’ সে আমাকে বলল, ‘স্যার, আপনি তো বুড়ো হবেন না।’ আমি বললাম, ‘কেন?’ সে বলল, ‘স্যার, বুড়ো হওয়ার একটা বয়স আছে। আপনি সেটা পার হয়ে গেছেন।’

জীবন তো অনেক দিন কাটল। এত দিন বাঁচব, এ কল্পনাও করিনি। আমার ধারণা ছিল যে ৫৫-৫৭ বছরে অবসর নেব। তারপর অল্পস্বল্প গল্প হয়। পার্কে হাঁটব। বুড়োদের সঙ্গে হে হে হো হো করব। কিন্তু দেখলাম আমার জীবন সম্পূর্ণ উল্টে গেল। আমার আশপাশে কোনো বৃদ্ধই নেই। আমার চারপাশে সতেরো থেকে চব্বিশ। এর বেশি হলেই আমি অবসরে পাঠিয়ে দিই!

তো যাহোক, জীবনটা অনেক দিন গেল। ভালোই গেল। কারণ, কোনো বড় রকম বিপর্যয় আমার জীবনে এ পর্যন্ত আসেনি। মা মারা গিয়েছিলেন একেবারে ছোটবেলায়। সেই জায়গাটা শূন্য হয়ে আছে, ওই জায়গাটা আর ভরে না। আমি দুইটা বই মায়ের নামে উৎসর্গ করেছি। এবং আমি সব জায়গাতেই লিখেছি যে মা আমার সারা জীবনের কষ্ট। এটা অপূরণীয়। আব্বা যখন মারা গেছেন, তখন আমার বয়স অনেক। সুতরাং সেটা সহ্য করার মতো শক্তি আমার মধ্যে ছিল। এ ছাড়া আর তেমন কোনো সমস্যা হয়নি।

আমরা এগারো ভাইবোন। সাধারণত আমাদের মতো নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে ১১ ভাইবোন যদি থাকে, আর সেই বাড়ির বড় ছেলে যদি কেউ হয়, আমি তাই। বড় ছেলে মানে বোকা ছেলে। সুতরাং সংসারের কিছু দায়দায়িত্ব তো চলে আসার কথা। কিন্তু আব্বা এমন বয়সেই মারা গেলেন যে তত দিনে আমরা প্রত্যেকেই প্রায় দাঁড়িয়ে গেছি। সুতরাং ওই জায়গা থেকে বেঁচে গেলাম। তারপরে বিপদ যেটা সেটা ওই যে ওইখানে (একটু দূরে বসা স্ত্রীকে দেখিয়ে—বি. স.) হতে পারত। কিন্তু কৌশলে সেটা এড়িয়ে গেলাম। এবং সেই কৌশলটা আমি শিখেছিলাম আমার স্কুলজীবনে।

আমাদের বাসায় যে কাজের ছেলেটা ছিল তার একদিন আলসেমি হলো যে সে বাজারে যাবে না। সে আমাকে দশটা টাকা দিয়ে বলল যে তুমি বাজার করে নিয়ে এসো। ১৯৪৭ সালের ১০ টাকা মানে অনেক টাকা। আমি তো বেশ উৎসাহ নিয়ে বাজারে গেলাম এবং কিছুক্ষণের মধ্যে আবিষ্কার করলাম যে সেই লাল টাকাটা আর আমার পকেটে নেই। বাসায় ফিরে এলাম। আব্বা তো আমাকে চিনতেনই। আমার উন্নত মান সম্পর্কে তাঁর ধারণা এত সুস্পষ্ট যে আব্বা বললেন, ‘আমি ওকে কিছু বলতে চাই না। কিন্তু কোন গাধা ওকে পাঠিয়েছে আমি তাকে চাই।’ সেই গাধা অদূরেই দণ্ডায়মান ছিল। সুতরাং গাধাকে যেভাবে আপ্যায়ন করা হয়, সেভাবে আপ্যায়ন করা হলো। বলা হলো যে আর কোনো দিন যেন আমাকে বাজারে পাঠানো না হয়। আমি একটু অপমানিত বোধ করলাম। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই বুঝতে পারলাম, একটা অসাধারণ সৌভাগ্য আমার জীবনে হুট করে চলে এসেছে। আমাকে আর বাজার করতে হবে না!

বিয়ের পরেও তাই হলো। আমার স্ত্রী একটা মুরগি কিনতে আমাকে বাজারে পাঠিয়ে দিলেন। গেলাম। দেখলাম যে বাজারের একদম ভেতরে যেতে হবে। এর আগে আমি কোনো দিন বাজারে যাইনি। কোথায় মুরগি, কোথায় মোরগ কিছুই জানি না। তো যাব দূরে, দেখলাম অত দূরে যাওয়ার দরকার নেই। বাজারের গেটেই দাঁড়িয়ে আছে লোক। মুরগির পাগুলো তাঁর হাতে ধরা, মাথাগুলো নিচে। লোকটা একটা ঝাড়া দিল, মুরগিগুলোও বেশ নড়েচড়ে উঠল। আমাকে যে দাম বলা হয়েছিল, দেখলাম যে দাম তার চেয়ে অনেক কম। আমি ভাবলাম, তাহলে তো আরও গৌরব! বীরের মতো বাসায় ফিরব, আট আনা কম দিয়ে ফিরলাম! তারপর একটা মুরগি নিয়ে দরাদরি হলো এবং দেখলাম যে মুরগিটা আমার দিকে তাকাচ্ছে। সম্ভবত সে তার হত্যাকারীকে দেখে নিচ্ছে।

তো বাসায় পৌঁছানোর পর দেখা গেল যে মুরগিটা মরা। বিদ্যুৎ গতিতে সারা শহরে রটে গেল যে আমি মরা মুরগি নিয়ে বাসায় ফিরেছি। এরপরও কী করে যেন আমার ওপর আস্থা স্থাপন করা হলো। এবং আবার পরদিন আমাকে মুরগি কিনতে পাঠানো হলো। সেবার আমি সারা বাজার খুঁজে সবচেয়ে বলশালী মোরগটা খুঁজে বের করলাম। যাতে মৃত্যুর কোনো সম্ভাবনা না থাকে। মুরগি নিয়ে রিকশায় করে আসছি, কিন্তু তার স্বাস্থ্যই হলো আমার কাল। সে আমার হাত থেকে ঝটকা মেরে পড়ল মাটিতে, আর আমার পেছনের রিকশা তার গলার ওপর দিয়ে চলে গেল। সুতরাং আমি আবার একটি মরা মুরগিসহ...অপমানের চূড়ান্ত! তারপরে বোঝাই যাচ্ছে কী হলো।

‘তোমার আর বাজার করার দরকার নেই!’

আমি তো এই কথা শোনার জন্যই যুগ যুগ ধরে বসে ছিলাম! আমার আর বাজার করতে হবে না!

তো এভাবেই কেটে গেল আমার পারিবারিক জীবন। তারপর এল পেশাগত জীবন। শিক্ষকতা। ছোটবেলায় আব্বাকে দেখেছি, অসাধারণ শিক্ষক! মানুষ এমনভাবে আব্বার কথা বলত যেন কোনো দেবতার কথা হচ্ছে। তখন আমি ঠিক করে রেখেছিলাম যে আমি এই রকম শিক্ষক হব। কিন্তু শিক্ষকতায় যে এত আরাম, এটা তো জানতাম না! আব্বা যে কেন দেবতা হয়েছেন, টের পেলাম। ওখানে কোনো পড়াতে হয় না। প্রতিদিন বড়জোর দুটো ক্লাস। বছরে ছয় মাস ছুটি। আর জাগ্রত ছাত্রসমাজ আরেকটু জাগ্রত হয়ে উঠলে আরও তিন মাস! সুতরাং বছরে নয় মাস! এ তো ঘরজামাইয়ের চেয়ে ভালো! ঘরজামাই একটু লাথিটাথি খায় আরকি! এত ছুটি পেলে একটু আকটু লাথিটাথি খেতে কোনো আপত্তি নেই। সুতরাং এভাবে আরামে ঘরজামাইয়ের মতো জীবন কাটতে লাগল। যা খুশি তাই করতে লাগলাম। কখনো সাহিত্য আন্দোলন করি, কখনো টেলিভিশনে যাই। জীবনকে যত আনন্দে ব্যবহার করা সম্ভব, আমি সেই ব্যবহার করেছি।

খালি একটু আড্ডা বেশি দিয়েছি। কিছু আড্ডাবাজ জুটে যাওয়ায়...অথবা টের পেয়েছিল যে আমার কাছে এলে আড্ডা শুরু হবে। এই একটু ক্ষতি হয়ে গেছে জীবনে। আর ক্ষতি হয়েছে ঘুমে। সেদিন কাগজে পড়লাম, আমরা নাকি খেতে জীবনের ছয় বছর সময় ব্যয় করি। এবং টয়লেটে গিয়ে সাত বছর! খাওয়ার চাইতে একটু বেশি। অল্প বয়সেই টের পেলাম যে আমি একটা ঘোরলাগা মানুষ। যখন যেটা নিয়ে পড়ি তার বাইরে কিছু বুঝতেও পারি না, দেখতেও পাই না।

একটা জিনিস লক্ষ করলাম যে সবকিছু আমার কাছে ভালো লাগে। জীবনে যেকোনো জিনিস আমার কাছে মধুর মতো মিষ্টি লেগেছে। এটা অবন ঠাকুরের একটা লেখার মধ্যে বলা হয়েছে খুব সুন্দর করে। আমি ছাত্রদের প্রায়ই বলি। মানুষ কি ভেরেন্ডাগাছ খেতে পারে? মানুষ আখগাছ খেতে পারে। কেন খেতে পারে? কারণ আখের মধ্যে রস আছে, মাধুর্য আছে। জীবনের সমস্ত জায়গায় আমি মাধুর্য পেয়েছি। মানুষ বলে যে এত কাজ করো তুমি! আমি বলি কাজ করি না, আমি তো মজা করি! আমি তো আনন্দ করি! তাই জীবনে কোনো কষ্ট হয়নি। মোটামুটি ফাঁকি দিয়েই...

কিন্তু...একদিন তোর হইবে রে মরণ, ওরে হাসন রাজা। একদিন কিন্তু জীবনের শেষ এসে দাঁড়ায়। দাঁড়ালেও কিছু এসে যায় না। আমি যদি জীবনটা উপভোগ করে থাকি, তাহলে আমার মৃত্যুটাও উপভোগ্য হওয়া উচিত। এই পৃথিবীতে কোনোকালে কোনো মানুষ কি মৃত্যুকে এড়াতে পেরেছে? আজ যারা বেঁচে আছে এখানে, কেউ কি পারবে? যারা ভবিষ্যতে আসবে, কেউ কি পারবে?

