প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশী শিক্ষার্থী বাড়লেও কমছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে
প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশী শিক্ষার্থী বাড়লেও কমছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০৯ সালের ইউজিসি’র প্রতিবেদন অনুযায়ী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশী শিক্ষার্থী ছিল ৩৯০ জন। ২০১০ সালে ৩১ জন কমেছে। সর্বাধিক বিদেশী শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি চট্টগ্রামে ১১৬৭ জন বিদেশী শিক্ষার্থী এমবিবিএস প্রোগ্রামে পড়াশোনা করছে। এর মধ্যে ৬০১ জন নারী শিক্ষার্থী। যা গত বছরের তুলনায় ২৪৩ জন বেশি
সোলায়মান তুষার: প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশী শিক্ষার্থী বাড়ছে। বর্তমানে ১ হাজার ৫৫৭ জন শিক্ষার্থী পড়ালেখা করছে। অন্যদিকে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশী শিক্ষার্থী কমছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে মাত্র ৩৫৯ জন বিদেশী শিক্ষার্থী পড়ালেখা করছে। দেশের ১৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এসব শিক্ষার্থী পড়ালেখা করছেন। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) প্রকাশিত ৩৭তম বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশে ৬৩টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এরমধ্যে ২৭টিতে বিদেশী শিক্ষার্থী পড়াশুনা করছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বিদেশী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২০০৯ সালে ছিল ১১৯৯ জন, ২০০৮ সালে ৮১২ জন, ২০০৭ সালে ৫৯৬ জন ও ২০০৬ সালে ছিল ৪৯৮ জন। বিগত পাঁচ বছরের তুলনায় আলোচ্য বছরে বিদেশী শিক্ষার্থীর সংখ্যা সর্বাধিক বৃদ্ধি পেয়েছে। এ বৃদ্ধির হার ছিল ৩০ ভাগ। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশী শিক্ষার্থী বাড়লেও কমছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০৯ সালের ইউজিসি’র প্রতিবেদন অনুযায়ী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশী শিক্ষার্থী ছিল ৩৯০ জন। ২০১০ সালে ৩১ জন কমেছে। সর্বাধিক বিদেশী শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি চট্টগ্রামে ১১৬৭ জন বিদেশী শিক্ষার্থী এমবিবিএস প্রোগ্রামে পড়াশোনা করছে। এর মধ্যে ৬০১ জন নারী শিক্ষার্থী। যা গত বছরের তুলনায় ২৪৩ জন বেশি। এ তালিকায় দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে রয়েছে আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামে ১৩০ জন, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে ৫৬ জন, গণবিশ্ববিদ্যালয়ে ৩২ জন ও ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজিতে ৩১ জন। উপরে উল্লিখিত পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া অপর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অধ্যয়নরত বিদেশী ছাত্র সংখ্যা হলো: ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় ২১ জন, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় ১৮ জন, অতীশ দীপঙ্কর ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ১৬ জন, ডেফোডিল ইউনিভার্সিটি ১৪ জন, স্টেট ইউনিভার্সিটি ১২ জন, ইন্ডিপেন্ডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয় ৬ জন, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ ৩ জন, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি ১ জন, ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকে ৫ জন, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে ৫ জন, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে ৩ জন, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটিতে ৪ জন, ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অলটারনেটিভে ১ জন, সাউথ ইস্ট ইউনিভার্সিটিতে ২ জন, শান্তা মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজিতে ২ জন, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটিতে দু’জন, উত্তরা ইউনিভার্সিটিতে ৩ জন, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটিতে ৪ জন ও ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সে ৫ জন। উচ্চশিক্ষার জন্য এদেশে আসা শিক্ষার্থীরা প্রধানত ৩০টি দেশ থেকে এসেছে। দেশগুলো হলো: কানাডা, চীন, জর্ডান, অস্ট্রেলিয়া, মালি, ভারত, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান, ফিলিস্তিন, আরব আমিরাত, আমেরিকা, কোরিয়া, ইরান, সোমালিয়া, ইথিওপিয়া, ইয়েমেন, আফগানিস্তান, উগান্ডা, জাম্বিয়া, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক, নাইজেরিয়া, কেনিয়া, লাইবেরিয়া, বৃটেন, ভিয়েতনাম, জাপান ও মালয়েশিয়া। ইউজিসি’র বিদেশী শিক্ষার্থী ভর্তি শাখার একজন কর্মকর্তা বলেন, বিদেশী শিক্ষার্থী ভর্তির মধ্য দিয়ে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মানের বিষয়টি প্রকাশ পায়। আমরা বরাবরই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিদেশী শিক্ষার্থী ভর্তির বিষয়টিকে উৎসাহিত করে থাকি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যত বেশি বিদেশী শিক্ষার্থী ভর্তি করতে পারবে তত বেশি তারা প্রতিযোগিতায় আসতে সক্ষম হবে। সুযোগ-সুবিধা বাড়ালে বাংলাদেশী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আরও বেশি পরিমাণে বিদেশী শিক্ষার্থীকে এদেশে আনতে সক্ষম হবে বলেও মত দেন তিনি। ইউজিসি’র চেয়ারম্যান অধ্যাপক একে আজাদ চৌধুরী বলেন, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশী শিক্ষার্থী বাড়ছে মূলত দু’টি কারণে। প্রথমত প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি মাধ্যমে পড়ালেখা করানো হয় যেটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে করানো হয় না। দ্বিতীয়ত, আন্তর্জাতিকভাবে চাহিদা আছে সেসব সাবজেক্ট পড়ানো হয় প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। অধ্যাপক চৌধুরী বলেন, প্রথমে যেসব বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়েছিল তারমধ্যে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিকভাবে সুনাম অর্জন করেছে। এছাড়া, অনেক বিদেশী শিক্ষক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছে। তিনি আরও বলেন, অনেক ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংক কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়কে তাদের নানা প্রোগ্রামের দায়িত্ব দেয়। তাদের প্রচারটাও বেশি। ইউজিসি চেয়ারম্যান আরও বলেন, প্রথম দিকে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করে যেসব শিক্ষার্থী বাইরে চাকরি করছেন তারা বেশ দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। এটাও প্রভাব ফেলে শিক্ষার্থীদের ওপর। ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সেস (ইউআইটিএস)-এর প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. কে এম সাইফুল ইসলাম খান বলেন, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের প্রতি যেভাবে যত্ন নেয়া হয় সেটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে হয় না। এছাড়া, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় মাসের পর মাস বন্ধ থাকে নানা নোংরা রাজনীতির কারণে। এটা বিদেশী শিক্ষার্থীদের ওপর প্রভাব ফেলে।