Show Posts

This section allows you to view all posts made by this member. Note that you can only see posts made in areas you currently have access to.


Topics - Fahmida Afrin

Pages: [1] 2
1
বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে স্নাতকে যাঁরা গবেষণা করছেন, গবেষণাপত্র প্রকাশ করছেন, তাঁদের বিদেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ অনেক বেশি। বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্র, প্রবন্ধ, পোস্টার উপস্থাপনকে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের নামীদামি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে গবেষণার অভিজ্ঞতা বিদেশে স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনে ভর্তির ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়ে দেয়। দেশে গবেষণার অভিজ্ঞতা থাকলে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ক্ষেত্রে অনুদান, ফেলোশিপ, অ্যাসিস্ট্যান্সি, বৃত্তির মাধ্যমে আর্থিক সহযোগিতা পাওয়ার সুযোগ থাকে।

গবেষণা শুধু উচ্চশিক্ষার সুযোগকে বিস্তৃত করে না, ভবিষ্যতের কর্মবাজারেও দারুণ কার্যকর। যে বিষয়ে গবেষণা করছেন, সে বিষয় নিয়ে কাজ করা কোনো না কোনো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান আপনার কর্মস্থল হতে পারে। গবেষণারত অবস্থায় অনেক প্রযুক্তিগত ও বৈজ্ঞানিক গবেষণাগারে কাজের সুযোগ পান গবেষকেরা। গবেষণাকালীন সময়ে বিভিন্ন দেশে পেপার উপস্থাপন ও কনফারেন্সে অংশগ্রহণের সুযোগ থাকে।

যাঁরা ভবিষ্যতে শুধু শিক্ষক বা গবেষক হতে চান, তাঁদের জন্যই শুধু গবেষণা নয়, গবেষণা আসলে উচ্চশিক্ষার একটি অংশ। স্নাতক-স্নাতকোত্তর পর্যায়ে গবেষণায় আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বেশি জোর দেওয়া প্রয়োজন।

২.

সাইফুল ইসলাম
পিএইচডি গবেষক, কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়, অস্ট্রেলিয়া
গবেষণার কাজ কোন সময়ে শুরু করা উচিত?

আমাদের দেশে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই স্নাতক পর্যায়ে গবেষণার দিকে তেমন মনোযোগী নন। কিন্তু গবেষণা নিয়ে ভাবনা আসলে বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের শুরু থেকেই করা উচিত। যে বিষয়েই পড়ুন না কেন, প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষ থেকেই ভবিষ্যতে কোন বিষয়ে গবেষণা করতে চান, তা খুঁজতে থাকুন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষ গবেষণার মনন বিকাশের দারুণ সময়। হুট করে তো একদিন গবেষক হয়ে ওঠা যায় না, তাই এই সময়কে গোছানোর জন্য কাজে লাগানো প্রয়োজন। স্নাতকোত্তর পর্যায়ে অনেকে তাড়াহুড়া করে গবেষণা শুরু করেন। তখন একটু বেশি চাপ হয়ে যায়। যত আগে শুরু করা যায়, যত আগে গবেষণার কৌশল সম্পর্কে শেখা যায়, আর্টিকেল লেখার চর্চা করা যায়, ততই নিজেকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ থাকে। বিভিন্ন জার্নাল পেপারে আর্টিকেল জমা দেওয়ার নিয়ম জানতে হবে। বিভিন্ন সেমিনার ও সম্মেলনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে কোন কোন ক্ষেত্রে নিজেকে গবেষক হিসেবে তৈরি করবেন, তা জানার সুযোগ আছে। যে বিষয়ে গবেষণা করতে চান, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ইমেইলে যোগাযোগের চেষ্টা করতে পারেন। গবেষক হিসেবে নেটওয়ার্ক গড়ে তোলাও জরুরি।

শরিফা সুলতানা
পিএইচডি ইন ইনফরমেশন সায়েন্স, কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাষ্ট্র
কীভাবে বেছে নেব গবেষণার বিষয়?

গবেষণার দুনিয়া অনেক বড়, উন্মুক্ত। নানা বিষয়ে গবেষণার সুযোগ আছে। যাঁরা গবেষণার অ আ ক খ মোটামুটি জানেন, তাঁদের জন্য পুরো প্রক্রিয়া বোঝা সহজ। যে বিষয়ে পড়ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে, তা নিয়ে যেমন গবেষণার সুযোগ আছে, তেমনি নিত্যনতুন অসংখ্য বিষয় আছে। আমি যেমন মানুষ ও কম্পিউটারে মিথস্ক্রিয়া ও ডিজিটাল সিগন্যাল প্রসেসের মতো বিষয় নিয়ে গবেষণা করছি। নিজের বিষয়ের বাইরেও আমাকে জানতে হচ্ছে, শিখতে হচ্ছে। প্রকৌশলের শিক্ষার্থী হওয়া সত্ত্বেও কবিরাজি চিকিৎসা নিয়ে আমার একটি গবেষণাপত্র ২০১৯ সালে প্রকাশিত হয়।

গবেষণার ক্ষেত্রে আসলে নিজের পছন্দের বিষয়কে যেমন গুরুত্ব দিতে হয়, তেমনি যে বিষয় নিয়ে কাজের সুযোগ আছে, তা ভাবা জরুরি। প্রকৌশল কিংবা জীববিজ্ঞানের কোনো বিষয়ে পড়েও সামাজিক বিজ্ঞানের সঙ্গে সম্পৃক্ত কোনো গবেষণাপত্র তৈরি করতে পারেন। স্নাতকে যে বিষয়ে পড়ছেন, বা যে কোর্সে আগ্রহ তৈরি হয়েছে, তা নিয়েই শুরু করুন। ধীরে ধীরে জানার দুনিয়া বড় করতে হবে, গবেষণাকে বিস্তৃত করতে হবে। গবেষণায় তাত্ত্বিক পড়াশোনার দিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। বিভিন্ন গবেষণা কৌশল, তথ্য বিশ্লেষণ, তথ্য সংগ্রহের মতো বিষয় সম্পর্কে জানতে হবে। ধীরে ধীরে আপনার গবেষণার বিষয় ও আগ্রহ সম্পর্কে জেনে যাবেন।

৪.

আলিয়া নাহিদ
প্রধান, ইনিশিয়েটিভ ফর নন কমিউনিকেবল ডিজিজেস, আইসিডিডিআরবি ও ক্লিনিক্যাল রিসার্চ প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ
একজন গবেষকের মধ্যে কী কী দক্ষতা বা গুণ থাকা উচিত?

আগ্রহ আর ধৈর্যশক্তির জোরে যেকোনো শিক্ষার্থীই গবেষক হয়ে উঠতে পারেন। বুদ্ধিমত্তা ও কৌতূহল গবেষক হওয়ার জন্য ভীষণ জরুরি। অন্যদের সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ, নেতৃত্বদান, অন্য গবেষকের অধীনে কিংবা দলের সঙ্গে কাজ করার কৌশল আয়ত্ত করতে হবে। নিজেকে যেমন বুঝতে হবে, তেমনি নিজের যোগ্যতাকে বিকাশে সময় দিতে হবে। তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের সক্ষমতা থাকতে হবে।

গবেষণায় শেষ বলে কিছু নেই, তাই সব সময় পর্যবেক্ষণ মনোভাবে থাকতে হবে। অনুসন্ধিৎসু হতে হবে।

গবেষকদের আরেকটি গুণ থাকা ভীষণ জরুরি—তা হচ্ছে সততা ও নৈতিকতা। মানসিকভাবে সৎ ও নৈতিক হওয়া প্রত্যেক গবেষকের জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি কাজের ক্ষেত্রেও নৈতিক থাকতে হবে। গবেষক হিসেবে গবেষণা নিয়ে অনেক সমালোচনা কিংবা নেতিবাচক ফল আসতে পারে, তাই বলে হাল ছেড়ে দিলে চলবে না।

শিক্ষক ও বিশেষজ্ঞ পেশাজীবীদের সঙ্গে গবেষণার সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। বর্তমান সময়ে গবেষণার ক্ষেত্রে যেসব টুলস বা প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়, যেমন এসপিএসএস, ম্যাটল্যাব—এগুলোর ব্যবহার শিখতে হবে।

৫.

নিগার সুলতানা
পিএইচডি, ওয়াটারলু বিশ্ববিদ্যালয়, কানাডা
গবেষণার মাঝপথে এসে থমকে গেলে কী করব?

গবেষণা অনেক সময়ের বিষয়। হুট করে শুরু করা যায় না। তবে বাস্তবতার কারণে গবেষণায় বাধা আসতেই পারে, থেমে যেতে হতে পারে। গবেষণায় হয়তো ফান্ড কমে গেল কিংবা বন্ধ হয়ে গেল। হয়তো
গবেষণা করছেন, কিন্তু ফল পাচ্ছেন না। গবেষণা তত্ত্বাবধায়ক, সহগবেষকদের সঙ্গে অনেক বিষয়ে তর্ক ও বিতর্কের অবকাশ থাকে।

একজন গবেষককে সব পরিস্থিতির জন্য তৈরি থাকতে হবে। প্রয়োজনে সুপারভাইজার ও অন্যান্য গবেষকদের সহায়তা নিতে হবে। গবেষণা আসলে প্রকল্প ব্যবস্থাপনা। কাজটাকে ছোট ছোট ভাগ করে নিতে হবে। অনেকেই গবেষণা শুরুর পরে হাল ছেড়ে দেন। তরুণ গবেষকদের মধ্যে এই প্রবণতা খুব বেশি। প্রয়োজনে শিক্ষক ও মনোবিদদের পরামর্শ নিতে হবে।

গবেষক হিসেবে আপনার জীবনের চাপ অন্যরা গুরুত্ব না–ও দিতে পারে। এ ক্ষেত্রে নিজের স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখা জরুরি। প্রয়োজনে একটু বিরতির পর আবার জেদ নিয়ে ফিরে আসুন। কাজে আগ্রহ হারিয়ে ফেলা তরুণ গবেষকদের সাধারণ সংকট বলা যায়। এ ক্ষেত্রে জীবনের অন্যান্য বিষয় আর শখকেও গুরুত্ব দিতে হবে। গবেষণাকাজ ও জীবনের মধ্যে ‘সামঞ্জস্য’ এনে নিজেকে উজ্জীবিত করতে হবে।
Source : https://www.prothomalo.com/education/article/1633959/%E0%A6%97%E0%A6%AC%E0%A7%87%E0%A6%B7%E0%A6%A3%E0%A6%BE-%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A7%9F%E0%A7%87-%E0%A7%AB-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%B6%E0%A7%8D%E0%A6%A8?fbclid=IwAR3Ae5jEKPBy7fedC2cSyeMtgd6f66rDeHTIhnaqnoC6ZoV2gV7ldrjdm8s

2
© Ragib Hasan

বাবা ছিলেন কবি, যেন তেন কবি নন, ইংরেজি সাহিত্যের সবচেয়ে নামকরা কবিদের একজন। জন্ম থেকে কেটেছে ভিক্টোরিয়ান ইংল্যান্ডের অভিজাত সমাজে। বিয়ের পরে পেয়েছেন কাউন্টেস উপাধি। আরাম আয়েসে কাটাতে পারতেন জীবন অনায়াসে। কিন্তু প্রথাগত জীবনের বন্ধন ছিন্ন করে এই নারী হয়েছিলেন গণিতে সুদক্ষ, আর শুধু তাই না, তাঁকে বলা হয় বিশ্বের প্রথম কম্পিউটার প্রোগ্রামার।

কে তিনি?

ইনি হলেন অগাস্টা অ্যাডা লাভলেস (Augusta Ada Lovelace), মহাকবি লর্ড বায়রনের কন্যা। উনবিংশ শতকে চার্লস ব্যাবেজের অত্যাশ্চার্য গণনাযন্ত্র অ্যানালিটিকাল ইঞ্জিনের জন্য তিনি লিখেছিলেন প্রথম কম্পিউটার প্রোগ্রাম।

অ্যাডার জন্মের সময়কার নাম অগাস্টা বায়রন। জন্ম হয় ১৮১৫ সালের ১০ই ডিসেম্বরে। বাবা কবি লর্ড বায়রন আদর করে নাম দিয়েছিলেন অ্যাডা। তবে জন্মের চার মাস পরেই অ্যাডার বাবা লর্ড বায়রন চিরতরে অ্যাডা ও তার মাকে ছেড়ে চলে যান বিদেশে। ছন্নছাড়া জীবনে অভ্যস্ত বায়রন ইউরোপের নানা জায়গা ভ্রমণের এক পর্যায়ে গ্রীসের স্বাধীনতা যুদ্ধে গ্রিকদের পক্ষ নিয়ে যোগ দেন। তুরস্কের সাথে গ্রিকরা লড়ছিল স্বাধীনতা অর্জনের জন্য। সেই যুদ্ধের সময়ই বায়রন জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা যান, অ্যাডার বয়স তখন ৮ বছর। অ্যাডা তাই জন্মাবধি বড় হয়েছেন মায়ের সাথে, নানার বাড়িতে।

শৈশব থেকেই অ্যাডা ভেঙে চলেছেন প্রথাগত জীবন। গণিতের প্রেমে পড়ে যান খুব অল্প বয়সে। অর্জন করেন দক্ষতা। বার বছর বয়সে মাথায় ভুত চেপেছিল আকাশে উড়বেন। কিন্তু সেটা কল্পনা করেই থেমে থাকেননি। ওড়ার জন্য ধাপে ধাপে কী করতে হবে, তাও ভেবেছিলেন, পাখিদের ওড়ার পদ্ধতি বিশ্লেষণ করে পরিকল্পনা করেছিলেন কীভাবে উড়তে হবে। তবে অসুস্থতার কারণে শেষ ধাপে আর যাননি। ১৭ বছর বয়সেই নাম ডাক ছড়িয়ে যায় সুতীক্ষ্ণ বুদ্ধিমত্ত্বা আর প্রতিভার জন্য।২১ বছর বয়সে লাভলেসের আর্ল উইলিয়াম কিং-কে বিয়ে করার পরে কাউন্টেস লাভলেস খেতাব পান অ্যাডা।কিন্তু পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন। সে আমলের প্রখ্যাত গণিতবিদ ডি মরগ্যান ছিলেন অ্যাডার শিক্ষক। ছাত্রীর মাঝে প্রতিভার আভাস দেখে ডি মরগ্যান অ্যাডার মা-কে লিখেছিলেন, এই মেয়েটা চাইলে বিশ্বসেরা গণিতবিদ হতে পারবে। অ্যাডা অবশ্য গণিতের নিরস খটোমটো বিষয়গুলো পছন্দ করতেন না, বরং গণিতের সাথে শিল্প, সাহিত্য, জীবনের সম্পর্ক খুঁজে পেতেন, খুঁজে বের করার চেষ্টা করতেন।

