Show Posts

This section allows you to view all posts made by this member. Note that you can only see posts made in areas you currently have access to.


Topics - Shakil Ahmad

Pages: 1 [2] 3 4 ... 12
16
ডোনাল্ড ইয়ংয়ের সঙ্গে রাফায়েল নাদালের লড়াইটা হলো হাড্ডাহাড্ডিই। প্রথম দুই সেট নাদাল জিতলেও তৃতীয় সেট জিতে ম্যাচে ফিরেছিলেন ইয়ং। তবে স্প্যানিশ তারকার সঙ্গে শেষ পর্যন্ত পেরে ওঠেননি বিশ্বের ৪৩তম, যুক্তরাষ্ট্রের এই খেলোয়াড়। জয়টা এসেছে ৬-৪, ৬-২ ও ৭-৫-এ। ২০১১ সালের পর এই প্রথম উইম্বলডনের তৃতীয় রাউন্ডে উঠলেন নাদাল।
ব্রিটিশ তারকা অ্যান্ডি মারে জিতেছেন নাদালেরই এক পুরোনো ‘শত্রু’র সঙ্গে। ২০১৫ সালের উইম্বলডনে যে ডাস্টিন ব্রাউনের কাছে হেরেছিলেন নাদাল, সেই জার্মান তারকাকেই কাল হারিয়েছেন মারে—ব্যবধানটা ৬-৩, ৬-২ ও ৬-২-এ।
চতুর্থ বাছাই নাদাল এখন খেলবেন ৩০তম বাছাই রাশিয়ার কারান খাচানোভের বিপক্ষে। ম্যাচটা জিতলে শেষ ষোলোতে পা রাখবেন তিনি। মারের খেলা পড়েছে ইতালীয় তারকা ফাবিও ফোবিনির সঙ্গে।
ইয়ংয়ের বিপক্ষে ম্যাচটা জিতে তৃপ্তিই ঝরেছে নাদালের কণ্ঠে, ‘ম্যাচটা আমি ভালোই খেলেছি। সার্ভিসগুলোও খুব ভালো করতে পেরেছি। তৃতীয় রাউন্ডে উঠে খুশিই লাগছে। সবচেয়ে আনন্দের ব্যাপার হচ্ছে তৃতীয় রাউন্ডে উঠলাম, একটা সেটও না হেরে। প্রতিটি জয়ই আমার কাছে বিরাট কিছুই।’
উইম্বলডনের আগে কোমরের চোট ভালোই ভোগাচ্ছিল মারেকে। সেটি কাটিয়ে উঠেছেন বলেই স্বস্তিটা তাঁর, ‘কোমরের চোটটা এখন আর ভোগাচ্ছে না দেখে ভালো লাগছে।’ সূত্র: এএফপি

17
Tennis / ১০০০০ এইস!
« on: July 09, 2017, 08:22:52 PM »
ক্রিকেটে যেমন টেন্ডুলকার-লারা, ফুটবলে মেসি–রোনালদো; টেনিসে তেমনি রজার ফেদেরার। রেকর্ডের বরপুত্র এঁরা। ক্যারিয়ারে রেকর্ড অনেকে ভেঙেছেন রজার ফেদেরার। গত মঙ্গলবার উইম্বলডনের প্রথম রাউন্ডে অবশ্য নতুন কোনো রেকর্ড গড়েননি। অন্য রকম একটি মাইলফলকে পৌঁছেছেন। এইসের ১০ হাজারি ক্লাবে ঢুকেছেন রেকর্ড ১৮টি গ্র্যান্ড স্লামজয়ী সুইস তারকা।

ক্যারিয়ারে কে কতটি ‘এইস’ সার্ভিস করলেন, সেই হিসাব এটিপি রাখতে শুরু করেছে ১৯৯০ সাল থেকে। ডেভিস কাপের ম্যাচগুলো অবশ্য এই হিসাবের বাইরে। এটিপির হিসাব রাখার পর থেকে ১০ হাজার বা এর বেশি ‘এইস’ ফেদেরারের আগে করেছেন মাত্র দুজন। ১২ হাজার ৬২টি ‘এইস’ করে রেকর্ডটি ইভো কার্লোভিচের অধিকারে। গোরান ইভানিসেভিচ করেছেন ১০ হাজার ১৩১টি ‘এইস’। ফেদেরার উইম্বলডনে এসেছিলেন ৯ হাজার ৯৯৪টি ‘এইস’ নিয়ে। আলেজান্ডার দোলগোপোলভের বিপক্ষে প্রথম রাউন্ডের ম্যাচটি জিততে তাঁকে পুরো ম্যাচ খেলতে হয়নি। চোট পেয়ে দ্বিতীয় সেটে সরে দাঁড়ান দোলগোপোলভ। এর আগেই ১০টি ‘এইস’ করে এই মাইলফলকে পৌঁছে যান ফেদেরার।

ক্যারিয়ারে এত এত শিরোপা জিতেছেন। গড়েছেন অনন্য সব রেকর্ড। এতসব অর্জনের ভিড়েও এই মাইলফলকটাকে আলাদা গুরুত্ব দিচ্ছেন ফেদেরার, ‘সংখ্যাটা সত্যি অসাধারণ। তবে অতীতের সব পরিসংখ্যান থাকলে এটা আরও অর্থবহ হতো। এই মাইলফলকে পৌঁছাতে পেরে আমি অভিভূত। কার্লোভিচ আর ইভানিসেভিচের পাশে থাকতে পারাটা দারুণ।’

দুর্দান্ত সব ফোরহ্যান্ড আর ব্যাকহ্যান্ড শট, নিখুঁত খেলা আর বুদ্ধিদীপ্ত চিপের জন্য সব সময়ই হাততালি পেয়ে এসেছেন ফেদেরার। সেই তুলনায় তাঁর সার্ভিস নিয়ে তেমন আলোচনা হয় না। গতিময় সার্ভিসের জন্য কথা এলে সেই আলোচনায় সেভাবে তাঁর নাম আসেও না। ১০ হাজার ‘এইস’ করতে ফেদেরারের লেগেছে ১ হাজার ২৯৩ ম্যাচ। ক্রোয়েশিয়ার দুই সাবেক তারকা কার্লোভিচ আর ইভানিসেভিচের অবশ্য আরও অনেক কম ম্যাচ লেগেছে। কার্লোভিচের লেগেছে ৬১৮টি ম্যাচ। আর ইভানিসেভিচকে খেলতে হয়েছে ৭৩১ ম্যাচ। টেনিসডটকম।

18
একেবারে সমীকরণ মেনেই এগোচ্ছে উইম্বলডনের পুরুষ এককের লড়াই। একপ্রান্তে রাফায়েল নাদাল ও অ্যান্ডি মারের সেমির লড়াইয়ের রাস্তা যেমন ধীরে ধীরে পরিষ্কার হচ্ছে, অন্যদিকে সম্ভাবনা বাড়ছে নোভাক জোকোভিচ ও রজার ফেদেরারের মধ্যে অপর সেমিফাইনালের। আগের দিন শেষ ষোলো নিশ্চিত করেছেন নাদাল ও মারে। কাল করলেন জোকোভিচ ও ফেদেরার। ২০১১ সালের পর এই প্রথম শীর্ষ চার খেলোয়াড়কে শেষ ষোলোতে পেল উইম্বলডন।

ফলে আগামী সোমবার উইম্বলডনের দর্শকদের জন্য একেবারে পোয়াবারো। এক দিনেই এ সময়ের সেরা চার তারকার খেলা দেখতে পারবেন তাঁরা, যে দিনটা ম্যানিক মানডে নামে পরিচিত উইম্বলডনে। রোববারের ছুটির পরদিন জমজমাট টেনিস!

এদিন মারে মুখোমুখি হবেন ফ্রান্সের বেনোয়া পারের। নাদালের প্রতিপক্ষ লুক্সেমবার্গের জাইলস মুলার। জোকোভিচের প্রতিদ্বন্দ্বী ফরাসি তারকা আদ্রিয়োঁ মানারিনো। ফেদেরার খেলবেন ‘বেবি ফেদেরার’ খ্যাত বুলগেরিয়ার গ্রিগর দিমিত্রভের সঙ্গে।

টেনিসভক্ত হলে কাল হাতে টিভির রিমোট নিয়েই বসতে হবে আপনাকে। মারে আর নাদালের খেলা দুটি শুরু হবে একই সময়ে। বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সোয়া সাতটায়। জোকোভিচ ও ফেদেরারের ম্যাচ দুটিও একই সময়ে শুরু। বাংলাদেশ সময় রাত পৌনে নয়টায়।

কাল সার্ব তারকা জোকোভিচ হারিয়েছেন লাটভিয়ার আর্নেস্ট গুলবিসকে। ব্যবধান ৬-৪, ৬-১, ৭-৬ (৬-২)। ফেদেরার জয় পেয়েছেন জার্মান খেলোয়াড় মিশা জেরেভের বিপক্ষে—৭-৬, ৭-৬ ও ৬-৪-এ।

উইম্বলডন আসছে মেনে চলেছে গত ১৪ বছরের ছক। এই দীর্ঘ সময় ধরে এখনকার শীর্ষ চারজনের বাইরে কেউ উইম্বলডন জেতেনি। ফেদেরার একাই জিতেছেন সাতবার, যার শুরু ২০০৩ সালে। জোকোভিচ তিনবার। মারে ও নাদাল দুবার করে। আর দুই ধাপ পেরোলে এবারের উইম্বলডনে সবচেয়ে জমাট লড়াইটার দেখা মিলবে। শেষ চারে সেরা চার পরস্পর মুখোমুখি! হবে কি এবার?

