Show Posts

This section allows you to view all posts made by this member. Note that you can only see posts made in areas you currently have access to.


Topics - Md. Abul Bashar

Pages: [1] 2 3 ... 11
1
গুগলের গোপনীয়তা নীতিমালায় হঠাৎ পরিবর্তন, কিন্তু কেন

ব্যবহারকারীদের ইন্টারনেট ব্যবহারের ইতিহাসসহ বিভিন্ন তথ্য নিয়মিত সংগ্রহ করে থাকে গুগল। এত দিন এসব তথ্য পর্যালোচনা করে ব্যবহারকারীদের বিজ্ঞাপন দেখানো হলেও এবার তথ্যগুলো কাজে লাগিয়ে নিজেদের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চ্যাটবট ‘বার্ড’কে প্রশিক্ষণ দেবে প্রতিষ্ঠানটি। এ জন্য নিজেদের গোপনীয়তা নীতিমালা হালনাগাদও করেছে তারা। নতুন এ নীতিমালার আওতায় ব্যবহারকারীদের অজান্তেই তাদের তথ্য বার্ড চ্যাটবটসহ গুগলের বিভিন্ন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির মানোন্নয়নে ব্যবহার করা হবে

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক চ্যাটবটের মানোন্নয়নে তথ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যত বেশি তথ্য যুক্ত করা যাবে, তত ভালো ফলাফল দেখাবে চ্যাটবট। আর তাই বার্ডসহ নিজেদের অন্যান্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির মানোন্নয়নে ব্যবহারকারীর তথ্য ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে গুগল। এর মাধ্যমে গুগলে নিবন্ধনের সময় দেওয়া ব্যবহারকারীদের তথ্যসহ তাঁদের ভাষা, ইন্টারনেট ব্যবহার ও বিজ্ঞাপন দেখার ইতিহাসের তথ্য পর্যালোচনা করতে পারবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি।


গুগলের হালনাগাদ গোপনীয়তা নীতিমালায় বলা হয়েছে, সবার জন্য উন্মুক্ত অনলাইন তথ্যগুলোর ওপর গুগল নির্ভরশীল। এসব তথ্য ব্যবহার করে গুগল ট্রান্সলেট, বার্ড ও ক্লাউডের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এ কার্যক্রমের আওতায় ব্যক্তিগত বা গোপনীয় তথ্যের বদলে শুধু উন্মুক্ত তথ্যগুলো ব্যবহার করা হবে। অর্থাৎ গুগলে নিবন্ধন করার সময় ব্যবহারকারীদের দেওয়া তথ্যসহ অনলাইনে উন্মুক্ত তথ্য ব্যবহার করা হবে।
উল্লেখ্য, অনলাইনে তথ্য খোঁজার পাশাপাশি গুগলের যেকোনো প্রযুক্তি ব্যবহার করলেই ব্যবহারকারীদের ব্রাউজারের সেটিংস, অপারেটিং সিস্টেম, মোবাইল নেটওয়ার্ক, ফোন নম্বর এবং অ্যাপের বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে থাকে গুগল। এমনকি ব্যবহারকারীরা গুগলের বিভিন্ন প্রযুক্তি কীভাবে ব্যবহার করেন, তা–ও সংগ্রহ করে।




Source: Prothom Alo.

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া


2
এআই আইন পাসে আরেক ধাপ এগিয়ে গেল ইইউ

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণে আরেক ধাপ এগিয়ে গেল ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। এই প্রযুক্তির ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ন্ত্রণে গত বুধবার একটি আইনের খসড়া প্রস্তাব পাস করেছে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট। খসড়া এই আইনের নাম দেওয়া হয়েছে এআই অ্যাক্ট।

ইইউতে আইনের পাসের প্রক্রিয়াটি বেশ দীর্ঘ। ধারণা করা হচ্ছে, চলতি বছরের শেষ দিকে পূর্ণাঙ্গ এই আইন পাস হতে পারে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) প্রযুক্তির সফটওয়্যার কীভাবে ব্যবহার করা হবে, কীভাবে এর ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হবে, এ নিয়ে ইইউতে দুই বছরের বেশি সময় ধরেই আলোচনা চলছে। তবে গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান ওপেন এআইয়ের চ্যাটবট চ্যাটজিপিটি প্রকাশ্যে আসার পর এ নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি হয় ইইউর আইনপ্রণেতাদের মধ্যে। এর ফলে নতুন এ আইনের পাসের উদ্যোগ নেওয়া হলো।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্র, চীনসহ বিভিন্ন দেশ এআই প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে একটি আইনি কাঠামো দাঁড় করানোর চেষ্টা করছে। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নই প্রথম, যারা কি না এ-সংক্রান্ত আইনের কোনো খসড়া প্রস্তাব পাস করল। এআই প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যেই এই আইন পাসের প্রক্রিয়াটি হাতে নেওয়া হয়েছে।

এদিকে এআই নিয়ন্ত্রণে সম্প্রতি হোয়াইট হাউস একটি নীতিমালা প্রকাশ করেছে। কোনো এআই টুলস প্রকাশের আগে কী কী করতে এবং এর মাধ্যমে যাতে নাগরিক অধিকার খর্ব না হয় সে জন্য এই নীতিমালার পথে হাঁটছে মার্কিন

সরকার। এ ছাড়া চীনও একটি খসড়া তৈরি করেছে। গত এপ্রিলে এটি প্রকাশ করা হয়। চীনের ওই নীতিমালা অনুসারে, কোন এআই টুলস কোন ধরনের তথ্য ব্যবহার করবে, সেটা নিয়ন্ত্রণ করবে চীন সরকার।

তবে আইন করে এআই সফটওয়্যার কিংবা টুলস কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে, সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। কারণ, প্রচলিত আইন বা আইনপ্রণেতাদের ভাবনার চেয়েও দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে এই প্রযুক্তি। যেমন ইইউর এর আগে এ-সংক্রান্ত যে আইনটি ছিল, সেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি ছবি, ভিডিও কিংবা লেখালেখি কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে, সে-সংক্রান্ত কোনো ধারণা ছিল না। যদিও চ্যাটজিপিটির মাধ্যমে এখন কৃত্রিমভাবে ছবি, ভিডি ও লেখা তৈরি করা যাচ্ছে।

ইইউর নতুন এই খসড়া আইন অনুসারে, এআই প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান বা সফটওয়্যারগুলোকে নতুন এক বিধির মধ্য দিয়ে যেতে হবে। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানকে আরও স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে।






Source: Prothom Alo.

3
তুরস্কে বিনা খরচে ইন্টার্নশিপ, আবেদনের সুযোগ স্নাতক শেষ বর্ষে পড়ুয়াদেরও

বিনা খরচে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ইন্টার্নশিপের সুযোগ দিচ্ছে তুরস্কের ‘ইউনিয়ন অব মিউনিসিপ্যালিটিস অব তুর্কি’। ‘ইন্টারন্যাশনাল লোকাল অথরিটিজ ইন্টার্নশিপ’–এর আওতায় নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের এ ইন্টার্নশিপের সুযোগ দেওয়া হবে।
এটি একটি আন্তর্জাতিক ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রাম। ২০১২ সালে শুরু হয়েছে এ ইন্টার্নশিপ। আইন, অর্থনীতি, নগর বা আঞ্চলিক পরিকল্পনা, সমাজবিজ্ঞান, পরিসংখ্যান, যোগাযোগ, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে স্নাতক শেষ বর্ষে অধ্যয়নরত অথবা সদ্য গ্র্যাজুয়েশন শেষ করা শিক্ষার্থীরা ইন্টার্নশিপের জন্য আবেদন করতে পারবেন।

ইন্টার্নশিপে আবেদনের জন্য ইংরেজিতে ভালো দক্ষতাসহ নানা যোগ্যতা থাকতে হবে। এ ইন্টার্নশিপ এক সপ্তাহের।
আবেদন শেষ কবে
আবেদন করা যাবে আগামী ১৬ জুন পর্যন্ত।

ইন্টার্নশিপ কবে
আগামী ২০ আগস্ট থেকে ২৭ আগস্ট তুরস্কে ইন্টার্নশিপ অনুষ্ঠিত হবে।
আবেদন প্রক্রিয়া
অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন আগ্রহী প্রার্থীরা। আবেদন করতে ক্লিক করুন এখানে 