অ্যাডার জীবনের মোড় ঘুরে যায় চার্লস ব্যাবেজ এর সাথে পরিচয় হবার পরে। চার্লস ব্যাবেজ ছিলেন উনিশ শতকের এক গণিতজ্ঞ ও বিজ্ঞানী, যাঁর জীবনের মূল লক্ষ্য ছিলো গণকযন্ত্র বা কম্পিউটার বানানো, যা স্বয়ংক্রিয় ভাবে গণিতের নানা সমস্যার সমাধান করতে পারবে। এজন্য বহু বছর ধরে কাজ করে তিনি বানিয়েছিলেন ডিফারেন্স ইঞ্জিন। সেই উনিশ শতকে ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ আদৌ ছিলো না, সেগুলো আবিষ্কৃত হবে আরো এক শ বছর পরে। ব্যাবেজের সেই কম্পিউটার বানানো হয়েছিলো গিয়ার চাকা, আর অন্যান্য যন্ত্রাংশ দিয়ে। লক্ষ্য ছিলো সেটা দিয়ে হিসাব নিকাশ করা, অনেকটা আধুনিক কালের ক্যালকুলেটর এর মতো।

ব্যাবেজের এই যন্ত্র দেখে অভিভূত হয়ে গেলেন অ্যাডা।ব্যাবেজ তখন কাজ করছেন তাঁর নতুন প্রজেক্ট -- অ্যানালিটিকাল ইঞ্জিনের উপরে। এটা দিয়ে আরো জটিল গণনার কাজ করা যাবে, সেটাই লক্ষ্য। অ্যাডা ব্যাবেজকে তাঁর গণিতের প্রতিভা দিয়ে মুগ্ধ করলেন। দুজনে মিলে কাজ করতে থাকলেন এই যন্ত্রের উপরে।

ব্যাবেজ ভাবতেন তাঁর গণনা যন্ত্র দিয়ে কেবল জটিল গণনার কাজই করা যাবে। কিন্তু অ্যাডার মনে এলো অন্য চিন্তা। তিনি ভাবলেন, কোনো গণনার কাজ কীভাবে করতে হবে, সেই ধাপগুলো এই যন্ত্রকে শেখাতে পারলে সে নিজেই অনেক সমস্যার সমাধান করতে পারবে। তুলনা হিসাবে বলা চলে ক্যালকুলেটর আর ডেস্কটপ কম্পিউটারের পার্থক্য -- ক্যালকুলেটর দিয়ে হিসাব করতে হলে প্রতিটা ধাপে কী করতে হবে হাতে ধরে ধরে সেটা করা লাগে। কিন্তু কম্পিউটারে প্রোগ্রাম/সফটওয়ার লিখে দিলে সেটা জটিল সমস্যা নানা ধাপে সমাধান করতে পারে। আশ্চর্য ব্যাপার হলো, আধুনিক কম্পিউটার আবিষ্কারের ১০০ বছরেরও বেশি আগে অ্যাডার মাথায় এই ব্যাপারটা এসেছিলো। তিনি লিখেছিলেন,

[The Analytical Engine] might act upon other things besides number, were objects found whose mutual fundamental relations could be expressed by those of the abstract science of operations, and which should be also susceptible of adaptations to the action of the operating notation and mechanism of the engine...Supposing, for instance, that the fundamental relations of pitched sounds in the science of harmony and of musical composition were susceptible of such expression and adaptations, the engine might compose elaborate and scientific pieces of music of any degree of complexity or extent

"অর্থাৎ অ্যানালিটিকাল ইঞ্জিন দিয়ে সংখ্যা ছাড়াও অন্য অনেক কিছুর উপরে কাজ করা যেতে পারে। যেসব কাজকে ধাপে ধাপে করা যায়, সেগুলো যদি এই যন্ত্রকে শিখিয়ে দেয়া যায়, তাহলে অনেক কিছু সম্ভব। যেমন, সঙ্গীত ও ছন্দ/তাল এসব যদি শেখানো যায়, তাহলে অ্যানালিটিকাল ইঞ্জিন দিয়ে নানা রকমের যন্ত্রসঙ্গীতও বানানো সম্ভব।"

ভাবুন, এখনকার যুগে কম্পিউটার দিয়ে বানানো মিউজিকের কথা পৌনে দুইশ বছর আগে অ্যাডা বলে গিয়েছিলেন।

শুধু কি বলেই ক্ষান্ত দিবেন অ্যাডা? ব্যাবেজের কাজের উপরে ইতালীয় এক গণিতবিদের লেখা গবেষণাপত্র অনুবাদের সময়ে তিনি লিখে বসেন বিশ্বের প্রথম কম্পিউটার প্রোগ্রাম। এটা দিয়ে বারনৌলি সংখ্যা ধারার সংখ্যাগুলো বের করা যেত।

অ্যাডা হয়তো আরো অনেক কিছু করতেন ব্যাবেজের সাথে। কিন্তু অর্থাভাবে আর প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে ব্যাবেজের অ্যানালিটিকাল ইঞ্জিন সেই সময়ে আর তৈরী করা সম্ভব হয়নি। ১৮৫২ সালে মাত্র ৩৬ বছর বয়সে ক্যান্সারে অ্যাডার জীবনাবসান ঘটে। কিন্তু একশ বছর পরে যখন ইলেকট্রনিক কম্পিউটার তৈরী করা হয়, তখন সবাই মনে রেখেছিলো বিশ্বের প্রথম এই প্রোগ্রামারের কথা। মার্কিন সেনাবাহিনী যখন তাদের কম্পিউটারের জন্য নতুন একটি ভাষা তৈরী করে ১৯৮০ সালে, তার নাম দেয়া হয় Ada। আর প্রতিবছর অক্টোবরের ২য় মঙ্গলবারে অ্যাডার জন্মদিনের সম্মানে পালিত হয় অ্যাডা লাভলেস দিবস, যখন বিজ্ঞান প্রযুক্তি গণিত ও কম্পিউটিং এর জগতে নারীদের অবদানকে স্মরণ করা হয় বিশ্বজুড়ে।

কবি বায়রনের ছোট্ট মেয়েটি তাই কম্পিউটার বিজ্ঞানের জগতে থাকবেন হয়ে চিরস্মরণীয়, আর হবেন বহু কিশোরী আর তরুণীর রোল মডেল হিসাবে -- প্রথম নারী কম্পিউটার প্রোগ্রামারই নন, বরং প্রথম প্রোগ্রামার হিসাবেও। যুগে যুগে অ্যাডাকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে আরো অনেক কিশোরী, তরুণী, নারী এগিয়ে যাবে, অ্যাডার কাজের সার্থকতা সেখানেই।

(এই লেখাটি আমার বিজ্ঞানীদের কাণ্ড কারখানা - Bigganider Kando Karkhana বইয়ের ২য় খণ্ড থেকে নেয়া। নতুন ১৬টি গল্প নিয়ে এবছরের বইমেলাতে বইটার ৩য় খণ্ড বের হচ্ছে -- নজর রাখুন Adarsha আদর্শ প্রকাশনীর ৪২১-৪২৪ নং স্টলে।)

#বিজ্ঞানীদেরকাণ্ডকারখানা

3
© Ragib Hasan

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর যাই হোক না কেনো, একটা দিক থেকে বিশ্বে প্রথম সারিতে, তা হলো এখানকার উচ্চতর শিক্ষা ব্যবস্থা। মার্কিন গ্র্যাজুয়েট পর্যায়ের শিক্ষাব্যবস্থা (অর্থাৎ পিএইচডি বা মাস্টার্স) বেশ সমৃদ্ধ, এবং শিক্ষার্থীদের যথেষ্ট খাটতে, পড়তে, লিখতে, ও উপস্থাপন করতে হয়। অন্যান্য অনেক দেশে যেমন কোর্সওয়ার্ক ছাড়াই সরাসরি ৩ বছরে পিএইচডি ডিগ্রি দিয়ে দেয়া হয়, এখানে তা নয়, বরং শুরুতে ২ থেকে ৩ বছরে নানা উচ্চতর কোর্স করার পরে বাকি ৩ বছর গবেষণা করলে তবেই পিএইচডি ডিগ্রি মেলে। আবার এই কারণে ব্যাচেলরস বা স্নাতক ডিগ্রির পরে মাস্টার্স না করেই সরাসরি অধিকাংশ পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তি হওয়া যায় ফান্ডিংসহ। তাই মার্কিন উচ্চতর শিক্ষা সারাবিশ্বের শিক্ষার্থীদের কাছে বেশ কাংক্ষিত।

এদেশের উচ্চতর পর্যায়ে অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীই বিদেশী, অন্তত প্রকৌশল ও বিজ্ঞান ক্ষেত্রে। আমার পিএইচডির বিশ্ববিদ্যালয় (ইউনিভার্সিটি অফ ইলিনয় অ্যাট আরবানা শ্যাম্পেইন এর কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগে) ৪০০ গ্র্যাজুয়েট ছাত্রের মধ্যে সম্ভবত ৩৫০ এর বেশি ছিলো বিদেশী। এদের মধ্যে চীনাদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি হয়। জনসংখ্যার হিসেবে বাংলাদেশ থেকে বরং অনেক কমই আসে এদেশে উচ্চতর পর্যায়ে। আরো অদ্ভুত হল প্রতিবেশী দেশ নেপাল থেকে জনসংখ্যার অনুপাতে বাংলাদেশের চাইতে অনেক বেশি ছাত্রছাত্রী আমেরিকায় পড়তে আসে।

শিক্ষাখাতে মার্কিন সরকার খরচও করে বিপুল পরিমাণ। উদাহরণ দেই, আমার পিএইচডির বিশ্ববিদ্যালয় (UIUC) এর পিএইচডি পর্যায়ের ছাত্রদের মধ্যে এমন কাউকে দেখিনি, যে পূর্ণ ফান্ডিং পায়নি। সবাইই হয় গবেষনা সহকারী, বা শিক্ষা সহকারী হিসেবে ফান্ড পায়। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে এই হারটা একটু কম, কিন্তু তার পরেও অধিকাংশই ফান্ড পেয়ে থাকে।

~~~ ভর্তি প্রক্রিয়া ~~~

এবার দেখা যাক, এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রক্রিয়াটা কীরকম --

** আবেদন-

ভর্তির মৌসুম শুরু হয় সাধারণত নভেম্বর থেকে, আবেদন নেয়া হয় ডিসেম্বরের মাঝামাঝি বা জানুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত।

অধিকাংশ জায়গাতেই যা যা লাগে তা হলো

- স্টেটমেন্ট অফ পারপাস (একটা রচনা)
- ২ বা ৩টি রেকমেন্ডেশন লেটার বা সুপারিশপত্র
- টোফেল স্কোর / বা ক্ষেত্রবিশেষে IELTS স্কোরও গ্রহণযোগ্য
- (অনেক ক্ষেত্রেই) জিআরই স্কোর
- (কোনো কোনো ক্ষেত্রে) সাবজেক্ট জিআরই স্কোর

** স্টেটমেন্ট অফ পারপাস (আমি কী হনুরে, কেনো এখানে আসবো রে, ইত্যাদি)

স্টেটমেন্ট অফ পারপাস হলো মোটামুটি ২ পৃষ্ঠার একটি রচনা, যাতে লিখতে হয় নিজের সম্পর্কে, কেনো এই বিষয়ে আগ্রহ, কেনো এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আগ্রহ, ইত্যাদি বিষয় নিয়ে। ভর্তির ক্ষেত্রে এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিষ। এটা খুব সাবধানে লেখা দরকার, বেশ সময় নিয়ে হলেও। অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা অন্যদের থেকে বা নেট থেকে জোগাড় করা রচনা নিজের নামে চালিয়ে দেয়, যা ধরতে পারা যায় খুব সহজেই।

** "আমার দেখা সেরা ছাত্র"

রেকমেন্ডেশন লেটার বা সুপারিশপত্র নিতে হয় শিক্ষকদের কাছ থেকে। দুঃখজনক ব্যাপার হলো, আমাদের দেশে শিক্ষকেরা চিঠিগুলো লেখেন না, সাধারণত ছাত্রকেই লিখে আনতে হয় নিজের রেকমেন্ডেশন, আর শিক্ষকেরা কেবল তা সই করে দেন। মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিপ্রক্রিয়ার সাথে জড়িত অনেকের সাথে কথা বলে দেখেছি, তারা এই ব্যাপারটি জানেন ভালোই। তাই ভারতীয় উপমহাদেশের দেশগুলো হতে আসা রেকমেন্ডেশন তারা খুব একটা পাত্তা দেন না। অনেক ক্ষেত্রেই "এই ছাত্র আমার দেখা সেরা ছাত্র"-টাইপের লেখা একই শিক্ষক একই বছরে একাধিক ছাত্রকে লিখে দেন, তাতে বোঝা যায়, কপিপেস্ট চিঠিতে সই করেছেন মাত্র।

** টেস্ট স্কোর

টোফেল বা জিআরই স্কোর মূলত ব্যবহার করা হয় আবেদনকারীদের প্রাথমিক বাছাইয়ে, স্কোরের নিম্নসীমা দিয়ে অনেক আবেদনকারীকে শুরুতেই বাদ দেয়া হয়। এটা একেক বিশ্ববিদ্যালয়ে একেক রকম। অনেক জায়গায় বলে দেয়া থাকে কতো স্কোর লাগবে। আবার অনেক জায়গাতে জিআরই স্কোর দেয়া লাগে না।

কিছু কিছু বিষয়, যেমন কম্পিউটার বিজ্ঞানে বিষয়ভিত্তিক জিআরই স্কোর চাওয়া হয়। খেয়াল রাখতে হবে, এই স্কোরটি কি রেকমেন্ডেড নাকি রিকোয়ার্ড। রেকমেন্ডেড মানে "দিলে ভালো" , আর রিকোয়ার্ড মানে দিতেই হবে।

------

~~~ বাছাই ~~~

যাহোক, আবেদন করার পর শুরুতে অনেক ক্ষেত্রেই সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির সাথে সম্পৃক্ত অফিস সহকারীরা টোফেল বা জিআরই-র কাঁচি চালিয়ে কিছু আবেদনপত্র কমিয়ে ফেলে। তার পর যা বাকি থাকে সেগুলো যায় ভর্তি কমিটির কাছে। ভর্তি কমিটিতে সাধারণত থাকে অধ্যাপকেরা, আর অনেক সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের কয়েকজন প্রতিনিধিও থাকে। শিক্ষকেরা প্রধানত স্টেটমেন্ট অফ পারপাস নামের রচনাটি দেখে বোঝার চেষ্টা করেন এই ছাত্রটি কেমন হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রেই আবেদনপত্রগুলোকে ৩ ভাগে ভাগ করা হয় শিক্ষকদের মূল্যায়নের ভিত্তিতে, (১) হ্যাঁ (২) না (৩) দেখা যাক।