আগে তো শেষ ষোলোর ম্যাচগুলো তাঁরা জিতুন। এর মধ্যে ফেদেরারই একটু কঠিন প্রতিপক্ষ পেয়ে গেলেন। সেটি মানছেন সুইস তারকা নিজেও, ‘এর আগে যতবার গ্রিগরের সঙ্গে খেলেছি, দেখেছি, সে আগেরবারের চেয়ে উন্নতি করেছে। মানসিকভাবে সে খুব শক্তিশালী। লড়াইটা কঠিনই হবে।’ সূত্র: এএফপি, রয়টার্স।

19
শিল্প খাতের গতির ওপর ভর করে দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রধান দ্বার চট্টগ্রাম বন্দরে এবারও কনটেইনার পরিবহন বেড়েছে। সদ্য সমাপ্ত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এ বন্দরে কনটেইনার পরিবহনে প্রবৃদ্ধি হয়েছে সাড়ে ১০ শতাংশ।

বৈদেশিক বাণিজ্য বাড়লে কনটেইনার পরিবহন বাড়ে। এ থেকে অর্থনীতির গতিপ্রকৃতির একটা ধারণা পাওয়া যায়। সরকারের বার্ষিক প্রতিবেদন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা অনুযায়ী, গেল অর্থবছরের সাময়িক হিসাবে শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে সাড়ে ১০ শতাংশ। কনটেইনার প্রবৃদ্ধির হারও শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধির সমান। শিল্প খাতের পাশাপাশি কনটেইনার পরিবহনে সেবা খাতেরও প্রভাব রয়েছে। সাময়িক হিসাবে বিগত অর্থবছরে সেবা খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে সাড়ে ৬ শতাংশ।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউজিসি অধ্যাপক অর্থনীতিবিদ মইনুল ইসলাম সম্প্রতি প্রথম আলোকে বলেন, অর্থনীতিতে কাঠামোগত রূপান্তর ঘটছে। মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) কৃষি খাতের চেয়ে শিল্প খাতের অবদান বাড়ছে। এর ফলে শিল্প খাতে কাঁচামাল আমদানি ও রপ্তানির জন্য কনটেইনার পরিবহনও বাড়বে। এ জন্য নতুন বন্দর বা টার্মিনাল নির্মাণে দ্রুত হাত দেওয়া উচিত।

বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আমদানি-রপ্তানি পণ্যবাহী ও খালি কনটেইনার পরিবহন হয় প্রায় ২৪ লাখ ১৯ হাজারটি। আগের বছর এ সংখ্যা ছিল ২১ লাখ ৮৯ হাজার। তবে সংখ্যা বাড়লেও বিগত বছর কনটেইনার পরিবহনে প্রবৃদ্ধির হার কমেছে। ২০১২-১৩ অর্থবছরে কনটেইনার পরিবহনে প্রবৃদ্ধি ছিল ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ। পরের বছর প্রবৃদ্ধি বেড়ে ১০ দশমিক ৬৮ শতাংশ হয়। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হয় ১৪ দশমিক ৮৫ শতাংশ, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে হয় ১৭ দশমিক ২৭ শতাংশ এবং সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হয় সাড়ে ১০ শতাংশ।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিসি) তথ্য অনুযায়ী, অর্থনীতিতে তিনটি খাতের মধ্যে শিল্প খাতের অবদান ক্রমেই বাড়ছে। সর্বশেষ অর্থবছরে জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান ধরা হয়েছে ৩২ দশমিক ৪৮ শতাংশ; যা ছয় বছর আগের চেয়ে ৫ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে একই সময়ের ব্যবধানে কৃষি খাতের অবদান কমেছে। গত অর্থবছর এই খাতের অবদান ১৪ দশমিক ৭৯ শতাংশ প্রাক্কলন করা হয়েছে। জিডিপিতে সেবা খাতের অংশ সামান্য কমেছে, তবু জিডিপির ৫২ দশমিক ৭৩ শতাংশই আসছে সেবা খাত থেকে। শিল্প ও সেবা খাত পণ্য আমদানি ও রপ্তানির ওপর নির্ভরশীল।

চট্টগ্রাম বন্দরের পর্ষদ সদস্য মো. জাফর আলম গত রোববার বলেন, ‘আমাদের হিসাবে কনটেইনার পরিবহনে প্রতিবছর গড়ে ১০ থেকে ১২ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি হওয়ার কথা। ভবিষ্যতে কনটেইনার পরিবহনে যাতে সমস্যা না হয়, সে জন্য নতুন একটি টার্মিনাল নির্মাণের কাজ শুরু হচ্ছে।’

বন্দরের তথ্যে দেখা যায়, গেল অর্থবছর চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার পরিবহন বৃদ্ধির হার সাড়ে ১২ শতাংশ হতে পারত। জেটি সংকটে গত জুনের শেষে অন্তত অর্ধলাখ কনটেইনার ওঠানো-নামানো যায়নি।

জাফর আলম আরও বলেন, গত মাসে ঘূর্ণিঝড় মোরা ও ঈদের ছুটির কারণে বন্দরের কার্যক্রম তিন দিনের বেশি বন্ধ ছিল। আবার বন্দর থেকে ডিপো কর্তৃপক্ষ ও আমদানিকারকেরা খালাস করে না নেওয়ার কারণেও কনটেইনারের জট তৈরি হয়েছে।

 

20
বিদেশে বাংলাদেশিরা স্থায়ী হওয়ায় রেমিট্যান্স (প্রবাসী আয়) কম আসছে বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে ফি কমানো হতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।

আজ শনিবার সকালে সিলেটের নাইওরপুল এলাকায় নগর সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের অংশ হিসেবে একটি ফোয়ারা উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

রেমিট্যান্স প্রবাহ কেন কমছে—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে অর্থমন্ত্রী বলেন, দুটি কারণে কমতে পারে। প্রথমত, যাঁরা বিদেশে থাকছেন, তাঁদের অনেকেই সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাসের প্রক্রিয়া করছেন। দ্বিতীয়ত, তাঁদের একটি অভিযোগ আছে, রেমিট্যান্স পাঠানোর ফি অনেক বেশি। ফি কমিয়ে আনার চিন্তাভাবনা হচ্ছে বলে জানান অর্থমন্ত্রী।

অর্থপাচার রোধে কী পদক্ষেপ নেবেন—জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘পাচার সারা দুনিয়াতেই হয়। তবে রেটস অব গ্রোথ (পাচারের হার) আমাদের একটু বেশি। এর জন্য আমরাও দায়ী। আমরা এখানে জমির সরকারি মূল্য কমিয়ে রেখেছি।’

উদাহরণস্বরূপ অর্থমন্ত্রী বলেন, কেউ এক কোটি টাকার জমি বিক্রি করলে সেখানে সরকারি দাম ৩০ লাখ, বাকি ৭০ লাখ কালোটাকা হয়ে যায়। তবে পাচার বন্ধে সরকার ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, খুব শিগগির জমির সরকারি দাম বাড়িয়ে বাজারদর করা হবে।

এ সময় সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. রাহাত আনোয়ারসহ আওয়ামী লীগের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

গতকাল শুক্রবার সিলেটে পৌঁছান অর্থমন্ত্রী। অর্থমন্ত্রীকে তাঁর নির্বাচনী এলাকার পক্ষ থেকে বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানান আওয়ামী লীগসহ অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা। বিকেলে তিনি সিলেটের ওসমানীনগর ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন। ত্রাণ বিতরণকালে সহায়তা আরও বাড়ানো হবে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বিতরণের জন্য সরকার ৫০ লাখ পরিবারকে ভিজিএফ সহায়তা দিচ্ছে। কোনো কোনো জায়গায় তিন ও ছয় মাসমেয়াদি এই সহায়তা প্রয়োজনে আরও বাড়ানো হবে।

ত্রাণ বিতরণ শেষে গতকাল সন্ধ্যায় সিলেট নগরের বড় ব্যবসাকেন্দ্র কালিকা ঘাটে ১৬টি ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা উদ্বোধন কর্মসূচিতে অংশ নেন অর্থমন্ত্রী।

21
প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেশে বাড়ি নির্মাণ ও ফ্ল্যাট কিনতে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ দিচ্ছে রাষ্ট্রীয় সংস্থা বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন (বিএইচবিএফসি)।

সংস্থাটি শুধু প্রবাসী বাংলাদেশিদের কথা মাথায় রেখে ১ জুলাই থেকে ‘প্রবাস বন্ধু’ নামে একটি ঋণ কর্মসূচি চালু করেছে। তবে আপাতত ঋণ নিতে পারবেন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ইতালি, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে বসবাসকারী বাংলাদেশিরা।

বাড়ি নির্মাণে একক ঋণ, গ্রুপ ঋণ এবং ফ্ল্যাট ঋণ—এই তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করেছে বিএইচবিএফসি। বাড়ি নির্মাণের চেয়ে ফ্ল্যাট কেনায় সুদের হার একটু বেশি। আর ঋণ পরিশোধ করা যাবে ৫, ১০, ১৫, ২০ বা ২৫ বছরের মেয়াদে মাসিক কিস্তিতে। ঋণ পরিশোধের মেয়াদ বেশি হলে কিস্তির পরিমাণ কম হবে।

বিএইচবিএফসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেবাশীষ চক্রবর্তী গতকাল শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য এই প্রথম আলাদা আবাসন ঋণ কর্মসূচি চালু করা হলো। আমরা মনে করছি, এতে স্বদেশে বিনিয়োগে উৎসাহিত হবেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। অন্যদিকে তাঁদের পরিবারের সদস্য ও স্বজনেরা ভালো পরিবেশে বসবাসের সুযোগ পাবেন।’

তবে ঋণ আবেদনকারীর জন্য কিছু শর্ত রয়েছে। যেমন আবেদনকারীকে জন্মসূত্রে বাংলাদেশি নাগরিক ও প্রবাসী এবং নিষ্কণ্টক জমির মালিক হতে হবে। আবেদনকারীর বিদেশে অবস্থানের সময়কাল হতে হবে কমপক্ষে তিন বছর।

বাংলাদেশের যেকোনো তফসিলি ব্যাংকে ঋণের আবেদনকারীর সঞ্চয়ী হিসাব থাকতে হবে এবং ঋণে নির্মিত বাড়ি বা ফ্ল্যাটের সার্বিক তত্ত্বাবধানের জন্য বাংলাদেশে থাকেন এমন কাউকে আমমোক্তার নিয়োগ করতে হবে।

