Show Posts

This section allows you to view all posts made by this member. Note that you can only see posts made in areas you currently have access to.


Topics - Sahadat Hossain

Pages: 1 2 [3] 4 5 ... 25
31
চলছে পবিত্র রমজান মাস। গ্রীষ্মের এই তাপদাহে সারা দিন রোজা রাখার ফলে ক্লান্তি, অবসাদ, পানিশূন্যতা হওয়া স্বাভাবিক। তাই এ সময় সুস্থ থাকতে পুষ্টিকর সহজপাচ্য স্বাস্থ্যকর ইফতার খুব গুরুত্বপূর্ণ। দিন শেষে সঠিক পুষ্টি ও পর্যাপ্ত পানি পেলে শরীরের ক্লান্তি দূর হতে খুব বেশি সময় লাগে না।

ইফতারের সময় যা লক্ষ রাখবেন
রোজায় ইফতারি দিনের একটি প্রধান খাবার। কাজেই এ সময় খাদ্যতালিকায় শর্করা, আমিষ, ফ্যাট, খনিজের যথাযথ সমাহার থাকতে হবে।

ইফতারের সময় একবারে অনেক পরিমাণে না খেয়ে ধীরে ধীরে খেতে হবে। সময় নিয়ে ভালো করে চিবিয়ে খেতে হবে। তাড়াহুড়া করা যাবে না। খাওয়ায় তাড়াহুড়া করলে হজমের সহায়ক এনজাইমগুলো নিঃসৃত হওয়ার ও খাদ্যে মেশার সুযোগ পায় না।

ইফতারে প্রচুর তরল ও পানি পান করবেন। তবে অতিরিক্ত চিনিযুক্ত শরবত, কৃত্রিম জুস, কোমল পানীয় পরিহার করে তাজা ফল এবং দই দিয়ে স্মুদি, দই-চিড়া, ডাব, লেবু–পানি ইত্যাদি পান করুন। এ ছাড়া তরমুজ, আনারস, বেল, শসা, পেয়ারায় যথেষ্ট পানি রয়েছে। রোজায় চা-কফি খুব বেশি পান না করাই ভালো।

প্রাকৃতিক ও জটিল শর্করা রাখুন ইফতারে। যেমন চিড়া, হোল গ্রেন পাস্তা, নুডলস, ব্রাউন ব্রেডের স্যান্ডউইচ, লাল চালের খিচুড়ি খেতে পারেন। ফলের মধ্যে খেজুর, কলা, পাকা আম যথেষ্ট শক্তি সরবরাহ করে।

ভাজাপোড়া এড়াতে তেল যথাসম্ভব কম ব্যবহার করুন। বাইরের খাবার না খেয়ে ঘরে তৈরি খাবারেই বৈচিত্র্য আনা যায়। রোজ তেলে ভাজা খাবার না খেয়ে মাঝেমধ্যে স্বাদ বদলাতে অন্য আইটেম করুন।

স্বাস্থ্যকর ইফতারির কিছু মেনু
 সবজি, মাশরুম, চিংড়ি, মুরগির মাংস দিয়ে তৈরি স্যুপ। একটা ডিমের সাদা অংশ মেশালে আরও আমিষ পাবেন।

চিড়া ধুয়ে ভিজিয়ে খেজুর, মধু, বাদাম, কলা দুধ দিয়ে সিরিয়াল বানালে তা খুবই পুষ্টিকর ও শীতল খাবার হবে।

সামান্য তেলে ভাজা খাবার, গ্রিল, স্টিম করা সবজি বা মুরগির মোমো খেতে পারেন ইফতারে।

ছোলা সারা রাত ভিজিয়ে রেখে বা সেদ্ধ ছোলার সঙ্গে পেঁয়াজ, শসা, টমেটো, পুদিনা ও সামান্য শর্ষের তেল মিশিয়ে সালাদ বানাতে পারেন।

ইফতারে দুধের তৈরি খাবার রাখুন মাঝেমধ্যে। যেমন ফালুদা, কাস্টার্ড, পুডিং ও পায়েস।

সবজি দিয়ে নুডুলস, চিকেন স্যান্ডউইচ খাওয়া যেতে পারে ইফতারে।

Ref; https://www.prothomalo.com/life/health/%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A7%9F-%E0%A6%9A%E0%A6%BE%E0%A6%87-%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%A5%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%95%E0%A6%B0-%E0%A6%87%E0%A6%AB%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%BF

32
করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যেই পবিত্র রমজান মাস উপস্থিত। এবার অনেক বাড়িতেই করোনা সংক্রমিত রোগী রয়েছেন। তাই অনেকের মনে প্রশ্ন জেগেছে, করোনা নিয়েও রোজা রাখা সম্ভব কি না।

করোনা রোগীদের একটি বড় অংশই প্রায় উপসর্গহীন বা মৃদু উপসর্গযুক্ত। এ ধরনের রোগীদের রোজা করতে বাধা নেই। তবে যাঁরা মাঝারি বা তীব্র মাত্রার সংক্রমণে ভুগছেন, অক্সিজেন বা ইনজেকশন চলছে কিংবা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন অথবা যাঁদের গুরুতর অন্য রোগ রয়েছে, বয়স্ক—এমন করোনা রোগীদের রোজা না রাখাই উচিত। এ ব্যাপারে সঠিক পরামর্শ পেতে চিকিৎসকের সঙ্গে আলাপ করে নেওয়াই ভালো।

করোনার মৃদু উপসর্গ নিয়ে রোজা করতে চাইলেও কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে

ইফতার বা সাহ্‌রিতে অবশ্যই আইসোলেশনের সব নিয়ম মানতে হবে। প্রয়োজন ও সময় অনুযায়ী খাবার, পানি, পানীয় রোগীর ঘরের সামনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে রেখে আসতে হবে। রোগী সবার সঙ্গে এক টেবিলে বসে ইফতার-সাহ্‌রি করতে পারবেন না। খাবার খাওয়ার পর উচ্ছ্বিষ্ট রোগী নিজেই একটি ময়লার ঝুড়িতে ব্যাগে ভরে ফেলবেন। সম্ভব হলে নিজের থালা-গ্লাস নিজেই ধুয়ে নেবেন।

জ্বর, কাশি, স্বাদ-গন্ধহীনতা বা করোনার মৃদু উপসর্গযুক্ত রোগী, পজিটিভ বা নেগেটিভ যা-ই হোন না কেন, অবশ্যই মসজিদে তারাবিহর নামাজ পড়তে যাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। মনে রাখতে হবে, কারও কারও ক্ষেত্রে করোনার সংক্রমণ থাকা সত্ত্বেও কারিগরি ত্রুটির কারণে পরীক্ষার ফলাফল নেগেটিভ আসতে পারে। তাই উপসর্গ থাকলে ঘরেই থাকুন। বাড়িতে ইবাদত করুন।

করোনা বা অন্য যেকোনো সংক্রমণে শরীর দ্রুত পানি হারায়। বিশেষ করে জ্বর থাকলে শরীর দ্রুত পানিশূন্য হয়ে পড়ে। তাই প্রচুর পানি পান করতে হবে। রোজা রাখলে এ বিষয়ে আরও বিশেষভাবে নজর দিন। ইফতার থেকে সাহ্‌রি পর্যন্ত প্রচুর পানি পান করুন। ডাবের পানি, ফলের রস, স্যুপ, তাজা ফলমূল, যেমন শশা, তরমুজ, আপেল, মাল্টা ইত্যাদি খেতে হবে। অনেক সময় করোনা রোগীর রক্তে খনিজ স্বল্পতা, রক্তচাপ কমে যাওয়ার মতো সমস্যা হতে পারে। তাই পানি ও তরলজাতীয় খাবার খেতে হবে অনেক।

যথেষ্ট ঘুম ও বিশ্রাম দরকার। নিজের ঘরে আইসোলেশনে থাকা অবস্থায় বিশ্রাম নিন। মাঝেমধ্যে হালকা হাঁটাহাঁটি বা পায়ের ব্যায়াম করুন। অতিরিক্ত কায়িক পরিশ্রম বা ব্যায়াম করবেন না। তারাবিহর নামাজ পুরোটা পড়তে ক্লান্ত লাগলে সংক্ষিপ্ত করে নিন।

দিনে-রাতে অনেকবারই পালস অক্সিমিটার দিয়ে রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা পরিমাপ করুন, হৃৎস্পন্দন দেখুন। সম্ভব হলে রক্তচাপ মাপুন। প্রস্রাবের পরিমাণ ও রং লক্ষ করুন। যাঁদের ডায়াবেটিস আছে, তাঁরা রক্তের শর্করা বারবার মাপুন। টেলিফোনে বা ইন্টারনেটে স্বজন ও বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন।

হঠাৎ শ্বাসকষ্ট, মাথা হালকা বোধ হওয়া, রক্তচাপ কমে যাওয়া, হৃৎস্পন্দন বেশি বা কম মনে হওয়া, অতিরিক্ত ক্লান্তি বা অবসাদ, সামান্য পরিশ্রমে অস্থির বা ভীষণ অবসাদগ্রস্ত মনে হলে রোজা ভাঙতে পারেন। এ ছাড়া অক্সিজেন স্যাচুরেশন নেমে যেতে থাকলে অবশ্যই রোজা ভাঙুন। বিষয়টি দ্রুত পরিবারের সদস্যদের জানান।

Ref; https://www.prothomalo.com/life/health/%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%BE-%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%97%E0%A7%80%E0%A6%B0-%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%9C%E0%A6%BE

33
চলছে পবিত্র রমজান মাস। গ্রীষ্মের এই তাপদাহে সারা দিন রোজা রাখার ফলে ক্লান্তি, অবসাদ, পানিশূন্যতা হওয়া স্বাভাবিক। তাই এ সময় সুস্থ থাকতে পুষ্টিকর সহজপাচ্য স্বাস্থ্যকর ইফতার খুব গুরুত্বপূর্ণ। দিন শেষে সঠিক পুষ্টি ও পর্যাপ্ত পানি পেলে শরীরের ক্লান্তি দূর হতে খুব বেশি সময় লাগে না।

ইফতারের সময় যা লক্ষ রাখবেন
 রোজায় ইফতারি দিনের একটি প্রধান খাবার। কাজেই এ সময় খাদ্যতালিকায় শর্করা, আমিষ, ফ্যাট, খনিজের যথাযথ সমাহার থাকতে হবে।

ইফতারের সময় একবারে অনেক পরিমাণে না খেয়ে ধীরে ধীরে খেতে হবে। সময় নিয়ে ভালো করে চিবিয়ে খেতে হবে। তাড়াহুড়া করা যাবে না। খাওয়ায় তাড়াহুড়া করলে হজমের সহায়ক এনজাইমগুলো নিঃসৃত হওয়ার ও খাদ্যে মেশার সুযোগ পায় না।

ইফতারে প্রচুর তরল ও পানি পান করবেন। তবে অতিরিক্ত চিনিযুক্ত শরবত, কৃত্রিম জুস, কোমল পানীয় পরিহার করে তাজা ফল এবং দই দিয়ে স্মুদি, দই-চিড়া, ডাব, লেবু–পানি ইত্যাদি পান করুন। এ ছাড়া তরমুজ, আনারস, বেল, শসা, পেয়ারায় যথেষ্ট পানি রয়েছে। রোজায় চা-কফি খুব বেশি পান না করাই ভালো।

প্রাকৃতিক ও জটিল শর্করা রাখুন ইফতারে। যেমন চিড়া, হোল গ্রেন পাস্তা, নুডলস, ব্রাউন ব্রেডের স্যান্ডউইচ, লাল চালের খিচুড়ি খেতে পারেন। ফলের মধ্যে খেজুর, কলা, পাকা আম যথেষ্ট শক্তি সরবরাহ করে।

ভাজাপোড়া এড়াতে তেল যথাসম্ভব কম ব্যবহার করুন। বাইরের খাবার না খেয়ে ঘরে তৈরি খাবারেই বৈচিত্র্য আনা যায়। রোজ তেলে ভাজা খাবার না খেয়ে মাঝেমধ্যে স্বাদ বদলাতে অন্য আইটেম করুন।

স্বাস্থ্যকর ইফতারির কিছু মেনু
 সবজি, মাশরুম, চিংড়ি, মুরগির মাংস দিয়ে তৈরি স্যুপ। একটা ডিমের সাদা অংশ মেশালে আরও আমিষ পাবেন।

চিড়া ধুয়ে ভিজিয়ে খেজুর, মধু, বাদাম, কলা দুধ দিয়ে সিরিয়াল বানালে তা খুবই পুষ্টিকর ও শীতল খাবার হবে।

