প্রজ্ঞা কাকে বলে এবং কিভাবে আরও বেশি প্রজ্ঞাবান হওয়া যায়
Wisdom বা প্রজ্ঞা কাকে বলে?
প্রজ্ঞা হলো এমনভাবে কাজ করা এবং কথা বলা যেন এই দুনিয়াতে ও পরকালে আপনার সর্বাধিক উপকার হয় এবং উভয় জগতে আপনার ক্ষতিও যেন সবচে কম হয়।
তাহলে প্রজ্ঞাবান মানুষ সবচে বেশি লাভবান হয় এবং সবচে কম ক্ষতির সম্মুখীন হয়।
আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা কুরআনে হিকমা বা প্রজ্ঞার প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেন- یُّؤۡتِی الۡحِکۡمَۃَ مَنۡ یَّشَآءُ ۚ وَ مَنۡ یُّؤۡتَ الۡحِکۡمَۃَ فَقَدۡ اُوۡتِیَ خَیۡرًا کَثِیۡرًا - তিনি যাকে ইচ্ছা প্রজ্ঞা দান করেন। আর যাকে প্রজ্ঞা দান করা হয় তাকে তো প্রভূত কল্যাণ দান করা হয়; (২ঃ২৬৯)
তাহলে প্রজ্ঞা আসে আল্লাহর কাছে থেকে। তিনি যাকে ইচ্ছা প্রজ্ঞা দান করেন।
এখন, কেউ যদি বলে- আমাকে অতটা হিকমত দেওয়া হয়নি। আমি বেশি স্মার্ট না। আমার তেমন প্রজ্ঞা নেই।
এর উত্তরে আমরা বলি- এটাও মানব চরিত্রের সকল গুণের মত। এর একটা অংশ জন্মগতভাবে আল্লাহ আপনাকে দান করেছেন আর আরেকটা অংশ আল্লাহ আপনাকে অর্জন করার অনুমতি দিয়েছেন। কেউ হয়তো জন্মগতভাবেই সহজে রেগে যায়, আবার কেউ জন্মগতভাবেই অনেক ধৈর্যশীল। এখানে কেউ-ই অজুহাত দেখাতে পারবে না। উভয়কেই আরও ভালো হওয়ার জন্য ক্রমাগত চেষ্টা করে যেতে হবে।
শক্তি-সামর্থ্য এবং দুর্বলতা আল্লাহর দান আর তিনি এগুলো তাঁর সৃষ্টির মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছেন। আপনাদের সবার প্রতিভা এবং সামর্থ্য যেমন আছে, ঠিক তেমনি দুর্বলতাও আছে।
তো, এটা ঠিক যে কেউ হয়তো জন্ম থেকেই অন্যদের চেয়ে বেশি প্রজ্ঞা এবং বিচক্ষণতার অধিকারী। কিন্তু, এর মানে এটা নয় যে, যার প্রজ্ঞা নেই তাকে সারা জীবন ধরে বোকা হয়ে থাকতে হবে।
না। যার যে কোনো চারিত্রিক গুণের স্বল্পতা রয়েছে তাকে অবশ্যই সেটা বৃদ্ধি করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। আর আপনি আসলে চেষ্টা এবং অধ্যবসায় দ্বারা যে কোনো চারিত্রিক গুণ অর্জন করতে পারবেন। কিভাবে আমরা এটা জানি? এটা কুরআনেই আছে।
আমরা অনেকেই এ আয়াতটির কথা জানি। আমরা যখন মানুষকে আল্লাহর পথে আহ্বান করবো তখন কিভাবে করবো? আল্লাহ বলেন- "মানুষকে আল্লাহর পথে ডাক হিকমত বা প্রজ্ঞা সহকারে।" এখন, প্রজ্ঞা যদি এমন কিছু হয়ে থাকত যা শুধু মানুষ জন্ম সূত্রে পেয়ে থাকে তাহলে এ আয়াতের তো কোনো অর্থ থাকে না। ব্যাপারটা এমন যেন আল্লাহ আমাদেরকে এমন কিছু করতে বলছেন যা আমাদের পক্ষে করা সম্ভব নয়। না। এর অর্থ এটা নয়।
আল্লাহ এখানে আমাদের বলছেন তোমরা প্রত্যেকেই কিছুটা প্রজ্ঞা অর্জন করো এরপর এটা দাওয়াতি কাজে প্রয়োগ করো। তাহলে আল্লাহ আমাদের এখানে দেখাচ্ছেন- হ্যাঁ, প্রজ্ঞা এমন কিছু যা তোমরা ইচ্ছা করলে অর্জন করতে পারবে। যদি প্রাকৃতিকভাবে তোমার মাঝে এটার অভাব থাকে।
এখন, হিকমার অনেকগুলো প্রকারভেদ আছে।
