Show Posts

This section allows you to view all posts made by this member. Note that you can only see posts made in areas you currently have access to.


Messages - mdashraful.eee

Pages: 1 [2] 3 4 ... 6
17
EEE / Re: Permittivity and Relative Permittivity or Dielectric Constant
« on: November 04, 2019, 10:39:17 AM »
good to know

18
good to know

19
EEE / Re: Working principle of Thermal power plant
« on: November 04, 2019, 10:37:48 AM »
good to know

20
মাঠে গিয়ে ধুলো কাদা মেখে, ঘেমে নেয়ে, রোজ বিকেলে খেলা শেষে বাড়ি ফেরা- এ দৃশ্য আজকাল যেন হারিয়ে যাচ্ছে। পাড়ায় পাড়ায় খেলার জায়গার অভাব, পড়ার চাপ, যেমন তেমন ছেলে-পিলেদের সাথে মিশে খারাপ হবার ভয়- কত না অভিযোগ অভিভাবকদের! তার পরিবর্তে আমাদের অভিভাবকরা বিনোদনের নামে যা তুলে দিচ্ছেন ছেলে-মেয়েদের হাতে, তার ক্ষতির পরিমাণটা তাদের ধারণারও বাইরে।

পশ্চিমা বিশ্বের মতো আমাদের অনেক পরিবারে বাবা-মা দুজনই কর্মব্যস্ত। উভয়েই ছুটছেন ‘ক্যারিয়ার ও সফলতা’ নামক সোনার হরিণের পিছনে। এদিকে সন্তান বড় হচ্ছে কাজের বুয়ার কাছে। অনেক অপরিণামদর্শী মায়েরাই শিশুকে খাবার খাওয়াতে, তার কান্না থামাতে- টিভি, কম্পিউটার ও ভিডিও গেমসের অভ্যাস করাচ্ছেন।

অন্যদিকে শহরের ইট, পাথর আর কংক্রিটের আড়ালে আটকা পড়ছে শিশুদের বর্ণিল শৈশব। গ্রামের শিশুরা খেলাধুলার কিছুটা সুযোগ পেলেও শহরের শিশুদের সে সুযোগ কম। বড়দের মতো শিশুদের মধ্যেও ভর করছে শহুরে যান্ত্রিকতা। ফলে তারা খেলাধুলার আনন্দ খুঁজে ফিরছে মাউসের বাটন টিপে, কম্পিউটারের পর্দায় গেমস খেলে। অনেক সময় তাদের এ আকর্ষণটা চলে যাচ্ছে আসক্তির পর্যায়ে। ধীরে ধীরে তারা নির্র্ভরশীল হয়ে পড়ছে কম্পিউটার-মোবাইল-ট্যাব গেমসের উপর। এজন্য প্রথমেই বলা যায়, ভিডিও গেমস আমাদের শিশু-কিশোরদের প্রকৃত শৈশব-কৈশোর কেড়ে নিচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের অভিমত হল, অল্পবয়সী অর্থাৎ ১৬ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের মধ্যেই ইন্টারনেটে ডুবে থাকার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। যুক্তরাজ্যে এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ১৩-১৭ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি শিশু সপ্তাহে ৩০ ঘণ্টার চেয়ে বেশি সময় ব্যয় করে ভিডিও গেমস, কম্পিউটার, ই-রিডার্স, মোবাইল ফোন ও অন্যান্য স্ক্রিনভিত্তিক প্রযুক্তি ব্যবহারের পিছনে। বাংলাদেশের শিশু কিশোরদের মধ্যেও প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রবণতা বাড়ছে। ২০১৫ সালের এপ্রিলে একটি গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদনে পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম ফেসবুক ব্যবহারকারী হিসেবে ঢাকা শহরের নাম উঠে এসেছে। বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে, আট বছরের শিশুরাও ব্যবহার করছে ফেসবুক।

মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট ভিত্তিক বিনোদনের ভয়াবহ পরিণতির চিত্র পাওয়া গেছে ‘মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন’-এর এক জরিপে। এতে দেখা যায়, ঢাকায় স্কুলগামী শিশুদের প্রায় ৭৭ ভাগ পর্নোগ্রাফি দেখে। প্রতিষ্ঠানের কর্মসূচি সমন্বয়ক আবদুল্লাহ আলমামুন বলেন, ৮ম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ঢাকার ৫০০ (পাঁচ শ) স্কুলগামী শিক্ষার্থীর ওপর জরিপ চালিয়ে দেখা গেছে, ছেলে শিশুরা সবসময় যৌন মনোভাবসম্পন্ন থাকে, যা শিশুর মানসিক বিকৃতির পাশাপাশি বাড়িয়ে দিচ্ছে মারাত্মক যৌন সহিংসতার ঝুঁকি। শিশু কিশোরদের এ অবস্থা এখন বিশ্বব্যাপী মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। [সূত্র : দৈনিক সংগ্রাম (অনলাইন) ২৩-৩-২০১৭ ঈ.]

উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী ভিডিও গেমসের আবিষ্কার হয় ১৯৪০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রে। তারপর সত্তর-আশির দশকের মধ্যে এটি জনপ্রিয়তায় পোঁছে। সর্বপ্রথম বাণিজ্যিকভাবে নির্মিত আর্কেড টাইপের ভিডিও গেম-এর নাম ছিল কম্পিউটার স্পেস। এরপর আটারি কোম্পানি বাজারে আনে বিখ্যাত গেম পং। তারপর ধীরে ধীরে আটারি, কোলেকো, নিনটেনডো, সেগা ও সনির মতো ব্যবসায়ী কোম্পানিগুলো নানা উদ্ভাবন ও প্রচারণা চালিয়ে কয়েক দশকের মধ্যে পৃথিবীর আনাচে-কানাচে মানুষের ঘরে পোঁছে দেয় পুঁজিবাদী সভ্যতার এ বিনোদনপণ্য।

২০০০ সনে সনি কোম্পানি জরিপ করে দেখেছিল যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি চারটি বাড়ির একটিতে একটি করে সনি প্লে স্টেশন আছে। ২০০৯ সালের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, শতকরা ৬৮ ভাগ আমেরিকানের বাড়ির সব সদস্যই ভিডিও গেম খেলে।

তারপর সময় বদলেছে। কম্পিউটার এবং ভিডিও গেমস ক্রমান্বয়ে হয়ে উঠেছে বিশ্বের অন্যতম লাভজনক ও দ্রুত বর্ধনশীল শিল্প ইন্ড্রাস্ট্রি। বিশ্বজুড়ে আজ মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়েছে ভিডিও গেম এবং গেমাররা। সাম্প্রতিক এক সমীক্ষা অনুযায়ী সারা পৃথিবীতে প্রায় ২২০ কোটি মানুষ নিয়মিত বা অনিয়মিতভাবে ভিডিও গেম খেলে থাকে। যাদের অধিকাংশই হচ্ছে অল্প বয়সী শিশু-কিশোর ও তরুণ-তরুণী। এদের বদৌলতে গ্লোবাল ভিডিও গেম বাজারের আর্থিক মূল্য দাঁড়িয়েছে ১০৮.৯০ মিলিয়ন ডলার! এর মধ্যে ‘মোবাইল গেমিং’ই হচ্ছে সবচে বেশি পয়সা আয় করা সেক্টর। স্মার্টফোন ও ট্যাবলেটে গেমিং প্রতি বছর ১৯শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। (সূত্র : উইকিপিডিয়া; মাসিক সি নিউজ- www.cnewsvoice.com; bengalinews..)

 

কী থাকে এসব ভিডিও গেমসে?

প্রশ্ন হচ্ছে, কী থাকে এসব ভিডিও গেমসে? কেন তাতে এত আসক্তি? খোঁজ করলে জানা যায়, জনপ্রিয় গেমগুলোর মধ্যে কিছু আছে ক্রিকেট ফুটবলের মতো। নানা রকম দল তৈরি করে এসব খেলা খেলতে হয়। খেলায় হারজিত হয়। এক ম্যাচ খেললে আরেক ম্যাচ খেলতে ইচ্ছে করে। এর কোনও শেষ নেই। ছেলে মেয়েদেরকে কম্পিউটারের সামনে থেকে টেনে তোলা যায় না। এতে চট করে এক ঘেয়েমিও আসে না। পড়াশুনা শিকেয় তুলে ছেলে মেয়েরা একটার পর একটা ক্রিকেট ও ফুটবল ম্যাচ খেলে যায়। অনলাইনভিত্তিক দাবা এবং তাসও এসবের অন্তর্ভুক্ত। এসব আবার সাধারণত খেলে অবসর বুড়ো খোকারা।

বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে জানা যায়-

এক ধরনের গেম আছে, তাতে প্রচ- গতিসম্পন্ন গাড়ি নিয়ে রাস্তা, মাঠ-ঘাট পেরিয়ে ছুটে চলতে হয়। বিপজ্জনক ব্যাপার হল, এই ছুটে চলার পথে অন্য প্রতিযোগীকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়া, গাড়ির নিচে মানুষ পিষে ফেলা, পথচারীর কাছ থেকে মোটর সাইকেল বা গাড়ি কেড়ে নিয়ে পালিয়ে যাওয়া, ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করে ফুটপাতে উঠে পড়া, রাস্তার স্থাপনা ও বাড়িঘর ভাঙচুর করা, পুলিশ ধাওয়া করলে পুলিশের সঙ্গে যুদ্ধ করে শেষ পর্যন্ত টিকে থাকা- এসব নাকি গেমের সবচে আকর্ষণীয় বিষয়! এ অনৈতিক কাজগুলো করে যে যত পয়েন্ট অর্জন করতে পারে সেই বিজয়ী হয়!

আর এক ধরনের গেম আছে, যার পুরোটা জুড়েই থাকে হিংস্রতা, মারামারি, যুদ্ধ, দখল এবং রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। যত বেশি সহিংসতা তত বেশি পয়েন্ট! হিংসার উদ্দাম আনন্দ নিয়ে দুর্গম গিরিপর্বত, নদীনালা, জঙ্গল ও সমুদ্রের উপর দিয়ে শত্রু খুঁজে বেড়ানো। বাংকার খনন করে ওঁত পেতে থাকা। প্রতি মুহূর্তে শত্রুর আক্রমণের টেনশন। আরো দ্রুত চলতে হবে! যত আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে সম্ভব প্রতিপক্ষকে শেষ করতে হবে!

কোমলমতি শিশু কিশোররা নিজেরাও জানে না, কেন তারা এ মারণখেলা খেলছে! একের পর এক মানুষ খতম করছে। কখনো হাতুড়িপেটা করে মাথা থেতলে দিচ্ছে। মুহূর্তে রক্তে ভেসে যাচ্ছে মেঝে। কখনো গ্রেনেড ছুঁড়ে প্রতিপক্ষের পা জখম করছে। এরপর খোঁড়াতে খোঁড়াতে পলায়নপর মানুষটির উপর মারছে দ্বিতীয় গ্রেনেড। বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে তার হাত পা। তারপর রক্তমাখা দেহটা লুটিয়ে পড়ছে খেলোয়াড়ের পায়ের উপর!