আমি যদি মৃত্যুকে প্রশ্রয় দিই তাহলে মৃত্যু আমার ঘাড় ধরে ফেলবে। সুতরাং আমার যেটা কর্তব্য সেটা আমি টের পেয়েছিলাম একবার মেঘনা নদী দিয়ে চাঁদপুর থেকে আসার সময়। সন্ধ্যার সময় হঠাৎ প্রচণ্ড ঝড় উঠল। আমাদের লঞ্চটাকে সেটা এমনভাবে তোলপাড় করতে লাগল যে ছয়জন লোক ভয়েই ঝাঁপ দিয়ে মারা গেল। সেই সময় আমি সারেংয়ের পাশে দাঁড়িয়ে আছি। আমি দেখলাম যেদিক থেকে ঝড়টা আসছে, সে লঞ্চের মুখটা সোজা সেদিকে ঘুরিয়ে দিল। একদম পুরো গতিতে চালিয়ে দিল মেঘনার মাঝখান দিয়ে। সে ছিল কিন্তু পাড়ে। আমি বললাম, আপনি পাড়ের থেকে মাঝখানের দিকে যাচ্ছেন কেন, আপনি তো ডুবে মরবেন! সে বলল, পাড়ে থাকলে আমি মরে যাব। যেদিক থেকে ঝড়টা আসছে, আমাকে সোজা সেই ঝড়ের বুকের মধ্যে ঢুকে পড়তে হবে। তাহলে আমি বেঁচে যেতে পারি।

তো আমি মনে করি, মৃত্যু যখন আমার সামনে এসেই গেছে, আমি সরাসরি মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়াতে চাই। আমি আমার কাজ করে যেতে চাই, মৃত্যু তার কাজ করুক।

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ
Source: Prothom-Alo

21
Research & Publication / ইনটেলের ৫০
« on: July 22, 2018, 11:20:41 AM »
অর্ধশতক আগে যাত্রা শুরু করে ইনটেল। উদ্দেশ্য ছিল উন্নত ভবিষ্যৎ তৈরি। আর সেই থেকেই নতুন নতুন ভাবনা আর সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে উদ্ভাবন করে চলেছে মাইক্রোপ্রসেসর নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি। ১৯৬৮ সালের ১৮ জুলাই রবার্ট নয়েচ ও গর্ডন মুর ইনটেল প্রতিষ্ঠা করেন। দীর্ঘ এই সময়ে সহপ্রতিষ্ঠাতা নয়েচের একটি চ্যালেঞ্জ তাদের প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে, ‘ইতিহাসের পিছুটান এবং সীমাবদ্ধতা থেকে এগিয়ে যাও এবং নতুন কিছু সৃষ্টি করো।’

নয়েচ ও মুর দুজনই ফেয়ারচাইল্ড সেমিকন্ডাক্টর নামের একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন। প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে নয়েচের প্রতি যে আচরণ করা হচ্ছিল তাতে তিনি বেশ অসন্তুষ্ট ছিলেন। একদিন মুরের কাছে এসে নয়েচ বলেন যে তিনি চাকরি ছেড়ে দিচ্ছেন এবং মুর সত্যি সত্যিই নতুন কিছু করতে আগ্রহী কি না। তাঁরা দুজন একসঙ্গে চাকরি ছেড়ে দিয়ে যে নতুন প্রতিষ্ঠান তৈরি করেন, সেটিই আজকের ইনটেল।

ইনটেলের নাম

নয়েচ ও মুরের প্রতিষ্ঠিত নতুন প্রতিষ্ঠানের নাম ছিল এনএম ইলেকট্রনিকস। নিবন্ধনের জন্য দ্রুত নাম বাছাই করতে গিয়ে নিজেদের নামের আদ্যক্ষর থেকে এমন নাম। পরে ইন্টিগ্রেটেড ইলেকট্রনিকস শব্দ দুটির প্রথম অংশের সমন্বয়ে ইনটেল নামকরণ করা হয়।

 

নতুন সদস্য অ্যান্ডি গ্রুভ

নয়েচ ও মুরের একসঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা ছিল। আর অসাধারণ দক্ষতার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরাসরি অ্যান্ডি গ্রুভ নামের অপর একজনকে নিয়োগ দিয়েছিলেন মুর।

অ্যান্ডিকে যখন মুর জানান যে বর্তমান চাকরি ছেড়ে নতুন একটি প্রতিষ্ঠান শুরু করছেন তাঁরা, সঙ্গে সঙ্গেই তিনি তাঁদের দলে যুক্ত হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। পরে ইনটেলের সফলতার অন্যতম শক্তি ছিলেন অ্যান্ডি গ্রুভ।

 

স্টিফেন হকিংয়ের সাহায্যে ইনটেল

১৯৯৭ সালে প্রয়াত ব্রিটিশ জ্যোতিঃপদার্থবিদ স্টিফেন হকিংয়ের সঙ্গে দেখা হয় গর্ডন মুরের। মুর দেখলেন, হকিংয়ের কম্পিউটারে এএমডির প্রসেসর। এরপর থেকে আমৃত্যু হকিংয়ের কথা বলার সুবিধার জন্য কম্পিউটার ও প্রযুক্তি দিয়ে এসেছে ইনটেল।

 

বর্তমান ইনটেল

২০১৫ সালে ইনটেল যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপিতে সরাসরি ২ হাজার ৪০০ কোটি ডলার এবং পরোক্ষভাবে ৬ হাজার ২০০ কোটি ডলার  অবদান রাখে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে ইনটেলের ৫০ হাজারের বেশি কারিগরি কর্মী রয়েছেন এবং সার্বিকভাবে ৫ লাখের বেশি মানুষ তাদের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত।

মাইক্রোপ্রসেসর উৎপাদনের দিক থেকে ইনটেল বিশ্বের মধ্যে অন্যতম। প্রতি সেকেন্ডে ইনটেল ১ হাজার কোটি ট্রানজিস্টর উৎপাদন করে। প্রতিষ্ঠানটির গ্লোবাল ইনভেন্টরি থেকে প্রতি ২৪ সেকেন্ডে একটি শিপমেন্ট পাঠানো হয়। ইনটেলের এই চিপ উৎপাদন কারখানাগুলো বিশ্বের মধ্যে সর্বাধিক পরিচ্ছন্ন জায়গা। হাসপাতালের অপারেশন কক্ষগুলো সাধারণত অনেক পরিচ্ছন্ন হয়ে থাকে, কিন্তু ইনটেলের চিপ তৈরি কারখানাগুলোয় তার থেকেও অন্তত এক হাজার গুণ কম জীবাণু বা ধুলা থাকে।

ইনটেলের সবকিছুর মূলে উদ্ভাবন। কম্পিউটার চিপ থেকে শুরু হলেও বর্তমানে তারা আরও অনেক ধরনের কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত। ইনটেলের প্রায় সব উৎপাদন এবং উদ্ভাবন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় যুক্তরাষ্ট্র থেকেই।

৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ইনটেল একটি বিশ্ব রেকর্ড করে, যেখানে তারা ৫০০টি স্বয়ংক্রিয় ড্রোনের মাধ্যমে একটি আলোক প্রদর্শনী দেখিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির ক্যালিফোর্নিয়ার প্রধান অফিসে এর আয়োজন করা হয়েছিল।

সূত্র: ইনটেল

ইনটেলের ১০টি উদ্ভাবন

৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ইনটেল তাদের ৫০টি উদ্ভাবনের তালিকা তৈরি করে সব কর্মীকে তাঁদের পছন্দের ১০টি উদ্ভাবন নির্বাচন করতে অনুরোধ করে। প্রায় ২ হাজার ৬০০ কর্মী মতামত দিয়েছিলেন এবং তাঁদের নির্বাচিত ১০টি উল্লেখযোগ্য উদ্ভাবনের তালিকা নিচে দেওয়া হলো।

১. এক্স৮৬ আর্কিটেকচার

১৯৭৮ সালে উদ্ভাবিত এই এক্স৮৬ হলো আগের আর্কিটেকচারগুলোর সঙ্গে কাজ করতে পারে এমন একটি নতুন ইনস্ট্রাকশন সেট, যা ইনটেল ৮০৮৬ সিপিইউর জন্য উদ্ভাবন করা হয়েছিল। বর্তমান সময়ের প্রায় সব ল্যাপটপ, ডেস্কটপ এবং সার্ভার কম্পিউটারে এই এক্স৮৬ আর্কিটেকচার ব্যবহার করা হয়।

২. মুরের সূত্র

মুরের সূত্রে বলা হয়েছে যে একটি ইন্টিগ্রেটেড সার্কিটে প্রতি দুই বছরে দ্বিগুণ সংখ্যক ট্রানজিস্টার যুক্ত করা যাবে। ইনটেল প্রতিষ্ঠার অনেক দিন আগেই এই সূত্রটি তিনি জার্নালে প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু মজার বিষয় হলো এ সূত্রটি প্রতিষ্ঠা করার জন্যই অনেকটা ইনটেল নিজেদের এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল।

৩. ইউএসবি

প্লাগ অ্যান্ড প্লে! ইনটেল যৌথভাবে ইউনিভার্সাল সিরিয়াল বাস বা ইউএসবির মানটি প্রতিষ্ঠা করেছিল। এর মাধ্যমে যুক্ত করার সঙ্গে সঙ্গেই যেকোনো যন্ত্রাংশ কম্পিউটারের সঙ্গে কার্যকরভাবে ব্যবহার করা যাচ্ছে। ইনটেল ইউএসবি সমর্থন করে এমন ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট প্রকাশ করে ১৯৯৫ সালে।


৪. ৮০৮০ প্রসেসর

ইনটেলের ৮০৮০ প্রসেসর বিশ্বের প্রথম পূর্ণাঙ্গ মাইক্রোপ্রসেসর। যুগান্তকারী এই উদ্ভাবনটি প্রকাশিত হয় ১৯৭৪ সালে। ৪০ পিনের এই প্রসেসর আগের ১৫ পিনের ৮০০৮ থেকে বেশি কার্যকরভাবে ব্যবহার করা সম্ভব হয়েছিল। বলা যেতে পারে প্রসেসরটি উদ্ভাবনের কারণে কোটি কোটি মানুষ ব্যক্তিগত কম্পিউটার ব্যবহার করতে শুরু করে।


৫. ত্রিমাত্রিক ট্রাই-গেট ট্রানজিস্টর প্রযুক্তি

২০১১ সালে ইনটেল প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকভাবে ত্রিমাত্রিক ট্রাই-গেট ট্রানজিস্টর প্রকাশ করে। স্বল্প অপারেটিং ভোল্টেজ থেকে উচ্চ মাত্রার ফলাফল দেয় এই প্রযুক্তি। মুরের সূত্রটির আবারও সত্যতা প্রমাণিত হয়।


৬. ৪০০৪ প্রসেসর

১৯৭১ সালে প্রকাশ করা হয়। এটি মনোলিথিক সিপিইউ ছিল এবং একটি চিপের মধ্যে পূর্ণ ইন্টিগ্রেটেড অবস্থায় ছিল।

৭. পেন্টিয়াম প্রসেসর

১৯৯৩ সালে ৩১ লাখ ট্রানজিস্টরের সমন্বয়ে তৈরি এই প্রসেসর সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়। সেবারই প্রথম ইনটেল নামকরণের ক্ষেত্রে সংখ্যার পরিবর্তে শব্দ ব্যবহার কর। ‘ইনটেল ইনসাইড’—স্লোগানটি দ্রুত পরিচিতি পায়।

৮. থ্রিডি এক্সপয়েন্ট

২০১৫ সালে ইনটেল ঘোষণা করে যে তারা থ্রিডি এক্সপয়েন্ট নামের একটি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। এটি স্থায়ীভাবে তথ্য সংরক্ষণের একটি প্রযুক্তি, যা বর্তমানে প্রচলিত প্রযুক্তি থেকে অনেক গুণ দ্রুতগতিতে কাজ করতে পারে। মাইক্রন সিস্টেমের সঙ্গে যৌথভাবে উদ্ভাবিত এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি পণ্যগুলো ইনটেল অপটেন ব্র্যান্ডের অধীনে বাজারজাত করা হয়।

৯. ইথারনেট

ইনটেল, ডিজিটাল ইকুইপমেন্ট ও জেনন যৌথভাবে ইথারনেটের স্ট্যান্ডার্ড প্রতিষ্ঠা করে। এখানে নির্দিষ্ট সংখ্যক কম্পিউটার পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত থেকে একটি লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক তৈরি করে।

১০. মাল্টিকোর আর্কিটেকচার

প্রসেসরে একাধিক কোরের মাধ্যমে কাজ করার ধারণাটি প্রথম ইনটেল প্রকাশ করে। ২০০৫ সালে মাল্টিকোর প্রসেসর উন্মুক্ত করার পর অন্য সব চিপ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এ ধারণাটি নিয়ে কাজ শুরু করে।

Prothom-Alo

22
ক্যালসিয়াম নামের খনিজ উপাদানটি আমাদের হাড় ও দাঁত শক্ত করে, ক্ষয় রোধ করে। স্নায়ু, হৃৎস্পন্দন, মাংসপেশির কাজেও লাগে। এর অভাবে হাড় ক্ষয় বা অস্টিওপোরাসিস রোগ হতে পারে। হাড়ের ক্ষয়রোগ প্রধানত প্রবীণদের হয়ে থাকে। হরমোনজনিত কিছু তারতম্যের কারণে প্রবীণ নারীদের এই রোগ হওয়ার ঝুঁকি বেশি। কিছু অসুখের কারণে অনেক সময় তরুণেরাও এই রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। কৈশোরে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম-জাতীয় খাবার গ্রহণ করলে পরবর্তী সময়ে ক্যালসিয়ামের ঘাটতিজনিত সমস্যাগুলো কম হবে।

অনেক সময় কিছু কিছু রোগে তরুণেরাও আক্রান্ত হতে পারেন। যেমন কিছু বাতজনিত সমস্যা। কোমরের বাত, আবার অন্ত্রের প্রদাহের কারণে এগুলো ব্যক্তি ঠিকমতো গ্রহণ করতে পারেন না। শরীরের যে প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো থাকে যেমন: ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি, খনিজ বা মিনারেল—এগুলো ভালোভাবে গ্রহণ করতে না পারলে অনেক আগেই হয়তো শরীরে অস্টিওপোরোসিস হয়ে যায়।

কেউ বললেই ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খাবে?