সামান্য তেলে ভাজা খাবার, গ্রিল, স্টিম করা সবজি বা মুরগির মোমো খেতে পারেন ইফতারে।

ছোলা সারা রাত ভিজিয়ে রেখে বা সেদ্ধ ছোলার সঙ্গে পেঁয়াজ, শসা, টমেটো, পুদিনা ও সামান্য শর্ষের তেল মিশিয়ে সালাদ বানাতে পারেন।

ইফতারে দুধের তৈরি খাবার রাখুন মাঝেমধ্যে। যেমন ফালুদা, কাস্টার্ড, পুডিং ও পায়েস।

সবজি দিয়ে নুডুলস, চিকেন স্যান্ডউইচ খাওয়া যেতে পারে ইফতারে।

Ref: https://www.prothomalo.com/life/health/%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A7%9F-%E0%A6%9A%E0%A6%BE%E0%A6%87-%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%A5%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%95%E0%A6%B0-%E0%A6%87%E0%A6%AB%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%BF

34
সবাইকে পবিত্র মাহে রমজানের শুভেচ্ছা। দরজায় কড়া নাড়ছে মাহে রমজান। মুসলিম জাহানের সবচেয়ে পবিত্র মাস এই মাহে রমজান। সংযমের মাস রমজান। মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য অনেক সাধনার একটি মাস হলো এটি। ভোরের সাহ্‌রিতে রোজা শুরু আর সন্ধ্যার ইফতারিতে শেষ। রোজাদারের আনন্দ ইফতারিতে, যদিও রোজাদারের জন্য আরও অনেক উপহার আছে। এই কাঠফাটা গরমে প্রায় ১৫ ঘণ্টা রোজা রেখে শরীরকে সতেজ রাখাটা কিন্তু বেশ চ্যালেঞ্জিং। আসুন, জেনে নিই কিছু টিপস, যেগুলো আপনাকে লম্বা সময় রোজা রাখতে কিছুটা হলেও সাহায্য করবে।

সাহ্‌রি
কোনো কিছুই অতিরিক্ত খাবেন না। মনে রাখবেন, খাদ্য হচ্ছে মানবদেহের জ্বালানি, শরীরে সব ধরনের খাবারের একটা নির্দিষ্ট পরিমাণে চাহিদা থাকে, চাহিদার অতিরিক্ত খেলেই বিপত্তি ঘটবে।
সাহ্‌রি দিয়ে একজন রোজাদারের দিন শুরু হয়। অনেকে মনে করেন যে সারিতে পেটপুরে খেলে মনে হয় সারা দিনে আর ক্ষুধা লাগে না। তাই অনেককে সারিতে প্রচুর পরিমাণে খেতে দেখা যায়। এরপর পানির জাগ অথবা বোতল হাতে করে বসে থাকেন। শেষ সময়ের সাইরেন বাজার আগপর্যন্ত পানি খেতেই থাকেন। এগুলো কখনোই করবেন না। কারণ, এতে আপনার শরীরে একধরনের অস্বস্তি হবে, যা আপনাকে সারা দিন কষ্ট দেবে। সাহ্‌রির শেষ সময়ের কমপক্ষে ১৫-২০ মিনিট আগে সাহ্‌রি খাওয়া শেষ করতে হবে।

সাহ্‌রিতে আপনি আপনার স্বাভাবিক খাবারটাই খাবেন। পরিমিত পরিমাণে ভাত নেবেন সঙ্গে মাছ বা মাংস, ডাল, সবজি, সালাদ। শেষে এক কাপ দুধ বা দই আর একটু মিষ্টি ফল। সাহ্‌রিতে একটু দুধ বা দই খেলে এখান থেকে আপনি ধীরে ধীরে শক্তি পাবেন, যা আপনাকে সারা দিন বেশ সতেজ রাখবে। আতপ চালের ভাত না খেয়ে আপনি সেদ্ধ মোটা চালের ভাত খেতে পারেন। লাল চাল হলে সেটা সবচেয়ে বেশি ভালো হয়, এগুলো আপনার সারা দিনের না খেয়ে থাকার পক্ষে বেশ সহায়ক হবে। তার মানে কিন্তু আমি বলছি না যে আতপ চাল খাওয়া যাবে না, অবশ্যই খাওয়া যাবে।

আবারও বলছি, কোনো কিছুই অতিরিক্ত খাবেন না। মনে রাখবেন, খাদ্য হচ্ছে মানবদেহের জ্বালানি, শরীরে সব ধরনের খাবারের একটা নির্দিষ্ট পরিমাণে চাহিদা থাকে, চাহিদার অতিরিক্ত খেলেই বিপত্তি ঘটবে। শরীর প্রয়োজনীয় খাবার নিয়ে বাকিটা চর্বি হিসেবে জমা করে রাখবে। ফলাফল, আপনার ওজন বেড়ে যাবে এবং কিছু শারীরিক ঝুঁকিও বৃদ্ধি পাবে।

ইফতার
ইফতারিতে পানির চাহিদা বেশি থাকে তাই এমন কিছু পানীয় রাখবেন যেগুলো পিপাসা মেটাবে আবার শরীরে শক্তিও জোগাবে
রমজানে রোজাদারের জন্য খুব আনন্দের সময় হচ্ছে ইফতারের সময়। ইফতারের ১ ঘণ্টা আগে থেকেই চলতে থাকে আমাদের ইফতারের প্রস্তুতি, তাই সারা দিনের সব ক্লান্তি যেন ইফতারের ১ ঘণ্টা আগেই উড়ে যায়। ইফতারিতে সবাই তাঁদের সাধ্যমতো আয়োজন করে থাকেন। তবে সারা দিন যেহেতু না খেয়ে থাকতে হয়, তাই ইফতারিটা অবশ্যই স্বাস্থ্যসম্মত হতে হবে। সারা দিন রোজা রেখে অস্বাস্থ্যকর খাবার খেলে অ্যাসিডিটিসহ অন্যান্য সমস্যা তৈরি হতে পারে।

তবে ইফতারের আয়োজনে বাড়ির সব সদস্যের কথা মাথায় রেখে ইফতারের আয়োজন করতে হবে। ছোটদের জন্য একটু প্রোটিন জাতীয় খাবার বেশি রাখার চেষ্টা করবেন। বয়স্ক সদস্যদের শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে তাঁদের জন্য প্রযোজ্য খাবার রাখার চেষ্টা করবেন। যেমন বাড়িতে হয়তো কারও কিডনির সমস্যা আছে, তাহলে তাঁর জন্য ডাল বা ডাল দিয়ে তৈরি কোনো ইফতারি রাখবেন না। প্রোটিন জাতীয় খাবার কম রাখবেন। অথবা কারও হয়তো হৃদ্‌রোগ আছে, তাহলে তাঁর জন্য তেল বা চর্বিযুক্ত খাবার রাখবেন না। বাসায় কোনো ডায়াবেটিসের রোগী থাকতে পারেন, তাহলে তাঁর জন্যও কিন্তু আয়োজনটা ভিন্ন হবে। এভাবে বুঝেশুনে সবার জন্য স্বাস্থ্যকর খাবারের আয়োজন করতে হবে।

ইফতারিতে পানির চাহিদা বেশি থাকবে, তাই এ সময় এমন কিছু পানীয় রাখবেন যেগুলো আপনার পিপাসা মেটানোর পাশাপাশি শরীরে শক্তি জোগাবে। এ জন্য শরবত হিসেবে অল্প চিনিযুক্ত লেবুপানি, মিষ্টি ফলের রস, ডাবের পানি, মিল্কসেক, লাচ্চি এগুলো রাখতে পারেন আপনার ইফতারির তালিকায়।

খেজুর ছাড়া ইফতারি যেন অসম্পূর্ণ। তবে মনে রাখতে হবে, খেজুর একটি উচ্চ ক্যালরিসম্পন্ন ফল। ইফতারিতে খেজুরসহ বেশি বেশি অন্যান্য ফল রাখুন। বাজারে এখন অনেক রকমের ফল পাওয়া যাচ্ছে, দামও মোটামুটি সহনীয় পর্যায়ে, তাই ইফতারিতে বেশি করে ফল রাখুন। পেয়ারা, আপেল, নাশপাতি, তরমুজ এগুলো বেশি রাখুন ইফতারির মেনুতে।

খেজুর উচ্চ ক্যালরিসম্পন্ন ফল। ইফতারিতে খেজুরসহ বেশি বেশি অন্যান্য ফল রাখুন
ইফতারির আর একটা অপরিহার্য উপাদান হচ্ছে হালিম, ইফতারিতে একটু হালিম খেলে সারা দিনের ক্লান্ত পেশিগুলো আবার সতেজ হয়ে উঠবে। হালিমের পরিবর্তে আপনি একটু স্যুপ খেতে পারেন।

এখানে রোজার মাসের জন্য একটা নমুনা তালিকা দেওয়া হলো। সবার ক্ষেত্রে হয়তো এমনটা না-ও হতে পারে। তবে এটা বেশির ভাগ মানুষের জন্যই উপযোগী হবে।

ইফতার
পানীয়

চিনি ছাড়া লেবু পানির শরবত।

ডাবের পানি।

একটা মাল্টা/একটা কমলার রস।

চিনি ছাড়া এক গ্লাস তরমুজের জুস।

এক কাপ টকদই, এক কাপ পানি, একটা ছোট কলা বা ছোট দুই স্লাইস আম একসঙ্গে ব্লেন্ড করে বানানো লাচ্ছি।

চিনি ছাড়া বেলের শরবত।

বিশেষ খাবার
১৫-২০টা ভেজানো ছোলা, সেদ্ধ করা নয়। সাহ্‌রির সময়ে ১৫-২০টা ছোলা (একজনের জন্য) পানিতে ভিজিয়ে দেবেন। সারা দিন ভিজবে। ইফতারের আগে ওই ভেজানো খোসাসহ ছোলার সঙ্গে খুবই কুচি কুচি করে কাটা আদা এবং পরিমাণমতো লবণ দিয়ে ভালো করে চটকে মেখে খেয়ে নেবেন।

ফল
খেজুর ২-৩টা সঙ্গে ১টা আপেল বা কলা নেবেন। অন্যান্য ফল যদি থাকে তাহলে সবগুলো এক টুকরা করে নেবেন। যেমন এক টুকরা তরমুজ, আনারস, কমলা, আঙুর, আম, কাঁঠাল ইত্যাদি। শসা, ক্ষীরা, পেয়ারা এগুলো বেশি খেতে পারবেন।

তাজা ফল রাখতে পারেন ইফতারে
অন্যান্য খাবার
বুট ভুনা ১ কাপ সঙ্গে ১-২ কাপ মুড়ি নেবেন। হালিম যদি থাকে তাহলে ১-২ কাপ। কোনো তেলে ভাজা ইফতারে না খাওয়াই ভালো। কারণ, সারা দিন রোজা রেখে ডুবো তেলে ভাজা খাবার খেলে শরীর খারাপ হতে পারে। ওজন বেড়ে যেতে পারে, রক্তচাপ বাড়তে পারে। চনাবুট, হালিম ও ডালের তৈরি আইটেমগুলো কিডনি রোগীদের জটিলতা বাড়িয়ে দিতে পারে।

অথবা
২ কাপ ভেজানো চিড়া, এক কাপ দুধ/টক দই, ১টা কলা।

অথবা
২-৩ কাপ ভাত/২-৩টি রুটি সঙ্গে মাছ/মাংস ১ পিস, সবজি, সালাদ।

রাতের খাবার
তারাবির পরে খাবেন,
রুটি/ভাত, মাছ বা মাংস (ঝোল কম), শাকসবজি, সালাদ। এ খাবার হবে অন্যান্য সময়ের সকালের নাশতার মতো পরিমাণে কম।

সাহ্‌রি
ভাত, মাছ বা মাংস (ঝোল কম), শাকসবজি, ডাল, সালাদ। এ খাবার হবে অন্যান্য সময়ের দুপুরের খাবারের মতো। সঙ্গে এক কাপ টক দই এবং দুইটা খেজুর।
ঘুমানোর আগে এক কাপ দুধ/টক দই অথবা ১০টা কাজুবাদাম খাবেন।

ব্যায়াম
রমজান মাসে ব্যায়ামের দরকার নেই। তবে যদি সম্ভব হয় তাহলে ইফতারের পর একটু হাঁটবেন অথবা ঘরে বসে কিছু ব্যায়াম করে নেবেন। অবশ্যই তারাবির নামাজ পড়বেন, এতে ইবাদতের পাশাপাশি ব্যায়ামের কাজও হয়ে যাবে।

বুঝেশুনে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খান, সুস্থ থাকুন।

লেখক: পুষ্টিবিদ, চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল, চট্টগ্রাম।