এক নাম্বারঃ ধর্মীয় প্রজ্ঞা। এটা সবচে গুরুত্বপূর্ণ। আর তা হলো- আল্লাহর শরীয়ত অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করা। হাসান আল বসরী বলেন- “হিকমতের মূল নির্যাস হলো আল্লাহর ভয়।” এজন্য মন্দ কাজ করাকে আল্লাহ তায়ালা বোকার কাজ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন- یَعۡمَلُوۡنَ السُّوۡٓءَ بِجَهَالَۃٍ - "যারা অজ্ঞতা বশতঃ পাপ করে থাকে...।" আল্লাহর অবাধ্যতা হলো চরম বোকামি। ইবনে আব্বাস (রা) বলেন- "এমন প্রত্যেকেই যে আল্লাহর অবাধ্যতা করে সে হলো একটা জাহেল বা বোকা।" সে প্রজ্ঞা সহকারে কাজ করেনি।
দুই নাম্বারঃ মানুষের সাথে আচরণ করার সময় প্রজ্ঞা। কিভাবে আপনার অফিসের বসের সাথে আচরণ করেন, কিভাবে শত্রুর সাথে আচরণ করেন, কিভাবে আপনার স্বামী/স্ত্রীর সাথে আচরণ করেন, কিভাবে বাচ্চাদের সাথে আচরণ করেন। শুধু আপনার আচরণ দ্বারা কোনো একটি সম্পর্ক ভাঙ্গতে বা গড়তে পারেন। কত শত বিবাহ ভেঙ্গে গেছে শুধু একজনের প্রজ্ঞার অভাবে। কত মানুষ চাকরি হারিয়েছে কারণ সে বিচক্ষণতার সাথে আচরণ করেনি।
তিন নাম্বারঃ ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রজ্ঞা। ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে প্রজ্ঞা।
এ প্রজ্ঞাগুলোর সবগুলোই অর্জন করা সম্ভব যদি কারো এগুলো কম থাকে। কিন্তু কিভাবে?
১। ইখলাস। এটাই সবকিছুর শুরু। গুণটি অর্জন করার আকাঙ্ক্ষা। পাওয়ার জন্য অন্তরে তীব্রই ইচ্ছা থাকতে হবে। প্রজ্ঞা পাওয়ার জন্য দোআ করতে হবে। আমাদের রাসূল (স) ইবনে আব্বাসের জন্য এভাবে দোআ করতেন- "আল্লাহুম্মা আল্লিমহুল হিকমা- ও আল্লাহ! তাকে প্রজ্ঞা শিক্ষা দান করুন।" ইব্রাহিম (আ) দোআ করতেন- "রাব্বি হাবলিই হুকমা- ও আল্লাহ! আমাকে প্রজ্ঞা দান করুন।"
২। জ্ঞান। কোনো কিছু অর্জন করার মূল হলো জ্ঞান। তাই, কিছু অর্জন করতে চাইলে এ বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করুন। আল্লাহ তায়ালা কুরআনে রাসূল (স) এর বর্ণনা দিয়েছেন এভাবে- وَيُعَلِّمُهُ ٱلْكِتَٰبَ وَٱلْحِكْمَةَ - "তিনি তাদের কিতাব এবং হিকমত শিক্ষা দান করেন।" তো, আমরা কুরআন হাদিস পড়ার মাধ্যমে ধর্মীয় প্রজ্ঞা সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করব। আর অন্য কোনো বিষয় পড়ার মাধ্যমে সে বিষয়ের প্রজ্ঞা সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করবো।
৩। অভিজ্ঞতা। মুয়াবিয়া (রা) বলেছেন- "অভিজ্ঞতা ছাড়া কোনো প্রজ্ঞা নেই।" এ জন্য টিনেজাররা অনেক সময় প্রজ্ঞাহীন আচরণ করে। তাদের কিছুটা ছাড় দান করুন। কেননা, তারা এখনো জীবনের অভিজ্ঞতা অর্জন করার যথেষ্ট সুযোগ পায়নি। ১৭-১৮ বয়সে আপনি যেভাবে আচরণ করতেন ৩০-৩৫ বছরে সেভাবে আচরণ করেন না। কেন? কারণ, জীবনের অভিজ্ঞতা আপনাকে এমন কিছু শিক্ষা দান করবে যা আপনি বই পড়ে শিখতে পারবেন না।
৪। অন্যদের দেখে প্রজ্ঞা শেখা। চোখ কান খোলা রেখে, আন্তরিক হয়ে, ধৈর্যশীল হয়ে এবং চারপাশ পর্যবেক্ষণ করে প্রজ্ঞা শেখা যায়। যদি মন-মস্তিষ্ক খোলা রেখে চারপাশ পর্যবেক্ষণ করেন, সমাজের মানুষের আচার আচরণ খেয়াল করেন তাহলে অনেক কিছু শিখতে পারবেন। কিন্তু যদি অহংকারী হন, শেখার কোনো আগ্রহ না থাকে তাহলে অন্যদের দেখে আপনি কিছু শিখতে পারবেন না। আমাদের অতীতের আলেমেরা বলতেন- "প্রজ্ঞাবান ব্যক্তি অন্যদের দেখে থেকে শেখে, অন্য মানুষ তাকে দেখে শেখার পরিবর্তে।" আপনি অন্যদের ভুল থেকে শিক্ষা নিবেন, মানুষ আপনার ভুল থেকে শেখার পরিবর্তে।
- ড. ইয়াসির কাদি
Source: Collected from Social Media