Daffodil International University

Health Tips => Health Tips => Coronavirus - করোনা ভাইরাস => Topic started by: Md. Alamgir Hossan on March 23, 2020, 07:16:20 PM

Title: ক্যাম্পাস বন্ধ, থেমে নেই ক্লাস
Post by: Md. Alamgir Hossan on March 23, 2020, 07:16:20 PM
ক্যাম্পাসের বাইরে পা রাখিনি প্রায় দেড় মাস হলো। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডর্মে থাকছি, ক্লাস করতে হচ্ছে অনলাইনে। এমন বিচিত্র অভিজ্ঞতা শুধু আমার কেন, মনে হয় যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্যই বিরল।

আমি চীনের হুঝো শহরের হুঝো ইউনিভার্সিটিতে ভিজ্যুয়াল আর্ট ডিজাইন বিষয়ে স্নাতকোত্তর করছি। করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর অনেক শিক্ষার্থীই দেশে ফিরে গেছেন। আমার যাওয়া হয়নি। কারণ যে শহরে থাকি, সেখানে কোনো বিমানবন্দর নেই। দেশে ফিরতে হলে আমাকে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে অন্য শহরে যেতে হবে। বাসে, ট্রেনে, মানুষের ভিড়ে পড়তে হবে। তার চেয়ে ক্যাম্পাসটাই আমাদের জন্য নিরাপদ। এমনকি মাঝেমধ্যে মনে হয়, দেশে থাকলেও হয়তো এতটা নিরাপদ বোধ করতাম না।

জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে যখন প্রথম করোনাভাইরাসের কথা শুনলাম, তখন আমাদের ক্যাম্পাস বন্ধ। লুনার ফেস্টিভ্যালের (চীনা নববর্ষের উৎসব) ছুটিতে হুঝো ইউনিভার্সিটির প্রায় ১৭ হাজার চীনা শিক্ষার্থী তখন বাড়ি চলে গেছে। তখনো সবকিছু স্বাভাবিক ছিল। লুনার ফেস্টিভ্যালের পরই মূলত ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে শুরু করল। হঠাৎ ঘোষণা এল, ২৭ জানুয়ারি বিকেলের পর থেকে আমরা আর ক্যাম্পাস থেকে বের হতে পারব না। যারা দেশে ফিরে যাবে, শুধু তারাই বেরোনোর অনুমতি পাবে। সেই থেকে আমরা প্রায় আড়াই শ–এর বেশি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডর্মে থাকছি। শুরুর দিকে, প্রায় এক মাস বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই আমাদের দুই বেলা খাবার দেওয়া হয়েছে। এখন অবশ্য ক্যানটিন খোলা, নিজেরাই কিনে খেতে পারছি। রুম থেকে খুব একটা বের হই না। দিনে দুইবার করে আমাদের শরীরের তাপমাত্রা মাপা হয়। কারও জ্বর হলেই তাঁকে অন্যত্র সরিয়ে ফেলা হয়।

এত কড়াকড়ির মধ্যেও পড়ালেখায় কিন্তু কোনো ছাড় নেই। নিয়মিত অ্যাসাইনমেন্ট করতে হচ্ছে। যে যেখানেই থাকুক, অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে হবে সময়মতো। ‘গ্রুপ অ্যাসাইনমেন্ট’ও করতে হচ্ছে। আমরা একেকজন একেক জায়গায় আছি। অনলাইনে আলোচনা করে সব ঠিকঠাক করে নিতে হচ্ছে। এরই মধ্যে অবশ্য অনলাইনে অনেক বিভাগের লাইভ ক্লাস শুরু হয়ে গেছে। এখানে লাইভ ক্লাসের জন্য আলীবাবার একটা অ্যাপ ব্যবহার করা হয়, নাম ডিংটক। সামনের সপ্তাহ থেকে আমাদেরও লাইভ ক্লাস হবে। জুলাইতে পরীক্ষা। তত দিনে আশা করি সব ঠিক হয়ে যাবে। আবার আমাদের বন্ধুরা ফিরে আসবে। আমরা ক্লাস করব, ক্যাম্পাসের বাইরে ঘুরতে যাব। নির্দ্বিধায় বন্ধুর কাঁধে হাত রাখব। দম নেব বুক ভরে।