চোখের সামনে ভাসছে জীবন্ত যুদ্ধক্ষেত্র। কানে আসছে অস্ত্র ও গোলাবারুদ ব্যবহারের বাস্তব আওয়াজ। এমনকি আহত শত্রুসেনার রক্তমুখের গর্গর শব্দটাও শুনতে পাচ্ছে আপনার সন্তান! এতে কিন্তু তার আনন্দ, উৎসাহ এবং উত্তেজনা কেবল বৃদ্ধিই পাচ্ছে। কোনো কোনো খেলায় রাস্তায় পড়ে থাকা লাশের পকেট এবং ব্যাগ থেকে মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করতে পারলে পাওয়া যাচ্ছে বাড়তি পয়েন্ট! এমনকি রাস্তায় ড্রাগ বিক্রেতার কাছ থেকে ড্রাগও কেনা যাচ্ছে!

এখানে একটুও বাড়িয়ে বলা হচ্ছে না। এই গেমগুলিই এখন সবচে জনপ্রিয়। এসব ধ্বংসাত্মক গেমসের মধ্যে এ যাবতকালের পৃথিবীর সবচে জনপ্রিয় গেমটির নাম ‘পাবজি’ (চটইএ)। দক্ষিণ কোরিয়ার ভিডিও গেম নির্মাতা প্রতিষ্ঠান পিইউবিজি কর্পোরেশন ২০১৭-এর মার্চে এ অনলাইন মাল্টিপ্লেয়ার গেমটি বাজারে আনে।

এর নির্মাতা ব্লু হোয়েল কোম্পানি আর পরিচালক আইরিশ ওয়েব ডিজাইনার ব্রান্ডন গ্রিন। রিলিজের মাত্র তিন দিনের মাথায় ‘প্লেয়ার আননউনস ব্যাটেলগ্রাউন্ডস’ সংক্ষেপে ‘পাবজি’ নামক এ গেম প্রায় ১১ মিলিয়ন ডলার আয় করে। আপনি জানলে অবাক হবেন, পাবজি গেম নির্মাণকারী সংস্থা প্রতিদিন ৬,৮৯০০০ ডলার আয় করে থাকে গেমারদের থেকে। প্রথম ৬মাসেই তারা লাভ করেছে ৩৯০ মিলিয়ন ডলার।

রিপোর্ট অনুযায়ী সারা পৃথিবীতে এখন প্রতি মাসে প্রায় ২২৭ মিলিয়ন মানুষ এ গেম খেলে। আর প্রতিদিন খেলে প্রায় ৮৭ মিলিয়ন লোক। লাখো গরিবের দেশ বাংলাদেশেও প্রতিদিন এ গেম খেলছেন ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ! [সূত্র: ধষশন সবফরধ ১৯-১-১৯ঈ.; বাংলাদেশ প্রতিদিন (অনলাইন) ১৫-৩-২০১৯ঈ.; প্রবাস সংবাদ নিউজ পেইজ ২০-৩-১৯ঈ.)

অনলাইনভিত্তিক এই ভিডিও গেমটিতে একসাথে ১০০জন মানুষ একটি পরিত্যাক্ত দ্বীপে থাকে। খেলোয়াড়কে প্রথমে প্যারাসুটের মাধ্যমে সেখানে নামিয়ে দেয়া হয়। সেখানে একে অপরকে হত্যা করে টিকে থাকতে হয়। ভয়ংকর সব গোলাবারুদ ও আগ্নেয়াস্ত্র সংগ্রহ করে খতম করতে হয় একে একে সবাইকে। এক্ষেত্রে বিশ্বাসঘাতকতারও আশ্রয় নেয়া হয়। চলে হত্যার ষড়যন্ত্র-পরিকল্পনা। অনলাইনে বন্ধুরা পরস্পরে কথাবার্তা বলে এ হত্যাযজ্ঞের বিষয়ে শলা-পরামর্শ করে। কয় পয়েন্ট পাওয়া গেল, কতজন নিহত হল, বাকিদেরকে কীভাবে হত্যা করা যায়- এসবই এ ভয়ংকর গেমের বিষয়। হত্যাযজ্ঞ শেষে যে ব্যক্তি বা যে গ্রুপ বেঁচে থাকে, তারাই হয় বিজয়ী।

সব মিলিয়ে মোবাইল কিংবা কম্পিউটারের পর্দায় কিশোর-তরুণেরা ‘পাবজি’তে এতটাই মগ্ন থাকছে যে, বাস্তব পৃথিবী ভুলে তারা এক বিপজ্জনক নেশায় আক্রান্ত হয়ে পড়ছে। ভিডিও গেমসের এ নিধনযজ্ঞ অনেক বাস্তব অনুভব হচ্ছে তাদের কাছে।

 

‘গেমিং রোগ’!

সারাদেশে এখন এসএসসি পরীক্ষার বিরতি চলছে। দিনরাত এক করে মোবাইল-কম্পিউটারে মুখ গুঁজে এ সহিংস গেম খেলছে শিশু কিশোররা। পাবজি নিয়ে মাতামাতি এখন অধিকাংশ ছেলে মেয়ের। এ গেমের নেশা এতটাই চরম যে, কিছুদিন পূর্বে ভারতের মহারাষ্ট্রে পাবজি খেলায় মত্ত দুই তরুণকে চলন্ত ট্রেন এসে পিষে দিয়েছিল। স্থানীয় সূত্রের খবর, মৃত দুই যুবক নাগেশ গোরে (২৪) এবং স্বপ্নিল অন্নপূর্ণে (২২) রেললাইনের ধারে দাঁড়িয়েই পাবজি খেলছিল। চলন্ত ট্রেন আসার খেয়ালও হয়নি তাদের। যার ফলে হায়দারাবাদ-আজমের দূরপাল্লার ট্রেনটির নিচে মর্মান্তিকভাবে প্রাণ হারায় তারা। (দ্যা ওয়াল নিউজ পোর্টাল)

সম্প্রতি মধ্যপ্রদেশের এক যুবক নিজের বাড়িতে পাবজি খেলতে এতটাই ব্যস্ত ছিলেন যে, চোখ সরিয়ে দেখার সময়টুকু পাননি যে কী পান করছেন তিনি! পানির পরিবর্তে তিনি ভুল করে এ্যাসিড পান করে ফেলেন। সঙ্গে সঙ্গে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় এবং তার অন্ত্রে অপারেশন করতে হয়। (বাংলা লাইন ২৪ ডট কম ৭-৩-২০১৯ঈ. )

মন দিয়ে পাবজি খেলতে পারছেন না- এ অভিযোগ তুলে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে ডিভোর্স দিয়েছিলেন এক ব্যক্তি। পাবজি খেলার জন্য দামি ফোন কিনে না দেয়ায় মুম্বাইয়ের এক কিশোরের আত্মঘাতী হওয়ার সংবাদও এসেছিল সামনে।

ভারতীয় গণমাধ্যম জিনিউজের খবরে বলা হয়, জম্মুর এক যুবক দশদিন পাবজি খেলে অস্বাভাবিক আচরণ করতে শুরু করে। তিনি নিজেই নিজেকে নানাভাবে আঘাত করতে থাকেন। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালের সূত্র জানিয়েছে, যুবকের অবস্থা স্থিতিশীল নয়। পাবজি গেমের প্রভাবে আংশিক মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছেন তিনি। চিকিৎসকরা তাকে কড়া পর্যবেক্ষণে রেখেছেন। তার জন্য একজন স্নায়ু বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করা হয়েছে। হাসপাতাল সূত্রের খবর, এ নিয়ে কয়েকদিনের মধ্যে পাবজি খেলে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ৬জন ভর্তি হয়েছেন। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, আরো অনেকে এ সমস্যায় ভুগছেন। কিন্তু তাদের পরিবার এর গুরুত্ব বুঝতে পারছে না। (বাংলা নিউজ অনলাইন পেইজ ১২-১-১৯ঈ.; খবর মেদিনীপুর)

বিশেষজ্ঞদের মতে এ গেম যারা খেলে, তারা চরম নেশায় আক্রান্ত হয়। হিংস্র মনোভাবাপন্ন একটা প্রবণতা পেয়ে বসে তাদের। মনোরোগ চিকিৎসকরা বলেন, মানুষের মধ্যে লুকিয়ে থাকা ধ্বংসাত্মক মনোভাবকে টেনে বের করে আনে এ গেম। খেলার ছলে প্রশ্রয় দেয় রক্ত, মৃত্যু, খুন এবং জয়।

সম্প্রতি গত ১৫ মার্চ নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের আননূর মসজিদে আধুনিক মারণাস্ত্র দিয়ে এক খ্রিস্টান সন্ত্রাসীর হত্যাযজ্ঞের ঘটনার পর আবারো আলোচনায় এসেছে পাবজি গেম। প্রায় তিন মিনিটের এ হামলায় শাহাদাত বরণ করেন অর্ধশত মুসল্লি। এ নির্মম হামলার ভিডিওটির সঙ্গে সহিংস পাবজি গেমের ভয়ানক সাদৃশ্য বেরিয়ে এসেছে।

ঐ মসজিদে হামলাকারী সন্ত্রাসী তার মাথায় লাগানো ক্যামেরা দিয়ে নৃশংস হত্যাকা- নিজেই সম্প্রচার করেছে। সেই ভিডিও ফুটেজ দেখলে পাবজি গেম বলে ভ্রম হবে। হত্যাকারী গাড়ি থেকে অস্ত্র বের করে গুলি ছুঁড়ছে। গুলি ফুরিয়ে গেলে ভরে নিচ্ছে ম্যাগাজিন। মসজিদের দরজা, বারান্দা পেরিয়ে মুসল্লিদের হত্যা করে এগিয়ে যাচ্ছে। শহরে হেঁটে হেঁটে, রাস্তায় গাড়িতে বসে গুলি ছুঁড়ে একের পর এক অস্ত্র পাল্টে মানুষ হত্যার এ বীভৎস ভিডিওকে কেবল পাবজি গেম বলে বিভ্রম হতে পারে।

এসবের প্রেক্ষিতে জোর দাবি উঠেছে এ ধ্বংসাত্মক গেমটি নিষিদ্ধ করার জন্য। ইতিপূর্বে ভারতের গুজরাটসহ কয়েকটি রাজ্যে পাবজি গেম নিষিদ্ধ করা হয়। চীন দক্ষিণ কোরিয়াসহ বিভিন্ন দেশে নেয়া হয় নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপ। কিন্তু দুঃখজনকভাবে বাংলাদেশের প্রশাসনের কেউ কেউ এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেও এখন পর্যন্ত কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।