‘ইউনিয়ন অব মিউনিসিপ্যালিটিস অব তুর্কি’ ইন্টার্নশিপের বিস্তারিত দেখুন এখানে

Link: https://www.prothomalo.com/education/scholarship/300yla2tat

4
তুরস্কে বিনা খরচে ইন্টার্নশিপ, আবেদনের সুযোগ স্নাতক শেষ বর্ষে পড়ুয়াদেরও

বিনা খরচে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ইন্টার্নশিপের সুযোগ দিচ্ছে তুরস্কের ‘ইউনিয়ন অব মিউনিসিপ্যালিটিস অব তুর্কি’। ‘ইন্টারন্যাশনাল লোকাল অথরিটিজ ইন্টার্নশিপ’–এর আওতায় নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের এ ইন্টার্নশিপের সুযোগ দেওয়া হবে।
এটি একটি আন্তর্জাতিক ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রাম। ২০১২ সালে শুরু হয়েছে এ ইন্টার্নশিপ। আইন, অর্থনীতি, নগর বা আঞ্চলিক পরিকল্পনা, সমাজবিজ্ঞান, পরিসংখ্যান, যোগাযোগ, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে স্নাতক শেষ বর্ষে অধ্যয়নরত অথবা সদ্য গ্র্যাজুয়েশন শেষ করা শিক্ষার্থীরা ইন্টার্নশিপের জন্য আবেদন করতে পারবেন।

ইন্টার্নশিপে আবেদনের জন্য ইংরেজিতে ভালো দক্ষতাসহ নানা যোগ্যতা থাকতে হবে। এ ইন্টার্নশিপ এক সপ্তাহের।
আবেদন শেষ কবে
আবেদন করা যাবে আগামী ১৬ জুন পর্যন্ত।

ইন্টার্নশিপ কবে
আগামী ২০ আগস্ট থেকে ২৭ আগস্ট তুরস্কে ইন্টার্নশিপ অনুষ্ঠিত হবে।
আবেদন প্রক্রিয়া
অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন আগ্রহী প্রার্থীরা। আবেদন করতে ক্লিক করুন এখানে 

‘ইউনিয়ন অব মিউনিসিপ্যালিটিস অব তুর্কি’ ইন্টার্নশিপের বিস্তারিত দেখুন এখানে

Link: https://www.prothomalo.com/education/scholarship/300yla2tat

5
স্কুলের শিক্ষকেরা ‘পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দ’ পড়ানোর সময় ‘রাষ্ট্রপতি’ শব্দটি উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করেন। তাঁরা বলেন, কিছু শব্দ একই সঙ্গে পুরুষ ও স্ত্রী বোঝায়; যেমন শিশু, সন্তান, রাষ্ট্রপতি ইত্যাদি। শিক্ষার্থীরাও সরল বিশ্বাসে ‘শিশু’, ‘সন্তান’ আর এ জাতীয় শব্দের মতো করে ‘রাষ্ট্রপতি’ শব্দটিকে পাঠ করে। কিন্তু শব্দটির মধ্যে পুরুষ ও স্ত্রীবাচকতার যে জটিল দ্বন্দ্ব গাঁথা হয়ে আছে, সেটি কোমলমতি শিক্ষার্থীরা হয়তো টের পায় না। কিন্তু যাদের আমরা ‘কোমলমতি’ বলে অনেক জটিল তর্ক থেকে দূরে রাখি, তারা কি কখনোই এই জটিলতা টের পায় না?

একটা অভিজ্ঞতার কথা বলি। বছর দশেক আগে ভাষা প্রতিযোগের উৎসবে গেছি যশোরে। এই অনুষ্ঠানের একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন করার সুযোগ পায়; শিক্ষকেরা সেসব প্রশ্নের উত্তর দেন। তো ‘প্রশ্নোত্তর’ পর্বে স্কুলপড়ুয়া এক ছাত্রী জানতে চাইল, ‘আচ্ছা, দেশকে যারা ভালোবাসে, তাদের বলে দেশপ্রেমিক। আমরা জানি, ছেলেদের বলে প্রেমিক আর মেয়েদের বলে প্রেমিকা।...তাহলে যে মেয়ে দেশকে ভালোবাসে, তাকে কেন দেশপ্রেমিকা বলা হবে না?’
মঞ্চে বসে থাকা শিক্ষকেরা তখন আঁতিপাঁতি করে উত্তর খুঁজছেন। এর মধ্যে বয়সে প্রবীণ ভাষাবিজ্ঞানের এক অধ্যাপক মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে ধীর গলায় বললেন, ‘দেশকে তুলনা করা হয় মায়ের সঙ্গে। তার মানে, দেশ হলো নারী। এখন এই দেশকে যে ভালোবাসবে, সে তো পুরুষই হবে।’ তারপর তিনি কথার উপসংহার টানলেন, ‘...তাই “দেশপ্রেমিক” শব্দটি ঠিকই আছে।’

মেয়েটি কী বুঝল জানি না, উত্তর শুনে বসে পড়ল। একই রকম প্রশ্ন তুলে তসলিমা নাসরিন তাঁর বইয়ের নাম দিয়েছিলেন ‘মেয়েবেলা’। সেই নাম দেখে ছেলেদের সঙ্গে সঙ্গে মেয়েদের অনেকেও ঠোঁট উল্টেছিল। আবার, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি মূল্যবান লেখার শিরোনাম ‘ছেলেভুলানো ছড়া’। ওটির নাম কেন ‘মেয়েভুলানো’ নয়, এই প্রশ্ন অবশ্য কেউ তোলেননি। তবে এখানেও একই সমস্যা। একসময় ‘ছেলেধরা’ শব্দটিও সমাজে বহুল প্রচলিত ছিল। আজকাল ঠিক ওই ধরনের মানুষ দেখা যায় না; থাকলে এ শব্দ নিয়েও প্রশ্ন উঠত। তবে আসল প্রশ্ন, ‘লৈঙ্গিক সংবেদনশীল’ এসব শব্দ কি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় না, এগুলো কতটা ‘পুরুষতান্ত্রিক’?
একটি ভাষায় সচেতন ও অসচেতন—দুই রকম প্রয়াসেই শব্দ তৈরি হতে থাকে। এসব শব্দ এক বা একাধিক সাধারণ ও বিশেষ অর্থ ধারণ করে। তবে সময়ের ফেরে অর্থের অনেক রকম বদলও ঘটে। এর মধ্যেও ভাষায় ব্যবহৃত বহু শব্দ সময় ও সমাজবাস্তবতার চিহ্ন ধরে রাখে। পরিবর্তিত সময় ও সমাজে অনেক শব্দ তার মূল গুণ বা সত্তা হারিয়ে ফেলে। যেমন, মধ্যযুগে বৈষ্ণব পদকর্তাদের বহুল ব্যবহৃত ‘অবলা’ শব্দটি হাল আমলে ন্যূনতম ব্যবহারের ক্ষমতাও হারিয়েছে। এভাবে আমরা ধরে নিতে পারি, বর্তমানের অনেক শব্দ অদূর ভবিষ্যতে ভিন্নতর দৃষ্টিকোণে পাঠ করা হবে। তবে আপাতত ‘রাষ্ট্রপতি’ আর শব্দের লিঙ্গগুণ নিয়ে কিছু কথা বলা যাক।

আধুনিক অন্য সব ভাষার মতো বাংলা শব্দেরও লিঙ্গপরিচয় নেই। শব্দের লিঙ্গপরিচয় না থাকুক, সমাজের মানুষের তো লিঙ্গপরিচয় আছে। তাই মানুষের নারী-পুরুষ ভেদে বাংলা শব্দেরও লিঙ্গান্তর ঘটে। যেমন, চাচার পত্নী চাচি, মামার পত্নী মামি। বিপরীতভাবে, খালার পতি খালু, ফুফুর পতি ফুফা। এখন রাষ্ট্রের যিনি প্রধান, তাঁকে কেন রাষ্ট্রপতি বলতে হবে? যদি রাষ্ট্রপতি বলতেই হয়, তবে মহিলা রাষ্ট্রপতিকে কেন রাষ্ট্রপত্নী বলা যাবে না? বলা যাবে না, কারণ একজন ভাষাবিশেষজ্ঞের সোজসাপটা উত্তর হতে পারে, শব্দটি একটি পরিভাষা। বেশ, রাষ্ট্রপতি তাহলে শুধুই ‘রাষ্ট্রপতি’—মহামান্য বা মাননীয় রাষ্ট্রপতি। নারী হলেও তাঁকে ‘মহামান্যা’ বা ‘মাননীয়া’ বলা সমীচীন হবে না। কিন্তু নিতান্ত পরিভাষা হিসেবে তৈরি করা রাষ্ট্রপতি শব্দটি একেবারে ‘নির্বিষ’ নয়। ‘রাষ্ট্রপতি’র মতো ‘দেশনায়ক’, ‘দলনায়ক’, ‘দলনেতা’, ‘সভাপতি’ ইত্যাদি শব্দ পুরুষের দম্ভ প্রকাশ করে চলেছে।
এখন আসা যাক, ‘রাষ্ট্রপতি’ এবং এ রকম কিছু তৈরি শব্দ কোন সময়ে এবং কীভাবে বাংলা ভাষায় ঢুকেছে!
এটি সচেতন প্রয়াসে তৈরি করা একটি শব্দ। ইংরেজি ‘প্রেসিডেন্ট’ শব্দের বাংলা পরিভাষা করা হয়েছে রাষ্ট্রপতি। এই ‘প্রেসিডেন্ট’ শব্দটির প্রয়োগ হয়ে আসছে চৌদ্দ শতক থেকে। ইউরোপে ছোট বা বড় কোনো রাজ্যের প্রধান বোঝাতে ‘প্রেসিডেন্ট’ শব্দটি ব্যবহার করা হতো। আজকাল এ ধরনের শব্দের আগে ‘অনারেবল’, ‘মহামান্য’, ‘মাননীয়’ ইত্যাকার শব্দ যোগ করা হয়। তবে প্রথম দিকে শব্দটি এত ‘উচ্চমর্যাদা’র ছিল না। কোনো সভা বা সমাবেশে যিনি আগে বসতেন, তাঁকেই বলা হতো প্রেসিডেন্ট। শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত অর্থই ছিল এমন—‘যিনি আগে বসেন’। রাষ্ট্রের প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা বোঝাতে শব্দটির প্রথম আনুষ্ঠানিক প্রয়োগ হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে, ১৭৮৭ সালে।

