Show Posts

This section allows you to view all posts made by this member. Note that you can only see posts made in areas you currently have access to.


Messages - mdashraful.eee

Pages: 1 2 [3] 4 5 6
31
EEE / আমি কে? part 2
« on: March 25, 2019, 12:04:21 PM »
নূরগুলো খুব কোমল করে বললো, আমরা ফিরেশতা। তুমি ইনসান। যতদিন তুমি এখানে থাকবে, আল্লাহর হুকুমে আমরা তোমার দেখা-শোনা করবো এবং তোমাকে হেফাযত করবো। ‘আল্লাহ’ শব্দটি শোনার সঙ্গে সঙ্গে আমি খুশী হয়ে গেলাম। ‘কী যেন ছিলো, কী যেন নেই’ সেই অস্বস্তিটা একেবারে দূর হয়ে গেলো। মনে পড়ে গেলো রূহের জলসা। সেই জলসায় আল্লাহ সমস্ত রূহকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, আমি কি তোমাদের রব নই? সমস্ত রূহ বলেছিলো, আমিও বলেছিলাম, অবশ্যই আপনি আমাদের রব।

নূরের ফিরেশতাদের জিজ্ঞাসা করলাম, আমি এখানে কেন? এখানে এত অন্ধকার কেন? রূহের জগতে তো কোন অন্ধকার ছিলো না। শুধু নূর ছিলো, সবকিছু কত আলোকিত ছিলো!

ফিরেশতারা বললো, তুমি রূহের জগতে ছিলে। এখন তুমি তোমার শরীরে প্রবেশ করেছো। আল্লাহর হুকুমে এখানে তোমার শরীর তৈরী করা হয়েছে এবং তোমাকে তোমার শরীরে প্রবেশ করানো হয়েছে।

ফিরেশতাদের কথায় আমি খুব অবাক হলাম। নড়াচড়া করে আমার শরীরকে বোঝার চেষ্টা করলাম। ফিরেশতারা ব্যস্ত হয়ে আমার চারপাশে জড়ো হলো, আর আমাকে বললো, বেশী নড়াচড়া করো না, তাহলে তোমার মায়ের কষ্ট হবে। আমি আরো অবাক হলাম, মা! রূহের জগতে এ শব্দ তো কখনো শুনিনি! বড় মধুর তো শব্দটি! মা! কাকে বলে মা! কেমন তিনি দেখতে! কিছুই বুঝতে না পেরে আমি শুধু অবাক হই, আর ভাবি, মা! মা! কে আমার মা! কোথায় তিনি! কোথায় আমি! আমার মায়ের কাছে কীভাবে যাবো আমি!

ফিরেশতারা হেসে আমাকে বলে, তুমি তো এখন তোমার মায়ের গর্ভে, তোমার মায়ের উদরে। তাই তো এখানে এত অন্ধকার। তুমি এখন এখানে থাকবে। তারপর যখন সময় হবে তখন আল্লাহর হুকুমে তুমি মায়ের গর্ভ থেকে বের হয়ে দুনিয়াতে যাবে। তখন তোমার মাকে তুমি দেখতে পাবে। তোমার মা তোমাকে অনেক আদর করবেন। এখন যেমন অনেক কষ্ট করে তোমাকে গর্ভে ধারণ করছেন, তেমনি তখন অনেক কষ্ট করে তোমাকে লালন পালন করবেন।

32
EEE / আমি কে? part 1
« on: March 25, 2019, 12:03:37 PM »
অদৃশ্য জগতের কোনো কিছুকে শুধু কল্পনার ভিত্তিতে আকীদা বানানো যায় না। এমনকি তথ্য হিসেবেও গ্রহণ করা যায় না। সে জন্য দরকার যথাযোগ্য দলীল। তবে অদৃশ্য জগতের কোনোকিছু নিয়ে ভাবতে দোষ নেই; যদি সে ভাবনায় মুনকার কিছু না থাকে। এমনি একটি সুন্দর ভাবনা পেশ করা হয়েছে লেখাটিতে।

আল্লাহ তাআলা কবুল ও মাকবুল করুন। আমীন।-মুহাম্মাদ আবদুল মালেক

আমার কোন নাম ছিলো না, আমার কোন শরীর ছিলো না। আমাকে তখন শুধু রূহ বলা হতো। তখনকার কথা আমার কিছু মনে নেই। শুধু মনে আছে, সমস্ত রূহকে আল্লাহ একত্র করেছিলেন। রূহের সেই জলসায় আমিও হাযির ছিলাম। নূর থেকে আওয়াজ শুনেছিলাম, তোমরা আমাকে চিনেছো? বলো তো আমি কে? আমি কি তোমাদের রব নই? সমস্ত রূহ একসঙ্গে বলেছিলো, আমিও বলেছিলাম, অবশ্যই আপনি আমাদের রব।

রূহদের সেই জলসার পর কত যুগ পার হলো, আমার কিছু মনে নেই, আমার কিছু জানা নেই।

কিছুদিন আগে হঠাৎ আমাকে বলা হলো, চলো, তোমার শরীর তৈরী হয়েছে। এখন তোমাকে রূহের জগত ছেড়ে প্রবেশ করতে হবে শরীরের জগতে। আমি অবাক হলাম, কারণ আমি জানি না, শরীর কী? শরীর কোথায়? শরীরের জগত কেমন? সেখানে গিয়ে আমি কী করবো?

হঠাৎ আমি নড়ে উঠলাম। আমি?! আমি কে? আমি কোত্থেকে এলাম? কোথায় এলাম? এখানে এত অন্ধকার কেন? হঠাৎ দেখি, চারদিকে অনেক নূর! মনে হয় আমার পরিচিত! কোথায় যেন দেখেছি! কোথায় যেন একসঙ্গে থেকেছি! তাতে আমার অজানা ভয়টা দূর হলো, অস্থিরতাটা শেষ হলো। তবু কিসের যেন একটুখানি অস্বস্তি! কী যেন ছিলো! কী যেন নেই! নূরগুলো আমাকে দেখে হাসে, যেন অভয় দিতে চায়। আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, কে আমি? কে তোমরা? কোথায় যেন তোমাদের দেখেছি!

33
ছোট বেলায় ফার্সী সাহিত্যে শেখ সা‘দী রাহ.-এর একটি নীতিবাক্য পড়েছিলাম-

خوردن براۓ زيستن ست، نہ زيستن براۓ خوردن.

অর্থাৎ বেঁচে থাকার জন্য আহার, আহারের জন্য বেঁচে থাকা নয়।

বক্তব্যটি সম্ভবত অনেকেরই জানা, অন্যান্য ভাষাতেও তা থাকবে। নীতিগতভাবে এই বক্তব্যের সাথে কারো দ্বিমত থাকার কথা নয়, দ্বিমত থাকলেও সেটা নিজের ভেতর পুষে রাখাটাই শ্রেয় মনে করার কথা, কিন্তু এখন আমাদের চারপাশের পরিবেশে এই নীতিবাক্য যেন সেকেলে হয়ে পড়েছে। খাবার-দাবার নিয়ে অতিমাত্রায় বাড়াবাড়ি, নানা প্রসঙ্গে ফোর স্টার, ফাইভ স্টার হোটেলগুলোর হেন অফার, তেন অফার দৃষ্টে মনে হয় এখন যেন খাওয়ার জন্যই মানুষের বেঁচে থাকা!

এই কথাগুলো আমার সাধারণত মনে পড়ে পবিত্র রমযান মাসে। দেশের নামকরা হোটেলগুলো থেকে সাহরি-ইফতারের নানা ক্যাটাগরির অফারের ছড়াছড়ি দেখে প্রতিবারই মনে হয় কিছু লিখি। কিন্তু যখন মনে পড়ে তখন আর সময় থাকে না, রমযানের পত্রিকা প্রেসে চলে যায়। তাই এবার এ বিষয়ে দুটি কথা একটু আগেভাগেই বলার ইচ্ছা করেছি।

আগেভাগে বলার পিছনে আরেকটি কারণও অবশ্য আছে। এজাতীয় অফার আগে দেখা যেত সাধারণত বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব-অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে। সম্প্রতি নবআবিষ্কৃত ভ্যালেন্টাইন ডে উপলক্ষেও দেখা গেল এইসব অফারের ছড়াছড়ি। ফুর্তিবাজ প্রকৃতির লোকদের জন্য এইসব অফার লোভনীয় হয়ে থাকে। ‘বাই ওয়ান গেট ওয়ান’ ধরনের অফারে যার পেটে ক্ষিধে নেই তারও জিভে জল আসে! অথচ এসব যে পুঁজিবাদের নানা অপকৌশল তা সচেতন ব্যক্তিদের কাছে অস্পষ্ট নয়।