তবে বাড়ি নির্মাণে যত টাকা ব্যয় হবে, তার ৭০ শতাংশ ঋণ দেবে বিএইচবিএফসি। বাকি ৩০ শতাংশ থাকতে হবে গ্রাহকের নিজস্ব বিনিয়োগ। ঋণের টাকাও পাওয়া যাবে কয়েকটি কিস্তিতে, একবারে নয়।

ঋণের আবেদনপত্রের সঙ্গে বিদেশে চাকরির সনদ এবং রেসিডেন্ট পারমিটসহ সব কাগজপত্র কনস্যুলেট বা দূতাবাসের মাধ্যমে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে প্রত্যয়নপত্র নিতে হবে। অবশ্য কেউ তা না চাইলে বিএইচবিএফসির নির্ধারিত এক্সচেঞ্জ হাউসের মাধ্যমেও কাগজপত্রের সঠিকতা (ভেরিফাই) যাচাই করিয়ে নিতে পারেন।

বিএইচবিএফসি সূত্রে জানা গেছে, ঋণ পরিশোধের মেয়াদ ১৫ বছর হলে প্রতি ১ লাখ টাকায় ১০ শতাংশ সুদের ক্ষেত্রে মাসিক কিস্তি ১ হাজার ৭৫ টাকা, ৯ দশমিক ৫ শতাংশ সুদের ক্ষেত্রে কিস্তি ১ হাজার ৪৪ টাকা ২০ পয়সা, ৯ শতাংশ সুদের ক্ষেত্রে ১ হাজার ১৪ টাকা এবং ৮ দশমিক ৫ শতাংশ সুদের ক্ষেত্রে মাসিক কিস্তি ৯৮৪ টাকা ৭০ পয়সা।

একক ঋণ

ঢাকা ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকায় বাড়ি নির্মাণে ৯ দশমিক ৫ শতাংশ সুদে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত একক ঋণ নেওয়া যাবে।

ঢাকা ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকা বাদে দেশের সব বিভাগীয় ও জেলা সদর এলাকায় বাড়ি নির্মাণে সর্বোচ্চ ঋণের পরিমাণ ৬০ লাখ টাকা, তবে সুদের হার ৮ দশমিক ৫ শতাংশ।

পল্লি এলাকায় বাড়ি নির্মাণে ঋণের পরিমাণ ৫০ লাখ, সুদের হার ৮ দশমিক ৫ শতাংশ। পল্লি এলাকা বলতে উপজেলা সদর, উপশহর (পেরি আরবান) এবং বিশেষ বাণিজ্য কেন্দ্র বা গ্রোথ সেন্টারকে বোঝানো হয়েছে।

গ্রুপ ঋণ

বাড়ি নির্মাণে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ঢাকা ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকায় ৯ দশমিক ৫ শতাংশ সুদে ৬০ লাখ টাকা পর্যন্ত গ্রুপ ঋণ দেবে বিএইচবিএফসি। এ ছাড়া বিভাগীয় ও জেলা সদরে বাড়ি নির্মাণে ৮ দশমিক ৫ শতাংশ সুদে ৪০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ এবং পল্লি এলাকায় বাড়ি নির্মাণে ৮ দশমিক ৫ শতাংশ সুদে ৪০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ নেওয়া যাবে।

ফ্ল্যাট ঋণ

ঢাকা ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকায় ফ্ল্যাট কিনতে বিএইচবিএফসি ঋণ দেবে ৮০ লাখ টাকা পর্যন্ত। এ ক্ষেত্রে সুদের হার ১০ শতাংশ। বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ে ফ্ল্যাট কেনায় ঋণ মিলবে ৬০ লাখ টাকা পর্যন্ত। সুদের হার এখানেও ১০ শতাংশ। আর পল্লি এলাকায় ফ্ল্যাট কেনার ঋণের পরিমাণ সর্বোচ্চ ৪০ লাখ টাকা এবং সুদের হার ৯ শতাংশ।

 

 

22


সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকা ব্যাংকগুলো একের পর এক ধ্বংসের মুখে পড়ছে। চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ এবং ঋণ প্রদানে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণেই সংকটে পড়ছে সরকারি খাতের ব্যাংকগুলো। সরকারি খাতের সোনালী ও বেসিক ব্যাংকের পর এবার নতুন করে আলোচনায় এসেছে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (বিডিবিএল)। অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে ব্যাংকটির প্রায় ৬০ শতাংশ ঋণই ইতিমধ্যে খেলাপি হয়ে গেছে।

দেশে প্রথমবারের মতো বিপর্যস্ত দুটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক ও বাংলাদেশ শিল্প ঋণ সংস্থাকে একীভূত করে গঠন করা হয়েছিল বিডিবিএল। একীভূত দুটি প্রতিষ্ঠান ব্যাংক হিসেবে যাত্রা শুরু করে ২০১০ সালের ৩ জানুয়ারি। একীভূত হয়ে নাম পরিবর্তন ছাড়া আর তেমন কিছুই বদল হয়নি ব্যাংকটির। সরকারের অন্যান্য ব্যাংক যেভাবে চলেছে, এটিও পরিচালিত হয়েছে সেভাবেই। ফলে ব্যাংকটি ব্যবসাসফল হয়নি, নতুন করে দেওয়া ঋণও হয়ে পড়েছে খেলাপি। যাত্রার সাত বছর পর একীভূত করা ব্যাংকটি টিকিয়ে রাখাই এখন কঠিন হয়ে পড়েছে। ব্যাংকিং ব্যবসার পরিবর্তে ভবন ভাড়া ও শেয়ার ব্যবসা করে কোনোমতে টিকে আছে। একীভূত করার পর শীর্ষ কর্মকর্তাদের নানা অনিয়মই ব্যাংকটিকে তলানিতে নিয়ে গেছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

গত মার্চ পর্যন্ত ব্যাংকটির বিতরণ করা ঋণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪৬২ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপিই ৮৫৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ ব্যাংকটির ৫৮ শতাংশ ঋণই খেলাপি হয়ে গেছে। ব্যাংকটির ৩৯ শাখার মধ্যে ডিসেম্বর পর্যন্ত লোকসান গুনেছে ১৯ শাখা।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ প্রথম আলোকে বলেন, জবাবদিহি না থাকলে এভাবে একীভূত করেও ব্যাংক ঠিক রাখা যাবে না, তারই বড় উদাহরণ বিডিবিএল। ব্যাংকটির ভিত ধসে পড়ার উপক্রম হয়েছে। জবাবদিহি ছাড়া কখনোই সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। অন্য সরকারি ব্যাংকগুলোর অবস্থা একই।

অনিয়ম ও দুর্নীতি ঠেকাতে বিডিবিএলসহ সরকারি ব্যাংকগুলোতে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি।

তবে বিডিবিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মনজুর আহমেদ নিজ কার্যালয়ে প্রথম আলোকে বলেন, বিডিবিএল বড় ধরনের হোঁচট খেয়েছে, তবে শেষ হয়ে যায়নি। এ থেকে ব্যাংকটি বড় ধরনের শিক্ষা নিয়েছে। ব্যাংকটি প্রচলিত ব্যাংকিং সংস্কৃতি বুঝতে পারেনি, পুরোনো কর্মকর্তাদের দিয়ে জোর করে বৈদেশিক ব্যবসা করানোর চেষ্টা হয়েছে। ফলে বড় বিপর্যয় ঘটে গেছে।

বিডিবিএলের এমডি হিসেবে গত বছরের মে মাসে যোগ দেওয়া মনজুর আহমেদ বলেন, ‘এখন আমরা ছোট ছোট ঋণ দিয়ে ব্যাংকটিকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি। খেলাপি হওয়া ঋণগুলো আদায়ে গ্রাহকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি, আইনি মোকাবিলাও চলছে।’

বিডিবিএলের ২০১৬ সালের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ব্যাংকটি মূলত এখন ভবন ভাড়া ও শেয়ার ব্যবসার ওপর টিকে আছে। অর্ধেকের বেশি ঋণ খেলাপি হওয়ায় মুনাফা প্রতিনিয়ত কমছে। ২০১৬ সালে ব্যাংকটির ঋণের বিপরীতে সুদ আয় হয় ২০০ কোটি টাকা, তবে আমানতকারীদের সুদ দেয় ১৩০ কোটি টাকা। এর বাইরে শেয়ার বিনিয়োগ থেকে আয় হয় ৯০ কোটি টাকা এবং ভবন ভাড়াসহ অন্য আয় হয় ৬৬ কোটি টাকা। বেতন-ভাতা বাবদ ব্যাংকটির ব্যয় ৯৩ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে গত বছরে মুনাফা হয় ৬৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের জন্য ১৫ কোটি টাকা সঞ্চিতি ও ১২ কোটি টাকা কর শোধ করতে হয়। ফলে নিট মুনাফা হয় ৩৮ কোটি টাকা। ২০১৫ সালেও মুনাফা ছিল ৫১ কোটি টাকা।

বিডিবিএলের মার্চেন্ট ব্যাংক, ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠান ও মিউচুয়াল ফান্ড রয়েছে। আর ব্যাংকটির ভাড়া থেকে আয় আসে মূলত রাজউক অ্যাভিনিউতে প্রধান কার্যালয় এবং কারওয়ান বাজার, চট্টগ্রাম ও খুলনায় বহুতলবিশিষ্ট চারটি নিজস্ব ভবন থেকে। এ ছাড়া বিডিবিএলের ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, ঝিনাইদহ ও রাজশাহীতে মোট ২৭ বিঘা জমি রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিডিবিএল সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে, শীর্ষ ২০ খেলাপির কাছে পাওনা ৩৫৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২৪৭ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ হয় বিডিবিএল গঠনের পর। বিডিবিএলের ৭ বছরের ৫ বছরই এমডি ছিলেন জিল্লুর রহমান। তিনি ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ব্যাংকটির এমডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। খেলাপি হওয়া এসব ঋণের বেশির ভাগই বিতরণ হয় তাঁর হাতে। খেলাপি হওয়া বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানও তাঁর এলাকার। বর্তমানে তিনি ইসলামী ব্যাংকের অডিট কমিটির চেয়ারম্যান।