একটু হাত-পা ব্যথা, জোড় বা জয়েন্টের ব্যথা, শরীর ম্যাজম্যাজ করছে বা বয়স হয়েছে বলেই ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খেতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। কেননা, দৈনন্দিন নানা খাবারেও পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম আছে। প্রতিদিন এ রকম খাবার থেকেই ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ করা যায়। অনেকে আবার নিজে নিজেই ওষুধের দোকান থেকে কিনে ক্যালসিয়াম বড়ি খান, যা ঠিক নয়। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শমতো ওষুধটি সেবন করতে হবে।

শরীরে ভিটামিন ‘ডি’র অভাব থাকলে কিন্তু ক্যালসিয়াম থেকে উপকার পাওয়া যাবে সামান্যই। অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম গ্রহণে কিডনিতে পাথর পর্যন্ত হতে পারে। আবার যাঁদের আগে কখনো কিডনিতে পাথর হয়েছিল, তাঁদের অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম গ্রহণে পুনরায় পাথর হওয়ার আশঙ্কা আরও বেশি। তাই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করার সময় তথ্যটি সবার আগে জানবেন। কারণ ওষুধের মাত্রা ঠিক করতে এবং সমস্যাটির জন্য বাড়তি যেসব সতর্কতা প্রয়োজন তা নির্ধারণে তথ্যটি ভূমিকা পালন করবে।

দৈনন্দিন কতটুকু ক্যালসিয়াম প্রয়োজন?

একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের দৈনিক ১০০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম ও ৬০০ ইউনিট ভিটামিন ডি হলে চলে। রজর্নিবৃত্তির (মেনোপজ) পর নারীদের এবং সত্তরোর্ধ্ব পুরুষদের ১২০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম দরকার হয়। গর্ভবতী ও বুকের দুধ পান করান যে মায়েরা তাঁদের লাগে একটু বেশি। ভিটামিন ডি-ও খেতে হবে কেননা এটি শরীরে ক্যালসিয়ামকে শোষণ করতে সাহায্য করে। ভিটামিন ডি পাওয়া যায় সূর্যের আলো থেকে এবং দুধজাতীয় খাবার থেকে আসে ক্যালসিয়াম। এ ছাড়া সবুজ শাকসবজি, বাদাম, টফু, কমলা ইত্যাদিতে ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়।

ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট ছাড়া কীভাবে সমাধান পেতে পারি?

দুধ, দই, পনির, কাঁচা বাদাম, সয়াবিন, আখরোট, সামুদ্রিক মাছ, কাঁটাযুক্ত ছোট মাছ, কালো ও সবুজ কচুশাক, শজনেপাতা, পুদিনাপাতা, সরিষাশাক, কুমড়ার বীজ, সূর্যমুখীর বীজ, চিংড়ি শুঁটকি, ডুমুর ইত্যাদি হলো উচ্চ ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার। ১০০ গ্রাম দুধে ক্যালসিয়াম আছে ৯৫০ মিলিগ্রাম, একই পরিমাণ পাবদা মাছে ৩১০ মিলিগ্রাম, সামুদ্রিক মাছে ৩৭২ মিলিগ্রাম, শজনেপাতায় ৪৪০ মিলিগ্রাম, ট্যাংরা মাছে ২৭০ মিলিগ্রাম। এক কাপ টকদইয়ে থাকে আরও বেশি ৪০০ মিলিগ্রামের মতো। আধা বাটি রান্না করা সবুজ পাতা আছে এমন শাক খেলে ১০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম খাওয়া হবে। এক গ্লাস কমলার রসে ১৫০ থেকে ২০০ মিলিগ্রাম।

তবে অন্ত্রে ক্যালসিয়াম শোষণে বাধা দেয় কিছু জিনিস, যেগুলো ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবারের সঙ্গে না খাওয়াই ভালো। যেমন উচ্চমাত্রার চর্বি ও অক্সালিক অ্যাসিডযুক্ত খাবার। চকলেট, পালংশাক, কার্বোনেটযুক্ত পানীয় ইত্যাদিও ক্যালসিয়াম শোষণে বাধা দেয়। কিন্তু ক্যালসিয়াম শোষণে সাহায্য করে ভিটামিন এ, সি এবং ডি। আয়রনও ম্যাগনেশিয়ামযুক্ত খাবারও ক্যালসিয়ামের কাজে সাহায্য করে।

এরপরও প্রয়োজন হলে...

তারপরও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ক্যালসিয়াম বড়ি সেবন করা যাবে বটে, তবে এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও আছে। সবচেয়ে সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলো গ্যাস্ট্রিক, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি। বেশ কিছু ওষুধ অন্ত্রে ক্যালসিয়ামের শোষণ কমিয়ে দেয়, বিশেষ করে যেসব ওষুধ অ্যাসিডিটি কমাতে ব্যবহৃত হয়। একসঙ্গে ৫০০ মিলিগ্রামের বেশি ক্যালসিয়াম ওষুধ অন্ত্রে শোষিত হয় না, তাই বেশি মাত্রার ওষুধ খেয়ে লাভ হয় না। ক্যালসিয়াম অন্ত্রে শোষণ করতে ভিটামিন ডি লাগে, তাই ভিটামিন ডি কম থাকলে এটিসহ খেতে হবে। সূর্যালোকে আছে প্রচুর ভিটামিন ডি। ডিমের কুসুম, লোনাপানির মাছেও আছে ডি ভিটামিন।

বয়স একটু বেড়ে গেলেই যে ক্যালসিয়ামের ঘাটতির কারণে সমস্যায় পড়তে হয়, তা এড়াতে কৈশোর থেকেই প্রয়োজন সচেতনতা। দুধ ও দুধজাতীয় খাবারের পাশাপাশি খেতে হবে কাঁটাসহ ছোট মাছও। বাড়ন্ত এই বয়সটায় এমন খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুললে একটি মেয়ের শরীরের হাড়ের মূল অংশটা ঠিকমতো তৈরি হবে। এভাবে ভবিষ্যতে হাড়ক্ষয় বা হাড়ে ফুটো হয়ে হাড় দুর্বল হয়ে যাওয়ার সমস্যা এড়ানো সম্ভব।

সহকারী অধ্যাপক, এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

23
স্বাধীনতার পরে ও আশির দশকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে মাঝে মাঝে যাওয়া হতো। কোনো কাজের জন্য নয়, আড্ডা ও ঘুরে বেড়ানো। বন্ধুদের আন্তরিক আতিথেয়তা। নৈসর্গিক পরিবেশ মনোরম। অল্প সময়ের জন্য নয়, গেলে থাকতাম সকাল থেকে সন্ধ্যা। সন্ধ্যায় জাহাঙ্গীরনগরের আবহ অন্য রকম। গাছপালা ঝোপঝাড় থেকে একধরনের মদির ঘ্রাণ মাদকতার সৃষ্টি করত। কত রকম পাখপাখালির কলকাকলি। তখন ঘনিষ্ঠদের মধ্যে ছিলেন বাংলা বিভাগের অধ্যাপক শামসুল হক, সুনীল কুমার মুখোপাধ্যায়, নাট্যকলার সেলিম আল দীন, সরকার ও রাজনীতি বিভাগের আজিজুল হক। আজ তাঁরা কেউ নেই। অপেক্ষাকৃত কম বয়সেই চারজন ভালো শিক্ষক, তার চেয়ে বড় কথা ভালো মানুষ, চলে গেছেন।

বন্ধু শামসুল হকের মাধ্যমেই আরজ আলী মাতুব্বরের সঙ্গে পরিচয়। এবং সেটা জাহাঙ্গীরনগরে এক অপরাহ্ণে। হাঁটতে হাঁটতে তাঁর সঙ্গে জীবন ও জগৎ নিয়ে অনেকক্ষণ কথা হয়। ড. আজিজুল হকের সঙ্গে আলোচনা হতো সমাজ ও রাজনীতি নিয়ে। তখন সামরিক স্বৈরশাসকবিরোধী গণতন্ত্রের আন্দোলন চলছিল। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্র-শিক্ষকদের সেই সরকার ব্যবহার করছিল। রাজনৈতিক সংস্কৃতির অধঃপতন ঘটে। অধ্যাপক আজিজুল হক বিশেষ লেখালেখি করতেন না। ছাত্রদের তৈরি করতেন। বাংলাদেশ রাষ্ট্রবিজ্ঞান সমিতির তখন তিনি সভাপতি। কোথাও তাঁর একটি লেখা ছাপা হয়েছিল। তাতে শিক্ষাঙ্গনের রাজনীতি নিয়ে তাঁর পর্যবেক্ষণ ছিল। লেখাটির একটি কপি আমাকে তিনি পড়তে দিয়েছিলেন। লেখাটিতে গুরুত্বপূর্ণ কথা ছিল। এক জায়গায় তিনি বলেছিলেন:

‘...সুযোগ-সুবিধা বণ্টনে উপাচার্য বা ক্ষমতাসীন মহলের সদস্যরা প্রাধান্য পায়, ফাইলের গতির ধারা ও মাত্রা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির গোষ্ঠী-অন্তর্ভুক্তির (ক্ষমতাসীন/বিরোধী) ওপর নির্ভরশীল-এটি বর্তমানে “ওপেন সিক্রেট” ব্যাপার না হয়ে খোলামেলা ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক স্বার্থে নয়, উপাচার্য ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীস্বার্থে বিধিবহির্ভূতভাবে কাজ করেছেন অথবা বিশেষ/জরুরি ক্ষমতা প্রয়োগ করেছেন এমন নজির আছে (যেমন বিভাগ/সেন্টার/ইনস্টিটিউট খোলা এবং তাদের প্রধান নিয়োগ)-নিরপেক্ষ তদন্ত করলেই সত্য বেরিয়ে আসবে। দুর্ভাগ্য, ১৯৭২ সালের পর দেশের ৪-৫ জন উপাচার্য দুর্নীতি বা ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে কারাভোগ করেছেন। দেশের প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, এলাকাপ্রীতি, গোষ্ঠীপ্রীতি, দুঃশাসন ইত্যাদির ব্যাপারে ছাত্র-শিক্ষক-কর্মচারী কর্তৃক কয়েক দফা পুস্তিকা, প্রচারপত্র প্রকাশিত হয়েছে। এর পরেও (দাবি সত্ত্বেও) তিনি পদত্যাগ করেননি। পদের মর্যাদার চেয়ে পদের লোভটি এখানে বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। এতে উপাচার্য পদটির সামাজিক মর্যাদার দারুণ অবনয়ন ঘটেছে।’