হ্যাঁ গ্রুপে যারা আছে, তাদেরকে শুরুতেই ভর্তি ও ফান্ডিং এর প্রস্তাব পাঠানো হয়। ভালো ছাত্রদের টেনে আনার জন্য অনেক সময় বিশ্ববিদ্যালয় প্লেন ভাড়া/হোটেল ভাড়া দিয়ে এসব ছাত্রদের বেড়াতে নিয়ে আসে বিশ্ববিদ্যালয়ে। (আমার সাবেক গ্রুপের এক ছাত্রকে জাপান থেকে এনেছিলো)। ছাত্ররাও এসময় মুফতে একাধিক জায়গায় ঘুরে বেড়ায়, অধ্যাপক ও পুরানো ছাত্রদের সাথে কথা বলে, তার পর সিদ্ধান্ত নেয় কোথায় ভর্তি হলে। এটা অনেক সময় ফেব্রুয়ারি মাসেই জানানো হয়।

প্রথম দফায় যাদের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে, তারা কেউ কেউ রাজী না হলে ২য় দফায় ভর্তির প্রস্তাব দেয়া হয়। এই দফার প্রস্তাব আসে অনেক সময় মার্চ বা এপ্রিলে।

মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অলিখিত চুক্তি অনুসারে ফান্ডিং সহ ভর্তির প্রস্তাব গ্রহন করলে এপ্রিল মাসের ১৫ তারিখের মধ্যেই লিখিত কমিটমেন্ট দিতে হয়। ১৫ তারিখ পেরিয়ে গেলে আর ভর্তির সিদ্ধান্ত পালটানো যায় না।

~~~ পরামর্শ ~~~

১) স্টেটমেন্ট অফ পারপাস ভালো করে লিখুন। হুট করে লিখবেন না। মাস খানেক সময় নিয়ে ভালো করে লিখুন। নেট থেকে বা বড় ভাইদের থেকে নেয়া "চোথা" ব্যবহার করবেন না। ওগুলো ভর্তি কমিটির লোকজন দেখলেই চিনতে পারে।

২) রেকমেন্ডেশন লেটার ভালো করে লিখতে বলুন শিক্ষককে। তাতে আপনি ঐ শিক্ষকের ক্লাসে/কোর্সে কেমন করেছেন, আপনি নিজের উদ্যোগে কাজ করতে পারেন, এই রকমের কথা লিখতে বলুন।

৩) টেস্টগুলো ছাত্রাবস্থাতেই দিয়ে ফেলুন। ছাত্রাবস্থা শেষ করে চাকুরিরত অবস্থায় টেস্ট দেয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে।

[এই সিরিজে আমার অনেক লেখা ফেইসবুকে আছে। নিচের হ্যাশট্যাগ দিয়ে আমার ওয়াল ঘাঁটলে পেয়ে যাবেন।]

[শেয়ার করলে দয়া করে "সংগৃহীত" না লিখে আমার নামটি উল্লেখ করলে বাধিত হব।]

#আমেরিকায়উচ্চশিক্ষা

4
© Ragib Hasan

আমেরিকায় পিএইচডিতে ভর্তি হওয়ার নানা ব্যাপার নিয়ে লিখেছি। কিন্তু পিএইচডি প্রোগ্রামটি কীভাবে চলে, কী কী করতে হয় ইউনিভার্সিটিতে আসার পরে, সেটা নিয়ে বলা হয়নি। পিএইচডিতে আবেদনের আগে এই সব বিষয়ে আসলে সবার ধারণা থাকে না। তাই আজকের লেখায় চেষ্টা করব পিএইচডি প্রোগ্রামের নানা ধাপ ও প্রক্রিয়া নিয়ে।

পিএইচডি প্রোগ্রামের উপরে খুব ভাল একটা কথা সেদিন কোথায় যেন দেখলাম -- পিএইচডি প্রোগ্রামের ফলাফল বা প্রডাক্ট আসলে শিক্ষার্থীর থিসিস না, আসল প্রডাক্ট হল শিক্ষার্থী নিজেই। অর্থাৎ এই পিএইচডি করতে গিয়ে যে প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়, তার মাধ্যমে একজন স্কলার বা পণ্ডিত ব্যক্তিকে প্রস্তুত করা হয়।

১) কোর্সওয়ার্ক

অন্য অনেক দেশের পিএইচডি প্রোগ্রামের সাথে আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি প্রোগ্রামের বড় পার্থক্য হল কোর্সওয়ার্ক। শুরুতেই অনেক কোর্স করা লাগে। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞানের জন্য মোট ৪৮ ক্রেডিট আওয়ারের কোর্সওয়ার্ক করা লাগে। প্রতিটি পিএইচডি প্রোগ্রামেই এরকম নিয়ম থাকে। এই কোর্সওয়ার্কের মধ্যে বেশ কিছু বেছে নিতে হয় কোর কারিকুলাম বা মূল সিলেবাস এর নানা অংশ থেকে। সেগুলো পাস করলে তবেই পরের ধাপে যাওয়া চলে। আর অনেক ক্ষেত্রেই কোন কোর্সে সর্বনিম্ন বি প্লাস টাইপের গ্রেড পাওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকে পিএইচডি শিক্ষার্থীদের জন্য।

২) কোয়ালিফাইং এক্সাম

কোর্সওয়ার্ক বাদে বড় পরীক্ষাটি হল পিএইচডি কোয়ালিফাইং এক্সাম বা কোয়ালিফায়ার। পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তি হলেই যে পিএইচডি করতে পারবেন, তা নিশ্চিত না। প্রতিটি শিক্ষার্থীকে পিএইচডি কোয়ালিফাইং এক্সাম পাস করতে হয়। সাধারণত ভর্তির ১ থেকে ২ বছরের মধ্যে এটা পাস করা লাগে। একেক ইউনিভার্সিটিতে একেক নিয়ম। (অল্প কিছু জায়গায় এই পরীক্ষাটি দিতে হয় না, এমনও আছে। তবে অধিকাংশ জায়গাতেই দিতে হয়)। একেক ইউনিভার্সিটির একেক ডিপার্টমেন্টে এই পরীক্ষার ফরম্যাট আলাদা। কোথাও লিখিত পরীক্ষা দিতে হয় পঠিত বিষয় থেকে এবং কোর কোর্সওয়ার্কের এলাকার উপরে। আবার কোথাও সেটা প্রেজেন্টেশন অথবা মৌখিক পরীক্ষা। আমি যখন পিএইচডি করছিলাম ইউনিভার্সিটি অফ ইলিনয়ে, সেখানে পরীক্ষাটা ছিল দুইটি গবেষণাপত্র উপস্থাপন করে তার পর ৩ জন অধ্যাপকের সামনে সেগুলোর বা অন্য যেকোন বিষয়ের উপরে প্রশ্নোত্তর পরীক্ষা। আবার আমার বর্তমানের কর্মক্ষেত্রে আগে ছিল ৩টি বিষয়ে লিখিত পরীক্ষা, আমরা সম্প্রতি সেটাকে পাল্টে লিটারেচার সার্ভে, প্রেজেন্টেশন এবং মৌখিক প্রশ্নোত্তর পদ্ধতিতে এনেছি।

কোয়ালিফাইং এক্সাম অনেক সময়েই বিভীষিকার মত হয়ে দাঁড়ায়। আমার পিএইচডির ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সাইন্স বিভাগে প্রায় সবাই প্রথমবারে ফেল করত। মাত্র ২ বার দেয়ার সুযোগ ছিল -- দ্বিতীয়বার ফেল করলে পিএইচডি প্রোগ্রাম থেকে বের করে দেয়া হত।

৩) প্রপোজাল ডিফেন্স

কোয়ালিফাইং এক্সাম পাস করার পরে শিক্ষার্থীরা প্রকৃত অর্থে পিএইচডি প্রোগ্রামে ঢুকে। এর পরের ধাপে আসবে নিজের গবেষণার বিষয়টি ঠিক করা এবং তার উপরে একটি থিসিস প্রপোজাল লেখা। গবেষণায় তদারকির জন্য থিসিস বা ডিজার্টেশন কমিটি গঠন করতে হয় নিজের এডভাইজর সহ আরো ৪/৫ জন প্রফেসর বা পিএইচডি ডিগ্রিধারীদের নিয়ে। তাঁদের সাথে কাজ করে এবং গবেষণার বিষয়টি অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে তার পর থিসিস প্রপোজাল লিখতে হয়। মূলত সেটি হল পিএইচডি থিসিসের শুরুর অর্ধেকের মত। থিসিস প্রপোজাল পরীক্ষার নাম নানা রকমের। অনেক জায়গায় সেটাকে বলা হয় প্রিলিমিনারি এক্সাম। আবার অনেক জায়গায় প্রপোজাল ডিফেন্স। যাহোক, এই পরীক্ষাটিতে মোটামুটি ৪০ মিনিট - ১ ঘণ্টার প্রেজেন্টেশন দিয়ে থিসিসের বিষয়টির পটভূমি এবং সেটার উপরে যা কাজ করেছে শিক্ষার্থী, এবং থিসিসে মূল যে প্রশ্নটি নিয়ে আলোচনা করা হবে, তা উপস্থাপন করতে হয়। সাধারণত এটা পাবলিক এক্সাম, মানে রুমভর্তি ছাত্রছাত্রী বা শিক্ষকদের সামনে এটা করতে হয়। উপস্থিত যে কেউ প্রশ্ন করতে পারে প্রেজেন্টেশনের উপরে। আর তার পরে প্রাইভেট প্রশ্নের সময় থাকে যখন থিসিস কমিটি ছাড়া বাকিরা চলে যায়। রুদ্ধদ্বার কক্ষে থিসিস কমিটির সবাই প্রশ্ন করতে পারে। তার পর থিসিস কমিটির সদস্যরা আলোচনা করে পাস ফেল নির্ধারণ করেন, এবং কীভাবে এগোতে হবে তার উপরে শিক্ষার্থীকে পরামর্শ দেন। প্রপোজাল ডিফেন্সে পাস করলে শিক্ষার্থীটি নিজেকে এর পর পিএইচডি ক্যান্ডিডেট বলে দাবী করতে পারেন।

৪) পিএইচডি থিসিস ডিফেন্স

সব শেষের পরীক্ষাটি হল পিএইচডি ডিফেন্স। পিএইচডির সব কাজ শেষ হয়ে গেলে পুরো থিসিসের গবেষণার উপরে প্রেজেন্টেশন দিতে হয়। আগের মতোই এটি পাবলিক পরীক্ষা। সবার সামনে প্রেজেন্টেশন দিয়ে প্রশ্নোত্তরের জবাব দিতে হয়। এবং থিসিস কমিটির সামনে প্রাইভেট প্রশ্নোত্তরেরও সম্মুখীন হতে হয়। থিসিস কমিটিতে খুঁতখুঁতে প্রফেসর থাকলে ডিফেন্স বা প্রপোজালের পরীক্ষাতে কপালে দুঃখ আছে বলতে হবে -- প্রশ্ন করে করে জীবন ছারখার করে দিবে। তবে কাজ ভাল করলে এবং গবেষণা সম্পর্কে ভাল করে জানলে চিন্তার কিছু নাই। থিসিস কমিটির সবাই একমত হলে তবেই ডিফেন্স পরীক্ষায় পাস করে শিক্ষার্থী -- এর পরে বাকি থাকে থিসিস লিখে জমা দেয়া। ইউনিভার্সিটির নিজস্ব ফরম্যাটে এবং কাভার শিট সহ থিসিসের ইলেকট্রনিক কপি জমা দিলে তবেই মিলে পিএইচডি ডিগ্রি। অনেকেই ঠিক তখনই সমাবর্তনে অংশ নেন না, সুযোগ মত নেন।

সংক্ষেপে এই হল পিএইচডি ডিগ্রির পুরো প্রক্রিয়া। আশা করি অনেকের অনেক প্রশ্নের জবাব মিলবে এই লেখায়। প্রশ্ন থাকলে মন্তব্যের ঘরে করুন।

#আমেরিকায়উচ্চশিক্ষা

5
©Ragib Hasan
(আইনস্টাইনকে নিয়ে গল্পের শেষ নেই। তাই আমার "বিজ্ঞানীদের কাণ্ডকারখানা-৩" বইতে আবারও বলেছি আইনস্টাইনের জীবনের বেশ কয়েকটা মজার কাহিনী। বিশ্বের সেরা বিজ্ঞানী হিসাবে খ্যাত আইনস্টাইনকেও পিএইচডি করতে গিয়ে কী সমস্যায় পড়তে হয়েছে, সেই গল্পটা বইটি থেকে তুলে ধরছি। আইনস্টাইনও আমাদের মতই মানুষ, কেবল মেধা অসামান্য এই যা।)

মহা ঝামেলায় পড়ে গেছেন আইনস্টাইন। ১৯০১ সাল। তখনো তিনি অতটা বিখ্যাত হননি, কাজ করেন সুইস প্যাটেন্ট অফিসের কেরানি হিসাবে। পিএইচডি ডিগ্রি না থাকলে লোকজন ফিরেও তাকায় না। তাই ভাবলেন, এইবার একটা পিএইচডি করে ফেলা যাক।

গেলেন প্রথমে প্রফেসর ওয়েবারের কাছে। আগ্রহ ভরে শুরুতে প্রফেসর ওয়েবারের লেকচার দেখতে গেলেন। প্রচন্ড বোরিং। খোদ আইনস্টাইনও দুই সপ্তাহ যাবার পরে আর টিকতে পারলেন না। ধুর, লেকচারে না গিয়ে সোজাসুজি থিসিস টপিক নিয়ে হাজির হই, ভাবলেন আইনস্টাইন।

প্রথমে আলোর গতি নিয়ে কাজ করার প্রস্তাব দিলেন। ওয়েবার সাহেব নারাজ, এটা নাকি ফালতু টপিক। এর পর গেলেন বিদ্যুৎ পরিবাহিতার উপরে কাজ করার আইডিয়া নিয়ে। এবারেও নাকচ। সব শেষে তাপ পরিবাহিতার উপরে একটা সমস্যা শোনার পরে প্রফেসর ওয়েবার নিমরাজি হলেন।

খেটেখুটে আইনস্টাইন সোজাসুজি থিসিস পেপার লিখে বসলেন। আগ্রহ ভরে পান্ডুলিপি নিয়ে হলেন হাজির ডঃ ওয়েবারের অফিসে, বাড়িয়ে দিলেন সেটা প্রফেসরের দিকে, পিএইচডি ডিগ্রিটা এবার আর ঠেকায় কে!!

--- অই, এইটা কী কাগজে লিখে আনলা? বেয়াক্কেল কোথাকার!! ফালতু ময়লা কাগজে লিখসো কেনো? আজকালকার ছেলেপেলে ...ইত্যাদি ইত্যাদি ---

রাগে ফেটে পড়েছেন প্রফেসর ওয়েবার। আইনস্টাইন নাকি ভালো মানের কাগজে না লিখে সস্তা টাইপের কাগজে লিখে এনেছেন সেটা।

--- যাও পুরাটা আবার ভালো করে দামি কাগজে লিখে নিয়ে আসো। কিপ্টামি করবানা, বুঝছো আইনস্টাইন?

বিরস বদনে বেরিয়ে এলেন আইনস্টাইন। কাগজটার দিকে তাকালেন। আবার কি লিখবেন পুরাটা ভালো কাগজে?

--- দুচ্ছাই। বলে পাণ্ডুলিপিটা ডাস্টবিনে ফেলে চলে গেলেন। ওয়েবারের অধীনে আর পিএইচডি করা হবে না, বুঝে গেছেন। কিন্তু সস্তা কাগজে লেখা সেই অমূল্য পাণ্ডুলিপিটা আর গবেষণাটাও তো গেলো হারিয়ে।

মেজাজ খারাপ করে আইনস্টাইন পিএইচডির চেষ্টা বাদ দিলেন। বছর চারেক পরে ১৯০৫ সালে, সেই অসাধারণ বছরটায় যখন আইনস্টাইন তাঁর যুগান্তকারী সব আবিষ্কার করেছিলেন, তখন তাঁর মাথায় এলো আবারও পিএইচডির চেষ্টা করার। যতো আবিষ্কারই করেন না কেনো, পিএইচডি না থাকলে পাত্তা দেয় না কেউ, তখনও।

এবার তাই গেলেন জুরিখের প্রফেসর ক্লাইনারের কাছে। আন্তঃআণবিক শক্তি তত্ত্বকে বায়বীয় পদার্থের উপরে প্রয়োগ করার জন্য লিখে ফেললেন পুরো একটা থিসিস। কিন্তু বিধি বাম -- ক্লাইনার ক্ষেপে গেলেন। বললেন, তুমি কোথাকার কোন মাতব্বর? এতো নামকরা প্রফেসর বোলৎসম্যান এর থিওরিকে উড়িয়ে দিয়েছো? যাও, রিজেক্ট।

শেষ চেষ্টা হিসাবে আইনস্টাইন ১৯০৫ সালে অণু পরমাণুর গঠন নিয়ে আরেকটা গবেষণার কাজ নিয়ে গেলেন ক্লাইনারের কাছে। এবারে যদি কিছু হয়। কিন্তু ক্লাইনার বাধ সাধলেন। আবারও।

--- ২৪ পৃষ্ঠা? ২৪ পৃষ্ঠা!! এইটা কী লিখলা! মাত্র ২৪ পৃষ্ঠায় থিসিস হয় নাকি!!! যাও, আরো অনেক বড় করে লিখে আনো।

বিরস বদনে আবারও বেরিয়ে এলেন আইনস্টাইন। যা হিসাব নিকাশ করেছেন, তার সাথে আসলে আর কিছু যোগ করার নাই। কী করা যায়? ভাবলেন, ক্লাইনারের মেজাজ ভালো হলে তার পরে যাওয়া যাবে আরেকবার।

কয়েকদিন পরে আবারও গেলেন। বললেন নতুন করে থিসিস লিখে এনেছেন। আসলে সত্যি কথা হলো, একটা মাত্র নতুন বাক্য যোগ করেছেন। কিন্তু এইদিন ক্লাইনারের মেজাজ বেজায় ভালো। একই থিসিস নতুন বাক্যটা যোগ করার পরে উনার মনে ধরলো। অনুমোদন দিলেন পিএইচডির।