প্রথম আলোকে জিল্লুর রহমান বলেন, ‘আমার সময়ে দেওয়া সব ঋণই খেলাপি হয়ে গেছে, বিষয়টি তেমন নয়। কিছু ঋণ খেলাপি হয়েছে। এসব গ্রাহক থেকে টাকা আদায়ের চেষ্টা চালাচ্ছে ব্যাংক। ওই সময়ে পুরো ব্যাংক খাতেই কিছু ঝামেলা হয়েছে। আমি তো একা ঋণ দিতে পারি না, বিভিন্ন ধাপ অনুসরণ করেই বিতরণ হয়েছে।’

জানা গেছে, ২০১২ সালে দেওয়া ঋণই এখন ব্যাংকটির শীর্ষ ঋণ খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। যেমন চট্টগ্রামভিত্তিক মোস্তফা গ্রুপের প্রতিষ্ঠান এম এম ভেজিটেবল অয়েলের কাছে ব্যাংকের পাওনা ৭৬ কোটি টাকা। মোস্তফা গ্রুপের চেয়ারম্যান হেফাজাতুর রহমান।

গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান শফিক উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিভিন্ন কারণে দীর্ঘদিন ধরে ঋণ পরিশোধ করা হয়নি। আমরা ঋণ পুনঃ তফসিল করার প্রক্রিয়া শুরু করেছি।’

ব্যাংকটির দ্বিতীয় শীর্ষ ঋণ খেলাপি ঢাকা ট্রেডিং হাউস। ২০১২ সালে বিতরণ করা এ ঋণের বর্তমান স্থিতি ৪২ কোটি টাকা। এর মালিক ঢাকা-বগুড়া রুটে চলাচলকারী টিআর পরিবহনের কর্ণধার টিপু সুলতান। সাবেক এমডি জিল্লুর রহমানের এলাকার হওয়ার সুবাদে অবাধে ঋণ সুবিধা পেয়েছে এ প্রতিষ্ঠান। রাজধানীর পল্টনের আল-রাজী কমপ্লেক্সে প্রতিষ্ঠানটির দাপ্তরিক কার্যালয়। এ কার্যালয়ে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। টিপু সুলতানের মালিকানাধীন আরেক প্রতিষ্ঠান টিআর স্পেশালাইজড কোল্ডস্টোরেজ ব্যাংকের পঞ্চম শীর্ষ খেলাপি। প্রতিষ্ঠানটির কাছে ব্যাংকের পাওনা ১৩ কোটি ৪৯ লাখ টাকা।

রংপুরের মিঠাপুকুরের নাজমুল হাসান সিদ্দিকীও ঋণ সুবিধা পেয়েছেন। তাঁর দুটি প্রতিষ্ঠানের কাছে ব্যাংকটির পাওনা ৪৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে নর্থ বেঙ্গল এগ্রোর কাছে ২৬ কোটি টাকা ও নর্থ বেঙ্গল হ্যাচারির কাছে ১৯ কোটি টাকা।

ধানমন্ডির অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা সাখাওয়াত হোসেনের মালিকানাধীন টাটকা এগ্রোর কাছে ব্যাংকের পাওনা ২৫ কোটি ৪১ লাখ টাকা। প্রতিষ্ঠানটি একসময় টাটকা ব্র্যান্ডের বিভিন্ন খাদ্যপণ্য উৎপাদন করত। ধানমন্ডির অক্সফোর্ড স্কুলের নিচতলাতেই টাটকার কার্যালয়। সেখানে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। ব্যাংকিং সূত্র বলছে, সাখাওয়াত হোসেন তাঁর সব ব্যবসা বিক্রির চেষ্টা করছেন।

বিএনপিদলীয় সাবেক সাংসদ হারুনুর রশিদ খানের মালিকানাধীন মুন্নু ফেব্রিকসের কাছে ব্যাংক পায় প্রায় ১১ কোটি টাকা। বিডিবিএল গঠনের আগেই এ ঋণ নিয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি। যোগাযোগ করা হলে মুন্নু গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক ফিয়াজ মাহফুজ উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ব্যাংক ঋণ পরিশোধের চেষ্টা করছি। ঋণটি শিগগিরই নিয়মিত হয়ে যাবে।’

বগুড়া মাল্টিপারপাসের কাছে পাওনা ১০ কোটি টাকা। ব্যাংকটির আগের এমডি জিল্লুর রহমানের ইচ্ছাতেই নিজ এলাকার এ ব্যবসায়ীকে ঋণ সুবিধা দেওয়া হয়। তবে ঋণ শোধ করেননি এ ব্যবসায়ী।

এ ছাড়া রংপুরের রণাঙ্গন কোল্ডস্টোরেজের কাছে ব্যাংক পায় ১৩ কোটি টাকা, বগুড়ার হাসান জুট অ্যান্ড স্পিনিংয়ের ১২ কোটি, মিতা ব্রিকস ফিল্ডের কাছে সাড়ে ৭ কোটি টাকা, ঝিনাই টেক্সের কাছে ১২ কোটি এবং বিএস প্লাস্টিকের ৭ কোটি টাকা।

বিডিবিএলের চেয়ারম্যান ইয়াছিন আলী বলেন, ‘আমি চেয়ারম্যান হওয়ার পর কোনো ধরনের অনিয়ম হয়নি। যা হয়েছে সব আগের। আমরা চেষ্টা করছি খেলাপি ঋণগুলো আদায়ের।’

সরকারি ব্যাংকগুলোর এই দুর্দশা নিয়ে খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, এখনই এসব অনিয়ম-দুর্নীতির পেছনে যারা জড়িত, তাদের চিহ্নিত করার সময়। এ ছাড়া সোনালী ও বেসিক ব্যাংকের অনিয়মে জড়িতদেরও বিচারের আওতায় আনতে হবে।

23
অসংখ্য শিশু তাঁর হাতে নতুন জীবন পেয়েছে। শিক্ষক হিসেবেও তিনি অতুলনীয়। বাংলাদেশে শিশুচিকিৎসার পথিকৃৎ জাতীয় অধ্যাপক ডা. এম আর খান। প্রতিষ্ঠানতুল্য এ মানুষটির জীবনী স্থান পেয়েছে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত ইন্টারন্যাশনাল হু ইজ হু অব ইন্টেলেকচুয়াল-এ। পেয়েছেন আন্তর্জাতিক ম্যানিলা অ্যাওয়ার্ড, একুশে পদকসহ আরও অনেক পুরস্কার। তাঁর আত্মজীবনী জীবনের জলছবি থেকে খানিকটা অংশ আজ থাকল স্বপ্ন নিয়ের পাঠকদের জন্য।

 ১৯৮৮ সাল। আইপিজিএমআর (বর্তমানে যেটা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে আমার বিদায় নেওয়ার পালা এসে গেল। আমি হয়তো চেষ্টা করলেই চুক্তিভিত্তিক চাকরির মেয়াদ আরও বাড়াতে পারতাম। কিন্তু তা আমি করিনি। কারণ, তাতে আমার নিকটতম সহযোগী অধ্যাপকগণ সিনিয়র পজিশন-এ দায়িত্বলাভে বাধাগ্রস্ত হতেন। সেটা কোনো ক্ষেত্রেই কাম্য হতে পারে না। আর আমার অবসরজীবনের পরবর্তী সময়টা নিয়ে আমার তেমন ভাবনা ছিল না। কেননা চিকিৎসাসেবা ও সমাজকল্যাণের ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখার যে সুযোগ, সে ব্যবস্থা আমি আগেই করে রেখেছিলাম।

যাই হোক, ১৯৮৮ সালের আগস্ট মাসে আমি আইপিজিএমআর থেকে তথা পাবলিক সার্ভিস থেকে অবসর গ্রহণ করলাম। আমার সব স্টুডেন্ট, সহকর্মী ডাক্তার, নার্স, সাধারণ কর্মচারী সবাই মিলে আমার জন্য একটা বিদায় সংবর্ধনার আয়োজন করলেন। এত বড় পরিসরে কোনো বিদায় অনুষ্ঠান ইতিপূর্বে আইপিজিএমআর-এ হয়েছে বলে আমার মনে পড়ে না। চার দিন ধরে চলছিল এ বিদায় সংবর্ধনা আয়োজন। সকালে এক গ্রুপ তো বিকেলে আরেক গ্রুপ বা বিভিন্ন বিভাগের বিদায় সংবর্ধনা প্রদান পর্বে আমাকে থাকতে হচ্ছে। প্রথমে প্রফেসররা, তারপর ডাক্তার ও নার্সরা, পরে স্টুডেন্টরা, সব শেষে তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা বিদায় সংবর্ধনা জানালেন। আমার সেই পরিণত বয়সে আবেগটা কমই থাকার কথা। তারপরও খুব খারাপ লাগছিল। কারণ, যে আইপিজিএমআর-এ প্রতিষ্ঠাকালে থেকে টানা প্রায় ১৮ বছর কাজ করেছি, সেখান থেকে বিদায় নিচ্ছি। আমার জীবনের সবচেয়ে উজ্জ্বল সময়টাই তো কেটেছে এই আইপিজিএমআর-এ। সহকর্মীদের বেশির ভাগই ছিলেন বেদনা-ভারাক্রান্ত। এমনিতেই আমার সঙ্গে সব সহকর্মীর ব্যক্তিগত সম্পর্ক যথেষ্ট উন্নত ছিল। অনেকে বক্তৃতা করলেন। আমার কাজের, দায়িত্ব পালনের প্রশংসা করলেন। কেউ কেউ বললেন, ‘স্যার, আপনি তো চলে যাবেন, কিন্তু আপনার মতো এমন দরদি মন পাব কি না জানি না...।’ ...ছাত্রদের যখন পড়িয়েছি, তখন খেয়াল রেখেছি, যেন তারা ‘বোর’ ফিল না করে। যে কারণে আমি পড়ানোর ফাঁকে ফাঁকে মজার মজার ছড়া বলতাম, জোকস বলে তাদের একঘেয়েমি দূর করার চেষ্টা করতাম। কথায় বলে—