এরপর থেকে শব্দটির উচ্চতা অসীমভাবে বেড়ে যায় এবং দেশে দেশে ‘প্রেসিডেন্ট’ শব্দটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বাংলা ভাষায় প্রেসিডেন্ট শব্দের বাংলা হিসেবে ‘রাষ্ট্রপতি’ শব্দটি তৈরি হয়েছে উনিশ শতকের প্রথম দিকে। ১৮১৭ সালে বাংলা পাঠ্যবই ছাপানোর জন্য কলিকাতা স্কুল বুক সোসাইটি কিছু পরিভাষা তৈরি করে। এর আগে-পরে ব্যক্তিগতভাবে বাংলা পরিভাষা তৈরির কাজ করেন ফেলিক্স কেরি, পিটার ব্রিটন, জন ম্যাক, উইলিয়াম কেরি, অক্ষয়কুমার দত্ত, ভূদেব মুখোপাধ্যায়, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, রাজশেখর বসুসহ বেশ কয়েকজন ইংরেজ ও বাঙালি পণ্ডিত।
বলতে হয়, পরিভাষা তৈরির প্রথম যুগেই সমস্যার সূত্রপাত। সংস্কৃত ভাষাপ্রীতি বাংলা পরিভাষা নির্মাণের ক্ষেত্রে বড় সমস্যা তৈরি করে। উনিশ শতকজুড়ে মনে করা হতো, বাংলা ভাষা এসেছে সংস্কৃত থেকে। এই যুক্তিতে বাংলা শব্দের মান্যায়নের ক্ষেত্রে বরাবরই সংস্কৃত ভাষার আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। এমনকি উনিশ শতকে বাংলা পরিভাষা তৈরির সময়ও পণ্ডিতেরা সংস্কৃত শব্দের দ্বারস্থ হয়েছেন। রাজেন্দ্রলাল মিত্র, হরপ্রসাদ শাস্ত্রী কিংবা রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদীরা তাত্ত্বিকভাবে মনে করতেন, বাংলা ভাষাকে সংস্কৃত ভাষার ‘রাহুমুক্ত’ করতে হবে। কিন্তু বাংলা পরিভাষা তৈরির জন্য ১৮৯৪ সালে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের উদ্যোগে যে মূলনীতি করা হয়, সেখানে ‘ধ্রুপদি’ ভাষা সংস্কৃতর কাছে বাংলাকে একরকম সঁপে দেওয়া হয়। ওই সময়ই রাষ্ট্রপতি, পরিচালক, ব্যবস্থাপক, সম্পাদক, পরীক্ষক, প্রত্যবেক্ষক, পরিদর্শকের মতো অজস্র বাংলা পরিভাষা তৈরি হয়, যেগুলো মূল সংস্কৃতে নরবাচক শব্দের প্রতিনিধিত্ব করে।
আজকের দিনে শিক্ষকেরা ‘রাষ্ট্রপতি’ শব্দটিকে উভলিঙ্গ বলে বেশ চালিয়ে দিতে চান। কিন্তু সমাসনিষ্পন্ন এই শব্দের দ্বিতীয় অংশেই পুরুষবাচক ‘পতি’ শব্দটি গোঁফ পাকিয়ে তাকিয়ে থাকে। ‘লিঙ্গ’ প্রসঙ্গটি সামাজিক ক্ষেত্রে আরও বেশি জটিল। কারণ, লিঙ্গের ধারণা কেবল শরীরী নয়, মনোগতও। এমনকি এর ধরনও বিচিত্র। সমাজে একজন মানুষ কীভাবে নিজেকে প্রকাশ করতে চান বা সমাজ তাঁকে কীভাবে গ্রহণ করে, এর মধ্য দিয়েই সামাজিক লিঙ্গপরিচয় নির্ধারিত হয়।

নজরে রাখা দরকার, শব্দের লিঙ্গসংবেদনশীলতা দূর করতে এখন ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’কে বলা হচ্ছে, ‘প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ’, ‘ব্যাটসম্যান’কে বলা হচ্ছে ‘ব্যাটার’, ‘বিজনেসম্যান’কে বলা হচ্ছে ‘বিজনেস এক্সিকিউটিভ’, ‘চেয়ারম্যান’কে বলা হচ্ছে ‘চেয়ারপারসন’ বা ‘চেয়ার’। এ রকম অনেক শব্দই বদলে গেছে। এখন ‘রাষ্ট্রপতি’ শব্দটি নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে কি না, তা সময়ের সন্তানেরাই ভালো বলতে পারবেন।
আরেকটি কথা; পরিভাষা তৈরির সময় আমাদের একটি সহজ সূত্র মেনে নিলে সমস্যা কমে যায়। এ ক্ষেত্রে যেমন অনুবাদনীতি আছে, তেমনি আছে স্বীয়করণ নীতি। অনুবাদনীতিতে শব্দের আচরণ বা বৈশিষ্ট্য লক্ষ করে তার বাংলা করা হয়। যেমন, ‘রেডিও’ শব্দটি অনুবাদনীতিতে হয়েছে ‘বেতার’। আর স্বীয়করণনীতির ক্ষেত্রে বিদেশি শব্দ জনসাধারণের অনায়াস উচ্চারণে দেশি রূপ লাভ করে। এভাবে ইংরেজি ‘হসপিটাল’ হয়েছে ‘হাসপাতাল’, ‘বোম’ হয়েছে ‘বোমা’, ‘লাইফবয়’ হয়েছে ‘বয়া’, ‘জেনারেল’ হয়েছে ‘জাঁদরেল’, ‘আর্মচেয়ার’ হয়েছে ‘আরামকেদারা’ ইত্যাদি। ভবিষ্যতে পরিভাষা গ্রহণের ক্ষেত্রে বহুল প্রচলিত বিদেশি শব্দকে পরিবর্তিত দেশি উচ্চারণে গ্রহণ করা যেতে পারে। আর নতুন করে অনুবাদের মাধ্যমে পরিভাষা তৈরির ক্ষেত্রে সচেতনভাবে শব্দের লিঙ্গপরিচয় অগ্রাহ্য করতে হবে।



Source: Prothom Alo

6
বেজোস, ইলনরাও বলছেন মন্দা আসছে

বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে এখন মন্দার পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। মূলত উচ্চ মূল্যস্ফীতির রাশ টানতে এসব দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো যেভাবে নীতি সুদহার বৃদ্ধি করছে, তার জেরে এসব দেশের অর্থনীতি গতি হারাচ্ছে। ইতিমধ্যে বছরের মাঝামাঝি একাধিক প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মতো দেশের জিডিপি সংকুচিত হয়েছে। অর্থনীতিবিদ থেকে শুরু করে ব্যবসায়ীরাও আশঙ্কা করছেন, উন্নত দেশগুলো দীর্ঘমেয়াদি মন্দার কবলে পড়তে যাচ্ছে।

শীর্ষ ধনী জেফ বেজোস, ইলন মাস্ক—সবাই যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন মন্দা নিয়ে সতর্কবাণী দিয়েছেন। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পত্রিকা দ্য ইনসাইডার মন্দা নিয়ে দেশটির শীর্ষ ধনীরা কী ভাবছেন, তা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে এই শীর্ষ ধনীরা নীতি সুদহার বৃদ্ধি থেকে শুরু করে চীনের বিভিন্ন শহরে লকডাউনের প্রভাব নিয়ে আলোচনা করেছেন।

