Show Posts

This section allows you to view all posts made by this member. Note that you can only see posts made in areas you currently have access to.


Messages - Abu Tareque

Pages: [1] 2
1
আই.বি.এস কি কোন মানসিক সমস্যা?

                           

IBS কি?
ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম (IBS) হজম জনিত একটি সাধারণ এবং দীর্ঘমেয়াদী  ডিসঅর্ডার যাকে বিভিন্ন মাত্রার পুনরাবৃত্ত পেটে ব্যথা এবং পেট ফাঁপা, ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং গ্যাসে সমস্যা  ইত্যাদি উপসর্গ দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। মানসিক চাপের সময় বা নির্দিষ্ট খাবার খাওয়ার পরে লক্ষণগুলি আরও খারাপ হতে পারে। এই অবস্থা প্রায় আজীবন থাকে।  যদিও সময়ের সাথে সাথে লক্ষণগুলি পরিবর্তিত হতে পারে। তবে IBS আপনার শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য গুরুতর হুমকি সৃষ্টি করে না এবং ক্যান্সার বা অন্যান্য অন্ত্র-সম্পর্কিত রোগ বিকাশের সম্ভাবনা বৃদ্ধি করেনা। IBS এর ক্ষেত্রে আধুনিক চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ জীবনযাপন করা সম্ভব। 

IBS এর লক্ষণ
1. বার বার পায়খানা হয়। খাবার খাওয়ার পর পেটে  অস্বস্থি দেখা দেয়, সাথে সাথে টয়লেটে যাওয়ার প্রয়োজন পরে।
2. পেট ব্যথা, যা টয়লেট করার মাধ্যমে উপশম হতে পারে।
3. পায়খানার ধরণে পরিবর্তন দেখা যায়।  যেমন: ডায়রিয়া/ কোষ্ঠকাঠিন্য।
4. অত্যধিক গ্যাসে  পেট ফুলে যায়।
এছাড়াও আরো কিছু লক্ষণ থাকতে পারে। যেমন:
1. শারীরিক দুর্বলতা/অলসতা
2. অসুস্থ অনুভব করা
3. বুকজ্বালা
4. খাবার অরুচি
আপনার যদি এসব লক্ষণের ২ টি বার তার অধিক লক্ষণ থাকে তাহলে একজন ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে পারেন।  বিভিন্ন কারণে এই লক্ষণগুলো  প্রকাশ পেতে পারে তাই আপনার  IBS  আছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য  অবশ্যই এর সঠিক ডায়াগনসিস করতে হবে। 

IBS এর কারণসমূহ
নিউইয়র্ক এর স্টেট ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক এডওয়ার্ড ব্লানচার্ড বলেছেন ৬০%  IBS রোগী এক বা একাধিক মানসিক রোগের মানদণ্ড পূরণ করে । আগে IBS এর লক্ষণ প্রকাশ পায়, তারপর কি মানসিক চাপ তৈরী হয়? নাকি মানসিক চাপের ফলে IBS এর লক্ষণ প্রকাশ পায়? কোনটি প্রথমে আসে তা স্পষ্ট নয়। তবে এক গবেষণায়  দেখা যায় যে তারা একসাথে ঘটতে পারে।  ব্লানচার্ড বলেছেন, যাদের IBS আছে তাদের মধ্যে Generalized Anxiety Disorder বা GAD এর লক্ষণ থাকা খুব সাধারণ বেপার ।  তিনি মনে করেন যে IBS রোগীদের মধ্যে ৬০% এর বেশি মানুষ GAD তে আক্রান্ত। অন্য ২০% এর বিষন্নতা থাকে , এবং বাকিদের  অন্যান্য মানসিক রোগ থাকতে পারে। উদ্বেগ জনিত মানসিক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা সাধারণত স্বাস্থ্য, অর্থ বা  ক্যারিয়ারের মতো বিষয়গুলো  নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত থাকে। এর ফলে তাদের পেট খারাপ, কাঁপুনি, পেশীতে ব্যথা, অনিদ্রা, মাথা ঘোরা, বিরক্তি সহ অন্যান্য উপসর্গ দেখা দিতে পারে। তবে এখনো  IBS এর সঠিক কারণ জানা যায়নি। যেসব কারণ  IBS এর লক্ষণ সৃষ্টিতে ভূমিকা পালন করে বলে মনে করা হয় তার মধ্যে রয়েছে:
অন্ত্রের (intestine)পেশী সংকোচন: অন্ত্রের দেয়াল পেশীর সংকোচন  প্রসারণের মাধ্যমে খাবার সরানোর কাজ করে।  যে সংকোচনগুলো  শক্তিশালী এবং স্বাভাবিকের চেয়ে দীর্ঘস্থায়ী, তা গ্যাস, পেট ফোলাভাব এবং ডায়রিয়ার কারণ হতে পারে। দুর্বল সংকোচন খাদ্য পথের গতি কমিয়ে দিতে পারে  ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।
স্নায়ুতন্ত্র: পাচনতন্ত্রের স্নায়বিক  সমস্যা আপনার অস্বস্তির কারণ হতে পারে। এই সমস্যা  বেড়ে যায় যখন আপনার পেট গ্যাস বা মল দ্বারা  ফুলেফেঁপে থাকে।  আবার মস্তিষ্ক এবং অন্ত্রের মধ্যে  দুর্বল সমন্বিত সংকেতের ফলে  আপনার শরীর হজম প্রক্রিয়ায় প্রতি অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখায় । এর ফলে পেটে ব্যথা, ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।
মারাত্মক সংক্রমণ: ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত গুরুতর ডায়রিয়ার পরে  IBS বিকাশ করতে পারে। একে গ্যাস্ট্রোএন্টেরাইটিস (gastroenteritis)বলে।  আবার অন্ত্রে অতিরিক্ত ব্যাকটেরিয়ার ফলেও IBS হতে পারে।
প্রারম্ভিক জীবনের চাপ: যেসব ব্যক্তি জীবনে অতিরিক্ত চাপ মোকাবেলা করেছে বিশেষ করে যাদের শৈশবকালে তিব্র পীড়নমুলুক কোন ঘটনার অভিজ্ঞতা আছে তাদের মধ্যে  আইবিএসের বেশি উপসর্গ বেশি দেখা যায় ।

IBS এর সাথে স্ট্রেস এবং উদ্বেগের সম্পর্ক
IBS এর সাথে স্ট্রেস এবং উদ্বেগের সম্পর্ক বিভিন্ন তত্ত্ব দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়।  নিচে তত্ত্বগুলোর সারকথা সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো :
1. উদ্বেগের মতো মনস্তাত্ত্বিক সমস্যাগুলো হজমের ব্যাধি সৃষ্টি করে না, তবে আইবিএস আক্রান্ত ব্যক্তিরা মানসিক সমস্যাগুলোর প্রতি বেশি সংবেদনশীল হয়ে থাকে ।
2. স্ট্রেস, উদ্বেগ এবং বিষন্নতার মতো শক্তিশালী আবেগগুলো মস্তিষ্কে রাসায়নিক  পদার্থগুলিকে ট্রিগার করে যা আপনার পেটে  ব্যথার সংকেত চালু করে ফলে আপনার কোলনে  প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
3. স্ট্রেস এবং উদ্বেগ বিভিন্ন শারীরিক প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে মনকে আরও উদ্বিগ্ন করে তুলতে পারে।
4. মানসিক চাপ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ইমিউন সিস্টেম দ্বারা IBS  ট্রিগার হতে পারে।

IBS এর লক্ষণগুলি বৃদ্ধি পায়
খাদ্য
আইবিএসএর ক্ষেত্রে খাদ্য অ্যালার্জির ভূমিকা সম্পূর্ণরূপে বোঝা যায় না। খাদ্য অ্যালার্জি খুব কমই IBS এর লক্ষণগুলি বৃদ্ধি করে। কিন্তু অনেক রোগীর ক্ষেত্রে IBS এর লক্ষণগুলি আরও খারাপ হয় যখন তারা নির্দিষ্ট  কিছু খাবার খায় বা পানীয় পান করে। এর মধ্যে রয়েছে গমের আটা, দুধ/দুগ্ধজাত পণ্য, লেবু জাতীয় ফল, মটরশুটি, বাঁধাকপি এবং কার্বনেটেড পানীয়।
মানসিক চাপ
অতিরিক্ত মানসিক চাপের সময় IBS-এ আক্রান্ত ব্যক্তি  IBS এর লক্ষণগুলি আরো বেশি অনুভব করে।  স্ট্রেস/মানসিক চাপ লক্ষণগুলির কারণ নয় তবে স্ট্রেস/মানসিক চাপ লক্ষণগুলিকে আরও খারাপ করে তুলতে পারে।

IBS এর চিকিৎসা
আপনার মধ্যে IBS এর লক্ষণ থাকলে প্রপার ডায়াগনোসিসের জন্য প্রথমে কোন ডাক্তারের পরামর্শ অনুসারে প্রয়োজনীয় টেস্ট করতে পারেন। তিনি আপনাকে আপনার রোগের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপত্র প্রদান করবেন। যেহেতু উদ্বেগ(Anxiety), বিষন্নতা (Depression) এবং মানসিক চাপ (Stress) IBS এর লক্ষণগুলিকে আরও খারাপ করে তুলতে পারে তাই একজন পেশাদার সাইকোলজিস্টের সেবা গ্রহণ করতে পারেন। একজন সাইকোথেরাপিস্ট আপনাকে বুঝতে সাহায্য করতে পারেন যে কীভাবে চিন্তা এবং মানসিক চাপ আইবিএস লক্ষণগুলিকে আরও খারাপ করে তোলে এবং আপনার শরীলের উপর প্রভাব বিস্তার করে।   তারা আপনাকে শেখাতে পারেন যে কিভাবে এই চক্র ভাঙতে হয়। যেসব জিনিস আপনার IBS এর উপসর্গ বৃদ্ধি করে সেগুলো মোকাবেলার কৌশল  এবং চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতি কিভাবে আরও ভালভাবে মোকাবেলা করা যায় তার উপায়গুলি খুঁজে বের করতে এবং আপনাকে দক্ষ হয়ে উঠতে সহায়তা করতে পারে। যেসব সাইকোথেরাপি আইবিএসের চিকিৎসা  জন্য সহায়ক হতে পারে তার মধ্যে রয়েছে:
১।  কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি (CBT ): এটি এক ধরনের মনোবৈজ্ঞানিক চিকিৎসা পদ্ধতি। CBT আপনাকে আপনার চিন্তাভাবনা এবং IBS এর উপসর্গের ট্রিগারগুলিকে  চিনতে সাহায্য করবে। চিন্তা পরিবর্তনের মাধ্যমে কিভাবে ট্রিগারগুলিকে  পরিবর্তন করতে হয় তা শিখতে CBT খুব সহায়ক। 
২। সাইকোডাইনামিক থেরাপি: আবেগ কিভাবে IBS এর লক্ষণগুলিকে প্রভাবিত করে তা এই থেরাপির মাধ্যমে সহজে বুঝা যায় । এই থেরাপিতে থেরাপিস্ট সাধারণত relaxation techniques and stress management এর  উপর ফোকাস করেন।
৩। শিথিলকরণ প্রশিক্ষণ (Relaxation Training): আপনার স্নায়ুতন্ত্রকে শান্ত করার এবং আপনার চাপের মাত্রা কমানোর অনেক উপায় রয়েছে। এমন একটি পদ্ধতি হল Progressive Muscle Relaxation। এটির সাহায্যে, আপনি আপনার শরীরের বিভিন্ন পেশী শক্ত করার পর কিভাবে শান্ত করতে হয় তা শিখতে পারেন। পরে মানসিক চাপের সময় আপনি নিজেকে শান্ত করার কৌশলটি ব্যবহার করতে পারেন ।
৪। বায়োফিডব্যাক: বায়োফিডব্যাকের মাধ্যমে আপনি  আপনার অন্ত্র নিয়ন্ত্রণকারী পেশীগুলি নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষমতা অর্জন করতে পারেন।

IBS এর  চিকিৎসার জন্য কখন  আপনি  সাইকোলজিক্যাল সেবা গ্রহণ করবেন ?
আপনি যদি IBS  এর  কিছু লক্ষণ নিয়ে  চিন্তিত থাকেন তবে একজন  ডাক্তারের সাথে কথা বলুন। আপনি আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়ার জন্য সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছেন কিনা তা নিচিত করুন ।  তারপর ডাক্তারের সাথে আলোচনা করে জেনে নিতে পারেন যে মানসিক চাপ মোকাবিলা করার জন্য আপনার সাইকোলজিক্যাল কাউন্সেলিং দরকার কিনা। ব্লানচার্ড  এর মতে ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোমে আক্রান্ত ব্যক্তিদের  প্রাথমিক পর্যায়ে একজন ডাক্তারের কাছে  চিকিৎসা শুরু করা প্রয়োজন এবং তার কাছেই চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া প্রয়োজন" । "তাদের শুধুমাত্র মাত্র তখনি সাইকোলজিক্যাল কাউন্সেলিং এর জন্য একজন সাইকোলজিস্ট এর কাছে যাওয়া প্রয়োজন যখন ডাক্তারের চিকিৎসায় রোগের কোন সিগনিফিকেন্ট পরিবর্তন পরিলক্ষিত না হয় তখন"। ব্লানচার্ড বলেছেন যে আইবিএস-এ আক্রান্ত দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ খাদ্য ও ওষুধের পরিবর্তনের মাধ্যমে ভালো হয়ে যায়। বাকিদের যাদের আরও গুরুতর উপসর্গ  আছে তারা  সাইকোলজিক্যাল কাউন্সেলিং এর  সাহায্য থেকে উপকৃত হতে পারেন । তিনি আরো বলেন "এটি ছাড়া, তারা যে সমস্যার মধ্যে রয়েছে তা থেকে বেরিয়ে আসতে পারবেন বলে মনে হয় না" ।

