Daffodil International University

Entertainment & Discussions => Story, Article & Poetry => Topic started by: Sultan Mahmud Sujon on May 21, 2012, 10:19:45 PM

Title: Rabindranath Tagore - Part-3
Post by: Sultan Mahmud Sujon on May 21, 2012, 10:19:45 PM

২১

অনেক দিনের আমার যে গান আমার কাছে ফিরে আসে
তারে আমি শুধাই, তুমি ঘুরে বেড়াও কোন্ বাতাসে ।।
যে ফুল গেছে সকল ফেলে গন্ধ তাহার কোথায় পেলে,
যার আশা আজ শূন্য হল কী সুর জাগাও তাহার আশে ।।
সকল গৃহ হারালো যার তোমার তানে তারি বাসা,
যার বিরহের নাই অবসান তার মিলনের আনে ভাষা ।
শুকালো যেই নয়নবারি তোমার সুরে কাঁদন তারি,
ভোলা দিনের বাহন তুমি স্বপন ভাসাও দূর আকাশে ।।

২২

পাখি আমার নীড়ের পাখি অধীর হল কেন জানি–
আকাশ-কোণে যায় শোনা কি ভোরের আলোর কানাকানি ।।
ডাক উঠেছে মেঘে মেঘে, অলস পাখা উঠল জেগে–
লাগল তারে উদাসী ওই নীল গগনের পরশখানি ।।
আমার নীড়ের পাখি এবার উধাও হল আকাশ-মাঝে ।
যায় নি কারো সন্ধানে সে, যায় নি যে সে কোনো কাজে ।
গানের ভরা উঠল ভরে, চায় দিতে তাই উজাড় করে–
নীরব গানের সাগর-মাঝে আপন প্রাণের সকল বাণী ।।

২৩

ছুটির বাঁশি বাজল যে ওই নীল গগনে,
আমি কেন একলা বসে এই বিজনে ।।
বাঁধন টুটে উঠবে ফুটে শিউলিগুলি,
তাই তো কুঁড়ি কানন জুড়ি উঠছে দুলি,
শিশির-ধোওয়া হাওয়ার ছোঁওয়া লাগল বনে–
সুর খুঁজে তাই শূন্যে তাকাই আপন-মনে ।।
বনের পথে কী মায়াজাল হয় যে বোনা,
সেইখানেতে আলোছায়ার চেনাশোনা ।
ঝরে-পড়া মালতী তার গন্ধশ্বাসে
কান্না-আভাস দেয় মেলে ওই ঘাসে ঘাসে,
আকাশ হাসে শুভ্র কাশের আন্দোলনে–
সুর খুঁজে তাই শূন্যে তাকাই আপন-মনে ।।

২৪

বাঁশি আমি বাজাই নি কি পথের ধারে ধারে ।
গান গাওয়া কি হয় নি সারা তোমার বাহির-দ্বারে ।।
ওই-যে দ্বারের যবনিকা নানা বর্ণে চিত্রে লিখা
নানা সুরের অর্ঘ্য হোথায় দিলেম বারে বারে ।
আজ যেন কোন্ শেষের বাণী শুনি জল স্থলে–
‘পথের বাঁধন ঘুচিয়ে ফেলো’ এই কথা সে বলে ।
মিলন-ছোঁওয়া বিচ্ছেদেরই অন্তবিহীন ফেরাফেরি
কাটিয়ে দিয়ে যাও গো নিয়ে আনাগোনার পারে ।।

২৫

তোমার শেষের গানের রেশ নিয়ে কানে চলে এসেছি ।
কেউ কি তা জানে ।।
তোমার আছে গানে গানে গাওয়া,
আমার কেবল চোখে চোখে চাওয়া–
মনে মনে মনের কথাখানি বলে এসেছি কেউ কি তা জানে।।
ওদের নেশা তখন ধরে নাই,
রঙিন রসে প্যালা ভরে নাই ।।
তখনো তো কতই আনাগোনা,
নতুন লোকের নতুন চেনাশোনা–
ফিরে ফিরে ফিরে-আসার আশা দলে এসেছি কেউ কি তা জানে ।।