বিশ্রাম কাজের অঙ্গ একসঙ্গে গাঁথা

নয়নের অঙ্গ যেমন নয়নেরই পাতা।

তখন অনেকে বলতেন, আমি এটা কেন করি? উত্তরে বলতাম, এক-দেড় ঘণ্টার ক্লাসে লেকচার শুনতে শুনতে ওরা যাতে ‘বোর’ হয়ে না যায়। ওরা যেন বিরক্ত না হয়, তাই আমি এটা করি। কাজের মাঝে কিছুটা বিনোদন থাকলে কাজটা আনন্দের হয়ে ওঠে। এতে মনের বিশ্রাম হয়।

আরেকটা মজার ব্যাপার ঘটল ছাত্রছাত্রীরা যখন আমাকে বিদায় সংবর্ধনা জানাতে এল, তখন একজন ছাত্র একটা খাতা নিয়ে এল, বলল—গত এক বছরে স্যার যত ছড়া ও জোকস বলেছেন, সব এখানে নোট করা আছে। কথাটি বলে সে একটা একটা করে মোট ৩৬টি ছড়া পড়ে শোনাল। এতে সবাই খুব অবাক হলো। কারণ, অনেকেই ছড়া শুনেছে, কিন্তু খেয়াল রাখেনি। এই ছাত্রটি কাজের মাঝে বিনোদন জিনিসটাকে উপলব্ধি করেছে, তাই সে ছড়াগুলো লিখে রেখেছে।

একজন ছাত্র বিদায়ের আগে তাদের কিছু উপদেশ দেওয়ার জন্য অনুরোধ করল। এই পরিপ্রেক্ষিতে আমিও নিজের কথা কিছু বললাম, চিকিৎসক ও নার্সদের প্রতি আমার কিছু উপদেশ দিলাম। চিকিৎসকদের প্রতি উপদেশ হলো—তোমরা তো চিকিৎসক। রোগী ও তাঁর স্বজনেরা যখন বড় সমস্যার মুখোমুখি হয়, তাঁদের জানা উচিত—রোগটা কী হয়েছে, সারবে কত দিনে, সারবে কি না, বা চিকিৎসার ক্ষেত্রে সমস্যাগুলো কী—এসব বিষয়ে কিন্তু বিস্তারিত আলোচনা সব সময় করা হয় না। ফলে রোগীর আত্মীয়স্বজন অন্ধকারে থাকেন। এতে রোগীর চিকিৎসা কার্যক্রম সংকটজনক হয়।

কোনো কোনো ডাক্তার সাধারণভাবে ধরে নেন, রোগী বা তাঁর আত্মীয়স্বজন তাঁরা রোগ সম্পর্কে কী বোঝেন! যা করব, তা তো আমরা ডাক্তাররাই করছি। কিন্তু এতেই মাঝেমধ্যে সমস্যার সৃষ্টি হয়। রোগী এল, চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরল, সেই সব ক্ষেত্রে তেমন কোনো কথা হয় না। কিন্তু রোগী ভর্তি হলো, ডাক্তাররা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন, রোগীর আয়ু নেই বলে মারা গেলেন। কিন্তু রোগীর স্বজনেরা যদি বাড়ি ফেরার সময় বলতে বলতে যান, ডাক্তারদের অবহেলায় রোগী মারা গেছেন; আমি তখন এখানে থাকব না, কিন্তু এই কথাটা আমার কানে এলে আমি দুঃখ পাব।

সুতরাং ডাক্তারদের চেষ্টা করতে হবে, যাতে রোগী এবং আত্মীয়স্বজনকে রোগীর শরীরের প্রকৃত সমস্যাটি তুলে ধরে তাঁর চিকিৎসার সামগ্রিক বিষয়াদি স্পষ্টভাবে জানানো হয়। এটা যদি করা যায়, তাহলে আমি বলব, ডাক্তার হিসেবে আপনি সার্থক। এই পরামর্শ আমি আমার ছাত্রছাত্রীদের দিয়েছিলাম। কারণ, আমাদের দেশের হাসপাতালগুলোতে এ সমস্যাটিই প্রকট। রোগী ও তাঁর স্বজনদের জানানোর চেষ্টাটা খুব কম হয়। তাঁর রোগের প্রকৃত অবস্থা কী এবং তাঁর নিরাময় পুরো সম্ভব, কি সম্ভব না বা তাঁর চিকিৎসার জন্য কত দূর করা যাবে, কত দূর যাবে না অথবা তাঁর সুচিকিৎসা কোথায় যথাযথভাবে হওয়া সম্ভব। এগুলো আগেই স্পষ্ট করে অর্থাৎ কাউন্সেলিং করে নিলে ডাক্তার, রোগী ও রোগীর আত্মীয়স্বজনদের সম্পর্কে কোনো তিক্ততা সৃষ্টির সুযোগ থাকে না। প্রতিটি চিকিৎসকেরই উচিত রোগী বা তাঁর আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে ঠিকমতো কাউন্সেলিং করে নেওয়া।

আরেকটা বিষয় আমি বর্তমান প্রজন্মের চিকিৎসকদের প্রতি বলব, আপনার জন্য অপেক্ষমাণ কোনো রোগী বা তাঁর আত্মীয়স্বজনকে পাশ কাটিয়ে যাবেন না। যতই ব্যস্ততা থাকুক আগে, তাঁকে দেখুন, তাঁর সঙ্গে কথা বলুন, তাঁর অবস্থাটা বুঝে তবে একটা ব্যবস্থা দিয়ে যান। যদি বোঝেন যে সিরিয়াস কিছু না, তাহলে তাঁকে পরবর্তীতে সময় দিন। কিন্তু আপনার অমনোযোগিতার কারণে কোনো রোগীর ক্ষতি হলে এ অপরাধবোধ আপনার মনোকষ্টের কারণ হবে।

আমি ব্রিটেনে প্রায় সাড়ে ছয় বছর উচ্চতর চিকিৎসাসেবা, শিক্ষা ও হাসপাতালে কর্মরত ছিলাম, সেখানে দেখেছি এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সেরা হাসপাতালগুলোতেও ঘুরে দেখেছি, উন্নত বিশ্বের ডাক্তাররা রোগী ও তাঁর আত্মীয়স্বজনকে সামগ্রিক খুঁটিনাটি বিষয়াদি জানিয়ে, তাঁদের সঙ্গে কাউন্সেলিং করে চিকিৎসাসেবা দেন। কিন্তু আমাদের দেশে রোগী ও তাঁদের স্বজনেরা প্রায়ই ডাক্তারদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে থাকেন যে তাঁদের রোগ সম্পর্কে কোনো ধারণা না দিয়েই চিকিৎসা কার্যক্রম চলে, তাঁরা ভালো-মন্দ কিছুই বুঝতে পারেন না। যে কারণে ডাক্তারদের সম্পর্কে অভিযোগ উঠছে। তবে এ কথা সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়, অনেকেই আছেন রোগীদের সঙ্গে নিয়মিত কাউন্সেলিং করে চিকিৎসা দেন। তবে রোগীকে বা তাঁর আত্মীয়স্বজনকে সাধারণ ভাষায়, তাঁরা যেন সহজে বুঝতে পারেন এমন ভাষায় বোঝাতে হবে। আমাদের দেশের চিকিৎসাব্যবস্থার উন্নয়নের স্বার্থে ডাক্তারদের এ বিষয়টার প্রতি নজর দিতে হবে। চিকিৎসাশাস্ত্রের নৈতিকতার স্বার্থেই সেটা করতে হবে।

24
উপমহাদেশের প্রখ্যাত সংগীতজ্ঞ ও সংগীত গবেষক সুধীন দাশ আর নেই। গত মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন। সংগীতের পেছনে জীবনের প্রায় পুরোটা সময় কাটিয়ে দিয়েছিলেন। বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর। গান গেয়েছেন, সুর করেছেন, করেছেন সংগীত পরিচালনা। সংগীত নিয়ে গবেষণার কাজটিও করে গেছেন নিরলসভাবে। তিনি নজরুলের গানের স্বরলিপিকার।

নিশিকান্ত দাশ ও মা হেমপ্রভা দাশের কনিষ্ঠ সন্তান সুধীন দাশগুপ্তর জন্ম কুমিল্লার তালপুকুরপাড়ের বাগিচাগাঁওয়ে; ১৯৩০ সালের ৩০ এপ্রিলে।

সুধীন দাশের মরদেহ অ্যাপোলো হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়েছে।

সংবাদ সংস্থা বাসস সূত্র জানায়, সুধীন দাশের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর প্রমুখ।

আজ বৃহস্পতিবার সকাল আটটায় সুধীন দাশের মরদেহ মিরপুরের বাসায় নিয়ে আসা হবে। সকাল ১০টায় নিয়ে যাওয়া হবে নজরুল ইনস্টিটিউটে, বেলা ১১টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। দুপুরে পোস্তগোলা শ্মশানে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে।

সুর–সাধনায় নিবেদিত এই একজীবনে সুধীন দাশ কুড়িয়েছেন অনেক সম্মান ও সম্মাননা। ১৯৮৮ সালে একুশে পদকসহ বহু পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন। পেয়েছেন ‘মেরিল-প্রথম আলো আজীবন সম্মাননা ২০১১’। তাঁর সাধনায় মুগ্ধ কয়েকজন সংগীতশিল্পী স্মরণ করলেন তাঁকে।