চীনের হুঝো বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে রয়ে গেছেন, প্রতি দিন দুবার করে মাপা হয় তাঁদের শরীরের তাপমাত্রা। ছবি: রাহাত কবির
চীনের হুঝো বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে রয়ে গেছেন, প্রতি দিন দুবার করে মাপা হয় তাঁদের শরীরের তাপমাত্রা। ছবি: রাহাত কবির
এক নতুন অভিজ্ঞতা : মো. মেহেদী হাসান

জানুয়ারির শুরু থেকেই চীনা নববর্ষ উপলক্ষে বাড়ি যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল আমার চীনা বন্ধুরা। তখনো জানতাম না, এই ছুটিতে বাড়ি ফেরা হবে আমারও। আমি চীনের শ্যাংডং প্রদেশের ঝাওঝুয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। যন্ত্রকৌশলে (অটোমেশন অ্যান্ড ডিজাইন) স্নাতক করছি। চীনের উহান থেকে করোনা যখন সর্বত্র ছড়িয়ে পড়তে শুরু করল, তখন আরও অনেক বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর সঙ্গে গত ৩ ফেব্রুয়ারি ফিরে আসি দেশে।

একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এমনিই আমাদের ক্যাম্পাস বন্ধ থাকার কথা ছিল। করোনার কারণে ছুটি বাড়ানো হয় আরও ১০ দিন। কিন্তু ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে আবার শুরু হয়ে গেছে শিক্ষা কার্যক্রম। ২ হাজার কিলোমিটার দূরে বসেও নিয়মিত ক্লাস করছি। অনলাইনে ভিডিওর মাধ্যমে শিক্ষকেরা আমাদের পড়া বুঝিয়ে দিচ্ছেন। নিয়মিত অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতির কারণে আমাদের কোর্সগুলোর পাঠ্যক্রমে কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে। আমি যেহেতু প্রকৌশলের ছাত্র, আমাদের পড়ালেখা মূলত ব্যবহারিকনির্ভর। কিন্তু এখন তত্ত্বীয় ক্লাসের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। সব স্বাভাবিক হলে হয়তো ব্যবহারিক ক্লাস করে আমরা ঘাটতিটুকু পুষিয়ে নেব।

চীনা শিক্ষকেরা ক্লাস নিচ্ছেন উই চ্যাট বা কিউকিউয়ের মতো অনলাইন যোগাযোগমাধ্যমে। যেসব শিক্ষক অন্যান্য দেশে আছেন, তাঁরা ক্লাস নিচ্ছেন মেসেঞ্জারে। কিন্তু পড়ালেখার ক্ষেত্রে কোনো ছাড় নেই। প্রতিটা ক্লাসের আগেই শিক্ষকেরা পিডিএফ-এর মাধ্যমে কী কী পড়ানো হবে, তা পাঠিয়ে দেন। আমরা আগে থেকে প্রস্তুতি রাখি। আবার প্রতিটা পিডিএফ-এর শেষে কিছু বাড়ির কাজ দেওয়া থাকে। অতএব ক্যাম্পাস বন্ধ, কিন্তু আমাদের আসলে ছুটি নেই। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে ১০ এবং বিকেল ৪টা থেকে ৬টা নিয়ম করে শিক্ষকেরা অনলাইনে থাকেন। এই সময়ে আমরা আমাদের সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা করতে পারি। তবে শিক্ষকেরা শুধু যে পড়ালেখার ওপরই জোর দিচ্ছেন, তা নয়। নিয়মিত আমাদের পরিবারের, দেশের খোঁজ নিচ্ছেন। সাহস দিচ্ছেন। সব মিলিয়ে এটা একটা অদ্ভুত অভিজ্ঞতা।

এই অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়েই ‘গ্লোবাল ভিলেজ’–এর ধারণাটা আরও ভালো করে বুঝতে পারলাম। জানলাম, জরুরি অবস্থায় প্রযুক্তি কীভাবে আমাদের সাহায্য করতে পারে। মানুষের জীবনে বাধা আসবে, দুর্যোগ আসবে, তবু থেমে থাকলে তো হয় না। এর মধ্য দিয়েই আমাদের তাকাতে হয় সামনের দিকে।