এসব কথা তিনি বলেছিলেন ৩০ বছর আগে। এই তিন দশকে অবস্থার উন্নতি হয়েছে নাকি অবনতি ঘটেছে, তা সংশ্লিষ্টরা বলতে পারবেন। সবচেয়ে ভালো বলতে পারবেন খবরের কাগজের পাঠকেরা। বিশ্ববিদ্যালয় কোনো সরকারি দপ্তর নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান উপাচার্য কোনো সরকারি কর্মকর্তা নন, যদিও সরকারই তাঁকে নিয়োগ দেয়। বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র, নতুন জ্ঞান সৃষ্টিরও জায়গা। গত পাঁচ শ বছরে পৃথিবীতে যত নতুন আবিষ্কার হয়েছে, তা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরাই। তার সুবিধা জাতি-ধর্ম-বর্ণ-ভাষাভাষীনির্বিশেষে সব মানুষ ভোগ করছে। স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়ার ফলেই নতুন জ্ঞান সৃষ্টি হয়েছে এবং নতুন আবিষ্কার সম্ভব হয়েছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক বিদগ্ধ ইতিহাসবিদ সালাউদ্দিন আহমদ ছিলেন উঁচু সংস্কৃতিমান মানুষ। দীর্ঘায়ু পেয়েছিলেন, কিন্তু আফসোস হয় আরও কয়েক বছর তাঁর বেঁচে থাকা উচিত ছিল। মারা যাওয়ার কয়েক বছর আগে থেকে তিনি বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষিত তরুণ-তরুণীদের অবস্থা এবং তাঁদের সমস্যা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করতেন। যেকোনো কারণেই হোক আমার মতো সাধারণ মানুষের সঙ্গে তা নিয়ে আলোচনা করতেন। অত্যন্ত পণ্ডিত মানুষ-শান্ত, মৃদুভাষী, কিন্তু যন্ত্রণায় ভুগতেন। ঢাকার ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে এলে অথবা তাঁর টিএসসির ঘরে তাঁর সঙ্গে আমার কথা হতো। দেশের শিক্ষিত বেকারদের সম্পর্কে তাঁর কিছু পরিকল্পনা ছিল, তা নিয়ে কাজ করতে তিনি আমাকেও অনুগ্রহ করে যুক্ত করেন।

সরকারের অনেক কাজ। যাঁরাই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে বের হবেন, সবাইকে চাকরি দেওয়া সরকারের সাধ্যের বাইরে। আধা সরকারি বা বেসরকারি চাকরির বাজারও পর্যাপ্ত নয়। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরোবার পরে চাকরিবাকরি ও জীবিকার প্রত্যাশা অস্বাভাবিক নয়। বিশের দশকে বিশাল অখণ্ড বাংলার দুই অংশে দুটি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল। উভয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যেরা মনে করতেন, তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের অভিভাবক। তাই দেখা যায়, স্যার ফিলিপ হার্টগ হোন বা স্যার আশুতোষ মুখার্জি হোন, তাঁরা তাঁদের সমাবর্তন ভাষণে তাঁদের ছাত্ররা কোথায় কোথায় ভালো চাকরি পেল, তা উল্লেখ করে সন্তোষ প্রকাশ করতেন।

যাঁরা ইংরেজি মাধ্যমে পড়ে বাপের টাকায় ইংল্যান্ড, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া থেকে একটা ডিগ্রি জোগাড় করেন এবং সেসব দেশে গিয়ে সেকেন্ড হোমে আরামে থাকেন, তাঁদের কথা আলাদা। তাঁরা পরম ভাগ্যবান-ভাগ্যবতী। তাঁদের বাইরে দেশের যে লাখ লাখ যুবক-যুবতী, তাঁরা বড়ই ভাগ্যবিড়ম্বিত। তাঁরা কেউ কৃষকের সন্তান, কেউ গ্রামের বাজারের ছোট দোকানদারের সন্তান, কেউ ছোটখাটো চাকরিজীবীর ছেলেমেয়ে। কেউ পড়ালেখা শেষ করতে গিয়ে পরিবারের শেষ সম্বল ধানের জমিটুকু বিক্রি করেছেন, কেউ সকাল-সন্ধ্যায় টিউশনি করে পড়ার খরচ জোগাড় করেছেন, কেউ চড়া সুদে কোথাও থেকে টাকা ধার করে বিশ্ববিদ্যালয় পার করেছেন। নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের মা-বাবা, ভাই-বোনের অনেক আশা। পাস করে রোজগার করবে। সবাই একটু ভালো থাকবে।

কোনো নির্বোধও বলবে না ছাত্রদের পাস করে বেরোলে তাঁকে চাকরি দেওয়ার দায়িত্ব উপাচার্যের। তাঁর প্রশাসনিক দায়িত্ব বিরাট, কিন্তু তার চেয়ে বেশি নৈতিক দায়িত্ব। উপাচার্য শুধু তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের অভিভাবক নন, তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোর ছাত্রদেরও তিনি অভিভাবক। এই যে লাখ লাখ শিক্ষার্থী স্নাতক-স্নাতকোত্তর সনদ নিয়ে বেরোচ্ছেন, তাঁরা কী অবস্থায় আছেন, কী তাঁদের ভবিষ্যৎ, তাঁদের কোনো সমস্যা আছে কি না, থাকলে তা সমাধানের উপায় কী, তা নিয়ে মাথা ঘামানো একজন উপাচার্যের নৈতিক দায়িত্ব।

আজকাল সংবাদপত্রে দেখা যায়, উপাচার্যরা নিয়োগ পেয়েই নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি দেওয়ার জন্য ব্যাকুল। পদ আছে ১২ টি, নিয়োগ দেওয়া হলো ১৭২ জনকে। এবং তাঁরা কারা? ছেলে, মেয়ে, ভাগনে, ভাগনি, ভাতিজা, শালীর ছেলেমেয়ে। রক্ত ও বৈবাহিক সূত্রে আত্মীয় হওয়ার প্রয়োজন নেই, অন্য বিশেষ কারণে চাকরি হয়। কিন্তু ওদিকে লাখ লাখ তরুণ-তরুণী বেকার। তাঁদের কোনো অভিভাবক নেই। প্রবৃদ্ধি ৬ না ৭ শতাংশ, তা শুনে তাঁরা কী করবেন। উন্নয়নের গল্পেই-বা তাঁদের কী যায় আসে!

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিতরা সমাজের সবচেয়ে অগ্রসর অংশ। দেশের ভালোমন্দ তাঁরা খুব ভালো বোঝেন। তাঁরা রাজনীতিসচেতন। সমাজ ও রাষ্ট্রের যেকোনো ব্যাপারে তাঁদের মতামতের মূল্য রয়েছে। দেশকে সমৃদ্ধ, সুখী ও শান্তিপূর্ণ করতে দুই কোটি তরুণ-তরুণীকে বাদ দিয়ে হবে না। সবাই জীবিকার জন্য দলীয় ক্যাডার হতে পারেন না। সৎ ও যোগ্যদের স্বাধীন জীবিকাই প্রত্যাশিত।

যেকোনো সমস্যা নিয়ে সমাজে সাময়িক উত্তেজনা দেখা দিতে পারে। সহজ পথ তার যৌক্তিক সমাধান। দমনমূলক নীতি ফলপ্রসূ হয় না। আর্থসামাজিক অবস্থার কারণে শিক্ষিতদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিলে, জীবনের প্রতি হতাশা থেকে তরুণ-তরুণীরা পথভ্রষ্ট হতে পারেন। মাদকাসক্ত হতে পারেন। উগ্র রাজনীতিতে ঝুঁকতে পারেন। সে উগ্র রাজনীতি ধর্মীয় হতে পারে, হঠকারী বামও হতে পারে। পুলিশ যদি জানতে পারে অমুকে সন্ত্রাসী, তাকে দমন করতে পারে, জনারণ্যে মিশে থাকা সন্ত্রাসীকে কীভাবে দমন করা সম্ভব? উন্নত দেশগুলোও তা পারছে না। কোটি কোটি তরুণের আজ যখন কোনো অভিভাবক নেই, তখন তাঁদের সমস্যার সমাধান ও অসন্তোষ দূর করতে হবে রাষ্ট্রকেই।


সৈয়দ আবুল মকসুদ: লেখক ও গবেষক

24
অতিমানব, অপরাজেয়, অপ্রতিরোধ্য। শব্দগুলো বারবার ব্যবহৃত হয়েছে উসাইন বোল্টের বর্ণনায়। জ্যামাইকার এই কিংবদন্তিকে বলা হয় ইতিহাসের দ্রুততম মানব। ২০১৭ সালে অবসর নেওয়ার আগে যতগুলো দৌড়ের প্রতিযোগিতায় তিনি অংশ নিয়েছেন, সব ক্ষেত্রে শেষ দৃশ্যটা যেন অনুমেয়ই ছিল! বোল্ট ছুটবেন, জিতবেন, উৎসব করবেন! চারবার ওয়ার্ল্ড স্পোর্টসম্যান অব দ্য ইয়ার নির্বাচিত হয়েছেন। ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের দেওয়া সেরা পুরুষ অ্যাথলেটের পুরস্কারটা নিজের করে নিয়েছেন ছয়বার। বহু রেকর্ড বোল্টের সামনে মুখ থুবড়ে পড়েছে। তাঁর কাছে সাফল্যের সূত্রগুলো কী?

১. কিছু পেতে হলে কিছু ছাড়তে হয়

শুরুর দিকে আমি একাগ্রতা হারাতে চাইনি। তাই বাইরে গিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানোর চেয়ে বাসায় বসে নিজেকে সময় দেওয়াই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে। যখন আপনি আপনার সবটুকু ঢেলে দিয়ে নিজেকে তৈরি করবেন, তখন সন্ধ্যায় একটু বিশ্রাম আপনার প্রাপ্য। ‘আমি বাসায় থাকব। তোমরা যাও।’ বন্ধুদের এ কথা বলা কঠিন। তবু বন্ধুরা যখন ক্লাবে যেত, আমি থাকতাম বাসায়। আপনাকেও এই কাজটি করতে হবে। যদিও যখন কোনো প্রতিযোগিতা থাকত না, আমি নিজেকে ধরে রাখতে পারতাম না। ওদের সঙ্গে চলে যেতাম। কিন্তু এখন বুঝি, দিন শেষে ডিজের বাজনা আমার মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটাত।

২. হেরে যাওয়ার ভয়ই অনুপ্রেরণা

আমি কখনোই হেরে যেতে চাই না; স্বভাবতই আমার মনোভাব খুব প্রতিযোগিতামূলক। একজন পেশাদার ক্রীড়াবিদ হিসেবে আমার সবচেয়ে বড় ভয়, এমনকি দৌড়ানোর সময়ও আমার একটি মাত্র ভয়ই কাজ করে। আর তা হলো হেরে যাওয়ার ভয়। এই ভয়টা সব সময়ই থাকবে। আর এই ভয়টা কাটানোর একমাত্র উপায় হলো অন্য যে কারও চাইতে কঠোর প্রশিক্ষণ, পরিশ্রম ও একাগ্রতা।