Ref: https://www.prothomalo.com/life/health/%E0%A6%95%E0%A7%87%E0%A6%AE%E0%A6%A8-%E0%A6%B9%E0%A6%AC%E0%A7%87-%E0%A6%B0%E0%A6%AE%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%A8-%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%96%E0%A6%BE%E0%A6%93%E0%A7%9F%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A6%BE%E0%A6%93%E0%A7%9F%E0%A6%BE

35
প্রচণ্ড গরমে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জীবন। এ সময় শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি ঘাম হয়ে বের হয়। দেখা দেয় পানিশূন্যতা। ফলে দুর্বলতা, মাথা ঘোরানো, মাথাব্যথা, খিটখিটে মেজাজ, গলা শুকিয়ে যাওয়া, অচেতন হয়ে পড়া, বুক ধড়ফড়, কোষ্ঠকাঠিন্য, প্রস্রাব হলুদ হওয়া বা প্রস্রাব কমে যাওয়ার মতো বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়।

আসুন জেনে নিই, এ গরমে পানিশূন্যতা দূর করতে যা খাওয়া উচিত

পানি: সারা দিনে ১০-১২ গ্লাস বিশুদ্ধ পানি পান করুন। পাশাপাশি লেবু বা ফলের শরবত খেতে পারেন। ডাবের পানিও খাওয়া যেতে পারে। এসব পানীয় খুব সহজেই শরীরের পানির চাহিদা পূরণ করবে। ডাবের পানি ও ফলের শরবত খেলে পানির পাশাপাশি প্রয়োজনীয় খনিজ লবণের চাহিদাও পূরণ হবে। ঘরে তৈরি স্যালাইনও পানির চাহিদা পূরণে সাহায্য করবে।

সবজি: ফুলকপি, বাঁধাকপি, গাজর, লাউ, পেঁপে ও পালংশাকে পানির পরিমাণ ৯০ শতাংশের বেশি থাকে। পানিশূন্যতা দূর করতে এই খাবারগুলো খাদ্যতালিকায় রাখুন।

স্যুপ: বিভিন্ন প্রকার সবজি ও মুরগির মাংস দিয়ে স্যুপ রান্না করে খেতে পারেন। সবজি ও মুরগির মাংস দুটিই সহজপাচ্য। এগুলোয় পানির পরিমাণ বেশি থাকায় (প্রায় ৯২ শতাংশ) পানিশূন্যতাও দূর করে।

তরমুজ: এ সময়ের সুস্বাদু ও জনপ্রিয় ফল তরমুজ, যার প্রায় ৯২ শতাংশই পানি। গরমে পানিশূন্যতা দূর করতে তাই তরমুজের ভূমিকা অপরিসীম। ফল হিসেবে অথবা জুস কিংবা স্মুদি, যেকোনো উপায়ে তরমুজ খাওয়া যায়। এতে খুব সহজেই পানিশূন্যতা দূর হয়।

কলা: কলায় প্রচুর ভিটামিন ও মিনারেল রয়েছে। পানিশূন্যতা ও দুর্বলতা দূর করতে কলার বিকল্প নেই। সকালের নাশতায় কিংবা ব্যায়ামের আগে কলা খেয়ে নিলে যেমন শক্তি পাওয়া যায়, তেমনি শরীরের পানির চাহিদা পূরণ হয়।

শসা: শসার প্রায় ৯৬ শতাংশই পানি। তাই এ গরমে প্রতি বেলায় সালাদ হিসেবে শসা রাখুন। সালাদে শসার সঙ্গে লেটুসপাতাও রাখতে পারেন। লেটুসপাতায়ও ৯৬ শতাংশ পানি থাকে। শসার জুস করেও খেতে পারেন। স্ন্যাকস হিসেবেও নাশতায় শসা যোগ করা যায়। এতে সহজেই শরীর ও মনে সতেজ ভাব আসে।

টমেটো: টমেটোর প্রায় ৯৪ শতাংশ পানি। সালাদ, স্যুপ, জুসসহ বিভিন্নভাবে টমেটো খাওয়া যেতে পারে। টমেটোর তরকারিও পানির চাহিদা পূরণে সহায়ক। নিয়মিত টমেটো খেলে পানির পাশাপাশি শরীরের প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ লবণের চাহিদাও পূরণ হয়।

দই: দই হলো প্রোবায়োটিক–সমৃদ্ধ খাবার। এতে প্রোটিন ও ক্যালসিয়ামের পাশাপাশি ৮৮ শতাংশ পানি থাকে, যা এ গরমে পানিশূন্যতা দূর করার পাশাপাশি পেট ঠান্ডা রাখে, হজমেও সাহায্য করে।

কিছু বিষয় মনে রাখতে হবে—

■ চা, কফি দুবারের বেশি পান না করাই উচিত।

■ ভাজা–পোড়াজাতীয় খাবার না খেয়ে সহজপাচ্য খাবার খেতে হবে।

■ প্রতিদিন ২০০ মিলিলিটারের মতো লো ফ্যাট মিল্ক বা ননিবিহীন দুধ খেতে হবে।

Ref: https://www.prothomalo.com/life/health/%E0%A6%8F%E0%A6%87-%E0%A6%97%E0%A6%B0%E0%A6%AE%E0%A7%87-%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%B6%E0%A7%82%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%A4%E0%A6%BE-%E0%A6%A6%E0%A7%82%E0%A6%B0-%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A6%AC%E0%A7%87%E0%A6%A8-%E0%A6%AF%E0%A7%87%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A7%87

36
চারদিকে অনেকেরই জ্বর, কাশি ও গলাব্যথার মতো উপসর্গ দেখা দিচ্ছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের এই সময় এমন উপসর্গে দুশ্চিন্তার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। কিন্তু কেউ কেউ এসব উপসর্গকে সাধারণ সর্দি-কাশি মনে করে পাত্তাই দিচ্ছেন না। এই পরিস্থিতিতে করোনা ও সাধারণ সর্দি-কাশি তথা ফ্লুর মিল-অমিল জানা থাকা জরুরি।

করোনা ও সাধারণ ফ্লুর মিল রয়েছে যেসব উপসর্গে
দুটিই ভাইরাসজনিত রোগ। সংক্রমণ ছড়ায় পরস্পরের সংস্পর্শে, সর্দি ও হাঁচি-কাশির মাধ্যমে। বাড়াবাড়ি আকার ধারণ করলে নিউমোনিয়ার দিকে বাঁক নিতে পারে দুটোই। বিশেষ করে, যাঁরা বয়োবৃদ্ধ ও যাঁদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম, তাঁদের জন্য ফ্লু ও করোনা—দুটিই ঝুঁকিপূর্ণ।

সাধারণ কিছু সচেতনতার মাধ্যমে করোনা ও ফ্লু প্রতিরোধ করা যায়। যেমন মাস্ক পরা, হাঁচি–কাশির শিষ্টাচার মেনে চলা, সাবান–পানি দিয়ে বারবার হাত ধোয়া, অসুস্থ ব্যক্তির সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকা ইত্যাদি।

করোনা ও ফ্লুর অমিল
ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের সংক্রমণে হয় ফ্লু। আর সার্স করোনাভাইরাস গোত্রের নতুন এক সদস্যের সংক্রমণে হয় কোভিড-১৯। ফ্লুর তুলনায় করোনায় জটিলতা দেখা দেয় বেশি। কেবল নিউমোনিয়াই নয়, করোনার মারাত্মক অন্যান্য জটিলতার মধ্যে হঠাৎ হাইপোক্সিয়া বা অক্সিজেন কমে যাওয়া, এআরডিএস, রক্ত জমাট বাঁধা ইত্যাদি অন্যতম।

ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের তুলনায় করোনাভাইরাস ছড়ায়ও দ্রুত। করোনার একটা উল্লেখযোগ্য দিক হলো, এতে আক্রান্ত রোগীদের একটা বড় অংশ একেবারেই উপসর্গহীন থাকতে পারে। তবে এই রোগীরাও সংক্রমণ ছড়াতে ভূমিকা রাখে।

এদিকে অ্যালার্জিজনিত সর্দির উপসর্গ হচ্ছে অনবরত হাঁচি, নাক চুলকানো, নাক দিয়ে পানি পড়া অথবা নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া। কারও কারও চোখ দিয়েও পানি পড়ে এবং চোখ লাল হয়ে যায়। এদের আগে থেকেই ধুলাবালি, ফুলের রেণু, পোকামাকড়, পশম, পোষা প্রাণীর লোম বা প্রসাধনীতে অ্যালার্জির ইতিহাস থাকে। অ্যালার্জিতে সাধারণত জ্বর হয় না।

যা করবেন
করোনাভাইরাসের এই মহামারির সময় সন্দেহজনক কোনো উপসর্গকেই অবহেলা করা চলবে না। করোনায় প্রথমে জ্বর বা মৃদু জ্বর (তাপমাত্রা ৯৯-১০১ ডিগ্রি) থাকে। সংক্রমণের মাত্রা বাড়তে থাকলে জ্বর ১০৩-১০৪ ডিগ্রি পর্যন্ত উঠে যেতে পারে। প্রবল এই জ্বর নামতে চায় না সহজে। কারও কারও অবশ্য জ্বর দু–তিন দিনেই সেরে যায়। জ্বর দীর্ঘমেয়াদি হলে বুঝতে হবে, ফুসফুসে নিউমোনিয়া হয়েছে।

শুকনা কাশি, কাশতে কাশতে দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম করোনার সংক্রমণের লক্ষণ। ফ্লুর মতো হাঁচি, নাক বন্ধ, নাক দিয়ে পানি পড়া ততটা দেখা যায় না এতে। তবে স্বাদ ও গন্ধের অনুভূতি না চলে যেতে পারে। কারও কারও ক্ষেত্রে করোনায় চোখ লাল বা কনজাংটিভাইটিসও হতে পারে। সারা গায়ে ব্যথা, মাথাব্যথা, তীব্র অবসাদও থাকতে পারে।

করোনার মারাত্মক উপসর্গ শ্বাসকষ্ট। সাধারণত উপসর্গ দেখা দেওয়ার ৮ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে তীব্র শ্বাসকষ্ট হয়। আবার কারও কারও শ্বাসকষ্ট তেমন তীব্র অনুভূত না হলেও রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমতে থাকে।

যদি সর্দি-কাশি ও জ্বর দেখা দেয়, তাহলে আতঙ্কিত না হয়ে ঘরে বিশ্রাম নিন। উপসর্গ দেখা দেওয়ার দু–তিন দিনের মধ্যে করোনা পরীক্ষা করান। সবার থেকে দূরত্ব বজায় রাখুন। পুষ্টিকর সহজপাচ্য খাবার খান। বাড়িতে অক্সিজেন মাপতে থাকুন।

যদি জ্বর বাড়ে, অল্প পরিশ্রমেই শ্বাসকষ্ট হয়, রক্তচাপ কমে যায় অথবা রক্তে অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৯২ শতাংশের নিচে চলে যায়, তাহলে রোগীকে হাসপাতালে নিন।
Ref: https://www.prothomalo.com/life/health/%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%9B%E0%A6%95-%E0%A6%AB%E0%A7%8D%E0%A6%B2%E0%A7%81-%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%A8%E0%A6%BE-%E0%A6%A8%E0%A6%BE-%E0%A6%85%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%9C%E0%A6%BF

37
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় কখনো ভোগেনি, এমন মানুষ দেশে খুঁজে পাওয়া কঠিন। পেট ফাঁপা, পেট চিনচিন করা বা সমস্যার কারণে অনেকে দিনের পর দিন গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খেতে থাকে, কিন্তু সেরে ওঠার নাম নেই। কিন্তু কেন?