আইনস্টাইন এবার এই থিসিসের কাজটা পাঠালেন জার্নালে। তারা রিজেক্ট করে দিলো এক্সপেরিমেন্ট নাই বলে। সেটা যোগ করার পরে ছাপালো। কিন্তু অভিযোগ আসতে শুরু করলো, সেখানে নাকি অনেক বড় ভুল আছে। এক বন্ধুকে দিয়ে যাচাই করে আইনস্টাইনের মাথায় হাত, আসলেই অংকের হিসাবে ভুল করে ফেলেছেন। তাই সংশোধনী পাঠাতে হলো। অবশেষে অনুমোদন ও স্বীকৃতি পেলো আইনস্টাইনের সেই পিএইচডি থিসিসের গবেষণা।

আপনি আমি আমরা আইনস্টাইন নই। কিন্তু খোদ আইনস্টাইনও গবেষণায় এক লাফে সফল হননি। কাজেই একবারে না পারলে কিংবা গবেষণার গ-টাও মাথায় একবারে না ঢুকলে হতাশ হবেন না। আইনস্টাইনও হননি, তাই না?

[ছবি - আইনস্টাইনের থিসিসের প্রচ্ছদ]

এটি এবং আরো অনেক এরকম গল্প সহ আমার নতুন বইটি প্রি-অর্ডার করা যাবে এখানে https://www.rokomari.com/…/195525/bigganider-kandokarkhana-3

আর একুশে বইমেলায় আদর্শ প্রকাশনীর ৪২১-৪২৬ নং স্টলে পাবেন ৬ তারিখ থেকে।

#এলোচিন্তা

6
© Ragib Hasan

নানা সময়ে বিভিন্ন ফোরামে আমেরিকায় উচ্চতর শিক্ষা তথা মাস্টার্স ও পিএইচডি পর্যায়ে পড়া নিয়ে লিখেছি। অনেকেই সেসব লেখায় আমেরিকায় ব্যাচেলর্স বা স্নাতক পর্যায় বা আন্ডারগ্রাজুয়েট পর্যায়ে পড়ার ব্যাপারে প্রশ্ন করেছেন। আজকে সেটা নিয়েই কিছু লিখছি।

(শুরুতেই বলে রাখি এই লেখাটি আমার ব্যক্তিগত অভিমত। কারো অভিমত বা অভিজ্ঞতা ভিন্ন হতে পারে, সেটা জেনেই লিখছি।)

আমেরিকার অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স বা পিএইচডি পর্যায়ে বিদেশী শিক্ষার্থীদের পড়ার যে সুবিধা থাকে ফান্ডিং সহ, আন্ডারগ্রাজুয়েট পর্যায়ে সেরকম সুবিধা নেই বললেই চলে। তাই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রাজুয়েট শিক্ষার্থী হিসাবে বাংলাদেশীরা যত আসছেন, আন্ডারগ্রাজুয়েট পর্যায়ে সেরকম আসেনা বললেই চলে। এর পরেও অনেকেই এইচএসসির পরে পরেই আমেরিকার নানা ইউনিভার্সিটি বা কলেজে পড়াশোনা করতে আসতে চান। লেখাটা তাঁদের জন্যই।

এক কথায় বলতে গেলে, আমি আন্ডারগ্রাজুয়েট পর্যায়ে বাংলাদেশ থেকে আমেরিকায় পড়তে আসাকে নিরুৎসাহিত করি পুরোপুরি।

কেন? কারণগুলো (আমার অভিমত) নিচে লিখছি -

১) খরচ - অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়েই আন্ডারগ্রাজুয়েট পর্যায়ে বিদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য স্কলারশিপ দেয়া হয় না। কিছু ব্যতিক্রম আছে বটে কিন্তু তার জন্য সারা বিশ্বের বহু শিক্ষার্থীর সাথে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে পেতে হয়। কাজেই আন্ডারগ্রাজুয়েট পর্যায়ে ফুল স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে আসার সম্ভাবনা খুবই কম, যেটা মাস্টার্স বা পিএইচডি পর্যায়ে সহজেই সম্ভব।

আন্ডারগ্রাজুয়েট পর্যায়ে রিসার্চ বা টিচিং এসিস্টেন্টশিপও কম বা নেই বললেই চলে -- আর থাকলেও সেটার বেতন ঘণ্টা হিসাবে।

আর অধিকাংশ আন্ডারগ্রাজুয়েট শিক্ষার্থীকে ডর্মিটরিতে থাকার খরচও দিতে হয় শুরুতে, ফলে টিউশন ও সেই খরচ মিলিয়ে বিশাল পরিমাণ টাকা দরকার হয় প্রতি সেমিস্টারে।

দেশে যদি কারো পরিবার কোটিপতি বা শতকোটিপতি হয়, তাহলে সমস্যা হবে না, কিন্তু অধিকাংশ মানুষের পরিবারই সেরকম নয়। কাজেই এই খরচ দিয়ে আমেরিকায় আন্ডারগ্রাজুয়েট সেলফ ফিনান্সে পড়া প্রায় অসম্ভব ব্যাপার একটা।

২) কষ্ট - আন্ডারগ্রাজুয়েট শুরু করতে যাওয়া একজন শিক্ষার্থীর বয়স ১৮ বা ১৯ মাত্র। টিন এইজ শেষ হয়নি। এই বয়সের একজন কিশোর বা কিশোরী আমেরিকায় পুরোপুরি একাকী পড়তে এসে যে পরিমাণ কষ্টের মধ্যে পড়ে, সেটা সামলে নেয়া অনেক কঠিন।

খরচের কথা আগের পয়েন্টেই বলেছি। বাংলাদেশের অধিকাংশ এই বয়সের কিশোর কিশোরী কোন কাজ করে অভ্যস্ত না। পড়ার বিশাল খরচ মেটাবার জন্য আমেরিকায় আসার পরে নানা রকমের অড জব করতে হয়। এমনিতেই তাড়াতাড়ি পাশ করার তাড়া, তার উপরে দিনে কয়েক ঘণ্টা স্বল্প বেতনে কাজ করা -- এই দুইটা জিনিষ সামলানো খুব কঠিন। কাজ করতে গিয়ে পড়ার সময় পাওয়া যায় না, ফলে রেজাল্ট ভাল রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। তার উপরে এত অল্প বয়সে জীবনের কঠিন দিকটা দেখা, টাকার খোঁজে দিশেহারা হয়ে পড়া, এবং তদুপরি পরিবার থেকে এত দূরে ভিন্ন একটি দেশে থাকা -- সব মিলিয়ে সেটা এত অল্প বয়সী একজন শিক্ষার্থীর জন্য প্রচণ্ড মানসিক চাপের কারণ হয়। বাংলাদেশে পারিবারিক সাপোর্ট থাকে। এমনকি নিজের বাড়ি থেকে দূরে পড়তে গেলে ও হলে থাকলেও চাইলেই ঘণ্টা কয়েকের মধ্যে বাড়িতে যাওয়া চলে। আর নিজের সংস্কৃতি নিজের দেশের মধ্যে অনেক মানসিক শক্তি মিলে, যেটা বিদেশে হাজার চাইলেও মিলবে না। কাজেই একজন কিশোর বা কিশোরীর পক্ষে বিদেশে আন্ডারগ্রাজুয়েট পড়ার সময়টা খুব মানসিক চাপের কারণ হয়ে দাড়ায়।

৩) দেশে স্নাতক করার সুবিধা - বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সময়ে সেশন জ্যাম ছিল প্রচুর। এখন সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে সেটা কমে এসেছে। আর প্রাইভেটে সেটা নেই। দেশে ভাল সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও অনেক ভাল প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ও হয়েছে। কাজেই পড়ার মানের দিকে বিচার করলে বাংলাদেশের স্নাতক শিক্ষার মান আমেরিকার স্নাতক শিক্ষার মানের চাইতে খুব একটা খারাপ না। (আমি অবশ্যই এমআইটি বা হার্ভার্ডের স্নাতকের সাথে তুলনা করছি না -- গড়পড়তা আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক শিক্ষার কথা বলছি)। কাজেই অনেক কষ্ট করে এবং লাখ লাখ টাকা খরচ করে আমেরিকায় আন্ডারগ্রাজুয়েট ডিগ্রি করতে গিয়ে খুব বেশি একটা সুবিধা তেমন পাওয়া যায় না যেটা বাংলাদেশে মিলবে না। আর বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করার পরে চাইলে মাস্টার্স বা পিএইচডি পর্যায়ে ফান্ডিং সহ বিনা খরচে পড়ার সুবিধা তো আছেই। বাংলাদেশের নানা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই আমেরিকার নানা বিশ্ববিদ্যালয়ে এভাবে হাজার হাজার ছাত্র আসছেন প্রতিবছর।

৪) মানসিক পরিপক্কতা - মানসিক পরিপক্কতা একটা বড় ব্যাপার। সদ্য এইচএসসি পাশ করা একজন শিক্ষার্থী বয়সে তখনো অনেক কাঁচা। এই অবস্থার চাইতে ২৩/২৪ বছর বয়সের একজন স্নাতক পাশ করা শিক্ষার্থী মানসিকভাবে অনেক অভিজ্ঞ ও পরিপক্ক। কাজেই মাস্টার্স বা পিএইচডি পর্যায়ের একজন শিক্ষার্থী যতটা সহজে নতুন একটি দেশে খাপ খাইয়ে নিতে পারে, ১৮ বছরের একজন কিশোর বা কিশোরীর পক্ষে সেটা করা সম্ভব হয় না। ১৮-২২ বছরের এই সময়টা আসলে মানুষের formative year এর একটি অংশ। পরিবার কিংবা নিজের সমাজের সংস্কৃতির ছত্রছায়ায় এই সময়টাতে নৈতিক ও মানসিক দৃঢ়তার যে ভিত্তি দেশে গড়ে উঠে, বিদেশে পরিবারপরিজনহীন অবস্থায়, বাঁধনছাড়া পরিবেশে, এবং ভিন্ন একটি সমাজে সেভাবে একজন টিনেজারের বিকাশ ঘটে না। প্রচুর প্রচণ্ড মেধাবী শিক্ষার্থীর উদাহরণ জানি যাঁরা দেশে এইচএসসি পর্যায়ে বিশাল ভাল ফলাফল করে পরে আমেরিকায় মাঝারিমানের বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পর্যায়ে পড়তে এসে উপরের বিভিন্ন কারণে আর সেরকম সেরা ফলাফল ধরে রাখতে পারেননি। (ব্যতিক্রম আছে বটে, কিন্তু ব্যতিক্রম উদাহরণ না, আমি সামগ্রিক হিসাবের কথা বলছি যা একজন দুইজনের সাফল্য দিয়ে এড়ানো যায় না)।

কাজেই আপনি বা আপনার পরিচিত কেউ এইচএসসি পাসের পরেই আমেরিকায় যদি স্নাতক করতে যেতে চান, শুরুতেই ভেবে দেখুন, অঢেল টাকা, বিদেশে পারিবারিক সুবিধা, এসব আছে কি না। যদি না থাকে, তাহলে কষ্ট করে চার বছর অপেক্ষা করুন, এবং দেশে স্নাতক ডিগ্রি শেষ করে তবেই প্রস্তুত হয়ে আমেরিকায় পড়তে আসুন। তার আগে নয়।

(আগেই বলেছি, একজন দুইজনে পেরেছে বলে সবাই পারবে তা নয়। আর উপরের মন্তব্যগুলো আমার ব্যক্তিগত অভিমত। আপনার ভিন্নমত থাকতে পারে, তবে আমার অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে আমি উপরের কারণগুলোর জন্য আমেরিকায় আন্ডারগ্রাজুয়েট পর্যায়ে বাংলাদেশ থেকে পড়তে আসাকে নিরুৎসাহিত করি।)

(কেউ যদি ইমিগ্র্যান্ট হন (গ্রিন কার্ড, বা সিটিজেনশিপ), তাঁদের কথা আলাদা। খরচের দিক থেকে তাঁদের অনেক সুবিধা আছে, কারণ সরকারী অনেক স্কলারশিপ বা ফিনান্সিয়াল এইড সিটিজেন বা গ্রিনকার্ডধারীরা পেতে পারেন।)

#আমেরিকায়উচ্চশিক্ষা

7
©️Ragib Hasan

পড়ায় বসেনা মন? বিরক্তিকর সব পড়াশোনা অথবা একঘেঁয়ে কাজ করতে গেলে পায় বেজায় ঘুম? অথবা ধরে যায় মাথা, কিংবা মন চলে যায় হেথা নয়, হোথা নয়, অন্য কোথাও?

তাহলে আমার এই লেখাটা, আপনার জন্যই।

নিউরোবিজ্ঞানীরা কিছুদিন আগে একটা ইন্টারেস্টিং গবেষণা করেছিলেন। কিছু ছাত্রকে তাদের খুব অপছন্দের কোনো বিষয়ে পড়াশোনা করতে দিয়ে তাদের মস্তিষ্কের উপর রাখছিলেন নজর। কী আশ্চর্য, অল্প একটু পরেই দেখা গেলো, ব্যথা পেলে মানুষের মস্তিষ্কের যে অংশের পেইন রিসেপ্টর স্নায়ুকোষ সক্রিয় হয়ে উঠে, বিরক্তিকর পাঠ্যবই পড়তে গিয়ে ছাত্রদের একই রকমের ব্যথা হচ্ছে।

কাজেই ভ্যানভ্যানানি পড়া পড়তে গেলে মাথায় যদি করে ব্যথা, সেটা পড়া ফাঁকি দিতে আপনার আলসেমি বা অজুহাত না, বরং সেটা আপনার দেহের মনের কড়া প্রতিবাদ -- এই চাপিয়ে দেয়া বিরক্তিকর পড়ার বিরুদ্ধে।

কিন্তু? পাশ তো করতেই হবে পরীক্ষায়। অথবা অফিসের বসের দেয়া কাজটা করতে হবে শেষ? তবে উপায় কী?

আছে। মনকে ফাঁকি দেয়ার কায়দাটা আছে। চলুন, দেই শিখিয়ে।

# পোমোডরো টেকনিক

কায়দাটা খুব সহজ। পড়া বা এরকম আর কোনো কাজকে ২৫ মিনিটের খণ্ডে ভাগ করে নিন। ঘড়িতে বা মোবাইলে এলার্ম সেট করুন ঠিক ২৫ মিনিট পরে। এর বেশিও না, কমও না। এবং অন্য সব কিছু বন্ধ করে ২৫ মিনিট ধরে কাজটা করুন। যেই মাত্র এলার্ম বাজবে, অমনি কাজ বন্ধ। মিনিট পাঁচেক, দশেক হাওয়া খান, চা খান, সেলফি তুলেন, মন যা চায় তাই করেন। তার পর আবারও ২৫ মিনিটের এলার্ম।

এর কারণটা কী? কারণ হলো বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, ২৫ মিনিটের মাথাতেই ব্রেইনের নিউরণগুলাতে বিরক্তিকর পড়ার প্রতিবাদ হিসাবে শুরু হয়ে যায় ব্যথা, আর আপনিও বিরক্ত হয়ে দেন ছেড়ে হালটা। কাজেই ঠিক ২৫ মিনিটের মাথায় যদি অপছন্দের কাজটা থামিয়ে দিতে পারেন, তাহলে নিউরনগুলা থাকবে খোশ মেজাজে। মনকে পারবেন ভোলাতে।

আপনিও থাকবেন মেজাজে বেজায় খোশ।

কাজটাও হবে, যতোই বিরক্তির হোক না কেনো।

মন ভোলানোর এই টেকনিকের নাম? পোমোডরো টেকনিক।

আজই তাহলে দেন শুরু করে। আর দেরি কেনো?

8
নবীন গবেষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য গবেষণার একটি ভীতিকর অংশ হলো গবেষণালব্ধ ফলাফলকে গবেষণাপত্র বা রিসার্চ পেপার আকারে লিখা। আমার পিএইচডি বা মাস্টার্স ছাত্রদের হাতে ধরে ধরে সেটা শিখাই। এই লেখায় কীভাবে রিসার্চ পেপার লিখা শুরু করতে হবে, তাই নিয়ে সংক্ষিপ্ত আকারে লিখছি।

রিসার্চ পেপারের মূল উদ্দেশ্য হলো গবেষণায় কী পেয়েছেন, সেটাই সংক্ষিপ্ত আকারে জানানো। খেয়াল রাখবেন, আপনি হয়তো বছর খানেক কাজ করেছেন, তাই সবকিছুর খুঁটিনাটি জানেন ঠোটস্থ ভাবে, কিন্তু পাঠকের সেই গভীর জ্ঞান নাও থাকতে পারে। কাজেই রিসার্চ পেপারের শুরুটা করতে হবে গবেষণার বিষয়টির প্রেক্ষিত বা background নিয়ে আলোচনা করে।