২৬

আমার শেষ রাগিণীর প্রথম ধুয়ো ধরলি রে কে তুই ।
আমার শেষ পেয়ালা চোখের জলে ভরলি রে কে তুই ।।
দূরে পশ্চিমে ওই দিনের পারে অস্তরবির পথের ধারে
রক্তরাগের ঘোমটা মাথায় পরলি রে কে তুই ।।
সন্ধ্যাতারার শেষ চাওয়া তোর রইলো কি ওই-যে ।
তোর হঠাৎ-খসা প্রাণের মালা ভরল আমার শূন্য ডালা–
মরণপথের সাথি আমায় করলি রে কে তুই ।।

২৭

পাছে সুর ভুলি এই ভয় হয়–
পাছে ছিন্ন তারের জয় হয় ।।
পাছে উৎসবক্ষণ তন্দ্রালসে হয় নিমগন, পুণ্য লগন
হেলায় হেলায় ক্ষয় হয়–
পাছে বিনা গানেই মিলনবেলা ক্ষয় হয় ।।
যখন তাণ্ডবে মোর ডাক পড়ে
পাছে তার তালে মোর তাল না মেলে সেই ঝড়ে ।
যখন মরণ এসে ডাকবে শেষে বরণ-গানে, পাছে প্রাণে
মোর বাণী সব লয় হয়–
পাছে বিনা গানেই বিদায়বেলা লয় হয় ।।

২৮

বিরস দিন, বিরল কাজ, প্রবল বিদ্রোহে
এসেছ প্রেম, এসেছ আজ কী মহা সমারোহে ।।
একেলা রই অলসমন, নীরব এই ভবনকোণ,
ভাঙিলে দ্বার কোন্ সে ক্ষণ অপরাজিত ওহে ।।
কানন-’পর ছায়া বুলায়, ঘনায় ঘনঘটা ।
গঙ্গা যেন হেসে দুলায় ধূর্জটির জটা ।
যেথা যে রয় ছাড়িল পথ, ছুটালে ওই বিজয়রথ,
আঁখি তোমার তড়িতবৎ ঘনঘুমের মোহে ।।

২৯

বাজিল কাহার বীণা মধুর স্বরে
আমার নিভৃত নব জীবন-’পরে ।
প্রভাতকমলসম ফুটিল হৃদয় মম
কার দুটি নিরুপম চরণ-তরে ।।
জেগে উঠে সব শোভা, সব মাধুরী,
পলকে পলকে হিয়া পুলকে পূরি ।
কোথা হতে সমীরণ আনে নব জাগরণ,
পরানের আবরণ মোচন করে ।।
লাগে বুকে সুখে দুখে কত যে ব্যথা,
কেমনে বুঝায়ে কব না জানি কথা ।
আমার বাসনা আজি ত্রিভুবনে উঠে বাজি,
কাঁপে নদী বনরাজি বেদনাভরে ।।

৩০

সবার সাথে চলতেছিল অজানা এই পথের অন্ধকারে,
কোন্ সকালের হঠাৎ আলোয় পাশে আমার দেখতে পেলেম তারে ।।
এক নিমেষেই রাত্রি হল ভোর, চিরদিনের ধন যেন সে মোর
পরিচয়ের অন্ত যেন কোনোখানেই নাইকো একেবারে–
চেনা কুসুম ফুটে আছে না-চেনা এই গহন বনের ধারে
অজানা এই পথের অন্ধকারে ।।
জানি আমি দিনের শেষে সন্ধ্যাতিমির নামবে পথের মাঝে–
আবার কখন পড়বে আড়াল, দেখাশোনার বাঁধন রবে না যে ।
তখন আমি পাব মনে মনে পরিচয়ের পরশ ক্ষণে ক্ষণে ;
জানব চিরদিনের পথে আঁধার আলোয় চলছি সারে সারে–
হৃদয়-মাঝে দেখব খুঁজে একটি মিলন সব-হারানোর পারে
অজানা এই পথের অন্ধকারে ।।