নিজের করণীয় কাজ।
1. আপনি এমন  কিছু করতে পারেন যা আপনার মানসিক চাপ এবং চিন্তা  কমাতে সাহায্য করতে পারে। যেমন: বন্ধুর সাথে কথা বলা, পড়া, গান শোনা বা কেনাকাটা করা ইত্যাদি ।
2. প্রতিদিন একই সময় ব্যায়াম করতে পারেন । যেমন: হাঁটা, দৌড়ানো, সাঁতার কাটা এবং অন্যান্য শারীরিক ক্রিয়াকলাপ।  এই ব্যায়ামগুলি মানসিক চাপ এবং বিষন্নতা কমাতেসহায়ক ভূমিকা পালন করে। আবার, এই ব্যায়ামগুলি অন্ত্রের স্বাভাবিক সংকোচনের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
4. মাইন্ডফুলনেস এবং  রিলাক্সেশন ব্যায়াম। গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের শিথিলকরণ ব্যায়াম আপনাকে শান্ত করতে সাহায্য করতে পারে।
5. প্রতিদিন পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করতে পারেন।


লেখক: আবু তারেক, সাইকোলজিস্ট, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।

2
ক্লেপটোম্যানিয়া: নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে চুরি

                 

স্বল্প মূল্যের বিভিন্ন জিনিস চুরি করলেও  আমি নিজেকে চোর বলতে নারাজ। কারণ আমার কোন অভাব নেই। কোন জিনিস চুরি করার প্রয়োজন নাই। আবার চুরি করা জিনিস যেহেতু আমি ব্যবহার  করিনা তাই আমার মনে হয় আমি চোর না। তবে আমার এই বিষয়টি আমার কাছেই খুব জটিল মনে হয়। এ বিষয়ে আমি  নিজেকে বিভিন্ন প্রশ্ন করি।  নিজে নিজে সেসব প্রশ্নের উত্তর দেই। কিন্তু আমি সেই জটিলতার কোন সমাধান খুঁজে পাইনা।  আসল ব্যাপারটা হলো আমার মধ্যে অপ্রয়োজনীয় জিনিস চুরি করার অদম্য এক আকাঙ্খা কাজ করে। চুরি করার আগে আমি নিজের মধ্যে অত্যাধিক চাপ এবং উদ্বেগ বোধ করি।  আবার চুরি করার পর  আমি  সাময়িক স্বস্তি  অনুভব করি। আমি যখন নিরাপদ স্থানে আসি  তখন দুনিয়ার সব অপরাধবোধ এবং লজ্জা আমাকে ঘিরে ধরে। ফলে  কোন কোন দিন  সম্ভব হলে  চুরি করা জিনিস আবার ফেরৎ দিয়ে আসি।  দুদিন আগের একটি  ঘটনা বলি আমি শপিং মলে গিয়েছিলাম । সেদিন  শপিং মলে তুলনামূলক  কম লোকজন ছিল। সারি সারি  সাজানো চকলেট  দেখে আমার মধ্যে একটা মানসিক চাপ তৈরী হয় । বলে রাখি যে আমি চকলেট খুব একটা পছন্দ করি না।  যাইহোক এক পর্যায়ে  ২০ কিম্বা ৩০ টাকা দামের একটা চকলেট আমার কাপড়ের মধ্যে লুকিয়ে রাখি।  সম্ভবত সেদিন দোকানের কর্মচারীরা এই বিষয়টি টের পেয়েছিল। কারণ অন্যান্য জিনিসের  বিল পরিশোধ করার সময়  তারা আমার কাছে জানতে চেয়েছিল যে আমি  চকলেট জাতীয় কিছু নিয়েছি কিনা?  আমি সম্পূর্ণ অস্বীকার করি। ধরা পড়ার ভয়ে সেদিন আমার বুক ধড়ফড় করছিল। তারপর থেকে আমি ওই দোকান এড়িয়ে চলি।  আমি যে শুধু শপিং মলে চুরি করি তা নয়।  আমি আমার আত্মীয়-স্বজনদের  বাসা থেকেও  বিভিন্ন সময় ছোটোখাটো অনেক  কিছু চুরি করেছি।  চুরি করে কয়েকবার  ধরাও পড়েছি।  বিভিন্ন কৌশলে আমি পরিস্থিতি আমার অনুকূলে নিয়ে আসতে সক্ষম হলেও অনেক মানুষ আমাকে ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখা  শুরু করে।  এই চুরির স্বভাবের কথা ভেবে নিজের উপর নিজের ঘৃণা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে আবার  চুরি করার অনুকুল পরিবেশ তৈরী হলে আমি সাময়িকভাবে অতীতের  সব ঘটনা ভুলে যাই।  আমার টার্গেট করা ওই জিনিস চুরি করার জন্য আমি  উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ি। কোন প্রকার পূর্বপরিকল্পনা ছাড়াই আমি এসব চুরি করে থাকি।

এই বিষয়টি  নিয়ে আমি লজ্জায় কারও  কাছে মন খুলে কথা বলতে পারিনা। চোর চুরি করে তার প্রয়োজনের কারণে, আর আমি চুরি করি অকারণে । আমার এই চুরির স্বভাবের কারণে আমি বিভিন্ন জায়গায় অপমান অপদস্ত হয়েছি,  সামাজিক মর্যাদাহানির স্বীকার হয়েছি। কিন্তু এই স্বভাব ছাড়তে পারিনি।  যেভাবেই  হোক সবসময় আমি যেখানকার ঘটনা সেখানেই মিটিয়ে এসেছি। কিন্তু এক কান থেকে আরেক কান করে বিভিন্ন চুরির ঘটনা  আমার পরিবারের সদস্যদের কাছে কথা আসতে থাকে। তাদের প্রশ্নের উত্তরে আমার একটায় কৌশল অস্বীকার করা।  কিন্তু শেষবার আমার এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে হারিয়ে যাওয়া জিনিস আমার রুমে পাওয়া গেলে পরিবারের সদস্যরা পূর্বের সব অভিযোগ সত্য বলে ধরে নেয়। আমি ভীষণ লজ্জিত হই। এদিন আমি আর কোন যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা দিতে পারিনি। এই ঘটনার পরও আমি চুরি করা বন্ধ করতে পারিনি। তবে সবসময় ধরা পড়ার ভয়ে আমি দুঃশ্চিন্তাগ্রস্থ থাকি । ধীরে ধীরে বিষন্নতা আমাকে ঘিরে ধরতে থাকে।


একদিন আমার ভাইয়ের সাথে একটি সুপারশপে বাজার করছিলাম। একটা পিন বক্স চুরি করার সময় আমার ভাই তা দেখে ফেলে। সেদিন আর মিথ্যা বলার কোন সুযোগ ছিলনা। সেদিন রাতে আমার ভাই আমাকে তার ঘরে ডেকে নিয়ে খুব শান্ত স্বরে আমার কাছে চুরির বিষয়টি  জানতে চায়। অনুরোধ করে বলে জেসি আজ তুই আমার কাছে কিছুই গোপন করবিনা প্লিজ। তার প্রশ্ন শুনে আমার খুব কান্না পায়।  কিছুক্ষন চুপ করে বসে থেকে আমি তাকে আমার মনের অবস্থা বলি।  আমি যে আমার ইম্পালস কন্ট্রোল করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ, তা তার কাছে বলি।  আমার সব কথা শোনার পর সেও খুব চিন্তিত হয়ে পরে। কয়েকদিন পর তিনি  আমাকে একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যান। আমি তার কাছে আমার মনের সব কথা গোপন রাখার শর্তে প্রকাশ করি। আমার কথা বলা শেষ হলে তিনি বললেন যে আপনি "ক্লেপটোম্যানিয়া" নামক একটি মানসিক রোগে আক্রান্ত।  আমি প্রয়োজনীয় মেডিসিন লিখে দিয়েছি।  এগুলি খাওয়ার পাশাপাশি আপনি একজন সাইকোলজিস্টের কাছে সাইকোথেরাপি গ্রহণ করতে পারেন। 

ডাক্তার আমাকে বললেন যেহেতু আপনার পরিবারে এই রোগের কোন ইতিহাস নেই। আবার আপনি কোন মানসিক চাপ বা অন্য কোন মানসিক রোগে আক্রান্ত না তাই বলা যেতে পারে আপনার মস্তিষ্কের সামনের অংশ অথাৎ ফ্রন্টাল লোবে নিউরোট্রান্সমিটারের ভারসাম্যহীনতার কারণে  আপনার ক্লেপটোম্যানিয়া নামক এই রোগ দেখা দিতে পারে। কারণ আমাদের মস্তিষ্কের সামনের অংশ বা ফ্রন্টাল লোব আমাদের ইছাগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।

বাসায় এসে আমি এই রোগ নিয়ে ইন্টারনেটে  সার্চ করি। রোগটি কি, কাদের এই রোগ হয়, কত সালে সর্বপ্রথম রোগটিকে মানসিক বিকারের তালিকাভুক্ত করা হয় ইত্যাদি ।বিখ্যাত বিত্তবানদের তুচ্ছ জিনিস চুরির বাতিকও এই ক্লেপটোম্যানিয়ার ফসল। বিশ্বখ্যাত অভিনেতা, রাজনীতিক, খেলোয়াড়, গায়ক, ব্যাংকার সব পেশার মানুষই এ তালিকায় আছেন। এই সমস্যা অনেকের আছে জেনে একটু ভালো অনুভব করি। এটি প্রধানত পশ্চিমের দেশগুলিতে দেখা গেলেও ভারতে প্রতি বছর প্রায় ১০ লক্ষ ক্লেপটোম্যানিয়ার কেস রিপোর্ট করা হয়। আমি তার কথা মতো মেডিসিন গ্রহণ করেছি। ডাক্তারের কথা অনুসারে একজন সাইকোলজিস্টকে দিখিয়েছি। কিভাবে ইমপালস কন্ট্রোল করতে পারি , কিভাবে চিন্তা অন্যদিকে সড়িয়ে নিতে পারি তা শিখতে তিনি আমাকে সাহায্য করেছেন। 

এখন আমি অনেকটা স্বাভাবিক লাইফ লিড করছি। আমার এই সমস্যাকে একটি মানসিক রোগ হিসেবে গ্রহণ করেছি। কোন কোন সময়  আমার ইম্পালস কন্ট্রোল করতে আসুবিধা হয় তার তালিকা করেছি। সপ্তাহে একবার তালিকা চেক করে আমার অগ্রগতি দেখি, ফলে আমি আরও উৎসাহ বোধ করি।  আমি যেসব স্থানে গেলে আমার মধ্যে চুরির প্রবণতা তৈরী হয় সেসব স্থান এড়িয়ে চলি। যদি একান্ত যেতেই হয় তাহলে একা না গিয়ে কাছের কাউকে সাথে রাখি যাতে সে আমার গতিবিধির উপর নজর রাখতে পারে। মাঝে মাঝে মনে করে দেয় । আমি মনে করি যদি কারো মধ্যে ক্লেপটোম্যানিয়ার লক্ষণ থাকে তাহলে লজ্জা না করে একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে পারেন এবং একজন সাইকোলজিস্ট এর কাছ থেকে সেকাউন্সেলিং বা সাইকোথেরাপি গ্রহণ করতে পারেন।


লেখক : আবু তারেক, সাইকোলজিস্ট, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।

3
Physiological Factors of Sleep: What You Need To Know
                                                                       
                                                       

Have you ever noticed how little things irritate you if you don't get enough sleep at night? Studies have shown that sleep deprivation makes our moods more irritable. As a result, you react negatively to small things. A study by the American Psychological Association also reported that adults who slept less than eight hours a night had relatively higher rates of stress symptoms.
Sleep is an essential and involuntary process, necessary for various body functions. It is associated with our physical and mental functioning, immune system, immediate reaction capacity, metabolism and chronic disease prevention. Sleep helps our brain to repair and recover Its function. Sleep is to the brain as fuel is to the car. When the car tank is full of fuel we can get away where we want to go. But over time, the car becomes immobile when it runs out of fuel. Our brain works exactly the same way. The only difference is the fuel. The brain's fuel is sleep. Without enough sleep, our body and brain do not get proper rest, so mental processes such as emotions, memories, new information processing and subsequent information retrieval cannot be completed properly. Moreover, lack of sleep can increase irritability, depression, anxiety and other mental problems. Scientists have proven that lack of sleep causes chemical imbalances in the brain. Our body produces and regulates various hormones. These hormones act as chemical messengers for the brain. Hormones play a major role in various important physiological functions including appetite, weight, mood, immunity, physical growth, emotional healing etc.  If sleep is not enough, this whole system has faced some negative effects.

Stages of Sleep

According to the American Academy of Sleep Medicine (AASM) there are mainly 2 stages of sleep. Non-rapid eye movement sleep (NREM sleep) and Rapid eye movement sleep (REM sleep). NREM again has 3 stages. Each stage plays an important role in brain health. For example-
First stage:- Very light sleep (5-7 minutes): During this time we enter the world of sleep from consciousness, the brain waves decrease.
Second stage:- Light sleep (20 minutes): Muscles begin to relax, body temperature and heart rate begin to decrease.
Third stage:- Deep sleep: In this stage, deep sleep occurs, blood pressure decreases, body temperature and heart rate decrease, various hormones are released, body tissues and immune system are repaired.
Fourth Stage :- REM sleep: During this time the brain is more active, the eyes move faster, the body is more relaxed, in this stage we dream, long-term memories are consolidated, learning and emotion processing takes place.
According to the National Sleep Foundation (USA), these stages can take anywhere from 40 minutes to 140 minutes to complete.  And these stages are very helpful for brain and physical damage recovery and development.  These steps occur several times in a cycle to keep our body functioning.  And that's why we need a total of 6 to 8 hours of sleep every day.