পেপারের শুরুতেই থাকে abstract বা সারাংশ। এই অংশটি ৫/৬ বাক্যের বেশি হওয়া উচিত না। এই অংশের কাজ হলো গবেষণাপত্রটির সংক্ষিপ্তসার তুলে ধরা খুব অল্প জায়গায়। যেমন, সমস্যাটা কী, তার সমাধান করলে লাভ কী, আপনি কী করেছেন, এবং এই পেপারে কী তথ্য/ফলাফল/প্রমাণ তুলে ধরা হয়েছে, সেটা। অনেকেই এই অংশটি অতি দীর্ঘায়িত করে ফেলেন। সেটা ঠিক না। অনেক কনফারেন্স বা জার্নালে অবশ্য শব্দসীমা বেঁধে দেয়া থাকে, তার চেয়ে বেশি দেয়া যায় না। আপাতত এই অংশটিতে সর্বোচ্চ ৬ বাক্য থাকবে এটাই লক্ষ্য স্থির করবেন।

এবার পেপারের মূল অংশ। পেপারের শুরুতে সাধারণত ভূমিকা বা introduction সেকশন থাকে, শেষে থাকে উপসংহার বা conclusion। ভূমিকাতে মূল সমস্যা নিয়ে প্রেক্ষিত নিয়ে বলতে হবে। স্টানফোর্ডের ইনফোল্যাবের প্রফেসর জেনিফার উইডোমের এই নিয়ে দারুণ একটা ফরমুলা আছে, সেটা এরকম। ভূমিকাতে ৫টি অংশ থাকবে

- সমস্যাটা কী?
- সেটা সমাধান করা কেনো দরকার (কী লাভ হবে এটা করে)?
- সমস্যাটা সমাধান করা কেনো কঠিন?
- আপনি কী করছেন সেটা সমাধানে? এবং,
- অন্যরা কী করেছে, তার চাইতে আপনার পদ্ধতির সুবিধা কী কী?

কাজে ইন্ট্রোডাকশন লেখার সময়ে ৫টা প্যারা লিখবেন অন্তত, উপরের ৫টা পয়েন্ট নিয়ে।

এর পরে থাকতে পারে background বা motivation অংশ, যেখানে এই পেপারের বিষয়ে কিছু প্রাথমিক ধারণা সংক্ষেপে দেয়া হবে। মূলত কনসেপ্ট বা ধারণাগুলা সংক্ষেপে লিখে সেসব বিষয়ের নানা পেপারের সাইটেশন দিতে হবে।

এবারে আসবে আপনার পেপারের টেকনিকাল বা কারিগরি অংশটি। পেপার কীসের উপরে, তার উপরে নির্ভর করবে এখানে কী থাকবে। এই অংশে সিস্টেম ডিজাইন/আর্কিটেকচার থাকতে পারে, থিওরির অংশ থাকতে পারে, এক্সপেরিমেন্টাল মেথডলজি থাকতে পারে, ইত্যাদি। অবশ্যই চিত্রের সাহায্যে ব্যাখ্যা করতে হবে।

পরের অংশে থাকবে আপনার এক্সপেরিমেন্টাল রেজাল্ট বা ফলাফল ও তার বিশ্লেষণ। এখানে ফলাফল উপস্থাপন (ছক বা চিত্র) করাই যথেষ্ট না, বরং তার চাইতে গুরুত্বপূর্ণ হলো সেই ফলাফল ব্যাখ্যা করা। ডিসকাশন বা আলোচনা অংশে অনেক জোর দিতে হবে। ফলাফল ভালো হলে তো বটেই, খারাপ হলে সেটার সম্ভাব্য ব্যাখ্যাও দিতে হবে।

রিলেটেড ওয়ার্ক বা এই বিষয়ে অন্য কে কী কাজ করেছেন, সেটার অবস্থান নিয়ে একটু দ্বিমত আছে। কেউ কেউ পেপারের সব শেষে সেটা দিতে পছন্দ করেন, আবার কেউ কেউ পেপারের শুরুতে। পেপারের বিষয়ের উপরেও অনেক ক্ষেত্রে এটা নির্ভর করে। তবে এই অংশের মোদ্দা কথা হলো অন্য কে কী কাজ করেছে তা উল্লেখ করা, এবং বিনয়ের সাথে তাদের কাজের সাথে আপনার কাজের পার্থক্য বা সুবিধাগুলা উল্লেখ করা। (বিনয়ের সাথে করাটা গুরুত্বপূর্ণ, অমুকের কাজ "জঘন্য" এই টাইপের কিছু কখনোই লিখতে যাবেন না!)। পার্থক্যগুলা ছক আকারে দিতে পারলে ভালো হয়।

সবশেষে আসে conclusion বা উপসংহার। এই অংশে থাকবে এই পেপারে কী পড়লেন পাঠক, তার উপরে কিছু কথা। এই অংশে এই পেপারে কী কাজ দেখানো হয়েছে তা ছাড়াও এই কাজের ভিত্তিতে কী সুবিধা পাওয়া যাবে এবং ভবিষ্যতে আপনি আর কী করতে পারেন (future work) সেই বিষয়ে বলা চলে।

এবং সবশেষে bibliography/reference এই অংশটি তো থাকছেই, যেখানে আপনার সাইট করা সব পেপারের তথ্য দিতে হবে।

ব্যাস, এই নিয়মগুলা মেনে চললেই লিখতে পারবেন রিসার্চ পেপার। মনে রাখবেন, পাঠক কিন্তু আপনার চাইতে কম জানেন এই বিষয়টা, কাজেই আপনার কাছে জলবৎ তরলং জিনিষও আসলে বুঝিয়ে বলতে হবে।

রিসার্চ পেপার আসলে গল্প বলা — আপনার রিসার্চকে সহজে বুঝিয়ে বলা। কীভাবে শুরু করবেন তার হদিস এখনো না পেলে এক কাজ করুন, আপনার মা বাবা বউ ভাই বোন বন্ধু — এমন কেউ যে এই বিষয়ে কিছুই বোঝেনা, তাকে ১০ মিনিটে ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলুন। তার পর কীভাবে বোঝালেন, সেটাকেই ভাষায় লিখেন উপরের কাঠামো অনুসারে।

#গবেষণা

(লেখাটি আমার গবেষণায় হাতে খড়ি বই থেকে নেয়া। থিসিস কিংবা পিএইচডি/মাস্টার্সে ভর্তির জন্য যারা গবেষণা শুরু করতে চান, তারা আমার এই বইটা পড়ে দেখতে পারেন। মূল বইটি আদর্শের ৪২১-৪২৪ স্টলে আছে অথবা অনলাইনে এখানে j.mp/gobeshona । যারা পিডিএফ চান তারা বইটার ফেইসবুক পেইজেই বইয়ের অনেক লেখা পেয়ে যাবেন, যদি বইটা নাও যোগাড় করেন।)

#গবেষণায়হাতেখড়ি #গবেষণা

9
শিক্ষার্থী ও গবেষকদের জীবনের একটি নিত্যদিনের ব্যাপার হলো রিসার্চ পেপার পড়া। জার্নাল বা কনফারেন্সে প্রকাশিত ১০-২০ পৃষ্ঠার একটি গবেষণাপত্র পড়ে তাতে প্রকাশ করা গবেষণার ব্যাপারে জানা যায়। কোনো বিষয়ে ভালো করে জানতে গেলে আসলে সেই বিষয়ের উপরে শ খানেক রিসার্চ পেপার পড়া লাগে।

এখন প্রশ্ন হলো, এই রিসার্চ পেপার পড়বেন কী করে? সবার হাতে তো অঢেল সময় নাই, আর যদি মাত্র ১/২ দিনেই পড়তে হয় গোটা পাঁচেক পেপার, তাহলে কীভাবে দ্রুত পড়বেন সেটা? আজকের লেখার বিষয় এটাই।

রিসার্চ পেপার দ্রুত পড়ার কিছু টেকনিক বা কায়দা আছে। শুরুতেই বুঝতে হবে, রিসার্চ পেপার কিন্তু গল্প উপন্যাস না যে আপনাকে সেটা শুরু থেকে লাইন বাই লাইন পড়তে হবে। বরং একটি রিসার্চ পেপার পড়ে তা বুঝতে হলে কয়েকবারে অল্প করে করে সেটা পড়তে হবে। আমি আমার ছাত্রদেরকে শুরুতেই এই কায়দাটা শিখাই। ধাপগুলা হলো এরকম -

১ম ধাপ - পেপারের শিরোনাম, লেখকদের নাম ও পরিচয় পড়ে ফেলেন। পড়তে ১৫ সেকেন্ডের বেশি লাগার কথা না। শিরোনাম থেকে কিছুটা ধারণা পাবেন পেপারটি কী নিয়ে সেই ব্যাপারে।

২য় ধাপ - এবারের পেপারের সারাংশ বা abstract পড়ে ফেলুন। সাধারণত এই অংশটি আকারে ১ প্যারাগ্রাফ (৫/৬ বাক্য) হয়ে থাকে। সেটা দরকার হলে দুইবারে পড়ুন। দুই দুগুণে ৪ মিনিট লাগবে বড়জোর। এটা পড়লে পেপারে কোন সমস্যা নিয়ে কাজ করা হয়েছে এবং কী নতুন কাজ করা হয়েছে/ফলাফল বা এক্সপেরিমেন্টাল রেজাল্ট এসেছে, তার উপরে ধারণা পাবেন।

৩য় ধাপ - এবারে চট করে পেপারের ভূমিকা (Introduction) ও উপসংহার (Conclusion) পড়ে ফেলেন। ভূমিকাতে মূল ব্যাপারগুলা, সমস্যাটা কী রকম এবং এই গবেষকেরা কী নিয়ে কাজ করেছেন কীভাবে, তার উপরে আরো অনেক খুঁটিনাটি তথ্য থাকবে। আর উপসংহারে থাকবে লেখকেরা কী কাজ করেছেন, তার কথা। দুইটাই পড়ে ফেলে মূল ব্যাপারগুলা নোট করে রাখুন। সময় লাগবে ২০ মিনিট - আধা ঘণ্টার মতো।

৪র্থ ধাপ - এই ধাপে আপনার কাজ হবে পেপারের ভিতরে মন দিয়ে পড়া। ব্যাকগ্রাউন্ড সেকশন থাকলে সেখান দিয়ে শুরু করতে পারেন। রিলেটেড ওয়ার্ক বা রিসার্চ থাকলে সেটাও পড়ে নিতে পারেন। তার পরে পড়বেন পেপারের সিস্টেম বা থিওরেটিকাল মডেল অথবা আর্কিটেকচার অংশ, এবং সবার শেষে খুব মনোযোগ দিয়ে এক্সপেরিমেন্টাল রেজাল্টস অংশ। এই ধাপটা খুব গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ২য় বা ৩য় ধাপে পেপারের মূল ক্লেইম বা দাবি সম্পর্কে যা পড়েছেন, এখানে সেগুলা যাচাই করতে পারবেন। পেপারে যা লেখা হয়েছে শুরুতে, তা মোটেও বিশ্বাস করেন না এরকম মানসিকতা নিয়ে পড়বেন। লেখকদের কাজই হচ্ছে থিওরেটিকাল প্রুফ বা এক্সপেরিমেন্টাল রেজাল্ট দিয়ে তাদের দাবিগুলাকে প্রমাণ করা, কাজেই সেটা তারা করতে পেরেছে কিনা তা যাচাই করে দেখুন। এই কাজটা করতে সময় লাগবে কয়েক ঘণ্টা।

ব্যাস, এই ৪টি ধাপে আস্তে আস্তে পড়ে ফেলতে পারেন যেকোনো পেপার। কিন্তু পেপার পড়াই কি যথেষ্ট? মোটেও না। বরং পেপার পড়ার সঙ্গে সঙ্গে আপনাকে তার একটা রিভিউ লিখে ফেলতে হবে। আমি আমার ছাত্রদের যে ফরম্যাটে রিভিউ লেখা শিখাই তা হলো এরকম - ১ পৃষ্ঠার রিভিউ - (১) এক প্যারাগ্রাফে ৬/৭ বাক্যে পেপারের সারাংশ বা summary (২) পেপারের ৩ বা ততোধিক শক্তিশালি দিক বা strong point (৩) পেপারের ৩ বা ততোধিক দুর্বল দিক, এবং (৪) পেপার সম্পর্কে আপনার ৩ বা ততোধিক মন্তব্য, এখানে আলোচনা করতে পারেন অন্য কীভাবে কাজটা করা যেতো বলে আপনার মনে হয়। এই রিভিউ লিখে কিন্তু ফেলে দিবেন না, বরং গুগল ডক বা অন্যত্র সেভ করে রাখবেন। মাস দুই বা বছর খানেক পরে যদি পেপারটাতে কী আছে তা হঠাত মনে করার দরকার হয়, তাহলে পুরা পেপারটা আর পড়া লাগবেনা, আপনার ঐ রিভিউটা পড়লেই চলবে।

---

উপরের এই ধাপগুলা অনুসরণ করে পেপার পড়ুন, খুব সময় লাগবেনা, আর কাজটাকে এতো কঠিনও মনে হবেনা। ভালো গবেষক হতে হলে নিয়মিত এভাবে রিসার্চ পেপার পড়া অভ্যাস করুন, যত পড়বেন তত শিখবেন। আর হবেন ভালো গবেষক।

[ রাগিব হাসান ২০১৪-০২-২৩]

#গবেষণা #রিসার্চ

10
Common Forum/Request/Suggestions / Python কি?
« on: February 24, 2020, 04:40:06 PM »
Python একটি শক্তিশালী হাই-লেভেল অবজেক্ট-ওরিয়েন্টেড এবং ডায়নামিক কম্পিউটার  প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ । যা ১৯৮০ সালে ডাচ প্রোগ্রামার গুইডো ভ্যান রাসম প্রথম ডিজাইন শুরু করেন এবং ১৯৯১ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রথম তিনি এটি প্রকাশ করেন।

মূলতঃ  ১৯৮০ দশকের পরে গুইডো ভ্যান রাসম যখন আমিবা ডিস্ট্রিবিউটেড অপারেটিং সিস্টেম গ্রূপ এর সাথে কাজ করছিলেন। তখন তিনি ABC ( উল্লেখ্যঃ ABC একটি কম্পিউটার ল্যাংগুয়েজ যার সিনট্যাক্স খুবই সহজ এবং বোধগম্য)-এর মত ইন্টারপ্রেটেড (Interpreted) ভাষা ব্যবহার করতে চাইলেন যা আমিবা সিস্টেম কলকে এক্সেস করতে পারবে। তাই তিনি নতুন একটি ভাষা তৈরির দিদ্ধান্ত নিলেন যেটা হবে সমপ্রসারনযোগ্য । এটাকে কেন্দ্র করেই নতুন একটি ভাষার সূত্রপাত হলো এবং পরবর্তীতে এটার নাম রাখা হলো পাইথন।

পাইথন লাঙ্গুয়েজটির গঠন শৈলী যেমন অনন্য একই ভাবে এর প্রকাশভঙ্গিও অসাধারণ । চমৎকার এই ল্যাঙ্গুয়েজটি বর্তমানে – ওয়েব, ডেস্কটপ, মোবাইল, সিস্টেম এ্যাডমিনিস্ট্রেশন, সাইন্টিফিক কম্পিউটিং কিংবা মেশিন লার্নিং সহ সবর্ত্রই ব্যবহার হচ্ছে। আর তাইতো পাইথন প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজটি জয় করেছে বহু কম্পিউটার প্রোগ্রামার এবং সফটওয়্যার ডেভেলপার এর হৃদয়।

Python নাম কেন?
মূলতঃ  সত্তরের দশকের পরে ভ্যান রাসম BBC এর “Monty Python’s Flying Circus” কমেডি সিরিজের ভীষণ ভক্ত ছিলেন। আর এর সাথে সমঞ্জস্য রেখেই তিনি এটির নাম রাখেন পাইথন।

Python Programming Language দিয়ে কি করা যায় ?
বর্তমানে বহুল আলোচিত এবং ভবিষ্যতের প্রযুক্তির ভিত্তি ডাটা সায়েন্স এবং মেশিন লার্নিং, সর্বোপরি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স নিয়ে কাজ করতে চাইলে পাইথন হতে পারে নির্দ্বিধায় আপনার প্রথম পছন্দের প্ল্যাটফর্ম। কারণ, scikit-learn এর মত মেশিন লার্নিং লাইব্রেরী, Pandas এর মত ডাটা ফ্রেম লাইব্রেরী, Numpy এর মত ক্যালকুলেশন লাইব্রেরী যেগুলো এক কথায় অনন্য- এসবই আছে পাইথনের জন্য।

আরও নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে পাইথন এর উপর ভিত্তি করে  – Django, Flask, Tornado ইত্যাদি ফ্রেমওয়ার্ক এর মাধ্যমে আপনি যেমন খুব সহজে ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট করতে পারবেন।

আবার ডেস্কটপ বা গ্রাফিক্যাল ইউজার ইন্টারফেইস সমৃদ্ধ সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের জন্য পাইথন ল্যাঙ্গুয়েজ এর উপর ভিত্তি করে আপনার  জন্য আছে  PyQT এর মত টুলকিট বা Tkinter এর মত প্যাকেজ । আরও আছে Kivy এর মত লাইব্রেরী।

আর গেম ডেভেলপমেন্ট করতে চাইলে আপনার জন্য আছে PyGame.

আপনি যদি Internet of Things (IoT) নিয়ে কাজ করতে চান, তাহলে আপনার জন্য  আছে raspberrypi, বা RPi.GPIO. এর মত হার্ডওয়্যার প্ল্যাটফর্ম।

বিভিন্ন সাইট যেমন-Mozilla, Reddit, Instagram, PBS, Dropbox, Google Search Engine ইত্যাদি ওয়েব এপ্লিকেশন পাইথন দিয়ে লেখা।