এখানে স্বভাবতই এই প্রশ্নটি সামনে এসে যায় যে, তাহলে নানাবিধ দিবস উদ্ভাবন ও তার প্রচার-প্রতিষ্ঠার পেছনে কি একশ্রেণির লোকের মুনাফা হাসিলের পরিকল্পনাই কার্যকর। দিবসের নামে নানা প্রকারের অনাচার-অশ্লীলতা বিস্তারের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের গাঁটের টাকা খসানো ছাড়া আর কিছু তো এসব ক্ষেত্রে নজরে পড়ে না। একেকটি দিবস বা উৎসবকে কেন্দ্র করে খাবার-দাবার, পোষাক-আশাক, ফ্যাশন-বিনোদনের যেন ঝড় বয়ে যায়। এতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় সমাজের মধ্যবিত্ত নামে আখ্যায়িত শ্রেণিটি। একটি শ্রেণি তো আছে, যারা অর্থ ঢালার জায়গা খুঁজে পায় না। বৈধ-অবৈধ, হালাল-হারামের বাছ-বিচার ছাড়া যারা বিত্তের পাহাড় গড়েছেন তাদের জন্য এইসব আয়োজনে অর্থ ব্যয় খাবারের পর মিষ্টিমুখের মতো প্রীতিকর হলেও সমাজের বৃহত্তর মধ্যবিত্ত শ্রেণির জন্যে এইসব অফার-আয়োজন কতটা উপযুক্ত তা ভেবে দেখার প্রয়োজন আছে বৈ কি। অপরিমেয় বিত্তের অধিকারী না হওয়ায় এই শ্রেণিটিকে দুই পথের যে কোনো একটি অবলম্বন করতে হয়; হয়তো নিজের ও পরিবার-পরিজনের অতি প্রয়োজনীয় বিষয়াদিতে কাটছাঁট করে এইসব অপচয়ের জন্য অর্থ-সংস্থান করতে হয়, কিংবা অন্যায়-অবৈধ পথে অতিরিক্ত উপার্জন খোঁজ করতে হয়। বলা বাহুল্য যে, এর কুফল শুধু ব্যক্তিগত ও পারিবারিক ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ থাকে না, বৃহত্তর সমাজকেও তা অনৈতিকতার পথে ধাবিত করে। পুঁজিবাদী অর্থ ও সমাজ-ব্যবস্থার এই সুদূরপ্রসারী কুফল সম্পর্কে সচেতন হওয়া অতি প্রয়োজন।

 

ইফতার-সাহরি

কথা শুরু হয়েছিল সাহরি-ইফতারি নিয়ে। আজ থেকে কয়েক বছর আগেও প্রসঙ্গটি শুধু ইফতারিতেই সীমাবদ্ধ ছিল। চকবাজার ও পুরান ঢাকার ইফতার-সামগ্রী ও ইফতার-আয়োজন ছিল বেশ আলোচিত। কিন্তু এখন তা আর ইফতারির মধ্যে সীমবদ্ধ নেই। এখন সাহরি নিয়েও আছে ব্যাপক মাতামাতি। বড় বড় হোটেলগুলোতে এখন সাহরি-ইফতারির নানা আয়োজন থাকে। আয়োজনের সাথে থাকে বিস্তর প্রচার-প্রচারণা। যেন রমযান মাসটি শুধুই সাহরি আর ইফতারির জন্য। রমযানের মূল করণীয় ও বর্জনীয় সম্পর্কে আলোচনার পরিবর্তে সাহরি-ইফতারিতে কোথায় কী মেনু, কোথায় কী অফার তা-ই হয়ে ওঠে মুখ্য। পুঁজিবাদের এই সর্বগ্রাসী বিজ্ঞাপনের মাঝেই বিজ্ঞাপনের স্বার্থে উচ্চারিত হয় ‘সংযম’ কথাটিও! পরিহাসের ব্যাপার হল মূল্য ছাড় বা অফারের ঘোষণা আসে শুধু খাবার ও পোশাক-প্রসাধনীর ক্ষেত্রে। যেসব জায়গায় মূলত স্বল্প সংখ্যক ধনাঢ্য শ্রেণির লোকদেরই প্রবেশাধিকার থাকে। অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় ও আম জনতার ভোগ্য ও ব্যবহার্য পণ্যের দাম বাড়িয়ে তা করা হয় আকাশচুম্বি। যার দরুন সাধারণ মানুষের জীবন যাপন হয়ে ওঠে কঠিন থেকে কঠিনতর।

এভাবে রোযা ও রমযানের মূল শিক্ষা ও আবেদন যেমন চাপা পড়ে যায় তেমনি খরচও বেড়ে যায়। যা জীবনযাত্রাকে কঠিন করে তোলে। মোবাইল ফোনে-ইমেইলে নানা প্রকারের অফার এত বেশি আসতে থাকে যে, সেগুলো পরিষ্কার করতেও উল্লেখযোগ্য সময় ব্যয় হয়।

ফ্রি আসলে কি ফ্রি?

কুরবানীর গরুর হাটে মাঝে মাঝে বিশালাকারের গরুগুলোর সাথে ছাগলও ফ্রি দেওয়া হয়। কয়েক বছর আগে আমাকে কেউ একজন প্রশ্ন করেছিল ঐ ফ্রি ছাগলটি দিয়ে ওয়াজিব কুরবানী দেয়া যাবে কি না? উত্তরে আমি বলেছিলাম ফ্রি দিতে যাবে কেন? সে কি আপনার আত্নীয় হয়? এটিকে ফ্রি নাম দেয়া হলেও মূলত দুটি পশুর একত্রে দাম নেয়া হয়েছে। আপনি যে মূল্য পরিশোধ করেছেন তাতে উভয় পশুর মূল্যই রয়েছে। আকর্ষণ সৃষ্টির জন্য কেবল ফ্রি নাম দেওয়া হয়েছে।

বর্তমানে বিভিন্ন কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বড় বড় ডিসকাউন্ট ও এটা ফ্রি ওটা ফ্রি জাতীয় অফারগুলোও একই প্রকৃতির। সামান্য বিবেক খাটালেই বুঝে আসবে যে, এসবই তাদের নিজের স্বার্থে। একেকটি উপলক্ষকে কেন্দ্র করে তাদের বিক্রির পরিমাণ বহু গুণ বাড়িয়ে নেয়ার স্বার্থেই তারা এ কৌশল অবলম্বন করে। আর এক শ্রেণির অবুঝ ক্রেতা প্রয়োজন না থাকলেও তথাকথিত ‘ফ্রি’ বা ডিসকাউন্ট পাওয়ার আশায় তাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে।

বিষয়টি অনেক বিস্তৃত। পুঁজিবাদের এজাতীয় ব্যাপারগুলোর কু প্রভাব এবং তাদেরই মালিকানাধীন মিডিয়া তথা টেলিভিশন, পেপার-পত্রিকা এবং বর্তমানের সোশ্যাল মিডিয়ায় ওগুলোর বিজ্ঞাপনের অত্যাচার নিয়ে বলার আছে অনেক কিছুই। আজ আমি শুধু বলতে চাচ্ছি, পবিত্র রমযানে যেন আমরা অপ্রয়োজনে এসবের পিছে না ছুটি।

আমরা হয়তো পুঁজিবাদের এই বিশ্বব্যাপী আগ্রাসনকে ঠেকাতে পারব না কিন্তু নিজেকে তো নিয়ন্ত্রণ করতে পারি।

নানা উপলক্ষে এইসব অফারের ফাঁদে পা না দিয়ে আসুন আমরা স্বাভাবিক জীবনে অভ্যস্ত হই। হালাল উপার্জনে মিতব্যয়ী জীবন যাপন করি। তাহলে আমাদের দুনিয়াও সুন্দর হবে, আখিরাতও সুন্দর হবে। আল্লাহ তাআলা তাওফীক দান করুন- আমীন।

34
EEE / পিতৃত্বের ছায়া
« on: November 15, 2018, 10:32:48 AM »
প্রত্যেক বাবা, প্রত্যেক মা সন্তানের কল্যাণ কামনা করে। এই পরিমাণ কল্যাণ কামনা করার নযির তো অন্য কোনো সম্পর্কের মধ্যে পাওয়া যেতেই পারে না। শিক্ষকের মধ্যে এই গুণ বা এই তবিয়ত কিছু পরিমাণ হলেও আসা দরকার। কিছু ছায়াপাত হওয়া দরকার। মায়ের মমতা, বাবার শফকতের কিছু পরিমাণ ছায়া শিক্ষকের মধ্যে পাওয়া দরকার এবং এটা যদি কোনো শিক্ষকের মধ্যে আসে তাহলে ইনশাআল্লাহ সে তার শিক্ষক-জীবনে কিছু না কিছু যাহেরী কামিয়াবী হাসিল করবে। আর আখেরাতের কামিয়াবী তো আছেই।

দুনিয়াতে শিক্ষক জীবনটা, শিক্ষকতার যে পেশা, শিক্ষকতার যে অযীফা, এটাতে যাহেরী কামিয়াবী ইনশাআল্লাহ হবে। আল্লাহ তাআলা যেন উজব থেকে হেফাযত করেন। আল্লাহ তাআলা যেন শোকর করার তৌফিক দান করেন। আমি আমার শিক্ষকতার শুরু থেকে, যখন আমি তরুণ তখনই আমি মাতৃত্ব ও পিতৃত্বের এই অনুভূতিটা আমার ছেলেদের মধ্যে অনুভব করি। যখন এই সমস্ত শব্দ উচ্চারণ করাও বয়সের সাথে খাপ খায় না। এই কারণে (আল্লাহর প্রশংসা) আমার তালেবে ইলমদের মুহাববত আমি পেয়েছি। এটা আপনাদের ক্ষেত্রেও  এরকম হবে। আপনার মধ্যে যদি এই ছায়াটা থেকে থাকে তাহলে দেখবেন আপনার ছেলেরা আপনাকে মুহাববত করবে।

কোনো শিক্ষকের মধ্যে পিতৃত্বের ছায়া আছে, মাতৃত্বের ছায়া আছে অথচ তার ছেলেরা তাকে মুহাববত করে না, এটা হবে না ইনশাআল্লাহ। এই জিনিসটার এখন বড় অভাব।

যার মধ্যে পিতৃত্বের ছায়া থাকবে, মাতৃত্বের ছায়া থাকবে, সে কিন্তু ছাত্রদের খেদমত নেওয়ার আগে জিজ্ঞাসা করে নিবে। এই জিজ্ঞাসা না করাটাই দলীল যে, তার মধ্যে শফকত নেই। খেদমত করা পর্যন্ত আছে, কিন্তু বাপ হিসাবে খেদমত নেওয়া, মা হিসাবে খেদমত নেওয়া, এই বৈশিষ্ট্যটাই নেই। জিজ্ঞাসা করতে হবে। হুট করে বলে, এটা করো তো। এটা করার মতো অবস্থায় সে আছে কি না দেখতে হবে।

পাহাড়পুরী হুযুর একটা কথা বলেছিলেন। তিনি কামরায় গেছেন। কামরায় যাওয়ার পর একটা ছেলে শুয়ে আছে। তল্লাশি করতে গেছেন। ছেলেটা যে শুয়ে থাকা থেকে উঠছে না উনি বুঝে ফেলেছেন যে, মনে হয় অসুস্থ। কিন্তু অন্য উস্তাদ গিয়ে তাকে কান ধরে উঠিয়েছে। ‘আমরা এখানে কামরায় ঢুকছি এখনো শুয়ে আছো!’