জেফ বেজোস, নির্বাহী চেয়ারম্যান, অ্যামাজন
জেফ বেজোস বলেছেন, ‘অর্থনীতি এ মুহূর্তে ভালো অবস্থায় নেই। অর্থনীতির গতি কমে যাচ্ছে, অনেক খাতেই কর্মী ছাঁটাই হচ্ছে। এখনো আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে মন্দার কবলে পড়িনি, কিন্তু আশঙ্কা হচ্ছে, শিগগিরই আমরা মন্দার কবলে পড়ব। সে জন্য পরামর্শ, ঝুঁকি যতটা সম্ভব হ্রাস করা যায়, তার চেষ্টা করতে হবে। সেই সঙ্গে ভালো সময়ের অপেক্ষায় থাকার পাশাপাশি খারাপ সময়ের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।’ তাঁর মতে, অর্থনীতির যে সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে, তাতে সংকটের জন্য প্রস্তুত থাকা ভালো।

ইলন মাস্ক, সিইও, টেসলা, টুইটার
সম্প্রতি টুইটারের মালিকানা হাতে পাওয়া এই খ্যাপাটে ধনী মনে করেন, আগামী এক বা দুই বছর বিশ্ব অর্থনীতিতে গুরুতর মন্দা দেখা দেবে। খোলামেলাভাবে তিনি বলেছেন, ভবিষ্যৎ অর্থনীতির চিত্র ভালো ঠেকছে না। বিশেষ করে আমাদের মতো যেসব কোম্পানি বিজ্ঞাপনের ওপর বেশি নির্ভরশীল, তাদের অবস্থা ভালো যাবে না।

কেন গ্রিফিন, সিইও, সিটাডেল
তিনি মনে করেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির রাশ টানতে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ যেভাবে নীতি সুদহার বৃদ্ধি করছে, তাতে বেকারত্বের হার বৃদ্ধি পাবে। ফলে ২০২৩ সালের মধ্যভাগের পরপর যুক্তরাষ্ট্রে মন্দা হবে না, এটা বিশ্বাস করা কঠিন।




Source: Prothom Alo

7
স্মার্টফোনে ওয়েবসাইট ব্লক করার পদ্ধতি

ইন্টারনেটে এমনও ওয়েবসাইট রয়েছে, যা শিশুদের জন্য তো বটেই; অনেক ক্ষেত্রে বড়দের জন্যও ক্ষতিকর। স্মার্টফোনে অশ্লীল ও শিশুদের জন্য অনুপযোগী ওয়েবসাইট চাইলে আপনি ব্লক করে রাখতে পারেন। অ্যান্ড্রয়েড ও আইওএস উভয় প্ল্যাটফরমের ফোনেই ওয়েবসাইট ব্লকের সুবিধা রয়েছে।

অ্যান্ড্রয়েড ফোনে : অ্যান্ড্রয়েড চালিত স্মার্টফোনে সরাসরি ওয়েবসাইট ব্লক করা যায় না। তবে চাইলে অ্যাপের মাধ্যমে ওয়েবসাইট ব্লক করা যায়। এ জন্য স্মার্টফোনে গুগল প্লেস্টোর থেকে Block Site ইনস্টল করতে পারেন। ইনস্টলের পর অ্যাপটি চালু করে প্লাস (+) আইকনে ক্লিক করতে হবে। এবার ব্লক করতে ইচ্ছুক এমন ওয়েবসাইট সার্চ করুন। কাক্সিক্ষত সাইট নির্বাচন করে Done চাপলেই সেটি ব্লক হয়ে যাবে।

আইফোন ও আইপ্যাডে : ওয়েবসাইট ব্লক করার জন্য আইফোন/আইপ্যাডের সেটিংস অপশনে গিয়ে Screen Time থেকে Content & Privacy Restrictions অপশন ট্যাপ করতে হবে। এবার Content Restrictions অপশন ট্যাপ করে Web Content অপশন প্রেস করে ওয়েব কনটেন্টের স্থানে Limit Adult Websites নির্বাচন করতে হবে। এবার Never Allow বিভাগের নিচে থাকা Add Website  অপশন ট্যাপ করে যেসব ওয়েবসাইট ব্লক করতে ইচ্ছুক, সেগুলোর ঠিকানা যুক্ত করে নিচে থাকা Done অপশন চাপতে হবে।



Source: Bangladesh Protidin.

8
হজে দোয়া কবুলের পুণ্যময় স্থানসমূহ

‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান নিমাতা লাকা ওয়াল মুলক্, লা শারিকা লাক।’ অর্থাৎ হাজির, আমি আপনার দরবারে, হে আল্লাহ! আমি হাজির, আমি হাজির, আপনার কোনো শরিক নেই, আমি হাজির; নিশ্চয় সব প্রশংসা আপনার জন্য, সব নিয়ামত আপনার প্রদত্ত, আপনার রাজত্বে আপনার কোনো শরিক নেই।

আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা বলেন, ‘তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব (সুরা-৪০ মুমিন, আয়াত: ৬০)।’ দোয়া ইবাদতের সার। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দোয়া ইবাদতের মগজ।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘দোয়াই ইবাদত (বুখারি ও মুসলিম)।’ নবী করিম (সা.) আরও বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে দোয়া করে না, আল্লাহ তাআলা তার প্রতি অসন্তুষ্ট হন (তিরমিজি, খণ্ড: ৫, পৃষ্ঠা: ৪৫৬, হাদিস: ৩৩৭৩)।’

আল–কোরআনের সূচনাতেই দোয়া শিখিয়ে দেওয়া হয়েছে: ইয়্যাকা নাবুদু ওয়া ইয়্যাকা নাসতাইন (আমরা কেবল তোমারই ইবাদত করি এবং তোমারই সাহায্য চাই। সুরা-১ ফাতিহা, আয়াত: ৪।)’ হজের সফর পুরোটাই দোয়া কবুলের সময়। হজ বা ওমরাহর জন্য ইহরাম নিয়ত করা থেকে শুরু করে হজ ও ওমরাহ সম্পন্ন করে বাড়িতে ফিরে আসার পরও ৪০ দিন ধরে হাজির দোয়া কবুল হতে থাকে। হজের সফরে এমন কিছু সময় ও স্থান রয়েছে, যে সময় ও স্থানে দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। যে স্থানগুলোতে আগেকার নবী-রাসুলদের দোয়া কবুল হয়েছিল বলে বর্ণিত আছে, সেখানে নবী করিম (সা.), সাহাবায়ে কেরাম ও অলি-আউলিয়াদের দোয়া কবুল হয়েছিল। সেসব জায়গায় দোয়া করা বাঞ্ছনীয়। মক্কা শরিফের সব স্থানে দোয়া কবুল হয়।

কাবা ও তার সংলগ্ন দোয়া কবুলের স্থানগুলো হলো হারাম শরিফ, মসজিদুল হারাম, কাবা শরিফ, হাতিমে কাবা, মিজাবে রহমত, হাজরে আসওয়াদ, রোকনে হাজরে আসওয়াদ, রোকনে ইরাকি, রোকনে শামি, রোকনে ইয়ামনি ও হাজরে আসওয়াদের মধ্যবর্তী স্থান, মুলতাজিম, কাবার দরজা, মুস্তাজার, মাকামে ইব্রাহিম, জমজম কূপ ও মাতাফ।
তাওয়াফের প্রতি চক্করের শেষে পড়তে হয়: রাব্বানা আতিনা ফিদ দুনিয়া হাসানা, ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানা; ওয়া ক্বি না আজাবান নার। অর্থাৎ হে আল্লাহ, ‘আমাদের দুনিয়াতে কল্যাণ দিন, আখিরাতেও কল্যাণ দিন ও দোজখের আগুন থেকে আমাদের রক্ষা করুন। সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ২০১।’

আরাফাত, জাবালে রহমত ও মসজিদে নামিরায় দোয়া কবুল হয়। আরাফাত ময়দানে হজরত আদম (আ.)-এর সঙ্গে হজরত হাওয়া (আ.)-এর পুনর্মিলন হয় এবং তাঁরা নিজেদের ভুলের জন্য সেখানে আল্লাহ তাআলার দরবারে মোনাজাত করেন এবং তা কবুল হয়। সে জন্য হাজিরা এ স্থানে সমবেত হয়ে দোয়া করেন: রাব্বানা জালামনা আনফুছানা, ওয়া ইন লাম তাগফির লানা ওয়া তারহামনা; লানাকুনান্না মিনাল খসিরিন। অর্থাৎ, ‘হে আমাদের রব! আমরা আমাদের নফসের প্রতি জুলুম করেছি। আপনি যদি আমাদের ক্ষমা না করেন ও দয়া না করেন, অবশ্যই আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হব সুরা-৭ আরাফ, আয়াত: ২৩।’