বিশ্বব্যাপী গেমসের প্রতি তীব্র নেশা যে পাবজি গেম থেকে শুরু হয়েছে তা নয়। ইতিপূর্বে ক্ল্যাশ অফ ক্ল্যান, মনস্টার হান্টার ওয়ার্ল্ড, ডটা টু, ভাইস সিটি এবং হাঙ্গারগেমসহ নাম না জানা অসংখ্য গেমে মানুষের ভীষণ আসক্তি ছিল। ‘কল্পনার জগতে গিয়ে গেমের প্রিয় চরিত্রের নায়কের সাক্ষাতলাভের জন্য ২৪তলা ভবনের ছাদ থেকে কিশোরের লাফিয়ে আত্মহত্যা করা; অতিরিক্ত গেম খেলায় বাবার বকুনি খেয়ে অভিমানী তাইওয়ানী কিশোরের নিজেকে আগুনে পুড়িয়ে দেয়া; একটানা ২৪ ঘণ্টার লাইভ ভিডিও গেম খেলতে খেলতে ২২ ঘণ্টার মাথায় যুবকের মৃত্যুবরণ; অনলাইন ভিডিও গেমের জন্য টাকা জোগাড় করতে ১৩ বছরের ভিয়েতনামী কিশোরের ৮১ বছরের বৃদ্ধাকে রাস্তায় শ্বাসরোধ করে হত্যা করে তার মানিব্যাগ চুরি এবং লাশ মাটিতে পুঁতে ফেলা; চায়না দম্পতির কম্পিউটার গেমের অর্থের জন্য নিজেদের তিন সন্তানকে ৯হাজার ডলারে বেচে দেয়া’- এরূপ হৃদয়বিদারক গেমাসক্তির ঘটনা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রচুর ঘটেছে।

এর বাইরে গেমসের কারণে বিশ্বব্যাপী বিবাহ বিচ্ছেদ, চাকুরী হারানো, মারমুখী ক্ষ্যাপাটে আচরণ, বাবা-মার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার, অল্পতেই ধৈর্যহারা হয়ে পড়া, ইন্টারনেট না থাকলে অথবা মোবাইল বা কম্পিউটারের চার্জ ফুরিয়ে গেলে অস্থির-আতংকগ্রস্ত হয়ে পড়ার ঘটনা তো অহরহই ঘটছে।

এসব দৃষ্টান্ত প্রমাণ করে দিয়েছে যে, নেশা মানেই শুধু মদ বা মাদক নয়। নেশা বা মাদকাসক্তি কেবল মদ-গাঁজা, আফিম-হেরোইন ও বিড়ি-সিগারেটের সেকেলে পরিসরে আবদ্ধ নেই। কালের পরিক্রমায় প্রযুক্তির কল্যাণে (?)  এবং পুঁজিবাদী সভ্যতার বদান্যতায় (!) নেশার পতিত অঙ্গনেও লেগেছে ডিজিটালের ছোঁয়া! ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্মার্টফোন, ইন্টারনেট ও ধ্বংসাত্মক ভিডিও গেমসে বুঁদ হয়ে থাকার ফলে বিশ্বব্যাপী মানুষ এমন নেশায় আক্রান্ত হচ্ছে, যা থেকে নিস্তার পাওয়া কঠিন।

ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস ঘটিত এ আসক্তিকে মনোবিজ্ঞানীরা নাম দিয়েছেন ‘ডিজিটাল মাদক’! সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (World Health Organization) ভিডিও গেমসের প্রতি তীব্র আসক্তিকে বিশেষ এক ধরনের মানসিক অসুস্থতা হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এ অসুখের নাম দেয়া হয়েছে ‘গেমিং ডিসঅর্ডার’ বা ‘গেমিং রোগ’। সংস্থার খসড়া একটি নথিতে ভিডিও গেমে আসক্তিকে একটি আচরণগত সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, এ আচরণে আসক্তির সব লক্ষণ রয়েছে অর্থাৎ, বারবার এ খেলার প্রবণতা দেখা দেয় এবং এ থেকে সরে আসা কঠিন বলেও দেখা যায়। এছাড়াও জীবনের অন্য সব কিছু ছাপিয়ে প্রাধান্য পায় এ গেমিং-এর নেশা। [সূত্র : বিবিসি বাংলা (অনলাইন) ৩-১-২০১৮ঈ.]

উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যেমন বৃটেন, জার্মানি এবং চীনে ভিডিও গেমের আসক্তি থেকে মুক্ত হবার জন্য আলাদা চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্র রয়েছে। সেখানে এধরনের আসক্তদেরকে মানসিক রোগীর মতোই চিকিৎসা দেয়া হয়। থেরাপিসহ বিভিন্ন চিকিৎসার মাধ্যমে তাদেরকে স্বাভাবিক সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করা হয়। কিন্তু পরিস্থিতি এখন যে পর্যায়ে যাচ্ছে, তাতে আল্লাহ না করুন, সকল দেশেই এরূপ চিকিৎসাকেন্দ্র খুলতে হতে পারে। কারণ, এধরনের আসক্ত মানুষের সংখ্যা সব দেশেই বেড়ে চলেছে।

 

শারীরিক ক্ষতি

অনেক সরলমনা অভিভাবক হয়ত ভাবতে পারছেন না যে, এই তুচ্ছ বিনোদনটি এত মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। বস্তুত এ হচ্ছে পুঁজিবাদী সভ্যতার বিনোদন। যা শুধু টাকার বিনিময়ে কথিত আনন্দ দিয়েই ছাড়ে না। উপরি পাওনা স্বরূপ কেড়ে নেয় সময়, সম্পদ, মেধা, সুস্থতাসহ অনেক কিছু! এখানে তার সামান্য উল্লেখ করা হচ্ছে।

* আজকাল ছোটদের অনেকের চোখেই পাওয়ারি চশমা ঝুলতে দেখা যায়। চশমা ছাড়া শিশুরা চোখে ঝাপসা দেখে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এর কারণ হল ডিজিটাল মাদকাসক্তি। দিনরাতের একটা দীর্ঘ সময় স্মার্টফোন, ট্যাব ও কম্পিউটারের স্ক্রীনে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ক্ষীণ দৃষ্টিতে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। চিকিৎসকদের ভাষায় এ রোগের নাম ‘মায়োপিয়া’। ২-৩ বছরের শিশুরাও এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের কনসালট্যান্ট ডা. খায়ের আহমেদ চৌধুরী দৈনিক ইত্তেফাককে বলেন, এ প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন গড়ে আমরা ২৫০ জন রোগী দেখি। এর মধ্যে ক্ষীণ দৃষ্টি বা মায়োপিয়ার আক্রান্ত শিশু আসে গড়ে ৫০জন। (দৈনিক নেত্রকোণা নিউজ ডেস্ক ২৬-১- ২০১৯ঈ.)

ঢাকার ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালের শিশু বিভাগের তথ্য অনুযায়ী ৮-১৪ বছরের শিশুদের চোখের সমস্যা বাড়ছে। ডাক্তারের পরীক্ষা, রোগী ও অভিভাবকদের কথায় জানা গেছে, মোবাইল-কম্পিউটারে অতিরিক্ত গেমস খেলা এবং টিভি দেখার কারণে শিশুর চোখের সমস্যার সৃষ্টি হয়। বেশ কয়েকজন অভিভাবক ও শিশুদের দেয়া তথ্য থেকে জানা গেছে, তারা গড়ে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা ডিজিটাল ডিভাইসের পেছনে ব্যয় করে, যার বড় অংশই একাডেমিক বা ব্যবসায়িক প্রয়োজনের বাইরে। [দৈনিক সংগ্রাম (অনলাইন) ২৩-৩-১৭ঈ.]

বাংলাদেশ আই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রতিদিন চিকিৎসা নিতে আসা শিশুদের মধ্যে ৮০ শতাংশ শিশু মায়োপিয়া সমস্যায় ভুগছে। তাদের এখনই রোধ করা না গেলে ৫ বছরের নিচে শিশুদের দূরদৃষ্টিজনিত সমস্যা বেড়ে যাবে এবং তা ঝুঁকিপূর্ণ পর্যায়ে উন্নীত হবে। যা গোটা জাতির জন্য এক ভয়াবহ বার্তা বহন করছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞজনেরা। [দৈনিক ইত্তেফাক (অনলাইন) ২৯-৫-১৭ঈ.]

ভিডিও গেমসের কারণে দৃষ্টিশক্তির দুর্বলতা এখন একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা। বর্তমান বিশ্বে ভিডিও গেমসের সবচে বড় বাজার হচ্ছে চীন। গেম উদ্ভাবন এবং বাজারজাতকরণেও প্রথম সারিতে দেশটি। কিন্তু ভয়াবহ ব্যাপার হচ্ছে, ১০০ কোটি মানুষের দেশ চীনের অর্ধেক মানে ৫০ কোটির বেশি মানুষ ভুগছে চোখের সমস্যায়! যেকারণে দোটানায় পড়ে গেছে চায়না সরকার। একদিকে গেমিং ব্যবসা অন্যদিকে মানুষের চোখ! এজন্য তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বয়সের ভিত্তিতে কে কতক্ষণ ভিডিও গেম খেলতে পারবে তা নিয়ন্ত্রণ করা হবে। অন্যদিকে আবার সরকারি এ নতুন সিদ্ধান্তের ফলে চায়না পুঁজিবাজারে নিবন্ধিত গেমস কোম্পানির দর কমে গেছে। চীনের মোবাইল ভিডিও গেমস বাজারের ৪২ শতাংশের বেশি অংশের মালিক ‘টেনসেন্ট’ কোম্পানিকে এ কারণে কয়েকশ’ কোটি ডলারের ক্ষতির মুখোমুখি হতে হয়েছে। (নয়া দিগন্ত অনলাইন ২-৯-২০১৮ঈ.)

* যেসব কিশোর-কিশোরী স্মার্টফোন বা ইন্টারনেটে বেশি সময় কাটায়, তাদের মস্তিষ্কে রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে। ফলে তাদের মধ্যে হতাশা ও উদ্বেগ সৃষ্টি হয়। দক্ষিণ কোরিয়ার রেডিওলজি’র অধ্যাপক ইয়ুং সুক-এর নেতৃত্বে একটি গবেষক দল কিশোর কিশোরীদের মস্তিষ্ক পরীক্ষা করে এর প্রমাণ পেয়েছেন। (সূত্র ডি ডাব্লিউ ডট কম)

সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৪৫০০ জনের মস্তিষ্ক স্ক্যান করে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে যে, যেসব শিশু দিনে সাত ঘণ্টারও বেশি সময় স্মার্টফোন, ট্যাবলেট ও ভিডিও গেমস খেলে, তাদের মস্তিষ্কের শ্বেত পদার্থের বহিরাবরণ পাতলা হয়ে যায়। (women news24.com  ১৩-১২-১৮ঈ.)