হুযুর শান্ত করলেন। দেখেন যে, আসলে সে অসুস্থ। উঠতে পারছে না। মনে করবেন, কত বছর আগের ঘটনা। আমার শিক্ষকতার প্রথম যুগের ঘটনা। আমার মনে আছে। আমার মনে হয়েছে, এই লোকটা তো উস্তাদ হওয়ার উপযুক্ত না। এখন আমার মধ্যে যেন এই গুণ আসে। এই গুণটা যার মধ্যে যেই পরিমাণ আসবে, সে সেই পরিমাণ কামিয়াবি লাভ করবে।

এবং তার কামিয়াবি ইনশআল্লাহ কেউ রোধ করতে পারবে না।

যে যেই পেশায় আছে সে যদি ঐ পেশায় সফল না হয় এরচেয়ে বড় দুর্ভাগ্য তো আর নেই। যে লেখক তার লেখায় যদি সফলতা না আসে, যে ওয়ায়েয তার যদি ওয়াযের পেশায় সফলতা না আসে, তার যদি ডাইরির পাতা খালি থাকে, তাহলে এরচেয়ে বড় দুর্ভাগ্য নেই। আমি ওয়ায করতে পারি না। এটা কোনো দোষ না। কিন্তু যে ওয়ায়েয তার ওয়ায করতে না পারাটা দোষের। আমি যে শিক্ষক, শিক্ষকতার পেশায় যদি সফল না হই ...! এটার সফলতার জন্য একেবারে অপরিহার্য একটা শর্ত তার মধ্যে পিতৃত্বের ও মাতৃত্বের ছায়া থাকতে হবে।

এখানে দু’একজন ছাত্রও আছে। এই জন্য আর একটা দিকও বলতে হয়। সেই ছাত্র কামিয়াবি হাসিল করতে পারবে না, যার মধ্যে সন্তান হওয়ার যে একটা কৃতার্থতা আছে, সাআদতমন্দী যেটাকে বলে, বাপ ধমক দিলেও সহীহ না দিলেও সহীহ, ধমক দিলেও মা ধমক না দিলেও মা, মা খেতে দিলেও মা খেতে না দিলেও মা, যে তালেবে ইলমের মধ্যে এই জিনিসটা নেই সে সারাজীবন পড়তে পারে, কিন্তু কামিয়াব তালেবে ইলম হতে পারবে না। আর যার মধ্যে এই গুণটা আছে, উস্তাদের অনেক আচরণ তার বরদাশত হয়ে যাবে। বরদাশতযোগ্য যে হয় না এটার কারণ হল ঐ সাআদতমন্দী তার মধ্যে নেই। মা বলতে পারে আজকে তোরে ভাত দিব না। তারপরও মা মাই। এটা কেন, যেহেতু তার মধ্যে সন্তান হওয়ার যে গুণটা সেটা আছে। উস্তাদের সাথে এই সন্তান হওয়ার যে গুণ এটার একটা ছায়া থাকতে হবে। সে তার সন্তান। এই ছায়াটা যেন তার মধ্যে থাকে। এই ছায়াটা যেই ছাত্রের মধ্যে নেই ..., সন্তানের ছায়া, সন্তানের ছায়াটা থাকতে হবে। এই ছায়াটাও এখন নেই ।

আমার উস্তাদ মীর ছাহেব রাহ. পটিয়ার বাণী মুফতী আজিজুল হক রাহ. এর খাবার রান্না করতেন। খাবার রান্ন করা মানে মসল্লা পাটায় বেটে তার পর তরকারি রান্না করা। একদিন উনি পাটায় মসল্লা পিষছেন। হুযুরের মুখে শোনা, তিনি পিষছেন আর মুফতী সাহেব রাহ. চৌকিতে শোয়া ছিলেন। ‘আহমদ তোমার কষ্ট হইতেছে’, হুযুর উনার ভাষায় বলছিলেন। আমি ঘাড় বেকা করে তাকাইলাম, ‘আমার মা-বাবার লগে এদ্দুর করলাম না অইলে এটা আবার কষ্ট কী, এই যে, সন্তানত্ব, উনি যে সন্তান আর এই যে চৌকিতে যিনি শোয়া আছেন উনি যে তার বাপ এই ছায়াটা পড়েছে। এই জন্য উনি কামিয়াব। তালেবে ইলম সফল হওয়ার জন্য তার মধ্যে সন্তানত্বের ছায়া থাকতে হবে। আর উস্তাদের কামিয়াব হওয়ার জন্য পিতৃত্বের ও মাতৃত্বের ছায়া থাকতে হবে।

এখনও এই যমানায় মাদরাসাতুল মদীনায় আলহামদুলিল্লাহ কিছু ছাত্রর মধ্যে দেখি সন্তানত্বের ছায়া। এই যে কথাগুলো বলছি কিছু কিছু ছেলের সূরত আমার জেহেনে এসে আছে, যাদের মধ্যে এই গুণগুলি আছে। আগের যামানার সাথে তুলনা করছি না। এই যামানার কথা বলছি। এই যামানায় যদ্দুর থাকার কথা অদ্দুর আছে।

35
EEE / নারীগণ সমাজের মূল স্তম্ভ
« on: November 15, 2018, 10:30:24 AM »
আমাকে আদেশ করা হয়েছে- আপনাদের খেদমতে দ্বীনের কিছু কথা আরয করতে। দ্বীনের কথা বলতে সবসময় অত দীর্ঘ সময় নিয়ে আলোচনা করার প্রয়োজন পড়ে না। আল্লাহ তাআলা যদি ইখলাছের সাথে কিছু বলার ও শোনার তাওফীক দান করেন, তাহলে অল্প কথাতেও অনেক ফায়দা হয়। আর আল্লাহ হেফাযত করুন- ইখলাস যদি না থাকে, তাহলে লম্বা-চওড়া বয়ানও বেকার হয়ে যায়।

মূলত আমি নসীহত করার যোগ্য কেউ নই। তবে মুরুব্বীদের থেকে শুনেছি যে, আল্লাহ তাআলা নারী জাতিকে এ উম্মতের বিনির্মাণের ভূমিকায় অবতীর্ণ করেছেন। প্রকৃতপক্ষে নারীগণ হচ্ছেন একটি সমাজের মূল স্তম্ভ-ফাউন্ডেশন। তাদের উপর ভর করেই পুরো সমাজ দাঁড়িয়ে থাকে এবং গোটা জাতি প্রতিপালিত হয়।

আমি তো বলি, আজ আমরা যেসব বড় বড় আলেম-উলামা, পীর-মাশায়েখ, মুফতী-মুহাদ্দিস-মুফাসসির, ওলী-বুযুর্গের কথা শুনি, নাম শোনামাত্র তো তাদের কীর্তিগুলো মনে পড়ে যায়, কিন্তু পর্দার অন্তরালের ঐসব নারীদের কথা আমাদের খুব কমজনেরই মনে আসে, যাদের নিঃস্বার্থ ত্যাগ ও কুরবানী, শ্রম ও মেহনত  এবং তালীম ও তরবিয়তের বদৌলতে আজ এঁরা এত বড় বড় ব্যক্তিত্বে পরিণত হতে পেরেছেন।

ইমাম আবু হানীফা রাহ.-কে আজ কে না চেনে! ইমাম বুখারী রাহ.-কে কে না জানে!! কিন্তু ঐসব মা কেমন ছিলেন, যারা ইমাম আবু হানীফা, ইমাম বুখারী রাহ. প্রমুখের মত মহারত্নগুলোকে গর্ভে ধারণ করেছিলেন! জন্মের পর সঠিক তরবিয়তে বড় করেছিলেন। যার ফলে তারা চাঁদ সুরুজের মত অন্ধকার দুনিয়ায় আলো বিকিরণ করেছেন এবং কিয়ামত পর্যন্ত মানুষ তাদের খিদমাত থেকে আলো পাবে ইনশাআল্লাহ।

এসব বুযুর্গানে দ্বীন যাদেরকে আজ আমরা চিনি, আল্লাহ তাআলার দরবারে তো তারা  (ইনশাআল্লাহ) অবশ্যই মকবুল ও মনোনীত হয়েছেন। কিন্তু পর্দার আড়ালে থেকে দ্বীনের খেদমত আঞ্জাম দিয়ে যাওয়া এসব মা-জননী যারা এ বুযুর্গদেরকে গর্ভে ধারণ করেছেন, বলুন আল্লাহর দরবারে তাদের মর্তবা কত উঁচু হতে পারে! ভাগ্যবতী এসব মায়ের নামধামের কোনো ফিকির ছিল না। ছিল না পদ-পদবীর কোনো লালসা। ব্যস, আল্লাহর দেওয়া আমানত-সন্তানের এমন তরবিয়ত তারা করে গেছেন, যার ফলে তাঁরা চাঁদ-সুরুজ হয়ে দুনিয়া আলোকিত করেছেন। এ বিবেচনায় চিন্তা করে দেখুন, আল্লাহ তাআলা মাতৃজাতিকে কত উচ্চ আসনে সমাসীন করেছেন!