Python শেখার আগে কোন বিষয়ে আমার জানা অপরিহার্য?
Python শেখার  আগে আপনাকে কমপিউটার প্রোগ্রামিং কি জিনিস? ওয়েব কি?  ইন্টারনেট কি ? ডেটাবেস, এবং মাইএসকিউএল প্রভৃতির উপর ধারণা থাকা উচিত। তা ছাড়া HTML, CSS জানা থাকলে আপনি Python শিখে আনন্দ পাবেন।

Python কিভাবে Install এবং রান করব?
Python কে বলা হয় Cross Platform Language , অর্থাৎ আপনি এটিকে Windows, Linux এবং Mac os X Operating system এ খুব সহজেই রান করতে পারবেন। এখন আমি আপনার নিজের কম্পিউটারে( Windows Operating system) কিভাবে পাইথন রান করাবেন তারই সহজ পদ্ধতি এখানে তুলে ধরব।

Windows -এ পাইথন ইনস্টল এবং রান করানো

Python এর অফিসিয়াল সাইট ডাউনলোড পাইথন পেজে গিয়ে Download Python 3.6.5 -এ ক্লিক করে Python ডাউনলোড করুন।

ডাউনলোড সম্পন্ন হলে ফাইলের উপরে ডাবল-ক্লিক করে পাইথন ইনস্টল এর নির্দেশনাসমূহ অনুসরণ করুন।

পাইথন ইনস্টলেশন সম্পন্ন হলে IDLE নামের একটি প্রোগ্রামও এর সঙ্গে ইনস্টল হবে। এটি মূলত একটি Graphical User Interface (GUI) যা দিয়ে আপনি পাইথন কোড রান করাতে পারবেন।
IDLE GUI এর মাধ্যমে আপনি python কোড কে আলাদা ফাইল এ save করেও রান করতে পারবেন। আর এর জন্য আপনাকে IDLE GUI এ File=>New File এ গিয়ে একটি নতুন file ওপেন করতে হবে এবং নতুন ফাইল টি কে .py extension দিয়ে save করতে হবে

এখন আপনার .py extension যুক্ত ফাইল এ নিচের কোডটি paste করুন।

1
print("Hello Python! I'm String from a file")
তারপর F5 press করুন অথবা Run Module এ ক্লিক করুন। ঠিক নিচের মত :

এখন আপনি নিচের মত ফলাফল দেখতে পাবেন :

Run Python Code Output From File
Run Python Code Output From File

Windows Command Prompt থেকে Python কোড রান
তবে IDLE GUI ছাড়াও আপনি সরাসরি Windows Command Prompt থেকেও Python কোড রান করতে পারবেন, এটার জন্য আপনাকে আপনার Command Prompt এ গিয়ে যেখানে পাইথন ইনস্টল করেছেন সেই path এ access করতে হবে, ঠিক নিচের মত :

Python Windows Command Prompt first Step
Python Windows Command Prompt first Step

এখন আপনি শুধু ” python ” লিখে এন্টার করুন , ঠিক নিচের মতো পাইথন এনভায়রনমেন্ট দেখাবে।

Python Windows Command Prompt final Step
Python Windows Command Prompt final Step

এখন আপনি নির্দ্বিধায় python কোড রান করতে পারবেন, নিচের স্ক্রিন শর্ট দেখুন :

Python Windows Command Prompt Code Run
Python Windows Command Prompt Code Run

IDLE GUI এর মতো আপনি Command Prompt থেকেও পাইথন file run করতে পারবেন , আর এর জন্য আপনাকে শুধু যেখানে .py file টি save করেছেন সেখানে DOS এর cd command দিয়ে access করতে হবে, তারপর python fileName.py লিখে এন্টার করতে হবে। নিচের স্ক্রিনশর্ট দেখুন :

python file run from windows dos

11
​​There is an increasing trend of old people living longer in many countries around the world. Do you think this has a positive or a negative effect on the population as a whole?
Task Response
Task response measures how well you respond to the question. The example question is asking for your opinion, therefore you MUST - not should - mention your belief in the introduction paragraph, & explain your opinion with supporting ideas and logic in the body paragraphs.

Give at least 2 relevant examples in your essay. For example, to explain how older people can be a pressure to the public funding, you may say "As a major portion of Canadian population is aging, the Canadian government has to keep its notable funding aside to serve these people via medical facility, affordable transportation and so on."
Lets check what is wrong with the following Introduction paragraph. The Task 2 is asking "Do you think this has ...". So, you MUST state your opinion in the introduction, failing to do so will hurt you miserably.

Coherence = logical and consistent, nice organization
​Cohesion = bond (e.g. In addition, but, By contrast, For example, To conclude)
A proper paragraphing is vital to make a Writing TASK coherent. You should write 4-5 paragraphs, ideally four. For the sample question, you may write 4 paragraphs i.e. (1) introduction (2) body paragraph 1 (3) body paragraph 2 (4) conclusion. The skeleton can be as follows:
Introduction: paraphrase the question's statement. thesis outline (I think negative impact)
Body Paragraph 1: Logic 1 on why you think more aging population has negative impact. Explain your logic. Give example.
​Body Paragraph 2: Logic 2 on why you think more aging population has negative impact. Explain your logic. Give example.
​Conclusion: restate your point of view.
All the RED words in the following example contributes to the clear rendition of COHESION.


Vocabulary contributes to the marking criteria by 25% in IELTS Writing and Speaking. Please note that vocabulary does not mean only the abstruse academic words. In other word, you may simply use different combination of words or collocation. For instance, instead of writing food in a sample TASK 2, you may say food choice, the available option of food.  Both of these 2 words shows your level of vocabulary.
Learn some synonyms and academic versions of common words regardless. For example:
Do => Perform
show => Depict (a common word for TASK 1 in Academic writing), rendition - a noun form of show. Let's learn some vocabularies from the following video.
If you already have forgot today's TASK 2, here it is: "There is an increasing trend of old people living longer in many countries around the world. Do you think this has a positive or a negative effect on the population as a whole?
The entire 1st sentence can be expressed by a single word - Longevity.
I strongly recommend (recommend is a high-level vocabulary of the word "suggest") you to learn at least 200 IELTS Writing vocabulary (Topic related). I have prepared a list for you as follows;

Grammatical Range & Accuracy
Unluckily the most ignored marking criteria: grammar. Wait. It's not Grammar but Grammatical Range & Accuracy. This means only writing grammatically correct sentences won't be enough. If you write won't in your writing, you will get a lower mark in the Grammar criterion as won't is NOT formal.
You need to write grammatically accurate sentences (Grammatical Accuracy)
You have to write in a range of sentence structures in a flexible way (Grammatical Range).
To get a Band of 7 or higher, you should use complex & compound sentences in your writing flexibly. Learn those from 1. Collins Grammar for IELTS, 2. ieltsbuddy.com/grammar 3. Any other source you like.
By the time Writing module will appear in your IELTS exam[1], you brain will be exhausted already. But, don't forget that a Writing score less than 7 can cost you an arm and a leg [2]. Anyway, you have already figured out that IELTS Writing has 4 marking criteria: Task Response, Coherence & Cohesion, Lexical Resource, Grammatical Range & Accuracy.
[1] In our IELTS Writing examination, we will NEVER write "exam". Always write words in full form: Examination, do not (not Don't).
[2] Cost you an arm and a leg: a popular idiom. You are welcome to utilize this type of idioms in your IELTS Speaking exam. NEVER use idioms in IELTS Writing. Except some acceptable phrasal verbs, you should NOT use phrasal verbs in Writing as well. If you use phrasal verbs in Speaking, you will be higher mark unlike in Writing where you will be penalized.

Written by
Tanmoy Das
Pursing Ph.D. at Dalhousie University, Canada
IELTS Trainer at HigherStudyAbroad

12
Note: “Coherence and Cohesion” contributes to the 25% marks in your IELTS Writing exam.​
Coherence = logical, Cohesion = connected.

​Tips for IELTS Writing TASK 2 considering Coherence & Cohesion:
Use transitional words (In addition, however)
Each paragraph MUST contain one central idea. In our sample answer, Body paragraph 1 talks about the problems, body paragraph 2 talks about the solutions.
Always include directions. For example, "To conclude" tells the reader that this paragraph is your last paragraph of your essay.
Please have a look to the following sample answer. This answer might get 7+ in Grammar, Vocabulary and Task Response marking criteria, but unluckily will end up receiving 5 or even below in Coherence and Cohesion.
TASK 2:
The consumption of the world’s resources (oil, and water etc.) is increasing at a dangerous rate. What are the causes and possible solutions?

Answer: (Band 5 in Coherence and Cohesion marking criterion)
Natural resources have been depleting in an alarming trend over the years, which is detrimental to the eco-system. The primary factors contribute to this phenomenon & a few possible solutions will be discussed in this essay.
 
First, overpopulation leads to a higher usage of all possible resources available, eventually making the nature vulnerable. For example, more electricity, which is produced from fossil fuel e.g. coal or oil, is required to fulfill the demand of the ever-increasing masses. The rapid growth of industries is developing devastating effects on the environment. Land, forests are taken for the sake of building more industries, apparently causing deforestation. Public and private transportation systems are exploiting petrol and diesel to drive the engine.
 
Governments and/or industries may introduce alternate uses of energy, namely renewable energy. Wind and solar power can be exhausted - instead of coal - to produce electricity. International and national authorities would come forward. Even World Wildlife Fund can implement different conservationist policies (e.g. how much of the local water can be used by nearby companies) in the pertinent sensitive arena with the help of the establishments at the local and federal levels. The utilization of the resources in Earth should be controlled to enable a better future for the forthcoming generations. 
 