মুজদালিফা, মিনা ও মসজিদে খায়েফ দোয়া কবুলের ঐতিহাসিক স্থান। মসজিদে খায়েফ মিনা প্রান্তরে অবস্থিত। এখানে আদিকাল থেকে আখেরি নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) পর্যন্ত ৭০ জন পয়গাম্বর (আ.) আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগি করেছেন। জামরাত বা পাথর মারার স্থান মিনার পাশেই অবস্থিত। এগুলো ছোট শয়তান (জোমরায়ে উলা), মেজ শয়তান (জোমরায়ে উস্তা), বড় শয়তান (জোমরায়ে আকাবা) নামে পরিচিত। হজরত ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানির পথে এ স্থানে শয়তান বাধা সৃষ্টি করলে তিনি পাথর ছুড়ে তাকে বিতাড়িত করেন। এখানে দোয়া কবুল হয়।
মুমিনের সব দোয়া সব সময় কবুল হয়। হজের পর হাজি যত দিন গুনাহমুক্ত থাকবেন, তত দিন তাঁর দোয়া কবুল হতে থাকবে, ইনশা আল্লাহ।



source: Prothom Alo
Written by:  মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

9
প্রিয় নবী (সা.) কখনো প্রতিশোধ নিতেন না


প্রতিশোধপরায়ণতা মানুষের দুনিয়া ও আখিরাত ধ্বংস করে দেয়। মানুষের আত্মার প্রশান্তি কেড়ে নেয়। এর প্রভাবে মানুষ বহু ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়। সমাজে ঘটে যাওয়া বেশির বিশৃঙ্খলা ও হত্যাকাণ্ডগুলো প্রতিশোধপরায়ণতা থেকেই হয়।

অনেক সময় প্রতিশোধ নিয়ে গিয়ে মানুষ তার প্রতিপক্ষের নিষ্পাপ আত্মীয়-স্বজনের ওপর আক্রমণ করে বসে।
মুমিন প্রতিশোধপরায়ণ হতে পারে না। পবিত্র কোরআনে মুমিনের গুণ উল্লেখ করতে গিয়ে মহান আল্লাহ বলেন, ‘যারা বড় বড় পাপ এবং অশ্লীল কার্যকলাপ থেকে বেঁচে চলে এবং রাগান্বিত হয়েও ক্ষমা করে। ’ (সুরা : শুরা, আয়াত : ৩৭)

অর্থাৎ কারো দ্বারা আক্রান্ত হয়ে রাগান্বিত হলেও প্রতিশোধ নেয় না। প্রতিশোধপরায়ণতা নবীজির আদর্শ নয়, তাই যারা নিজেদের প্রিয় নবীজির উম্মত মনে করে, তাদের উচিত, এই ঘৃণ্য অভ্যাসটি ত্যাগ করা। নবীজি (সা.)-এর আদর্শে জীবন গড়া। প্রিয় নবী (সা.) ব্যক্তিগত বিষয়ে কখনো প্রতিশোধ নিতেন না।

আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.)-কে যখনই দুটি জিনিসের একটি গ্রহণের স্বাধীনতা দেওয়া হতো, তখন তিনি সহজটিই গ্রহণ করতেন, যদি তা গুনাহ না হতো। গুনাহ হতে তিনি অনেক দূরে অবস্থান করতেন। নবী (সা.) নিজের ব্যাপারে কখনো প্রতিশোধ গ্রহণ করেননি। তবে আল্লাহর সীমারেখা লঙ্ঘন করা হলে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য প্রতিশোধ নিতেন। (বুখারি, হাদিস : ৩৫৬০)
বর্তমানে মানুষের মধ্যে প্রতিশোধপরায়ণতা এত বেশি যে নুন থেকে চুন খসলেই নিজের মুসলিম ভাইয়ের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে কুণ্ঠাবোধ হয় না, অথচ নবীজি এই প্রবণতা থেকে দূরে থাকার জন্য কঠোরভাবে সতর্ক করে গেছেন।

হাসান বসরি (রহ.) বলেন, ফিতনার রাতে (অর্থাৎ জঙ্গে জামাল কিংবা জঙ্গে সিফফিনে) আমি হাতিয়ার নিয়ে বের হলাম। হঠাৎ আবু বকরাহ (রা.) আমার সামনে পড়লেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কোথায় যাচ্ছো? আমি বললাম, রাসুল (সা.)-এর চাচাতো ভাইয়ের সাহায্যার্থে যাচ্ছি। তখন তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যদি দুজন মুসলিম তলোয়ার নিয়ে পরস্পর সংঘর্ষের জন্য মুখোমুখি হয়, তাহলে উভয়েই জাহান্নামীদের মধ্যে গণ্য হবে। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, হত্যাকারী তো জাহান্নামি। কিন্তু নিহত ব্যক্তির কী অপরাধ? তিনি বলেন, সেও তার বিপক্ষকে হত্যা করার সংকল্প করেছিল। ’ (বুখারি, হাদিস : ৭০৮৩)

মহান আল্লাহ সবাইকে ক্ষমাশীলতা অর্জনের তাওফিক দান করুন।



Source: BDP

10
মা–বাবার প্রতি অনুগ্রহের দৃষ্টিতেও মেলে কবুল হজের সওয়াব

মা-বাবার খেদমত অন্যতম ইবাদত। মিরাজ রজনীতে নামাজ ও রোজা ফরজ হয় এবং আল্লাহর তরফ থেকে ১৪টি সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়। এর মধ্যে প্রথম হলো আল্লাহর সঙ্গে শরিক না করা এবং দ্বিতীয় হলো মা-বাবার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা (সুরা-১৭ ইসরা, আয়াত: ২৩)। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো, তাঁর সঙ্গে শরিক করো না এবং মা-বাবার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো (সুরা-৪ নিসা, আয়াত: ৩৬)।’

সারা দুনিয়ায় মাত্র তিনটি জিনিস আছে, যা দেখলে সওয়াব হয়। কাবা শরিফ, কোরআন শরিফ ও মা-বাবার চেহারা। রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, ‘যখন কোনো সন্তান নিজের মা-বাবার প্রতি অনুগ্রহের নজরে দৃষ্টিপাত করে, আল্লাহ তায়ালা তার প্রতিটি দৃষ্টির বিনিময়ে একটি করে কবুল হজের সওয়াব দান করেন (বায়হাকি)।’

‘আর আমি নির্দেশ দিয়েছি মানুষকে তার মা-বাবার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করার (সুরা-৪৬ আহকাফ, আয়াত: ১৫)।’ ‘আমি মানুষকে নির্দেশ দিয়েছি, তুমি আমার এবং তোমার মা-বাবার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। অবশেষে আমার কাছেই ফিরে আসতে হবে (সুরা-৩১ লুকমান, আয়াত: ১৪)।’

রমজানে ইবাদত–বন্দেগির মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর কাছ থেকে ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়ে জাহান্নাম থেকে নাজাত বা মুক্তি লাভ করে। মা-বাবার খেদমতের মাধ্যমে মানুষ জান্নাত লাভ করে। রমজান যেমন নাজাতের মাধ্যম, মা-বাবাও তেমনি জান্নাতের বাহন। যে মা-বাবার খেদমত থেকে বঞ্চিত হলো, সে আল্লাহ তাআলার রহমত থেকে বঞ্চিত হলো। আল্লাহ তাআলা কোরআন মাজিদে বলেন, ‘তোমার রব এ ফয়সালা দিয়েছেন, আল্লাহ ছাড়া কারও ইবাদত করবে না এবং মা-বাবার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে। তাদের কোনো একজন বা উভয়জন যদি বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে (বিরক্তিতে) তাদের “উফ” বা “উহ” শব্দটি বলবে না এবং তাদের ধমক দেবে না; বরং তাদের সঙ্গে স্নেহসিক্ত কথা বলো। তাদের জন্য দয়ার্দ্রতা ও বিনয়ে হাত বাড়িয়ে দাও, আর বলো, “হে আমার প্রতিপালক! আপনি তাঁদের প্রতি দয়া করুন, যেভাবে শৈশবে তাঁরা আমাকে প্রতিপালন করেছেন (সুরা-১৭ বনি ইসরাইল, আয়াত: ২৪)।’”