মাতৃকোলকে রাব্বুল আলামীন সন্তানের সর্বপ্রথম বিদ্যালয় বানিয়েছেন। আমাদের ইতিহাসে এমন ঘটনা অনেক যে, মা-সন্তানের মুখে যখন দুধ দিবেন, তখন তার যবানে তিলাওয়াত জারি থাকত। সূরা ইয়াসীন তিলাওয়াত করে করে সন্তানকে দুধ পান করাতেন মায়েরা। বলুন, যে শিশুর প্রতিপালন ও তরবিয়ত এমন কোলে হয়, জাতির জন্য সে কত উজ্জ্বল আলো হতে পারে! আমার বলার উদ্দেশ্য হল, আপনারা আপনাদেরকে চিনতে ও বুঝতে চেষ্টা করুন।

 

36
ইসলামের অতি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হল সালাত। হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে-

أَوّلُ مَا يُحَاسَبُ بِهِ الْعَبْدُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ صَلَاتُهُ.

কিয়ামত দিবসে বান্দার সর্বপ্রথম হিসাব নেওয়া হবে সালাতের মাধ্যমে। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৬৯৪৯; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৮৬৬

হযরত উমর রা.-এর প্রসিদ্ধ বাণী-

إِنّ أَهَمّ أَمْرِكُمْ عِنْدِي الصّلَاةُ. فَمَنْ حَفِظَهَا وَحَافَظَ عَلَيْهَا، حَفِظَ دِينَهُ. وَمَنْ ضَيّعَهَا فَهُوَ لِمَا سِوَاهَا أَضْيَعُ.

নিশ্চয়ই আমার কাছে তোমাদের সবচে’ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সালাত। যে ব্যক্তি সালাতের হেফাযত করল, যত্ন সহকারে তা আদায় করল, সে তার দ্বীনকে হেফাযত করল। আর যে তাতে অবহেলা করল, (দ্বীনের) অন্যান্য বিষয়ে সে আরো বেশি অবহেলা করবে। -মুয়াত্তা মালেক, বর্ণনা ৬; মুসান্নাফে আবদুর রযযাক, বর্ণনা ২০৩৮

সালাত মূলত খোদাপ্রদত্ত এক মহান নিআমত। রাব্বুল আলামীনের এক বিশেষ উপহার, যা বান্দাকে সকল প্রকার অশ্লীলতা, পাপাচার, প্রবৃত্তিপূজা, ক্ষণস্থায়ী ভোগ-বিলাসের অন্ধ মোহ থেকে মুক্ত করে পূত-পবিত্র ও উন্নত এক আদর্শ জীবনের অধিকারী বানিয়ে দেয়। বিকশিত করে তোলে তার ভেতরের সকল সুকুমারবৃত্তি। তার জন্য  খুলে দেয় চিরস্থায়ী জান্নাতের সুপ্রশস্ত দুয়ার।

সালাত হচ্ছে হিকমাহপূর্ণ এক অলৌকিক তরবিয়ত-ব্যবস্থা। সালাতের মাধ্যমেই ইখলাস, আত্মশুদ্ধি ও আত্মবিলোপের মহৎ গুণাবলির পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটে, যা বান্দাকে পৌঁছে দেয় আল্লাহর সান্নিধ্যের স্বর্ণশিখরে।

সালাত এমন এক নিয়ন্ত্রক শক্তিতে পূর্ণ যে, খাঁটি মুসল্লি নামাযের বাইরের পরিবেশেও এমন কোনো কাজ করতে পারে না, যা মানুষের দৃষ্টিতে সালাতের ভাব-মর্যাদাকে ক্ষুণ্ন করে। অদৃশ্য থেকে মূলত সালাতই নিয়ন্ত্রণ করতে থাকে তার রাত-দিনের সকল গতিবিধি। শয়তানের ধোঁকায় যদি মুসল্লি কখনো কোনো অন্যায় বা অশোভনীয় কাজে লিপ্ত হতে চায় তখন নামাযের তরবিয়তে দীক্ষিত বিবেক তাকে বলে, তুমিই বল, একটু পরে যখন তুমি সালাতে তোমার মহান প্রভুর সামনে দাঁড়াবে তখন কি তোমার এই ভেবে লজ্জাবোধ হবে না যে, কেমন কালো মুখ ও কলুষিত হৃদয় নিয়ে তুমি আপন মালিকের সামনে দাঁড়াচ্ছ? যিনি অন্তর্যামী, তোমার গোপন-প্রকাশ্য সকল বিষয়ে সম্যক অবগত। যিনি ছাড়া তোমার আর কোনো ইলাহ নেই। যিনি তোমার একমাত্র আশ্রয়দাতা, যাঁর সামনে তোমাকে বার বার দাঁড়াতে হবে। যার কাছে তোমার সকল চাওয়া-পাওয়া। প্রতিটি মুহূর্তে তুমি যাঁর মুখাপেক্ষী। এগুলো জানার পরও কি তুমি তাঁর নাফরমানিতে লিপ্ত হবে? সালাত এভাবে মুসল্লিকে উপদেশ দিতে থাকে এবং পাপাচারে লিপ্ত হওয়া থেকে বাধা দেয়। আল্লাহ তাআলার ঘোষণা-

اِنَّ الصَّلٰوةَ تَنْهٰی عَنِ الْفَحْشَآءِ وَ الْمُنْكَرِ.

নিশ্চয়ই সালাত অন্যায় ও অশ্লীল কাজ থেকে বিরত রাখে। -সূরা আনকাবূত (২৯) : ৪৫

ইমাম তবারী, ইবনে কাসীর, কুরতুবী, আলূসীসহ সংখ্যাগরিষ্ঠ তাফসীরকারের মত অনুসারে আয়াতের মর্ম হল, তাকবীর, তাসবীহ, কেরাত, আল্লাহর সামনে কিয়াম ও রুকু-সিজদাহসহ অনেক আমলের সমষ্টি হচ্ছে সালাত। এ কারণে সালাত যেন মুসল্লিকে বলে, তুমি কোনো অশ্লীল বা অন্যায় কাজ করো না। তুমি এমন প্রভুর নাফরমানী করো না, যিনি তোমার কৃত ইবাদতসমূহের প্রকৃত হকদার। তুমি এখন কীভাবে তাঁর অবাধ্য হবে, অথচ তুমি এমন আমল করেছ, যা তাঁর বড়ত্ব ও মহত্ত্বকে প্রকাশ করে। এরপরও যদি তাঁর অবাধ্য হও তবে এর মাধ্যমে তুমি স্ববিরোধী কাজে লিপ্ত  হলে। (আর স্ববিরোধী কাজের মাধ্যমে ব্যক্তি কোন্ স্তরে নেমে আসে সেটা তোমার ভালোই জানা আছে।) -রুহুল মাআনী, ১০/৪৮২

প্রতিদিন প্রতি ওয়াক্ত নামাযে প্রতি রাকাতে বান্দাহ বলতে থাকে-

مٰلِكِ یَوْمِ الدِّیْنِ.

[(তুমি) কর্মফল-দিবসের মালিক।] আর তার স্মরণ হতে থাকে, তাকে কাল কর্মফল দিবসে মালিকের সামনে দাঁড়াতে হবে। সুতরাং তাঁর নাফরমানী থেকে, তাঁর অসন্তুষ্টি থেকে বাঁচতে হবে। কোনো গুনাহ যদি নামাযের আগে হয় তাহলে তার গুনাহের কথা স্মরণ হয় ও লজ্জাবোধ হয়; বান্দা অনুতপ্ত হয় এবং ভবিষ্যতে গুনাহ না করার সংকল্প করে। তেমনি যদি কোনো গুনাহের নিয়ত থাকে তখন বান্দার মনে হয়, আমি আল্লাহর সামনে দাঁড়ানো; কাল কিয়ামতের দিনও তাঁর সামনে দাঁড়াতে হবে। তাহলে কীভাবে আমি নামাযের পর অমুক গুনাহ করার কথা ভাবতে পারি! এভাবে নামায বান্দাকে গুনাহ থেকে ফিরিয়ে রাখে, কৃত গুনাহ থেকে পবিত্র করে।

37
ইদানীং আমরা সব কাজ করি ছবি তোলার জন্য। বিয়ের অনুষ্ঠান করি ছবি তোলার জন্য, বেড়াতে যাই ছবি তোলার জন্য, কারো সাথে দেখা করি ছবি তোলার জন্য এবং এমনকি কিছু রান্না করি কিংবা কোথাও খেতেও যাই ছবি তোলার জন্য। এবং এই যে তোলা ছবিগুলো, স্মরণীয় কিংবা সহজেই ভুলে যাওয়ার মত মুহুর্তের ছবিগুলো, আমরা অতি অবশ্যই ফেসবুক বন্ধু বা সকলের সাথে শেয়ার করি। ছবি তোলা এবং শেয়ার করার বিষয়টা নিশ্চয়ই খুব গুরুত্বপূর্ণ, নয়তো এমন গণহারে আমরা তা করছি কেন?

অমুক নান্দুস এ খাইতে গিয়া ছবি দিসিলো, আমিও তো আসছি... দিব না? নাইলে সবাই ভাব্বে আমি সারাদিন ঘরেই খাই! এইটা কিছু হইলো? একটা ইজ্জত আছে না...

আমি যে কক্সবাজার গিয়া বীচে বেকাইয়া বইসা ছিলাম, এইটা আমার জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং মনে রাখার মত একটি ঘটনা। না হয় প্রতি বছর-ই আমি কক্সবাজার যাই, তাতে কি?

আমি শুধু নান্দুস না, কুদ্দুসের দোকানের সিংগাড়াও খাই। প্রতিদিন ভার্সিটির ফ্রেঞ্জদের সাথে আমার দেখা হয়। আমি প্রতিদিন তাদের সাথে ছবি তুলি এবং আপলোডাই। এ সকল ছবি ই আমার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্মৃতি। কোন সমস্যা?

আমি দোকান থেকে এক প্যাকেট বোম্বে স্টিক্স কিনলেও সেইখানা হাতে লইয়া ছবি তুলি। কারন, উহাও একটি স্মরণীয় মুহুর্ত। জামা-কাপড় তো বটেই, এক খানা রুমাল কিনিলেও উহার ছবি তুলিয়া শেয়ার না দিলে আমার অস্বস্তি লাগে। তাই আমি ছবি তুলি এবং শেয়ার করি। টাকা-পয়সা তো লাগতেসে না ভাই...