ফেরদৌসী রহমান

১৯৫৪ সালের পরের ঘটনা। আমাদের বাড়িতে তো প্রায়ই গানের আসর বসত। পুরানা পল্টনের সেই বাসায় আব্বা একবার সুধীন দাশ ও তাঁর স্ত্রী নীলিমা দাশকে দাওয়াত করলেন। আরও অনেকেই ছিলেন। দুজনে সেদিন রবীন্দ্রসংগীত গাইলেন। আমি তখন ছোট। গান শিখতাম আবদুল আহাদের কাছে। একটা সময় আহাদ চাচার চোখে সমস্যা দেখা দিলে তিনি আমাকে সুধীনদার কাছে গান শেখার কথা বলেন। গান শিখতে গিয়ে তাঁর সঙ্গে খুব দারুণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। শিক্ষক হিসেবে অসাধারণ ছিলেন। তাঁর শেখানোর পদ্ধতিটাও ভালো ছিল। বাচ্চারাও তাঁকে খুব ভালোবাসত। মানুষ হিসেবে অসম্ভব ভালো ছিলেন। ছিলেন খুব স্নেহপ্রবণ। নিজের বোনকে যেভাবে ভালোবাসতেন, আমাকে সেভাবেই ভালোবাসতেন।

ফাতেমা তুজ জোহরা

আমি সরাসরি তাঁর ছাত্রী ছিলাম না। কিন্তু অনেক কিছু তাঁর কাছে শিখেছি। খুব সুন্দর করে গান তুলে দিতেন। প্রশংসা করতেন, যা অনুপ্রেরণা জোগাত। একদিন তাঁর সঙ্গে হাঁটছি, জানতে পারলাম, তিনি খুব একটা চোখে দেখেন না। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি চোখে না দেখলে হাঁটেন কীভাবে? বললেন, ‘সবাই ধরে নিয়ে যায়।’ আমি অবাক হতাম, একজন মানুষ চোখে না দেখার জন্য ঠিকমতো হাঁটতে পারেন না, তারপরও ম্যাগনিফাইং গ্লাস দিয়ে নোটেশন ঠিক করছেন। এতটা ধৈর্য! নজরুলের গানের চলতি স্বরলিপিটা আদি সুরে পেলাম তো তাঁর জন্যই। সুধীনদা খুব ভালো বক্তৃতাও করতে পারতেন। মুগ্ধ হওয়ার মতো।

ফেরদৌস আরা

একবার একটি অনুষ্ঠানে ‘ধনধান্য পুষ্পভরা’ গাইতে গিয়ে গানের কথা নিয়ে সমস্যা হলো। অনেককেই ফোন করলাম। কেউ বলতে পারল না। যন্ত্রশিল্পীসহ সবাই বসে আছি। হঠাৎ মনে হলো সুধীন কাকার কথা। তখন কাকিমাসহ খাচ্ছিলেন। আমার কথা শুনে তখনই প্লেট রেখে উঠে গেলেন। বললেন, ‘আমি বুঝছি তুই দলবল নিয়া বইস্যা আছিস। ফোনটা একটু ধর।’ এরপর আলমারি থেকে দুটি বই বের করে গানটি খুঁজলেন। কিন্তু তাঁর মনে হলো, এগুলোয় ভুল আছে। এরপর ট্রাংক থেকে পুরোনো একটি বই বের করে আমাকে বললেন, ‘আরে এই গানটা তো এক মাইল লম্বা রে। তোর কোন স্তবক লাগব?’ অক্ষরগুলো ছোট বলে ঠিকমতো পড়তেও পারছিলেন না। কাকিমাকে বললেন, ‘ম্যাগনিফাইং গ্লাসটা এনে দাও।’ এরপর সেই গ্লাস দিয়ে একটু একটু করে পড়ে আমাকে গানের কথা ঠিক করে দিলেন। এমন মানুষ আর কই পাব?

নাশিদ কামাল

সুধীন দাশ ছিলেন একজন নিবেদিতপ্রাণ মানুষ। কাজী নজরুল ইসলামের গানের রেকর্ড সংগ্রহ করার জন্য তিনি দিনের পর দিন প্রচুর পরিশ্রম করেছেন। পরে নজরুল একাডেমি থেকে সেসব গানের স্বরলিপি তৈরির কাজে লেগে পড়েন। নজরুল ইনস্টিটিউট যখন নির্মিত হলো, তখন সেখানকার প্রশিক্ষক হলেন তিনি। নজরুলের গানের স্বরলিপি তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হলো তাঁকে। আব্বাসউদ্দীন সংগীত একাডেমিতে তিনি গান শেখাতে আসতেন। তখন দেখেছি, টোস্ট বিস্কুট খেতে খুব ভালোবাসতেন।

বুলবুল ইসলাম

আশির দশকের শেষ দিকে আমি প্রথম ঢাকায় আসি। সে সময় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের অনুষ্ঠানে সুধীন দাশ ‘একদা তুমি প্রিয়ে’ গেয়েছিলেন। সেটা শুনে আমি চমৎকৃত হয়ে যাই। সে‌ যে কী এক অসাধারণ ভালো লাগা, এক অসাধারণ মুগ্ধকর স্মৃতি! আমি ৩০ বছর পরও যেন শুনতে পাই। তিনি মূলত নজরুলসংগীতের মানুষ। কিন্তু রবীন্দ্রনা‌থের গান ছিল তাঁর প্রাণের গান। মানুষ হিসেবে ছিলেন খুবই মজার। মুখে হাসি লেগেই থাকত। আমাদের ‘তুই’ বলে সম্বোধন করতেন। সুধীন দাশ আর নেই—খবরটা পে‌য়েই ময়না‌কে (স্ত্রী শারমীন সাথী ইসলাম) সঙ্গে নি‌য়ে ছু‌টে গেলাম হাসপাতালে। অনেক কিছুই ম‌নে পড়‌ছে।

গ্রন্থনা: মনজুর কাদের

 

25
বিশ্বখ্যাত মিউজিক্যাল ইন্সট্রুমেন্ট প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান রোল্যান্ড ও বসের অফিশিয়াল আর্টিস্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন অর্থহীন ব্যান্ডের অন্যতম সদস্য সুমন। গত ২৩ জুন এক চিঠির মাধ্যমে রোল্যান্ড করপোরেশনের গ্লোবাল আর্টিস্ট বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট ব্রায়ান অ্যালি এ কথা জানান।

ব্যক্তিগত প্রয়োজনে অর্থহীনের সুমন এখন আছেন ব্যাংককে। ফিরবেন ১৫ জুলাই। ব্যাংকক থেকে প্রথম আলোকে তিনি জানান নিজের অনুভূতি। বলেন, বিষয়টি তাঁর জন্য অনেক আনন্দের। আর অনুভূতি? সেটা নাকি ভাষায় প্রকাশ করার নয়।

কীভাবে রোল্যান্ডের সঙ্গে যোগাযোগ হয়? সুমন বলেন, ‘বিশ্বের সেরা মিউজিশিয়ানদের নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল ন্যাম শো (ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব মিউজিক মার্চেন্টস)। সেখানে আমারও অংশ নেওয়ার সুযোগ হয়েছিল। ওই সময়ে রোল্যান্ডের কর্মকর্তারা আমার ব্যাপারে জানতে পারেন। রবার্ট ববি লুইস নামের আমার এক বন্ধু তখন রোল্যান্ডের শুভেচ্ছাদূত। ওর মাধ্যমে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। ঘটনাটি মাস দুই আগের। কিছুদিন আগে আমাকে জানানো হয়।’

রোল্যান্ডের অফিশিয়াল আর্টিস্ট হতে পেরে ভীষণ আনন্দিত সুমন বলেন, ‘এটা আমার জন্য সিরিয়াস আনন্দের। কারণ, রোল্যান্ড ও বস হচ্ছে বিশ্বের অন্যতম বড় ইন্সট্রুমেন্ট প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান। আমি খুবই সম্মানিত বোধ করছি। এর বেশি আর কী বলা উচিত বুঝতে পারছি না।’

অফিশিয়াল আর্টিস্ট হিসেবে আপনার কাজ কী হবে? সুমনের উত্তর, ‘আমার কাজ হবে বাংলাদেশে রোল্যান্ড ও বসের পণ্যের পৃষ্ঠপোষকতা করা। তারাও আমার পৃষ্ঠপোষকতা করবে। তারা আমাকে এও জানিয়েছে, রোল্যান্ডের সঙ্গে বিশ্বের অন্য যেসব শিল্পী যুক্ত আছেন, তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিয়ে যৌথভাবে কিছু একটা করাবে। এটা আমার জন্য অনেক বড় সুযোগ।’

 

26
মনে হতে পারে, ছবি তোলা আর সেগুলো ফেসবুকে আপলোড করাই সজীবের একমাত্র কাজ। তা নয়, গান করতে দেশ-বিদেশে যেখানেই পারছেন, ছুটে যাচ্ছেন রবীন্দ্রসংগীতের তরুণ এই শিল্পী। প্রবাসীরা প্রাণ ভরে শুনছেন তরুণ কণ্ঠে কবিগুরুর গান। আসছে ২৯ জুলাই অস্ট্রেলিয়ার সায়েন্স থিয়েটার স্টেডিয়ামে রয়েছে কনসার্ট ‘দুই বাংলার গান’। সেখানে পশ্চিমবঙ্গের গান শোনাবেন শিল্পী অনুপম রায় আর বাংলাদেশের লোকগান ও রবীন্দ্রসংগীত শোনাবেন স্বপ্নীল সজীব।

কিছুদিন আগে কানাডায় বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানে গান করেছেন এই তরুণ। সেখানকার অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করতে গিয়ে বললেন এক চমকপ্রদ গল্প। টরন্টোর প্রথম দিনের অনুষ্ঠানে পঞ্চাশোর্ধ্ব এক কানাডীয় নারী অনুরোধ করে বসলেন, ‘তুমি একটু কেবল বসতে দিয়ো কাছে’ গানটির। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেটি তাঁর করা ছিল না। পরের অনুষ্ঠানেও একই অনুরোধ। এবার দমে যান সজীব। রাতে ঘরে বসে গানটি করতে হয়েছে তাঁকে। টরন্টোর শেষ অনুষ্ঠানটিতে তিনি মঞ্চে ডেকে ধন্যবাদ জানান সেই নারীকে। গেয়ে শোনান সেই গান।