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোসার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, বিরতীহীনভাবে প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে শিশুদের চোখ ও মস্তিষ্কের মধ্যে চাপ পড়ে। ধীরে ধীরে দৃষ্টিশক্তি কমে যায়। মস্তিষ্ক সঠিকভাবে কাজ করে না। তারা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। (Hawkerbd.com)

* রাতে ঘুমানোর সময় একটা ডিভাইস হাতে নিয়ে শুতে গিয়ে অনেকেই নির্দিষ্ট সময়ের অনেক পরে ঘুমায়। এ অভ্যাস আস্তে আস্তে ঘুম না আসার কারণে পরিণত হচ্ছে। এখন তো রাতের ঢাকার চিত্রই বদলে গেছে। অসংখ্য পরিবারে গভীর রাত অবধি জেগে থেকে সকাল দশটা এগারটা পর্যন্ত ঘুমিয়ে থাকাটা মামুলি ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটা কোন মুসলিম জনপদের চিত্র হওয়া তো দূরে থাক, কোন স্বাস্থ্য সচেতন নগরীরও চিত্র হতে পারে না। দেখা যাচ্ছে, এ আসক্তির কারণে ছেলে মেয়েরা ঠিকমতো ঘুম, খাওয়া-দাওয়া করতে চাইছে না।

* শারীরিক পরিশ্রম ছাড়া দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার ফলে বড়দের মতো মুটিয়ে যাচ্ছে শিশুরাও। অল্প বয়সে তারা হাঁটু ও কোমর ব্যথায় আক্রান্ত হচ্ছে। শারীরিক অনুশীলন ও খেলাধুলার মাধ্যমে সুস্থ ও স্বাভাবিক শরীর গঠন বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে তাদের। জরিপে দেখা যায়, ভীষণ মোটা বা স্থ’ূলকায় শিশুদের মধ্যে প্রায় ৩০% শিশুর আয়ু কম হয়। ডায়াবেটিস, স্ট্রোক ও হৃদরোগেও আক্রান্ত হতে পারে তারা। এছাড়া মাথাব্যথাসহ আরো কিছু রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটতে পারে। (champs21.com ২৬-৪-২০১৫ঈ.)

* প্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে সড়ক দুর্ঘটনার একটি বড় কারণ হল মোবাইল ব্যবহার। গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ থাকলেও অনেকে তা দিব্যি করে চলেছেন। দেখা যাচ্ছে, গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোন যারা বেশি ব্যবহার করছে, তাদের ছয় ভাগ বেশি দুর্ঘটনা হচ্ছে। (এন টিভি অনলাইন ২৭-৮-১৭ঈ.)

* এছাড়াও চিকিৎসকদের মতে, মোবাইল ফোন পকেটে রাখলে ভ্রুণের কোয়ালিটি কমে যাওয়া, বুক পকেটে রাখলে হার্টের সমস্যা দেখা দেয়া, আঙ্গুলে ও ঘাড়ে ব্যথা, কানে কম শোনা এবং ডিসপ্লে থেকে জিবাণু ব্যাকটরিয়ার সংক্রমণসহ অসংখ্য শারীরিক ঝুঁকির আশংকা রয়েছে।

 

মানসিক ও আচরণগত সমস্যা

* এ প্রজন্মের শিশু কিশোররা আগের মতো বাইরে খেলাধুলা করে না। গল্পের বই পড়ে না। এমনকি কারো সঙ্গে মন খুলে কথাবার্তাও তেমন বলে না। এ দৃশ্য ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। সারাদিন দরজা বন্ধ করে কম্পিউটার ও স্মার্টফোন নিয়ে পড়ে থাকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই নিজের একটা জগত তৈরি করে নেয়। ফলে মা বাবা আত্মীয়-স্বজন থেকে তাদের দূরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে এবং ভীষণ একাকীত্বের শিকার হয়ে পড়ছে তারা। দেখা যায়, সবার মাঝে থেকেও সে একা। তার সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না সবই হয়ে যাচ্ছে যন্ত্রকেন্দ্রিক।

* এ ধরনের ছেলে মেয়েরা বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ডিজিটাল এক কল্পজগতে বাস করতে শুরু করে। বদলে যায় তাদের মানসিক গঠন। তাদের চিন্তা ভাবনার মধ্যেও যান্ত্রিকতার একটা ছাপ দেখা যায়। কম্পিউটার আর ইন্টারনেটের মাঝেই তারা জীবনের সাফল্য-ব্যর্থতা ও সমস্যার সমাধান খুঁজে বেড়ায়। ফলে তাদের সঠিক মানসিক বিকাশ হয় না। শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, স্নেহ ও সহমর্মিতার অনুভূতিগুলো ধীরে ধীরে তাদের দুর্বল হতে থাকে। নিজেকে ছাড়া কারো প্রতি তাদের দায়িত্ববোধ জাগে না। নিজের অজান্তেই স্বার্থপরতা ও আত্মকেন্দ্রিকতায় আক্রান্ত হয় তারা।

* অনুকরণপ্রিয় স্বভাবের কারণে ছোটরা যা-ই দেখে, তা-ই অনুকরণ করতে পছন্দ করে। দেখা যায়, গেমের সুপারম্যান চরিত্র দেখে সে ছাদ থেকে লাফ দেয়ার চেষ্টা করে। কারো উপর রাগ হলে হাতকেই বন্দুক বানিয়ে গুলি করা শুরু করে। সারাদিন বিভিন্ন ধ্বংসাত্মক খেলা খেলতে খেলতে তাদের আচরণও ক্রমশ আক্রমণাত্মক ও মারমুখী হয়ে উঠে। দিনের একটা বড় সময় এসব খেলায় কাটানোর ফলে তাদের কাছে ঐ জগতটাই বাস্তব বলে মনে হয়। সাম্প্রতিককালে ব্লু হোয়েলসহ বিভিন্ন গেম খেলে বহু কম বয়সী শিশু কিশোরের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটেছে। ভিডিও গেমসে বিদ্যমান রক্তাক্ত হামলা, সহিংসতা, চুরি, যৌনতা ও প্রতারণা শিশুদেরকে অন্যায় ও অপরাধকর্মে মারাত্মকভাবে উৎসাহিত করছে।

* ভিডিও গেমসের মধ্যে শিশুরা এতই সময় ব্যয় করছে যে, তাদের পড়াশুনা, খাওয়া-দাওয়া সবই শিকেয় উঠেছে। বর্তমানে দেশ-বিদেশের হাজার হাজার শিক্ষার্থীর পড়াশুনায় ধ্বস নেমেছে পাবজি খেলায় আসক্তির কারণে। শিক্ষক অভিভাবকরা এ নিয়ে এখন পেরেশান। সম্প্রতি ভারতের এক মন্ত্রী এ গেমকে ‘ঘরে ঘরে শয়তান’ হিসেবে আখ্যা দিলেও সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমের দেশ বাংলাদেশে এ ব্যাপারে তেমন সচেতনতা দেখা যাচ্ছে না। খুব কম মানুষই বর্তমানে গেমিং রোগের বিষয়টি সম্পর্কে অবগত।

* ভিডিও গেমসের মধ্যে প্রতি মুহূর্তে রঙ-বেরঙের দৃশ্যপট পরিবর্তন, সারাক্ষণ অবিশ্বাস্য গতিতে ছোটাছুটি, জয়ের জন্য মরিয়া হয়ে থাকা- এসব শিশুদের মানসিকতায় মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। দেখা যাচ্ছে, কোন কিছুতেই তাদের স্থিরতা থাকছে না। সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে তারা তাড়াহুড়ো করছে। অযথা সন্দেহ-অবিশ্বাস তাদের মধ্যে জেঁকে বসছে। ইসলামের চিরন্তন আকীদা-বিশ্বাস তাদের নিকট সেকেলে ও আধুনিকতা বিরোধী মনে হচ্ছে। অল্পতেই তারা ধৈর্যহারা হয়ে পড়ছে। বাস্তব জীবনেও নিজের পরাজয়কে তারা মেনে নিতে পারছে না।

 

ইসলামী দৃষ্টিকোণ

ইসলামের এক দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে, যে কোনো অনর্থক কাজকে বর্জন করা। হাদীস শরীফে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

إِنَّ مِنْ حُسْنِ إِسْلَامِ الْمَرْءِ تَرْكُهُ مَا لَا يَعْنِيهِ.

ব্যক্তির ইসলামের সৌন্দর্য হচ্ছে, যা কিছু অনর্থক তা বর্জন করা। -সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ২২৯; জামে তিরমিযী, হাদীস ২৩১৮

ভিডিও গেমসগুলো আক্ষরিক অর্থেই অর্থহীন কাজ। লক্ষ্য করলে দেখবেন, এগুলো আমাদের দুনিয়া-আখেরাতের কোন উপকারেই আসে না। বরং বাস্তবতা তো হচ্ছে, এগুলো অর্থহীন হয়েই শেষ নয়। দুনিয়া-আখেরাতে আমাদের অসংখ্য ক্ষতিও টেনে আনছে।

সর্বপ্রথম কথা হচ্ছে, এসব খেলা মানুষকে আল্লাহর ইবাদত থেকে গাফেল করছে। দেখা যায়, গেমের নেশায় জামাত ছেড়ে দিচ্ছে। নামাযও কাযা করছে অবলীলায়। জরুরি কাজ ছেড়ে পড়ে থাকছে এ নেশা নিয়ে। মা বাবার অবাধ্যতা, স্ত্রী সন্তানের প্রতি অবহেলা- এসব তো অহরহই ঘটছে।

এদেশে এমনও ঘটনা ঘটেছে যে, অসুস্থ মাকে হাসপাতালে ভর্তি করে ছেলে চলে গেছে কয়েক মাইল দূরে গেম খেলতে। তাহলে কীভাবে ইসলামে এ জিনিস বৈধ হতে পারে? পবিত্র কুরআনের একটি আয়াত এখানে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। লক্ষ্য করুন, আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-

وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَشْتَرِي لَهْوَ الْحَدِيثِ لِيُضِلَّ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ وَيَتَّخِذَهَا هُزُوًا أُولَئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ مُهِينٌ.

কতক মানুষ এমন, যারা অজ্ঞতাবশত আল্লাহর পথ থেকে মানুষকে বিচ্যুত করার জন্য এমন সব কথা খরিদ করে, যা আল্লাহ সম্পর্কে উদাসীন করে দেয় এবং তারা আল্লাহর পথ নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে। তাদের জন্য আছে এমন শাস্তি, যা লাঞ্ছিত করে ছাড়বে। -সূরা লোকমান (৩১) : ৬

দ্বিতীয়ত, এ গেমগুলো চোখের ক্ষতি করছে। ব্রেনের ক্ষতি করছে। স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। অস্থির, অশান্ত ও নেশাগ্রস্ত করে তুলছে। মানুষকে পাগল ও পঙ্গুত্বের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। বিপুল পরিমাণে সময় ও কর্মশক্তির অপচয় করছে। কল্পনাতীত অর্থ-সম্পদ ধ্বংস করছে। মানুষকে নির্মমতা ও পাশবিকতা শেখাচ্ছে। সন্ত্রাস ও উগ্রবাদের পাঠ দিচ্ছে। অন্যকে মেরে নিজে জেতার হিংস্র মনোভাব শিক্ষা দিচ্ছে। ইসলাম কেমন করে এমন ধ্বংসাত্মক বিনোদন অনুমোদন করতে পারে?

প্রতিটি গেমসে গান-বাজনা বা মিউজিক্যাল সাউন্ড থাকে, যা সম্পূর্ণ হারাম। অসংখ্য ভিডিও গেমসে নগ্নতা ও অশ্লীলতার ব্যাপক ছড়াছড়ি থাকে, যার জঘন্যতা খুলে বলার প্রয়োজন নেই। কুরআনে কারীমে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন- 

إِنَّ الَّذِينَ يُحِبُّونَ أَنْ تَشِيعَ الْفَاحِشَةُ فِي الَّذِينَ آمَنُوا لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ.