মা-বাবার খেদমত না করা সন্তানদের প্রতি রাসুলুল্লাহ (সা.) অভিসম্পাত করেছেন। হাদিস শরিফে এসেছে: একদা জুমার দিনে রাসুলুল্লাহ (সা.) মিম্বারের প্রথম ধাপে পা রেখে বললেন, ‘আমিন!’ অতঃপর দ্বিতীয় ধাপে পা রাখলেন, বললেন, ‘আমিন!’ তারপর তৃতীয় ধাপে পা রাখলেন এবং বললেন, ‘আমিন!’ এরপর খুতবা দিলেন ও নামাজ আদায় করলেন। নামাজ শেষে সাহাবায়ে কিরাম প্রশ্ন করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! আজ যা দেখলাম, তা ইতিপূর্বে কখনো দেখিনি; এটা কি কোনো নতুন নিয়ম নাকি?’ নবী কারিম (সা.) বললেন, ‘না, এটা নতুন কোনো নিয়ম নয়; বরং আমি মিম্বারে ওঠার সময় হজরত জিবরাইল (আ.) এলেন। আমি যখন মিম্বারের প্রথম ধাপে পা রাখি, তখন তিনি বললেন, “আল্লাহ তাআলা বলেছেন, যারা মা-বাবা উভয়কে বা একজনকে বার্ধক্য অবস্থায় পেয়েও তাদের খেদমতের মাধ্যমে জান্নাত অর্জন করতে পারল না, তারা ধ্বংস হোক।” তখন আমি (রাসুলুল্লাহ সা.) সম্মতি জানিয়ে বললাম, আমিন! (তা-ই হোক)। যখন দ্বিতীয় ধাপে পা রাখি, তখন তিনি বললেন, “আল্লাহ তাআলা বলেছেন, যারা রমজান পেল, কিন্তু ইবাদতের মাধ্যমে তাদের গুনাহ মাফ করাতে পারল না, তারা ধ্বংস হোক।” তখন আমি বললাম, আমিন! আমি যখন মিম্বারের তৃতীয় ধাপে পা রাখি, তখন তিনি বললেন, “আল্লাহ তাআলা বলেছেন, যারা আপনার পবিত্র নাম মোবারক (মুহাম্মদ সা.) শুনল, কিন্তু দরুদ শরিফ পাঠ করল না, তারা ধ্বংস হোক।” তখন আমি সম্মতি জানিয়ে বললাম, আমিন!’ (মুসলিম শরিফ)।’

সারা দুনিয়ায় মাত্র তিনটি জিনিস আছে, যা দেখলে সওয়াব হয়। কাবা শরিফ, কোরআন শরিফ ও মা-বাবার চেহারা। রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, ‘যখন কোনো সন্তান নিজের মা-বাবার প্রতি অনুগ্রহের নজরে দৃষ্টিপাত করে, আল্লাহ তায়ালা তার প্রতিটি দৃষ্টির বিনিময়ে একটি করে কবুল হজের সওয়াব দান করেন (বায়হাকি)।’

সাহাবিরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা.)! মা-বাবা ইন্তেকালের পরও কি তাঁদের সঙ্গে উত্তম ব্যবহারের কোনো কিছু দায়িত্ব অবশিষ্ট আছে?’ তখন নবী কারিম (সা.) বললেন, ‘হ্যাঁ, আছে। তা হলো তাঁদের জন্য দোয়া করা, তঁাদের গুনাহের জন্য তওবা ইস্তিগফার করা, তঁাদের শরিয়তসম্মত অসিয়তগুলো আদায় করা, তাঁদের আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা, তঁাদের বন্ধুবান্ধবের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা। এগুলো মা-বাবার মৃত্যুর পরও তাঁদের সঙ্গে উত্তম আচরণের শামিল (আবু দাউদ)।’ অন্য হাদিসে আছে, ‘বাবার সন্তুষ্টিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি, বাবার অসন্তুষ্টিতে আল্লাহর অসন্তুষ্টি (তিরমিজি)।’



Source: Prothom Alo

● মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

11
দাঁড়িয়ে পানি পানে যেসব ক্ষতি হয়

দেহের কোষ, কলা বা টিস্যু, বিভিন্ন অঙ্গ তথা মস্তিষ্ক, কিডনী, পাকস্থলী, ত্বক, চুল ইত্যাদির যথাযথ কার্যকারীতার জন্য পানি অত্যাবশ্যকীয়। শরীরের সকল প্রকার কার্যাবলী সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করা প্রয়োজন। কিন্তু অনেক সময় ভুল নিয়মে পানি পান করে নিজেকে ঝুঁকির মুখে ফেলে দেই আমরা। দাঁড়িয়ে পানি পান করলে দেখা দিতে পারে নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা।

চলুন জেনে নেই দাঁড়িয়ে পানি পানের ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে-

১. দাঁড়িয়ে পানি পান করলে তা সরাসরি পাকস্থলীতে গিয়ে আঘাত করে। স্টমাক থেকে নিঃসৃত অ্যাসিডের কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেয়। বদহজমের আশঙ্কা বাড়ে। তলপেটে যন্ত্রণাসহ একাধিক সমস্যা তৈরি হয়।
২. দাঁড়িয়ে পানি পান করা হলে তা দ্রুত কোলন বা মলাশয়ে চলে যায়। ফলে পানির প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপকরণ শরীরে শোষিত হয় না।

৩. গ্যাস্ট্রো ইসোফেগাল রিফ্লাক্স ডিজিজ বা G.E.R.D দাঁড়িয়ে পানি পান করলে তা সরাসরি ইসোফেগাসে গিয়ে ধাক্কা মারে। এরফলে পাকস্থলীর ভেতরের সরু নালিটি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হয়। যার ফলে গ্যাস্ট্রো ইসোফেগাল রিফ্লাক্স ডিজিজ বা G.E.R.D এর মতো রোগ শরীরে বাসা বাঁধে।

৪. পানি পান করার পরেই ছাঁকনিগুলো শরীর পরিশ্রুত করার কাজ শুরু করে দেয়। দাঁড়িয়ে পানি পান করলে শরীরের অন্দরে থাকা ছাঁকনিগুলো সংকুচিত হয়ে যায়। পরিশ্রুত করার কাজ বাধা পায়। শরীরে টক্সিনের মাত্রা বাড়তে থাকে।

৫. দাঁড়িয়ে পানি পান করলে নার্ভ উত্তেজিত হয়ে যায়, উদ্বেগ বাড়তে থাকে।

৬. কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয় দাঁড়িয়ে পানি পান করলে। এতে কিডনির কর্মক্ষমতা কমে। কিডনি ড্যামেজের আশঙ্কা থাকে।



Source: BDP

12
রোজার শুদ্ধতায় সদকাতুল ফিতর

সদকাতুল ফিতর বা ফিতরা রমজানের গুরুত্বপূর্ণ একটি আর্থিক ইবাদত। এটি জাকাতেরই একটি প্রকার। পবিত্র কোরআন মাজিদে আল্লাহ তাআলা এদিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘নিশ্চয়ই সাফল্য লাভ করবে সে, যে শুদ্ধ হয়। ’ (সুরা আলা, আয়াত : ১৪)

ইসলামী বিধানমতে, সদকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব।

সাহাবি ইবনে ওমর (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) সদকাতুল ফিতর অপরিহার্য করেছেন। এর পরিমাণ হলো, এক সা জব বা এক সা খেজুর। ছোট-বড়, স্বাধীন-পরাধীন সবার ওপরই এটি ওয়াজিব। (বুখারি, হাদিস : ১৫১২)
সদকাতুল ফিতরের দুটি তাৎপর্য বর্ণনা করা হয়েছে। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) সদকাতুল ফিতরকে অপরিহার্য করেছেন। অর্থহীন, অশালীন কথা ও কাজে রোজার যে ক্ষতি তা পূরণের জন্য এবং নিঃস্ব লোকের আহার জোগানোর জন্য। (আবু দাউদ, হাদিস : ১৬০৯)

যাদের ওপর ওয়াজিব

ঈদুল ফিতরের দিন সুবহে সাদিকের সময় কারো কাছে জাকাতের নিসাবের সমপরিমাণ অর্থাৎ সাড়ে সাত ভরি সোনা বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা অথবা তার সমমূল্যের নগদ অর্থ কিংবা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের অতিরিক্ত সম্পদ যদি বিদ্যমান থাকে তাহলে তার ওপর সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব হবে। যার ওপর সদকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব, তিনি নিজের পক্ষ থেকে যেমন আদায় করবেন, তেমনি নিজের অধীনদের পক্ষ থেকেও আদায় করবেন। তবে এতে জাকাতের মতো বর্ষ অতিক্রম হওয়া শর্ত নয়। (ফাতহুল কাদির : ২/২৮১)

সদকাতুল ফিতরের পরিমাণ
সদকাতুল ফিতরের পরিমাণ সম্পর্কে হাদিস শরিফে দুটি মাপকাঠি নির্ধারণ করা হয়েছে। ১. ‘এক সা’ ২.‘নিসফে সা’। খেজুর, পনির, জব ও কিশমিশ দ্বারা আদায়ের ক্ষেত্রে এক ‘সা’=৩২৭০.৬০ গ্রাম (প্রায়), অর্থাৎ তিন কেজি ২৭০ গ্রামের কিছু বেশি। এ ছাড়া গম দ্বারা আদায় করতে চাইলে ‘নিসফে সা’=১৬৩৫.৩১৫ গ্রাম, অর্থাৎ এক কেজি ৬৩৫ গ্রামের কিছু বেশি প্রযোজ্য হবে। (আওজানে শরইয়্যাহ, পৃষ্ঠা ১৮)