আসলে গ্যাস্ট্রিক বলে চিকিৎসাশাস্ত্রে কিছু নেই। পেটের যেকোনো সমস্যাকেই সাধারণ মানুষ গ্যাস্ট্রিক মনে করে থাকে। তবে পেপটিক আলসার এবং নন–আলসার ডিসপেপসিয়া নামে দুটি সমস্যা আছে, যেগুলোকেও অনেকেই গ্যাস্ট্রিক বলে অভিহিত করে থাকি। এগুলো কেন হয় আর এ থেকে রেহাই কীভাবে পেতে হয়, তা না জানলে কেবল মুড়ি–মুড়কির মতো গ্যাসের ওষুধ খেলে চলবে না। মনে রাখবেন, দীর্ঘ মেয়াদে টানা গ্যাস্ট্রিকের বড়ি খাওয়ার নানা জটিলতা আর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে।

পেপটিক আলসার মানে পাকস্থলীতে বা ক্ষুদ্রান্ত্রের প্রথম অংশে ঘা বা আলসার। এর কারণ দুটি। একটি হচ্ছে হেলিকোব্যাকটার পাইলোরি (এইচ পাইলোরি) নামের একধরনের ব্যাকটেরিয়া এবং অন্যটি হচ্ছে এনএসএআইডি–জাতীয় ব্যথানাশক ওষুধ সেবন। যদি পাকস্থলীতে এই বিশেষ জীবাণু হেলিকোব্যাকটার পাইলোরির সংক্রমণ থাকে, তবে সাধারণ গ্যাসের ওষুধে সেটা পুরোপুরি সেরে যাবে না, আর গ্যাস্ট্রিকের সমস্যাও মিটবে না। এ ক্ষেত্রে ভালো হওয়ার জন্য এইচ পাইলোরিনাশক অ্যান্টিবায়োটিক ও ওষুধ খেতে হবে।

এইচ পাইলোরি সাধারণত ছোটবেলায় পানি ও খাবারের সঙ্গে আমাদের শরীরে প্রবেশ করে। তারপর পাকস্থলী ও এর ঘনিষ্ঠ অংশে প্রদাহ সৃষ্টি করে। কখনো আলসার বা ঘা হয়ে যায়। ফলে আক্রান্ত ব্যক্তির সারা বছর পেটের নানা সমস্যা, ফাঁপা, ব্যথা, জ্বলা ইত্যাদি উপসর্গ লেগেই থাকে।

গবেষণায় দেখা গেছে, আমাদের দেশে বয়সভেদে শতকরা ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ মানুষ এইচ পাইলোরি সংক্রমণে আক্রান্ত। তবে আশার কথা হলো, যারা এই ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণে আক্রান্ত হয়, তাদের বেশির ভাগেরই পেপটিক আলসার হয় না। এর জন্য অন্য আরও কিছু রিস্ক ফ্যাক্টর বা ঝুঁকি আছে।

কীভাবে শনাক্ত করা যায়

কিছু ল্যাবরেটরি পরীক্ষার মাধ্যমে খুব সহজেই এইচ পাইলোরির সংক্রমণ শনাক্ত করা যায়। যেমন: ইউরিয়া ব্রেদ টেস্ট, রক্তের অ্যান্টিবডি টেস্ট (অ্যান্টি–এইচ পাইলোরি আই জি-জি), স্টুল অ্যান্টিজেন ইত্যাদি। কখনো কখনো এটি শনাক্ত করতে এন্ডোস্কপি পরীক্ষাও করা হয়ে থাকে।

যখন অ্যান্টি–এইচ পাইলোরি চিকিৎসা দরকার

এইচ পাইলোরির সঙ্গে যদি পেপটিক আলসার অথবা গ্যাস্ট্রাইটিস থাকে, তবে তখন এইচ পাইলোরিনাশক অ্যান্টিবায়োটিক অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে। আন্দাজে সারা বছর গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ বা অ্যান্টাসিড সেবন করলে লাভ হবে না। এটি কয়েকটি সমন্বিত অ্যান্টিবায়োটিক ও অন্যান্য ওষুধের একটি নির্দিষ্ট মেয়াদি কোর্সের মাধ্যমে সেবন করতে হয়।

তা ছাড়া অ্যাট্রোপিক গ্যাস্ট্রাইটিস, মাল্ট লিম্ফোমা ও গ্যাস্ট্রিক ক্যানসারের অস্ত্রোপচারের পর অ্যান্টি–এইচ পাইলোরি অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হবে। যাদের খুব নিকটজনের গ্যাস্ট্রিক ক্যানসার হয়েছে, তাদের যদি এইচ পাইলোরি থাকে, তখন আলসার না থাকলেও অ্যান্টি–এইচ পাইলোরি চিকিৎসা নিতে হবে।

জটিলতা

এইচ পাইলোরি সংক্রমণের যথাযথ চিকিৎসা না নিলে এ থেকে পেপটিক আলসার, অ্যাট্রোপিক গ্যাস্ট্রাইটিস, মাল্ট লিম্ফেমা ও গ্যাস্ট্রিক (পাকস্থলীর) ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে।

প্রতিরোধের উপায়

এইচ পাইলোরি ব্যাকটেরিয়া শরীরে প্রবেশ বন্ধ করা অত্যন্ত কঠিন কাজ। তবে ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা এবং খাবার ও পানীয় গ্রহণে সাবধানতা অবলম্বন করলে অনেক সময় সুফল পাওয়া যেতে পারে।

Ref: https://www.prothomalo.com/feature/pro-health/%E0%A6%9A%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A6%BF%E0%A7%8E%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%B6%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A7%87-%E0%A6%97%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%9F%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%95-%E0%A6%AC%E0%A6%B2%E0%A7%87-%E0%A6%95%E0%A6%BF%E0%A6%9B%E0%A7%81-%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%87-%E0%A6%A4%E0%A6%AC%E0%A7%87

38
আমাদের শরীরে একটি রাসায়নিক মান ঠিক করে চলার বিষয় আছে, যাকে বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় পিএইচ (পটেনশিয়াল অব হাইড্রোজেন) বলে। মাটি ও পানির যেমন নির্দিষ্ট পিএইচ ব্যালান্স আছে, মানুষের দেহেরও এমন ব্যালান্স থাকে, যা আমরা প্রোফাইল চেক করলে পেয়ে থাকি। এই পিএইচ ঠিক থাকলে আমরা সুস্থ, না থাকলে অসুস্থ। অনেক সময় ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্রে লেখা থাকে ‘বডি কন্ডিশন’ অ্যাসিডিক কিংবা অ্যালকালাইন। আমাদের শরীরের এ অবস্থা জানান দেয়, আমাদের পিএইচ কোন অবস্থায় আছে। অ্যাসিডিক হলে আপনি অসুস্থতার জায়গায় অবস্থান করছেন, অ্যালকালাইন হলে আপনি ভালো কন্ডিশনে আছেন।

মাঝে মাঝে প্রকৃতিতে অ্যাসিড–বৃষ্টি হয়। অ্যাসিড–বৃষ্টি হলে গাছের পাতা এবং বোঁটা শুকিয়ে পাতার কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যায়। এই অ্যাসিডের প্রভাব থেকে মুক্ত হতে গাছের শিকড় মাটি থেকে প্রয়োজনীয় অ্যালকালাইন চরিত্রের পুষ্টি (ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম) শুষে নিয়ে পাতাকে জোগান দেয়। তারপর ধীরে ধীরে পাতা আবার নতুন জীবন ফিরে পায়।

ঠিক তেমনি অ্যাসিড উৎপাদনকারী খাদ্য অ্যাসিড–বৃষ্টির মতো হজমে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে এবং দিনের পর দিন অ্যাসিড খাবারের প্রভাব চলতে থাকলে অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে গিয়ে প্রথমে পেটের পীড়া দেখা দেয়। এরপর পর্যায়ক্রমে নানা রকমের ডিজেনারেটিভ রোগ, যেমন গ্যাস্ট্রিক, আলসার, হৃদ্‌রোগ, ক্যানসার, ডায়াবেটিস, কিডনি রোগের জায়গা তৈরি করে। অথচ এটা এখন প্রমাণিত যে অ্যালকালাইন খাবার বেশি খেয়ে শরীরকে অ্যালকালাইন করতে পারলে রোগ থাকে না।

সুস্বাস্থ্যের জন্য আদর্শ রক্তের পিএইচ স্তরগুলো সামান্য অ্যালকালাইন যুক্ত (৭.৩৬৫ থেকে ৭.৪৫–এর মধ্যে) হওয়া দরকার। পিএইচ হলো হাইড্রোজেন আয়ন ঘনত্বের একটি পরিমাপ। পিএইচ স্কেল ০-১৪ পর্যন্ত হিসাব করা হয়। নিরপেক্ষ পিএইচ ৭.০। পিএইচ উচ্চতর (৭–এর বেশি) বেশি অ্যালকালাইন বা বেসিক, তবে ৭–এর চেয়ে কম পিএইচ অ্যাসিডিক। তাই লিপিডে দেখা যায়, অসুস্থ মানুষের মধ্যে খুব কমই ৭ মাত্রা পিএইচ পাওয়া যায়।

মানুষ যখন জন্মগ্রহণ করে, তখন বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই শিশু অ্যালকালাইন থাকে। শিশু ধীরে ধীরে যখন খাদ্য গ্রহণে বৈচিত্র্য আনতে থাকে, রান্নাজাতীয় খাবার বেশি খেতে থাকে, তখনই অ্যালকালাইন নিয়ে জন্ম নেওয়া শিশুটিও অ্যাসিডিক হয়ে ওঠে।

আপনার রক্তের পিএইচ ভারসাম্য বজায় রাখা নিশ্চিত করার জন্য শরীর জটিল প্রক্রিয়া অতিক্রম করে। আপনার দেহের প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াগুলোকে সমর্থন করার জন্য কেবল একটি ভারসাম্যযুক্ত খাদ্য গ্রহণ করতে হবে!

অ্যালকালাইন এবং অ্যাসিডিক খাবারের চার্ট
বেশির ভাগ শাকসবজি, বেশির ভাগ ফল, ছোলা, মুগ ও মসুর ডাল—এ খাবারগুলো অ্যালকালাইন  খাবার হিসেবে বিবেচিত

অ্যালকালাইন খাবার ও পানীয়

বেশির ভাগ শাকসবজি, বেশির ভাগ ফল, ছোলা, মুগ ও মসুর ডাল—এ খাবারগুলো অ্যালকালাইন বা লো-অ্যাসিডযুক্ত খাবার হিসেবে বিবেচিত। এগুলোকে আপনি আপনার ডায়েটের জন্য বিবেচনা করতে পারেন। সয়া (তবে আমরা যে সয়াবিন তেল নামে যা খাই, তার পিএইচ ঠিক নেই), অলিভ অয়েলসহ ছোট একটি তালিকা দেখে নিন।

উচ্চ অ্যালকালাইন খাবার
লেবু (যা অ্যাসিডিক হলেও শেষ পরিণতিতে এটা অ্যালকালাইনে পরিণত হয়ে দেহের ভারসাম্য রক্ষা করতে বেশ কার্যকর), কুল, তরমুজ, পাকা আম, পাকা পেঁপে, আনারস, আঙুর, ক্যাপসিকাম, কিশমিশ, খেজুর।

মাঝারি অ্যালকালাইন খাবার
বেশির ভাগ শাক (যা প্রাকৃতিক উপায়ে বেড়ে ওঠে), শজনে ডাঁটা, কাঁচা পেঁপে, মিষ্টিকুমড়া, ফুলকপি, বাঁধাকপি, শালগম, বেগুনসহ বেশির ভাগ সবজি। ফলের মধ্যে কলা, কমলা, কাঁঠাল, বেদানা, নাশপাতি, পেয়ারা ও বেল।

ডাবের পানি কম অ্যালকালাইন খাবার
কম অ্যালকালাইন খাবার
ডাবের পানি, শসা, ঢ্যাঁড়স, পেঁয়াজ, মুলা, টমেটো, সেদ্ধ ডিম, পানিফল, সয়া দুধ, মাশরুম।

উচ্চ অ্যাসিডিক খাবার
সব ধরনের ফাস্ট ফুড উচ্চ অ্যাসিডিক খাবার
অ্যাসিডিক খাবার ও পানীয় বিশেষত অ্যাসিডযুক্ত বা ৪ বা ৭ এর নিচে কম পিএইচসহ কিছু খাবারের মধ্যে রয়েছে সব ধরনের কার্বনেটেড পানীয় বা কোমল পানীয়, সোডা ওয়াটার, শক্তি পানীয় বা এনার্জি ড্রিংকস, কিছু দুগ্ধজাতীয় পণ্য, চিনি, অ্যালকোহল, মাংস ও সব ধরনের ফাস্ট ফুড। সব ধরনের মিষ্টি বা মিষ্টান্ন, সাদা ময়দার তৈরি সব খাবার, সাদা চালের তৈরি সব খাবার, সব ধরনের পোলট্রি মাংস, চাষের মাছ।

মাঝারি অ্যাসিডিক খাবার
চিনাবাদাম, কাজুবাদাম, মাখন, ঘি, পনির, কর্নফ্লেক্স, মুড়ি, সুজি, খই ও যব।