৩. ‘রোল মডেল’ থাকা জরুরি

আমি যখন ছোট ছিলাম তখন আমার ‘রোল মডেল’ ছিলেন মাইকেল জনসন এবং ডন কোয়ারি। জনসন ছিলেন বিশ্বসেরা দৌড়বিদ, বিশেষ করে ২০০ মিটার দৌড়ে (আমার প্রিয় ইভেন্ট)। আর কোয়ারি ইতিহাসে জ্যামাইকার সেরা স্প্রিন্টারদের মধ্যে একজন। আমি তাঁদের মতো হতে চেয়েছিলাম। এখনো এমন কিছু মানুষ রয়েছেন, আমি যাঁদের মতো হতে চাই। এই মুহূর্তে আমার পছন্দের মানুষ হলেন কেভিন ডুরান্ট। তিনি একজন বাস্কেটবল খেলোয়াড়। ওকলাহোমা শহরে থান্ডারের হয়ে খেলেন। কেভিন একজন ভালো নেতা। তিনি খুব শক্তিশালী এবং খুব দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তিনি যা-ই করেন না কেন, যদি ক্লান্ত হন বা আহতও হন, সেই অবস্থাতেও কখনো হাল ছাড়েন না। নিজেদের সেরাটা দেওয়ার জন্য তিনি তাঁর দলের সদস্যদের অনুপ্রাণিত করেন এবং চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন।

৪. চাই সেরাদের সঙ্গ

আমার সাফল্যের রহস্যটা আসলে খুব সোজাসাপ্টা—আমি একটা সেরা দল পেয়েছি! হ্যাঁ, যা আমি করি তাতে আমার কঠোর চেষ্টা নিহিত থাকে, কিন্তু আশপাশের মানুষদের ছাড়া এটা আসলে সম্ভব হতো না। আমার পরিবার, আমার বন্ধুবান্ধব, আমার কোচ—তাঁরা আমার সাফল্যের সহায়ক। বিশেষ করে আমার মা-বাবা সত্যিই অনেক সমর্থন দিয়েছেন। আমি যেন প্রশিক্ষণের জন্য যা যা করা দরকার তার সবটুকুই করি, এটা তাঁরা নিশ্চিত করতেন। আমি যদি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ না করি, তার ফলাফল যে ভালো হবে না, সেটা ছোটবেলা থেকেই জানতাম। বাবা খুব কড়া নিয়মানুবর্তী মানুষ ছিলেন। তাই তাঁকে ভয় পেতাম। ছোটবেলায় এই ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছেন বলেই হয়তো আমি নিয়ম ভাঙার সাহস পাইনি।

৫. আনন্দে বাঁচি

সব সময় খেলাটা উপভোগ করো—জীবনে যত উপদেশ পেয়েছি, তার মধ্যে এটাই সেরা। কোন আমাকে এই উপদেশ দিয়েছিলেন। আপনি যদি আনন্দ নিয়ে কাজ করেন, তবেই আসলে কাজে আপনার মন বসবে। আপনি আপনার কাজটা মনেপ্রাণে ভালোবাসবেন।

৬. উন্নতির শেষ নেই

আপনি যত ভালোই হন না কেন, নিশ্চয়ই আরও ভালো হওয়ার সুযোগ আছে। দৌড়ের ক্ষেত্রে যেমন শুরুটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমি বেশ লম্বা (৬ ফুট ৫ ইঞ্চি) বলে দৌড়ানোটা আমার জন্য যত সহজ, শুরু করা ততটাই কঠিন। উচ্চতা বেশি বলে আমি লম্বা লম্বা পা ফেলতে পারি, এটা আমার জন্য খুব ভালো দিক। কিন্তু বেশি উচ্চতা দৌড় শুরুর জন্য ভালো নয়। শুরুটা করতে একটু সময় লেগে যায়। একটা ভালো শুরু রপ্ত করতে আমার অনেক সময় লেগেছে।

৭. আপনার আগ্রাসনকে নিয়ন্ত্রণ করুন

খেলাধুলার ক্ষেত্রে কেবল আক্রমণই যদি আপনার পরিকল্পনা হয়, তাহলে শেষটা হয়তো নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। আমি আক্রমণাত্মক মনোভাবে বিশ্বাস করি না। আমি কেবল শান্ত, সরল, স্থিরভাবে নিজের কাজটা করে যাই। কী হয়, তা দেখার জন্য অপেক্ষা করাটাই আমি পছন্দ করি। জীবনের কোনো অধ্যায়েই আমি জুয়ায় বিশ্বাসী নই এবং আমার মনে হয় আক্রমণাত্মক মনোভাব একধরনের জুয়া।

৮. আত্মতৃপ্তিতে ভুগবেন না

জ্যামাইকায় ওয়ার্ল্ড জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপে ২০০ মিটার দৌড়ে যখন স্বর্ণপদক পেলাম, সেটাই ছিল আমার জন্য সব চেয়ে গৌরবের মুহূর্ত। তখন বয়স মাত্র ১৫। সেই বয়সেই পেয়ে গেলাম দৌড়ের ইতিহাসে বিশ্বের সর্বকালের সর্বকনিষ্ঠ স্বর্ণপদকজয়ীর খেতাব। ঘটনাটা ওখানেই শেষ। আমি বিশ্ব রেকর্ড নিয়ে ভাবিনি। সকালে ঘুম থেকে উঠে ভাবিনি যে ‘আমি বিশ্বের দ্রুততম মানুষ’। আমি স্রেফ আবার প্রশিক্ষণে ফিরে গিয়েছি।

৯. ভেবেচিন্তে খরচ করুন

আপনি যা-ই করেন না কেন, বিচক্ষণতার সঙ্গে বিনিয়োগ করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি না জেনে থাকেন যে আপনি আসলে কী করছেন, তাহলে এমন কাউকে নিয়োগ করুন যিনি বিষয়টি বুঝতে পারবেন। আমার একজন অর্থ উপদেষ্টা আছেন। তিনি এবং আমার ম্যানেজার—এই দুজন মিলে বিষয়টি নিশ্চিত করেন যে সবকিছু ঠিকঠাক আছে। একটা জয় পেলে নিজেকে অনুপ্রাণিত করার জন্য আমি নিজেকে কিছু উপহার দিই। সহজ করে বললে গাড়ি কিনি।

১০. প্রতিদ্বন্দ্বিতা উপভোগ করুন

প্রতিদ্বন্দ্বিতা আপনাকে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা জোগাবে। আজকাল আমি আমার তেমন কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী খুঁজে পাই না। কেউ কেউ অবশ্য খুব কাছাকাছি চলে এসেছে। মনে আছে, কলেজের প্রথম বর্ষে একটি ছেলে আমাকে টক্কর দিয়েছিল। পরের বছর আমি আমার জীবনের সেরা পরিশ্রমটুকু করেছিলাম।



ইংরেজি থেকে অনুবাদ: ফারিয়া এজাজ

সূত্র: ডেইলি মেইল

25
তাঁর কথায় ঘুরে-ফিরে এল ওই একটি শব্দই—পলিথিন। কখনো এর আগে বিশেষণ হিসেবে যোগ হয় ‘পরিত্যক্ত’, ‘পুনর্ব্যবহার্য’ ইত্যাদি শব্দ। পরিচয়ের শুরুতেই তৌহিদুল ইসলাম পায়ের কাছে পড়ে থাকা বিস্কুটের মোড়ক দেখিয়ে যেমন বলছিলেন, এই যে পলিথিনটি দেখছেন, এর ওজনের ৩৫-৪০ শতাংশ জ্বালানি উৎপাদন করা সম্ভব। সেটার পাশেই পড়েছিল পলিথিনের ব্যাগ। বেকারি পণ্যের সম্ভবত। বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে বেশ খানিকটা পরিষ্কার মনে হচ্ছিল। তাহলে এই ব্যাগ থেকে কতটুকু জ্বালানি তেল উৎপাদন সম্ভব? ‘ওজনের ৫০-৬০ শতাংশ, কারণ এর মান বিস্কুটের মোড়কের চেয়ে ভালো।’

ফেলে দেওয়া এমন পলিথিন নিয়েই দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন তৌহিদুল। জামালপুরের তরুণ তৌহিদুল ইসলাম পরিত্যক্ত পলিথিন ব্যবহার করে জ্বালানি তেল তৈরি করেন। বিষয়টি যে একেবারে আনকোরা তা নয়, অনেক দেশেই এমন উদাহরণ রয়েছে। তবে আমাদের দেশে পলিথিনের বর্জ্য থেকে জ্বালানি তৈরির ঘটনা নতুনই। শুধু তেল নয়, তৌহিদুল মিথেন গ্যাস ও ছাপার কাজে ব্যবহারের জন্য কালিও পেয়ে যান ওই একই পলিথিন ব্যবহার করে। ২৫ বছর বয়সী তৌহিদুল ইসলাম এ কাজের জন্য স্বীকৃতিও পেয়েছেন দেশে-বিদেশে। পরিবেশবিষয়ক গবেষণা ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন বিভাগে চলতি বছরের জাতীয় পরিবেশ পদক ২০১৮ পাচ্ছেন তৌহিদুল। ১৮ জুলাই পরিবেশ অধিদপ্তরের এ পুরস্কার প্রদান করা হবে।

জামালপুর শহরের পৌরসভার বর্জ্য শোধনাগারের পাশে ছোট একটি প্ল্যান্ট নির্মাণ করেছেন তৌহিদুল ইসলাম। সেখান থেকে পরীক্ষামূলকভাবে ১০৫ লিটার তেল, ১৫ থেকে ২০ লিটার এলপি গ্যাস এবং কয়েক লিটার ছাপার কালি উৎপাদন করা হয়েছে। ১০০ কেজি পলিথিন থেকে ৭০ লিটার জ্বালানি তেল, ১০ লিটার মিথেন গ্যাস ও ২০ লিটার ছাপার কালি উৎপাদন সম্ভব বলে মনে করেন তৌহিদুল ইসলাম।

কিন্তু এত কিছু থাকতে পরিত্যক্ত পলিথিনই কেন বেছে নিলেন? ‘সত্যি বলতে কি, আমি কিন্তু এত কিছু ভেবে করিনি। প্রথমে লক্ষ্য ছিল পরিবেশসম্মত উপায়ে পলিথিন ধ্বংস করা। সেটা করতে গিয়েই এই উদ্ভাবন।’ বললেন তৌহিদুল।

পলিথিনের সঙ্গে পরিচয়

জামালপুর সদর উপজেলার বেলটিয়া গ্রামে তৌহিদুলদের বাড়ি। বাড়ির এক কোনায় ফুলের বাগান করেছিলেন তাঁর মা হালিমা খাতুন। কিন্তু ফুলের গাছগুলো বড় হচ্ছিল না। কেন বড় হচ্ছে না? চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র তৌহিদুল এর কারণ খুঁজতে নামলেন। তিনি বের করলেন, গাছের শেকড়গুলো পলিথিনের ভেতর কুণ্ডলী পাকিয়ে আছে। ফলে মাটিতে ছড়াতে পারছে না।

তৌহিদুল ইসলাম বললেন, ‘আমি শৈশবে একদম অন্য রকম ছিলাম। কোনো বিষয় নিয়ে ভাবতে, পড়ে থাকতেই ভালো লাগত। কোনো খেলনা হাতে পেলে, খেলার চেয়ে ভেঙে ভেতরটা দেখাতেই আগ্রহ থাকত। এ জন্য পাড়া-প্রতিবেশীরা আমাকে পাগল ভাবতেন, তাঁদের সন্তানদের মিশতে দিতেন না। তাই আমার কোনো বন্ধুবান্ধব ছিল না।’