উল্লেখ্য, আমাদের দেশের ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গবেষণা মতে, ‘এক সা’-এর পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়, তিন কেজি ৩০০ গ্রাম। আর ‘আধা সা’-এর পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়, এক কেজি ৬৫০ গ্রাম।
আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) একজন ঘোষক প্রেরণ করলেন সে যেন মক্কার পথে পথে এ ঘোষণা করে যে জেনে রেখো, প্রত্যেক মুসলিম নর-নারী, গোলাম-স্বাধীন, ছোট-বড় প্রত্যেকের ওপর সদকাতুল ফিতর অপরিহার্য। দুই মুদ (আধা সা) গম কিংবা এক সা অন্য খাদ্যবস্তু। (তিরমিজি, হাদিস : ৬৭৪)

কখন আদায় করা উত্তম

ঈদগাহে যাওয়ার আগেই সদকাতুল ফিতর আদায় করা সর্বোত্তম। কারণ এর মাধ্যমে ধনী-গরিবের মাঝে আনন্দের ভাগাভাগি হয়। তা ছাড়া এটি গুরুত্বপূর্ণ একটি সুন্নতও। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, সুন্নত হলো ঈদের নামাজে যাওয়ার আগে সদকাতুল ফিতর আদায় করা। (আল-মুজামুল কাবির, হাদিস : ১১২৯৬)

ইবনে ওমর (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) আমাদের ঈদগাহে যাওয়ার আগে সদকাতুল ফিতর আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। (বুখারি, হাদিস : ১৫০৯)
তবে কারো যদি কোনো কারণবশত ঈদের নামাজে যাওয়ার আগে সদকাতুল ফিতর আদায় করা সম্ভব না হয়, তাহলে পরে আদায় করারও সুযোগ রয়েছে।

হাদিসে উল্লিখিত পাঁচটি দ্রব্যের যেকোনো একটি দ্রব্য বা এর মূল্য আদায়ের মাধ্যমে সদকাতুল ফিতর আদায়ের সুযোগ দিয়েছে ইসলামী শরিয়ত। এর কারণ হচ্ছে মুসলিমরা যেন নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী যেকোনো একটির মূল্য নির্ধারণের মাধ্যমে তা আদায় করতে পারে। কিন্তু আমাদের দেশে সামর্থ্যবানরাও ব্যাপকভাবে সর্বনিম্ন দ্রব্যের মূল্য ধরে তা আদায় করে থাকে, যা সত্যিই অপছন্দনীয়। কারণ হাদিস শরিফে এসেছে একবার রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে সর্বোত্তম দান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি ইরশাদ করেন, ‘দাতার নিকট যা সর্বোত্কৃষ্ট এবং যার মূল্যমান সবচেয়ে বেশি। ’ (বুখারি, হাদিস : ২৫১৮)

মহান আল্লাহ আমাদের সাধ্যানুযায়ী যথাযথভাবে সদকাতুল ফিতর আদায়ের তাওফিক দান করুন।



Source: BDP

13
শবেকদরের তাৎপর্য ও করণীয়

ফারসি ‘শব’ মানে রাত আর আরবি ‘কদর’ মানে মাহাত্ম্য ও সম্মান। তাই শবেকদর হলো ‘মহিমান্বিত রজনী’। কদরের আরেক অর্থ তকদির বা ভাগ্য। এ রাতে পরবর্তী এক বছরের অবধারিত ও বিধিলিপি ব্যবস্থাপক ও প্রয়োগকারী ফেরেশতাদের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করা হয়। সুরা আদ দুখানে আল্লাহ বলেন, ‘সে রাতে প্রত্যেক চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত স্থিরীকৃত হয়’। আয়াত ৪। অর্থাৎ এতে বোঝা গেল এখানে বরকতের রাত বলতে গেলে শবেকদরকেই বোঝানো হয়েছে। এ রাতকে ‘মুবারক’ বলার কারণ এ রাতে আল্লাহর পক্ষ থেকে অসংখ্য কল্যাণ ও বরকত নাজিল হয়।
রসুল (সা.) বলেছেন, ‘দুনিয়ার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আল্লাহ পয়গম্ব^রদের প্রতি যত কিতাব নাজিল করেছেন তা সবই রমজানের বিভিন্ন তারিখে নাজিল হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ইবরাহিম (আ.)-এর সহিফাসমুহ রমজানের প্রথম তারিখে, তাওরাত ৬ তারিখে, জবুর ১২ তারিখে, ইনজিল ১৮ তারিখে এবং কোরআন ২৫ রাতে অবতীর্ণ হয়েছে।’ (মুসনাদে আহমাদ)

সুরা বাকারায় আল্লাহ বলেন, ‘রমজানে কোরআন নাজিল করা হয়েছে।’ আয়াত ১৮৫। অর্থাৎ রসুল (সা.)-এর কাছে হেরা গুহায় যে রাতে জিবরাইল (আ.) ওহি নিয়ে এসেছিলেন সেটি রমজানের একটি রাত। আর সে রাতটি হলো শবেকদর। সমগ্র কোরআন লওহে মাহফুজ থেকে ধীরে ধীরে ২৩ বছর ধরে রসুল (সা.)-এর কাছে অবতীর্ণ হয়। লাইলাতুল কদর রমজানের শেষ ১০ দিনের যে কোনো বেজোড় রাতে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। রসুল (সা.) বলেন, ‘রমাদানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে লাইলাতুল কদর অন্বেষণ কর।’ (বুখারি)।

রসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে কেউ ইমান ও সওয়াবের আশায় লাইলাতুল কদরে সালাত আদায় করতে দাঁড়ায় তার পূর্ববর্তী সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’ (বুখারি, মুসলিম)। এর চেয়ে একজন মুমিনের জীবনে আর কী বড় পুরস্কার হতে পারে? ‘লাইলাতুল কদরে দুনিয়ার বুকে এত বেশি ফেরেশতা আগমন করেন যে তাদের সংখ্যা পাথরকুচির চেয়েও বেশি।’ (মুসনাদে আহমাদ)। লাইলাতুল কদর লাভ করার সর্বোত্তম উপায় হলো শেষ দশকে ইতিকাফ করা।

উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘আমি জিজ্ঞেস করলাম হে আল্লাহর রসুল! আমি যদি জানতে পারি কোন রাতটি লাইলাতুল কদর তাহলে তখন কোন দোয়াটি পাঠ করব? তিনি বললেন তুমি বল, “আল্লাহুমা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফাফু আন্নি” অর্থাৎ হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল, আপনি ক্ষমা করতে ভালোবাসেন, অতএব আমাকে ক্ষমা করে দিন।’ (তিরমিজি)।

শবেকদর সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘তুমি কি জান কদরের রাতটি কী? কদরের এ রাতটি হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম।’ সুরা কদর, আয়াত ২-৩। এর চেয়ে আর বড় নিয়ামত মুসলমানদের জন্য কী হতে পারে? রমজানের এ রাতে আমরা বেশি করে যেন নফল ইবাদত করে আল্লাহর প্রিয় বান্দা হতে পারি। লাইলাতুল কদর পাওয়ার জন্য প্রত্যেক মুসলমানের উচিত রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফে বসা এবং বিজোড় রাতগুলোয় শবেকদর তালাশ, বেশি বেশি নফল নামাজ আদায়, কোরআন তিলওয়াত, দরুদ পাঠ, ইসতিগফার ও তওবা, বেশি বেশি দান-সদকা করা।




Source: BDP

14
পাঁচ খাবারে চোখের স্বাস্থ্যের যত্ন
পুষ্টি ও চোখের স্বাস্থ্যের সম্পর্ক খুব গভীর। দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখার জন্য দরকার নিয়মিত স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া। ভিটামিন, খনিজ পদার্থ, নানা ধরনের অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট যুক্ত খাবার খাওয়া জরুরি। এত রকম উপাদান থাকে শাক-সবজি ও ফলে। তাই সব ধরনের শাক-সবজি মিলিয়েই তৈরি করতে হবে দিনের খাদ্য তালিকা।

নানা রঙের খাবার দিনের তালিকায় রাখা বেশ জরুরি। তাতে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও ফ্যাটি অ্যাসিড পায় শরীর। এসব অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট চোখের বিভিন্ন ক্রনিক সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করে। বাড়ায় দৃষ্টিশক্তিও।

কোন পাঁচটি খাবার সহজেই চোখের স্বাস্থ্যের যত্ন নেয়?
১) রুই, কাতলা, ইলিশ, মাগুড়ের মতো যেসব মাছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডের পরিমাণ বেশি, তা বেশি করে খাবেন। চোখের মণি ভালো থাকে। দৃষ্টিশক্তিও বাড়ে। ড্রাই আইজের সমস্যা কমে।

২) গাজর যে চোখের যত্ন নেয়, তা সকলেরই জানা। এতে উপস্থিত বিটা-ক্যারোটিন শরীরে ভিটামিন এ জোগান দেয়। নিয়মিত গাজর খেলে চোখে সংক্রমণের আশঙ্কা কমে।