প্রশ্ন হল, মানুষ ছবি তোলে কেন? এর মাজেজা কি? আমার ব্যক্তিগত ধারণা, কোন স্মরণীয় মুহুর্তের ছবি তোলা হয় মুহুর্তটা ধরে রাখার জন্য। অনেক বছর পর কোন এক দিন ছবিটা নিজে দেখে বা আপনজনকে দেখিয়ে পেছনে ফিরে যাওয়ার জন্য। স্মরনীয় মুহুর্ত নিশ্চয়ই খুব ঘন ঘন আমাদের জীবনে আসেনা। খুব সাধারণ ঘটনাও স্মরণীয় হতে পারে তা ঠিক, কিন্তু সেটা কোন নিয়মিত বা প্রাত্যহিক ঘটনা হতে পারে কী? সব মুহুর্তের ছবি তুলে আমরা সেই সব ছবিগুলোকে গুরুত্বহীন করে ফেলছি যেগুলো আসলে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারতো। আমরা স্মরণীয় মুহুর্তের ছবি তুলছি না বরং লোক দেখানোর জন্য ছবি তুলে সাধারণ কিছু মুহুর্তকে অসাধারণ বানাতে চাইছি যা আসলে সম্ভব নয়।

কেন আমাদের এই লোক দেখানো নেশা? অর্থহীন এই অনুকরণের অসারতা আমরা কেন বুঝি না? আমার আছে বলেই কি সব উজাড় করে দেখাতে হবে? হয়তো তাই... নইলে থাকার মূল্যটাই বা কি থাকলো...

42
নিজের প্রয়োজন সত্ত্বেও নিঃস্বার্থভাবে অপর ভাইকে নিজের উপর প্রাধান্যদানের বিষয়ে ইসলামের এই সুমহান আদর্শ সহজে হৃদয়ঙ্গম করার জন্য এখানে সাহাবায়ে কেরামের আলোকিত জীবনচরিত থেকে কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করা হচ্ছে, যাতে ফুটে উঠেছে এ-শিক্ষাটির বাস্তব ও সমুজ্জল চিত্র। শুরুতেই স্বয়ং নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কর্মপন্থা ও পবিত্র সীরাত থেকে তাঁর একটি ঘটনা লক্ষ করুন।

হযরত সাহল বিন সাদ রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একজন নারী সাহাবী নবীজীর জন্য সুন্দর কারুকার্য করা একটি নতুন কাপড় হাদিয়া এনে আরয করলেন, আমি এটি স্বহস্তে তৈরি করেছি। আপনি তা পরিধান করলে খুশী হব। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাপড়টি গ্রহণ করলেন। তাঁর কাপড়ের প্রয়োজনও ছিল। যখন তিনি তা লুঙ্গি হিসাবে পরিধান করে ঘরের বাইরে আসলেন, এক ব্যক্তি বলল, খুব চমৎকার কাপড় তো! আমাকে তা দান করবেন কি? তখন নবীজী ঘরে ফিরে গিয়ে তা খুলে ভাঁজ করে লোকটির জন্য পাঠিয়ে দিলেন। এ দৃশ্য দেখে অন্যান্য সাহাবী ঐ ব্যক্তিকে তিরস্কার করে বলতে লাগলেন, আরে মিয়া! তুমি কি জানো না, কাপড়টি নবীজীর প্রয়োজন রয়েছে।  আর তিনি কোনো কিছু চাইলে  ‘না’ বলেন না। সে  জবাবে বলল, আমি সবই জানি, এরপরও চেয়েছি, যাতে তাঁর মুবারক শরীর-স্পর্শে ধন্য কাপড় দিয়ে আমি নিজের কাফন বানাতে পারি। বর্ণনাকারী সাহাবী বলেন, ঐ ব্যক্তির মৃত্যুর পর সেই কাপড়েই তাকে দাফন করা হয়েছিল। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১২৭৭, ২০৯৩, ৫৮১০, ৬০৩৬

এটা তো নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নূরানী জীবনের একটি ঘটনামাত্র। তাঁর পবিত্র সীরাত অধ্যয়ন করলে এ চিত্র খুব স্পষ্টভাবেই ফুটে ওঠে যে, জান-মালের পুরাটাই তিনি দ্বীন-ইসলামের জন্য উৎসর্গ করে দিয়েছিলেন। তিনি কখনোই আপন স্বার্থ বা নিজের সুখ-শান্তির কথা ভাবেননি। সর্বদাই তাঁর চিন্তা ছিল উম্মতকে নিয়ে। তাদের প্রয়োজন ও কল্যাণ নিয়ে। তাঁর কাছে কোনো সম্পদ এলেই তিনি তা অভাবী ও প্রয়োজনগ্রস্তদের মাঝে অকাতরে বিলিয়ে দিতেন; এক বর্ণনায় তো এসেছে, এক ব্যক্তি নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকটে এসে কিছু চাইল। তিনি প্রার্থনাকারীকে বললেন, এখন তো আমার কাছে দেয়ার মত কিছুই নেই, তোমার প্রয়োজন মোতাবেক তুমি আমার নামে কারো থেকে কর্জ নিয়ে নাও, আমার হাতে কিছু আসলে আমি ঐ ঋণ পরিশোধ করে দিব। এ কথা শুনে হযরত উমর রা. বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ পাক তো আপনাকে সাধ্যের বাইরে কিছু করার নির্দেশ দেননি; বরং আমিই প্রার্থনাকারীকে কিছু দিয়ে দিই। হযরম উমরের একথা নবীজীর মনঃপুত হল না। ঐ মুহূর্তে এক আনসারী সাহাবী বলে উঠলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি ইচ্ছা মত দান করতে থাকুন। মহান আরশপতির কাছে কমে যাওয়ার আশংকা করবেন না। তার এ কথায় নবীজী খুবই খুশি হলেন এবং মুচকি হাসলেন। বললেন, আমাকে এমনটিই আদেশ করা হয়েছে। -শামায়েলে তিরমিযী (৩৫৫) (শায়খ মুহাম্মাদ আওয়ামাহ তাহকীককৃত) মুসনাদে বাযযার (২৭৩); আলমুখতারাহ, যিয়া মাকদিসী (৮৮); মাজমাউয যাওয়ায়েদ ১০/২৪২

43
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে একবার এক লোক এসে বলল, আমি খুবই ক্ষুধার্ত। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথা শুনে তাঁর কোনো এক স্ত্রীর কাছে খাবারের জন্যে পাঠালেন। কিন্তু তিনি বলে দিলেন- যিনি আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন তাঁর শপথ, আমার কাছে পানি ছাড়া আর কিছুই নেই। এরপর আরেকজনের কাছে পাঠালেন। তিনিও একই উত্তর দিলেন। এভাবে একে একে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সব স্ত্রীই একই কথা বললেন- যিনি আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন তাঁর শপথ, আমার কাছে পানি ছাড়া আর কিছুই নেই। এরপর সাহাবায়ে কেরামের মজলিসে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আগন্তুককে দেখিয়ে ঘোষণা করলেন, আজকের এই রাতে কে তার মেহমানদারি করতে পারবে? আল্লাহ তাকে দয়া করবেন! এক আনসারি সাহাবী দাঁড়িয়ে গেলেন- আমি পারব! এরপর তিনি তার মেহমানকে নিয়ে বাড়ি চললেন। বাড়িতে গিয়ে স্ত্রীকে বললেন, তিনি আল্লাহ্র রাসূলের মেহমান, তার আপ্যায়নের ব্যবস্থা কর। স্ত্রী বলল, আমার কাছে যে বাচ্চাদের জন্যে রাখা সামান্য খাবার ছাড়া আর কিছুই নেই! সাহাবী বললেন, ঠিক আছে, তুমি ততটুকু খাবারই প্রস্তুত কর, বাতি জ্বালিয়ে দাও আর বাচ্চারা যখন রাতের খাবার চাইবে তখন তাদের ঘুম পাড়িয়ে দাও। মেহমান ঘরে এলে বাতি নিভিয়ে দেবে আর তার সামনে আমরা খাওয়ার ভান করব। তিনি যখনই খেতে যাবেন, তখনই তুমি বাতিটি ঠিক করার মতো কিছু একটা করতে গিয়ে তা নিভিয়ে দেবে।

এরপর এই পরিকল্পনা মোতাবেকই সবকিছু করা হল। খাবার প্রস্তুত করা হল। বাতি জ্বালানো হল। বাচ্চাদের ঘুম পাড়ানো হল। মেহমান যখন খেতে যাবেন এমন সময় ঘরনি গিয়ে কৌশলে বাতিটি নিভিয়ে  দিল। আগন্তুক মেহমান দেখলেন, তার মেজবানও খাচ্ছে। তাই নিঃসঙ্কোচে তিনি খেয়ে নিলেন। কিন্তু আসলে তারা শুধু অন্ধকারে মেহমানের সামনে খাওয়ার ভান করছিল। পরিবারের সকলে সে রাতটি ক্ষুধার্তই কাটিয়ে দিল।

পরদিন সকালবেলা ওই সাহাবী  রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে উপস্থিত হলেন। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দেখে বললেন, তোমাদের দুজনের কা- দেখে আল্লাহ  মুগ্ধ হয়েছেন। তখন নাজিল হল পবিত্র কুরআনের এ আয়াত-

وَ یُؤْثِرُوْنَ عَلٰۤی اَنْفُسِهِمْ وَ لَوْ كَانَ بِهِمْ خَصَاصَةٌ ...