Physiological Factors of Sleep
If we know the various physiological processes, hormones and glandular functions involved in sleep, we will be more aware of the importance of sleep at early night and it will be easier for us to take the necessary steps to solve sleep problems. There is a brief discussion of various physiological processes involved in sleep below:

The Hypothalamus
In nature, when the sunlight decreases, the suprachiasmatic nuclei (SCN) located in the hypothalamus of the brain receive that information from the retina. The SCN sends signals to other hypothalamic nuclei and the pineal gland to control body temperature and hormone production such as cortisol and melatonin. The suprachiasmatic nucleus (SCN) is known as the central circadian rhythm generator and it controls almost all circadian rhythms in the body. The SCN stores all the information, when we are going to sleep, when we are waking up, or when we are doing some other activity and makes the body accordingly. Rhythmic secretion of melatonin is controlled by the suprachiasmatic nucleus (SCN) of the anterior hypothalamus. The pineal gland secretes melatonin when instructed by the SCN. This phenomenon is compared to the opening of the "door of sleep". Melatonin helps us fall into deep sleep. During this period, successive stages of sleep become complete and brain performance increases. Because melatonin is associated with darkness, turning on artificial light at night disrupts melatonin secretion. Again, due to sleeping at different times each night, this disturbance occurs in the central circadian rhythm to track exactly when we go to sleep. If I do not get enough sleep at night, the hypothalamus cannot function properly. As a result, the entire system is disturbed. The body's homeostasis is lost.

The Amygdala
The amygdala is in charge of our emotional responses. We need adequate sleep for it to function properly. Because we know that emotion processing takes place during REM sleep. When we're sleep-deprived, the amygdala is overactive, causing our immediate emotional reactions to intensify. A study using MRI brain scans found that the amygdala was about 60% more responsive in sleep-deprived participants than in non-sleep-deprived participants. So, after insufficient sleep at night, your anger may increase, you may become overactive, and road accidents may increase.

The Prefrontal Cortex
The amygdala is not the only emotion regulation area of ​​the brain. Another area involved in emotion regulation is the prefrontal cortex. It helps us control our impulses. It cannot function properly without good sleep at night. As a result, communication between the amygdala and the prefrontal cortex, which work closely with each other, is disrupted. Then this makes us more emotional /impulsive. As a result, frequent mood swings are found, and restless behavior and increased impulsive behavior are found.

Cortisol Hormone
Cortisol is a hormone produced by the adrenal glands that play a significant role in our "fight or flight" response. It helps us to be alert. Unfortunately, when we don't get enough sleep, too much cortisol is produced. It puts our bodies under constant stress. As a result, we cannot relax. This is why people under a lot of stress suffer from insomnia. Increased levels of cortisol keep them awake. Increased pressure can make you hypersensitive to all kinds of physical and emotional stimuli.

Body Temperature
Sleep requires controlled temperature, light, and sound. These three elements of the night environment are conducive to sleep. We know that during the NREM stage of sleep, our body temperature decreases. The hypothalamus prepares the body for deep sleep by regulating body temperature. Then we fall into a deep sleep. So from this, we understand that there is a relationship between sleep and the temperature of the environment.

 On the psychological side, if we treat sleep time as our rest time if we can go to sleep every day at the same time if we don't check the time repeatedly before sleep if we can stay away from all kinds of devices anhour before sleep if we can exercise sometime during the day. Then hopefully a positive solution to sleep problems will be found.

We all know that we have a total of 24 hours to work. It is up to your decision whether you sleep at night during melatonin secretion or sleep in the morning or during the day in the absence of melatonin. After knowing these details, can we break these natural rules of sleep?

Writer: Abu Tareque, Psychologist, Daffodil International University.

4
                                                   কখন আমি মানসিক স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণ করব?

                                                       

     দুঃখের পরে সুখ। আঁধার রাতের শেষে যেমন দেখিস আলোর মুখ।
জন্ম নিলে সবার তরে আছেরে মরণ,ভাঙ্গা গড়া এই জীবনে আছে সর্বক্ষণ।
চলে যায় যদি কেউ…
সৈয়দ আব্দুল হাদীর এই কালজয়ী গানে এবং কবি কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদারের কবিতা "কাঁটা হেরি ক্ষান্ত কেন কমল তুলিতে, দুঃখ বিনা সুখ লাভ হয় কি মহীতে? " এই প্রশ্নের মধ্যে মানব মনের আবেগ এবং সময়ের সাথে সাথে তার অবসানের আশ্বাসের কথা উঠে এসেছে।  এভাবেই যুগে যুগে কবি সাহিত্যিকরা  সাহিত্যের ভাষায় মনের আবেগ প্রকাশ করতে গিয়ে বিভিন্ন গান, কবিতা, গল্প, উপন্যাস রচনা করেছেন। পৃথিবীর প্রথম মানুষ থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত মানব মনের আবেগ জোয়ার ভাটার মতো কখনো বেড়েছে বা কমেছে। মানুষের মনে ইতিবাচক এবং নেতিবচক এই দুই ধরোনার আবেগের  সৃষ্টি হওয়া খুব স্বাভাবিক । নেতিবচোক আবেগ কোন সময় স্বল্পস্থায়ী হয় আবার কখনো ধীর্ঘস্থায়ী হয়। কেন এমন হয়? এই প্রশ্নের উত্তর বিজ্ঞানের অগগ্রতির সাথে সাথে আমারা জানতে পেরেছি যে, ইতিবাচক বা নেতিবাচক আবেগের পিছনে আমাদের মানসিক প্রক্রিয়া, অভিজ্ঞতা, কিছু জৈব-রাসায়নিক পদার্থের ঘাটতি বা বাড়তি এবং কিছু সামাজিক কারণ দায়ী।

সাধারণত মানসিক রোগ দুই ধরনের। নিউরোসিস এবং সাইকোসিস। নিউরোসিসে ব্যক্তি তার  নিজের রোগ সম্পর্কে সচেতন থাকে এবং  বুঝতে পারে যে, সে কিছু সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।  এ ধরনের রোগগুলো অপেক্ষাকৃত কম গুরুতর।  যেমন মৃদু উদ্বিগ্নতা, মৃদু বিষণ্নতা, সম্পর্কের টানাপোড়েন ইত্যাদি। মৃদু মাত্রার মানসিক রোগে  কাউন্সেলিং বা সাইকোথেরাপি অত্যন্ত কার্যকরী। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে মৃদু মানসিক রোগের ক্ষেত্রেও কাউন্সেলিং বা সাইকোথেরাপির সাথে  ঔষধও প্রয়োজন হতে পরে।  যেমন অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিজঅর্ডার (ওসিডি)।

অন্যদিকে সাইকোসিসে ব্যক্তি তার  নিজের রোগ সম্পর্কে বুঝতে পারেনা এবং স্বীকারও করেন না যে তাঁর কোনো মানসিক সমস্যা হচ্ছে। এই রোগগুলো খানিকটা গুরুতর। যেমন সিজোফ্রেনিয়া, গুরুতর বিষণ্নতা, বাইপোলার মুড ডিজঅর্ডার ইত্যাদি। এই গুরুতর ধরনের মানসিক রোগ বা সাইকোসিসের চিকিৎসায় ওষুধের ভূমিকা অনেক বেশি। কারণ এই রোগগুলোতে মস্তিষ্কের রাসায়নিক পদার্থের ভারসাম্য বেশি মাত্রায় নষ্ট হয়। তাই মস্তিষ্কের রাসায়নিক পদার্থের ভারসাম্য  ফিরিয়ে আনতে ঔষধের মাধ্যমে সেবা গ্রহণ করতে হয়। ঔষুধ দিয়ে একটি পর্যায় পর্যন্ত অবস্থার উন্নতি হলে ব্যক্তিকে কাউন্সেলিং বা  সাইকোথেরাপি দেওয়া যেতে পারে। মেনে নিতে কষ্ট হলেও এটাই সত্য যে মানসিক রোগের চিকিৎসা সাধারণত দীর্ঘ মেয়াদি হয়। কিছু কিছু রোগের ক্ষেত্রে আজীবন চিকিৎসা নিতে হয়। সাধারণত ঔষুধ কাজ করে রাসায়নিক পদার্থ বা নিউরোট্রান্সমিটারের ওপর এবং সাইকোথেরাপি বা কাউন্সেলিং কাজ করে জ্ঞানীয় বিকাশ (কগনিশন), আচরণ ও মনের গড়নের ওপর। তাই এক-দুটি কাউন্সেলিং সেশন করে বন্ধ করে দিলে বা কিছুদিন ঔষধ খাওয়ার পর ঔষধ খাওয়া বন্ধ করলে চিকিৎসার আশানরুপ ফল পাওয়া সম্ভব নয়।  আর কাউকে ঔষধ খেতে হবে কি হবেনা সেটা একজন চিকিৎসক  ব্যক্তিকে জানিয়ে দিবেন।

তাই যে কোন মানসিক সংকটে বা অসুস্থতায় আমরা মানসিক স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণ করতে পারি।  মানসিক স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণ করা কোন লজ্জার বিষয় নয়।  তাই সমাজে প্রচলিত  কুসংস্কারের তোয়াক্কা না করে মানসিক স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণ করা যেতে পারে। এজন্য প্রথমে জানা দরকার কোন কোন ক্ষেত্রে একজন ব্যক্তি মানসিক স্বাস্থ্য সেবা  গ্রহণ করতে পারে। সাময়িক সময়ের জন্য আমাদের সবার মধ্যে কিছু কিছু মানসিক সংকট তৈরী হতে পারে বা আচরণের অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত  হতে পারে। সেক্ষেত্রে সবাইকে তখন মানসিক রোগী হিসেবে গণ্য করা  যাবে না। মানসিক সংকটে বা রোগে সাধারণত ব্যক্তির   ব্যক্তিগত, পারিবারিক, পেশাগত, বিনোদনমূলক, শিক্ষামূলক জীবনে নেতিবাচক প্রভাব পরে।   এর ফলে যদি তার স্বাভাবিক বা প্রাত্যহিক কর্মকাণ্ডে লক্ষণীয় ব্যাঘাত ঘটে  তখন বুঝতে হবে যে, সে হয়তো মানসিকভাবে অসুস্থ। আমাদের সবারই কখনো কখনো মন খারাপ হতে পারে। কিন্তু সেটা বেশিক্ষণ বা বেশিদিন থাকার কথা নয়। যদি দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে টানা মনখারাপ ভাব বা বিষণ্ণতা থাকে, তখন সেটা মানসিক রোগের উপসর্গ বলে ধরে নিতে হবে। মানসিক রোগের পরিধি অনেক বিস্তর। তাই কারো মধ্যে যদি নিম্ন লিখিত আচরণ অথবা আবেগীয় পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয় তাহলে সে মানসিক স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণ করতে পারেন বা তাকে তার  পরিবারের সদস্যগণ মানসিক চিকিৎসা করাতে পারেন। যেমন
১। হঠাৎ করে বেশি উত্তেজিত হয়ে ওঠা বা অতিরিক্ত রাগ
২। দীর্ঘদিন ধরে একা একা থাকা
৩। টানা দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে মন খারাপ থাকা
৪। অন্যদের সঙ্গে একেবারে কথা বলতে না চাওয়া
৫। সবার সাথে ঝগড়া করা
৬। গায়েবি আওয়াজ বা কথা শুনতে পাওয়া
 ৭। অকারণে অন্যদের প্রতি সন্দেহ প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়া। 
৮। প্রাত্যহিক কাজের প্রতি মনোযোগ কমে  যাওয়া এনং নিজের যত্ন না নেয়া
৯। আনন্দের  কাজে আনন্দ না পওয়া বা আগ্রহ কমে যাওয়া
১০। সামাজিক সম্পর্ক থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয়া
১১। নিজেকে নিয়ে নেতিবাচক চিন্তা করা
১২। সবকিছুতে নিজেকে দায়ী মনে করা
১৩। সিদ্ধান্তহীনতা বা মনোযোগ কমে যাওয়া
১৪। আত্মহত্যার চিন্তা, পরিকল্পনা বা চেষ্টা করা
১৫। একই কাজ বার বার করা
১৬। ঘুম অথবা খাবারে রুচিতে অস্বাভাবিক পরিবর্তন পরিলক্ষিত হওয়া
১৭। বাসার, অফিসের বা পেশাগত কাজের প্রতি অনীহা তৈরি হওয়া বা আগ্রহ হারিয়ে ফেলা
১৮। তাছাড়া পারিবারিক অশান্তি, পারিবারিক দ্বন্দ্ব , সম্পর্কের দ্বন্দ্ব ইত্যাদি।
উপরোক্ত লক্ষণের ক্ষেত্রে একজন পেশাগত মনোবিজ্ঞানী বা মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে সেবা গ্রহণ করা যেতে পারে।


লেখক : আবু তারেক, সাইকোলজিস্ট, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।

5
                             কোন লক্ষণ প্রকাশ না করেই কি কেউ  আত্মহত্যা করতে পারে?
                                                                         