বেশির ভাগ গরমমসলা কম অ্যাসিডিক খাবার

কম অ্যাসিডিক খাবার
নারকেল, বার্লি, মধু, বেশির ভাগ গরমমসলা, আমন্ড বাদাম।

অ্যালকালাইন খাবার আমাদের দেহে রক্তের পিএইচ যা হওয়া দরকার, ঠিক সেখানে রাখার জন্য দুর্দান্ত কাজ করে। অ্যালকালাইন যুক্ত খাবার, যেমন শাক, ফল এবং কাঁচা সবজি পাওয়ার হাউস হিসেবে এ উদ্ভিজ্জ খাবারগুলো আমাদের দেহকে প্রয়োজনীয় ভিটামিন, খনিজ এবং ফাইটোকেমিক্যাল সরবরাহ করে।

স্বাভাবিক পিএইচ মাত্রা রাখার জন্য প্রতিদিন ৭০ শতাংশ অ্যালকালাইন এবং ৩০ শতাংশ অ্যাসিডিক খাবার গ্রহণ করলে শরীর সঠিক মাপে চলে আসবে, শরীর ভারসাম্যপূর্ণ থাকবে। আমাদের শরীরে ক্রনিক সমস্যা থাকলেও ভালো হতে থাকবে।
অ্যাসিডিক খাবার রক্তের পিএইচের মাত্রা কমিয়ে দিয়ে রক্তের গতি মন্থর ও দূষিত করে ফেলে, যা অ্যাসিডিক কন্ডিশন। এই অবস্থা শরীরে রোগ তৈরি হওয়ার ক্ষেত্র তৈরি করে, যার শুরু হয় পেট থেকে অর্থাৎ হজমের সমস্যা দিয়ে।

স্বাভাবিক পিএইচ মাত্রা রাখার জন্য প্রতিদিন ৭০ শতাংশ অ্যালকালাইন এবং ৩০ শতাংশ অ্যাসিডিক খাবার গ্রহণ করলে শরীর সঠিক মাপে চলে আসবে, শরীর ভারসাম্যপূর্ণ থাকবে। আমাদের শরীরে ক্রনিক সমস্যা থাকলেও ভালো হতে থাকবে। যদিও আমরা উল্টো পথেই চলছি, তাই শরীর ঠিক রাখার জন্য অ্যাসিড অ্যালকালাইনের দিকে খেয়াল রেখে প্রাকৃতিক নিয়মে সুস্থ থাকা সম্ভব। আমরা যদি অ্যাসিডিক খাবারগুলো কমিয়ে দিয়ে অ্যালকালাইন খাবারগুলো গ্রহণ করতে থাকি, তাহলে শরীরের ভারসাম্য রক্ষা হবে, যা সুস্থ থাকার চাবিকাঠি। দেহের এই ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে খাবার দিয়ে। কোনো ওষুধ বা সাপ্লিমেন্ট দিয়ে সেটি করা সম্ভব নয়।

লেখক: খাদ্য পথ্য ও আকুপ্রেশার বিশেষজ্ঞ

Ref: https://www.prothomalo.com/life/health/%E0%A6%B6%E0%A6%B0%E0%A7%80%E0%A6%B0-%E0%A6%B8%E0%A7%81%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%A5-%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%96%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%9A%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%A0%E0%A6%BF

39
জাপানের দেশের চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন, শুধু বিশুদ্ধ ও পরিমিত পানি পানে অনেক রোগের উপকার পাওয়া যায়। ফলে নিয়ম মেনে পানি পান করার রেওয়াজ জাপানিদের মধ্যে চালু আছে। পরিমিত পানি পান করে যেসব সমস্যায় উপকার পাওয়া যায়, সেগুলো হলো মাথাব্যথা, শরীরে বিরামহীন ব্যথা বা যন্ত্রণা, হার্টের রোগ, বাতের ব্যথা, দ্রুত হৃৎস্পন্দন, অতিরিক্ত ওজন, অ্যাজমা, টিবি, কফ রোগ, মেনিনজাইটিস (মস্তিষ্ক ঝিল্লির প্রদাহ) কিডনি এবং মূত্রবিষয়ক রোগ, বমি, গ্যাস্ট্রিক, ডায়রিয়া, ডায়াবেটিস, সব ধরনের চোখের রোগ, ক্যানসার, মস্তিষ্কের সমস্যাজনিত সব ধরনের রোগ, কান, নাক ও গলার সব ধরনের সমস্যা।

শরীরের পানি থাকার আদর্শ পরিমাপ
আমাদের শরীরে ৭২ ভাগ পানি

আমাদের রক্তের ৮৩ ভাগ পানি

হাড়ে ২২ ভাগ পানি

মস্তিষ্কে ৭৪ ভাগ পানি

পেশিতে ৭৫ ভাগ পানি

চোখে ৮০ ভাগই পানি

অর্থাৎ আমাদের শরীরের দুই-তৃতীয়াংশই হচ্ছে পানি। শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলোর সঠিক কর্ম সম্পাদনের জন্যও প্রয়োজন পানি।

সারা শরীরের রক্ত সরবরাহ ও সঞ্চালন বৃদ্ধি পায় পানি পানে

পানি শরীরের অভ্যন্তরে যে কাজটি করে
পানি রক্ত ও কোষে অক্সিজেন এবং অনান্য পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে।

সারা শরীরের রক্ত সরবরাহ ও সঞ্চালন বৃদ্ধি পায় পানি পানে।

পানি শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। পানির অভাবে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যেতে পারে।

পানি হজম শক্তি বাড়ায়, হজম প্রক্রিয়া ঠিক রাখে।

আমাদের শরীরে ঠিকভাবে খাবার হজম হওয়ার জন্য পরিমিত পানির দরকার। তাই আঁশজাতীয় খাবারের পাশাপাশি, পরিমিত পানিও পান করতে হবে।

মাথাব্যথার অনেক কারণের মধ্যে একটি হলো পানিশূন্যতা। এ ক্ষেত্রে দুই গ্লাস পানি খেয়ে ২০ মিনিট বিশ্রাম নিন দেখবেন মাথাব্যথা বন্ধ হয়ে গেছে।
পরিমিত পানি পানে যে উপকার হয়
পানি কোষ্ঠকাঠিন্য কমায়। ঠিকমতো পান না করলে শরীর সব পানি শুষে নেয়, এতে কোলন শুষ্ক হয়ে যায়, ফলে শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ ঠিকমতো নির্গত হয় না। তাই পানির পরিমাণ ঠিক থাকলে কোলনে কোনো বর্জ্য জমতে পারে না।

পানি কিডনির পাথর হওয়া থেকে বাঁচায়। কারণ, এটি ইউরিনের লবণ ও খনিজ ভেঙে দেয়, ফলে কিডনিতে পাথর হয় না।

ব্রেনের ৮৫ শতাংশ হচ্ছে পানি। একটু পরপর পানি পান করলে তাই মানসিক চাপ থেকে মুক্ত থাকা যায় এবং শারীরিক শক্তি বাড়ে।

পানি রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়, তাই উচ্চ রক্তচাপ কমে।

ত্বকে টক্সিন জমতে দেয় না, স্বাভাবিক রঙের উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে দেয়।

শরীরে বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না, বলিরেখা দূর করে।

চুলের উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে দেয়।

অক্সিজেনের পরই পানি আমাদের জীবনধারণের জন্য দ্বিতীয় উপাদান। অন্যদিকে ২৫ ভাগ অক্সিজেন পানি থেকে আসে। মাথাব্যথার অনেক কারণের মধ্যে একটি হলো পানিশূন্যতা। এ ক্ষেত্রে দুই গ্লাস পানি খেয়ে ২০ মিনিট বিশ্রাম নিন দেখবেন মাথাব্যথা বন্ধ হয়ে গেছে।

পানি পানের আদর্শ পদ্ধতি

রাতে শোয়ার আগে ভালোমতো দাঁত ব্রাশ করতে হবে।

ভোরে উঠে দাঁত ব্রাশ করার আগে ৬০০ মিলি (তিন গ্লাস) কুসুম গরম পানি পান করতে হবে এবং এক ঘণ্টা পেট খালি রাখতে হবে। এই তিন গ্লাসের মধ্যে মাঝের গ্লাসে এক টেবিল চামচ লেবুর রস দিয়ে পানি পান করুন।

সারা দিনে আরও ৮ গ্লাস পানি পান করুন।

সকালে তিন গ্লাস পানি ছাড়া বাকি সারা দিনের পানি এক গ্লাস একসঙ্গে না খেয়ে আস্তে আস্তে করে পান করুন।

খাবারের সঙ্গে সঙ্গে পানি পান না করে প্রতিবার খাবার শেষ করে ৩০ মিনিট পর এক গ্লাস পানি পান করতে হবে।

শরীর খারাপ লাগলে কিংবা জ্বর জ্বর ভাব হলে কোনো ধরনের খাবার না খেয়ে প্রতি ঘণ্টায় এক গ্লাস হালকা কুসুম গরম পানি পান করুন। ৫ থেকে ৬ ঘণ্টার মধ্যেই বুঝতে পারবেন পানি কী উপকার করেছে।

দেহের একটি মাপ আছে পানি পান করার
আমরা প্রতিদিন বিভিন্নভাবে (যেমন প্রস্রাব, ঘাম, শ্বাসপ্রশ্বাস ইত্যাদি) শরীর থেকে পানি হারাই। আমাদের ফুসফুস থেকে নিশ্বাসের সঙ্গে দৈনিক দুই থেকে চার কাপ পানি বের হয়ে যায়। অন্যদিকে দৈনিক ছয়বার বাথরুমে গেলে আরও ছয় কাপ পানি দেহ থেকে কমে যায়। প্রতিদিন কতটুকু পানি পান করতে হবে, তা দেহের উচ্চতা ও কাজের পরিমাণের ওপর নির্ভর করে।

সবার জন্য একই মাপে পানি পান করা যাবে না, যে মাপটি এখন পর্যন্ত আদর্শ মনে করা হয়, তা হলো কেজি হিসেবে দেহের ওজনকে ৩০ দ্বারা ভাগ করলে ভাগফলের পরিমাণ অনুযায়ী পানি পান করতে হবে। অর্থাৎ আপনার ওজন ৭০ কেজি হলে (৭০/৩০ = ২.৩) ২ দশমিক ৩ লিটার পানি পান করতে হবে। এর অর্থ হলো, প্রতিদিন ৮ গ্লাসের (প্রতি গ্লাস ২০০ মিলি) অধিক পানি পান করা বাঞ্ছনীয়।

বেশি পানি পানে হার্টের ওপর অপ্রয়োজনীয় চাপ পড়ে
অতিরিক্ত পানি পানের বিপদ
বেশি পানি খেলে বমি বমি ভাব, ক্লান্তি, ঘুম ঘুম ভাব, অতিরিক্ত প্রস্রাব এবং মাথাব্যথা হতে পারে। হার্টের ওপর অপ্রয়োজনীয় চাপ পড়ে। হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। কিডনির ছাঁকনি প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটায় অতিরিক্ত পানি। শরীরের কোষ ফুলতে থাকে। মাথার কোষও ফুলে যেতে পারে। পরিণাম ব্রেন স্ট্রোক। বুকে ব্যথা, লিভারের সমস্যা, পেটে যন্ত্রণা হতে পারে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি শরীরে গেলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
কখনোই একসঙ্গে অনেক পানি পান করবেন না। ভারী পরিশ্রম অথবা ব্যায়ামের সময় সবারই একটু একটু পানি পান করা উচিত। যতটুকু তৃষ্ণা ততটুকু পানি, কখনো তার চেয়ে বেশি নয়! বেশি হলেই পানির অপর নাম কেবল জীবন নয়, তা হবে মরণও।

লেখক: খাদ্য পথ্য ও আকুপ্রেশার বিশেষজ্ঞ।
Ref: https://www.prothomalo.com/life/health/%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%B6%E0%A7%81%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%A7-%E0%A6%93-%E0%A6%AA%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%AE%E0%A6%BF%E0%A6%A4-%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%BF-%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%A8-%E0%A6%8F%E0%A6%95%E0%A6%A7%E0%A6%B0%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%9A%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A6%BF%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%B8%E0%A6%BE

40
আমাদের শরীরে যখন ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যায়, তখন তা ক্রিস্টাল বা দানাদার আকারে অস্থিসন্ধিতে জমে। ফলে অস্থিসন্ধিতে প্রদাহ হয়, সন্ধি লাল হয়ে ফুলে যায়, তীব্র ব্যথা হয়। এ অবস্থাকে গাউট বা গেঁটে বাত বলে। কাজেই শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

কিডনি রোগ, স্থূলতা, মেটাবলিক সিনড্রমে ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়। যেসব খাবারে ইউরিক অ্যাসিড বাড়ে, সেগুলো পরিমিত পরিমাণে খেতে হবে। এসব খাবারের মধ্যে রয়েছে লাল মাংস (গরু, ছাগল ইত্যাদির মাংস), অ্যালকোহল, ডাল, শিম, বরবটি, কচু, লতি, পুঁইশাক, টমেটো, ফুলকপি ইত্যাদি।

ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ অতিরিক্ত বেড়ে গেলে বা অস্থিসন্ধিতে প্রদাহ দেখা দিলে মেডিসিন বা বাত রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করতে হবে। এ ছাড়া ব্যথা কমাতে ফিজিওথেরাপি বেশ কার্যকর। এ ক্ষেত্রে দক্ষ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

এবার জেনে নেওয়া যাক, যেসব ব্যায়াম ইউরিক অ্যাসিড কমাতে সাহায্য করে।

১. অ্যারোবিক ব্যায়াম: হাঁটা, জগিং, সাইকেল চালানো কিংবা নাচ ভালো ব্যায়াম হতে পারে। প্রথম দিকে ১০ মিনিট করে এসব ব্যায়াম করলেই চলবে। এরপর ধীরে ধীরে সময় বাড়িয়ে ৪৫ মিনিট পর্যন্ত করতে হবে সপ্তাহে পাঁচ দিন। পাশাপাশি সঠিক ওজন বজায় রাখার চেষ্টা করতে হবে।

২. সাঁতার: সপ্তাহে দুই দিন ১৫ মিনিট করে সাঁতার কাটতে হবে। ধীরে ধীরে সময় বাড়িয়ে তা ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট পর্যন্ত করা যাবে।

৩. স্ট্রেচিং: প্রথমে হাতের কবজি মুষ্টিবদ্ধ করে চারদিক ঘোরাতে হবে। ঘড়ির কাঁটার দিকে ও উল্টো দিকে ৩০ সেকেন্ড করে ঘোরান। এভাবে ১০ বার ব্যায়ামটি করুন। এরপর একইভাবে কাঁধের সন্ধি এবং অন্যান্য অস্থিসন্ধিতে একইভাবে ঘোরানোর বা নড়াচড়ার চেষ্টা করুন। প্রতিটি অস্থিসন্ধিতে ৩০ সেকেন্ড করে ১০ বার ব্যায়ামটি করুন।

৪. পায়ের পাতা ধরা: বসে পা দুটি সোজা করে হাত দিয়ে পায়ের পাতা ধরার চেষ্টা করুন। ৩০ সেকেন্ড ধরে রেখে আবার সোজা হয়ে বসুন। এভাবে ১০ বার করুন।

এ ছাড়া অস্থিসন্ধির ব্যথা কমাতে অথবা সন্ধি ফুলে গেলে বরফ বা ঠান্ডা সেঁক ভালো কাজ করে। অতিরিক্ত ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে গেলে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ সেবন করতে হবে।

* উম্মে শায়লা রুমকি, ফিজিওথেরাপি পরামর্শক, পিটিআরসি

Ref:https://www.prothomalo.com/life/health/%E0%A6%9A%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A7%9F%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A7%87-%E0%A6%87%E0%A6%89%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%95-%E0%A6%85%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A6%BF%E0%A6%A1-%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A7%9F%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%A3

41
করোনাভাইরাস হয়তো নতুন। কিন্তু এর প্রাদুর্ভাব নাড়িয়ে দিয়েছে আমাদের সহজাত আদিম কিছু চেতনাকে। ভয়, আতঙ্ক বা দুশ্চিন্তা সামলানো মানুষের আদিম অভ্যাস। তাই যেকোনো ভয়ে পিছিয়ে না গিয়ে সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করা জরুরি। মানসিক স্বাস্থ্যবিদেরা বলেন, এমন পরিস্থিতিতে দুশ্চিন্তা হওয়া খুব স্বাভাবিক। কিন্তু পরিস্থিতিবিশেষে দুশ্চিন্তা বেশি হলে ঘিরে ফেলে ভয়, হতাশা। নিজেকে অসহায় ভাবতে শুরু করে তখন।

করোনা থেকে বাঁচতে ঘরে থাকতে হবে, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে, হাত পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে, মাস্ক পরতে হবে। এগুলো মানতেই হবে। কিন্তু মনে যে ভাবনা কাজ করে, সেটা কত দিন? প্রতিদিন নতুন নতুন খবর, যা দুর্ভাবনা বাড়ায়। আতঙ্ক খুব সংক্রামক, তাই নিজেকে শান্ত রাখতে হবে। দুশ্চিন্তা মোকাবিলা করতে এখানে থাকছে সাতটি পরামর্শ। সিডিসি আর মানসিক স্বাস্থ্যবিদেরা এই পরামর্শ মেনে চলার কথা বলেছেন।

১. মনের দুশ্চিন্তা মেনে নিন। করোনা পরিস্থিতিতে এটি স্বাভাবিক, দুশ্চিন্তা হতেই পারে। একটু শ্বাসকষ্ট, বুক ধুকপুক করলে এত ভাবনা কেন! মনকে শান্ত করুন। সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। তবে দুশ্চিন্তাকে অস্বীকার করলে, তাকে পুষে রাখলে এই সমস্যা থেকে বের হওয়া কঠিন, বরং শান্ত হয়ে বসুন। শ্বাস নিতে নিতে ও ছাড়তে ছাড়তে ১ থেকে ১০ পর্যন্ত গুনুন। মনকে অন্যদিকে সরান, দেখবেন ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যাচ্ছে।

২. ইলেকট্রনিকস যন্ত্রের প্লাগ খুলে রাখুন। বারবার টিভিতে খবর দেখা, ইন্টারনেট ঘাঁটা, গুগল সার্চ করার কী দরকার? কমিয়ে আনুন এই অভ্যাস। যেহেতু বিষয়গুলো আপনাকে অস্থির করে তুলছে, দিনরাত কেন তাহলে খবর দেখতে হবে, ভিডিও দেখতে হবে? যেটুকু না জানলেই নয়, দিনে এক থেকে দুবার খবর দেখুন বা জেনে নিন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, যেমন ফেসবুক বা অন্য কিছু নির্ধারিত সময় মেনে স্ক্রল করুন, অযথা হাত নিশপিশ নয়।

৩. গুজব বা স্বকল্পিত চিন্তা বাদ দিয়ে সত্যটা মেনে নিন। এ কথা ঠিক যে আপনি তো বালুতে মুখ গুঁজে বসে থাকতে পারবেন না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন সব গুজব ভাসে, মিথ্যা তথ্য আসে, যা মানুষকে বিভ্রান্ত করে। অহেতুক ভয় বাড়ে। কারণ, অনেকে বিশ্বাসযোগ্যভাবে তা উপস্থাপন করেন। মনে রাখুন, এসবের অধিকাংশ হলো গুজব আর অপপ্রচার। কেবল এ দেশে কেন? পৃথিবীর প্রতিটি দেশে এমন ঘটছে। তাই বিশ্বস্ত সূত্রের সংবাদ শুনুন। এ ধরনের গুজবে বিশ্বাস আনবেন না। দেখুন উদ্বেগ কমে আসবে।

৪. প্রতিদিন নিয়ম মেনে কিছু শরীরচর্চা করুন। ঘরে বসেই করতে পারেন ব্যায়াম। সে ক্ষেত্রে চমৎকার ব্যায়াম দড়িলাফ, যথাস্থানে জগিং, বারান্দায় বাগান করা। উঁচু দালান বা ফ্ল্যাটে থাকলে সিঁড়ি বেয়ে ওঠা–নামা করা, ড্রয়িং রুমে বুকডন, পানিভর্তি দুটো বোতল হাতে নিয়ে ওঠানো–নামানো, নৃত্যগীতি নয় কেন? আর ইয়োগা, প্রাণায়মও চমৎকার হবে। গেরস্থালির কাজ রান্না করলেও শরীরচর্চা হয়। এসব ব্যস্ততা আপনার ভাবনাকে উড়িয়ে নিয়ে যাবে অন্যত্র।

৫. যুক্ত করো হে সবার সঙ্গে, মুক্ত করো হে বন্ধ। ঘরবন্দী মানে কারাবাস নয়। এই সুযোগকে নিন অন্যভাবে। এটা এক নতুন অভিজ্ঞতা, অন্যভাবে জীবনযাপন। ঘরের সবার সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ হওয়া, জীবনসঙ্গী, সন্তান, মা-বাবা, ভাইবোনের সঙ্গে পারিবারিক এক যুক্ত জীবন। এমন জীবন আগে ছিল না। এমন গৃহবাস রোমাঞ্চকর নয়? একসঙ্গে খাওয়া, খুনসুটি—কী নেই! আর বন্ধুদের সঙ্গে করুন ভিডিও কল, চ্যাট। লাইভ সেশন করুন জুম বা স্ট্রিম ইয়ার্ডে। নতুন প্রযুক্তি শেখাও হবে।

৬. দৈনন্দিন নিয়ম মেনে চলুন। ঘরবন্দী মানেই আমরা ‘মানি নাকো কোনো আইন’ কিন্তু নয়। উদ্দাম হলেও উচ্ছৃঙ্খল নয়। ঘুম থেকে ঠিক সময়ে উঠতে আর ঠিকমতো ঘুমাতে হবে। দিনের রুটিন চলবে আগের মতো।

মনে কেন আসবে শূন্যতা! ঘরে থেকে নেশায় জড়াবেন না। সবার সঙ্গে আনন্দ উপভোগ করুন। আর পাক্কা সাত-আট ঘণ্টা ঘুম হওয়া চাই কিন্তু।

৭. দুর্বল মনোবল নয়। মনে রাখবেন, এই দুশ্চিন্তার কাল চিরস্থায়ী নয়। একদিন কেটে যাবে দুশ্চিন্তার মেঘ, দেখা যাবে মুক্তির আলো। অপেক্ষা করুন। এই অপেক্ষাতেও আছে একধরনের অনুভব। আপনি একা নন। সবার জন্য এসেছে এই দুর্ভাবনার কাল। কেটেও যাবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে। দেশের মানুষের জন্য এসে গেছে করোনার টিকা। অনেকে এরই মধ্যে টিকা নিয়েছেন। কেউ আছেন অপেক্ষায়। তবে টিকা নিলেও মেনে চলবেন স্বাস্থ্যবিধি। মুখে মাস্ক, শারীরিক দূরত্ব, সাবানপানি দিয়ে হাত ধোয়া—এসব মেনে চলুন নিজের জন্য।

যেদিন দেশের সরকার জানাবেন করোনা নেই, সেদিন হবেন মুক্ত বিহঙ্গ। তত দিন থাক নতুন স্বাভাবিক জীবন। এবার মন থেকে বলুন, ‘আমরা করব জয়।’

Ref; https://www.prothomalo.com/feature/adhuna/%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%A6%E0%A7%81%E0%A6%B6%E0%A7%8D%E0%A6%9A%E0%A6%BF%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%BE-%E0%A6%AE%E0%A7%8B%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%A4-%E0%A6%89%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A7%9F

42
মানবদেহের জন্য অত্যাবশ্যকীয় পুষ্টি উপাদানগুলোর মধ্যে অন্যতম ফ্যাট বা চর্বি। মস্তিষ্কের শতকরা ৬০ শতাংশই ফ্যাট দিয়ে তৈরি। এই ফ্যাট দেহের তাপশক্তি উৎপাদন, মস্তিষ্কের বিকাশ, বিভিন্ন হরমোনের উৎপাদন, চর্বিযুক্ত দ্রবণীয় ভিটামিন শোষণ (এ, ডি, ই, কে) এবং ত্বক ও অন্যান্য অঙ্গের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়তা করে। মূলত ফ্যাট দেহের সঠিক তাপমাত্রা বজায় রাখার জন্য ইনসুলেটর বা অন্তরক হিসেবে কাজ করে থাকে।

১ গ্রাম ফ্যাট থেকে ৯ ক্যালরি শক্তি পাওয়া যায়। খাদ্য হিসেবে একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির প্রতিদিন প্রায় ৫০ গ্রাম স্নেহ পদার্থের প্রয়োজন। ফ্যাট মানেই খারাপ, অস্বাস্থ্যকর—এমন একটি ভ্রান্ত ধারণা প্রায় সবারই। কিন্তু ভালো ফ্যাটও রয়েছে। মনোআনস্যাচুরেটেড ও পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটগুলো আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। তা ছাড়া সুষম খাদ্যতালিকায় পুষ্টির সব ধরনের উপাদানই যথাযথ সমন্বয়ে থাকা উচিত। কোনোটিই বাদ দেওয়া ঠিক নয়।

মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটগুলো দেহের কোষের বিকাশ, কোলেস্টেরলের মাত্রা স্থিতিশীল রাখা এবং হৃদ্‌রোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি হ্রাস করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। অ্যাভোকাডো, বাদাম ও বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিজ্জ তেল (ক্যানোলা, জলপাই, চিনাবাদাম, তিলের তেল) মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটের ভালো উৎস। অন্যদিকে পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট প্রধানত উদ্ভিজ্জ তেল (সূর্যমুখী, তিল, সয়াবিন, কর্নওয়েল) ও সামুদ্রিক মাছে পাওয়া যায়। এই ফ্যাট খাওয়ার ফলে এলডিএল (LDL) কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস পায়। এই ফ্যাট আবার ওমেগা-৩ ও ওমেগা-৬—এই দুই ধরনের হয়ে থাকে।

ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি কমাতে, বিষণ্নতা, ক্যানসার, ডিমেনশিয়া ও আর্থ্রাইটিস থেকে রক্ষা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডগুলো সয়াবিন তেল, ক্যানোলা, আখরোট ও ফ্ল্যাক্স সিডজাতীয় উদ্ভিজ্জ খাদ্যে বেশি পাওয়া যায়। এ ছাড়া তৈলাক্ত মাছ (রুপচাঁদা, ইলিশ, পাঙাশ ইত্যাদি) ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের উৎকৃষ্ট উৎস।

ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি হ্রাস করে খারাপ কোলেস্টেরল এলডিএলের মাত্রা হ্রাস করতে এবং ভালো কোলেস্টেরল এইচডিএলের (HDL) মাত্রা বাড়াতে, ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে, রিউম্যাটয়েড, অ্যালার্জি ও উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ হ্রাসে সহায়তা করে। ওমেগা-৬–সমৃদ্ধ খাবার দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় থাকলে টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি ৩৫ শতাংশ কমে যায়। তাই প্রতিদিন ওমেগা-৬–সমৃদ্ধ খাদ্য যেমন সয়াবিন ও সূর্যমুখীর তেল, কর্নওয়েল, বাদাম ও দুগ্ধজাতীয় খাবার রাখতে হবে।

তবে খারাপ ফ্যাট বা ট্রান্সফ্যাটজাতীয় খাদ্য শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এই ফ্যাট খারাপ কোলেস্টেরল এলডিএলের পরিমাণ বাড়ায় এবং ভালো কোলেস্টেরল (HDL) কমিয়ে দেয়। বিভিন্ন গবেষণায় বলা হয়েছে, দিনে যত ক্যালরি ফ্যাট খাওয়া হয়, তার ২ শতাংশ যদি ট্রান্সফ্যাট থেকে আসে তবে হৃদ্‌রোগের আশঙ্কা প্রায় ২৩ শতাংশ বেড়ে যায়। চর্বিযুক্ত মাংস, ক্রিম, বাটার, চিজ, পাম অয়েল, নারকেল তেল, ফ্রাই ও বেকড করা খাদ্যে এই ফ্যাট বেশি পাওয়া যায়।

ফ্যাট শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি উপাদান। তাই ফ্যাটজাতীয় খাবারকে একেবারে বাদ না দিয়ে, ভালো ফ্যাট গ্রহণের মাধ্যমে শরীরের প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণ এবং খারাপ ফ্যাট বর্জনের মাধ্যমে বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

Ref: https://www.prothomalo.com/life/health/%E0%A6%AB%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%9F-%E0%A6%95%E0%A6%A4%E0%A6%9F%E0%A6%BE-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A7%9F%E0%A7%8B%E0%A6%9C%E0%A6%A8

43
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের শরীর একটু ভারী হবে, মেদ জমবে, স্থূল হয়ে যাবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু শিশুদের ঝরঝরে পাতলা ছুটন্ত শরীরে অতিরিক্ত মেদ জমা, মুটিয়ে যাওয়া, ওজন বেড়ে যাওয়া মোটেও স্বাভাবিক নয়। তবে ইদানীং শিশুদের মধ্যেও স্থূলতার হার বেড়েছে।

শিশুর স্থূলতার কারণ
কোনো শিশুর শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমে বয়স অনুপাতে ওজন বেশি হয়ে গেলে, তাকে স্থূলকায় বলা যায়। বৈজ্ঞানিকভাবে শিশুর শরীরের ওজন এবং তার উচ্চতার একটা আনুপাতিক হিসাব করে স্থূলতা সঠিকভাবে নির্ণয় করা হয়।

শিশুর মোটা হয়ে যাওয়ার যতগুলো কারণ আছে, তার মধ্যে প্রয়োজনীয় কায়িক পরিশ্রমের ঘাটতি এবং বেশি বেশি ও বারবার খাওয়ানো অন্যতম। অধিক শর্করাযুক্ত খাবার, যেমন বেশি ভাত, মিষ্টি, কোমল পানীয় অথবা চর্বিযুক্ত খাবার, জাঙ্ক ফুডে আসক্তি শিশুর স্থূলতার কারণ। এর পাশাপাশি বংশগত কারণ, শরীরে হরমোনজনিত সমস্যা, যেমন থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতি, মেয়েদের পলিসিস্টিক ওভারির সমস্যা, লম্বা সময় ধরে স্টেরয়েড–জাতীয় ওষুধ সেবন অথবা শরীরে করটিসল হরমোনের আধিক্যও স্থূলতায় ভূমিকা রাখে।

স্থূলতার কারণে যেসব সমস্যা হয়
অতিরিক্ত মোটা শিশুদের অল্প বয়সে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ইত্যাদিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

স্থূলকায় শিশুদের রক্তে অতিরিক্ত চর্বি বেড়ে যায় এবং তাদের করনারি রক্তনালির সমস্যা, স্ট্রোক ইত্যাদির ঝুঁকি বেশি।

শরীরের অতিরিক্ত ওজনে হাতে ব্যথা, পা বাঁকা ইত্যাদি সমস্যাও হতে পারে।

স্থূলকায় অনেক শিশুর নাক দিয়ে শ্বাস নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। এদের মধ্যে হাঁপানির প্রকোপও বেশি। অনেকের আবার ঘুমের মধ্যে শ্বাসকষ্ট হয়।

অনেকের ঘাড়ের চামড়া কালো হয়ে যায়।

স্থূলকায় শিশুরা কাজকর্মে অল্পতে হাঁপিয়ে যায়। এদের অলস হওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি।

অনেকের যকৃতে চর্বি জমে ফ্যাটি লিভার নামক একধরনের রোগের সৃষ্টি হয়।

প্রতিরোধ
স্বাস্থ্যকর ও অস্বাস্থ্যকর খাবারের বিষয়ে শিশুকে সচেতন করা।

দৈনিক খাবারের সময় নির্ধারণ করে বাসার সবাই যতটা সম্ভব একসঙ্গে বসে খাওয়ার অনুশীলন করা।

জোর করে না খাওয়ানো। মুঠোফোন, টেলিভিশন দেখিয়ে খাওয়ানোর অনুশীলন বন্ধ করতে হবে। শিশুরা ক্ষুধার্ত হলেই শুধু খাবার দিতে হবে।

শিশুকে সব সময় খাইয়ে না দিয়ে নিজে নিজে খেতে উৎসাহ দিতে হবে।

দোকানের কেনা অতিরিক্ত চর্বি ও চিনিজাতীয় খাবার না দিয়ে বাড়িতে তৈরি শাকসবজি, মাছ, ডাল ইত্যাদি শিশুর চাহিদা অনুযায়ী দিতে হবে। পরিমিত মাংস খাওয়াতে হবে। চিনিযুক্ত কোমল পানীয় নিরুৎসাহিত করতে হবে।

নিয়মিত কায়িক পরিশ্রমের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।

শিশুর স্থূলতার কারণ নির্ণয় করতে নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্র অথবা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে। জটিলতা তৈরি হওয়ার আগেই প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে হবে।
Ref: https://www.prothomalo.com/life/health/%E0%A6%B6%E0%A6%BF%E0%A6%B6%E0%A7%81%E0%A6%B0-%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%A5%E0%A7%82%E0%A6%B2%E0%A6%A4%E0%A6%BE-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%A7-%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A6%AC%E0%A7%87%E0%A6%A8-%E0%A6%AF%E0%A7%87%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A7%87

44
দৈহিক ওজন বৃদ্ধির মূল কারণ হলো শক্তি ও তার ব্যবহারের মধ্যে অসংগতি। আমাদের গৃহীত প্রায় প্রতিটি খাবারেই শক্তি ক্যালরি হিসেবে থাকে। মানুষের বয়স, লিঙ্গ, ওজন ও দৈনন্দিন কাজের ওপর শরীরের ক্যালরির চাহিদা নির্ভর করে। কেউ যদি তার প্রাত্যহিক চাহিদার চেয়ে বেশি ক্যালরি প্রতিদিন বা প্রায়শই খাবারের মাধ্যমে গ্রহণ করে, তবে বাড়তি অংশ শরীরে মেদ হিসেবে জমতে থাকবে। স্থূলতা নিরূপণের জন্য কিছু পদ্ধতি আছে। এর মধ্যে বিএমআই সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়।

ওজন কমিয়ে কী লাভ?
দৈহিক ওজন কমিয়ে অনেক রোগের ঝুঁকি বহুলাংশে কমানো যায়। মাত্র ৫ থেকে ১০ শতাংশ ওজন কমিয়ে অনেক স্বাস্থ্যসুবিধা পাওয়া যেতে পারে। যেমন ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপে ভোগার ঝুঁকি কমা, রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টরল কমতে সাহায্য করা, আর্থ্রাইটিসে ভোগার সম্ভাবনা কমা, শ্বাসপ্রশ্বাসের উন্নতি ঘটা ইত্যাদি। এতে রাতে ভালো ঘুমের সম্ভাবনা বাড়ে। অনেক ক্যানসারের ঝুঁকিও কমে।

ওজন কমাবেন কীভাবে?
আপনি যদি বুঝতে পারেন যে আপনার দৈহিক ওজন বেশি আছে, তবে এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। তিনি আপনার আপাত ও স্থায়ী শারীরিক ঝুঁকি বিবেচনা করে পালনীয় পন্থা বলে দেবেন।

ওজন কমানোর প্রথম ধাপ হলো জীবনধারায় কিছু পরিবর্তন আনা। সামগ্রিক জীবনে শৃঙ্খলাবোধ আনা, খাদ্য গ্রহণে ইতিবাচক পরিবর্তন ও নিয়মিত দৈহিক পরিশ্রম করা প্রথম ধাপ। ওজন কমাতে গিয়ে কখনোই খুব বেশি তাড়াহুড়া করা উচিত নয়। দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় কম ক্যালরি আছে, এমন খাদ্য বেশি রাখুন। এ রকম খাদ্যগুলো হলো শাকসবজি, কাঁচা টক ফল, গোটা শস্য ইত্যাদি। আগে সারা দিনে যে পরিমাণ খাদ্য গ্রহণ করতেন, এখনো সে পরিমাণেই খেতে পারবেন যদি খাদ্যতালিকায় উচ্চ ক্যালরিসম্পন্ন খাবার কমিয়ে আনা হয়।

খাদ্যের ক্যালরি কমানোর সহজ উপায়
যথাসম্ভব বর্জন করুন ফাস্টফুড, কোমল পানীয়, ভাজা ও তৈলাক্ত খাবার। খাবারের শেষে মিষ্টি বা ডেজার্ট খাবেন না। চিনি বা মিষ্টি–জাতীয় খাদ্য যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন। বেশি করে মাছ, শাকসবজি ও ফলমূল খেতে হবে। মুরগির মাংস খেতে হবে চামড়া ছাড়া। গরু-খাসির মাংস কম খেতে হবে।

তেলে ভেজে না খেয়ে সিদ্ধ ডিম খেতে হবে। দুধ-চিনি ছাড়া হলে চা বা কফিতে কোনো বাধা নেই। কৃত্রিম চিনি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

রান্নায় বেশি পানি ব্যবহার করুন। তেল ও মসলা যতটা সম্ভব কম দিতে হবে। দই, নারকেল, ঘি ও ডালডা দিয়ে রান্না করা যাবে না।

দিনে ৬-৮ গ্লাস পানি পান করতে হবে। প্রতিবার খেতে বসার আগে ১ থেকে ২ গ্লাস পানি পান করলে পেট ভরার অনুভূতি থাকবে।

সরবর্জিত দুধ পান করতে হবে। তাজা ফল খেতে হবে, কাস্টার্ড বা জুস নয়।

দৈহিক শ্রম
প্রত্যহ কমপক্ষে ৩০ মিনিট শরীরচর্চা করার চেষ্টা করতে হবে। একটানা ৩০ মিনিট সম্ভব না হলে, ২-৩ বারে করা যেতে পারে। হাঁটা সবচেয়ে ভালো। বিকল্প হিসেবে ২০ থেকে ৩০ মিনিট সাঁতার কাটা, সাইকেল চালানো, ব্যাডমিন্টন বা টেনিস খেলার কথা ভাবা যেতে পারে।