নিজেদের অভাব থাকা সত্ত্বেও তারা অন্যকে নিজেদের ওপর অগ্রাধিকার দেয়। নিজ মনের কার্পণ্য থেকে যারা বেঁচে রইল তারাই তো সফলকাম। (সূরা হাশর (৫৯) : ৯) -সহীহ বুখারী, হাদীস ৩৭৯৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস ২০৫৪

44

মাওলানা মুহাম্মাদ ইয়াহইয়া

বাসস্থান মানুষের মৌলিক প্রয়োজনের অন্তর্ভুক্ত। জীবিকা উপার্জনের তাগিদে বহু মানুষ আজ শহরমুখী। তাই প্রয়োজন হয়েছে বিপুল পরিমাণ বাসস্থানের। জীবনের এই অপরিহার্য প্রয়োজন পূরণের তাগিদে শহরগুলোতে গড়ে উঠছে বহুতল ভবন ও বড় বড় অ্যাপার্টমেন্ট। তৈরী হচ্ছে বড় বড় কমার্শিয়াল স্পেস এবং শপিং মল।

বসবাস বা ব্যবসার প্রয়োজনে বাড়ি বা দোকান ভাড়া নেওয়া নতুন কোনো বিষয় নয়। এটি যুগ যুগ ধরে চলমান একটি ব্যবস্থা। ভাড়া বাসাতেই সারাটি জীবন পার করে দিচ্ছে এমন মানুষের সংখ্যাও অনেক। আজকের নাগরিক সভ্যতায় এটি খুবই স্বাভাবিক একটি বিষয়ে পরিণত হয়েছে।

জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলামের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ দিক-নির্দেশনা এবং বিধি-বিধান। ভাড়া দেওয়া-নেওয়াও এর ব্যতিক্রম নয়। তাই শরীয়তে যেমন ভাড়াপ্রক্রিয়ার স্বীকৃতি রয়েছে তেমনি সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে এর বিধিবিধানসমূহ।

কুরআন মাজীদ এবং হাদীস শরীফে ভাড়া তথা ইজারার বৈধতা এবং এর বিধান সম্পর্কে আলোচনা এসেছে। ফিকাহবিদগণ সেগুলোর আলোকে ইজারার বৈধ ও অবৈধ পন্থা, বৈধতার শর্তাবলী এবং অবৈধতার ক্ষেত্রসমূহ ও এক্ষেত্রে করণীয়-বর্জনীয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। সেগুলো মেনে চললে ভাড়া চুক্তিটি শরীয়তসম্মত হবে এবং উভয় পক্ষ ইহকাল ও পরকালে এর সুফল ভোগ করবে।

অবশ্য দুঃখজনক ব্যাপার হল, অনেক ক্ষেত্রেই শরীয়তের ঐসব বিধানের বাস্তবায়ন হতে দেখা যায় না। ফলে কোনো ক্ষেত্রে বাড়িওয়ালা কর্তৃক ভাড়াটিয়া নিগৃহীত হয়, আবার কোনো ক্ষেত্রে ভাড়াটিয়ার দ্বারা বাড়িওয়ালা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনেকের ক্ষেত্রে হয়ত এর কারণ এটাই যে, তারা এ সংক্রান্ত শরয়ী আহকাম জানে না। আবার কেউ হয়ত এটাকে শরীয়ত সংশ্লিষ্ট বিষয়ই মনে করে না; বরং আগাগোড়াই জাগতিক বিষয় মনে করে থাকে। তাই এ বিষয়ে শরীয়তের বিধান জানার চেষ্টা করে না। আর কেবল নিজের স্বার্থই সামনে রাখে। অন্যের ক্ষতি হল কি না বা তার প্রতি জুলুম হল কি না তা ভেবেও দেখে না।

তাই ভাড়া দেওয়া-নেওয়ার ক্ষেত্রে উভয় পক্ষের করণীয় ও সংশ্লিষ্ট বিধানাবলী সংক্ষিপ্তভাবে পেশ করা হল।

প্রথমেই মৌলিক কয়েকটি বিষয় :

১. ভাড়ার পরিমাণ অবশ্যই নির্দিষ্ট হতে হবে।

২. যে বাড়ি বা ফ্ল্যাট ভাড়া হবে এর সকল সুবিধা-অসুবিধা ও সংশ্লিষ্ট বিষয়াবলী ভাড়াটিয়াকে সুস্পষ্টভাবে অবগত করতে হবে।

 

বাড়িওয়ালার কর্তব্য

১. বাড়ি ভাড়া কত তা নির্ধারিত করে জানানো। গ্যাস, পানি ও বিদ্যুৎ বিল কি ভাড়ার অন্তর্ভুক্ত, না এর বাইরে তাও জানানো। তাছাড়া নাইট গার্ড ও বাড়ির দারোয়ানের বেতন, ময়লা ফেলার বিল কিংবা অ্যাপার্টমেন্টগুলোর সার্ভিস ফি ইত্যাদি মিলে প্রতি মাসে সাধারণত কত টাকা হয় তা চুক্তির সময়ই বলে দেওয়া আবশ্যক।

২. প্রতি মাসের ভাড়া কত তারিখের মধ্যে দিতে হবে তা চুক্তির সময়ই জানিয়ে দিতে হবে।

৩. বাড়ির সুবিধা-অসুবিধা সম্পর্কে ভাড়াটিয়াকে পূর্বেই অবহিত করা আবশ্যক। বিশেষত এমন ত্রæটি, যা জানতে পারলে সে হয়ত ভাড়াই নিবে না বা যেটির কারণে ভাড়া আরো কম হবে। যেমন পানি নিয়মিত বা সার্বক্ষণিক না থাকা বা নিয়ম করে পানি দেওয়া। গ্যাসের সমস্যা থাকা বা দারোয়ান না থাকার কারণে গেট নিয়ন্ত্রণের সমস্যা ইত্যাদি। কোনো কোনো বাসার লাইনে এক-দুই বার পানি ছাড়া হয় আর সকলে তখন নিজ নিজ পাত্রে জমা করে রাখে। এমন হলে ভাড়া চুক্তির সময়ই বলে দিতে হবে।

৪. বাড়ির মূল ফটক রাত কয়টায় বন্ধ করা হবে তা নির্ধারিত থাকলে চুক্তির সময়ই বলে দিতে হবে। যেন এ নিয়ে পরবর্তীতে দ্ব›দ্ব না হয়।

৫. প্রত্যেক ফ্ল্যাটে পৃথক পৃথক বিদ্যুৎ মিটার লাগানো উচিত, যেন প্রত্যেক পরিবার নিজ খরচ অনুযায়ী বিল পরিশোধ করতে পারে। কোনো কোনো বাড়িতে সকল ফ্ল্যাটের জন্য একটি মাত্র মিটার থাকে। ফলে সব ফ্ল্যাটের হিসাব একত্রে হয় এবং এক মিটারে অতিরিক্ত খরচ হওয়ার কারণে ইউনিট প্রতি খরচ অনেক বেড়ে যায়। এক্ষেত্রে আরেকটি ত্রুটি হল, মিটার একটি হওয়ার কারণে সকলের উপর সমহারে বিল চাপানো হয়। এতে করে বিদ্যুতের স্বল্প ব্যবহারের কারণে যাদের বাস্তব খরচ কম হয় তাদের উপর জুলুম হয়ে যায়। এজন্য প্রত্যেক ফ্ল্যাটে ভিন্ন ভিন্ন মিটার লাগানো দরকার।

তদ্রূপ পানির মিটারও ভিন্ন হওয়া উচিত ছিল। যেন যার যার খরচ অনুযায়ী বিল নেওয়া যায়। শোনা গেছে যে, ওয়াসা এভাবে প্রতি ইউনিটের জন্য আলাদা মিটার দেয় না। তাই এক্ষেত্রে নিম্নোক্ত দু’টি পদ্ধতির কোনো একটি অবলম্বন করা যেতে পারে।

১. প্রত্যেক মাসের পানির বিল সকল ফ্ল্যাটের ভাড়াটিয়াদের মাঝে বণ্টন করে দিবে।

২. বাড়িওয়ালা পানির বিল বাসা ভাড়ার অন্তর্ভুক্ত করে নিবে। পানির নামে ভিন্ন বিল নেবে না। এক্ষেত্রে বাড়িওয়ালা পূর্ণ ভাড়ার মালিক হবে। আর পানির বিল সেই আদায় করবে।

দ্বিতীয় পদ্ধতিটি প্রথমটির চেয়ে নিরাপদ ও উত্তম। কিন্তু বর্তমানে কোনো কোনো বাসায় প্রত্যেক ফ্ল্যাটের জন্য তিনশ বা চারশ করে পানির বিল নেওয়া হয়। কোনো কোনো এলাকায় এর চেয়েও বেশি নেওয়া হয়। ফলে কখনো কখনো এ টাকা দ্বারা মোট পানির বিল দিয়েও আরো উদ্বৃত্ত থেকে যায়। বাড়িওয়ালাকে নিজের ফ্লাটে ব্যবহৃত পানির বিল দিতে হয় না। কখনো তো আরো অতিরিক্ত থেকে যায়। অথচ বাড়িওয়ালার জন্য পানির বিলের ক্ষেত্রে ব্যবসা করা বা অতিরিক্ত নেওয়া ঠিক নয়। কারণ সরকারের পক্ষ থেকে ওয়াসার পানি দ্বারা ব্যবসা করার অনুমতি নেই। আর এটা ভাড়াটিয়াকে জানিয়েও করা হয় না। বরং  কেউ কেউ তো খরচ অনুযায়ী নেওয়ার  দাবি করে খরচের চেয়ে বেশি নিয়ে থাকে। তাই এভাবে অতিরিক্ত নেওয়া বৈধ হবে না।