আত্মহত্যা - একটি অপ্রত্যাশিত ঘটনা। এই ঘটনা আমাদের আশেপাশের মানুষের মধ্যেই ঘটে। কেউ আত্মহত্যা করে এই সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে চলে যাক এটি আমারা কেউ চাইনা। বিশ্ব স্বাস্থ সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রতি বছর ৭,০০,০০০ এর বেশি মানুষ আত্মহত্যার কারণে মারা যায়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি বছর গড়ে দশ হাজার মানুষ আত্মহত্যা করে। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে বিবিএস ঘোষণা করেছিল যে দেশে আত্মহত্যার কারণে মৃত্যুর সংখ্যা করোনাভাইরাসে  মৃত্যুর সংখ্যাকে ছাড়িয়ে গেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুযায়ী, কোভিড -১৯ এ আক্রান্ত হয়ে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোট ৮,৪৬২ জন মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে। অপরদিকে আঁচল ফাউন্ডেশন কর্তৃক সংগৃহীত তথ্য থেকে জানা যায় যে ঐ একই সময়ে ১৪,৪৩৬ জন মানুষ আত্মহত্যা করেছে।  করোনা মহামারীর প্রভাবে এই সংখ্যা যে আরো বেড়েছে তা যেকেউ খুব সহজে অনুমান করতে পারেন। অলাভজনক একটি বেসরকারি সংস্থা আঁচল ফাউন্ডেশনের পরিচালিত এক গবেষণায় উঠে এসেছে যে ২০২১ সালে ১০১ জন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। ২০২০ সালে এই সংখ্যাটা ছিল ৭৯ জন।  আত্মহত্যা প্রতিরোধ সম্পর্কে যথেষ্ট ধারণা না থাকলে আমাদের আসে পাশের কে আত্মহত্যা করতে পারে,  আমরা কিভাবে আত্মহত্যা প্রবন ব্যক্তিকে সাহায্য করতে পারি অথবা আমাদের নিজেদের মনে যদি আত্মহত্যার চিন্তা  আসে তাহলে আমাদের করণীয় কি? এসব বিষয়ে যদি আমাদের সুস্পষ্ট ধারণা থাকে  তাহলে আত্মহত্যা প্রতিরোধ করা আমাদের জন্য অনেকটাই সহজ হত। আত্মহত্যা প্রতিরোধ করতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে জনসচেতনতা। আত্মহত্যা প্রতিরোধে  আমাদেরকে যেসব বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে, নিম্নে তা বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
 
১. আত্মহত্যাকে কেন্দ্র করে প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণাগুলো কি কি ?
আত্মহত্যা বিষয়ে জন সচেতনতা বৃদ্ধি করতে প্রথমেই আত্মহত্যাকে কেন্দ্র করে প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণাগুলো দূর করা দরকার। এ বিষয়ে  জনসাধারণের মনে সুস্পষ্ট ধারণা থাকলে তাদের সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে।  আত্মহত্যাকে কেন্দ্র করে প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণাগুলো হলো:
a. আত্মহত্যা সম্পর্কে কথা বললে বা কাউকে জিজ্ঞাসা করলে তারা আত্মহত্যা করতে উৎসাহিত হয়।
b. যারা আত্মহত্যার কথা বলে তারা কখনও আত্মহত্যার চেষ্টা করে না।
c. আত্মহত্যা বা আত্মহত্যার চেষ্টা কোন সতর্কতা ছাড়াই ঘটে।
d. যদি একজন ব্যক্তি একবার আত্মহত্যার চেষ্টা করে বেঁচে থাকে, তবে সে আর কখনও আত্মহত্যার করবে না।
e. একজন ব্যক্তি একবার আত্মহত্যা করার ইচ্ছা পোষণ করলে তাকে আর থামানোর কোনো উপায় থাকে না।
f. যারা আত্মহত্যার হুমকি দেয় তারা শুধু অন্যের মনোযোগ আকর্ষণ করে, আত্মহত্যা করে না। তাই তাদের হুমকি গুরুত্ব সহকারে নেওয়া         উচিত নয়।
g. যাদের মনে আত্মহত্যার চিন্তা আসে তারা সকলেই হতাশাগ্রস্ত।
h. আত্মহত্যার কথা ভাবছেন এমন ব্যক্তি আসলে পাগল বা মানসিকভাবে অসুস্থ।
i. যারা আত্মহত্যা করে তারা স্বার্থপর, কাপুরুষ বা দুর্বল।
j. আত্মহত্যার ক্ষেত্রে  সাইকোলজিক্যাল কাউন্সেলিং  কাজ করে না।
k. আত্মহত্যা বংশগত। শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট শ্রেণীর মানুষ আত্মহত্যা করে ।
l. আত্মহত্যা প্রতিরোধযোগ্য নয় ।
m.আত্মহত্যাকারী স্পষ্টতই মরতে চায়।
উপরে উল্লেখিত সবগুলো বাক্য আত্মহত্যাকে কেন্দ্র করে প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণা।

২. আত্মহত্যার করার আগে ব্যক্তি কি কি লক্ষণ প্রকাশ করে?
সাধারণত প্রতিটি মানুষ আত্মহত্যা করার আগে বিভিন্ন লক্ষণ প্রকাশ করে।  আমরা যদি সেসব লক্ষণ সম্পর্কে সচেতন হই তাহলে, লক্ষণ গুলোকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সক্ষম হব। মনে রাখবেন আমাদেরকে আত্মহত্যার প্রতিটি হুমকিকে গুরুত্ব সহকারে নেওয়া উচিত।  আত্মহত্যা করার আগে মানুষ সাধারণত যেসব লক্ষণ প্রকাশ করে:
a. আত্মহত্যা সম্পর্কে আলোচনায  করা অথবা লিখিতভাবে আত্মহত্যার কথা তুলে ধরা। যেমন: আমার বেঁচে থাকার কোন কারণ নেই,আমাকে ছাড়া সবাই ভালো থাকবে,  আমি চেষ্টা করে ক্লান্ত হয়েছি , আমি যদি মরে যেতাম, আমি আত্মহত্যা করব ,  আমার আপন বলতে কেউ নাই  ইত্যাদি ।
b. আত্মহত্যার সংকেত দিয়ে কোন নোট লিখা। অথবা  আত্মহত্যার ইঙ্গিত বহন করে এমন কোন কিছু সোশ্যাল মিডিয়া তে পোস্ট করা। নিজের সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করা। যেমন: আমার জীবন ব্যর্থতায় ভরপুর , জীবন  অর্থহীন, আমি খুব অসহায়, আমি গুরুত্বহীন, আমি অন্যের কাছে বোঝা হয়ে বেঁচে আছি।
c. আত্মহত্যা করার উপায় খোঁজা। ঝুঁকিপূর্ণ বা আত্ম-ধ্বংসাত্মক কাজ করা।  যেমন:  অ্যালকোহল বা ড্রাগের ব্যবহার বৃদ্ধি বা বেপরোয়াভাবে      গাড়ি চালানো, আগ্নেয়াস্ত্র কেনা, দড়ি খোঁজা, কোন ক্ষতিকর ড্রাগ কেনা ইত্যাদি।
d. ব্যক্তির খাওয়া বা ঘুমের ধরন সহ স্বাভাবিক রুটিন পরিবর্তন  হওয়া। সে আগে যা করত না তেমন কিছু করা। অর্থাৎ হঠাৎ করে ব্যক্তির আচরণ এবং মেজাজে বড় পরিবর্তন পরিলক্ষিত হওয়া।
e. বন্ধুবান্ধব এবং পরিবারের সদস্যদের সাথে দেখা করে  বিদায় জানান, যেন তাদের সাথে আর দেখা হবে না।
f.  দীর্ঘস্থায়ী দুঃখ-কষ্টের কথা শেয়ার করা।  বুঝানো যে সে খুব কষ্টে আছে। ভবিষ্যত সম্পর্কে গভীর নিরাশার অনুভূতি প্রকাশ করা।
g. হঠাৎ করে শান্ত হয়ে যাওয়া। ব্যক্তি হতাশা বা অন্য কোন নেতিবাচক আবেগের পর হঠাৎ করে শান্ত হয়ে যেতে পারে ।  এর কারণ হতে পারে যে ব্যক্তি তার জীবন শেষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
h. একা থাকতে চাওয়া । বন্ধু, পরিবার,  সমাজ এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে নিজেকে দূরে রাখা। 
i. যে ব্যক্তি আত্মহত্যা করেছে তার প্রশংসার করা। আত্মহত্যার প্রচেষ্টায় সফল হওয়ার জন্য ব্যক্তিটিকে "সাহসী" হিসাবে বর্ণনা করা।
j. হটাৎ ব্যক্তিগত সম্পত্তি উইল করা, ব্যক্তির প্রিয়  অথবা  মূল্যবান কোন জিনিস দান করা।


৩. কারা  আত্মহত্যার রিক্স ফ্যাক্টরে আছেন?
আত্মহত্যার রিক্স ফ্যাক্টর গুলো জানা থাকলে যেসব ব্যক্তি আত্মহত্যার রিক্স ফ্যাক্টরে আছেন, তাদের প্রতি আমরা বিশেষ নজর রাখা সম্ভব।  তখন তারা যদি  আত্মহত্যার কোন লক্ষণ প্রকাশ করে তাহলে সাথে সাথে বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া সহজ হবে। যেসব ব্যক্তি আত্মহত্যার রিক্স ফ্যাক্টরে আছেন :
a. যেসব ব্যক্তি সাম্প্রতিক ট্রমা বা জীবন সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। জীবন সংকটের মধ্যে রয়েছে প্রিয়জনের  মৃত্যু, সম্পর্কের অবসান, ডিভোর্স, চাকরি হারানো বা গুরুতর আর্থিক সমস্যা, দীর্ঘদিনের আইনি জটিলতা,  ঘনিষ্ঠ বন্ধু বা পরিবারের সদস্যের সাম্প্রতিক আত্মহত্যা ইত্যাদি।
b. যাদের চিকিৎসা না করা মানসিক অসুস্থতা আছে।  যেমন: বিষন্নতা , সিজোফ্রেনিয়া, বাইপোলার ডিসঅর্ডার অথবা উদ্বেগজনিত রোগ(Anxiety Disorder) ইত্যাদি।
c. যাদের দীর্ঘস্থায়ী শারীরিক রোগ আছে। যেমন:  ক্যান্সার, এইচআইভি ইত্যাদি ।  দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা বা দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার সাথে মানিয়ে নিতে অক্ষমতা, ব্যক্তিকে হতাশার অনুভূতির দিকে নিয়ে যেতে পারে। ফলে কেউ কেউ  আত্মহত্যাকে তাদের যন্ত্রণা মোকাবেলার সেরা বিকল্প হিসেবে দেখতে পারে।   
d. যাদের আত্মহত্যার পারিবারিক ইতিহাস আছে।
e. অতীতের যাদের আত্মহত্যার প্রচেষ্টার  ইতিহাস আছে।
f.  যাদেরকে সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। যারা সমাজের সমর্থন হারিয়েছে  অথবা হয়রানির শিকার হয়েছে।
g. যাদের আগ্নেয়াস্ত্র বা ক্ষতিকর ড্রাগের সহজ প্রাপ্যতা রয়েছে।
h. যাদের জীবনে শৈশব নির্যাতন, ট্রমা অথবা  ক্রমাগত নির্যাতিত হওয়ার ইতিহাস আছে।
i. যারা পরীক্ষায় অনাকাঙ্খিত ফলাফল পেয়েছেন।
j. এবং যারা মাদকাসক্ত ব্যক্তি ।

৪. আত্মহত্যা প্রবণ ব্যক্তিকে কীভাবে সাহায্য করা যেতে পারে?
কেউ যদি সরাসরি আত্মহত্যার কথা বলে অথবা যদি কারো কথা, কাজ বা আচরণে  আত্মহত্যার অভ্যাস পাওয়া যায় তাহলে যত দ্রুত সম্ভব তার সাথে যোগাযোগ করতে হবে। কারণ আত্মহত্যার পিছনে যে কোন একটি নেতিবাচক আবেগ থাকে, যা ওই ব্যক্তির কাছে অসহনীয় হয়ে উঠেছে।  এই অবস্থায় ওই ব্যক্তির যদি তার কোন শুভাকাঙ্ক্ষীর সাথে মনের কষ্টগুলো শেয়ার করার সুযোগ হয় তাহলে সেটি  তার নেতিবাচক আবেগের তীব্রতা কমাতে সাহায্য করবে। যেটাকে সাইকোলজিতে মানসিক নিরাময় (Mental Healing) বলা হয়। এই জন্য আত্মহত্যা প্রবণ ব্যক্তির সাথে যত দ্রুত সম্ভব যোগাযোগ করতে হবে।    আত্মহত্যা প্রবণ ব্যক্তিকে যেভাবে সাহায্য করা যেতে পারে :
a. ব্যক্তির মাথায় আত্মহত্যার চিন্তা আসছে কিনা অথবা তার আত্মহত্যা করার কোন পরিকল্পনা করছে কিনা তা নিয়ে  সরাসরি কথা বলুন।
b. তার সাথে কথা বলার সময়  শান্ত থাকুন এবং আশ্বস্ত স্বরে কথা বলুন। আগ্রহ সহকারে নিরপেক্ষ মনে তার কথা শুনুন।
c. ব্যক্তিকে গুরুত্ব সহকারে নিতে হবে। তার প্রতি সহানুভূতিশীল এবং নিরেপেক্ষ ভূমিকা পালন করুন। সে যে আবেগের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তার স্বীকৃতি প্রদান করুন যেমন:  আপনি বলতে পারেন ‘আমি বুঝতে পারছি আপনি খুব কষ্টকর একটি অনুভূতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। এমন পরিস্থিতে যে কারো খুব কষ্টকর অনুভূতি হওয়াটাই স্বাভাবিক’।
d. তাকে সাহায্য করতে আপনি যে আগ্রহী, তা প্রকাশ করুন।
e. তাকে আশ্বস্থ করতে পারেন যে আত্মহত্যার অনুভতি অস্থায়ী এবং  চিকিৎসার মাধ্যমে তারা ভালো বোধ করতে পারেন। ব্যাক্তির আবেগীয় অবস্থার উন্নতি হলে তাকে মানসিক স্বাস্থ্য সেবা নিতে উৎসাহ প্রদান করতে পারেন। অথবা আপনি নিজেই কোন সাইকোলজিস্ট অথবা মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে তাকে নিয়ে যেতে পারেন।
f.  ব্যক্তির কাছ থেকে যেকোন ক্ষতিকর জিনিস যা দিয়ে সে আত্মহত্যা করতে পারে যেমন:  বন্দুক, ছুরি, ড্রাগ ইত্যাদি সরিয়ে ফেলুন।
g. তার পরিবারের সদস্যের সাথে অথবা তার পরিচিত কোন ব্যক্তির সাথে কথা বলুন।
h. যে ব্যক্তি আত্মহত্যার ঝুঁকির মধ্যে আছেন তার, তার পরিবারের সদস্যদের, তার প্রতিবেশীর এবং নিকটস্থ থানার মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে রাখুন। যাতে যে কোন জরুরী পরিস্থিতে তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। 
i. জরুরী  সাহায্য পেতে  ৯৯৯ নম্বরে কল করুন। যে কোন সাহায্য না আসা পর্যন্ত ব্যক্তির সাথে থাকুন অথবা তার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা অব্যহত রাখুন। 