To develop a sustainable community, jurisdictions and communities must work together to regulate and ensure the optimum use of scarce resources like minerals and oils and restore natural properties wherever possible.

Lets analyze the answer from Coherence and Cohesion perspective
TASK 2: The consumption of the world’s resources (oil, and water etc.) is increasing at a dangerous rate. What are the causes and possible solutions?

Answer: (what's wrong??)
Natural resources have been depleting in an alarming trend over the years, which is detrimental to the eco-system. The primary factors contribute to this phenomenon & a few possible solutions will be discussed in this essay.
 
[Body paragraph 1 must start with a generic sentence mentioning the title/idea for that paragraph.] To begin with, there are two main reasons behind this. First, overpopulation leads to a higher usage of all possible resources available, eventually making the nature vulnerable. For example, more electricity, which is produced from fossil fuel e.g. coal or oil, is required to fulfill the demand of the ever-increasing masses. Furthermore, the rapid growth of industries is developing devastating effects on the environment. Land, forests are taken for the sake of building more industries, apparently causing deforestation. Public and private transportation systems are exploiting petrol and diesel to drive the engine. [This sentence does not make sense here]
 
To mitigate the problem, governments and/or industries may introduce alternate uses of energy, namely renewable energy. Wind and solar power, for instance, can be exhausted - instead of coal - to produce electricity [You may write "for instance" in the middle of a sentence to bring some variety!]. In addition, international and national authorities would come forward. Even World Wildlife Fund can implement different conservationist policies (e.g. how much of the local water can be used by nearby companies) in the pertinent sensitive arena with the help of the establishments at the local and federal levels.

The utilization of the resources in Earth should be controlled to enable a better future for the forthcoming generations.  [This sentence fits to the conclusion, NOT in the solution paragraph] To develop a sustainable community, jurisdictions and communities must work together to regulate and ensure the optimum use of scarce resources like minerals and oils and restore natural properties wherever possible.

Finally, a better answer below:
TASK 2:
The consumption of the world’s resources (oil, and water etc.) is increasing at a dangerous rate. What are the causes and possible solutions?

​Answer (Band 7.5)

Natural resources have been depleting in an alarming trend over the years, which is detrimental to eco-system. The primary factors contribute to this phenomenon and a few possible solutions will be discussed in this essay.
 
To begin with, there are two main reasons behind this. First, overpopulation leads to a higher usage of all possible resources available, eventually making the nature vulnerable. For example, more electricity, which is produced from fossil fuel e.g. coal or oil, is required to fulfill the demand of the ever-increasing masses. Furthermore, the rapid growth of industries is developing devastating effects on the environment. Example can be seen in the scenario when land and forests are taken for the sake of building more industries, apparently causing deforestation.
 
To mitigate the problem, governments and/or industries may introduce alternate uses of energy, namely renewable energy. Wind and solar power, for instance, can be exhausted - instead of coal - to produce electricity. In addition, international and national authorities would come forward. Even World Wildlife Fund can implement different conservation policies (e.g. how much of the local water can be used by nearby companies) in the pertinent sensitive arena with the help of the establishments at the local and federal levels. 

To conclude, the utilization of the resources in Earth should be controlled to enable a better future for the forthcoming generations. To develop a sustainable community, jurisdictions and communities must work together to regulate and ensure the optimum use of scarce resources like minerals and oils and restore natural properties wherever possible.
By: Tanmoy Das, IELTS Trainer at HigherStudyAbroad


13

পাইথন এ অনলাইন প্লাটফর্ম এ কাজ করার জন্য গুগল এর ওয়েবসাইট এর লিংক :

https://colab.research.google.com/notebooks/intro.ipynb#recent=true

14
আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি
আমি কি ভুলিতে পারি
ছেলেহারা শত মায়ের অশ্রু গড়া এ ফেব্রুয়ারি
আমি কি ভুলিতে পারি
আমার সোনার দেশের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি
আমি কি ভুলিতে পারি।।

কী এক মায়া ভরা গান! শোনার সাথে সাথে গায়ের সমস্ত লোম দাঁড়িয়ে যায়। শরীরের সমস্ত রক্ত যেন টগবগ করে ফুটতে থাকে। মনের মাঝে কেমন যেন অদ্ভুত একটা শিহরণ কাজ করে। বুকের চাপা আর্তনাদ চোখ ভেঙে বেরিয়ে আসতে চায়। সব ঘটনা, সব কিছুই যেন চোখের সামনে ভাসতে থাকে আমাদের। ১৯৫২ সালের সেই একুশে ফেব্রুয়ারি যেন চোখের সামনে দেখতে পাই আমরা। কালে কালে এই গান উজ্জীবিত করে তোলে গোটা দেশকে। ছাপান্ন হাজার বর্গ মাইলের সীমানা পেরিয়ে এই গানের সুরে সুরে ভাষা শহীদদের আত্মদানের ইতিহাস পৌঁছে যায় বিশ্ববাসীর কাছে।

হ্যাঁ, এটাই সেই কালজয়ী একুশের গান। ফেব্রুয়ারি মাস আসলেই চারিদিক থেকে শোনা যায় এই কালজয়ী একুশের গানটি।

একুশের গানের ইতিহাস

১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি মাস। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবীতে সারাদেশে তখন চলছে আন্দোলন। এই আন্দোলন দমনে পুলিশ ১৪৪ ধারা জারি করে, ঢাকা শহরে সমস্ত মিছিল, সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। ২১শে ফেব্রুয়ারি (৮ ফাল্গুন, ১৩৫৮) সকালবেলা এই আদেশ অমান্য করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু ছাত্র ও কিছু রাজনৈতিক কর্মী মিলে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে। মিছিলটি ঢাকা মেডিকেল কলেজের কাছে এলে পুলিশ ১৪৪ ধারা ভাঙার অভিযোগে গুলিবর্ষণ করে।

গুলিতে নিহত হন রফিক, সালাম, বরকত, জব্বারসহ আরো অনেকে। ঢাকা মেডিকেলের বারান্দায় রাখা হয় লাশগুলো। এই সময় ঢাকা মেডিকেলে আহত ছাত্রদের দেখতে যান আবদুল গাফফার চৌধুরী। তিনি তখন ঢাকা কলেজের ছাত্র ছিলেন। মেডিকেলের আউটডোরে তিনি ভাষা সংগ্রামী রফিকের মাথার খুলি উড়ে যাওয়া লাশ দেখতে পান। লাশটি দেখে তার বারবার মনে হতে থাকে, এটা যেন তার নিজের ভাইয়েরই রক্তমাখা লাশ। তখনই এই গানের প্রথম দুটো লাইন তার মাথায় আসে। এরপরের কয়েকদিনের মধ্যেই তিনি পুরো গানটি লিখে ফেলেন। ভাষা আন্দোলনের জন্য প্রকাশিত প্রথম লিফলেটে এটা 'একুশের গান' শিরোনামে প্রকাশিত হয়। পরে ১৯৫৩ সালের মার্চে হাসান হাফিজুর রহমান 'একুশে সংকলনে' ও এটি প্রকাশ করে। কিন্তু তৎকালীন সরকার এই সংকলনটি বাজেয়াপ্ত করে।

'একুশের গান' কবিতাটির প্রথম সুরকার ছিলেন আবদুল লতিফ। তিনি তখন এটি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গাওয়া শুরু করেছিলেন। এই গানটি গাওয়ার অপরাধে ঢাকা কলেজ থেকে ১১ জন ছাত্রকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। আবদুল গাফফার চৌধুরী রচিত এই গানটি প্রথমে আবদুল লতিফ সুর করলেও পরবর্তীতে গানটিতে সুরারোপ করেন সেই সময়ের নামকরা এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ মাহমুদ। বর্তমানে আলতাফ মাহমুদের সুর করা গানটির প্রাতিষ্ঠানিক সুর হিসেবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত। ১৯৫৪ সালে আলতাফ মাহমুদের সুরে প্রভাত ফেরিতে প্রথম গাওয়া হয় এটি। এরপর থেকে প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারিতে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এই গানটি গেয়ে থাকে বাংলার মানুষ। বিবিসি শ্রোতা জরিপে বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠ গানের তালিকায় এর অবস্থান তৃতীয়। বর্তমানে এই গানটি হিন্দি, মালয়, ইংরেজি, ফরাসি, সুইডিশ, জাপানিসহ ১৫টি ভাষায় গাওয়া হয়।

প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাস আসলেই আমাদের সবার মুখে মুখে থাকে গানটি। কিন্তু আমরা কি জানি এই গানটির পেছনের মানুষগুলোর কথা। কাদের চেষ্টায় আমরা পেলাম ফেব্রুয়ারির এই অবিনাশী গান?

এই কালজয়ী গানটি সৃষ্টির পেছনে আছে যে মানুষগুলোর হাত, তাঁরা এ দেশেরই সূর্যসন্তান। আসুন জেনে নেয়া যাক তাদের কথা।

আবদুল গাফফার চৌধুরী

১৯৩৪ সালের ১২ ডিসেম্বর বরিশাল জেলার উলানিয়ার গ্রামের চৌধুরী বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন আবদুল গাফফার চৌধুরী। ১৯৫০ সালে ম্যাট্রিক পাশ করে তিনি ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। এই সময় পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি কর্মজীবনও পরিপূর্ণভাবে শুরু করে দিয়েছিলেন।

ঢাকায় আসার পরপরই তিনি 'দৈনিক ইনসাফ' পত্রিকায় সাংবাদিক হিসেবে কাজ শুরু করেন। খুব ছোটবেলা থেকেই তার ঝোঁক ছিল লেখালেখির উপর। সাহিত্যকর্মী হিসেবে তাঁর ভূমিকা অনস্বীকার্য। তরুণ বয়সে তিনি প্রচুর কবিতা লিখেছেন, যার অকাট্য দলিল হলো 'আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি'। গল্প, উপন্যাস, স্মৃতিকথা, রাজনৈতিক প্রবন্ধ, নাটক,  কবিতা, ছোটদের উপন্যাসসহ সাহিত্যের প্রায় সব অঙ্গনেই তাঁর বিচরণ রয়েছে। 'চন্দ্রদ্বীপের উপাখ্যান ', 'সম্রাটের ছবি', 'ধীরে বহে বুড়িগঙ্গা ', 'পলাশী থেকে বাংলাদেশ ', 'রক্তাক্ত আগস্ট', 'নীল যমুনা' সহ তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা প্রায় ত্রিশটি।

তিনি অনেক রকম সম্মাননা ও পুরষ্কার পেয়েছেন। এগুলার মধ্যে ১৯৬৩ সালের ইউনেস্কো পুরষ্কার, ১৯৬৭ সালে বাংলা একাডেমি পুরষ্কার, একুশে পদক, স্বাধীনতা পদক উল্লেখযোগ্য। প্রবাসে থেকেও তিনি এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রধান পত্রিকাগুলোয় রাজনীতি, সমসাময়িক বিষয়, আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী নিয়ে নিয়মিত লিখে যাচ্ছেন।