৬. বাড়ি ছেড়ে দিতে হলে কত দিন আগে জানাতে হবে তাও চুক্তির সময় জানিয়ে দিতে হবে। কেউ কেউ দুই মাস পূর্বে জানানোর শর্ত করে। চলতি মাসে বা পূর্বের মাসে জানানোর শর্ত করা দূষণীয় নয়। সুতরাং বাড়ি ছাড়ার সময় চূড়ান্ত করা হলে ভাড়াটিয়া এবং বাড়িওয়ালা উভয়ের জন্যই তা পালনীয় হবে।

লক্ষণীয় হল, অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় চলতি মাসের পাঁচ তারিখের মধ্যে জানানোর শর্ত থাকে। তবে ভাড়াটিয়া যদি এর এক বা দুই দিন পরে জানায় তাহলেও পরবর্তী মাসের ভাড়া আদায় করা হয়। কখনো দুই মাস আগে জানানোর কথা থাকে। কিন্তু ভাড়াটিয়া হয়ত সময়মত জানাতে পারেনি। তখন সে বাসা ছেড়ে দেয়ার পরও তার থেকে দুই মাসের ভাড়া কেটে রাখা হয়। এক্ষেত্রে বাড়িওয়ালা বাস্তবেই অন্যত্র ভাড়া দিতে না পারলে পূর্ব শর্ত অনুযায়ী ভাড়াটিয়া থেকে নির্ধারিত টাকা নেয়া বৈধ হতে পারে।

তবে বাড়ির মালিকের কর্তব্য অন্যত্র ভাড়া দেওয়ার চেষ্টা করা। বাসাটি ভাড়া হয়ে গেলে পূর্বের ভাড়াটিয়া থেকে অতিরিক্ত যা নেওয়া হয়েছে তা তাকে ফেরত দেওয়া জরুরি। নতুন ভাড়াটিয়া পেয়ে গেলে পূর্বের ভাড়াটিয়া থেকে এ সময়ের ভাড়া রেখে দেওয়া জায়েয হবে না।

 

ভাড়াটিয়ার দায়িত্ব

শরীয়তের দৃষ্টিতে ভাড়াকৃত ভবন/ফ্ল্যাট ভাড়াটিয়ার হাতে আমানত। এর যথাযথ ব্যবহার না করলে বা এক্ষেত্রে অবহেলা করলে সেটি খেয়ানত হবে। তাই বাড়ির সবকিছু যতœ সহকারে ব্যবহার করতে হবে। সজাগ থাকতে হবে যেন ব্যবহারের ত্রæটির কারণে কোনো জিনিস নষ্ট না হয়। অধিক ময়লা জমে ফ্লোর যেন নষ্ট না হয়। এমনকি বাড়িওয়ালার অনুমতি ছাড়া দেয়ালে অধিক পেরেক ইত্যাদি মারা থেকেও বিরত থাকা উচিত।

ব্যবহারকারীর সীমালংঘনের কারণে কোনো জিনিস নষ্ট হলে এর ক্ষতিপূরণ ভাড়াটিয়াকেই দিতে হবে। অবশ্য সীমালংঘন ছাড়া সাধারণ ব্যবহারের কারণে কোনো কিছু নষ্ট হয়ে গেলে নতুন পার্টস কিনে দেওয়া বা মেরামত করে দেওয়ার দায়িত্ব বাড়িওয়ালার। যেমন পানির কল নষ্ট হয়ে গেলে, বাথরুমের লোডাউন বা কোনো ফিটিংস নষ্ট হয়ে গেলে। তেমনি দরজা-জানালা, পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের লাইনে কোনো সমস্যা হলে এগুলো ঠিক করে দেওয়ার দায়িত্বও বাড়িওয়ালার। এগুলো ভাড়াটিয়ার উপর চাপানো যাবে না।

এ কথাও বুঝা দরকার যে, একটি জিনিস যে ভাড়াটিয়ার কাছে নষ্ট হয়েছে অনেক ক্ষেত্রে এ ভাড়াটিয়ার একক ব্যবহারের কারণেই নষ্ট হয় না; বরং আগের ভাড়াটিয়ার দীর্ঘদিনের ব্যবহারও এর কারণ হয়ে থাকে। তাই কল এবং ফিটিংস ইত্যাদি লাগিয়ে দেওয়া এবং ব্যবহার উপযোগী করে দেওয়া শরীয়তের দৃষ্টিতে বাড়িওয়ালারই দায়িত্ব। এগুলো নষ্ট হয়ে গেলে ভাড়াটিয়া থেকে তা আদায় করা অন্যায়। মনে রাখা দরকার, ভাড়া বস্তুর কোনো কিছু সাধারণ ব্যবহারে নষ্ট হলে তার মেরামত করা মালিকেরই দায়িত্বে।

সিকিউরিটি মানি প্রসঙ্গ

বাড়ির মালিকগণ ভাড়াটিয়া থেকে অগ্রীম কিছু টাকা সিকিউরিটির জন্য নিয়ে থাকে। এই অগ্রীম টাকা আদায়ের বিভিন্ন নিয়ম থাকে। নিয়মের ভিন্নতার কারণে এর হুকুম ভিন্ন হয়ে থাকে। যেমন-

১. কারো এমন নিয়ম থাকে যে, এক বা দুই মাসের ভাড়া অগ্রীম দিতে হবে। যা বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার সময় শেষ দুই মাসের ভাড়া হিসেবে ধরা হবে। এক্ষেত্রে তা ফিকহে ইসলামীর দৃষ্টিতে অগ্রীম ভাড়া হিসেবে ধর্তব্য হবে। সিকিউরিটি মানি তথা বন্ধক হিসেবে গণ্য হবে না।

২. দোকান বা অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়ার জন্য দুই-তিন লাখ বা আরো বেশি টাকা অগ্রীম নেয়া হয়। এরপর মাসে মাসে কিছু কিছু করে সকল টাকা ভাড়ার সাথে কেটে নেয়। পরবর্তীতে ফেরতযোগ্য হিসেবে কিছুই রাখা হয় না। এমনটি হলে এটাও অগ্রীম ভাড়া হিসেবে গণ্য হবে।

এই দুই ক্ষেত্রে অগ্রীম হিসাবে যা নেওয়া হয় সে টাকার মালিক বাড়িওয়ালাই হবে। সুতরাং এ টাকা সে নিজ প্রয়োজনে খরচ করতে পারবে এবং এটি তার যাকাতযোগ্য সম্পদ বলে গণ্য হবে। তাই যাকাতবর্ষ শেষে এ টাকা থেকে কিছু অবশিষ্ট থাকলে তাকেই এর যাকাত দিতে হবে। ভাড়াটিয়াকে এর যাকাত দিতে হবে না।

৩. আর যদি অগ্রীম নেওয়া এই টাকা থেকে ভাড়া হিসাবে কোনো কিছু কাটা না হয় এবং চুক্তি শেষ হওয়ার আগের মাসগুলোর ভাড়া হিসাবেও গণ্য করা না হয়, বরং ভাড়াটিয়া বাড়ি ছাড়ার সময় তাকে এ টাকা ফেরত দেওয়ার শর্ত করা হয় তাহলে এই টাকা সিকিউরিটি মানি বলে গণ্য হবে।

ফিক্বহী দৃষ্টিকোণ থেকে সিকিউরিটি মানি রাহান তথা বন্ধকী সম্পত্তির অন্তর্ভুক্ত। আর বন্ধকগ্রহিতার জন্য বন্ধকী বস্তু দ্বারা উপকৃত হওয়া জায়েয নেই। সে হিসেবে বাড়ির মালিকের জন্য এই অগ্রীম টাকা খরচ করা জায়েয নয়। সাধারণ নিয়মে টাকাগুলো নিজের কাছে বা ব্যাংকে রেখে দেওয়া আবশ্যক। কিন্তু আজকাল অনেক বাড়িওয়ালা বন্ধকের উক্ত নিয়ম মেনে চলে না। বরং প্রায় সবাই এ টাকা খরচ করে ফেলে। জমা রাখে না। তাই কোনো কোনো ফকীহ এই খরচকে বৈধতা দেওয়ার জন্য এই টাকাকে বন্ধক না ধরে ঋণ বলতে চান। আর এটাকে ভাড়ার সাথে শর্ত না করে ভিন্নভাবে লেনদেন করতে বলেন। তাদের ভাষ্যমতে এভাবে করলে বাড়িওয়ালার জন্য তা ব্যবহার করা বৈধ হবে। অবশ্য অন্য অনেক ফহীহ এটাকে সিকিউরিটি তথা বন্ধকই বলেন। দলীলের দিক থেকে এ মতটিই শক্তিশালী।

প্রকাশ থাকে যে, এ টাকাকে বন্ধক ধরা হলে সমস্যা হল বাড়িওয়ালার জন্য তা ব্যবহার করা জায়েয নয়। আর ঋণ ধরা হলে সমস্যা হল, ভাড়ার সাথে ঋণ প্রদানের শর্ত করার কারণে ভাড়া-চুক্তি ফাসেদ হয়ে যায়। এ কারণে সিকিউরিটি মানির ক্ষেত্রে নি¤েœর যে কোনো একটি পদক্ষেপ গ্রহণ করা নিরাপদ।

১. একে অগ্রীম ভাড়া ধরা। অর্থাৎ বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার সময় শেষের দিকের মাসের ভাড়া ধরা হবে এবং সে অনুযায়ী আমল করা হবে। আর অগ্রীমের পরিমাণ বেশি হলে প্রতি মাসেই নগদ ভাড়ার সাথে একটা অংশ ভাড়া হিসাবে কর্তন করা হবে। এ টাকা পরবর্তীতে ফেরতযোগ্য হিসেবে ধরা হবে না। এভাবে অগ্রীম ভাড়া ধরা হলে এর মালিক বাড়িওয়ালাই হবে। এক্ষেত্রে সে তা ব্যবহার করতে পারবে এবং যাকাতও সেই আদায় করবে।

২. কোনো কোনো সময় বাড়িওয়ালা সিকিউরিটির টাকা দিয়ে বাড়ির সজ্জায়ন করে বা ফিটিংস ইত্যাদি লাগায়।