৫. আত্মহত্যা প্রবণ ব্যক্তিকে সাহায্য করতে কোন কাজগুলো করা যাবে না?
আত্মহত্যা কোন সমাধান নয় , আত্মহত্যা মহা পাপ , আত্মহত্যাকারী ব্যক্তি জাহান্নামে/নরকে যাবেন। আত্মহত্যা প্রবণ ব্যক্তিকে মানুষ সাধারণত এই বাক্যগুলো  বলে থাকেন। আত্মহত্যার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন এমন ব্যক্তি কি উল্লেখিত বাক্যগুলো জীবনে এই প্রথম শুনছেন ? এমন প্রশ্ন আপনাকে করা হলে আপনার উত্তর হবে "না"। তাহলে তারা কি জন্য আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন ? আসলে আত্মহত্যা প্রবণ ব্যক্তির মনের তীব্র নেতিবাচক আবেগের কারণে সাময়িকভাবে তার যৌক্তিক চিন্তাভাবনা ঐ নেতিবাচক আবেগ দ্বারা প্রভাবিত হয়।  ফলে সে তখন আর কোন যৌক্তিক কথা পুরোপুরি গ্রহণ করতে পারেন না। আবার কোন সময় তা ব্যক্তির মনে অন্য কোন নেতিবাচক আবেগ (যেমন: রাগ , বিরক্ত ইত্যাদি) সৃষ্টি করতে পারে। তাই আত্মহত্যা প্রবণ ব্যক্তিকে সাহায্য করার সময়  এমন কিছু করা যাবেনা যা তার মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। এমন কিছু কাজ হলো :
a. আত্মহত্যা প্রবণ ব্যক্তির সাথে তর্ক না করা । 
b. তার সাথে এমন ভাবে কথা না বলা যেন  আপনি হতবাক হয়েছেন। যেমন:  আপনার মতো মানুষ আত্মহত্যা করবে এটা ভাবতেই আমার অবাক লাগছে !
c. তাকে কোনভাবেই  বিচার না করা। যেমন: আপনি কি কাপুরুষ! তাই আত্মহত্যা করবেন?
d. আত্মহত্যা সম্পর্কিত কোন কথার গোপনীয়তার রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি না দেওয়া।
e. তার সামনে ধর্মীয় প্রবাদ, উপদেশ বাণী  বা জীবনের মূল্য সম্পর্কে বক্তৃতা না দেওয়া ।

৬. নিজেদের মনে যদি আত্মহত্যার চিন্তা  আসে তাহলে করণীয় কি?
বিভিন্ন কারণে আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটতে পারে।  তখন হয়তো আপনার মাথায় আত্মহত্যার চিন্তা আসতে পারে।  যদি এমনটা হয়  তাহলে
a. প্রথমে নিজেকে বলুন যে আমি আমার কাছে প্রতিজ্ঞা করছি, এখন আমি  কিছু করবনা।  আমি ২৪ ঘন্টা অপেক্ষা করব অথবা এক সপ্তাহ অন্য কোন নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করব।
b. এসময় একজন সাইকোলজিস্ট অথবা কোন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে থেকে সাহায্য নিতে পারেন ।
c. আত্মহত্যার চিন্তা বিশ্বস্থ কোন ব্যক্তির  সাথে শেয়ার করতে পারেন। এটি হতে পারে আপনার পরিবারের সদস্য, বন্ধু, থেরাপিস্ট, শিক্ষক, পারিবারিক ডাক্তার, অথবা প্রশিক্ষক।
d. আপনার মনে যদি আত্মহত্যার চিন্তা  আসে তাহলে আপনার বাসায় একটা নিরাপদ পরিবেশ তৈরী করুন। আপনি নিজেকে আঘাত করার জন্য ব্যবহার করতে পারেন এমন জিনিসগুলো বাসা থেকে সরে রাখতে পারেন।  যেমন: ঔষধ, ছুরি, রেজার বা আগ্নেয়াস্ত্র ইত্যাদি। আপনি যদি তা করতে না পারেন  তবে আপনি এমন কোন জায়গায় যেতে পারেন যেখানে আপনি নিরাপদ বোধ করেন। আপনি যদি ঔষধের ওভারডোজ নেওয়ার কথা ভাবেন, তাহলে আপনার ওষুধ, এমন কাউকে দিন যিনি আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী আপনাকে ওষুধ দিতে পারেন। এসময় প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধ ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে পারেন ।
e.নিজের মনে  আশা জাগাতে পারেন যে আমি এক নয় আমার মতো অনেকেই  এই আবেগের মধ্য দিয়ে যায়। এমনকি যারা আমার  মতো খারাপ বোধ করছেন তারা এখন শিখেছেন যে কিভাবে নেতিবাচক আবেগ মোকাবেলা করতে হয় অথবা নিয়ে নেতিবাচক আবেগ পথ চলতে হয়। 
f. ফিজিক্যাল এক্সারসাইজ এবং রিলাক্সেশন এক্সারসাইজ আপনাকে আপনার নেতিবাচক আবেগ মোকাবেলা করতে আপনাকে সাহায্য করতে পারে।

আত্মহত্যা যদি সমস্যা হয় তাহলে এটার একটা সমাধানও আছে। উপরে উল্লেখিত উপায়গুলো সেই সমস্যা সমাধানে কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারে।


লেখক: মোঃ আবু তারেক, সাইকোলজিস্ট, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।





References:
1. পার্থ শঙ্কর সাহা, এক বছরে ১০১ জন শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, দৈনিক প্রথম আলো ২৯ জানুয়ারি ২০২২.
2. নাগিব বাহার, আত্মহত্যা: বাংলাদেশে ২০২১ সালে ১০১ জন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী নিজের হাতেই নিজের জীবন নিয়েছেন, বলছে গবেষণা, বিবিসি বাংলা, ঢাকা
           ২৯ জানুয়ারি ২০২২.
3. WHO,Suicide, 17 June 2021.
4. Wikipedia, Suicide in Bangladesh
5. Kamrul Hasan & Arifur Rahman Rabbi, Examining the alarming suicide trends in Bangladesh,Dhaka Tribune, May 8th, 2018.


6
Psychological Support / Hypochondriasis
« on: September 28, 2021, 02:37:22 PM »
                                                                                                  Hypochondriasis

                                                                                   
Hypochondriasis is a disorder in which  people strongly believe that they have a serious or life-threatening illness despite having no, or mild, or few symptoms. They are excessively and unduly worried about having a serious illness. Actually it is a disorder of "perception and cognition. In the DSM-5, it is diagnosed as illness anxiety disorder. For example, a person who has a minor cough may think that he/she has tuberculosis or some other disease.

 People with hypochondriasis have: 1. Preoccupation with fears of having, or the idea that one has, a serious disease based on the person's misinterpretation of bodily symptoms. Physical symptoms are not present or if present, only mild, 2. The preoccupation persists despite appropriate medical evaluation and reassurance, 3. Constantly talking and checking about their health and possible illnesses, 4. Frequently searching the internet for causes of symptoms or possible illnesses.5. The preoccupation causes clinically significant distress or impairment in social, occupational, or other important areas of functioning for at least 6 months.

People with hypochondriasis may have had a serious illness in the past that could lead them to misinterpret that all body sensations are serious, so they search for evidence to confirm that they have a serious disease or if they had parents who worried too much about their own health or their child’s health. People who excessively use the internet to search for health information and who have a tendency toward being a worrier / who have major life stress are at risk of hypochondriasis.

To prevent hypochondriasis one can learn how to recognize stressor when they're stressed and how this affects the body and they can regularly practice stress management and relaxation techniques. One can stick with their treatment plan to relapses or worsening of symptoms of hypochondriasis.
Most research indicates that cognitive behavioral therapy (CBT) is an effective treatment for hypochondriasis. If you have hypochondriasis, you can seek professional advice as soon as possible. Hopefully you will get rid of hypochondriasis soon.


Written by: Md. Abu Tareque, Psychologist, Daffodil International University

7
                                                   যে মানসিক রোগের লক্ষণগুলো ভৌতিক বলে মনে হয়
                                   

এলাকায় হঠাৎ একদিন সাড়া  পরে গেল যে সালেহি কে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা।  কেউ বলল সে  হয়তো কোথাও বেড়াতে গেছে,  কেউ বলল  সে গুম  হয়েছে, কেউ বলল জিনেরা তাকে তাদের দেশে নিয়ে গেছে, কেউ বলল সে হয়তো রাগ করে বাড়ি থেকে চলে গেছে। তার পরিবারের সদস্যরা অনেক খোঁজা খুজির পর এলাকায় মাইকিং করার ব্যবস্থা করলেন ।  তাতেও কোন লাভ হল না ।  পরে এই নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তি পত্রিকা পর্যন্ত গড়াল, তাতেও কোন  সাড়া পাওয়া গেলনা।  একদিন সালেহির এক আত্মীয় তার মা কে বলল যে একজন কবিরাজের কাছে যেতে, যাতে সে সালেহির বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে জানতে পারেন।  তিনি তাই করলেন।  কবিরাজ প্রায় ৩০ মিনিট পর সালেহির বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে তার মাকে জানালেন। পরে সেই স্থানে সালেহিরকে না পাওয়া গেলে সালেহির মা আবারও  কবিরাজের কাছে গেলেন।  সে বললেন আপনারা ওই স্থানে পৌঁছানোর কিছু আগে জিনেরা তাকে অন্য স্থানে নিয়ে গেছেন। এভাবে কবিরাজের দেওয়া তথ্যমতে কয়েকবার সালেহির অনুসন্ধানেই পর তার পরিবারের মানুষের ভুল ভাঙলো। 

এর প্রায় ২মাস পর একদিন সন্ধ্যায়  সালেহি বাড়ি ফিরে আসলেন। পরিবারের সদস্যরা খুব আনন্দিত হলেন এবং তাকে জিজ্ঞাসা করতে থাকলেন যে সে এতদিন কোথায় ছিল? তাকে গুম  করা হয়েছিল কিনা? কেন সে এতদিন বাড়ির বাহিরে থাকল? ইত্যাদি প্রশ্ন।  এতদিন সালেহি কোথায় ছিল, কি খেয়েছিলো, কোথায় গিয়েছিলো এসব তথ্যের  কোন কিছু সে মনে করতে পারল না। যারা বলেছিলো সালেহিকে জিনেরা নিয়ে গেছে  তাদের ধারণা আরোও পোক্ত হল, কবিরাজের কথার সাথেও মিল পাওয়া গেল। ফলে সবাই মোটামোটি বিশ্বাস করে নিল যে জিনেরা সালেহীকে তাদের দেশে নিয়ে গিয়েছিল এবং অনুমান করা হল যে, সালেহি যাতে জিনের দেশের অবস্থান কোন মানুষ কে না বলতে পারে তাই তারা তার মস্তিষ্ক থেকে সেই স্মৃতি মুছে দিয়েছে। 
এতদিনে সালেহির শারীরিক স্বাস্থ্যের কিছুটা অবনতি দেখে পরিবারের সদস্যরা তাকে একটা হাসপাতালে নিয়ে গেলন। সেখানকার কর্তব্যরত ডাক্তার প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর সালেহিকে একজন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যেতে বললেন।  প্রথমে কেউ  সালেহিকে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিতে না চাইলেও সালেহীর বড় ভাইয়ের অনুরোধে তাকে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যাওয়া হল। ডাক্তার সালেহির এবং তার পরিবারের সদস্যদের সাথে প্রায় এক ঘন্টা কথা বলার পর তাদেরকে জানালেন যে সালেহি বিচ্ছিন্নতামূলক স্মৃতি ভ্ৰংশ বা ডিসোসিয়েটিভে এমনেশিয়া (According to DSM-5: Dissociative Amnesia; with dissociative fugue) নামক একটি মানসিক রোগে ভুগছেন।  এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি একটি পীড়নমূলক পরিস্থিতির পর থেকে হঠাৎ করেই তার ব্যক্তিগত জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলী বা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিগত তথ্য স্মরণ করতে পারে না। 
তিনি আরো বললেন যে, বিচ্ছিন্নতামূলক স্মৃতি ভ্রংশ প্রায় সব ক্ষেত্রেই পীড়নমূলক অভিজ্ঞতার পর সৃষ্টি হয় যেমন;দাম্পত্য কলহ, ব্যক্তিগতভাবে প্রত্যাখ্যাত হওয়া, যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা, অথবা প্রাকৃতিক দুর্যোগ ইত্যাদি।  সালেহির ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাবার মৃত্যু পীড়নমূলক অভিজ্ঞতা হিসাবে কাজ করেছে। বিচ্ছিন্নতামূলক স্মৃতি ভ্ৰংশে ব্যক্তির ব্যক্তিগত জীবনের তথ্যগুলো  চিরতরে হারিয়ে যায় না, শুধু বিস্মৃতির পর্যায়ে যখন চলতে থাকে তখন সে তথ্যগুলো দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতি ভান্ডার থেকে পুনরুদ্ধার করতে পারেনা। 
বিস্মৃতির ফলে ব্যক্তির আচরণে  বিভ্রান্তি দেখা দিতে পারে। যেমন: সে স্থান-কাল-পাত্র সম্পর্কে অজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারে , উদ্দেশ্য বিহীন ভাবে ঘোরাফেরা করতে পারে।  অথবা ব্যক্তি সম্পূর্ণভাবে তার অতীত জীবনের ঘটনাবলী ভুলে যেতে পারে  এবং সে হঠাৎ করে বাড়ি থেকে উধাও হয়ে যেতে পারে  এবং অন্য কোন স্থানে গিয়ে একটি নতুন পরিচয়ে কাজকর্ম করতে শুরু করতে পারে।  এ ছাড়া অন্যান্য সব  আচরণে কোন বিচ্যুতি বা অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করা যায় না।  সামগ্রিক স্মৃতিভ্রংশ দেখা দিলে, রোগী তার আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধবকে চিনতে পারে না, কিন্তু স্বাভাবিক ভাবে কথাবার্তা বলতে পারে, বই পড়তে পারে যুক্তিপূর্ণভাবে চিন্তা করতে পারে, এবং পূর্বে যেসব দক্ষতা ও জ্ঞান অর্জন করেছিল সে অনুযায়ী কাজ করতে পারে। বিস্মৃতির উপাখ্যানটি কয়েক ঘন্টা থেকে কয়েক বছর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। এই স্মৃতিভ্রংশ  থেকে মুক্ত হতে কতদিন লাগবে তা বলা যায় না।  যদিও  একদিন ব্যক্তির স্মৃতি সম্পূর্ণভাবে ফিরে আসে, কিন্তু তার পলাতক জীবনের ঘটনাগুলো বিস্মৃতির গর্ভে হারিয়ে যায়।
বিচ্ছিন্নতামূলক স্মৃতি ভ্ৰংশ রোগের চিকিৎসার জন্য কবিরাজের কাছে না গিয়ে একজন মেন্টাল হেলথ প্রফেশনাল এর সাহায্য নেওয়া যেতে পারে।