সমস্যা তো পেলেন, কিন্তু এর সমাধান? এই পলিথিন বর্জ্যের বিকল্প ব্যবহারের উপায় খুঁজতে থাকেন তৌহিদুল ইসলাম। পুড়িয়ে ধ্বংস করা যায়। কিন্তু তাতে পরিবেশের ক্ষতি হয়। পলিথিন ধ্বংসের পরিবেশসম্মত উপায়ের খোঁজে লেগে থাকলেন তৌহিদুল।

২০০৯ সাল। কয়েক বছর পড়াশোনা বন্ধ রেখে তখন উচ্চমাধ্যমিকের ছাত্র। রসায়ন বইয়ের পাতায় পাতায় মনোযোগ। জামালপুরের শহীদ জিয়াউর রহমান ডিগ্রি কলেজের রসায়ন বিভাগের প্রভাষক একরামুজ্জামানের কাছে যান নানা বিষয় নিয়ে জানতে। একরামুজ্জামান বলেন, ‘কোনো সমস্যায় পড়লেই তৌহিদুল আমার কাছে আসত। শুরুতে আমাদের বিজ্ঞান বিভাগের মাধ্যমেই ও কাজ শুরু করেছিল। ব্যবহারিক ক্লাসে এসে নানা বিষয় নিয়ে ওর ছিল প্রশ্ন। রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে পলিথিন থেকে কী উৎপন্ন হয় এ বিষয়গুলো নিয়ে জানতে চাইত। ল্যাবরেটরিতে কাজ করত। একসময় তো সফল হলো।’

পলিথিন যে একধরনের হাইটেমপারড হাইড্রোকার্বন এটা তিনি জেনে গেছেন। তখন নিজে নিজে এটি পরীক্ষা চালালেন। কাচের একটি নলের মধ্যে পলিথিন নিয়ে উচ্চ তাপে উত্তপ্ত করলেন। হঠাৎ পরীক্ষার নলটি বিস্ফোরিত হলো। এমন আরও কয়েকবার করলেন। সফলতা এল একবার। দেখতে পেলেন, প্রচণ্ড চাপে নল দিয়ে বাষ্প বের হচ্ছে। এরপর ঠান্ডা তরল হয়ে পানির মতো বোতলে জমা হচ্ছে তা। পরে দেখা গেল ওই তরল তেলের মতো কিছু একটা।

শুরুর গল্পটা এমনই ছিল। এর মধ্যে রাসায়নিক ক্রিয়া-বিক্রিয়া সম্পর্কে আরও পড়াশোনা করতে থাকেন। ২০১১ সালে তিনি সফলভাবে প্রথম তেল উৎপাদন করতে পারেন। প্রথমে ইস্পাতের বড় আকারের একটি চেম্বারে (সিলিন্ডারের মতো দেখতে বস্তু) পলিথিন দিতে হয়। ওই প্রকোষ্ঠ হতে হবে বায়ুরোধী। চেম্বারটিকে উত্তপ্ত করার পর নলের মাধ্যমে কালচে রঙের তরল বস্তু, মিথেন গ্যাস ও কালি বের হচ্ছিল। পলিথিন পুড়িয়ে পাওয়া এই জ্বালানি নানা কাজে ব্যবহার করা যায়। প্ল্যান্টে উৎপাদিত তেল (পেট্রল) দিয়েই চলছে তাঁর নিজের মোটরসাইকেল।

উদ্ভাবনের জন্য ২০১০ সাল থেকে বিভিন্ন পুরস্কার পেয়েছেন তৌহিদুল। এর মধ্যে ২০১৭ সালে জামালপুর জেলা, ময়মনসিংহ বিভাগীয় ও জাতীয় পর্যায়ের সরকারের ‘ডিজিটাল মেলায়’ অংশ নিয়ে শ্রেষ্ঠ তরুণ উদ্ভাবকের পুরস্কার হিসেবে ৬ লাখ ২০ হাজার টাকা পান। ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রকল্পের আওতায় আয়োজিত ‘উদ্ভাবকের খোঁজে বাংলাদেশ’ প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করেন। পুরস্কার হিসেবে তাঁকে ব্যক্তিগতভাবে ৫ লাখ টাকা এবং প্ল্যান্ট নির্মাণের জন্য আরও ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়। মে মাসে মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল ইনোভেনশন, ইনোভেশন অ্যান্ড টেকনোলজি প্রদর্শনীতে (আইটেক্স) অংশ নিয়ে পরিবেশ রক্ষা বিষয়ের উদ্ভাবনী কাজের জন্য স্বর্ণপদক পেয়েছেন।

আবদুল মান্নান ও হালিমা খাতুনের তিন ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে সবার ছোট তৌহিদুল। নানা স্বীকৃতি ও পুরস্কার তৌহিদুল ইসলামকে কাজে অনুপ্রেরণা  জুগিয়েছে। তিনি চান আরও বড় পরিসরে কাজটি এগিয়ে নিতে।


Source: Prothom-Alo

26
অস্ট্রেলিয়া বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বাসযোগ্য দেশগুলোর একটি। শিক্ষা, কর্ম ও উন্নত ভবিষ্যতের আশায় প্রতিবছর লাখ লাখ অভিবাসী অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমাতে চান। তবে অভিবাসী খ্যাত দেশ হয়েও অস্ট্রেলিয়ার ভিসা প্রক্রিয়া দিনকে দিন জটিল হচ্ছে। গত বছরই সবচেয়ে জনপ্রিয় সাবক্লাস ৪৫৭ কর্ম ভিসা বাতিল করে দেয় দেশটির অভিবাসন বিভাগ। এরপরও দেশটির বিভিন্ন পেশার দক্ষ কর্মীর সাময়িক অভাব দূর করতে এবং প্রগতি ও উন্নয়নে অংশ নিতে বিভিন্ন শর্তাবলির ভিসা চালু করে অভিবাসন বিভাগ।

অস্ট্রেলিয়ার তেমনই একটি নতুন ভিসা গ্লোবাল ট্যালেন্ট স্কিম (জিটিএস)। দেশটির বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত খাতে উচ্চতর দক্ষ পেশাদারদের অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে এ ভিসা চালু করা হয়েছে। এ ভিসায় মনোনীত হয়ে চার বছরের জন্য অস্ট্রেলিয়ায় কাজ করার সুযোগ রয়েছে। এ চার বছরের মধ্যে তিন বছর অস্ট্রেলিয়ায় কাজ করার পর দেশটিতে স্থায়ী বসবাসের জন্য আবেদন করা যাবে। ভিসাটি আপাতত পরবর্তী ১২ মাসের জন্য চালু করেছে। এখন থেকে আগামী জুন ২০১৯ পর্যন্ত আবেদন করা যাবে।

অনুমোদিত কোনো অস্ট্রেলীয় প্রতিষ্ঠানই যোগ্য ভিসা প্রত্যাশীকে গ্লোবাল ট্যালেন্ট স্কিম (জিটিএস) ভিসায় মনোনীত করে ভিসার জন্য আবেদন করার আমন্ত্রণ জানালেই এ ভিসায় আবেদন করা যাবে। ভিসা প্রত্যাশীকে দুই ধরনের প্রতিষ্ঠান মনোনীত করতে পারবে। এক. ইতিমধ্যে দেশটিতে প্রতিষ্ঠিত কোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান যার গত দুই অর্থ বছরেই ৪ মিলিয়ন অস্ট্রেলীয় ডলার করে বাৎসরিক আয় রয়েছে। দুই. বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত খাতের স্টার্ট-আপ প্রতিষ্ঠান। এ ধরনের নতুন প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটি যে ভবিষ্যতে ব্যবসায়িক সফলতা পাবে তার একটি আর্থিক ও ব্যবসায়িক পরিকল্পনার প্রতিবেদন পেশ করতে হবে। এ ছাড়া দুই ধরনের স্পনসরের জন্যই নির্ধারিত পদের অস্ট্রেলিয়ার শ্রম বাজারের দক্ষ কর্মীর শূন্যতা রয়েছে তাও প্রমাণ করতে হবে। পাশাপাশি আরও বেশ কিছু আবশ্যিক শর্ত রয়েছে।

অনুমোদিত স্পনসর কর্তৃক মনোনয়ন পেতে ভিসা আবেদনকারীকে টেম্পোর‍্যারি স্কিল শর্টেজ (টিএসএস) ভিসার আবশ্যিক শর্তগুলো পূরণ করে যোগ্যতা প্রমাণ করতে হবে। ভিসা প্রত্যাশীকে অবশ্যই বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত বিষয়ে উচ্চশিক্ষিত হতে হবে। সংশ্লিষ্ট পেশায় অন্তত সরাসরি তিন বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। পাশাপাশি একই পেশায় একজন দক্ষ অস্ট্রেলীয় নাগরিকের সমান দক্ষতা থাকতে হবে। স্পনসর যদি প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান হয় তবে মনোনীত পেশার বাৎসরিক বেতন কমপক্ষে ১ লাখ ৮০ হাজার অস্ট্রেলীয় ডলার হতে হবে। আর স্পনসর স্টার্ট-আপ প্রতিষ্ঠান হলে বাৎসরিক বেতন ৫৩ হাজার ৯০০ ডলারের কম হওয়া যাবে না। সাধারণ আবশ্যিক শর্ত হিসেবে আবেদনকারীর স্বাস্থ্য, চরিত্র ও নিরাপত্তাসংক্রান্ত প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ করতে হবে। স্পনসর প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ও অংশীদারদের সঙ্গে কোনো পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে এমন কেউই এ ভিসায় আবেদন করতে পারবেন না।

নতুন গ্লোবাল ট্যালেন্ট স্কিম ভিসার প্রধান উদ্দেশ্যই হলো উদ্ভাবনী খাতে দক্ষ পেশাদার নিয়োগ করা। এ নিয়ে দেশটির নাগরিকত্ব ও বহু সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী অ্যালান টিউজ বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত করতে চাই, অস্ট্রেলিয়ার ব্যবসাগুলো বিশ্বের সেরা প্রতিভা ব্যবহার করতে পারে। এতে ব্যবসা বৃদ্ধি, দক্ষতা স্থানান্তর ও চাকরি সৃষ্টির নানাবিদ সুযোগ তৈরি করে দেবে।’

এ ভিসায় সত্যিকার অর্থে দক্ষ ও প্রতিভাবান না হলে অস্ট্রেলিয়ায় আসার ভিসা প্রাপ্তির কোনো সুযোগ নেই। আর যোগ্যতা ও সকল প্রমাণাদি সঠিক থাকলে স্বল্প সময়ের মধ্যেই এ ভিসায় অস্ট্রেলিয়ায় কর্ম ও স্থায়ী বসবাসের সুযোগ তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে।


Source: Prothom-alo
কাউসার খান: অভিবাসন আইনজীবী, সিডনি, অস্ট্রেলিয়া।
ইমেইল: <immiconsultants@gmail.com>

27
কপিরাইট ম্যাচ টুল’ নামের একটি নতুন ফিচার আনছে ইউটিউব। এতে ইউটিউবের ভিডিও নির্মাতারা তাঁদের ভিডিও চুরি ঠেকাতে পারবেন। অর্থাৎ, তাঁর আপলোড করা ভিডিও অবৈধভাবে আর কেউ আপলোড করতে পারবে না। ইউটিউবের এক ব্লগ পোস্টে এ তথ্য জানানো হয়।

নতুন এই টুলের মাধ্যমে নতুন ভিডিও আপলোড হলে তা স্ক্যান করে দেখবে ইউটিউব। এতে আপলোড করা ভিডিওর সঙ্গে ইউটিউব প্ল্যাটফর্মে আপলোড করা কোনো ভিডিওর সামঞ্জস্য আছে কি না, তা দেখা হবে। যদি ওই ভিডিও মিলে যায়, তবে ‘ম্যাচেস’ নামের একটি ট্যাব হাজির হবে।