আবদুল লতিফ
বাংলাদেশের খ্যাতনামা এই গীতিকার ও সুরকার বরিশালের রায়পাশা গ্রামে ১৯২৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলা থেকে গানের প্রতি ভালবাসা থাকা সত্ত্বেও গান গাওয়ার জন্য পারিবারিক স্বীকৃতি পেতে তাকে বেশ ঝক্কিঝামেলা পোহাতে হয়েছে। মেট্রিকুলেশন পাশ করার পর তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য কলকাতা চলে যান এবং সেখানেই গানের চর্চা চালাতে থাকেন।

১৯৪৮ সালে ঢাকায় আসার পর আগস্ট মাসে তিনি রেডিও পাকিস্তানের নিয়মিত শিল্পী হিসেবে গান গাইতে শুরু করেন। তাঁর গানের মাধ্যমে তিনি ভাষা আন্দোলনে অনুপ্রেরণা যোগাতেন। ১৯৪৯-৫০ সালে তিনি বেশ কিছু আধুনিক ও পল্লীগীতি লিখেন। তাঁর গানগুলো ছিল প্রকৃতির গান, মানুষের সাথে মিশে যাওয়া গান। কীর্তন, কবিগান, জারি-সারি, পালকির গান, পাঁচালি গানগুলো তাকে সঙ্গীত দুনিয়ায় অনন্য এক স্থান দিয়েছে। অনেক গানের মধ্যে তাঁর 'ওরা আমার মুখের ভাষা কাইড়া নিতে চায়' এবং 'আমি দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা' বেশ জনপ্রিয়। 'আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি ' গানটির প্রথম সুরকারও তিনি ছিলেন। তাঁর লেখা সব গান সংগ্রহ করা না গেলেও ১৯৮৫ সালে বাংলা একাডেমি থেকে তাঁর গানের বই প্রকাশ করা হয়। তিনি ২০০৬ সালে ভাষার মাসের (ফেব্রুয়ারি) ২৩ তারিখে পরলোকগমন করেন।

আলতাফ মাহমুদ

বাংলাদেশকে আলোকিত করার জন্য এ দেশে বিভিন্ন সময় জন্ম নিয়েছে অনেক গুনীজন। তাঁদের মধ্যে একজন হলেন আলতাফ মাহমুদ। অনেকেই তাঁকে 'সুরের বরপুত্র ' নামে আখ্যায়িত করেন। ১৯৩৩ সালের ২৩ ডিসেম্বর বরিশাল জেলার পাতারচর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পড়াশোনার চেয়ে গানের প্রতি আলতাফ মাহমুদের আকর্ষণ ছিল বেশি। ১৯৫৪ সালে তিনি ঢাকায় চলে আসেন এবং ধুমকেতু শিল্পীসংঘে যোগ দেন। পরে তিনি এখানকার সঙ্গীত পরিচালক পদে দায়িত্ব পালন করেন। তখন সারাদেশব্যপী জোরালোভাবে চলছিল ভাষা আন্দোলন। এই আন্দোলনকে সমর্থন জানানোর জন্য তিনি বিভিন্ন জায়গায় গণসঙ্গীত গাইতেন।

'আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি ' গানটির সুর করে এখনও আমাদের মাঝে তিনি তাঁর অস্তিত্বের জানান দেন। আনুমানিক ১৯টি বাংলা চলচিত্রে কাজ করেছেন। এগুলার মধ্যে 'জীবন থেকে নেয়া', ' আপন দুলাল', 'সপ্তডিঙ্গা', 'সুয়োরানী দুয়োরানী', 'আগুন নিয়ে খেলা' ,' নয়নতারা' উল্লেখযোগ্য। তিনি শুধু একজন গুনী শিল্পীই ছিলেন না, ছিলেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাও। ১৯৭১ সালের ৩০ আগস্ট তাকে তাঁর বাসা থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি তাঁর। বাংলা সংস্কৃতি ও বাংলাদেশের যুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য ১৯৭৭ সালে আলতাফ মাহমুদকে একুশে পদক প্রদান করা হয়। এছাড়াও ২০০৪ সালে দেয়া হয় স্বাধীনতা পুরষ্কার (মরণোত্তর)।

এটা শুধু মাত্র একটা গান না। এটা বাঙালীর আবেগ। এই গানের মাধ্যমেই আমরা তা জানিয়ে দেই পুরো বিশ্বকে। যুগে যুগে বাঙালির হৃদয়ে ভাষা আন্দোলন আর একুশের চেতনাকে জাগ্রত করে রেখেছে এই একুশের গান।

source:/https://roar.media/bangla/main/bangladesh/a-song-that-inspired-whole-nation/

15
ভাষা মাত্রই গতিশীল, সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তনশীলতা ভাষার নিতান্তই প্রাকৃতিক ধর্ম। হুমায়ুন আজাদ ভাষার এই বৈশিষ্ট্যকে তুলনা করেছেন প্রবাহমান নদীর সঙ্গে। কিন্তু স্বাভাবিক গতিতে এবং সমাজের চিরায়ত বিষয়াদির প্রভাব স্বীকার করে যে সাবলীল পরিবর্তন, এর বাইরের স্থূল পরিবর্তনের সঙ্গে অহরহ পরিচিতি ঘটাটা একটি ভাষার জন্য মোটেও সুলক্ষণ বহন করে না।

বিশ্বায়নের অবাধ এবং স্বতঃস্ফূর্ত প্রক্রিয়ায় শক্তিমত্তা ও উপযোগিতার ওপর ভিত্তি করে নানাবিধ ক্ষেত্রে একটি একরৈখিক মূলধারা সৃষ্টির প্রবণতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। মানুষের অন্যতম জীবন্ত অনুষঙ্গ ভাষাও এর আওতামুক্ত নয়। বিশ্বের সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক বৈচিত্র্যের যথাযথ ভারসাম্যের জন্য 'সাধারণ একরৈখিককরণ' এর বিলোপ এবং বিকেন্দ্রীকরণ অতীব জরুরী। এজন্য প্রয়োজন বিশ্বনাগরিকতার চেতনায় দীক্ষিত এবং তুলনামূলক মূল্যায়নের ক্ষমতাসম্পন্ন উচ্চ মননের বুদ্ধিজীবীগোষ্ঠী, যারা নিজস্ব জাতিগত স্বাতন্ত্র্য রক্ষার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধিপূর্বক 'ভাষা' নামক মাধ্যমটিকে উৎকৃষ্টরূপে ব্যবহার করবেন।

ভাষাভাষী জনসংখ্যার বিচারে চতুর্থ এই 'বাংলা' ভাষাটি বিভিন্ন ক্ষেত্রেই নেতিবাচকতার পানে অগ্রসর হচ্ছে, যা আমাদের জন্য একটি অশনিসংকেত। রুচিশীল ও নান্দনিক বেশ কিছু শব্দ দিন দিন পুরাতন এবং ব্যবহার সীমা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে দৈনন্দিন জীবনে যথাযথভাবে ভাব প্রকাশের জন্য প্রয়োজনীয় অনেক শব্দও। তাছাড়া বহু শব্দের অর্থগত সংকোচন ঘটছে।

আরেকটি প্রবণতা ইদানীং লক্ষণীয়। অনলাইনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ইংরেজি-বাংলা মিশিয়ে এক অদ্ভুত জগাখিচুড়ির মতো ভাষাগত ব্যবহার পরিলক্ষিত হচ্ছে। ইংরেজির মতো একটি প্রভাবশালী ভাষাকে অস্বীকার করবার উপায় নেই। স্বাভাবিকভাবেই আমরা অনানুষ্ঠানিক আবহে ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে নানা ইংরেজি শব্দের ব্যবহার করে থাকি। সেই ব্যবহার যথেষ্ট সাবলীলও বটে। কিন্তু বর্তমানে এই ইংরেজি-বাংলার মিশ্রণ শুধু শব্দতেই সীমাবদ্ধ নেই। ভাষাতাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে গেলে, ইংরেজির কাঠামো অনুসরণ করে এর মধ্যে বাংলার অন্তর্ভুক্তি ঘটছে, যা একটি ভাষায় দীর্ঘদিন চললে ভাষাটি ব্যবহারের সঙ্গে সমান গতিতে তাল মিলিয়ে চলতে পারে না। অর্থাৎ ভাষাটির সর্বোচ্চ প্রমিত রুপ তখন মানুষের কাছে প্রাঞ্জলতা হারাতে থাকে, ধীরে ধীরে ভাষাটি পোশাকি হয়ে পড়ে, ব্যবহারিক ক্ষেত্রে দুর্বল হয়ে পড়ে।

একটি ভাষার পরিবর্তনকে ততটুকুর মধ্যেই ভাষাতাত্ত্বিকভাবে স্বীকার করা যায়, যতটুকু পরিবর্তনকে ভবিষ্যতে বৈধতা প্রদানের মাধ্যমে ভাষাটির স্থিতিশীলতা রক্ষা করা যায়। কিন্তু ভাষাগত স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে এমন যেকোনো অপপ্রয়োগকে হালকাভাবে নেয়ার সুযোগ নেই। অভিন্ন ধারণা কিংবা সংকেত প্রকাশক দুটি পরস্পর সমার্থক শব্দও কিন্তু পাঠক কিংবা শ্রোতার মনে একই ধরনের দ্যোতনা প্রদান করে না। আবার ব্যক্তিগত গ্রহণের ভিন্নতাকে উপেক্ষা করলে, নেটিভরা তাদের নিজের ভাষায় অন্তর্ভুক্ত শব্দগুলোর ব্যঞ্জনা উপলব্ধি করার সহজাত পরিবেশের মধ্যেই বেড়ে ওঠে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ এজন্যই বলেছিলেন, 'শিক্ষায় মাতৃভাষাই মাতৃদুগ্ধ।' তাই ভাষার ব্যাপারটিকে আলাদাভাবে গুরুত্ব দিয়ে দেখার সময় এসে গেছে।

শব্দের অর্থগত প্রসারণ এবং ব্যবহারিক উন্নয়নের পেছনে প্রাবন্ধিক, সাহিত্যিক এবং কথাশিল্পীদের বিরাট ভূমিকা রয়েছে। ভিন্ন ভিন্ন কাঠামো এবং শৈলীতে ব্যবহৃত হওয়ার মাধ্যমে একটি শব্দ তার নিজস্ব কেন্দ্রীয় অর্থকে ছাপিয়ে যায়, সেই শব্দের সঙ্গে নানা সম্পূরক আবেগ প্রযুক্ত হয় এবং শব্দটি নানা ধরনের ব্যঞ্জনায়-সৌন্দর্যবোধে প্রকাশিত হওয়ার দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করতে থাকে। সময়ের কিংবদন্তিতুল্য পন্ডিত নোয়াম চমস্কি ভাষার যে দুটি স্তর (ব্যবহারকারীর ক্ষমতা এবং প্রয়োগ বা সম্পাদনা) দেখিয়েছেন, সেই দুই স্তরেই বাংলা ভাষা পরস্পর সম্পর্কিতভাবে পিছিয়ে পড়ছে। মৌলিক জ্ঞান সৃষ্টি কিংবা গবেষণার মাধ্যম হিসেবে বাংলার সীমিত ব্যবহারের দায় তো আছেই, অর্থনৈতিক উপযোগিতার হ্রাসকে মোটাদাগে প্রধান কারণ হিসেবে দেখানো যায়। কেননা, অন্যান্য সকল কারণই এর সঙ্গে আন্তঃসম্পর্কিত।

চাহিদার তুলনায় বাংলায় ভাল কনটেন্টের সংখ্যা খুবই নগণ্য। তরুণ প্রজন্মের একটি উল্লেখযোগ্য এবং প্রভাবশালী অংশের সাংস্কৃতিক বিনোদনের প্রধান মাধ্যমের জায়গাটিতে বাংলা নেই। বিপরীতক্রমে বলা যায়, প্রভাবশালী এই অংশের অনীহা এবং অর্থনৈতিক ঝুঁকির কারণেও বাংলায় আন্তর্জাতিক মানের কনটেন্ট তৈরি হচ্ছে না। প্রথাগত পড়াশোনার বাইরে গিয়ে আমাদের সমাজ থেকে ভালো শিল্পী কিংবা কলাকুশলীও উল্লেখযোগ্য হারে তৈরি হচ্ছে না। বাংলার নিজস্ব পারম্পরিক ঐতিহ্যের সঙ্গে বাঙ্গালিদের পরিচয়েরও সুযোগ ঘটছে না তেমন। কিংবা তাদের মনোজগতটাও এমনভাবে তৈরি হচ্ছে না যা বাংলার সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ধারার সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে পারে। তাই মাতৃভাষার জন্য চিরন্তন আবেগকে মৌখিক স্বীকার করলেও উপযোগিতার জায়গাটায় তারা বাংলাকে মোটেই শীর্ষস্থান দিচ্ছে না। এসব কারণে বাংলা সস্তা জনপ্রিয়তার সহজ শিকারে পরিণত হচ্ছে।

সমাজবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে বলতে গেলে,  'লোকরঞ্জনবাদ' এর কুপ্রভাবে বাংলার প্রমিত এবং নান্দনিক ব্যবহারের জায়গাটি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। গণ-গ্রহণযোগ্যতার বিষয়টি মাথায় রেখে পত্রপত্রিকা, জার্নাল এবং ম্যাগাজিনেও বাংলার পরিমার্জিত ব্যবহারের ক্ষেত্রে আপোষ করা হচ্ছে। অন্যদিকে রেডিও-টেলিভিশনেও যাচ্ছেতাইভাবে নানা কুরুচিপূর্ণ শব্দ এবং পরিমার্জনা-বিবর্জিত অপপ্রয়োগের মাধ্যমে বিষয়টিকে সাধারণ বৈধতা দেয়া হয়েছে। অনেক চটুল এবং স্থূল প্রয়োগ প্রমিত বাংলার সমান্তরালেই হচ্ছে এবং এগুলো ছড়িয়ে পড়ছে মূলত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের দ্বারা।

মানুষকে সহজেই আকর্ষণের কৌশল হিসেবে বিভিন্ন অনলাইন কন্টেন্টের টাইটেলে আমরা দেখতে পাচ্ছি বাংলা ব্যবহারের সবচাইতে বাজে দৃষ্টান্ত। এভাবেই বাংলা পতিত হয়েছে এমন এক চক্রে, অর্থনীতির 'দারিদ্রের দুষ্টচক্রের' মতোই যা বাস্তব কিন্তু অনাকাঙ্ক্ষিত। আমাদেরকে এই চক্র ছিন্ন করে বেরিয়ে আসতে হবে। নিজ ভাষায় বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার পথ যত উন্মুক্ত হবে, জনসাধারণের কাছে তা ততই দ্রুত এবং সাবলীলভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারবে। একটি দেশের উন্নয়ন মানে সার্বিক জনগণের  উন্নয়ন। তাই জনগণকে সার্বিকভাবে সংযুক্ত করতে হলে মাতৃভাষাতেই করতে হয়। তা না হলে সুযোগ-সুবিধা একটি বিশেষ শ্রেণীর কুক্ষিগত হয়ে পড়ে। এপারের বাঙালিদের মাতৃভাষার চর্চা এবং বিকাশের জন্য বাংলাদেশ সম্পূর্ণ উপযোগী। কেননা, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ এবং বাঙালিত্বের মধ্যে ভাষাগত কোনো বিরোধ নেই।

ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছায়ানটে প্রবেশ করলেই একটি ফলক চোখে পড়ে যেখানে লেখা, 'বিশ্বমানব হবি যদি, শাশ্বত বাঙালি হ'! চীন এক্ষেত্রে একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তারা নিজেদের ভাষার মাধ্যমেই আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে একটি প্রভাবশালী স্থান অধিকার করতে সমর্থ হয়েছে।। কেননা পৃথিবীর কোনো জাতির জন্যই মাতৃভাষার কোনো বিকল্প নেই। আব্দুল লতিফের গানের এই চরণগুলো আমাদের সবারই আত্মিক নিবেদন,

'ও আমার এই বাংলা ভাষা
এই আমার দুখ-ভুলানো বুক-জুড়ানো
লক্ষ মনের লক্ষ আশা।'


courtesy : https://roar.media/bangla/main/bangladesh/bangla-language-and-the-reality/

Pages: [1] 2