লেখক: মোঃ আবু তারেক, সাইকোলজিস্ট, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।

8
                             দুঃসময়ে করি সন্ধান, আছে কি বিকল্প সমাধান!

                                 
সামি (ছদ্ম নাম) ছোটবেলা থেকেই খুব মেধাবী ছাত্র।  স্কুল কলেজে ভাল ফলাফল করার পর সে এখন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে  পড়ছে। বাবা-মার কড়া শাসনের মধ্যদিয়ে  বড় হওয়া সামি  বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে প্রথম  নিজের মতো করে চলার সুযোগ পেয়েছিল । বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের  শুরুর দিকে  তার সাথে তার ক্লাসের এক মেয়ের ভাল বুন্ধত্ব হয় এবং পরে তা প্রেমের সম্পর্ক পর্যন্ত গড়ায়।  প্রথম দিকে এই সম্পর্ক খুব ভাল  চললেও পরে নানা কারণে তাদের মধ্যে ঝামেলা হতে থাকে । সামি তার সঙ্গীর ওপর অনেক দিক থেকে নির্ভরশীল থাকলেও মাঝে মাঝে  তার সাথে কয়েকদিনের জন্য কথা বলা বন্ধ রাখত।  একদিন  এরকম একটি বিরতীর পর কথা বলার জন্য সামি তার সঙ্গীকে  কল  দিলে  তার ফোন নাম্বার বন্ধ পায়।  পরে সে জানতে পারে যে তার সঙ্গীকে তার পরিবারের সদস্যগণ জোড়পূর্বক অন্য একটি ছেলের সাথে বিয়ে দিয়েছে ।  এই সংবাদটি জানার পর সামি প্রথমে তার সংজ্ঞা  হারান এবং পরে কষ্ট ভুলে থাকার জন্য ঘুমের ঔষধ সেবন করা শুরু করেন  ।  এভাবে চলতে চলতে সে একদিন  আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।  বিষয়টি তার বাবা-মা জানতে পারলে সামিকে তার নিজ গ্রামে নিয়ে যান এবং সবসময় তাকে তাদের নজরে রাখেন। বাবা-মার সেবা এবং সহানুভূতিশীল ব্যবহারে সামি খুব কম সময়ে মধ্যে অনেকটা স্বাভাবিক হতে পেরেছিলেন। এখন সে বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষবর্ষে  পড়ছেন। আর এখনো সামি সেই কষ্টকর অভিজ্ঞতাটি ভুলে যায়নি , কিন্তু ঘটনাটি এখন তার  মনের ওপর তেমন কোন নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করতে পারে না। 
মানুষ হিসাব আমাদের জীবনে যেমন সফলতা আছে তেমনি আমাদের জীবনে বিফলতাও আছে।  কোন কোন বিফলতা থেকে বের হয়ে আসা  আমাদের জন্য সহজ হয় আবার কোন কোন বিফলতা থেকে বের হয়ে আসা  আমাদের জন্য অনেক কঠিন হয়। একজন মানুষ জীবনের সবক্ষেত্রেই  যে  সফল হবেন তা বলা যাবেনা।  অনেকবার বিফলতার পরও সফলতার আলো দেখা যেতে পারে । বিফলতা থেকে শিক্ষা না নিয়ে  তা নিয়ে চিন্তার মধ্যে ডুবে থাকলে আমাদের চিত্ত অস্থির হয়ে ওঠে।  তখন আমরা মানসিক ভাবে হতাশ, বিষন্ন, উদ্বিগ্ন , অসহায় হয়ে পড়ি। শুধুমাত্র বিফলাতার পরে যে আমরা মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পরিনা তা না তাছাড়া বিভিন্ন ঘটনার পরও  আমরা মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পরতে  পারি। এই অবস্থা থেকে বের হয়ে আসার জন্য আমাদের সামনে যেমন অনেকগুলি কার্যকর পথ খোলা থাকে ঠিক তেমনি কিছু অকার্যকর পথও খোলা থাকে। গল্পের সামির সামনেও অনেকগুলি পথ খোলা ছিল  যেমন : ১। ড্রাগ নেওয়া, ২।  আত্মহত্যা করা , ৩। অন্য একটা সম্পর্কে গিয়ে সঙ্গীর ক্ষতি করা  ৪।  কষ্টের কথা বন্ধুদের সাথে বা বাবা-মার সাথে শেয়ার করা ৫। নতুন সম্পর্কে যাওয়া ৬। নিজেকে গুছিয়ে নেওয়া  ৭। এটাকে একটা চ্যালেঞ্জ হিসাবে নিয়ে সুন্দর লক্ষের দিকে এগিয়ে যাওয়া  ৮। প্রতিযোগিতামূলক চাকরীর পড়ালেখা করা ৯। পড়ালেখা ছেড়ে দেওয়া , এরকম অনেক পথ। এই পথগুলির মধ্যে কিছু পথ  তার জন্য নেতিবাচক আবার কিছু পথ ইতিবাচক। নেতিবাচক পথ হোক  বা ইতিবাচক পথ হোক এখানে তার সম্পূর্ণ  স্বাধীনতা রয়েছে যে, সে কোন পথ তার নিজের জন্য বেছে নিবে। গল্পের সামি,  নেতিবাচক পথ বেছে নিয়েছিল ইচ্ছা করলে সে ইতিবাচক পথেও যেতে পারত।
যে কোনো বিপদ মোকাবিলা করতে প্রথমে আপনাকে আপনার  নিজের সক্ষমতা সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। মানুষ হিসাবে আমাদের প্রত্যেকের মাঝে কিছু না কিছু ইতিবাচক গুণাবলী আছে। বিপদে সেগুলি কাজে লাগাতে হবে।  খুঁজে বের করতে হবে বিপদের সময় আপনি কার কাছ থেকে সাহায্য পেতে পারেন ।  চিন্তা করে বের করতে হবে কোন কোন বিকল্প পথ আপনার জন্য খোলা আছে । তাছাড়া  বিপদে আপনি আপনার অতীত অভিজ্ঞতাও কাজে লাগাতে পারেন। লক্ষ্য করলে দেখবেন আমাদের আশেপাশে পরিচিত অনেকেই আছেন, যাদের কাছ থেকে আমরা বিপদের সময়  সাহায্য পেতে  বা নিতে পারি। এই সাহায্য এমন হতে পারে যে, কেউ আপনার  কথা খুব মন দিয়ে শোনে আপনি তার কাছে আপনার কষ্টের কথা শেয়ার করতে পারেন, যে  আপনাকে  তথ্য  দিতে পারবে বলে মনে করছেন, তার কাছ থেকে আপনি  তথ্য নিতে পারেন , আবার কেউ আপনাকে ভাল পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করতে পারে, কেউ আপনাকে অর্থ দিয়ে বা পরিশ্রম দিয়ে সাহায্য করতে পারে, আপনি তাদের কাছ থেকে সেই সাহায্য গুলি নিতে পারেন।  আবার কোন কোন ঘটনার জন্য আমাদের ভাগ্য দায়ী থাকে। সেক্ষেত্রে হয়তো আমাদের কিছুই  করার  থাকেনা, ঘটনাটা মেনে নেওয়া ছাড়া। যে ঘটনাটি আর কোনোভাবেই পরিবর্তন করা সম্ভব না তা মেনে নিয়ে চলাটা  আমাদের জন্য ইতিবাচক।

বিপদের সময়  অস্থির থাকলে আমরা আমাদের ইতিবাচক গুলাবলি, আমাদের সক্ষমতা  অথবা আমরা  যাদের কাছ থেকে সাহায্য নিতে পারি তাদের সম্পর্কে সাচেতন থাকতে পারি না।  আমাদের মনে তখন শুধু নেতিবাচক  চিন্তা চলতে থাকে। গল্পের সামির মতো হঠাৎ কোন নেতিবাচক পথে আমাদের পা চলে যেতে পারে। মনের অস্থিরতা কমানোর জন্য আমরা ডিপ ব্রিদিং রিলাক্সেশন এক্সারসাইজ করতে পারি। এটা  আমাদের মনের অস্থরিতা দূর করতে সাহায্য করবে।  এছাড়া বিপদে সময়  কোন প্রতিক্রিয়া করার আগে আমরা নিজেদেরকে একটা সময় বেঁধে দিতে পারি যে, এই সময়ের আগে আমি কোন প্রতিক্রিয়া করব না।  তবে এটা সঙ্কটকালের  ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। এছাড়া কখনো যদি আপনি আপনার বিপদ সামাল দিতে মানসিকভাবে নিজেকে অসামর্থক মনে করেন  তবে  আপনি একজন পেশাদার মনোবিজ্ঞানীর সাহায্য নিতে পারেন , তিনি আপনাকে আপনার  ইস্যু থেকে বের হয়ে আসতে সহায়তা  করবেন।

 
লেখক: মোঃ আবু তারেক, সাইকোলজিস্ট, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।

9
Psychological Support / Re: Lifestyle That Boost Your Mental Well-being
« on: August 05, 2021, 01:38:50 PM »
Thanks  :)

10
Psychological Support / Lifestyle That Boost Your Mental Well-being
« on: August 05, 2021, 01:22:31 PM »
                                                            Lifestyle That Boost Your Mental Well-being

                                           

If you are dissatisfied with your present lifestyle and you want to change this, then this article will help you. To lead a healthy and productive life, you have to  reschedule your daily activities. First,  you have to change your sleeping and eating time. Sleeping time should be  at night, not in the morning or daylight. Second, you have to continue physical exercise everyday. Third, you have to reduce your unnecessary screen time. Fourth, everyday you have to  practice, perceiving the positive side of a negative event . And fifth,  you can create a preferable daily activities schedule by including all these together. Let's see the psychology behind these .
 
1. Healthy Sleep
Many of us have changed our lifestyle to keep pace with the times. It is found more in the students' life. They informed me that they go to bed at 1 am to 3am and wake up at 10am to 11pm . Due to class, sometimes  they wake up at 7am or 8am. They can not maintain the daily routine properly. On that day they can't pay their attention in class. They can't eat properly due to breaking their time schedule .Their moods become irritated easily . As they can't eat, they become tired. This  has an impact on their digestive system, liver functioning and so on. Studies have shown that one can change one's body clock by eating at the same time every day.
People who work at night and sleep during the day, and who sleep at night and work during the day, get a total of 24 hours time to work. The only difference between them is that they actually follow the same schedule of the average person in a different time zone. But the one who sleeps at night, is working according to his body clock. Nature also supports this rule. If you follow these, you can see the positive effect on your mental health and productivity. Otherwise you reduce your lifetime.

2. Physical Exercise
It is quite impossible to do physical exercise in the morning for  maximum students, because they sleep late at night. But if they try, they can change it. There are lots of neurotransmitters in our blood which are called hormone or chemical messengers. Some neurotransmitters are responsible for negative feelings . When we are in negative events, the neurotransmitter is found as an imbalance in our body. We can balance the neurotransmitter by physical exercise. Our heartbeat, respiratory system, blood flow become increased during physical exercise. As a result, germs flush out through our breath. This makes our lungs and heart stronger . Studies have shown that our immunity is increased by physical exercise .