কলকাতার জি বাংলায় ‘দিদি নাম্বার ওয়ান’ অনুষ্ঠানে সেখানকার শিল্পী ইমন চক্রবর্তীর সঙ্গে গান করেছেন সজীব। এই তো সেদিনের কথা। অনুষ্ঠানের উপস্থাপক রচনা ব্যানার্জির সঙ্গে ফেসবুকে দেখা গেছে তাঁর বেশ কিছু ছবি। রচনা বাংলাদেশে আসতে চেয়েছেন। শুধু বেড়াতে নয়, ইলিশও খাবেন তিনি।

রবীন্দ্র প্রয়াণ দিবসে ‘আজি ঝরো ঝরো মুখর বাদরদিনে’ গানটির একটি ভিডিও অনলাইনে প্রকাশের পরিকল্পনা করছেন এই তরুণ শিল্পী। জানালেন, পূজায় আবারও গাইতে যাবেন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায়। ঘনঘন সংগীতসফর তাঁকে ক্লান্ত করছে না।

 

27
ধরুন, একটি অফিসে ডেস্কের সামনে বসে গম্ভীর মুখে কাজ করছেন সবাই। বসও গম্ভীর মুখে ঘুরে দেখছেন অফিস। কর্মীরা তটস্থ। যেন সবাই ‘রামগড়ুরের ছানা, হাসতে তাদের মানা।’

এখন প্রশ্ন আসতেই পারে, অফিসে তাহলে কীভাবে থাকা উচিত? হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়তে হবে? তা হলে তো আর অফিস আর বাড়ির মধ্যে পার্থক্য রইল না। সেটি কি কর্তৃপক্ষ বা সহকর্মীরা ভালোভাবে নেবেন?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অফিসে কর্মী ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে রসবোধ থাকা মন্দ কিছু নয়। বরং আখেরে এতে প্রতিষ্ঠানেরই লাভ হয়। কারণ, যখন আপনি মানসিকভাবে উৎফুল্ল থাকবেন, তখন স্বাভাবিকভাবেই কাজে উৎসাহ পাবেন বেশি। এতে একদিকে কাজ বেশি হবে, অন্যদিকে তাতে ভুলও থাকবে কম।

অবশ্য একটি অফিসে নানা ধরনের মানুষ থাকে। কেউ মজা করতে পছন্দ করেন, আবার কেউ চুপচাপ কাজ করে যান। আবার মজা বিষয়টিও আপেক্ষিক। কারও কাছে যা মজা, কারও কাছে মজা না-ও হতে পারে। কেউ কেউ একে ব্যক্তিগত আক্রমণ মনে করতে পারেন। সুতরাং মানুষ বুঝে মজা করা উচিত।

কানাডার জেনারেল মোটরসের প্রেসিডেন্ট স্টিভ কার্লাইল যখন কোম্পানির প্রধান কার্যালয় পরিদর্শন করতেন, তখন প্রায়ই কর্মীদের সঙ্গে রসিকতা করতেন। স্টিভ বলতেন, এই আচরণ কর্মীদের সঙ্গে তাঁর বন্ধন আরও দৃঢ় করত। তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, হাস্যরস করার জ্ঞান থাকা নেতৃত্বের গুণাবলির একটি অংশ। এটি মানুষকে কঠোর নিয়মকানুনের মধ্যেও একটু নিশ্বাস নেওয়ার সুযোগ করে দেয়। এতে করে কর্মীরা অফিসের মধ্যে কিছুটা অনুকূল পরিবেশ পায় এবং তাঁরা আরও বেশি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।’

ফিলাডেলফিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হোয়ারটন স্কুলের অধ্যাপক মরিস শোয়েইতজার সম্প্রতি অফিসে রসবোধের ব্যবহার সম্পর্কে একটি গবেষণা করেছেন। তাতে দেখা গেছে, কোনো কর্মী বা বস যদি অফিসে রসবোধ সফলভাবে ব্যবহার করতে পারেন, তবে তা প্রতিষ্ঠান ও কর্মী—উভয় পক্ষের জন্যই ভালো হয়। এটি ওই নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে আত্মবিশ্বাসী করে তোলে এবং প্রতিষ্ঠানে তাঁর অবস্থান শক্তিশালী করে।

অধ্যাপক শোয়েইতজার বলেন, ‘কর্মক্ষেত্রে যাঁরা আত্মবিশ্বাসী থাকেন, মানুষ তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হয়। যখন আপনি মজা করা শুরু করবেন, তখনই আপনি একটি ঝুঁকি নিচ্ছেন। আপনার সেই রসবোধ অন্য ব্যক্তি কীভাবে গ্রহণ করবেন, সেটিই হলো ঝুঁকি। আর যখনই আপনি ঝুঁকি নেবেন, তখনই আপনার ব্যক্তিত্বে আত্মবিশ্বাস ফুটে উঠবে।’

কিন্তু এই রসবোধের বিষয়টি অন্য সহকর্মীরা কীভাবে নেন? শোয়েইতজার বলেন, একটি ভালো রসিকতাকে অবশ্যই বুদ্ধিদীপ্ত ও সহানুভূতিশীল হতে হবে। এতে করে সহকর্মীরা রসবোধসম্পন্ন ব্যক্তির যোগ্যতা সম্পর্কে বুঝতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই অন্যের দৃষ্টিভঙ্গিকে বিবেচনায় রাখতে হবে। তাঁরা কোন বিষয়টিকে মজাদার মনে করেন, সেটি বুঝেই রসিকতা করতে হবে।

অসময়ে বলা বাজে রসিকতা কিন্তু পারস্পরিক সম্পর্কে খারাপ প্রভাব ফেলে। সাম্প্রতিক গবেষণায় বলা হয়েছে, এতে করে সহকর্মীর কাছে নিজের অযোগ্যতা প্রকাশিত হয়ে পড়ে। ফলে অফিসে অবস্থান হয়ে পড়ে নড়বড়ে।

টরন্টোর প্লাস্টিসিটি ল্যাব আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা ও ব্যবসাক্ষেত্রের সুখী পরিবেশ নিয়ে গবেষণা করে থাকে। এ প্রতিষ্ঠানের সহপ্রতিষ্ঠাতা জেনিফার মস বলেন, ‘বড় বড় প্রতিষ্ঠানে কর্মীদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলতে রসবোধ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এতে করে পারস্পরিক সম্পর্ক বেশ সহজ হয়ে আসে।’

বিহেভিরাল অ্যান্ড অ্যাপ্লাইড ম্যানেজমেন্ট নামের একটি জার্নালে ২০০৬ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, যেসব কর্মী কর্মস্থলে মজার পরিবেশে কাজ করেন, তাঁরা মানসিক অবসাদে ভোগেন কম।

অফিসের সহকর্মীদের মধ্যে কিন্তু খুনসুটিও হয়। কলম্বিয়া বিজনেস স্কুলের অধ্যাপক অ্যাডাম গ্যালিনস্কি বলেন, হাস্যরসের পাশাপাশি বিদ্রূপও কার্যকরভাবে ব্যবহার করা যায়। তবে এটি ব্যবহার করতে গিয়ে একটু সতর্ক হতে হবে। যখন উভয় পক্ষের মধ্যে আস্থা ও বিশ্বাসের সম্পর্ক গড়ে উঠবে, তখনই বিদ্রূপাত্মক কৌতুক করা যাবে। তা না হলে অনেকেই একে ব্যক্তিগত আক্রমণ বলে মনে করতে পারেন।

অ্যাডাম গ্যালিনস্কি বলেন, ‘একজন একটি শব্দের অর্থ কী করছেন, সেটির ওপর পুরো বিষয়টি নির্ভর করে। এটি একটি নির্দিষ্ট ধরনের সামাজিক বুদ্ধিমত্তা, যা সবাই একইভাবে গ্রহণ করেন না বা বুঝতে পারেন না।’

বিবিসি অবলম্বনে অর্ণব সান্যাল

28
যশোর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল থেকে আবারও এক দিন বয়সের এক নবজাতক চুরি হয়েছে। আজ রোববার দুপুর ১২টার দিকে হাসপাতালের লেবার ওয়ার্ড থেকে কৌশলে এক নারী ওই নবজাতক চুরি করে পালিয়ে গেছে। এ ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোতোয়ালি থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। সন্দেহজনক এক নারীকে আটক করেছে পুলিশ।


সন্তানকে হারিয়ে মা রুপালী খাতুন এখন দিশেহারা। যশোর সদর উপজেলার রুপদিয়া গ্রামের সাইফুল ইসলামের স্ত্রী রুপালী খাতুন গতকাল শনিবার এক ছেলেসন্তানের জন্ম দেন।

এর আগে গত বছরের ১৯ নভেম্বর নয় দিন বয়সের এক নবজাতক হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ড থেকে চুরি হয়। এক দিনের ছেলে নবজাতক চুরি হয়েছে।

রুপালী খাতুন বলেন, ‘বোরকা পরা অপরিচিত এক নারী সকাল থেকে ওয়ার্ডে ঘোরাঘুরি করছিল। ওই নারী বারবার আমার ছেলেকে কোলে নিতে চাইছিল। আমি দিতে রাজি হইনি। সে বারবার বলেছিল, ‘আমার ছেলেমেয়ে হয় না। তোমার ছেলেটাকে কোলে নিয়ে একটু শান্তি পেতে দাও।’ তারপরও আমি ছেলেকে তার কোলে দিইনি। কিন্তু আমার শাশুড়ি বুঝতে পারেননি। কিছুক্ষণ পরে ওই নারী কৌশলে আমার শাশুড়ির কাছ থেকে ছেলেকে কোলে নিয়ে পালিয়ে গেছেন।’

যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক এ কে এম কামরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘শনিবার রুপালী খাতুন নামে ওই প্রসূতি মায়ের অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে একটি ছেলে নবজাতক হয়। এক দিন পরেই অপরিচিত এক নারী ওয়ার্ডে গিয়ে তাদের সাথে সম্পর্ক করে নবজাতকটি চুরি করে নিয়ে গেছে। এ বিষয়ে কোতোয়ালি থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে ওই চোরকে শনাক্ত করার সুযোগ রয়েছে। থানার ওসিকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।’