নিশ্চয় যারা মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার হোক- কামনা করে, তাদের জন্য দুনিয়া ও আখেরাতে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। -সূরা নূর (২৪) : ২৯

দেখা যাচ্ছে, মুসলিম শিশুরা এসব গান-বাজনা ও বেহায়াপনা ভর্তি গেম খেলে শৈশব থেকেই এ কবীরা গুনাহগুলোকে হালকা মনে করছে। অনেকে তো এসবকে হারামই ভাবছে না; বরং এই ইসলামী বিধানসমূহের ব্যাপারে বিদ্রোহের মানসিকতা তৈরি হচ্ছে। বলাবাহুল্য, কারো ঈমান ধ্বংসের জন্য এ মনোভাবই যথেষ্ট।

অনেক গেমসে সরাসরি কুফুরি আকীদা শিক্ষা দেয়া হয়। শিশু কিশোরদের অন্তরে শিরকী প্রতীকের প্রতি সম্মান-শ্রদ্ধা এবং ইসলামী বেশভূষার প্রতি বিদ্বেষ ঢালা হয়। যেমন, গেম খেলতে খেলতে পথের মাঝে ক্রুশ চিহ্ন বা মূর্তি চলে আসে, আর তাতে ক্লিক করলে পাওয়া যায় লাইক এবং বাড়তি জীবনীশক্তি। বিভিন্ন গেমসে দেখা যায়, মূর্তি ভয় দেখাচ্ছে। আর গেমার ভয় ও সম্ভ্রমের সাথে দাঁড়িয়ে থাকছে। ভারত থেকে নির্মিত কোন কোন গেমের ভেতর মৃত্যুর পর মূর্তির স্পর্শে গেমার পুনর্জীবন লাভ করছে। এর মধ্য দিয়ে মুসলিম মানসে বিশেষত শিশুদের অন্তরে সঞ্চারিত হচ্ছে পুনর্জন্ম, মূর্তিপূজা এবং মূর্তির ক্ষমতা থাকার মতো শিরকি বিশ্বাস। 

এভাবে গেমের মাধ্যমে অত্যন্ত স্পষ্টভাবে কুফর-শিরকের প্রতি মুসলিম মানসে শ্রদ্ধাবোধ জাগিয়ে তাওহীদের ভিত্তিকে নড়বড়ে করে ফেলা হচ্ছে। ইহুদী-খ্রিস্টানদের এটাই লক্ষ্য। কুরআন মাজীদে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-

وَلَنْ تَرْضَى عَنْكَ الْيَهُودُ وَلَا النَّصَارَى حَتَّى تَتَّبِعَ مِلَّتَهُمْ.

ইহুদী খ্রিস্টানরা তোমার প্রতি কিছুতেই খুশি হবে না, যতক্ষণ না তুমি তাদের ধর্মের অনুসরণ করবে। -সূরা বাকারা (২) : ১২০

কিছু কিছু গেমসে পরিকল্পিতভাবে প্রতিপক্ষের বেশভূষা রাখা হয় সম্পূর্ণ ইসলামী। দাড়ি, টুপি, আরবি রূমাল এবং জোব্বা পরিহিত মানুষদেরকে শত্রু বানিয়ে ইচ্ছামতো তাদেরকে মারার প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। কিছু ভিডিও গেমের দৃশ্যপট দেখলে চোখে ধন্দ লেগে যায়। অবিকল সিরিয়া ফিলিস্তিনের মতো এলাকা। সেই যুদ্ধবিধ্বস্ত মুসলিম বসতবাড়ি! সেই পরিত্যক্ত মরুঅঞ্চল! রাস্তাঘাট ও দোকানপাটের নামগুলিও পর্যন্ত আরবিতে লেখা। সেখানে ঘুরে ঘুরে আপনার সন্তান শত্রু মারার খেলা খেলছে।

ইসরাইলে তো এ ধরনের প্রায়-বাস্তব অ্যাডভেঞ্চারের অভিজ্ঞতা দিতে একাধিক থিম পার্কই গড়ে তোলা হয়েছে। সেখানে টিকিট কেটে হত্যা করার ব্যবস্থা রয়েছে আরব অথবা ফিলিস্তিনি সন্ত্রাসী(!)। পর্যটকদের আনন্দ দিতে নাকি এ ব্যবস্থা। এসব পার্কে খুঁজে খুঁজে মুসলিম বেশভূষার ছবি বা ডামিকে মারা, বসতিতে জ¦ালাও-পোড়াও করার খেলায় মেতে উঠে পর্যটকরা।

একজন কলামিস্টের ভাষায়-

(ইসরায়েলি বিনোদন : টিকিট কাটুন, ‘ফিলিস্তিনি’ মারুন! নামক নিবন্ধে তিনি লিখেছেন,) “...ওয়েস্টওয়ার্ল্ডের সঙ্গে ইসরায়েলি বিনোদনকেন্দ্রের মিলটা বাস্তবতায় নয়, গুণে নয়, কেবল লক্ষণে। রোবটের বদলে তারা ব্যবহার করে মানুষের ছবি বা ডামি; যাদের গায়ে পরানো থাকে ফিলিস্তিনি কেফায়াহ কিংবা আরবদের গলায় পরার স্কার্ফ-ইয়াসির আরাফাত যেমনটা পরতেন। ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেম আন্তর্জাতিক আইনে ইসরায়েলের দখলীকৃত এলাকা। ওই জমিতে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সাবেক কমান্ডো ও অফিসাররা সন্ত্রাস দমনের টার্গেট হিসেবে যাদের নকল বা ছবি সাজিয়েছে, তারাই ওই জমির ঐতিহাসিক ও আইনসংগত মালিক। প্রশিক্ষণের পাশাপাশি পর্যটকদের জন্য একটা বিনোদন পার্কও চালানো হয়। সেখানে সাজানো পরিস্থিতিতে আপনি আরব অথবা ফিলিস্তিনি সন্ত্রাসী (!) ‘হত্যা’ করতে পারবেন। ...আপনাকে এমন একটি রাস্তায় নিয়ে যাওয়া হবে, যেখানকার আরব অধিবাসীদের মধ্যে আপনি সন্ত্রাসী খুঁজবেন।

...শিশুরাও সব খেলায় অংশ নিতে পারলেও সত্যিকার বন্দুক তাদের দেওয়া হয় না।

ইসরায়েলজুড়ে এ রকম ছয়টি বিনোদনকেন্দ্র আছে, নতুন আরেকটি খোলা হচ্ছে আমেরিকায়।...

...ইসরায়েলের বিনোদন পার্কের খবর পড়ে আশ্বাস ভেঙে গিয়ে আতঙ্ক জেগেছে। মনে প্রশ্ন তৈরি হয়েছিল, ভিডিও গেমের আদলে এই ধরনের প্রায়-বাস্তব অ্যাডভেঞ্চার কি মানুষের মধ্যে বিকৃত ভোগ ও খুনপিপাসা জাগায় না?...

...ইসরায়েলি বিনোদনকেন্দ্রে আরব ও ফিলিস্তিনিদের সন্ত্রাসী হিসেবে দেখা এবং তাদের হত্যায় মন মজানো কেউ যদি বন্দুক হাতে আরব পোশাক পরা মানুষ হত্যায় নেমে পড়ে, তার দায় কি এই ইসরায়েলিরা নেবে? মোদ্দাকথা, এটা কতটা বিনোদন পার্ক আর কতটা ঘৃণার কারখানা?

শিশুদের এমন বিনোদনে মাতানোই-বা কতটা সুস্থ কাজ? কিন্তু বর্ণবাদীদের কাছে এসবই স্বাভাবিক।” [দৈনিক প্রথম আলো (অনলাইন), ১৯ জুলাই, ২০১৭]

ক্যালিবার থ্রি নামের এ বিনোদনকেন্দ্র প্রতি বছর ২২ থেকে ২৫ হাজার পর্যটককে এরূপ বিকৃত বিনোদন সরবরাহ করে থাকে। এভাবে তারা টাকার বিনিময়ে মানুষের মধ্যে বিকৃত ভোগ, খুনপিপাসা ও কল্পনার শয়তানি সাধ মেটাবার আয়োজন করে জাগিয়ে তুলছে তার শয়তানি প্রবৃত্তিকে। তারপরও তারা নাকি সভ্য, প্রগতিশীল ও বিশ্বশান্তির অগ্রদূত!

ভাবুন তাহলে, কীসের প্রশিক্ষণ পাচ্ছে আপনার সন্তান! একদিকে বছরের পর বছর ইহুদী-খ্রিস্টান শক্তি সিরিয়া-ফিলিস্তিনে মুসলমানদের জীবন নিয়ে খেলছে। অন্যদিকে তারাই বিশ্বব্যাপী মুসলিম প্রজন্মকে খেলার ছলে তাদের মানসিকতায় গড়ে তুলছে। (তা-ও বিনা পয়সায় নয়, রীতিমতো মোটা অংকের টাকা নিয়ে।) আমাদের অভিভাবকরা সন্তানকে এসব ক্রুসেড খেলা খেলতেও দিচ্ছেন নিশ্চিন্তে। এ যেন ভাইয়ের হাতে ভাইয়ের খুনের মহড়া চলছে ঘরে ঘরে। চোখের সামনে ঘটলেও আমরা তা ধরতে পারছি না বা গুরুত্ব দিচ্ছি না।

 

আভিভাবকদের প্রতি

সবশেষে অভিভাবকদের প্রতি প্রশ্ন, আমরা তাহলে কোন প্রজন্ম গড়ে তুলছি? কোন চেতনায় বেড়ে ওঠছে আমাদের সন্তানেরা? কম্পিউটার, মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেটের কতটুকু ভালো, কতটুকু মন্দ, খেলাধুলা ও বিনোদনের জায়েয-নাজায়েযের সীমারেখা কী- সে আলোচনার আগে জিজ্ঞাসা হচ্ছে, সন্তানের ঈমান-আকীদা ধ্বংস করে, চোখ ও মস্তিষ্ক নষ্ট করে, শারীরিক ও মানসিক অসংখ্য রোগের পথ খুলে দিয়ে আমরা কোন্ বিনোদনের ব্যবস্থা করছি তাদের জন্য? শিশু কিশোরদের হাতে এসব যান্ত্রিক বিনোদন তুলে দিয়ে আমরা একটি অপরিনামদর্শী প্রজন্ম তৈরি করছি না তো?

যারা একথা বলে যে, ‘ভিডিও গেমস মানসিক চাপ কমায়। ইতিবাচক চিন্তা জন্মায়। একাগ্রতা, দ্রুততা ও সমস্যা সমাধানের যোগ্যতা তৈরি করে’- তাদের কাছে জানতে চাই, চুরি, ডাকাতি, প্রতারণা, অপচয়, নগ্নতা, হিংস্রতা, হত্যা ও রক্তারক্তি শিখিয়ে কোন্ ইতিবাচক চিন্তা জন্মানো আর কোন্ মানসিক চাপ কমানোর কথা বলছেন আপনারা? শিশুদের পড়াশুনার বারোটা বাজিয়ে, তাদেরকে অস্থির-অসহিষ্ণু বানিয়ে কোন্ একাগ্রতা ও দ্রুততার পাঠ দিতে চাইছেন?

যে মানুষগুলো আজকে গেম খেলতে খেলতে মানসিক রোগী হয়ে যাচ্ছে, বাবা -মার সঙ্গে রাগারাগি করছে, স্বার্থপর ও আত্মকেন্দ্রিক হয়ে একসময় আত্মঘাতী পর্যন্ত হয়ে উঠছে, তাদেরকে আর কোন্ সমস্যার সমাধান শেখাবেন গেম খেলিয়ে?