এক্ষেত্রে ভাড়াটিয়ার সাথে নিম্নোক্ত পদ্ধতিতে চুক্তি করা যেতে পারে। ভাড়াটিয়া এসব কাজ নিজ দায়িত্বে বা বাড়িওয়ালার দিকনির্দেশনা অনুযায়ী নিজের টাকা দিয়ে করে নিবে এবং তা ভাড়াটিয়ার মালিকানা হিসেবে গণ্য হবে। এরপর যখন বাসা ছেড়ে দেবে তখন বাড়িওয়ালার নিকট একটি দাম ধরে জিনিসগুলো বিক্রি করে দেবে। এ পন্থা অবলম্বন করলে বন্ধক নিয়ে তা খরচ করার জটিলতাও থাকে না। আবার যাকাত কে দেবে এই প্রশ্নও আসে না। কেননা ভাড়াটিয়া যেহেতু ঐ টাকা খরচ করে ফেলেছে তাই তার উপর এর যাকাত আসবে না। আর বাড়িওয়ালাও এ টাকার মালিক হয়নি বিধায় তাকেও এর যাকাত দিতে হবে না।

 

ভাড়াটিয়ার জন্য অন্যকে ভাড়া দেওয়া

নিজের জন্য ভাড়া নিয়ে মালিকের অনুমতি ব্যতীত অন্যকে ভাড়া দেওয়া ভাড়াটিয়ার জন্য জায়েয নেই। সুতরাং মালিকের অনুমতি ব্যতীত সাবলেট নেওয়া বা অন্যকে ভাড়া দেওয়া ভাড়াটিয়ার জন্য বৈধ নয়। তবে মালিক অনুমতি দিলে অসুবিধা নেই।

আর নিজে ভাড়া নিয়ে পুরোটাই অন্যকে বেশি দামে ভাড়া দেওয়ার জন্য দু’টি শর্ত আছে।

১. এজন্য বাড়িওয়ালার অনুমতি নিতে হবে।

২. বেশি ভাড়া নিতে চাইলে ঐ বাড়িতে উন্নয়নমূলক কোনো কাজ করতে হবে। যেমন ডেকোরেশন করা, দরজা বা টাইলস লাগানো ইত্যাদি। আর সংস্কারমূলক কাজ বাড়ির মালিকের অনুমতি নিয়েই করতে হবে। নিজে ভাড়া নেওয়ার পর সংস্কারমূলক কোনো কাজ না করে বেশি টাকায় ভাড়া দেওয়া জায়েয হবে না।

 

বাড়ি মর্টগেজ বা বন্ধক পদ্ধতি

কোনো কোনো বাড়ির মালিকের একত্রে পাঁচ-দশ লাখ টাকা দরকার হলে কারো থেকে এ শর্তে নেয় যে, পাঁচ বছরের জন্য আপনি আমাকে দশ লাখ টাকা দেন। আপনার টাকা ফেরত না দেওয়া পর্যন্ত অর্থাৎ পাঁচ বছর পর্যন্ত আপনি আমার বাড়িতে ফ্রী বসবাস করবেন। অথবা অন্যের কাছে ভাড়া দিয়ে আপনি লাভবান হবেন। অনেকটা গ্রাম দেশের জমি বন্ধক দেয়ার মতই।

কোনো কোনো ক্ষেত্রে সময় নির্ধারিত থাকে না; বরং বলা হয় যত দিন আপনার টাকা না দিব তত দিন আমার বাড়ি বা ফ্ল্যাট ভোগ করবেন। এই লেনদেন সম্পূর্ণ নাজায়েয। কারণ এক্ষেত্রে বাসাটি বন্ধকী বস্তু। আর বন্ধকী বস্তু থেকে উপকার গ্রহণ করা ঋণ দিয়ে লাভ ভোগ করার মত, যা সুদী চুক্তির অন্তর্ভুক্ত।

عَنِ ابْنِ سِيرِينَ قَالَ: جَاءَ رَجُلٌ إِلَى ابْنِ مَسْعُودٍ فَقَالَ: إِنّ رَجُلًا رَهَنَنِي فَرَسًا، فَرَكِبْتُهَا. قَالَ مَا أَصَبْتَ مِنْ ظَهْرِهَا فَهُوَ رِبًا.

মুহাম্মাদ ইবনে সীরীন রহ. বলেন, এক ব্যক্তি আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. এর নিকট এসে বলল, এক ব্যক্তি আমার কাছে একটি ঘোড়া বন্ধক রেখেছে। আমি তার পিঠে আরোহন করেছি। তখন আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বললেন, ঘোড়ার পিঠে চড়ে যে উপকার ভোগ করেছ তা সুদ। -মুসান্নাফে আবদুর রায্যাক, বর্ণনা ১৮০৭১

عَنْ فَضَالَةَ بْنِ عُبَيْدٍ صَاحِبِ النّبِيِّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ أَنّهُ قَالَ كُلّ قَرْضٍ جَرّ مَنْفَعَةً فَهُوَ وَجْهٌ مِنْ وُجُوهِ الرِّبَا.

ফাযালা বিন উবাইদ রা. বলেন, যেই ঋণ কোনো লাভ নিয়ে আসে তা রিবার প্রকারসমূহের মধ্যে একটি। -সুনানে কুবরা, বায়হাকী, হাদীস ১০৯৩৩

 

সিকিউরিটি বাড়িয়ে দিলে ভাড়া কমিয়ে দেওয়া

পূর্বোক্ত পদ্ধতির কাছাকাছি আরেকটি পদ্ধতি চালু হয়েছে। তা সচরাচর সিকিউরিটির মত নয়; বরং কোনো এলাকায় সচরাচর সিকিউরিটি যদি পঞ্চাশ হাজার হয় এক্ষেত্রে এর চে’ অনেক বেশি যেমন চার/পাঁচ লাখ টাকা নেওয়া হয়। এই অতিরিক্ত সিকিউরিটি দেওয়ার কারণে ভাড়া একেবারে কমিয়ে দেওয়া হয়। যেমন সাধারণ অবস্থায় ভাড়া যদি দশ হাজার টাকা হয়ে থাকে এক্ষেত্রে তার থেকে এক-দুই হাজার টাকা ভাড়া নেওয়া হয়। যত দিন সিকিউরিটির টাকা ফেরত না দিবে তত দিন ভাড়া এ রকম কম থাকবে।

এই পদ্ধতিও সম্পূর্ণ নাজায়েয। মর্টগেজ পদ্ধতির মত এটিও ঋণ দিয়ে মুনাফা ভোগ করারই আরেক প্রকার। তাই এ পদ্ধতিও সম্পূর্ণ বর্জনীয়। বেশি পরিমাণ সিকিউরিটি জমা নিলেও ভাড়া সাধারণত অন্যান্য বাসাবাড়িতে যেমন নেওয়া হয় তেমনই নেওয়া উচিত। অস্বাভাবিক ভাড়া কমালে তা বন্ধকী সম্পত্তি থেকে উপকৃত হওয়া বা ঋণের কারণে লাভবান হওয়ার আওতায় পড়ে নাজায়েয হবে।

 

ভাড়া বৃদ্ধি প্রসঙ্গ

বাড়িওয়ালারা বিভিন্ন উপলক্ষকে কেন্দ্র করে ভাড়া বৃদ্ধি করে থাকে। যেমন অনেক মালিক বাজারে পণ্যের দাম বাড়লে, সরকারী বেতন বাড়লে কিংবা নতুন বছর শুরু হলে অথবা কোনো উপলক্ষ ছাড়াই ভাড়া বৃদ্ধি করে দেয়। এসব ক্ষেত্রে বাড়িওয়ালা নিজ ইচ্ছা অনুযায়ীই ভাড়া বৃদ্ধি করে থাকে। অথচ অযথা কিংবা যৌক্তিক কারণ ছাড়া ভাড়া বৃদ্ধি করা একটি অন্যায় কাজ। এছাড়া একসাথে অস্বাভাবিক পরিমাণ ভাড়া বাড়িয়ে দেওয়াও জুলুম এবং অন্যায়। ভাড়া বৃদ্ধি করতে হলে ভাড়াটিয়ার সাথে আলোচনা করে তা করবে। শরীয়তের দৃষ্টিতে ভাড়া চুক্তিটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তি, এটি একতরফা চুক্তি নয়। এ নিয়ম না মানা হলে ভাড়াটিয়ার জন্য অন্যত্র চলে যাওয়ারও সুযোগ থাকবে।

আর মালিকের উচিত, চুক্তির সময়ই ভাড়াটিয়ার সাথে ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়ে কথা বলে নেওয়া যে কখন থেকে ভাড়া বৃদ্ধি করা হবে এবং কী পরিমাণ বৃদ্ধি করা হতে পারে। যেন পরবর্তীতে পরষ্পরে মনোমালিন্যের পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয়।

 

ভাড়াটিয়াকে বিনা কারণে নিষেধ করে দেওয়া

আগেই বলা হয়েছে, ভাড়াটিয়ার সাথে বাড়িওয়ালার যে চুক্তি হয় তা দ্বিপক্ষীয় চুক্তি। যৌক্তিক কোনো কারণ ছাড়া চুক্তির সময় শেষ হওয়ার পূর্বে কারো জন্যই তা ভেঙ্গে দেওয়া জায়েয নয়। অবশ্য যৌক্তিক কোনো কারণ  দেখা দিলে ভাড়াটিয়া এবং বাড়িওয়ালা উভয়ের জন্যই চুক্তি শেষ করে দেওয়ার সুযোগ আছে। সেক্ষেত্রে ভাড়াটিয়াও অবশিষ্ট ভাড়া পরিশোধ করে দোকান বা বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে পারবে এবং বাড়িওয়ালাও তাকে দোকান বা বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার কথা বলতে পারবে।

45
good to know

Pages: 1 2 [3] 4 5 6