3. Need Reduce Your Unnecessary Screen Time
Many students notice that unconsciously they spend lots of time on Facebook or YouTube. They don't know when they go online. They can't control their internet browsing. As a result, when a person is in a little discomfort situation, he/she enters these social media from his/her unconscious mind. It's ok to use the internet but when it is unnecessary, it becomes unproductive. To get rid of it, one can make an important activity list and then they can divide it into different small parts. To complete these important activities, they make a “to-do list” everyday.  After completing their task, they  can praise themselves. So that they feel motivated. Or they can put their device somewhere far away from them so that it is not easily accessible. And they can start doing things again that they previously enjoyed.

4. Practice Perceiving The Positive Side of a Negative Events  at Everyday
We may face lots of negative events in our life. If we perceive an event positively, then it makes us feel good. For example: If I get hurt by someone's behavior, I may think that he/she didn't really want to hurt me. Maybe he/she can’t understand the behavior. Maybe he/she is going through a negative event. He/she may be upset about something so he has treated me like that. Or my understanding may be wrong. Later I can ask him/her to find out the real facts. He always treated me well. Thus  one can keep  positive perceptions towards any negative event.


5. Preferable Daily Activities Schedule
Some students notice that they can't follow their daily routine. They were motivated enough when they created their new routine. But they couldn't follow this. They made this routine “I have to follow this routine”. In their daily life many unfavorable events happened . For that reason they can't follow their daily routine and become frustrated . If they create or make their routine as “I like to follow this routine” or “I prefer to follow this routine” then if they fail to follow the routine they can say to themselves it's ok to fail. As it is my favorite activity schedule. I can go back again. When he/she can complete their task they can give themselves some rewards or reinforcement with something and congratulate their effort. It can play as a motivator for them.
You can learn a lot, but it is up to you to decide whether you apply that knowledge in real life.


Writer: Md. Abu Tareque, Psychologist, Daffodil International University






References:

Sara G. Miller .2017. When You Eat Can 'Reset' Your Biological Clock, Live Science, June 02,   
         2017.

Alex Therrien .2018). Late risers at increased risk of early death, study finds, BBC News, April     
       12, 2018.


11
মানসিক রোগীকে বিয়ে দিলে, মানসিক রোগ যাবে গঙ্গার জলে !



একজন মা তার সন্তানের মানসিক অসুস্থতা নিয়ে খুব চিন্তিত। ছেলে অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়ছে। ছেলের মুখে বড় বড় স্বপ্নের কথা শুনে তিনিও ছেলেকে নিয়ে অনেক বড় স্বপ্ন দেখেন। ছেলের পড়ালেখা নিয়ে বাবার কোন মাথা ব্যথা নেই।  যত স্বপ্ন তা শুধু মার চোখেই। এই করোনা কালে স্বামীর ব্যবসায় ধস নামে। ছেলের পড়ালেখার খরচ জোগাড় করতে মা নিজেই ব্যবসা শুরু করেন। মা বিশ্বাস করেন যে তার ছেলের এই রোগ একসময় ভাল হবে।  তাই তিনি ঢাকার খুব নামকরা একজন মানসিক ডাক্তারের কাছে ছেলেকে নিয়ে গেলেন।  ডাক্তারকে অনেক কথা  বলার ছিল কিন্তু সময় সল্পতার কারণে তা বলা সম্ভব হয়নি।  ডাক্তার বলেন তার ছেলের বাইপোলার ডিসঅর্ডার (Bipolar Disorder) নামক একটি মানসিক রোগ হয়েছে । বড় বড় স্বপ্ন দেখা এ রোগের একটি লক্ষণ । একথা শুনে মায়ের মন খুব খারাপ হয়। তাহলে কি তার ছেলে এসব স্বপ্ন ওই রোগের কারণে দেখে ! আবার মাঝে মাঝে ছেলে খুব বিষন্ন মনে বসে থাকে। নিজেকে অপদার্থ ভাবে।  মার মধ্যে তখন অপরাধ বোধ কাজ করে এই ভেবে যে, তিনি যদি তার ছেলের সেই  সুন্দর  স্বপ্নগুলোর রসদ কিনে দিতে পারতেন তাহলে তার ছেলে এতদিনে  ভাল কিছু একটা করতে পারত। 

এখন আর ছেলে ভালোভাবে পড়া-লেখাও করতে পারেনা।  মাঝে মাঝে খুব আনন্দিত থাকে আবার মাঝে  মাঝে খুব বিষন্ন। ছেলে মাকে জানিয়ে দিয়েছেন তার কোন মানসিক রোগ নেই। তাই সে আর এসব ঔষধ খাবে না।  রোগের লক্ষণ আরও বেড়ে গেল। চোখের সামনে ছেলের এই অবনতি মায়ের মনকে অস্থির করে তোলে। আত্মীয়-স্বজনরা অনেকেই মাকে পরামর্শ দিলেন যে, তিনি যেন ছেলেকে বিয়ে দিয়ে দেন। বিয়ে দিয়ে এসব মানসিক রোগ ভাল হয়ে যাবে।  বিয়ের পর মানসিক রোগ ভাল হয়েছে, একজন তো এমন  দুই-তিনটি  উদহারণ পেশ করলেন। পরামর্শটা তার ভাল লাগলো না। ছেলের বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত নিতে হলে তিনি খুব চিন্তা করে নিয়ে থাকেন।পরে তিনি ছেলেকে নিয়ে আবার সেই ডাক্তারের কাছে গেলেন। ডাক্তারকে রোগের বর্তমান অবস্থা জানানোর পর তিনি জানতে চাইলেন যে, আমি যদি ছেলেকে বিয়ে দিয়ে দেই তাহলে কি এই রোগ কিছুটা কমে যাবে ? ডাক্তার বললেন যে একটা  গাড়ির ক্ষমতা যত তার থকে বেশি লোড তার উপর দেওয়া হলে সেই গাড়ী কি বেশী দূরের পথ অতিক্রম করতে পারবে? আপনার ছেলের ব্রেইনের মধ্যে থাকা বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান ভারসামহীন অবস্থায় রয়েছে। সেজন্য সে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন আচরণ করে।  কোন গবেষণায় এখন পর্যন্ত প্রমাণিত  হয়নি যে বিয়ে দিয়ে দিলে মানসিক রোগ ভাল হয়। বরং আপনার ছেলের যে রোগ, তাতে তাকে বিয়ে দিলে খুব তাড়াতাড়ি ডিভোর্স হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এমন তথ্য একটি গবেষণায় উঠে এসেছে। বিয়ে দিলে তার অসুস্থতা কমবে না বরং বাড়বে। এই রোগে দীর্ঘদিন ঔষধ খেতে হয় এবং কাউন্সেলিং নিতে হয়। যদি আপনি চিকিৎসা চালিয়ে যেতে পারেন তাহলে আশা করা যায়, আপনার ছেলে তুলনামুলুক দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে। আপনি ধর্য্য ধারণ করে চিকিৎসা করে গেলে একসময় আপনার ছেলে স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে পারবে, চাকরী করতে পারবে, বিয়ে করতে পারবে।  তাই আমি আপনাকে মানুষের কথায় কান না দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি।
মানসিক রোগীকে বিয়ে দিলে তার রোগ ভাল হবে এমন বিশ্বাস আমাদের দেশের অনেকের আছে। মানসিক রোগীকে বিয়ে দেওয়া কোনভাবেই উচিত হবেনা। যেখানে একজন মানসিক রোগী নানান জটিলতার ভিতরে দিয়ে জীবন-যাপন করে, সেখানে তার উপর বিয়ের মত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব চাপিয়ে দেওয়া কতটা সঠিক হবে তা কি একবার ভেবে দেখা যায় ?

লেখক: মোঃ আবু তারেক, সাইকোলজিস্ট, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।






Reference:
Sandeep Grover, Ritu Nehra, and Anita Thakur. 2017. Bipolar affective disorder and its impact on
        various aspects of marital relationship. Link

12
"সব রিপোর্ট নরমাল, রোগ ধরা পড়ছে না" এমন কথা কি আপনিও শুনেছেন?




কেস-১: রোগীর বয়স ৩২। মহিলা। সমস্যা সারা শরীর জ্বালা পোড়া করে। বিশেষ করে রান্না করতে গেলে সমস্যা বেড়ে যায়। মাঝে মধ্যে হঠাৎ করে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান। এখন আর রান্না করতে পারেন না। তাই বাবার বাড়িতে থাকছেন।  স্বামী মিনি ট্রাক ড্রাইভার। ইতিমধ্যে তিনি তাদের মেয়ের ভবিষ্যতের জন্য জমানো ২ লক্ষ টাকা চিকিৎসার পিছনে খরচ করেছেন। মেডিসিন, হার্ট এবং চর্ম রোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা এবং  বিভিন্ন মেডিকেল টেস্ট করেছেন। রোগ ধরা পড়েনি। আর্থিক অসচ্ছলতার জন্য ভারতে চিকিৎসা করতে চাওয়ার ইচ্ছা পূরণ হয়নি । ডাক্তারী চিকিৎসার প্রতি হতাশ হয়ে কবিরাজের কাছেও গিয়েছেন। রোগ ধরা পড়েনি।  সর্বশেষ একজন মেডিসিন ডাক্তারের পরামর্শ অনুসারে ঢাকা মেডিকেলের  মানসিক রোগ বিভাগে আসেন।   

কেস-২: ৭ম শ্রেণীর ফাইনাল পরীক্ষার আগের রাতে ওয়াশরুম থেকে বের হওয়ার সময় জেসি চেতনা হারিয়ে পড়ে যায়। কিছুক্ষণ পর তার চেতনা ফিরে আসে কিন্তু সে আর কথা বলতে পারেনি । সে অনেক চেষ্টা করেছে কিন্তু তার দ্বারা কথা বলা সম্ভব হয়নি। তাড়াতাড়ি করে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ইমার্জেন্সি ওয়ার্ডে  নিয়ে আসা হলে অনেকগুলো টেস্ট করা হয়।  এই ক্ষেত্রেও রিপোর্ট নরমাল। পরে তাকে  মানসিক রোগ বিভাগে রেফার করা হয়।

কেস-৩: মেয়ের বয়স ১৪।  খুব মেধাবী ছাত্রী।  সমস্যা হলো বাম হাত-বাম পা প্রায় অনুভূতিহীন। মাথা  বাম দিকে হেলানো।  মায়ের সাহায্য ছাড়া চলতে পারে না। বিভিন্ন ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ও টেস্ট এর মোটা ফাইল নিয়ে ঢাকা  মেডিকেলের  মানসিক রোগ বিভাগে আসে। এই ক্ষেত্রেও সব রিপোর্ট নরমাল।

উপরের তিনটি কেসের ক্ষেত্রেই রোগী এবং রোগীর অভিভাবক প্রথমে বিশ্বাস করেননি যে লক্ষণগুলো  মানসিক রোগের। কিন্তু তারপরও মানসিক রোগ বিভাগে আসেন, যদি রোগ ভাল হয় তাই। এরকম অনেক কেস আমাদের আশেপাশে আছে যারা নিউরোলজিস্ট , কার্ডিওলজিস্ট , মেডিসিন ডাক্তারের  চেম্বারে ঘুরতে ঘুরতে বিরক্ত। এক ডাক্তারের কাছে রোগ ধরা না পড়লে অন্য ডাক্তার। এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতাল ঘুরে মোটা একটা ফাইল তৈরী করেন। তবুও রোগ ধরা পড়েনা।

উপরের তিনটি কেসে যে রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেয়েছে তার নাম কনভার্সন ডিজঅর্ডার।পূর্বে এই মানসিক রোগ হিস্টেরিয়া  নামে পরিচিত ছিল। DSM-5 অনুসারে এর নাম Conversion Disorder (Functional Neurological Symptom Disorder)। এ রোগের লক্ষণগুলো মূলত শারীরিক বা নিউরোলজিক্যাল লক্ষণ আকারে প্রকাশ পায়।  অর্থাৎ  রোগের লক্ষণগুলো দেখে শারীরিক বা নিউরোলজিক্যাল লক্ষণ মনে হবে  কিন্তু এই রোগের  পিছনে কোন ধরনের শারীরিক কারণ থাকে না। কনভার্সন ডিজঅর্ডার সম্পূর্ণই মানসিক রোগ ।

কনভার্সন ডিজঅর্ডারের সাধারণ লক্ষণগুলো হল: ব্যক্তির শারীরিক দুর্বলতা অথবা  প্যারালাইসিস দেখা দিতে পারে।  কেউ আবার হঠাৎ করে কোন বিশেষ ঘটনার আগে বা পরে  অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। শরীরের কোন অংশে সংবেদনহীনতা অনুভব করতে পারে  বা ব্যথার অনুভূতি অনুপস্থিত থাকতে পারে। ব্যক্তি শরীরের বিভিন্ন অংশে পিন ফুটানোর মত বা সুড়সুড়ির  মত অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারে। কেউ কেউ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সমন্বয় করতে পারে না বা অস্বাভাবিক ভাবে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সঞ্চালন করে অথবা  হাঁটতে পারে না। কারো কারো ঢোক গিলতে সমস্যা হয়। কেউ আবার জোরে  কথা বলতে পারে না। কারো ক্ষেত্রে কথা বলা বন্ধ হতে পারে অথবা কেউ  কথা বলতে সমস্যা বোধ করতে পারে। মুখ বাঁকা হয়ে যেতে পারে । ব্যক্তির শরীরে  খিঁচুনি বা কাঁপুনি থাকতে পারে। কোন কোন ক্ষেত্রে ব্যক্তির  শ্রবণ, দর্শন অথবা  ঘ্রাণ সংবেদন সম্পূর্ণ বা আংশিক  ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। দর্শন সংবেদনের ক্ষেত্রে কারো সংকীর্ণ দৃষ্টি দেখা দিতে পারে যেন তারা একটি নলের মধ্য দিয়ে দৃশ্যবস্তুকে দেখছে। এসব লক্ষণের পিছনে কোন শারীরিক কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। অনেকে মনে করেন যে ব্যক্তি  নিজের  ইচ্ছাই  এসব লক্ষণ সৃষ্টি করছে। যেহেতু কোন মেডিকেল টেস্টে এই রোগ ধরা পড়েনা তাই অনেকেই এটিকে জিন ভুতের প্রভাবে সৃষ্ট রোগ মনে করেন। এই রোগের লক্ষণগুলো আসলে কোন পীড়নমূলুক ঘটনার আগে বা পরে   হঠাৎ করেই শুরু হয়। 