এ জীবন, সময়, সম্পদ এবং সন্তান কোনোটিরই আমরা মালিক নই। এর প্রত্যেকটিই আল্লাহপ্রদত্ত মূল্যবান আমানত, যার হেফাযত ও সদ্ব্যবহার না করা হলে আমাদেরকে একদিন আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। মুসলমানের জীবন তো কখনো এমন হবে না যে, তার সময়কে কাটানোর প্রশ্ন আসবে! জীবনের প্রতিটি মুহূর্তই মহামূল্যবান। আমাদের কি এতই উদ্বৃত্ত সময় থাকে যে তাকে কাজে লাগানোর খাত খুঁজে না পেয়ে আমরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা মোবাইল-কম্পিউটারে উড়িয়ে দিচ্ছি! দেশের পাঁচ কোটি ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সবাই কি জরুরি কাজে তা ব্যবহার করছে?

আমাদের অর্থ-সম্পদ কি এতই হয়ে গেছে যে, ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ প্রতিদিন পরিশ্রম করে পাবজি খেলে পশ্চিমাদের পকেট ভারি করছি! আজও এদেশে অসংখ্য মানুষ প্রতিদিন না খেয়ে থাকে। লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা কক্সবাজারে ক্ষুধা, কষ্ট ও দারিদ্র্যের মাঝে মানবেতর জীবন যাপন করছে।

বিনোদনের নামে সম্পদের এত বিপুল অপচয়ের সময় কি আমাদের তাদের কথা একটুও মনে পড়ে না? আমরা আমাদের সময় ব্যয় করছি, সম্পদ ব্যয় করছি, ঘণ্টার পর ঘণ্টা খাটুনি করে পশ্চিমাদের আরো আরো অর্থের যোগান দিচ্ছি। বিনিময়ে কী পাচ্ছি? ক্ষণিকের সস্তা বিনোদন আর শরীর ও মনের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি!

আজ থেকে দশ পনের বছর পূর্বেও শিশুদের খেলাধুলা ছিল স্বাস্থ্যকর ও প্রকৃতিবান্ধব। সেখানে ধ্বংসাত্মক ও ঈমানবিরোধী বিনোদনের কোন অস্তিত্বই ছিল না বলতে গেলে। কিন্তু এখন বিনোদন মানেই শুধু পিস্তল, মারামারি, অশ্লীলতা ইত্যাদি! এসব খেলে আপনার সন্তান শুধুই যে মজা পাচ্ছে তা নয়, তার মগজও ধোলাই হচ্ছে পরিকল্পিতভাবে। ফলে এ প্রজন্ম বেড়ে ওঠছে হিংসা, বেহায়াপনা, নির্মমতা ও বস্তুবাদের ভয়ংকর মানসিকতা নিয়ে।

বর্তমানে যেসকল বুদ্ধিজীবী দাড়ি, টুপি, মাদরাসা ও ইসলামী পোষাকের ভেতর জঙ্গিবাদের গন্ধ খুঁজে বেড়ান, তারা কি কখনো ভেবে দেখেছেন যে, এখন ঘরে ঘরে কীসের প্রশিক্ষণ চলছে? যুদ্ধ, রক্তপাত, সহিংসতা ও ধ্বংসাত্মক ভিডিও গেম খেলে কোমলমতি শিশুরা কোন্ মানসিকতায় বেড়ে উঠছে? পুঁজিবাদী পশ্চিমের যান্ত্রিক উৎকর্ষের কল্যাণে কীসের মহড়া চলছে শিশু-কিশোরদের হৃদয় ও মনে? কেন এত যুদ্ধ? কেন এত রক্ত? কেন এত নির্মমতার পাঠদান ভিডিও গেমসে? কোন্ অতলে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের নতুন প্রজন্ম? একটু ভেবে দেখব কি!

22
পত্র-পত্রিকার একটি উদ্বেগজনক সাম্প্রতিক শিরোনাম কিশোর গ্যাং। অভিভাবকদের জন্য তো বটেই, ইতিমধ্যে তা হয়ে উঠেছে সামাজিক উদ্বেগেরও বিষয়। এই শিরোনামের সাথে জড়িয়ে আছে স্কুল-পড়–য়া কিশোরদের মধ্যকার সিনিয়র-জুনিয়রের দ্বন্দ্ব, আধিপত্য বিস্তারের মানসিকতা, মাদক, নারী-নির্যাতন এমনকি খুনখারাবির প্রবণতা। বিষয়টি খুনখারাবির পর্যায়ে চলে যাওয়ার পর প্রশাসন ও মিডিয়াসহ সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ে তা আলোচিত বিষয়ে পরিণত হয়েছে।

সমাজবিজ্ঞানী ও শিশু-মনস্তত্ববিদগণ এর ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করছেন এবং বিভিন্ন কারণ নির্দেশ করছেন। তাদের বলা ও না-বলা কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে হিরোইজম ও লোকের দৃষ্টি আকর্ষণের প্রবণতা, ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা ও অশ্লীলতার সয়লাব, বলিউড-হলিউডের ছায়াছবির হিংস্রতা ও পাশবিকতা, মাদকের বিস্তার, ছেলে-মেয়ের অবাধ মেলামেশা, পারিবারিক অশান্তি ও অস্থিরতা, ছেলে-মেয়েকে পর্যাপ্ত সময় না দেওয়া ইত্যাদি। এককথায় পশ্চিমা পুঁজিবাদী ও ভোগবাদী জীবনধারার নানা অনুষঙ্গ। এই জীবন-দর্শন ও জীবন-ধারার নানাবিধ কুফল, যা প্রতিনিয়ত বিভিন্নরূপে প্রকাশিত হয়ে চলেছে, উপরের বিষয়টিও তার সাম্প্রতিক দৃষ্টান্ত।

তিক্ত হলেও সত্য যে, ইসলামী জীবনবোধ ও জীবনব্যবস্থার অনুসরণের অভাব আমাদেরকে নানা সমস্যায় পর্যুদস্ত করে রেখেছে। এইসকল সমস্যা থেকে মুক্তির যথার্থ ও স্থায়ী উপায় হচ্ছে, সমাজের সর্বস্তরে ইসলামী জীবনবোধের বিস্তার ও ইসলামী জীবন-ব্যবস্থার অনুসরণ।

ইসলামী জীবনবোধ জীবনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে শেখায়, জীবনের যথার্থ মূল্য সম্পর্কে সচেতন করে, নেতৃত্ব ও মর্যাদার সঠিক সংজ্ঞা ও যথার্থ উপলব্ধি দান করে, সর্বোপরি জীবনকে জীবনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ কাজে ব্যবহারের পথনির্দেশ করে। সাধারণভাবে প্রতিটি মানুষের জন্যে, আর বিশেষভাবে কিশোর-তরুণ প্রজন্মের জন্যে ইসলামী জীবনবোধ তাই অতি প্রয়োজন।

জীবনের অতি মূল্যবান অংশের নাম তারুণ্য। স্বপ্ন ও সম্ভাবনার, উদ্যম ও গঠনের এ এক সতেজ অধ্যায়। আর তাই সমাজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে তরুণ-সমাজ। এরাই তো নতুন সূর্য- সমাজের স্বপ্ন ও সম্ভাবনার। এই সূর্য ক্ষয় ও অবক্ষয়ের কালো মেঘে ঢাকা পড়ে যাওয়ার মানে, সমাজের ভবিষ্যত অন্ধকার হয়ে যাওয়া। কাজেই আমাদের কিশোর-তরুণদের অবক্ষয়ের রাহু-গ্রাসে পতিত হওয়া থেকে অবশ্যই ফেরাতে হবে।

সেই ফেরানো যতটা না পারিবারিক ও সামাজিক শাসনের দ্বারা তার চেয়েও বেশি সোহাগ ও সঠিক নির্দেশনার দ্বারা। জীবন সম্পর্কে যে দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের কিশোর-তরুণদের হিংস্রতা ও অবক্ষয়ের পথে ধাবিত করছে তার কি  কোনো দায় নেই? ভোগবাদী, আগ্রাসনবাদী দৃষ্টিভঙ্গি, অহঙ্কার ও তাচ্ছিল্যের দৃষ্টিভঙ্গি, ঘৃণা ও হিংসার দৃষ্টিভঙ্গি যারা সরবরাহ করছেন তাদের কি কোনো দায় নেই? নাটক-সিনেমা, বিনোদন-সংস্কৃতি, সংবাদ-সাহিত্য, রাজনীতি-শিক্ষানীতি ইত্যাদির কি কোনো দায় নেই?

সত্যি কথা হচ্ছে, জীবন ও সমাজের যে অঙ্গন থেকেই আল্লাহমুখিতা ও আখিরাতমুখিতার আলো বিদায় নেবে সে অঙ্গনেই বাসা বাঁধবে নানাবিধ অন্ধকার। ওখান থেকেই ছড়িয়ে পড়বে নানা রোগ-ব্যাধি। অন্ধকারের এই রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় হচ্ছে ঈমানের দীপ জে¦লে দেওয়া।

আজ আমাদের কিশোর-তরুণদের একটি অংশে ছড়িয়ে পড়া গ্যাং-কালচার আলোচনায় এসেছে। কেউ কি বলতে পারেন আগামীকাল অন্য কিছু আলোচনায় আসবে না? এর পরের দিন আসবে না অন্য কিছু? কাজেই গোড়ার সমাধান নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, তা হচ্ছে ঈমানের আলোর বিস্তার। বাস্তবিকই এর কোনো বিকল্প নেই।

আজ যে কারণগুলো সাধারণত আলোচনায় আসছে তা দূর করার কী উপায়? ইন্টারনেট ও যোগাযোগ-মাধ্যম অবক্ষয়ের অন্যতম কারণ। কিন্তু এগুলো তো আধুনিক জীবনের অনুষঙ্গ। এগুলো একেবারে বাদ দেয়ার সুযোগ নেই। তাহলে শেষ কথা এই দাঁড়াবে যে, এসব উপকরণ ব্যবহারে সংযমী  হতে হবে। এই সংযমটা আসবে কোত্থেকে- আল্লাহর ভয় ও আখেরাতের চেতনা ছাড়া?

পরিবারে ছেলে-মেয়েকে সময় দিতে হবে। ঠিক কথা। কিন্তু কীভাবে তা সম্ভব হবে- যদি না অন্য ব্যস্ততা কিছুটা হ্রাস করা যায়? এই ত্যাগের প্রেরণা কীভাবে আসবে- অল্পেতুষ্টির চেতনা ছাড়া?

আমরা বলতে পারি যে, কিশোর-তরুণদের বোঝাতে হবে, ‘নেতৃত্ব অর্থ জালিম হওয়া নয়, নেতৃত্ব অর্থ সেবক হওয়া।’ কিন্তু কেন তারা জালিম না হয়ে সেবক হবে- যখন জালিমেরাই সমাজে সমীহের পাত্র? লোকের সমীহের মোহ ছেড়ে নিঃস্বার্থ সেবকের স্তরে কীভাবে কেউ উন্নীত হবে- আখিরাতের জবাবদিহিতা ও মহা পুরস্কারের অটল বিশ্বাস ছাড়া?