ইউটিউব কর্তৃপক্ষ বলেছে, অবৈধভাবে কনটেন্ট পুনরায় আপলোড ঠেকাতে এক বছর ধরেই কপিরাইট ম্যাচ টুলটি নিয়ে পরীক্ষা চালানো হচ্ছে। টুলটি নিরাপদ, কার্যকর ও পুরো কমিউনিটির উপযোগী করে তুলতে দীর্ঘদিন ধরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হয়েছে।

যদি আগে আপলোড করা কোনো কনটেন্টের সঙ্গে নতুন কনটেন্ট মিলে যায়, তখন প্রকৃত আপলোডকারী নতুন আপলোডকারীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন বা ইউটিউবকে ওই ভিডিও সরিয়ে ফেলার অনুরোধ করতে পারবেন।

ইউটিউবে যাঁদের এক লাখের বেশি সাবস্ক্রাইবার আছে, তাঁরা আগামী সপ্তাহ থেকে নতুন ফিচারটি ব্যবহার করতে পারবেন।

ইউটিউবের ব্লগ পোস্টে বলা হয়েছে, এটি শক্তিশালী ফিচার। এর ব্যবহার গভীরভাবে পর্যালোচনা করা হবে এবং পরবর্তী সময়ে সব ব্যবহারকারীর জন্য উন্মুক্ত করা হতে পারে।

28
সাইনোসাইটিসের (সাইনাসের সমস্যা) সমস্যা অনেকেরই আছে। সারাক্ষণ মাথায় অস্বস্তি, নাকের মাঝে ভারি লাগা, কপালে অস্বস্তিসহ নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি করে সাইনোসাইটিস।

মুখের হাড়ের ভিতরে চার জোড়া ফাঁপা বায়ুপূর্ন জায়গা আছে যেগুলিকে সাইনাস বলা হয়। কোনও কারণে যদি সাইনাসের ভেতরের ঝিল্লির মধ্যে প্রদাহ (জ্বালা) হয় তখন তাকে সাইনোসাইটিস বলে। এবার জেনে নেওয়া যাক সাইনোসাইটিসের কষ্ট থেকে মুক্তি পাওয়ার কয়েকটি ঘরোয়া উপায়-

১) সাইনোসাইটিসের সমস্যা হলে প্রচুর পানি পান করুন। প্রচুর পরিমাণে পানি খেলে শ্লেষ্মা পাতলা হয়ে আসে। শ্লেষ্মা পাতলা হয়ে গেলে সেটা ধীরে ধীরে বের হয়ে যায় নিজে থেকেই। তাই সাইনোসাইটিসের সমস্যা দেখা গেলে সারাদিন প্রচুর পানি পান করতে থাকুন।

২) একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, রসুনের মধ্যে রয়েছে একাধিক রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা। এক কথায় এটি একটি শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিক। তাই প্রতিদিন অন্তত এক কোয়া রসুন খেলে ভাইরাল ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণজনিত সমস্যা বা সাইনোসাইটিস অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

৩) সাইনোসাইটিস সমস্যায় গরম পানির ভাপ বা সেঁক (Vapour) নেওয়া একটি অত্যন্ত কার্যকর পদ্ধতি। গরম পানির ভাপ নিলে নাসিকা-পথ ভেজা থাকবে এবং সহজেই শ্লেষ্মা বের হয়ে আসবে। তাই গরম পানিতে লবণ  মিশিয়ে নিয়ে দিনে দু বার করে ভাপ (Vapour) নিন।

৪) সাইনোসাইটিসের কারণে যখন নাকে, মাথায় অথবা কপালে অস্বস্তি লাগবে তখন গরম পানিতে একটি তোয়ালে ভিজিয়ে ভাল করে নিংড়ে নিন। এরপর এই তোয়ালেটা মুখের উপর দিয়ে শুয়ে থাকুন কিছুক্ষণ। এই পদ্ধতিতে তাৎক্ষনিক ভাবে বেশ আরাম পাওয়া যায়।

৫) যখন বাইরে বের হবেন তখন তো আর গরম পানির ভাপ বা সেঁক নেয়া সম্ভব না। তাই বাড়ির বাইরে যতক্ষণ থাকবেন, চেষ্টা করবেন কিছুক্ষণ পর পর চিনি ছাড়া গরম চা, কফি বা স্যুপ খাওয়ার। গরম তরল খাবারগুলো খেলে শ্লেষ্মা পাতলা হয়ে আসে এবং সহজে পরিষ্কার হয়ে যায়।


Source: বিডি প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ সিফাত তাফসীর

29
আপনি কি স্মার্টফোনে পাসওয়ার্ড ব্যবহার করেন? অনেকেই আছেন, যাঁরা স্মার্টফোনে কোনো রকম পাসওয়ার্ড ব্যবহার করেন না। গবেষণায় দেখা গেছে, এ ধরনের মানুষের সংখ্যা কম নয়। রাশিয়ার অ্যান্টিভাইরাস নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ক্যাসপারস্কির এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৫০ শতাংশের বেশি স্মার্টফোন ব্যবহারকারী পাসওয়ার্ড বা নিরাপত্তা সফটওয়্যার ব্যবহার করেন না। এতে তাঁর স্মার্টফোনে থাকা স্পর্শকাতর তথ্য দুর্বৃত্তদের হাতে পড়ার আশঙ্কা বাড়ছে। আইএএনএসের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।

ক্যাসপারস্কি বলেছে, বর্তমানে বেশির ভাগ স্মার্টফোন ব্যবহারকারী ইন্টারনেট চালানোসহ তাঁদের দৈনন্দিন কার্যক্রম, যেমন: অনলাইন ব্যাংকিং, সামাজিক যোগাযোগের মতো কাজে স্মার্টফোনের ওপর নির্ভর করেন। তাদের স্মার্টফোনেই প্রচুর স্পর্শকাতর তথ্য থাকে।

ক্যাসপারস্কি ল্যাবের গবেষণায় দেখা গেছে, স্মার্টফোনে অননুমোদিত কারও ঢোকা ঠেকাতে ৪৮ শতাংশের কম ব্যবহারকারী পাসওয়ার্ড সুরক্ষা দিয়ে রাখেন। মাত্র ১৪ শতাংশ ব্যবহারকারী তাদের ফাইল ও ফোল্ডার এনক্রিপ্ট করে রাখেন।

ক্যাসপারস্কি ল্যাবের পণ্য বিপণন বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিমিত্রি অ্যালেসিন বলেছেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ তথ্যে ঢোকার সুবিধা ও যেকোনো জায়গা থেকে তাতে দেখার সুবিধা থাকায় আমরা ইন্টারনেট সুবিধাযুক্ত যন্ত্র ব্যবহার করি। দুর্বৃত্তদের কাছে এটি মূল্যবান একটি সম্পদ। স্মার্টফোনে যদি পাসওয়ার্ড দেওয়া না থাকে, তবে সেখান থেকে তথ্য হাতিয়ে নেওয়া খুবই সহজ।’

ক্যাসপারস্কির গবেষণায় দেখা গেছে, স্মার্টফোনের তথ্য ব্যাকআপ রাখা মানুষের সংখ্যাও ৪১ শতাংশের কম। মোবাইলে মাত্র ২২ শতাংশ ব্যবহারকারী অ্যান্টিথেপ্ট বা চুরিবিরোধী ফিচারগুলো ব্যবহার করেন। ফলে স্মার্টফোন দুর্বৃত্তদের হাতে গেলে ছবি, বার্তাসহ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তাদের হাতে চলে যায়।

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হচ্ছে, স্মার্টফোনে পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন এবং নিরাপত্তা সফটওয়্যার ব্যবহার করুন। এতে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত থাকবে।


Source: Prothom-ALo

30
(২০১০ সাল থেকে গুগলে চাকরি করছেন বাংলাদেশের মনিরুল ইসলাম শরীফ। এখন তিনি সেখানকার স্টাফ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। সম্প্রতি বাংলাদেশে এসেছেন। প্রোগ্রামিংয়ের সঙ্গে তাঁর বেড়ে ওঠা, গুগলের কাজের পরিবেশ, বাংলাদেশের তরুণদের সম্ভাবনা, এমন আরও নানা প্রসঙ্গে তাঁর সঙ্গে আলাপ করেছেন মো. সাইফুল্লাহ)

শুনেছি আপনি নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় একটা অ্যান্টি-ভাইরাস সফটওয়্যার তৈরি করেছিলেন। অতএব আমরা বোধ হয় ছেলেবেলা থেকে শুরু করতে পারি।

আমি প্রোগ্রামিং শুরু করেছি ক্লাস থ্রি থেকে। খুব ছোটবেলায় আব্বু কম্পিউটার কিনে দিয়েছিল। তখন সম্ভবত ১৯৮৫ সাল। কোনো ডিস্ক ড্রাইভ ছিল না। মেমোরি ছিল ৬৪ কিলোবাইট। ধরুন একটা গেম খেলবেন, আধা ঘণ্টা বসে থাকতে হতো গেম লোড হওয়ার জন্য। আব্বু আমাকে কম্পিউটারের ম্যানুয়াল ধরিয়ে দিল। সেখানে প্রোগ্রামিং সম্পর্কে কিছুটা প্রাথমিক ধারণা ছিল। সেই ম্যানুয়াল দেখেই প্রোগ্রামিংয়ের হাতেখড়ি। আমার ছোট ভাই গেম খেলতে চাইত, ওর খেলার মতো কোনো গেম ছিল না। ক্লাস থ্রিতে পড়ার সময়ই ছোট ভাইয়ের জন্য আমি খুব সাধারণ, ছোট ছোট গেম বানানো শুরু করলাম।

এখন যেমন গুগল করে কিংবা ইউটিউব দেখে শেখা যায়, সেই সময় তো আর এই সুযোগ ছিল না...

না। নিউমার্কেটের বইয়ের দোকানগুলোই ছিল ভরসা। ওরা মাঝেমধ্যে কম্পিউটারের বই আনত। আমার শখই ছিল টাকা জমিয়ে এসব বই কেনা। তখন কম্পিউটারের ভাইরাস নিয়ে খুব কথা হচ্ছে, আমার কাছে মজার লাগত। সম্ভবত ক্লাস এইটে পড়ার সময়, ঢাকা ভাইরাস নামে একটা ভাইরাস ছড়াল। ঘাঁটাঘাঁটি করে জানলাম, ভাইরাস কীভাবে কাজ করে। তখনই প্রথম অ্যান্টি-ভাইরাস তৈরি করি। নাম দিই মুনিরস ভাইরাস কিলার, এমভিকে। ক্লাসের বন্ধুদের কেউ কেউ আমাকে ভাইরাস ডাকা শুরু করল। আমার আসলে বাইরের দুনিয়ায় কোথায় কী হচ্ছে, এসব নিয়ে খুব একটা আগ্রহ ছিল না। আমি আমার দুনিয়ায় ডুবে থাকতাম। বন্ধুরা খেলত, আমি কম্পিউটারের বই পড়তাম। মাইক্রোল্যান্ড কম্পিউটার অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইনস্টিটিউট নামে আব্বুর একটা প্রতিষ্ঠান ছিল। সেখানে আমি ক্লাস নিতাম। আমি পড়তাম স্কুলে, কিন্তু আমার স্টুডেন্টরা বেশির ভাগই তখন চাকরি করত। এটা একটা মজার অভিজ্ঞতা। শেখাতে শেখাতেই আমি শিখেছি।

স্কুল-কলেজে তো বোধ হয় তখনো ‘কম্পিউটার’ নামে আলাদা কোনো বিষয় ছিল না?

ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে ছিল। আমি পড়েছি ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটি স্কুল আর নটর ডেম কলেজ। মজার ব্যাপার হলো, বাংলা মিডিয়ামের স্টুডেন্ট হয়েও মাধ্যমিক–উচ্চমাধ্যমিকের পাশাপাশি আমি এ লেভেল-ও লেভেলের দুটো বিষয় নিয়েছিলাম। গণিত আর কম্পিউটার। শুধু আগ্রহ থেকেই পড়েছি। কলেজে উঠে আমি ও লেভেলের ছাত্রছাত্রীদের কম্পিউটার পড়াতাম।

এম রিকভারি নামে আপনি একটি সফটওয়্যার তৈরি করেছিলেন...

হ্যাঁ। তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে থার্ড ইয়ারে পড়ি। ১৯৯৯ সালের ২৬ এপ্রিল সারা পৃথিবীতে চেরনোবিল বা সিআইএইচ নামে একটা কম্পিউটার ভাইরাস আঘাত করেছিল। এটা কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক ও মাদারবোর্ডের বায়োসের তথ্য মুছে ফেলে। তখন আমি একটা সফটওয়্যার বানাই ‘এম রিকভারি’ নামে, অর্থাৎ মুনিরস রিকভারি। মুছে যাওয়া অংশটুকু এম রিকভারি দিয়ে আবার ফিরিয়ে আনা যায়। আব্বুকে আমি বলেছিলাম, এই সফটওয়্যারটা আমি ‘ফ্রি’ করতে চাই, যে কেউ যেন এটা ব্যবহার করতে পারে। খবর পেয়ে রয়টার্স থেকে সাংবাদিক আমার সাক্ষাৎকার নিতে এল। আমি বলে দিলাম, অমুক ওয়েবসাইটে এটা ফ্রি পাওয়া যাবে। অনেকেই এটা ব্যবহার করতে শুরু করল। মজার ব্যাপার হলো, যুক্তরাষ্ট্রের একটা নামি সফটওয়্যার কোম্পানি তখন দাবি করেছিল, আমার সফটওয়্যারটা ক্ষতিকর। আসলে ওরা এত টাকা দিয়ে যেই সফটওয়্যার বিক্রি করছে, কোথাকার কোন এক বাচ্চা ছেলে সেটা ফ্রি দিয়ে দিচ্ছে, এটা ওরা পছন্দ করেনি।

আপনি যেহেতু তখনো ব্যাপারগুলো নিয়ে তত সিরিয়াস ছিলেন না, নিশ্চয়ই মজাই পেয়েছেন।

হ্যাঁ। আমার কাছে পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে অনেক ই-মেইল আসত। যারা এম রিকভারি ব্যবহার করে সুফল পেয়েছে, তারা ই-মেইলে ধন্যবাদ জানাত। মনে আছে, এক বাবা কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ই-মেইল করেছিলেন। তাঁর ছেলের সব ছবি ছিল কম্পিউটারে। সেগুলো মুছে যাওয়ায় এম রিকভারি দিয়ে সে ছবিগুলো উদ্ধার করেছে। অবসর সময়ে ই-মেইলগুলো পড়তাম। আমার বানানো সফটওয়্যার মানুষের কাজে আসছে, ভাবতেই ভালো লাগত।

গুগল আপনাকে খুঁজে পেল কীভাবে?

অনার্স, মাস্টার্সে আমার রেজাল্ট বেশ ভালো ছিল। এরপর প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটিতে চলে গেলাম কম্পিউটার বিজ্ঞানে মাস্টার্স করতে। সেখানে গিয়ে বুঝলাম, আমরা আসলে কত কম জানি! জর্জিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি থেকে কম্পিউটার সিকিউরিটিতে পিএইচডি করার পর ভেবেছিলাম দেশে ফিরব। তখন দেখলাম আমার বন্ধুরা এরই মধ্যে বাংলাদেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক হয়ে গেছে। আমি যদি দেশে ফিরে শিক্ষকতা করি, আমাকে একেবারে গোড়া থেকে শুরু করতে হবে। আমার অনেকগুলো গবেষণাপত্র ছিল। যদি আরও গবেষণার কাজ করতে চাই, দেশে হয়তো সেই সুযোগ পাব না। গুগল, ইনটেলসহ বেশ কয়েকটা প্রতিষ্ঠান থেকে অফার পেয়েছিলাম। ২০১০ সাল। আমি গুগলেই কাজ শুরু করলাম। আমার পিএইচডির বিষয়টা দেখে ওরা আগ্রহী হয়েছে।

এখন আপনার কাজটা কী?

আমার পদবি হলো স্টাফ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। ২০১৫ সাল থেকে আমি গুগলের টেক লিড ম্যানেজারের দায়িত্বে আছি। টেক লিড ম্যানেজারের কাজ হলো বিভিন্ন প্রকল্প ও দলের নেতৃত্ব দেওয়া। আমার দলে যাঁরা আছেন, সবাই পিএইচডি করা সফটওয়্যার প্রকৌশলী। আমাদের ‘সেফ ব্রাউজিং’ টিমের কাজ মূলত ‘সিকিউরিটি অ্যান্ড প্রাইভেসি’ নিয়ে। পৃথিবীতে যত মানুষ গুগল ব্যবহার করেন, হতে পারে সার্চ করছেন, ব্রাউজ করছেন বা অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করছেন; আমাদের কাজ হলো ব্যবহারকারীর নিরাপত্তা দেওয়া। আমরা কিছু অটোমেটেড (স্বয়ংক্রিয়) সিস্টেম বানাই। ইন্টারনেটের যেসব জিনিস ব্যবহারকারীদের ক্ষতি করতে পারে, সেগুলো চিহ্নিত করি। আমার টিম মূলত অ্যান্ড্রয়েডের অ্যাপগুলো বিশ্লেষণ করে। গুগল প্লেতে যত অ্যাপ প্রতিদিন আপ হচ্ছে, আমাদের সিস্টেম সেটা স্ক্যান করে। ক্ষতিকর কিছু পেলে ব্লক করে দেয়। এই নিরাপত্তা না দিলে মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য চুরি হতে পারে, ফোনের মাধ্যমে কেউ ব্যাংকের টাকা হাতিয়ে নিতে পারে...

তার মানে এখন আপনি যে কাজটা করেন, সেটাও ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে ধন্যবাদ পাওয়ার মতো। হয়তো এখন আর ই-মেইল আসে না, তবু...

হ্যাঁ, বলতে পারেন। আমার ভালো লাগাটা আসলে এখানেই। আমি এমন একটা কিছু করছি, যাতে মানুষ উপকৃত হচ্ছে। আমি একটা জিনিস বিশ্বাস করি। প্রকৌশলে পড়ার সময় অনেকে দেখে এখন কোন জিনিসটার চাহিদা বেশি, কোন চাকরির বাজার ভালো। হ্যাঁ, চাকরি অবশ্যই একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। কিন্তু কখনো কখনো চাহিদার চেয়ে বড় হলো আগ্রহ। দুটো ব্যাপার বিবেচনা করা উচিত। কোন দিকটাতে আমার আগ্রহ আছে এবং কোন কাজের মাধ্যমে আমি মানুষের উপকার করতে পারি।

আপনি কিন্তু একদম সুন্দর পিচাইয়ের (গুগলের প্রধান নির্বাহী) সুরে কথা বললেন! তাঁর বক্তৃতায় শুনেছি, তিনিও ঠিক এ কথাই বলেন।

তাহলে তো খুবই ভালো! যেকোনো প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ আসলে লিডারের ওপর নির্ভর করে। এর আগে ল্যারি, সার্গেই যখন ছিলেন, তাঁরা একটা বুদ্ধিদীপ্ত, বিনয়ী পরিবেশ গড়ে তুলেছেন। সুন্দর পিচাই সেটাকে আরও সমৃদ্ধ করেছেন। আমার সৌভাগ্য যে বিশ্বের সেরা মানুষদের সঙ্গে কাজ করছি। ২০১০ সাল থেকে আজ পর্যন্ত, কখনোই আমি ‘আনচ্যালেঞ্জড’ অনুভব করিনি। সব সময় আমার সামনে কোনো না-কোনো চ্যালেঞ্জ আছে। আপনি যখন সব বুদ্ধিমান মানুষের সঙ্গে কাজ করবেন, তখন আপনার লক্ষ্যই থাকবে কীভাবে নিজেকে আরও উন্নত করা যায়।

বাংলাদেশের তরুণেরা কীভাবে নিজেদের আরও উন্নত করবে? আপনার কী মনে হয়?

এখন অনেক সুযোগ তৈরি হয়েছে। আমি শুনেছি বাংলাদেশে অনেক সফটওয়্যার তৈরি হচ্ছে, বাইরে থেকে কাজ আসছে। কিন্তু দেখেন, একটা ব্যাপার কী, বড় বড় প্রতিষ্ঠানে আমি দেখেছি, তারা ছোট পরিসরে কাজ করে না। তারা অনেক বেশি ব্যবহারকারীর কাছে পৌঁছাতে চায়। আমাদের লক্ষ্যও মাঝেমধ্যে সারা বিশ্ব হওয়া উচিত। হ্যাঁ, অবশ্যই আমাদের নিজেদের জন্যও সফটওয়্যার বানাতে হবে। কিন্তু আমরা এমন সফটওয়্যারও বানাব, যেটা সারা পৃথিবীর মানুষের কোনো একটা সমস্যা সমাধান করবে। এখন সহজে একটা অ্যাপ বানিয়ে সেটা গুগল প্লেস্টোর কিংবা অ্যাপলে আইওএসে দিয়ে দেওয়া যায়। বাংলাদেশে এখন খুব ভালো একটা সময়। উদ্যোক্তারা কাজ করছে, প্রচুর উদ্ভাবন হচ্ছে। আমাদের দেশে মানুষ অনেক, আমাদের মেধা খুব ভালো। কিন্তু এই জনসংখ্যা আর মেধাটা জায়গামতো কাজে লাগাতে হবে।

এই সাক্ষাৎকার যেদিন ছাপা হবে, সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস। আপনার বাবা ড. রফিকুল ইসলাম শরীফ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। আপনি অল্প কয়েক দিনের জন্য দেশে এসেছেন, এর মধ্যেও গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছেন। নিশ্চয়ই আপনার ওপর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা বড় প্রভাব আছে।

আমার জীবনের সবচেয়ে মজার সময়টা কেটেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। আমি অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখেছি, একজন আরেকজনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই সম্ভবত...একজন আরেকজনকে সাহায্য করে। আমাদের সময় ডিপার্টমেন্ট ছোট ছিল। কিন্তু আমার সেই সময়ের বন্ধুরা এখন প্রত্যেকে ভালো অবস্থানে আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, বড় বড় প্রতিষ্ঠানে কাজ করছে। সবার সঙ্গে সম্পর্কটা এখনো আগের মতোই আছে। এবার সময় খুব কম। আসলে এত ব্যস্ত থাকি। অল্প সময়ের জন্য এসেছি, তাও আমাকে তিন মাসের কাজ বুঝিয়ে দিয়ে আসতে হয়েছে। তো বন্ধুরা বলল, এরপর যদি একটু সময় নিয়ে আসি, হয়তো কয়েকটা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরে কিছু সেমিনার করতে পারি। বাইরে থেকে কিছু ভার্চ্যুয়াল ক্লাস নেওয়ার চিন্তাভাবনাও আছে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভার্চ্যুয়াল ক্লাসের ব্যবস্থা আছে। প্রবাসে আরও যারা আছে, আমি তাঁদের সঙ্গেও কথা বলব। ভার্চ্যুয়াল ক্লাসের মাধ্যমে দেশের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যদি আমাদের অভিজ্ঞতাটা ভাগাভাগি করে নেওয়া যায়, আশা করি সেটা কাজে আসবে।

Source: Prothom-alo

Pages: 1 [2] 3 4 ... 9