কনভার্সন ডিজঅর্ডার এর লক্ষণ গুলো শারীরিক বা স্নায়ুবিক মনে হলেও আসলে এটি ব্যক্তির মানসিক দ্বন্দ্ব বা মানসিক চাপ থেকে হয়ে থাকে। ব্যক্তি যখন কোন মানসিক চাপ মোকাবিলা করতে পারেনা অথবা কোন দ্বন্দ্ব নিরসনে ব্যর্থ হয় তখন তার মধ্যে এই রোগের লক্ষণগুলো দেখা দেয়। যার ফলে ব্যক্তি সাময়িক ভাবে মানসিক চাপ বা দ্বন্দ্ব থেকে মুক্তি পায়। লক্ষগুলো ব্যক্তির অনিচ্ছায় সৃষ্টি হয়, এবং এর পিছে তার করণীয় কিছুই থাকে না।
উল্লেখ্য যে কনভার্সন ডিজঅর্ডার আছে কিনা তা  নিশ্চিত হওয়ার জন্য প্রথমেই একজনের মেডিকেল টেস্ট করা জরুরি। মেডিকেল রিপোর্ট যদি নরমাল আসে এবং রোগের  লক্ষণগুলো যদি ব্যক্তির ব্যক্তিগত, পারিবারিক, পেশাগত এবং সামাজিক জীবনে অসুবিধার সৃষ্টি করে তাহলে যে কেউ একজন পেশাগত সাইকোলজিস্টের কাছ থেকে কাউন্সেলিং সেবা নিতে পারেন। সাইকোলজিস্টরা সাধারণত কনভার্সন ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত ব্যক্তির  মানসিক চাপ এবং দ্বন্দ্ব গুলো খুঁজে বের করেন এবং তা  নিরসনে ব্যক্তিকে কাউন্সেলিং এবং সাইকোথেরাপির মাধ্যমে সহায়তা করেন। কাউন্সেলিং এবং সাইকোথেরাপির  মাধ্যমে কনভার্সন ডিজঅর্ডার থেকে একজন ব্যক্তি সুম্পূর্ণ আরোগ্য লাভ করতে পারেন। তাই যদি কারো মধ্যে উপরে যে লক্ষণগুলো উল্ল্যেখ করা হয়েছে সেগুলোর কোনটি থাকে এবং বার বার মেডিকেল টেস্টের  রিপোর্ট নরমাল আসে তাহলে রোগটি মানসিক কিনা তা জানার  জন্য কোন মানসিক ডাক্তারের কাছে যাওয়া যেতে পারে।


লেখক: মোঃ আবু তারেক, সাইকোলজিস্ট, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।








References:
Davison, Gerald C., and John M. Neale. 2001. Abnormal psychology. 8th ed. New York: John Wiley &  Sons, Inc.   
        pp: 161-163
American Psychiatric Association. (2013). Diagnostic and statistical manual of mental disorders: DSM-5™ (5th
        ed.). Arlington, VA: Author. pp: 318 -324
অধ্যাপক নীহাররঞ্জন সরকার,ডাঃ তনুজা সরকার (২০১৩),অস্বাভাবিক মনোবিজ্ঞান : মানসিক ব্যাধির লক্ষণ কারণ ও
            আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি, তৃতীয় সংস্করণ ,জ্ঞানকোষ প্রকাশনী, ঢাকা-১১০০, পৃ: ২৭৫-২৭৮

13
মানসিক রোগের ডাক্তার কি একসময় নিজেই মানসিক রোগী হয়?



একথা সত্য যে, মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতায় আমরা এখনো অনেক পিছিয়ে আছি। আবার এদেশে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করে এমন পেশাগত জনবলের যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। ফলে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে এদেশের  জনমানুষের মনে নানা ভ্রান্ত ধারণা থাকাটাই  স্বাভাবিক । তার মধ্যে অন্যতম একটি ভ্রান্ত ধারণা হলো মানসিক রোগের ডাক্তার একসময় নিজেই মানসিক রোগী হয়। অনেক সময় কেউ কেউ একধাপ এগিয়ে মানসিক রোগের ডাক্তারকেই মানসিক রোগী বলতে দ্বিধা করেননা। তাদের  এ কথা বলার পিছনে বিভিন্ন কারণ আছে। এর প্রধান কারণ হলো মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে জ্ঞানের  অভাব।

আমাদের কাছে যখন কোন প্রকৃত বা সঠিক তথ্য থাকেনা, তখন যদি কোন ভুল তথ্য আমাদের সামনে তুলে ধরা হয় তাহলে তা সঠিক বলে মনে হয়। মানসিক রোগের ডাক্তার একসময় নিজেই মানসিক রোগী হয়ে যায় এমন তথ্য আমরা কোথায় পেলাম? এই প্রশ্নের একটি যুক্তিযুক্ত উত্তর হতে পারে  আমাদের বিনোদন মাধ্যম, বিশেষ করে বাংলা সিনেমা এবং নাটক । বিভিন্ন সময় নাটক, সিনেমা বা উপন্যাসে চিত্রায়িত হয় বা হয়েছে যে, মানসিক রোগের ডাক্তাররা চিকিৎসা করতে করতে একসময় নিজেরাই মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। এই ধারণা অনেক পুরনো। যেমন ১৯৫৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত একটি সামাজিক-নাট্যধর্মী ভারতীয় চলচিত্র "দীপ জ্বেলে যাই" এ দেখানো  হয় যে, মানসিক রোগের সেবা প্রদানকারী ব্যক্তি নিজেই একসময় মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়। এছাড়া আমাদের দেশের বিভিন্ন লিখাতে, নাটকে বা সিনেমাতেও এধরণের ঘটনার আঁচ পাওয়া যায়। যেহেতু আমরা মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কম সচেতন তাই বিনোদন মাধ্যম থেকে পাওয়া এসব তথ্য মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে  আমাদের মধ্যে ভ্রান্ত বিশ্বাস স্থাপনের ভূমিকা রাখতে পারে।  বিষয়টি মনোবিজ্ঞানের শিখন তত্ত্ব (Learning Theory) দ্বারা ব্যাখ্যা করা যায়।  নতুন কোন কিছু যদি আমাদের সামনে বারবার উপস্থাপন করা হয় তাহলে বিষয়টির শিখন, দ্রুত ও সহজ হয়। আস্তে আস্তে বিষয়টির উপর বিশ্বাস স্থাপন হয় এবং আমরা সেই তথ্য  দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকি।

আর এধরণের মনোভাব / পূর্বধারণার জন্যই,  মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে যারা কাজ করেন,  মানুষ তাদের আচরণের ভুলভ্রান্তির দিকে একটু বেশিই নজর রাখেন। আর দশজন মানুষের আচার-আচরণের কোন ভ্রান্তি যেখানে লক্ষণীয় নয়, সেখানে ঐ একই আচরণ মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা মানুষের ক্ষেত্রে গুরুতর। উপরের এই দুটি লাইন আমি আমার অভিজ্ঞতার আলোকে লিখেছি। মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা ব্যক্তিও একজন মানুষ একথা আমাদেরকে ভুলে গেলে চলবেনা। যে কোন মানুষেরই  শারীরিক এবং মানসিক অসুস্থতা দেখা দিতেই পারে। যারা মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করেন সাধারণত তাদের মানসিক অসুস্থতার কারণ জানা থাকে। তারা মানুষকে এ বিষয়ে সচেতন করেন। মানুষের অসুস্থ মনের কার্যাবলী  তাদের জানা থাকে এবং তারা মানসিক রোগের চিকিৎসা প্রদান করে থাকেন, যার ফলে তাদের নিজেদের জীবনের মানসিক সংকট সমাধান করা তাদের জন্য অনেকটাই সহজ হয়। 

একথা সত্য যে তারা অনেক মানুষের কষ্টের কথা শুনেন,নিজেরাও কষ্ট পান। অসুস্থ মানুষের জটিলতা দেখেন এবং তাদের চিকিৎসা করেন। এসব কাজের মধ্যে তাদেরও খুব ভালো লাগার একটা বিষয় আছে, আর তা হলো রোগীর / ক্লাইন্টের সুস্থতা এবং তাদের দেওয়া ফিডব্যাক। এটা তাদের জন্য একটা অসাধারণ প্রাপ্তি, অনুপ্রেরণার এবং  প্রশান্তির বিষয়। সাধারণ ডাক্তার যেমন শারীরিকভাবে অসুস্থ হতে পারেন তেমনি মানসিক রোগের ডাক্তারেরও মানসিক অসুস্থতা দেখা দিতে পারে। তবে সমস্যা হ'ল, আমরা যদি তা সব মানসিক ডাক্তারের ক্ষেত্রে সাধারণীকরণ করে ফেলি। আর সেটা করা আমাদের জন্য কতটা সঠিক হবে তা নিয়ে চিন্তা করা যেতে পারে। সেটা কি মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করতে চাওয়া শিক্ষার্থীদের আগ্রহের ক্ষেত্রে কোন নেতিবাচক ভুমিকা রাখতে পারে কিনা, সেটাও ভেবে দেখা যেতে পারে। পরিশেষে বলতে চাই মানসিক রোগের ডাক্তার মানসিক রোগের চিকিৎসা করতে করতে  একসময় নিজেই মানসিক রোগী হয় এই ভ্রান্ত বিশ্বাস থেকে বের হয়ে এসে মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধিতে আমাদের জন্য করণীয় কিছু আছে কিনা তা ভেবে দেখা যেতে পারে। 

লেখক: মোঃ আবু তারেক, সাইকোলজিস্ট, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।









References:

উইকিপিডিয়া,দীপ জ্বেলে যাই
Brenner, A.M., Balon, R., Guerrero, A.P.S. et al. Training as a Psychiatrist When Having
        a Psychiatric Illness. Acad Psychiatry 42, 592–597 (2018).Link
Batya Swift Yasgur.2019.Challenging Stigma: Should Psychiatrists Disclose Their Own
         Mental Illness? Link

14
Positive Self-Talk and Our Body Reaction

                                     

We are the combination of two entities, physical entity and mental entity. It is just like the hardware and the software of a computer. One is valueless without the existence of the other.

When our mind becomes sad for any reason, various neurotransmitters are secreted from our body. The secretion of these neurotransmitters causes various changes in our body. Such as respiratory system, digestive system, nervous system, cardiovascular system, urinary system etc. On the other hand,  if there is an injury in the body, it affects our mind. So we can see, there is a strong relationship between our body and mind. Therefore our thoughts, behavior and productivity depends on the physical and mental condition.
There is a relationship with our personality pattern, problem solving skills, ability to work under  pressure, ability to control emotions to our thought pattern . For example, those who have less ability to work under pressure, he/she may have more negative thoughts. Due to negative thoughts the secretion of  various neurotransmitters are increased. As a result our anxiety, restlessness, and stress increase. After that some changes are found in our behavior. Such as: our morale, confidence, risk-taking behavior, interest in work, etc decrease. So if we think positively about something, then we will have a positive feeling in our mind. As a result our mental energy will increase. On the other hand, if the level of  neurotransmitters changes in our  body due to negative thoughts, it will create negative feelings. As a result our behavior changes and  decreases our productivity. All occur one after another.
We may fall into a bad situation at any time. Sometimes negative events can happen to us just like in the past. It is normal in human life. But we can think positively during unfavorable situations or time so that it is easy for us to be patient at that time and we can do something productively.
We can try to practice positive self-talk. Let's look at some examples of positive thoughts. We can think "one day everything will be fine" instead of  "Nothing is good to me" .We can think "I am worthy  " instead of " I am worthless  ".We can think "This time will pass  " instead of " Time will never change ".We can think " I am strong enough" instead of " I am weak ".We can think " I will not stop trying  "instead of "I will not try again  ".We can think " Best is yet to come  " instead of" Things are never good ".We can think " I can do this  " instead of " I can't do this  ".We can think " I am sufficient " instead of "I am not sufficient  ".We can think " Whoops I made a mistake  "instead of " I am so dumb". We can think " I like me" instead of " No one likes me ". We can think " I did something bad  " instead of " I am a bad person ".We can think " This is really hard, but I am going to keep trying " instead of "I give up. I will never be able to do this  ".We can think " I have not figured it out yet  " instead of "I never get anything right  ". If we think, the positive side of anything from now, we will get the benefit of positive thought. I know, practice makes a man perfect. I believe also, you have the capability to practice positive self-talk.


Writer: Md. Abu Tareque, Psychologist, Daffodil International University.






References:
Arthur E. Jongsma Jr.2006. Adult Psychotherapy Homework Planner: 2nd (second Edition), New
       York: John Wiley & sons, Inc. pp: 119-120
Robert S. Feldman. 2011. Understanding Psychology. 9th Edition. McGraw-Hill Education,pp: 61-78


Pages: [1] 2