আমরা বলছি, কিশোরেরা কাদের সাথে চলে তা মনিটরিং করতে হবে! অবশ্যই করতে হবে। কিন্তু একইসাথে তার জন্য উত্তম সাহচর্যের ব্যবস্থাও তো করতে হবে। এটা কি ভাবতে হবে না যে, কিশোর ছেলেটি কেন ক্ষতিকর সাহচর্যের দিকেই প্রলুব্ধ হচ্ছে? তাকে ক্ষতিকর সাহচর্য থেকে ফিরিয়ে রাখা যেমন কর্তব্য তেমনি কর্তব্য, তার জন্য উত্তম সাহচর্যের ব্যবস্থা করা। আরো কর্তব্য, সেই উত্তম সাহচর্যের প্রতিই তার মনে আকর্ষণ তৈরি করা। কিন্তু কীভাবে তা হবে- আখিরাতমুখী জীবনবোধের বিস্তার ছাড়া?

সর্বোপরি আমাদের কিশোর-তরুণদের মাঝে যেসব সদ্গুণের সমাবেশ আমরা দেখতে চাই- আমাদের কর্তব্য, নিজেদেরকেও সেইসব সদ্গুণের উত্তম নমুনা হিসাবে গড়ে তোলা। সেবার মহিমা, বিনয়ের মাহাত্ম্য, সংযমের শক্তি, জীবনের মূল্য, এককথায় মানবজীবনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সম্পর্কে আমাদের নিজেদেরও সচেতন হতে হবে, আমাদের সন্তানদেরকেও সচেতন করতে হবে। মনে রাখতে হবে, সন্তানের উজ্জ্বল-তারুণ্য নির্মাণে আমাদের উন্নত অভিভাবকত্বের কোনো বিকল্প নেই। আল্লাহ তাআলা আমাদের তাওফীক দান করুন- আমীন।