৩) ডিম খাওয়া চোখের স্বাস্থ্যের জন্য জরুরি। ডিমের কুসুমে বিভিন্ন ধরনের খনিজ পদার্থ থাকে। সঙ্গে থাকে ভিটামিন এ এবং জিঙ্ক। সব ক’টি উপাদানই চোখের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

৪) দুধ এবং দইয়েও রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ এবং জিঙ্ক। দুটি উপাদানই চোখের নানা অংশের যত্ন নেয়। তা ছাড়াও দুধে এমন কিছু খনিজ পদার্থ থাকে, যা খেলে রাতের দৃষ্টিশক্তি উন্নত হয়।

৫) কমলালেবুও চোখের জন্য ভালো। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি। এই ভিটামিন রক্ত চলাচলের ক্ষেত্রে জরুরি। চোখে রক্ত চলাচল ভালো হলে সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা কমে। তার সঙ্গেই প্রদাহ কমে।




Source: BD

15
রমজানে দান-সদকার বিশেষ গুরুত্ব

পবিত্র রমজান মাস অগণিত নেকি অর্জনের মাস। তাই এ মাসে নেকি অর্জনের কোনো পন্থাই হাত ছাড়া করা উচিত নয়। সাধারণত বেশি সওয়াবের আশায় এ মাসে বিত্তবানরা জাকাত আদায় করে থাকে। যাদের ওপর জাকাত ফরজ নয়, তারাও এই মাসে বেশি বেশি সদকা করার মাধ্যমে অগণিত সওয়াব লাভ করতে পারে।

যাদের ওপর জাকাত ফরজ, তারাও জাকাত আদায়ের পর অতিরিক্ত সদকা করতে পারে। তা ছাড়া এ বছর দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে বহু মানুষ কষ্টে আছে। অভাব-অনটন ও ঋণের জাঁতাকলে পড়ে বহু মানুষ পিষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাদের নীরব কান্না হয়তো আমাদের কান পর্যন্ত পৌঁছায় না। কিন্তু আমরা যদি এই কঠিন মুহূর্তে তাদের প্রতি সহানুভূতির হাত বাড়াতে পারি, তবে মহান আল্লাহর কাছে এর প্রতিদান বহু গুণে পাওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ। নিম্নে সদকার কিছু উপকারিতা তুলে ধরা হলো;
রিজিকে বরকত আসে : সদকার মাধ্যমে মহান আল্লাহ রিজিকে বরকত এনে দেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ সুদকে মিটিয়ে দেন এবং সদকাকে বাড়িয়ে দেন। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৭৬)

অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা নিজেদের ধন-সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে তাদের উপমা একটি বীজের মতো, যা সাতটি শীষ উৎপাদন করে, প্রত্যেক শীষে এক শ শস্যদানা। আর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বহু গুণে বৃদ্ধি করে দেন। আর আল্লাহ সর্বব্যাপী প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৬১)
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি হালাল কামাই থেকে একটি খেজুর পরিমাণ সদকা করবে, (আল্লাহ তা কবুল করবেন) এবং আল্লাহ শুধু পবিত্র মাল কবুল করেন আর আল্লাহ তাঁর ডান হাত দিয়ে তা কবুল করেন। এরপর আল্লাহ দাতার কল্যাণার্থে তা প্রতিপালন করেন যেমন তোমাদের কেউ অশ্ব শাবক প্রতিপালন করে থাকে, অবশেষে সেই সদকা পাহাড় বরাবর হয়ে যায়।
(বুখারি, হাদিস : ১৪১০)

সদকা আল্লাহর সঙ্গে ব্যবসা : পবিত্র কোরআনে সদকাকে আল্লাহর সঙ্গে সংঘটিত লাভজনক ব্যবসার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই যারা আল্লাহর কিতাব অধ্যয়ন করে, সালাত কায়েম করে এবং আল্লাহ যে রিজিক দিয়েছেন তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারা এমন ব্যবসার আশা করতে পারে, যা কখনো ধ্বংস হবে না। যাতে আল্লাহ তাদের কাজের প্রতিফল পরিপূর্ণ দেন এবং তিনি নিজ অনুগ্রহে তাদের আরো বেশি দেন। নিশ্চয়ই তিনি পরম ক্ষমাশীল, অসীম গুণগ্রাহী। ’ (সুরা ফাতির, আয়াত : ২৯-৩০)

ফেরেশতাদের দোয়া পাওয়া যায় : যারা মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় দান করে, তাদের জন্য ফেরেশতারা দোয়া করেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘প্রতিদিন সকালে দুজন ফেরেশতা অবতরণ করেন। তাঁদের একজন বলেন, হে আল্লাহ, দাতাকে তার দানের উত্তম প্রতিদান দিন। আর অপরজন বলেন, হে আল্লাহ, কৃপণকে ধ্বংস করে দিন। ’ (বুখারি, হাদিস : ১৪৪২)

পাপ মোচন হয় : দান-সদকার মাধ্যমে পাপের বোঝা হালকা হয়। তাই পবিত্র রমজানে বেশি বেশি দান-সদকা করা উচিত। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘যদি তোমরা প্রকাশ্যে দান করো তবে তাও উত্তম, আর যদি তোমরা তা গোপনে করো এবং তা অভাবগ্রস্তদের দান করো, তবে তা তোমাদের জন্য আরো উত্তম, অধিকন্তু তিনি তোমাদের কিছু গুনাহ মোচন করে দেবেন, বস্তুত যা কিছু তোমরা করছ, আল্লাহ তার খবর রাখেন। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৭১)

সদকা মানুষকে পরিশুদ্ধ করে : পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে নবী, তাদের ধন-সম্পদ থেকে সদকা নিয়ে তাদের পাক-পবিত্র করুন, (নেকির পথে) তাদের এগিয়ে দিন এবং তাদের জন্য রহমতের দোয়া করুন। (সুরা তাওবা, আয়াত : ১০৩)

এখানে মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় বন্ধুকে উদ্দেশ্য করে বলছেন সদকার মাধ্যমে তাঁর উম্মতদের পরিশুদ্ধ করে নিতে। তাফসিরবিদরা এই আয়াতের ব্যাখ্যায় লেখেন, সদকা আখলাক-চরিত্র পরিশুদ্ধ করার একটি অন্যতম মাধ্যম। (ইবনে কাসির)

আরশের ছায়াতলে আশ্রয় : যারা গোপনে দান করবেন মহান আল্লাহ কঠিন কিয়ামতের দিন তাদের আরশের ছায়াতলে স্থান দেবেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেন, যে দিন আল্লাহর (রহমতের) ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া থাকবে না, সেদিন সাত ব্যক্তিকে আল্লাহ তাআলা তাঁর নিজের (আরশের) ছায়ায় আশ্রয় দেবেন। ১. ন্যায়পরায়ণ শাসক, ২. সে যুবক, যার জীবন গড়ে উঠেছে তার প্রতিপালকের ইবাদতের মধ্যে, ৩. সে ব্যক্তি, যার অন্তর মসজিদের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে, ৪. সে দুই ব্যক্তি, যারা পরস্পরকে ভালোবাসে আল্লাহর জন্য, একত্র হয় আল্লাহর জন্য এবং পৃথকও হয় আল্লাহর জন্য, ৫. সে ব্যক্তি, যাকে কোনো উচ্চ বংশীয় রূপসী নারী আহ্বান জানায়, কিন্তু সে এ বলে প্রত্যাখ্যান করে যে ‘আমি আল্লাহকে ভয় করি’, ৬. সে ব্যক্তি, যে এমন গোপনে দান করে যে তার ডান হাত যা খরচ করে বাম হাত তা জানে না, ৭. সে ব্যক্তি, যে নির্জনে আল্লাহর জিকির করে, ফলে তার দুই চোখ দিয়ে অশ্রুধারা বইতে থাকে। ’ (বুখারি, হাদিস : ৬৬০)

জাহান্নাম থেকে মুক্তি : মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দান করলে, জাহান্নাম থেকে মুক্তির আশা করা যায়। কেননা নবীজি (সা.) জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য বেশি বেশি সদকা করার তাগিদ দিয়েছেন। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, একবার ঈদুল আজহা অথবা ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায়ের জন্য আল্লাহর রাসুল (সা.) ঈদগাহের দিকে যাচ্ছিলেন। তিনি মহিলাদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বললেন, হে মহিলাসমাজ, তোমরা সদকা করতে থাকো। কারণ আমি দেখেছি, জাহান্নামের অধিবাসীদের মধ্যে তোমরাই বেশি। তাঁরা জিজ্ঞেস করলেন, কী কারণে, হে আল্লাহর রাসুল? তিনি বলেন, তোমরা বেশি পরিমাণে অভিশাপ দিয়ে থাকো আর স্বামীর অকৃতজ্ঞ হও। (বুখারি, হাদিস : ৩০৪)


Source: BD.


Pages: [1] 2 3 ... 11