Ref: https://www.prothomalo.com/life/health/%E0%A6%AF%E0%A7%87%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A7%87-%E0%A6%93%E0%A6%9C%E0%A6%A8-%E0%A6%95%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A4%E0%A7%87-%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%A8

45
স্থূলতা ও ওজনাধিক্য বর্তমান বিশ্বের অন্যতম বড় স্বাস্থ্য সমস্যা। নগরায়ণ, কায়িক শ্রমের অভাব, খাদ্যাভ্যাসে বিপুল পরিবর্তন বিশ্বব্যাপী স্থূলতার হার বাড়িয়ে দিচ্ছে। আর স্থূলতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রোগগুলো, যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল, হৃদ্‌রোগ, স্ট্রোক, আর্থ্রাইটিস ইত্যাদি। চিকিৎসাবিজ্ঞানে স্থূলতা বা ওবেসিটিকে একটি গুরুতর রোগ হিসেবেই ধরা হয়। আর বলা হয় এর যথাযথ সময়ে চিকিৎসার কথা।

আপনি কি স্থূল
একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ বা নারীর আদর্শ ওজন কত হওয়া উচিত, তা জানতে বিএমআই বা বডি মাস ইনডেক্সের পরিমাপ ব্যবহার করা হয়। ওজনকে (কিলোগ্রামে) উচ্চতার (মিটারে) দ্বিগুণ বা বর্গ (স্কয়ার) দিয়ে ভাগ করলেই এই বিএমআইয়ের হিসাব পাওয়া যায়। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের স্বাভাবিক বিএমআই হলো ১৮ দশমিক ৫ থেকে ২৪ দশমিক ৯ পর্যন্ত। বিএমআই ২৫–এর ওপর হলে সেটি ওভারওয়েট বা ওজনাধিক্য। বিএমআই যদি ৩০–এর ওপর হয়, তবে সেটি ওবেস বা স্থূল। আর ৪০–এর ওপর বিএমআই হলে তা মরবিড ওবেস বা গুরুতর রকমের স্থূল বলা যায়।

স্থূলতার আরেকটি পরিমাপ হলো পেটের মাপ বা ওয়েস্ট সারকামফেরেন্স। এশীয় পুরুষদের পেট বা ভুঁড়ির মাপ ৯০ সেন্টিমিটারের বেশি আর নারীদের ৮০ সেন্টিমিটারের বেশি হলে তাকে স্থূল ধরা হয়। এশীয়দের কম উচ্চতার জন্য বিএমআই স্বাভাবিক থাকলেও পেটের মাপ প্রায়ই বেশি পাওয়া যায়। আর এই উদরের চর্বি বা অ্যাবডোমিনাল ফ্যাট নানা রকমের রোগের জন্য দায়ী।

কেন ওজন বাড়ে
ওবেসিটি বা ওজন বাড়ার পেছনে মূল কারণ হলো ক্যালরি গ্রহণ আর ক্যালরি ক্ষয়ের মধ্যে অসামঞ্জস্য। আমরা দৈনিক যত ক্যালরি খেয়ে থাকি, সে অনুযায়ী খরচ না করলে বা পরিশ্রম না করলে সেই অতিরিক্ত ক্যালরি মেদ বা চর্বি হিসেবে দিন দিন জমা হতে থাকে।

দ্রুত নগরায়ণ আর যন্ত্রনির্ভরতার কারণে কায়িক পরিশ্রম কমছে মানুষের, অপর দিকে বাড়ছে উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবার (ফাস্ট ফুড, ডেজার্ট, কোমল পানীয়) গ্রহণের প্রবণতা। শৈশব থেকেই মন্দ খাদ্যাভ্যাস আর কম পরিশ্রম
স্থূলতার ঝুঁকিতে ঠেলে দিচ্ছে বর্তমান বিশ্বের মানুষকে। এ ছাড়া খেলাধুলার স্থানের অভাব, অফিসে দিনমান টেবিলে বসে কাজ, কম্পিউটার-সেলফোন বা গাড়ি লিফটের প্রতি অতিনির্ভরতা, স্ট্রেস ইত্যাদি পরোক্ষভাবে স্থূলতার জন্য
দায়ী।

কিছু হরমোনজনিত রোগ স্থূলতার জন্য দায়ী হতে পারে। যেমন শরীরে স্টেরয়েড হরমোনের আধিক্য (কুশিং সিনড্রোম), হাইপোথাইরয়েডিজম, পলিসিস্টিক ওভারি ডিজিজ ইত্যাদি।

কিছু ওষুধ দীর্ঘদিন ব্যবহারের কারণেও ওজন বাড়ে। যেমন স্টেরয়েড–জাতীয় ওষুধ, ইনসুলিন, ডায়াবেটিসের সালফোনিল ইউরিয়া ওষুধ, অ্যান্টিসাইকোটিক গ্রুপের কিছু ওষুধ, জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি ইত্যাদি। কিছু জিনগত রোগে (যেমন প্রেডার উইলি সিনড্রোম) আক্রান্ত ব্যক্তি অস্বাভাবিক রকম স্থূল হতে পারে।

স্থূলতার সমস্যা
টাইপ–২ ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদ্‌রোগ, স্ট্রোক বা পক্ষাঘাত ইত্যাদি রোগের ঝুঁকি বাড়ায় শরীরের মেদ। স্থূলতার কারণে হাঁটুতে অস্টিওআর্থ্রাইটিস বা কোমরে ব্যথা হয়। স্লিপ এপনিয়ার প্রধানতম কারণ হলো স্থূলতা। এমনকি ব্রেস্ট ক্যানসার, কোলন ক্যানসারসহ বেশ কিছু ক্যানসারের পেছনেও স্থূলতাকে দায়ী করা হয়। পিত্তথলিতে পাথর, ইনফারটিলিটি বা বন্ধ্যত্ব, ডিপ্রেশন ইত্যাদি সমস্যার সঙ্গেও স্থূলতার সম্পৃক্ততা রয়েছে।

কেবল ওজন কমানোর মাধ্যমে অনেক রোগের ঝুঁকি কমানো যায়। বিজ্ঞানীরা বলেন, ৫ থেকে ১০ শতাংশ ওজন কমাতে পারলেই আপনার রক্তচাপ, রক্তের শর্করা ও রক্তের চর্বির অভাবনীয় উন্নতি দেখতে পাবেন। কমে যাবে ক্যানসারের ঝুঁকিও।

স্থূলতার চিকিৎসা
বিএমআই ৩০–এর বেশি হলে ওজন কমাতে খাদ্যাভ্যাস ও ব্যায়ামের পাশাপাশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে চিকিৎসা নিতে পারবেন। তবে কারও যদি কো-মরবিডিটি থাকে (যেমন অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ বা হৃদ্‌রোগ, স্লিপ অ্যাপনিয়া) তাহলে বিএমআই ২৭–এর ওপরও এই চিকিৎসা শুরু করা যেতে পারে।

ওবিসিটির তিন ধরনের চিকিৎসা স্বীকৃত। মুখে খাবার ওষুধ, ইনজেকশন আর সার্জারি। কয়েক রকমের মুখে খাবার ওষুধ (যেমন ওরলিস্ট্যাট, টপিরামেট, বুপ্রোপ্রিওন ইত্যাদি) এফডিএ দ্বারা স্বীকৃত। লিরাগ্লুটাইড, সিমাগ্লুটাইড ইত্যাদি ইনজেকশন আকারে ব্যবহৃত হয়—এগুলো আসলে গ্লুকাগন লাইক পেপটাইড নামের হরমোন গোত্রের ওষুধ।

বিএমআই ৪০–এর বেশি কিংবা আনুষঙ্গিক রোগ থাকলে বিএমআই ৩৫–এর বেশি হলেও ব্যারিয়াট্রিক সার্জারি করা যাবে। বাংলাদেশে এ ধরনের শল্যচিকিৎসা শুরু হয়েছে।

ওজন কমাবেন কীভাবে
দৈনিক ক্যালরি গ্রহণ কমিয়ে আর ক্যালরি ক্ষয় বাড়িয়েই আপনি ওজন কমাতে পারবেন। তার জন্য প্রথমে চাই মোটিভেশন ও সদিচ্ছা। হঠাৎ করে বা রাতারাতি ওজন কমানোর চেষ্টা করবেন না। দীর্ঘ মেয়াদে পরিকল্পনা করুন। কেবল ওজন কমালেই চলবে না, সেই কম ওজন ধরে রাখাও চাই।

উচ্চতা অনুযায়ী আপনার আদর্শ ওজন কত হওয়া উচিত, তা আগে জেনে নিন। সেটা হলো আপনার লক্ষ্য। লক্ষ্য যদি খুব দূরে হয়, মানে আপনার ওজন অতিরিক্ত বেশি হয়, তবে প্রথমে ৫ শতাংশ ওজন কমানোর লক্ষ্য ঠিক করুন।

আদর্শ ওজন অনুযায়ী একটি ক্যালরি চার্ট বা খাদ্যতালিকা করে নিন। প্রতিদিনের ক্যালরি থেকে ৫০০ থেকে ৬০০ ক্যালরি কমিয়ে ফেললে ওজন কমতে শুরু করবে।

শুধু ক্যালরি কমালেই হবে না; খাবার বাছাই করতে হবে সযত্নে। জটিল ও আঁশযুক্ত শর্করা গ্রহণ করবেন গ্লুকোজের উৎস হিসেবে। ভালো মানের প্রোটিন খেতে হবে। রেড মিট কমিয়ে মাছ, মুরগি, ডাল, বীজ, ডিম, দুধ থেকে আমিষ নেওয়ার চেষ্টা করুন। ফ্যাট বা চর্বি গ্রহণ কমাতে হবে দৈনিক ২০ শতাংশ। সেই চর্বি অসম্পৃক্ত চর্বি বা ওমেগা ৩ সমৃদ্ধ হলে ভালো। সামুদ্রিক মাছ, বাদাম ইত্যাদিতে আছে এই ওমেগা ৩। সম্পৃক্ত চর্বি (ঘি, মাখন, ডালডা, মাংসের গায়ে লেগে থাকা চর্বি) বাদ দিতে হবে। উচ্চ ক্যালরিযুক্ত যেকোনো খাবার যেমন ফাস্ট ফুড, কোমল পানীয়, মিষ্টি, চকলেট, ট্রান্সফ্যাট বাদ দিতে হবে। দিনে অন্তত ৬ গ্রাম ফাইবার বা আঁশ গ্রহণ করতে হবে।

দীর্ঘদিন কম ওজন ধরে রাখার জন্য সুষম খাদ্যাভ্যাস সবচেয়ে ভালো। ভেরি লো ক্যালরি ডায়েট, লো কার্ব বা কিটো ইত্যাদি জনপ্রিয় ডায়েটে প্রাথমিকভাবে ওজন কমলেও ১২ থেকে ২৪ মাস পর মেটাবলিক, কার্ডিওভাসকুলার কোনো উপকার পাওয়া যায়নি। আর মনে রাখবেন, কেবল ডায়েটের মাধ্যমে দীর্ঘ সময় ওজন কমানোর প্রবণতা ধরে রাখা সম্ভব নয়। এর সঙ্গে চাই ব্যায়াম।

প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ মিনিট বা সপ্তাহে কমপক্ষে ১৫০ মিনিট ব্যায়াম বা অ্যারোবিক এক্সারসাইজ করতে হবে। দ্রুত হাঁটা, জগিং, সাঁতার, সাইকেল চালনা ইত্যাদি হলো অ্যারোবিক ব্যায়াম।

ব্যায়ামের পাশাপাশি দৈনন্দিন প্রচেষ্টায়ও কিছু লাভ আছে। যেমন অফিসে কাজের ফাঁকে পায়চারি, বাগানে বা গৃহকর্মে অংশ নেওয়া, লিফট ব্যবহার না করে সিঁড়ি ব্যবহার করা, গাড়ির বদলে হেঁটে বাজার করা ইত্যাদিতেও ক্যালরি ক্ষয় হয়। দৈনিক দশ হাজার পদক্ষেপ বা স্টেপস হাঁটাহাঁটির চেষ্টা করুন সব মিলিয়ে।

Ref: https://www.prothomalo.com/feature/pro-health/%E0%A6%AE%E0%A7%87%E0%A6%A6-%E0%A6%AD%E0%A7%81%E0%A6%81%E0%A7%9C%E0%A6%BF-%E0%A6%95%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%AC-%E0%A6%95%E0%A7%80%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A7%87

Pages: 1 2 [3] 4 5 ... 25