23
EEE / Re: moral degradation of our society
« on: November 04, 2019, 10:30:12 AM »
good to know

24
English / Re: The Oxford Word of the Year 2018 is…
« on: March 28, 2019, 01:36:42 PM »
good to know

26
Software Engineering / Re: Architecture and types of DSS
« on: March 28, 2019, 01:33:24 PM »
good to know

27
Law / Re: Qualitative vs. Quantitative Research
« on: March 28, 2019, 01:32:35 PM »
good to know

28
EEE / Re: A world of wireless power
« on: March 28, 2019, 01:23:10 PM »
good to know

29
EEE / Re: A thrust to Neuron
« on: March 28, 2019, 01:13:36 PM »
hmm.

30
EEE / শ্রেষ্ঠ বিয়ে?!
« on: March 25, 2019, 12:06:32 PM »
বার্সেলোনার ফুটবল তারকা লিওনেল মেসির বিয়ের ঘটনাটি এ দেশের পত্র-পত্রিকাতেও বেশ ফলাও করে প্রচারিত হয়েছে। মিডিয়ার এক উল্লেখযোগ্য অংশ জুড়ে ছিল এ সংক্রান্ত খবরাখবর। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা কোথায় সম্পন্ন হচ্ছে, অতিথি হয়ে কারা আসছেন, কারা আসছেন না, নাচ-গান কে করবেন, কে করবেন না, খাবারের মেনু কী হচ্ছে, বর-কনে কী পোষাক পরবেন, সেই পোষাক কোন ফ্যাশন ডিজাইনারের প্রস্তুতকৃত ইত্যাদি নানা খুঁটিনাটিতে এদেশের মিডিয়াও ছিল বেশ সরগরম। আর মিডিয়ার সরগরম হওয়ার অর্থ হচ্ছে দেশের এক বিপুলসংখ্যক জনতার ব্যস্ত হওয়া এবং তাদের বিপুল সময় এসবের পেছনে ব্যয় হওয়া। এ জাতীয় ব্যক্তিগত বিষয়কে ইস্যু বানিয়ে জনসমক্ষে প্রচারে ব্যক্তি ও সমাজের কী কল্যাণ রয়েছে তা আমাদের মতো বেরসিকদের সত্যিই বোধগম্য নয়। এই প্রশ্ন তোলাটাও হয়তো অনেকের কাছে অদ্ভুত বলে বোধ হতে পারে। কিন্তু আসলেই কি তাই? সত্যিই কি বিষয়টি প্রশ্ন করার মতো নয়? আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, এই সমাজে এখনও এমন অনেক মানুষ আছেন, যারা এই প্রশ্নের সাথে একমত, কিংবা অন্তত এই প্রশ্নটিকে একটি যৌক্তিক প্রশ্ন বলেই মনে করেন। সমাজের সকল মানুষ তো আর গড্ডলিকা প্রবাহে ভেসে যায় না। সব যুগেই সব সমাজেই থাকে প্রশ্ন করার মত কিছু হৃদয় ও মস্তিষ্ক। অন্যরা হুজুগে মাতলেও এরা অন্তত হুজুগে মাততে প্রস্তুত হন না। যাই হোক লিওনেল মেসির সূত্রে আর্জেন্টিনার আর সেই সূত্রে বিশ্বকাপ ফুটবলের কথা মনে পড়ে গেল। একটা সময় ছিল যখন বাংলাদেশে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ছাড়া আর কোনো দেশের সমর্থক প্রায় পাওয়াই যেত না। বিশ্বকাপ শুরু হলে গোটা দেশ ছেয়ে যেত ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার পতাকায়। এখন অবশ্য আরো অনেক দেশের পতাকা উড়তে দেখা যায়। মিডিয়ার প্রচারণা আর জনগণের মাতামাতিতে এখন আরো ভয়াবহ অবস্থার তৈরি হয়। মিডিয়া অনেকখানি কোমল করে এর নাম দিয়ে থাকে ‘বিশ্বকাপজ্বর’। এখন ঢাকায় চিকুনগুনিয়া জ্বরের যে প্রকোপ বিশ্বকাপ-মওসুমে গোটা দেশে বিশ্বকাপ-জ্বরের প্রকোপও তার চেয়ে কোনো অংশে কম হয় না। কিন্তু কৌতুকের বিষয় হচ্ছে, ঐ সময় খোদ আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলেও সম্ভবত এই পরিমাণ মাতামাতি হয় না। মনে পড়ছে গত বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার প্রধানমন্ত্রী বলে ফেললেন, ‘আর্জেন্টিনার সবগুলো ম্যাচ টিভিতে দেখার সুযোগ পাননি।’ অর্থাৎ মাঠে বসে দেখার জন্য সফরের তো প্রশ্নই আসে না, ঘরের টিভিতেও তিনি সবগুলো ম্যাচ দেখতে পারেননি। তাঁর এ কথায় ফুটবল-ফ্যানেরা অনেকেই কষ্ট পেয়েছেন। কেউ কেউ তাকে নিষ্ঠুর বলেও অভিহিত করেছেন। কিন্তু সেটা আসলে স্বাভাবিক ব্যাপারই ছিল। অস্বাভাবিক কিছু ছিল না। একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি সবকিছু ছেড়ে খেলা নিয়ে মত্ত হয়ে পড়বেন তা ভাবাই যায় না। আরো আগে যখন এই দেশে দিয়েগো ম্যারাডোনার পর্ব চলছে ঐ সময় এক জাতীয় দৈনিকে একটি সংবাদ প্রচারিত হয়েছিল যে, কোনো এক বাংলাদেশী সাংবাদিক তাঁর সামনে বাংলাদেশের কথা ওঠালে ম্যারাডোনা প্রশ্ন করেছিলেন, ‘বাংলাদেশ কোন দেশের নাম?’ পরে অবশ্য বিত্তবান ভক্তদের কল্যাণে ম্যারাডোনাও এই দেশে এসেছেন, মেসিও প্রীতিম্যাচ খেলে গেছেন। কিন্তু একটু চিন্তা করুন, এই দেশে যখন একশ্রেণীর তরুণ-তরুণী মেসি-ম্যারাডোনার নামে পাগল ঐ সময় ঐ নায়কদের এটুকুও জানা নেই যে, পৃথিবীতে ‘বাংলাদেশ’ নামের একটি দেশ আছে! কিছুটা রূঢ় শোনালেও বাস্তবতা তো এমনটাই দাঁড়াচ্ছে যে, যে দেবতার চরণে এই বিপুল ভক্তির অর্ঘ্য, সেই দেবতাই ভক্তকুলের ব্যাপারে সম্পূর্ণ নিরাসক্ত। কবির ভাষায়- كل يدعي حبا بليلى + وليلى لا تقر لهم بذاك অর্থ : প্রত্যেকেই দাবিদার লাইলা- প্রেমের/কিন্তু লাইলা তো সে দাবি স্বীকার করে না। যাই হোক, যে কথাটি বলতে চেয়েও বারবার অন্য প্রসঙ্গে চলে যাচ্ছি, তা হচ্ছে, আর্জেন্টাইন একজন ফুটবলার লিওনেল মেসির বিয়ে নিয়ে যে ব্যাপক আয়োজন-আলোচনা, এটা এবং এ জাতীয় বিষয়বস্তু ব্যক্তি ও সমাজ এবং দেশ ও জাতির প্রয়োজন ও বাস্তব কল্যাণ বিবেচনায় কতটা যথার্থ? প্রয়োজন ও কল্যাণ তো দূরে এই সকল প্রচার-প্রচারণায় নতুন প্রজন্মের চিন্তা ও বিশ্বাসগত এবং আদর্শ ও জীবনাচারগত অবক্ষয়ের যে উপাদানগুলো রয়েছে তা বিস্মৃত হওয়াও কতটুকু যুক্তিসঙ্গত? ঐ আপাত চাকচিক্যময় ভোগবাদী জীবনধারার সাথে তো আমাদের পবিত্র ও নির্মল জীবনধারার কোনোই সম্পর্ক নেই। পশ্চিমা জীবনধারার ভেতরের যে শূন্যতা ও অন্ধকার, তা যদি সঠিকভাবে উপলব্ধি করা না যায় তাহলে এর বাহ্যিক ঝলকানিতে প্রতারিত হয়ে বিপথগামী হওয়ার এবং সর্বস্ব হারিয়ে রিক্ত-নিঃস্বে পরিণত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকছে। শুধু সম্ভাবনাই নয় মুসলিম দেশগুলোতে পশ্চিমা ক্ষতিকর জীবনধারা বিস্তারের কুফল ইতিমধ্যে সমাজ ভুগতে আরম্ভ করেছে। কাজেই ঐ জীবনধারার দীনতা সম্পর্কে মুসলিম নর-নারীর, বিশেষত তরুণ-প্রজন্মের সচেতন হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। আলোচ্য বিষয়টিতে দেখুন, লিওনেল মেসির বিয়ে নিয়ে এই যে প্রচার-প্রচারণা, কোনো কোনো গণমাধ্যম যাকে অভিহিত করছে ‘শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ বিয়ে’ বলে সেই বিয়েটার প্রকৃতি আসলে কী? মেসি কাকে বিয়ে করেছেন? ঐ নারীটিকেই, যার সাথে ইতোমধ্যে তিনি নয় বছর বসবাস করেছেন। এদের দুটো পুত্র সন্তানও রয়েছে। একজনের বয়স চার আর অপরজনের এক। হায়রে শ্রেষ্ঠত্ব! যে বিয়েতে কোনো নতুন বর-কনের দেখা মিলল না, যে দম্পতির কোনো প্রথম বা দ্বিতীয় সন্তান হবে না, যে বিয়েতে কোনো দরিদ্র তো দূরে থাক সাধারণ ধনীরও জায়গা হয়নি সেই বিয়েকেই বলা হচ্ছে শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ বিয়ে! প্রপাগান্ডা আর কাকে বলে! যাই হোক প্রশ্ন হচ্ছে, এত বছর একত্রে থাকার পর এখন বিয়ের প্রয়োজন কেন? পশ্চিমা জীবনধারায় আইনগতভাবে বিয়ের প্রয়োজন নেই। পরস্পর সম্মতির ভিত্তিতে নারী-পুরুষ একত্রে এক ছাদের নিচে বসবাস করতে পারে। সন্তানও নিতে পারে। সামাজিকভাবে ও আইনগতভাবে এতে তেমন কোনো বাধা নেই। বাধ্যবাধকতার কোনো ব্যাপার নেই। এরপরও বিয়ের প্রয়োজন কেন? দৈনিক যুগান্তরের রিপোর্টে বলা হয়েছে- ‘চার বছরের থিয়াগো এবং এক বছরের মাতেওকে নিয়ে মেতে আছেন তারা সুখের সংসারে। সেই সুখ পরিপূর্ণ করতে প্রায় নয় বছরের ঘরণি আন্তোনেল্লা রোকুজ্জোকে বিয়ে করছেন মেসি।’ (দৈনিক যুগান্তর, ২৯ জুন ২০১৭) অর্থাৎ একসাথে বসবাস এবং সন্তান-সন্ততি সত্ত্বেও এই যুগলের সুখ পূর্ণতা পায়নি। সেই পূর্ণতার সন্ধানেই অবশেষে বিয়ে। এক সাক্ষাৎকারে তারা বলেছেন, নিজেদের সম্পর্ক স্থায়ী করার জন্যই তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হচ্ছেন। মনে পড়ছে কয়েক বছর আগের এমনি আরেকটি বিয়ের কথা। পশ্চিমের আরেক বয়স্ক ধনাঢ্য যুগলের বিয়ের খবর ঐ সময় গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল। সে যুগল বিবাহ ছাড়াই বহু বছর একত্রে বসবাস করার পর এবং তাদের সন্তানেরা যৌবনে পদার্পণ করার পর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার প্রয়োজন অনুভব করেছিল। তাদের বক্তব্য ছিল, সন্তানগণের আবদার হল তাদের মা-বাবার মধ্যে যেন বিবাহিত জীবন তারা দেখতে পায়। অর্থাৎ অবিবাহিত মা-বাবার সন্তান পরিচয় দিতে তাদের সংকোচ হচ্ছিল। এই যে ‘সুখের পূর্ণতা’ কিংবা ‘স্থায়ী সম্পর্কের নিশ্চয়তা’ অথবা ‘বিবাহিত পিতা-মাতার সন্তান বলে পরিচিত হওয়ার আগ্রহ’ এগুলো আসলে কেন? এ কীসের অভাববোধ? আজ দুর্ভাগ্যজনকভাবে মুসলিম সমাজের একটি অংশ যেসবের জন্য লালায়িত সেই অর্থ, যশ-খ্যাতি ও চাকচিক্য সবই তো ওদের আছে। এরপরও কীসের অভাব, কীসের শূন্যতা? এটা বুঝতে হলে পশ্চিমা সমাজের শুধু বাইরের দিকটা দেখলেই চলবে না। তাদের ভেতরেও একটু উঁকি দিতে হবে। এদের পরিবার, নারী-পুরুষের সম্পর্ক, সন্তান ও মা-বাবা, ওল্ডহোম- এই সবগুলো একটু ঘুরে আসতে হবে। এরপর এদের মনের ভেতরে উঁকি দিয়ে তাদের অতৃপ্তি ও অস্থিরতারও কিছু তত্ত্ব নিতে হবে। তাহলেই পুরো চিত্রটা আপনার সামনে উপস্থিত হবে। আপনি তখন উপলব্ধি করবেন, যে আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তিনি তাকে একটি ফিতরত ও স্বভাব দিয়েই সৃষ্টি করেছেন। এই যে চাহিদা এটা মানুষের সেই সনাতন স্বভাবেরই চাহিদা। স্বভাবের সাথে মানুষ যতই বিদ্রোহ করুক, তাকে আবার স্বভাবের কাছেই ফিরে আসতে হবে। দ্বীনে ফিতরত-স্বভাব-ধর্ম ইসলামের মাধ্যমে জীবনের যে স্বাভাবিকতা আল্লাহ আমাদের দান করেছেন এর কারণে বাইরের শত অপূর্ণতা ছাপিয়ে মুসলিম পরিবারগুলোতে বিরাজ করে এক অপার্থিব পূর্ণতা। মুসলিমসমাজের অতি স্বাভাবিক এই বিষয়গুলো অর্থাৎ পারিবারিক বন্ধন, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক, মায়ের মমতা, বাবার বাৎসল্য, সন্তান-সন্ততির সেবা ও আনুগত্য এবং একে অপরের কাছে থাকার আকাক্সক্ষা, যা স্বাভাবিক হওয়ার কারণেই প্রায়শ আমাদের চেতনারও বাইরে, এগুলো যে পশ্চিমা সমাজেও অতি কাম্য ও আরাধ্য তা নানা সময় নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয়ে পড়ে। অব্যাহত মিথ্যা প্রচারণা, ইসলামোবোফিয়ার বিস্তার এবং শত ষড়যন্ত্রের মধ্যেও পশ্চিমা দেশগুলোতে নওমুসলিমের সংখ্যা তো আর এমনি এমনিই বাড়ছে না। ইসলাম যে বিয়ের বিধান দান করেছে তা কেন? ইসলামে বিয়ের বন্ধন শুধু নারী-পুরুষের জৈবিক চাহিদা পূরণের উপায় নয়। এটি একটি চুক্তি ও অঙ্গিকার, যার দ্বারা সাব্যস্ত হয় কিছু কর্তব্য, কিছু অধিকার, সাব্যস্ত হয় দুনিয়া ও আখেরাতে জবাবদিহিতা। আর এসব কারণে এটি পারস্পরিক আস্থা-ভালবাসা এবং পূর্ণতা ও নির্ভরতার এক উপায়। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে- وَ مِنْ اٰیٰتِهٖۤ اَنْ خَلَقَكُمْ مِّنْ تُرَابٍ ثُمَّ اِذَاۤ اَنْتُمْ بَشَرٌ تَنْتَشِرُوْنَ وَ مِنْ اٰیٰتِهٖۤ اَنْ خَلَقَ لَكُمْ مِّنْ اَنْفُسِكُمْ اَزْوَاجًا لِّتَسْكُنُوْۤا اِلَیْهَا وَ جَعَلَ بَیْنَكُمْ مَّوَدَّةً وَّ رَحْمَةً اِنَّ فِیْ ذٰلِكَ لَاٰیٰتٍ لِّقَوْمٍ یَّتَفَكَّرُوْنَ. তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদেরকে মৃত্তিকা হতে সৃষ্টি করেছেন। তারপর এখন তোমরা মানুষ, সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছ। আর তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য হতে সৃষ্টি করেছেন তোমাদের স্ত্রীদিগকে, যাতে তোমরা তাদের নিকট শান্তি পাও। আর তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য এতে অবশ্যই বহু নিদর্শন রয়েছে। -সূরা রূম (৩০) : ২০-২১ অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে- يٰا اَیُّهَا النَّاسُ اتَّقُوْا رَبَّكُمُ الَّذِیْ خَلَقَكُمْ مِّنْ نَّفْسٍ وَّاحِدَةٍ وَّ خَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَ بَثَّ مِنْهُمَا رِجَالًا كَثِیْرًا وَّ نِسَآءً وَ اتَّقُوا اللهَ الَّذِیْ تَسَآءَلُوْنَ بِهٖ وَ الْاَرْحَامَ اِنَّ اللهَ كَانَ عَلَیْكُمْ رَقِیْبًا. হে মানব! তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর, যিনি তোমাদিগকে এক ব্যক্তি হতে সৃষ্টি করেছেন এবং তার থেকে সৃষ্টি করেছেন তার স্ত্রী এবং তাদের দুজন থেকে ছড়িয়ে দিয়েছেন বহু নর ও নারী। আর আল্লাহকে ভয় কর, যার নামে তোমরা একে অপরের কাছে যাচ্ঞা কর আর সতর্ক থাক জ্ঞাতি-বন্ধন বিষয়ে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের উপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখেন। -সূরা নিসা (৪) : ৪-১ বস্তুত আল্লাহর নামের মাঝেই রয়েছে মানুষের হৃদয়-মনের প্রশান্তি ও স্থিরতা। আর একমাত্র আল্লাহর ভয়ই হচ্ছে মানুষের সকল কর্ম ও আচরণের নিয়ন্ত্রক। কাজেই নারী-পুরুষের এবং সমাজের সকল শ্রেণির পারস্পরিক হক ও অধিকার প্রাপ্তির নিশ্চয়তা এবং পরস্পরের জুলুম-অবিচার থেকে আত্মরক্ষার রক্ষাকবচ হচ্ছে আল্লাহর ভয়। যে বন্ধন আল্লাহর নামে হয় সেই বন্ধনেই মানুষের হৃদয়-মন প্রশান্তি লাভ করে। কুরআন মাজীদের ইরশাদ- أَلَا بِذِكْرِ اللهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ শোনো, আল্লাহর স্মরণেই হৃদয়সমূহ প্রশান্ত হয়। -সূরা রা‘দ (১৩) : ২৮ আর আল্লাহর বিধান পালনের মাঝেই মানব জীবনের সুখ-শান্তি, কল্যাণ ও নিরাপত্তা। এই বোধ মানুষের স্বভাবের ভেতর গচ্ছিত রাখা আছে। কাজেই এটা মানুষের ফিতরত। আর মানুষকে তার ফিতরতের দিকেই ফিরে আসতে হবে। যারা পশ্চিমের ভোগবাদী জীবনের বাহ্যিক ঝলকানিটুকুই দেখেন তাদের কর্তব্য এই সকল দৃষ্টান্তের ভেতরের সত্যটিও উপলব্ধি করা। তখন ঐ জীবনধারার শূন্যতা ও হাহাকারটুকু আবিষ্কার করা সম্ভব হবে। আর তখনই ইসলাম আমাদের যা দান করেছে তার মর্ম ও মাহাত্ম্যও আমাদের সামনে ফুটে উঠবে। رفعتوں كى جستجو ميں ٹهوكريں تو كها چكے + آستان يار پر اب سر جهكا كر ديكهئے অর্থ : গৌরবের অন্বেষায় অনেকবারই তো হোঁচট খেয়েছ/এবার একবার দেখ বন্ধুর সমীপে শীর নত করে।

Pages: 1 [2] 3 4 ... 6