যশোর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম আজমল হুদা বলেন, ‘রোগীর স্বজনের কাছ থেকে কৌশলে এক নারী একটি নবজাতক চুরি করে নিয়ে গেছে। এ বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে।’

এক বছর আগে চিকিৎসা সহায়তার জন্য ছবি তোলার কথা বলে হাসপাতালের প্রসূতি ওয়ার্ড থেকে নয় দিন বয়সের এক নবজাতককে এক নারী চুরি করে নিয়ে যায়। ওই ঘটনায়ও কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা করা হয়। চুরির মাস খানেক পরে কেশবপুর উপজেলা থেকে ওই নবজাতককে উদ্ধার করে পুলিশ।

নবজাতক চুরি ঠেকাতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কী পদক্ষেপ রয়েছে—জানতে চাইলে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক কামরুল ইসলাম বলেন, ‘অস্ত্রোপচারের পর প্রসূতি মা ও নবজাতককে হাসপাতালের ওয়ার্ডে ভর্তি থাকে। রোগী ও স্বজনদের বারবার সতর্ক করা হয় তারা যেন অপরিচিত কারও কোলে নবজাতক না দেন। স্বজনদের দায়িত্ব নবজাতক আগলে রাখা। তারপরও হাসপাতালের নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করার জন্য বেসরকারি সিকিউরিটি ব্যবস্থা চালু করা যায় কি না, সেটি ভেবে দেখা হচ্ছে।’
কামরুল ইসলাম বলেন, ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ রোগী ভর্তি থাকে হাসপাতালের প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে। যে কারণে দর্শনার্থী ঠেকানো খুব কঠিন হয়ে যায়। ঠেকাতে গেলেই রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কর্মচারীদের প্রায় হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।

প্রসূতি মায়েদের যে ওয়ার্ডে রাখা হয়, সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, নির্ধারিত শয্যার বাইরে মেঝেতে (ফোর) অতিরিক্ত বিছানা ফেলে প্রসূতি মায়েদের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রাখা হয়েছে। একই বিছানায় বসে রোগী ও স্বজনেরা ভাত খাচ্ছেন। পান-তামাক খাচ্ছেন স্বজনদের কেউ কেউ।

29
ঘটনাটি আজ শুক্রবার সকাল ১১ টার।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দাউদকান্দির গৌরীপুরে অর্ধশত যাত্রী নিয়ে একটি বাস ডোবায় পড়ে যায়। দাউদকান্দি হাইওয়ে থানার কনস্টেবল পারভেজ মিয়া তখন রাস্তায় ট্রাফিক সামলাতে ব্যস্ত।

অবস্থার ভয়াবহতা ভেবে নিজের জীবনের কথা চিন্তা না করেই পুলিশের এই ভারী ভারী পোশাক নিয়েই পচা ও গন্ধযুক্ত ময়লা ডোবার পানিতে লাফিয়ে পড়েন পারভেজ।

একে একে গাড়ির জানালার গ্লাস গুলো ভেঙ্গে দেন যেন সহজে গাড়ির যাত্রীরা বেরিয়ে আসতে পারে। এরপর নিজেই চলে যান গাড়ির ভেতর। ডুব দিয়ে বের করে আনেন ৭ মাসের এক শিশুকে। গাড়ির ভেতর আটকে পড়া ৫ নারীসহ ১০/১২ জন যাত্রীকে উদ্ধার করেন।

স্থানীয় জনগণও তাঁকে উদ্ধার কাজে সহযোগিতা করে। দূর্ঘটনায় অনেকে আহত হলেও কেউ মারা যায়নি।

কনস্টেবল পারভেজ মিয়ার সাহসিকতায় কুমিল্লা রিজিয়ন হাইওয়ে পুলিশ সুপার পরিতোষ ঘোষ ১০ হাজার টাকা, স্থানীয় পেন্নাই সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ৫ হাজার টাকা পুরষ্কার ঘোষনা করেন।

এই ১৫ হাজার টাকা দিয়ে পারভেজ কি করবেন জানিনা। বাড়িতে পাঠালে বড় জোড় একমাসের বাজার খরচ হতে পারে। কিন্তু যে ঝুকিটা নিলেন তাতে জীবনটা হারালে ওই পরিবারটা হয়তো ১৫ বছরেও ঘুরে দাঁড়াতে পারত না।

পুলিশের চাকরিতে কনস্টেবল পোস্টটা অনেক ছোট্ট। কিন্তু ছোট্ট চাকরির ছোট্ট সুবিধায় আটকে থাকেননি তিনি। প্রমাণ করেছেন অনেক পুলিশ আসলেই জনগণের বন্ধু।

কৃতজ্ঞতা: S M Nahidur Rahman

Subscribe In Youtube :

30
এবার চ্যাম্পিয়নস ট্রফি খেলতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আগামী বিশ্বকাপে দলটির সরাসরি খেলা নিয়েও ঘোর সংশয়। অথচ এই দলটিই একসময় দোর্দণ্ড প্রতাপে শাসন করেছে ক্রিকেট বিশ্ব। ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতেছে দুবার করে, একবার চ্যাম্পিয়নস ট্রফি। নিজের দলটাকে এভাবে পতনের মুখে দেখতে কারই-বা ভালো লাগে! সাবেক ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান অধিনায়ক ড্যারেন স্যামি যেমন খুব চিন্তিত ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের এই দুর্দিন দেখে। আর এর জন্য তিনি মূলত দায়ী করেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ডকে। ক্রিকেট ওয়েস্ট ইন্ডিজের (সিডব্লুআই) হর্তাকর্তাদের অযৌক্তিক অনেক সিদ্ধান্তই আজ ক্যারিবীয় ক্রিকেটকে এই পর্যায়ে নামিয়ে এনেছে বলে মনে করেন স্যামি।

বেতন-ভাতা নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটারদের সঙ্গে বোর্ডের দ্বন্দ্ব বেশ পুরোনো। সেই দ্বন্দ্বের জের ধরে ২০১৪ সালে একবার ভারত থেকে সফরের মাঝপথে ফিরে গিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল। খেলোয়াড়দের সঙ্গে বোর্ডের এই দ্বন্দ্ব শেষ তো হচ্ছেই না, বরং বাড়ছে।

সিডব্লুআই নিয়ম করে রেখেছে, ঘরোয়া ক্রিকেটের কোনো নির্দিষ্ট সংস্করণে না খেললে কোনো খেলোয়াড় ওই সংস্করণের জাতীয় দলে সুযোগ পাবেন না। যার মানে, কেউ যদি ওয়েস্ট ইন্ডিজে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট না খেলেন, তাহলে তিনি টেস্ট দলের জন্য বিবেচিত হবেন না। কিংবা ঘরোয়া ওয়ানডে না খেললে সুযোগ মিলবে না ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওয়ানডে দলে।

ক্যারিবীয় টি-টোয়েন্টি লিগে খেলতে অবশ্য আপত্তি নেই ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেটারদের। তবে ঘরোয়া ওয়ানডে বা প্রথম শ্রেণির টুর্নামেন্টগুলোর চেয়ে তাঁরা ওই সময়টায় বিদেশি টি-টোয়েন্টি লিগগুলোতে খেলাটাকেই বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। আর্থিক কারণেই তাঁদের এমন সিদ্ধান্ত নিতে হয়। আর প্রথম সারির বেশির ভাগ খেলোয়াড় যেহেতু ঘরোয়া ওয়ানডে বা প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে খেলেন না, ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওয়ানডে বা টেস্ট দলেও তাঁদের জায়গা হচ্ছে না। ক্রিস গেইল, কাইরন পোলার্ড ও ডোয়াইন ব্রাভোর মতো ক্রিকেটাররা যে কারণে দীর্ঘদিন ধরে বোর্ডের কেন্দ্রীয় চুক্তির বাইরে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের টেস্ট দলেও তাই তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে অনুপস্থিত। কেউ কেউ নেই ওয়ানডেতেও। ড্যারেন স্যামি নিজেও সর্বশেষ টেস্ট খেলেছেন ২০১৩ সালে, ওয়ানডে ২০১৫ সালে। ২০১৬ সালের আগস্টে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয় টি-টোয়েন্টি দলের নেতৃত্ব থেকেও। অথচ দুবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতা একমাত্র অধিনায়ক স্যামি!

গেইল বা ব্রাভোর মতো খেলোয়াড়দের সব ধরনের দলে ফেরানোর কোনো উদ্যোগও নিচ্ছে না সিডব্লুআই। যে কারণে বোর্ডের ওপর ভীষণ খ্যাপা ড্যারেন স্যামি, ‘ক্রিকেট ওয়েস্ট ইন্ডিজের বর্তমান প্রশাসন যত দিন থাকবে, আমি এটা হওয়ার কোনো সম্ভাবনা দেখি না। আপনি তো একজন খেলোয়াড়কে বিদেশি টি-টোয়েন্টি লিগে খেলতে নিষেধ করতে পারেন না। ওটা দিয়েই তো আর্থিকভাবে একটু সচ্ছল হয়, পরিবার চালায়।’

এই মুহূর্তে ওয়ানডে র‍্যাঙ্কিংয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ নয় নম্বরে, টেস্টে আটে। এ রকম চলতে থাকলে সামনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের অবস্থা আরও খারাপ হবে বলেই মনে করেন স্যামি, ‘আমাদের ক্রিকেটের এখন যে অবকাঠামো, তাতে আমি কোনো আশা দেখি না। আমার খুব ভয়, একদিন না অবনমিত হয়ে আয়ারল্যান্ড ও স্কটল্যান্ডের মতো দলের বিপক্ষে আমাদের খেলতে হয়। এটা খুবই দুঃখজনক হবে।’

স্যামিদের এই দুঃখটা সিডব্লুআই উপলব্ধি করে কি? এএফপি।

Pages: 1 [2] 3 4 ... 12